রিয়াদুস সালেহীন "অধ্যায়-বিবিধ" হাদীস নং ০১-৬৮৫
বিবিধ
পরিচ্ছদঃ ১
ইখলাস প্রসঙ্গে
প্রকাশ্য ও গোপনীয় আমল
(কর্ম) কথা ও অবস্থায় আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধ নিয়ত জরুরী
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ [البينة: ٥]
তিনি আরো বলেন,
﴿ لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ ﴾ [الحج: ٣٧]
অর্থাৎ “আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা)।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩৭ নং আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ قُلۡ إِن تُخۡفُواْ مَا فِي صُدُورِكُمۡ أَوۡ تُبۡدُوهُ يَعۡلَمۡهُ ٱللَّهُۗ ﴾ [ال عمران: ٢٩]
অর্থাৎ “বল, তোমাদের মনে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন রাখ কিংবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন।” (সূরা আলে ইমরান ২৯ নং আয়াত)
১
وعن أمير المؤمنين أبي حفص عمر بن الخطاب
بن نفيل بن عبد العزى بن رياح بن قرط بن رزاح بن عدى بن لؤى ابن غالب القرشى
العدوى. رضي الله عنه، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول:
" إنما الأعمال بالنيات، وإنما لكل امرىء ما نوى فمن كانت هجرته إلى الله
ورسوله فهجرته إلى الله ورسوله، ومن كانت هجرته لدنيا يصيبها، أو امرأة ينكحها
فهجرته إلى ما هاجر إليه" (متفق على صحته. رواه إماما المحدثين:
أبو الحسين مسلم بن الحجاج بن مسلم القشيرى النيسابورى رضي الله عنهما في صحيحهما
اللذين هما أصح الكتب المصنفة).
উমার
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
উমার
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে
শুনেছি যে, ‘‘যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই
প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (স্বদেশত্যাগ) আল্লাহর
(সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রাসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে
বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।”[১]
এই হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম আহমাদ ইবনু
হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ এটিকে ‘এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক দ্বীন’ বলে অভিহিত করেছেন।
এটিকে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর গ্রন্থ সহীহ বুখারীতে সাত জায়গায় বর্ণনা
করেছেন। প্রত্যেক স্থানে এই হাদীসটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল কর্মের বিশুদ্ধতা ও
কর্মের প্রতিদান নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত---সে কথা প্রমাণ করা।
[১] সহীহুল বুখারী হাদীস নং ১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০,
৬৬৮৯, ৬৯৫৩, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৪৭, নাসায়ী ৭৫, ৩৪৩৭, ৩৭৯৪, আবূ দাউদ ২২০১, ইবনু
মাজাহ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২
وعن أم المؤمنين أم عبد الله عائشة رضي
الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "يغزو جيش الكعبة
فإذا كانوا ببيداء من الأرض يخسف بأولهم وآخرهم". قالت: قلت: يارسول
الله، كيف يخسف بأولهم وآخرهم وفيهم أسواقهم ومن ليس منهم!؟ قال: "يخسف
بأولهم وآخرهم، ثم يبعثون على نياتهم" (متفق عليه. هذا لفظ
البخاري).
উম্মুল
মু’মেনীন উম্মে আব্দুল্লাহ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একটি বাহিনী কা‘বা ঘরের উপর আক্রমণ করার
উদ্দেশ্যে বের হবে। অতঃপর যখন তারা সমতল মরুপ্রান্তরে (বাইদা) পৌঁছবে তখন তাদের
প্রথম ও শেষ ব্যক্তি সকলকেই যমীনে ধসিয়ে দেওয়া হবে। তিনি (আয়েশা) বলেন যে, আমি (এ
কথা শুনে) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে ধসিয়ে দেওয়া
হবে? অথচ তাদের মধ্যে তাদের বাজারের ব্যবসায়ী এবং এমন লোক থাকবে, যারা তাদের
(আক্রমণকারীদের) অন্তর্ভুক্ত নয়। তিনি বললেন, তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে ধসিয়ে দেওয়া
হবে। তারপর তাদেরকে তাদের নিয়ত অনুযায়ী পুনরুত্থিত করা হবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২১১৮ মুসলিম ২৮৮৪, শব্দগুচ্ছ বুখারীর।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩
وعن عائشة رضي الله عنها قالت قال النبي
صلى الله عليه وسلم: " لا هجرة بعد الفتح، ولكن جهاد ونية، وإذا استفرتم
فانفروا" (متفق عليه).
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মক্কা বিজয়ের পর (মক্কা থেকে) হিজরত নেই;
বরং বাকী রয়েছে জিহাদ ও নিয়ত। সুতরাং যদি তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাক দেওয়া হয়,
তাহলে তোমরা (জিহাদে) বেরিয়ে পড়।’’[১]
‘মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নেই’ এর অর্থ এই যে, মক্কা এখন ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত
হল। ফলে এখান থেকে মুসলিমরা আর হিজরত করতে পারবে না।
[১] সহীহুল বুখারী ৩০৮০, ৩৯০০, মুসলিম ১৮৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪
وعن أبي عبد الله جابر بن عبد الله
الأنصارى رضي الله عنهما قال: كنا مع النبي صلى الله عليه وسلم في غزاةٍ فقال:
"إن بالمدينة لرجالاً ماسرتم مسيراً، ولا قطعتم وادياً إلا كانوا معكم
حبسهم المرض" وفى رواية: "إلا شاركوكم في الأجر" (رواه
مسلم).
আবূ
আবদুল্লাহ জাবের ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক অভিযানে ছিলাম। তিনি
বললেন, ‘‘মদ্বীনাতে কিছু লোক এমন আছে যে, তোমরা যত সফর করছ এবং যে কোন উপত্যকা
অতিক্রম করছ, তারা তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। অসুস্থতা তাদেরকে মদ্বীনায় থাকতে বাধ্য
করেছে।’’ আর একটি বর্ণনায় আছে যে, ‘‘তারা নেকীতে তোমাদের অংশীদার।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৮৩৮, ২৮৩৯, ৪৪২৩, ইবনু মাজাহ ২৭৬৪।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫
عن أنس رضي الله عنه قال: رجعنا من غزوة
تبوك مع النبي صلى الله عليه وسلم فقال: " إن أقواماً خلفنا بالمدينة ما
سلكنا شعباً ولا وادياً إلا وهم معنا، حبسهم العذر".
(ورواه البخاري)
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
সহীহ
বুখারীতে আনাস (রাঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাবূক অভিযান থেকে আমাদের প্রত্যাবর্তনকালে তিনি বললেন যে,
‘‘আমাদের পিছনে মদীনায় এরূপ কিছু লোক আছে যারা প্রত্যেক গিরিপথ বা উপত্যকা
অতিক্রমকালে আমাদের সাথে রয়েছে। বিশেষ ওজর তাদেরকে ঘরে থাকতে বাধ্য করেছে।’’
সহিহুল বুখারী ১৪২২, আহমাদ ১৫৪৩৩, ১৭৮১১, দারেমী ১৬৩৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬
وعن أبي يزيد معن بن يزيد بن الأخنس رضي
الله عنهم، وهو وأبوه وجده صحابيون، قال: كان أبي يزيد أخرج دنانير يتصدق بها
فوضعها عند رجل في المسجد فجئت فأخذتها فأتيته بها، فقال: والله ما إياك أردت،
فخاصمته إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: " لك ما نويت يا يزيد،
ولك ما أخذت يامعن" (رواه البخاري).
আবূ
ইয়াযীদ মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ ইবনু আখনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ
ইয়াযীদ মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ ইবনু আখনাস (রাঃ) - তিনি (মা‘ন) এবং তাঁর পিতা ও দাদা
সকলেই সাহাবী---তিনি বলেন, আমার পিতা ইয়াযীদ দান করার জন্য কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা
বের করলেন। অতঃপর তিনি সেগুলি (দান করতে) মসজিদে একটি লোককে দায়িত্ব দিলেন। আমি
(মসজিদে) এসে তার কাছ থেকে (অন্যান্য ভিক্ষুকের মত) তা নিয়ে নিলাম এবং তা নিয়ে
বাড়ী এলাম। (যখন আমার পিতা এ ব্যাপারে অবগত হলেন তখন) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে
দেওয়ার নিয়ত আমার ছিল না। (ফলে এগুলি আমার জন্য হালাল হবে কি না তা জানার
উদ্দেশ্যে) আমি আমার পিতাকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে
উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন, ‘‘হে ইয়াযীদ! তোমার জন্য সেই বিনিময় রয়েছে যার নিয়ত
তুমি করেছ এবং হে মা’ন! তুমি যা নিয়েছ তা তোমার জন্য হালাল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪২২, আহমাদ ১৫৪৩৩, ১৭৮১১, দারেমী ১৬৩৮।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৭
وعن أبي إسحاق سعد بن أبي وقاص مالك بن
أهيب بن عبد مناف بن زهرة بن كلاب بن مرة بن كعب بن لؤى القرش الزهرى رضي الله
عنه، أحد العشرة المشهود لهم بالجنة، رضي الله عنهم، قال: " جاءنى رسول
الله صلى الله عليه وسلم يعودنى عام حجة الوداع من وجع اشتد بى فقلت: يارسول
الله إني قد بلغ بى من الوجع ما ترى، وأنا ذو مال ولا يرثنى إلا ابنة لي، أفاتصدق
بثلثى ما لي؟ قال: لا، قلت: فالشطر يارسول الله؟ فقال: لا، قلت:
فالثلث يا رسول الله؟ قال الثلث والثلث كثير- أو كبير- إنك أن تذر ورثتك أغنياء
خير من أن تذرهم عالة يتكففون الناس، وإنك لن تنفق نفقة تبتغى بها وجه الله إلا
أجرت عليها حتى ما تجعل في فيّ امرأتك قال: فقلت: يارسول الله أخلف بعد
أصحابي؟ قال: إنك لن تخلف فتعمل عملا تبتغي بهوجه الله إلا ازددت به درجة
ورفعةً، ولعلك أن تخلف حتى ينتفع بك أقوام ويضرّ بك آخرون. اللهم امض لآصحابى
هجرتهم، ولا تردهم على أعقابهم، لكن البائس سعد بن خولة" يرثى له رسول الله
صلى الله عليه وسلم أن مات بمكة.(متفق عليه).
সা‘দ
ইবনু আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
সা‘দ
ইবনু আবী অক্কাস (রাঃ) বলেন, যে দশজন সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল ইনি
তাঁদের মধ্যে একজন। বিদায় হজ্জ্বের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমার রুগ্ন অবস্থায় আমাকে দেখা করতে এলেন। সে সময় আমার শরীরে চরম ব্যথা
ছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার (দৈহিক) জ্বালা-যন্ত্রণা কঠিন পর্যায়ে
পৌঁছে গেছে--যা আপনি সচক্ষে দেখছেন। আর আমি একজন ধনী মানুষ; কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী
বলতে আমার একমাত্র কন্যা। তাহলে আমি কি আমার মাল-সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দান করে
দেব?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ আমি বললাম, ‘তাহলে অর্ধেক মাল হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি
বললেন, ‘‘না।’’ আমি বললাম, ‘তাহলে কি এক তৃতীয়াংশ দান করতে পারি?’ তিনি বললেন,
‘‘এক তৃতীয়াংশ (দান করতে পার), তবে এক তৃতীয়াংশও অনেক। কারণ এই যে, তুমি যদি তোমার
উত্তরাধিকারীদের ধনবান অবস্থায় ছেড়ে যাও, তাহলে তা এর থেকে ভাল যে, তুমি তাদেরকে
কাঙ্গাল করে ছেড়ে যাবে এবং তারা লোকের কাছে হাত পাতবে।
(মনে রাখ,) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে তোমাকে তার
বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও তুমি
বিনিময় পাবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার সঙ্গীদের ছেড়ে পিছনে
(মক্কায়) থেকে যাব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি তোমার সঙ্গীদের মরার পর জীবিত থাক এবং
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ কর, তাহলে তার ফলে তোমার মর্যাদা ও
সম্মান বর্ধন হবে। আর সম্ভবতঃ তুমি বেঁচে থাকবে। এমনকি তোমার দ্বারা কিছু লোক
(মু’মিনরা) উপকৃত হবে। আর কিছু লোক (কাফেররা) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি
আমার সাহাবীদেরকে হিজরতে পরিপূর্ণতা দান কর এবং তাদেরকে (হিজরত থেকে) পিছনে ফিরিয়ে
দিও না। কিন্তু মিসকীন সা‘দ ইবনু খাওলা।’’ তাঁর মৃত্যু মক্কায় হওয়ার জন্য নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৯৫, ১২৯৬, ৫৬, ২৭৪২, ২৭৪৪, ৩৯৩৬,
৪৪০৯, ৫৩৫৪, ৫৬৫৯, ৫৬৬৮, ৬৩৭৩, ৬৭৩৩, মুসলিম ১৬২৮, তিরমিযী ২১১৬, নাসায়ী ৩৬২৬, ৩৬২৭,
৩৬২৮, ৩৬৩০, ৩৬৩২, ৩৬৩৫, আবূ দাউদ ২৮৬৪, আহমাদ ১৪৪৩, ১৪৭৭, ১৪৮২, ১৪৮৮, ১৫২৭, ১৫৪৯,
১৬০২, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৯৫, দারেমী ৩১৯৬।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৮
وعن أبي هريرة عبد الرحمن بن صخر رضي الله
عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:
" إن الله لا ينظر إلى أجسامكم ، ولا إلى صوركم، ولكن ينظر إلى قلوبكم
وأعمالكم" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবনু সাখর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দেহ এবং
তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৪, তিরমিযী ১১৩৪,
১৯৮৮, নাসায়ী ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৪৯১৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭,
২১৭২, ২১৭৪, আহমাদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯, মালিক ১৩৯১, ১৬৮৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯
وعن أبي موسى عبد الله بن قيس الأشعرى رضي
الله عنه قال: سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الرجل يقاتل شجاعة، ويقاتل
حميةً، ويقاتل رياء، أى ذلك في سبيل الله؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم:
" من قاتل لتكون كلمة الله هى العليا فهو في سبيل الله" (متفق
عليه).
আবূ
মূসা আব্দুল্লাহ ইবনু কায়স আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল,
যে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, অন্ধ পক্ষপাতিত্বের জন্য যুদ্ধ করে এবং লোক
প্রদর্শনের জন্য (সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে) যুদ্ধ করে, এর কোন্ যুদ্ধটি আল্লাহর পথে
হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর
কালেমাকে উঁচু করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, একমাত্র তারই যুদ্ধ আল্লাহর পথে হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৩, ২৮১০, ৩১২৬, ৭৪৫৮, মুসলিম ১৯০৪,
তিরমিযী ১৬৪৬, নাসায়ী ৩১৩৬, আবূ দাউদ ২৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৭৮৩, আহমাদ ১৮৯৯৯, ১৯০৪৯, ১৯০৯৯,
১৯১৩৪, ১৯২৪০।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০
وعن أبي بكرة نفيع بن الحارث الثقفى رضي
الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: "إذ التقى المسلمان بسيفيهما
فالقاتل والمقتول في النار" قلت يارسول الله، هذا القاتل فما بال
المقتول؟ قال: "إنه كان حريصاً على قتل صاحبه" (متفق
عليه).
আবূ
বাক্রাহ নুফাই ইবনু হারেস সাক্বাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে আপোসে লড়াই
করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দু’জনই জাহান্নামে যাবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর
রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামে যাওয়া তো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কী?’
তিনি বললেন, ‘‘সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য লালায়িত ছিল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১, ৬৮৭৫, ৭০৮৩, মুসলিম ২৮৮৮, নাসায়ী
৪১১৭, ৪১২০, ৪১২১, ৪১২২, ৪১২৩, আবূ দাউদ ৪২৬৮, ইবনু মাজাহ ৩৯৬৫, আহমাদ ১৯৯১১, ১৯৯২৬,
১৯৯৫৯, ১৯৯৮০, ১৯৯৯৫।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১১
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم : "صلاة الرجل في جماعة تزيد على صلاته في سوقه وبيته
بضعاً وعشرين درجه وذلك أن أحدهم إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم أتى المسجد لا يريد إلا
الصلاة، لا ينهزه إلا الصلاة، لم يخط خطوة إلا رفع له بها درجة، وحط عنه بها خطيئة
حتى يدخل المسجد، فإذا دخل المسجد كان في الصلاة ما كانت الصلاة هى تحبسه،
والملائكة يصلون على أحدكم ما دام في مجلسه الذى صلى فيه، ما لم يحدث فيه"
(متفق عليه، وهذا لفظ مسلم). وقوله صلى الله عليه وسلم: (2)
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘মানুষের জামাআতের সঙ্গে নামায পড়ার
নেকী, তার বাজারে ও বাড়ীতে নামায পড়ার চেয়ে (২৫ বা ২৭) গুণ বেশী। আর তা এ জন্য যে,
যখন কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে এবং সালাতই
তাকে মসজিদে নিয়ে যায়, তখন তার মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত প্রত্যেক পদক্ষেপের
বিনিময়ে একটি মর্যাদা উন্নত হয় ও একটি পাপ মোচন করা হয়।
অতঃপর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে, তখন যে পর্যন্ত সালাত তাকে (মসজিদে) আটকে রাখে,
সে পর্যন্ত সে নামাযের মধ্যেই থাকে। আর ফিরিশতারা তোমাদের কোন ব্যক্তির জন্য সে
পর্যন্ত রহমতের দো‘আ করতে থাকেন---যে পর্যন্ত সে ঐ স্থানে বসে থাকে, যে স্থানে সে
সালাত আদায় করেছে। তাঁরা বলেন, ‘হে আল্লাহ! এর প্রতি দয়া কর, হে আল্লাহ! একে ক্ষমা
কর, হে আল্লাহ! এর তওবাহ কবুল কর।’ (ফিরিশতাদের এই দো‘আ সে পর্যন্ত চলতে থাকে) যে
পর্যন্ত সে কাউকে কষ্ট না দেয়, যে পর্যন্ত তার ওযূ নষ্ট না হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৫, ৬৪৬, ৬৪৭, মুসলিম ৬৫০, তিরমিযী
২১৫, নাসায়ী ৮৩৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৯, আহমাদ ৫৩১০, ৫৭৪৫, ৫৮৮৫, মুওয়াত্তা মালিক ২৯০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২
وعن أبي العباس عبد الله بن عباس بن عبد
المطلب رضي الله عنهما، عن رسول الله، صلى الله عليه وسلم، فيما يروى عن ربه،
تبارك وتعالى قال: " إن الله كتب الحسنات والسيئات ثم بين ذلك: فمن
همّ بحسنة فلم يعملها كتبها الله تبارك وتعالى عنده حسنة كاملة، وإن هم بها فعملها
كتبها الله عشر حسنات إلى سبعمائه ضعف إلى أضعاف كثيرة، وإن هم بسيئة فلم يعملها
كتبها الله عنده حسنة كاملة، وإن همّ بها فعملها كتبها الله سيئة واحدة "
(متفق عليه).
আবূল
আব্বাস আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় মহান প্রভু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি
বলেন যে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পুণ্যসমূহ ও পাপসমূহ লিখে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার
ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কোনো নেকী করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে
বাস্তবায়িত করতে পারে না, আল্লাহ তাবারাকা অতা‘আলা তার জন্য (কেবল নিয়ত করার
বিনিময়ে) একটি পূর্ণ নেকী লিখে দেন।
আর সে যদি সংকল্প করার পর কাজটি করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ
গুণ, বরং তার চেয়েও অনেক গুণ নেকী লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে একটি পাপ করার
সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট
একটি পূর্ণ নেকী হিসাবে লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর ঐ পাপ কাজ করে ফেলে,
তাহলে আল্লাহ মাত্র একটি পাপ লিপিবদ্ধ করেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৯১, মুসলিম ১৩১, আহমাদ ২০০২, ২৫১৫,
২৮২৩, ৩৩৯২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩
وعن أبي عبد الرحمن عبد الله بن عمر بن
الخطاب، رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول:
" انطلق ثلاثة نفر ممن كان قبلكم حتى آواهم المبيت إلى غار فدخلوه، فانحدرت
صخرة من الجبل فسدت عليهم الغار، فقالوا: إنه لا ينجيكم من هذه الصخرة إلا أن
تدعوا الله بصالح أعمالكم. قال رجل منهم: اللهم كان لي أبوان شيخان كبيران،
وكنت لا أغبق قبلهما أهلاً ولا مالاً. فنأى بى طلب الشجر يوماً فلم أرح عليهما
حتى ناما فحلبت لهما غبوقهما فوجدتهما نائمين فكرهت أن أوقظهما وأن أغبق قبلهما
أهلاً أو مالاً، فلبثت- والقدح على يدى- أنتظر استيقاظهما حتى برق الفجر والصبية
يتضاغون عند قدمى- فاستيقظا فشربا غبوقهما. اللهم إن كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك
ففرج عنا ما نحن فيه من هذه الصخرة، فانفرجت شيئاً لا يستطيعون الخروج منه. قال
الآخر: اللهم إنه كانت لي ابنة عم كانت أحب الناس إلىّ " وفى رواية:
"كنت أحبها كأشد ما يحب الرجال النساء، فأردتها على نفسها فامتنعت منى حتى
ألمّت بها سنة من السنين فجاءتنى فأعطيتها عشرين ومائة دينار على أن تخلى بينى
وبين نفسها ففعلت، حتى إذا قدرت عليها" وفى رواية: "فلما قعدت بين
رجليها، قالت: اتق الله ولا تفض الخاتم إلا بحقه، فانصرفت عنها وهى أحب الناس
إلى وتركت الذهب الذى أعطيتها، اللهم إن كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج عنا ما
نحن فيه، فانفرجت الصخرة غير أنهم لا يستطيعون الخروج منها. وقال الثالث:
اللهم استأجرت أجراء وأعطيتهم أجرهم غير رجل واحد ترك الذى له وذهب، فثمرت أجره
حتى كثرت منه الأموال، فجاءنى بعد حين فقال: يا عبد الله أدّ إلى أجرى، فقلت:
كل ما ترى من أجرك: من الإبل والبقر والغنم والرقيق. فقال: يا عبد الله لا
تستهزئ بى! فقلت: لا أستهزئ بك، فأخذه كله فاستاقه فلم يترك منه شيئاً، اللهم
إن كنتُ فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج عنا ما نحن فيه، فانفرجت الصخرة فخرجوا
يمشون" (متفق عليه).
আবূ
আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের পূর্বে
(বানী ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি একদা সফরে বের হল। চলতে চলতে রাত এসে গেল।
সুতরাং তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত-গুহায় প্রবেশ করল। অল্পক্ষণ পরেই একটা বড়
পাথর উপর থেকে গড়িয়ে নীচে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। এ দেখে তারা বলল যে, ‘এহেন
বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে অসীলা
বানিয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ কর।’ সুতরাং তারা সব সব আমলের অসীলায় (আল্লাহর কাছে)
দো‘আ করতে লাগল।
তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি জান যে, আমার অত্যন্ত বৃদ্ধ পিতা-মাতা
ছিল এবং (এও জান যে,) আমি সন্ধ্যা বেলায় সবার আগে তাদেরকে দুধ পান করাতাম। তাদের
পূর্বে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসী কাউকে পান করাতাম না। একদিন আমি গাছের
খোঁজে দূরে চলে গেলাম এবং বাড়ী ফিরে দেখতে পেলাম যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে গেছে। আমি
সন্ধ্যার দুধ দহন করে তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, তারা ঘুমিয়ে আছে। আমি
তাদেরকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও পছন্দ করলাম না যে, তাদের পূর্বে
সন্তান-সন্ততি এবং কৃতদাস-দাসীকে দুধ পান করাই। তাই আমি দুধের বাটি নিয়ে তাদের ঘুম
থেকে জাগার অপেক্ষায় তাদের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অথচ শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় আমার
পায়ের কাছে চেঁচামেচি করছিল। এভাবে ফজর উদয় হয়ে গেল এবং তারা জেগে উঠল। তারপর তারা
নৈশদুধ পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য করে থাকি,
তাহলে পাথরের কারণে আমরা যে গুহায় বন্দী হয়ে আছি এ থেকে তুমি আমাদেরকে উদ্ধার
কর।’’
এই দো‘আর ফলস্বরূপ পাথর একটু সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।
দ্বিতীয়-জন দো‘আ করল, ‘‘হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। সে আমার নিকট সকল
মানুষের চেয়ে প্রিয়তমা ছিল। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) আমি তাকে এত বেশী ভালবাসতাম, যত
বেশী ভালবাসা পুরুষরা নারীদেরকে বাসতে পারে। একবার আমি তার সঙ্গে যৌন মিলন করার
ইচ্ছা করলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল। পরিশেষে সে যখন এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল,
তখন সে আমার কাছে এল। আমি তাকে এই শর্তে ১২০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম, যেন সে
আমার সঙ্গে যৌন-মিলন করে। সুতরাং সে (অভাবের তাড়নায়) রাজী হয়ে গেল। অতঃপর যখন আমি
তাকে আয়ত্তে পেলাম। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম, তখন
সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে (বিনা বিবাহে) আমার পবিত্রতা নষ্ট করো
না। সুতরাং আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম; যদিও সে আমার একান্ত প্রিয়তমা ছিল
এবং যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে দিয়েছিলাম তাও পরিত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এ
কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের উপর পতিত মুসীবতকে দূরীভূত
কর।’’
সুতরাং পাথর আরো কিছুটা সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।
তৃতীয়জন দো‘আ করল, ‘‘হে আল্লাহ! আমি কিছু লোককে মজুর রেখেছিলাম। (কাজ সুসম্পন্ন
হলে) আমি তাদের সকলকে মজুরী দিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মজুরী না নিয়ে
চলে গেল। আমি তার মজুরীর টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলাম। (কিছুদিন পর) তা থেকে
প্রচুর অর্থ জমে গেল। কিছুকাল পর একদিন সে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার
মজুরী দিয়ে দাও।’ আমি বললাম, ‘এসব উঁট, গাভী, ছাগল এবং গোলাম (বাঁদি) যা তুমি দেখছ
তা সবই তোমার মজুরীর ফল।’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সঙ্গে উপহাস করবে
না।’ আমি বললাম, ‘আমি তোমার সঙ্গে উপহাস করিনি (সত্য ঘটনাই বর্ণনা করছি)।’ সুতরাং
আমার কথা শুনে সে তার সমস্ত মাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ!
যদি আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে যে বিপদে আমরা
পড়েছি তা তুমি দূরীভূত কর।’’ এর ফলে পাথর সম্পূর্ণ সরে গেল এবং সকলেই (গুহা থেকে)
বের হয়ে চলতে লাগল।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২২১৫, ২২৭২, ২৩৩৩, ৩৪৬৫, ৫৯৭৪, মুসলিম
২৭৪৩, আবূ দাউদ ৩৩৮৭, আহমাদ ৫৯৩৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২
তওবার বিবরণ
উলামা সম্প্রদায়ের উক্তি এই
যে, প্রত্যেক পাপ থেকে তওবা করা (চিরতরে প্রত্যাবর্তন করা) ওয়াজেব (অবশ্য-কর্তব্য)।
যদি গোনাহর সম্পর্ক আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে এবং কোন মানুষের অধিকারের
সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে।
১। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
২। পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩। ঐ পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। সুতরাং যদি এর মধ্যে
একটি শর্তও লুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবা বিশুদ্ধ হবে না।
পক্ষান্তরে যদি সেই পাপ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা গ্রহণীয় হওয়ার জন্য
চারটি শর্ত আছে। উপরোক্ত তিনটি এবং চতুর্থ শর্ত হল, হকদারদের হক ফিরিয়ে দিতে হবে।
যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে, তাহলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর
যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় অথবা অনুরূপ কোনো দোষ করে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির কাছে শাস্তি নিতে নিজেকে পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে
হবে। যদি কারো গীবত করে থাকে, তাহলে তার কাছে তা বৈধ করে নেবে।
সমস্ত পাপ থেকে তওবাহ করা ওয়াজেব। আংশিক পাপ থেকে তওবাহ করলে সেই তওবাহ হকপন্থী
আলেমগণের নিকট গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে এবং অবশিষ্ট পাপ রয়ে যাবে। তওবা ওয়াজেব
হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের
ঐকমত্যও বিদ্যমান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [النور: ٣١]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে
তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা নূর ৩১ আয়াত)
﴿ وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ ﴾ [هود: ٣]
অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর
তাঁর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর।” (সূরা হূদ ৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا ﴾ [التحريم: ٨]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।” (সূরা তাহরীম ৮
আয়াত)
১৪
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: سمعت
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "والله إني لأستغفر الله وأتوب إليه
في اليوم أكثر من سبعين مرة " (رواه البخاري).
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
‘‘আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ ৭০ বারের অধিক আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা
করি।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৩০৭, তিরমিযী ৩২৫৯, ইবনুূু মাজাহ ৩৮১৬,
আহমাদ ৭৭৩৪, ৮২৮৮, ৯৫১৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫
وعن الأغر بن يسار المزنى رضي الله عنه
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " ياأيها الناس توبوا إلى
الله واستغفروه فإنى أتوب في اليوم مائه مرة" (رواه مسلم).
আগার্র
ইবনু ইয়াসার মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা
আল্লাহর সমীপে তওবা কর ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাও! কেননা, আমি প্রতিদিন ১০০ বার করে
তওবাহ করে থাকি।’’[১]
[১] মুসলিম ২৭০২, আবূ দাউদ ১৫১৫, আহমাদ ১৭৩৯১, ১৭৮২৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬
وعن أبي حمزة أنس بن مالك الأنصارى خادم
رسول الله صلى الله عليه وسلم، رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه
وسلم : " لله أفرح بتوبة عبده من أحدكم سقط على بعيره وقد أضله في أرض
فلاة " (متفق عليه).
وفى رواية لمسلم: لله أشد فرحا بتوبة عبده حين يتوب إليه من أحدكم كان على
راحلته بأرض فلاة، فانفلتت منه وعليها طعامه وشرابه فأيس منها، فأتى شجرة فاضطجع
في ظلها، وقد أيس من راحلته، فبينما هو كذلك إذا هو بها، قائمة عنده ، فأخذ
بخطامها ثم قال من شدة الفرح: اللهم أنت عبدي وأنا ربك، أخطأ من شدة
الفرح".
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদেম, আবূ হামযাহ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা
স্বীয় বান্দার তওবা করার জন্য ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী আনন্দিত হন, যে তার উট
জঙ্গলে হারিয়ে ফেলার পর পুনরায় ফিরে পায়।’’(বুখারী ৬৩০৯, মুসলিম ২৭৪৭, আহমাদ
১২৮১৫)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এইভাবে এসেছে যে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার
তওবায় যখন সে তওবা করে তোমাদের সেই ব্যক্তির চেয়ে বেশী খুশী হন, যে তার বাহনের উপর
চড়ে কোনো মরুভূমি বা জনহীন প্রান্তর অতিক্রমকালে বাহনটি তার নিকট থেকে পালিয়ে যায়।
আর খাদ্য ও পানীয় সব ওর পিঠের উপর থাকে। অতঃপর বহু খোঁজাখুঁজির পর নিরাশ হয়ে সে একটি
গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বাহনটি হঠাৎ তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে যায়। সে তার
লাগাম ধরে খুশীর চোটে বলে ওঠে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দাস, আর আমি তোমার প্রভু!’
সীমাহীন খুশীর কারণে সে ভুল করে ফেলে।’’
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭
وعن أبي موسى عبد الله بن قيس الأشعرى رضي
الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " إن الله تعالى يبسط يده
بالليل ليتوب مسيء النهار، ويبسط يده بالنهار ليتوب مسيء الليل حتى تطلع الشمس من
مغربها" (رواه مسلم).
আবূ
মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাত রাতে
প্রসারিত করেন; যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তওবা করে এবং দিনে তাঁর হাত প্রসারিত
করেন; যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তওবাহ করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না
হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে।’ [১]
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم : " من تاب قبل أن تطلع الشمس من مغربها
تاب الله عليه" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়
হওয়ার পূর্বে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করবেন।’’[১]
[১] মুসলিম ২৭০৩, আহমাদ ৭৬৫৪, ৮৮৮৫, ৯২২৫, ১০০৪৭, ১০২০৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯
وعن أبي عبد الرحمن عبد الله بن عمر بن
الخطاب رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " إن الله عز
وجل يقبل توبة العبد ما لم يغرغر" (رواه الترمذي وقال: حديث
حسن).
আবূ
আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তওবাহ সে
পর্যন্ত কবুল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত না হয়।”[১]
[১] তিরমিযী , ৩৫৩৭, ইবনুূু মাজাহ ৪২৫৩
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
২০
যির্র
ইবনে হুবাইশ থেকে বর্ণিতঃ
আমি
মোজার উপর মাসাহ করার মাসআলা জিজ্ঞাসা করার জন্য সাফওয়ান ইবনে আস্সালের নিকট
গেলাম। তিনি বললেন, ‘হে যির্র! তোমার আগমনের উদ্দেশ্য কি?’ আমি বললাম, ‘জ্ঞান
অন্বেষণ।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় ফিরিশতামণ্ডলী ঐ অন্বেষণের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে
বিদ্যার্থীর জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন।’
অতঃপর আমি বললাম, ‘পেশাব-পায়খানার পর মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে আমার মনে
সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর একজন
সাহাবী, তাই আপনার নিকট জানতে এলাম যে, আপনি এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম -কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন কি না?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! যখন আমরা
বিদেশ সফরে বের হতাম, তখন তিনি আমাদেরকে (সফরে) তিনদিন ও তিন রাত মোজা না খোলার
আদেশ দিতেন (অর্থাৎ আমরা যেন এই সময়সীমা পর্যন্ত মাসাহ করতে থাকি), কিন্তু বড়
অপবিত্রতা (সঙ্গম, বীর্যপাত ইত্যাদি) হেতু অপবিত্র হলে (মোজা খুলতে হবে)। কিন্তু
পেশাব-পায়খানা ও ঘুম থেকে উঠলে নয়। (এ সবের পর রীতিমত মাসাহ করা জায়েয)।’ আমি
বললাম, ‘আপনি কি তাঁকে ভালবাসা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন?’ তিনি বললেন,
‘হ্যাঁ। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে সফরে ছিলাম।
আমরা তাঁর সঙ্গে বসেছিলাম, এমন সময় এক বেদুঈন অতি উঁচু গলায় ডাক দিল, ‘‘হে
মুহাম্মাদ!’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাকে উঁচু আওয়াজে
জবাব দিলেন, ‘‘এখানে এস!’’ আমি তাকে বললাম, ‘‘আরে তুমি নিজের আওয়াজ নীচু কর!
কেননা, তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট আছ। তাঁর নিকট এ রকম
উঁচু গলায় কথা বলা তোমার (বরং সকলের) জন্য নিষিদ্ধ।’’ সে (বেদুঈন) বলল, ‘‘আল্লাহর
কসম! আমি তো আস্তে কথা বলবই না।’’ বেদুঈন বলল, ‘‘কোন ব্যক্তি কিছু লোককে ভালবাসে;
কিন্তু সে তাদের (মর্যাদায়) পৌঁছতে পারেনি? (এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?)।’’ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘‘মানুষ কিয়ামতের দিন ঐ
লোকদের সঙ্গে থাকবে, যাদেরকে সে ভালবাসবে।’’ পুনরায় তিনি আমাদের সাথে কথাবার্তা
বলতে থাকলেন। এমনকি তিনি পশ্চিম দিকের একটি দরজার কথা উল্লেখ করলেন, যার প্রস্থের
দূরত্ব ৪০ কিংবা ৭০ বছরের পথ অথবা তিনি বললেন, ওর প্রস্থে একজন আরোহী ৪০ কিম্বা ৭০
বছর চলতে থাকবে। (সুফইয়ান এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী বলেন যে, এই দরজা সিরিয়ার
দিকে অবস্থিত।) আল্লাহ তা‘আলা এই দরজাটি আসমান-যমীন সৃষ্টি করার দিন সৃষ্টি করেছেন
এবং সেই সময় থেকে তা তওবার জন্য খোলা রয়েছে। পশ্চিমদিক থেকে সূর্য না উঠা পর্যন্ত
এটা বন্ধ হবে না।’(তিরমিযী ৯৬, ৩২৮৭, ৩৫৩৫, ৩৫৩৬, নাসায়ী ১২৬, ১২৭, ১৫৮, ১৫৯, ইবনু
মাজাহ ৪৭৮, আহমাদ ১৭৬২৩, ১৭৬২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১
আবূ
সাঈদ সা‘দ ইবন মালেক ইবন সিনান খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে (বনী ইস্রাইলের যুগে)
একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড়
আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার
কাছে এসে বলল, ‘সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?’
সে বলল, ‘না।’ সুতরাং সে (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকেও হত্যা করে একশত পূরণ করে দিল।
পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলেমের
খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি
তওবার কোন সুযোগ আছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে?
তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে।
তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা, ও দেশ
পাপের দেশ।’ সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায়
পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু এসে গেল। (তার দেহ-পিঞ্জর থেকে আত্মা বের করার জন্য) রহমত ও
আযাবের উভয় প্রকার ফেরেশতা উপস্থিত হলেন। ফিরিশতা- দের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ
হল। রহমতের ফেরেশতাগণ বললেন, ‘এই ব্যক্তি তওবা করে এসেছিল এবং পূর্ণ আন্তরিকতার
সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।’ আর আযাবের ফিরিশতারা বললেন, ‘এ এখনো ভাল কাজ
করেনি (এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত)।’ এমতাবস্থায় একজন ফিরিশতা মানুষের রূপ ধারণ
করে উপস্থিত হলেন। ফিরিশতাগণ তাঁকে সালিস মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ‘তোমরা
দু’ দেশের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ এ যে এলাকা থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের
দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরত্ব) এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশী
নিকটবর্তী হবে, সে তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ অতএব তাঁরা দূরত্ব মাপলেন এবং যে দেশে
সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) দেশকে বেশী নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের
ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহতে আর একটি বর্ণনায় এরূপ আছে যে, ‘‘পরিমাপে ঐ ব্যক্তিকে সৎশীল লোকদের দেশের
দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে ঐ সৎশীল ব্যক্তিদের দেশবাসী
বলে গণ্য করা হল।’’
সহীহতে আরো একটি বর্ণনায় এইরূপ এসেছে যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ দেশকে (যেখান থেকে সে
আসছিল তাকে) আদেশ করলেন যে, তুমি দূরে সরে যাও এবং এই সৎশীলদের দেশকে আদেশ করলেন
যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা এ দু’য়ের দূরত্ব মাপ।’ সুতরাং
তাকে সৎশীলদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পেলেন। যার ফলে তাকে ক্ষমা করে
দেওয়া হল।’’
আরো একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘সে ব্যক্তি নিজের বুকের উপর ভর করে ভালো দেশের দিকে একটু
সরে গিয়েছিল।’’(সহীহুল বুখারী ৩৪৭০, মুসলিম ২৭৬৬, ইবনু মাজাহ ২৬২৬, আহমাদ ১০৭৭০,
১১২৯০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২
কা‘ব
ইবনে মালেকের পুত্র আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ
এই
আব্দুল্লাহ কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর ছেলেদের মধ্যে তাঁর পরিচালক ছিলেন, যখন
তিনি অন্ধ হয়ে যান। তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন, আমি (আমার পিতা) কা‘ব ইবনে মালেককে ঐ
ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি, যখন তিনি তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম -এর পিছনে থেকে যান। তিনি বলেন, ‘আমি তাবূক যুদ্ধ ছাড়া যে যুদ্ধই
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন তাতে কখনোই তাঁর পিছনে
থাকিনি। অবশ্য বদরের যুদ্ধ থেকে আমি পিছনে রয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বদরের যুদ্ধে যে
অংশগ্রহণ করেনি, তাকে ভৎর্সনা করা হয়নি। আসল ব্যাপার ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমগণ কুরাইশের কাফেলার পশ্চাদ্ধাবনে বের হয়েছিলেন।
(শুরুতে যুদ্ধের নিয়ত ছিল না।) পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে ও তাঁদের শত্রুকে
(পূর্বঘোষিত) ওয়াদা ছাড়াই একত্রিত করেছিলেন। আমি আক্বাবার রাতে (মিনায়)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথে উপস্থিত ছিলাম, যখন আমরা
ইসলামের উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম। আক্বাবার রাত অপেক্ষা আমার নিকটে বদরের
উপস্থিতি বেশী প্রিয় ছিল না। যদিও বদর (অভিযান) লোক মাঝে ওর চাইতে বেশী প্রসিদ্ধ।
(কা‘ব বলেন,) আর আমার তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
-এর পিছনে থাকার ঘটনা এরূপ যে, এই যুদ্ধ হতে পিছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও
সচ্ছল ছিলাম অন্য কোন সময় ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর পূর্বে আমার নিকট কখনো দু’টি
সওয়ারী (বাহন) একত্রিত হয়নি। কিন্তু এই (যুদ্ধের) সময়ে একই সঙ্গে দু’টি সওয়ারী
আমার নিকট মওজুদ ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিয়ম ছিল,
যখন তিনি কোন যুদ্ধে বের হওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন ‘তাওরিয়া’ করতেন (অর্থাৎ সফরের
গন্তব্যস্থলের নাম গোপন রেখে সাধারণ অন্য স্থানের নাম নিতেন, যাতে শত্রুরা টের না
পায়)। এই যুদ্ধ এইভাবে চলে এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভীষণ
গরমে এই যুদ্ধে বের হলেন এবং দূরবর্তী সফর ও দীর্ঘ মরুভূমির সম্মুখীন হলেন। আর বহু
সংখ্যক শত্রুরও সম্মুখীন হলেন। এই জন্য তিনি মুসলিমদের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করে
দিলেন; যাতে তাঁরা সেই অনুযায়ী যথোচিত প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ফলে তিনি সেই দিকও
বলে দিলেন, যেদিকে যাবার ইচ্ছা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম -এর সঙ্গে অনেক মুসলিম ছিলেন এবং তাদের কাছে কোন হাজিরা বহি ছিল না, যাতে
তাদের নামসমূহ লেখা হবে। এই জন্য যে ব্যক্তি (যুদ্ধে) অনুপস্থিত থাকত সে এই ধারণাই
করত যে, আল্লাহর অহী অবতীর্ণ ছাড়া তার অনুপস্থিতির কথা গুপ্ত থাকবে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই যুদ্ধ ফল পাকার মৌসুমে করেছিলেন এবং সে সময়
(গাছের) ছায়াও উৎকৃষ্ট (ও প্রিয়) ছিল, আর আমার টানও ছিল সেই ফল ও ছায়ার দিকে।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমরা (যুদ্ধের জন্য)
প্রস্তুতি নিলেন। আর (আমার এই অবস্থা ছিল যে,) আমি সকালে আসতাম, যেন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সঙ্গে আমিও (যুদ্ধের) প্রস্তুতি নিই। কিন্তু
কোন ফায়সালা না করেই আমি (বাড়ী) ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম যে, আমি যখনই ইচ্ছা
করব, যুদ্ধে শামিল হয়ে যাব। কেননা, আমি এর ক্ষমতা রাখি। আমার এই গড়িমসি অবস্থা
অব্যাহত রইল এবং লোকেরা জিহাদের আয়োজনে প্রবৃত্ত থাকলেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমরা একদিন সকালে জিহাদে
বেরিয়ে পড়লেন এবং আমি প্রস্তুতির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে পারলাম না।
আমি আবার সকালে এলাম এবং বিনা সিদ্ধান্তেই (বাড়ী) ফিরে গেলাম। সুতরাং আমার এই
অবস্থা অব্যাহত থেকে গেল। ওদিকে মুসলিম সেনারা দ্রুতগতিতে আগে বাড়তে থাকল এবং
যুদ্ধের ব্যাপারও ক্রমশঃ এগুতে লাগল। আমি ইচ্ছা করলাম যে, আমিও সফরে রওয়ানা হয়ে
তাদের সঙ্গ পেয়ে নিই। হায়! যদি আমি তাই করতাম (তাহলে কতই না ভাল হত)। কিন্তু এটা
আমার ভাগ্যে হয়ে উঠল না। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর চলে
যাওয়ার পর যখনই আমি লোকের মাঝে আসতাম, তখন এ জন্যই দুঃখিত ও চিন্তিত হতাম যে, এখন
(মদীনায়) আমার সামনে কোন আদর্শ আছে তো কেবলমাত্র মুনাফিক কিংবা এত দুর্বল
ব্যক্তিরা যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমার্হ বা অপারগ বলে গণ্য করেছেন।
সম্পূর্ণ রাস্তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে স্মরণ করলেন না।
তাবূক পৌঁছে যখন তিনি লোকের মাঝে বসেছিলেন, তখন আমাকে স্মরণ করলেন এবং বললেন,
‘‘কা‘ব ইবন মালেকের কী হয়েছে?’’ বানু সালেমাহ (গোত্রের) একটি লোক বলে উঠল, ‘‘হে
আল্লাহর রাসূল! তার দুই চাদর এবং দুই পার্শ্ব দর্শন (অর্থাৎ ধন ও তার অহঙ্কার)
তাকে আটকে দিয়েছে।’’ (এ কথা শুনে) মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন,
‘‘বাজে কথা বললে তুমি। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তার ব্যাপারে ভাল ছাড়া
অন্য কিছু জানি না।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নীরব থাকলেন।
এসব কথাবার্তা চলছিল এমতাবস্থায় তিনি একটি লোককে সাদা পোশাক পরে (মরুভূমির)
মরীচিকা ভেদ করে আসতে দেখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
‘‘তুমি যেন আবূ খাইসামাহ হও।’’ (দেখা গেল,) সত্যিকারে তিনি আবূ খাইসামাহ আনসারীই
ছিলেন। আর তিনি সেই ব্যক্তি ছিলেন, যিনি একবার আড়াই কিলো খেজুর সদকাহ করেছিলেন বলে
মুনাফিকরা (তা অল্প মনে করে) তাঁকে বিদ্রূপ করেছিল।’
কা‘ব বলেন, ‘অতঃপর যখন আমি সংবাদ পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাবূক থেকে ফিরার সফর শুরু করে দিয়েছেন, তখন আমার মনে কঠিন দুশ্চিন্তা এসে
উপস্থিত হল এবং মিথ্যা অজুহাত পেশ করার চিন্তা করতে লাগলাম এবং মনে মনে বলতে
লাগলাম যে, আগামী কাল যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরবেন, সে সময়
আমি তাঁর রোষানল থেকে বাঁচব কি উপায়ে? আর এ ব্যাপারে আমি পরিবারের প্রত্যেক
বুদ্ধিমান মানুষের সহযোগিতা চাইতে লাগলাম। অতঃপর যখন বলা হল যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আগমন একদম নিকটবর্তী, তখন আমার অন্তর থেকে
বাতিল (পরিকল্পনা) দূর হয়ে গেল। এমনকি আমি বুঝতে পারলাম যে, মিথ্যা বলে আমি কখনই
বাঁচতে পারব না। সুতরাং আমি সত্য বলার দৃঢ় সঙ্কল্প করে নিলাম। এদিকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালে (মদীনায়) পদার্পণ করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল,
যখন তিনি সফর থেকে (বাড়ি) ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম তিনি মসজিদে দু’ রাকআত নামায
পড়তেন। তারপর (সফরের বিশেষ বিশেষ খবর শোনাবার জন্য) লোকেদের জন্য বসতেন। সুতরাং এই
সফর থেকে ফিরেও যখন পূর্ববৎ কাজ করলেন, তখন মুনাফেকরা এসে তাঁর নিকট ওজর-আপত্তি
পেশ করতে লাগল এবং কসম খেতে আরম্ভ করল। এরা সংখ্যায় আশি জনের কিছু বেশী ছিল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বাহ্যিক ওজর গ্রহণ করে নিলেন,
তাদের বায়আত নিলেন, তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং তাদের
গোপনীয় অবস্থা আল্লাহকে সঁপে দিলেন। অবশেষে আমিও তাঁর খিদমতে হাজির হলাম। অতঃপর
যখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তখন তিনি রাগান্বিত ব্যক্তির হাসির মত মুচকি হাসলেন।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘সামনে এসো!’’ আমি তাঁর সামনে এসে বসে পড়লাম। তিনি আমাকে
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তুমি কেন জিহাদ থেকে পিছনে রয়ে গেলে? তুমি কি বাহন ক্রয় করনি?’’
আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আমি যদি আপনি ছাড়া দুনিয়ার অন্য কোন
লোকের কাছে বসতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবে কোন মিথ্যা ওজর পেশ করে তার অসন্তুষ্টি থেকে
বেঁচে যেতাম। বাকচাতুর্য (বা তর্ক-বিতর্ক করা)র অভিজ্ঞতা আমার যথেষ্ট রয়েছে।
কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, যদি আজ আপনার সামনে মিথ্যা বলি, যাতে আপনি আমার
প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন, তাহলে অতি সত্বর আল্লাহ তা’আলা (অহী দ্বারা সংবাদ দিয়ে)
আপনাকে আমার উপর অসন্তুষ্ট করে দেবেন। পক্ষান্তরে আমি যদি আপনাকে সত্য কথা বলি,
তাহলে আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন। কিন্তু আমি আল্লাহর নিকট এর সুফলের আশা রাখি।
(সেহেতু আমি সত্য কথা বলছি যে,) আল্লাহর কসম! (আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে)
আমার কোন অসুবিধা ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার সাথ ছেড়ে পিছনে থাকার সময় আমি যতটা
সমর্থ ও সচ্ছল ছিলাম ততটা কখনো ছিলাম না।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, ‘‘এই লোকটি নিশ্চিতভাবে সত্য কথা বলেছে। বেশ, তুমি এখান থেকে চলে
যাও, যে পর্যন্ত তোমার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কোন ফায়সালা না করবেন।’’
আমার পিছনে পিছনে বনু সালেমাহ (গোত্রের) কিছু লোক এল এবং আমাকে বলল যে, ‘‘আল্লাহর
কসম! আমরা অবগত নই যে, তুমি এর পূর্বে কোন পাপ করেছ। অন্যান্য পিছনে থেকে যাওয়া
লোকেদের ওজর পেশ করার মত তুমিও কোন ওজর পেশ করলে না কেন? তোমার পাপ মোচনের জন্য
এটাই যথেষ্ট ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার জন্য
(আল্লাহর নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।’’ কা‘ব বলেন, ‘আল্লাহর কসম! লোকেরা আমাকে
আমার সত্য কথা বলার জন্য তিরস্কার করতে থাকল। পরিশেষে আমার ইচ্ছা হল যে, আমি
দ্বিতীয়বার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে গিয়ে প্রথম কথা
অস্বীকার করি (এবং কোন মিথ্যা ওজর পেশ করে দিই।) আবার আমি তাদেরকে বললাম, ‘‘আমার এ
ঘটনা কি অন্য কারো সাথে ঘটেছে?’’ তাঁরা বললেন, ‘‘হ্যাঁ। তোমার মত আরো দু’জন
সমস্যায় পড়েছে। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকটে) তারাও সেই কথা
বলেছে, যা তুমি বলেছ এবং তাদেরকে সেই কথাই বলা হয়েছে, যা তোমাকে বলা হয়েছে।’’ আমি
তাদেরকে বললাম, ‘‘তারা দু’জন কে?’’ তারা বলল, ‘‘মুরারাহ ইবনে রাবী‘ আমরী ও হিলাল
ইবনে উমাইয়্যাহ ওয়াক্বেফী।’’ এই দু’জন যাঁদের কথা তারা আমার কাছে বর্ণনা করল,
তাঁরা সৎলোক ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন; তাঁদের মধ্যে আমার জন্য আদর্শ
ছিল। যখন তারা সে দু’জন ব্যক্তির কথা বলল, তখন আমি আমার পূর্বেকার অবস্থার
(সত্যের) উপর অনড় থেকে গেলাম (এবং আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দূরীভূত হল। যাতে আমি
তাদের ভৎর্সনার কারণে পতিত হয়েছিলাম)। (এরপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম লোকদেরকে পিছনে অবস্থানকারীদের মধ্যে আমাদের তিনজনের সাথে কথাবার্তা বলতে
নিষেধ করে দিলেন।’
কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘লোকেরা আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেল।’ অথবা বললেন,
‘লোকেরা আমাদের জন্য পরিবর্তন হয়ে গেল। পরিশেষে পৃথিবী আমার জন্য আমার অন্তরে
অপরিচিত মনে হতে লাগল। যেন এটা সেই পৃথিবী নয়, যা আমার পরিচিত ছিল। এইভাবে আমরা
৫০টি রাত কাটালাম। আমার দুই সাথীরা তো নরম হয়ে ঘরের মধ্যে কান্নাকাটি আরম্ভ করে
দিলেন। কিন্তু আমি দলের মধ্যে সবচেয়ে যুবক ও বলিষ্ঠ ছিলাম। ফলে আমি ঘর থেকে বের
হয়ে মুসলিমদের সাথে নামাযে হাজির হতাম এবং বাজারসমূহে ঘোরাফেরা করতাম। কিন্তু কেউ
আমার সঙ্গে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর
খিদমতে হাজির হতাম এবং তিনি যখন নামাযের পর বসতেন, তখন তাঁকে সালাম দিতাম, আর আমি
মনে মনে বলতাম যে, তিনি আমার সালামের জওয়াবে ঠোঁট নড়াচ্ছেন কি না? তারপর আমি তাঁর
নিকটেই নামায পড়তাম এবং আড়চোখে তাঁকে দেখতাম। (দেখতাম,) যখন আমি নামাযে মনোযোগী
হচ্ছি, তখন তিনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন এবং যখন আমি তাঁর দিকে দৃষ্টি ফিরাচ্ছি, তখন
তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন!
অবশেষে যখন আমার সাথে মুসলিমদের বিমুখতা দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন একদিন আমি আবূ
ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বাগানে দেওয়াল ডিঙিয়ে (তাতে প্রবেশ করলাম।) সে
(আবূ ক্বাতাদাহ) আমার চাচাতো ভাই এবং আমার সর্বাধিক প্রিয় লোক ছিল। আমি তাকে সালাম
দিলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! সে আমাকে সালামের জওয়াব দিল না। আমি তাকে বললাম, ‘‘হে
আবূ ক্বতাদাহ! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান যে, আমি
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে ভালবাসি?’’ সে
নিরুত্তর থাকল। আমি দ্বিতীয়বার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এবারেও সে চুপ থাকল। আমি
তৃতীয়বার কসম দিয়ে প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে সে বলল, ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশী
জানেন।’’ এ কথা শুনে আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু বইতে লাগল এবং যেভাবে গিয়েছিলাম,
আমি সেইভাবেই দেওয়াল ডিঙিয়ে ফিরে এলাম।
এরই মধ্যে একদিন মদীনার বাজারে হাঁটছিলাম। এমন সময় শাম দেশের কৃষকদের মধ্যে একজন
কৃষককে---যে মদীনায় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করতে এসেছিল---বলতে শুনলাম, কে আমাকে কা‘ব
ইবন মালেককে দেখিয়ে দেবে? লোকেরা আমার দিকে ইঙ্গিত করতে লাগল। ফলে সে ব্যক্তি আমার
নিকটে এসে আমাকে ‘গাস্সান’-এর বাদশার একখানি পত্র দিল। আমি লিখা-পড়া জানতাম তাই
আমি পত্রখানি পড়লাম। পত্রে লিখা ছিলঃ-
‘--- অতঃপর আমরা এই সংবাদ পেয়েছি যে, আপনার সঙ্গী (মুহাম্মাদ) আপনার প্রতি
দুর্ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত অবস্থায় থাকার জন্য সৃষ্টি
করেননি। আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন; আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করব।
পত্র পড়ে আমি বললাম, ‘‘এটাও অন্য এক বালা (পরীক্ষা)।’’ সুতরাং আমি ওটাকে চুলোয়
ফেলে জ্বালিয়ে দিলাম। অতঃপর যখন ৫০ দিনের মধ্যে ৪০ দিন গত হয়ে গেল এবং অহী আসা
বন্ধ ছিল এই অবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর একজন
দূত আমার নিকট এসে বলল, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে
তোমার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার আদেশ দিচ্ছেন!’’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘আমি কি তাকে
তালাক দেব, না কী করব?’’ সে বলল, ‘‘তালাক নয় বরং তার নিকট থেকে আলাদা থাকবে, মোটেই
ওর নিকটবর্তী হবে না।’’ আমার দুই সাথীর নিকটেও এই বার্তা পৌঁছে দিলেন। আমি আমার
স্ত্রীকে বললাম, ‘‘তুমি পিত্রালয়ে চলে যাও এবং সেখানে অবস্থান কর---যে পর্যন্ত
আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে কোন ফায়সালা না করেন।’’ (আমার সাথীদ্বয়ের মধ্যে একজন
সাথী) হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর
কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ! হিলাল ইবন উমাইয়াহ খুবই বৃদ্ধ মানুষ, তার কোন
খাদেমও নেই, সেহেতু আমি যদি তার খিদমত করি, তবে আপনি কি এটা অপছন্দ করবেন?’’ তিনি
বললেন, ‘‘না, (অর্থাৎ তুমি তার খিদমত করতে পার।) কিন্তু সে যেন তোমার (মিলন
উদ্দেশ্যে) নিকটবর্তী না হয়।’’ (হিলালের স্ত্রী) বলল, ‘‘আল্লাহর কসম! (দুঃখের
কারণে এ ব্যাপারে) তার কোন সক্রিয়তা নেই। আল্লাহর কসম! যখন থেকে এ ব্যাপার ঘটেছে
তখন থেকে আজ পর্যন্ত সে সর্বদা কাঁদছে।’’
(কা‘ব বলেন,) ‘আমাকে আমার পরিবারের কিছু লোক বলল যে, ‘‘তুমিও যদি নিজ স্ত্রীর ব্যাপারে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট অনুমতি চাইতে, (তাহলে তা
তোমার পক্ষে ভাল হত।) তিনি হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রীকে তো তার খিদমত করার অনুমতি
দিয়ে দিয়েছেন।’’ আমি বললাম, ‘‘এ ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম -এর নিকট অনুমতি চাইব না। জানি না, যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকটে অনুমতি চাইব, তখন তিনি কী বলবেন। কারণ, আমি তো যুবক
মানুষ।’’
এভাবে আরও দশদিন কেটে গেল। যখন থেকে লোকদেরকে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ
করা হয়েছে, তখন থেকে এ পর্যন্ত আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়ে গেল। আমি পঞ্চাশতম
রাতে আমাদের এক ঘরের ছাদের উপর ফজরের নামায পড়লাম। নামায পড়ার পর আমি এমন অবস্থায়
বসে আছি যার বর্ণনা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ব্যাপারে দিয়েছেন- আমার জীবন আমার জন্য
দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি সংকীর্ণ হয়ে
উঠেছিল---এমন সময় আমি এক চিৎকারকারীর আওয়ায শুনতে পেলাম, সে সাল‘আ পাহাড়ের উপর চড়ে
উচ্চৈঃস্বরে বলছে, ‘‘হে কা‘ব ইবনে মালেক! তুমি সুসংবাদ নাও!’’ আমি তখন (খুশীতে
শুকরিয়ার) সিজদায় পড়ে গেলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, (আল্লাহর পক্ষ থেকে) মুক্তি এসেছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ার পর লোকদেরকে জানিয়ে
দিয়েছেন যে, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ আমাদের তওবা কবূল করে নিয়েছেন। সুতরাং লোকেরা
আমাদেরকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আসতে আরম্ভ করল। এক ব্যক্তি আমার দিকে অতি দ্রুত
গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে এল। সে ছিল আসলাম (গোত্রের) এক ব্যক্তি। আমার দিকে সে দৌড়ে এল
এবং পাহাড়ের উপর চড়ে (আওয়াজ দিল)। তার আওয়াজ ঘোড়ার চেয়েও দ্রুতগামী ছিল। সুতরাং
যখন সে আমার কাছে এল, যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম, তখন আমি তার সুসংবাদ
দানের বিনিময়ে আমার দেহ থেকে দু’খানি বস্ত্র খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম!
সে সময় আমার কাছে এ দু’টি ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর আমি নিজে দু’খানি কাপড়
অস্থায়ীভাবে ধার নিয়ে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে লোকেরা দলে দলে আমার সঙ্গে
সাক্ষাৎ করে আমাকে মুবারকবাদ জানাতে লাগল এবং বলতে লাগল, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তোমার
তওবা কবুল করেছেন, তাই তোমাকে ধন্যবাদ।’’ অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম।
(দেখলাম,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে আছেন এবং তাঁর চারপাশে
লোকজন আছে। ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে ছুটে এসে আমার সঙ্গে
মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে মুবারকবাদ দিলেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি
ছাড়া আর কেউ উঠলেন না।’ সুতরাং কা‘ব ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর এই ব্যবহার
কখনো ভুলতেন না। কা‘ব বলেন, ‘যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
-কে সালাম জানালাম, তখন তিনি তাঁর খুশীময় উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমাকে বললেন,
‘‘তোমার মা তোমাকে যখন প্রসব করেছে, তখন থেকে তোমার জীবনের বিগত সর্বাধিক শুভদিনের
তুমি সুসংবাদ নাও!’’ আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! এই শুভসংবাদ আপনার পক্ষ থেকে,
না কি আল্লাহর পক্ষ থেকে?’’ তিনি বললেন, ‘‘না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে।’’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুশি হতেন, তখন তাঁর চেহারা
উজ্জ্বল হয়ে যেত, মনে হত যেন তা একফালি চাঁদ এবং এতে আমরা তাঁর এ (খুশী হওয়ার) কথা
বুঝতে পারতাম। অতঃপর যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর
সামনে বসলাম, তখন আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার তওবা কবুল হওয়ার দরুন আমি
আমার সমস্ত মাল আল্লাহ ও তাঁর রসুলের রাস্তায় সাদকাহ করে দিচ্ছি।’’ তিনি বললেন,
‘‘তুমি কিছু মাল নিজের জন্য রাখ, তোমার জন্য তা উত্তম হবে।’’ আমি বললাম, ‘‘যাই
হোক! আমি আমার খায়বারের (প্রাপ্ত) অংশ রেখে নিচ্ছি।’’ আর আমি এ কথাও বললাম যে,
‘‘হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে সত্যবাদিতার কারণে (এই বিপদ থেকে)
উদ্ধার করলেন। আর এটাও আমার তওবার দাবী যে, যতদিন আমি বেঁচে থাকব, সর্বদা সত্য
কথাই বলব।’’ সুতরাং আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম -এর সঙ্গে সত্য কথা বলার প্রতিজ্ঞা করলাম আমি জানি না যে, আল্লাহ তা‘আলা
কোন মুসলিমকে সত্য কথার বলার প্রতিদান স্বরূপ উৎকৃষ্ট পুরস্কার দিয়েছেন। আল্লাহর
কসম! আমি যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে এ কথা
বলেছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি মিথ্যা কথা বলার ইচ্ছা করিনি। আর আশা করি যে,
বাকী জীবনেও আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ থেকে নিরাপদ রাখবেন।’
কা‘ব বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা (আমাদের ব্যাপারে আয়াত) অবতীর্ণ করেছেন, (যার অর্থ),
‘‘আল্লাহ ক্ষমা করলেন নবীকে এবং মুহাজির ও আনসারদেরকে যারা সংকট মুহূর্তে নবীর
অনুগামী হয়েছিল, এমন কি যখন তাদের মধ্যকার এক দলের অন্তর বাঁকা হওয়ার উপক্রম
হয়েছিল, তারপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের প্রতি বড়
স্নেহশীল, পরম করুণাময়। আর ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছিল; পরিশেষে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের
প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল আর তারা
উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও হতে বাঁচার অন্য কোন আশ্রয়স্থল
নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তওবা করে। নিশ্চয় আল্লাহই
হচ্ছেন তওবা গ্রহণকারী, পরম করুণাময়। হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং
সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’’ (সূরাহ তাওবাহ ১১৭-১১৯ আয়াত)
কা‘ব ইবন মালেক বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে ইসলামের জন্য হিদায়াত করার পর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে সত্য কথা বলা অপেক্ষা বড় পুরস্কার আমার জীবনে
আল্লাহ আমাকে দান করেননি। ভাগ্যে আমি তাঁকে মিথ্যা কথা বলিনি। নচেৎ তাদের মত আমিও
ধ্বংস হয়ে যেতাম, যারা মিথ্যা বলেছিল। আল্লাহ তা‘আলা যখন অহী অবতীর্ণ করলেন, তখন
নিকৃষ্টভাবে মিথ্যুকদের নিন্দা করলেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে বললেন,
‘‘যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাবে, তারা তখন অচিরেই তোমাদের সামনে শপথ করে বলবে,
যেন তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; অতএব তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; তারা হচ্ছে অতিশয়
ঘৃণ্য, আর তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম, তা হল তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল। তারা এ
জন্য শপথ করবে যেন তোমরা তাদের প্রতি রাজী হয়ে যাও, অনন্তর যদি তোমরা তাদের প্রতি
রাজী হয়ে যাও, তবে আল্লাহ তো এমন দুষ্কর্মকারী লোকদের প্রতি রাজী হবেন না।’’ (ঐ
৯৫-৯৬ আয়াত)
কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘হে তিনজন! আমাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে রাখা
হয়েছিল তাদের থেকে যাদের মিথ্যা কসম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
(অজান্তে) গ্রহণ করলেন, তাদের বায়‘আত নিলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের ব্যাপারটা পিছিয়ে দিলেন।
পরিশেষে মহান আল্লাহ সে ব্যাপারে ফায়সালা দিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আর ঐ তিন
ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’
পিছনে রাখার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তার অর্থ যুদ্ধ থেকে আমাদের পিছনে থাকা নয়। বরং
(এর অর্থ) আমাদের ব্যাপারটাকে ঐ লোকদের ব্যাপার থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যারা
তাঁর কাছে শপথ করেছিল এবং ওযর পেশ করেছিল। ফলে তিনি তা কবূল করে নিয়েছিলেন।’
(সহীহুল বুখারী ২৭৫৮, ২৯৪৭, ২৯৪৮, ২৯৪৯, ২৯৫০, ৩০৮৮, ৩৫৫৬, ৩৮৮৯, ৩৯৫১, ৪৪১৮,
৪৬৭৩, মুসলিম ২৭৬৯, তিরমিযী ৩১০২, নাসায়ী ৩৮২৪, ৩৮২৫, ৩৮২৬, আবূ দাউদ ২২০২, ৩৩১৭,
৩৩১৭, ৩৩২১, ৪৬০০, আহমাদ ১৫৩৪৩, ১৫৩৫৪, ২৬৬২৯, ২৬৬৩৪, ২৬৬৩৭)
আর একটি বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবূকের যুদ্ধে
বৃহস্পতিবার বের হয়েছিলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দ করতেন। অন্য
এক বর্ণনায় আছে, তিনি সফর থেকে কেবল দিনে চাশ্তের (সূর্য একটু উপরে উঠার) সময়
আসতেন এবং এসে সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত নামায পড়তেন অতঃপর সেখানেই
বসে যেতেন (এবং লোকের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর বাসায় যেতেন।)’
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩
আবূ
নুজাইদ ইমরান ইবনে হুসাইন খুযা‘য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জুহাইনা
গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর খিদমতে হাজির
হল। সে অবৈধ মিলনে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে
ফেলেছি তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন!’ সুতরাং আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখ এবং
সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’ সুতরাং সে তাই করল (অর্থাৎ প্রসবের
পর তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে নিয়ে এল)। আল্লাহর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাপড় তার (শরীরের) উপর মজবুত করে বেঁধে
দেওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার
জানাযার নামায পড়লেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল!
আপনি এই মেয়ের জানাযার নামায পড়লেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিল?’ তিনি বললেন,
‘‘(উমার! তুমি জান না যে,) এই স্ত্রী লোকটি এমন বিশুদ্ধ তওবা করেছে, যদি তা মদীনার
৭০টি লোকের মধ্যে বণ্টন করা হত তা তাদের জন্য যথেষ্ট হত। এর চেয়ে কি তুমি কোন উত্তম
কাজ পেয়েছ যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে কুরবান করে দিল?’’ (মুসলিম ১৬৯৬,
তিরমিযী ১৪৩৫, নাসায়ী ১৯৫৭, আবূ দাউদ ৪৪৪০, ইবনু মাজাহ ২৫৫৫, আহমাদ ১৯৩৬০, ১৯৪০২,
দারেমী ২৩২৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যদি আদম সন্তানের সোনার একটি
উপত্যকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দুটি উপত্যকা হোক। (কবরের) মাটিই একমাত্র
তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে। আর যে তওবা করে, আল্লাহ তওবা গ্রহণ করেন।’’(সহীহুল
বুখারী ৬৪৩৬, ৬৪৩৭, মুসলিম ১০৪৯, তিরমিযী ৩৭৯৩, ৩৮৯৮, আহমাদ ৩৪৯১, ২০৬০৭, ২০৬৯৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৫
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু অতা‘আলা ঐ দু’টি
লোককে দেখে হাসেন, যাদের মধ্যে একজন অপরজনকে হত্যা করে এবং দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ
করবে। নিহত ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা অবস্থায় (কোন কাফের কর্তৃক) হত্যা করে
দেওয়া হল। পরে আল্লাহ তা‘আলা হত্যাকারী কাফেরকে তওবা করার তাওফীক প্রদান করেন। ফলে
সে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে যায়।’’(সহীহুল বুখারী-২৮২৬, মুসলিম
১৮৯০, নাসায়ী ৩১৬৫, ৩১৬৬, ইবনু মাজাহ ১৯১, আহমাদ ৭২৮২, ২৭৪৪৬, ৯৬৫৭, ১০২৫৮,
মুওয়াত্তা মালিক ১০০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩
সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱصۡبِرُواْ وَصَابِرُواْ ﴾ [ال عمران: ٢٠٠]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর।”
(সূরা আলে ইমরান ২০০ আয়াত)
তিনি আরও বলেন,
﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥﴾ [البقرة: ١٥٥]
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রাণ এবং ফলের
(ফসলের) লোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।” (সূরা
বাকারাহ ১৫৫ আয়াত)
তিনি আরও বলেন,
﴿ إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ﴾ [الزمر: ١٠]
অর্থাৎ “ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।” (সূরা যুমার ১০ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ٤٣ ﴾ [الشورا: ٤٣]
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।”
(সূরা শুরা ৪৩ আয়াত)
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٣ ﴾ [البقرة: ١٥٣]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।
নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।” (সূরা বাকারাহ ১৫৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡ حَتَّىٰ نَعۡلَمَ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَنَبۡلُوَاْ أَخۡبَارَكُمۡ ٣١ ﴾ [محمد: ٣١]
অর্থাৎ “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ ও
ধৈর্যশীলদেরকে জেনে নই এবং আমি তোমাদের অবস্থা পরীক্ষা করি।” (সূরা মুহাম্মাদ ৩১
আয়াত)
আয়াতসমূহে ধৈর্যের আদেশ এবং তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে তার সংখ্যা অনেক ও
প্রসিদ্ধ।
২৬
وعن أبي مالك الحارث بن عاصم الأشعري رضي
الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "الطهور شطر
الإيمان، والحمد لله تملأ الميزان، وسبحان الله والحمد لله تملآن -أو تملأ- ما بين
السماوات والأرض، والصلاة نور، والصدقة برهان، والصبر ضياء، والقرآن حجة لك أو
عليك. كل الناس يغدو، فبائع نفسه فمعتقها، أو موبقها" (رواه مسلم).
আবূ
মালিক হারিস ইবনু ‘আসেম আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু
লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু
লিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে জ্যোতি।
সাদকাহ হচ্ছে প্রমাণ। ধৈর্য হল আলো। আর কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল।
প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল সকাল সবকর্মে বের হয় এবং তার আত্মার ব্যবসা করে। অতঃপর সে
তাকে (শাস্তি থেকে) মুক্ত করে অথবা তাকে (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ক’রে) বিনাশ
করে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২২৩, মুসলিম ৩৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮০,
আহমাদ ২২৩৯৫, ২২৪০১, দারেমী ৬৫৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭
وعن أبي سعيد سعد بن مالك بن سنان الخدري
رضي الله عنهما: "أن ناساً من الأنصار سألوا رسول الله صلى الله عليه وسلم
فأعطاهم، ثم سألوه فأعطاهم ، حتى نفد ما عنده، فقال لهم حين أنفق كل شيء بيده :
"ما يكن عندي من خير فلن أدخره عنكم ، ومن يستعفف يعفه الله، ومن يستغن
يغنه الله، ومن يتصبر يصبره الله. وما أعطي أحد عطاءً خيراً وأوسع من
الصبر" (متفق عليه) .
আবূ
সায়ীদ সা‘দ ইবনু মালিক ইবনু সিনান খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কিছু
আনসারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি
তাদেরকে দিলেন। পুনরায় তারা দাবী করল। ফলে তিনি (আবার) তাদেরকে দিলেন। এমনকি যা
কিছু তাঁর কাছে ছিল তা সব নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর যখন তিনি সমস্ত জিনিস নিজ হাতে
দান করে দিলেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে যা কিছু (মাল) আসে তা আমি তোমাদেরকে
না দিয়ে কখনই জমা করে রাখব না। (কিন্তু তোমরা একটি কথা মনে রাখবে) যে ব্যক্তি
চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি
(চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে
ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান
করবেন। আর কোন ব্যক্তিকে এমন কোন দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও বিস্তর
হতে পারে।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০, মুসলিম ১০৫৩, তিরমিযী ২০২৪,
নাসায়ী ২৫৮৮, ১৬৪৪, আহমাদ ১০৬০৬, ১০৬২২, ১০৬৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮০, দারেমী ১৬৪৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৮
وعن أبي يحيى صهيب بن سنان رضي الله عنه
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "عجبا لأمر المؤمن إن أمره كله
له خير، وليس ذلك لأحد إلا للمؤمن : إن أصابته سراء شكر فكان خيراً له، وإن
أصابته ضراء صبر فكان خيراً له" (رواه مسلم).
আবূ
ইয়াহয়া সুহাইব ইবনু সিনান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার
প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং
তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ
পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’[১]
[১] মুসলিম ২৯৯৯, আহমাদ ১৮৪৫৫, ১৮৪৬০, ২৩৪০৬, ২৩৪১২, দারেমী
২৭৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৯
وعن أنس رضي الله عنه قال: لما ثقل النبي
صلى الله عليه وسلم جعل يتغشاه الكرب فقالت فاطمة رضي الله عنها: واكرب أبتاه.
فقال : "ليس على أبيك كرب بعد اليوم" فلما مات قالت : يا أبتاه
أجاب رباً دعاه، يا أبتاه جنة الفردوس مأواه، يا أبتاه إلى جبريل ننعاه، فلما دفن
قالت : فاطمة رضي الله عنها: أطابت أنفسكم أن تحثوا على رسول الله صلى الله
عليه وسلم التراب؟ (رواه البخاري).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাকে কষ্ট ঘিরে
ফেলল, তখন (তাঁর কন্যা) ফাতিমা (রাঃ) বললেন, ‘হায়! আব্বাজানের কষ্ট!’ তিনি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, ‘‘আজকের দিনের পর তোমার পিতার
কোনো কষ্ট হবে না।’’ অতঃপর যখন তিনি মারা গেলেন, তখন ফাতিমা (রাঃ) বললেন, ‘হায়
আব্বাজান! প্রভু যখন তাঁকে আহ্বান করলেন, তখন তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন। হায়
আব্বাজান! জান্নাতুল ফিরদাউস তাঁর বাসস্থান। হায় আব্বাজান! আমরা জিবরীলকে আপনার
মৃত্যু-সংবাদ দেব।’ অতঃপর যখন তাঁকে সমাধিস্থ করা হল, তখন ফাতিমা (রাঃ)
(সাহাবাদেরকে) বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মাটি
ফেলতে কি তোমাদেরকে ভাল লাগল?[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৪৬২, নাসায়ী ১৮৪৪, ইবনু মাজাহ ১৬২৯,
১৬৩০, আহমাদ ১২০২৬, ১২৬১৯, ১২৭০৪, দারেমী ৮৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩০
وعن أبي زيد أسامة بن زيد بن حارثة مولى
رسول الله صلى الله عليه وسلم وحبه وابن حبه، رضي الله عنهما، قال: أرسلت بنت
النبي صلى الله عليه وسلم : إن ابني قد احتضر فاشهدنا، فأرسل يقرئ السلام
ويقول: "إن لله ما أخذ، وله ما أعطى، وكل شيء عنده بأجل مسمى، فلتصبر
ولتحتسب" فأرسلت إليه تقسم عليه ليأتينها. فقام ومعه سعد بن عبادة، ومعاذ
بن جبل، وأبي بن كعب، وزيد بن ثابت، ورجال رضي الله عنهم، فرفع إلى رسول الله صلى
الله عليه وسلم الصبي فأقعده في حجره ونفسه تقعقع، ففاضت عيناه، فقال سعد: يا
رسول الله ماهذا؟ فقال: "هذه رحمة جعلها الله تعالى في قلوب
عباده" وفى رواية : "في قلوب من شاء من عباده وإنما يرحم الله من
عباده الرحماء" (متفق عليه) .
