মুয়াত্তা ইমাম মালিক অধ্যায় রমাযানের নামায
পরিচ্ছেদঃ
১
রমাযানের নামায
(তারাবীহ) আদায়ের জন্য উৎসাহ প্রদান
২৪০
حَدَّثَنِي
يَحْيَى عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ
عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى فِي الْمَسْجِدِ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَصَلَّى
بِصَلَاتِهِ نَاسٌ ثُمَّ صَلَّى اللَّيْلَةَ الْقَابِلَةَ فَكَثُرَ النَّاسُ ثُمَّ
اجْتَمَعُوا مِنْ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ أَوْ الرَّابِعَةِ فَلَمْ يَخْرُجْ
إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصْبَحَ
قَالَ قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ وَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنْ الْخُرُوجِ
إِلَيْكُمْ إِلَّا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَلِكَ فِي
رَمَضَانَ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
রাত্রে মাসজিদে নামায (তারাবীহ) আদায় করলেন। তাঁর (ইকতিদা) করে লোকজনও নামায আদায়
করলেন। অতঃপর পরবর্তী রাত্রেও নামায আদায় করলেন। (সে রাত্রে) অনেক লোকের সমাগম হল।
তারপর তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাত্রে তাঁরা একত্র হলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন না। যখন প্রভাত হল, তিনি (কারণ) বললেন, তোমাদের
কার্যক্রম আমি লক্ষ করেছি , তোমাদের উপর (তারাবীহ) ফরয করে দেওয়া হবে, এটা আমাকে
বের হওয়া হতে বারণ করেছে। এটা ছিল রমাযানের ঘটনা। (বুখারী ১১২৯, মুসলিম ৭৬১)
২৪১
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُرَغِّبُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أَنْ
يَأْمُرَ بِعَزِيمَةٍ فَيَقُولُ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا
غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ ثُمَّ كَانَ
الْأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلَافَةِ أَبِي بَكْرٍ وَصَدْرًا مِنْ خِلَافَةِ
عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ.
আবূ হুরাইরা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রমাযানের তারাবীহর জন্য ওয়াজিব নামাযের মত নির্দেশ দান করতেন না বটে,
কিন্তু এটার জন্য অধিক উৎসাহ প্রদান করতেন এবং ফরমাইতেন যে ব্যক্তি ঈমান ও
ইহতিসাব-এর (অর্থাৎ আল্লাহর উপর ঈমানসহ ও সওয়াবের আশায়) সাথে রমাযানের তারাবীহ
আদায় করবে তার বিগত সমুদয় (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারী ২০০৮, মুসলিম ৭৫৯)
ইবনু শিহাব (যুহরী) (র) বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের
পরও তারাবীহর অবস্থা এইরূপই ছিল। আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর খিলাফতকালে এবং উমার
ইবনু খাত্তাব (র)-এর খিলাফতের প্রথম দিকে (তারাবীহর) অবস্থা অনুরূপই ছিল।
পরিচ্ছেদঃ
২
কিয়াম-এ রমাযান বা
তারাবীহর নামাযের বর্ণনা
২৪২
حَدَّثَنِي
مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ
بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيِّ أَنَّهُ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي
رَمَضَانَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ يُصَلِّي
الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلَاتِهِ الرَّهْطُ
فَقَالَ عُمَرُ وَاللهِ إِنِّي لَأَرَانِي لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلَاءِ عَلَى قَارِئٍ
وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ ثُمَّ
خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلَاةِ قَارِئِهِمْ
فَقَالَ عُمَرُ نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ وَالَّتِي تَنَامُونَ عَنْهَا
أَفْضَلُ مِنْ الَّتِي تَقُومُونَ يَعْنِي آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ
يَقُومُونَ أَوَّلَهُ.
থেকে বর্ণিতঃ
আমি মাহে রমযানে উমার ইবনু
খাত্তাব (র)-এর সাথে মসজিদের দিকে গিয়েছি, (সেখানে গিয়ে) দেখি লোকজন বিভিন্ন দলে
বিভক্ত। কেউ একা নামায আদায় করতেছেন, আবার কেউ-বা নামায আদায় করতেছেন এবং তাঁর
ইমামতিতে একদল লোকও নামায আদায় করতেছেন। (এই দৃশ্য দেখে) উমার (রাঃ) বললেন, আমি
মনে করি যে, (কত ভালই না হত) যদি এই মুসল্লিগণকে একজন কারীর সাথে একত্র করে দেওয়া
হত! অতঃপর তিনি উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-এর ইমামতিতে একত্র করে দিলেন। (আবদুর রহমান)
বলেন, দ্বিতীয় রাত্রেও আমি তাঁর সাথে (মসজিদে) গমন করলাম। তখন লোকজন তাঁদের কারীর
ইকতিদায় নামায আদায় করেছিলেন। উমার (রাঃ) (এটা অবলোকন করে) বললেন, نِعْمَتِ الْبِدْعَةُ هَذِهِ ‘এটা অতি চমৎকার বিদ’আত বা নূতন
পদ্ধতি।’ আর যে নামায হতে তারা ঘুমিয়ে থাকে তা উত্তম ঐ নামায হতে, যে নামাযের জন্য
তারা জাগ্রত হয়, অর্থাৎ শেষ রাতের নামাযই আফযল। [উমার (রাঃ)] এটা এজন্যই বলেছিলেন,
অনেক লোকের অবস্থা (এই ছিল) রাত্রের শুরু ভাগে তারা নামায আদায় করে নিলেন। কেউ কেউ
শেষ রাত্রে তারাবীহ পড়া আফযল মনে করতেন। (সহীহ বুখারী ২০১০)
২৪৩
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ عَنْ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ
أَنَّهُ قَالَ، أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا
الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً قَالَ وَقَدْ
كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى
الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ وَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلَّا فِي فُرُوعِ
الْفَجْرِ.
