সহীহ বুখারী শরীফ অধ্যায় "আল্লাহ্‌দ্রোহী ও ধর্মত্যাগীদেরকে তাওবার প্রতি আহ্বান ও তাদের সাথে যুদ্ধ" হাদিস নং - ৬৯১৮ থেকে ৬৯৩৯

আল্লাহ্‌দ্রোহী ও ধর্মত্যাগীদেরকে তাওবার প্রতি আহ্বান ও তাদের সাথে যুদ্ধ-৬৯১৮ – ৬৯৩৯
যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সঙ্গে শিরক করে তার গুনাহ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তার শাস্তি। আল্লাহ্‌ বলেনঃ নিশ্চয়ই শির্‌ক বিরাট জুল্‌ম- (সূরা লুক্বমান ৩১/১৩)। তুমি আল্লাহ্‌র শরীক স্থির করলে তোমার কর্ম তো বিফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত (সূরা আয্‌-যুমার ৩৯/৬৫)।

৬৯১৮

قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيمَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ {الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ} شَقَّ ذَلِكَ عَلَى أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَقَالُوا أَيُّنَا لَمْ يَلْبِسْ إِيمَانَهُ بِظُلْمٍ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّهُ لَيْسَ بِذَاكَ أَلاَ تَسْمَعُونَ إِلَى قَوْلِ لُقْمَانَ {إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ}
আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুল্‌ম দ্বারা কলুষিত করেনি... (সূরা আন‘আম ৬/৮২)। তখন তা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবাদের কাছে গুরুতর মনে হলো। তারা বললেন, আমাদের মাঝে এমন কে আছে যে তার ঈমানকে জুল্‌ম দ্বারা কলুষিত করে না। তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা অবশ্যই এমনটা নয়, তোমরা কি লুকমানের কথা শ্রবণ করনি? শিরকই বিরাট জুল্‌ম (সীমালঙ্ঘন)- (সূরা লুক্বমান ৩১/১৩)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫০)

৬৯১৯

مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ حَدَّثَنَا الْجُرَيْرِيُّ ح و حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ أَخْبَرَنَا سَعِيدٌ الْجُرَيْرِيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ أَبِي بَكْرَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ ثَلاَثًا أَوْ قَوْلُ الزُّورِ فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا لَيْتَهُ سَكَتَ
আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সবচেয়ে কঠিন কবীরা গুনাহ্‌ হচ্ছে আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। মিথ্যা সাক্ষ্য কথাটি তিনবার বললেন। অথবা বলেছেন; মিথ্যা বক্তব্য। কথাটি বারবার বলতে থাকলেন, এমন কি আমরা আকাঙ্ক্ষা করতে লাগলাম, হায় যদি তিনি নীরব হয়ে যেতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫১)

৬৯২০

مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوسَى أَخْبَرَنَا شَيْبَانُ عَنْ فِرَاسٍ عَنْ الشَّعْبِيِّ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مَا الْكَبَائِرُ قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ قَالَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ ثُمَّ عُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ قَالَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْيَمِينُ الْغَمُوسُ قُلْتُ وَمَا الْيَمِينُ الْغَمُوسُ قَالَ الَّذِي يَقْتَطِعُ مَالَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ هُوَ فِيهَا كَاذِبٌ
আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! কবীরা গুনাহ্‌সমূহ কী? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র সঙ্গে শরীক করা। সে বলল, তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃ তারপর পিতা-মাতার অবাধ্যতা। সে বলল, তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃ তারপর মিথ্যা কসম করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মিথ্যা শপথ কী? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি (শপথের সাহায্যে) মুসলিমের ধন-সম্পদ হরণ করে নেয়। অথচ সে এ শপথের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারী।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫২)

৬৯২১

خَلاَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ مَنْصُورٍ وَالأَعْمَشِ عَنْ أَبِي وَائِلٍ عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ أَنُؤَاخَذُ بِمَا عَمِلْنَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ قَالَ مَنْ أَحْسَنَ فِي الإِسْلاَمِ لَمْ يُؤَاخَذْ بِمَا عَمِلَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَمَنْ أَسَاءَ فِي الإِسْلاَمِ أُخِذَ بِالأَوَّلِ وَالْآخِرِ
ইব্‌নু মাস্‌‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক লোক বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা কি জাহিলী যুগের কাজ কর্মের জন্য পাকড়াও হবো? তিনি বললেনঃ যে লোক ইসলামী যুগে সৎ কাজ করবে সে জাহিলী যুগের কাজ কর্মের জন্য পাকড়াও হবেনা। আর যে ইসলাম কবুলের পর অসৎ কাজ করবে, সে প্রথম ও পরবর্তীর জন্য (উভয় সময়ের কৃতকর্মের জন্য) পাকড়াও হবে। [১২৩][মুসলিম ১/৫৩, হাঃ ১২০, আহমাদ ৩৬০৪, ৩৮৮৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৩)
 [১২৩] কাফির ইসলাম গ্রহণ করলে তার ইসলামপূর্ব যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। ফলে সে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে সৎ আমল করা অবস্থায় যদি মৃত্যু বরণ করে তাহলে পূর্বের কোন কুফুরী আমলের জন্য তাকে পাকড়াও করা হবে না। পক্ষান্তরে যদি ইসলাম গ্রহণ করার পর আবারো পূর্ববর্তী কুফুরী আমল করে অথবা মুরতাদ হয়ে যায়, আর এমতাবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাহলে তার মুসলমান হওয়ার পূর্বের এবং মুসলমান হওয়ার পরের সকল কুফুরীর জন্য তাকে পাকড়াও করা হবে। অবস্থা এমন যে, সে যেন কখনও মুসলমান হয়নি। (ফাতহুল বারী)