আবূ
যায়েদ উসামাহ ইবনু যাইদ ইবনু হারেসাহ থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্বাধীনকৃত দাস এবং তাঁর প্রিয়পাত্র তথা
প্রিয়পাত্রের পুত্র থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা
তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, ‘আমার ছেলের মর মর অবস্থা, তাই আপনি আমাদের এখানে
আসুন।’ ‘তিনি সালাম দিয়ে সংবাদ পাঠালেন যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা যা নিয়েছেন, তা তাঁরই
এবং যা দিয়েছেন তাও তাঁরই। আর তাঁর কাছে প্রতিটি জিনিসের এক নির্দিষ্ট সময় আছে।”
অতএব সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের আশা রাখে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা পুনরায় কসম দিয়ে বলে পাঠালেন যে, তিনি যেন অবশ্যই আসেন।
ফলে তিনি সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ, মু‘আয ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা‘ব, যাইদ ইবনু সাবেত
(রাঃ) এবং আরো কিছু লোকের সঙ্গে সেখানে গেলেন। শিশুটিকে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তুলে দেওয়া হল। তিনি তাকে নিজ কোলে বসালেন। সে
সময় তার প্রাণ ধুকধুক্ করছিল। (তার এই অবস্থা দেখে) তাঁর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু
প্রবাহিত হতে লাগল। সা‘দ (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! একি?’ তিনি বললেন, ‘‘এ
হচ্ছে দয়া, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন।’’
অন্য একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘যে সব বান্দার অন্তরে তিনি চান তাদের অন্তরে রেখে
দিয়েছেন। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল মাত্র দয়ালুদের প্রতিই দয়া
করেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৮৪, ৫৬৫৫, ৬৬০২, ৬৬৫৫, ৭৩৭৭, ৭৪৪৮,
মুসলিম ৯২৩, নাসায়ী ১৮৬৮, আবূ দাউদ ৩১২৫, আহমাদ ২১২৬৯, ২১২৮২, ২১২৯২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১
وعن صهيب رضي الله عنه أن رسول الله صلى
الله عليه وسلم قال: " كان ملك فيمن كان قبلكم، وكان له ساحرٌ، فلما كبر
قال للملك : إني قد كبرت فابعث إلى غلاماً أعلمه السحر؛ فبعث إليه غلاماً يعلمه،
وكان في طريقه إذا سلك راهبٌ، فقعد إليه وسمع كلامه فأعجبه، وكان إذا أتى الساحر
مر بالراهب وقعد إليه، فإذا أتى الساحر ضربه، فشكا ذلك إلى الراهب فقال: إذا
خشيت الساحر فقال: حبسني أهلي، وإذا خشيت أهلك فقل: حبسني الساحر.
فبينما هو على ذلك إذ أتى على دابةٍ عظيمةٍ قد حبست الناس فقال: اليوم أعلم
آلساحر أفضل أم الراهب أفضل؟ فآخذ حجراً فقال: اللهم إن كان أمر الراهب أحب
إليك من أمر الساحر فاقتل هذه الدابة حتى يمضي الناس، فرماها فقتلها ومضى الناس،
فأتى الراهب فأخبره. فقال له الراهب: أي بني أنت اليوم أفضل مني، قد بلغ أمرك
ما أرى، وإنك ستبتلى، فإن ابتليت فلا تدل علي؛ وكان الغلام يبرئ الأكمه والأبرص،
ويداوي الناس من سائر الأدواء. فسمع جليس للملك كان قد عمي، فأتاه بهدايا كثيرةٍ
فقال: ما هاهُنا لك أجمع إن أنت شفيتنى، فقال: إني لا أشفي أحداً إنما يشفى
الله تعالى، فإن آمنت بالله دعوت الله فشفاك، فآمن بالله تعالى فشفاه الله تعالى،
فأتى الملك فجلس إليه كما كان يجلس فقال له الملك: من ردّ عليك بصرك؟ فقال:
ربي قال: ولك رب غيري ؟( قال: ربي وربك الله، فأخذه فلم يزل يعذبه حتى دل
على الغلام، فجئ بالغلام فقال له الملك: أى بني قد بلغ من سحرك ما تبرئ الأكمه
والأبرص وتفعل وتفعل فقال: إني لا أشفي أحداً، إنما يشفي الله تعالى، فأخذه فلم
يزل يعذبه حتى دل على الراهب؛ فجيء بالراهب فقيل له: ارجع عن دينك، فأبى ، فدعا
بالمنشار فوضع المنشار في مفرق رأسه، فشقه حتى وقع شقاه، ثم جيء بجليس الملك فقيل
له: ارجع عن دينك فأبى، فوضع المنشار في مفرق رأسه، فشقه به حتى وقع شقاه، ثم
جيء بالغلام فقيل له ارجع عن دينك فأبى، فدفعه إلى نفر من أصحابه فقال: اذهبوا
به إلى جبل كذا وكذا فاصعدوا به الجبل فقال: اللهم اكفنيهم بما شئت، فرجف بهم
الجبل فسقطوا، وجاء يمشي إلى الملك، فقال له الملك: ما فعل أصحابك؟ فقال:
كفانيهم الله تعالى، فدفعه إلى نفر من أصحابه فقال : اذهبوا به فاحملوه في قرقور
وتوسطوا به البحر، فإن رجع عن دينه وإلا فاقذفوه، فذهبوا به فقال: اللهم اكفنيهم
بما شئت، فانكفأت بهم السفينة فغرقوا، وجاء يمشي إلى الملك. فقال له الملك :
ما فعل أصحابك؟ فقال: كفانيهم الله تعالى. فقال الملك إنك لست بقاتلي حتى
تفعل ما آمرك به. قال : ما هو؟ قال : تجمع الناس في صعيد واحد، وتصلبني
على جذع ، ثم خذ سهماً من كنانتي، ثم ضع السهم في كبد القوس ثم قل: بسم الله رب
الغلام ثم ارمني، فإنك إن فعلت ذلك قتلتني . فجمع الناس في صعيد واحد، وصلبه على
جذع، ثم أخذ سهما من كنانته، ثم وضع السهم في كبد القوس، ثم قال: بسم الله رب
الغلام، ثم رماه فوقع السهم في صدغه، فوضع يده في صدغه فمات. فقال الناس آمنا
برب الغلام، فأتى الملك فقيل له: أرأيت ما كنت تحذر قد والله نزل بك حذرك. قد
آمن الناس. فأمر بالأخدود بأفواه السكك فخدت وأضرم فيها النيران وقال: من لم
يرجع عن دينه فأقحموه فيها أو قيل له : اقتحم ، ففعلوا حتى جاءت امرأة ومعها صبى
لها، فتقاعست ان تقع فيها، فقال لها الغلام: يا أماه اصبري فإنك على
الحق" (رواه مسلم).
সুহাইব
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্ব যুগে একজন বাদশাহ ছিল এবং
তাঁর (উপদেষ্টা) এক জাদুকর ছিল। জাদুকর বার্ধক্যে উপনীত হলে বাদশাহকে বলল যে, ‘আমি
বৃদ্ধ হয়ে গেলাম তাই আপনি আমার নিকট একটি বালক পাঠিয়ে দিন, যাতে আমি তাকে
জাদু-বিদ্যা শিক্ষা দিতে পারি।’ ফলে বাদশাহ তার কাছে একটি বালক পাঠাতে আরম্ভ করল,
যাকে সে জাদু শিক্ষা দিত। তার যাতায়াত পথে এক পাদ্রী বাস করত। যখনই বালকটি
জাদুকরের কাছে যেত, তখনই পাদ্রীর নিকটে কিছুক্ষণের জন্য বসত, তাঁর কথা তাকে ভাল
লাগত। ফলে সে যখনই জাদুকরের নিকট যেত, তখনই যাওয়ার সময় সে পাদ্রীর কাছে বসত। যখন
সে পাদ্রীর কাছে আসত জাদুকর তাকে (তার বিলম্বের কারণে) মারত। ফলে সে পাদ্রীর নিকটে
এর অভিযোগ করল। পাদ্রী বলল, ‘যখন তোমার ভয় হবে যে, জাদুকর তোমাকে মারধর করবে, তখন
তুমি বলবে, আমার বাড়ির লোক আমাকে (কোন কাজে) আটকে দিয়েছিল। আর যখন বাড়ির লোকে
মারবে বলে আশঙ্কা হবে, তখন তুমি বলবে যে, জাদুকর আমাকে (কোন কাজে) আটকে দিয়েছিল।’
সুতরাং সে এভাবেই দিনপাত করতে থাকল। একদিন বালকটি তার চলার পথে একটি বিরাট
(হিংস্র) জন্তু দেখতে পেল। ঐ (জন্তু)টি লোকের পথ অবরোধ করে রেখেছিল। বালকটি (মনে
মনে) বলল, ‘আজ আমি জানতে পারব যে, জাদুকর শ্রেষ্ঠ না পাদ্রী?’ অতঃপর সে একটি পাথর
নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! যদি পাদ্রীর বিষয়টি তোমার নিকটে জাদুকরের বিষয় থেকে
পছন্দনীয় হয়, তাহলে তুমি এই পাথর দ্বারা এই জন্তুটিকে মেরে ফেল। যাতে (রাস্তা
নিরাপদ হয়) এবং লোকেরা চলাফিরা করতে পারে।’ (এই দো‘আ করে) সে জন্তুটাকে পাথর ছুঁড়ল
এবং তাকে হত্যা করে দিল। এর পর লোকেরা চলাফিরা করতে লাগল। বালকটি পাদ্রীর নিকটে
এসে ঘটনাটি বর্ণনা করল। পাদ্রী তাকে বলল, ‘বৎস! তুমি আজ আমার চেয়ে উত্তম। তোমার
(ঈমান ও একীনের) ব্যাপার দেখে আমি অনুভব করছি যে, শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষায় ফেলা
হবে। সুতরাং যখন তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন তুমি আমার রহস্য প্রকাশ করে দিও
না।’
আর বালকটি (আল্লাহর ইচ্ছায়) জন্মান্ধত্ব ও কুষ্ঠরোগ ভাল করত এবং অন্যান্য সমস্ত
রোগের চিকিৎসা করত। (এমতাবস্থায়) বাদশাহর জনৈক নিকটী অন্ধ হয়ে গেল। যখন সে বালকটির
কথা শুনল, তখন প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে তার কাছে এল এবং তাকে বলল যে, ‘তুমি যদি আমাকে
ভাল করতে পার, তাহলে এ সমস্ত উপঢৌকন তোমার।’ সে বলল, ‘আমি তো কাউকে আরোগ্য দিতে
পারি না, আল্লাহ তা‘আলাই আরোগ্য দান করে থাকেন। যদি তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন
কর, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দো‘আ করব, ফলে তিনি তোমাকে অন্ধত্বমুক্ত করবেন।’
সুতরাং সে তার প্রতি ঈমান আনল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরোগ্য দান করলেন। তারপর সে
পূর্বেকার অভ্যাস অনুযায়ী বাদশাহর কাছে গিয়ে বসল। বাদশাহ তাকে বলল, ‘কে তোমাকে চোখ
ফিরিয়ে দিল?’ সে বলল, ‘আমার প্রভু!’ সে বলল, ‘আমি ব্যতীত তোমার অন্য কেউ প্রভু
আছে?’ সে বলল, ‘আমার প্রভু ও আপনার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকে গ্রেপ্তার
করল এবং তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ (চিকিৎসক)
বালকের কথা বলে দিল। অতএব তাকে (বাদশার নিকটে) নিয়ে আসা হল। বাদশাহ তাকে বলল,
‘বৎস! তোমার কৃতিত্ব ঐ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে, তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে
আরোগ্য দান করছ এবং আরো অনেক কিছু করছ।’ বালকটি বলল, ‘আমি কাউকে আরোগ্য দান করি
না, আরোগ্য দানকারী হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকেও গ্রেপ্তার করে
ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ পাদ্রীর কথা বলে দিল।
অতঃপর পাদ্রীকেও (তার কাছে) নিয়ে আসা হল। পাদ্রীকে বলা হল যে, ‘তুমি নিজের ধর্ম
থেকে ফিরে যাও।’ কিন্তু সে অস্বীকার করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল।
করাতটি তাকে (চিরে) দ্বিখন্ডিত করে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল।
তারপর বাদশাহর নিকটে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বলা হল যে, ‘তোমার ধর্ম পরিত্যাগ কর।’
কিন্তু সেও (বাদশার কথা) প্রত্যাখান করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। তা
দিয়ে তাকে (চিরে) দ্বিখন্ডিত করে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর
বালকটিকে নিয়ে আসা হল। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তুমি ধর্ম থেকে ফিরে এস।’ কিন্তু
সেও অসম্মতি জানাল। সুতরাং বাদশাহ তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল
যে, ‘একে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও, তার উপরে তাকে আরোহণ করাও। অতঃপর যখন তোমরা তার
চূড়ায় পৌঁছবে (তখন তাকে ধর্ম-ত্যাগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর) যদি সে নিজের ধর্ম
থেকে ফিরে যায়, তাহলে ভাল। নচেৎ তাকে ওখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাও।’ সুতরাং
তারা তাকে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের উপর আরোহণ করল। বালকটি আল্লাহর কাছে দো‘আ করল, ‘হে
আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তাদের মুকাবেলায় যে ভাবেই চাও যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং
পাহাড় কেঁপে উঠল এবং তারা সকলেই নীচে পড়ে গেল।
বালকটি হেঁটে বাদশার কাছে উপস্থিত হল। বাদশাহ তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার সঙ্গীদের
কি হল?’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছেন।’
বাদশাহ আবার তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ‘একে নিয়ে তোমরা
নৌকায় চড় এবং সমুদ্রের মধ্যস্থলে গিয়ে তাকে ধর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর! যদি সে
স্বধর্ম থেকে ফিরে আসে, তাহলে ঠিক আছে। নচেৎ তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ কর।’ সুতরাং
তারা তাকে নিয়ে গেল। অতঃপর বালকটি (নৌকায় চড়ে) দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি এদের
মোকাবেলায় যেভাবে চাও আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং নৌকা উল্টে গেল এবং তারা
সকলেই পানিতে ডুবে গেল।
তারপর বালকটি হেঁটে বাদশাহর কাছে এল। বাদশাহ বলল, ‘তোমার সঙ্গীদের কী হল?’ বালকটি
বলল, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছেন।’ পুনরায় বালকটি
বাদশাহকে বলল যে, ‘আপনি আমাকে সে পর্যন্ত হত্যা করতে পারবেন না, যে পর্যন্ত না
আপনি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।’ বাদশাহ বলল, ‘তা কী?’ সে বলল, ‘আপনি
একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করুন এবং গাছের গুড়িতে আমাকে ঝুলিয়ে দিন। অতঃপর আমার তূণ
থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রাখুন, তারপর বলুন, ‘‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল
গুলাম!’’ (অর্থাৎ এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর আমাকে তীর
মারুন। এভাবে করলে আপনি আমাকে হত্যা করতে সফল হবেন।’
সুতরাং (বালকটির নির্দেশানুযায়ী) বাদশাহ একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করল এবং গাছের
গুঁড়িতে তাকে ঝুলিয়ে দিল। অতঃপর তার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রেখে
বলল, ‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’ (অর্থাৎ এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে
মারছি।) অতঃপর তাকে তীর মারল। তীরটি তার কান ও মাথার মধ্যবর্তী স্থানে (কানমুতোয়)
লাগল। বালকটি তার কানমুতোয় হাত রেখে মারা গেল। অতঃপর লোকেরা (বালকটির অলোকিকতা
দেখে) বলল যে, ‘আমরা এ বালকটির প্রভুর উপর ঈমান আনলাম।’ বাদশার কাছে এসে বলা হল
যে, ‘আপনি যার ভয় করছিলেন তাই ঘটে গেছে, লোকেরা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছে।’
সুতরাং সে পথের দুয়ারে গর্ত খুঁড়ার আদেশ দিল। ফলে তা খুঁড়া হল এবং তাতে আগুন
জ্বালানো হল। বাদশাহ আদেশ করল যে, ‘যে দ্বীন থেকে না ফিরবে তাকে এই আগুনে নিক্ষেপ
কর’ অথবা তাকে বলা হল যে, ‘তুমি আগুনে প্রবেশ কর।’ তারা তাই করল। শেষ পর্যন্ত একটি
স্ত্রীলোক এল। তার সঙ্গে তার একটি শিশু ছিল। সে তাতে পতিত হতে কুণ্ঠিত হলে তার
বালকটি বলল, ‘আম্মা! তুমি সবর কর। কেননা, তুমি সত্যের উপরে আছ।’’[১]
[১] মুসলিম ৩০০৫, তিরমিযী ৩৩৪০, আহমাদ ২৩৪১৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২
وعن أنس رضي الله عنه قال: مر النبي صلى
الله عليه وسلم بامرأة تبكي عند قبر فقال : "اتقي الله واصبري"
فقالت : إليك عني ، فإنك لم تصب بمصيبتي ( ولم تعرفه، فقيل لها : إنه
النبي صلى الله عليه وسلم ، فأتت باب النبي صلى الله عليه وسلم، فلم تجد عنده
بوابين، فقالت: لم أعرفك، فقال: "إنما الصبر عند الصدمة الأولى"
(متفق عليه) .
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে একটি
কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’’
সে বলল, ‘আপনি আমার নিকট হতে দূরে সরে যান। কারণ, আমি যে বিপদে পড়েছি আপনি তাতে
পড়েননি।’ সে তাঁকে চিনতে পারেনি (তাই সে চরম শোকে তাঁকে অসঙ্গত কথা বলে ফেলল)।
অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ সুতরাং
(এ কথা শুনে) সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুয়ারের কাছে এল। সেখানে
সে দারোয়ানদেরকে পেল না। অতঃপর সে ( প্রবেশ করে) বলল, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আঘাতের শুরুতে সবর করাটাই হল প্রকৃত
সবর।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৫২, ১২৮৩, ১৩০২, ৭১৫৪, মুসলিম ৯২৬,
তিরমিযী ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, আবূ দাউদ ৩১২৪, ইবনুূু মাজাহ ১৫৯৬, আহমাদ ১১৯০৮, ১২০৪৯,
১২৮৬০।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله
صلى الله عليه وسلم قال : " يقول الله تعالى : ما لعبدي المؤمن عندي
جزاء إذا قبضت صفيه من أهل الدنيا ثم احتسبه إلا الجنة" (رواه
البخاري).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার মু’মিন
বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার
দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নই এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে।’’[১]
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৪
وعن عائشة رضي الله عنها أنها سألت رسول
الله صلى الله عليه وسلم عن الطاعون، فأخبرها أنه كان عذاباً يبعثه الله تعالى على
من يشاء، فجعله الله تعالى رحمة للمؤمنين، فليس من عبد يقع في الطاعون فيمكث في
بلده صابراً محتسباً يعلم أنه لا يصيبه إلا ما كتب الله له إلا كان له مثل أجر
الشهيد" (رواه البخاري).
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করলেন। তিনি তাঁকে বললেন যে, ‘‘এটা আযাব; আল্লাহ তা‘আলা যার প্রতি ইচ্ছা করেন এটা
প্রেরণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একে মু’মিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিলেন। ফলে
(এখন) যে ব্যক্তি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হবে এবং সে নিজ দেশে ধৈর্য সহকারে নেকীর
নিয়তে অবস্থান করবে, সে জানবে যে, তাকে তাই পৌঁছবে যা আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য লিখে
দিয়েছেন, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য শহীদের মত পুরস্কার রয়েছে।” [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৪৭৪, ৫৭৩৪, ৬৬১৯ আহমাদ ২৩৮৩৭, ২৪৬৮৬,
২৫৬০৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫
وعن أنس رضي الله عنه قال: سمعت رسول
الله صلى الله عليه وسلم يقول : "إن لله عزوجل قال: إذا ابتليت عبدي
بحبيبتيه فصبر عوضته منهما الجنة" ، (رواه البخاري).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয়তম দুটি জিনিস দ্বারা
(অর্থাৎ চক্ষু থেকে বঞ্চিত করে) পরীক্ষা করি এবং সে সবর করে আমি তাকে এ দু’টির
বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করব।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৫৩, তিরমিযী ২৪০০, আহমাদ ১২০৫৯, ১২১৮৫,
১৩৬০৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৬
وعن عطاء بن أبي رباح قال: قال لي ابن
عباس رضي الله عنهما: ألا أريك امرأة من أهل الجنة " فقلت: بلى، قال:
هذه المرأة السوداء أتتت النبي صلى الله عليه وسلم فقالت : إني أصرع، و إني
أتكشف، فادع الله تعالى لي قال: "إن شئت صبرت ولك الجنة، وإن شئت دعوت
الله تعالى أن يعافيك" فقالت: أصبر، فقالت: إني أتكشف ، فادع الله أن
لا أتشكف ، فدمعا لها. (متفق عليه) .
আত্বা
ইবনু আবী রাবাহ থেকে বর্ণিতঃ
একদা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না!’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘এই কৃষ্ণকায় মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বলল যে, আমার মৃগী রোগ আছে, আর সে কারণে আমার দেহ থেকে
কাপড় সরে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি চাও
তাহলে সবর কর; এর বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ
নিরাময়ের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকটে দো‘আ করব।’’ স্ত্রীলোকটি বলল, ‘আমি সবর করব।’
অতঃপর সে বলল, ‘(রোগ উঠার সময়) আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়, সুতরাং আপনি আল্লাহর
কাছে দো‘আ করুন, যেন আমার দেহ থেকে কাপড় সরে না যায়।’ ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৫৩, তিরমিযী ২৪০০, আহমাদ ১২০৫৯, ১২১৮৫,
১৩৬০৭।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭
وعن أبي عبد الرحمن عبد الله بن مسعود رضي
الله عنه قال: كأني انظر إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم يحكي نبياً من
الأنبياء، صلوات الله وسلامه عليهم، ضربه قومه فأدموه وهو يمسح الدم عن وجهه، يقول
: "اللهم اغفر لقومى فإنهم لا يعلمون" (متفق عليه) .
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘আমি যেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবীদের মধ্যে কোন
এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি; (আলাইহিমুস সালাতু অসসালাম) যাঁকে তাঁর স্বজাতি
প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। আর তিনি নিজ চেহারা থেকে রক্ত পরিষ্কার করছেন আর
বলছেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও। কেননা, তারা জ্ঞানহীন।”[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৪৭৭, ৬৯২৯, মুসলিম ১৭৯২, ইবনু মাজাহ
৪০২৫, আহমাদ ৩৬০০, ৪০৪৭, ৪০৯৬, ৪১৯১, ৪৩১৯, ৪৩৫৩।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৮
وعن أبي سعيد وأبي هريرة رضي الله عنهما عن
النبي صلى الله عليه وسلم قال: "ما يصيب المسلم من نصب ولا وصب ولا هم
ولا حزن ولا أذى ولا غم، حتى الشوكة يشاكها إلا كفر الله بها من خطاياه"
(متفق عليه) .
আবূ
সাঈদ (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে যে কোনো ক্লান্তি, অসুখ,
চিন্তা, শোক এমন কি (তার পায়ে) কাঁটাও লাগে, আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে তার
গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৪২, মুসলিম ২৫৭৩, তিরমিযী ৯৬৬, আহমাদ
৭৯৬৯, ৮২১৯, ৮৯৬৬, ১০৬২৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৯
وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال: دخلت
على النبي صلى الله عليه وسلم وهو يوعك فقلت: يارسول الله إنك توعك وعكاً شديداً
قال: "أجل إني أوعك كما يوعك رجلان منكم" قلت: ذلك أن لك أجرين
؟ قال: "أجل ذلك كذلك ما من مسلم يصيبه أذى؛ شوكة فما فوقها إلا كفر
الله بها سيئاته ، وحطت عنه ذنوبه كما تحط الشجرة ورقها" (متفق
عليه) .
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। সে সময় তিনি জ্বরে
ভুগছিলেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার যে প্রচণ্ড জ্বর!’ তিনি বললেন,
‘‘হ্যাঁ! তোমাদের দু’জনের সমান আমার জ্বর আসে।’’ আমি বললাম, ‘তার জন্যই কি আপনার
পুরস্কারও দ্বিগুণ?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ! ব্যাপার তা-ই। (অনুরূপ) যে কোন মুসলিমকে
কোন কষ্ট পৌঁছে, কাঁটা লাগে অথবা তার চেয়েও কঠিন কষ্ট হয়, আল্লাহ তা‘আলা এর কারণে
তার পাপসমূহকে মোচন করে দেন এবং তার পাপসমূহকে এভাবে ঝরিয়ে দেওয়া হয়; যেভাবে গাছ
তার পাতা ঝরিয়ে দেয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৪৮, ৫৬৪৭, ৫৬৬০, ৫৬৬১, ৫৬৬৭ মুসলিম
২৫৭১, আহমাদ ৩৬১১, ৪১৯৩, ৪৩৩৩, দারেমী ২৭৭১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم " من يرد الله به خيراً يصب منه" :
(رواه البخاري).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে
দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৪৫, আহমাদ ৭১৯৪, মুওয়াত্তা মালেক
১৭৫২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪১
وعن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم : " لا يتمنين أحدكم الموت لضر أصابه، فإن كان لابد
فاعلاً فليقل: اللهم أحيني ما كانت الحياة خيراً لي وتوفني إذا كانت الوفاة
خيراً لي" (متفق عليه) .
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো বিপদে
পড়ার কারণে যেন মরার আকাঙ্ক্ষা না করে। আর যদি করতেই হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘হে
আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ; যে পর্যন্ত জীবিত থাকাটা আমার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর
আমাকে মরণ দাও; যদি মরণ আমার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৭১, ৬৩৫১, ৭২৩৩, মুসলিম ২৬৮০, তিরমিযী
৯৭১, নাসায়ী ১৮২০, ১৮২১, ১৮২২, আবূ দাউদ, ১৩০৮, ইবনু মাজাহ ৪২৬৫, আহমাদ ১১৫৬৮, ১১৬০৪,
১২২৫৩, ১২৩৪৪, ১২৬০৮।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২
وعن أبي عبد الله خباب بن الأرت رضي الله
عنه قال: شكونا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو متوسد بردة له في ظل الكعبة،
فقلنا : ألا تستنصر لنا ألا تدعو لنا؟ فقال: قد كان من قبلكم يؤخذ الرجل
فيحفر له في الأرض فيجعل فيها ثم يؤتى بالمنشار فيوضع على رأسه فيجعل نصفين، ويمشط
بأمشاط من الحديد ما دون لحمه وعظمه، ما يصده ذلك عن دينه، والله ليتمن الله هذا
الأمر حتى يسير الراكب من صنعاء إلى حضرموت لا يخاف إلا الله والذئب على غنمه،
ولكنكم تستعجلون" (رواه البخاري).
খাব্বাব
ইবনু আরাত্ত্ রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম (এমতাবস্থায়)
যে, তিনি কা‘বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম যে,
‘আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দো‘আ
করবেন না?’ তিনি বললেন, ‘‘(তোমাদের জানা উচিত যে,) তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন)
লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার
মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড করে দেওয়া
হত এবং দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত।
কিন্তু এই (কঠোর পরীক্ষা) তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম!
আল্লাহ নিশ্চয় এই ব্যাপারটিকে (দ্বীন ইসলামকে) এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী
সান‘আ’ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের
উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৬১৬, ৫৬৫৬, ৫৬৬২, ৭৪৭০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩
وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال : لما
كان يوم حنين آثر رسول الله صلى الله عليه وسلم ناساً في القسمة، فأعطى الأقرع بن
حابس مائة من الإبل، وأعطى عيينة بن حصن مثل ذلك، وأعطى ناساً من أشراف العرب وآثرهم
يومئذ في القسمة. فقال رجل: والله إن هذه قسمة ما عدل فيها، وما أريد فيها وجه
الله، فقلت : والله لأخبرن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فأتيته فأخبرته بما
قال: فتغير وجههه حتى كان كالصرف . ثم قال " فمن يعدل إذا لم يعدل
الله ورسوله؟ ثم قال: يرحم الله موسى قد أوذي بأكثر من هذا فصبر".
فقلت: لا جرم لا أرفع إليه بعدها حديثاً. (متفق عليه) .
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হুনাইন
যুদ্ধের গনিমতের মাল বণ্টনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু
লোককে (তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য) প্রাধান্য দিলেন (অর্থাৎ অন্য লোকের তুলনায়
তাদেরকে বেশী মাল দিলেন)। সুতরাং তিনি আক্বরা‘ ইবনু হাবেসকে একশত উঁট দিলেন এবং
‘উয়াইনা ইবনু হিসনকেও তারই মত দিলেন। অনুরূপ আরবের আরো কিছু সম্ভ্রান্ত মানুষকেও
সেদিন (মাল) বণ্টনে প্রাধান্য দিলেন। (এ দেখে) একটি লোক বলল, ‘আল্লাহর কসম! এই
বণ্টনে ইনসাফ করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তোষ লাভের ইচ্ছা রাখা হয়নি!’ আমি (ইবনু
মাসউদ) বললাম, ‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এই সংবাদ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেব।’ অতএব আমি তাঁর কাছে এসে সেই সংবাদ দিলাম যা সে বলল। ফলে
তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে এমনকি লালবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘যদি আল্লাহ
ও তাঁর রাসূল ইনসাফ না করেন, তাহলে আর কে ইনসাফ করবে?’’ অতঃপর তিনি বললেন,
‘‘আল্লাহ মূসাকে রহম করুন, তাঁকে এর চেয়ে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি
ধৈর্য ধারণ করেছিলেন।’’ অবশেষে আমি (মনে মনে) বললাম যে, ‘আমি এর পরে কোন কথা তাঁর
কাছে পৌঁছাব না।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১৫০, ৩৪০৫, ৪৩৩৫, ৪৩৩৬, ৬০৫৯, ৬১০০,
৬২৯১, ৬৩৩৬, মুসলিম ১০৬২, আহমাদ ৩৫৯৭, ৩৭৫০, ৩৮৯২, ৪১৩৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪
وعن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم :"إذا أراد الله بعبده خيراً عجل له العقوبة في
الدنيا، وإذا أراد الله بعبده الشر أمسك عنه بذنبه حتى يوافي به يوم
القيامة".
وقال النبي صلى الله عليه وسلم : "إن عظم الجزاء مع عظم البلاء، وإن الله
تعالى إذا أحب قوماً ابتلاهم، فمن رضي فله الرضى، ومن سخط فله السخط"
(رواه الترمذي وقال : حديث حسن).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার মঙ্গল
চান, তখন তিনি তাকে তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের) শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ
তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন। পরিশেষে
কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেবেন।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরো বলেন, ‘‘বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো জাতিকে
ভালবাসেন, তখন তার পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট (ধৈর্য) প্রকাশ করবে, তার
জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার
জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’’[১]
[১] মুসলিম ২৩৯৬, ইবনু মাজাহ ৪০৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫
وعن أنس رضي الله عنه قال: كان ابن لأبي
طلحة رضي الله عنه يشتكي، فخرج أبو طلحة، فقبض الصبي، فلما رجع أبو طلحة قال: ما
فعل ابني؟ قالت أم سليم وهى أم الصبي : هو أسكن ما كان، فقربت إليه العشاء
فتعشى، ثم أصاب منها، فلما فرغ قالت: واروا الصبي، فلما أصبح أبو طلحة أتى رسول
الله صلى الله عليه وسلم فأخبره، فقال: "أعرستم الليلة ؟"
قال: نعم ، قال: "اللهم بارك لهما، فولدت غلاماً، فقال لي أبو طلحة:
احمله حتى تأتى به النبي صلى الله عليه وسلم، وبعث معه بتمرات، فقال:
"أمعه شيء؟" قال: نعم، تمرات فأخذها النبي صلى الله عليه وسلم فمضغها
، ثم أخذها من فيه فجعلها في فيّ الصبي ، ثم حنكه وسماه عبد الله. (متفق
عليه) .
وفى رواية لمسلم: مات ابن لأبي طلحة بن أم سليم ، فقالت لأهلها لا تحدثوا أبا
طلحة بابنه حتى أكون أنا أحدثه، فجاء فقربت إليه عشاءً فأكل وشرب، ثم تصنعت له
أحسن ما كانت تصنع قبل ذلك، فوقع بها، فلما أن رأت أنه قد شبع وأصاب منها قالت:
يا أبا طلحة، أرأيت لو أن قوماً أعاروا عاريتهم أهل بيت فطلبوا عاريتهم، ألهم أن
يمنعوهم؟ قال: لا، فقالت : فاحتسب ابنك. قال: فغضب، ثم قال: تركتني
حتى إذا تلطخت أخبرتني بابني؟! فانطلق حتى أتى رسول الله صلى الله عليه وسلم
فأخبره بما كان ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم. "بارك الله في
ليلتكما" قال: فحملت، قال وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم في سفر وهي
معه، وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أتى المدينة من سفر لا يطرقها طروقاً
فدنوا من المدينة، فضربها المخاض، فاحتبس عليها أبو طلحة، وانطلق رسول الله صلى
الله عليه وسلم قال: يقول أبو طلحة: إنك لتعلم يارب أنه يعجبني أن أخرج مع
رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا خرج، وأدخل معه إذا دخل، وقد احتبست بما ترى،
تقول أم سليم: يا أبا طلحة ما أجد الذى كنت أجد، انطلق، فانطلقنا، وضربها المخاض
حين قدما فولدت غلاماً. فقالت لي أمي : يا أنس لا يرضعه أحد حتى تغدو به على
رسول الله صلى الله عليه وسلم، فلما أصبح احتملته فانطلقت به إلى رسول الله صلى
الله عليه وسلم. وذكر تمام الحديث.
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আবূ ত্বালহা (রাঃ)-এর এক ছেলে অসুস্থ ছিল। আবূ ত্বালহা (রাঃ) যখন কোন কাজে
বাইরে চলে গেলেন তখন ছেলেটি মারা গেল। যখন তিনি বাড়ি ফিরে এলেন তখন জিজ্ঞাসা করলেন
যে, ‘আমার ছেলে কেমন আছে?’ ছেলেটির মা উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহ বললেন, ‘সে
পূর্বের চেয়ে আরামে আছে।’ অতঃপর তিনি তাঁর সামনে রাতের খাবার হাজির করলেন। তিনি তা
খেলেন। অতঃপর তার সঙ্গে যৌন-মিলন করলেন। আবূ ত্বালহা যখন এসব থেকে অবকাশপ্রাপ্ত
হলেন, তখন স্ত্রী বললেন যে, ‘(আপনার বাইরে চলে যাওয়ার পর শিশুটি মারা গেছে।) সুতরাং
শিশুটিকে এখন দাফন করুন।’ সকাল হলে আবূ ত্বালহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন।
তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘‘তোমরা কি আজ রাতে মিলন করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী
হ্যাঁ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি এ দুজনের
জন্য বরকত দাও?’’ অতএব (তাঁর দো‘আর ফলে নির্দিষ্ট সময়ে উম্মে সুলাইম) একটি পুত্র
সন্তান প্রসব করলেন। (আনাস বলেন,) আমাকে আবূ ত্বালহা বললেন, ‘তুমি একে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে নিয়ে যাও।’ আর তার সঙ্গে কিছু খেজুরও
পাঠালেন। তিনি বললেন, ‘তার সঙ্গে কি কিছু আছে?’ আনাস (রাঃ) বললেন, ‘জী হ্যাঁ! কিছু
খেজুর আছে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং তা চিবালেন।
অতঃপর তাঁর মুখ থেকে বের করে শিশুটির মুখে রেখে দিলেন। আর তার নাম ‘আব্দুল্লাহ’
রাখলেন। (বুখারী-মুসলিম)
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, ইবনু উয়াইনাহ বলেন যে, জনৈক আনসারী বলেছেন, ‘আমি এই
আব্দুল্লাহর নয়টি ছেলে দেখেছি, তারা সকলেই কুরআনের হাফেয ছিলেন।’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, আবূ ত্বালহার একটি ছেলে, যে উম্মে সুলাইমের গর্ভ থেকে
হয়েছিল, সে মারা গেল। সুতরাং তিনি (উম্মে সুলাইম) তাঁর বাড়ির লোককে বললেন, ‘তোমরা
আবূ ত্বালহাকে তাঁর পুত্রের ব্যাপারে কিছু বলো না। আমি স্বয়ং তাঁকে এ কথা বলব।’
সুতরাং তিনি এলেন এবং (স্ত্রী তাঁর সামনে রাতের খাবার রাখলেন। তিনি পানাহার করলেন।
এ দিকে স্ত্রী আগের তুলনায় বেশী সাজসজ্জা করে তাঁর কাছে এলেন এবং তিনি তাঁর সঙ্গে
মিলন করলেন। অতঃপর তিনি যখন দেখলেন যে, তিনি (স্বামী) খুবই পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং
যৌন-সম্ভোগ করে নিয়েছেন, তখন বললেন, ‘হে আবূ ত্বালহা! আচ্ছা আপনি বলুন! যদি কোন
সম্প্রদায় কোন পরিবারকে কোন জিনিস (সাময়িকভাবে) ধার দেয়, অতঃপর তারা তাদের ধার দেওয়া
জিনিস ফিরিয়ে নিতে চায়, তাহলে কি তাদের জন্য তা না দেওয়ার অধিকার আছে?’ তিনি জবাব
দিলেন, ‘না।’ অতঃপর স্ত্রী বললেন, ‘আপনি নিজ পুত্রের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে
প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখুন। (অর্থাৎ আপনার পুত্রও আল্লাহর দেওয়া আমানত ছিল, তিনি
তাঁর আমানত ফিরিয়ে নিয়েছেন।)’
আনাস (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) তিনি রাগান্বিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তুমি
আমাকে কিছু না বলে এমনি ছেড়ে রাখলে, অবশেষে আমি সহবাস করে যখন অপবিত্র হয়ে গেলাম,
তখন তুমি আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ দিলে!’ এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হয়ে যা কিছু ঘটেছে তা বর্ণনা করলেন। তা শুনে
তিনি দো‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাদের দু’জনের জন্য এই রাতে বরকত দাও।’ সুতরাং (এই
দো‘আর ফলে) তিনি গর্ভবতী হলেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন।
উম্মে সুলাইম ও (তাঁর স্বামী আবূ ত্বালহা) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল যে, যখন তিনি সফর থেকে মদ্বীনায়
আসতেন তখন তিনি রাতে আসতেন না। যখন এই কাফেলা মদ্বীনার নিকটবর্তী হল, তখন উম্মে
সুলাইমের প্রসব-বেদনা উঠল। সুতরাং আবূ ত্বালহা তাঁর খিদমতের জন্য থেমে গেলেন এবং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদ্বীনায়) চলে গেলেন।’ আনাস বলেন,
‘আবূ ত্বালহা বললেন, ‘‘হে প্রভু! তুমি জান যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্বীনা থেকে বাইরে যান, তখন আমি তাঁর সঙ্গে যেতে ভালবাসি এবং
তিনি মদ্বীনায় প্রবেশ করেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করতে ভালবাসি এবং তুমি দেখছ
যে, (আমার স্ত্রীর) জন্য আমি থেমে গেলাম।’’
উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হে আবূ ত্বালহা! আমি পূর্বে যে বেদনা অনুভব করছিলাম এখন তা
অনুভব করছি না, তাই চলুন।’ সুতরাং আমরা সেখান থেকে চলতে আরম্ভ করলাম। যখন তাঁরা
দু’জনে মদ্বীনা পৌঁছলেন, তখন আবার প্রসব বেদনা শুরু হল। অবশেষে তিনি একটি পুত্র
সন্তান প্রসব করলেন। আমার মা আমাকে বললেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি একে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে না নিয়ে যাবে, সে পর্যন্ত কেউ যেন একে দুধ
পান না করায়।’ ফলে আমি সকাল হতেই তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর খিদমত নিয়ে গেলাম। অতঃপর আনাস (রাঃ) বাকী হাদীস বর্ণনা করলেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩০১, ১৫০২, ৫৪৭০, ৫৫৪২, ৫৮২৪, মুসলিম
২১১৯, ২১৪৪, আবূ দাউদ ২৫৬৩, ৪৯৫১, আহমাদ ১১৬১৭, ১২৩৩৯, ১২৩৮৪, ১২৪৫৪, ১২৫৪৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله
صلى الله عليه وسلم قال: "ليس الشديد بالصرعة، إنما الشديد الذى يملك
نفسه عند الغضب" (متفق عليه) .
আবূ
হুরাইরাহ থেকে বর্ণিতঃ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘(প্রকৃত) বলবান সে নয়, যে কুস্তিতে (অপরকে পরাজিত করে)। প্রকৃত বলবান
(কুস্তিগীর) তো সেই ব্যক্তি, যে ক্রোধের সময় নিজেকে কাবুতে রাখতে পারে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬১১৪, মুসলিম ২৬০৯, আহমাদ ৭১৭৮, ৭৫৮৪,
১০৩২৪, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৮১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭
وعن سليمان بن صرد رضي الله عنه قال: كنت
جالساً مع النبي صلى الله عليه وسلم، ورجلان يستبان، وأحدهما قد احمر وجهه،
وانتفخت أوداجه. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " إني لأعلم كلمة
لو قالها لذهب عنه ما يجد، لو قال: أعوذ بالله من الشيطان الرجيم ذهب منه ما
يجد". فقال له: إن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " تعوذ
بالله من الشيطان الرجيم" (متفق عليه) .
সুলাইমান
ইবনু সুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় দু’জন লোক
একে অপরকে গালি দিচ্ছিল। তার মধ্যে একজনের চেহারা (ক্রোধের চোটে) লালবর্ণ হয়ে
গিয়েছিল এবং তার শিরাগুলো ফুলে উঠেছিল। (এ দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি এমন এক বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে, তাহলে তার
ক্রোধ দূরীভূত হবে। যদি সে বলে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম’ (অর্থাৎ
আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইছি), তাহলে তার উত্তেজনা ও ক্রোধ সমাপ্ত
হবে।’’ লোকেরা তাকে বলল, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বিতাড়িত
শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাও (অর্থাৎ উপরোক্ত বাক্যটি পড়)।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩২৮২, ৬০৪৮, ৬১১৫, মুসলিম ২৬১০, আবূ
দাউদ ৪৭৮১, আহমাদ ২৬৬৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৮
وعن معاذ بن أنس رضي الله عنه أن النبي صلى
الله عليه وسلم قال: " من كظم غيظاً ، وهو قادر على أن ينفذه، دعاه الله
سبحانه وتعالى على رؤوس الخلائق يوم القيامة حتى يخيره من الحور العين ما
شاء" (رواه أبو داود، والترمذي وقال: حديث حسن).
মু‘আয
ইবনু আনাস থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ক্রোধ সংবরণ করবে অথচ সে তা
বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা রাখে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির
সামনে ডেকে এখতিয়ার দিবেন যে, সে যে কোন হুর নিজের জন্য পছন্দ করে নিক।’’[১]
[১] (ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসটি হাসান।) তিরমিযী ২০২১,
২৪৯৩, আবূ দাউদ ৪৭৭৭, ইবনু মাজাহ ৪১৮৬, আহমাদ ১৫১৯২, ১৫২১০
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪৯
وعن أبي هريرة رضي الله عنه ، أن رجلاً قال
للنبي صلى الله عليه وسلم: أوصني، قال: "لا تغضب" فردد مراراً،
قال: " لاتغضب" رواه البخاري.
আবূ
হুরাইরাহ থেকে বর্ণিতঃ
একটি
লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে আবেদন জানাল যে, আপনি আমাকে
অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’ লোকটি বার বার এই আবেদন
জানাল। তিনি (প্রত্যেক বারেই) তাকে এই অসিয়ত করলেন যে, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো
না।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬১১৬, তিরমিযী ২০২০, আহমাদ ৯৬৮২, ২৭৩১১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم : " ما يزال البلاء بالمؤمن والمؤمنة في
نفسه وولده ة وماله حتى يلقى الله تعالى وما عليه خطيئة" (رواه الترمذي
وقال حديث حسن صحيح) .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মু’মিন পুরুষ ও নারীর জান, সন্তান-সন্ততি
ও তার ধনে (বিপদ-আপদ দ্বারা) পরীক্ষা হতে থাকে, পরিশেষে সে আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে
নিষ্পাপ হয়ে সাক্ষাৎ করবে।’’[১]
[১] (তিরমিযী, হাসান সহীহ) তিরমিযী ২৩৯৯, আহমাদ ৭৭৯৯,
২৭২১৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১
وعن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قدم
عيينة بن حصن فنزل على ابن أخيه الحر بن قيس، وكان من النفر الذين يدنيهم عمر رضي
الله عنه، وكان القراء أصحاب مجلس عمر رضي الله عنه ومشاورته كهولاً كانوا أو
شباناً، فقال عيينة لابن أخيه : يا ابن أخي لك وجه عند هذا الأمير فاستأذن لي
عليه، فاستأذن فأذن عمر. فلما دخل قال: هِىَ يا ابن الخطاب، فوالله ما تعطينا
الجزل ولا تحكم فينا بالعدل، فغضب عمر رضي الله عنه حتى همّ أن يوقع به، فقال له
الحر: يا أمير المؤمنين إن الله تعالى قال لنبيه صلى الله عليه وسلم: {خذ
العفو وأمر بالعرف وأعرض عن الجاهلين} (الأعراف :198). وإن هذا من
الجاهلين، والله ما جاوزها عمر حين تلاها، وكان وقافاً عند كتاب الله تعالى.
(رواه البخاري) .
ইবনু
আব্বাস থেকে বর্ণিতঃ
উয়াইনাহ
ইবনু হিসন এলেন এবং তাঁর ভাতিজা হুর্র ইবনু কাইসের কাছে অবস্থান করলেন। এই (হুর্র)
উমার (রাঃ)-এর খেলাফত কালে ঐ লোকগুলির মধ্যে একজন ছিলেন যাদেরকে তিনি তাঁর নিকটে
রাখতেন। আর কুরআন বিশারদগণ বয়স্ক হন অথবা যুবক দল তাঁরা উমার (রাঃ)-এর সভাষদ ও
পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়াইনাহ তাঁর ভাতিজাকে বললেন, ‘হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! এই
খলীফার কাছে তোমার বিশেষ সম্মান রয়েছে। তাই তুমি আমার জন্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ
করার অনুমতি চাও।’ ফলে তিনি অনুমতি চাইলেন। সুতরাং উমার তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর
যখন উয়াইনাহ ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন উমার ((রাঃ))কে বললেন, ‘হে ইবনু খাত্ত্বাব!
আল্লাহর কসম! আপনি আমাদেরকে পর্যাপ্ত দান দেন না এবং আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার
করেন না!’
(এ কথা শুনে) উমার (রাঃ) রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর্র
তাঁকে বললেন, ‘হে আমীরুল মু’মেনীন! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন, ‘‘তুমি
ক্ষমাশীলতার পথ অবলম্বন কর। ভাল কাজের আদেশ প্রদান কর এবং মূর্খদিগকে পরিহার করে
চল।’’ সূরা আল আরাফ ১৯৮ আয়াত) আর এ এক মূর্খ।’ আল্লাহর কসম! যখন তিনি (হুর্র) এই
আয়াত পাঠ করলেন, তখন উমার (রাঃ) একটুকুও আগে বাড়লেন না। আর তিনি আল্লাহর কিতাবের
কাছে (অর্থাৎ তাঁর নির্দেশ শুনে) সত্বর থেমে যেতেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৬৪২, ৭২৮৬।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫২
وعن ابن مسعود رضي الله عنه أن رسول الله
صلى الله عليه وسلم قال: " إنها ستكون بعدي أثرة وأمور تنكرونها !
قالوا: يا رسول الله فما تأمرنا؟ قال: تؤدون الحق الذى عليكم ، وتسألون الله
الذى لكم" (متفق عليه) .
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার পরে (শাসকগোষ্ঠী দ্বারা অবৈধভাবে)
প্রাধান্য দেওয়ার কাজ হবে এবং এমন অনেক কাজ হবে যেগুলোকে তোমরা মন্দ জানবে।’’
সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি (সেই অবস্থায়) আমাদেরকে কী আদেশ
দিচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘যে অধিকার আদায় করার দায়িত্ব তোমাদের আছে, তা তোমরা আদায়
করবে এবং তোমাদের যে অধিকার তা তোমরা আল্লাহর কাছে চেয়ে নেবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৬০৩, ৭০৫২, মুসলিম ১৮৪৩, তিরমিযী ২১৯০,
আহমাদ ৩৬৩৩, ৪০৫৬, ৪১১৬, ২৭২০৭,
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩
وعن أبي يحيى أسيد بن حضير رضي الله عنه أن
رجلاً من الأنصار قال: يا رسول الله ألا تستعملني كما استعملت فلاناً فقال:
"إنكم ستلقون بعدي أثرة، فاصبروا حتى تلقوني على الحوض" (متفق
عليه) .
আবূ
ইয়াহইয়্যা উসাইদ ইবনু হুদাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একজন
আনসারী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে কোনো সরকারী পদে নিয়োগ দেবেন,
যেমন অমুককে দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আমার (মৃত্যুর) পর (অবৈধভাবে)
অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজ দেখবে! সুতরাং ধৈর্য ধারণ করবে; যে অবধি তোমরা হাওযের কাছে
আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৭৯২, ৭০৫৭, মুসলিম ১৮৪৫, তিরমিযী ২১৮৯,
নাসায়ী ৫৩৮৩, আহমাদ ১৮৬১৩, ১৮৬১৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৪
وعن أبي إبراهيم عبد الله بن أبي أوفى رضي الله
عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم في بعض أيامه التي لقي فيها العدو، انتظر
حتى إذا مالت الشمس قام فيهم فقال: " يا أيها الناس لا تتمنوا لقاء
العدو، واسألوا الله العافية، فإذا لقيتموهم فاصبروا، واعلموا أن الجنة تحت ظلال
السيوف" ثم قال النبي صلى الله عليه وسلم : " اللهم منزل الكتاب
ومجري السحاب ، وهازم الأحزاب، اهزمهم وانصرنا عليهم" (متفق عليه)
وبالله التوفيق.
আবূ
ইব্রাহীম আব্দুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
শত্রুর
সাথে মোকাবেলার কোন এক দিনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা
করলেন (অর্থাৎ যুদ্ধ করতে বিলম্ব করলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলে গেল, তখন তিনি
লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘হে লোকেরা! তোমরা শত্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ (যুদ্ধ)
কামনা করো না এবং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাও। কিন্তু যখন শত্রুর সামনা-সামনি হয়ে
যাবে, তখন তোমরা দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ কর! আর জেনে রেখো যে, জান্নাত আছে তরবারির
ছায়ার নীচে।’’ অতঃপর তিনি দো‘আ করে বললেন, ‘‘হে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘ
সঞ্চালনকারী এবং শত্রুসকলকে পরাজিতকারী! তুমি তাদেরকে পরাজিত কর এবং তাদের
মুকাবিলায় আমাদেরকে সাহায্য কর।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৮১৯, ২৮৩৩, ২৯৩৩, ২৯৬৬, ৩০২৪, ৩০২৬,
৪১১৫, ৬৩৯২, ৭২৩৭, ৭৪৮৯, মুসলিম ১৭৪১, ১৭৪২, তিরমিযী ১৬৭৮, আবূ দাউদ ২৬৩১, ইবনু মাজাহ
২৭৯৬, আহমাদ ১৮৬২৮, ১৮৬৫০, ১৮৬৬০, ১৮৯১৭।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪
সত্যবাদিতার গুরুত্ব
৫৫
فالأول عن ابن مسعود رضي الله عن النبي صلى
الله عليه وسلم قال: "إن الصدق يهدي إلى البر وإن البر يهدي إلى الجنة،
وإن الرجل ليصدق حتى يكتب عند الله صديقاً، وإن الكذب يهدي إلى الفجور، وإن الفجور
يهدي إلى النار، وإن الرجل ليكذب حتى يكتب عند الله كذاباً" (متفق
عليه) .
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় সত্য পুণ্যের পথ দেখায় এবং পুণ্য
জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (অবিরত) সত্য বলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর
কাছে তাকে খুব সত্যবাদী বলে লিখা হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ
জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (সর্বদা) মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ অবধি
আল্লাহর নিকটে তাকে মহা মিথ্যাবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০৯৪, মুসলিম ২৬০৬, ২৬০৭, তিরমিযী ১৯৭১,
আবূ দাউদ ৪৯৮৯, ইবনু মাজাহ ৪৬, আহমাদ ৩৬৩১, ৩৭১৯, ৩৮৩৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৫৯, দারেমী
২৭১৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬
الثانى: عن أبي محمد الحسن بن علي بن أبي
طالب، رضي الله عنهما ، قال : حفظت من رسول الله، صلى الله عليه وسلم :
"دع ما يريبك إلى ما لا يريبك؛ فإن الصدق طمأنينة، والكذب ريبةٌ"
(رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح) .
আবূ
মুহাম্মাদ হাসান ইবনু আলী ইবনু আবী ত্বালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই শব্দগুলি স্মরণ রেখেছি যে,
‘‘তুমি ঐ জিনিস পরিত্যাগ কর, যে জিনিস তোমাকে সন্দেহে ফেলে এবং তা গ্রহণ কর যাতে
তোমার সন্দেহ নেই। কেননা, সত্য প্রশান্তির কারণ এবং মিথ্যা সন্দেহের কারণ।’’[১]
[১] তিরমিযী ২৫১৮, নাসায়ী ৫৭১১, আহমাদ ২৭৮১৯, দারেমী ২৫৩২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৭
الثالث: عن أبي سفيان صخر بن حرب ، رضي
الله عنه، في حديثه الطويل في قصة هرقل، قال هرقل: فماذا يأمركم -يعنى النبي صلى
الله عليه وسلم- قال أبو سفيان: قلت :يقول : " اعبدوا الله وحده لا
تشركوا به شيئاً، واتركوا ما يقول آباؤكم ، ويأمرنا بالصلاة، والصدق، والعفاف،
والصلة" (متفق عليه) .
আবূ
সুফিয়ান সাখর ইবনু হারব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ঐ
দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যাতে (রোমের বাদশাহ) হিরাক্লিয়াসের ঘটনা বর্ণনা করা
হয়েছে। হিরাক্লিয়াস আবূ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করলেন (তখন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ
করেননি) ‘তিনি---অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম---তোমাদেরকে কোন্
কাজের আদেশ করছেন?’ আবূ সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, ‘তিনি বলছেন যে, ‘‘তোমরা মাত্র
এক আল্লাহর উপাসনা কর, তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার করো না এবং ঐসব কথা পরিহার কর, যা
তোমাদের বাপ-দাদারা বলত (এবং করত)।’’ আর তিনি আমাদেরকে নামায পড়া, সত্য কথা বলা,
চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার আদেশ দেন।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭, ৫১, ২৬৮১, ২৮০৪, ২৯৩৬, ২৯৪১, ৩১৭৪,
৪৫৯৩, মুসলিম ১৭৭৩, তিরমিযী ২৭১৭, আবূ দাউদ ৫১৩৬, আহমাদ ২৩৬৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৮
الرابع: عن أبي ثابت، وقيل أبي سعيد،
وقيل أبي الوليد، سهل بن حنيف ، وهو بدري، رضي الله عنه، أن النبي ، صلى الله عليه
وسلم، قال: "من سأل الله، تعالى، الشهادة بصدق بلغه الله منازل الشهداء،
وإن مات على فراشه" (رواه مسلم) .
আবূ
সাবেত, মতান্তরে আবূ সাঈদ বা আবূল অলীদ সাহ্ল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(আর
তিনি বাদরী সাহাবী ছিলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে
ব্যক্তি সত্য অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট শাহাদত প্রার্থনা করবে, তাকে আল্লাহ তা‘আলা
শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছাবেন; যদিও তার মৃত্যু নিজ বিছানায় হয়।’’[১]
[১] মুসলিম ১৯০৯, তিরমিযী ১৬৫৩, নাসায়ী ৩১৬২, আবূ দাউদ
১৫২০, ইবনু মাজাহ ২৭৯৭, দারেমী ২৪০৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯
الخامس: عن أبي هريرة ، رضي الله عنه ،
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "غزا نبي من الأنبياء صلوات
الله وسلامه عليهم فقال لقومه: لا يتبعني رجل ملك بضع امرأة. وهو يريد أن يبني
بها ولما يبن بها، ولا أحد بنى بيوتا لم يرفع سقوفها، ولا أحد اشترى غنما أو خلفات
وهو ينتظر أولادها. فغزا فدنا من القرية صلاة العصر أو قريباً من ذلك، فقال
للشمس: إنك مأمورة وأنا مأمور، اللهم احبسها علينا، فحبست حتى فتح الله عليه،
فجمع الغنائم، فجائت -يعني النار- لتأكلها فلم تطعمها، فقال : إن فيكم غلولاً،
فليبايعني من كل قبيلةٍ رجل، فلزقت يد رجل بيده فقال: فيكم الغلول، فلتبايعني
قبيلتك، فلزقت يد رجلين أو ثلاثة بيده فقال: فيكم الغلول: فجاؤوا برأس مثل رأس
بقرة من الذهب، فوضعها فجاءت النار فأكلتها، فلم تحل الغنائم لأحد قبلنا، ثم أحل
الله لنا الغنائم لما رأى ضعفنا وعجزنا فأحلها لنا" (متفق عليه)
.
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নবীদের মধ্যে কোনো এক নবী জিহাদের জন্য
বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। সুতরাং তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, ‘আমার সঙ্গে যেন ঐ
ব্যক্তি না যায়, যে নতুন বিবাহ করেছে এবং সে তার সাথে বাসর করার কামনা রাখে;
কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে তা করেনি। আর সেও নয়, যে ঘর নির্মাণ করেছে; কিন্তু এখনো
পর্যন্ত ছাদ ঢালেনি। আর সেও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল কিম্বা উটনী কিনেছে এবং সে
তাদের বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’ অতঃপর সেই নবী জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়লেন।
তারপর তিনি আসরের নামাযের সময় অথবা ওর নিকটবর্তী সময়ে ঐ গ্রামে (যেখানে জিহাদ
করবেন সেখানে) পৌঁছলেন। অতঃপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন ক’রে) বললেন, ‘তুমিও
(আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তাঁর) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ
যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ বস্তুতঃ সূর্যকে আটকে
দেওয়া হল। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা (ঐ জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন। অতঃপর তিনি
গনীমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এল; কিন্তু সে
তা খেল না (ভষ্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে
(অর্থাৎ তোমাদের কেউ গনীমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য
হতে একজন আমার হাতে ‘বায়আত’ করুক।’ অতঃপর (বায়আত করতে করতে) একজনের হাত তাঁর হাতের
সঙ্গে লেগে গেল।
তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। সুতরাং তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে
‘বায়আত’ করুক।’ সুতরাং দুই অথবা তিনজনের হাত তাঁর হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি
বললেন যে, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ সুতরাং তারা গাভীর মাথার মত একটি সোনার
মাথা নিয়ে এল এবং তিনি তা গনীমতের সাথে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।
(শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে,) আমাদের পূর্বে কারো জন্য
গণীমতের মাল হালাল ছিল না। পরে আল্লাহ তা‘আলা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা
দেখলেন, তখন আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১২৪, ৫১৫৭, মুসলিম ১৭৪৭, আহমাদ ২৭৪৫৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০
السادس: عن أبي خالد حكيم بن حزام. رضي
الله عنه ، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " البيعان
بالخيار مالم يتفرقا، فإن صدقاً وبينا بورك لهما في بيعهما، وإن كتما وكذبا محقت
بركة بيعهما" (متفق عليه) .
আবূ
খালেদ হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য ততক্ষণ
পর্যন্ত (চুক্তি পাকা বা বাতিল করার) স্বাধীনতা রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথক
(স্থানান্তরিত) না হবে। আর যদি তারা সত্য কথা বলে এবং (পণ্যদ্রব্যের প্রকৃতি) খুলে
বলে, (দোষ-ত্রুটি গোপন না রাখে,) তাহলে তাদের কেনা-বেচার মধ্যে বরকত দেওয়া হয়। আর
তারা যদি (দোষ-ত্রুটি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে, তাহলে তাদের দু’জনের কেনা-বেচার
বরকত রহিত করা হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৯৬৩, ৩০৭৯, ৪৩০৬, ৪৩০৮, মুসলিম ১৮৬৩,
আহমাদ ১৫৪২০, ১৫৪২৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫
মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর
ধ্যান)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلَّذِي يَرَىٰكَ حِينَ تَقُومُ ٢١٨ وَتَقَلُّبَكَ فِي ٱلسَّٰجِدِينَ ٢١٩ ﴾ [الشعراء: ٢١٨، ٢١٩]
অর্থাৎ “যিনি তোমাকে দেখেন; যখন তুমি দন্ডায়মান হও (নামাযে) এবং তোমাকে দেখেন
সিজদাকারীদের সাথে উঠতে-বসতে।” (সূরা শু‘আরা ২১৮-২১৯ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ ﴾ [الحديد: ٤]
অর্থাৎ “তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।” (সূরা হাদীদ ৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَخۡفَىٰ عَلَيۡهِ شَيۡءٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ ٥ ﴾ [ال عمران: ٥]
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে যমীন ও আকাশের কোনো কিছুই গোপন নেই।” (সূরা আলে
ইমরান ৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ رَبَّكَ لَبِٱلۡمِرۡصَادِ ١٤ ﴾ [الفجر: ١٤]
অর্থাৎ “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সময়ের প্রতীক্ষায় থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা
ফজর ১৪ আয়াত)
তাঁর অমোঘ বাণী,
﴿ يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ ١٩ ﴾ [غافر: ١٩]
অর্থাৎ “চক্ষুর চোরা চাহনি ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত।”
(সূরা মুমিন ১৯ আয়াত)
৬১
وأما الأحاديث ؛ فالأول: عن عمر بن
الخطاب، رضي الله عنه ، قال " بينما نحن جلوس عند رسول الله، صلى الله
عليه وسلم ذات يوم إذ طلع عينا رجل شديد بياض الثياب ، شديد سواد الشعر، لا يرى
عليه أثر السفر، ولا يعرفه منا أحد، حتى جلس إلى النبي ،صلى الله عليه وسلم ،
فأسند ركبتيه إلى ركبتيه، ووضع كفيه على فخذيه وقال: يا محمد أخبرني عن الإسلام،
فقال: رسول الله صلى الله عليه وسلم: الإسلام أن تشهد أن لا إله إلا الله ،
وأن محمداً رسول الله وتقيم الصلاة، وتؤتي الزكاة ، وتصوم رمضان ، وتحج البيت إن
استطعت إليه سبيلاً. قال صدقت. فعجبنا له يسأله ويصدقه! قال : فأخبرني عن
الإيمان. قال أن تؤمن بالله، وملائكته، وكتبه ورسله، واليوم الآخر، وتؤمن بالقدر
خيره وشره. قال صدقت. قال فأخبرني عن الإحسان . قال أن تعبد الله كأنك تراه؛
فإن لم تكن تراه فإنه يراك. قال: فأخبرني عن الساعة. قال: ما المسؤول عنها
بأعلم من السائل. قال : فأخبرني عن أماراتها قال: أن تلد الأمة ربتها، وأن
ترى الحفاة العراة العالة رعاء الشاء يتطالون في البنيان. ثم انطلق، فلبثت
ملياً، ثم قال: يا عمر أتدري من السائل؟ قلت: الله ورسوله أعلم. قال:
فإنه جبريل أتاكم يعلمكم أمر دينكم" (رواه مسلم) .
উমার
ইবনু খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে বসে ছিলাম। হঠাৎ একটি
লোক আমাদের কাছে এল। তার পরনে ধবধবে সাদা কাপড় এবং তার চুল কুচকুচে কাল ছিল।
(বাহ্যতঃ) সফরের কোন চিহ্ন তার উপর দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাকে
চিনছিল না। শেষ পর্যন্ত সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসল; তার
দুই হাঁটু তাঁর (নবীর) হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে দিল এবং তার হাতের দুই করতলকে নিজ
জানুর উপরে রেখে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।’
সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ইসলাম হল এই যে, তুমি
সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই, আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল,
নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের রোযা রাখবে এবং কা‘বা ঘরের
হজ্জ্ব করবে; যদি সেখানে যাবার সঙ্গতি রাখ।’’ সে বলল, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন।’ আমরা
তার কথায় আশ্চর্য হলাম যে, সে জিজ্ঞাসাও করছে এবং ঠিক বলে সমর্থনও করছে! সে (আবার)
বলল, ‘আপনি আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর
ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলসমূহ, পরকাল এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি
বিশ্বাস রাখবে।’’ সে বলল, ‘আপনি যথার্থ বলেছেন।’
সে (তৃতীয়) প্রশ্ন করল যে, ‘আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন! তিনি বললেন, ‘‘ইহসান হল এই
যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে; যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাঁকে
দেখতে না পাও, তাহলে তিনি কিন্তু তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’’ সে (পুনরায়) বলল, ‘আপনি
আমাকে কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলুন (সেদিন কবে সংঘটিত হবে?)’ তিনি বললেন, ‘‘এ
ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত (ব্যক্তি) জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে বেশী অবহিত নয়। (অর্থাৎ কিয়ামতের
নির্দিষ্ট দিন আমাদের দু’জনেরই অজানা)।’’ সে বলল, ‘(তাহলে) আপনি ওর নিদর্শনসমূহ
সম্পর্কে আমাকে বলে দিন।’
তিনি বললেন, ‘‘(ওর কিছু নিদর্শন হল এই যে,) কৃতদাসী তার মনিবকে প্রসব করবে (অর্থাৎ
যুদ্ধবন্দী এত বেশী হবে যে, যুদ্ধ বন্দিনী ক্রীতদাসী তার মনিবের কন্যা প্রসব
করবে)। আর তুমি নগ্নপদ, বস্ত্রহীন ও দরিদ্র ছাগলের রাখালদেরকে অট্টালিকা নির্মাণের
কাজে পরস্পর গর্ব করতে দেখবে।’’ অতঃপর সে (আগন্তুক প্রশ্নকারী) চলে গেল।
(উমার (রাঃ) বলেন,) ‘আমি অনেকক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে
থাকলাম।’ পুনরায় তিনি বললেন ‘‘হে উমার! তুমি, কি জান যে, প্রশ্নকারী কে ছিল?’’ আমি
বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বেশী জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘ইনি জিব্রাঈল ছিলেন,
তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিখানোর জন্য এসেছিলেন।’’[১]
[১] মুসলিম ৮, তিরমিযী ২৬১০, নাসায়ী ৪৯৯০, আবূ দাউদ ৪৬৯৫,
ইবনু মাজাহ ৬৩, আহমাদ ১৮৫, ১৯২, ৩৬৯, ৩৭৬, ৫৮২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২
الثانى: عن أبي ذر جندب بن جنادة، وأبي
عبد الرحمن معاذ بن جبل، رضي الله عنهما، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال:
" اتق الله حيثما كنت واتبع السيئة الحسنة تمحها، وخالق الناس بخلق
حسن" (رواه الترمذي وقال حديث حسن ).
আবূ
যার্র জুন্দুব ইবনু জুনাদাহ (রাঃ) ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয়
কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
কর।’’[১]
[১] তিরমিযী ১৯৮৭, আহমাদ ২০৮৪৭, ২০৮৯৪, ২১০২৬, দারেমী
২৭৯১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৩
الثالث: عن ابن عباس، رضي الله عنهما،
قال: " كنت خلف النبي، صلى الله عليه وسلم، يوماً فقال: " يا
غلام إني أعلمك كلمات: "احفظ الله يحفظك، احفظ الله تجده تجاهك، إذا سألت
فاسأل الله ، وإذا استعنت فاستعن بالله، واعلم: أن الأمة لو اجتمعت على أن
ينفعوك بشيء، لم ينفعوك إلا بشيء قد كتبه الله لك، وإن اجتمعوا على أن يضروك بشيء،
لم يضروك بشيء إلا بشيء قد كتبه الله عليك؛ رفعت الأقلام، وجفت الصحف"
(رواه الترمذي وقال حديث حسن صحيح) .
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
একদা (সওয়ারীর উপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে (বসে)
ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘ওহে কিশোর! আমি তোমাকে কয়েকটি (গুরুত্বপূর্ণ কথা শিক্ষা দেব
(তুমি সেগুলো স্মরণ রেখো)। তুমি আল্লাহর (বিধানসমূহের) রক্ষণাবেক্ষণ কর (তাহলে)
আল্লাহও তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। তুমি আল্লাহর (অধিকারসমূহ) স্মরণ রাখো, তাহলে
তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন
তুমি প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। আর এ কথা
জেনে রাখ যে, যদি সমগ্র উম্মত তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই
উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার (তাকদীরে) লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার
ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ
তোমার (তাকদীরে) লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ (তাকদীরের
লিপি) শুকিয়ে গেছে।’’[১]
[১] তিরমিযী ২৫১৬ (তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ),
আহমাদ ২৬৬৪, ২৭৫৮, ২৮০০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪
الرابع: عن أنس رضي الله عنه قال:
"إنكم لتعملون أعمالاً هي أدق في أعينكم من الشعر، كنا نعدها على عهد رسول
الله صلى الله عليه وسلم من الموبقات" (رواه البخاري )
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বলেছেন
যে, ‘তোমরা বহু এমন (পাপ) কাজ করছ, সেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও সূক্ষ্ম
(নগণ্য)। কিন্তু আমরা সেগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
যুগে বিনাশকারী মহাপাপ বলে গণ্য করতাম।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৯২, আহমাদ ১২১৯৩, ১৩৬২৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৫
الخامس : عن أبي هريرة، رضي الله عنه ،
عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: " إن الله تعالى يغار، وغيرة الله ،
تعالى، أن يأتي المراء ما حرم الله عليه" (متفق عليه) .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আত্ম মর্যাদাবোধ
করেন। আর আল্লাহর আত্ম মর্যাদা জেগে ওঠে তখন যখন কোনো মানুষ এমন কাজ করে ফেলে, যা
তিনি তার উপর হারাম করেছেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫২২২, ৫২২৩, তিরমিযী ১১৬৮, আহমাদ ২৬৪০৩,
২৬৪২৯, ২৬৪৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬
السادس : عن أبي هريرة رضي الله عنه أنه
سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول: " إن ثلاثة من بنى إسرائيل : أبرص
، وأقرع، وأعمى، أراد الله أن يبتليهم فبعث إليهم ملكاً، فأتى الأبرص فقال: أي
شيء أحب إليك؟ قال : لون حسن، وجلد حسن ، ويذهب عني الذى قد قذرني الناس؛
فمسحه فذهب عنه قذره وأعطي لونا حسناً. قال: فأي المال أحب إليك؟ قال:
الإبل-أو قال البقر-شك الرواي- فأعطي ناقة عشراء، فقال: بارك الله لك فيها.
فأتى الأقرع فقال: أي شيء أحب إليك؟ قال: شعر حسن، ويذهب عني هذا الذى قذرني
الناس ، فمسحه فذهب عنه وأعطي شعراً حسناً. قال: فأي المال أحب إليك؟ قال:
البقر، فأعطي بقرة حاملاً،وقال بارك الله لك فيها.
فأتي الأعمى فقال: أي شيء أحب إليك؟ قال: أن يرد الله إلي بصري فأبصر الناس،
فمسحه فرد الله إليه بصره. قال: فأي المال أحب إليك؟ قال: الغنم، فأعطي
شاة والداً. فأنتج هذان وولد هذا، فكان لهذا واد من الإبل، ولهذا واد من البقر،
ولهذا واد من الغنم.
ثم إنه أتى الأبرص في صورته وهيئته، فقال له: رجل مسكين وابن سبيل قد انقطعت بي
الحبال في سفري، فلا بلاغ لي اليوم إلا بالله ثم بك، أسألك بالذي أعطاك اللون
الحسن، والجلد الحسن، والمال، بعيراً أتبلغ به في سفري، فقال: الحقوق كثيرة.
فقال : كأني أعرفك، ألم تكن أبرص يقذرك الناس فقيراً، فأعطاك الله ؟! فقال
: إنما ورثت هذا المال كابراً عن كابر، فقال: إن كنت كاذباً فصيرك الله إلى ما
كنت.
وأتى الأقرع، فقال له مثل ما قال لهذا، ورد عليه مثل ما ردّ هذا، فقال إن كنت
كاذبا فصيرك الله إلى ما كنت .
