সহিহ বুখারী শরীফ অধ্যায় "জুমু’আ" হাদিস নং -৯২৬ থেকে ৯৪১
৯২৬
حَدَّثَنَا
أَبُو الْيَمَانِ، قَالَ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ
حَدَّثَنِي عَلِيُّ بْنُ حُسَيْنٍ، عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ، قَالَ قَامَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَمِعْتُهُ حِينَ تَشَهَّدَ يَقُولُ
" أَمَّا بَعْدُ ". تَابَعَهُ الزُّبَيْدِيُّ عَنِ الزُّهْرِيِّ.
মিসওয়ার ইবনু মাখ্রামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
দাঁড়ালেন। অতঃপর আমি তাঁকে তাওহীদের সাক্ষ্য বাণী পাঠান্তে বলতে শুনলাম, ‘আম্মা
বা’দ’।
৯২৭
حَدَّثَنَا
إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبَانَ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ الْغَسِيلِ، قَالَ حَدَّثَنَا
عِكْرِمَةُ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ صَعِدَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ وَكَانَ آخِرَ مَجْلِسٍ جَلَسَهُ مُتَعَطِّفًا
مِلْحَفَةً عَلَى مَنْكِبَيْهِ، قَدْ عَصَبَ رَأْسَهُ بِعِصَابَةٍ دَسِمَةٍ،
فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ " أَيُّهَا النَّاسُ
إِلَىَّ ". فَثَابُوا إِلَيْهِ ثُمَّ قَالَ " أَمَّا بَعْدُ،
فَإِنَّ هَذَا الْحَىَّ مِنَ الأَنْصَارِ يَقِلُّونَ، وَيَكْثُرُ النَّاسُ، فَمَنْ
وَلِيَ شَيْئًا مِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم فَاسْتَطَاعَ أَنْ
يَضُرَّ فِيهِ أَحَدًا أَوْ يَنْفَعَ فِيهِ أَحَدًا، فَلْيَقْبَلْ مِنْ
مُحْسِنِهِمْ، وَيَتَجَاوَزْ عَنْ مُسِيِّهِمْ ".
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরের উপর
আরোহণ করলেন। এ ছিল তাঁর জীবনের শেষ মজলিস। তিনি বসেছিলেন, তাঁর দু’ কাঁধের উপর বড়
চাদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্টি। তিনি আল্লাহ্র গুণকীর্তন করলেন
এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার নিকট আস। লোকজন
তাঁর নিকট একত্র হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘আম্মা বা’দ’। শুনে রাখ, এ আনসার গোত্র
সংখ্যায় কমতে থাকবে এবং অন্য লোকেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকবে। কাজেই যে ব্যক্তি
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মাতের কোন বিষয়ের কর্তৃত্ব
লাভ করবে এবং সে এর সাহায্যে কারো ক্ষতি বা উপকার করার সুযোগ পাবে, সে যেন এই
আনসারদের সৎ লোকদের ভাল কাজগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের মন্দ কাজগুলো মাফ করে দেয়।
১১/৩০. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর দিন দু’ খুত্বার মধ্যখানে বসা।
৯২৮
حَدَّثَنَا
مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، قَالَ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ
اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله
عليه وسلم يَخْطُبُ خُطْبَتَيْنِ يَقْعُدُ بَيْنَهُمَا.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ খুত্বা
দিতেন আর দু’ খুত্বার মধ্যখানে বসতেন।
১১/৩১. অধ্যায়ঃ
মনোযোগের সাথে খুত্বা শোনা।
৯২৯
حَدَّثَنَا
آدَمُ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي
عَبْدِ اللَّهِ الأَغَرِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم " إِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ، وَقَفَتِ
الْمَلاَئِكَةُ عَلَى باب الْمَسْجِدِ يَكْتُبُونَ الأَوَّلَ فَالأَوَّلَ،
وَمَثَلُ الْمُهَجِّرِ كَمَثَلِ الَّذِي يُهْدِي بَدَنَةً، ثُمَّ كَالَّذِي
يُهْدِي بَقَرَةً، ثُمَّ كَبْشًا، ثُمَّ دَجَاجَةً، ثُمَّ بَيْضَةً، فَإِذَا
خَرَجَ الإِمَامُ طَوَوْا صُحُفَهُمْ، وَيَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জুমু’আর
দিন মসজিদের দরজায় মালাইকা (ফেরেশতাগণ) অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে পূর্বে
আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার পূর্বে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি
মোটাতাজা উট কুরবানী করে। অতঃপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী
করে। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি
ডিম দানকারীর ন্যায়। অতঃপর ইমাম যখন বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) তাঁদের খাতা
বন্ধ করে দিয়ে মনোযোগ সহকারে খুত্বা শ্রবণ করতে থাকেন।
১১/৩২. অধ্যায়ঃ
ইমাম খুত্বা দেয়ার সময় কাউকে আসতে দেখলে তাকে দু’ রাক’আত সালাত
আদায়ের নির্দেশ দেয়া।
৯৩০
حَدَّثَنَا
أَبُو النُّعْمَانِ، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ
دِينَارٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ وَالنَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم يَخْطُبُ النَّاسَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَالَ "
أَصَلَّيْتَ يَا فُلاَنُ ". قَالَ لاَ. قَالَ " قُمْ فَارْكَعْ
".