৮৮/. অধ্যায়ঃ

ধর্মত্যাগী পুরুষ ও নারীর বিধান এবং তাদেরকে তওবা প্রতি আহবান।
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) যুহ্‌রী ও ইব্‌রাহীম (রহঃ) বলেন, ধর্মত্যাগী নারীকে হত্যা করা হবে এবং তার থেকে তওবা আহবান করা হবে। আল্লাহ্ বলেনঃ ঈমান আনার পর যে সম্প্রদায় সত্য প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে আল্লাহ্ কিভাবে সৎ পথের নির্দেশ দেবেন...... এরাই তারা যারা পথভ্রষ্ট পর্যন্ত। (সূরা আল ‘ইমরান ৩/৮৬-৯০)
আল্লাহ্‌র বাণীঃ যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমরা যদি তাদের দল বিশেষের আনুগত্য কর তবে তারা তোমাদেরকে ঈমানের পর আবার সত্য প্রত্যাখ্যানকারীতে পরিণত করবে - (সূরা আল ‘ইমরান ৩/১০০)। আল্লাহ্ বলেন, যারা ঈমান আনে, পরে কুফরী করে এবং আবার ঈমান আনে আবার কুফরী করে, এরপর তাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায় আল্লাহ্ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদের কোন পথও দেখাবেন না - ( সূরা আন্‌-নিসা ৪/১৩৭)। আল্লাহ্ বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন হতে ফিরে গেলে আল্লাহ্ এমন এক জাতি আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে - (সূরা আল-মায়িদা ৫/৫৪)। আল্লাহ্ বলেনঃ যারা সত্য প্রত্যাখ্যানের জন্য হৃদয় খুলে রাখে তাদের উপর পতিত হয় আল্লাহ্‌র গযব এবং তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি। তা এজন্য যে, তারা ইহ জীবনকে পর জীবনের উপর প্রাধান্য দেয়- (সূরা নাহল ১৬/১০৬-১০৭)।......(আরবী) অর্থ... (আরবী)- অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তাদের জন্য যারা নির্যাতিত হবার পর দেশ ত্যাগ করে পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে তোমার প্রতিপালক এসবের পর তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু - (সূরা নাহল ১৬/১১০)। আল্লাহ্ বলেনঃ তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন হতে ফিরিয়ে না দেয়, যদি তারা সক্ষম হয়। তোমাদের মধ্যে যে কেউ স্বীয় দ্বীন হতে ফিরে যায় ও কাফির হয়ে মারা যায়, ইহকাল ও পরকালে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। এরাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে - (সূরা আল-বাকারা ২/২১৭)।

৬৯২২

أَبُو النُّعْمَانِ مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ أَيُّوبَ عَنْ عِكْرِمَةَ قَالَ أُتِيَ عَلِيٌّ بِزَنَادِقَةٍ فَأَحْرَقَهُمْ فَبَلَغَ ذَلِكَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَوْ كُنْتُ أَنَا لَمْ أُحْرِقْهُمْ لِنَهْيِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللهِ وَلَقَتَلْتُهُمْ لِقَوْلِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ
ইকরিমাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে একদল যিন্দীককে (নাস্তিক ও ধর্মত্যাগীকে) আনা হল। তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। এ ঘটনা ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না। কেননা, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিষেধাজ্ঞা আছে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। কারণ, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ আছে, যে কেউ তার দ্বীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা কর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৪)

৬৯২৩

مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ قُرَّةَ بْنِ خَالِدٍ حَدَّثَنِي حُمَيْدُ بْنُ هِلاَلٍ حَدَّثَنَا أَبُو بُرْدَةَ عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ أَقْبَلْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَعِي رَجُلاَنِ مِنْ الأَشْعَرِيِّينَ أَحَدُهُمَا عَنْ يَمِينِي وَالْآخَرُ عَنْ يَسَارِي وَرَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَسْتَاكُ فَكِلاَهُمَا سَأَلَ فَقَالَ يَا أَبَا مُوسَى أَوْ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ قَيْسٍ قَالَ قُلْتُ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أَطْلَعَانِي عَلَى مَا فِي أَنْفُسِهِمَا وَمَا شَعَرْتُ أَنَّهُمَا يَطْلُبَانِ الْعَمَلَ فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى سِوَاكِهِ تَحْتَ شَفَتِهِ قَلَصَتْ فَقَالَ لَنْ أَوْ لاَ نَسْتَعْمِلُ عَلَى عَمَلِنَا مَنْ أَرَادَهُ وَلَكِنْ اذْهَبْ أَنْتَ يَا أَبَا مُوسَى أَوْ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ قَيْسٍ إِلَى الْيَمَنِ ثُمَّ اتَّبَعَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ فَلَمَّا قَدِمَ عَلَيْهِ أَلْقَى لَهُ وِسَادَةً قَالَ انْزِلْ وَإِذَا رَجُلٌ عِنْدَهُ مُوثَقٌ قَالَ مَا هَذَا قَالَ كَانَ يَهُودِيًّا فَأَسْلَمَ ثُمَّ تَهَوَّدَ قَالَ اجْلِسْ قَالَ لاَ أَجْلِسُ حَتَّى يُقْتَلَ قَضَاءُ اللهِ وَرَسُولِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ فَأَمَرَ بِهِ فَقُتِلَ ثُمَّ تَذَاكَرَا قِيَامَ اللَّيْلِ فَقَالَ أَحَدُهُمَا أَمَّا أَنَا فَأَقُومُ وَأَنَامُ وَأَرْجُو فِي نَوْمَتِي مَا أَرْجُو فِي قَوْمَتِي
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এলাম। আমার সঙ্গে আশ‘আরী গোত্রের দু’জন লোক ছিল। একজন আমার ডানদিকে, অপরজন আমার বামদিকে। আর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন মিস্‌ওয়াক করছিলেন। উভয়েই তাঁর কাছে আবদার জানাল। তখন তিনি বললেনঃ হে আবূ মূসা! অথবা বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু কায়স! রাবী বলেন, আমি বললামঃ ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তারা তাদের অন্তরে কী আছে তা আমাকে জানায়নি এবং তারা যে চাকরি প্রার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি যেন তখন তাঁর ঠোঁটের নিচে মিস্‌ওয়াকের প্রতি লক্ষ্য করছিলাম যে তা এক কোণে সরে গেছে। তখন তিনি বললেন, আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিযুক্ত করব না বা করি না যে নিজেই তা চায়। বরং হে আবূ মূসা! অথবা বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু কায়স! তুমি ইয়ামানে যাও। এরপর তিনি তার পেছনে মু‘আয ইব্‌নু জাবাল (রাঃ)-কে পাঠালেন। যখন তিনি সেখানে পৌঁছলেন, তখন আবূ মূসা (রাঃ) তার জন্য একটি গদি বিছালেন আর বললেন, নেমে আসুন। ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শেকলে বাঁধা ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ঐ লোকটি কে? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, সে প্রথমে ইয়াহূদী ছিল এবং মুসলিম হয়েছিল। কিন্তু আবার সে ইয়াহূদী হয়ে গেছে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, বসুন। মু‘আয (রাঃ) বললেন, না, বসব না, যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে। এটাই আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। এরপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল। তারপর তাঁরা উভয়ই কিয়ামুল্‌ লায়ল (রাত্রি জাগরণ) সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন একজন বললেন, আমি কিন্তু ‘ইবাদতও করি, নিদ্রাও যাই। আর নিদ্রার অবস্থায় ঐ আশা রাখি যা ‘ইবাদাত অবস্থায় রাখি। [১২৪] [২২৬১; মুসলিম ৩৩/৩, হাঃ ১৮২৪, আহমাদ ১৯৬৮৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৫)
 [১২৪] কোন মুসলমান ধর্ম ত্যাগ করলে তাকে হত্যা করাই হল শরীয়তের বিধান। সাহাবীগণ (রাঃ) শরীয়তের বিধি-বিধান বাস্তবায়নে ছিলেন আপোষহীন। যে বান্দা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দেয়া নিয়ম বিধান অনুযায়ী যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে, সে যাবতীয় কার্যেই নেকী হাসিল করতে থাকে - তা সালাতই হোক বা নিদ্রাই হোক। যারা এশা ও ফযরের সালাত মসজিদে জামাতে সম্পাদন করে তারা রাতে ঘুমিয়েও সালাতের নেকী পায়। যারা এতিম বিধবা ও দুঃখী মানুষের সাহায্যে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখে, তারা রাতে ঘুমিয়েও সালাত সম্পাদনের নেকী লাভ করতে থাকে।