وأتى الأعمى في صورته وهيئته، فقال: رجل مسكين وابن سبيل انقطعت بي الحبال في
سفري، فلا بلاغ لي اليوم إلا بالله ثم بك، أسألك بالذي رد عليك بصرك شاة أتبلغ بها
في سفري؟ فقال: قد كنت أعمى فرد الله بصري، فخذ ما شئت ودع ما شئت، فوالله ما
أجهدك اليوم بشيء أخذته لله عز وجل فقال: أمسك عليك مالك فإنما ابتليتم، فقد رضي
الله عنك، وسخط على صاحبيك" (متفق عليه) .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘বানী ইস্রাঈলের মধ্যে
তিন ব্যক্তি ছিল। একজন ধবল-কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত, দ্বিতীয়জন টেকো এবং তৃতীয়জন অন্ধ
ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন। ফলে তিনি তাদের কাছে একজন
ফেরেশতা পাঠালেন। ফিরিশতা (প্রথমে) ধবল-কুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন, ‘তোমার নিকট
প্রিয়মত বস্তু কি?’ সে বলল, ‘সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক। আর আমার নিকট থেকে এই রোগ
দূরীভূত হোক---যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার দেহে হাত ফিরালেন,
যার ফলে (আল্লাহর আদেশে) তার ঘৃণিত রোগ দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর রং দেওয়া হল।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম ধন কী?’ সে বলল, ‘উট অথবা গাভী।’ (এটি
বর্ণনাকারীর সন্দেহ।) সুতরাং তাকে দশ মাসের গাভিন একটি উটনী দেওয়া হল। তারপর তিনি
বললেন, ‘আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত (প্রাচুর্য) দান করুন।’
অতঃপর তিনি টেকোর কাছে এসে বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম জিনিস কী?’ সে বলল, ‘সুন্দর
কেশ এবং এই রোগ দূরীভূত হওয়া---যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার
মাথায় হাত ফিরালেন, যার ফলে তার (সেই রোগ) দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর কেশ দান
করা হল। (অতঃপর) তিনি বললেন, ‘তোমার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় ধন কোনটা?’ সে বলল,
‘গাভী।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন গাই দেওয়া হল এবং তিনি বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমার
জন্য বরকত দান করুন।’
অতঃপর তিনি অন্ধের কাছে এলেন এবং বললেন, ‘তোমার নিকটে প্রিয়তম বস্তু কী?’ সে বলল,
‘এই যে, আল্লাহ তা‘আলা যেন আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন যার দ্বারা আমি লোকেদেরকে দেখতে
পাই।’ সুতরাং তিনি তার চোখে হাত ফিরালেন। ফলে আল্লাহ তাকে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে
দিলেন। ফেরেশতা বললেন, ‘তুমি কোন্ ধন সবচেয়ে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘ছাগল।’ সুতরাং
তাকে একটি গাভিন ছাগল দেওয়া হল।
অতঃপর ঐ দু’জনের (কুষ্ঠরোগী ও টেকোর) পশু (উটনী ও গাভীর) পাল বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং
এই অন্ধেরও ছাগলটিও বাচ্চা প্রসব করল। ফলে এর এক উপত্যকা ভরতি উট, এর এক উপত্যকা
ভরতি গরু এবং এর এক উপত্যকা ভরতি ছাগল হয়ে গেল।
পুনরায় ফেরেশতা (পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর পূর্বের চেহারা ও আকৃতিতে) কুষ্ঠরোগীর
কাছে এলেন এবং বললেন, ‘আমি মিসকীন মানুষ, সফরে আমার সকল পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে
সবদেশে পৌঁছনোর জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার কোন উপায় নেই।
সেজন্য আমি ঐ সত্তার নামে তোমার কাছে একটি উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং ও
সুন্দর ত্বক দান করেছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’
সে উত্তর দিল যে, ‘(আমার দায়িত্বে আগে থেকেই) বহু অধিকার ও দাবি রয়েছে।’
(এ কথা শুনে) ফেরেশতা বললেন, ‘তোমাকে আমার চেনা মনে হচ্ছে। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে
না, লোকেরা তোমাকে ঘৃণা করত? তুমি কি দরিদ্র ছিলে না, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ধন
প্রদান করেছেন?’ সে বলল, ‘এ ধন তো আমি পিতা ও পিতামহ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে
পেয়েছি।’ ফেরেশতা বললেন, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে
পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’
অতঃপর তিনি তার পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে টেকোর কাছে এলেন এবং তাকেও সে কথা বললেন,
যে কথা কুষ্ঠরোগীকে বলেছিলেন। আর টেকোও সেই জবাব দিল, যে জবাব কুষ্ঠরোগী দিয়েছিল।
সে জন্য ফেরেশতা তাকেও বললেন যে, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে
পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’
পুনরায় তিনি তাঁর পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে অন্ধের নিকট এসে বললেন যে, আমি একজন
মিসকীন ও মুসাফির মানুষ, সফরের যাবতীয় পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে সবদেশে পৌঁছার জন্য
আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার আর কোন উপায় নেই। সুতরাং আমি তোমার নিকট
সেই সত্তার নামে একটি ছাগল চাচ্ছি, যিনি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন; যার দ্বারা
আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’ সে বলল, ‘নিঃসন্দেহে আমি অন্ধ ছিলাম।
অতঃপর আল্লাহ আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। (আর এই ছাগলও তাঁরই দান।) অতএব তুমি
ছাগলের পাল থেকে যা ইচ্ছা নাও ও যা ইচ্ছা ছেড়ে দাও। আল্লাহর কসম! আজ তুমি আল্লাহ
আয্যা অজাল্লার জন্য যা নেবে, সে ব্যাপারে আমি তোমাকে কোন কষ্ট বা বাধা দেব না।’
এ কথা শুনে ফেরেশতা বললেন, ‘তুমি তোমার মাল তোমার কাছে রাখ। নিঃসন্দেহে তোমাদেরকে
পরীক্ষা করা হল (যাতে তুমি কৃতকার্য হলে)। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট
এবং তোমার সঙ্গীদ্বয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৪৬৪, মুসলিম ২৯৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭
السابع: عن أبي يعلى شداد بن أوس رضي
الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " الكيس من دان نفسه، وعمل
لما بعد الموت ، والعاجز من أتبع نفسه هواها، وتمنى على الله الأماني"
(رواه الترمذي وقال حديث حسن).
শাদ্দাদ
ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন, যে তার
নিজের আত্মপর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য (নেক) আমল করে। আর ঐ লোক
দুর্বল যে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আবার আল্লাহর কাছে অবাস্তব আশা পোষণ
করে।[১]
[১] হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীসটি
হাসান। কিন্তু আসলে হাদীসটি দুর্বল। হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী ছাড়াও ইমাম আহমাদ, হাকিম
ও ত্ববারানী বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির কোন সূত্রই দুর্বল বর্ণনাকারী হতে মুক্ত নয়। মুসনাদু
আহমাদে বর্ণিত সূত্রে আবূ বাকর ইবনু আবী মারইয়াম নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন। তার সম্পর্কে
ইবনু আদী বলেন : ... তার হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না ...।
ইবনু হাজার বলেন : তিনি দুর্বল। তার বাড়িতে চুরি সংঘটিত হওয়ার পর থেকে তার মস্তিষ্ক
বিকৃতি ঘটেছিল। [‘‘সিলসিলা য‘ঈফা’’ গ্রন্থের (২১১০) নম্বর হাদীসে তার সম্পর্কে আলোচনা
করা হয়েছে]। এছাড়া আরো অনেকেই তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আর অন্য সূত্রে ইবরাহীম ইবনু
আমর ইবনে বাক্র সাকসাকী রয়েছেন যাকে দারাকুতনী মাতরূক আখ্যা দিয়েছেন আর ইবনু হিববান
তার সম্পর্কে বলেছেন : তিনি তার পিতার উদ্ধৃতিতে বানোয়াট বহু কিছু বর্ণনা করেছেন। তার
পিতাও কিছুই না। [বিস্তারিত দেখুন ‘‘সিলসিলা য‘ঈফা’’ (৫৩১৯)]
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৬৮
الثامن: عن أبي هريرة رضي الله عنه
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " من حسن إسلام المرء تركه
ما لا يعنيه" (حديث حسن رواه الترمذي وغيره)
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) কর্তৃক থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য (অর্থাৎ তার
উত্তম মুসলিম হওয়ার একটি চিহ্ন) হল অনর্থক (কথা ও কাজ) বর্জন করা।’’[১] (হাসান
হাদীস, তিরমিযী প্রমুখ)
[১] তিরমিযী ২৩১৭, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৬।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৯
التاسع: عن عمر رضي الله عنه عن النبي
صلى الله عليه وسلم قال: "لا يسأل الرجل فيم ضرب امرأته"
(رواه أبو دواد وغيره) .
উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: “কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে কি জন্য
প্রহার করেছে তা নিয়ে (যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে) প্রশ্ন করা যাবে
না।” (কারণ এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রাইভেসী লঙ্ঘন হয়) আবূ দাউদ ও অন্যান্য
মুহাদ্দিসগণ এটি বর্ণনা করেছেন। (আবূ দাউদ ও ইবনু মাজাহ)।[১]
[১] আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসের সনদ দুর্বল। এ সম্পর্কে
আমি ‘‘ইরওয়াউল গালীল’’ গ্রন্থে (২০৩৪) বিস্তারিত আলোচনা করেছি। হাদীসটিকে আবূ দাঊদ
(২১৪৭), নাসায়ী ‘‘আলকুবরা’’ গ্রন্থে, ইবনু মাজাহ্ (১৯৮৬), বাইহাক্বী ও আহমাদ বর্ণনা
করেছেন। কিন্তু বর্ণনাকারী আব্দুর রহমান মাসলামীর কারণে হাদীসটি দুর্বল। তার সম্পর্কে
হাফিয যাহাবী বলেনঃ তাকে শুধুমাত্র এ হাদীসেই চেনা যায়। তার থেকে শুধুমাত্র দাঊদ ইবনু
আব্দিল্লাহ্ আওদী এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আর শাইখ আহমাদ শাকের ‘‘মুসনাদু আহমাদ’’ এর
টীকায় দাউদ ইবনু আব্দিল্লাহ্ আওদীকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তা সঠিক নয়। কারণ
দুর্বল হচ্ছেন দাঊদ ইবনু ইয়াযীদ আওদী, যিনি এ সনদে নেই।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬
আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ﴾ [ال عمران: ١٠٢]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর।” (সূরা আলে ইমরান ১০২
আয়াত)
উক্ত আয়াতে যথার্থভাবে ভয় করার ব্যাখ্যা রয়েছে এই আয়াতে;
তিনি বলেন,
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ﴾ [التغابن: ١٦]
অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর।” (সূরা তাগাবুন ১৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ ﴾ [الاحزاب: ٧٠]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।” (সূরা আহযাব ৭০ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
অর্থাৎ “আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিস্কৃতির পথ করে দিবেন এবং তাকে
তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন।” (সূরা ত্বালাক্ব ২-৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَتَّقُواْ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّكُمۡ فُرۡقَانٗا وَيُكَفِّرۡ عَنكُمۡ سَئَِّاتِكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۗ وَٱللَّهُ ذُو ٱلۡفَضۡلِ ٱلۡعَظِيمِ ٢٩ ﴾ [الانفال: ٢٩]
অর্থাৎ “যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায়
পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর
আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল।” (সূরা আনফাল ২৯ আয়াত)
আল্লাহভীতি, সংযমশীলতা ও তাক্বওয়া-পরহেযগারীর গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত
রয়েছে।
৭০
وأما الأحاديث فالأول: عن أبي هريرة رضي
الله عنه قال: قيل : يا رسول الله من أكرم الناس؟ قال:
"أتقاهم". فقالوا: ليس عن هذا نسألك، قال: " فيوسف نبي
الله بن نبي الله بن نبي الله بن خليل الله" قالوا: ليس عن هذا نسألك،
قال: "فعن معادن العرب تسألوني؟ خيارهم في الجاهلية خيارهم في الإسلام
إذا فقهواً : (متفق عليه) .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল যে, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের
মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে
আল্লাহ-ভীরু।’’ অতঃপর তাঁরা (সাহাবীরা) বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসা
করছি না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে ইউসুফ (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি), যিনি স্বয়ং
আল্লাহর নবী, তাঁর পিতা নবী, পিতামহও নবী এবং প্রপিতামহও নবী ও আল্লাহর বন্ধু।’’
তাঁরা বললেন, ‘এটাও আমাদের প্রশ্ন নয়।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তোমরা কি আমাকে আরবের
বংশাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? (তবে শোনো!) তাদের মধ্যে যারা জাহেলী যুগে ভাল,
তারা ইসলামেও ভাল; যদি দ্বীনী জ্ঞান রাখে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৩৫৩, ৩৩৭৪, ৩৩৮৩, ৩৪৯০, ৪৬৮৯, মুসলিম
২৩৭৮, আবূ দাউদ ৪৮৭২, আহমাদ ৭৪৪৪,৭৪৯০, ৮৮৩৬, মুওয়াত্তা মালেক ১৮৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৭১
الثاني: عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه
عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " إن الدنيا حلوة خضرة، وإن الله
مستخلفكم فيها فينظر كيف تعملون، فاتقوا الدنيا واتقوا النساء؛ فإن أول فتنة بني
إسرائيل كانت في النساء" (رواه مسلم).
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় দুনিয়া মধুর ও সবুজ (সুন্দর
আকর্ষণীয়)। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এর প্রতিনিধি নিয়োজিত করে দেখবেন যে, তোমরা
কিভাবে কাজ করছ? অতএব তোমরা (যদি সফলকাম হতে চাও তাহলে) দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ
এবং নারীর (ফিৎনা থেকে) বাঁচ। কারণ, বানী ঈস্রাইলের সর্বপ্রথম ফিৎনা নারীকে
কেন্দ্র করেই হয়েছিল।’’[১]
[১] মুসলিম ২৭৪২, তিরমিযী ২১৯১, ইবনু মাজাহ ৪০০০, আহমাদ
১০৭৫৯, ১০৭৮৫, ১১০৩৪, ১১১৯৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৭২
الثالث: عن ابن مسعود رضي الله عنه أن
النبي صلى الله عليه وسلم كان يقول: "اللهم إني أسألك الهدى والتقى
والعفاف والغنى" (رواه مسلم).
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল
হুদা অত্তুক্বা, অলআফা-ফা অলগিনা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সৎপথ,
তাকওয়া, চারিত্রিক পবিত্রতা ও অভাবশূন্যতা প্রার্থনা করছি।[১]
[১] মুসলিম ২৭২১, তিরমিযী ৩৪৮৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৩২, আহমাদ
৩৬৮৪, ৩৮৯৪, ৩৯৪০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৭৩
الرابع: عن أبي ظريف عدي بن حاتم الطائي
رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "من حلف
على يمين ثم رأى أتقى لله منها فليأت التقوى" (رواه مسلم).
আবূ
ত্বারীফ আদী ইবনু হাতেম ত্বাই (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (এ কথা) বলতে শুনেছি,
‘‘যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ের উপর কসম খাবে অতঃপর তার চেয়ে বেশী আল্লাহর তাকওয়ার বিষয়
দেখবে, তার উচিত আল্লাহর তাকওয়ার বিষয় গ্রহণ করা।’’[১]
[১] মুসলিম ১৬৫১, নাসায়ী ৩৭৮৫, ৩৭৮৬, ৩৭৮৭, ইবনু মাজাহ
২১০৮, আহমাদ ১৭৭৮৭, ১৭৭৯৩, দারেমী ২৩৪৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৭৪
الخامس: عن أبي أمامة صدي بن عجلان
الباهلي رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يخطب في حجة
الوداع فقال : اتقوا الله ، وصلوا خمسكم، وصوموا شهركم، وأدوا زكاة أموالكم،
وأطيعوا أمراءكم، تدخلوا جنة ربكم" (رواه الترمذي، في آخر كتاب الصلاة
وقال : حديث حسن صحيح).
আবূ
উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
বিদায় হজ্জের অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভাষণ দিতে
শুনেছি, ‘‘তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্তের (ফরয) নামায
পড়, তোমাদের রমযান মাসের রোযা রাখ, তোমাদের মালের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের নেতা
ও শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য কর (যদি তাদের আদেশ শরীয়ত বিরোধী না হয়), তাহলে তোমরা
তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’[১]
[১] তিরমিযী ৬১৬, আহমাদ ২১৬৫৭, ২১৭৫৫, (তিরমিযী, তিনি
বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭
দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর
প্রতি) ভরসা
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَمَّا رَءَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡأَحۡزَابَ قَالُواْ هَٰذَا مَا وَعَدَنَا ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَصَدَقَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥۚ وَمَا زَادَهُمۡ إِلَّآ إِيمَٰنٗا وَتَسۡلِيمٗا ٢٢ ﴾ [الاحزاب: ٢٢]
অর্থাৎ “বিশ্বাসীরা যখন শত্রুবাহিনীকে দেখল তখন ওরা বলে উঠল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
তো আমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতই দিয়েছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন। এতে
তো তাদের বিশ্বাস ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেল।” (সূরা আহযাব ২২ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেন,
﴿ ٱلَّذِينَ قَالَ لَهُمُ ٱلنَّاسُ إِنَّ ٱلنَّاسَ قَدۡ جَمَعُواْ لَكُمۡ فَٱخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ إِيمَٰنٗا وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ وَنِعۡمَ ٱلۡوَكِيلُ ١٧٣ فَٱنقَلَبُواْ بِنِعۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضۡلٖ لَّمۡ يَمۡسَسۡهُمۡ سُوٓءٞ وَٱتَّبَعُواْ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ ذُو فَضۡلٍ عَظِيمٍ ١٧٤ ﴾ [ال عمران: ١٧٣، ١٧٤]
অর্থাৎ “যাদেরকে লোকেরা বলেছিল যে, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। সুতরাং তোমরা
তাদেরকে ভয় কর। কিন্তু এ (কথা) তাদের বিশ্বাস দৃঢ়তর করেছিল এবং তারা বলেছিল,
আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক। তারপর তারা আল্লাহর নিয়ামত
ও অনুগ্রহসহ ফিরে এসেছিল, কোন অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং আল্লাহ যাতে
সন্তুষ্ট হন তারা তারই অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।” (সূরা আলে ইমরান
১৭৩-১৭৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱلۡحَيِّ ٱلَّذِي لَا يَمُوتُ ﴾ [الفرقان: ٥٧]
অর্থাৎ “তুমি তাঁর উপর নির্ভর কর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই।” (সূরা ফুরক্বান
৫৮আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ﴾ [ابراهيم: ١١]
অর্থাৎ “মু’মিনদের উচিত, কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করা।” (সূরা ইব্রাহীম ১১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَإِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِۚ ﴾ [ال عمران: ١٥٩]
অর্থাৎ “তুমি কোন সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর। (নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর
উপর নির্ভরশীলদেরকে ভালবাসেন।)” (সূরা আলে ইমরান ১৫৯ আয়াত)
আরো আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓ﴾ [الطلاق: ٣]
অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে তার জন্য তিনই যথেষ্ট হবেন।” (সূরা
ত্বালাক ৩ আয়াত)
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ﴾ [الانفال: ٢]
অর্থাৎ “বিশ্বাসী (মু’মিন) তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করার সময় ভীত হয়
এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের বিশ্বাস (ঈমান) বৃদ্ধি করে
এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।”
একীন (দৃঢ়প্রত্যয়) ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা)র গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক
আয়াত রয়েছে। এ মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ
৭৫
فالأول عن ابن عباس رضي الله عنهما قال:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : عرضت علي الأمم، فرأيت النبي ومعه الرهيط،
والنبي ومعه الرجل والرجلان، والنبي وليس معه أحد إذ رفع لي سواد عظيم فظننت أنهم
أمتي، فقيل لى : هذا موسى وقومه، ولكن انظر إلى الأفق، فنظرت فإذا سواد عظيم،
فقيل لى، انظر إلى الأفق الآخر، فإذا سواد عظيم، فقيل لي: هذه أمتك، ومعهم سبعون
ألفاً يدخلون الجنة بغير حساب ولا عذاب" ثم نهض فدخل منزله، فخاض الناس في
أولئك الذين يدخلون الجنة بغير حساب ولا عذاب، فقال بعضهم: فلعلهم الذين صحبوا
رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وقال بعضهم: فلعلهم الذين ولدوا في الإسلام، فلم
يشركوا بالله شيئاً- وذكروا أشياء- فخرج عليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم
فقال: "ما الذي تخوضون فيه؟" فأخبروه فقال: "هم الذين
لا يرقون ، ولا يسترقون ولا يتطيرون، وعلى ربهم يتوكلون" فقام عكاشة بن
محصن فقال: ادع الله أن يجعلني منهم، فقال: "أنت منهم" ثم قام
رجل آخر فقال: ادع الله أن يجعلني منهم فقال: "سبقك بها عكاشة"
. (متفق عليه) .
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার কাছে সকল উম্মত পেশ করা হল।
আমি দেখলাম, কোন নবীর সাথে কতিপয় (৩ থেকে ৭ জন অনুসারী) লোক রয়েছে। কোন নবীর সাথে
এক অথবা দুইজন লোক রয়েছে। কোন নবীকে দেখলাম তাঁর সাথে কেউ নেই। ইতোমধ্যে বিরাট
একটি জামাআত আমার সামনে পেশ করা হল। আমি মনে করলাম, এটই আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে
বলা হল যে, ‘এটি হল মূসা ও তাঁর উম্মতের জামাআত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে তাকান।’
অতঃপর তাকাতেই আরও একটি বিরাট জামাআত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হল যে, ‘এটি হল আপনার
উম্মত। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এমন ৭০ হাজার লোক, যারা বিনা হিসাব ও বিনা আযাবে
বেহেশ্তে প্রবেশ করবে।’’
এ কথা বলে তিনি উঠে নিজ বাসায় প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা ঐ বেহেশ্তী লোকদের
ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেশ্তে প্রবেশ
করবে। কেউ কেউ বলল, ‘সম্ভবতঃ ঐ লোকেরা হল তারা, যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবা।’ কিছু লোক বলল, ‘বরং সম্ভবতঃ ওরা হল তারা, যারা
ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি।’ আরো অনেকে অনেক কিছু
বলল। কিছু পরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট বের হয়ে
এসে বললেন, ‘‘তোমরা কি ব্যাপারে আলোচনা করছ?’’ তারা ব্যাপার খুলে বললে তিনি বললেন,
‘‘ওরা হল তারা, যারা ঝাড়ফুঁক করে না,[১] ঝাড়ফুঁক চায় না এবং কোন জিনিসকে অশুভ
লক্ষণ মনে করে না, বরং তারা কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।’’
এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনু মিহসান উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘(হে আল্লাহর রাসূল!)
আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন!’ তিনি বললেন,
‘‘তুমি তাদের মধ্যে একজন।’’ অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি আমার
জন্যও দো‘আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন।’ তিনি বললেন,
‘‘উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগমন করেছে।’’[2]
[১] এ কথাটি বুখারীতে নেই। তাছাড়া জিবরীল আলাইহিস সালাম
ঝাড়ফুঁক করেছেন, ঝাড়ফুঁক করেছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পক্ষান্তরে
অন্য বর্ণনায় উক্ত কথার স্থলে ‘দাগায় না’ কথা এসেছে।
[2] সহীহুল বুখারী ৫৭০৫, ৩৪১০, ৫৭৫২, ৬৪৭২, ৬৫৪১, ২২০, তিরমিযী ২৪৪৬, আহমাদ ২৪৪৪
হাদিসের মানঃঅন্যান্য
৭৬
الثاني: عن ابن عباس رضي الله عنهما
أيضاً أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يقول: "اللهم لك أسلمت وبك
آمنت، وعليك توكلت، وإليك أنبت ، وبك خاصمت. اللهم أعوذ بعزتك، لا إله إلا أنت
أن تضلني، أنت الحي الذي لا تموت، والجن والإنس يموتون" (متفق
عليه) . (وهذا لفظ مسلم، واختصره البخاري).
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু অবিকা আ-মানতু
অআলাইকা তাওয়াক্কালতু অইলাইকা আনাবতু অবিকা খা-স্বামতু। আল্লাহুম্মা আউযু
বইয্যাতিকা লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আন তুদ্বিল্লানী, আন্তাল হাইয়্যুল্লাযী লা
য়্যামূত, অলজিন্নু অলইন্সু য়্যামূতূন।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি নিজকে তোমার নিকট
সমর্পণ করলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম, তোমারই উপর ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! তোমারই
দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম, তোমারই ক্ষমতায় (শত্রুর বিরুদ্ধে) বিবাদ করলাম। হে
আল্লাহ! তোমার ইয্যতের অসীলায় আমি আশ্রয় চাচ্ছি---তুমি ছাড়া কেউ (সত্য) উপাস্য
নেই---তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করো না। তুমি সেই চিরঞ্জীব, যে কখনো মরবে না এবং দানব ও
মানবজাতি মৃত্যুবরণ করবে।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭৩৮৩, মুসলিম ২৭১৮, আহমাদ ২৭৪৩, (বুখারী-মুসলিম,
এই শব্দগুলো মুসলিমের। ইমাম বুখারী (রহঃ) এটিকে সং[[প্তভাবে বর্ণনা করেছেন।)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৭৭
الثالث: عن ابن عباس رضي الله عنهما
أيضاً قال: "حسبنا الله ونعم الوكيل، قالها إبراهيم صلى الله عليه وسلم
حين ألقي في النار، وقالها محمد صلى الله عليه وسلم حين قالوا: إن الناس قد
جمعوا لكم فاخشوهم فزادهم إيمانا وقالوا: حسبنا الله ونعم الوكيل: (رواه
البخاري).
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন যে, ‘‘হাসবুনাল্লাহু অনি’মাল অকীল’’ কথাটি ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন বলেছিলেন, যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এবং মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি তখন বলেছিলেন যখন লোকেরা বলেছিল যে, ‘(কাফের)
লোকেরা তোমাদের মুকাবিলার জন্য সমবেত হয়েছে; ফলে তোমরা তাদেরকে ভয় কর।’ কিন্তু এ
কথা তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলল, ‘‘হাসবুনাল্লাহ্ অনি‘মাল অকীল।’’
অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনই উত্তম কর্মবিধায়ক। (বুখারী)
অন্য এক বর্ণনায় ইবনু আব্বাস বলেন, আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় ইব্রাহীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ কথা ছিল, ‘‘হাসবিয়াল্লাহ্ অনি‘মাল
অকীল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৫৬৩, ৪৫৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৭৮
الرابع: عن أبي هريرة رضي الله عنه عن
النبي صلى الله عليه وسلم قال: "يدخل الجنة أقوام أفئدتهم مثل أفئدة
الطير" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাতে এমন লোক প্রবেশ করবে, যাদের
অন্তর হবে পাখীর অন্তরের মত।’’ [১]
[১] মুসলিম ২৮৪০, আহমাদ ৮১৮২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৭৯
الخامس: عن جابر رضي الله عنه أنه غزا مع
النبي صلى الله عليه وسلم قبل نجد، فلما قفل رسول الله صلى الله عليه وسلم قفل
معهم، فأدركتهم القائلة في واد كثير العضاه، فنزل رسول الله صلى الله عليه وسلم،
وتفرق الناس يستظلون بالشجر، ونزل رسول الله صلى الله عليه وسلم تحت سمرة، فعلق
بها سيفه، ونمنا نومة، فإذا رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعونا، وإذا عنده
أعرابي فقال: "إن هذا اختراط علي سيفي وأنا نائم، فاسيقظت وهو في يده
صلتا، قال: من يمنعك منى؟ قلت: الله-ثلاثا" ولم يعاقبه وجلس.
(متفق عليه) .
وفي رواية : قال جابر: كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بذات الرقاع:
فإذا أتينا على شجرة ظليلة تركناها لرسول الله صلى الله عليه وسلم، فجاء رجل من
المشركين، وسيف رسول الله صلى الله عليه وسلم معلق بالشجرة، فاخترطه فقال :
تخافني؟ قال: لا قال : فمن يمنعك مني ؟ قال: الله .
وفي رواية أبي بكر الإسماعيلى في صحيحه: قال: من يمنعك مني؟ قال :
الله قال: فسقط السيف من يده، فأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم السيف
فقال: من يمنعك مني؟ فقال كن خير آخذ، فقال تشهد أن لا إله إلا الله
، وأني رسول الله؟ قال: لا، ولكني أعاهدك أن لا أقاتلك ولا أكون مع قوم
يقاتلونك، فخلى سبيله، فأتى أصحابه فقال: جئتكم من عند خير الناس.
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নাজদের (বর্তমানে রিয়াদ অঞ্চল) দিকে
জিহাদে রওনা হলেন। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাড়ী) ফিরতে
লাগলেন, তখন তিনিও তাঁর সঙ্গে ফিরলেন। (রাস্তায়) প্রচুর কাঁটাগাছ ভরা এক উপত্যকায়
তাঁদের দুপুরের বিশ্রাম নেওয়ার সময় হল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (বিশ্রামের জন্য) নেমে পড়লেন এবং (সাহাবীগণও) গাছের ছায়ার খোঁজে তাঁরা
বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলার
গাছের নীচে অবতরণ করলেন এবং তাতে স্বীয় তরবারি ঝুলিয়ে দিলেন, আর আমরা অল্পক্ষণের
জন্য ঘুমিয়ে গেলাম।
অতঃপর হঠাৎ (আমরা শুনলাম যে,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদেরকে ডাকছেন। সেখানে দেখলাম যে, একজন বেদুঈন তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি বললেন,
‘‘আমার ঘুমের অবস্থায় এই ব্যক্তি আমার তরবারি খুলে আমার উপর ধরে আছে। অতঃপর আমি
যখন জাগলাম, তখন তরবারিখানি তার হাতে খুলা অবস্থায় দেখলাম। (তারপর) সে আমাকে বলল,
‘আমা হতে তোমাকে (আজ)কে বাঁচাবে?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ!’ এ কথা আমি তিনবার বললাম।’’
তিনি তাকে কোন শাস্তি দিলেন না। অতঃপর তিনি বসে গেলেন। (অথবা সে বসে গেল।) (বুখারী
ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে জাবের বলেন যে, আমরা ‘যাতুর রিক্বা’তে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। অতঃপর (ফিরার সময়) যখন আমরা ঘন
ছায়াবিশিষ্ট একটি গাছের কাছে এলাম, তখন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ছেড়ে দিলাম। (তিনি বিশ্রাম করতে লাগলেন।) ইতিমধ্যে একজন মুশরিক
এল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারি গাছে ঝুলানো ছিল।
তারপর সে তা (খাপ থেকে) বের করে বলল, ‘তুমি আমাকে ভয় করছ?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ সে
বলল, ‘তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ।’’
আবূ বাকর ইসমাঈলীর ‘সহীহ’ গ্রন্থের বর্ণনায় আছে, সে বলল, ‘আমার হাত থেকে তোমাকে কে
বাঁচাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ।’’ বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তার হাত থেকে তরবারিটি
পড়ে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরবারিখানি তুলে নিয়ে
বললেন, ‘‘(এবার) তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?’’ সে বলল, ‘তুমি উত্তম
তরবারিধারক হয়ে যাও।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আল্লাহ ছাড়া
কেউ (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল?’’ সে বলল, ‘না। কিন্তু আমি তোমার
কাছে অঙ্গীকার করছি যে, তোমার বিরুদ্ধে কখনো লড়বো না। আর আমি সেই সম্প্রদায়েরও
সাথী হবো না, যারা তোমার বিরুদ্ধে লড়বে।’ সুতরাং তিনি তার পথ ছেড়ে দিলেন। অতঃপর সে
তার সঙ্গীদের নিকট এসে বলল, ‘আমি তোমাদের নিকটে সর্বোত্তম মানুষের কাছ থেকে
এলাম।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৯১০, ২৯১৩, ৪১৩৫, ৪১৩৭, ৪১৩৯, আহমাদ
১৩৯২৫, ১৪৫১১, ১৪৭৬৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৮০
السادس: عن عمر رضي الله عنه قال: سمعت
رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : "لو أنكم تتوكلون على الله حق
توكله لرزقكم كما يرزق الطير ، تغدو خماصاً وتروح بطاناً" (رواه
الترمذي ، وقال حديث حسن ).
উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘যদি
তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখ, তবে তিনি তোমাদেরকে সেই মত রুযী দান করবেন
যেমন পাখীদেরকে দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং
সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে (বাসায়) ফিরে।’’[১]
[১] তিরমিযী ২৩৪৪, ইবনু মাজাহ ৪১৬৪, আহমাদ ২০৫, ৩৭২,
(তিরমিযী, হাসান)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৮১
السابع: عن أبي عمارة البراء بن عازب رضي
الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " يا فلان إذا
أويت إلى فراشك فقل: اللهم أسلمت نفسي إليك، ووجهت وجهي إليك: وفوضت أمري إليك
، وألجأت ظهري إليك، رغبة ورهبة إليك، لا ملجأ ولا منجى منك إلا إليك ، آمنت
بكتابك الذي أنزلت، ونبيك الذي أرسلت؛ فإنك إن مت من ليلتك مت على الفطرة، وإن
أصبحت أصبت خيراً" (متفق عليه) .
বারা
ইবনু আযেব থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে অমুক! তুমি যখন বিছানায় শোবে, তখন (এই
দো‘আ) পড়, যার অর্থ, হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মা তোমাকে সঁপে দিলাম, আমার চেহারা
তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আমার ব্যাপার তোমাকে সঁপে দিলাম এবং আমার পিঠ তোমার দিকে
লাগিয়ে দিলাম; তোমার (জান্নাতের) আগ্রহে ও (জাহান্নামের) ভয়ে। তুমি ছাড়া কোন
আশ্রয়স্থল ও পরিত্রাণস্থল নেই। আমি সেই কিতাবের প্রতি ঈমান আনলাম যেটি তুমি
অবতীর্ণ করেছ এবং সেই রাসূলের প্রতি যাঁকে তুমি পাঠিয়েছ। (অবশেষে তিনি বলেন,)
অতঃপর তুমি যদি সেই রাতে মৃত্যুবরণ কর, তাহলে তুমি ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে। আর
যদি তুমি সকালে ওঠ তবে, তুমি (এর) উপকার পাবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৩১৩, ২৪৭, ৬৩১১, ৬৩১৫, ৭৪৮৮, মুসলিম
২১০, তিরমিযী ৩৩৯৪, ৩৫৭৪, আবূ দাউদ ৫০৪৬, ইবনু মাজাহ ৩৮৭৬, আহমাদ ১৮০৪৪, ১৮০৮৯, দারেমী
২৬৮৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৮২
الثامن: عن أبي بكر الصديق رضي الله عنه
عن عبد الله بن عثمان بن عامر بن عمر بن كعب بن سعد بن تيم بن مرة بن كعب بن لؤي
بن غالب القرشي التيمي رضي الله عنه - وهو وأبوه وأمه صحابة، رضي الله عنهم-
قال: نظرت إلى أقدام المشركين ونحن في الغار وهم على رؤوسنا فقلت يارسول الله لو
أن أحدهم نظر تحت قدمية لأبصرنا. فقال: " ما ظنك يا أبا بكر باثنين
الله ثالثهما" (متفق عليه) .
আবূ
বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি মুশরিকদের পায়ের দিকে তাকালাম যখন আমরা (সওর) গুহায় (লুকিয়ে) ছিলাম এবং
তারা আমাদের মাথার উপরে ছিল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি তাদের মধ্যে
কেউ তার পায়ের নীচে তাকায়, তবে সে আমাদেরকে দেখে ফেলবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আবূ বাকর! সে দু’জন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা, যাদের
তৃতীয়জন আল্লাহ।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৬৫৩, ৩৯২২, ৪৬৬৩, মুসলিম ২৩৮১, তিরমিযী
৩০৯৬, আহমাদ ১২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৮৩
عَن أمِّ سَلَمَةَ رَضِي الله عَنها :
أَنَّ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيتِهِ، قَالَ:
«بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلتُ عَلَى اللهِ، اَللهم إِنِّي أعُوذُ بِكَ أنْ أضِلَّ أَوْ
أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أجْهَلَ
أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ»حديثٌ صحيح، رواه أبو داود والترمذي وغيرهما بأسانيد صحيحةٍ
. قَالَ الترمذي: «حديث حسن صحيح»وهذا لفظ أبي داود
উম্মু
সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাড়ি থেকে বের হতেন, তখন (এই দো‘আ)
বলতেন---যার অর্থ, আল্লাহর নাম নিয়ে (বের হলাম), আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। হে
আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি ভ্রষ্ট হই বা আমাকে ভ্রষ্ট
করা হয়, আমার পদস্খলন হয় বা পদস্খলন করানো হয়, আমি অত্যাচারী হই অথবা অত্যাচারিত
হই অথবা আমি মূর্খামি করি অথবা আমার প্রতি মূর্খামি করা হয়---এসব থেকে। [১]
[১] তিরমিযী ৩৪২৭, আবূ দাউদ ৫০৯৪, ইবনু মাজাহ ৩৮৮৪, আহমাদ
২৬০৭৬
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৮৪
عن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم : "من قال-يعني إذا خرج من بيته-: بسم الله توكلت
على الله، ولا حول ولا قوة إلا بالله ، يقال له: هديت وكفيت ووقيت، وتنحى عنه
الشيطان". رواه أبو داود والترمذي، والنسائي وغيرهم. وقال الترمذي:
حديث حسن، زاد أبو داود: "فيقول :-يعني الشيطان-لشيطان آخر: كيف لك
برجل قد هدي وكفي ووقيّ ؟
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সবীয় গৃহ থেকে বের হওয়ার সময়
বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, অলা হাওলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ।’ (অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ থেকে ফিরা
এবং পুণ্য করা সম্ভব নয়।) তাকে বলা হয়, ‘তোমাকে সঠিক পথ দেওয়া হল, তোমাকে যথেষ্টতা
দান করা হল এবং তোমাকে বাঁচিয়ে নেওয়া হল।’ আর শয়তান তার নিকট থেকে দূরে সরে যায়।’’
(আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ প্রমুখ)
তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আবূ দাউদ এই শব্দগুলি বাড়তি বর্ণনা করেছেন, ‘‘ফলে
শয়তান অন্য শয়তানকে বলে যে, ‘ঐ ব্যক্তির উপর তোমার কিরূপে কর্তৃত্ব চলবে, যাকে
সঠিক পথ প্রদর্শন করা হয়েছে, যাকে যথেষ্টতা দান করা হয়েছে এবং যাকে (সকল অমঙ্গল)
থেকে বাঁচানো হয়েছে?’[১]
[১] তিরমিযী ৩৪২৬, আবূ দাউদ ৫০৯৫
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৮৫
وعن أنس رضي الله عنه قال: كان أخوان على
عهد النبي صلى الله عليه وسلم، وكان أحدهما يأتي النبي صلى الله عليه وسلم ،
والآخر يحترف، فشكا المحترف آخاه للنبي صلى الله عليه وسلم فقال : "لعلك
ترزق به" (رواه الترمذي بإسناد صحيح على شرط مسلم).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে দুই ভাই ছিল। তাদের মধ্যে একজন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (দ্বীন শিক্ষার জন্য) আসত এবং আর একজন
হাতের কোন কাজ করে উপার্জন করত। অতঃপর উপার্জনশীল (ভাইটা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তার (শিক্ষার্থী) ভাইয়ের (কাজ না করার) অভিযোগ করল। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সম্ভবতঃ তোমাকে তার কারণেই রুযী দেওয়া হচ্ছে।’’[১]
[১] তিরমিযী ২৩৪৫, (ইমাম তিরমিযী এটিকে বিশুদ্ধ সূত্রে
মুসলিমের শর্তানুযায়ী বর্ণনা করেছেন।)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৮
দ্বীনে অটল থাকার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَٱسۡتَقِمۡ كَمَآ أُمِرۡتَ ﴾ [هود: ١١٢]
অর্থাৎ “সুতরাং তুমি যেরূপ আদিষ্ট হয়েছ সেইরূপ সুদৃঢ় থাক।” (সূরা হুদ ১১২ আয়াত)
তিনি আরোও বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠ نَحۡنُ أَوۡلِيَآؤُكُمۡ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۖ وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَشۡتَهِيٓ أَنفُسُكُمۡ وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ٣١ نُزُلٗا مِّنۡ غَفُورٖ رَّحِيمٖ ٣٢ ﴾ [فصلت: ٣٠، ٣٢]
অর্থাৎ “নিশ্চয় যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’ তারপর তাতে অবিচলিত থাকে,
তাদের নিকট ফিরিশতা অবতীর্ণ হয় (এবং বলে), ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং
তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ নাও। ইহকালে আমরা
তোমাদের বন্ধু এবং পরকালেও; সেখানে তোমাদের জন্য সমস্ত কিছু রয়েছে যা তোমাদের মন চায়,
যা তোমরা আকাঙ্ক্ষা কর। চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লার পক্ষ হতে এ হবে আপ্যায়ন’।”
সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩০-৩২ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٣ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَنَّةِ خَٰلِدِينَ فِيهَا جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٤ ﴾ [الاحقاف: ١٣، ١٤]
অর্থাৎ “নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ অতঃপর এই বিশ্বাসে অবিচলিত
থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী সেখানে
তারা চিরস্থায়ী হবে, এটাই তাদের কর্মফল।” (সূরা আহক্বাফ ১৩-১৪ আয়াত)
৮৬
وعن أبي عمرو، وقيل: أبي عمرة سفيان بن
عبد الله رضي الله عنه قال: قلت: يا رسول الله قل لي في الإسلام قولاً لا أسأل
عنه أحداً غيرك. قال: "قل آمنت بالله: ثم استقم" (رواه
مسلم).
আবূ
আমর (মতান্তরে) আবূ আমরাহ সুফিয়ান ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন যে, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে ইসলামের এমন একটি কথা বলে দিন,
যে সম্পর্কে আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা না করতে হয়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি বল,
আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম, অতঃপর (তার উপর) অনড় থাক।’’[১]
[১] মুসলিম ৩৮, তিরমিযী ২৪১০, ইবনু মাজাহ ৩৯৭২, আহমাদ
১৪৯৯০, ১৮৯৩৮, দারেমী ২৭১০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৮৭
وعن أبي هريرة رضي الله عنه : قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم قاربوا وسددوا، واعلموا أنه لن ينجو أحد منكم
بعمله" قالوا: ولا أنت يا رسول الله ؟ قال: "ولا أنا إلا أن
يتغمدنى الله برحمة منه وفضل" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা (হে মুসলিমরা!) (দ্বীনের
ব্যাপারে) ভারসাম্য বজায় রাখ এবং সোজা হয়ে থাক। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে
কেউই স্বীয়কর্মের দ্বারা (পরকালে) পরিত্রাণ পাবে না।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! আপনিও নন?’ তিনি বললেন, ‘‘আমিও নই। তবে আল্লাহ আমাকে তাঁর অনুগ্রহে
ও দয়াতে ঢেকে রেখেছেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬৭৩, ৩৯,৬৪৬৩, মুসলিম ২৮১৬, নাসায়ী
৫০২৩, ইবনু মাজাহ ৪২০১, আহমাদ ৭১৬২, ৭৪৩০, ৭৫৩৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ৯
আল্লাহ তা‘আলার বিশাল
সৃষ্টিজগৎ, পৃথিবীর ধ্বংস, পরকালের ভয়াবহতা এবং ইহ-পরকালের বিষয়াদি নিয়ে, আত্মার
ত্রুটি ও তার শুদ্ধীকরণ এবং তাকে আল্লাহর দ্বীনে অটল রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ
নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَآ أَعِظُكُم بِوَٰحِدَةٍۖ أَن تَقُومُواْ لِلَّهِ مَثۡنَىٰ وَفُرَٰدَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُواْۚ ﴾ [سبا: ٤٦]
অর্থাৎ “বল, আমি তোমাদের একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি : তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’জন
করে অথবা একা একা দাঁড়াও এবং চিন্তা করে দেখ।” (সূরা সাবা ৪৬ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ لَأٓيَٰتٖ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٠ ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ ﴾ [ال عمران: ١٩٠، ١٩١]
অর্থাৎ “নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী
লোকেদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে,) ‘হে আমাদের
প্রতিপালক! তুমি এ নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র’।” সূরা আলে ইমরান ১৯০ -১৯১
আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ أَفَلَا يَنظُرُونَ إِلَى ٱلۡإِبِلِ كَيۡفَ خُلِقَتۡ ١٧ وَإِلَى ٱلسَّمَآءِ كَيۡفَ رُفِعَتۡ ١٨ وَإِلَى ٱلۡجِبَالِ كَيۡفَ نُصِبَتۡ ١٩ وَإِلَى ٱلۡأَرۡضِ كَيۡفَ سُطِحَتۡ ٢٠ فَذَكِّرۡ إِنَّمَآ أَنتَ مُذَكِّرٞ ٢١ ﴾ [الغاشية: ١٧، ٢١]
অর্থাৎ “তবে কি তারা উঁটের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে ওকে সৃষ্টি করা হয়েছে?
এবং আকাশের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে ঊর্ধ্বে উত্তোলন করা হয়েছে? এবং পর্বতমালার দিকে
যে, কিভাবে ওটাকে স্থাপন করা হয়েছে? এবং ভূতলের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা
হয়েছে? অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাক; তুমি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র।” (সূরা গাশিয়াহ
১৭-২১ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ أَفَلَمۡ يَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَيَنظُرُواْ﴾ [محمد: ١٠]
অর্থাৎ “তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? তাহলে দেখত (যে, তাদের পূর্ববর্তীদের
পরিণাম কী হয়েছে।)” (সূরা মুহাম্মাদ ১০ আয়াত)
পরিচ্ছদঃ ১০
শুভকাজে প্রতিযোগিতা ও শীঘ্র
করা এবং পুণ্যকামীকে পুণ্যের প্রতি তৎপরতার সাথে নির্দ্বিধায় সম্পাদন করতে উৎসাহিত
করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَٱسۡتَبِقُواْ ٱلۡخَيۡرَٰتِۚ ﴾ [البقرة: ١٤٨]
অর্থাৎ এতএব তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কর। (সূরা বাক্বারাহ ১৪৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]
অর্থাৎ “তোমরা প্রতিযোগিতা (ত্বরা) কর, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা এবং
বেহেশ্তের জন্য, যার প্রস্থ আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা ধর্মভীরুদের জন্য প্রস্তুত
রাখা হয়েছে।” <صلى الله عليه وسلمm>(সূরা
আলে ইমরান ১৩৩ আয়াত)
এ বিষয়ে হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
৮৮
فالأول: عن أبي هريرة رضي الله عنه أن
رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: " بادروا بالأعمال فتناً كقطع الليل
المظلم يصبح الرجل مؤمنا ويمسي كافراً ويمسي مؤمنا ويصبح كافراً، يبيع دينه بعرض
من الدنيا" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমরা অন্ধকার রাতের টুকরো সমূহের মত (যা
একটার পর একটা আসতে থাকে এমন) ফিতনাসমূহ আসার পূর্বে নেকীর কাজ দ্রুত করে ফেল।
মানুষ সে সময়ে সকালে মু’মিন থাকবে এবং সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে অথবা সন্ধ্যায়
মু’মিন থাকবে এবং সকালে কাফের হয়ে যাবে। নিজের দ্বীনকে দুনিয়ার সম্পদের বিনিময়ে
বিক্রয় করবে।[১]
[১] মুসলিম ১১৮, তিরমিযী ২১৯৫, আহমাদ ৭৯৭০, ৮৬৩১, ৮৮২৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৮৯
لثاني عن أبي سروعة -بكسر السين المهملة
وفتحها- عقبة ابن الحارث رضي الله عنه قال: صليت وراء النبي صلى الله عليه وسلم
بالمدينة العصر، فسلم ثم قام مسرعاً فتخطى رقاب الناس إلى بعض حجر نسائه، ففزع الناس
من سرعته، فخرج عليهم، فرأى أنهم قد عجبوا من سرعته، قال "ذكرت شيئاً من
تبر عندنا فكرهت أن يحبسنى، فأمرت بقسمته" (رواه البخاري).
وفي رواية للبخاري : كنت خلفت في البيت تبراً من الصدقة، فكرهت أن أبيته
. (التبر) قطع ذهب أو فضة
আবূ
সিরওয়াআহ উক্ববাহ ইবনু হারেস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে মদ্বীনায় আসরের নামায পড়লাম। অতঃপর
সালাম ফিরে তিনি অতি শীঘ্র দাঁড়িয়ে পড়লেন। তারপর লোকদের গর্দান টপকে তাঁর কোন এক
স্ত্রীর কামরায় চলে গেলেন। লোকেরা তাঁর শীঘ্রতা দেখে ঘাবড়ে গেল। অতঃপর তিনি বের
হয়ে এলেন; দেখলেন লোকেরা তাঁর শীঘ্রতার কারণে আশ্চর্যান্বিত হয়েছে। তিনি বললেন,
‘‘(নামাযে) আমার মনে পড়ল যে, (বাড়ীতে সোনা অথবা চাঁদির) একটি টুকরা রয়ে গেছে। আমি
চাইলাম না যে, তা আমাকে আল্লাহর স্মরণে বাধা দেবে। যার জন্য আমি (দ্রুত বাড়ীতে
গিয়ে) তা বণ্টন করার আদেশ দিলাম।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমি বাড়ীতে সাদকার একটি স্বর্ণখণ্ড ছেড়ে এসেছিলাম। অতঃপর
আমি তা রাতে নিজ গৃহে রাখা পছন্দ করলাম না।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৮৫১, ১২২১, ১৪৩০, ৬২৭৫, নাসায়ী ১৩৬৫,
আহমাদ ১৫৭১৮, ১৮৯৩৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯০
الثالث: عن جابر رضي الله عنه قال: قال
رجل للنبي صلى الله عليه وسلم يوم أحد: : رَأيتَ إنْ قُتِلتُ فَأَيْنَ أَنَا ؟
قَالَ : « في الجنَّةِ » فَأَلْقَى تَمَرَاتٍ كُنَّ في يَدِهِ ، ثُمَّ قَاتَلَ
حَتَّى قُتِلَ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
,
উহুদ যুদ্ধের দিন এক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ‘আপনি
বলুন! আমি যদি (কাফেরদের হাতে) মারা যাই, তাহলে আমি কোথায় যাব?’ তিনি বললেন,
‘‘জান্নাতে।’’ এ কথা শোনামাত্র তিনি তাঁর হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। তারপর
(কাফেরদের সাথে) যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪০৪৬, মুসলিম ১৮৯৯, নাসায়ী ৩১৫৪, আহমাদ
১৩৯০২, মুওয়াত্তা মালেক ১০১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯১
عن أبي هريرة ، قَالَ : جاءَ رَجُلٌ إِلَى
النَّبيِّ فَقَالَ : يَا رسولَ الله ، أيُّ الصَّدَقَةِ أعْظَمُ أجْرَاً ؟ قَالَ :
« أنْ تَصَدَّقَ وَأنتَ صَحيحٌ شَحيحٌ ، تَخشَى الفَقرَ وتَأمُلُ الغِنَى ، وَلا
تُمهِلْ حَتَّى إِذَا بَلَغتِ الحُلقُومَ قُلْتَ لِفُلان كذا ولِفُلانٍ كَذا ،
وقَدْ كَانَ لِفُلانٍ » . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন যে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! কোন্ সাদকাহ নেকীর দিক দিয়ে বড়?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার সে সময়ের
সাদকাহ করা (বৃহত্তম নেকীর কাজ) যখন তুমি সুস্থ থাকবে, মালের লোভ অন্তরে থাকবে,
তুমি দরিদ্রতার ভয় করবে এবং ধন-দৌলতের আশা রাখবে। আর তুমি সাদকাহ করতে বিলম্ব করো
না। পরিশেষে যখন তোমার প্রাণ কণ্ঠাগত হবে, তখন বলবে, ‘অমুকের জন্য এত, অমুকের জন্য
এত। অথচ তা অমুকের (উত্তরাধিকারীর) হয়েই গেছে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪১৯, ২৮৪৮, মুসলিম ১০৩২, নাসায়ী ২৫৪২,
৩৬১১ আবূ দাউদ ২৮৬৫, আহমাদ ৭১১৯, ৭৩৫৯, ৭১১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯২
الخامس: عن أنس رضي الله عنه، أن رسول
الله صلى الله عليه وسلم أخذ سيفاً يوم أحد فقال: " من يأخذ مني هذا؟
فبسطوا أيديهم، كل إنسان منهم يقول: أنا أنا. قال: "فمن يأخذه
بحقه؟" فأحجم القوم، فقال أبو دجانة رضي الله عنه: أنا آخذه بحقه،
فأخذه ففلق به هام المشركين. (رواه مسلم).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উহুদের
দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানি তরবারি হাতে নিয়ে বললেন,
‘আমার কাছ থেকে এই তরবারি কে নেবে?’ সাহাবীগণ নিজ নিজ হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাঁদের
মধ্যে প্রত্যেকেই বলতে লাগলেন, ‘আমি, আমি।’ তিনি বললেন, ‘‘কে এর হক আদায়ের জন্য
নেবে?’’ (এ কথা শুনে) সবাই থমকে গেলেন। অতঃপর আবূ দুজানা (রাঃ) বললেন, ‘আমি এর হক
আদায়ের জন্য নেব।’ তারপর তিনি তা নিয়ে নিলেন এবং তার দ্বারা মুশরিকদের শিরোচ্ছেদ
করতে থাকলেন।[১]
[১] মুসলিম ২৪৭০, আহমাদ ১১৮২৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯৩
السادس: عن الزبير بن عدي قال: أتينا
أنس بن مالك رضي الله عنه فشكونا إليه ما نلقى من الحجاج. فقال:
"اصبروا فإنه لا يأتي زمان إلا والذي بعده شر منه حتى تلقوا ربكم"
سمعته من نبيكم صلى الله عليه وسلم.(رواه البخاري).
যুবাইর
ইবনু আদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ)-এর নিকটে এলাম এবং তাঁর কাছে হাজ্জাজের অত্যাচারের অভিযোগ
করলাম। তিনি বললেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। কারণ, এখন যে যুগ আসবে তার পরবর্তী যুগ ওর
চেয়ে খারাপ হবে, শেষ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ (আনাস
(রাঃ) বলেন,) ‘এ কথা আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
শুনেছি।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭০৬৮, তিরমিযী ২২০৬, আহমাদ ১১৯৩৮, ১২৪০৬,
১২৪২৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯৪
السابع: عن أبي هريرة رضي الله عنه أن
رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: " بادروا بالأعمال سبعاً. هل
تنتظرون إلا فقراً منسياً، أو غنى مطغياً، أو مرضاً مفسداً، أو هرماً مفنداً أو
موتاً مجهزاً أو الدجال فشر غائب ينتظر، أو الساعة فالساعة أدهى وأمر!"
(رواه الترمذي وقال: حديث حسن).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাতটি জিনিসের পূর্বেই তোমরা জলদি সব কর্ম
করে ফেল। তোমরা কি অপেক্ষায় থাকবে যে, এমন দারিদ্র এসে যাক ইসলামের আদেশ পালন হতে
যা বিস্মৃত রাখে? অথবা এমন ধন-দৌলত হোক যা ইসলাম দ্রোহিতার দিকে ধাবিত করে? অথবা
এমন ব্যাধি হোক যা শরীরকে দুর্বল করে দেয়? অথবা এমন বার্ধক্য আসুক যা জ্ঞান বিনষ্ট
করে? অথবা হঠাৎ মরণ এসে যাক, অদৃশ্য দুই দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটুক অথবা কিয়ামাত
এসে যাক? আর কিয়ামাত তো নিতান্তই বিভীষিকাময় ও তিক্ত।[১]
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৯৫
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يوم
خيبر: "لأعطين هذه الراية رجلا يحب الله ورسوله، يفتح الله على
يديه" قال عمر رضي الله عنه: ما أحببت الإمارة إلا يؤمئذ، فتساورت لها
رجاء أن أدعى لها، فدعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عليّ بن أبي طالب رضي الله
عنه فأعطاه إياها وقال: " أمش ولا تلتفت حتى يفتح الله عليك" فسار
علي شيئاً، ثم وقف ولم يلتفت، فصرخ: يا رسول الله، على ماذا أقاتل الناس؟
قال: " قاتلهم حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله، وأن محمداً رسول الله،
فإذا فعلوا ذلك فقد منعوا منك دماءهم وأموالهم إلا بحقها، وحسابهم على
الله" (رواه مسلم)
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের দিন বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি, এই পতাকা এমন
এক ব্যক্তিকে দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। আল্লাহ তা‘আলা তার হাতে বিজয়
দান করবেন।’’ উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমি কখনো কর্তৃত্বভার গ্রহণের ইচ্ছা করিনি (কিন্তু
সেদিনই আমার বাসনা হল)। সুতরাং আমি এই আশাতে উঠে উঁচু হয়ে দাঁড়াতে থাকলাম; যেন
আমাকে এর জন্য ডাকা হয়।’ অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী
ইবনু আবী তালেব (রাঃ)-কে ডাকলেন। তারপর তিনি তাঁর হাতে পতাকা তুলে দিয়ে বললেন,
‘‘তুমি চলতে শুরু কর এবং কোন দিকে তাকাবে না; যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে
বিজয় দান করবেন।’’
অতঃপর আলী কিছু দূর গিয়ে থেমে গেলেন এবং কোন দিকে না তাকিয়ে উঁচু আওয়াজে বললেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিসের জন্য লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব?’ তিনি বললেন,
‘‘তুমি সে পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত তারা এ কথার সাক্ষ্য না দেবে যে,
আল্লাহ ছাড়া (কেউ সত্য) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রাসূল। যখন তারা এ কাজ করবে
তখন নিঃসন্দেহে তাদের জান ও মালকে তোমার হাত হতে বাঁচিয়ে নেবে। কিন্তু তার
অধিকারের সাথে (অর্থাৎ সে যদি কোন মুসলিমকে হত্যা করে, তাহলে প্রতিশোধ স্বরূপ তাকে
হত্যা করা বৈধ হবে এবং সে যদি কারোর মাল ছিনিয়ে নেয় অথবা যাকাত না দেয়, তাহলে সে
মাল তার কাছ থেকে আদায় করা জরুরী।) আর তাদের হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে।’’[১]
[১] মুসলিম ২৪০৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১১:
মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য
এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন
সংগ্রাম করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٦٩ ﴾ [العنكبوت: ٦٩]
অর্থাৎ “যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহে
পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গেই থাকেন।” (সূরা আনকাবূত ৬৯
আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]
অর্থাৎ “আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।”
(সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱذۡكُرِ ٱسۡمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلۡ إِلَيۡهِ تَبۡتِيلٗا ٨ ﴾ [المزمل: ٨]
অর্থাৎ “সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন
হও।” (সূরা মুয্যাম্মিল ৮ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ ﴾ [الزلزلة: ٧]
অর্থাৎ “সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযাল ৭
আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗاۚ ﴾ [المزمل: ٢٠]
অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভাল যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে তোমরা
তা আল্লাহর নিকট উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসাবে মহত্তর পাবে।” (সূরা মুযযাম্মিল ২০
আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌ ﴾ [البقرة: ٢٧٣]
অর্থাৎ “আর তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।” (সূরা
বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)
এ বিষয়ে সুবিদিত আয়াত অনেক রয়েছে। উক্ত মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ
৯৬
فالأول: عن أبي هريرة رضي الله عنه
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "إن الله تعالى قال: من
عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب. وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضت
عليه، وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع
به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، وإن سألني
أعطيته؛ ولئن استعاذني لأعيذنه" (رواه البخاري).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি
আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার
বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম
জিনিস হল তা---যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরয ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য
লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।)
আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে
ভালবাসতে লাগি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার
দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার
দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে! আর সে যদি আমার কাছে কিছু
চায়, তাহলে আমি তাকে দই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয়
দিই।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫০২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯৭
الثاني: عن أنس رضي الله عنه عن النبي
صلى الله عليه وسلم فيما يرويه عن ربه عز وجل قال: " إذا تقرب العبد إلي
شبراً تقربت إليه ذراعاً، وإذا تقرب إلي ذراعاً تقربت منه باعاً، وإذا أتاني يمشي
أتيته هرولة" (رواه البخاري).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান প্রভু হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ‘‘যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত
অগ্রসর হই। যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তখন আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হই।
আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে তখন আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭৫৩৬, ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫২৭, মুসলিম ২৬৭৫,
তিরমিযী ২৩৮৮, ৩৬০৩, ইবনু মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ২৭৪০৯, ৮৪৩৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯৮
الثالث: عن ابن عباس رضي الله عنهما
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " نعمتان مغبون فيهما كثير من
الناس: الصحة، والفراغ" (رواه البخاري).
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দু’টির
ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪১২, তিরমিযী ২৩০৪, ইবনু মাজাহ ৪১৭০,
আহমাদ ২৩৩৬, ৩১৯৭, দারেমী ২৭০৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৯৯
الرابع: عن عائشة رضي الله عنها أن النبي
صلى الله عليه وسلم كان يقوم من الليل حتى تنفطر قدماه، فقلت له: لم تصنع هذا يا
رسول الله، وقد غفر الله لك ما تقدم من ذنبك وما تأخر؟! قال: " أفلا
أحب أن أكون عبداً شكوراً؟" (متفق عليه. هذا لفظ البخاري، ونحوه في
الصحيحين من رواية المغيرة بن شعبة).
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে (এত দীর্ঘ) কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা দুখানি
(ফুলে) ফেটে (দাগ পড়ে) যেত। একদা আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এরূপ
কাজ কেন করছেন? আল্লাহ তো আপনার আগের ও পিছের সমস্ত পাপ মোচন করে দিয়েছেন।’ তিনি
বললেন, ‘‘আমি কি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পছন্দ করব না?’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৮৩৭, ১১১৮, ১১১৯, ১১৪৮, ১১৬১, ১১৬২,
১১৬৮, মুসলিম ৭৩১, ২৮২০, তিরমিযী ৪১৮, নাসায়ী ১৬৪৮, ১৬৪৯, ১৬৫০, আবূ দাউদ ১২৬২, ১২৬৩,
১৬৪৯, ১৬৫০, ইবনু মাজাহ ১২২৬, ১২২৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০০
মুগীরাহ
ইবনু শু’বাহ থেকে বর্ণিতঃ
বুখারী-মুসলিমে
অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন হাদিস নম্বর - ৯৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০১
الخامس: عن عائشة رضي الله عنها أنها
قالت: " كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل العشر أحيا الليل،
وأيقظ أهله، وجد وشد المئزر" (متفق عليه).
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
‘যখন
(রমযানের শেষ) দশক শুরু হত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত
জাগতেন, নিজ পরিবারকে জাগাতেন, (ইবাদতে) খুবই চেষ্টা করতেন এবং (এর জন্য) তিনি
কোমর বেঁধে নিতেন।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২০২৪, মুসলিম ১১৭৪, তিরমিযী ৭৯৬, নাসায়ী
১৬৩৯, আবূ দাউদ ১৩৭৬, ইবনু মাজাহ ১৭৬৮, আহমাদ ২৩৬১১, ১২৩৮৫৬, ২৩৮৬৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০২
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم: " المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن
الضعيف وفي كل خير. احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجز. وإن أصابك شيء
فلا تقل: لو أني فعلت كان كذا وكذا، ولكن قل: قدر الله، وما شاء فعل؛ فإن لو
تفتح عمل الشيطان" ( رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(দেহমনে)
সবল মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে
কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে
সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা
বলো না যে, ‘যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত।’ বরং বলো, ‘আল্লাহর (লিখিত)
ভাগ্য এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন।’ কারণ, ‘যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার
খুলে দেয়।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৬৬৪, ইবনু মাজাহ ৭৯, ৪১৬৮, আহমাদ ৮৫৭৩,
৮৬১১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০৩
السابع: عنه أن رسول الله صلى الله عليه
وسلم قال: " حجبت النار بالشهوات، وحجبت الجنة بالمكاره"
(متفق عليه).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জাহান্নামকে মনোলোভা জিনিসসমূহ দ্বারা
ঘিরে দেওয়া হয়েছে এবং জান্নাতকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কষ্টসাধ্য কর্মসমূহ দ্বারা।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৮৭, তিরমিযী ২৫৬০, নাসায়ী ৩৭৬৩, আবূ
দাউদ ৪৭৪৪, আহমাদ ৭৪৭৭, ২৭৫১২, ৮৬৪৪, ৮৭২১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০৪
عن أبي عبد الله حذيفة بن اليمان، رضي الله
عنهما، قال: صليت مع النبي صلى الله عليه وسلم ذات ليلة، فافتتح البقرة، فقلت
يركع عند المائة، ثم مضى؛ فقلت يصلي بها في ركعة، فمضى؛ فقلت يركع بها، ثم افتتح
النساء؛ فقرأها، ثم افتتح آل عمران فقرأها، يقرأ مترسلاً إذا مر بآية فيها تسبيح
سبح، وإذا مر بسؤال سأل، وإذا مر بتعوذ تعوذ، ثم ركع فجعل يقول: " سبحان
ربي العظيم" فكان ركوعه نحواً من قيامه ثم قال: " سمع الله لمن
حمده، ربنا لك الحمد" ثم قام قياماً طويلاً قريباً مما ركع، ثم سجد فقال:
" سبحان ربي الأعلى" فكان سجوده قريباً من قيامه" (رواه مسلم).
আবূ
আব্দুল্লাহ হুযাইফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নামায পড়লাম। তিনি সূরা
বাক্বারাহ পড়তে আরম্ভ করলেন। অতঃপর আমি মনে মনে) বললাম যে, ‘তিনি একশো আয়াত পড়ে
রুকুতে যাবেন।’ কিন্তু তিনি (তা না ক’রে) ক্বিরাআত করতে থাকলেন। তারপর আমি (মনে
মনে) বললাম যে, ‘তিনি এই সূরা এক রাকাআতে সম্পন্ন করবেন; এটি পড়ে রুকূ করবেন।’
কিন্তু তিনি (সূরা) নিসা আরম্ভ করলেন। তিনি তা সম্পূর্ণ পড়লেন। তারপর তিনি (সূরা)
আলে ইমরান শুরু করলেন। সেটিও সম্পূর্ণ পড়লেন। (এত দীর্ঘ ক্বিরাআত সত্ত্বেও) তিনি
ধীর শান্তভাবে থেমে থেমে পড়ছিলেন।
যখন কোন এমন আয়াত এসে যেত, যাতে তাসবীহ (আল্লাহর পবিত্রতার বর্ণনা) আছে, তখন তিনি
(ক্বিরাআত বন্ধ করে) তাসবীহ (অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ) পড়তেন। আর যখন প্রার্থনা
সম্বলিত আয়াত এসে যেত, তখন প্রার্থনা করতেন। যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত আসত, তখন আশ্রয়
চাইতেন। অতঃপর তিনি রুকূ করলেন; তাতে তিনি বলতে লাগলেন, ‘সুবহানা রাব্বিয়াল
‘আযীম।’ সুতরাং তাঁর রুকুও তাঁর কিয়ামের (দাড়ানোর) মত দীর্ঘ হয়ে গেল! অতঃপর তিনি
‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বললেন ও (রুকু হতে উঠে) প্রায় রুকু সম দীর্ঘ কিয়াম
করলেন। অতঃপর তিনি সাজদাহ করলেন এবং (সাজদায়) তিনি ‘সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা’ (দীর্ঘ
সময় ধরে) পড়লেন ফলে তাঁর সাজদাহ তাঁর কিয়ামের সমান হয়ে গেল![১]
[১] মুসলিম ৭৭২, তিরমিযী ২৬২, নাসায়ী ১০০৮, ১০০৯, ১০৪৬,
১০৬৯, ১১৩৩, ১১৪৫, আবূ দাউদ ৮৭১, ৮৭৪, ইবনু মাজাহ ৮৮৮, ৮৯৭, ১০৫১, আহমাদ ২২৭২৯, ২২৭৫০,
২২৭৮৯, দারেমী ১৩০৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০৫
عن ابن مسعود رضي الله عنه قال: صليت مع
النبي صلى الله عليه وسلم ليلة، فأطال القيام حتى هممت بأمر سوء! قيل: وما
هممت به؟
قال: هممت أن أجلس وأدعه. (متفق عليه).
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আমি
এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নামায পড়লাম। অতঃপর তিনি
দীর্ঘ কিয়াম করলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি খারাপ কাজের ইচ্ছা করলাম।’ তাঁকে প্রশ্ন
করা হল যে, ‘আপনি কি ইচ্ছা করেছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, আমি
বসে যাই এবং (তাঁর অনুসরণ) ছেড়ে দই।’[1
[১] সহীহুল বুখারী ১১৩৫, মুসলিম ৭৭৩, ইবনু মাজাহ ১৪১৮,
১৩৩৮, ৩৭৫৭, ৩৯২৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০৬
عن أنس رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله
عليه وسلم قال: " يتبع الميت ثلاثة: أهله وماله وعمله؛ فيرجع اثنان
ويبقى واحد: يرجع أهله وماله، ويبقى عمله" (متفق عليه).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যায়ঃ তার
আত্মীয়-স্বজন, তার মাল ও তার আমল। অতঃপর দু’টি জিনিস ফিরে আসে এবং একটি জিনিস রয়ে
যায়। তার আত্মীয়স্বজন ও তার মাল ফিরে আসে এবং তার আমল (তার সঙ্গে) রয়ে যায়।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫১৪, মুসলিম ২৯৬০, তিরমিযী ২৩৭৯, নাসায়ী
১৯৩৭, আহমাদ ১১৬৭০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০৭
عن ابن مسعود رضي الله عنه قال: قال
النبي صلى الله عليه وسلم: " الجنة أقرب إلى أحدكم من شراك نعله، والنار
مثل ذلك" (رواه البخاري).
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাত তোমাদের জুতোর ফিতার চেয়েও অধিক
নিকটবর্তী এবং জাহান্নামও তদ্রূপ।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৮৮, আহমাদ ৩৫৮, ৩৯১৩, ৪২০৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০৮
عن أبي فراس ربيعة بن كعب الأسلمى خادم
رسول الله صلى الله عليه وسلم، ومن أهل الصفة رضي الله عنه قال: " كنت
أبيت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، فآتيه بوضوئه، وحاجته فقال:
"سلني" فقلت: أسألك مرافقتك في الجنة. فقال: { أوغير
ذلك؟" قلت: هو ذاك قال: " فأعني على نفسك بكثرة
السجود" (رواه مسلم).
আবূ
ফিরাস রাবীআহ ইবনু কা‘ব আসলামী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রাত কাটাতাম। আমি
তাঁর কাছে ওযূর পানি এবং প্রয়োজনীয় বস্তু এনে দিতাম। (একদিন তিনি খুশী হয়ে) বললেন,
‘‘তুমি আমার কাছে কিছু চাও।’’ আমি বললাম, ‘আমি আপনার কাছে জান্নাতে আপনার সাহচর্য
চাই।’ তিনি বললেন, ‘‘এ ছাড়া আর কিছু?’’ আমি বললাম, ‘বাস্ ওটাই।’ তিনি বললেন,
‘‘তাহলে তুমি, অধিকাধিক সিজদা করে (অর্থাৎ প্রচুর নফল নামায পড়ে) তোমার (এ আশা
পূরণের) জন্য আমাকে সাহায্য কর।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৮৯, তিরমিযী ৩৪১৬, নাসায়ী ১১৩৮, ১৬১৮,
আবূ দাউদ ১৩২০, ইবনু মাজাহ ৩৮৭৯, আহমাদ ১৬১৩৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১০৯
الثالث عشر: عن أبي عبد الله- ويقال:
أبو عبد الرحمن- ثوبان مولى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: سمعت رسول الله
صلى الله عليه وسلم يقول: " عليك بكثرة السجود، فإنك لن تسجد لله سجدة
إلا رفعك الله بها درجة، وحط عنك بها خطيئة". (رواه مسلم).
সাওবান
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘তুমি
অধিকাধিক সাজদাহ করাকে অভ্যাস বানিয়ে নাও। কারণ, তুমি যে কোন সাজদাহ করবে, আল্লাহ
তা‘আলা তার দ্বারায় তোমাকে মর্যাদায় এক ধাপ উঁচু করে দেবেন এবং তোমা থেকে একটি
গোনাহ মিটিয়ে দেবেন।’’[১]
[১] মুসলিম ৪৮৮, তিরমিযী ৩৮৮, নাসায়ী ১১৩৯, ইবনু মাজাহ
১৪২৩, আহমাদ ২১৮৬৫, ২১৯০৫, ২১৯৩৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১১০
عن أبي صفوان عبد الله بن بسر الأسلمي،
رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " خير الناس من
طال عمره وحسن عمله" (رواه الترمذي، وقال: حديث حسن.
"بسر": بضم الياء وبالسين المهملة).
আবূ
সাফওয়ান আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সর্বোত্তম মানুষ সেই ব্যক্তি যার বয়স
দীর্ঘ হয় এবং আমল সুন্দর হয়।’’[১]
[১] তিরমিযী ২৩২৯, আহমাদ ১৭২২৭, ১৭২৪৫, (তিরমিযী, হাসান)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১১১
عن أنس رضي الله عنه، قال: غاب عمي أنس
ابن النضر رضي الله عنه، عن قتال بدر، فقال: يارسول الله غبت عن أول قتال قاتلت
المشركين، لئن الله أشهدني قتال المشركين ليرين الله ما أصنع. فلما كان يوم أحد
انكشف المسلمون، فقال اللهم أعتذر إليك مما صنع هؤلاء - يعني أصحابه- وأبرأ إليك
مما صنع هؤلاء- يعني المشركين- ثم تقدم فاستقبله سعد بن معاذ، فقال: ياسعد بن
معاذ الجنة ورب الكعبة، إني أجد ريحها من دون أحد. قال سعد: فما استطعت يا
رسول الله ما صنع! قال أنس: فوجدنا به بضعاً وثمانين ضربة بالسيف، أو طعنة
برمح ، أو رمية بسهم، ووجدناه قد قتل ومثل به المشركون فما عرفه أحد إلا أخته
ببنانه.
قال أنس: كنا نرى أو نظن أن هذه الآيه نزلت فيه وفي أشباهه: {من المؤمنين
رجال صدقوا ما عهدوا الله عليه} ( الأحزاب: 23) إلى آخرها.
(متفق عليه).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন যে, আমার চাচা আনাস ইবনু নাদর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। (যার জন্য তিনি
খুবই দুঃখিত হয়েছিলেন।) অতঃপর তিনি একবার বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! প্রথম যে
যুদ্ধ আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করলেন তাতে আমি অনুপস্থিত থাকলাম। যদি (এরপর)
আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন, তাহলে আমি
কী করব আল্লাহ তা অবশ্যই দেখাবেন (অথবা দেখবেন)।’ অতঃপর যখন উহুদের দিন এল, তখন
মুসলিমরা (শুরুতে) ঘাঁটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরাজিত হলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ!
এরা অর্থাৎ সঙ্গীরা যা করল তার জন্য আমি তোমার নিকট ওযর পেশ করছি। আর ওরা অর্থাৎ
মুশরিকরা যা করল, তা থেকে আমি তোমার কাছে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি।’
অতঃপর তিনি আগে বাড়লেন এবং সামনে সা‘দ ইবনু মু‘আযকে পেলেন। তিনি বললেন, ‘হে সা‘দ
ইবনু মু‘আয! জান্নাত! কা‘বার প্রভুর কসম! আমি উহুদ অপেক্ষা নিকটতর জায়গা হতে তার
সুগন্ধ পাচ্ছি।’ (এই বলে তিনি শত্রুদের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং যুদ্ধ করতে করতে
শাহাদত বরণ করলেন।) সা‘দ বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে যা করল, আমি তা পারলাম না।’
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আমরা তাঁর দেহে আশীর চেয়ে বেশি তরবারি, বর্শা বা তীরের আঘাত
চিহ্ন পেলাম। আর আমরা তাকে এই অবস্থায় পেলাম যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং
মুশরিকরা তাঁর নাক-কান কেটে নিয়েছে। ফলে কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। কেবল তাঁর বোন
তাঁকে তাঁর আঙ্গুলের পাব দেখে চিনেছিল।’ আনাস (রাঃ) বলেন যে, আমরা ধারণা করতাম যে,
(সূরা আহযাবের ২৩নং) এই আয়াত তাঁর ও তাঁর মত লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
‘‘মু’মিনদের মধ্যে কিছু আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে, ওদের কেউ
কেউ নিজ কর্তব্য পূর্ণরূপে সমাধা করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। ওরা তাদের
লক্ষ্য পরিবর্তন করেনি।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৮০৫, ২৭০৩, ৪০৪৮, ৪৪৯৯, ৪৫০০, ৪৬১১,
৪৭৮৩, ৬৮৯৪, মুসলিম ১৯০৩, নাসায়ী ৪৭৫৫, ৪৭৫৬, ৪৭৫৭, আবূ দাউদ ৪৫৯৫, ইবনু মাজাহ ২৬৪৯,
আহমাদ ১১৮৯৩, ১২২৯৩, ১২৬০৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১১২
عن أبي مسعود عقبة بن عمرو الأنصاري البدري
رضي الله عنه قال: لما نزلت آيه الصدقة كنا نحامل على ظهورنا. فجاء رجل فتصدق
بشيء كثير فقالوا: مراءٍ، وجاء رجل آخر فتصدق بصاع فقالوا: إن الله لغني عن
صاع هذا! فنزلت { الذين يلمزون المطوعين من المؤمنين في الصدقات والذين لا
يجدون إلا جهدهم} الآية (التوبة:79). (متفق عليه ).
