রাহে বেলায়াত তৃতীয় অধ্যায় - অনুচ্ছেদ-১৮, প্রথম পর্বঃ সকালের যিকর-ওযীফা - ৯. বাড়ি-মসজিদ গমনাগমনের যিকর - জামাতে সালাত আদায়ের কতিপয় অবহেলিত সুন্নাত
রাহে বেলায়াত তৃতীয় অধ্যায় - অনুচ্ছেদ-১৮, প্রথম পর্বঃ সকালের যিকর-ওযীফা - ৯. বাড়ি-মসজিদ গমনাগমনের যিকর - জামাতে সালাত আদায়ের কতিপয় অবহেলিত সুন্নাত
মসজিদে প্রবেশের পরে সেখানে পালনীয় অনেক সুন্নাত অজ্ঞানতা বা অবহেলার কারণে আমরা পরিত্যাগ করে থাকি। এ ধরনের মৃত ও পরিত্যক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সুন্নাত এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করছি। আশা করছি অন্তত কিছু পাঠক এই সুন্নাতগুলি পালন করে মৃত সুন্নাত জীবিত করার অতুলনীয় সাওয়াব অর্জন করবেন এবং লেখকও তাঁদের সাথে সাওয়াবের অংশী হবেন।
(১) জামাতে গমন করার সময় তাড়াহুড়ো করা হাদীসে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, সালাতের ইকামত হওয়ার পরেও যদি তোমরা মসজিদে যাও তাহলে মানসিক অস্থিরতা বা দৌড়াদৌড়ি করে মসজিদে যাবে না। শান্তভাবে ও ধীরে ধীরে যাবে। যতটুকু সালাত ইমামের সাথে পাবে তা আদায় করবে, বাকিটা পরে নিজে আদায় করবে। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ঘর থেকে সালাতের জন্য বাহির হওয়ার সময় থেকেই মুসল্লী সালাতের মধ্যেই থাকেন এবং আল্লাহর কাছে তিনি সালাতরত বলে গণ্য হন। যদি কেউ মসজিদে যেয়ে দেখেন যে পুরো জামাত শেষ হয়ে গিয়েছে তাহলেও তিনি জামাতের সাওয়াব পাবেন।
(২) মসজিদে প্রবেশ করার পর আগের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পিছনের কাতারে দাঁড়নো কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ও গোনাহের কাজ। যথাসম্ভব ধীর স্থিরভাবে আগের কাতারে দাঁড়াতে হবে। এতে ইমাম এক রাক’আত শেষ করে ফেললে কোনো ক্ষতি নেই। আমরা মসজিদে রাক’আত গণনা করতে যাই না, সাওয়াব অর্জন করতে যাই। তাড়াহুড়ো করলে, পিছনের কাতারে দাঁড়ালে গোনাহ হবে। আর শান্ত ভাবে আগের কাতারে দাঁড়ালে সাওয়াব বেশি হবে।
(৩) সালাতের কাতারে যথাসম্ভব গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াতে, মাঝের ফাঁক বন্ধ করতে ও কাতার সোজা করতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নির্দেশ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)।
(৪) মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে ‘দুখুলুল মাসজিদ’ বা ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে অন্তত দুই রাক’আত সালাত আদায় করে নিতে বলেছেন। মসজিদে প্রবেশ করে যদি জামা’আত শুরু না হয় তাহলে বসার আগে সালাতে দাঁড়াতে হবে। যদি সুন্নাতে মু’আক্কাদা সালাত থাকে তাহলে তা আদায় করতে হবে। নইলে, মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে, অন্তত দুই রাক’আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ সুন্নাত সালাত আদায় করতে হবে। সরাসরি জামাতে দাঁড়িয়ে গেলেও তাহিয়্যাতুল মসজিদের সুন্নাত আদায় হবে। কোনো সালাত না পড়ে মসজিদে বসে গেলে এই সুন্নাত পালনের সাওয়াব থেকে আমরা বঞ্চিত হব।
(৫) সালাতে দাঁড়ানোর সময় সামনে, তিন হাতের মধ্যে সুতরা বা আড়াল রাখা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নির্দেশিত ও আচরিত সুন্নাত।
(৬) সালাতের মধ্যে রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় ও দুই সাজদার মাঝে অন্তত কয়েক মুহূর্ত পরিপূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ানো ও বসা ওয়াজিব। অনেকেই এতে অবহেলা করেন। এতে সালাত শুদ্ধ হবে না।
(৭) অনেক মুসল্লী সালাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাড়ানো, বসা, হাত উঠানো, হাত রাখা ইত্যাদির খুঁটিনাটি সুন্নাত না জানার ফলে অগণিত সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। এগুলি অভিজ্ঞ আলিমগণের নিকট থেকে ব্যবহারিকভাবে শিক্ষা করা অতি প্রয়োজন।
(৮) ফরয সালাতের জামাতের শেষে সুন্নাত সালাত মসজিদে আদায় করলে ফরযের স্থান থেকে আগে-পিছে বা ডানে-বামে সরে সুন্নাত আদায় করা উত্তম। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন যে, ইমামের জন্য যে স্থানে দাঁড়িয়ে ফরয পড়েছেন সেই স্থানে দাঁড়িয়ে সুন্নাত আদায় করা মাকরূহ। মুক্তাদির জন্য স্থান পরিবর্তন উত্তম, তবে একই স্থানে সুন্নাত পড়লে মুক্তাদী গোনাহগার হবেন না।
No comments