৮৮/. অধ্যায়ঃ

যারা ফরযসমূহ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং যাদেরকে ধর্মত্যাগের অপরাধে অপরাধী করা হয়েছে তাদেরকে হত্যা করা।

৬৯২৪

يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ لَمَّا تُوُفِّيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَاسْتُخْلِفَ أَبُو بَكْرٍ وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنْ الْعَرَبِ قَالَ عُمَرُ يَا أَبَا بَكْرٍ كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسَ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ فَمَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلاَّ بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু হল এবং আবূ বকর (রাঃ) খলীফা হলেন আর আরবের যারা কাফির হল, তখন ‘উমর (রাঃ) বললেন, হে আবূ বকর! আপনি কিভাবে লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন? অথচ নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যতক্ষণ না তারা ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নেই) বলবে। আর যে কেউ ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্‌’ বলে, যথার্থ কারণ না থাকলে সে তার জান-মাল আমার হাত থেকে রক্ষা করে নেয়। আর তার হিসাব আল্লাহ্‌র দায়িত্বে। [১২৫](আধুনিক প্রকাশনী-৬৪৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৬)
 [১২৫] কাজী আয়াজ ও অন্যরা বলেন, মুরতাদ হওয়া লোকগুলো ছিল তিন প্রকারের,
(১) প্রথম প্রকারঃ যারা মূর্তি পূজার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছিল।
(২) দ্বিতীয় প্রকারঃ যারা মুসাইলামাতুল কাযযাব ও আসওয়াদ আনাসীর অনুসারী ছিল। নবী সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পূর্বেই তারা নবুওয়াতের দাবী করেছিল। ইয়ামামার অধিবাসীরা মুসাইলামার অনুসারী ছিল। আর সান‘আর অধিবাসীরা ছিল আসওয়াদ আনাসির অনুসারী। নবী সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেই হত্যা করা হয়েছিল আসওয়াদকে। তার অনুসারীদের অল্প কিছু যা অবশিষ্ট ছিল তাদেরকে আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফতের সময় রাসূল সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যাকাত আদায়কারী আলেমরা হত্যা করেছিল। আর আবু বকর (রাঃ) খালিদ ইবনু ওয়ালিদের নেতৃত্বে একদল সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন মুসাইলামার বিরুদ্ধে এবং তাঁরা তাকে হত্যা করেছিল।
(৩) তৃতীয় প্রকারঃ যারা ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, কিন্তু যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। যাদের যুক্তি হল যাকাত রাসূল সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথেই নির্দিষ্ট। তারা তাদের স্বপক্ষে এই আয়াত পেশ করে,
(আরবী)
[সূরা আত্‌-তওবা (৯): ১০৩]
ফলে তাদের ধারণা ছিল যে, যাকাত দেয়া নবী সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সম্পৃক্ত। কেননা তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তাদেরকে পবিত্র করতে এবং তাদের উপর রহমতের জন্য দু‘আ করতে পারবে না। নবীর সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর পরে যদি যাকাত অন্যকে দেয় তাহলে তার দোয়া কীভাবে তাদের জন্য প্রশান্তির হবে?
এই প্রকার লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারেই ওমর (রাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর সাথে বিতর্ক করেছিলেন, যেমন এই পরিচ্ছেদের হাদীসে এসেছে। আর আবু মুহাম্মাদ ইবনু হাযম তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ (আরবী) এর মধ্যে বলেন, নবী সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পর আরবরা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।
(১) প্রথম শ্রেণীর লোক পূর্ণ ইসলামের উপরেই প্রতিষ্ঠিত ছিল - এদের সংখ্যাই সবচাইতে বেশী।
(২) দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক ইসলামের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল, কিন্তু তারা বলল, আমরা যাকাত দেয়া ছাড়া ইসলামের সকল বিধান প্রতিষ্ঠা করব। এরা প্রথম শ্রেণীর চাইতে সংখ্যায় ছিল কম।
(৩) তৃতীয় শ্রেণীর লোকেরা কুফর ও মুরতাদ হওয়ার ঘোষণা দেয়। যেমন- তুলাইহা ও সুজাহ এর অনুগামীরা।
(৪) চতুর্থ শ্রেণীর লোকেরা উপরোক্ত তিন শ্রেণীর লোকদের কারো অনুসরণ না করে অপেক্ষাই ছিল যে, যারা বিজয় লাভ করবে তাদেরকে তারা অনুসরণ করবে। কিন্তু আলহামদু লিল্লাহ, এক বছর অতিবাহিত না হতেই সবাই আবার ইসলামের সুশীতল ছায়ার তলে ফিরে এসেছিল। (ফাতহুল বারী)

৬৯২৫

قَالَ أَبُو بَكْرٍ وَاللهِ لأقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ وَاللهِ لَوْ مَنَعُونِي عَنَاقًا كَانُوا يُؤَدُّونَهَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهَا قَالَ عُمَرُ فَوَاللهِ مَا هُوَ إِلاَّ أَنْ رَأَيْتُ أَنْ قَدْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَ أَبِي بَكْرٍ لِلْقِتَالِ فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَقُّ
আবূ বক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমি যুদ্ধ করব। কেননা, যাকাত হল মালের হক। আল্লাহ্‌র কসম! যদি তারা একটি বক্‌রির বাচ্চাও না দেয় যা তারা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে দিত, তাহলে তা না দেয়ার কারণে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। ‘উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি বুঝতে পারলাম যে, এটা আর কিছু নয় এবং আল্লাহ্‌ আবূ বকর (রাঃ)-এর বক্ষ যুদ্ধের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। পরে আমি বুঝতে পারলাম যে, (আবূ বকর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন) এটি-ই হক।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৬)