আবূ
মাসউদ উক্ববাহ ইবনু ‘আমর আনসারী বাদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
সাদকার আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন (সাদকা করার জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) আমরা নিজের
পিঠে বোঝা বহন করতাম (অর্থাৎ মুটে-মজুরের কাজ করতাম)। অতঃপর এক ব্যক্তি এল এবং
প্রচুর জিনিস সাদকাহ করল। মুনাফিকরা বলল, ‘এই ব্যক্তি রিয়াকার (লোককে দেখানোর জন্য
দান করছে।)’ আর এক ব্যক্তি এল এবং সে এক সা’ (আড়াই কিলো) জিনিস দান করল। তারা বলল,
‘এ (ক্ষুদ্র) এক সা’ দানের আল্লাহ মুখাপেক্ষী নন।’ অতঃপর এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ
‘‘বিশ্বাসীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা সাদকা দান করে এবং যারা নিজ পরিশ্রম
ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে এবং উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে
উপহাস করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪১৫, ১৪১৬, ২২৭৩, ৪৬৬৮, ৪৬৬৯, মুসলিম
১০১৮, নাসায়ী ২৫২৯, ২৫৩০, ইবনু মাজাহ ৪১৫৫, (সূরা তাওবাহ ৭৯, বুখারী-মুসলিম)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১১৩
عن سعيد بن عبد العزيز، عن ربيعة بن
يزيد، عن أبي إدريس الخولاني، عن أبي ذر جندب بن جنادة، رضي الله عنه، عن النبي
صلى الله عليه وسلم فيما يروى عن الله تبارك وتعالى أنه قال: " ياعبادي
إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرماً فلا تظالموا، يا عبادي كلكم ضال إلا
من هديته؛ فاستهدوني أهدكم، يا عبادي كلكم جائع إلا من أطعمته؛ فاستطعموني
أطعمكم،يا عبادي كلكم عارٍ إلا من كسوته، فاستكسوني أكسكم، يا عبادي إنكم تخطئون
بالليل والنهار وأنا أغفر الذنوب جميعا، فاستغفروني أغفرلكم، ياعبادي إنكم لن
تبلغوا ضري فتضروني، ولن تبلغوا نفعي فتنفعوني، يَا عِبَادي ، لَوْ أنَّ
أوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أتْقَى قَلْبِ
رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذلِكَ في مُلكي شيئاً . يَا عِبَادي ، لَوْ
أنَّ أوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أفْجَرِ
قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مَا نَقَصَ ذلِكَ من مُلكي شيئاً، يا عبادي لو أن أولكم
وآخركم، وإنسكم وجنكم قاموا في صعيد واحد، فسألوني فأعطيت كل إنسان مسألته، ما نقص
ذلك مما عندي إلا كما ينقص المخيط إذا أدخل البحر، يا عبادي إنما هي أعمالكم
أحصيها لكم، ثم أوفيكم إياها، فمن وجد خيراً فليحمد الله، ومن وجد غير ذلك فلا
يلومن إلا نفسه". قال سعيد: كان أبو إدريس إذا حدث بهذا الحديث جثا على
ركبتيه. رواه مسلم.
আবূ
যার্র জুন্দুব ইবনু জুনাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুমহান প্রভু হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি
(আল্লাহ) বলেন, ‘‘হে আমার বান্দারা! আমি অত্যাচারকে আমার নিজের জন্য হারাম করে
দিয়েছি এবং আমি তা তোমাদের মাঝেও হারাম করলাম। সুতরাং তোমরাও একে অপরের প্রতি
অত্যাচার করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট; কিন্তু সে নয় যাকে আমি
সঠিক পথ দেখিয়েছি। অতএব তোমরা আমার নিকট সঠিক পথ চাও আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাব।
হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত; কিন্তু সে নয় যাকে আমি খাবার দিই। সুতরাং
তোমরা আমার কাছে খাবার চাও, আমি তোমাদেরকে খাবার দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা
সকলেই বস্ত্রহীন; কিন্তু সে নয় যাকে আমি বস্ত্র দান করেছি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে
বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা দিন-রাত পাপ
করে থাক, আর আমি সমস্ত পাপ ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা
কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনো আমার অপকার করতে
পারবে না এবং কখনো আমার উপকারও করতে পারবে না।
হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ মানুষ ও জ্বিন সকলেই তোমাদের মধ্যে
সবচেয়ে বড় একজন পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হৃদয়বান হয়ে যায়, তাহলে এটা আমার
রাজত্বের কোন কিছু বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও
শেষ মানুষ ও জ্বিন সকলেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় একজন পাপীর হৃদয়ের মত হৃদয়ের
অধিকারী হয়ে যায়, তাহলে এটা আমার রাজত্বের কোন কিছুই কমাতে পারবে না। হে আমার
বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ তোমাদের মানুষ ও জ্বিন সকলেই একটি খোলা ময়দানে
একত্রিত হয়ে আমার কাছে প্রার্থনা করে, আর আমি তাদের প্রত্যেককে তার প্রার্থিত
জিনিস দান করি, তাহলে (এ দান) আমার কাছে যে ভান্ডার আছে, তা হতে ততটাই কম করতে
পারবে, যতটা সূঁচ কোন সমুদ্রে ডুবালে তার পানি কমিয়ে থাকে। হে আমার বান্দারা! আমি
তোমাদের কর্মসমূহ তোমাদের জন্য গুণে রাখছি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তার পূর্ণ বিনিময়
দেব। সুতরাং যে কল্যাণ পাবে, সে আল্লাহর প্রশংসা করুক। আর যে ব্যক্তি অন্য কিছু
(অর্থাৎ অকল্যাণ) পাবে, সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে।’’
(হাদীসের একজন বর্ণনাকারী) সাঈদ বলেন, আবূ ইদরীস (এই হাদীসের অন্য একজন
বর্ণনাকারী) যখন এই হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন হাঁটু গেড়ে বসে যেতেন।[১]
[১] মুসলিম ২৫৭৭, ২৪৯৫, ইবনু মাজাহ ৪২৫৭, আহমাদ ২০৮৬০,
২০৯১১, ২১০৩০, দারেমী ২৭৮৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১২
শেষ বয়সে অধিক পরিমাণে পুণ্য
করার প্রতি উৎসাহ দান
আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন
বলবেন,
﴿ أَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ ﴾ [فاطر: ٣٧]
অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে এতো দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে
চাইলে উপদেশ গ্রহণ করতে পারত? তোমাদের নিকট তো সতর্ককারীও এসেছিল।” (সূরা ফাত্বির
৩৭ আয়াত)
ইবনু আব্বাস ও সত্যানুসন্ধানী আলেমগণ বলেন, আয়াতের অর্থ এই যে, আমরা কি তোমাদেরকে
৬০ বছর বয়স দিইনি? পরবর্তী হাদীসটি এই অর্থের কথা সমর্থন করে। কেউ বলেন যে, এর
অর্থ ১৮ বছর। আর কিছু লোক ৪০ বছর বলেন। এটি হাসান (বাসরী) কালবী ও মাসরুকের মত।
বরং এ কথা ইবনু আব্বাস থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা বলেন যে, যখন কোনো মদ্বীনাবাসী
চল্লিশ বছর বয়সে পদার্পণ করেন, তখন তিনি নিজেকে ইবাদতের জন্য মুক্ত করেন। কিছু লোক
এর অর্থ পরিণত বয়স করেছেন। আর আল্লাহর বাণীতে উক্ত ‘সতর্ককারী’ বলতে ইবনু আব্বাস
(রাঃ) ও বেশীরভাগ আলেমের মতে স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কিছু
লোকের নিকট সতর্ককারী হল বার্ধক্য। এটা ইকরিমাহ্, ইবনু ‘উয়াইনাহ ও অন্যান্যদের মত।
১১৪
وأما الأحاديث فالأول: عن أبي هريرة رضي
الله عنه، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " أعذر الله إلى امرئ أخر
أجله حتى بلغ ستين سنة" (رواه البخاري).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির জন্য কোন ওজর
পেশ করার অবকাশ রাখেন না (অর্থাৎ ওজর গ্রহণ করবেন না), যার মৃত্যুকে তিনি এত
পিছিয়ে দিলেন যে, সে ৬০ বছর বয়সে পৌঁছল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪১৯, আহমাদ ৭৬৫৬, ৮০৬৩, ৯১২৮।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১১৫
عن ابن عباس، رضي الله عنهما، قال: كان
عمر رضي الله عنه يدخلني مع أشياخ بدر، فكأن بعضهم وجد في نفسه فقال: لم يدخل
هذا معنا ولنا أبناء مثله!؟ فقال عمر: إنه من حيث علمتم! فدعاني ذات يوم
فأدخلني معهم، فما رأيت أنه دعانى يومئذ إلا ليريهم قال: ما تقولون في قول الله
تعالى: {إذا جاء نصر الله والفتح؟) (النصر:1) فقال بعضهم:
أمرنا نحمد الله ونستغفره إذا نصرنا وفتح علينا. وسكت بعضهم فلم يقل شيئاً.
فقال لي: أكذلك تقول يا ابن عباس؟ فقلت: لا. قال فما تقول؟ قلت: هو
أجل رسول الله صلى الله عليه وسلم، أعلمه له قال: {إذاجاء نصر الله والفتح}
وذلك علامة أجلك {فسبح بحمد ربك واستغفره إنه كان تواباً} (الفتح:
3) فقال عمر رضي الله عنه: ما أعلم منها إلا ما تقول. (رواه
البخاري).
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উমার
(রাঃ) আমাকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে (তাঁর সভায়) প্রবেশ করাতেন। তাঁদের
মধ্যে কিছু লোক যেন মনে মনে ক্ষুণ্ণ হলেন। অতএব বললেন, ‘এ আমাদের সঙ্গে কেন প্রবেশ
করছে? এর মত (সমবয়স্ক) ছেলে তো আমাদেরও আছে।’ (এ কথা শুনে) উমার (রাঃ) বললেন, ‘এ
কে, তা তোমরা জান।’ সুতরাং তিনি একদিন আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে তাঁদের সঙ্গে (সভায়)
প্রবেশ করালেন। আমার ধারণা ছিল যে, এদিন আমাকে ডাকার উদ্দেশ্য হল, তাদেরকে আমার
মর্যাদা দেখানো। তিনি (পরীক্ষাস্বরূপ সভার লোককে) বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর এই কথা
‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় উপস্থিত হবে।’’ (সূরা নাসর: ১ আয়াত) এর ব্যাখ্যার
ব্যাপারে কী বলছ?’ কিছু লোক বললেন, ‘আমাদেরকে এতে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, যখন আল্লাহ
আমাদেরকে সাহায্য ও বিজয় দান করবেন, তখন যেন আমরা তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁর কাছে
ক্ষমা চাই।’ আর কিছু লোক নিরুত্তর থাকলেন; তাঁরা কিছুই বললেন না।
(ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,) অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ‘হে ইবনু আব্বাস! তুমিও কি এ
কথাই বলছ?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি (এর ব্যাখ্যা) কী বলছ?’ আমি
বললাম, ‘তা হল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু সংবাদ, যা
আল্লাহ তাঁকে জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় সমাগত হবে।’’
আর সেটা হল তোমার মৃত্যুর পূর্বলক্ষণ। ‘‘তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাঁর
পবিত্রতা বর্ণনা কর ও তাঁর কাছে সবীয় ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই তিনি তওবা
গ্রহণকারী।’’ (সূরা নাসর: ৩ আয়াত) অতঃপর উমার (রাঃ) বললেন, এর অর্থ আমি তাই জানি,
যা তুমি বললে।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৯৭০, ৩৬২৭, ৪২৯৪, ৪৪৩০, ৪৯৬৯, তিরমিযী
৩৩৬২, আহমাদ ৩১১৭, ৩৩৪৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১১৬
عن عائشة رضي الله عنها قالت: ما صلى
رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة بعد أن نزلت عليه { إذا جاء نصر الله والفتح}
إلا يقول فيها: " سبحانك ربنا وبحمدك، اللهم اغفر لي" (متفق
عليه).
وفي رواية في الصحيحين" عنها: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكثر أن
يقول في ركوعه وسجوده: "سبحانك اللهم ربنا وبحمدك، اللهم اغفر لي"
يتأول القرآن.
وفي رواية لمسلم: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكثر أن يقول قبل أن يموت:
"سبحانك اللهم وبحمدك، أستغفرك وأتوب إليك". قالت عائشة: قلت:
يا رسول الله ما هذه الكلمات التي أراك أحدثتها تقولها؟ قال: "جعلت لي
علامة في أمتي إذا رأيتها قلتها {إذا جاء نصر الله والفتح} إلى آخر
السورة".
وفي رواية له: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكثر من قول: "سبحان
الله وبحمده، أستغفر الله وأتوب إليه". قالت: قلت: يا رسول الله!
أراك تكثر من قول: سبحان الله وبحمده، أستغفر الله وأتوب إليه؟ فقال:
"أخبرني ربي أني سأرى علامة في أمتي فإذا رأيتها أكثرت من قول: سبحان
الله وبحمده، أستغفر الله وأتوب إليه، فقد رأيتها: {إذا جاء نصر الله
والفتح} فتح مكة، {ورأيت الناس يدخلون في دين الله أفواجاً، فسبح بحمد ربك
واستغفره إنه كان تواباً}.
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
‘ইযা
জা-আ নাসরুল্লাহি অলফাত্হ’ অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাযে অবশ্যই এই (দো‘আ) পড়তেন ‘সুবহানাকা রাব্বানা
অবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী’ (অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আমরা তোমার প্রশংসায়
তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহায়নের তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর রুকু ও সাজদায় অধিকাধিক ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাববানা অবিহামদিকা
আল্লাহুম্মাগফিরলী’ পড়তেন। তিনি কুরআনের হুকুম তামিল করতেন। অর্থাৎ এই দো‘আ পড়ে
তিনি কুরআনে বর্ণিত ‘‘(হে নবী) তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা
কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও।’’ আল্লাহর এই আদেশ পালন করতেন।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর
পূর্বে অধিক পরিমাণে (এই দো‘আ) পড়তেন, ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা অবিহামদিকা
আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলায়ক।’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি বললাম, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! এই শব্দগুলো কী, যেগুলোকে আমি আপনাকে নতুন করে পড়তে দেখছি?’ তিনি
বললেন, ‘‘আমার জন্য আমার উম্মতের মধ্যে একটি চিহ্ন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, যখন
আমি তা দেখব তখন এটি পড়ব। (চিহ্নটি হল) ‘ইযা জা-আ নাসরুল্লাহি ওয়াল-ফাতহ---- শেষ
সূরা পর্যন্ত।’’
মুসলিমের আর একটি বর্ণনায় আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’ (দো‘আটি) বেশী বেশী
পড়তেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে
বেশী বেশী ‘‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’’ (দো‘আটি)
পড়তে দেখছি (কী ব্যাপার)?’ তিনি বললেন, ‘‘আমার প্রভু আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমি
শীঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে একটি চিহ্ন দেখব। সুতরাং আমি যখন তা দেখব, তখন
‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’ (দো‘আটি) বেশী বেশী
পড়ব।
এখন আমি তা দেখে নিয়েছি, ‘ইযা জা-আ নাসরুল্লাহি অলফাত্হ।’ যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য
ও বিজয়। অর্থাৎ মক্কাবিজয়। আর তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে
দেখবে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে
ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তওবা গ্রহণকারী। [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৯৬৭, ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, ৪৯৬৮, মুসলিম
৪৮৪, নাসায়ী ১০৪৭, ১১২২, ১১২৩, আবূ দাউদ ৮৭৭, ৮৮৯, আহমাদ ২৩৫৪৩, ২৩৬৪৩, ২৩৭০৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১১৭
عن أنس رضي الله عنه قال: إن الله عز
وجل تابع الوحي على رسول الله صلى الله عليه وسلم قبل وفاته، حتى توفي أكثر ما كان
الوحي". (متفق عليه).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নিশ্চয়
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পূর্বে
(পূর্বাপেক্ষা) বেশী অহী নিরবচ্ছিন্নভাবে অবতীর্ণ করেছেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৯৮২, মুসলিম ৩০১৬, আহমাদ ১৩০৬৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১১৮
عن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم: "يبعث كل عبد على ما مات عليه". (رواه
مسلم).
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (কিয়ামতের দিন) প্রত্যেক ব্যক্তিকে ঐ
অবস্থায় উঠানো হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।[১]
[১] মুসলিম ২৮৭৮, আহমাদ ১৪১৩৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১৩
পুণ্যের পথ অনেক
১১৯
الأول: عن أبي ذر جندب بن جنادة رضي الله
عنها قال: قلت يا رسول الله، أي الأعمال أفضل؟ قال: "الإيمان بالله،
والجهاد في سبيله". قلت: أي الرقاب أفضل؟ قال: "أنفسها عند
أهلها، وأكثرها ثمناً" قلت: فإن لم أفعل؟ قال: "تعين صانعاً
أو تصنع لأخرق" قلت: يا رسول الله أرأيت إن ضعفت عن بعض العمل؟ قال:
تكف شرك عن الناس فإنها صدقة منك على نفسك". (متفق عليه).
আবূ
যার্র জুনদুব ইবনু জুনাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ আমল সর্বোত্তম?’
তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাঁর পথে জিহাদ করা।’’ আমি
বললাম, ‘কোন্ গোলাম (কৃতদাস) স্বাধীন করা সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘‘যে তার
মালিকের দৃষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও অধিক মূল্যবান।’’ আমি বললাম, ‘যদি আমি এ সব (কাজ)
করতে না পারি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কোন কারিগরের সহযোগিতা করবে অথবা অকর্মন্যের
কাজ করে দেবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, যদি আমি (এর) কিছু কাজে
অক্ষম হই (তাহলে কি করব)?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি মানুষের উপর থেকে তোমার মন্দকে
নিবৃত্ত কর। তাহলে তা হবে তোমার পক্ষ থেকে তোমার নিজের জন্য সাদকাহস্বরূপ।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৫১৮, মুসলিম ৮৪, নাসায়ী ৩১২৯, ইবনু
মাজাহ ২৫২৩, আহমাদ ২০৮২৪, ২০৯৩৮, ২০৯৮৯, দারেমী ২৭৩৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২০
عن أبي ذر أيضاً رضي الله عنه أن رسول الله
صلى الله عليه وسلم قال: " يصبح على كل سلامى من أحدكم صدقة، فكل تسبيحة
صدقة، وكل تحميدة صدقة، وكل تهليلة صدقة، وكل تكبيرة صدقة، وأمر بالمعروف صدقة،
ونهى عن المنكر صدقة، ويجزيء من ذلك ركعتان يركعهما من الضحى" (رواه
مسلم.
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক
(হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক
তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ বলা) সাদকাহ,
প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু
আকবার বলা) সাদকাহ এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ। এ
সব কাজের পরিবর্তে চাশতের দু’রাক্আত নামায যথেষ্ট হবে।’’[১]
[১] মুসলিম ৭২০, আবূ দাউদ ১২৮৫ / ১২৮৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২১
الثالث عنه قال: قال النبي صلى الله عليه
وسلم : " عرضت علي أعمال أمتي حسنها وسيئها، فوجدت في محاسن أعمالها
الأذى يماط عن الطريق، ووجدت في مساوىء أعمالها النخاعة تكون في المسجد لا
تدفن" (رواه مسلم).
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উম্মতের ভালমন্দ কর্ম আমার কাছে পেশ
করা হল। সুতরাং আমি তাদের ভাল কাজের মধ্যে ঐ কষ্টদায়ক জিনিসও পেলাম, যা রাস্তা
থেকে সরানো হয়। আর তাদের মন্দ কর্মসমূহের তালিকায় মসজিদে ঐ কফও পেলাম, যার উপর
মাটি চাপা দেওয়া হয়নি।’’[১]
[১] মুসলিম ৫৫৩, ইবনু মাজাহ ৩৬৮৩, আহমাদ ২১০৩৯, ২১০৫৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২২
و عنه: أن ناساً قالوا: يارسول الله،
ذهب أهل الدثور بالأجور، يصلون كما نصلي، ويصومون كما نصوم، ويتصدقون بفضول
أموالهم قال: " أو ليس قد جعل الله لكم ما تصدقون به: إن بكل تسبيحة
صدقة، وكل تكبيرة صدقة، وكل تحميدة صدقة، وكل تهليلة صدقة، وأمر بالمعروف صدقة،
ونهي عن المنكر صدقة وفي بضع أحدكم صدقة قالوا: يارسول الله أيأتى أحدنا شهوته،
ويكون له فيها أجر؟! قال: " أرأيتم لو وضعها في حرام أكان عليه
وزر؟ فكذلك إذا وضعها في الحلال كان له أجر" (رواه مسلم).
উক্ত
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
কিছু
সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা
নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের
চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা
সাদকাহ করছে।’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান
করেননি?
নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল
সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং
তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের
কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’
তিনি বললেন, ‘‘কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ
হবে? (নিশ্চয় হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা
নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।’’[১]
[১] মুসলিম ১০০৬, আবূ দাউদ ১৫০৪, ইবনু মাজাহ ৯২৭, আহমাদ
২০৯১৭, ২০৯৫৮, ২১০৩৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২৩
- عنه قال لي النبي صلى الله عليه وسلم:
" لا تحقرن من المعروف شيئاً ولو أن تلقى أخاك بوجهٍ طليق"
(رواه مسلم).
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি পুণ্যের কোনো
কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ
করতে পার।’’ (অর্থাৎ হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও পুণ্যের কাজ)।[১]
[১] মুসলিম ২৬২৬, তিরমিযী ১৮৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, দারেমী
২০৭৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২৪
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم : " كل سلامى من الناس عليه صدقة كل يوم تطلع
فيه الشمس: تعدل بين الأثنين صدقة، وتعين الرجل في دابته، فتحمله عليها، أو ترفع
له عليها متاعه صدقة، والكلمة الطيبة صدقة، وبكل خطوة تمشيها إلى الصلاة صدقة،
وتميط الأذى عن الطريق صدقة" (متفق عليه).
ورواه مسلم أيضاً من رواية عائشة رضي الله عنها قالت: قال رسول الله صلى الله
عليه وسلم: " إنه خلق كل إنسان من بني آدم على ستين وثلاثمائه مفصل، فمن
كبر الله، وحمد الله، وهلل الله، وسبح الله واستغفر الله، وعزل حجراً عن طريق
الناس أو شوكة أو عظماً عن طريق الناس، أو أمر بمعروف أو نهى عن المنكر، عدد
الستين والثلاثمائة، فإنه يمسي يومئذ وقد زحزح نفسه عن النار".
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন যাতে সূর্য উদয় হয় (অর্থাৎ
প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় একটি করে সাদকাহ রয়েছে।
(আর সাদকাহ শুধু মাল খরচ করাকেই বলে না; বরং) দু’জন মানুষের মধ্যে তোমার মীগোশতা
করে দেওয়াটাও সাদকাহ, কোন মানুষকে নিজ সওয়ারীর উপর বসানো অথবা তার উপর তার সামান
উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক
পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।’’
এটিকে ইমাম মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকেও বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আদম সন্তানের মধ্যে
প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ
থেকে প্রদেয় সাদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল-হামদু
লিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’
বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ
করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে
ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে
নিল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৯৮৯, ২৭০৭, ২৮৯১, মুসলিম ৯০০৯ আহমাদ
২৭৪০০, ৮১৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২৫
السابع: عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم
قال: " من غدا إلى المسجد أو راح، أعد الله له في الجنة نزلا كلما غدا
أو راح" (متفق عليه).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মসজিদে
যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহমানীর উপকরণ প্রস্তুত করেন। সকাল বা সন্ধা যখনই সে সেখানে
যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহমানীর উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৬২, মুসলিম ৪৬৭, ৬৬৯, আহমাদ ১০২৩০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২৬
الثامن: عنه قال رسول الله صلى الله عليه
وسلم: " يا نساء المسلمات لا تحقرن جارة لجارتها ولو فرسن شاة"
(متفق عليه).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে মুসলিম নারীগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন
প্রতিবেশিনীর (উপঢৌকনকে) অবশ্যই তুচ্ছ না ভাবে। যদিও তা ছাগলের খুর হয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০১৭, ২৫৬৬, মুসলিম ১০৩০, তিরমিযী ২১৩০,
আহমাদ ৭৫৩৭, ৮০০৫, ৯২৯৭, ১০০২৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২৭
التاسع: عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم
قال: " الإيمان بضع وسبعون، أو بضع وستون شعبة: فأفضلها قول لا إله
إلا الله، وأدناها إماطة الأذى عن الطريق، والحياء شعبة من الإيمان"
(متفق عليه).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘ঈমানের সত্তর অথবা ষাটের বেশী শাখা রয়েছে।
তার মধ্যে সর্বোত্তম (শাখা) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন (শাখা)
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস (পাথর কাঁটা ইত্যাদি) দূরীভূত করা। আর লজ্জা ঈমানের
একটি শাখা।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৯, মুসলিম ৩৫, তিরমিযী ২৬১৪, নাসায়ী
৫০০৪, ৫০০৫, ৫০০৬, আবূ দাউদ ৪৬৭৬, ইবনু মাজাহ ৫৭, আহমাদ ৯০৯৭, ৯৪১৭, ৯৪৫৫, ১০১৩৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২৮
العاشر: عنه أن رسول الله صلى الله عليه
وسلم قال: " بينما رجل يمشى بطريق اشتد عليه العطش، فوجد بئراً فنزل فيها
فشرب، ثم خرج فإذا كلب يلهث يأكل الثرى من العطش، فقال الرجل: لقد بلغ هذا الكلب
من العطش مثل الذي كان قد بلغ منى، فنزل البئر فملأ خفه ماء ثم أمسكه بفيه، حتى
رقي فسقى الكلب، فشكر الله له فغفر له" قالوا : يارسول الله إن لنا في
البهائم أجراً؟ فقال: في كل كبدٍ رطبة أجر" (متفق عليه).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘একদা এক ব্যক্তি পথ চলছিল। তাকে খুবই
পিপাসা লাগল। অতঃপর সে একটি কূপ পেল। সুতরাং সে তাতে নেমে পানি পান করল। অতঃপর বের
হয়ে দেখতে পেল যে, (ওখানেই) একটি কুকুর পিপাসার জ্বালায় জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে ও
কাদা চাটছে। লোকটি (মনে মনে) বলল, ‘পিপাসার তাড়নায় আমি যে পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম,
কুকুরটিও সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ অতএব সে কূপে নামল তারপর তার চামড়ার মোজায় পানি
ভর্তি করল। অতঃপর সে তা মুখে ধরে উপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ
তা‘আলা তার এই আমলকে কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’’
সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনেও কি
আমাদের সওয়াব হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে নেকী
রয়েছে।’’
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তার এই আমলকে কবুল করলেন। অতঃপর
তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।’’
বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কোন এক সময় একটি কুকুর একটি কূপের চারিপাশে
ঘোরা-ফিরা করছিল। পিপাসা তাকে মৃতপ্রায় করে তুলেছিল। (এই অবস্থায়) হঠাৎ বনী
ঈস্রাঈলের বেশ্যাদের মধ্যে এক বেশ্যা তাকে দেখতে পেল। অতঃপর সে তার চামড়ার মোজা
খুলে তা হতে (কূপ থেকে) পানি উঠিয়ে তাকে পান করাল। সুতরাং এই আমলের কারণে তাকে
ক্ষমা করা হল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৩৬৩, ১৭৪, ২৪৬৬, ৬০০৯, মুসলিম ২২৪৪,
আবূ দাউদ ২৫৫০, আহমাদ ৮৬৫৭, ১০৩২১, ১০৩৭৩, মুওয়াত্তা মালেক ১৭২৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১২৯
الحادي عشر: عنه عن النبي صلى الله عليه
وسلم قال: " لقد رأيت رجلا يتقلب في الجنة في شجرة قطعها من ظهر الطريق
كانت تؤذى المسلمين".(رواه مسلم).
وفي رواية: مر رجل بغصن شجرة على ظهر طريق فقال: والله لأنحين هذا عن
المسلمين لا يؤذيهم، فأدخل الجنة .
وفي رواية لهما: بينما رجل يمشى بطريق وجد غصن شوك على الطريق، فأخره فشكره
الله له، فغفر له .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘোরাফেরা করতে
দেখলাম। যে (পৃথিবীতে) রাস্তার মধ্য হতে একটি গাছ কেটে সরিয়ে দিয়েছিল, যেটি
মুসলিমদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫৪, ৭২১, ৬১৫, ২৪৭২, ২৬৮৯, ২৮২৯, ৫৭৩৩,
মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯, ১৯১৪, তিরমিযী ২২৫, ১০৬৩, ১৯৫৮, নাসায়ী ৫৪০, ৬৭১, আবূ দাউদ ৫২৪৫,
ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ৭১৮৫, ৭৬৮০, ৭৭৮২, ১৫১, ২৯৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩০
الثاني عشر: عنه قال: قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم: " من توضأ فأحسن الوضوء، ثم أتى الجمعة، فاستمع
وأنصت، غفر له ما بينه وبين الجمعة وزيادة ثلاثة أيام، ومن مس الحصا فقد
لغا" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযূ করল, অতঃপর
জুমআহ পড়তে এল এবং মনোযোগ সহকারে নীরব থেকে খুতবাহ শুনল, সে ব্যক্তির এই জুমআহ ও
(আগামী) জুমআর মধ্যেকার এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের (ছোট) পাপসমূহ মাফ করে দেওয়া
হল। আর যে ব্যক্তি (খুৎবাহ্ চলাকালীন সময়ে) কাঁকর স্পর্শ করল, সে অনর্থক কর্ম
করল।’’ (অর্থাৎ সে জুমআর সওয়াব বরবাদ করে দিল।)[১]
[১] মুসলিম ৫৮৭, তিরমিযী ৪৯৮, আবূ দাউদ ১০৫০,ইবনু মাজাহ
১০১০, আহমাদ ৯২০০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩১
الثالث عشر: عنه أن رسول الله صلى الله
عليه وسلم قال: " إذا توضأ العبد المسلم، أو المؤمن فغسل وجهه خرج من
وجهه كل خطيئة نظر إليها بعينيه مع الماء، أو آخر قطر الماء، فإذا غسل رجليه خرجت
كل خطيئة مشتها رجلاه مع الماء أو مع آخر قطر الماء حتى يخرج نقياً من
الذنوب" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুসলিম বা মু’মিন বান্দা যখন ওযূর
উদ্দেশ্যে তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন ওযূর পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে
প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দুই চক্ষুর দৃষ্টির মাধ্যমে করে ফেলেছিল।
অতঃপর যখন সে তার হাত দু’টিকে ধৌত করে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর
সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে উভয় হাত দ্বারা ধারণ করার মাধ্যমে করে
ফেলেছিল। অতঃপর যখন সে তার পা দুটিকে ধৌত করে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ
বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে, যা সে তার দু’পায়ে চলার মাধ্যমে করে
ফেলেছিল। শেষ অবধি সমস্ত গোনাহ থেকে সে পবিত্র হয়ে বের হয়ে আসে।’’[১]
[১] মুসলিম ২৪৪, তিরমিযী ২, আহমাদ ৭৯৬০,মুওয়াত্তা মালেক
৭১৮, দারেমী ৬৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩২
الرابع عشر: عنه عن رسول الله صلى الله
عليه وسلم قال: " الصلوات الخمس، والجمعة إلى الجمعة، ورمضان إلى رمضان
مكفرات لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআহ থেকে আর এক
জুমআহ এবং এক রমযান থেকে আর এক রমযান, এগুলো এর মধ্যকার (সংঘটিত সাগীরা) গোনাহ
মুছে ফেলে; যদি কাবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায় তাহলে (নতুবা নয়)।’’[১]
[১] মুসলিম ২৩৩, তিরমিযী ২১৪, ইবনু মাজাহ ১০৮৬, আহমাদ
৭০৮৯, ৮৪৯৮, ৮৯৪৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩৩
الخامس عشر: عنه قال رسول الله صلى الله
عليه وسلم: " ألا أدلكم على ما يمحو الله به الخطايا، ويرفع به
الدرجات؟" قالوا: بلى يا رسول الله، قال: " إسباغ الوضوء على
المكاره، وكثرة الخطا إلى المساجد، وانتظار الصلاة بعد الصلاة، فذلكم
الرباط" (رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ বলে দেব না, যার
দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পাপসমূহকে নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং মর্যাদা বর্ধন করেন?’’
সাহাবীগণ বললেন, ‘অবশ্যই বলুন, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘কষ্টের সময়
পূর্ণরূপে ওযূ করা, মসজিদের দিকে বেশী বেশী পদক্ষেপ করা (অর্থাৎ দূর থেকে আসা) এবং
এক নামাযের পর দ্বিতীয় নামাযের অপেক্ষা করা। সুতরাং এই হল (নেকী ও সওয়াবে) সীমান্ত
পাহারা দেওয়ার মত।’’[১]
[১] মুসলিম ২৫১, তিরমিযী ৫২, নাসায়ী ১৪৩, আহমাদ ৭১৬৮,
৭৬৭২, ৭৯৩৫, ৭৯৬১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩৪
السادس عشر: عن أبي موسى الأشعري رضي
الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " من صلى البردين
دخل الجنة" (متفق عليه).
আবূ
মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা
(অর্থাৎ ফজর ও আসরের) নামায পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৭৪, মুসলিম ৬৩৫, আহমাদ ১৬২৮৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩৫
لسابع عشر: عنه قال: قال رسول الله صلى
الله عليه وسلم : " إذا مرض العبد أو سافر كتب له مثل ما كان يعمل مقيماً
صحيحاً" (رواه البخاري).
আবূ
মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন বান্দা অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে, তখন
তার জন্য ঐ আমলের মতই (সওয়াব) লেখা হয়, যা সে গৃহে থেকে সুস্থ শরীরে সম্পাদন
করত।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৯৯৬, আবূ দাউদ ৩০৯১, আহমাদ ১৯১৮০,
১৯২৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩৬
الثامن عشر: عن جابر رضي الله عنه قال:
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " كل معروف صدقة" (رواه
البخاري، ورواه مسلم من رواية حذيفة رضي الله عنه).
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রত্যেক নেকীর কাজ সাদকাহস্বরূপ।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০২১, তিরমিযী ১১৭০, আহমাদ ১৪২৯৯, ১৪৪৬৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩৭
التاسع عشر: عنه قال: قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم: " ما من مسلم يغرس غرساً إلا كان ما أكل منه له
صدقة، وما سرق منه له صدقة، ولا يرزؤه أحد إلا كان له صدقة" (رواه مسلم.
) وفي رواية له: " فلا يغرس المسلم غرساً، فيأكل منه إنسان ولا دابة
ولا طير إلا كان له صدقة إلى يوم القيامة".
وفي رواية له: " لا يغرس مسلم غرساً، ولا يزرع زرعاً، فيأكل منه إنسان
ولا دابة ولا شىء إلا كانت له صدقة" وروياه جميعاً من رواية أنس رضي الله
عنه.
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে কোন মুসলিম কোন গাছ লাগায়, অতঃপর তা
থেকে যতটা খাওয়া হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয়, তা থেকে যতটুকু চুরি হয়, তা তার জন্য
সাদকাহ হয় এবং যে কোনো ব্যক্তি তার থেকে কিছু গ্রহণ করে, সেটাও তার জন্য সাদকাহ
হয়ে যায়।’’[১]
[১] মুসলিম ১৫৫২, আহমাদ ১৩৮৫৯, ১৪৭৭৯, দারেমী ২৬১০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩৮
থেকে
বর্ণিতঃ
বুখারী-মুসলিম
উভয়েই আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যাতে يَرْزَؤُهُ শব্দ আছে, যার অর্থ ‘কোনো
কিছু কমিয়ে ফেলে’।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৩২০, ৬০১২, মুসলিম ১৫৫২, তিরমিযী ১৩৮২,
আহমাদ ১২০৮৬, ১২৫৮৭, ১২৯৭৬, ১৩১৪১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৩৯
العشرون: عنه قال: أراد بنو سلمة أن
ينقلوا قرب المسجد فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال لهم: "
إنه قد بلغني أنكم تريدون أن تنتقلوا قرب المسجد؟" فقالوا: نعم يارسول
الله قد أردنا ذلك، فقال:"بني سلمة دياركم؛ تكتب آثاركم ، دياركم، تكتب
آثاركم" (رواه مسلم).
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে,
বনু সালেমাহ মসজিদের নিকটে স্থান পরিবর্তন করার ইচ্ছা করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এই সংবাদ পৌঁছল। সুতরাং তিনি তাদেরকে বললেন, ‘‘আমি খবর
পেয়েছি যে, তোমরা স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের নিকট আসার ইচ্ছা করছ?’’ তারা বলল,
‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এর ইচ্ছা করেছি।’ তিনি বললেন, ‘‘হে বনূ সালেমাহ!
তোমরা তোমাদের (বর্তমান) গৃহেই থাকো; তোমাদের পদচিহ্নসমূহ লেখা হবে। তোমরা আপন
গৃহেই থাকো; তোমাদের পদচিহ্নসমূহ লেখা হবে।’’ (মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় আছে,
‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি হবে।’’[১]
[১] মুসলিম ৬৬৫, আহমাদ ১৪১৫৬, ১৪৫৭৪, ১৪৭৭২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪০
ইমাম
বুখারী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ঐ
মর্মে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪১
الحادي والعشرون: عن أبي المنذر أبي بن
كعب رضي الله عنه قال: كان رجل لا أعلم رجلاً أبعد من المسجد منه، وكان لا تخطئه
صلاة فقيل له، أو فقلت له: لو اشتريت حماراً تركبه في الظلماء، وفي الرمضاء،
فقال: ما يسرني أن منزلي إلى جنب المسجد، إني أريد أن يكتب لي ممشاي إلى المسجد،
ورجوعي إذا رجعت إلى أهلي، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "قد جمع
الله لك ذلك كله" (رواه مسلم).
আবূল
মুনযির উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন যে, একটি লোক ছিল। আমি জানি না যে, অন্য কারো বাড়ি তার বাড়ির চেয়ে দূরে ছিল।
তা সত্ত্বেও তার কোনো নামায ছুটত না। অতঃপর তাকে বলা হল অথবা আমি (কা’ব) তাকে
বললাম যে, ‘তুমি যদি একটি গাধা কিনে আঁধারে ও ভীষণ রোদে তার উপর সওয়ার হয়ে আসতে,
(তাহলে তা তোমার পক্ষে ভাল হত?)’ সে বলল, ‘আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার বাড়ি
মসজিদ সংলগ্নে হোক। কারণ আমি তো এই চাই যে, (দূর থেকে) আমার পায়ে হেঁটে মসজিদ
যাওয়া এবং ওখান থেকেই পুনরায় বাড়ী ফিরা, সবকিছু যেন আমার নেকীর খাতায় লেখা যায়।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার কথা শুনে) বললেন, ‘‘আল্লাহ
তা‘আলা এ সমস্ত তোমার জন্য একত্র করে দিয়েছেন।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় তোমার জন্য সেই সওয়াবই রয়েছে, যার তুমি আশা
করেছ।’’[১]
[১] মুসলিম ৬৬৩, আবূ দাউদ ৫৫৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৩, আহমাদ
২০৭০৯, দারেমী ১২৮৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪২
الثاني والعشرون: عن أبي محمد عبد الله
بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:
"أربعون خصلة أعلاها منيحة العنز، ما من عامل يعمل بخصلة منها رجاء ثوابها
وتصديق موعودها إلا أدخله الله بها الجنة" (رواه البخاري).
আবূ
মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনু ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘চল্লিশটি সৎকর্ম আছে তার মধ্যে উচ্চতম হল,
দুধ পানের জন্য (কোন দরিদ্রকে) ছাগল সাময়িকভাবে দান করা। যে কোনো আমলকারী এর মধ্য
হতে যে কোন একটি সৎকর্মের উপর প্রতিদানের আশা করে ও তার প্রতিশ্রুত পুরস্কারকে
সত্য জেনে আমল করবে, তাকে আল্লাহ তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৬৩১, ইবনু মাজাহ ১৬৮৩, আহমাদ ৬৪৫২,
৬৭৯২, ৬৮১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪৩
الثالث والعشرون: عن عدي بن حاتم رضي
الله عنه قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: " اتقوا النار ولو
بشق تمرةٍ" (متفق عليه) .
وفي رواية لهما عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " ما منكم
من أحد إلا سيكلمه ربه ليس بينه وبينه ترجمان فينظر أيمن منه فلا يرى إلا ما قدم،
وينظر أشأم منه فلا يرى إلا ما قدم، ينظر بين يديه فلا يرى إلا النار تلقاء وجهه،
فاتقوا النار ولو بشق تمرة، فمن لم يجد فبكلمة طيبةٍ".
আদী
ইবনু হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা জাহান্নাম থেকে
বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়!’’ (বুখারী-মুসলিম)
উক্ত আদী হতে বুখারী-মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক কথা বলবেন; তার
ও তাঁর মাঝে কোনো আনুবাদক থাকবে না। (সেখানে) সে তার ডানদিকে তাকাবে, সুতরাং
সেদিকে তা-ই দেখতে পাবে যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছিল এবং বামদিকে তাকাবে, সুতরাং
সেদিকেও নিজের কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর সামনে তাকাবে, সুতরাং তার চেহারার সামনে
জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো
সাদকাহ করে হয়। আর যে ব্যক্তি এরও সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভাল কথা বলে
বাঁচে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০২৩, ১৪১৩, ৩৫১৫, ৬৫৩৯, ৬৫৬৩, ৭৪৪৩,
৭৫২২, মুসলিম ১০১৬, নাসায়ী ২৫৫২, ২৫৫৩, আহমাদ ১৭৭৮২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪৪
الرابع والعشرون: عن أنس رضي الله عنه
قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "إن الله ليرضى عن العبد أن
يأكل الأكلة فيحمده عليها ، أو يشرب الشربة فيحمده عليها" (رواه
مسلم).
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার প্রতি
সন্তুষ্ট হন, যে খাবার খায়, অতঃপর তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা পানি পান করে,
অতঃপর তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে।’’[১]
[১] মুসলিম ২৭৩৪, তিরমিযী ১৮১৬, আহমাদ ১১৫৬২, ১১৭৫৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪৫
الخامس والعشرون: عن أبي موس رضي الله
عنه ، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: "على كل مسلم صدقة" قال
: أرأيت إن لم يجد؟ قال: أرأيت إن لم يستطع؟ قال: "يعين ذا
الحاجة الملهوف" قال: أرأيت إن لم يستطع؟ قال: "يأمر بالمعروف
أو الخير" قال : أرأيت إن لم يفعل؟ قال: يمسك عن الشر فإنها
صدقة" (متفق عليه) .
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রত্যেক মুসলিমর উপর সাদকাহ করা জরুরী।’’
আবূ মূসা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যদি সে সাদকাহ করার মত কিছু না পায় তাহলে?’ তিনি
বললেন, ‘‘সে তার হাত দ্বারা কাজ করে (অর্থ উপার্জন করবে) অতঃপর তা থেকে সে নিজে
উপকৃত হবে এবং সাদকাও করবে।’’ পুনরায় আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, ‘যদি সে তাও না পারে?’
তিনি বললেন, ‘‘যে কোন অভাবী বিপন্ন মানুষের সাহায্য করবে।’’ আবূ মূসা (রাঃ) বললেন,
‘যদি সে তাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে মানুষকে ভাল কাজের নির্দেশ দেবে।’’ আবূ
মূসা (রাঃ) বললেন, ‘যদি সে এটাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে (অপরের) ক্ষতি করা
থেকে বিরত থাকবে। কারণ, সেটাও হল সাদকাহস্বরূপ।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৪৫, ৬০২২, মুসলিম ১০০৮, নাসায়ী ২৫৩৮,
আহমাদ ১৯০৩৭, ১৯১৮৭, দারেমী ২৭৪৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১৪
ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ طه ١ مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ ٢ ﴾ [طه: ١، ٢]
অর্থাৎ “ত্বা-হা-। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি।”
(সূরা ত্বাহা ১-২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ﴾ [البقرة: ١٨٥]
অর্থাৎ “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কঠিনতা তাঁর কাম্য
নয়।” (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫ আয়াত)
১৪৬
- وعن عائشة رضي الله عنها أن النبي صلى
الله عليه وسلم دخل عليها وعندها امرأة قال: من هذه؟ قالت: هذه فلانة تذكر
من صلاتها قال: " مه عليكم بما تطيقون، فوالله لا يمل الله حتى
تملوا" وكان أحب الدين إليه ما داوم صاحبه عليه. (متفق عليه) .
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
একদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে
(বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা,
যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম!
আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট
প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।[১]
1] সহীহুল বুখারী ৪৩, ১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১,
৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, ৭৮৩, ৭৮৫, ১১৫৬, ২৮১৮, নাসায়ী ৭৬২,
১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪,
ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪৭
وعن أنس رضي الله عنه قال: جاء ثلاثة رهط
إلى بيوت أزواج النبي صلى الله عليه وسلم، يسألون عن عبادة النبي صلى الله عليه
وسلم، فلما أخبروا كأنهم تقالوها وقالوا: أين نحن من النبي صلى الله عليه وسلم
قد غفر الله له تقدم من ذنبه وما تأخر. قال أحدهم: أما أنا فأصلي الليل أبداً
وقال الآخر: وأنا أصوم الدهر أبداً ولا أفطر، وقال الآخر: وأنا أعتزل النساء
فلا أتزوج أبداً، فجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم إليهم فقال: "أنتم
الذين قلتم كذا وكذا؟! أما والله إني لأخشاكم لله وأتقاكم له لكني أصوم وأفطر،
وأصلي وأرقد، وأتزوج النساء، فمن رغب عن سنتي فليس مني" (متفق
عليه) .
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিন
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে
এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ
মোচন করে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)।’ সুতরাং
তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।’
দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো রোযা ছাড়ব না।’ তৃতীয়জন বললেন,
‘আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো!
আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে
বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও
যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার
দলভুক্ত নয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ১৪০১, নাসায়ী ৩২১৭, আহমাদ
১৩১২২, ১৩০১৬, ১৩৬৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪৮
وعن ابن مسعود رضي الله عنه أن النبي صلى
الله عليه وسلم قال: "هلك المتنطعون" قالها ثلاثاً "
(رواه مسلم)
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দ্বীনের ব্যাপারে নিজের পক্ষ থেকে কঠোরতা
অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেল। (অথবা ধ্বংস হোক।)’’ এ কথা তিনি তিনবার বললেন।[১]
[১] মুসলিম ২৬৭০, আবূ দাউদ ৪৬০৮, আহমাদ ৩৬৪৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৪৯
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى
الله عليه وسلم قال: " إن الدين يسر، ولن يشاد الدين إلا غلبه، فسددوا
وقاربوا وأبشروا، واستعينوا بالغدوة والروحة وشيء من الدلجة" (رواه
البخاري).
وفي رواية له : سددوا وقاربوا واغدوا وروحوا، وشيء من الدلجة، القصد القصد
تبلغوا .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি অহেতুক
দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তার উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল
ছেড়ে দিবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা
সুসংবাদ নাও। আর সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য
নাও।’’[১]
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর,
সকাল-সন্ধ্যায় চল (ইবাদত কর) এবং রাতের কিছু অংশে। আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন
কর, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তাহলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে।’’
অর্থাৎ অবসর সময়ে উদ্যমশীল মনে আল্লাহর ইবাদত কর; যে সময়ে ইবাদত করে তৃপ্তি পাওয়া
যায় এবং তা মনে ভারী বা বিরক্তিকর না হয়। আর তাহলেই অভীষ্টলাভ করতে পারবে। যেমন
বুদ্ধিমান মুসাফির উক্ত সময়ে সফর করে এবং যথাসময়ে সে ও তার সওয়ারী বিশ্রাম গ্রহণ
করে। (না ধীরে চলে এবং না তাড়াহুড়া করে।) ফলে সে বিনা কষ্টে যথা সময়ে গন্তব্যস্থলে
পৌঁছে যায়।
[১] সহীহুল বুখারী ৩৯, ৫৬৭৩, ৬৪৬৩, মুসলিম ২৮১৬, নাসয়ী
৫০৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২০১, আহমাদ ৭১৬২, ৭৪৩০, ৭৫৩৩, ২৭৪৭০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫০
وعن أنس رضي الله عنه قال: دخل النبي صلى
الله عليه وسلم المسجد فإذا حبل ممدود بين الساريتين فقال: "ما هذا
الحبل" قالوا : هذا حبل لزينب، فإذا فترت تعلقت به. فقال النبي صلى
الله عليه وسلم " حلوه، ليصل أحدكم نشاطه فإذا فتر فليرقد"
(متفق عليه) .
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। হঠাৎ দেখলেন যে, একটি
দড়ি দুই স্তম্ভের মাঝে লম্বা করে বাঁধা রয়েছে। তারপর তিনি বললেন, ‘‘এই দড়িটা কি
(জন্য)’’? লোকেরা বলল, ‘এটি যয়নাবের দড়ি। যখন তিনি (নামায পড়তে পড়তে) ক্লান্ত হয়ে
পড়েন, তখন এটার সঙ্গে ঝুলে যান!’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘এটিকে খুলে ফেল। তোমাদের মধ্যে (যে নামায পড়বে) তার উচিত, সে যেন মনে স্ফূর্তি
থাকাকালে নামায পড়ে। তারপর সে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন সে যেন শুয়ে যায়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১১৫০, মুসলিম ৭৮৪, নাসায়ী ১৬৪৩, আবূ
দাউদ ১৩১২, ইবনু মাজাহ ১৩৭১, আহমাদ ১১৫৭৫, ১২৫০৪, ১২৭০৮, ১৩২৭৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫১
وعن عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى
الله عليه وسلم قال: " إذا نعس أحدكم وهو يصلي، فليرقد حتى يذهب عنه
النوم، فإن أحدكم إذا صلى وهو ناعس لا يدري لعله يذهب ويستغفر فيسب نفسه"
(متفق عليه) .
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন নামায পড়া অবস্থায় তোমাদের কারো তন্দ্রা
আসবে, তখন তাকে ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত, যতক্ষণ না তার ঘুম চলে যাবে। কারণ, তোমাদের কেউ
যদি তন্দ্রা অবস্থায় নামায পড়ে, তাহলে সে অনুভব করতে পারবে না যে, সম্ভবতঃ সে
ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে প্রকৃতপক্ষে নিজেকে গালি দিচ্ছে।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২১২, মুসলিম ৪৮৬, তিরমিযী ৩৫৫, নাসায়ী
১৬২, আবূ দাউদ ১৩১০, ইবনু মাজাহ ১৩৭০, আহমাদ ২৩৭৬৬, ২৫১৩৩, ২৫১৭১, ২৫৬৯৯,মুওয়াত্তা
মালেক -২৫৯, দারেমী ১৩৮৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫২
وعن أبي عبد الله جابر بن سمرة رضي الله
عنهما قال: "كنت أصلى مع النبي صلى الله عليه وسلم الصلوات، فكانت صلاته
قصداً وخطبته قصداً" (رواه مسلم).
আবূ
আব্দুল্লাহ জাবের ইবনু সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নামায পড়তাম। সুতরাং তাঁর নামাযও
মধ্যম হত এবং তাঁর খুৎবাও মধ্যম হত।’[১]
[১] মুসলিম ৮৬৬, তিরমিযী ৫০৭, নাসায়ী ১৪১৫, ১৪১৭, ১৪১৮,
১৪৩৫, ১৫৮২, ১৫৮৩, ১৫৮৪, ১৬০০, ১৬০২, আবূ দাউদ ১০৯৩, ১০৯৪, ১১০১, ১২৯৩, ইবনু মাজাহ
১১০৬, ১১১৬, আহমাদ ২০৩০৬, ২০৩১৬, ম২০৩২২, ২০৩৩৫, দারেমী ১৫৫৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৩
وعن أبي جحيفة وهب بن عبد الله رضي الله
عنه قال: آخى النبي صلى الله عليه وسلم بين سلمان وأبى الدرداء ، فزار سلمان أبا
الدرداء، فرأى أم الدرداء متبذلة فقال: ما شأنك قالت: أخوك أبو الدرداء ليس له
حاجة في الدنيا، فجاء أبو الدراداء فصنع له طعاماً، فقال له: كل فإنى صائم،
قال: ما أنا بآكل حتى تأكل، فأكل، فلما كان الليل ذهب أبو الدرداء يقوم فقال
له: نم، فنام، ثم ذهب يقوم فقال له : نم، فلما كان من آخر الليل قال سلمان:
قم الآن: فصليا جميعاً، فقال له سلمان: إن لربك عليك حقاً، وإن لنفسك عليك
حقاً، ولأهلك عليك حقاً، فأعط كل ذى حق حقه، فأتى النبي صلى الله عليه وسلم فذكر
ذلك له، فقال النبي صلى الله عليه وسلم "صدق سلمان" (رواه
البخاري).
আবূ
জুহাইফা ওয়াহব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হিজরতের পর মদ্বীনায়) সালমান ও আবূ দারদার মাঝে
ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করলেন। অতঃপর সালমান (একদিন তাঁর দ্বীনী ভাই) আবূ দারদার সঙ্গে
সাক্ষাৎ করতে (তাঁর বাড়ী) গেলেন। তিনি (আবূ দারদার স্ত্রী উম্মে দারদাকে দেখলেন,
তিনি মলিন কাপড় পরে আছেন। সুতরাং তিনি তাঁকে বললেন, ‘তোমার এ অবস্থা কেন?’ তিনি
বললেন, ‘তোমার ভাই আবূ দারদার দুনিয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই।’ (ইতোমধ্যে) আবূ দারদাও এসে
গেলেন এবং তিনি তাঁর জন্য খাবার তৈরী করলেন। অতঃপর তাঁকে বললেন, ‘তুমি খাও। কেননা,
আমি রোযা রেখেছি।’ তিনি বললেন, ‘যতক্ষণ না তুমি খাবে, আমি খাব না।’ সুতরাং আবূ
দারদাও (নফল রোযা ভেঙ্গে দিয়ে তাঁর সঙ্গে) খেলেন।
অতঃপর যখন রাত এল, তখন (শুরু রাতেই) আবূ দারদা নফল নামায পড়তে গেলেন। সালমান তাঁকে
বললেন, ‘(এখন) শুয়ে যাও।’ সুতরাং তিনি শুয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আবার তিনি (বিছানা
থেকে) উঠে নফল নামায পড়তে গেলেন। আবার সালমান বললেন, ‘শুয়ে যাও।’ অতঃপর যখন রাতের
শেষাংশ এসে পৌঁছল, তখন তিনি বললেন, ‘এবার উঠে নফল নামায পড়।’ সুতরাং তাঁরা দু’জনে
একত্রে নামায পড়লেন। অতঃপর সালমান তাঁকে বললেন, ‘নিশ্চয় তোমার উপর তোমার প্রভুর
অধিকার রয়েছে। তোমার প্রতি তোমার আত্মারও অধিকার আছে এবং তোমার প্রতি তোমার
পরিবারেরও অধিকার রয়েছে। অতএব তুমি প্রত্যেক অধিকারীকে তার অধিকার প্রদান কর।’
অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সমস্ত ঘটনা
শুনালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সালমান ঠিকই বলেছে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৯৬৮, ৬১৩৯, তিরমিযী ২৪১৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৪
وعن أبي محمد عبد الله بن عمرو بن العاص
رضي الله عنهما قال: أخبر النبي صلى الله عليه وسلم أني أقول: والله لأصومن
النهار، ولأقومن الليل ماعشت، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أنت الذي
تقول ذلك؟ فقلت له: قد قلته بأبى أنت وأمى يا رسول الله. قال:"فإنك
لا تستطيع ذلك؛ فصم وأفطر، ونم وقم، وصم من الشهر ثلاثة أيام فإن الحسنة بعشر
أمثالها، وذلك مثل صيام الدهر" قلت: فإنى أطيق أفضل من ذلك قال: فصم
يوما وأفطر يومين، قلت: فإنى أطيق أفضل من ذلك، قال: "فصم يوماً وأفطر
يوماً، فذلك صيام داود صلى الله عليه وسلم، وهو أعدل الصيام". وفي
رواية: "وهو أفضل الصيام" فقلت : فإني أطيق أفضل من ذلك. فقال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: " لا أفضل من ذلك" ولأن أكون قبلت
الثلاثة الأيام التي قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أحب إلي من أهلي وما لي.
وفي رواية: "ألم أخبر أنك تصوم النهار وتقوم الليل؟" قلت :
بلى يا رسول الله قال: "فلا تفعل: صم وأفطر ، ونم وقم فإن لجسدك عليك
حقاً، وإن لعينيك عليك حقاً، وإن لزوجك عليك حقاً، وإن لزورك عليك حقاً، وإن بحسبك
أن تصوم في كل شهر ثلاثة أيام ، فإن لك بكل حسنة عشر أمثالها، فإن ذلك صيام
الدهر" فشددت فشدد علي، قلت: يا رسول الله إني أجد قوة، قال:
"صم صيام نبي الله داود ولا تزد عليه" قلت: وما كان صيام داود؟
قال: "نصف الدهر" فكان عبد الله يقول بعدما كبر: يا ليتني قبلت
رخصة رسول الله صلى الله عليه وسلم. وفي رواية: " ألم أخبر أنك تصوم
الدهر، وتقرأ القرآن كل ليلةٍ؟" فقلت: بلى يا رسول الله، ولم أرد
بذلك إلا الخير قال: "فصم صوم نبي الله داود، فإنه كان أعبد الناس،
واقرأِ القرآن كل شهرٍ" قلت: يا نبي الله إني أطيق أفضل من ذلك؟ قال:
"فاقرأه في كل عشرين" قلت: يا نبي الله إني أطيق أفضل من ذلك؟
قال: "فاقرأه في كل عشر" قلت يا نبي الله إني أطيق أفضل من ذلك؟
قال: "فاقرأه في كل سبع ولا تزد على ذلك". فشددت فشدد علي ،
وقال لي النبي صلى الله عليه وسلم: "إنك لا تدري لعلك يطول بك
عمر" قال: فصرت إلى الذي قال لي النبي صلى الله عليه وسلم، فلما كبرت
وددت أني كنت قبلت رخصة نبي الله صلى الله عليه وسلم. وفي رواية: " وإن
لولدك عليك حقاً" وفي رواية: " لا صام من صام الأبد"
ثلاثاً. وفي رواية: "أحب الصيام إلى الله تعالى صيام داود، وأحب الصلاة
إلى الله تعالى صلاة داود: كان ينام نصف الليل، ويقوم ثلثه، وينام سدسه، وكان
يصوم يوما ويفطر يوماً، ولا يفر إذا لاقى". وفي رواية: أنكحني أبي
امرأة ذات حسب، وكان يتعاهد كنته-أي : امرأة ولده- فيسألها عن بعلها، فتقول له
: نعم الرجل من رجل لم ييطأ لنا فراشاً ولم يفتش لنا كنفاً منذ أتيناه. فلما
طال ذلك عليه ذكر ذلك للنبي صلى الله عليه وسلم. فقال: "القنى
به" فلقيته بعد ذلك فقال: "كيف تصوم؟" قلت كل يوم،
قال: "وكيف تختم؟" قلت: كل ليلةٍ، وذكر نحون ما سبق ، وكان
يقرأ على بعض أهله السبع الذي يقرؤه، يعرضه من النهار ليكون أخف عليه بالليل، وإذا
أراد أن يتقوى أفطر أياماً وأحصى وصام مثلهن كراهية أن يترك شيئاً فارق عليه النبي
صلى الله عليه وسلم. كل هذه الروايات صحيحة معظمها في الصحيحين وقليل منها في
أحدهما. .
আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার ব্যাপারে সংবাদ দেওয়া হল যে, আমি বলছি,
‘আল্লাহর কসম! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন দিনে রোযা রাখব এবং রাতে নফল নামায
পড়ব।’ সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি এ
কথা বলছ?’’ আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! নিঃসন্দেহে আমি এ কথা বলেছি, আমার
পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি এর সাধ্য রাখ না। অতএব তুমি
রোযা রাখ এবং (কখনো) ছেড়েও দাও। অনুরূপ (রাতের কিছু অংশে) ঘুমাও এবং (কিছু অংশে)
নফল নামায পড় ও মাসে তিন দিন রোযা রাখ। কারণ, নেকীর প্রতিদান দশগুণ রয়েছে। তোমার
এই রোযা জীবনভর রোযা রাখার মত হয়ে যাবে।’’ আমি বললাম, ‘আমি এর অধিক করার শক্তি
রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি একদিন রোযা রাখ, আর দু’দিন রোযা ত্যাগ কর।’’ আমি
বললাম, ‘আমি এর বেশী করার শক্তি রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে একদিন রোযা রাখ, আর
একদিন রোযা ছাড়। এ হল দাঊদ ‘আলাইহিস সালাম-এর রোযা। আর এ হল ভারসাম্যপূর্ণ রোযা।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘এটা সর্বোত্তম রোযা।’’ কিন্তু আমি বললাম, ‘আমি এর চেয়ে
বেশী (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) রাখার ক্ষমতা রাখি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এর চেয়ে উত্তম রোযা আর নেই।’’ (আব্দুল্লাহ বলেন,) ‘যদি
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ অনুযায়ী (প্রত্যেক মাসে) তিন
দিন রোযা রাখার পদ্ধতি গ্রহণ করতাম, তাহলে তা আমার নিকট আমার পরিবার ও সম্পদ
অপেক্ষা প্রিয় হত।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) ‘‘আমি কি
এই সংবাদ পাইনি যে, তুমি দিনে রোযা রাখছ এবং রাতে নফল নামায পড়ছ?’’ আমি বললাম,
‘সম্পূর্ণ সত্য, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘পুনরায় এ কাজ করো না। তুমি
রোযাও রাখ এবং (কখনো) ছেড়েও দাও। নিদ্রাও যাও এবং নামাযও পড়। কারণ তোমার উপর তোমার
দেহের অধিকার আছে। তোমার উপর তোমার চক্ষুদ্বয়ের অধিকার আছে। তোমার উপর তোমার
স্ত্রীর অধিকার আছে এবং তোমার উপর তোমার অতিথির অধিকার আছে। তোমার জন্য প্রত্যেক
মাসে তিন দিন রোযা রাখা যথেষ্ট। কেননা, প্রত্যেক নেকীর পরিবর্তে তোমার জন্য দশটি
নেকী রয়েছে আর এটা জীবনভর রোযা রাখার মত।’’ কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম। যার
ফলে আমার উপর কঠিন করে দেওয়া হল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি সামর্থ্য
রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর নবী দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর রোযা রাখ এবং তার
চেয়ে বেশী করো না।’’ আমি বললাম, ‘দাউদের রোযা কেমন ছিল?’ তিনি বললেন, ‘‘অর্ধেক
জীবন।’’ অতঃপর আব্দুল্লাহ বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর বলতেন, ‘হায়! যদি আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি গ্রহণ করতাম (তাহলে কতই না ভাল হত)!’
আর এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) ‘‘আমি
সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি সর্বদা রোযা রাখছ এবং প্রত্যহ রাতে কুরআন (খতম) পড়ছ।’’ আমি
বললাম, ‘(সংবাদ) সত্যই, হে আল্লাহর রাসূল! কিন্তু এতে আমার উদ্দেশ্য ভাল ছাড়া অন্য
কিছু নয়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর নবী দাউদের রোযা রাখ। কারণ, তিনি লোকের
মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইবাদতগুযার ছিলেন। আর প্রত্যেক মাসে (একবার কুরআন খতম) পড়।’’
আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি এর অধিক করার শক্তি রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে
তুমি কুড়ি দিনে (কুরআন খতম) পড়।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি এর থেকে বেশী
করার সামর্থ্য রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি প্রত্যেক দশদিনে (কুরআন খতম) পড়।’’
আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও বেশী ক্ষমতা রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে
তুমি প্রত্যেক সাতদিনে (খতম) পড় এবং এর বেশী করো না (অর্থাৎ এর চাইতে কম সময়ে
কুরআন খতম করো না।)’’ কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম। যার ফলে আমার উপর কঠিন করে
দেওয়া হল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি জান না,
সম্ভবতঃ তোমার বয়স সুদীর্ঘ হবে।’’ আব্দুল্লাহ বলেন, সুতরাং আমি ঐ বয়সে পৌঁছে গেলাম,
যার কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন। অবশেষে আমি যখন বৃদ্ধ
হয়ে গেলাম, তখন আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, হায়! যদি আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি গ্রহণ করে নিতাম।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) ‘‘আর
তোমার উপর তোমার সন্তানের অধিকার আছে---।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তার কোন রোযা নেই (অর্থাৎ রোযা বিফল যাবে) সে সর্বদা রোযা
রাখে।’’ এ কথা তিনবার বললেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহর নিকট প্রিয়তম রোযা হচ্ছে দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর
রোযা এবং আল্লাহর নিকট প্রিয়তম নামায হচ্ছে দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর নামায। তিনি
মধ্য রাতে শুতেন এবং তার তৃতীয় অংশে নামায পড়তেন এবং তার ষষ্ঠ অংশে ঘুমাতেন। তিনি
একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন রোযা ছাড়তেন। আর যখন শত্রুর সামনা-সামনি হতেন তখন
(রণভূমি হতে) পলায়ন করতেন না।’’
আরোও এক বর্ণনায় আছে, (আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর) বলেন, আমার পিতা আমার বিবাহ এক উচ্চ
বংশের মহিলার সঙ্গে দিয়েছিলেন। তিনি পুত্রবধুর প্রতি খুবই লক্ষ্য রাখতেন। তিনি
তাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। সে বলত, ‘এত ভালো লোক যে, সে কদাচ আমার
বিছানায় পা রাখেনি এবং যখন থেকে আমি তার কাছে এসেছি, সে কোনদিন আবৃত জিনিস স্পর্শ
করেনি (অর্থাৎ মিলনের ইচ্ছাও ব্যক্ত করেনি।)’ যখন এই আচরণ অতি লম্বা হয়ে গেল, তখন
তিনি (আব্দুল্লাহর পিতা) এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালেন।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বল।’’ সুতরাং পরবর্তীতে আমি
তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কিভাবে রোযা রাখ?’’ আমি
বললাম, ‘প্রত্যেক দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘কিভাবে কুরআন খতম কর?’’ আমি বললাম,
‘প্রত্যেক রাতে।’ অতঃপর তিনি ঐ কথাগুলি বর্ণনা করলেন, যা পূর্বে গত হয়েছে। তিনি (আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আমর) তাঁর পরিবারের কাউকে (কুরআনের) ঐ সপ্তম অংশ পড়ে শুনাতেন, যা তিনি
(রাতের নফল নামাযে) পড়তেন। দিনের বেলায় তিনি তা পুনঃ পড়ে নিতেন, যাতে তার তার উপর
সহজ হয়। আর যখন তিনি শক্তিমান হতে চাইতেন তখন কয়েকদিন রোযা ভাঙ্গতেন আর গুণে
রাখতেন, তারপর সে দিনগুলোর অনুপাতে রোযা রাখতেন, যাতে করে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যে অবস্থার উপর ছেড়েছেন সে অবস্থার ব্যতিক্রম হয় এমন
অপছন্দনীয় কাজ সংঘটিত না হয়। এ বর্ণনাগুলো সবই সহীহ বর্ণনা; যার বেশিরভাগই বুখারী
ও মুসলিমে এসেছে অথবা এ দুটির একটিতে আছে।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৯৭৬, ১১৩১, ১১৩২, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫,
১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, মুসলিম ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০, নাসায়ী
১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৮, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৬, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, আবূ দাউদ
১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ১৪২৭, ২৪৪৮, ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০,
৬৪৯১, ৬৭২১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৫
وعن أبي ربعي حنظلة بن الربيع الأسيدى
الكاتب أحد كتاب رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لقيني أبو بكر رضي الله عنه
فقال: كيف أنت يا حنظلة؟ قلت: نافق حنظلة؟ قلت: نافق حنظلة ( قال:
سبحان الله ما تقول؟ ( قلت: نكون عند رسول الله صلى الله عليه وسلم يذكرنا
بالجنة والنار كأنا رأي عين، فإذا خرجنا من عند رسول الله صلى الله عليه وسلم
عافسنا الأزواج والأولاد والضيعات نسينا كثيراً. قال أبو بكر رضي الله عنه :
فوالله إنا لنلقى مثل هذا، فانطلقت أنا وأبو بكر حتى دخلنا على رسول الله صلى الله
عليه وسلم. فقلت: نافق حنظلة يا رسول الله ( فقال رسول الله صلى الله عليه
وسلم : "وما ذاك؟" قلت: يا رسول الله نكون عندك تذكرنا بالنار
والجنة كأنا رأي العين، فإذا خرجنا من عندك عافسنا الأزواج والأولاد والضيعات
نسينا كثيراً. فقال رسول الله 0: "والذي نفسي بيده لو تدومون على ما
تكونون عندي وفي الذكر لصافحتكم الملائكة على فرشكم وفي طرقكم، ولكن يا حنظلة ساعة
وساعة" ثلاث مرات، (رواه مسلم).
আবূ
রিব‘য়ী হান্যালাহ ইবনু রাবী‘ আল-উসাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
আবূ বাকর (রাঃ) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘হে হানযালাহ! তুমি কেমন আছ?’ আমি
বললাম, ‘হানাযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে!’ তিনি (আশ্চর্য হয়ে) বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! এ
কি কথা বলছ?’ আমি বললাম, ‘(কথা এই যে, যখন) আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে থাকি, তিনি আমাদের সামনে এমন ভঙ্গিমায় জান্নাত ও জাহান্নামের
আলোচনা করেন, যেন আমরা তা স্বচক্ষে দেখছি। অতঃপর যখন আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে বের হয়ে আসি, তখন স্ত্রী
সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য (পার্থিব) কারবারে ব্যস্ত হয়ে অনেক কিছু ভুলে যাই।’ আবূ
বকর (রাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমাদেরও তো এই অবস্থা হয়।’ সুতরাং আমি ও আবূ বকর
গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হলাম।
অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হানযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে।’ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সে কি কথা?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর
রাসূল! আমরা যখন আপনার নিকটে থাকি, তখন আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা
এমনভাবে শুনান; যেমন নাকি আমরা তা প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। অতঃপর আমরা যখন আপনার নিকট
থেকে বের হয়ে যাই এবং স্ত্রী সন্তান-সন্ততি ও কারবারে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন অনেক
কথা ভুলে যাই। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যদি তোমরা সর্বদা এই অবস্থায় থাকতে,
যে অবস্থাতে তোমরা আমার নিকটে থাক এবং সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতে, তাহলে
ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের পথে তোমাদের সঙ্গে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু
ওহে হানযালাহ! (সর্বদা মানুষের এক অবস্থা থাকে না।) কিছু সময় (ইবাদতের জন্য) ও
কিছু সময় (সাংসারিক কাজের জন্য)।’’ তিনি এ কথা তিনবার বললেন।[১]
[১] মুসলিম ২৭৫০, তিরমিযী ২৪৫২, ২৫১৪, ইবনু মাজাহ ৪২৩৯,
আহমাদ ১৭১৫৭, ১৮৫৬৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৬
- وعن ابن عباس رضي الله عنهما قال:
بينما النبي صلى الله عليه وسلم يخطب إذا هو برجل قائم، فسأل عنه فقالوا: أبو
إسرائيل نذر أن يقوم في الشمس ولا يقعد، ولا يستظل ولا يتكلم، ويصوم، فقال النبي
صلى الله عليه وسلم: "مروه فليتكلم وليستظل وليقعد وليتم صومه"
(رواه البخاري).
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কোন
এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন
যে, একটি লোক (রোদে) দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন।
লোকেরা বলল, ‘আবূ ইসরাঈল। ও নযর মেনেছে যে, ও রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়া
গ্রহণ করবে না, কথা বলবে না এবং রোযা রাখবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘তোমরা ওকে আদেশ কর, ও যেন কথা বলে, ছায়া গ্রহণ করে, বসে এবং রোযা পুরা
করে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৭০৪, আবূ দাউদ ৩৩০০, ইবনু মাজাহ ২১৩৬,
মুওয়াত্তা মালেক -১০২৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১৫
আমলের রক্ষণাবেক্ষণ
১৫৭
وعن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم: " من نام عن حزبه من الليل، أو عن شيء
منه فقرأه ما بين صلاة الفجر وصلاة الظهر، كتب له كأنما قرأه من الليل"
(رواه مسلم).
উমার
ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার রাতের অযীফা (নামায বা
তেলাওয়াত ইত্যাদি) রেখে ঘুমিয়ে যায়, অতঃপর সে তা ফজর ও যোহরের মধ্য সময়ে পড়ে নেয়,
তাহলে তার জন্য রাতে পড়ার মতই (সওয়াব) লেখা হয়।’’[১]
[১] মুসলিম ৭৪৭, তিরমিযী ৪০৩, নাসায়ী ১৭৯০, ১৭৯১, ১৭৯২,
আবূ দাউদ ১৩১৩, ইবনু মাজাহ ১৩৪৩, আহমাদ ২২০, ৩৭৯, ৪৫,মুওয়াত্তা মালেক -৪৭০, দারেমী
১৪৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৮
وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله
عنهما قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا عبد الله لا تكن مثل
فلان، كان يقوم الليل فترك قيام الليل" (متفق عليه) .
আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুক লোকের মত
হয়ো না, যে রাতে নফল নামায পড়ত, অতঃপর তা ছেড়ে দিয়েছে।’’[১]
[১] বুখারী ১১৫২, ১১৩১, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭,
১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ৬২৭৭, মুসলিম ১১৫৯,
তিরমিযী ৭৭০, নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯,
২৪০০, ২৪০১, ২৪০২, ২৪০৩, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, ইবনু মাজাহ
১৩৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৭২৫, ৬৭৫০, ৬৭৯৩, ৬৮০২, ৬৮২৩, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৯
وعن عائشة رضي الله عنها قالت: كان رسول
الله صلى الله عليه وسلم إذا فاتته الصلاة من الليل من وجع أو غيره، صلى من النهار
ثنتي عشرة ركعة" (رواه مسلم).
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
‘যখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের নামায কোনো ব্যথা-বেদনা অথবা
অন্য কোন কারণে ছুটে যেত, তখন তিনি দিনে বার রাকআত নামায পড়ে নিতেন।’[১] (মুসলিম)
[১] মুসলিম ৭৪৬, তিরমিযী ৪৪৫, ৭৩৬, ৭৬৮, নাসায়ী ১৩১৫,
১৬০১, ১৬৪১, ১৬৪১, ১৬৫১, ১৭১৮, আবূ দাউদ ৫৬, ১৩৪২, ১৩৪৬, ১৩৫০, ১৩৫১, ইবনু মাজাহ ১১৯১,
১৩৪৮, ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৭৪৮, ২৪৭৮৯, ২৫৫২২, ২৫৬৮৭, ২৫৭৭৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১৬
সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও
তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
১৬০
فالأول : عن أبي هريرة رضي الله عنه عن
النبي صلى الله عليه وسلم قال: "دعوني ماتركتكم: إنما أهلك من كان
قبلكم كثرة سؤالهم ، واختلافهم على أنبيائهم، فإذا نهيتكم عن شيء فاجتنبوه، وإذا
أمرتكم بأمر فأتوا منه ما استطعتم" (متفق عليه).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে (বর্ণনা না
দিয়ে) ছেড়ে দিয়েছি, সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ সে ব্যাপারে আমাকে
প্রশ্ন করো না)। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের অধিক প্রশ্ন করার এবং তাদের
নবীদের সঙ্গে মতভেদ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোন জিনিস
থেকে নিষেধ করব, তখন তোমরা তা হতে দূরে থাক। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ
দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন কর।’’[১] (বুখারী ও মুসলিম)
[১] নাসায়ী ১৭১৯, ১৭২০, ১৭২১, ১৭২২, ১৭২৩, ১৭২৪, ১৭২৫,
১৭৮৯, ২১৭৭, ২১৭৮, ২১৭৯, ২৬১৯, আবূ দাউদ ২৪৩৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১
عن أبي نجيح العرباض بن سارية رضي الله عنه
قال: "وعظنا رسول الله صلى الله عليه وسلم موعظة بليغة وجلت منها القلوب
وذرفت منها العيون، فقلنا: يا رسول الله كأنها موعظة مودع فأوصنا. قال:
"أوصيكم بتقوى الله ، والسمع والطاعة وإن تأمر عليكم عبد حبشي، وإنه من يعش
منكم فسيرى اختلافاً كثيراً. فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين، عضوا
عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل بدعة ضلالة" (رواه أبو
داود، والترمذي وقال : حديث حسن صحيح).