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (কোন এক) জুমু’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) লোকদের সামনে খুত্বা দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি আসলে তিনি তাকে
জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ,
সালাত আদায় করে নাও। [১]
[১] আধুনিক প্রকাশনী বুখারীর ৮৭৭ নং হাদীসের
টীকায় লিখেছেনঃ হাদীসের অন্য কতিপয় বর্ণনার ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবে এই সময়ে সালাত
না আদায় করাকে অধিকতর বিশুদ্ধ রীতি বলে গণ্য করা হয়েছে।
কিন্তু এটি নিতান্তই অনুবাদকের নিজস্ব মনগড়া মত ও সহীহ হাদীস বিরোধী কথা। বরং কোন সহীহ হাদীস নেই, একটি জাল হাদীসে রয়েছে।
মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক’আত সালাত পড়া সুন্নাত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক’আত সালাত পড়ার পূর্বে বসতে নিষেধ করেছেন এবং বসার পূর্বে সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাণীঃ আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে দু’ রাক’আত সালাত না পড়ে ততক্ষন পর্যন্ত যেন না বসে।
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নিশ্চয় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক’আত সালাত পড়ে। (বুখারী ১ম খণ্ড ৬৩, ১৫৬ পৃষ্ঠা। মিশকাত ৬৮ পৃষ্ঠা। বুখারী আঃ হক হাদীস ২৮৯। বুখারী ইঃফাঃ হাদীস নং ১০৮৯)
অতঃপর উক্ত হাদীসের উপর আমলার্থে জুমাআর খুত্বা চলাকালীনও এ সালাত আদায় করতে হবে।
আর এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, বুখারী ও মুসলিম যে হাদীসের ব্যাপারে ইত্তিফাক হয়েছেন সে সকল হাদীস অন্য সকল হাদীস হতে বেশী শক্তিশালী।
কিন্তু এটি নিতান্তই অনুবাদকের নিজস্ব মনগড়া মত ও সহীহ হাদীস বিরোধী কথা। বরং কোন সহীহ হাদীস নেই, একটি জাল হাদীসে রয়েছে।
মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক’আত সালাত পড়া সুন্নাত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক’আত সালাত পড়ার পূর্বে বসতে নিষেধ করেছেন এবং বসার পূর্বে সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাণীঃ আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে দু’ রাক’আত সালাত না পড়ে ততক্ষন পর্যন্ত যেন না বসে।
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নিশ্চয় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক’আত সালাত পড়ে। (বুখারী ১ম খণ্ড ৬৩, ১৫৬ পৃষ্ঠা। মিশকাত ৬৮ পৃষ্ঠা। বুখারী আঃ হক হাদীস ২৮৯। বুখারী ইঃফাঃ হাদীস নং ১০৮৯)
অতঃপর উক্ত হাদীসের উপর আমলার্থে জুমাআর খুত্বা চলাকালীনও এ সালাত আদায় করতে হবে।
আর এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, বুখারী ও মুসলিম যে হাদীসের ব্যাপারে ইত্তিফাক হয়েছেন সে সকল হাদীস অন্য সকল হাদীস হতে বেশী শক্তিশালী।
১১/৩৩. অধ্যায়ঃ
ইমাম খুত্বা দেয়ার সময় যিনি মসজিদে আগমন করবেন তার সংক্ষেপে দু’
রাক’আত সালাত আদায় করা।
৯৩১
حَدَّثَنَا
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَمْرٍو، سَمِعَ
جَابِرًا، قَالَ دَخَلَ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم يَخْطُبُ فَقَالَ " أَصَلَّيْتَ ". قَالَ لاَ. قَالَ
" فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক জুমা’আহ্র দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) খুত্বা দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না; তিনি বললেনঃ উঠ, দু’রাক’আত সালাত আদায় কর।
১১/৩৪. অধ্যায়ঃ
খুত্বায় দু’ হাত উত্তোলন করা।
৯৩২
حَدَّثَنَا
مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ
أَنَسٍ،. وَعَنْ يُونُسَ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ بَيْنَمَا
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِذْ قَامَ رَجُلٌ
فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَ الْكُرَاعُ، وَهَلَكَ الشَّاءُ، فَادْعُ
اللَّهَ أَنْ يَسْقِيَنَا. فَمَدَّ يَدَيْهِ وَدَعَا.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক জুম’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
খুত্বা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! (পানির অভাবে)
ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরীও মরে যাচ্ছে। কাজেই আপনি দু’আ করুন, যেন আল্লাহ্
আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তখন তিনি দু’হাত প্রসারিত করলেন এবং দু’আ করলেন।
১১/৩৫. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর দিন খুত্বায় বৃষ্টির জন্য দু’আ পাঠ করা।
৯৩৩
حَدَّثَنَا
إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، قَالَ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، قَالَ حَدَّثَنَا
أَبُو عَمْرٍو، قَالَ حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي
طَلْحَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ أَصَابَتِ النَّاسَ سَنَةٌ عَلَى
عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَبَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
يَخْطُبُ فِي يَوْمِ جُمُعَةٍ قَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ
هَلَكَ الْمَالُ وَجَاعَ الْعِيَالُ، فَادْعُ اللَّهَ لَنَا. فَرَفَعَ يَدَيْهِ،
وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ قَزَعَةً، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا وَضَعَهَا
حَتَّى ثَارَ السَّحَابُ أَمْثَالَ الْجِبَالِ، ثُمَّ لَمْ يَنْزِلْ عَنْ
مِنْبَرِهِ حَتَّى رَأَيْتُ الْمَطَرَ يَتَحَادَرُ عَلَى لِحْيَتِهِ صلى الله عليه
وسلم فَمُطِرْنَا يَوْمَنَا ذَلِكَ، وَمِنَ الْغَدِ، وَبَعْدَ الْغَدِ وَالَّذِي
يَلِيهِ، حَتَّى الْجُمُعَةِ الأُخْرَى، وَقَامَ ذَلِكَ الأَعْرَابِيُّ ـ أَوْ
قَالَ غَيْرُهُ ـ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، تَهَدَّمَ الْبِنَاءُ وَغَرِقَ
الْمَالُ، فَادْعُ اللَّهَ لَنَا. فَرَفَعَ يَدَيْهِ، فَقَالَ "
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا، وَلاَ عَلَيْنَا ". فَمَا يُشِيرُ بِيَدِهِ
إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ السَّحَابِ إِلاَّ انْفَرَجَتْ، وَصَارَتِ الْمَدِينَةُ
مِثْلَ الْجَوْبَةِ، وَسَالَ الْوَادِي قَنَاةُ شَهْرًا، وَلَمْ يَجِئْ أَحَدٌ
مِنْ نَاحِيَةٍ إِلاَّ حَدَّثَ بِالْجَوْدِ.