৮৮/. অধ্যায়ঃ

যখন কোন যিম্মী বা অন্য কেউ নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বাক্‌চাতুরির মাধ্যমে গালি দেয় এবং স্পষ্ট করে না, যেমন তার কথা ‘আস্‌সামু আলাইকা’ (তোমার মরণ হোক)।

৬৯২৬

مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ أَبُو الْحَسَنِ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ عَنْ هِشَامِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ مَرَّ يَهُودِيٌّ بِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ السَّامُ عَلَيْكَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْكَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَدْرُونَ مَا يَقُولُ قَالَ السَّامُ عَلَيْكَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَلاَ نَقْتُلُهُ قَالَ لاَ إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ فَقُولُوا وَعَلَيْكُمْ
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে গেল। আর বলল, আস্‌সামু আলাইকা। তার উত্তরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওয়া আলাইকা। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের বললেনঃ তোমরা কি বুঝতে পেরেছ সে কী বলেছে? সে বলেছে, ‘আস্‌সামু আলাইকা’ (তোমার মরণ হোক)। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা কি তাকে হত্যা করব না? তিনি বললেনঃ না। বরং যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদেরকে সালাম করবে তখন তোমরা বলবে, ‘ওয়া আলাইকুম’ (তোমাদের উপরও)। [১২৬](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৭)
 [১২৬] ওয়া ‘আলাইকুম - তোমাদের উপরও। অর্থাৎ যেমন অকল্যাণ চাইলে, তোমাদের উপরও তেমন অকল্যাণ পতিত হোক।

৬৯২৭

أَبُو نُعَيْمٍ عَنْ ابْنِ عُيَيْنَةَ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ اسْتَأْذَنَ رَهْطٌ مِنْ الْيَهُودِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا السَّامُ عَلَيْكَ فَقُلْتُ بَلْ عَلَيْكُمْ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ فَقَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الأَمْرِ كُلِّهِ قُلْتُ أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالُوا قَالَ قُلْتُ وَعَلَيْكُمْ
আবূ নু‘আয়ম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদল ইয়াহূদী নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে প্রবেশের অনুমতি চাইল। (প্রবেশ করার সময়) তারা বলল ‘আস্‌সামু আলাইকা’ (তোমার মৃত্যু হোক)। তখন আমি বললাম, বরং তোদের উপর মৃত্যু ও লা‘নত হোক। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আয়িশা! আল্লাহ্ কোমল। তিনি সকল কাজে কোমলতা পছন্দ করেন। আমি বললাম, আপনি কি শুনেননি তারা কী বলেছে? তিনি বললেনঃ আমিও তো বলেছি ওয়া-আলাইকুম (এবং তোমাদের উপরও)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৮)

৬৯২৮

مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ عَنْ سُفْيَانَ وَمَالِكِ بْنِ أَنَسٍ قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ دِينَارٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ الْيَهُودَ إِذَا سَلَّمُوا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنَّمَا يَقُولُونَ سَامٌ عَلَيْكَ فَقُلْ عَلَيْكَ
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াহূদীরা যখন তোমাদের কাউকে সালাম করে তারা ‘সামু ‘আলাইকুম’ বলে। তাই তোমরা বলবে, ‘আলাইকা - তোমাদের উপর। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৯)

৮৮/. অধ্যায়ঃ

অত্যাচারিত হবার পর ও কাওম এর জন্য ক্ষমার পার্থনা করা

৬৯২৯

عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ قَالَ حَدَّثَنِي شَقِيقٌ قَالَ قَالَ عَبْدُ اللهِ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَحْكِي نَبِيًّا مِنْ الأَنْبِيَاءِ ضَرَبَهُ قَوْمُهُ فَأَدْمَوْهُ فَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ وَيَقُولُ رَبِّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যেন লক্ষ্য করছিলাম যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক নবীর কথা বর্ণনা করেছেন যাকে তাঁর সম্প্রদায় প্রহার করে রক্তাক্ত করে ফেলে, আর তিনি আপন চেহারা থেকে রক্ত মুছছেন ও বলছেনঃ হে রব! তুমি আমার কাওমকে ক্ষমা করে দাও। কেননা, তারা বুঝে না। [১২৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬০)
 [১২৭] যে নবী নির্যাতিত, নিপীড়িত, রক্তে রঞ্জিত হওয়ার পরেও বদ দোয়া না করে বলেন, “হে আমার প্রতিপালক আমার ক্বওমকে তুমি ক্ষমা করে দাও, কেননা তারা তো বুঝে না।” সেই নবী যে কতবড় উদার, ধৈর্যশীল, উম্মাতের হিতাকাংক্ষী এবং সহানুভূতিশীল তা সকলের ভাবা উচিত।

৮৮/. অধ্যায়ঃ

খারিজী সম্প্রদায় ও মুলহিদদের অপরাধ প্রমাণিত হবার পর তাদেরকে হত্যা করা।
এবং আল্লাহ্‌র বাণীঃ “আল্লাহ্ এমন নন যে, তিনি কোন সম্প্রদায়কে পথ দেখানোর পর তাদেরকে গোমরাহ করবেন - তাদেরকে কী বিষয়ে সাবধানে চলতে হবে তা সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত না করা পর্যন্ত।” (সূরা আত্-তওবা ৯/১১৫)
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তাদেরকে আল্লাহ্‌র সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং তিনি বলেছেন, তারা এমন কিছু আয়াতকে মু’মিনদের ওপর প্রয়োগ করেছে যা কাফিরদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।