আবূ
নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী
বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা
বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম
উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার
ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায়
অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে
অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে
রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা
দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই
ভ্রষ্টতা।’’[১]
[১] আবূ দাউদ ৪৬০৭, দারেমী ৯৫, (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান
সহীহ)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৬২
الثالث: عن أبي هريرة رضي الله عنه أن
رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى
" . قيل: ومن يأبى يا رسول الله قال: " من أطاعني دخل الجنة،
ومن عصاني فقد أبى" (رواه البخاري).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু
সে নয় যে অস্বীকার করবে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! (জান্নাতে যেতে
আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে
এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭২৮০, মুসলিম ১৮৩৫, নাসায়ী ৪১৯৩, ৫৫১০,
ইবনু মাজাহ ৩, আহমাদ ৫৩১১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৩
الرابع: عن أبي مسلم، وقيل : أبي إياس
سلمة بن عمرو بن الأكوع رضي الله عنه ، أن رجلاً أكل عند رسول الله صلى الله عليه
وسلم بشماله فقال: "كل بيمينك" قال: لا أستطيع. قال:
" لا استطعت" ما منعه إلا الكبر، فما رفعها إلى فيه . (رواه
مسلم).
আবূ
মুসলিম মতান্তরে আবূ ইয়াস সালামাহ ইবনু ‘আমর ইবনু আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে বাম হাতে খাবার খেল।
তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার ডান হাতে খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারব না।’ তখন তিনি বললেন,
‘‘তুমি যেন না পারো।’’ একমাত্র অহংকার তাকে ডান হাতে খাওয়া থেকে বাধা দিয়েছিল।
অতঃপর সে তার ডান হাত তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।[১]
[১] মুসলিম ২০২১, আহমাদ ১৬০৫৮, ১৬০৫৪, ১৬০৯৫, দারেমী ২০৩২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৪
الخامس: عن أبي عبد الله النعمان بن بشير
رضي الله عنهما، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "لتسون
صفوفكم أو ليخالفن الله بين وجوهكم " (متفق عليه) .
وفي رواية لمسلم: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسوي صفوفنا حتى كأنما يسوي
بها القداح ،حتى إذا رأى أنا قد عقلنا عنه ثم خرج يوما، فقام حتى كاد أن يكبر،
فرأى رجلاً بادياً صدره فقال: " عباد الله لتسون صفوفكم أو ليخالفن الله
بين وجوهكم".
নু‘মান
ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা তোমাদের
(নামাযের) কাতার অবশ্যই সোজা কর, নতুবা আল্লাহ তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন।
(অথবা তোমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।)’’ বুখারী-মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
কাতারসমূহ এমনভাবে সোজা করতেন, যেন তিনি তার দ্বারা তীর সোজা করছেন। যতক্ষণ না
তিনি অনুভব করতেন যে, আমরা তাঁর নিকট থেকে এর গুরুত্ব বুঝে নিয়েছি। অতঃপর একদিন
তিনি (নামায পড়ার জন্য) বের হয়ে তিনি (ইমামের জায়গায়) দাঁড়ালেন। এমনকি তিনি তকবীর
বলে নামায শুরু করতে যাচ্ছেন, এমতাবস্থায় তিনি একটি লোককে দেখলেন যে, সে তার বুক
কাতার থেকে বের করে রেখেছে। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা
অবশ্যই তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করবে, নচেৎ তিনি তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে
দেবেন। (অথবা তোমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।)’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭১৭, মুসলিম ৪৩৬, তিরমিযী ২২৭, নাসায়ী
৮১০, আবূ দাউদ ৬৬২, ৬৬৩, ৬৬৫, ইবনু মাজাহ ৯৯৪, আহমাদ ১৭৯১৮, ১৭৯৫৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৫
السادس: عن أبي موسى رضي الله عنه قال:
احترق بيت بالمدينة على أهله من الليل، فلما حدث رسول الله صلى الله عليه وسلم
بشأنهم قال "إن هذه النار عدو لكم، فإذا نمتم فاطفئوها عنكم"
(متفق عليه) .
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে,
মদ্বীনায় রাতের বেলায় একটি ঘর তার বাসিন্দা সমেত পুড়ে গেল। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের সংবাদ দেওয়া হল, তখন তিনি বললেন, ‘‘এই
আগুন তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমোতে যাবে, তখন তা নিভিয়ে দাও।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬২৯৪, মুসলিম ২০১৬, আহমাদ ১৯০৭৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৬
السابع: عنه قال: قال رسول الله صلى
الله عليه وسلم : "إن مثل ما بعثني الله به من الهدى والعلم كمثل غيث
أصاب أرضاً فكانت منها طائفة طيبة، قبلت الماء فأنبتت الكلأ والعشب الكثير، وكان
منها أجادب أمسكت الماء، فنفع الله بها الناس فشربوا منها وسقوا وزرعوا. وأصاب
طائفة منها أخرى ، إنما هي قيعان لا تمسك ماء ولا تنبت كلأ. فذلك مثل من فقه في
دين الله، ونفعه بما بعثنى الله به، فعلم وعلم، ومثل من لم يرفع بذلك رأساً، ولم
يقبل هدى الله الذي أرسلت به" (متفق عليه) .
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠানো
হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা যমীনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে শোষণ
করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সব্জি উৎপন্ন করে এবং তার এক অংশ চাষের অযোগ্য
(খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন।
সুতরাং তারা তা হতে পান করে এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর
এক অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না ঘাস উৎপন্ন করে। এই দৃষ্টান্ত ঐ
ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হিদায়াত ও জ্ঞান
দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা
করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও
উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হিদায়াতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭৯, মুসলিম ২২৮২, আহমাদ ২৭৬৮২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭
الثامن: عن جابر رضي الله عنه قال: قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم "مثلي ومثلكم كمثل رجل أوقد ناراً فجعل
الجنادب والفراش يقعن فيها وهو يذبهن عنها وأنا آخذ بحجزكم عن النار، وأنتم تفلتون
من يدي" (رواه مسلم).
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার ও তোমাদের
উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। অতঃপর তাতে উচ্চুঙ্গ ও পতঙ্গ পড়তে
আরম্ভ করল, আর সে ব্যক্তি তা হতে তাদেরকে বাধা দিতে লাগল। আমিও তোমাদের কোমর ধরে
তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাচ্ছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে
(জাহান্নামের আগুনে) পতিত হচ্ছ।’’[১]
[১] মুসলিম ২২৮৫, আহমাদ ১৪৪৭১, ১৪৭৯১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৮
التاسع: عنه أن رسول الله صلى الله عليه
وسلم، أمر بلعق الأصابع والصحفة وقال: "إنكم لا تدرون في أيها
البركة" (رواه مسلم).
وفي رواية له: " إذا وقعت لقمة أحدكم . فليأخذها فليمط ماكان بها من
أذى، وليأكلها، ولا يدعها للشيطان، ولا يمسح يده بالمنديل حتى يلعق أصابعه، فإنه
لا يدري في أي طعامه البركة".
وفي رواية له: "إن الشيطان يحضر أحدكم عند كل شيء من شأنه حتى يحضره عند
طعامه، فإذا سقطت من أحدكم اللقمة فليمط ما كان بها من أذى ، فليأكلها، ولا يدعها
للشيطان".
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নিশ্চয়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খাবার পর) আঙ্গুলগুলি ও বাসন চেটে
খাওয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘ওর কোনটিতে বরকত আছে তা তোমরা জান না।’’
(মুসলিম)
তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যখন তোমাদের কারো (হাত থেকে) গ্রাস পড়ে যাবে, তখন সে
যেন তা তুলে নেয়। অতঃপর তাতে যে ময়লা থাকে তা পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেয় এবং তা
শয়তানের জন্য ছেড়ে না দেয়। আর যতক্ষণ পর্যন্ত আঙ্গুল না চাটবে, ততক্ষণ যেন সে
রুমালে হাত না মুছে। কেননা, সে জানে না যে, তার কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’
তাঁর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের কারো নিকট তার প্রত্যেক কাজে হাজির
হয়; এমনকি সে তার খাবার সময়েও হাজির হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কারো গ্রাস পড়ে
যাবে, তখন তাতে যে ময়লা থাকে তা পরিষ্কার করে খেয়ে নেয় এবং তা শয়তানের জন্য না
ছাড়ে।’’[১]
[১] মুসলিম ২০৩৩, ইবনু মাজাহ ৩২৭০, আহমাদ ১৩৮০৯, ১৩৯৭৯,
১৪১৪২, ১৪২১৮, ১৪৫২১, ১৪৮০২, ১৪৮১৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯
عن ابن عباس، رضي الله عنهما، قال: قام
فينا رسول الله صلى الله عليه وسلم بموعظة فقال: "يا أيها الناس إنكم
محشورون إلى الله تعالى حفاة عراة غرلاً {كما بدأنا أول خلق نعيده وعداً علينا
إنا كنا فاعلين} (الأنبياء: 103) ألا وإن أول الخلائق يكسى يوم
القيامة إبراهيم ، صلى الله عليه وسلم، ألا وإنه سيجاء برجال من أمتي ، فيؤخذ بهم
ذات الشمال؛ فأقول: يارب أصحابي؛ فيقال: إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك، فأقول
كما قال العبد الصالح: {وكنت عليهم شهيداً ما دمت فيهم} إلى قوله: {
العزيز الحكيم} ) (المائدة : 117،118) فيقال لي : إنهم لم يزالوا
مرتدين على أعقابهم منذ فارقتهم" (متفق عليه).
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে
দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা,
উলঙ্গ দেহ ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম
সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি
পুরা করব।’ সূরা আম্বিয়া ১০৪ আয়াত)
জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-কে
বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা
হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো
আমার সঙ্গী।’ কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন
নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’ (এ কথা শুনে) আমি বলব--যেমন নেক
বান্দা (ঈসা আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, ‘‘যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি
ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো
ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি
তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি
তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মায়েদা ১১৭ আয়াত) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে,
‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’[১]
[১] মুসলিম ২৮৬০, ৩৩৪৯, ৩৪৪৭, ৪৬২৫, ৪৬২৬, ৪৭৪০, ৬৫২৪,
৬৫২৫, ৬৫২৬, তিরমিযী ২৪২৩, ৩১৬৭, ৩৩৩২, নাসায়ী ২০৮১, ২০৮২, ২০৮৭, আহমাদ ১৯১৬, ১৯৫১,
২০২৮, ২০৯৭, ২২৮১, ২৩২৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭০
عن أبي سعيد عبد الله بن مغفل، رضي الله
عنه ، قال: نهى رسول الله، صلى الله عليه وسلم عن الخذف وقال: "إنه لا
يقتل الصيد، ولا ينكأ العدو، وإنه يفقأ العين، ويكسر السن" (متفق
عليه) .
আবূ
সাঈদ আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা) কাঁকর ছুঁড়তে
নিষেধ করেছেন। কেননা, তা দিয়ে শিকার করা যায় না এবং শত্রুকে ঘায়েলও করা যায় না।
বরং তাতে চোখ নষ্ট হয় ও দাঁত ভাঙ্গে। (বুখারী-মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ইবনু মুগাফফাল (রাঃ)-এর এক আত্মীয় দুই আঙ্গুল দিয়ে কাঁকর
ছুঁড়ছিল। তা দেখে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঐভাবে) কাঁকর ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন। কেননা, তা দিয়ে শিকার করা
যায় না। কিন্তু সে আবার ঐ কাজ করতে লাগল। তখন তিনি বলে উঠলেন, ‘আমি তোমাকে বলছি,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন আবার তুমি ছুঁড়তে
লাগলে? যাও! তোমার সাথে আর কথাই বলব না।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬২২০, ৪৮৪২, ৫৪৭৯, মুসলিম ১৯৫৪, নাসায়ী
৩৬, ৪৮১৫, আবূ দাউদ ২৭, ৫২৭০, ইবনু মাজাহ ৩২২৭, আহমাদ ১৬৩৫২, ২০০১৭, ২০০২৮, ২০০৩৮,
২০০৫০, দারেমী ৪৩৯, ৪৪০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭১
وعن عابس بن ربيعة قال: رأيت عمر بن
الخطاب ، رضي الله عنه ، يقبل الحجر -يعنى الأسود- ويقول:إني أعلم أنك حجر ما
تنفع ولا تضر، ولوا أني رأيت رسول الله، صلى الله عليه وسلم، يقبلك ما قبلتك.
(متفق عليه) .
আবেস
ইবনু রাবি‘আহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে ‘হাজারে আসওয়াদ’ চুমু দিতে দেখেছি, তিনি
বলছিলেন, ‘আমি সুনিশ্চিত জানি যে, তুমি একটা পাথর; তুমি না উপকার করতে পার, আর না
অপকার? আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমাকে চুমু দিতে
না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৫৯৭, ১৬০৫, ১৬১০, মুসলিম ১২৭০, তিরমিযী
৮৬০, নাসায়ী ২৯৩৭, ২৯৩৮, আবূ দাউদ ১৮৭৩, ২৯৪৩, আহমাদ ১০০, ১৩২, ১৭৭, ২২৭, ২৫৫, ২৭৬,
৩২৭, ৩৬৩, ৩৮৩, ৩৮২, মুওয়াত্তা মালেক -৮২৪, দারেমী ১৮৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১৭
আল্লাহর বিধান মান্য করা
অবশ্য কর্তব্য। আর যাকে এর দিকে আহ্বান করা হবে ও তাকে ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে
বাধা দেওয়া হবে, সে কী উত্তর দেবে?
১৭২
عن أبي هريرة، رضي الله عنه ، قال: لما
نزلت على رسول الله، صلى الله عليه وسلم : { لله ما في السموات وما في الأرض
وإن تبدوا ما في أنفسكم أو تخفوه يحاسبكم به الله} الآية (البقرة:283)
أشتد ذلك على أصحاب رسول الله، صلى الله عليه وسلم، فأتوا رسول الله ، صلى الله
عليه وسلم، ثم بركوا على الركب فقالوا: أي رسول الله كلفنا من الأعمال مانطيق:
الصلاة والجهاد والصيام والصدقة، وقد أنزلت عليك هذه الآية ولا نطيقها. قال رسول
الله، صلى الله عليه وسلم: "أتريدون أن تقولوا كما قال: أهل الكتابين
من قبلكم: سمعنا وعصينا؟ بل قولوا: سمعنا وأطعنا غفرانك ربنا وإليك
المصير" فلما اقترأها القوم، وذلت بها ألسنتهم؛ أنزل الله تعالى في
إثرها: {آمن الرسول بما أنزل إليه من ربه والمؤمنون كل آمن بالله وملائكته
وكتبه ورسله لا نفرق بين أحد من رسله وقالوا سمعنا وأطعنا غفرانك ربنا وإليك
المصير} فلما فعلوا ذلك نسخها الله تعالى؛ فأنزل الله عز وجل: {لايكلف الله
نفسا إلا وسعها لها ما كسبت وعليها ما اكتسبت ، ربنا لا تؤاخذنا إن نسينا أو
أخطأنا} قال: نعم { ربنا ولا تحمل علينا إصراً كما حملته على الذين من قبلنا
} قال: نعم { ربنا ولا تحملنا ما لا طاقة لنا به} قال : نعم {واعف عنا
واغفر لنا وارحمنا أنت مولانا فانصرنا على القوم الكافرين } قال: نعم"
(رواه مسلم).
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এই আয়াত অবতীর্ণ হল, অর্থাৎ
‘‘আকাশমণ্ডলী ও ভূমণ্ডলের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। যদি
তোমরা তোমাদের মনের কথা প্রকাশ কর অথবা তা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের নিকট হতে তার
হিসাব গ্রহণ করবেন।’’ (সূরা বাক্বারাহ ২৮৪ আয়াত) তখন এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের জন্য প্রচণ্ড ভারী মনে হল। ফলে তাঁরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন এবং তাঁরা হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে
গিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা (এমন) অনেক কাজের আদিষ্ট হয়েছি, যা (সম্পাদন)
করা আমাদের ক্ষমতাধীন; (যেমন) নামায, জিহাদ, রোযা ও সাদকাহ। আর এই আয়াতটি যে আপনার
উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা আমাদের ক্ষমতার বাইরে।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি তোমাদের পূর্ববর্তী
আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও খৃষ্টান)দের মত বলতে চাও যে, ‘আমরা শুনলাম এবং অমান্য
করলাম?’ বরং তোমরা বল, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম। হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা
তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ সুতরাং যখন লোকেরা
আয়াতটি পড়ল এবং তাদের জিভে সেটি পঠিত হতে থাকল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তারপর এই আয়াতটি
অবতীর্ণ করলেন, ‘‘রাসূল তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে
তাতে সে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং বিশ্বাসিগণও। সকলে আল্লাহতে, তাঁর ফেরেশতাগণে,
তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। (তারা বলে,) ‘আমরা তাঁর
রাসূলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না।’ আর তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম!
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর তোমারই দিকে (আমাদের) প্রত্যাবর্তন
হবে।’’ (সূরা বাক্বারা ২৮৫ আয়াত)
যখন তাঁরা এ কাজ করলেন, তখন পূর্ববর্তী আয়াতটিকে আল্লাহ মনসূখ (রহিত) করে দিলেন।
অতঃপর (তার পরিবর্তে) অবতীর্ণ করলেন, ‘‘আল্লাহ কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত
দায়িত্ব অর্পণ করেন না। যে ভাল উপার্জন করবে সে তার (প্রতিদান পাবে) এবং যে মন্দ
উপার্জন করবে সে তার (প্রতিফল পাবে)। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই
অথবা ভুল করি, তাহলে তুমি আমাদেরকে অপরাধী করো না।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘হে
আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে, আমাদের উপর
তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘হে আমাদের রব! এমন ভার আমাদের
উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘আর তুমি
আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের পাপ মোচন কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমি আমাদের
অভিভাবক। অতএব সত্য প্রত্যাখ্যানকারী (কাফের) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে
(সাহায্য ও) জয়যুক্ত কর।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ![১]
[১] মুসলিম ১২৫, আহমাদ ২৭৯০৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৩
عَن عَائِشَة رَضِي الله عَنهَا، قَالَتْ :
قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: مَنْ أحْدَثَ في أمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ
مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، وفي رواية لمسلم: مَنْ عَمِلَ عَمَلاً
لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু
উদ্ভাবন করল---যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যাতে আমাদের
নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, আবূ দাউদ ৪৬০৬,
ইবনু মাজাহ ১৪, আহমাদ ২৩৯২৯, ২৪৬০৪, ২৪৯৪৪, ২৫৫০২, ২৫৬৫৯, ২৫৬৫৯, ২৫৭৯৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১৮
বিদ‘আত এবং (দ্বীনে) নতুন
নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ
১৭৪
وعن جابر، رضي الله عنه ، كان رسول الله،
صلى الله عليه وسلم، إذا خطب احمرت عيناه، وعلا صوته، واشتد غضبه، حتى كأنه منذر
جيش يقول: "صبحكم ومساكم" ويقول: "بعثت أنا والساعة
كهاتين" ويقرن بين أصبعيه؛ السبابة والوسطى، ويقول: "أما بعد؛ فإن
خير الحديث كتاب الله وخير الهدى هدى محمد، صلى الله عليه وسلم، وشر الأمور
محدثاتها، وكل بدعة ضلالة" ثم يقول: "أنا أولى بكل مؤمن من نفسه.
من ترك مالاً فلأهله، ومن ترك ديناً أو ضياعاً فإلي وعلى" (رواه
مسلم).
وعن العرباض بن سارية، رضي الله عنه ، حديثة السابق في باب المحافظة على السنة.
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিতেন, তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল
হয়ে যেত এবং তাঁর আওয়াজ উঁচু হত ও তাঁর ক্রোধ কঠিন রূপ ধারণ করত। যেন তিনি (শত্রু)
সেনা থেকে ভীতি প্রদর্শন করছেন। তিনি বলতেন, ‘‘(সে শত্রু) তোমাদের উপর সকালে অথবা
সন্ধ্যায় হামলা করতে পারে।’’ আর তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিত করে বলতেন
যে, ‘‘আমাকে এবং কিয়ামতকে এ দু’টির মত (কাছাকাছি) পাঠানো হয়েছে।’’ আর তিনি বলতেন,
‘‘আম্মা বা‘দ (আল্লাহর প্রশংসা ও সাক্ষ্য দান করার পর) নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা
আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম রীতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
রীতি। আর নিকৃষ্টতম কাজ (দ্বীনে) নব আবিষ্কৃত কর্মসমূহ এবং প্রত্যেক বিদ‘আত
ভ্রষ্টতা।’’
অতঃপর তিনি বলতেন, ‘‘আমি প্রত্যেক মু’মিনদের নিকট তার আত্মার চেয়েও নিকটতম। যে
ব্যক্তি মাল ছেড়ে (মারা) যাবে, তা তার উত্তরাধিকারীদের জন্য এবং যে ঋণ অথবা অভাবী
সন্তান-সন্ততি ছেড়ে যাবে, তার দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত।’’[১]
[১] মুসলিম ৮৬৭, নাসায়ী ১৫৭৮, আবূ দাউদ ২৯৫৪, ২৯৫৬, ইবনু
মাজাহ ৪৫, ২৪১৬, আহমাদ ১৩৭৪৪, ১৩২৪, ১৪০২২, ১৪১৯, ১৪৫৬৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৫
আবূ
নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী
বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা
বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম
উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার
ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায়
অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে
অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের
রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব
উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই
ভ্রষ্টতা।’’]
আবূ দাউদ ৪৬০৭, দারেমী ৯৫, (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান
সহীহ)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১৯
যে ব্যক্তি ভাল অথবা মন্দ
রীতি চালু করবে
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [الفرقان: ٧٣]
অর্থাৎ “যারা (প্রার্থনা করে) বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততিদেরকে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য
আদর্শস্বরূপ কর’।” (সূরা ফুরক্বান ৭৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَجَعَلۡنَٰهُمۡ أَئِمَّةٗ يَهۡدُونَ بِأَمۡرِنَا ﴾ [الانبياء: ٧٣]
অর্থাৎ “আর আমি তাদেরকে করলাম নেতা, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ
প্রদর্শন করত।” (সূরা আম্বিয়া ৭৩ আয়াত)
১৭৬
عَنْ أَبِي عَمرٍو جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ:
كُنَّا فِيْ صَدْرِ النَّهَارِ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَهُ
قَومٌ عُرَاةٌ مُجْتَابي النِّمَار أَوْ العَبَاء، مُتَقَلِّدِي السُّيُوف،
عَامَّتُهُمْ مِن مُضَرَ بَلْ كُلُّهُمْ مِنْ مُضَرَ، فَتَمَعَّرَ رَسُولُ الله
صلى الله عليه وسلم لمَاَّ رَأَى بِهِمْ مِنَ الفَاقَة، فَدَخَلَ ثُمَّ خَرَجَ،
فَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَذَّنَ وَأَقَامَ، فصَلَّى ثُمَّ خَطَبَ، فَقَالَ: ﴿
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ ﴾ إِلَى آخر الآية : ﴿ إِنَّ
ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١ ﴾ [النساء: ١] ، والآية الأُخْرَى التي في آخر الحَشْرِ : ﴿
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡتَنظُرۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٖۖ ﴾ [الحشر: ١٨] تَصَدَّقَ
رَجُلٌ مِنْ دِينَارِهِ، مِنْ دِرهمِهِ، مِنْ ثَوبِهِ، مِنْ صَاعِ بُرِّهِ، مِنْ
صَاعِ تَمْرِهِ - حَتَّى قَالَ - وَلَوْ بِشقِّ تَمرَةٍ»فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ
الأَنْصَارِ بِصُرَّةٍ كَادَتْ كَفُّهُ تَعجِزُ عَنهَا، بَلْ قَدْ عَجَزَتْ، ثُمَّ
تَتَابَعَ النَّاسُ حَتَّى رَأيْتُ كَومَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَثِيَابٍ، حَتَّى
رَأيْتُ وَجْهَ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم يَتَهَلَّلُ كَأنَّهُ مُذْهَبَةٌ.
فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: «مَنْ سَنَّ في الإسلامِ سنَّةً حَسَنَةً
فَلَهُ أجْرُهَا، وَأجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ غَيرِ أنْ يَنْقُصَ
مِنْ أُجُورهمْ شَيءٌ، وَمَنْ سَنَّ في الإسْلامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيهِ
وِزْرُهَا، وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيرِ أنْ يَنْقُصَ
مِنْ أوْزَارِهمْ شَيءٌ». رواه مسلم
আবূ
‘আমর জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
দিনের প্রথম ভাগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম।
অতঃপর তাঁর নিকট কিছু লোক এল, যাদের দেহ বিবস্ত্র ছিল, পশমের ডোরা কাটা চাদর (মাথা
প্রবেশের মত জায়গা মাঝে কেটে) পরে ছিল অথবা ‘আবা’ (আংরাখা) পরে ছিল, তরবারি তারা
নিজেদের গর্দানে ঝুলিয়ে রেখেছিল। তাদের অধিকাংশ মুদ্বার গোত্রের (লোক) ছিল; বরং
তারা সকলেই মুদ্বার গোত্রের ছিল। তাদের দরিদ্রতা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল।
সুতরাং তিনি (বাড়ির ভিতর) প্রবেশ করলেন এবং পুনরায় বের হলেন। তারপর তিনি বেলালকে
(আযান দেওয়ার) আদেশ করলেন। ফলে তিনি আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন। অতঃপর তিনি নামায
পড়ে লোকদেরকে (সম্বোধন ক’রে) ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, ‘‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা
তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তার
সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নরনারী (পৃথিবীতে) বিস্তার
করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা কর এবং
জ্ঞাতি-বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি
রাখেন।’’ (সূরা নিসা ১ আয়াত)
অতঃপর দ্বিতীয় আয়াত যেটি সূরা হাশরের শেষে আছে সেটি পাঠ করলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ!
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামীকালের (কিয়ামতের) জন্য
সে কি অগ্রিম পাঠিয়েছে। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে
সম্পর্কে অবহিত।’’ (সূরা হাশর ১৮ আয়াত)
‘‘সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নিজ দ্বীনার (স্বর্ণমুদ্রা), দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা),
কাপড়, এক সা’ গম ও এক সা’ খেজুর থেকে সাদকাহ করে।’’ এমনকি তিনি বললেন, ‘‘খেজুরের
আধা টুকরা হলেও (তা যেন দান করে)।’’ সুতরাং আনসারদের একটি লোক (চাঁদির) একটি থলে
নিয়ে এল, লোকটির করতল যেন তা ধারণ করতে পারছিল না; বরং তা ধারণ করতে অক্ষমই ছিল।
অতঃপর (তা দেখে) লোকেরা পরস্পর দান আনতে আরম্ভ করল। এমনকি খাদ্য সামগ্রী ও কাপড়ের
দু’টি স্তূপ দেখলাম। পরিশেষে আমি দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা যেন সোনার মত ঝলমল করছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল রীতি চালু করবে, সে তার নিজের
এবং ঐ সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তার (মৃত্যুর) পর তার উপর আমল করবে। তাদের
সওয়াবের কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ রীতির প্রচলন
করবে, তার উপর তার নিজের এবং ঐ লোকদের গোনাহ বর্তাবে, যারা তার (মৃত্যুর) পর তার
উপর আমল করবে। তাদের গোনাহর কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।’’[১]
[১] মুসলিম ১০১৭, তিরমিযী ২৬৭৫, নাসায়ী ২৫৫৪, ইবনু মাজাহ
২০৩, আহমাদ ১৮৬৭৫, ১৮৬৯৩, ১৮৭০১, ১৮৭২৪, দারেমী ৫১২, ৫১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৭
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه : أَنَّ
النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَيْسَ مِنْ نَفْسٍ تُقْتَلُ ظُلْماً إلاَّ
كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لأَنَّهُ كَانَ أوَّلَ
مَنْ سَنَّ القَتلَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে কোন প্রাণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে,
তার পাপের একটা অংশ আদমের প্রথম সন্তান (কাবীল) এর উপর বর্তাবে। কেননা, সে হত্যার
রীতি সর্বপ্রথম চালু করেছে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৩৩৬, ৬৮৬৭, ৭৩২১, মুসলিম ১৬৭৭, তিরমিযী
২৬৭৭, নাসায়ী ৩৯৮৫, ইবনু মাজাহ ২৬১৬, আহমাদ ৩৫২৩, ৪০৮১, ৪১১২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২০
মঙ্গলের প্রতি পথ-নির্দেশনা
এবং সৎপথ অথবা অসৎপথের দিকে আহ্বান করার বিবরণ
১৭৮
وَعَنْ أَبِي مَسعُودٍ عُقبةَ بنِ عَمرٍو
الأَنصَارِي البَدرِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه
وسلم: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أجْرِ فَاعِلِهِ». رواه مسلم
আবূ
মাসউদ উক্ববাহ ইবনু ‘আমর আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ভাল কাজের পথ দেখাবে, সে তার
প্রতি আমলকারীর সমান নেকী পাবে।’’[১]
[১] মুসলিম ১৮৯৩, তিরমিযী ২৬৭১, আবূ দাউদ ৫১২৯, আহমাদ
২৭৫৮৫, ২১৮৩৪, ২১৮৪৬, ২১৮৫৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৯
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه :
أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ دَعَا
إِلَى هُدَىً، كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أجُورِ مَنْ تَبِعَه، لاَ يَنْقُصُ
ذلِكَ مِنْ أجُورِهمْ شَيئاً، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيهِ مِنَ
الإثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ
شَيئاً». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহ্বান
করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম
করবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তার উপর তার সমস্ত
অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না।’’[১]
[১] মুসলিম ২৬৭৪, তিরমিযী ২৬৭৪, আবূ দাউদ ৪৬১৯, আহমাদ
৮৯১৫, দারেমী ৫১৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮০
وَعَنْ أَبِي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ
السَّاعِدِيْ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ يَومَ
خَيبَر: «لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَداً رَجلاً يَفْتَحُ الله عَلَى يَدَيهِ،
يُحبُّ اللهَ وَرَسولَهُ، ويُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ»، فَبَاتَ النَّاسُ
يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أيُّهُمْ يُعْطَاهَا . فَلَمَّا أصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا
عَلَى رسولِ الله صلى الله عليه وسلم كُلُّهُمْ يَرْجُو أنْ يُعْطَاهَا. فَقَالَ:
«أينَ عَلِيُّ ابنُ أَبي طالب ؟»فقيلَ: يَا رسولَ الله، هُوَ يَشْتَكي عَيْنَيهِ .
قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْه»فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رسولُ الله صلى الله عليه
وسلم في عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ فَبَرِىءَ حَتَّى كأنْ لَمْ يكُن بِهِ وَجَعٌ،
فأعْطاهُ الرَّايَةَ . فقَالَ عَليٌّ رضي الله عنه: يَا رَسُول اللهِ، أقاتِلُهمْ
حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا ؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ
بسَاحَتهمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإسْلاَمِ، وَأخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ
عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللهِ تَعَالَى فِيهِ، فَوَالله لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ
رَجُلاً وَاحِداً خَيرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَم». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূল
আব্বাস সাহ্ল ইবনু সা‘দ সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার (যুদ্ধের) দিন বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি
আগামীকাল যুদ্ধ-পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দেব, যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন, আর
সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে
ভালবাসেন।’’ অতঃপর লোকেরা এই আলোচনা করতে করতে রাত কাটিয়ে দিল যে, তাদের মধ্যে কোন
ব্যক্তিকে এটা দেওয়া হবে। অতঃপর সকালে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেল। তাদের প্রত্যেকেরই এই আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, পতাকা তাকে দেওয়া
হোক। কিন্তু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আলী ইবনু আবী ত্বালেব কোথায়?’’ তাঁকে বলা হল,
‘হে আল্লাহর রাসূল! তাঁর চক্ষুদ্বয়ে ব্যথা হচ্ছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে ডেকে
পাঠাও।’’
সুতরাং তাঁকে ডেকে আনা হল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
চক্ষুদ্বয়ে থুতু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। ফলে তিনি এমন সুস্থ হয়ে
গেলেন; যেন তাঁর কোন ব্যথাই ছিল না। অতঃপর তিনি তাঁকে যুদ্ধ-পতাকা দিলেন। আলী
(রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তারা আমাদের মত (মুসলিম) না হওয়া পর্যন্ত কি আমি
তাদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি প্রশান্ত হয়ে চলতে থাক; যতক্ষণ না
তাদের নগর-প্রাঙ্গনে অবতরণ করেছ। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান কর এবং তাদের
উপর ইসলামে আল্লাহর যে জরুরী হক রয়েছে তাদেরকে সে ব্যাপারে অবগত করাও। আল্লাহর
কসম! যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার দ্বারা একটি মানুষকে হিদায়াত করেন, তাহলে তা তোমার
জন্য (আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ) লাল উঁটনী অপেক্ষাও উত্তম।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৯৪২, ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, মুসলিম ২৪০৬,
আবূ দাউদ ৩৬৬১, আহমাদ ২২৩১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮১
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ فتىً
مِنْ أَسلَمَ، قَالَ : يَا رَسُولَ الله، إنِّي أُرِيدُ الغَزْوَ وَلَيْسَ معي مَا
أتَجَهَّز بِهِ، قَالَ: «ائتِ فُلاَناً فإنَّهُ قَدْ كَانَ تَجَهَّزَ
فَمَرِضَ»فَأتَاهُ، فَقَالَ: إنَّ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم يُقْرِئُكَ السَّلامَ،
وَيَقُولُ : أعْطني الَّذِي تَجَهَّزْتَ بِهِ، فَقَالَ : يَا فُلاَنَةُ، أعْطِيهِ
الَّذِي تَجَهَّزْتُ بِهِ، وَلا تَحْبِسي مِنْهُ شَيئاً، فَواللهِ لاَ تَحْبِسِين
مِنْهُ شَيئاً فَيُبَاركَ لَكِ فِيهِ . رواه مسلم
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আসলাম
গোত্রের এক যুবক বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করছি; কিন্তু
আমার কাছে তার প্রস্তুতির সরঞ্জাম নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি অমুকের কাছে যাও।
কেননা সে (জিহাদের জন্য) প্রস্তুতি নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’’ সুতরাং সে
(যুবকটি) তার নিকট এসে বলল, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে
সালাম দিচ্ছেন এবং বলছেন যে, যে সরঞ্জাম তুমি (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত করেছ, তা
তুমি আমাকে দাও।’ অতএব সে (তার স্ত্রীকে) বলল, ‘হে অমুক! আমি জিহাদের জন্য যে
সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছিলাম, তুমি সব একে দিয়ে দাও এবং তা হতে কোন জিনিস আটকে রেখো
না। আল্লাহর কসম! তুমি তার মধ্য হতে কোন জিনিস আটকে রাখলে, তোমার জন্য তাতে বরকত
দেওয়া হবে না।’[১]
[১] মুসলিম ১৮৯৪, আবূ দাউদ ২৭৮০, আহমাদ ১২৭৪৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২১
নেকী ও সংযমশীলতার কাজে
পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ ﴾ [المائدة: ٢]
অর্থাৎ “সৎকাজ ও আত্মসংযমে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর।” (সূরা মায়েদাহ ২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١، ٣]
অর্থাৎ “সময়ের শপথ!। মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও
সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়। আর উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের।” (সূরা
আসর)
ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, লোকেরা অথবা তাদের অধিকাংশই এই সূরা নিয়ে
চিন্তা-ভাবনা করার ব্যাপারে উদাসীন। (তফসীর ইবনু কাসীর)
১৮২
وَعَنْ أَبِي عَبدِ الرَّحمَانِ زَيدِ بنِ
خَالِدٍ الجُهَنِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسولُ الله صلى الله عليه وسلم:
«مَنْ جَهَّزَ غَازِياً في سَبيلِ اللهِ فَقَدْ غَزَا، وَمَنْ خَلَفَ غَازياً في
أهْلِهِ بِخَيرٍ فَقَدْ غَزَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
আব্দুর রাহমান যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সরঞ্জাম দিয়ে আল্লাহর পথে
কোন মুজাহিদ প্রস্তুত করে দিল, নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি স্বয়ং জিহাদ করল। আর যে
ব্যক্তি কোন মুজাহিদের পরিবারে উত্তমরূপে প্রতিনিধিত্ব করল, নিঃসন্দেহে সেও জিহাদ
করল।’’ (অর্থাৎ সেও জিহাদের নেকী পাবে।)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৮৪৩, মুসলিম ১৮৯৫, তিরমিযী ১৬২৮, ১৬২৯,
১৬৩১, আবূ দাউদ ২৫০৯, ইবনু মাজাহ ২৭৫৯, আহমাদ ১৬৫৮২, ১৬৫৯১, ১৬৫৯৬, ১৬৬০৮. ২১১৬৮, ২১১৭৩,
নাসায়ী ৩১৮০. ৩১৮১, দারেমী ২৪১৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮৩
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِيْ رضي الله
عنه: أَنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم بَعَثَ بَعثاً إِلَى بَني لِحْيَان
مِنْ هُذَيْلٍ، فَقَالَ: «لِيَنْبَعِثْ مِنْ كُلِّ رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا
وَالأجْرُ بَيْنَهُمَا». رواه مسلم
আবূ
সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযাইল গোত্রের একটি শাখা বনু লিহ্ইয়ানের দিকে এক
সেনাবাহিনী প্রেরণ (করার ইচ্ছা) করলেন। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক দুই
ব্যক্তির মধ্যে একজন যাবে; আর সওয়াব দু’জনেই পাবে।’’[১]
[১] মুসলিম ১৮৯৬, আবূ দাউদ ২৫১০, আহমাদ ১০৭২৬, ১০৯০৮,
১১০৬৯, ১১১৩৩, ১১৪৫৭,
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮৪
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا
: أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم لَقِيَ رَكْباً بالرَّوْحَاءِ، فَقَالَ:
«مَنِ القَوْمُ؟» قَالُوا : اَلْمُسلِمُونَ، فَقَالُوا : مَن أنتَ ؟ قَالَ:
«رَسُولُ الله»، فَرَفَعَت إِلَيْهِ امرأةٌ صَبياً، فَقَالَتْ: ألِهَذَا حَجٌّ ؟
قَالَ: «نَعَمْ، وَلَكِ أجْرٌ». رواه مسلم
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রওহা
নামক স্থানে এক কাফেলার সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সাক্ষাৎ হল। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কারা?’’ তারা বলল, ‘(আমরা) মুসলিম।’ অতঃপর তারা
বলল, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, ‘‘(আমি) আল্লাহর রাসূল।’’ অতঃপর একজন মহিলা তার এক
বাচ্চাকে তাঁর দিকে তুলে বলল, ‘এর কি হজ্জ আছে?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আর তুমিও
নেকী পাবে।’’[১]
[১] মুসলিম ১৩৩৬, আবূ দাউদ ১৭৩৫, আহমাদ ১৯০১, ২১৮৮, ২৬০৫,
৩১৮৫, ৩১৯২, মুওয়াত্তা মালেক -৯৬১, নাসায়ী ২৬৪৫, ২৬৪৬, ২৬৪৭, ২৬৪৮, ২৫৪৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮৫
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الأشعَرِي رضي الله
عنه، عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، أنَّه قَالَ: «الخَازِنُ المُسْلِمُ
الأمِينُ الَّذِي يُنفِذُ مَا أُمِرَ بِهِ فيُعْطيهِ كَامِلاً مُوَفَّراً
طَيِّبَةً بِهِ نَفْسُهُ فَيَدْفَعُهُ إِلَى الَّذِي أُمِرَ لَهُ بِهِ، أحَدُ المُتَصَدِّقين».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে মুসলিম আমানাতদার কোষাধ্যক্ষ মালিকের
আদেশ অনুযায়ী কাজ করে এবং সে ভালো মনে তাকে পূর্ণ মাল দেয়, যাকে মালিক দেওয়ার আদেশ
করে, সেও সাদকাহকারীদের মধ্যে একজন গণ্য হয়।’’[১]
[১] মুসলিম ১৪৩৮, ২২৬০, ২৩১৯, মুসলিম ১০২৩, ১৬৯৯, আবূ
দাউদ ১৬৮৪, আহমাদ ১৯০১৮, ১৯১২৭, ১৯১২৮, ১৯১৫৩, ১৯২০৭, নাসায়ী ২৫৬০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২২
হিতাকাঙ্ক্ষিতার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ ﴾ [الحجرات: ١٠]
অর্থাৎ “সকল ঈমানদাররা তো পরস্পর ভাই ভাই।” (সূরা হুজরাত ১০ আয়াত)
তিনি নূহ আলাইহিস সালাম-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
﴿ وَأَنصَحُ لَكُمۡ ﴾ [الاعراف: ٦٢]
অর্থাৎ “(নূহ বলল,) আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি (বা হিতকামনা করছি)।” (সূরা আ‘রাফ
৬২ আয়াত)
তিনি হূদ আলাইহিস সালাম-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
﴿ وَأَنَا۠ لَكُمۡ نَاصِحٌ أَمِينٌ ﴾ [الاعراف: ٦٨]
অর্থাৎ “(হূদ বলল,) আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত উপদেষ্টা (বা হিতাকাঙ্ক্ষী)।”
(সূরা আ‘রাফ ৬৮ আয়াত)
১৮৬
عَنْ أَبِي رُقَيَّةَ تَمِيمِ بنِ أوسٍ
الدَّارِيِّ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ : «الدِّينُ
النَّصِيحةُ» قُلنَا : لِمَنْ ؟ قَالَ: «لِلهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ
وَلأئِمَّةِ المُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ». رواه مسلم
আবূ
রুক্বাইয়াহ তামীম ইবনু আওস আদ-দারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করার নাম।’’ আমরা
বললাম, ‘কার জন্য?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের
জন্য, মুসলিমদের শাসকদের জন্য এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য।[১]
[১] মুসলিম ৫৫, নাসায়ী ৪১৯৭, ৪১৯৮, আবূ দাউদ ৪৯৪৪, আহমাদ
১৬৪৯৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮৭
عَن جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه،
قَالَ : بَايَعْتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم عَلَى إقَامِ الصَّلاةِ،
وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، والنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
জারীর
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নামায কায়েম করা,
যাকাত দেওয়া ও সকল মুসলিমর জন্য কল্যাণ কামনা করার উপর বায়‘আত করেছি।[১]
1] সহীহুল বুখারী ৫৭, ৫৮, ৫২৪, ১৪০১, ২১৫৭, ২৭১৪, ২৭১৫,
৭২০৪, মুসলিম ৫৬, তিরমিযী ১৯২৫, নাসায়ী ৪১৫৬, ৪১৫৭, ৪১৭৪, ৪১৭৫, ৪১৭৭, ৪১৮৯, আহমাদ
১৮৬৭১, ১৮৭০০, ১৮৭৩৪, ১৮৭৪৩, ১৮৭৫০, দারেমী ২৫৪০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮৮
عَن أنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ صلى
الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يُؤمِنُ أحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا
يُحبُّ لِنَفْسِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ প্রকৃত
ঈমানদার হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভায়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের
জন্য পছন্দ করে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩, মুসলিম ৪৫, তিরমিযী ২৫১৫, নাসায়ী
৫০১৬, ৫০১৭, ইবনু মাজাহ ৬৬, আহমাদ ১১৫৯১, ১২৩৫৪, ১২৩৭২, ১২৩৯০, ১২৭৩৪, ১২৯৯৪, ১৩১৮০,
১৩২০৭,১৩৪৬২, ১৩৫৪৭, ১৩৬৫৬, দারেমী ২৭৪০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২৩
ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে
নিষেধ করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤ ﴾ [ال عمران: ١٠٤]
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহ্বান
করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কার্য থেকে নিষেধ করবে। আর এ সকল লোকই হবে
সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান ১০৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ ﴾ [ال عمران: ١١٠]
অর্থাৎ “তোমরাই শ্রেষ্ঠতম জাতি। মানবমণ্ডলীর জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা
সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, আর অসৎ কার্য (করা থেকে) নিষেধ কর, আর আল্লাহতে বিশ্বাস
কর।” (সূরা আলে ইমরান ১১০ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩]
অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে
এড়িয়ে চল।” (সূরা আ'রাফ ১৯৯ আয়াত)
অন্যত্রে বলেছেন,
﴿ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ ﴾ [التوبة: ٧١]
অর্থাৎ “আর বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসিনী নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু,
তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে।” (সূরা তাওবাহ ৭১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ٧٨ كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوۡنَ عَن مُّنكَرٖ فَعَلُوهُۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ٧٩ ﴾ [المائدة: ٧٨، ٧٩]
অর্থাৎ “বনী ইস্রাঈলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল তারা দাঊদ ও মারয়্যাম-তনয়
কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত
কাজ করত তা থেকে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।”
(সূরা মায়েদাহ ৭৮-৭৯ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেছেন,
﴿ وَقُلِ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّكُمۡۖ فَمَن شَآءَ فَلۡيُؤۡمِن وَمَن شَآءَ فَلۡيَكۡفُرۡۚ ﴾ [الكهف: ٢٩]
অর্থাৎ “বলে দাও, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সমাগত; সুতরাং যার ইচ্ছা
বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান করুক।” (সূরা ক্বাহফ ২৯ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ ﴾ [الحجر: ٩٤]
অর্থাৎ “অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ তা প্রকাশ্যে প্রচার কর।” (সূরা হিজর ৯৪
আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেছেন,
﴿ أَنجَيۡنَا ٱلَّذِينَ يَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلسُّوٓءِ وَأَخَذۡنَا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ بِعَذَابِۢ بَِٔيسِۢ بِمَا كَانُواْ يَفۡسُقُونَ ﴾ [الاعراف: ١٦٥]
অর্থাৎ “(যে উপদেশ তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল, তখন) যারা মন্দ
কাজে বাধা দান করত তাদেরকে আমি উদ্ধার করলাম এবং যারা অত্যাচারী ছিল তারা
সত্যত্যাগ করত বলে আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তির সাথে পাকড়াও করলাম।” (সূরা আ'রাফ ১৬৫
আয়াত)
১৮৯
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «مَنْ رَأى مِنْكُمْ
مُنْكَراً فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإنْ
لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أضْعَفُ الإيمَانِ». رواه مسلم
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে
ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি
(তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা ( উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)। যদি
(তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল
ঈমান।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৯৫৬, মুসলিম ৪৯, তিরমিযী ২১৭২, নাসায়ী
৫০০৮, ৫০০৯, আবূ দাউদ ১১৪০, ৪৩৪০, ইবনু মাজাহ ১২৭৫, ৪০১৩, আহমাদ ১০৬৮৯, ১০৭৬৬, ১১০৬৮,
১১১০০, ১১১২২, ১১১৪৫, ১১৪৬৬, দারেমী ২৭৪০১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯০
عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه: أَنَّ
رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَا مِنْ نَبيٍّ بَعَثَهُ اللهُ في أمَّة
قَبْلِي إلاَّ كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأصْحَابٌ يَأخُذُونَ
بِسنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ، ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ
خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لاَ يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لاَ يُؤْمَرونَ، فَمَنْ
جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلبِهِ فَهُوَ
مُؤمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلسَانِهِ فَهُوَ مُؤمِنٌ، وَلَيسَ وَرَاءَ ذلِكَ
مِنَ الإيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَل». رواه مسلم
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার পূর্বে আল্লাহ যে কোনো নবীকে যে কোনো
উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু) সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর
সুন্নতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পরে এমন অপদার্থ
লোক সৃষ্টি হল যে, তারা যা বলত, তা করত না এবং তারা তা করত, যার আদেশ তাদেরকে
দেওয়া হত না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা সংগ্রাম করবে সে
মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন এবং যে
ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন। আর এর পর সরিষার
দানা পরিমাণও ঈমান নেই।’’[১]
[১] মুসলিম ৫০, আহমাদ ৪৩৬৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯১
عَنْ أَبِي الوَلِيدِ عُبَادَةَ بنِ
الصَّامِتِ رضي الله عنه قَالَ: بَايَعْنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم عَلَى السَّمْعِ والطَّاعَةِ في العُسْرِ واليُسْرِ، والمَنْشَطِ
وَالمَكْرَهِ، وَعَلَى أثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَعَلَى أنْ لاَ نُنازِعَ الأمْرَ
أهْلَهُ إلاَّ أنْ تَرَوْا كُفْراً بَوَاحاً عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ تَعَالَى فِيهِ
بُرْهَانٌ، وَعَلَى أنْ نَقُولَ بِالحَقِّ أيْنَمَا كُنَّا لاَ نَخَافُ في اللهِ
لَوْمَةَ لاَئِمٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
অলীদ উবাদাহ ইবনু সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এই মর্মে বাইয়াত
করলাম যে, দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের উপর (অন্যদেরকে) প্রাধান্য দেওয়ার
অবস্থায় আমরা তাঁর পূর্ণ আনুগত্য করব। রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে তার নিকট থেকে ক্ষমতা
কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না; যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখ, যে
ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল রয়েছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব
এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭০৫৬, ১৮, ৩৮৯২, ৩৮৯৩, ৩৯৯৯, ৪৮৯৪,
৬৭৮৪, ৬৮০১৬৮৭৩৩, ৭১৯৯, ৭২১৩, ৭৪৬৮, মুসলিম ১৭০৯, তিরমিযী ১৪৩৯, নাসায়ী ৪১৪৯, ৪১৫১৪,
৪১৫২, ৪১৫৩, ৪১৫৪, ৪১৬১, ৪১৬২, ৪১৭৮, ৪২১০, ৫০০২, ইবনু মাজাহ ২৬০০, ২৮৬৬, আহমাদ ৪৩৮৮,
১৫২২৬, ২২১৬০, ২২১৯২, ২২২০৯, ২২২১৮, ২২২৪৮, ২২২৬৩.
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯২
عَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله
عَنهُمَا، عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَثَلُ القَائِمِ في حُدُودِ
اللهِ وَالوَاقعِ فِيهَا، كَمَثَلِ قَومٍ اسْتَهَمُوا عَلَى سَفِينَةٍ فَصَارَ
بَعْضُهُمْ أعْلاها وَبَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا، وَكَانَ الَّذِينَ في أَسْفَلِهَا
إِذَا اسْتَقَوا مِنَ المَاءِ مَرُّوا عَلَى مَنْ فَوْقهُمْ، فَقَالُوا: لَوْ
أنَّا خَرَقْنَا في نَصِيبِنَا خَرْقاً وَلَمْ نُؤذِ مَنْ فَوقَنَا، فَإِنْ
تَرَكُوهُمْ وَمَا أرَادُوا هَلَكُوا جَمِيعاً، وَإنْ أخَذُوا عَلَى أيدِيهِمْ
نَجَوا وَنَجَوْا جَمِيعاً». رواه البخاري
নু‘মান
ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত সীমায় অবস্থানকারী
(সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে বাধাদানকারী) এবং ঐ সীমা লংঘনকারী (উক্ত কাজে
তোষামোদকারীর) উপমা হল এক সম্প্রদায়ের মত; যারা একটি দ্বিতলবিশিষ্ট পানি-জাহাজে
লটারি করে কিছু লোক উপর তলায় এবং কিছু লোক নিচের তলায় স্থান নিল। (নিচের তলা
সাধারণতঃ পানির ভিতরে ডুবে থাকে। তাই পানির প্রয়োজন হলে নিচের তলার লোকদেরকে উপর
তলায় যেতে হয় এবং সেখান হতে সমুদ্র বা নদীর পানি তুলে আনতে হয়।) সুতরাং পানির
প্রয়োজনে নিচের তলার লোকেরা উপর তলায় যেতে লাগল। (উপর তলার লোকদের উপর পানি পড়লে
তারা তাদের উপর ভাগে আসা অপছন্দ করল। তারা বলেই দিল, ‘তোমরা নিচে থেকে আমাদেরকে
কষ্ট দিতে এসো না।’)
নিচের তলার লোকেরা বলল, ‘আমরা যদি আমাদের ভাগে (নিচের তলায় কোন স্থানে) ছিদ্র করে
দই, তাহলে (দিব্যি আমরা পানি ব্যবহার করতে পারব) আর উপর তলার লোকদেরকে কষ্টও দেব
না। (এই পরিকল্পনার পর তারা যখন ছিদ্র করতে শুরু করল) তখন যদি উপর তলার লোকেরা
তাদেরকে নিজ ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয় (এবং সে কাজে বাধা না দেয়), তাহলে সকলেই (পানিতে
ডুবে) ধ্বংস হয়ে যায়। (উপর তলার লোকেরা সে অন্যায় না করলেও রেহাই পেয়ে যাবে না।)
পক্ষান্তরে উপর তলার লোকেরা যদি তাদের হাত ধরে (জাহাজে ছিদ্র করতে) বাধা দেয়,
তাহলে তারা নিজেরাও বেঁচে যায় এবং সকলকেই বাঁচিয়ে নেয়।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৯৩, ২৬৮৬, তিরমিযী ২১৭৩, আহমাদ ১৭৮৯৭,
১৭৯০৪, ১৭৯১২, ১৭৯৪৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯৩
عَن أُمِّ المُؤمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ
هِندِ بِنتِ أَبي أُمَيَّةَ حُذَيفَةَ رَضِيَ الله عَنهَا، عَنِ النَّبيّ صلى الله
عليه وسلم، أَنَّهُ قَالَ: «إنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ
فَتَعرِفُونَ وتُنْكِرُونَ، فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ، وَمَنْ أنْكَرَ فَقَدْ
سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، أَلاَ نُقَاتِلهم؟ قَالَ: «لاَ، مَا أَقَامُوا فيكُمُ الصَّلاةَ». رواه
مسلم
উম্মুল
মু’মেনীন উম্মে সালামাহ হিন্দ্ বিন্তে আবী উমাইয়া হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা
থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের উপর এমন শাসকবৃন্দ
নিযুক্ত করা হবে, যাদের (কিছু কাজ) তোমরা ভালো দেখবে এবং (কিছু কাজ) গর্হিত।
সুতরাং যে ব্যক্তি (তাদের গর্হিত কাজকে) ঘৃণা করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে এবং
যে আপত্তি ও প্রতিবাদ জানাবে, সেও পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি (তাতে)
সম্মত হবে এবং তাদের অনুসরণ করবে (সে ধ্বংস হয়ে যাবে)।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না?’ তিনি বললেন, ‘‘না; যে
পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করবে।’’[১]
[১] মুসলিম ১৮৫৪, তিরমিযী ২২৬৫, ৪৭৬০, আহমাদ ২৫৯৮৯, ২৬০৩৭,
২৬১৮৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯৪
عَن أُمِّ المُؤمِنِينَ أُمِّ الحَكَمِ
زَينَبَ بِنتِ جَحشٍ رَضِيَ الله عَنهَا : أن النَّبيّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ
عَلَيْهَا فَزِعاً، يَقُولُ: « لا إِلٰهَ إلاّ الله، وَيلٌ للْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ
قَدِ اقْتَرَبَ، فُتِحَ اليَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأجُوجَ وَمَأجُوجَ مِثلَ هذِهِ»،
وحلّق بأُصبُعيهِ الإبهامِ وَالَّتِي تَلِيهَا، فَقُلتُ : يَا رَسُولَ الله،
أنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، إِذَا كَثُرَ الخَبَثُ».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উম্মুল
মু’মিনীন উম্মুল হাকাম যয়নাব বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
কদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট শঙ্কিত অবস্থায় প্রবেশ করলেন। তিনি
বলছিলেন, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই, আরবের জন্য ঐ পাপ হেতু সর্বনাশ
রয়েছে যা সন্নিকটবর্তী। আজকে ইয়া’জূজ-মা’জূজের দেওয়াল এতটা খুলে দেওয়া হয়েছে।’’
এবং তিনি (তার পরিমাণ দেখানোর জন্য) নিজ বৃদ্ধ ও তর্জনী দুই আঙ্গুল দ্বারা
(গোলাকার) বৃত্ত বানালেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎলোক মউজুদ
থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, যখন নোংরামি বেশী
হবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৩৪৬, ৩৫৯৮, ৭০৫৯, ৭১৩৫, মুসলিম ২৮৮০,
তিরমিযী ২১৮৭, ইবনু মাজাহ ৩৯৫৩, আহমাদ ২৬৮৬৭, ২৬৮৭০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯৫
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إيَّاكُمْ وَالجُلُوسَ في
الطُّرُقَاتِ»! فقالوا : يَا رَسُول الله، مَا لَنَا مِنْ مجالِسِنا بُدٌّ، نتحدث
فِيهَا . فَقَالَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم: «فَإذَا أبَيْتُمْ إلاَّ المَجْلِسَ،
فَأَعْطُوا الطَّريقَ حَقَّهُ».قالوا : وما حَقُّ الطَّريقِ يَا رسولَ الله ؟
قَالَ: «غَضُّ البَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلامِ، وَالأمْرُ
بِالمَعْرُوفِ، والنَّهيُ عن المُنْكَرِ» مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বসা হতে বিরত থাক।’’
সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে মজলিসে না বসলে তো আমাদের উপায় নেই; আমরা
সেখানে কথাবার্তা বলি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন
তোমরা (সেখানে) না বসে মানবেই না, তখন তোমরা রাস্তার হক আদায় কর।’’ তাঁরা বললেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট
না দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, ভাল কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৬৫, ৬২২৯, মুসলিম ১২১১, আবূ দাউদ
৪৮১৫, আহমাদ ১০৯১৬, ১১০৪৪, ১১১৯২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯৬
عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا :
أن رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم رَأى خاتَماً مِنْ ذَهَبٍ في يَدِ رَجُلٍ
فنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ، وَقالَ: «يَعْمدُ أحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ
فَيَجْعَلُهَا في يَدِهِ»! فَقِيلَ لِلرَّجُلِ بَعدَمَا ذَهَبَ رَسُولُ الله صلى
الله عليه وسلم: خُذْ خَاتَمَكَ انْتَفِعْ بِهِ. قَالَ: لاَ وَالله لاَ آخُذُهُ
أبَداً وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم. رواه مسلم
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
একটি লোকের হাতে সোনার আংটি দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি তা খুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে
দিলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় আগুনের টুকরা নিয়ে তা স্বহস্তে
রাখতে চায়!’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলে সেই
লোকটিকে বলা হল, ‘তুমি তোমার আংটিটা তুলে নাও এবং (তা বিক্রি করে অথবা উপঢৌকন
দিয়ে) তার দ্বারা উপকৃত হও।’ সে বলল, ‘না। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা ফেলে দিয়েছেন, তা আমি কখনই তুলে নেব না।’[১]
[১] মুসলিম ২০৯০, আহমাদ ২০১১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯৭
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الحَسَنِ البَصرِي :
أَنَّ عَائِذَ بنَ عَمرٍو رضي الله عنه دَخَلَ عَلَى عُبَيْدِ اللهِ بنِ زِيَاد،
فَقَالَ : أي بُنَيَّ، إِنِّي سَمِعتُ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم يَقُولُ:
«إنَّ شَرَّ الرِّعَاءِ الحُطَمَةُ» فَإِيَّاكَ أنْ تَكُونَ مِنْهُمْ، فَقَالَ
لَهُ : اجلِسْ فَإِنَّمَا أنْتَ مِنْ نُخَالَةِ أصْحَابِ مُحَمَّد صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَ : وهل كَانَتْ لَهُم نُخَالَةٌ إِنَّمَا كَانَتِ النُّخَالَةُ
بَعْدَهُمْ وَفي غَيْرِهِمْ . رواه مسلم
আবূ
সাঈদ হাসান বাসরী থেকে বর্ণিতঃ
আয়েয
ইবনু ‘আমর (রাঃ) (ইরাকের গভর্নর) উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদের নিকট গেলেন। অতঃপর
(উপদেশ স্বরূপ) বললেন, ‘বেটা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, নিশ্চয় নিকৃষ্টতম শাসক সে, যে প্রজাদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে।
সুতরাং তুমি তাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে দূরে থাকো।’ যিয়াদ তাঁকে বলল, ‘আপনি বসুন,
আপনি তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের চালা আটার অবশিষ্ট
ভুসি (অপদার্থ)!’ তিনি বললেন, ‘তাঁদের মধ্যেও কি ভুসি আছে? (কখনই না।) বরং ভুসি তো
তাঁদের পরবর্তী এবং তাঁরা ছাড়া অন্যদের মধ্যে আছে।’[১]
[১] মুসলিম ১৮৩০, আহমাদ ২০১১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯৮
عَن حُذَيفَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ
صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسي بِيَدِهِ، لَتَأْمُرُنَّ
بِالمَعْرُوفِ، وَلَتَنْهَوُنَّ عَنْ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أنْ
يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَاباً مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُوْنَهُ فَلا يُسْتَجَابُ
لَكُمْ». رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن
হুযাইফাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! তোমরা
অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, তা না হলে শীঘ্রই
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে
দো‘আ করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না।’’[১]
[১] তিরমিযী ২১৬৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৯৯
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أفْضَلُ الجِهَادِ كَلِمَةُ عَدْلٍ
عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائرٍ». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: حديث حسن
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অত্যাচারী বাদশাহর নিকট হক কথা বলা
সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ।’’[১]
[১] তিরমিযী ২১৭৪, আবূ দাউদ ৪৩৪৪, ইবনু মাজাহ ৪০১১, আহমাদ
১০৭৫৯, ১১১৯৩, (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান সূত্রে)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
২০০
عَنْ أَبِي عَبدِ الله طَارِقِ بن شِهَابٍ
البَجَليِّ الأَحْمَسِيّ رضي الله عنه : أنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبيّ صلى الله
عليه وسلم وَقَد وَضَعَ رِجلَهُ في الغَرْزِ: أيُّ الجِهادِ أفضَلُ؟ قَالَ:
«كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائرٍ». رواه النسائي بإسناد صحيح
আবূ
আব্দুল্লাহ ত্বারেক ইবনু শিহাব বাজালী আহমাসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল এমতাবস্থায় যে, তিনি
(সওয়ারীর উপর আরোহণ করার জন্য) পাদানে পা রেখে দিয়েছিলেন, ‘কোন্ জিহাদ
সর্বশ্রেষ্ঠ?’ তিনি বললেন, ‘‘অত্যাচারী বাদশাহর সামনে হক কথা বলা।’’[১]
[১] নাসায়ী ৪২০৯, আহমাদ ১৮৩৫১, (নাসায়ী বিশুদ্ধ সূত্রে)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২০১
عَنْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ أَوَّلَ مَا دَخَلَ النَّقْصُ عَلٰى بَنِي إِسْرائيلَ
أَنَّهُ كَانَ الرَّجُلُ يَلْقىٰ الرَّجُلَ فَيَقُولُ : يَا هٰذَا اتَّقِ اللهِ
وَدَعْ مَا تَصْنَعُ فَإِنَّهُ لَا يَحِلُّ لَكَ، ثُمَّ يَلْقَاهُ مِنَ الْغَدِ
وَهُوَ عَلىٰ حَالِهِ، فَلَا يَمْنَعُهُ ذٰلِكَ أَنْ يَكُوْنَ أَكِيلَهُ
وَشَرِيْبَهُ وَقَعِيْدَهُ، فَلَمَّا فَعَلُوْا ذٰلِكَ ضَرَبَ اللهِ قُلُوْبَ
بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ» ثُمَّ قَالَ : ﴿لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۢ بَنِيٓ
إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۚ ذَٰلِكَ بِمَا
عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ٧٨ كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوۡنَ عَن مُّنكَرٖ فَعَلُوهُۚ لَبِئۡسَ مَا
كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ٧٩ تَرَىٰ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ يَتَوَلَّوۡنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۚ لَبِئۡسَ مَا
قَدَّمَتۡ لَهُمۡ أَنفُسُهُمۡ ﴾ إِلىٰ قَوْلِهِ : ﴿ فَٰسِقُونَ ﴾ [المائدة: ٧٨،
٨١] ثُمَّ قَالَ: «كَلاَّ، وَاللهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ، وَلَتَنْهَوُنَّ
عَنِ الْمُنْكَرِ، وَلَتَأْخُذُنَّ عَلىٰ يَدِ الظَّالِمِ، وَلَتَأْطِرُنَّهُ
عَلَى الْحَقِّ أَطْرًا، وَلَتَقْصُرُنَّهُ عَلَى الْحَقِّ قَصْراً، أَوْ
لَيَضْرِبَنَّ اللهِ بِقُلُوْبِ بَعْضِكُمْ عَلَى بَعْضٍ، ثُمَّ لَيَلْعَنْكُمْ
كَمَا لَعَنَهُمْ»رواه أبو داود، والترمذي وقال : حديث حسن .
ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ বানী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথমে এভাবে
অন্যায় ও অপকর্ম প্রবেশ করেঃ এক (আলিম) ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে মিলিত হতো এবং
তাকে বলত, হে অমুক! আল্লাহকে ভয় কর এবং যা করছ তা পরিত্যাগ কর, কারণ, তোমার জন্য এ
কাজ অবৈধ, সে তার সঙ্গে দ্বিতীয় দিনও মিলিত হয়ে তাকে একই অবস্থায় দেখতে পেত কিন্তু
সে কাজ তাকে তার পানাহার ও উঠা-বসায় অংশীদার হতে বাধা দিত না, তাদের অবস্থা এরকম
হওয়ার প্রেক্ষিতে তাদের একের অন্তরের (কালিমার) মাধ্যমে অপরের অন্তরকে আল্লাহ
তা‘আলা অন্ধকার করে দিলেন। তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ ‘‘বানী ইসলাঈলের
মাঝে যারা কুফরীর পথ ধরল দাঊদ ও ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামের মুখ দিয়ে তাদের প্রতি লানত
করা হলো। কেননা, তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং অতিরিক্ত সীমালঙ্ঘন করেছিল। তারা
পরস্পরকে পাপ কাজ করতে নিষেধ করত না। তারা অতিশয় নিকৃষ্ট কর্মপন্থা অবলম্বন
করেছিল।
বহু লোককে তোমরা দেখছ, যারা (মু‘মিনদের বদলে) কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব ও সহায়তা
করতে ব্যস্ত। নিশ্চয়ই সামনে খুব মন্দ পরিণতই রয়েছে, যার ব্যবস্থা তাদের
প্রবৃত্তিসমূহ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়েছেন। তাদের
আযাবভোগ স্থায়ী হবে। আল্লাহ, রাসূল এবং সেই জিনিসের প্রতি তারা যদি প্রকৃতই ঈমান
আনত, তাঁর (নাবীর) প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাহলে তারা কখনও বন্ধুরূপে (ঈমানদার
লোকদের বিপরীতে) কাফিরদেরকে গ্রহণ করতো না। কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তই
ফাসিক’’- (সূরা আল-মায়িদাহ্ঃ ৭৮-৮১)। তারপর তিনি (মহানবী) বললেনঃ কখনও নয়!
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কসম! অবশ্যই তোমরা সৎ কর্মের আদেশ দিতে
থাক এবং অন্যায় ও খারাপ কাজ হতে (মানুষকে) বিরত রাখ, অত্যাচারীর হাত মজবূত করে ধর
এবং তাকে টেনে তুলে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। তাকে হকের উপর এনে ছাড়। নচেৎ আল্লাহ
তা‘আলা তোমাদের (নেককার ও গুনাহ্গার) পরস্পরের অন্তরকে একত্রিত করে (অন্ধকার করে)
দিবেন, তারপর তোমাদেরকেও বানী ইসরাঈলের ন্যায় অভিশপ্ত করবেন। হাদীসটি ইমাম আবূ
দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। তিরমিযি বলেছেন, এটা হাসান হাদীস। হাদীসের মূল
শব্দগুলো আবূ দাউদের-৪৩৩৬।
মূল হাদীসের অর্থ নিম্নরূপঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যখন বানী ইসরাঈল গর্হিত কর্মে লিপ্ত হলো, তাদেরকে তাদের আলিমগণ তা হতে বিরত থাকতে
বলল, কিন্তু তারা তা করল না। তাদের সাথে আলিমগণ উঠা-বসা ও পানাহার চালিয়ে যেতে
থাকল। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের পরস্পরের হৃদয়কে একত্রিত করে দিলেন (ফলে আলিমরাও
অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ল)। আল্লাহ তা‘আলা দাউদ ও ঈসা ইবনু মারইয়ামের মুখ দিয়ে
তাদেরকে অভিশাপ দিলেন। কেননা, তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং অত্যন্ত বাড়াবাড়ি
শুরু করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঠেস দিয়ে বসা ছিলেন।
তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বলেলনঃ কখনও নয়, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন!