সায়িব ইবনু ইয়াযিদ
(র) থেকে বর্ণিতঃ
উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-উবাই ইবনু কা’ব এবং
তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজনের (মুসল্লিগণের) জন্য এগার রাক’আত (তারাবীহ) কায়েম করতে
(পড়াইতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারী একশত আয়াতবিশিষ্ট সূরা পাঠ করতেন, আর (আমাদের
অবস্থা এই ছিল) আমরা নামায দীর্ঘ সময় দাঁড়াইতে দাঁড়াইতে (ক্লান্ত হয়ে পড়লে)
সাহায্য গ্রহণ করতাম অর্থাৎ লাঠির উপর ভর দিতাম। (এইভাবে নামায পড়তে পড়তে রাত শেষ
হত) আমরা ভোর হওয়ার কিছু পূর্বে ঘরে ফিরে আসতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক
ভাবে বর্ণনা করেছেন)
২৪৪
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومَانَ أَنَّهُ قَالَ، كَانَ النَّاسُ
يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثٍ
وَعِشْرِينَ رَكْعَةً.
ইয়াযিদ ইবনু রুমান
(র) থেকে বর্ণিতঃ
মালিক (র) ইয়াযিদ ইবনু রুমান (র) হতে বর্ণনা
করেন- তিনি বলেছেন, লোকজন উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর খিলাফতকালে রমযানে তেইশ
রাক’আত তারাবীহ পড়াতেন তিন রাক’আত বিতর এবং বিশ রাক’আত তারাবীহ। এটাই উমার (রা)
শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা
করেছেন)
২৪৫
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ دَاوُدَ بْنِ الْحُصَيْنِ أَنَّهُ سَمِعَ الْأَعْرَجَ
يَقُولُ مَا أَدْرَكْتُ النَّاسَ إِلَّا وَهُمْ يَلْعَنُونَ الْكَفَرَةَ فِي
رَمَضَانَ قَالَ وَكَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ سُورَةَ الْبَقَرَةِ فِي ثَمَانِ
رَكَعَاتٍ فَإِذَا قَامَ بِهَا فِي اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً رَأَى النَّاسُ
أَنَّهُ قَدْ خَفَّفَ.
মালিক (র) থেকে
বর্ণিতঃ
তিনি আ’রাজ (র)-কে বলতে শুনেছেন লোকজন রমাযানের
বিতর নামাযে কাফিরদের প্রতি অভিশাপ প্রেরণ করতেন। আর কারী অর্থাৎ ইমাম আট রাক’আতে
সূরা বাকারা তিলাওয়াত করতেন। কোন সময় উক্ত সূরা বার রাক’আতে পাঠ করলে লোকেরা মনে
করতেন যে, কারী (ইমাম) নামায হালকা পড়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে
বর্ণনা করেছেন)
২৪৬
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبِي
يَقُولُ كُنَّا نَنْصَرِفُ فِي رَمَضَانَ فَنَسْتَعْجِلُ الْخَدَمَ بِالطَّعَامِ
مَخَافَةَ الْفَجْرِ.
মালিক (র) থেকে
বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, (মসজিদে রাত কাটিয়ে)
আমরা রমাযানে (গৃহে) ফিরে আসতাম, তখন ভোর হওয়ার আশংকায় খাদেমগণকে (খানা
প্রস্তুতির) কাজে লাগাতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ ذَكْوَانَ أَبَا عَمْرٍو وَكَانَ عَبْدًا لِعَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْتَقَتْهُ عَنْ دُبُرٍ مِنْهَا كَانَ يَقُومُ يَقْرَأُ لَهَا فِي رَمَضَانَ.
উরওয়াহ (র) হতে বর্ণিত; যাকওয়ান আবূ ‘আমর (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ)-এর ক্রীতদাস ছিলেন। আয়েশা (রাঃ)-এর ওফাতের পর
যাকওয়ান মুক্তিপ্রাপ্ত হবেন বলে ঘোষণা ছিল। (উক্ত যাকওয়ান) রমাযান মাসে তারাবীহর
নামায আদায় করতেন এবং আয়েশা (রাঃ) তাঁর পেছনে (অন্যদের সথে) মুকতাদী হয়ে নামায
আদায় করতেন অথবা আয়েশা (রাঃ) তাঁর কুরআন পাঠ শুনতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক
ভাবে বর্ণনা করেছেন)
No comments