৬৯৩০

عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ حَدَّثَنَا خَيْثَمَةُ حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ غَفَلَةَ قَالَ عَلِيٌّ إِذَا حَدَّثْتُكُمْ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَدِيثًا فَوَاللهِ لأَنْ أَخِرَّ مِنْ السَّمَاءِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَكْذِبَ عَلَيْهِ وَإِذَا حَدَّثْتُكُمْ فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ فَإِنَّ الْحَرْبَ خِدْعَةٌ وَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ سَيَخْرُجُ قَوْمٌ فِي آخِرِ الزَّمَانِ أَحْدَاثُ الأَسْنَانِ سُفَهَاءُ الأَحْلاَمِ يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ لاَ يُجَاوِزُ إِيمَانُهُمْ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنْ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنْ الرَّمِيَّةِ فَأَيْنَمَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ فَإِنَّ فِي قَتْلِهِمْ أَجْرًا لِمَنْ قَتَلَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
সুয়ারদ ইব্‌নু গাফালা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি যখন তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন হাদীস বয়ান করি ‘আল্লাহ্‌র শপথ! তখন তাঁর উপর মিথ্যা কথা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে নিচে পড়ে যাওয়াটা আমার কাছে শ্রেয়। কিন্তু আমি যদি আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয় সম্পর্কে কিছু বলি, তাহলে মনে রাখতে হবে যে, যুদ্ধ একটি কৌশল। আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে অল্পবয়স্ক যুবক, নির্বোধ। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে। অথচ ঈমান তাদের গলা অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তাদেরকে যেখানেই তোমরা পাবে হত্যা করবে। কেননা তাদেরকে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য কেয়ামতের দিনে প্রতিদান আছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬১)

৬৯৩১

مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ قَالَ سَمِعْتُ يَحْيَى بْنَ سَعِيدٍ قَالَ أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ وَعَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّهُمَا أَتَيَا أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ فَسَأَلاَهُ عَنْ الْحَرُورِيَّةِ أَسَمِعْتَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ أَدْرِي مَا الْحَرُورِيَّةُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ يَخْرُجُ فِي هَذِهِ الأُمَّةِ وَلَمْ يَقُلْ مِنْهَا قَوْمٌ تَحْقِرُونَ صَلاَتَكُمْ مَعَ صَلاَتِهِمْ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حُلُوقَهُمْ أَوْ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنْ الدِّينِ مُرُوقَ السَّهْمِ مِنْ الرَّمِيَّةِ فَيَنْظُرُ الرَّامِي إِلَى سَهْمِهِ إِلَى نَصْلِهِ إِلَى رِصَافِهِ فَيَتَمَارَى فِي الْفُوقَةِ هَلْ عَلِقَ بِهَا مِنْ الدَّمِ شَيْءٌ
আবূ সালামা ও ‘আত্বা ইব্‌নু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে, তারা আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-এর কাছে এলেন। তারা তাঁকে ‘হারূরিয়্যা’ সম্প্রদায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন যে, আপনি কি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এদের ব্যাপারে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হারূরিয়্যা কী তা আমি জানি না। তবে নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি এ উম্মাতের মধ্যে বের হবে। তার থেকে সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে কথাটি বলেননি। যাদের সালাতের তুলনায় তোমরা তোমাদের সালাতকে তুচ্ছ ভাববে। তারা কুরআন পড়বে বটে কিন্তু তা তাদের গলা অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তীর নিক্ষেপকারী তীরের প্রতি, তার অগ্রাংশের প্রতি, তীরের মুখে বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করে, তীরের ছিলার বেলায়ও সন্দেহ হয় যে তাতে কিছু রক্ত লেগে থাকল কি না। [১২৮](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬২)
 [১২৮] এরা ইসলাম বর্হিভূত খারিজী সম্প্রদায়। ‘আলী (রাঃ)’র সময় তাদের আবির্ভাব ঘটেছিল।

৬৯৩২

يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ حَدَّثَنِي ابْنُ وَهْبٍ قَالَ حَدَّثَنِي عُمَرُ أَنَّ أَبَاهُ حَدَّثَهُ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ وَذَكَرَ الْحَرُورِيَّةَ فَقَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَمْرُقُونَ مِنْ الإِسْلاَمِ مُرُوقَ السَّهْمِ مِنْ الرَّمِيَّةِ
আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি হারূরিয়্যা সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তারা ইসলাম থেকে এমনিভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার থেকে বের হয়ে যায়। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬৩)

৮৮/. অধ্যায়ঃ

যারা মনোতুষ্টির জন্য খারিজীদের সঙ্গে যুদ্ধ ত্যাগ করে এবং এজন্য যে যাতে লোকেরা তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ না করে।

৬৯৩৩

عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا هِشَامٌ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ بَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْسِمُ جَاءَ عَبْدُ اللهِ بْنُ ذِي الْخُوَيْصِرَةِ التَّمِيمِيُّ فَقَالَ اعْدِلْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ وَيْلَكَ وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَعْدِلْ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ دَعْنِي أَضْرِبْ عُنُقَهُ قَالَ دَعْهُ فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ مَعَ صَلاَتِهِ وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِ يَمْرُقُونَ مِنْ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنْ الرَّمِيَّةِ يُنْظَرُ فِي قُذَذِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَصْلِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي رِصَافِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَضِيِّهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ قَدْ سَبَقَ الْفَرْثَ وَالدَّمَ آيَتُهُمْ رَجُلٌ إِحْدَى يَدَيْهِ أَوْ قَالَ ثَدْيَيْهِ مِثْلُ ثَدْيِ الْمَرْأَةِ أَوْ قَالَ مِثْلُ الْبَضْعَةِ تَدَرْدَرُ يَخْرُجُونَ عَلَى حِينِ فُرْقَةٍ مِنْ النَّاسِ قَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَشْهَدُ سَمِعْتُ مِنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيًّا قَتَلَهُمْ وَأَنَا مَعَهُ جِيءَ بِالرَّجُلِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِي نَعَتَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَنَزَلَتْ فِيهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কিছু বণ্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু যুলখুওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! ইনসাফ করুন। তিনি বললেনঃ আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তা হলে আর কে ইনসাফ করবে? ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) বললেন, আমাকে অনুমতি দিন, তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও। তার জন্য সাথীরা আছে। যাদের সালাতের তুলনায় তোমরা তোমাদের সালাতকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের সিয়ামের তুলনায় তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের প্রতি লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে দেখলেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাবার সময় তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায়। অথবা বলেছেন, অতিরিক্ত গোশতের টুকরার ন্যায়। লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় তাদের আবির্ভাব ঘটবে। আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ‘আলী (রাঃ) তাদেরকে হত্যা করেছেন। আমি তখন তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তখন নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেয়া বর্ণনার সংগে মিলে এমন ব্যক্তিকে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, ওর সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছেঃ “ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সদকা সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে”– (সূরা আত্-তওবা ৯/৫৮)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬৪)