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার
দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় কোন এক জুমু’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) খুত্বা দিচ্ছিলিন। তখন এক বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহ্র
রসূল! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই
আপনি আল্লাহ্র নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’ হাত তুললেন। সে সময় আমরা
আকাশে এক খণ্ড মেঘও দেখিনি। যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু’আ
শেষে) তিনি দু’ হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট
খণ্ড উঠে আসল। অতঃপর তিনি মিম্বার হতে নীচে নামেননি, এমন সময় দেখতে পেলাম তাঁর
দাড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর পরে
ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুমু’আর দিন)
সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহ্র রসূল! (বৃষ্টির
কারণে) এখন আমাদের বাড়ী ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য
আল্লাহ্র নিকট দু’আ করুন। তখন তিনি দু’ হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ্ আমাদের
পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও), আমাদের উপর নয়। (দু’আর সময়) তিনি মেঘের এক একটি
খণ্ডের দিকে ইশারা করছিলেন, আর সেখানকার মেঘ কেটে যাচ্ছিল। এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ
পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে এবং কানাত উপত্যকার
পানি একমাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল, তখন (মদীনার) চারপাশের যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ
এসেছে, সে এ প্রবল বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।
১১/৩৬. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর দিন ইমাম খুত্বাহ দেয়ার সময় অন্যকে চুপ করানো।
যদি কেউ তার সাথীকে (মুসল্লীকে বলে) চুপ থাক, তাহলে সে একটি অনর্থক
কথা বললো।
সালমান ফারসী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, যখন ইমাম কথা বলবেন, তখন চুপ থাকবে।
সালমান ফারসী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, যখন ইমাম কথা বলবেন, তখন চুপ থাকবে।
৯৩৪
حَدَّثَنَا
يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ
شِهَابٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ،
أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا
قُلْتَ لِصَاحِبِكَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَنْصِتْ. وَالإِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ
لَغَوْتَ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু’আর
দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুত্বা দিচ্ছেন, তা হলে
তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।
১১/৩৭. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর দিনের সে মুহূর্তটি।
৯৩৫
حَدَّثَنَا
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ
الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
ذَكَرَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَالَ " فِيهِ سَاعَةٌ لاَ يُوَافِقُهَا
عَبْدٌ مُسْلِمٌ، وَهْوَ قَائِمٌ يُصَلِّي، يَسْأَلُ اللَّهَ تَعَالَى شَيْئًا
إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ ". وَأَشَارَ بِيَدِهِ يُقَلِّلُهَا.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন
সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম
বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি
তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে
মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।
১১/৩৮. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর সালাতে কিছু মুসল্লী যদি ইমামের নিকট হতে চলে যায় তাহলে ইমাম
ও অবশিষ্ট মুসল্লীগণের সালাত বৈধ হবে।
৯৩৬
حَدَّثَنَا
مُعَاوِيَةُ بْنُ عَمْرٍو، قَالَ حَدَّثَنَا زَائِدَةُ، عَنْ حُصَيْنٍ، عَنْ
سَالِمِ بْنِ أَبِي الْجَعْدِ، قَالَ حَدَّثَنَا جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ،
قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ نُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ
أَقْبَلَتْ عِيرٌ تَحْمِلُ طَعَامًا، فَالْتَفَتُوا إِلَيْهَا حَتَّى مَا بَقِيَ
مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ اثْنَا عَشَرَ رَجُلاً، فَنَزَلَتْ
هَذِهِ الآيَةُ {وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا
وَتَرَكُوكَ قَائِمًا}
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে
(জুমু’আর) সালাত আদায় করছিলাম। এমন সময় খাদ্য দ্রব্য বহনকারী একটি উটের কাফিলা
হাযির হল এবং তারা (মুসল্লীগণ) সে দিকে এত অধিক মনোযোগী হলেন যে, নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাত্র বারোজন মুসল্লী অবশিষ্ট ছিলেন।
তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “এবং যখন তারা ব্যবসা বা খেল তামাশা দেখতে পেল তখন সে
দিকে দ্রুত চলে গেল এবং আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে গেল”- (সূরা জুমু’আ ৬২/১১)।
১১/৩৯. অধ্যায় :
জুমু’আর (ফরয সালাতের) পূর্বে ও পরে সালাত আদায় করা।
৯৩৭
حَدَّثَنَا
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ
يُصَلِّي قَبْلَ الظُّهْرِ رَكْعَتَيْنِ، وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ، وَبَعْدَ
الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ فِي بَيْتِهِ، وَبَعْدَ الْعِشَاءِ رَكْعَتَيْنِ وَكَانَ
لاَ يُصَلِّي بَعْدَ الْجُمُعَةِ حَتَّى يَنْصَرِفَ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের পূর্বে
দু’ রাক’আত ও পরে দু’ রাক’আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’ রাক’আত এবং ‘ইশার পর দু’
রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আর জুমু’আর দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত
আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। [১]
[১] আধুনিক প্রকাশনীর বুখারীর ৮৮৪ নং হাদীসের টীকায় লিখেছেন :
জুমু’আর আগে ও পরে ৪/২ রাক’আত সুন্নাত পড়া বিশুদ্ধতর। কিন্তু জুমু’আর পূর্বে
দু’রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ ব্যতীত চার রাক’আত বলে নির্দিষ্ট করে কোন সংখ্যার সালাত
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ মর্মে বর্ণিত হাদীসগুলো বাতিল ও
অগ্রহণযোগ্য।
১১/৪০. অধ্যায় :
মহান আল্লাহ্র বাণী : “অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা যমীনে
ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহ্র অনুগ্রহ তালাশ করবে।” (সুরাহ্ জুমু’আ ৬২/১০)
৯৩৮
حَدَّثَنَا
سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو غَسَّانَ، قَالَ حَدَّثَنِي
أَبُو حَازِمٍ، عَنْ سَهْلٍ، قَالَ كَانَتْ فِينَا امْرَأَةٌ تَجْعَلُ عَلَى
أَرْبِعَاءَ فِي مَزْرَعَةٍ لَهَا سِلْقًا، فَكَانَتْ إِذَا كَانَ يَوْمُ جُمُعَةٍ
تَنْزِعُ أُصُولَ السِّلْقِ فَتَجْعَلُهُ فِي قِدْرٍ، ثُمَّ تَجْعَلُ عَلَيْهِ
قَبْضَةً مِنْ شَعِيرٍ تَطْحَنُهَا، فَتَكُونُ أُصُولُ السِّلْقِ عَرْقَهُ،
وَكُنَّا نَنْصَرِفُ مِنْ صَلاَةِ الْجُمُعَةِ فَنُسَلِّمُ عَلَيْهَا، فَتُقَرِّبُ
ذَلِكَ الطَّعَامَ إِلَيْنَا فَنَلْعَقُهُ، وَكُنَّا نَتَمَنَّى يَوْمَ
الْجُمُعَةِ لِطَعَامِهَا ذَلِكَ.
সাহ্ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বসবাসকারিণী জনৈকা মহিলা একটি ছোট নহরের
পাশে ক্ষেতে বীটের চাষ করতেন। জুমু’আর দিনে সে বীটের মূল তুলে এনে রান্নার জন্য
ডেগে চড়াতেন এবং এর উপর এক মুঠো যবের আটা দিয়ে রান্না করতেন। তখন এ বীট মূলই এর
গোশ্ত (গোশতের বিকল্প) হয়ে যেত। আমরা জুমু’আর সালাত হতে ফিরে এসে তাঁকে সালাম
দিতাম। তিনি তখন খাদ্য আমাদের সামনে রাখতেন এবং আমরা তা খেতাম। আমরা সে খাদ্যের
আশায় জুমু’আর দিন উদগ্রীব থাকতাম।
৯৩৯
حَدَّثَنَا
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ
أَبِيهِ، عَنْ سَهْلٍ، بِهَذَا وَقَالَ مَا كُنَّا نَقِيلُ وَلاَ نَتَغَدَّى
إِلاَّ بَعْدَ الْجُمُعَةِ.
সাহ্ল ইব্নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি আরো বলেছেন, জুমু’আ (সালাতের) পরই আমরা কায়লূলাহ (দুপুরের শয়ন ও
হাল্কা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম।
১১/৪১. অধ্যায় :
জুমু’আর পরে কায়লুলাহ (দুপুরে শয়ন ও হালকা নিদ্রা)।
৯৪০
حَدَّثَنَا
مُحَمَّدُ بْنُ عُقْبَةَ الشَّيْبَانِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ
الْفَزَارِيُّ، عَنْ حُمَيْدٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا، يَقُولُ كُنَّا نُبَكِّرُ
إِلَى الْجُمُعَةِ ثُمَّ نَقِيلُ.
হুমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন: আমরা সকাল সকাল জুমু’আয় যেতাম অতঃপর
(সালাত শেষে) কায়লূলাহ করতাম।
৯৪১
حَدَّثَنَا
سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو غَسَّانَ، قَالَ حَدَّثَنِي
أَبُو حَازِمٍ، عَنْ سَهْلٍ، قَالَ كُنَّا نُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم الْجُمُعَةَ ثُمَّ تَكُونُ الْقَائِلَةُ.
সাহ্ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে
জুমু’আর সালাত আদায় করতাম। অতঃপর দুপুরের বিশ্রাম ও হালকা নিদ্রা যেতাম।
No comments