৬৯৩৪

مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ حَدَّثَنَا الشَّيْبَانِيُّ حَدَّثَنَا يُسَيْرُ بْنُ عَمْرٍو قَالَ قُلْتُ لِسَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ هَلْ سَمِعْتَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ فِي الْخَوَارِجِ شَيْئًا قَالَ سَمِعْتُهُ يَقُولُ وَأَهْوَى بِيَدِهِ قِبَلَ الْعِرَاقِ يَخْرُجُ مِنْهُ قَوْمٌ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنْ الإِسْلاَمِ مُرُوقَ السَّهْمِ مِنْ الرَّمِيَّةِ
ইউসায়র ইব্‌নু ‘আম্‌র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি সাহ্‌ল ইব্‌নু হুনায়ফ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খারিজীদের সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন কি? তিনি বললেন, আমি তাকে বলতে শুনেছি, আর তখন তিনি তাঁর হাত ইরাকের দিকে বাড়িয়েছিলেন যে, সেখান থেকে এমন একটি সম্প্রদায় বের হবে যারা কুরআন পড়বে সত্য, কিন্তু তা তাদের গলা অতিক্রম করবে না, তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। [৩৩৪৪; মুসলিম ১২/৪৯, হাঃ ১০৬৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬৫)

৮৮/. অধ্যায়ঃ

নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ কক্ষনো কেয়ামত ঘটবে না, যতক্ষণ না দু‘টো দল পরস্পর লড়াই করবে, অথচ তাদের দাবি হবে একটাই।

৬৯৩৫

عَلِيٌّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا أَبُو الزِّنَادِ عَنْ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَقْتَتِلَ فِئَتَانِ دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না এমন দু’টি দল পরস্পর লড়াই করবে, যাদের দাবী হবে অভিন্ন। [১২৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬৬)
 [১২৯] উল্লেখিত হাদীসটি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের নিদর্শনের অন্তর্গত একটি হাদীস। অন্যদিকে আবার হাদীসটিতে বর্ণনা করা হয়েছে কিয়ামতের ছোট আলামতের একটি আলামত। আর তা হল, আলী (রাঃ) ও মুআ’বীয়া (রাঃ) এর মাঝে সংঘটিত সিফফীনের যুদ্ধ। (ফাতহুল বারী)

৮৮/. অধ্যায়ঃ

ব্যাখ্যা দানকারীদের ব্যাপারে যা বর্ণনা করা হয়েছে।

৬৯৩৬

قَالَ أَبُو عَبْد اللهِ وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِي يُونُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ الْمِسْوَرَ بْنَ مَخْرَمَةَ وَعَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنَ عَبْدٍ الْقَارِيَّ أَخْبَرَاهُ أَنَّهُمَا سَمِعَا عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ يَقُولُ سَمِعْتُ هِشَامَ بْنَ حَكِيمٍ يَقْرَأُ سُورَةَ الْفُرْقَانِ فِي حَيَاةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَاسْتَمَعْتُ لِقِرَاءَتِهِ فَإِذَا هُوَ يَقْرَؤُهَا عَلَى حُرُوفٍ كَثِيرَةٍ لَمْ يُقْرِئْنِيهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَذَلِكَ فَكِدْتُ أُسَاوِرُهُ فِي الصَّلاَةِ فَانْتَظَرْتُهُ حَتَّى سَلَّمَ ثُمَّ لَبَّبْتُهُ بِرِدَائِهِ أَوْ بِرِدَائِي فَقُلْتُ مَنْ أَقْرَأَكَ هَذِهِ السُّورَةَ قَالَ أَقْرَأَنِيهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ لَهُ كَذَبْتَ فَوَاللهِ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَقْرَأَنِي هَذِهِ السُّورَةَ الَّتِي سَمِعْتُكَ تَقْرَؤُهَا فَانْطَلَقْتُ أَقُودُهُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي سَمِعْتُ هَذَا يَقْرَأُ بِسُورَةِ الْفُرْقَانِ عَلَى حُرُوفٍ لَمْ تُقْرِئْنِيهَا وَأَنْتَ أَقْرَأْتَنِي سُورَةَ الْفُرْقَانِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَرْسِلْهُ يَا عُمَرُ اقْرَأْ يَا هِشَامُ فَقَرَأَ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةَ الَّتِي سَمِعْتُهُ يَقْرَؤُهَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَكَذَا أُنْزِلَتْ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اقْرَأْ يَا عُمَرُ فَقَرَأْتُ فَقَالَ هَكَذَا أُنْزِلَتْ ثُمَّ قَالَ إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ
উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হিশাম ইব্‌নু হাকীম (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবিত অবস্থায় সূরা ফুরক্বান পড়তে শুনেছি। আমি তার পড়ার প্রতি কর্ণপাত করলাম, (আমি লক্ষ্য করলাম) যে, তিনি এর অনেকগুলো অক্ষর এমন নিয়মে পড়ছেন, যে নিয়মে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পড়াননি। ফলে আমি তাকে সালাতের মাঝেই আক্রমণ করতে প্রস্তুত হলাম। কিন্তু সালাম ফিরানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সালাম ফিরানোর পর আমি তাকে তার চাদর দিয়ে অথবা বললেন আমার চাদর দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আর বললাম, তোমাকে এ সূরা কে পড়িয়েছে? তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তা পড়িয়েছেন। আমি তাকে বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহ্‌র শপথ! রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এ সূরা পড়িয়েছেন যা তোমাকে পড়তে শুনেছি। তারপর আমি তাকে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে টেনে নিয়ে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি এ লোককে সূরা ফুরক্বান এমন অক্ষর দিয়ে পড়তে শুনেছি যা আপনি আমাকে পড়াননি। আর আপনি তো আমাকে সূরা ফুরক্বান পড়িয়েছেন। তিনি বলেন, তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘উমর! তাকে ছেড়ে দাও। (আর বললেন) হে হিশাম! তুমি পড় তো। হিশাম তাঁর কাছে সেভাবেই পড়লেন, যেভাবে তাকে তা পড়তে আমি শুনেছিলাম। রসূলুল্লাহ্ (সা) বললেনঃ এভাবেই অবতীর্ণ করা হয়েছে। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘উমর ! তুমিও পড়। আমি পড়লাম। তখন তিনি বললেনঃ এভাবেও অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতঃপর বললেন, এ কুরআন সাত (কিরাআতে) ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। কাজেই যে পদ্ধতিতেই সহজ হয় সে পদ্ধতিতেই তোমরা তা পাঠ কর। [১৩০] (আধুনিক প্রকাশনী- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬৭৪)
যেমন আল্লাহর বাণী مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ)) কেউ পড়েছেন مَالِكِ। মুহাম্মাদ ইবনু সুমাইকা مَالِكَ পড়েছেন। কেউ পড়েছেন مَلْكِ, কেউ পড়েছেন مَلِيْكِ। নাফে‘ مَالِكِ এর স্থলে مَلِكِيْ পড়েছেন। (তাফসীর কুরতুবী দ্রষ্টব্য)।

৬৯৩৭

إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ أَخْبَرَنَا وَكِيعٌ ح و حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيمَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ {الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ} شَقَّ ذَلِكَ عَلَى أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَقَالُوا أَيُّنَا لَمْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَيْسَ كَمَا تَظُنُّونَ إِنَّمَا هُوَ كَمَا قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ {يَا بُنَيَّ لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ}
আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুল্‌ম দ্বারা কলুষিত করেনি - (সূরা আন‘আম ৬/৮২), তখন তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবাদের জন্য কঠিন মনে হল। তারা বলল, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে তার ঈমানকে যুল্‌ম দ্বারা কলুষিত করে না? তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা যেভাবে ধারণা করছ তা তেমন নয়। বরং এটা হচ্ছে ঐরূপ যেমন লুক্‌মান (আরবী) তার পুত্রকে বলেছিলেনঃ “হে বৎস! আল্লাহ্‌র সঙ্গে কোন শরীক করো না। শির্‌ক তো বড় যুল্ম (সীমালঙ্ঘন)”- (সূরা লুক্বমান ৩১/১৩)। [১৩১](আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬৮)
কাউকে তার ন্যায্য অধিকার না দেয়াই হল ظلم যুল্ম। لاشريك হওয়ার মর্যাদা একমাত্র আল্লাহর। তাঁর সেই মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করাই ظلم বড় যুল্ম।

৬৯৩৮

عَبْدَانُ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ أَخْبَرَنِي مَحْمُودُ بْنُ الرَّبِيعِ قَالَ سَمِعْتُ عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ غَدَا عَلَيَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَجُلٌ أَيْنَ مَالِكُ بْنُ الدُّخْشُنِ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَّا ذَلِكَ مُنَافِقٌ لاَ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَلاَ تَقُولُوهُ يَقُولُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللهِ قَالَ بَلَى قَالَ فَإِنَّهُ لاَ يُوَافَى عَبْدٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِهِ إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ النَّارَ
ইতবান ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকালে আমার কাছে আসলেন। তখন এক লোক বলল, মালিক ইব্‌নু দুখ্‌শুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসে না। তা শুনে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি এ কথা বলনি যে, সে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি চেয়ে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্’ বলে। তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ যে কোন বান্দা কেয়ামতের দিন ঐ কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। [৪২৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৬৯)

৬৯৩৯

مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ عَنْ حُصَيْنٍ عَنْ فُلاَنٍ قَالَ تَنَازَعَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمٰنِ وَحِبَّانُ بْنُ عَطِيَّةَ فَقَالَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمٰنِ لِحِبَّانَ لَقَدْ عَلِمْتُ مَا الَّذِي جَرَّأَ صَاحِبَكَ عَلَى الدِّمَاءِ يَعْنِي عَلِيًّا قَالَ مَا هُوَ لاَ أَبَا لَكَ قَالَ شَيْءٌ سَمِعْتُهُ يَقُولُهُ قَالَ مَا هُوَ قَالَ بَعَثَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم وَالزُّبَيْرَ وَأَبَا مَرْثَدٍ وَكُلُّنَا فَارِسٌ قَالَ انْطَلِقُوا حَتَّى تَأْتُوا رَوْضَةَ حَاجٍ قَالَ أَبُو سَلَمَةَ هَكَذَا قَالَ أَبُو عَوَانَةَ حَاجٍ فَإِنَّ فِيهَا امْرَأَةً مَعَهَا صَحِيفَةٌ مِنْ حَاطِبِ بْنِ أَبِي بَلْتَعَةَ إِلَى الْمُشْرِكِينَ فَأْتُونِي بِهَا فَانْطَلَقْنَا عَلَى أَفْرَاسِنَا حَتَّى أَدْرَكْنَاهَا حَيْثُ قَالَ لَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَسِيرُ عَلَى بَعِيرٍ لَهَا وَقَدْ كَانَ كَتَبَ إِلَى أَهْلِ مَكَّةَ بِمَسِيرِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَيْهِمْ فَقُلْنَا أَيْنَ الْكِتَابُ الَّذِي مَعَكِ قَالَتْ مَا مَعِي كِتَابٌ فَأَنَخْنَا بِهَا بَعِيرَهَا فَابْتَغَيْنَا فِي رَحْلِهَا فَمَا وَجَدْنَا شَيْئًا فَقَالَ صَاحِبَايَ مَا نَرَى مَعَهَا كِتَابًا قَالَ فَقُلْتُ لَقَدْ عَلِمْنَا مَا كَذَبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ حَلَفَ عَلِيٌّ وَالَّذِي يُحْلَفُ بِهِ لَتُخْرِجِنَّ الْكِتَابَ أَوْ لأُجَرِّدَنَّكِ فَأَهْوَتْ إِلَى حُجْزَتِهَا وَهِيَ مُحْتَجِزَةٌ بِكِسَاءٍ فَأَخْرَجَتْ الصَّحِيفَةَ فَأَتَوْا بِهَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللهِ قَدْ خَانَ اللهَ وَرَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ دَعْنِي فَأَضْرِبَ عُنُقَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا حَاطِبُ مَا حَمَلكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مَا لِي أَنْ لاَ أَكُونَ مُؤْمِنًا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَلَكِنِّي أَرَدْتُ أَنْ يَكُونَ لِي عِنْدَ الْقَوْمِ يَدٌ يُدْفَعُ بِهَا عَنْ أَهْلِي وَمَالِي وَلَيْسَ مِنْ أَصْحَابِكَ أَحَدٌ إِلاَّ لَهُ هُنَالِكَ مِنْ قَوْمِهِ مَنْ يَدْفَعُ اللهُ بِهِ عَنْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ قَالَ صَدَقَ لاَ تَقُولُوا لَهُ إِلاَّ خَيْرًا قَالَ فَعَادَ عُمَرُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ قَدْ خَانَ اللهَ وَرَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ دَعْنِي فَلِأَضْرِبْ عُنُقَهُ قَالَ أَوَلَيْسَ مِنْ أَهْلِ بَدْرٍ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ اللهَ اطَّلَعَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ أَوْجَبْتُ لَكُمْ الْجَنَّةَ فَاغْرَوْرَقَتْ عَيْنَاهُ فَقَالَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ أَبُو عَبْد اللهِ خَاخٍ أَصَحُّ وَلَكِنْ كَذَا قَالَ أَبُو عَوَانَةَ حَاجٍ وَحَاجٍ تَصْحِيفٌ وَهُوَ مَوْضِعٌ وَهُشَيْمٌ يَقُولُ خَاخٍ
একজন রাবী হতে থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন কারণে আবূ ‘আবদুর রহমান ও হিববান ইবনু আতিয়্যার মাঝে ঝগড়া বাধে। আবূ ‘আবদুর রহমান হিববানকে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, কোন্ বিষয়টি আপনার সাথীকে রক্তপাতে দুঃসাহস জুগিয়েছে। সাথী, অর্থাৎ ‘আলী (রাঃ)। সে বলল, সে কী! তোমার পিতা জীবিত না থাকুক। আবূ ‘আবদুর রহমান বলল, তা ‘আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। হিববান বলল, সে কী? আবদুর রহমান বলল, যুবায়র, আবূ মারছাদ এবং আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠালেন। আমরা সকলেই অশ্বারোহী ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা রওযায়ে হাজ পর্যন্ত যাবে। আবূ সালামাহ (রহ.) বলেন, আবূ আওয়ানা (রহ.) সেরকমই বলেছেন। সেখানে একজন মহিলা আছে, যার কাছে হাতিব ইবনু আবূ বাল্তা‘আ (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে (মক্কার) মুশরিকদের কাছে পাঠানো একখানা চিঠি আছে। তোমরা তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। আমরা আমাদের ঘোড়ায় চড়ে রওনা দিলাম। অবশেষে আমরা তাকে ঐ জায়গায় পেলাম যে জায়গার কথা আমাদের রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন। সে তার উটে চলছে। আবূ বালতা‘আ (রাঃ) মক্কাবাসীদের কাছে তাদের দিকে রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওনা হওয়ার সংবাদ জানিয়ে পত্র লিখেছেন। আমরা বললাম, তোমার সঙ্গে যে পত্র আছে তা কোথায়? সে বলল, আমার সঙ্গে কোন পত্র নেই। আমরা তার উটকে বসালাম এবং তার হাওদায় খুঁজলাম। কিন্তু কিছুই পেলাম না। তখন আমার সাথী দু’জন বলল, তার সঙ্গে তো আমরা কোন পত্র দেখছি না। আমি বললাম, আমরা অবশ্যই জানি যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা বলেননি। তারপর ‘আলী (রাঃ) এই বলে কসম করে বললেন, ঐ সত্তার কসম! যাঁর নামে কসম করা হয়, অবশ্যই তোমাকে চিঠি বের করে দিতে হবে। নইলে তোমাকে উলঙ্গ করে ফেলব। তখন সে তার চাদর বাঁধা কোমরের প্রতি দৃষ্টি দিল এবং (সেখান থেকে) চিঠিটি বের করে দিল। তারা চিঠিটি নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাজির হলেন। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে আল্লাহ্, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের সঙ্গে খিয়ানত করেছে। আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে হাতিব! এ কাজে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কেন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখব না। আসল কথা হল, আমি চাচ্ছিলাম যে, মক্কা্বাসীর প্রতি আমার দ্বারা অনুগ্রহের কাজ হোক যার বিনিময়ে আমার পরিবারবর্গ ও মাল ধন রক্ষা পায়। আপনার সঙ্গীদের সকলেরই সেখানে নিজ গোত্রীয় এমন লোক আছে, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ্ তার পরিবারবর্গ ও মাল ধন রক্ষার ব্যবস্থা করবেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে ঠিকই বলেছে। কাজেই তোমরা তার সম্পর্কে ভালো ব্যতীত মন্দ কোন কথা বলো না। বর্ণনাকারী বলেন, ‘উমার (রাঃ) পুনরায় বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে আল্লাহ্, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের সঙ্গে খিয়ানত করেছে। আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, সে কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নয়? তুমি কী করে জানবে আল্লাহ্ তাদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেনঃ তোমরা যা ইচ্ছে কর, তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত করে দিয়েছি। এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ)-এর দু'চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল এবং তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন।[১] [৩০০৭]

আবূ ‘আবদুল্লাহ্ [বুখারী (রহ.)] বলেন,
خَاخٍ সবচেয়ে বিশুদ্ধ। তবে আবূ আওয়ানা (রহ.) অনুরূপ حَاجٍ বলেছেন, আবূ ‘আবদুল্লাহ্ [বুখারী (রহ.)] বলেছে خََاجٍ বিকৃতি। আর এটি একটি স্থান। হুশায়ম (রহ.) خَاخٍ বলেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৭০)
 [১৩২] উল্লেখিত হাদীসের শিক্ষা:
(১) আনন্দের মুহূর্তে কান্না করা।
(২) ‘উমর (রাঃ) ও সমস্ত বদরী সাহাবীদের গুণ ও কৃতিত্ব।
(৩)’উমর (রাঃ)-এর শিক্ষা পাওয়া। কারণ নেতার উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া হাদ্দ কায়িম করা বা শাস্তি দেয়া উচিত নয়।
(৪) অবাধ্যর কোন মর্যাদা নেই।
(৫) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মহিলার সাথে হাওরের (রাঃ) ঘটনাটি আল্লাহ তা’আলার জানিয়ে দেয়া নবুওয়াতের নিদর্শনের অন্তর্গত।
(৬) গোয়েন্দার আচ্ছাদন ফাঁস করা।
(৭) সত্য উদঘাটনের ব্যাপারে চাপপ্রয়োগের বৈধতা।
(৮) যে ব্যক্তির ভুল হয়েছে তার ভুল অস্বীকার করা উচিত নয় বরং স্বীকার করা ও ক্ষমা চাওয়া উচিত যেন দু’টি গুনাহ একত্রিত না হয়।
(৯) গুনাহ করার কারণে যারা কোন মুসলমানকে কাফির বলে তাদের জবাব দান।
(১০) গুনাহগার মুসলমানকে যারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলে তাদের খন্ডন। (ফাতহুল বারী)
‘তোমরা যা ইচ্ছে কর’ – এর অর্থ এ নয় যে তোমরা চাইলে শিরকে লিপ্ত হও। আল্লাহ্‌ তা’আলা এ কথা বললেন যে, তোমরা একমাত্র ইসলামকে রক্ষা করার জন্য বদর যুদ্ধে নিজেদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে দুনিয়ার কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেছ। অতঃপর তোমাদের দ্বারা গুরুতর কোন পাপ সংঘঠিত হতেই পারে না যা তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে। হ্যাঁ, ছোট খাট ভুলভ্রান্তি হলে হোক, তার জন্য তোমাদেরকে মোটেও পাকড়াও করা হবে না।

No comments

Powered by Blogger.