তাদেরকে তোমরা (অত্যাচারীদেরকে) হাত ধরে টেনে এনে হক্ব ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত
না করা পর্যন্ত ছেড়ে দিবে না।[১]
[১] আমি (আলবানী) বলছিঃ ইমাম তিরমিযী এরূপই বলেছেন। কিন্তু
তার হাসান আখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। কারণ এ হাদীসটির কেন্দ্রবিন্দু
হচ্ছে আবূ ওবাইদাহ্ ইবনু আব্দিল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ আর তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ্ ইবনু
মাসাঊদ (রাঃ) হতে শ্রবণ করেননি। যেমনটি ইমাম তিরমিযী বারবার উল্লেখ করেছেন। অতএব এ
সনদটি বিচ্ছিন্ন। এছাড়া তার সনদে চারভাবে ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে। আমি এগুলো সম্পর্কে
‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ গ্রন্থে (নং ১৬৬৬) বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
২০২
عَنْ أَبِي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رضي الله
عنه، قَالَ : يَا أيُّهَا النَّاسُ، إنّكُم لتَقرَؤُون هَذِهِ الآيَة : ﴿
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ عَلَيۡكُمۡ أَنفُسَكُمۡۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن
ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡۚ ﴾ [المائدة: ١٠٥] وَإِنِّي سَمِعتُ رَسُولَ الله صلى
الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الظَّالِمَ فَلَمْ
يأخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ أوشَكَ أنْ يَعُمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابٍ مِنْهُ». رواه
أَبُو داود والترمذي والنسائي بأسانيد صحيحة
আবূ
বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘হে
লোক সকল! তোমরা এই আয়াত পড়ছ, ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের আত্মরক্ষা করাই কর্তব্য।
তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে
পারবে না।’’ (সূরা মায়েদাহ ১০৫ আয়াত) কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘যখন লোকেরা অত্যাচারীকে (অত্যাচার করতে) দেখবে এবং
তার হাত ধরে না নেবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে (আমভাবে) তার শাস্তির কবলে
নিয়ে নেবেন।’’[১]
[১] আবূ দাউদ ৪৩৩৮, আহমাদ ১, ১৭, ৩০, ৫৪, (আবূ দাউদ, তিরমিযী,
নাসায়ী, সহীহ সনদ সূত্রে)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২৪
সেই ব্যক্তির শাস্তির বিবরণ
যে ব্যক্তি ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে; কিন্তু সে নিজেই তা মেনে চলে
না
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞أَتَأۡمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلۡبِرِّ وَتَنسَوۡنَ أَنفُسَكُمۡ وَأَنتُمۡ تَتۡلُونَ ٱلۡكِتَٰبَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٤٤ ﴾ [البقرة: ٤٤]
অর্থাৎ “কি আশ্চর্য! তোমরা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও, অথচ
তোমরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন কর, তবে কি তোমরা বুঝ না?” সূরা বাক্বারাহ ৪৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفۡعَلُونَ ٢ كَبُرَ مَقۡتًا عِندَ ٱللَّهِ أَن تَقُولُواْ مَا لَا تَفۡعَلُونَ ٣ ﴾ [الصف: ٢، ٣]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কর না, তা তোমরা বল কেন? তোমরা যা কর না তোমাদের
তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক।” (সূরা স্বাফ ২-৩ আয়াত)
তিনি শুআইব আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
﴿ وَمَآ أُرِيدُ أَنۡ أُخَالِفَكُمۡ إِلَىٰ مَآ أَنۡهَىٰكُمۡ عَنۡهُۚ ﴾ [هود: ٨٨]
অর্থাৎ (শুআইব বলল,) আর আমি এটা চাই না যে, আমি তোমাদের বিপরীত সেই সব কাজ করি, যা
হতে তোমাদেরকে নিষেধ করছি। (সূরা হূদ ৮৮ আয়াত)
২০৩
وَعَنْ أَبِي زَيدٍ أُسَامَةَ بنِ
حَارِثَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه
وسلم، يَقُولُ: «يُؤْتَى بالرَّجُلِ يَوْمَ القيَامَةِ فَيُلْقَى في النَّارِ،
فَتَنْدَلِقُ أقْتَابُ بَطْنِهِ فَيدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الحِمَارُ في
الرَّحَى، فَيَجْتَمِعُ إِلَيْه أهْلُ النَّارِ، فَيَقُولُونَ : يَا فُلانُ، مَا
لَكَ ؟ أَلَمْ تَكُ تَأمُرُ بالمعْرُوفِ وَتنهَى عَنِ المُنْكَرِ ؟ فَيقُولُ :
بَلَى، كُنْتُ آمُرُ بِالمَعْرُوفِ وَلا آتِيهِ، وأنْهَى عَنِ المُنْكَرِ
وَآتِيهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
যায়দ উসামাহ ইবনু যায়দ ইবনু হারেসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন এক
ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি
বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির
চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে
অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা
দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা
নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩২৬৭, ৭০৯৮, মুসলিম ২৯৮৯, আহমাদ ২১২৭৭,
২১২৮৭, ২১২৯৩, ২১৩১২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২৫
আমানত আদায় করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّواْ ٱلۡأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهۡلِهَا ﴾ [النساء: ٥٨]
অর্থাৎ “আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ
করবে।” (সূরা নিসা ৫৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّا عَرَضۡنَا ٱلۡأَمَانَةَ عَلَى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱلۡجِبَالِ فَأَبَيۡنَ أَن يَحۡمِلۡنَهَا وأَشۡفَقۡنَ مِنۡهَا وَحَمَلَهَا ٱلۡإِنسَٰنُۖ إِنَّهُۥ كَانَ ظَلُومٗا جَهُولٗا ٧٢ ﴾ [الاحزاب: ٧٢]
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত অর্পণ করতে
চেয়েছিলাম। ওরা ভয়ে বহন করতে অস্বীকার করল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয় সে
অতিশয় যালেম ও অতিশয় অজ্ঞ।” (সূরা আহযাব ৭২ আয়াত)
২০৪
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه :
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «آيةُ
المُنافقِ ثلاثٌ : إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعدَ أخْلَفَ، وَإِذَا
اؤْتُمِنَ خَانَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية: وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ
أنَّهُ مُسْلِمٌ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি; (১) কথা বললে
মিথ্যা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত রাখা হলে তার
খিয়ানত করে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৬০৯৫, মুসলিম ৫৯, তিরমিযী
২৬৩১, নাসায়ী ৫০২১, আহমাদ ৮৪৭০, ৮৯১৩, ১০৫৪২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২০৫
وَعَن حُذَيفَةَ بنِ اليَمَانِ رضي الله
عنه، قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
حَدِيثَينِ قَدْ رأيْتُ أحَدَهُمَا وأنا أنتظرُ الآخَر : حَدَّثَنَا أَنَّ
الأمَانَةَ نَزلَت في جَذرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ، ثُمَّ نَزَلَ القُرآنُ فَعَلِمُوا
مِنَ القرآن، وَعَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ، ثُمَّ حَدَّثَنَا عَن رَفعِ الأمَانَةِ،
فَقَالَ: «يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبهِ،
فَيَظَلُّ أثَرُهَا مِثلَ الوَكْتِ، ثُمَّ يَنَامُ النَّومَةَ فَتُقْبَضُ
الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبهِ، فَيَظَلُّ أثَرُهَا مِثلَ أَثَرِ المَجْلِ، كَجَمْرٍ
دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ، فَتَرَاهُ مُنْتَبراً وَلَيسَ فِيهِ شَيءٌ»
ثُمَّ أخَذَ حَصَاةً فَدَحْرَجَهُ عَلَى رِجْلِهِ «فَيُصْبحُ النَّاسُ
يَتَبَايعُونَ، فَلا يَكَادُ أحدٌ يُؤَدّي الأَمَانَةَ حَتَّى يُقَالَ : إنَّ في
بَني فُلان رَجُلاً أميناً، حَتَّى يُقَالَ لِلرَّجُلِ : مَا أجْلَدَهُ ! مَا
أَظْرَفَهُ ! مَا أعْقَلَهُ ! وَمَا في قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّة مِن خَرْدَل
مِنْ إيمَان».وَلَقدْ أتَى عَلَيَّ زَمَانٌ وَمَا أُبَالِي أيُّكُمْ بَايَعْتُ :
لَئن كَانَ مُسْلِماً لَيَرُدَّنَّهُ عليَّ دِينهُ، وَإنْ كَانَ نَصْرانِيّاً أَوْ
يَهُودِياً لَيَرُدَّنَّهُ عَلَيَّ سَاعِيهِ، وَأَمَّا اليَوْمَ فَمَا كُنْتُ
أُبَايعُ مِنْكُمْ إلاَّ فُلاناً وَفُلاناً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
হুযাইফাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট দু’টি হাদীস বর্ণনা
করেছেন। একটি তো আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি
আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমানত মানুষের অন্তরের অন্তঃস্তলে অবতীর্ণ হয়েছে।
অতঃপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর তারা কুরআন থেকে জ্ঞানার্জন করেছে। তারপর তারা
নবীর হাদীস থেকেও জ্ঞানার্জন করেছে। এরপর আমাদেরকে আমানত তুলে নেওয়া সম্পর্কে
বর্ণনা করেছেন, ‘‘মানুষ এক ঘুম ঘুমানোর পর তার অন্তর থেকে আমানত তুলে নেওয়া হবে।
তখন একটি বিন্দুর মত তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। পুনরায় মানুষ এক ঘুম ঘুমাবে।
আবারো তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেওয়া হবে। তখন জ্বলন্ত আগুন গড়িয়ে তোমার পায়ে
পড়লে যেমন একটা ফোস্কা পড়ে কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায় তার মত চিহ্ন থাকবে। তুমি
তাকে ফোলা দেখবে; কিন্তু বাস্তবে তাতে কিছুই থাকবে না।’’ অতঃপর (উদাহরণস্বরূপ)
তিনি একটি কাঁকর নিয়ে নিজ পায়ে গড়িয়ে দিলেন। (তারপর বলতে লাগলেন,) ‘‘সে সময় লোকেরা
বেচা-কেনা করবে কিন্তু প্রায় কেউই আমানত আদায় করবে না। এমনকি লোকে বলাবলি করবে যে,
অমুক বংশে একজন আমানতদার লোক আছে। এমনকি (দুনিয়াদার) ব্যক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করা
হবে, সে কতই না অদম্য! সে কতই না বিচক্ষণ! সে কতই না বুদ্ধিমান! অথচ তার অন্তরে
সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও থাকবে না।’’
(হুযাইফা বলেন,) ইতোপূর্বে আমার উপর এমন যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে, যখন কারো সাথে
বেচাকেনা করতে কোন পরোয়া করতাম না। কারণ সে মুসলিম হলে তার দ্বীন তাকে আমার
(খিয়ানত থেকে) বিরত রাখবে। আর খ্রিষ্টান অথবা ইয়াহূদী হলে তার শাসকই আমার হক
ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু বর্তমানের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি অমুক অমুক ছাড়া বেচা-কেনা
করতে প্রস্তুত নই।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৯৭, ৭০৮৬, ৭২৭৬, মুসলিম ১৪৩, তিরমিযী
২১৭৯, ইবনু মাজাহ ৪০৫৩, আহমাদ ২২৭৪৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২০৬
وَعَن حُذَيفَةَ وَأبي هُرَيرَةَ رَضِيَ
الله عَنهُمَا، قَالاَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «يَجمَعُ اللهُ
تبَارَكَ وَتَعَالَى النَّاسَ فَيَقُومُ المُؤمِنُونَ حَتَّى تُزْلَفَ لَهُمُ
الجَنَّةُ، فَيَأتُونَ آدَمَ صَلَواتُ اللهِ عَلَيهِ، فَيقُولُونَ : يَا أَبَانَا
اسْتَفْتِحْ لَنَا الجَنَّةَ، فَيقُولُ : وَهَلْ أخْرَجَكُمْ مِنَ الجَنَّةِ إلاَّ
خَطيئَةُ أبيكُمْ ! لَسْتُ بِصَاحِبِ ذلِكَ، اذْهَبُوا إِلَى ابْنِي إِبْراهيمَ
خَلِيل اللهِ . قَالَ : فَيَأتُونَ إبرَاهِيمَ فَيَقُولُ إبراهيم : لَسْتُ
بِصَاحِبِ ذلِكَ إِنَّمَا كُنْتُ خَليلاً مِنْ وَرَاءَ وَرَاءَ، اعْمَدُوا إِلَى
مُوسَى الَّذِي كَلَّمَهُ الله تَكليماً. فَيَأتُونَ مُوسَى، فَيَقُولُ : لستُ
بِصَاحِبِ ذلِكَ، اذْهَبُوا إِلَى عِيسى كلمةِ اللهِ ورُوحه، فيقول عيسى : لستُ
بصَاحبِ ذلِكَ، فَيَأتُونَ مُحَمَّداً صلى الله عليه وسلم فَيَقُومُ فَيُؤذَنُ
لَهُ، وتُرْسَلُ الأَمَانَةُ وَالرَّحِمُ فَيَقُومانِ جَنْبَتَي الصِّرَاطِ
يَمِيناً وَشِمَالاً فَيَمُرُّ أوَّلُكُمْ كَالبَرْقِ» قُلْتُ : بأبي وَأمِّي،
أيُّ شَيءٍ كَمَرِّ البَرقِ ؟ قَالَ: «ألَمْ تَرَوا كَيْفَ يمُرُّ وَيَرْجِعُ في
طَرْفَةِ عَيْن، ثُمَّ كَمَرّ الرِّيحِ، ثُمَّ كَمَرِّ الطَّيْرِ، وَشَدِّ
الرِّجَال تَجْري بهمْ أعْمَالُهُمْ، وَنَبيُّكُمْ قَائِمٌ عَلَى الصِّراطِ، يَقُولُ
: رَبِّ سَلِّمْ سَلِّمْ، حَتَّى تَعْجِزَ أعْمَالُ العِبَادِ، حَتَّى يَجِيء
الرَّجُلُ لا يَسْتَطِيعُ السَّيْرَ إلاَّ زَحْفاً، وَفي حَافَتي الصِّراطِ
كَلاَلِيبُ معَلَّقَةٌ مَأمُورَةٌ بِأخْذِ مَنْ أُمِرَتْ بِهِ، فَمَخْدُوشٌ نَاجٍ،
وَمُكَرْدَسٌ في النَّارِ».وَالَّذِي نَفْسُ أَبي هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ، إنَّ
قَعْرَ جَهَنَّمَ لَسَبْعُونَ خَرِيفاً. رواه مسلم
হুযাইফাহ
ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বরকতময় মহান আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) সকল
মানুষকে একত্রিত করবেন। অতঃপর মু’মিনগণ উঠে দাঁড়াবে; এমনকি জান্নাতও তাদের
নিকটবর্তী করে দেওয়া হবে। (যার কারণে তাদের জান্নাত যাওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়ে যাবে)।
সুতরাং তারা আদম (আঃ) র নিকট আসবে। অতঃপর বলবে, ‘হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য
(আল্লাহর কাছে) জান্নাত খুলে দেওয়ার আবেদন করুন।’ তিনি বলবেন, ‘(তোমরা কি জান না
যে,) একমাত্র তোমাদের পিতার ভুলই তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করেছে? সুতরাং
আমি এর যোগ্য নই। তোমরা আমার ছেলে ইব্রাহীম খলীলুল্লাহর নিকট যাও।’’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অতঃপর তারা ইব্রাহীম (আঃ) এর নিকট
যাবে।’’ ইব্রাহীম (আঃ) বলবেন, ‘আমি এর উপযুক্ত নই। আমি আল্লাহর খলীল (বন্ধু) ছিলাম
বটে, কিন্তু আমি এত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নই। (অতএব) তোমরা মূসার নিকট যাও, যার
সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন।’ ফলে তারা মূসা
(আঃ) এর নিকট যাবে। কিন্তু তিনি বলবেন, ‘আমি এর যোগ্য নই। তোমরা আল্লাহর কালেমা ও
তাঁর রূহ ঈসার নিকট যাও।’ কিন্তু ঈসা (আঃ) ও বলবেন, ‘আমি এর উপযুক্ত নই।’ অতঃপর
তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসবে। সুতরাং তিনি
দাঁড়াবেন।
অতঃপর তাঁকে (দরজা খোলার) অনুমতি দেওয়া হবে। আর আমানত ও আত্মীয়তার বন্ধনকে ছেড়ে
দেওয়া হবে। সুতরাং উভয়ে পুল সিরাত্বের দু’দিকে ডানে ও বামে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর
তোমাদের প্রথম দল বিদ্যুতের মত গতিতে (অতি দ্রুতবেগে) পুল পার হয়ে যাবে। আমি (আবূ
হুরাইরাহ) বললাম, ‘আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! বিদ্যুতের মত গতিতে পার
হওয়ার অর্থ কী?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি দেখনি যে, বিদ্যুত কিভাবে চোখের পলকে যায় ও
আসে?’’
অতঃপর (দ্বিতীয় দল) বাতাসের মত গতিতে (পার হবে)। তারপর (পরবর্তী দল) পাখী উড়ার মত
এবং মানুষের দৌড়ের মত গতিতে। তাদেরকে তাদের নিজ নিজ আমল (সিরাত্ব) পার করাবে। আর
তোমাদের নবী পুল-সিরাতের উপর দাঁড়িয়ে থাকবেন। তিনি বলবেন, ‘‘হে প্রভু! বাঁচাও,
বাঁচাও!’’ শেষ পর্যন্ত বান্দাদের আমলসমূহ অক্ষম হয়ে পড়বে। এমনকি কোন কোন ব্যক্তি
পাছা ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে (সিরাত্ব) পার হবে। আর সিরাত্বের দুই পাশে আঁকড়া ঝুলে
থাকবে। যাকে ধরার জন্য সে আদিষ্ট তাকে ধরে নেবে। অতঃপর (কিছু লোক) জখম হলেও বেঁচে
যাবে। আর কিছু লোককে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে ফেলা হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আবূ
হুরাইরার প্রাণ আছে! নিশ্চয় জাহান্নামের গভীরতা সত্তর বছরের (দূরত্বের পথ)।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১৯৯, মুসলিম ১৯৫, তিরমিযী ২১৮৬, ৩২২৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২০৭
وعَنْ أَبِي خُبَيبٍ عَبدِ اللهِ بنِ
الزُّبَيرِ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : لَمَّا وَقفَ الزُّبَيْرُ يَوْمَ
الجَمَل دَعَانِي فَقُمْتُ إِلَى جَنْبه، فَقَالَ : يَا بُنَيَّ، إنَّهُ لاَ
يُقْتَلُ اليَومَ إلاَّ ظَالِمٌ أَوْ مَظْلُومٌ، وَإنِّي لا أراني إلاَّ سَأُقْتَلُ
اليوم مظلوماً، وإنَّ مِنْ أكبرَ هَمِّي لَدَيْنِي، أفَتَرَى دَيْننا يُبقي من
مالِنا شَيئاً ؟ ثُمَّ قَالَ : يَا بُنَيَّ، بعْ مَا لَنَا وَاقْضِ دَيْنِي،
وَأوْصَى بِالثُّلُثِ وَثُلُثِهِ لِبَنِيهِ، يعني لبني عبد الله بن الزبير ثُلُثُ
الثُّلُث . قَالَ : فَإنْ فَضَلَ مِنْ مَالِنَا بَعْدَ قَضَاءِ الدَّينِ شَيء
فَثُلُثُه لِبَنِيكَ . قَالَ هِشَام : وَكَانَ بَعْضُ وَلَدِ عَبْدِ اللهِ قَدْ
وَازى بَعْضَ بَنِي الزُّبَيْرِ خُبيبٍ وَعَبَّادٍ، وَلهُ يَوْمَئذٍ تِسْعَةُ
بَنينَ وَتِسْعُ بَنَات . قَالَ عَبدُ الله : فَجَعلَ يُوصينِي بدَيْنِهِ
وَيَقُولُ : يَا بُنَيَّ، إنْ عَجَزْتَ عَن شَيْءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِنْ عَلَيهِ
بِمَوْلاَيَ . قَالَ : فَوَاللهِ مَا دَرَيْتُ مَا أرَادَ حَتَّى قُلْتُ : يَا
أبَتِ مَنْ مَوْلاَكَ ؟ قَالَ : الله . قَالَ : فَوَاللهِ مَا وَقَعْتُ في كُرْبةٍ
مِنْ دَيْنِهِ إلاَّ قُلْتُ : يَا مَوْلَى الزُّبَيْرِ اقْضِ عَنْهُ دَيْنَهُ
فَيَقْضِيَهُ . قَالَ : فَقُتِلَ الزُّبَيْرُ وَلَم يَدَعْ دِينَاراً وَلا
دِرْهماً إلاَّ أرَضِينَ، مِنْهَا الغَابَةُ وإحْدَى عَشْرَةَ دَاراً
بالمَدِينَةِ، وَدَارَيْنِ بالبَصْرَةِ، ودَاراً بالكُوفَةِ، ودَاراً بمِصْرَ .
قَالَ : وَإِنَّمَا كَانَ دَيْنُهُ الَّذِي كَانَ عَلَيهِ أنَّ الرَّجُلَ كَانَ
يَأتِيهِ بالمال، فَيَسْتَودِعُهُ إيَّاهُ، فَيَقُولُ الزُّبَيْرُ : لا، وَلَكِنْ
هُوَ سَلَفٌ إنِّي أخْشَى عَلَيهِ الضَّيْعَةَ. وَمَا وَليَ إمَارَةً قَطُّ وَلا
جِبَايَةً ولا خراجاً وَلاَ شَيئاً إلاَّ أنْ يَكُونَ في غَزْوٍ مَعَ رسولِ الله
صلى الله عليه وسلم أَوْ مَعَ أَبي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَان رضي الله عنهم،
قَالَ عَبدُ الله: فَحَسَبْتُ مَا كَانَ عَلَيهِ مِن الدَّيْنِ فَوَجَدْتُهُ
ألْفيْ ألْفٍ وَمئَتَي ألْف ! فَلَقِيَ حَكِيمُ بنُ حِزَام عَبْدَ الله بْنَ
الزُّبَيْرِ، فَقَالَ : يَا ابْنَ أخِي، كَمْ عَلَى أخي مِنَ الدَّيْنِ ؟
فَكَتَمْتُهُ وَقُلْتُ : مِئَةُ ألْف . فَقَالَ حَكيمٌ : واللهِ مَا أرَى
أمْوَالَكُمْ تَسَعُ هذِهِ . فَقَالَ عَبْدُ اللهِ : أرَأيْتُكَ إنْ كَانَتْ
ألْفَي ألف وَمئَتَيْ ألْف ؟ قَالَ : مَا أرَاكُمْ تُطيقُونَ هَذَا، فَإنْ
عَجَزْتُمْ عَنْ شَيءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِينُوا بي، قَالَ : وَكَانَ الزُّبَيرُ قَد
اشْتَرَى الغَابَةَ بِسَبْعِينَ ومئة ألف، فَبَاعَهَا عَبدُ اللهِ بِألْفِ ألْف
وَسِتّمِئَةِ ألْف، ثُمَّ قَامَ فَقَالَ : مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيرِ شَيْء
فَلْيُوافِنَا بِالغَابَةِ، فَأتَاهُ عَبدُ اللهِ بنُ جَعفَر، وَكَانَ لَهُ عَلَى
الزُّبَيرِ أرْبَعمئةِ ألْف، فَقَالَ لعَبدِ الله : إنْ شِئْتُمْ تَرَكْتُهَا
لَكمْ ؟ قَالَ عَبدُ الله : لا، قَالَ : فَإنْ شِئتُمْ جَعَلْتُمُوهَا فِيمَا
تُؤَخِّرُونَ إنْ إخَّرْتُمْ، فَقَالَ عَبدُ الله : لا، قَالَ : فَاقْطَعُوا لِي
قطْعَةً، قَالَ عَبدُ الله : لَكَ مِنْ هاهُنَا إِلَى هَاهُنَا . فَبَاعَ عَبدُ
اللهِ مِنهَا فَقَضَى عَنْهُ دَينَه وَأوْفَاهُ، وَبَقِيَ مِنْهَا أرْبَعَةُ
أسْهُم وَنِصْفٌ، فَقَدِمَ عَلَى مُعَاوِيَة وَعنْدَهُ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ،
وَالمُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ، وَابْنُ زَمْعَةَ، فَقَالَ لَهُ مُعَاويَةُ : كَمْ
قُوِّمَتِ الغَابَةُ ؟ قَالَ : كُلُّ سَهْم بمئَة ألف، قَالَ : كَمْ بَقِيَ
مِنْهَا ؟ قَالَ: أرْبَعَةُ أسْهُم وَنصْفٌ، فَقَالَ المُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيرِ :
قَدْ أخَذْتُ مِنْهَا سَهماً بِمئَةِ ألفٍ، قَالَ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ : قَدْ
أخَذْتُ مِنْهَا سَهْماً بمئَةِ ألْفٍ . وَقالَ ابْنُ زَمْعَةَ : قَدْ أخَذْتُ
سَهْماً بِمئَةِ ألْفٍ، فَقَالَ مُعَاويَةُ : كَمْ بَقِيَ مِنْهَا ؟ قَالَ :
سَهْمٌ ونصْفُ سَهْم، قَالَ : قَدْ أخَذْتُهُ بخَمْسِينَ وَمئَةِ ألْف . قَالَ :
وَبَاعَ عَبدُ الله بْنُ جَعفَر نَصيبهُ مِنْ مُعَاوِيَةَ بِسِتِّمِئَةِ ألْفٍ،
فَلَمَّا فَرَغَ ابْنُ الزُّبَيرِ مِنْ قَضَاءِ دَيْنِهِ، قَالَ بَنُو الزُّبَيرِ
: اقسمْ بَينَنَا ميراثَنا، قَالَ : وَاللهِ لا أقْسِمُ بَيْنَكُمْ حَتَّى أنَادِي
بالمَوْسم أرْبَعَ سنينَ : ألا مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيرِ دَيْنٌ
فَلْيَأتِنَا فَلْنَقْضِهِ . فَجَعَلَ كُلّ سَنَةٍ يُنَادِي في المَوْسِمِ،
فَلَمَّا مَضَى أرْبَعُ سنينَ قَسَمَ بيْنَهُمْ وَدَفَعَ الثُّلُثَ . وَكَانَ
للزُّبَيْرِ أرْبَعُ نِسْوَةٍ، فَأصَابَ كُلَّ امرَأةٍ ألْفُ ألف وَمِئَتَا ألْف،
فَجَميعُ مَالِه خَمْسُونَ ألفَ ألْفٍ وَمِئَتَا ألْفٍ . رواه البخاري
আবূ
খুবাইব আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
আমার পিতা যুবাইর) ‘জামাল’ যুদ্ধের দিন দাঁড়ালেন, তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। সুতরাং
আমি তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে বৎস! আজকের দিন যারা খুন হবে সে
অত্যাচারী হবে অথবা অত্যাচারিত। আমার ধারণা যে, আমি আজকে অত্যাচারিত হয়ে খুন হয়ে
যাব। আর আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা আমার ঋণের। (হে আমার পুত্র!) তুমি কি ধারণা করছ যে,
আমার ঋণ আমার কিছু সম্পদ অবশিষ্ট রাখবে (অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ করার পর কিছু মাল বেচে
যাবে)?’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে আমার পুত্র! তুমি আমার সম্পদ বেচে আমার ঋণ পরিশোধ
করে দিও।’ আর তিনি এক তৃতীয়াংশ সম্পদ অসিয়ত করলেন এবং এক তৃতীয়াংশের এক তৃতীয়াংশ
তাঁর অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ)-এর ছেলেদের জন্য অসিয়ত করলেন। তিনি
বললেন, ‘যদি ঋণ পরিশোধ করার পর আমার কিছু সম্পদ বেঁচে যায়, তাহলে তার এক তৃতীয়াংশ
তোমার ছেলেদের জন্য।’
(হাদীসের এক রাবী) হিশাম বলেন, আব্দুল্লাহর কিছু ছেলে যুবাইরের কিছু ছেলে খুবাইব ও
আববাদের সমবয়স্ক ছিল। সে সময় তাঁর নয়টি ছেলে ও নয়টি মেয়ে ছিল। আব্দুল্লাহ বলেন,
অতঃপর তিনি (যুবাইর) তাঁর ঋণের ব্যাপারে আমাকে অসিয়ত করতে থাকলেন এবং বললেন, ‘হে
বৎস! যদি তুমি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে যাও, তাহলে তুমি এ ব্যাপারে আমার মওলার
সাহায্য নিও।’ তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর কসম! তাঁর উদ্দেশ্য আমি বুঝতে
পারলাম না। পরিশেষে আমি বললাম, ‘আব্বাজান! আপনার মওলা কে?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ।’
আব্দুল্লাহ বলেন, অতঃপর আল্লাহর কসম! আমি তাঁর ঋণের ব্যাপারে যখনই কোন অসুবিধায়
পড়েছি তখনই বলেছি, ‘হে যুবাইরের মওলা! তুমি তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর ঋণ আদায় করে দাও।’
সুতরাং আল্লাহ তা আদায় করে দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ বলেন, (সেই যুদ্ধে) যুবাইর খুন হয়ে গেলেন এবং তিনি (নগদ) একটি দ্বীনার
ও দিরহামও ছেড়ে গেলেন না। কেবল জমি-জায়গা ছেড়ে গেলেন; তার মধ্যে একটি জমি ‘গাবাহ’
ছিল আর এগারোটি ঘর ছিল মদ্বীনায়, দু’টি বাসরায়, একটি কুফায় এবং একটি মিসরে। তিনি
বলেন, আমার পিতার ঋণ এইভাবে হয়েছিল যে, কোনো লোক তাঁর কাছে আমানত রাখার জন্য মাল
নিয়ে আসত। অতঃপর যুবাইর (রাঃ) বলতেন, ‘না, (আমানত হিসাবে নয়) বরং তা আমার কাছে ঋণ
হিসাবে থাকবে। কেননা, আমি তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’ (কারণ আমানত নষ্ট হলে
তা আদায় করা জরুরী নয়, কিন্তু ঋণ আদায় করা সর্বাবস্থায় জরুরী)।
তিনি কখনও গভর্নর হননি, না কদাচ তিনি ট্যাক্স, খাজনা বা অন্য কোন অর্থ আদায় করার
দায়িত্ব নিয়েছিলেন। (যাতে তাঁর মাল সংগ্রহে কোন সন্দেহ থাকতে পারে।) অবশ্য তিনি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু
আনহুমদের সঙ্গে জিহাদে অংশ নিয়েছিলেন (এবং তাতে গনীমত হিসাবে যা পেয়েছিলেন সে কথা
ভিন্ন)।
আব্দুল্লাহ বলেন, একদা আমি তাঁর ঋণ হিসাব করলাম, তো (সর্বমোট) ২২ লাখ পেলাম। অতঃপর
হাকীম ইবনু হিযাম আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। হাকীম বললেন, ‘হে
ভাতিজা! আমার ভাই (যুবাইর)এর উপর কত ঋণ আছে?’ আমি তা গোপন করলাম এবং বললাম, ‘এক
লাখ।’ পুনরায় হাকীম বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার মনে হয় না যে, তোমাদের সম্পদ এই ঋণ
পরিশোধে যথেষ্ট হবে।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘ কী রায় আপনার যদি ২২ লাখ হয়?’ তিনি
বললেন, ‘আমার মনে হয় না যে, তোমরা এ পরিশোধ করার ক্ষমতা রাখো। সুতরাং তোমরা যদি
কিছু পরিশোধে অসমর্থ হয়ে পড়, তাহলে আমার সহযোগিতা নিও।’
যুবাইর এক লাখ সত্তর হাজারের বিনিময়ে ‘গাবাহ’ কিনেছিলেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ সেটি ১৬
লাখের বিনিময়ে বিক্রি করলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন যে, ‘যুবাইরের উপর
যার ঋণ আছে সে আমার সঙ্গে ‘গাবাহ’তে সাক্ষাৎ করুক।’ (ঘোষণা শুনে) আব্দুল্লাহ ইবনু
জা’ফর তাঁর নিকট এলেন। যুবাইরকে দেওয়া তাঁর ৪ লাখ ঋণ ছিল। তিনি আব্দুল্লাহকে
বললেন, ‘তোমরা যদি চাও, তবে এ ঋণ তোমাদের জন্য মওকুফ করে দেব?’ আব্দুল্লাহ বললেন,
‘না।’ তিনি বললেন, ‘যদি তোমরা চাও যে, ঋণ (এখন আদায় না করে) পরে আদায় করবে, তাহলে
তাও করতে পার।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি আমাকে এই জমির এক
অংশ দিয়ে দাও।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘এখান থেকে এখান পর্যন্ত তোমার রইল।’
অতঃপর আব্দুল্লাহ ঐ জমি (ও বাড়ি)র কিছু অংশ বিক্রি করে তাঁর (পিতার) ঋণ
পরিপূর্ণরূপে পরিশোধ করে দিলেন। আর ঐ ‘গাবাহ’র সাড়ে চার ভাগ বাকী থাকল। অতঃপর তিনি
মুআবিয়াহর কাছে এলেন এমতাবস্থায় যে, তাঁর কাছে ‘আমর ইবনু উসমান, মুনযির ইবনু
যুবাইর এবং ইবনু যাম‘আহ উপস্থিত ছিলেন। মু‘আবিয়াহ তাঁকে বললেন, ‘গাবাহর কত দাম
হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক ভাগের এক লাখ।’ তিনি বললেন, ‘কয়টি ভাগ বাকী রয়ে
গেছে?’ তিনি বললেন, ‘সাড়ে চার ভাগ।’ মুনযির ইবনু যুবাইর বললেন, ‘আমি তার মধ্যে
একটি ভাগ এক লাখে নিয়ে নিলাম।’ ‘আমর ইবনু উসমান বললেন, ‘আমিও এক ভাগ এক লাখে নিয়ে
নিলাম।’ ইবনু যাম‘আহ বললেন, ‘আমিও এক ভাগ এক লাখে নিয়ে নিলাম।’ অবশেষে মু‘আবিয়াহ
বললেন, ‘আর কত ভাগ বাকী থাকল?’ তিনি বললেন, ‘দেড় ভাগ।’ তিনি বললেন, ‘আমি দেড় লাখে
তা নিয়ে নিলাম।’
আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু জা’ফর তাঁর ভাগটি মু‘আবিয়ার কাছে ছয় লাখে
বিক্রি করলেন।’
অতঃপর যখন ইবনু যুবাইর ঋণ পরিশোধ করে শেষ করলেন, তখন যুবাইরের ছেলেরা বলল, ‘(এবার)
তুমি আমাদের মধ্যে আমাদের মীরাস বণ্টন করে দাও।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি
তোমাদের মধ্যে (তা) বণ্টন করব না, যতক্ষণ না আমি চার বছর হজ্জের মৌসমে ঘোষণা করব
যে, যুবাইরের উপর যার ঋণ আছে সে আমাদের কাছে আসুক, আমরা তা পরিশোধ করে দেব।’ অতঃপর
তিনি প্রত্যেক বছর (হজ্জের) মৌসমে ঘোষণা করতে থাকলেন। অবশেষে যখন চার বছর পার হয়ে
গেল, তখন তিনি তাদের মধ্যে (মীরাস) বণ্টন করে দিলেন এবং এক তৃতীয়াংশ মাল (যাদেরকে
দেওয়ার অসিয়ত ছিল তাদেরকে তা) দিয়ে দিলেন। আর যুবাইরের চারটি স্ত্রী ছিল। প্রত্যেক
স্ত্রীর ভাগে পড়ল বারো লাখ ক’রে। তাঁর সর্বমোট পরিত্যক্ত সম্পদ ছিল পাঁচ কোটি
দু’লাখ।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১২৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২৬
অন্যায়-অত্যাচার করা হারাম
এবং অন্যায়ভাবে নেওয়া জিনিস ফেরৎ দেওয়া জরুরী
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ حَمِيمٖ وَلَا شَفِيعٖ يُطَاعُ ﴾ [غافر: ١٨]
অর্থাৎ “সীমালংঘনকারীদের জন্য অন্তরঙ্গ কোন বন্ধু নেই এবং এমন কোন সুপারিশকারীও
নেই যার সুপারিশ গ্রাহ্য করা হবে।” (সূরা মুমিন ১৮ আয়াত)
﴿ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٖ ﴾ [الحج: ٧١]
অর্থাৎ “যালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা হাজ্জ ৭১ আয়াত)
২০৮
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ
رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اتَّقُوا الظُّلْمَ ؛ فَإنَّ الظُّلْمَ
ظُلُمَاتٌ يَوْمَ القِيَامَةِ . وَاتَّقُوا الشُّحَّ ؛ فَإِنَّ الشُّحَّ أهْلَكَ
مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ . حَمَلَهُمْ عَلَى أنْ سَفَكُوا دِمَاءهُمْ،
وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ». رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা অত্যাচার করা থেকে বাঁচো, কেননা
অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকার স্বরূপ। (অর্থাৎ অত্যাচারী সেদিন আলো পাবে না)। আর
তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কৃপণতা পূর্ববর্তী লোকেদেরকে ধ্বংস করেছে। এ
কৃপণতা তাদেরকে নিজেদের রক্তপাত করার এবং হারামকে হালাল জানার প্রতি উদ্বুদ্ধ
করেছে।’’[১]
[১] মুসলিম ২৫৭৮, আহমাদ ১৪০৫২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২০৯
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه :
أَنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَتُؤَدَّنَّ الحُقُوقُ إِلَى
أهْلِهَا يَومَ القِيَامَةِ، حَتَّى يُقَادَ للشَّاةِ الجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ
القَرْنَاءِ». رواه مسلمُ، إنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بأعْوَرَ وإنَّهُ أعْوَر
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন প্রত্যেক হকদারের হক অবশ্যই
আদায় করা হবে। এমন কি শিংবিহীন ছাগলকে শিংযুক্ত ছাগলের নিকট থেকে বদলা দেওয়া
হবে।’’[১]
[১] মুসলিম ২৫৮২, তিরমিযী ২৪২০, আহমাদ ৭১৬৩, ৭৯৩৬, ৮০৮৯,
৮৬৩০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১০
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا،
قَالَ : كُنَّا نَتَحَدَّثُ عَنْ حَجَّةِ الوَدَاعِ، والنَّبيُّ صلى الله عليه
وسلم بَيْنَ أظْهُرِنَا، وَلا نَدْرِي مَا حَجَّةُ الوَدَاعِ حَتَّى حَمِدَ اللهَ
رَسُول الله صلى الله عليه وسلم وَأثْنَى عَلَيهِ ثُمَّ ذَكَرَ المَسْيحَ
الدَّجَّال فَأطْنَبَ في ذِكْرِهِ، وَقَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبيٍّ إلاَّ
أنْذَرَهُ أُمَّتَهُ، أنْذَرَهُ نُوحٌ وَالنَّبِيُّونَ مِنْ بَعْدِهِ، وَإِنَّهُ
إنْ يَخْرُجْ فِيكُمْ فَما خَفِيَ عَليْكُمْ مِنْ شَأنِه فَلَيْسَ يَخْفَى عَليْك
ُ عَيْنِ اليُمْنَى، كَأنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ . ألا إنَّ الله حَرَّمَ
عَلَيْكُمْ دِمَاءكُمْ وَأمْوَالَكُمْ كحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، في بَلَدِكُم
هَذَا، في شَهْرِكُمْ هَذَا، ألا هَلْ بَلّغْتُ ؟»قالُوا : نَعَمْ، قَالَ: «اَللهم
اشْهَدْ» ثلاثاً« وَيْلَكُمْ - أَوْ وَيْحَكُمْ - انْظُروا : لا تَرْجعُوا بَعْدِي
كُفّاراً يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ». رواه البخاري، وروى مسلم بعضه
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
বিদায়ী হজ্জ্বের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। এমতবস্থায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। আর আমরা জানতাম না যে, বিদায়ী হজ্জ
কী? পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করলেন।
অতঃপর কানা দাজ্জালের কথা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ যে
নবীই পাঠিয়েছেন, তিনি নিজ জাতিকে তার ব্যাপারে ভয় দেখিয়েছেন। নূহ ও তাঁর পরে
আগমনকারী নবীগণ তার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। যদি সে তোমাদের মধ্যে বের হয়,
তবে তার অবস্থা তোমাদের কাছে গোপন থাকবে না।
তোমাদের কাছে এ কথা গোপন নয় যে, তোমাদের প্রভু কানা নয়, আর দাজ্জাল কানা হবে। তার
ডান চোখ কানা হবে, তার চোখটি যেন (গুচ্ছ থেকে) ভেসে ওঠা আঙ্গুর। সতর্ক হয়ে যাও,
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি তোমাদের রক্ত ও মাল হারাম করে দিয়েছেন। যেমন
তোমাদের এদিন হারাম তোমাদের এই শহরে, তোমাদের এই মাসে। শোনো! আমি কি (আল্লাহর
পয়গাম) পৌঁছে দিয়েছি?’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি তিনবার বললেন, ‘‘হে
আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। (অতঃপর বললেন,) তোমাদের জন্য বিনাশ অথবা আফশোস। দেখো,
তোমরা আমার পর এমন কাফের হয়ে যেও না যে, তোমরা একে অপরের গর্দান মারবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৪০৩, ১৭৪২, ৬০৪৩, ৬১৬৬, ৬৭৭৫, ৬৮৫৮,
৭০৭৭, মুসলিম ৬৬, নাসায়ী ৪১২৫, ৪১২৬, ৪১২৭, ইবনু মাজাহ ৩৯৪৩, আহমাদ ৪৭৮৯, ৬১০৯, ৬১৫০,
৬৩২৯, (বুখারী, কিছু অংশ মুসলিম)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১১
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنهَا :
أَنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ ظَلَمَ قَيدَ شِبْرٍ مِنَ
الأرْضِ، طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أرَضِينَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কারো জমি এক বিঘত পরিমাণ
অন্যায়ভাবে দখল করে নেবে, (কিয়ামতের দিন) সাত তবক (স্তর) যমীন তার গলায় লটকে দেওয়া
হবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৫৩, ৩১৯৫, মুসলিম ১৬১২, আহমাদ ২৩৮৩২,
২৫৬১২, ২৫৬৯২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১২
وَعَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه قَالَ:
قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الله لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ،
فَإِذَا أخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ»، ثُمَّ قَرَأَ: وكذلك أخذ ربك إذا أخذ القرى وهي
ظالمة إن أخذه أليم شديد [هود: ١٠٢] مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীকে অবকাশ
দেন। অতঃপর যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন, তখন তাকে ছাড়েন না।’’ তারপর তিনি এই আয়াত
পড়লেন---যার অর্থ, ‘‘তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এরূপই হয়ে থাকে। যখন তিনি অত্যাচারী
জনপদকে পাকড়াও করে থাকেন। নিশ্চয়ই তাঁর পাকড়াও কঠিন যন্ত্রণাদায়ক।’’ সূরা হূদ ১০২
আয়াত, বুখারী-মুসলিম)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৬৮৬, মুসলিম ২৫৮৩, তিরমিযী ৩১১০, ইবনু
মাজাহ ৪০১৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১৩
وَعَن مُعَاذٍ رضي الله عنه، قَالَ :
بَعَثَنِي رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «إنَّكَ تَأتِي قَوْماً مِنْ
أهلِ الكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أنْ لا إِلٰهَ إلاَّ الله، وَأنِّي
رسولُ الله، فَإنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذلِكَ، فَأعْلِمْهُمْ أنَّ اللهَ قَدِ
افْتَرضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَواتٍ في كُلِّ يَوْمٍ وَلَيلَةٍ، فَإِنْ هُمْ
أطَاعُوا لِذَلِكَ، فَأعْلِمْهُمْ أنَّ اللهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً
تُؤخَذُ مِنْ أغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإنْ هُمْ أطَاعُوا
لِذَلِكَ، فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أمْوَالِهِمْ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ ؛
فإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَها وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
মু‘আয
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (ইয়ামানের শাসকরূপে) পাঠাবার সময় বলেছিলেন,
‘‘তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ। সুতরাং তুমি তাদেরকে ‘আল্লাহ ব্যতীত
কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’ এ কথার সাক্ষ্যদানের প্রতি দাওয়াত
দেবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাদের উপর
প্রতি দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন।
তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের সম্পদের ওপর
সাদকাহ (যাকাত) ফরয করেছেন। তাদের মধ্যে যারা সম্পদশালী তাদের থেকে যাকাত উসূল করে
যারা দরিদ্র তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তুমি
(যাকাত নেওয়ার সময়) তাদের উৎকৃষ্ট মাল নেওয়া থেকে দূরে থাকবে। আর অত্যাচারিতের
বদ-দো‘আ থেকে বাঁচবে। কারণ তার বদ-দো‘আ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই (অর্থাৎ
শীঘ্র কবুল হয়ে যায়)।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩৯৫, ১৪৫৮, ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭, ৭৩৭১,
৭৩৭২, মুসলিম ১৯, তিরমিযী ৩১১০, ৬২৫, ২০১৪, নাসায়ী ২৪৩৫, আবূ দাউদ ১৫৮৪, ইবনু মাজাহ
১৭৮৩, আহমাদ ২০৭২, দারেমী ১৬১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১৪
وَعَنْ أَبِي حُمَيدٍ عَبدِ الرَّحمَانِ
بنِ سَعدٍ السَّاعِدِي رضي الله عنه، قَالَ : اِسْتَعْمَلَ النَّبيُّ صلى الله
عليه وسلم رَجُلاً مِنَ الأزْدِ يُقَالُ لَهُ : ابْنُ اللُّتْبِيَّةِ عَلَى
الصَّدَقَةِ، فَلَمَّا قَدِمَ، قَالَ : هَذَا لَكُمْ، وَهَذَا أُهْدِيَ إِلَيَّ،
فَقَامَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم عَلَى المِنْبَرِ فَحَمِدَ الله وَأثْنَى
عَلَيهِ، ثُمَّ قَالَ: «أمَّا بَعدُ، فَإِنِّي أسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ منْكُمْ
عَلَى العَمَلِ مِمَّا وَلاَّنِي اللهُ، فَيَأتِي فَيَقُولُ : هَذَا لَكُمْ وَهَذا
هَدِيَّةٌ أُهْدِيتْ إلَيَّ، أفَلا جَلَسَ في بيت أبِيهِ أَوْ أُمِّهِ حَتَّى
تَأتِيَهُ هَدِيَّتُهُ إنْ كَانَ صَادِقاً، واللهِ لا يَأخُذُ أحَدٌ مِنْكُمْ
شَيئاً بِغَيرِ حَقِّهِ إلاَّ لَقِيَ الله تَعَالَى، يَحْمِلُهُ يَوْمَ
القِيَامَةِ، فَلا أعْرِفَنَّ أحَداً مِنْكُمْ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُ بَعيراً لَهُ
رُغَاءٌ، أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ، أَوْ شَاةً تَيْعَرُ» ثُمَّ رفع يديهِ
حَتَّى رُؤِيَ بَيَاضُ إبْطَيْهِ، فَقَالَ: «اَللهم هَلْ بَلَّغْتُ» ثلاثاً. مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আবূ
হুমাইদ আব্দুর রহমান ইবনু সা‘দ সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয্দ গোত্রের ইবনুলুতবিয়্যাহ নামক এক ব্যক্তিকে
যাকাত আদায় করার কাজে কর্মচারী নিয়োগ করলেন। সে ব্যক্তি (আদায়কৃত মালসহ) ফিরে এসে
বলল, ‘এটা আপনাদের (বায়তুল মালের), আর এটা আমাকে উপহার স্বরূপ দেওয়া হয়েছে।’
এ কথা শুনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠে দন্ডায়মান
হয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করে বললেন, ‘‘অতঃপর বলি যে, আল্লাহ আমাকে যে
সকল কর্মের অধিকারী করেছেন তার মধ্য হতে কোনও কর্মের তোমাদের কাউকে কর্মচারী নিয়োগ
করলে সে ফিরে এসে বলে কি না, ‘এটা আপনাদের, আর এটা উপহার স্বরূপ আমাকে দেওয়া
হয়েছে!’ যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে তার বাপ-মায়ের ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন, তাকে
কোন উপহার দেওয়া হচ্ছে কি না? আল্লাহর কসম; তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন জিনিস
অনধিকার গ্রহণ করবে, সে কিয়ামতের দিন তা নিজ ঘাড়ে বহন করা অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার
সাথে সাক্ষাৎ করবে। অতএব আমি যেন অবশ্যই চিনতে না পারি যে, তোমাদের মধ্য হতে কেউ
নিজ ঘাড়ে চিঁহিঁ-রববিশিষ্ট উঁট, অথবা হাম্বা-রববিশিষ্ট গাই, অথবা
ম্যা-ম্যা-রববিশিষ্ট ছাগল বহন করা অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছ।’’
আবূ হুমাইদ (রাঃ) বলেন, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাতকে
উপর দিকে এতটা তুললেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখা গেল। অতঃপর তিনবার বললেন,
‘‘হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিলাম?’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৫৯৭, ৯২৫, ১৫০০, ৬৬৩৬, ৬৯৭৯, ৭১৭৪,
সু-১৮৩২, আবূ দাউদ ২৯৪৬, আহমাদ ২৩০৮৭, ২৩০৯০, দারেমী ১৬৬৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১৫
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلمَةٌ لأَخِيه،
مِنْ عِرضِهِ أَوْ مِنْ شَيْءٍ، فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ اليَوْمَ قبْلَ أنْ لاَ
يَكُونَ دِينَار وَلاَ دِرْهَمٌ ؛ إنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ
بِقَدْرِ مَظْلمَتِهِ، وَإنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ
صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيهِ». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার (কোন মুসলিম) ভাইয়ের উপর
তার সম্ভ্রম অথবা কোন বিষয়ে যুলুম করেছে, সে যেন আজই (দুনিয়াতে) তার কাছে (ক্ষমা
চেয়ে) হালাল করে নেয়, ঐ দিন আসার পূর্বে যেদিন দ্বীনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না।
তার যদি কোন নেক আমল থাকে, তবে তার যুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা হতে নিয়ে নেওয়া হবে।
আর যদি তার নেকী না থেকে, তবে তার (মযলূম) সঙ্গীর পাপরাশি নিয়ে তার (যালেমের) উপর
চাপিয়ে দেওয়া হবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৪৯, ৬৫৩৪, আহমাদ ৯৩৩২, ১০১৯৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১৬
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ الله عَنهُمَا، عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «المُسْلِمُ منْ
سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا
نَهَى اللهُ عَنْهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রকৃত মুসলিম সেই, যার জিভ ও হাত থেকে
সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির (দ্বীনের খাতিরে স্বদেশ ত্যাগকারী)
সেই, যে আল্লাহ যে সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তা ত্যাগ করে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১০, ৬৪৮৪, মুসলিম ৪০, নাসায়ী ৪৯৯৬,
আবূ দাউদ ২৪৮১, আহমাদ ৬৪৫১, ৬৪৭৮, ৬৭১৪, ৬৭৫৩, ৬৭৬৭, ৬৭৭৪, ৬৭৯৬, দারেমী ২৭১৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১৭
وَعَنهُ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ عَلَى
ثَقَل النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ كِرْكِرَةُ، فَمَاتَ،
فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: «هُوَ في النَّارِ»فَذَهَبُوا
يَنْظُرُونَ إِلَيْه، فَوَجَدُوا عَبَاءةً قَدْ غَلَّهَا . رواه البخاري
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামানের জন্য একটি লোক নিযুক্ত
ছিল। তাকে কিরকিরাহ বলা হত। সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সে জাহান্নামী।’’ অতঃপর (এ কথা শুনে) সাহাবীগণ তাকে দেখতে
গেলেন (ব্যাপার কী?) সুতরাং তাঁরা একটি আংরাখা (বুক-খোলা লম্বা ও ঢিলা জামা)
পেলেন, সেটি সে (গনীমতের মাল থেকে) চুরি করে নিয়েছিল।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩০৭৪, ইবনু মাজাহ ২৮৪৯, আহমাদ ৬৪৫৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১৮
وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ نُفَيْعِ بنِ
الحَارِثِ رضي الله عنه عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إنَّ
الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ
وَالأَرضَ: السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرَاً، مِنْهَا أرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثٌ
مُتَوالِياتٌ: ذُو القَعْدَة، وذُو الحِجَّةِ، وَالمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ
الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشعْبَانَ، أيُّ شَهْر هَذَا ؟» قُلْنَا : اللهُ
وَرَسُولُهُ أعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَننَّا أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ
اسْمِهِ، قَالَ: «ألَيْسَ ذَا الحِجَّةِ ؟» قُلْنَا : بَلَى . قَالَ: «فَأيُّ
بَلَد هَذَا ؟»قُلْنَا : اللهُ ورَسُولُهُ أعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا
أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيرِ اسْمِهِ . قَالَ: «ألَيْسَ البَلْدَةَ ؟»قُلْنَا :
بَلَى . قَالَ: «فَأيُّ يَوْم هَذَا ؟»قُلْنَا : اللهُ ورَسُولُهُ أعْلَمُ،
فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بغَيرِ اسْمِهِ . قَالَ: «ألَيسَ
يَوْمَ النَّحْرِ ؟»قُلْنَا : بَلَى . قَالَ: «فَإنَّ دِمَاءكُمْ وَأمْوَالَكُمْ
وَأَعْرَاضَكُمْ عليكم حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا في بَلَدِكُمْ هَذَا
في شَهْرِكُمْ هَذَا، وَسَتَلْقُونَ رَبَّكُمْ فَيَسْألُكُمْ عَنْ أعْمَالِكُمْ،
ألا فَلا تَرْجعوا بعدي كُفّاراً يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْض، ألا لَيُبَلِّغ
الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَلَعَلَّ بَعْضَ مَنْ يَبْلُغُهُ أنْ يَكُونَ أوْعَى لَهُ
مِنْ بَعْض مَنْ سَمِعَهُ»، ثُمَّ قَالَ : «إلاَّ هَلْ بَلَّغْتُ، ألاَ هَلْ
بَلَّغْتُ ؟» قُلْنَا : نَعَمْ . قَالَ: «اَللهمّ اشْهَدْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
বাকরাহ নুফাই ইবনুল হারেস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় যামানা (কাল) নিজের ঐ অবস্থায়
ফিরে এল যেদিন আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। (অর্থাৎ দুনিয়া
সৃষ্টি করার সময় যেরূপ বছর ও মাসগুলো ছিল, এখন পুনর্বার সে পুরাতন অবস্থায় ফিরে এল
এবং আরবের মুশরিকরা যে নিজেদের মন মত মাসগুলোকে আগে-পিছে করেছিল তা এখন থেকে শেষ
করে দেওয়া হল।) বছরে বারটি মাস; তার মধ্যে চারটি হারাম (সম্মানীয়) মাস। তিনটি
পরস্পরঃ যুল ক্বা‘দাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররাম। আর (চতুর্থ হল) মুদ্বার গোত্রের
রজব; যা জুমাদা ও শা‘বান এর মধ্যে রয়েছে। এটা কোন্ মাস?’’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল সর্বাধিক জ্ঞাত।’
অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়তো তার নাম
ব্যতীত অন্য নাম বলবেন। তিনি বললেন, ‘‘এটা যুল-হিজ্জাহ নয় কি?’’ আমরা বললাম,
‘অবশ্যই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘এটা কোন্ শহর?’’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল
সর্বাধিক জ্ঞাত।’ অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে,
তিনি হয়তো তার নাম ব্যতীত অন্য নাম বলবেন। তিনি বললেন, ‘‘এ শহর (মক্কা) নয় কি?’’
আমরা বললাম, ‘অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘আজ কোন্ দিন?’’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল সর্বাধিক জ্ঞাত।’ অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম, তিনি হয়তো এর অন্য
নাম বলবেন।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘এটা কি কুরবানীর দিন নয়?’’ আমরা বললাম, ‘অবশ্যই।’ অতঃপর তিনি
বললেন, ‘‘নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল এবং তোমাদের সম্ভ্রম তোমাদের (আপসের
মধ্যে) এ রকমই হারাম (ও সম্মানীয়) যেমন তোমাদের এ দিনের সম্মান তোমাদের এ শহরে এবং
তোমাদের এ মাসে রয়েছে। শীঘ্রই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। অতঃপর
তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সুতরাং তোমরা আমার পর এমন
কাফের হয়ে যেও না যে, তোমরা এক অপরের গর্দান মারবে। শোনো! উপস্থিত ব্যক্তি যেন
অনুপস্থিতকে (এ সব কথা) পৌঁছে দেয়। কারণ, যাকে পৌঁছাবে সে শ্রোতার চেয়ে অধিক
স্মৃতিধর হতে পারে।’’ অবশেষে তিনি বললেন, ‘‘সতর্ক হয়ে যাও! আমি কি পৌঁছে দিলাম?’’
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১৯৭, ৬৭, ১০৫, ১৭৪১, ৪৪০৬, ৪৬৬২, ৫৫৫০,
৭০৭৮, ৭৪৪৭, মুসলিম ১৬৭৯, ইবনু মাজাহ ২৩৩, আহমাদ ১৯৮৭৩, ১৯৮৯৪, ১৯৯৩৬, ১৯৯৮৫, দারেমী
১৯১৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২১৯
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ إِيَاسِ بنِ ثَعلَبَةَ
الحَارِثِي رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنِ
اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِينِهِ، فَقدْ أوْجَبَ اللهُ لَهُ
النَّارَ، وَحَرَّمَ عَلَيهِ الجَنَّةَ»فَقَالَ رَجُلٌ : وإنْ كَانَ شَيْئاً
يَسيراً يَا رَسُول الله ؟ فَقَالَ: «وإنْ قَضيباً مِنْ أرَاك». رواه مسلم
আবূ
উমামাহ ইয়াস ইবনু সা’লাবা হারেসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি (মিথ্যা) কসম খেয়ে কোন
মুসলিমর হক মেরে নেবে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম ওয়াজেব এবং জান্নাত হারাম
করে দেবেন।’’ একটি লোক বলল, ‘যদি তা নগণ্য জিনিস হয় হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি
বললেন, ‘‘যদিও তা পিল্লু গাছের একটি ডালও হয়।’’[১]
[১] মুসলিম ১৩৭, নাসায়ী ৫৪১৯, ইবনু মাজাহ ২৩২৪, আহমাদ
২১৭৩৬, মুওয়াত্তা মালেক -১৪৩৫, দারেমী ২৬০৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২০
وَعَن عَدِيّ بنِ عَميْرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ : سمعت رَسُول الله صلى الله عليه وسلم، يقول: «مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ
مِنْكُمْ عَلَى عَمَل، فَكَتَمَنَا مِخْيَطاً فَمَا فَوْقَهُ، كَانَ غُلُولاً
يَأتِي به يَومَ القِيَامَةِ»فَقَامَ إليه رَجُلٌ أسْوَدُ مِنَ الأنْصَارِ،
كَأنِّي أنْظُرُ إِلَيْهِ، فَقَالَ : يَا رَسُول الله، اقْبَلْ عَنِّي عَمَلَكَ،
قَالَ: «وَمَا لَكَ ؟»قَالَ: سَمِعْتكَ تَقُولُ كَذَا وكَذَا، قَالَ: «وَأَنَا
أقُولُه الآنَ : مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَلْيَجِيءْ بِقَلِيلِهِ
وَكَثِيرِهِ، فَمَا أُوتِيَ مِنْهُ أخَذَ، وَمَا نُهِيَ عَنْهُ انْتَهَى». رواه
مسلم
আদী
ইবনু আমীরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমরা তোমাদের মধ্যে
যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করি, অতঃপর সে আমাদের কাছে সূঁচ অথবা তার চেয়ে বেশী (কিম্বা
কম কিছু) লুকিয়ে নেয়, তো এটা খিয়ানত ও চুরি করা হয়। কিয়ামতের দিন সে তা সঙ্গে নিয়ে
হাজির হবে।’’ এ কথা শুনে আনসারদের মধ্যে একজন কৃষ্ণকায় মানুষ উঠে দাঁড়ালেন, যেন
আমি তাকে (এখন) দেখছি। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি (যে কাজের দায়িত্ব
আমার উপর অর্পণ করেছিলেন) তা আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার কি
হয়েছে?’’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে এ রকম কথা বলতে শুনলাম।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি এখনো
বলছি যে, যাকে আমরা কোন কাজে নিযুক্ত করি, সে যেন অল্প-বেশী (সমস্ত মাল) আমার কাছে
নিয়ে আসে। অতঃপর তা হতে তাকে যতটা দেওয়া হবে, তাইই সে গ্রহণ করবে এবং যা হতে তাকে
বিরত রাখা হবে, সে তা থেকে বিরত থাকবে।’’[১]
[১] মুসলিম ১৮৩৩, আবূ দাউদ ৩৫৮১, আহমাদ ১৭২৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২১
وعَن عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه،
قَالَ : لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيبَر أقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ أصْحَابِ النَّبيِّ صلى
الله عليه وسلم، فقَالُوا : فُلاَنٌ شَهِيدٌ، وفُلانٌ شَهِيدٌ، حَتَّى مَرُّوا
عَلَى رَجُلٍ، فقالوا : فُلانٌ شَهِيدٌ . فَقَالَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم:
«كَلاَّ، إنِّي رَأيْتُهُ في النَّار في بُرْدَةٍ غَلَّهَا أَوْ عَبَاءة». رواه
مسلم
উমার
ইবনু খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
খাইবারের যুদ্ধ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবী এসে
বললেন, ‘অমুক অমুক শহীদ হয়েছে।’ অতঃপর তাঁরা একটি লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন
এবং বললেন, ‘অমুক শহীদ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘কখনোই না।
সে (গনীমতের) মাল থেকে একটি চাদর অথবা আংরাখা (বুক-খোলা লম্বা ও ঢিলা জামা) চুরি
করেছিল, সে জন্য আমি তাকে জাহান্নামে দেখলাম।’’[১]
[১] মুসলিম ১১৪, তিরমিযী ১৫৭৪, আহমাদ ২০৩,৩৩০, দারেমী
২৪৮৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২২
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ الحَارِثِ بنِ
رِبعِيٍّ رضي الله عنه، عن رَسُول الله صلى الله عليه وسلم : أَنَّهُ قَامَ
فِيهِم، فَذَكَرَ لَهُمْ أنَّ الجِهَادَ في سَبِيلِ الله، وَالإِيمَانَ بالله
أفْضَلُ الأعْمَالِ، فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، أرَأيْتَ إنْ
قُتِلْتُ في سبيلِ الله، تُكَفَّرُ عَنّي خَطَايَايَ ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُول الله
صلى الله عليه وسلم: «نَعَمْ، إنْ قُتِلْتَ في سبيلِ اللهِ، وَأنْتَ صَابرٌ
مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيرُ مُدْبر»ثُمَّ قَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم:
«كَيْفَ قُلْتَ ؟» قَالَ : أرَأيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سبيلِ الله، أتُكَفَّرُ عَنّي
خَطَايَايَ ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: «نَعمْ، وَأنْتَ
صَابرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيرُ مُدْبِرٍ، إلاَّ الدَّيْنَ ؛ فإنَّ جِبريلَ
عليه السلام قَالَ لي ذلِكَ». رواه مسلم
আবূ
ক্বাতাদাহ হারেস ইবনু রিবয়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের) মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর
তাঁদের জন্য বর্ণনা করলেন যে, ‘‘আল্লাহর পথে জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করা সর্বোত্তম আমল।’’ এ শুনে একটি লোক দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল!
আপনি বলুন, যদি আমাকে আল্লাহর পথে হত্যা করে দেওয়া হয়, তবে কি আমার পাপরাশি মোচন
করে দেওয়া হবে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘‘হ্যাঁ।
যদি তুমি আল্লাহর পথে ধৈর্যশীল ও নেকীর কামনাকারী হয়ে (শত্রুর দিকে) অগ্রগামী হয়ে
এবং পিছপা না হয়ে খুন হও, তাহলে।’’
পুনরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি কি যেন বললে?’’
সে বলল, ‘আপনি বলুন, যদি আল্লাহর পথে আমাকে হত্যা করা হয়, তবে কি আমার পাপরাশি
মোচন করে দেওয়া হবে?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ। যদি
তুমি আল্লাহর পথে ধৈর্যশীল ও নেকীর কামনাকারী হয়ে (শত্রুর দিকে) অগ্রগামী হয়ে এবং
পিছপা না হয়ে (খুন হও, তাহলে)। কিন্তু ঋণ (ক্ষমা হবে না)। কেননা জিবরীল আলাইহিস
সালাম আমাকে এ কথা বললেন।’’[১]
[১] মুসলিম ১৮৮৫, তিরমিযী ১৭১২, নাসায়ী ৩১৫৬, ৩১৫৭, ৩১৫৮,
আহমাদ ২২০৩৬, ২২০৭৯, ২২১২০,মুওয়াত্তা মালেক ১০০৩, দারেমী ২৪১২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২৩
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه :
أنَّ رَسولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أتدرُونَ مَنِ المُفْلِسُ ؟»قَالُوا
: المفْلسُ فِينَا مَنْ لاَ دِرهَمَ لَهُ ولا مَتَاع، فَقَالَ: «إنَّ المُفْلسَ
مِنْ أُمَّتي مَنْ يأتي يَومَ القيامَةِ بصَلاَةٍ وَصِيامٍ وزَكاةٍ، ويأتي وقَدْ
شَتَمَ هَذَا، وقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مالَ هَذَا، وسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ
هَذَا، فيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وهَذَا مِنْ حَسناتهِ، فإنْ فَنِيَتْ
حَسَناتُه قَبْل أنْ يُقضى مَا عَلَيهِ، أُخِذَ منْ خَطَاياهُم فَطُرِحَتْ
عَلَيهِ، ثُمَّ طُرِحَ في النَّارِ». رواه مُسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে?’’
তাঁরা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কাছে কোন দিরহাম এবং কোনো
আসবাব-পত্র নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি,
যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাতের (নেকী) নিয়ে হাযির হবে। (কিন্তু এর সাথে
সাথে সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ
করেছে, কারো (অবৈধরূপে) মাল ভক্ষণ করেছে। কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে।
অতঃপর এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে, এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে।
পরিশেষে যদি তার নেকীরাশি অন্যান্যদের দাবী পূরণ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে
তাদের পাপরাশি নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা
হবে।’’[১]
[১] মুসলিম ২৫৮১, তিরমিযী ২৪১৮, আহমাদ ৭৯৬৯, ৮২০৯, ৮৬২৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২৪
وَعَن أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ الله عَنهَا :
أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إنَّمَا أنا بَشَرٌ، وَإنَّكُمْ
تَخْتَصِمُونَ إلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أنْ يَكُونَ ألْحَنَ بِحُجّتِهِ مِنْ
بَعْضٍ، فأَقْضِيَ لَهُ بِنَحْوِ مَا أسْمعُ، فَمَنْ قَضَيتُ لَهُ بِحَقِّ أخِيهِ
فَإِنَّما أقطَعُ لَهُ قِطعةً مِنَ النَّارِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উম্মে
সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি তো একজন মানুষ। আর তোমরা (বিবাদ করে)
ফায়সালার জন্য আমার নিকট আসো। হয়তো তোমাদের কেউ কেউ অন্যের তুলনায় অধিক বাকপটু। আর
আমি তার কথার ভিত্তিতে তার পক্ষে ফায়সালা করি। সুতরাং আমি যদি কাউকে তার (মুসলিম)
ভায়ের হক তার জন্য ফায়সালা করে দিই, তাহলে আসলে আমি তার জন্য আগুনের টুকরা কেটে
দিই।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৫৮, ২৬৮০, ৬৯৬৭, ৭১৬৯, ৭১৮১, ৭১৮৫,
মুসলিম ১৭১৩, নাসায়ী ৫৪০১, আবূ দাউদ ৩৫৮৩, ইবনু মাজাহ ২৩১৭, আহমাদ ২৫৯৫২, ২৬০৭৮, ২৬০৮৬,
২৬১৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২৫
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا،
قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «لَنْ يَزَالَ المُؤْمِنُ في
فُسْحَةٍ مِنْ دِينهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَماً حَرَاماً». رواه البخاري
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিন ব্যক্তি তার দ্বীনের প্রশস্ততায়
থাকে; যতক্ষণ না সে অবৈধ রক্তপাতে লিপ্ত হয়।’’[১]
[১] (অর্থাৎ, খুন করলে দ্বীন সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং খুনী
কুফরীর নিকটবর্তী হয়ে যায়।) সহীহুল বুখারী ৬৮৬২, ৬৮৬৩, আহমাদ ৫৬৪৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২৬
وَعَن خَولَةَ بِنتِ عَامِرٍ
الأنصَارِيَّة، وَهِيَ امرأَةُ حَمْزَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَتْ : سَمِعتُ
رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، يقول: «إنَّ رِجَالاً يَتَخَوَّضُونَ فِي مَالِ
الله بغَيرِ حَقٍّ، فَلَهُمُ النَّارُ يَومَ القِيَامَةِ». رواه البخاري
হামযাহ
(রাঃ)-এর স্ত্রী খাওলাহ বিনতে আমের আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘কিছু লোক আল্লাহর
মাল নাহক ব্যয়-বণ্টন করবে। সুতরাং তাদের জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন
রয়েছে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১১৮, তিরমিযী ২৩৭০, আহমাদ ২৬৫১৪, ২৬৫৮৩,
২৬৭৭২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২৭
মুসলিমদের মান-মর্যাদার
প্রতি শ্রদ্ধা-প্রদর্শন ও তাদের অধিকার-রক্ষা এবং তাদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্যের
গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ ﴾ [الحج: ٣٠]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে তার প্রতিপালকের নিকট তার
জন্য এটাই উত্তম।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩০ আয়াত)
আরো বলেন,
﴿وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ﴾ [الحج: ٣٢]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের
সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩২ আয়াত)
তিনি বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “বিশ্বাসীদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (হিজ্র ৮৮আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ ﴾ [المائدة: ٣٢]
অর্থাৎ “যে ব্যক্তি নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার দণ্ডদান উদ্দেশ্য
ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো
প্রাণরক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।” (সূরা মায়েদাহ ৩২
আয়াত)
২২৭
وَعَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ :
قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «المُؤْمِنُ للْمُؤْمِنِ كَالبُنْيَانِ
يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضَاً». وشبَّكَ بَيْنَ أصَابِعِهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য অট্টালিকার
ন্যায়, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবূত করে রাখে।’’ তারপর তিনি (বুঝাবার জন্য) তাঁর
এক হাতের আঙ্গুলগুলি অপর হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকালেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৮১, ১৪৩২, ২৪৪৫, ৬০২৭, ৬০২৮, ৭৪৭৬,
মুসলিম ২৫৮৫, ২৬৮৭, তিরমিযী ১৯২৮, নাসায়ী ২৫৫৬, ২৫৬০, আবূ দাউদ ৫১৩১, আহমাদ ১৯০৮৭,
১৯১২৭, ১৯১৬৩, ১৯২০৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২৮
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى
الله عليه وسلم: «مَنْ مَرَّ في شَيْءٍ مِنْ مَسَاجِدِنا، أَوْ أَسْوَاقِنَا،
وَمَعَهُ نَبْلٌ فَلْيُمْسِكْ، أَوْ لِيَقْبِضْ عَلَى نِصَالِهَا بكَفّه ؛ أنْ
يُصِيبَ أحَداً مِنَ المُسْلِمِينَ مِنْهَا بِشَيْء». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তীর সঙ্গে
নিয়ে আমাদের কোনো মসজিদ অথবা কোনো বাজারের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করবে, তার উচিত হবে,
হাতের তালু দ্বারা তার ফলাকে ধরে নেওয়া। যাতে কোনো মুসলিম তার দ্বারা কোনো প্রকার
কষ্ট না পায়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৫২, ৭০৭৫, মুসলিম ২৬৫১, আবূ দাউদ ২৫২৭,
ইবনু মাজাহ ৩৭৭৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২২৯
وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ
الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «مَثَلُ
المُؤْمِنينَ في تَوَادِّهِمْ وتَرَاحُمِهمْ وَتَعَاطُفِهمْ، مَثَلُ الجَسَدِ
إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الجَسَدِ بِالسَّهَرِ والحُمَّى».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
নু’মান
ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি,
দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি) দেহের মত। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার
জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০১১, মুসলিম ২৫৮৬, আহমাদ ১৭৮৯১, ১৭৯০৭,
১৯৯২৬, ১৭৯৪৯, ১৭৯৬৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩০
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ : قَبَّلَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم الحَسَنَ بْنَ عَليٍّ رَضِيَ الله
عَنهُمَا، وَعِنْدَهُ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِس، فَقَالَ الأقْرَعُ : إن لِي عَشرَةً
مِنَ الوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أحَداً . فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُول الله صلى
الله عليه وسلم، فَقَالَ: «مَنْ لا يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ !». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনু আলী (রাঃ)-কে চুমু দিলেন। ঐ
সময় তাঁর নিকট আক্বরা‘ ইবনু হাবেস বসা ছিলেন। আক্বরা‘ বললেন, ‘আমার দশটি ছেলে আছে,
আমি তাদের কাউকেই কোনোদিন চুমু দেইনি।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’’ (বুখারী ও
মুসলিম)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৯৭, মুসলিম ২৩১৮, তিরমিযী ১৯১১, আবূ
দাউদ ৫২১৮, আহমাদ ৭০৮১, ৭২৪৭, ৭৫৯২, ১০২৯৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩১
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ : قَدِمَ نَاسٌ مِنَ الأعْرَابِ عَلَى رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم،
فَقَالُوا : أتُقَبِّلُونَ صِبْيَانَكُمْ ؟ فَقَالَ:
«نَعَمْ»قَالُوا : لَكِنَّا وَاللهِ مَا نُقَبِّلُ! فَقَالَ رَسُولُ الله صلى الله
عليه وسلم: «أَوَ أَمْلِك إنْ كَانَ اللهُ نَزَعَ مِنْ قُلُوبِكُم الرَّحْمَةَ !».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, কিছু বেদুঈন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে
বলল, ‘আপনারা কি আপনাদের শিশু-সন্তানদেরকে চুমু দিয়ে থাকেন?’ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ তারা বলল, ‘কিন্তু আল্লাহর কসম! আমরা চুমু
দেই না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহ যদি তোমাদের
অন্তর থেকে দয়া উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তার মালিক করে দিতে পারি?’’ (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৯৮, মুসলিম ২৩১৭, ইবনু মাজাহ ৩৬৬৫,
আহমাদ ২৩৭৭০, ২৩৮৮৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩২
وَعَن جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله
عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ
لاَ يَرْحَمِ النَّاسَ لاَ يَرْحَمْهُ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
জারীর
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া
করবে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০১৩, ৭৩৭৬, মুসলিম ২৩১৯, তিরমিযী ১৯২২,
আহমাদ ১৮৭০৭, ১৮৭২১, ১৮৭৫৬, ১৮৭৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩৩
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا صَلَّى
أحَدُكُمْ للنَّاسِ فَلْيُخَفِّفْ، فَإنَّ فِيهِم الضَّعِيفَ وَالسَّقِيمَ
وَالكَبيرَ، وَإِذَا صَلَّى أحَدُكُمْ لِنَفْسِهِ فَلْيُطَوِّل مَا شَاءَ».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে নামায পড়ে,
তখন সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোক থাকে। আর যখন
কেউ একাকী নামায পড়ে, তখন সে ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭০৩, মুসলিম ৪৬৭, তিরমিযী ২৩৬, নাসায়ী
৮২৩, আবূ দাউদ ৭৯৪, ৭৯৫, আহমাদ ৭৬১১, ২৭৪৪০, ৮৮৬০, ৯৭৪৯, ৯৯৩৩, ১০১৪৪, ১০৫৫৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩৪
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ : إنْ كَانَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم لَيَدَعُ العَمَلَ، وَهُوَ
يُحبُّ أنْ يَعْمَلَ بِهِ؛ خَشْيَةَ أنْ يَعمَلَ بِهِ النَّاسُ فَيُفْرَضَ
علَيْهِمْ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো (নফল) আমল করতে পছন্দ
করা সত্ত্বেও এই ভয়ে ছেড়ে দিতেন যে, লোকেরা তা আমল করবে এবং তার ফলে তাদের উপর তা
ফরয করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১১২৮, ১১৭৭, মুসলিম ৭১৮, আবূ দাউদ ১২৯২,
১২৯৩, আহমাদ ২৩৫৩৬, ২৪০৩০, ২৪০৩৮, ২৪৮২২, ২৪৮৩৫, ২৪৮৫৭, ২৪৯১৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩৫
وَعَنْهَا رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ :
نَهَاهُمُ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم عنِ الوِصَالِ رَحمَةً لَهُمْ، فَقَالُوا
: إنَّكَ تُوَاصِلُ ؟ قَالَ: «إنّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ، إنِّي أَبِيْتُ
يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسقِيني». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে দয়াপূর্বক ‘সওমে ওয়িসাল’ (বিনা ইফতারে
একটানা রোযা) রাখতে নিষেধ করেছেন। তাঁরা বললেন, ‘‘আপনি তো ‘সওমে ওয়িসাল’ রাখছেন?’’
তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদের মত নই। আমাকে তো আমার প্রতিপালক রাতে পানাহার করান।’’
বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৯৬৪, মুসলিম ১১০৫, আহমাদ ২৪০৬৫, ২৪১০৩,
২৪৪২৪, ২৫৫২৩, ২৫৬৭৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩৬
وَعَنْ أَبِي قَتادَةَ الحَارِثِ بنِ رِبعِي
رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «إنِّي لأَقُومُ
إِلَى الصَّلاةِ، وَأُرِيدُ أَنْ أُطَوِّلَ فِيهَا، فَأسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبيِّ
فَأَتَجَوَّزَ في صَلاَتِي كَرَاهِيَةً أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمِّهِ». رواه البخاري
আবূ
কাতাদাহ্ হারেস ইবনু রিব‘য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি নামায পড়তে দাঁড়াই এবং আমার ইচ্ছা
হয় তা দীর্ঘ করি। অতঃপর আমি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি। ফলে আমি তার মায়ের কষ্ট
হওয়াটা অপছন্দ মনে করে নামায সংক্ষিপ্ত করি।’’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭০৭, ৮৬৮, নাসায়ী ৮২৫, আবূ দাউদ ৭৮৯,
ইবনু মাজাহ ৯৯১, আহমাদ ২৩০৯৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩৭
وَعَن جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله
عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «مَنْ صَلَّى صَلاةَ
الصُّبْحِ فَهُوَ في ذِمَّةِ الله فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ الله مِنْ ذِمَّته
بشَيءٍ، فَإنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ منْ ذمَّته بشَيءٍ يُدْركْهُ، ثُمَّ يَكُبُّهُ
عَلَى وَجْهِهِ في نَارِ جَهَنَّمَ». رواه مسلم
জুন্দুব
ইবনু আব্দিল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায (জামা‘আতে) পড়ল,
সে আল্লাহর যিম্মাদারীতে চলে এল। সুতরাং আল্লাহ যেন তোমাদের কাছে তার যিম্মার কিছু
দাবী না করেন। কারণ, যার কাছেই তিনি তাঁর যিম্মার কিছু দাবী করবেন, তাকে পাকড়াও
করবেন। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৬৫৭১, তিরমিযী ২২২, নাসায়ী ৮২৫, আহমাদ ১৮৩২৬,
১৮৩৩৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا :
أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِم، لا
يَظْلِمهُ، وَلاَ يُسْلِمُهُ. مَنْ كَانَ في حَاجَة أخيه، كَانَ اللهُ في حَاجَته،
وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِم كُرْبَةً، فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ بها كُرْبَةً مِنْ
كُرَبِ يَومِ القِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ اللهُ يَومَ
القِيامَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর
অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের
প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের
কোনো এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে
দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার
দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন।’’ বুখারী, মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৪২, মুসলিম ২৫৮০, তিরমিযী ১৪২৬, নাসায়ী
৪৮৯৩, আহমাদ ৫৩৩৪, ৫৬১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৩৯
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «المُسْلِمُ أخُو المُسْلِمُ، لاَ
يَخُونُهُ، وَلاَ يَكْذِبُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ، كُلُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِم
حَرَامٌ عِرْضُهُ وَمَالهُ وَدَمُهُ، التَّقْوى هاهُنَا، بحَسْب امْرىءٍ مِنَ
الشَّرِّ أنْ يَحْقِرَ أخَاهُ المُسْلِم». رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার
বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তাকে মিথ্যা বলবে না (বা মিথ্যাবাদী ভাববে না), তার
সাহায্য না করে তাকে অসহায় ছেড়ে দেবে না। এক মুসলিমের মর্যাদা, মাল ও খুন অপর
মুসলিমের জন্য হারাম। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। কোনো
মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করাটাই একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ তিরমিযী,
হাসান সূত্রে) [১]
[১] মুসলিম ২৫৬৪, তিরমিযী ১৯২৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪০
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى
الله عليه وسلم: «لاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَنَاجَشُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ
تَدَابَرُوا، وَلاَ يَبعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْع بَعْض، وَكُونُوا عِبَادَ الله
إخْوَاناً، المُسْلِمُ أخُو المُسْلم : لاَ يَظْلِمُهُ، وَلا يَحْقِرُهُ، وَلاَ
يَخْذُلُهُ، التَّقْوَى هاهُنَا - وَيُشِيرُ إِلَى صَدرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتً -
بحَسْب امْرئٍٍ مِنَ الشَّرِّ أنْ يَحقِرَ أخَاهُ المُسْلِمَ، كُلُّ المُسْلم
عَلَى المُسْلم حَرَامٌ، دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ». رواه مسلم
(রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা একে অপরের
প্রতি হিংসা করো না, কেনা-বেচাতে জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ো না,
একে অপরের প্রতি শত্রুতা রেখো না, এক অপর থেকে (ঘৃণাভরে) মুখ ফিরায়ো না এবং একে
অপরের (জিনিস) কেনা-বেচার প্রস্তাবের উপর কেনা-বেচা করো না। আর হে আল্লাহর
বান্দারা! তোমরা ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি যুলুম করবে
না, তাকে তুচ্ছ ভাববে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। তাকওয়া তথা
আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। (তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা
তিনবার বললেন।) কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ ভাবা একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, মাল এবং তার মর্যাদা অপর মুসলিমের উপর হারাম।’’ (মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৪, ২৫৬৩, তিরমিযী
১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ী ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৪৯১৭, ইবনু মাজাহ
১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪ আহমাদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯, ২৭৩৩৪, ৮২৯৯, ২৭৪৮৮,মুওয়াত্তা মালেক ১৩৯১,
১৬৮৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪১
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ
صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يُؤمِنُ أحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأخِيهِ مَا
يُحِبُّ لنَفْسِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ (পূর্ণ) মু’মিন হতে
পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ
করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩, মুসলিম ৪৫, তিরমিযী ২৫১৫, নাসায়ী
৫০১৬, ৫০১৭, ইবনু মাজাহ ৬৬, আহমাদ ১১৫৯১, ১২৩৫৪, ১২৩৭২, ১২৩৯০, ১২৭৩৪, ১২৯৯৪, দারেমী
২৭৪০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪২
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «انْصُرْ أخَاكَ ظَالماً أَوْ
مَظْلُوماً».فَقَالَ رجل : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أنْصُرُهُ إِذَا
كَانَ مَظْلُوماً، أرَأيْتَ إنْ كَانَ ظَالِماً كَيْفَ أنْصُرُهُ ؟ قَالَ:
«تحْجُزُهُ ـ أَوْ تمْنَعُهُ ـ مِنَ الظُلْمِ فَإِنَّ ذلِكَ نَصرُهُ». رواه
البخاري
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে অত্যাচারী হোক
অথবা অত্যাচারিত।’’ তিনি (আনাস (রাঃ)) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! অত্যাচারিতকে
সাহায্য করার বিষয়টি তো বুঝলাম; কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব?’ তিনি
বললেন, ‘‘তুমি তাকে অত্যাচার করা হতে বাধা দেবে, তাহলেই তাকে সাহায্য করা
হবে।’’(বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৯৫২, ২৪৪৩, ২৪৪৪, তিরমিযী ২২৫৫, আহমাদ
১১৫৩৮, ১২৬৬৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪৩
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه :
أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم
خَمْسٌ : رَدُّ السَّلامِ، وَعِيَادَةُ المَريض، وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ،
وَإجَابَةُ الدَّعْوَة، وتَشْميتُ العَاطِسِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وفي رواية لمسلم: حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم ستٌّ : إِذَا لَقيتَهُ
فَسَلِّمْ عَلَيهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأجبْهُ، وإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ
لَهُ، وإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ الله فَشَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ، وَإِذَا
مَاتَ فَاتَّبِعْهُ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার
রয়েছেঃ
(১) সালামের জবাব দেওয়া
(২) রোগীকে দেখতে যাওয়া
(৩) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা
(৪) দাওয়াত গ্রহণ করা এবং
(৫) কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের অধিকার ছয়টিঃ তুমি তার
সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তাকে সালাম দাও, সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত গ্রহণ কর,
সে তোমার কাছে উপদেশ চাইলে তুমি তাকে উপদেশ দাও, সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’
বললে তার জবাব দাও, সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাও এবং সে মারা গেলে তার জানাযায়
অংশ গ্রহণ কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৪০, মুসলিম ২১৬২, তিরমিযী ২৭৩৭, নাসায়ী
১৯৩৮, আবূ দাউদ ৫০৩০, ইবনু মাজাহ ১৪৩৫, আহমাদ ২৭৫১১, ১০৫৮৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪৪
وَعَنْ أَبِي عُمَارَةَ البَرَاءِ بنِ
عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم بِسَبعٍ، وَنَهَانَا عَن سَبعٍ : أمَرَنَا بعيَادَة
المَرِيض، وَاتِّبَاعِ الجَنَازَةِ، وتَشْمِيتِ العَاطسِ، وَإبْرَارِ المُقْسِم،
ونَصْرِ المَظْلُوم، وَإجَابَةِ الدَّاعِي، وَإِفْشَاءِ السَّلامِ، ونَهَانَا عَنْ
خَواتِيمٍ أَوْ تَخَتُّمٍ بالذَّهَبِ، وَعَنْ شُرْبٍ بالفِضَّةِ، وَعَن الميَاثِرِ
الحُمْرِ، وَعَن القَسِّيِّ، وَعَنْ لُبْسِ الحَريرِ والإسْتبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ
. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
‘উমারাহ বারা’ ইবনু আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং
সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি রোগীকে দেখতে যেতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, কেউ
হাঁচি দিলে তার জবাব দিতে, শপথকারীর শপথ রক্ষা করতে, নিপীড়িতদের সাহায্য করতে,
সালামের প্রসার ঘটাতে এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি
আমাদেরকে সোনার আংটি পরতে, রূপার পাত্র ব্যবহার করতে, রেশমের জিনপোশ, কাস্সী,
ইস্তাবরাক ও দীবাজ (সর্বপ্রকার রেশমী পোশাক) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৫৭, ৫৬৩৫, ৫৬৫০,৫৮৩৮,
৫৮৪৯, ৫৮৬৩, ৬২২২, ৬২৩৫, ৬৬৫৪, মুসলিম ২০৬৬, তিরমিযী ১৭৬০, ২৮০৯, নাসায়ী ১৯৩৯, ৩৭৭৮,
৫৩০৯, ইবনু মাজাহ ২১১৫, আহমাদ ১৮০৩৪, ১৮০৬১, ১৮১৭০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২৮
মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি গোপন
রাখা জরুরী এবং বিনা প্রয়োজনে তা প্রচার করা নিষিদ্ধ
২৪৫
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْداً في الدُّنْيَا
إلاَّ سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে,
আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৫৯০, আহমাদ ২৭৪৮৪, ৮৯৯৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪৬
وَعَنهُ، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «كُلُّ أُمَّتِي مُعَافىَ إلاَّ
المُجَاهِرِينَ، وَإنّ مِنَ المُجَاهَرَةِ أنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ باللَّيلِ
عَمَلاً، ثُمَّ يُصْبِحُ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ عَلَيهِ، فَيقُولُ : يَا فُلانُ،
عَمِلتُ البَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ، وَيُصبِحُ
يَكْشِفُ سِتْرَ اللهِ عَنْه». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার সকল
উম্মত মাফ পাবে, তবে পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত। আর এক প্রকার প্রকাশ এই যে, কোনো
ব্যক্তি রাতে কোনো পাপকাজ করে, যা আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে
বেড়ায়, ‘হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত্রি
অতিবাহিত করেছিল যে, আল্লাহ তার পাপ গুপ্ত রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে তার উপর
আল্লাহর আবৃত পর্দা খুলে ফেলে!’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০৬৯, মুসলিম ২৯৯০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪৭
وعنه، عن النَّبيّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «إِذَا زَنَتِ الأَمَةُ فَتَبيَّنَ زِنَاهَا فَلْيَجْلِدْهَا الحَدَّ، وَلا
يُثَرِّبْ عَلَيْهَا، ثُمَّ إنْ زَنَتِ الثَّانِيَةَ فَلْيَجْلِدْهَا الحَدَّ،
وَلا يُثَرِّبْ عَلَيْهَا، ثُمَّ إنْ زَنَتِ الثَّالِثَةَ فَلْيَبِعْهَا وَلَوْ
بِحَبْل مِنْ شَعَر». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(কারো) দাসী যখন ব্যভিচার করে আর তা
প্রমাণিত হয়ে যায়, তখন সে যেন তাকে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বেত্রাঘাত করে এবং
তিরস্কার না করে। অতঃপর দ্বিতীয়বার যদি ব্যভিচার করে, তাহলে সে যেন তাকে শরীয়ত
কর্তৃক নির্ধারিত বেত্রাঘাত করে এবং তিরস্কার না করে। পুনরায় যদি ব্যভিচার করে,
তাহলে যেন চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২১৫২, ২১৫৪, ২২৩৩, ২২৩৪, ২৫৫৬, ৬৮৩৮,
৬৮৩৯, মুসলিম ১৭০৩, ১৭০৪, তিরমিযী ১৪৩৩, ১৪৪০, আবূ দাউদ ৪৪৬৯, ৪৪৭০, ইবনু মাজাহ ২৫৬৫,
আহমাদ ৭৩৪৭, ৮৬৬৯, ৯১৭৪, ১০০৩৩, ১৬৫৯৫, মুওয়াত্তা মালেক ১৫৬৪, দারেমী ২৩২৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৪৮
وَعَنهُ، قَالَ : أُتِيَ النَّبيَّ صلى
الله عليه وسلم بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ خَمْراً، قَالَ: «اضْربُوهُ»قَالَ أَبُو
هريرة : فَمِنَّا الضَّارِبُ بِيَدِهِ، والضَّارِبُ بِنَعْلِهِ، وَالضَّارِبُ
بِثَوبِهِ . فَلَمَّا انْصَرَفَ، قَالَ بَعضُ القَومِ : أخْزَاكَ الله، قَالَ: «لا
تَقُولُوا هَكَذا، لاَ تُعِينُوا عَلَيهِ الشَّيْطَانَ». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, (একদা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক মাতালকে উপস্থিত করা
হল। তিনি তাকে প্রহার করার আদেশ দিলেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, আমাদের মাঝে কেউ
তাকে হাত দ্বারা, কেউ জুতা দ্বারা এবং কেউ বা কাপড় দ্বারা প্রহার করল। লোকটি যখন
চলে গেল, তখন এক ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহ তোকে লাঞ্ছিত করুক।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এরূপ বলো না; তার বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ো
না।’’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৭৭৭, ৬৭৮১, আবূ দাউদ ৪৪৭৭, আহমাদ ৭৯২৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ২৯
মুসলিমদের প্রয়োজন পূরণ করার
গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱفۡعَلُواْ ٱلۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [الحج: ٧٧]
অর্থাৎ “উত্তম কাজ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা হাজ্জ ৭৭ আয়াত)
২৪৯
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا :
أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِم، لا
يَظْلِمهُ، وَلاَ يُسْلِمُهُ. مَنْ كَانَ في حَاجَة أخيه، كَانَ اللهُ في حَاجَته،
وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِم كُرْبَةً، فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ بها كُرْبَةً مِنْ
كُرَبِ يَومِ القِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ اللهُ يَومَ
القِيامَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর
অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের
প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন
এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে
দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার
দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৪২, ৬৯৫১, মুসলিম ২৫৮০, তিরমিযী ১৪২৬,
আবূ দাউদ ৪৮৯৩, আহমাদ ৭৯২৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৫০
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ
كُرَبِ الدُّنيَا، نَفَّسَ الله عَنْهُ كُربَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيَامَةِ،
وَمَنْ يَسَّر عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ الله عَلَيهِ في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ،
وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ الله في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، والله في عَونِ
العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَونِ أخِيهِ، وَمَنْ سَلَكَ طَريقاً يَلْتَمِسُ
فِيهِ عِلْماً سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَريقاً إِلَى الجَنَّةِ . وَمَا اجْتَمَعَ
قَوْمٌ في بَيت مِنْ بُيُوتِ اللهِ تَعَالَى، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ،
وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ،
وَغَشِيتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَحَفَّتْهُمُ المَلاَئِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ الله
فِيمَنْ عِندَهُ . وَمَنْ بَطَّأ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِع بِهِ نَسَبُهُ». رواه
مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন পার্থিব
দুর্ভোগ দূরীভূত করবে, আল্লাহ তার কিয়ামতের দিনের দুর্ভোগসমূহের মধ্যে কোন একটি
দুর্ভোগ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ করবে,
আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতি সহজ করবেন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার
মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা করতে থাকে, আল্লাহও সে বান্দার সাহায্য করতে থাকেন।
যে ব্যক্তি এমন পথে চলে--যাতে সে (দ্বীনী) বিদ্যা অর্জন করে, তার জন্য আল্লাহ
জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আর যখনই কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো এক ঘরে একত্রিত
হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে ও নিজেদের মধ্যে তা অধ্যয়ন করে, তখনই (আল্লাহর পক্ষ
থেকে) তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, তাদেরকে (আল্লাহর) রহমত আচ্ছাদিত করে নেয়,
ফেরেশতা তাদেরকে ঘিরে নেয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী (ফেরেশতা)দের মধ্যে তাদের কথা
আলোচনা করেন। আর যাকে তার আমল পশ্চাদ্গামী করেছে (অর্থাৎ নেকীর কাজ করেনি) তার বংশ
তাকে অগ্রগামী করতে পারবে না।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩, ২৬৪৬, ২৯৪৫,
আবূ দাউদ ১৪৫৫, ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩০
সুপারিশ করা
২৫১
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الأشعَرِي رضي الله
عنه، قَالَ : كَانَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا أتاهُ طَالِبُ حَاجَةٍ
أقبَلَ عَلَى جُلَسَائِهِ، فَقَالَ: «اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا، وَيَقْضِي الله عَلَى
لِسَانِ نَبِيِّهِ مَا أَحَبَّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية: مَا شَاءَ
আবূ
মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোন প্রয়োজন প্রার্থী আসত, তখন তিনি
তাঁর সঙ্গীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন, ‘‘(এর জন্য) তোমরা সুপারিশ কর, তোমাদেরকে
প্রতিদান দেওয়া হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর যবানে যা পছন্দ করেন, তা ফায়সালা
করে দেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, যা ইচ্ছা করেন (তা ফায়সালা করে দেন)।
[১] সহীহুল বুখারী ৪৮১, ১৪৩২, ২৪৪৬, ৬০২৭, ৬০২৮, ৭৪৭৬,
মুসলিম ২৫৮৫, ২৬২৭, তিরমিযী ১৯২৮, নাসায়ী ২৫৫৬, ২৫৬০, আবূ দাউদ ৫১৩১, আহমাদ ১৯০৮৭,
১৯১২৭, ১৯১৬৩, ১৯২০৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৫২
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا في قِصَّةِ بَرِيرَةَ وَزَوْجِهَا، قَالَ: قَالَ لَهَا النَّبيُّ صلى
الله عليه وسلم: «لَوْ رَاجَعْتِهِ!» قَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم تَأمُرُنِي ؟ قَالَ: «إنَّمَا أَشْفَع» قَالَتْ : لاَ حَاجَةَ لِي فِيهِ .
رواه البخاري
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরাকে বললেন, ‘‘তুমি যদি তার কাছে ফিরে যেতে
(তাহলে ভাল হত)!’’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে আদেশ দিচ্ছেন?’ তিনি
বললেন, ‘‘(না।) আমি (কেবলমাত্র) সুপারিশ করছি।’’ সে বলল, ‘(তাহলে) তার আমার কোন
প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫২৮৩, ৫২৮০, ৫২৮১, ৫২৮২, তিরমিযী ১১৫৬,
নাসায়ী ৫৪১৭, ২২৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩১
(বিবাদমান) মানুষদের মধ্যে
মীমাংসা (ও সন্ধি) করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِۚ ﴾ [النساء: ١١٤]
অর্থাৎ “তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই, তবে যে (তার পরামর্শে) দান
খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় (তাতে) কল্যাণ আছে।”
(সুরা নিসা ১১৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ ﴾ [النساء: ١٢٨]
অর্থাৎ “বস্তুতঃ আপোস করা অতি উত্তম।” (ঐ ১২৮ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَصۡلِحُواْ ذَاتَ بَيۡنِكُمۡۖ ﴾ [الانفال: ١]
অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর।”
(সূরা আনফাল ১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَ أَخَوَيۡكُمۡۚ﴾ [الحجرات: ١٠]
অর্থাৎ “সকল বিশ্বাসীরা তো পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাই-এর মধ্যে
সন্ধি স্থাপন কর।” (সূরা হুজুরাত ১০ আয়াত)
২৫৩
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ
: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «كُلُّ سُلامَى
مِنَ النَّاسِ عَلَيهِ صَدَقَةٌ، كُلَّ يَومٍ تَطلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ : تَعْدِلُ
بَينَ الاثْنَينِ صَدَقةٌ، وتُعِينُ الرَّجُلَ في دَابَّتِهِ، فَتَحْمِلُهُ
عَلَيْهَا أَوْ تَرفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالكَلِمَةُ
الطَيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وبكلِّ خَطْوَةٍ تَمشيهَا إِلَى الصَّلاةِ صَدَقَةٌ،
وتُميطُ الأذَى عَنِ الطَّريقِ صَدَقَةٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন যাতে সূর্য উদয় হয় (অর্থাৎ
প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় একটি করে সাদকাহ রয়েছে।
(আর সাদকাহ শুধু মাল খরচ করাকেই বলে না; বরং) দু’জন মানুষের মধ্যে তোমার মীমাংসা
করে দেওয়াটাও সাদকাহ, কোনো মানুষকে নিজ সওয়ারীর উপর বসানো অথবা তার উপর তার সামান
উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক
পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।’’
(বুখারী-মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৭০৭,২৮৯১, ২৯৮৯, মুসলিম ১০০৯, আহমাদ
২৭৪০০, ৮১৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৫৪
وَعَن أمِّ كُلْثُومِ بِنتِ عُقْبَةَ بنِ
أَبي مُعَيطٍ رَضِيَ الله عَنهَا، قَالَتْ : سمِعتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه
وسلم، يَقُولُ: «لَيْسَ الكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ فَيَنْمِي
خَيراً، أَوْ يقُولُ خَيْراً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةِ مُسلِمٍ زِيَادَة، قَالَتْ : وَلَمْ أسْمَعْهُ يُرْخِّصُ في شَيْءٍ
مِمَّا يَقُولُهُ النَّاسُ إلاَّ في ثَلاثٍ، تَعْنِي: الحَرْبَ، وَالإِصْلاَحَ
بَيْنَ النَّاسِ، وَحَدِيثَ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ، وَحَدِيثَ المَرْأةِ زَوْجَهَا
উম্মে
কুলসুম বিন্তে উক্ববাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘ঐ ব্যক্তি
মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করার জন্য (বানিয়ে) ভাল কথা পৌঁছে
দেয় অথবা ভাল কথা বলে। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৬৯২, মুসলিম ২৬০৫, তিরমিযী ১৯৩৮, আবূ
দাউদ ৪৯২০, ৪৯২১, আহমাদ ২৬৭২৭, ২৬৭৩১
[2] বস্তুত মুসলিমের হাদীসে এ অংশটুকু উম্মে কুলসূম থেকে বর্ণিত হয় নি। এটি বরং ইমাম
যুহরীর বাণী। [সম্পাদক]
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৫৫
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ : سَمِعَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم صَوْتَ خُصُومٍ بِالبَابِ عَاليةً
أصْوَاتُهُمَا، وَإِذَا أحَدُهُمَا يَسْتَوْضِعُ الآخَر وَيَسْتَرْفِقُهُ في
شَيءٍ، وَهُوَ يَقُولُ : وَاللهِ لاَ أفْعَلُ، فَخَرجَ عَلَيْهِمَا رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «أيْنَ المُتَأَلِّي عَلَى اللهِ
لاَ يَفْعَلُ المَعْرُوفَ ؟»، فَقَالَ : أَنَا يَا رسولَ اللهِ، فَلَهُ أيُّ ذلِكَ
أحَبَّ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরজার নিকট দু’জন বিবাদকারীর উচ্চ আওয়ায শুনতে
পেলেন। তাদের মধ্যে একজন অপরজনকে কিছু ঋণ কমাবার এবং নম্রতা প্রদর্শন করার জন্য
অনুরোধ করছিল। আর ঋণদাতা বলছিল, ‘আল্লাহর কসম! আমি (এটা) করব না।’ অতঃপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দু’জনের কাছে বেরিয়ে এসে বললেন,
‘‘সে ব্যক্তি কোথায়, যে আল্লাহর উপর কসম খাচ্ছিল যে, সে ভাল কাজ (ঋণ কম এবং
নম্রতা) করবে না?’’ সে বলল, ‘আমি, হে আল্লাহর রাসূল! (এখন) সে (ঋণ কম করা অথবা সময়
নেওয়া) যা পছন্দ করবে, আমি তাতেই রাজি।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৭০৫, মুসলিম ১৫৫৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৫৬
وَعَنْ أَبِي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ
السَّاعِدِيّ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم بَلَغَهُ أنَّ بَني عَمرِو بنِ عَوْفٍ كَانَ بَيْنَهُمْ شَرٌّ، فَخَرَجَ
رَسولُ الله صلى الله عليه وسلم يُصْلِحُ بَينَهُمْ في أُنَاس مَعَهُ، فَحُبِسَ
رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم وَحَانَتِ الصَّلاة، فَجَاءَ بِلالٌ إِلَى أَبي
بَكرٍ رَضِيَ الله عنهما، فَقَالَ : يَا أَبا بَكْر، إنَّ رَسُولَ الله صلى الله
عليه وسلم قَدْ حُبِسَ وَحَانَتِ الصَّلاةُ فَهَلْ لَكَ أنْ تَؤُمَّ النَّاس ؟
قَالَ : نَعَمْ، إنْ شِئْتَ، فَأقَامَ بِلالٌ الصَّلاةَ، وتَقَدَّمَ أَبُو بَكْرٍ
فَكَبَّرَ وَكَبَّرَ النَّاسُ، وَجَاءَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم يَمشي في
الصُّفُوفِ حَتَّى قَامَ في الصَّفِّ، فَأَخَذَ النَّاسُ في التَّصْفيقِ، وَكَانَ
أَبُو بكرٍ رضي الله عنه لاَ يَلْتَفِتُ في الصَّلاةِ، فَلَمَّا أكْثَرَ النَّاسُ
في التَّصْفيقِ الْتَفَتَ، فإِذَا رَسُول الله صلى الله عليه وسلم، فَأَشَارَ
إِلَيْه رسولُ الله صلى الله عليه وسلم فَرَفَعَ أَبُو بَكْر رضي الله عنه يَدَهُ
فَحَمِدَ اللهَ، وَرَجَعَ القَهْقَرَى وَرَاءهُ حَتَّى قَامَ في الصَّفِّ،
فَتَقَدَّمَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم، فَصَلَّى للنَّاسِ، فَلَمَّا فَرَغَ
أقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، فَقَالَ: «أيُّهَا النَّاسُ، مَا لَكُمْ حِينَ نَابَكُمْ
شَيْءٌ في الصَّلاةِ أخَذْتُمْ في التَّصفيق ؟! إِنَّمَا التَّصفيق للنِّساء .
مَنْ نَابَهُ شَيْءٌ في صَلاتِهِ فَلْيَقُلْ : سُبْحَانَ الله، فَإِنَّهُ لاَ يَسْمَعُهُ
أحدٌ حِينَ يقُولُ : سُبْحَانَ الله، إلاَّ الْتَفَتَ . يَا أَبَا بَكْر : مَا
مَنَعَكَ أنْ تُصَلِّي بالنَّاسِ حِينَ أشَرْتُ إلَيْكَ ؟»، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ:
مَا كَانَ يَنْبَغي لابْنِ أَبي قُحَافَةَ أنْ يُصَلِّي بالنَّاسِ بَيْنَ يَدَيْ
رَسُول الله صلى الله عليه وسلم. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূল
আব্বাস সাহ্ল ইবনু সা‘দ সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘আমর ইবনু ‘আউফ গোত্রের কিছু লোকের মাঝে কিছু ঝগড়া-বিবাদ ছিল। তাই
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু লোককে নিয়ে তাদের
মধ্যে আপোস-মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য সেখানে হাজির হলেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেলেন। অপর দিকে নামাযের সময় হয়ে গেল। সুতরাং
বিলাল (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আটকে গেছেন। এদিকে নামাযেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি নামাযের লোকদের
ইমামতি করবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি চাও।’
অতঃপর বিলাল (রাঃ) নামাযের ইকামত দিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) এগিয়ে গিয়ে (তাহরীমার)
তকবীর বললেন এবং লোকেরাও তকবীর বলল। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা
দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল। আবূ বকর (রাঃ) নামাযরত অবস্থায় কোনো দিকে
তাকান না, কিন্তু লোকেদের অধিক মাত্রায় হাততালির কারণে তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় (নিজের জায়গায়
থাকতে) নির্দেশ দিলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর হাত উপরে তুলে আল্লাহর প্রশংসা করলেন।
তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পিছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে গিয়ে লোকদের ইমামতি করলেন এবং নামায শেষ করে
লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘‘হে লোক সকল! কি ব্যাপার যে, নামায অবস্থায় কিছু ঘটতে
দেখে তোমরা হাততালি দিতে শুরু করলে? (জেনে রেখো, নামাযে) হাততালি দেওয়া তো
মহিলাদের কর্তব্য।
নামায অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, এটা শুনলে কেউ তার
দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে পারবে না। হে আবূ বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন ইমামতি
করতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’’ তিনি বললেন, ‘আবূ কুহাফার ছেলের জন্য সঙ্গত ছিল না
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে লোকদের ইমামতি করবে।’
(বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৮৪, ১২০১, ১২০৪, ১২১৮, ১২৩৪, ২৬৯০,
২৬৯৩, ৭১৯০, মুসলিম ৪২১, নাসায়ী ৭৮৪, ৭৯৩, ১১৮৩, ৫৪১৩।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩২
দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন
মুসলিমদের মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ﴾ [الكهف: ٢٨]
অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে
তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা
করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত)
২৫৭
عَن حَارِثَةَ بنِ وهْبٍ رضي الله عنه
قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُولُ:
«ألاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ الجَنَّةِ ؟ كُلُّ ضَعِيف مُتَضَعَّف، لَوْ أقْسَمَ
عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ النَّارِ ؟ كُلُّ عُتُلٍّ
جَوّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
হারেসাহ
ইবনু অহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমি তোমাদেরকে
জান্নাতীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন
ব্যক্তি যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম খায়, তাহলে তা তিনি
নিশ্চয়ই পুরা করে দেন। আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি?
(তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।’’ (বুখারী, মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৯১৮, ৬০৭২, ৬৬৫৭, মুসলিম ২৮৫৩, তিরমিযী
২৬০৫, ইবনু মাজাহ ৪১১৬, আহমাদ ১৮২৫৩।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৫৮
وَعَنْ أَبِي عَبَّاسٍ سَهلِ بنِ سَعدٍ
السَّاعِدِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : مَرَّ رَجُلٌ عَلَى النَّبيّ صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَ لِرَجُلٍ عِنْدَهُ جَالِسٌ: «مَا رَأيُكَ في هَذَا ؟»، فَقَالَ :
رَجُلٌ مِنْ أشْرَافِ النَّاسِ، هَذَا واللهِ حَرِيٌّ إنْ خَطَبَ أنْ يُنْكَحَ،
وَإنْ شَفَعَ أنْ يُشَفَّعَ . فَسَكَتَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ
مَرَّ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «مَا رَأيُكَ
في هَذَا ؟»فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، هَذَا رَجُلٌ مِنْ فُقَراءِ المُسْلِمِينَ،
هَذَا حَرِيٌّ إنْ خَطَبَ أنْ لا يُنْكَحَ، وَإنْ شَفَعَ أنْ لاَ يُشَفَّعَ، وَإنْ
قَالَ أنْ لاَ يُسْمَعَ لِقَولِهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم: «هَذَا خَيْرٌ مِنْ مِلءِ الأرْضِ مِثْلَ هَذَا». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আবূ
আব্বাস সাহ্ল ইবনু সা‘দ সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশ দিয়ে পার হয়ে গেল, তখন তিনি
তাঁর নিকট উপবিষ্ট একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মন্তব্য
কী?’’ সে বলল, ‘এ ব্যক্তি তো এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক। আল্লাহর কসম! সে কোথাও
বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা
হবে।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে আর এক ব্যক্তি পার হয়ে গেল। তিনি ঐ (উপবিষ্ট) লোকটিকে বললেন, ‘‘এ
লোকটির ব্যাপারে তোমার অভিমত কী?’’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ তো একজন দরিদ্র
মুসলিম। সে এমন ব্যক্তি যে, সে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, কারো
জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে না এবং সে কোনো কথা বললে, তার কথা শ্রবণযোগ্য
হবে না।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এ ব্যক্তি
দুনিয়া ভর্তি ঐরূপ লোকদের চাইতে বহু উত্তম।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫০৯১, ৬৪৪৭,ইবনু মাজাহ ৪১২০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৫৯
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله
عنه، عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «احْتَجَّتِ الجَنَّةُ والنَّارُ،
فَقَالتِ النَّارُ : فِيَّ الجَبَّارُونَ وَالمُتَكَبِّرُونَ . وَقَالتِ الجَنَّةُ
: فِيَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَمَسَاكِينُهُمْ، فَقَضَى اللهُ بَيْنَهُمَا : إنَّكِ
الجَنَّةُ رَحْمَتِي أرْحَمُ بِكِ مَنْ أشَاءُ، وَإنَّكِ النَّارُ عَذَابِي
أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أشَاءُ، وَلِكلَيْكُمَا عَلَيَّ مِلْؤُهَا». رواه مسلم
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাত ও জাহান্নামের বিবাদ হল।
জাহান্নাম বলল, ‘আমার মধ্যে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা।’ আর জান্নাত বলল, ‘আমার ভিতরে
দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিদের বসবাস।’ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ফায়সালা
করলেন যে, ‘তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ
করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর তোমাদের
উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব।’’ (মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৮৪৯, ৪৮৫০, ৭৪৪৯, মুসলিম ২৮৪৬,২৮৪৭,
তিরমিযী ২৫৫৭, ২৫৬১, আহমাদ ৭৬৬১, ২৭৩৮১, ২৭২২৪, ১০২১০।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬০
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن
رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إنَّهُ لَيَأتِي الرَّجُلُ السَّمِينُ
العَظِيمُ يَوْمَ القِيَامَةِ لاَ يَزِنُ عِنْدَ اللهِ جَناحَ بَعُوضَةٍ».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মোটা-তাজা বৃহৎ মানুষ
আসবে, আল্লাহর কাছে তার মাছির ডানার সমানও ওজন হবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৭২৯, মুসলিম ২৭৮৫।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬১
وَعَنهُ : أَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ
كَانَتْ تَقُمُّ المَسْجِدَ، أَوْ شَابّاً، فَفَقَدَهَا، أَوْ فَقَدَهُ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، فَسَأَلَ عَنْهَا، أو عَنهُ،
فَقَالُوا : مَاتَ . قَالَ: «أَفَلا كُنْتُمْ آذَنْتُمُونِي»فَكَأنَّهُمْ
صَغَّرُوا أمْرَهَا، أَوْ أمْرهُ، فَقَالَ: «دُلُّونِي عَلَى قَبْرِهِ»فَدَلُّوهُ
فَصَلَّى عَلَيْهَا، ثُمَّ قَالَ: «إنَّ هذِهِ القُبُورَ مَمْلُوءةٌ ظُلْمَةً
عَلَى أهْلِهَا، وَإنَّ اللهَ تَعَالَى يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلاَتِي
عَلَيْهِمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
কালোবর্ণের
একজন মহিলা অথবা যুবক মসজিদ ঝাড়ু দিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে (একদিন) দেখতে পেলেন না। সুতরাং তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ
বললেন, ‘সে মারা গেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন?’’ তাঁরা যেন
তার ব্যাপারটাকে নগণ্য ভেবেছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও।’’
সুতরাং তাঁরা তার কবরটি দেখিয়ে দিলেন এবং তিনি তার উপর জানাযা পড়লেন। অতঃপর তিনি
বললেন, ‘‘নিশ্চয় এ কবরসমূহ কবরবাসীদের জন্য অন্ধকারময়। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের
জন্য আমার জানাযা পড়ার কারণে তা আলোময় করে দেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩৩৭, ৪৫৮, ৪৬০, মুসলিম ৯৫৬, আবূ দাউদ
৩২০৩, ইবনু মাজাহ ১৫২৭, আহমাদ ৮৪২০, ৮৮০৪, ৯০১৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬২
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «رُبَّ أشْعَثَ أغبَرَ مَدْفُوعٍ بِالأبْوابِ
لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ». رواه مسلم
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বহু এমন লোকও আছে যার
মাথা উষ্কখুষ্ক ধুলোভরা, যাদেরকে দরজা থেকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। (কিন্তু
সে আল্লাহর নিকট এত প্রিয় যে) সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ
করে দেন।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৬২২, ২৮৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬৩
وَعَن أُسَامَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «قُمْتُ عَلَى بَابِ الجَنَّةِ، فَإِذَا
عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا المَسَاكِينُ، وَأصْحَابُ الجَدِّ مَحْبُوسُونَ، غَيْرَ
أنَّ أصْحَابَ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ . وَقُمْتُ عَلَى بَابِ
النَّارِ فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا النِّسَاءُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উসামাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। অতঃপর
দেখলাম যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশ গরীব-মিসকীন মানুষ। আর
ধনবানদেরকে (তখনও হিসাবের জন্য) আটকে রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে (অন্যান্য)
জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমি জাহান্নামের
দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম যে, যারা তাতে প্রবেশ করেছে তাদের বেশীর ভাগই নারীর দল।
(বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫১৯৬, ৬৫৪৭, মুসলিম ২৭৩৬, আহমাদ ২১২৭৫,
২১৩১৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬৪
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَمْ يَتَكَلَّمْ في المَهْدِ إلاَّ
ثَلاثَةٌ : عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ، وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ، وَكَانَ جُرَيْجٌ رَجُلاً
عَابِداً، فَاتَّخَذَ صَوْمَعَةً فَكَانَ فِيهَا، فَأَتَتْهُ أُمُّهُ وَهُوَ
يُصَلِّي، فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : يَا رَبِّ أُمِّي وَصَلاتِي
فَأَقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ فَانْصَرَفَتْ . فَلَمَّا كَانَ مِنَ الغَدِ أتَتْهُ
وَهُوَ يُصَلِّي، فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي،
فَأقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ، فَلَمَّا كَانَ مِنْ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي،
فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي، فَأقْبَلَ عَلَى
صَلاَتِهِ، فَقَالَتْ : اَللهم لاَ تُمِتْهُ حَتَّى يَنْظُرَ إِلَى وُجُوهِ
المُومِسَاتِ . فَتَذَاكَرَ بَنُو إسْرائِيل جُرَيْجاً وَعِبَادَتَهُ، وَكَانَتِ
امْرَأةٌ بَغِيٌّ يُتَمَثَّلُ بحُسْنِهَا، فَقَالَتْ: إنْ شِئْتُمْ
لأَفْتِنَنَّهُ، فَتَعَرَّضَتْ لَهُ، فَلَمْ يَلْتَفِتْ إِلَيْهَا، فَأتَتْ
رَاعِياً كَانَ يَأوِي إِلَى صَوْمَعَتِهِ، فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا فَوقَعَ
عَلَيْهَا، فَحَمَلَتْ، فَلَمَّا وَلَدَتْ، قَالَتْ : هُوَ مِنْ جُريج، فَأتَوْهُ
فَاسْتَنْزَلُوهُ وَهَدَمُوا صَوْمَعَتَهُ، وَجَعَلُوا يَضْرِبُونَهُ، فَقَالَ :
مَا شَأنُكُمْ ؟ قَالُوا : زَنَيْتَ بهذِهِ البَغِيِّ فَوَلَدَتْ مِنْكَ . قَالَ :
أيْنَ الصَّبيُّ ؟ فَجَاؤُوا بِهِ فَقَالَ : دَعُوني حَتَّى أصَلِّي، فَصَلَّى
فَلَمَّا انْصَرفَ أتَى الصَّبيَّ فَطَعنَ في بَطْنِهِ، وَقالَ : يَا غُلامُ مَنْ
أبُوكَ ؟ قَالَ : فُلانٌ الرَّاعِي، فَأَقْبَلُوا عَلَى جُرَيْجٍ يُقَبِّلُونَهُ
وَيَتَمَسَّحُونَ بِهِ، وَقَالُوا : نَبْنِي لَكَ صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَب . قَالَ
: لاَ، أعِيدُوهَا مِنْ طِينٍ كَمَا كَانَتْ، فَفَعلُوا . وبَينَا صَبِيٌّ
يَرْضَعُ منْ أُمِّهِ فَمَرَّ رَجُلٌ رَاكِبٌ عَلَى دَابَّةٍ فَارِهَةٍ وَشَارَةٍ
حَسَنَةٍ، فَقَالَتْ أُمُّهُ : اَللهم اجْعَل ابْنِي مِثْلَ هَذَا، فَتَرَكَ
الثَّدْيَ وَأقْبَلَ إِلَيْهِ فَنَظَرَ إِلَيْهِ، فَقَالَ : اَللهم لاَ
تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ، ثُمَّ أقْبَلَ عَلَى ثَدْيه فَجَعَلَ يَرتَضِعُ»، فَكَأنِّي
أنْظُرُ إِلَى رَسُول الله صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَحْكِي ارْتضَاعَهُ
بِأصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ في فِيه، فَجَعَلَ يَمُصُّهَا، قَالَ: «وَمَرُّوا
بِجَارِيَةٍ وَهُم يَضْرِبُونَهَا، ويَقُولُونَ : زَنَيْتِ سَرَقْتِ، وَهِيَ
تَقُولُ : حَسْبِيَ اللهُ ونِعْمَ الوَكِيلُ . فَقَالَتْ أمُّهُ : اَللهم لاَ
تَجْعَل ابْنِي مِثْلَهَا، فَتَركَ الرَّضَاعَ ونَظَرَ إِلَيْهَا، فَقَالَ :
اَللهم اجْعَلْنِي مثْلَهَا، فَهُنَالِكَ تَرَاجَعَا الحَديثَ، فَقَالَتْ : مَرَّ رَجُلٌ
حَسَنُ الهَيْئَةِ، فَقُلْتُ : اَللهم اجْعَلْ ابْنِي مِثْلَهُ، فَقُلْتَ : اَللهم
لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ، وَمَرُّوا بهذِهِ الأمَةِ وَهُمْ يَضْرِبُونَهَا
وَيَقُولُونَ : زَنَيْتِ سَرَقْتِ، فقلتُ : اَللهم لاَ تَجْعَلِ ابْنِي مِثْلَهَا،
فَقُلْتَ : اَللهم اجْعَلْنِي مِثْلَهَا ؟! قَالَ : إنَّ ذلك الرَّجُل كَانَ
جَبَّاراً، فَقُلْتُ : اَللهم لا تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ، وَإنَّ هذِهِ يَقُولُونَ :
زَنَيْتِ، وَلَمْ تَزْنِ وَسَرقْتِ، وَلَمْ تَسْرِقْ، فَقُلْتُ : اَللهم
اجْعَلْنِي مِثْلَهَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (নবজাত শিশুদের মধ্যে) দোলনায় তিনজনই
মাত্র কথা বলেছে; মারয়্যামের পুত্র ঈসা, আর (বনী ইস্রাঈলের) জুরাইজের (পবিত্রতার
সাক্ষী) শিশু। জুরাইজ ইবাদতগুযার মানুষ ছিল এবং সে একটি উপাসনালয় (আশ্রম) বানিয়েছিল।
একদা সে সেখানে নামায পড়ছিল। এমন সময় তার মা তার নিকট এসে তাকে ডাকলে সে (মনে মনে)
বলল, ‘হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (দুটই গুরুত্বপূর্ণ; কোনটিকে প্রাধান্য দই,
তার সুমতি দাও)।’
সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। আর তার মা ফিরে গেল। পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত
থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ‘জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ‘হে প্রভু!
আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তার পরবর্তী
দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ‘জুরাইজ!’ সে (মনে
মনে) বলল, ‘হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল
থাকল। তখন (তিন তিন দিন সাড়া না পেয়ে তার মা তাকে বদদো‘আ দিয়ে) বলল, ‘হে আল্লাহ!
বেশ্যাদের মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি ওর মরণ দিও না।’
বনী ইস্রাঈল জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা চর্চা করতে লাগল। এক বেশ্যা মহিলা ছিল, যার
দৃষ্টান্তমূলক রূপ-সৌন্দর্য ছিল। সে বলল, ‘তোমরা চাইলে আমি ওকে ফিতনায় ফেলতে
পারি।’ সুতরাং সে নিজেকে তার কাছে পেশ করল। কিন্তু জুরাইজ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল
না। পরিশেষে সে এক রাখালের কাছে এল, যে জুরাইজের আশ্রমে আশ্রয় নিত। সে দেহ সমর্পণ
করলে রাখাল তার সাথে ব্যভিচার করল এবং বেশ্যা তাতে গর্ভবতী হয়ে গেল। অতঃপর সে যখন
সন্তান ভূমিষ্ঠ করল, তখন (লোকেদের জিজ্ঞাসার উত্তরে) বলল, ‘এটি জুরাইজের সন্তান।’
সুতরাং লোকেরা জুরাইজের কাছে এসে তাকে আশ্রম হতে বেরিয়ে আসতে বলল। (সে বেরিয়ে এলে)
তারা তার আশ্রম ভেঙ্গে দিল এবং তাকে মারতে লাগল। জুরাইজ বলল, ‘ কী ব্যাপার
তোমাদের? (এ শাস্তি কিসের?)’ লোকেরা বলল, ‘তুমি এই বেশ্যার সাথে ব্যভিচার করেছ এবং
তার ফলে সে সন্তান জন্ম দিয়েছে।’ সে বলল, ‘সন্তানটি কোথায়?’ অতঃপর লোকেরা শিশুটিকে
নিয়ে এলে সে বলল, ‘আমাকে নামায পড়তে দাও।’ সুতরাং সে নামায পড়ে শিশুটির কাছে এসে
তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞাসা করল, ‘ওহে শিশু! তোমার পিতা কে?’ সে জবাব দিল, ‘অমুক
রাখাল।’
অতএব লোকেরা (তাদের ভুল বুঝে এবং এই অলোকিক ঘটনা দেখে) জুরাইজের কাছে এসে তাকে
চুমা দিতে ও স্পর্শ করতে লাগল। তারা বলল, ‘আমরা তোমার আশ্রমকে স্বর্ণ দিয়ে বানিয়ে
দেব।’ সে বলল, ‘না, মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও, যেমন পূর্বে ছিল।’ সুতরাং তারা তাই
করল। (তৃতীয় শিশুর ঘটনা হচ্ছে বনী ইস্রাঈলের) এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল।
এমন সময় তার পাশ দিয়ে উৎকৃষ্ট সওয়ারীতে আরোহী এক সুদর্শন পুরুষ চলে গেল। তার মা
দো‘আ করে বলল, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে ওর মত করো।’ শিশুটি তখনি মায়ের দুধ ছেড়ে
দিয়ে সেই আরোহীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ আমাকে ওর মত করো না।’ তারপর
মায়ের দুধের দিকে ফিরে দুধ চুষতে লাগল।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের
তর্জনী আঙ্গুলকে নিজ মুখে চুষে শিশুটির দুধ পান দেখাতে লাগলেন। আমি যেন তা এখনো
দেখতে পাচ্ছি। পুনরায় (তাদের) পাশ দিয়ে একটি দাসীকে লোকেরা মারতে মারতে নিয়ে
যাচ্ছিল। তারা বলছিল, ‘তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস!’ আর দাসীটি বলছিল,
‘হাসবিয়াল্লাহু অনি‘মাল অকীল।’ (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনই উত্তম
কর্মবিধায়ক।)
তা দেখে মহিলাটি দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না।’ ছেলেটি
সাথে সাথে মায়ের দুধ ছেড়ে দাসীটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত
করো।’ অতঃপর মা-বেটায় কথোপকথন করল। মা বলল, ‘একটি সুন্দর আকৃতির লোক পার হলে আমি
বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো। তখন তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি
আমাকে ওর মত করো না। আবার ওরা ঐ দাসীকে নিয়ে পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি
আমার ছেলেকে ওর মত করো না। কিন্তু তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো!
(এর কারণ কী?)’
শিশুটি বলল, ‘(তুমি বাহির দেখে বলেছ, আর আমি ভিতর দেখে বলেছি।) ঐ লোকটি
স্বৈরাচারী, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আর ঐ দাসীটির
জন্য ওরা বলছে, তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস, অথচ ও এ সব কিছুই করেনি। তাই
আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৪৩৬, ২৪৮২, ৩৪৬৬, মুসলিম ২৫৫০, আহমাদ
৮০১০, ৮৭৬৮, ৯৩১৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩৩
অনাথ-এতীম, কন্যা-সন্তান ও
সমস্ত দুর্বল ও দরিদ্রের সঙ্গে নম্রতা, তাদের প্রতি দয়া ও তাদের সঙ্গে বিনম্র
ব্যবহার করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “মু’মিনদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (সূরা হিজর ৮৮ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ﴾ [الكهف: ٢٨]
অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে তাঁর
সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে
তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَأَمَّا ٱلۡيَتِيمَ فَلَا تَقۡهَرۡ ٩ وَأَمَّا ٱلسَّآئِلَ فَلَا تَنۡهَرۡ ١٠ ﴾ [الضحا: ٩، ١٠]
অর্থাৎ “অতএব তুমি পিতৃহীনের প্রতি কঠোর হয়ো না এবং ভিক্ষুককে ধমক দিয়ো না।” (সূরা
যুহা ৯-১০ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ أَرَءَيۡتَ ٱلَّذِي يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ ١ فَذَٰلِكَ ٱلَّذِي يَدُعُّ ٱلۡيَتِيمَ ٢ وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ ٣ ﴾ [الماعون: ١، ٣]
অর্থাৎ “তুমি কি দেখেছ তাকে, যে (দ্বীন বা) কর্মফলকে মিথ্যা মনে করে থাকে? সে তো ঐ
ব্যক্তি, যে পিতৃহীনকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। এবং সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহ
প্রদান করে না।” (সূরা মাউন ১-৩ আয়াত)
২৬৫
وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله
عنه، قَالَ : كُنَّا مَعَ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم سِتَّةَ نَفَرٍ، فَقَالَ
المُشْرِكُونَ لِلنَّبيِّ صلى الله عليه وسلم : اُطْرُدْ هَؤُلاَءِ لاَ
يَجْتَرِئُونَ عَلَيْنَا، وَكُنْتُ أنَا وَابْنُ مَسْعُودٍ وَرَجُلٌ مِنْ هُذَيْلٍ
وَبِلالٌ وَرَجُلاَنِ لَسْتُ أُسَمِّيهِمَا، فَوَقَعَ في نَفسِ رَسُولِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم مَا شَاءَ اللهُ أنْ يَقَعَ فَحَدَّثَ نَفسَهُ، فَأنْزَلَ اللهُ
تَعَالَى : ﴿ وَلَا تَطۡرُدِ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ
وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجهه﴾ [الانعام: ٥٢] رواه مسلم
সা‘দ
ইবনু আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, একদা আমরা ছ’জন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম।
ইতোমধ্যে মুশরিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, ‘এদেরকে (আপনার
মজলিস থেকে) তাড়িয়ে দিন, যেন এরা আমাদের ব্যাপারে দুঃসাহসী হতে না পারে।’ (সা‘দ
বলেন,) আমি, ইবনু মাসউদ, হুযাইল গোত্রের এক ব্যক্তি, বিলাল এবং আরও দু’জন ছিলেন,
যাদের নাম আমি করছি না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তরে
আল্লাহ যা ইচ্ছা করলেন তাই ঘটল। সুতরাং তিনি মনে মনে (তাঁদেরকে তাড়ানোর) কথা
ভাবলেন। যার জন্য আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, ‘‘যারা তাদের প্রতিপালককে প্রাতে
ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ডাকে, তাদেরকে তুমি বিতাড়িত করো না।’’ সূরা
আন‘আম ৫২ আয়াত, মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৪১৩, ইবনু মাজাহ ৪১২৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬৬
عَنْ أَبِي هُبَيرَة عَائِذِ بنِ عَمرٍو
المُزَنِي وَهُوَ مِنْ أهْلِ بَيعَةِ الرِّضْوَانِ رضي الله عنه : أنَّ أبَا
سُفْيَانَ أتَى عَلَى سَلْمَانَ وَصُهَيْبٍ وَبلاَلٍ في نَفَرٍ، فَقَالُوا : مَا
أخَذَتْ سُيُوفُ اللهِ مِنْ عَدُوِّ الله مَأْخَذَهَا، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رضي
الله عنه: أتَقُولُون هَذَا لِشَيْخِ قُرَيْشٍ وَسَيدِهِمْ ؟ فَأتَى النَّبيَّ صلى
الله عليه وسلم، فَأخْبَرهُ، فَقَالَ: «يَا أَبَا بَكْرٍ، لَعلَّكَ أغْضَبتَهُمْ؟
لَئِنْ كُنْتَ أغْضَبْتَهُمْ لَقَدْ أغْضَبتَ رَبَّكَ». فَأَتَاهُمْ فَقَالَ : يَا
إخْوَتَاهُ، أغْضَبْتُكُمْ؟ قَالُوا : لاَ، يَغْفِرُ اللهُ لَكَ يَا أُخَيَّ .
رواه مسلم
আবূ
হুবাইরাহ ‘আইয ইবনু ‘আমর মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(হুদাইবিয়ার
সন্ধি ও বায়‘আতের পর) আবূ সুফিয়ান (কাফের অবস্থায়) সালমান, সুহাইব ও বিলালের নিকট
এল। সেখানে আরো কিছু সাহাবা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা (আবূ সুফিয়ানের প্রতি ইঙ্গিত
করে) বললেন, ‘আল্লাহর তরবারিগুলো আল্লাহর শত্রুর হক আদায় করেনি।’ (এ কথা শুনে) আবূ
বকর (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা এ কথা কুরাইশের বয়োবৃদ্ধ ও তাদের নেতার সম্পর্কে বলছ?’
অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন এবং (এর)
সংবাদ দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আবূ বকর! সম্ভবতঃ
তুমি তাদেরকে (অর্থাৎ সালমান, সুহাইব ও বেলালকে) অসন্তুষ্ট করেছ। তুমি যদি তাদেরকে
অসন্তুষ্ট করে থাক, তাহলে তুমি আসলে তোমার প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করেছ।’’ সুতরাং
আবূ বকর তাঁদের নিকট এসে বললেন, ‘ভাইয়েরা! আমি কি তোমাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছি?’
তাঁরা বললেন, ‘না। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুক প্রিয় ভাইজান!’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৫০৪, আহমাদ ২০১১৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬৭
وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ
: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «أَنَا وَكَافلُ
اليَتِيمِ في الجَنَّةِ هَكَذا» وَأَشارَ بالسَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى، وَفَرَّجَ
بَيْنَهُمَا. رواه البخاري
সাহ্ল
ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি ও এতীমের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে
এভাবে (পাশাপাশি) থাকব।’’ এ কথা বলার সময় তিনি (তাঁর) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল
মিলিয়ে উভয়ের মাঝে একটু ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন। (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৩০৪, ৬০০৫, তিরমিযী ১৯১৮, আবূ দাউদ
৫১৫০, আহমাদ ২২৩১৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬৮
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «كَافلُ
اليَتيِم لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ في الجَنَّةِ»وَأَشَارَ
الرَّاوِي وَهُوَ مَالِكُ بْنُ أنَسٍ بالسَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিজের অথবা অপরের অনাথ (এতীমের)
তত্ত্বাবধায়ক; আমি এবং সে জান্নাতে এ দু’টির মত (পাশাপাশি) বাস করব।’’ বর্ণনাকারী
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের দিকে ইঙ্গিত করলেন। (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৯৮৩, আহমাদ ৮৬৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৬৯
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لَيْسَ المِسْكينُ الَّذِي تَرُدُّهُ
التَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلا اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ إِنَّمَا
المِسكِينُ الَّذِي يَتَعَفَّفُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةٍ في الصَّحِيحَينِ: «لَيْسَ المِسكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى
النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ واللُّقْمَتانِ، وَالتَّمْرَةُ والتَّمْرَتَانِ،
وَلَكِنَّ المِسْكِينَ الَّذِي لاَ يَجِدُ غنىً يُغْنِيه، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ
فَيُتَصَدَّقَ عَلَيهِ، وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ».
(আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ)) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মিসকীন সে নয়, যাকে
একটি খেজুর এবং দু’টি খেজুর এবং এক গ্রাস বা’ দুগ্রাস (অন্ন) ফিরিয়ে দেয়। বরং মিসকীন
তো ঐ ব্যক্তি, যে (অভাব থাকা সত্ত্বেও) চাওয়া থেকে দূরে থাকে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৭৬, ১৪৭৯,৪৫৩৯, মুসলিম ১০৩৯, নাসায়ী
২৫৭১, ২৫৭২, ২৫৭৩, আবূ দাউদ ১৬৩১, আহমাদ ৭৪৮৬, ২৭৪০৪, ৮৮৬৭, ৮৮৯৫, ৯৪৫৪, মুওয়াত্তা
মালেক -১৪৩৭, দারেমী ১৬১৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭০
وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ، كَالمُجَاهِدِ في
سَبيلِ اللهِ»وَأحسَبُهُ قَالَ: «وَكالقَائِمِ الَّذِي لاَ يَفْتُرُ،
وَكَالصَّائِمِ الَّذِي لاَ يُفْطِرُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করায়
চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’’ (হাদীসের বর্ণনাকারী
বলেন,) আমি ধারণা করছি যে, তিনি এ কথাও বললেন, ‘‘সে ঐ নফল নামায আদায়কারীর মত যে
ক্লান্ত হয় না এবং ঐ রোযা পালনকারীর মত যে রোযা ছাড়ে না।’’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৩৫৩, ৬০০৭, ৬০০৬, মুসলিম ২৯৮২, তিরমিযী
১৯৬৯, নাসায়ী ২৫৭৭, ইবনু মাজাহ ২১৪০, আহমাদ ৮৫১৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭১
وَعَنهُ، عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الوَلِيمَةِ، يُمْنَعُهَا مَنْ يَأتِيهَا،
وَيُدْعَى إِلَيْهَا مَنْ يَأْبَاهَا، وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّعْوَةَ فَقَدْ
عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ». رواه مسلم
وَفي رِوَايَةٍ في الصَّحِيحَينِ : عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ مِن قَولِهِ : «بئْسَ
الطَّعَامُ طَعَامُ الوَلِيمَةِ يُدْعَى إِلَيْهَا الأغْنِيَاءُ ويُتْرَكُ
الفُقَراءُ».
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট খাবার ঐ অলীমার খাবার,
যাতে যে (স্বয়ং) আসে তাকে (অর্থাৎ মিসকীনকে) বাধা দেওয়া হয় এবং যাকে আহ্বান করা হয়
সে (অর্থাৎ ধনী) আসতে অস্বীকার করে। আর যে ব্যক্তি দাওয়াত গ্রহণ করল না, সে আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল।’’ (মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫১৭৭, মুসলিম ১৪৩২, আবূ দাউদ ৩৭৪২,
ইবনু মাজাহ ১৯১৩, আহমাদ ৭২৩৭, ৭৫৬৯, ৭০০৮, ১০০৪০, মুওয়াত্তা মালেক -১১৬০, দারেমী ২০৬৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭২
عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ
صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْن حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ
يَوْمَ القِيَامَةِ أنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ»وضَمَّ أصَابِعَهُ . رواه مسلم
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যার লালন-পালন তাদের
সাবালিকা হওয়া অবধি করবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দু’টি আঙ্গুলের মত পাশাপাশি
আসব।’’ অতঃপর তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলি মিলিত করে (দেখালেন)। (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৬৩১, তিরমিযী ১৯১৪, আহমাদ ১২০৮৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭৩
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ : دَخَلَتْ عَلَيَّ امْرَأةٌ وَمَعَهَا ابنَتَانِ لَهَا تَسْأَلُ، فَلَمْ
تَجِدْ عِنْدِي شَيئاً غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحدَةٍ، فَأعْطَيْتُهَا إيَّاهَا
فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْها ولَمْ تَأكُلْ مِنْهَا، ثُمَّ قَامَتْ
فَخَرجَتْ، فَدَخَلَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَينَا، فَأخْبَرْتُهُ
فَقَالَ: «مَنِ ابْتُليَ مِنْ هذِهِ البَنَاتِ بِشَيءٍ فَأحْسَنَ إلَيْهِنَّ،
كُنَّ لَهُ سِتراً مِنَ النَّارِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, এক মহিলা তার দু’টি মেয়ে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকট ভিক্ষা চাইল। অতঃপর সে আমার
নিকট একটি খুরমা ব্যতীত কিছুই পেল না। সুতরাং আমি তা তাকে দিয়ে দিলাম। মহিলাটি তার
দু’মেয়েকে খুরমাটি ভাগ করে দিল এবং সে নিজে তা থেকে কিছুই খেল না, অতঃপর সে উঠে
বের হয়ে গেল। ইতোমধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। আমি তাঁকে বিষয়টি
জানালাম। তখন তিনি বললেন, ‘‘যাকে এই কন্যা সন্তান দিয়ে কোনো পরীক্ষায় ফেলা হয়,
তারপর যদি সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের
আগুন থেকে অন্তরাল হবে।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪১৮, ৫৯৯৫, মুসলিম ২৬২৯, তিরমিযী ১৯১৫,
আহমাদ ২৩৫৩৬, ২৪০৫১, ২৪০৯০, ২৪৮০৪, ২৫৫২৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭৪
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ : جَاءَتني مِسْكينةٌ تَحْمِلُ ابْنَتَيْنِ لَهَا، فَأطْعَمْتُها ثَلاَثَ
تَمرَات، فَأعْطَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا تَمْرَةً وَرَفَعتْ إِلَى فِيها
تَمْرَةً لِتَأكُلها، فَاسْتَطعَمَتهَا ابْنَتَاهَا، فَشَقَّتِ التَّمْرَةَ الَّتي
كَانَتْ تُريدُ أنْ تَأكُلَهَا بَيْنَهُمَا، فَأعجَبَنِي شَأنُهَا، فَذَكَرْتُ
الَّذِي صَنَعَتْ لِرَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «إنَّ الله قَدْ
أوْجَبَ لَهَا بِهَا الجَنَّةَ، أَوْ أعتَقَهَا بِهَا مِنَ النَّارِ». رواه مسلم
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, এক মিসকীন মহিলা তার দু’টি কন্যাকে (কোলে) বহন করে আমার কাছে এল। আমি তাকে
তিনটি খুরমা দিলাম। অতঃপর সে তার কন্যা দু’টিকে একটি একটি করে খুরমা দিল এবং সে
নিজে খাবার জন্য একটি খুরমা মুখ-পর্যন্ত তুলল। কিন্তু তার কন্যা দু’টি সেটিও খেতে
চাইল। সুতরাং মহিলাটি যে খেজুরটি নিজে খেতে ইচ্ছা করেছিল, সেটিকে দু’ভাগে ভাগ করে তাদের
মধ্যে বণ্টন করে দিল। সুতরাং তার (এ) অবস্থা আমাকে মুগ্ধ করল। তাই আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মহিলাটির ঘটনা বর্ণনা করলাম। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার এ
কাজের বিনিময়ে জান্নাত ওয়াজেব করে দিয়েছেন অথবা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে
দিয়েছেন।’’ (মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪১৮, ৫৯৯৫, মুসলিম ২৬৩০, ২৯২৯, তিরমিযী
১৯১৫, ইবনু মাজাহ ৩৬৬৮, আহমাদ ২৩৫৩৫, ২৪০৫১, ২৪০৯০, ২৪৮০৪, ২৫৫২৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭৫
وَعَنْ أَبِي شُرَيحٍ خُوَيْلِدِ بنِ
عَمرٍو الخُزَاعِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم:
«اَللهم إنِّي أُحَرِّجُ حَقَّ الضَّعِيفَينِ : اليَتِيم وَالمَرْأةِ».حديث حسن
رواه النسائي بإسناد جيد
আবূ
শুরাইহ্ খুওয়াইলিদ ইবনু ‘আমর খুযা‘য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমি লোকদেরকে দুই শ্রেণীর
দুর্বল মানুষের অধিকার সম্বন্ধে পাপাচারিতার ভীতিপ্রদর্শন করছি; এতীম ও নারী।’’
(নাসায়ী, উত্তম সূত্রে) [১]
[১] ইবনু মাজাহ ৩৬৭৮, আহমাদ ৯৩৭৪
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
২৭৬
وَعَن مُصعَبِ بنِ سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ
رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ: رَأى سَعدٌ أنَّ لَهُ فَضْلاً عَلَى مَنْ دُونَهُ،
فَقَالَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم: «هَلْ تُنْصَرُونَ وتُرْزَقُونَ إلاَّ
بِضُعَفَائِكُمْ». رواه البخاري هكذا مُرسلاً، فَإِنَّ مُصعَبَ بنَ سَعدَ
تَابِعِيٌّ، وَرَوَاهُ الحَافِظ أَبُو بَكرٍ البَرقَاني في صَحِيحِهِ مُتَّصِلاً
عَن مُصعَبٍ، عَنْ أَبِيهِ رضي الله عنه
মুসআব
ইবনু সা‘দ ইবনু আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(তাঁর
পিতা) সা‘দ ধারণা করলেন যে, তার চেয়ে নিম্নশ্রেণীর লোকের উপর তাঁর মর্যাদা রয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমাদেরকে দুর্বলদের কারণেই সাহায্য
করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়।[1
[১] সহীহুল বুখারী ২৮৯৬, নাসায়ী ৩১৭৮, আহমাদ ১৪৯৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭৭
وَعَنْ أَبِي الدَّردَاءِ عُوَيمِرٍ رضي
الله عنه، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
يَقُولُ: «ابْغُونِي الضُّعَفَاءَ، فَإنَّمَا تُنْصَرُونَ وتُرْزَقُونَ،
بِضُعَفَائِكُمْ». رواه أَبُو داود بإسناد جيد
আবূ
দারদা উআইমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার জন্য তোমরা
দুর্বলদেরকে খুঁজে আনো, কেননা তোমাদের দুর্বলদের কারণেই তোমাদেরকে সাহায্য করা হয়
এবং রুযী দেওয়া হয়।’’ (আবূ দাউদ, উত্তম সূত্রে) [১]
[১] তিরমিযী ১৭০২, আবূ দাউদ ২৫৯৪
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩৪
স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার
করার অসিয়ত
২৭৮
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «اسْتَوْصُوا
بالنِّسَاءِ خَيْراً ؛ فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلعٍ، وَإنَّ أعْوَجَ
مَا في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فَإنْ ذَهَبتَ تُقيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإنْ تَرَكْتَهُ،
لَمْ يَزَلْ أعْوجَ، فَاسْتَوصُوا بالنِّساءِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية في الصحيحين: المَرأةُ كالضِّلَعِ إنْ أقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا، وَإن
اسْتَمتَعْتَ بِهَا، اسْتَمتَعْتَ وفِيهَا عوَجٌ
وفي رواية لمسلم: «إنَّ المَرأةَ خُلِقَت مِنْ ضِلَع، لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى
طَريقة، فإن اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَفيهَا عوَجٌ، وإنْ
ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَها، وَكَسْرُهَا طَلاَقُهَا».
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য
মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের
হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহলে
ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের
জন্য মঙ্গলকামী হও।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬০১৮, ৬১৩৬, ৬১৩৮,
৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৭৯
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ زَمْعَةَ رضي الله
عنه : أنَّهُ سَمِعَ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ، وَذَكَرَ النَّاقَةَ
وَالَّذِي عَقَرَهَا، فَقَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم: «﴿ إذ انبعث
أشقاها ﴾ [الشمس: ١٢] انْبَعَثَ لَهَا رَجُلٌ عَزيزٌ، عَارِمٌ مَنيعٌ في
رَهْطِهِ»، ثُمَّ ذَكَرَ النِّسَاءَ، فَوعَظَ فِيهنَّ، فَقَالَ: «يَعْمِدُ
أحَدُكُمْ فَيَجْلِدُ امْرَأتَهُ جَلْدَ العَبْدِ فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ
آخِرِ يَومِهِ».ثُمَّ وَعَظَهُمْ في ضَحِكِهمْ مِنَ الضَّرْطَةِ، وَقالَ: «لِمَ
يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ ؟!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আব্দুল্লাহ
ইবনু যামআহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুৎবাহ দিতে শুনলেন। তিনি (খুৎবার মাধ্যমে)
(সালেহ নবীর) উটনী এবং ঐ ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন, যে ঐ উঁটনীটিকে কেটে ফেলেছিল।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন তাদের মধ্যকার
সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠল। (সূরা শাম্স ১২ আয়াত) (অর্থাৎ) উঁটনীটিকে
মেরে ফেলার জন্য নিজ বংশের মধ্যে এক দুরন্ত চরিত্রহীন প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে
উঠেছিল।’’
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের কথা আলোচনা করলেন এবং তাদের
ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কেউ তার স্ত্রীকে দাসদের
মত প্রহার করে। অতঃপর সম্ভবত দিনের শেষে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। (এরূপ উচিত
নয়।)’’ পুনরায় তিনি তাদেরকে বাতকর্মের (বায়ু নির্গত) ব্যাপারে হাসতে নিষেধ করলেন
এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ এমন কাজে কেন হাসে, যে কাজ সে নিজেও করে?’’ (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৩৭৭, ৪৯৪২,৫২০৪, ৬০৪২, মুসলিম ২৮৫৫,
তিরমিযী ৩৩৪৩, ইবনু মাজাহ ১৯৮৩, আহমাদ ১৫৭৮৮, দারেমী ২২২০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৮০
وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ
: قَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إنْ
كَرِهَ مِنْهَا خُلُقاً رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ»، أَوْ قَالَ: «غَيْرَهُ»رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারী
(স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। যদি সে তার একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য আচরণে
সন্তুষ্ট হবে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ১৪৬৯, আহমাদ ৮১৬৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৮১
وَعَن عَمرِو بنِ الأحوَصِ الجُشَمِي رضي
الله عنه : أنَّهُ سَمِعَ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم في حَجَّةِ الوَدَاعِ
يَقُولُ بَعْدَ أنْ حَمِدَ الله تَعَالَى، وَأثْنَى عَلَيهِ وَذَكَّرَ وَوَعظَ،
ثُمَّ قَالَ: «ألا وَاسْتَوصُوا بالنِّساءِ خَيْراً، فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٍ
عِنْدَكُمْ لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئاً غَيْرَ ذلِكَ إلاَّ أنْ يَأتِينَ
بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ، فَإنْ فَعَلْنَ فَاهْجُرُوهُنَّ في المَضَاجِع،
وَاضْرِبُوهُنَّ ضَرباً غَيْرَ مُبَرِّحٍ، فإنْ أطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا
عَلَيهنَّ سَبيلاً ؛ ألاَ إنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ حَقّاً، وَلِنِسَائِكُمْ
عَلَيْكُمْ حَقّاً ؛ فَحَقُّكُمْ عَلَيهِنَّ أنْ لا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ مَنْ
تَكْرَهُونَ، وَلا يَأْذَنَّ في بُيُوتِكُمْ لِمَنْ تَكْرَهُونَ ؛ ألاَ
وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ في كِسْوَتِهنَّ
وَطَعَامِهنَّ»رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن صحيح»
‘আমর
ইবনু আহ্ওয়াস জুশামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, তিনি সর্বপ্রথমে
আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন এবং উপদেশ দান ও নসীহত করলেন। অতঃপর তিনি
বললেন, ‘‘শোনো! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। কেননা, তারা তোমাদের নিকট
কয়েদী। তোমরা তাদের নিকটে এ (শয্যা-সঙ্গিনী হওয়া, নিজের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং
তোমাদের মালের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি) ছাড়া অন্য কোনও জিনিসের অধিকার রাখ না।
হ্যাঁ, সে যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতার কাজ করে (তাহলে তোমরা তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার
অধিকার রাখ)।
সুতরাং তারা যদি এমন কাজ করে, তবে তাদেরকে বিছানায় আলাদা ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে
মার। কিন্তু সে মার যেন যন্ত্রণাদায়ক না হয়। অতঃপর তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়ে
যায়, তবে তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। মনে রেখ, তোমাদের স্ত্রীদের
উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে।
তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন তোমাদের বিছানায় ঐ সব লোককে আসতে না দেয়, যাদেরকে
তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন ঐ সব লোককে তোমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করার অনুমতি না
দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। আর শোনো! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদেরকে
ভালোরূপে খেতে-পরতে দেবে।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে) [১]
[১] তিরমিযী ১১৬৩, ইবনু মাজাহ ১৮৫১
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
২৮২
وَعَن مُعَاوِيَةَ بنِ حَيدَةَ رضي الله
عنه، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ الله، مَا حَقُّ زَوجَةِ أَحَدِنَا عَلَيهِ ؟
قَالَ: «أنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طعِمْتَ، وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، وَلاَ
تَضْرِبِ الوَجْهَ، وَلا تُقَبِّحْ، وَلا تَهْجُرْ إلاَّ في البَيْتِ».حديثٌ حسنٌ
رواه أَبُو داود وَقالَ : معنى «لا تُقَبِّحْ»أي : لا تقل : قبحكِ الله .
মুআবিয়াহ
ইবনু হাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের
কারো স্ত্রীর অধিকার স্বামীর উপর কতটুকু?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি খেলে তাকে খাওয়াবে
এবং তুমি পরলে তাকে পরাবে। (তার) চেহারায় মারবে না, তাকে ‘কুৎসিত হ’ বলবে না এবং
তার থেকে পৃথক থাকলে বাড়ীর ভিতরেই থাকবে।’’ (অর্থাৎ অবাধ্য স্ত্রীকে বাধ্য করার
জন্য বিছানা পৃথক করতে পারা যাবে, কিন্তু রুম পৃথক করা যাবে না।) (আবূ দাউদ, হাসান
সূত্রে) [১]
[১] আবূ দাউদ ২১৪২, ২১৪৩, ২১৪৪, ইবনু মাজাহ ১৮৫০
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
২৮৩
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «أكْمَلُ
المُؤمِنِينَ إيمَاناً أحْسَنُهُمْ خُلُقاً، وخِيَارُكُمْ خِيَارُكُم
لِنِسَائِهِمْ». رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن صحيح
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সবার চেয়ে পূর্ণ মু’মিন
ঐ ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার চেয়ে সুন্দর, আর তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে
নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম।’’ (তিরমিযী) [১]
[১] তিরমিযী ১১৬২, আহমাদ ৭৩৫৪, ৯৭৫৬, ১০৪৩৬, দারেমী ২৭৯২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৮৪
وَعَن إِيَاسِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ أَبي
ذِبَابٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: «لاَ تَضْرِبُوا إمَاء الله» فجاء عُمَرُ رضي الله عنه إِلَى رسولِ
الله صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ : ذَئِرْنَ النِّسَاءُ عَلَى أزْوَاجِهِنَّ،
فَرَخَّصَ في ضَرْبِهِنَّ، فَأطَافَ بآلِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
نِسَاءٌ كَثيرٌ يَشْكُونَ أزْواجَهُنَّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
صلى الله عليه وسلم: «لَقَدْ أطَافَ بِآلِ بَيتِ مُحَمَّدٍ نِسَاءٌ كثيرٌ
يَشْكُونَ أزْوَاجَهُنَّ لَيْسَ أولَئكَ بخيَارِكُمْ». رواه أَبُو داود بإسناد
صحيح
ইয়াস
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে প্রহার করবে
না।’’ পরবর্তীতে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
এসে বললেন, ‘মহিলারা তাদের স্বামীদের উপর বড় দুঃসাহসিনী হয়ে গেছে।’ সুতরাং নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রহার করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের নিকট বহু মহিলা এসে নিজ নিজ স্বামীর
বিরুদ্ধে অভিযোগ আরম্ভ করল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট প্রচুর মহিলাদের সমাগম, যারা তাদের স্বামীদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। (জেনে রাখ, মারকুটে) ঐ (স্বামী)রা তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ
নয়।’’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]
[১] আবূ দাউদ ২১৪৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৫, দারেমী ২২১৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৮৫
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «الدُّنْيَا مَتَاعٌ، وَخَيرُ مَتَاعِهَا المَرْأَةُ الصَّالِحَةُ».
رواه مسلم
আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পৃথিবী এক উপভোগ্য সামগ্রী এবং তার মধ্যে
সর্বশ্রেষ্ঠ সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ১৪৬৭, নাসায়ী ৩২৩২, ইবনু মাজাহ ১৮৫৫, আহমাদ
৬৫৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩৫
স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ ﴾ [النساء: ٣٤]
অর্থাৎ “পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ, আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান
করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ (তাদের জন্য) ধন ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যময়ী নারীরা
অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোক-চক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের
ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লার হিফাযতে (আদেশ ও তওফীকে) তারা তা হিফাযত করে।” (সূরা
নিসা ৩৪ আয়াত)
২৮৬
আমর
ইবনু আহওয়াস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এর
(২৮১নং) হাদীসটি অন্যতম।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৮৭
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إِذَا دَعَا
الرَّجُلُ امرَأتَهُ إِلَى فرَاشِهِ فَلَمْ تَأتِهِ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا،
لَعَنَتْهَا المَلائِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةٍ لَهُمَا: إِذَا بَاتَتِ المَرأةُ هَاجِرَةً فِرَاشَ زَوْجِهَا
لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ
وَفي رِوَايَةٍ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
والَّذِي نَفْسِي بيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأتَهُ إِلَى فِرَاشهِ
فَتَأبَى عَلَيهِ إلاَّ كَانَ الَّذِي في السَّمَاء سَاخطاً عَلَيْهَا حَتَّى
يَرْضَى عَنها
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ
বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে, অতঃপর সে (স্বামী) তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত
কাটায়, তাহলে ফিরিশতাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩২৩৭, ৫১৯৩, ৫১৯৪, মুসলিম ১৪৩৬, আবূ
দাউদ ২১৪১, আহমাদ ৭৪২২, ৮৩৭৩, ৮৭৮৬, ৯৭০২, ৯৮৬৫, ১০৫৬৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৮৮
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه أيضاً
: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَحِلُّ
لاِمْرَأةٍ أنْ تَصُومَ وزَوْجُهَا شَاهدٌ إلاَّ بإذْنِهِ، وَلاَ تَأذَنَ في
بَيْتِهِ إلاَّ بِإذنِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وهذا لفظ البخاري
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া কোনো
নারীর জন্য নফল রোযা রাখা বৈধ নয় এবং স্বামীর সম্মতি ব্যতিরেকে তার ঘরে কাউকে
প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়াও তার জন্য বৈধ নয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি
বুখারীর) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫১৯৫, ২০৬৬, ৫১৯২, ৫৩৬০, মুসলিম ১০২৬,
আবূ দাউদ ১৬৮৭, আহমাদ ২৭৪০৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৮৯
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عنهما، عَن
النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «كُلُّكُم رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ
رَعِيَّتِهِ: وَالأمِيرُ رَاعٍ، والرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أهْلِ بَيتِهِ،
وَالمَرْأةُ رَاعِيةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجها وَوَلَدهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ،
وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং
প্রত্যেকেই অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক
জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। একজন পুরুষ তার
পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার
স্বামী ও সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে।
তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। অতএব প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা
ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮,
৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিযী ১৭০৫, আবূ দাউদ ২৯২৮, আহমাদ ৪৪৮১, ৫১৪৫, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭,
৫৯৯০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৯০
وَعَنْ أَبِي عَلِيِّ طَلْقِ بنِ عَلِيِّ
رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ:
«إِذَا دَعَا الرَّجُلُ زَوْجَتهُ لحَاجَتِهِ فَلْتَأتِهِ وَإنْ كَانَتْ عَلَى
التَّنُور». رواه الترمذي والنسائي، وَقالَ الترمذي: حديث حسن صحيح
আবূ
আলী ত্বাল্ক ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার
প্রয়োজনে আহ্বান করবে, তখন সে যেন (তৎক্ষণাৎ) তার নিকট যায়। যদিও সে উনানের কাছে
(রুটি ইত্যাদি পাকানোর কাজে ব্যস্ত) থাকে।’’ (তিরমিযী হাসান সূত্রে) [১]
[১] তিরমিযী ১১৬০
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
২৯১
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَوْ كُنْتُ آمِراً أحَداً أنْ يَسْجُدَ
لأحَدٍ لأمَرْتُ المَرأةَ أنْ تَسْجُدَ لزَوجِهَا». رواه الترمذي، وَقالَ: حديث
حسن صحيح
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদাহ করার আদেশ
করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদাহ করে।’’ (তিরমিযী
হাসান সূত্রে) [১]
[১] তিরমিযী ১১৫৯
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
২৯২
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنْهَا قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَيُّمَا اِمْرأَةٍ
مَاتَتْ وَزُوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الجَنَّةَ»رواه الترمذي وقال حديث حسن
.
উম্মু
সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্ত্রীর প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট ও খুশি
থাকা অবস্থায় কোনো স্ত্রীলোক মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি ইমাম
তিরমিযি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এটা হাসান হাদীস।[১]
[১] আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সনদে দু’জন মাজহূল বর্ণনাকারী
রয়েছেন। তাদের সম্পর্কে আমি ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ গ্রন্থের (১৪২৬) নং হাদীসে আলোচনা
করেছি। বর্ণনাকারী মুসাবির আলহিমইয়ারী ও তার মা তারা উভয়ে মাজহূল (অপরিচিত)। ইবনুল
জাওযী ‘‘আলওয়াহিয়্যাত’’ গ্রন্থে (২/১৪১) উভয়কেই মাজহূল আখ্যা দিয়েছেন। আর ইবনু হাজার
ছেলে মুসাবির মাজহূল হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন। আর তার পূর্বে হাফিয
যাহাবী ‘‘আলমীযান’’ গ্রন্থে ছেলে মুসাবির সম্পর্কে বলেনঃ তার ব্যাপারে অজ্ঞতা রয়েছে
আর এ হাদীসটি মুনকার। আর তার মা সম্পর্কে বলেছেনঃ তার থেকে ছেলে মুসাবির এককভাবে বর্ণনা
করেছেন। অতএব মাও মাজহূলাহ্। তা সত্ত্বেও হাফিয যাহাবী তার ‘‘আত্তালখীস’’ গ্রন্থে ভুল
করে ভিন্ন কথা বলেছেন, যে গ্রন্থের মধ্যে বহু সন্দেহযুক্ত কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
২৯৩
وَعَن مُعَاذِ بنِ جَبَلٍ رضي الله عنه، عن
النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ تُؤْذِي امْرَأةٌ زَوْجَهَا في
الدُّنْيَا إلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الحُورِ العِينِ لاَ تُؤذِيهِ قَاتَلكِ
اللهُ ! فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا».
رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن
মু‘আয
ইবনু জাবাল থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই কোনো মহিলা দুনিয়াতে নিজ স্বামীকে
কষ্ট দেয়, তখনই তার সুনয়না হূর (জান্নাতী) স্ত্রী (অদৃশ্যভাবে) ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে
বলে, ‘আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুন। ওকে কষ্ট দিস্ না। ও তো তোর নিকট সাময়িক মেহমান
মাত্র। অচিরেই সে তোকে ছেড়ে আমাদের কাছে এসে যাবে।’’ (তিরমিযী) [১]
[১] তিরমিযী ১১৭৪, ইবনু মাজাহ ২০১৪
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
২৯৪
وَعَن أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي
فِتْنَةً هِيَ أضَرُّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّساء». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উসামাহ
ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি আমার পর পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বেশী
ক্ষতিকারক অন্য কোন ফিতনা ছাড়লাম না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫০৯৬, মুসলিম ২৭৪০, ২৭৪১, তিরমিযী ২৭৮০,
ইবনু মাজাহ ৩৯৯৮, আহমাদ ২১২৩৯, ২১৩২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩৬
পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَعَلَى ٱلۡمَوۡلُودِ لَهُۥ رِزۡقُهُنَّ وَكِسۡوَتُهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ﴾ [البقرة: ٢٣٣]
অর্থাৎ “জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা।” (সূরা বাক্বারাহ ২৩৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ لِيُنفِقۡ ذُو سَعَةٖ مِّن سَعَتِهِۦۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيۡهِ رِزۡقُهُۥ فَلۡيُنفِقۡ مِمَّآ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُۚ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا مَآ ءَاتَىٰهَاۚ ﴾ [الطلاق: ٧]
অর্থাৎ “সামর্থ্যবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে
আল্লাহ যা দান করেছেন, তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার
চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না।” (সূরা ত্বালাক্ব ৭ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ ﴾ [سبا: ٣٩]
অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তিনি তার বিনিময় দেবেন।” (সূরা সাবা ৩৯ আয়াত)
২৯৫
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «دِينَارٌ
أنْفَقْتَهُ في سَبيلِ اللهِ، وَدِينار أنْفَقْتَهُ في رَقَبَةٍ، وَدِينارٌ
تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ، وَدِينَارٌ أنْفَقْتَهُ عَلَى أهْلِكَ،
أعْظَمُهَا أجْراً الَّذِي أنْفَقْتَهُ عَلَى أهْلِكَ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক দ্বীনার (স্বর্ণমুদ্রা) তুমি আল্লাহর
পথে ব্যয় কর, এক দ্বীনার ক্রীতদাস মুক্ত করার কাজে ব্যয় কর, এক দ্বীনার কোন
মিসকীনকে সদকাহ কর এবং এক দ্বীনার তুমি পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় কর। এ সবের মধ্যে
ঐ দ্বীনারের বেশী নেকী রয়েছে যেটি তুমি পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করবে।’’ (মুসলিম)
[১]
[১] মুসলিম ৯৯৫, আহমাদ ৯৭৬৯, ৯৮১৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৯৬
وَعَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ، وَيُقَالُ لَهُ
: أَبو عَبدِ الرَّحمَانِ ثَوبَانَ بنِ بُجْدُد مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ : قَالَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أفْضَلُ دِينَارٍ
يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ : دِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ، وَدينَارٌ
يُنْفِقُهُ عَلَى دَابَّتِهِ في سَبيلِ الله، وَدِينارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى
أصْحَابهِ في سَبيلِ اللهِ». رواه مسلم
গোলাম
আবূ আব্দুল্লাহ মতান্তরে আবূ আব্দুর রহমান সাওবান ইবনু বুজদুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(সওয়াবের দিক দিয়ে) সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীনার
সেইটি, যে দ্বীনারটি মানুষ নিজ সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করে, যে দ্বীনারটি আল্লাহর
রাস্তায় তার সওয়ারীর উপর ব্যয় করে এবং সেই দ্বীনারটি যেটি আল্লাহর পথে তার
সঙ্গীদের পিছনে খরচ করে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৯৯৪, তিরমিযী ১৯৬৬, ইবনু মাজাহ ২৭৬০, আহমাদ
২১৮৭৫, ২১৯০০, ২১৯৪৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৯৭
وَعَن أمِّ سَلمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، هَلْ لِي أَجرٌ فِي
بَنِي أَبي سَلَمَة أنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ، وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ هكَذَا
وَهكَذَا إنَّمَا هُمْ بَنِيّ ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، لَكِ أجْرُ مَا أنْفَقْتِ
عَلَيْهِمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উম্মে
সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
একদা
আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহর
সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করি, তাতে কি আমি নেকী পাব? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছেড়ে
দিতে পারছি না, তারা তো আমারই সন্তান।’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তাদের উপর ব্যয়
করার দরুন নেকী পাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৬৭, ৫৩৬৯, মুসলিম ১০০১, আহমাদ ২৫৯৭০,
২৬১০২, ২৬১৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৯৮
وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله
عنه في حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ الَّذِي قَدَّمنَاهُ في أَوَّلِ الكِتَابِ في بَابِ
النِّيَةِ : أنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ لَهُ: «وَإنَّكَ لَنْ
تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ بِهَا حَتَّى مَا
تَجْعَلُ فِيْ فِيِّ امْرَأَتِك». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
সা‘দ
ইবনু আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
তাঁর দীর্ঘ (বিগত ৬ নম্বর) হাদীসে বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে,
তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও
তারও বিনিময় তুমি পাবে!’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৬, ১২৯৬, ২৭৪২, ২৭৪৪, ৩৯৩৮, ৫৩৫৪,
৫৬৫৮, ৬৩৭৩, ৬৭৩৩, মুসলিম ১৬২৮, তিরমিযী ৯৭৫, ২১১৬, ৩০৭৯, ৩১৮৯, নাসায়ী ৩৬২৬, ৩৬২৭,
৩৬২৮, ৩৬৩০, আবূ দাউদ ২৭৪০, ২৮৬৪, ৩১০৪, ইবনু মাজাহ ২৭০৮, আহমাদ ১৪৪৩, ১৪৭৭, ১৪৮২,
১৪৯১, ১৫০৪, ১৫২৭, ১৫৪৯, ১৬০২, মুওয়াত্তা মালেক ১৪৯৫, দারেমী ৩১৯৫, ৩১৯৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
২৯৯
وعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ البَدْرِي رضي الله
عنه، عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا أنْفَقَ الرَّجُلُ عَلَى
أَهْلِهِ نَفَقَةً يَحْتَسِبُهَا فَهِيَ لَهُ صَدَقَةٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সওয়াবের আশায় কোন মুসলিম যখন তার
পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তখন তা সাদকাহ হিসাবে গণ্য হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৫, ৪০০৬, ৫৩৫১, মুসলিম ১০০২, তিরমিযী
১৯৬৫, নাসায়ী ২৫৪৫, আহমাদ ১৬৬৩৪, ১৬৬৬১, ২১৮৪২, দারেমী ২৬৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩০০
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمَاً أنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ».حديث صحيح رواه
أَبُو داود وغيره .
وَرَوَاهُ مُسلِمٌ في صَحِيحِهِ بِمَعنَاهُ، قَالَ: كَفَى بِالمَرْءِ إثْمَاً أنْ
يحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوتَهُ
আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একটি মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটা
যথেষ্ট যে, সে তাদের (অধিকার) নষ্ট করবে (অর্থাৎ তাদের ভরণ-পোষণে কার্পণ্য করবে)
যাদের জীবিকার জন্য সে দায়িত্বশীল।’’ (আবূ দাউদ প্রমুখ, সহীহ) [১]
[১] মুসলিম ৯৯৬, আবূ দাউদ ১৬৯২, আহমাদ ৬৪৫৯, ৬৭৮০, ৬৭৮৯,
৬৮০৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩০১
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه :
أَنَّ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ
فِيهِ إلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ، فَيقُولُ أحَدُهُمَا : اَللهم أعْطِ مُنْفقاً
خَلَفاً، وَيَقُولُ الآخَرُ : اَللهم أعْطِ مُمْسِكاً تلَفاً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَعَنهُ، عَنِ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ
اليَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ
ظَهْرِ غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ
اللهُ»رواه البخاري
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ
করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’ আর অপরজন
বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৯৯৬, আবূ দাউদ ১৬৯২, আহমাদ ৬৪৫৯, ৬৭৮৯, ৬৮০৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩৭
নিজের পছন্দনীয় ও প্রিয়
জিনিস খরচ করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ ﴾ [ال عمران: ٩٢]
অর্থাৎ “তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস
আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।” (সূরা আলে ইমরান ৯২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ وَلَا تَيَمَّمُواْ ٱلۡخَبِيثَ مِنۡهُ تُنفِقُونَ وَلَسۡتُم بَِٔاخِذِيهِ إِلَّآ أَن تُغۡمِضُواْ فِيهِۚ ﴾ [البقرة: ٢٦٧]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি জমি হতে তোমাদের জন্য যা
উৎপাদন করে থাকি, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা দান কর। এমন মন্দ জিনিস দান করার সংকল্প
করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৬৭ আয়াত)
৩০২
عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ
أَبُو طَلْحَةَ رضي الله عنه أكْثَرَ الأنْصَار بالمَدِينَةِ مَالاً مِنْ نَخْل،
وَكَانَ أَحَبُّ أمْوالِهِ إِلَيْه بَيْرُحَاء، وَكَانتْ مُسْتَقْبلَةَ المَسْجِدِ
وَكَانَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا
طَيِّب . قَالَ أنَسٌ : فَلَمَّا نَزَلَتْ هذِهِ الآيةُ: ﴿ لَن تَنَالُواْ
ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ ﴾ قام أَبُو طَلْحَةَ إِلَى
رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، إنَّ الله تَعَالَى
أنْزَلَ عَلَيْكَ : ﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا
تُحِبُّونَۚ ﴾ وَإنَّ أَحَبَّ مَالِي إِلَيَّ بَيْرُحَاءُ، وَإنَّهَا صَدَقَةٌ
للهِ تَعَالَى، أرْجُو بِرَّهَا، وَذُخْرَهَا عِنْدَ الله تَعَالَى، فَضَعْهَا يَا
رَسُول الله حَيْثُ أرَاكَ الله، فَقَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «بَخ !
ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، وقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ، وَإنِّي أرَى
أنْ تَجْعَلَهَا في الأقْرَبينَ»، فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ : أفْعَلُ يَا رَسُولَ
الله، فَقَسَّمَهَا أَبُو طَلْحَةَ في أقَارِبِهِ، وبَنِي عَمِّهِ . مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, মদ্বীনার আনসারীগণের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সবচেয়ে অধিক খেজুর-বাগানের মালিক
ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাগানে প্রবেশ করে সুপেয় পানি
পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল; যার অর্থ, ‘‘তোমরা কখনও পুণ্য
লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।’’ (আলে
ইমরান ৯২আয়াত)
তখন আবূ তালহা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে
বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আপনার উপর (আয়াত) অবতীর্ণ করে বলেছেন, ‘‘তোমরা
কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয়
করেছ।’’ আর বায়রুহা বাগানটি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদকাহ করা
হল। আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য জমা হয়ে থাকবে। কাজেই
আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন, তাকে দান করে দিন।’
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আরে! এ হচ্ছে লাভজনক
সম্পদ। এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ, তা শুনেছি। আমি মনে করি, তুমি তোমার
আপন-জনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও।’’ আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আমি তাই করব।’ তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরদের মধ্যে তা বণ্টন
করে দিলেন। (বুখারী-মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৬১, ২৩১৮, ২৭৫২, ২৭৬৯, ৪৫৫৫, ৪৬১১,
মুসলিম ৯৯৮, তিরমিযী ২৯৯৭, নাসায়ী ৩৬০২, আবূ দাউদ ১৬৮৯, আহমাদ ১১৭৩৪, ১২০৩০, ১৩২৭৬,
১৩৩৫৬, ১৩৬২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩৮
পরিবার-পরিজন, স্বীয়
জ্ঞানসম্পন্ন সন্তান-সন্ততি ও আপন সমস্ত অধীনস্থদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ
দেওয়া, তাঁর অবাধ্যতা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা, তাদেরকে আদব শেখানো এবং শর‘য়ী
নিষিদ্ধ জিনিস থেকে তাদেরকে বিরত রাখা ওয়াজিব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَاۖ ﴾ [طه: ١٣٢]
অর্থাৎ “তুমি তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দাও এবং ওতে অবিচলিত থাক।” (সূরা
ত্বাহা ১৩২আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [التحريم: ٦]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি
হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-সবভাব
ফিশিতাগণ, যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে
আদিষ্ট হয় তাই করে।” (সূরা তাহরীম ৬ আয়াত)
৩০৩
عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
أَخَذَ الحَسَنُ بنُ عَلِيٍّ رَضِيَ الله عَنهُمَا تَمْرَةً مِنْ تَمْرِ
الصَّدَقَةِ فَجَعَلَهَا في فِيهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم: «كَخْ كَخْ إرْمِ بِهَا، أمَا عَلِمْتَ أنَّا لاَ نَأكُلُ
الصَّدَقَةَ !؟». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رِوَايَةٍ: أنَّا لا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাসান
ইবনু আলী (রাঃ) সাদকার একটি খুরমা নিয়ে তাঁর মুখে রাখলেন। তা দেখে রাসূলুল্লাহ
(রাঃ) বললেন, ‘‘ছিঃ ছিঃ! ফেলে দাও। তুমি কি জান না যে, আমরা সাদকাহ খাই না?’’
(বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৯১, ১৪৮৫, ৩০৭২, মুসলিম ১০৬৯, আহমাদ
৭৭০০, ৯০১৪. ৯০৫৩, ৯৪৩৫, ২৭২৫৭, ৯৮১৭, দারেমী ১৬৪২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩০৪
وَعَن أَبي حَفصٍ عُمَرَ بنِ أَبي سَلَمَةَ
عَبدِ اللهِ بنِ عَبدِ الأسَدِ رَبِيبِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ :
كُنْتُ غُلاَماً فِي حِجرِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَتْ يَدي
تَطِيشُ في الصَّحْفَةِ، فَقَالَ لي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: «يَا غُلامُ، سَمِّ الله تَعَالَى، وَكُلْ بيَمِينكَ، وَكُلْ مِمَّا
يَلِيكَ».فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتي بَعْدُ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হাফ্স উমার ইবনু আবী সালামা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল আসাদ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘একদা আমি ছোট হিসাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোলে ছিলাম।
খাবার (সময়) বাসনে আমার হাত ঘুরছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে বললেন, ‘‘ওহে কিশোর! ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছ থেকে
খাও।’’ তারপর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করে আসছি।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৩৭৬, ৫৩৭৭, ৫৩৭৮, মুসলিম ২০২২, আবূ
দাউদ ৩৭৭৭, ইবনু মাজাহ ৩২৬৭, আহমাদ ১৫৮৯৫, ১৫৯০২, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৩৮, দারেমী ২০১৯,
২০৪৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩০৫
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ:
كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ : الإمَامُ رَاعٍ
وَمَسْؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، والرَّجُلُ رَاعٍ في أهْلِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ
رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأةُ رَاعِيَةٌ في بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ
رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ في مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ،
فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি
মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত
হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে।
পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।
স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা
হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা
প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। অতএব প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে
জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮,
৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিযী ১৭০৫, আবূ দাউদ ২৯২৮, আহমাদ ৪৪৮১, ৫১৪৫, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭,
৫৯৯০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩০৬
وَعَن عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَن أبِيهِ، عَن
جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: «مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ،
وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في
المضَاجِعِ».حديث حسن رواه أَبُو داود بإسناد حسن
আমর
ইবনু শুআইব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে
নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন
তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’ (আবূ দাউদ,
হাসান সূত্রে)[১]
[১] আবূ দাউদ ৪৯৫, আহমাদ ১৬৬৫০, ৬৭১৭
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৩০৭
وَعَن أَبي ثُرَيَّةَ سَبْرَةَ بنِ مَعبَدٍ
الجُهَنِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم: «عَلِّمُوا الصَّبِيَّ الصَّلاةَ لِسَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُ
عَلَيْهَا ابْنَ عَشْرِ سِنِينَ».حديث حسن رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: حديث
حسن. ولفظ أَبي داود: مُرُوا الصَّبِيَّ بِالصَّلاةِ إِذَا بَلَغَ سَبْعَ سِنِينَ
আবূ
সুরাইয়াহ সাবরাহ ইবনু মা‘বাদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সে নামায শিক্ষা
দাও এবং দশ বছর বয়সে তার জন্য তাকে মার।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী) [১]
[১] তিরমিযী ৪০৭, আবূ দাউদ ৪৯৪ দারেমী ১৪৩১
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৩৯
প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার
সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡجَارِ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡجَارِ ٱلۡجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلۡجَنۢبِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۗ﴾ [النساء: ٣٦]
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা,
আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী,
পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসা ৩৬
আয়াত)
৩০৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ وَعَائِشَةَ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا، قَالاَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم: «مَا زَالَ جِبْريلُ يُوصِينِي بِالجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ
سَيُوَرِّثُهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
উমার ও আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জিবরীল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে
অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।’’
(বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০১৪, মুসলিম ২৬২৪, তিরমিযী ১৯৪২, আবূ
দাউদ ৫১৫১, ইবনু মাজাহ ৩৬৭৩, আহমাদ ২৩৭৩৯, ২৪০৭৯, ২৪৪২১, ২৫০১২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩০৯
وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ :
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «يَا أَبَا ذَرٍّ،
إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً، فَأكثِرْ مَاءهَا، وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ». رواه مسلم
وفي روايةٍ لَهُ عن أَبي ذر، قَالَ : إنّ خَلِيلِي صلى الله عليه وسلم أوْصَاني:
إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَاً فَأكْثِرْ مَاءها، ثُمَّ انْظُرْ أهْلَ بَيْتٍ مِنْ
جِيرَانِكَ، فَأصِبْهُمْ مِنْهَا بِمعرُوفٍ
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! যখন তুমি ঝোল
(ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর এবং তোমার
প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখ।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৬২৫, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, আহমাদ ২০৮১৭, ২০৮৭৩,
২০৯১৮, ২০৯১০, দারেমী ২০৭৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১০
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ
النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ
يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ!» قِيلَ : مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم ؟ قَالَ: «الَّذِي لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية لمسلم: لا يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।
আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।’’ জিজ্ঞেস
করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘যে লোকের প্রতিবেশী তার
অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০১৬, আহমাদ ১৫৯৩৫, ২৬৬২০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১১
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «يَا نِسَاءَ المُسْلِمَاتِ، لاَ تَحْقِرَنَّ
جَارةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন
তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হোক
না কেন। (বুখারী, মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৫৬৬, ৬০৪৭, মুসলিম ১০৩০, তিরমিযী ২১৩০,
আহমাদ ৭৫৩৭, ৮০০৫, ৯২৯৭, ১০০২৯, ১০১৯৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১২
وَعَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَمْنَعْ جَارٌ جَارَهُ أنْ يَغْرِزَ
خَشَبَةً في جِدَارِهِ»، ثُمَّ يقُولُ أَبُو هُرَيرَةَ : مَا لِي أرَاكُمْ عَنْهَا
مُعْرِضِينَ ! وَاللهِ لأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أكْتَافِكُمْ . مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার
দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ ইত্যাদি) গাড়তে নিষেধ না করে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন,
কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ থেকে
মুখ ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ)কে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ
করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব)। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৬৩, ৫৬২৭, ৫৬২৮, মুসলিম ১৬০৯, তিরমিযী
১৩৫৩, আবূ দাউদ ৩৬৩৪, ইবনু মাজাহ ২৩৩৫, আহমাদ ৭১১৩, ৭১১৪, ৭২৩৬, ৭৬৪৫, ৮১৩৫, ৮৯০০,
মুওয়াত্তা মালিক ১৪৬২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১৩
وَعَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بالله وَاليَومِ
الآخرِ، فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ،
فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ،
فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَسْكُتْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি
বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের
প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও
পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০১৮, ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮,
৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮ আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫,
দারেমী ২২২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১৪
وَعَن أَبي شُرَيْحٍ الخُزَاعيِّ رضي الله
عنه : أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤمِنُ بِاللهِ
وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ
وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ
وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَسْكُتْ». رواه مسلم بهذا اللفظ،
وروى البخاري بعضه.
আবূ
শুরায়হ খুযা‘য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি
বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ
দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ
ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।’’ (মুসলিম,
কিছু শব্দ বুখারীর) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০১৯, ৬১৩৫, ৬৪৭৬, মুসলিম ৪৮, তিরমিযী
১৯৬৭, ১৯৬৮, আবূ দাউদ ৩৭৪৮, ইবনু মাজাহ ৩৬৭২, আহমাদ ১৪৯৩৫,. ২৬৬১৮, ২৬৬২০, মুওয়াত্তা
মালিক ১৭২৮, ২০৩৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১৫
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إنَّ لِي جارَيْنِ،
فَإِلَى أيِّهِمَا أُهْدِي؟ قَالَ: «إِلَى أقْرَبِهِمَا مِنكِ بَاباً». رواه
البخاري
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। (যদি দু’জনকেই
দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে) আমি তাদের মধ্যে কার নিকট হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’ তিনি
বললেন, ‘‘যার দরজা তোমার বেশী নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)।’’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০২০, ২২৫৯, ২৫৯৫, আবূ দাউদ ৫১৫৫, আহমাদ
২৪৮৯৫, ২৫০০৯, ২৫০৮৭, ২৫৪৯৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১৬
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
«خَيْرُ الأَصْحَابِ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ، وَخَيرُ
الجِيرَانِ عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ». رواه الترمذي، وَقالَ :
حديث حسن
আব্দুল্লাহ
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে
তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর
দৃষ্টিতে সর্বাধিক উত্তম।’’(তিরমিযী-হাসান) [১]
[১] তিরমিযী ১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৩০, দারেমী ২৪৩৭
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪০
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার
এবং আত্মীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡجَارِ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡجَارِ ٱلۡجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلۡجَنۢبِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۗ ﴾ [النساء: ٣٦]
অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা,
আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী
এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর।” (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ ﴾ [النساء: ١]
অর্থাৎ “সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা কর এবং জ্ঞাতি-বন্ধন
ছিন্ন করাকে ভয় কর।” (সূরা নিসা ১ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ يَصِلُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ ﴾ [الرعد: ٢١]
অর্থাৎ “আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে।”
(সূরা রা'দ ২১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حُسۡنٗاۖ ﴾ [العنكبوت: ٨]
অর্থাৎ “আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি।” (সূরা
আনকাবূত ৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٣، ٢٤]
অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা
করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের এক জন অথবা উভয়েই তোমার
জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং তাদেরকে
ভৎর্সনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নমর কথা। অনুকম্পায় তাদের প্রতি
বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে
শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে’।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ২৩-২৪ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ وَفِصَٰلُهُۥ فِي عَامَيۡنِ أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ ١٤ ﴾ [لقمان: ١٤]
অর্থাৎ “আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী কষ্টের
পর কষ্ট বরণ করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে এবং তার স্তন্যপান ছাড়াতে দু’বছর
অতিবাহিত হয়। সুতরাং তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।” (সূরা
লুকমান ১৪ আয়াত)
৩১৭
وَعَن أَبي عَبدِ الرَّحمَانِ عَبدِ اللهِ
بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ : سَأَلتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم : أيُّ
العَمَلِ أحَبُّ إِلَى اللهِ تَعَالَى ؟ قَالَ: «الصَّلاةُ عَلَى وَقْتِهَا»،
قُلْتُ : ثُمَّ أيٌّ ؟ قَالَ: «بِرُّ الوَالِدَيْنِ»، قُلْتُ : ثُمَّ أيٌّ؟ قَالَ:
«الجِهَادُ في سبيلِ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
আব্দুর রাহমান আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন্ আমল আল্লাহর নিকট
অধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, ‘‘যথা সময়ে নামায আদায় করা।’’ আমি বললাম, ‘তারপর কোনটি?’
তিনি বললেন, ‘‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা।’’ আমি বললাম, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি
বললেন, ‘‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০, ৭৫৩৪, মুসলিম ৮৫,
তিরমিযী ১৭৩, ১৮৯৮, নাসায়ী ৬১০, ৬১১, আহমাদ ৩৮৮০, ৩৯৬৩, ৩৯৮৮, ৪১৭৫, ৪২১১, ৪২৩১, ৪২৭৩,
৪৩০১,দারেমী ১২২৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১৮
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ
: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لا يَجْزِي وَلَدٌ
وَالِداً إلاَّ أنْ يَجِدَهُ مَمْلُوكاً، فَيَشْتَرِيهُ فَيُعْتِقَهُ»رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন সন্তান (তার) পিতার ঋণ পরিশোধ করতে
পারবে না। কিন্তু সে যদি তার পিতাকে ক্রীতদাসরূপে পায় এবং তাকে কিনে মুক্ত করে
দেয়। (তাহলে তা পরিশোধ হতে পারে।)’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ১৫১০, তিরমিযী ১৯৬০, আবূ দাউদ ৫১৩৭, ইবনু মাজাহ
৩৬৫৯, আহমাদ ৭১০৩, ৭৫১৬, ৮৬৭৬, ৯৪৫২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩১৯
وَعَنهُ أَيضاً رضي الله عنه : أَنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ كَانَ
يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ
باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ
وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَصْمُتْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি
বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের
প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ
ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।’’ (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬১৩৮, ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬০১৮, ৬১৩৬,
৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮, আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫,
দারেমী ২২২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২০
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ الخَلْقَ حَتَّى
إِذَا فَرَغَ مِنْهُمْ قَامَتِ الرَّحِمُ، فَقَالَتْ : هَذَا مَقَامُ العَائِذِ
بِكَ مِنَ القَطِيعةِ، قَالَ : نَعَمْ، أمَا تَرْضَيْنَ أنْ أصِلَ مَنْ وَصَلَكِ،
وَأقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ ؟ قَالَتْ : بَلَى، قَالَ : فَذَلِكَ لَكِ، ثُمَّ قَالَ
رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: «اقْرَؤُوا إنْ شِئْتمْ: ﴿ فهل عسيتم إن توليتم
أن تفسدوا في الأرض وتقطعوا أرحامكم. أولئك الذين لعنهم الله فأصمهم وأعمى
أبصارهم٢٣ ﴾ [محمد: ٢٢، ٢٣] مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية للبخاري : فَقَالَ الله تَعَالَى: مَنْ وَصَلَكِ، وَصَلْتُهُ، وَمَنْ
قَطَعَكِ، قَطَعْتُهُ
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ সকল কিছুকে
সৃষ্টি করলেন। অতঃপর যখন তিনি সৃষ্টি কাজ শেষ করলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক উঠে
বলল, ‘(আমার এই দন্ডায়মান হওয়াটা) আপনার নিকট বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয়প্রার্থীর
দন্ডায়মান হওয়া।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘হ্যাঁ তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার
সাথে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক
ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব।’ সে (রক্ত সম্পর্ক) বলল, ‘অবশ্যই।’
আল্লাহ বললেন, ‘তাহলে এ মর্যাদা তোমাকে দেওয়া হল।’’
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা চাইলে (এ
আয়াতটি) পড়ে নাও; ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি
করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ
অভিশপ্ত করে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।’’ (সূরা মুহাম্মাদ ২২-২৩ আয়াত) (বুখারী ও
মুসলিম) বুখারীর অন্য বর্ণনায় ভিন্ন শব্দ বর্ণিত হয়েছে। [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৮২, ৪৮৩২, ৫৯৮৮, ৭৫০২, মুসলিম ২৫৫৪,
আহমাদ ৭৮৭২, ৮১৬৭, ৮৭৫২, ৯০২০, ৯৫৬১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২১
وَعَنهُ رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ
إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا رَسُولَ الله، مَنْ أحَقُّ
النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي ؟ قَالَ: «أُمُّكَ»قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ:
«أُمُّكَ»، قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ : «أُمُّكَ»، قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ:
«أبُوكَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، مَنْ أَحَقُّ بحُسْنِ
الصُّحْبَةِ ؟ قَالَ: أُمُّكَ، ثُمَّ أُمُّكَ، ثُمَّ أُمُّكَ، ثُمَّ أَبَاكَ،
ثُمَّ أدْنَاكَ أدْنَاكَ
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, একটি লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস
করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার কে?’ তিনি
বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল,
‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার
বাপ।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৭১, মুসলিম ২৫৪৮, ইবনু মাজাহ ২৭৩৮,
৩৭০২, আহমাদ ৮১৪৪, ৮৮৩৮, ৮৯৬৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২২
وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «رَغِمَ أَنفُ، ثُمَّ رَغِمَ أنْفُ، ثُمَّ رَغِمَ أنْفُ مَنْ أدْرَكَ
أبَويهِ عِنْدَ الكِبَرِ، أَحَدهُما أَوْ كِليهمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الجَنَّةَ».
رواه مسلم
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তার নাক ধূলিধূসরিত হোক, অতঃপর তার নাক
ধূলিধূসরিত হোক, অতঃপর তার নাক ধূলিধূসরিত হোক, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ
অবস্থায় পেল; একজনকে অথবা দু’জনকেই। অতঃপর সে (তাদের খিদমত ক’রে) জান্নাত যেতে
পারল না।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৫৫১, আহমাদ ৮৩৫২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২৩
وَعَنهُ رضي الله عنه : أَنَّ رَجُلاً
قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إنَّ لِي قَرَابةً أصِلُهُمْ
وَيَقْطَعُوني، وَأُحْسِنُ إلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إلَيَّ، وَأحْلَمُ عَنْهُمْ
وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ، فَقَالَ: «لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكأنَّمَا
تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ، وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا
دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ». رواه مسلم
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা
বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, আর তারা আমার সাথে
দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ
করে।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ
(অর্থাৎ এ কাজে তারা গোনাহগার হয়।) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের
বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অনড় থাকবে।’’ (মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৫৫৮, আহমাদ ৮৩৫২, ৭৯৩২, ২৭৪৯৯, ৯৯১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২৪
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ : «مَن أحَبَّ أنْ يُبْسَطَ
لَهُ فِي رِزْقِهِ، ويُنْسأَ لَهُ فِي أثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আনাস
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি চায় যে, তার রুযী (জীবিকা)
প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে।’’
(বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২০৬৭, ৫৯৮৬, মুসলিম ২৫৫৭, আবূ দাউদ
১৬৯৩, আহমাদ ১২১৭৮, ১২৯৮৮, ম১৩১৭৩, ১৩৩৯৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২৫
عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ
أَبُو طَلْحَةَ رضي الله عنه أكْثَرَ الأنْصَار بالمَدِينَةِ مَالاً مِنْ نَخْل،
وَكَانَ أَحَبُّ أمْوالِهِ إِلَيْه بَيْرُحَاء، وَكَانتْ مُسْتَقْبلَةَ المَسْجِدِ
وَكَانَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا
طَيِّب . قَالَ أنَسٌ : فَلَمَّا نَزَلَتْ هذِهِ الآيةُ: ﴿ لن تنالوا البر حتى
تنفقوا مما تحبون﴾ [ال عمران: ٩٢] قام أَبُو طَلْحَةَ إِلَى رَسُولِ الله صلى الله
عليه وسلم، فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، إنَّ الله تَعَالَى أنْزَلَ عَلَيْكَ : ﴿
لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون﴾ وَإنَّ أَحَبَّ مَالِي إِلَيَّ بَيْرُحَاءُ،
وَإنَّهَا صَدَقَةٌ للهِ تَعَالَى، أرْجُو بِرَّهَا، وَذُخْرَهَا عِنْدَ الله
تَعَالَى، فَضَعْهَا يَا رَسُول الله حَيْثُ أرَاكَ الله، فَقَالَ رَسُولُ الله
صلى الله عليه وسلم: بَخ ! ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، وقَدْ
سَمِعْتُ مَا قُلْتَ، وَإنِّي أرَى أنْ تَجْعَلَهَا في الأقْرَبينَ»، فَقَالَ
أَبُو طَلْحَةَ : أفْعَلُ يَا رَسُولَ الله، فَقَسَّمَهَا أَبُو طَلْحَةَ في
أقَارِبِهِ، وبَنِي عَمِّهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, মদ্বীনার আনসারীগণের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সবচেয়ে অধিক খেজুর বাগানের মালিক
ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাগানে প্রবেশ করে সুপেয় পানি
পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল; যার অর্থ, ‘‘তোমরা কখনও পুণ্য
লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।’’ (আলে
ইমরান ৯২আয়াত)
তখন আবূ তালহা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে
বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আপনার উপর (আয়াত) অবতীর্ণ করে বলেছেন, ‘‘তোমরা
কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয়
করেছ।’’ আর বায়রুহা বাগানটি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদকাহ করা
হল। আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য জমা হয়ে থাকবে। কাজেই
আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন, তাকে দান করে দিন।’
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আরে! এ হচ্ছে লাভজনক
সম্পদ। এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ, তা শুনেছি। আমি মনে করি, তুমি তোমার
আপন-জনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও।’’ আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ!
আমি তাই করব।’ তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরদের মধ্যে তা বণ্টন
করে দিলেন। (বুখারী-মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৬১, ২৩১৮, ২৭৫২, ২৭৬৯, ৪৫৫৫, ৫৬১১,
মুসলিম ৯৯৮, তিরমিযী ২৯৯৭, নাসায়ী ৩৬০২, আবূ দাউদ ১৬৮৯, আহমাদ ১১৭৩৪, ১২০৩০, ১২৩৭০,
১৩২৭৬, ১৩৩৫৬, ১৩৬২২, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৭৫, দারেমী ১৬৫৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২৬
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : أقبلَ رَجُلٌ إِلَى نَبيِّ الله صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَ : أُبَايِعُكَ عَلَى الهِجْرَةِ وَالجِهَادِ أَبْتَغي الأَجْرَ مِنَ
الله تَعَالَى . قَالَ: «فَهَلْ لَكَ مِنْ وَالِدَيْكَ أحَدٌ حَيٌّ؟» قَالَ :
نَعَمْ، بَلْ كِلاهُمَا. قَالَ: «فَتَبْتَغي الأجْرَ مِنَ الله تَعَالَى؟» قَالَ :
نَعَمْ. قَالَ: «فارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ، فَأحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ، وهذا لَفْظُ مسلِم .
وفي رواية لَهُمَا: جَاءَ رَجُلٌ فَاسْتَأذَنَهُ في الجِهَادِ، فقَالَ: أحَيٌّ
وَالِداكَ ؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ: فَفيهِمَا فَجَاهِدْ
আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি আল্লাহর নবীর নিকট এসে বলল, ‘আমি আপনার সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার কাছে নেকী
পাওয়ার উদ্দেশ্যে হিজরত এবং জিহাদের বায়‘আত করছি।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমার পিতা-মাতার মধ্যে কি কেউ জীবিত আছে?’’ সে বলল, ‘জী
হ্যাঁ; বরং দু’জনই জীবিত রয়েছে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘তুমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে নেকী পেতে চাও?’’ সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন,
‘‘তাহলে তুমি তোমার পিতা-মাতার নিকট ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে তাদের খিদমত কর।’’
(বুখারী, আর শব্দগুলি মুসলিমের) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩০০৪, ৫৯৭২, মুসলিম ১৯৬০, ২৫৪৯, তিরমিযী
১৬৭১, নাসায়ী ৩১০৩, আবূ দাউদ ২৫২৯, ইবনু মাজাহ ২৭৮২, আহমাদ ৬৪৮৯, ৬৫০৮, ৬৭২৬, ৬৭৭২,
৬৭৯৪, ৬৮১৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২৭
وَعَنه، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «لَيْسَ الوَاصِلُ بِالمُكَافِئ، وَلكِنَّ الوَاصِلَ الَّذِي إِذَا
قَطَعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا». رواه البخاري
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সেই ব্যক্তি সম্পর্ক বজায়কারী নয়, যে
সম্পর্ক বজায় করার বিনিময়ে বজায় করে। বরং প্রকৃত সম্পর্ক বজায়কারী হল সেই ব্যক্তি,
যে কেউ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তা কায়েম করে।’’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৯১, তিরমিযী ১৯০৮, আবূ দাউদ ১৬৯৭,
আহমাদ ৬৪৮৮, ৬৭৪৬, ৬৭৪৬, ৬৭৭৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২৮
وَعَن عَائِشَةَ، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «الرَّحِمُ مُعَلَّقَةٌ بِالعَرْشِ
تَقُولُ : مَنْ وَصَلَنِي، وَصَلَهُ اللهُ، وَمَنْ قَطَعَنِي، قَطَعَهُ اللهُ».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জ্ঞাতিবন্ধন আরশে ঝুলন্ত আছে এবং সে
বলছে, ‘যে আমাকে অবিচ্ছিন্ন রাখবে, আল্লাহ তাঁর সম্পর্ক তার সাথে অবিচ্ছিন্ন
রাখবেন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তাঁর সম্পর্ক তার সাথে বিচ্ছিন্ন
করবেন।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৮৯, মুসলিম ২৫৫৫, আহমাদ ২৩৮১৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩২৯
وَعَن أُمِّ الْمُؤمِنِينَ مَيمُونَةَ
بِنتِ الحَارِثِ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّهَا أعْتَقَتْ وَلِيدَةً وَلَمْ
تَستَأذِنِ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، فَلَمَّا كَانَ يَوْمُهَا الَّذِي
يَدُورُ عَلَيْهَا فِيهِ، قَالَتْ: أشَعَرْتَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، أنِّي أعتَقْتُ وَلِيدَتِي؟ قَالَ: «أَوَ فَعَلْتِ؟» قَالَتْ: نَعَمْ.
قَالَ: « أما إنَّكِ لَوْ أعْطَيْتِهَا أخْوَالَكِ كَانَ أعْظَمَ لأََِجْرِكِ».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উম্মুল
মু’মেনীন মায়মূনাহ বিনতিল হারেস রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
তাঁর একটি ক্রীতদাসীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি না নিয়েই
মুক্ত করলেন। অতঃপর যখন ঐ দিন এসে পৌঁছল, যেদিন তাঁর কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর যাওয়ার পালা, তখন মায়মূনাহ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে আমার
ক্রীতদাসীকে মুক্ত করে দিয়েছি, আপনি কি তা বুঝতে পেরেছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি
(সত্যই) এ কাজ করেছ?’’ মায়মূনা বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি
ক্রীতদাসীটিকে তোমার মামাদেরকে দিতে, তাহলে তুমি বেশী সওয়াব পেতে।’’ (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৫৯২, মুসলিম ৯৯৯, আবূ দাউদ ১৬৯০, আহমাদ
২৬২৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩০
وَعَن أسماءَ بِنتِ أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَتْ : قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشرِكَةٌ في
عَهْدِ رسولِ الله صلى الله عليه وسلم، فاسْتَفْتَيْتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه
وسلم، قُلْتُ : قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ رَاغِبَةٌ، أفَأصِلُ أُمِّي ؟
قَالَ: «نَعَمْ، صِلِي أُمَّكِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আসমা
বিন্তে আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল।
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা
(ইসলাম) অপছন্দ করা অবস্থায় (আমার সম্পদের লোভ রেখে) আমার নিকট এসেছে, আমি তার
সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক
বজায় রাখ।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৬২০, ৩১৮৩, ৫৯৭৯, মুসলিম ১০০৩, আবূ
দাউদ ১৬৬৮, আহমাদ ২৬৩৭৩, ২৬৩৯৯, ২৬৪৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩১
وَعَن زَينَبَ الثَّقَفِيَّةِ امرَأَةِ
عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ وَعَنهَا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «تَصَدَّقْنَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ
وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ»، قَالَتْ : فَرَجَعْتُ إِلَى عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ،
فَقُلتُ لَهُ : إنَّكَ رَجُلٌ خَفِيفُ ذَاتِ اليَدِ، وَإنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَدْ أمَرَنَا بِالصَّدَقَةِ فَأْتِهِ،
فَاسأَلهُ، فإنْ كَانَ ذلِكَ يْجُزِئُُ عَنِّي وَإلاَّ صَرَفْتُهَا إِلَى
غَيْرِكُمْ . فَقَالَ عَبدُ اللهِ : بَلِ ائْتِيهِ أنتِ، فانْطَلَقتُ، فَإذَا
امْرأةٌ مِنَ الأنْصارِ بِبَابِ رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَاجَتي
حَاجَتُها، وَكَانَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم قَدْ أُلْقِيَتْ عَلَيهِ
المَهَابَةُ، فَخَرجَ عَلَيْنَا بِلاَلٌ، فَقُلْنَا لَهُ : ائْتِ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، فَأخْبِرْهُ أنَّ امْرَأتَيْنِ بِالبَابِ
تَسألانِكَ : أُتُجْزِئُ الصَّدَقَةُ عَنْهُمَا عَلَى أزْواجِهمَا وَعَلَى
أيْتَامٍ في حُجُورِهِما ؟، وَلاَ تُخْبِرْهُ مَنْ نَحْنُ، فَدَخلَ بِلاَلٌ عَلَى
رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم، فَسَأَلَهُ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ هُمَا ؟»قَالَ : امْرَأةٌ مِنَ
الأنْصَارِ وَزَيْنَبُ . فَقَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «أيُّ
الزَّيَانِبِ هِيَ ؟»، قَالَ: امْرَأةُ عَبدِ الله، فَقَالَ رَسُولُ الله صلى الله
عليه وسلم: «لَهُمَا أجْرَانِ : أجْرُ القَرَابَةِ وَأجْرُ الصَّدَقَةِ». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আব্দুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে মহিলাগণ!
তোমরা সাদকাহ কর; যদিও তোমাদের অলংকার থেকে হয়।’’ যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
সুতরাং আমি (আমার স্বামী) আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর নিকট এসে বললাম, ‘আপনি
গরীব মানুষ, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাদকাহ করার
নির্দেশ দিয়েছেন।
অতএব আপনি তাঁর নিকট গিয়ে এ কথা জেনে আসুন যে, (আমি যে, আপনার উপর ও আমার
তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত এতীমদের উপর খরচ করি তা) আমার পক্ষ থেকে সাদকাহ হিসাবে
যথেষ্ট হবে কি? নাকি আপনাদেরকে বাদ দিয়ে আমি অন্যকে দান করব?’ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)
বললেন, ‘বরং তুমিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জেনে এসো।’
সুতরাং আমি তাঁর নিকট গেলাম। দেখলাম, তাঁর দরজায় আরও একজন আনসারী মহিলা দাঁড়িয়ে
আছে, তার প্রয়োজনও আমার প্রয়োজনের অনুরূপ।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভাবগম্ভীরতা দান করা হয়েছিল।
(তাঁকে সকলেই ভয় করত।) ইতোমধ্যে বিলাল (রাঃ)-কে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে দেখে বললাম,
আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বলুন, ‘দরজার কাছে
দু’জন মহিলা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে যে, তারা যদি নিজ স্বামী ও তাদের তত্ত্বাবধানে
প্রতিপালিত এতীমদের উপর খরচ করে, তাহলে তা সাদকাহ হিসাবে যথেষ্ট হবে কি? আর আমরা
কে, সে কথা জানাবেন না।’
তিনি প্রবেশ করে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘তারা কে?’’ বিলাল (রাঃ) বললেন, ‘এক আনসারী মহিলা ও যায়নাব।’ তিনি আবার
জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কোন্ যায়নাব?’’ বিলাল (রাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আব্দুল্লাহর স্ত্রী।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাদের জন্য দু’টি সওয়াব
রয়েছে, আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখার সওয়াব এবং সাদকাহ করার সওয়াব।’’
(বুখারী-মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৬৬, মুসলিম ১০০০, তিরমিযী ৬৩৫, নাসায়ী
২৫৮৩, ইবনু মাজাহ ১৮৩৪, আহমাদ ১৫৬৫২, ২৬৫০৮, দারেমী ১৬৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩২
وَعَن أَبي سُفيَانَ صَخرِ بنِ حَربٍ رضي
الله عنه في حَديثِهِ الطويل في قِصَّةِ هِرَقْلَ: أنَّ هِرَقْلَ قَالَ لأَبِي
سُفْيَانَ: فَمَاذَا يَأمُرُكُمْ بِهِ؟ يَعْنِي النَّبيّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: قُلْتُ: يَقُولُ: « اعْبُدُوا اللهَ وَحْدَهُ، وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ
شَيئاً، واتْرُكُوا مَا يَقُولُ آبَاؤُكُمْ، وَيَأمُرُنَا بِالصَّلاةِ،
وَالصِّدْقِ، والعَفَافِ، والصِّلَةِ»مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
সুফিয়ান সাখর ইবনু হারব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হিরাক্লিয়াস
আবূ সুফিয়ানকে বললেন, ‘তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে কী
নির্দেশ দেন?’ আবূ সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, ‘তিনি বলেন, ‘‘তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত
কর এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদার ভ্রান্ত পথ
পরিত্যাগ কর।’’ আর তিনি আমাদেরকে নামায পড়ার, সত্যবাদিতার, চারিত্রিক পবিত্রতার এবং
আত্মীয়তা বজায় রাখার আদেশ দেন।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭, ৫১, ২৬৮১, ২৮০৪, ২৯৩৬, ২৯৪১, ২৯৭৮,
৩১৭৪, ৪৫৫৩, ৫৯৮০, ৬২৬১, ৭১৯৬, মুসলিম ১৭৭৩, তিরমিযী ২৭১৭, আবূ দাউদ ৫১৩৬, আহমাদ ২৩৬৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩৩
وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ :
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّكُمْ
سَتَفْتَحُونَ أرْضاً يُذْكَرُ فِيهَا القِيرَاطُ» . وفي رِوَايَةٍ:
«سَتَفْتَحُونَ مِصْرَ وَهِيَ أرْضٌ يُسَمَّى فِيهَا القِيراطُ، فَاسْتَوْصُوا
بأهْلِهَا خَيْراً ؛ فَإنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِماً»وفي رواية: «فَإِذَا
افتَتَحتُمُوهَا، فَأَحسِنُوا إِلَى أَهلِهَا ؛ فَإِنَّ لَهُم ذِمَّةً وَرَحِماً»،
أَوْ قَالَ: «ذِمَّةً وصِهْراً». رواه مسلم
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা অদূর ভবিষ্যতে এমন এক এলাকা জয়
করবে, যেখানে ক্বীরাত্ব (এক দ্বীনারের ২০ ভাগের একভাগ স্বর্ণমুদ্রা) উল্লেখ করা
হয়।’’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা অচিরে মিসর জয় করবে এবং এটা এমন ভূখণ্ড যেখানে
কীরাত্ব (শব্দ) সচরাচর বলা হয়। (সেখানে ঐ মুদ্রা প্রচলিত।) তোমরা তার অধিবাসীদের
সাথে ভাল ব্যবহার করো। কেননা, তাদের প্রতি (আমাদের) দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা)
এবং আত্মীয়তা রয়েছে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘সুতরাং যখন তোমরা তা জয় করবে, তখন তার অধিবাসীর প্রতি
সদ্ব্যবহার করো। কেননা, তাদের প্রতি (আমাদের) দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং
আত্মীয়তা রয়েছে।’’ অথবা বললেন, ‘‘দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং বৈবাহিক সম্পর্ক
রয়েছে।’’ (মুসলিম)[১]
[১] মুসলিম ২৫৪৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩৪
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ
: لَمَّا نَزَلَت هَذِهِ الآيَةُ : ﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ٢١٤ ﴾
[الشعراء: ٢١٤] دَعَا رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم قُرَيْشاً، فَاجْتَمَعُوا
فَعَمَّ وَخَصَّ، وَقالَ: «يَا بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ، يا بَنِي كَعْبِ بْنِ
لُؤَيٍّ، أنقِذُوا أنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي مُرَّةَ بنِ كَعْبٍ،
أنْقِذُوا أنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي عَبْدِ مَنَاف، أنْقِذُوا
أنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي هَاشِم، أَنقِذُوا أَنفُسَكُم مِنَ النَّار،
يَا بَني عَبدِ الْمُطَّلِب، أَنقِذُوا أَنفُسَكُم مِنَ النَّار، يَا فَاطِمَةُ،
أنْقِذِي نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ . فَإنِّي لاَ أمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيئاً،
غَيْرَ أنَّ لَكُمْ رَحِماً سَأبُلُّهَا بِبِلالِهَا». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল যার অর্থ হল, ‘‘তুমি তোমার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক
কর।’’ সূরা শুআরা ২১৪ আয়াত) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুরায়েশ (সম্প্রদায়)কে আহ্বান করলেন। সুতরাং তারা একত্রিত হল। অতঃপর তিনি সাধারণ ও
বিশেষভাবে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘‘হে বানী আব্দে শাম্স! হে বানী কা‘ব ইবনুলুআই!
তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী মুর্রাহ ইবনু কা‘ব! তোমরা
নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী আব্দে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম
থেকে বাঁচাও। হে বানী হাশেম! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী
আব্দিল মুত্তালিব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।
হে ফাতেমা! তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। কারণ, আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের
(উপকার-অপকার) কিছুরই মালিক নই। তবে তোমাদের সাথে (আমার) যে আত্মীয়তা রয়েছে তা আমি
(দুনিয়াতে) অবশ্যই আর্দ্র রাখব। (আখেরাতে আমার আনুগত্য ছাড়া আত্মীয়তা কোনো কাজে
আসবে না।)’’ (মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৭৫৩, ৩৫২৭, ৪৭৭১, মুসলিম ২০৪, ২০৬,
তিরমিযী ৩০৯৪, নাসায়ী ৩৬৪৪, ৩৬৪৬, ৩৬৪৭, আহমাদ ৮১৯৭, ৮৩৯৫, ৮৫০৯, ৮৯২৬, ৯৫০১, দারেমী
২৭৩২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩৫
وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم جِهَاراً غَيْرَ سِرٍّ، يَقُولُ: «إنَّ آل بَني فُلاَنٍ لَيْسُوا
بِأولِيَائِي، إِنَّمَا وَلِيِّيَ اللهُ وَصَالِحُ المُؤْمِنينَ، وَلَكِنْ لَهُمْ
رَحِمٌ أبُلُّهَا بِبلاَلِهَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، واللفظ للبخاري
আবূ
আব্দুল্লাহ ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গোপনে নয় প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি,
তিনি বলেছেন, ‘‘অমুক গোত্রের লোকেরা (যারা আমার প্রতি ঈমান আনেনি তারা) আমার বন্ধু
নয়। আমার বন্ধু তো আল্লাহ এবং নেক মু’মিনগণ। কিন্তু ওদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক
রয়েছে, আমি (দুনিয়াতে) অবশ্যই তা আর্দ্র রাখব।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দ বুখারীর)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৯০, মুসলিম ২১৫, আহমাদ ১৭৩৪৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩৬
وَعَن أَبي أَيُّوبٍ خَالِدِ بنِ زَيدٍ
الأَنصَارِي رضي الله عنه : أنَّ رَجُلاً قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، أخْبِرْني بِعَمَلٍ يُدْخِلُني الجَنَّةَ، وَيُبَاعِدُني مِنَ النَّارِ .
فَقَالَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم: «تَعْبُدُ الله، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ
شَيئاً، وَتُقِيمُ الصَّلاةَ، وتُؤتِي الزَّكَاةَ، وتَصِلُ الرَّحمَ». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আবূ
আইয়ূব খালেদ ইবনু যায়েদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে
নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, নামায
প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দেবে এবং রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩৯৬, ৫৯৮৩, মুসলিম ১৩, নাসায়ী ৪৬৮,
আহমাদ ২৩০২৭, ২৩০৩৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩৭
وَعَن سَلمَانَ بنِ عَامِرٍ رضي الله عنه،
عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: .... الصَّدَقَةُ عَلَى المِسكينِ
صَدَقةٌ، وعَلَى ذِي الرَّحِمِ ثِنْتَانِ : صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ». رواه الترمذي،
وَقالَ: حديث حسن».
সালমান
ইবনু আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘---মিসকীনকে সাদকাহ করলে সাদকাহ (করার
সওয়াব) হয়। আর আত্মীয়কে সাদকাহ করলে দু’টি সওয়াব হয়ঃ সাদকাহ করার ও আত্মীয়তার
বন্ধন বজায় রাখার।’’ (তিরমিযী, উল্লেখ্য যে হাদীসের প্রথম অংশ সহীহ নয় বলে উল্লেখ
করা হয়নি।) [১]
[১] তিরমিযী ৬৫৮, নাসায়ী ২৫৮২, আবূ দাউদ ২৩৫৫, ইবনু মাজাহ
১৬৯৯, ১৮৪৪, আহমাদ ১৫৭৯২, ১৫৭৯৮, ১৭৪১৪, ২৭৭৪৮, ১৭৪৩০, দারেমী ১৬৮০, ১৭০১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৩৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ: كَانَتْ تَحْتِي امْرَأةٌ، وَكُنْتُ أحِبُّهَا، وَكَانَ عُمَرُ
يَكْرَهُهَا، فَقَالَ لي : طَلِّقْهَا، فَأبَيْتُ، فَأتَى عُمَرُ رضي الله عنه
النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، فَذَكَرَ ذلِكَ لَهُ، فَقَالَ النَّبيّ صلى الله
عليه وسلم: «طَلِّقْهَا». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: حديث حسن صحيح»
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আমার
বিবাহ বন্ধনে এক স্ত্রী ছিল, যাকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু (আমার পিতা) উমার তাকে অপছন্দ
করতেন। সুতরাং তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি ওকে ত্বালাক দাও।’’ কিন্তু আমি (তা)
অস্বীকার করলাম। অতঃপর উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
এলেন এবং এ কথা উল্লেখ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন,
‘‘তুমি ওকে ত্বালাক দিয়ে দাও।’’ (সুতরাং আমি তাকে ত্বালাক দিয়ে দিলাম।) (আবূ দাঊদ,
তিরমিযী, হাসান সহীহ সূত্রে) [১]
[১] তিরমিযী ১১৮৯, আবূ দাউদ ৫১৩৮, ইবনু মাজাহ ২০৮৮
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৩৩৯
وَعَن أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه:
أَنَّ رَجُلاً أَتَاهُ، قَالَ : إنّ لِي امرَأةً وإنّ أُمِّي تَأمُرُنِي
بِطَلاقِهَا، فَقَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم، يَقُولُ: «الوَالِدُ أوْسَطُ أبْوَابِ الجَنَّةِ، فَإنْ شِئْتَ، فَأضِعْ
ذلِكَ البَابَ، أَو احْفَظْهُ». رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن صحيح»
আবূ
দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলল, ‘আমার এক স্ত্রী আছে। আমার মা তাকে ত্বালাক দেওয়ার
নির্দেশ দিচ্ছেন।’ আবূ দারদা বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘পিতা-মাতা জান্নাতের দুয়ারসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ
দুয়ার। সুতরাং তুমি যদি চাও, তাহলে এ দুয়ারকে নষ্ট কর অথবা তার রক্ষণাবেক্ষণ কর।’’
(তিরমিযী, হাসান সহীহ সূত্রে)[১]
[১]তিরমিযী ১৯০০, ইবনু মাজাহ ২০৮৯, ৩৬৬৩, আহমাদ ২১২১০,
২৬৯৮০, ২৭০০৪
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৩৪০
وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الخَالةُ بِمَنْزِلَةِ
الأُمِّ». رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن صحيح»
বারা
ইবনু ‘আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘খালা মায়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।’’
(তিরমিযী)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৭০০, ৪২৫১, তিরমিযী ১৯০৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪১
পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হারাম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣ ﴾ [محمد: ٢٢، ٢٣]
অর্থাৎ “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং
তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত করে
বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ২২-২৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهۡدَ ٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ مِيثَٰقِهِۦ وَيَقۡطَعُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيُفۡسِدُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱللَّعۡنَةُ وَلَهُمۡ سُوٓءُ ٱلدَّارِ ٢٥ ﴾ [الرعد: ٢٥]
অর্থাৎ “যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক
অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে
বেড়ায়, তাদের জন্য আছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস।” (সূরা রা'দ ২৫
আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٣، ٢٤]
অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা
করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের এক জন অথবা উভয়েই তোমার
জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং তাদেরকে
ভৎর্সনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নমর কথা। অনুকম্পায় তাদের প্রতি
বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে
শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে’।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ২৩-২৪ আয়াত)
৩৪১
وَعَن أَبي بَكرَةَ نُفَيعِ بنِ الحَارِثِ
رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم: «ألا أُنَبِّئُكُمْ بأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثلاثاً، قُلْنَا: بَلَى، يَا رَسُول
الله، قَالَ: «الإشْرَاكُ بالله، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ»، وكان مُتَّكِئاً
فَجَلَسَ، فَقَالَ: «ألاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ» فَمَا زَالَ
يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا: لَيْتَهُ سَكَتَ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
বাকরাহ নুফাই‘ ইবনু হারেস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন, ‘‘আমি কি
তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় (কাবীরাহ গোনাহগুলো সম্পর্কে জ্ঞাত করবো না?’’ সবাই বললেন,
‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘(সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর সাথে শির্ক করা
এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।’’ তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন, এবার সোজা হয়ে বসে
বললেন, ‘‘শুনে রাখ, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’’ এ কথাটি তিনি পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন।
এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, ‘আর যদি তিনি না বলতেন!’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৬৫৪, ৫৯৭৬, ৬২৭৩, ৬৯১৯, মুসলিম ৮৭,
তিরমিযী ১৯০১, ২৯০১, ৩০১৯, আহমাদ ১৯৮৭২, ১৯৮৮১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৪২
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الكَبَائِرُ :
الإشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْس، وَاليَمِينُ
الغَمُوسُ». رواه البخاري
আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আমর ইবনু আস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ
গুনাহসমূহ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, প্রাণ হত্যা করা
এবং মিথ্যা কসম খাওয়া।’’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৬৭৫, ৬৮৭০, ৬৯২০, তিরমিযী ৩০২১, নাসায়ী
৪০১১, আহমাদ ৬৮৪৫, ৬৯৬৫, দারেমী ২৩৬০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৪৩
وَعَنهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: « مِنَ الكَبَائِر شَتْمُ الرَّجُل وَالِدَيهِ
!»، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ
وَالِدَيْهِ ؟! قَالَ: «نَعَمْ، يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أبَاه،
وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رِوَايَةٍ: «إنَّ مِنْ أكْبَرِ الكَبَائِرِ أنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ
وَالِدَيْهِ !»، قِيلَ :يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، كَيْفَ يَلْعَنُ
الرَّجُلُ وَالِدَيهِ ؟! قَالَ: يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أباهُ،
وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল আপন
পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপন পিতা-মাতাকে কি
কোনো ব্যক্তি গালি দেয়?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, সে লোকের পিতাকে গালি-গালাজ করে,
তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে এবং সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, সুতরাং সেও
তার মা-কে গালি দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ
করা।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ নিজের পিতা-মাতাকে কিভাবে অভিশাপ
করে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে অপরের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে
গালি-গালাজ করে থাকে। আর সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, বিনিময়ে সেও তার মা-কে গালি
দেয়।’’
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৭৩, মুসলিম ৯০, তিরমিযী ১৯০২, আবূ
দাউদ ৫১৪১, আহমাদ ৬৪৯৩, ৬৮০১, ৬৯৬৫, ৬৯৯০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৪৪
وَعَن أَبي مُحَمَّدٍ جُبَيرِ بنِ مُطعِمٍ
رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ».قَالَ سُفيَانُ في رِوَايَتِهِ : يَعْنِي
: قَاطِعُ رَحِم . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
মুহাম্মাদ জুবাইর ইবনু মুত্বইম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না।’’ সুফিয়ান তাঁর বর্ণনায় বলেন, অর্থাৎ ‘‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।’’ (বুখারী
ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ২৫৫৬, তিরমিযী ১৯০৯, আবূ
দাউদ ১৬৯৬, আহমাদ ১৬২৯১, ১৬৩২২, ১৬৩৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৪৫
وَعَن أَبي عِيسَى المُغِيرَةِ بنِ شُعبَةَ
رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إنَّ اللهَ تَعَالَى
حَرَّمَ عَلَيْكُمْ : عُقُوقَ الأمَّهَاتِ، وَمَنْعاً وَهَاتِ، وَوَأْدَ
البَنَاتِ، وكَرِهَ لَكُمْ : قِيلَ وَقالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإضَاعَةَ
المَالِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
ঈসা মুগীরা ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্য (তিনটি
কর্মকে) হারাম করেছেন; মায়ের অবাধ্যাচরণ করা, অধিকার প্রদানে বিরত থাকা ও অনধিকার
কিছু প্রার্থনা করা এবং কন্যা জীবন্ত প্রোথিত করা। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ
করেছেন (তিনটি কর্ম); ভিত্তিহীন বাজে কথা বলা (বা জনরবে থাকা), অধিক (অনাবশ্যক)
প্রশ্ন করা (অথবা প্রয়োজনের অধিক যাচ্ঞা করা) এবং ধন-মাল বিনষ্ট (অপচয়) করা।’’
(বুখারী ৫৯৭৫নং ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪০৮, ৮৪৪, ১৪৭৭, ৫৯৭৫, ৬৩৩০, ৬৪৭৩,
৬৬১৫, ৭২৯২, মুসলিম ৫৯৩, নাসায়ী ১৩৪১, ১৩৪২, ১৩৪৩, আবূ দাউদ ১৫০৫, ৩০৭৯, আহমাদ ১৭৬৭৩,
১৭৬৮১, ১৭৬৯৩, ১৭৭১৪, ১৭৭১৮, ১৭৭৩৪, দারেমী ১৩৪৯, ২৭৫১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪২
পিতা-মাতার ও নিকটাত্মীয়ের
বন্ধু, স্ত্রীর সখী এবং যাদের সম্মান করা কর্তব্য তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার
মাহাত্ন্য
৩৪৬
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا :
أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إنّ أبَرَّ البرِّ أنْ يَصِلَ
الرَّجُلُ وُدَّ أبيهِ
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ دِينَارٍ، عَن عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا : أنَّ رَجُلاً مِنَ الأعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ، فَسَلَّمَ
عَلَيهِ عَبدُ الله بْنُ عُمَرَ، وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ،
وَأعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأسِهِ، قَالَ ابنُ دِينَار : فَقُلْنَا لَهُ
: أصْلَحَكَ الله، إنَّهُمُ الأعرَابُ وَهُمْ يَرْضَوْنَ باليَسير، فَقَالَ عبد
الله بن عمر : إن أَبَا هَذَا كَانَ وُدّاً لِعُمَرَ بنِ الخطاب رضي الله عنه،
وإنِّي سَمِعتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «إنَّ أبرَّ البِرِّ
صِلَةُ الرَّجُلِ أهْلَ وُدِّ أبِيهِ
وفي رِوِايَةٍ عَنِ ابنِ دِينَارٍ، عَنِ ابنِ عُمَرَ : أنَّهُ كَانَ إِذَا خَرَجَ
إِلَى مَكّةَ كَانَ لَهُ حِمَارٌ يَتَرَوَّحُ عَلَيهِ إِذَا مَلَّ رُكُوبَ
الرَّاحِلةِ، وَعِمَامَةٌ يَشُدُّ بِهَا رَأسَهُ، فَبيْنَا هُوَ يَوماً عَلَى
ذلِكَ الحِمَارِ إِذْ مَرَّ بِهِ أعْرابيٌّ، فَقَالَ : ألَسْتَ فُلاَنَ بْنَ
فُلاَنٍ ؟ قَالَ : بَلَى . فَأعْطَاهُ الحِمَارَ، فَقَالَ : ارْكَبْ هَذَا،
وَأعْطَاهُ العِمَامَةَ وَقالَ : اشْدُدْ بِهَا رَأسَكَ، فَقَالَ لَهُ بَعضُ
أصْحَابِهِ : غَفَرَ الله لَكَ أعْطَيْتَ هَذَا الأعْرَابيَّ حِمَاراً كُنْتَ
تَرَوَّحُ عَلَيهِ، وعِمَامةً كُنْتَ تَشُدُّ بِهَا رَأسَكَ ؟ فَقَالَ : إنِّي
سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: إنَّ مِنْ
أبَرِّ البِرِّ أنْ يَصِلَ الرَّجُلُ أهْلَ وُدِّ أبيهِ بَعْدَ أنْ يُولِّيَ
وَإنَّ أبَاهُ كَانَ صَديقاً لعُمَرَ رضي الله عنه. رَوَى هذِهِ الرواياتِ
كُلَّهَا مسلم
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার সাথে পিতার মৈত্রী সম্পর্ক ছিল, তা
অক্ষুণ্ণ রাখা সবচেয়ে বড় পুণ্যের কাজ।’’
আব্দুল্লাহ ইবনু দ্বীনার আব্দুল্লাহ (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এক
বেদুঈন মক্কার পথে তাঁর সাথে মিলিত হল। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনু উমার তাকে সালাম
দিলেন এবং তিনি যে গাধার উপর সওয়ার ছিলেন তার উপর চাপিয়ে নিলেন। আর যে পাগড়ী তাঁর
মাথায় ছিল, তিনি তা তাকে দিয়ে দিলেন। ইবনু দ্বীনার বলেন, আমরা বললাম, ‘আল্লাহ
আপনার মঙ্গল করুন, এরা তো বেদুঈন, এরা তো অল্পেই তুষ্ট হয় (ফলে এর সাথে এত কিছু
করার কী প্রয়োজন)?’
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, ‘এর পিতা উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর বন্ধু
ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,
‘‘পিতার বন্ধুর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সবচেয়ে বড় নেকী।’’
অন্য এক বর্ণনায় ইবনু দ্বীনারের সূত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ইবনু উমারের
মক্কা যাওয়ার সময় তার সাথে একটি গাধা থাকত। তিনি যখন উটের উপরে চেপে বিরক্ত হয়ে
পড়তেন, তখন (এক ঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য) ঐ গাধার উপর চেপে বিশ্রাম নিতেন। তাঁর একটি
পাগড়ী ছিল, তিনি তা মাথায় বাঁধতেন। একদিন তিনি গাধার উপর সওয়ার ছিলেন, এমতাবস্থায়
এক বেদুঈন তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। তিনি বললেন, ‘তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক
নও?’ সে বলল, ‘অবশ্যই!’ অতঃপর তিনি তাকে গাধাটি দিয়ে বললেন, ‘এর উপর আরোহন কর’ এবং
তাকে পাগড়ীটি দিয়ে বললেন, ‘এটি তোমার মাথায় বাঁধ।’
(এ দেখে) তাঁকে তাঁর কিছু সাথী-সঙ্গী বলল, ‘আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! আপনি এই
বেদুঈনকে ঐ গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর চড়ে আপনি বিশ্রাম নিতেন এবং তাকে ঐ
পাগড়ীটিও দিলেন, যেটি আপনি নিজ মাথায় বাঁধতেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের
সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ।’’ আর এর পিতা উমার (রাঃ)-এর বন্ধু
ছিলেন। [১]
এ বর্ণনাগুলো সবই ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
[১] মুসলিম ২৫৫২, তিরমিযী ১৯০৩, আবূ দাউদ ৫১৪৩, আহমাদ
৫৫৮০, ৫৬২১. ৫৬৮৮, ৫৮৬২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৪৭
وعن أبي أُسَيْد - بضم الهمزة وفتح السين -
مالكِ بنِ ربِيعَةَ السَّاعِدِيِّ رضي الله عنه قال : بَيْنا نَحْنُ جُلُوسٌ
عِنْدَ رسول اللهِ صلى الله عليه وسلم إذ جاءَهُ رجُلٌ مِنْ بني سَلَمة فقالَ :
يارسولَ اللهِ هَلْ بقى مِن بِرِّ أَبويَّ شىءٌ أَبرُّهُمَا بِهِ بَعدَ
مَوْتِهِمَا ؟ فقال: نَعَمْ، الصَّلاَة علَيْهِمَا، والاسْتِغْفَارُ لَهُما،
وإِنْفاذُ عَهْدِهِما، وصِلةُ الرَّحِمِ التي لا تُوصَلُ إِلاَّ بِهِمَا،
وإِكَرَامُ صَدِيقهما رواه أبو داود .
আবূ
উসাইদ মালিক ইবনু রাবী‘আহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কোনো
একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে বসা ছিলাম। এমন
সময় বানী সালামা সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার মারা যাবার পরও আমার উপর তাদের প্রতি সদাচারণ করার
দায়িত্ব আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তাদের জন্য দু‘আ করবে, তাদের গুনাহের
মাগফিরাত প্রার্থনা করবে, তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করবে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে
এ জন্যে উত্তম ব্যবহার করবে যে, এরা তাদেরই আত্মীয় এবং বন্ধু-বান্ধব এবং তাদেরকে
সম্মান দেখাবে।[১]
[১] আবূ দাউদ (হাঃ ৫১৪২), ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৬৬৪), মিশকাত
(হাঃ ৪৯৩৬), হাদীসটি যঈফ, দুর্বল; দেখুন তাহক্বীক্ব আলবানী- আবূ দাউদ (হাঃ ১১০১)।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৩৪৮
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ : مَا غِرْتُ عَلَى أحَدٍ مِنْ نِسَاءِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم مَا
غِرْتُ عَلَى خَدِيجَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، وَمَا رَأيْتُهَا قَطُّ، وَلَكِنْ
كَانَ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا، وَرُبَّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ، ثُمَّ يقَطِّعُهَا
أعْضَاء، ثُمَّ يَبْعثُهَا في صَدَائِقِ خَديجَةَ، فَرُبَّمَا قُلْتُ لَهُ : كَأنْ
لَمْ يَكُنْ في الدُّنْيَا إلاَّ خَديجَةَ ! فَيَقُولُ: «إنَّهَا كَانَتْ
وَكَانَتْ وَكَانَ لي مِنْهَا وَلَدٌ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية : وإنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاءَ، فَيُهْدِي في خَلاَئِلِهَا مِنْهَا
مَا يَسَعُهُنَّ .
وفي رواية:كَانَ إِذَا ذبح الشاة، يقولُ: أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أصْدِقَاءِ
خَديجَةَ
وفي رواية : قَالَت : اسْتَأذَنتْ هَالَةُ بِنْتُ خُوَيْلِد أُخْتُ خَدِيجَةَ
عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَعرَفَ اسْتِئذَانَ خَديجَةَ، فَارتَاحَ
لِذَلِكَ، فَقَالَ: اَللهم هَالةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ
قولُهَا: «فَارتَاحَ» هُوَ بالحاء، وفي الجمعِ بَيْنَ الصحيحين للحُميدِي:
«فَارتَاعَ» بالعينِ ومعناه : اِهتَمَّ بهِ
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হতো, ততটা ঈর্ষা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপর কোন স্ত্রীর প্রতি হতো না। অথচ আমি তাঁকে
কখনো দেখিনি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় তাঁর কথা
আলোচনা করতেন এবং যখনই তিনি ছাগল যবাই করতেন, তখনই তার বিভিন্ন অঙ্গ কেটে খাদীজার
বান্ধবীদের জন্য উপহারস্বরূপ পাঠাতেন।
আমি তাঁকে মাঝে মধ্যে (রসিকতা ছলে) বলতাম, ‘মনে হয় যেন দুনিয়াতে খাদীজা ছাড়া আর
কোন মেয়েই নেই।’ তখন তিনি (তাঁর প্রশংসা করে) বলতেন, ‘‘সে এই রকম ছিল, ঐ রকম ছিল।
আর তাঁর থেকেই আমার সন্তান-সন্তুতি।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবাই করতেন,
তখন খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এতটা পরিমাণে গোশত পাঠাতেন, যা তাদের জন্য যথেষ্ট
হত।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবাই করতেন,
তখন বলতেন, ‘‘খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এই গোশত পাঠিয়ে দাও।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন, ‘একদা খাদীজার বোন হালা বিনতে
খুআইলিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইল।
তিনি খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ করলেন, সুতরাং তিনি আনন্দবোধ করলেন এবং
বললেন, ‘‘আল্লাহ! হালা বিনতে খুআইলিদ?’’
এ বর্ণনায় فَارتَاحَ
(আনন্দবোধ করলেন) শব্দ এসেছে। আর হুমাইদীর ‘আল-জাম‘উ বাইনাস সহীহাইন’-এ এসেছে فَارتَاعَ
শব্দ। অর্থাৎ তার প্রতি যত্ন নিলেন ও আগ্রহ প্রকাশ করলেন।[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৮১৬, ৩৮১৭, ৩৮১৮, ৫২২৯, ৬০০৪, ৭৪৮৪,
মুসলিম ২৪৩৫, তিরমিযী ২০১৭, ৩৮৭৫, ইবনু মাজাহ ১৯৯৭, আহমাদ ২৩৭৮৯, ২৫১৩০, ২৫৮৪৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৪৯
وَعَن أَنَسِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه،
قَالَ : خَرَجتُ مَعَ جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ البَجَليّ رضي الله عنه في سَفَرٍ،
فَكَانَ يَخْدُمُني، فَقُلْتُ لَهُ : لاَ تَفْعَل، فَقَالَ : إِنِّي قَدْ رَأيْتُ
الأنْصَارَ تَصْنَعُ بِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم شَيئاً آلَيْتُ عَلَى
نَفسِي أنْ لاَ أصْحَبَ أحَداً مِنْهُمْ إلاَّ خَدَمْتُهُ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
আমি জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ বাজালী (রাঃ)-এর সাথে সফরে বের হলাম। (আমার চেয়ে
বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও) তিনি আমার খিদমত করতেন। সুতরাং আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি
এমন করবেন না।’ তিনি বললেন, ‘আমি আনসারগণকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (অনেক) কিছু করতে দেখেছি। তাই আমি শপথ করেছি যে, তাঁদের মধ্যে
যাঁরই সঙ্গী হব, তাঁরই খিদমত করব।’ (মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৮৮৮, মুসলিম ২৫১৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪৩
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর বংশধরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের মাহাত্ম্যের বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
অর্থাৎ “হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো কেবল তোমাদের মধ্য থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান
এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।” (সূরা আহযাব ৩৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [الحج: ٣٢]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের
সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা হজ্জ্ব ৩২ আয়াত)
৩৫০
وَعَن يَزِيدَ بنِ حَيَّانَ، قَالَ :
انْطَلَقْتُ أنَا وحُصَيْنُ بْنُ سَبْرَة، وَعَمْرُو ابنُ مُسْلِم إِلَى زَيْدِ بْنِ
أرقَمَ رضي الله عنه، فَلَمَّا جَلسْنَا إِلَيْهِ قَالَ لَهُ حُصَيْن : لَقَدْ
لقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْراً كَثِيراً، رَأيْتَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
صلى الله عليه وسلم، وَسَمِعتَ حَدِيثَهُ، وغَزوْتَ مَعَهُ، وَصَلَّيْتَ خَلْفَهُ
: لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْراً كَثيراً، حَدِّثْنَا يَا زَيْدُ مَا سَمِعْتَ
مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يَا ابْنَ أخِي، وَاللهِ لقد
كَبِرَتْ سِنِّي، وَقَدُمَ عَهدِي، وَنَسِيتُ بَعْضَ الَّذِي كُنْتُ أعِي مِنْ
رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم، فَمَا حَدَّثْتُكُمْ، فَاقْبَلُوا، وَمَا لاَ
فَلاَ تُكَلِّفُونيهِ . ثُمَّ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم يَوماً فِينَا خَطِيباً بمَاءٍ يُدْعَى خُمَّاً بَيْنَ مَكَّةَ
وَالمَدِينَةِ، فَحَمِدَ الله، وَأثْنَى عَلَيهِ، وَوعظَ وَذَكَّرَ، ثُمَّ قَالَ:
«أمَّا بَعدُ، ألاَ أَيُّهَا النَّاسُ، فَإنَّمَا أنَا بَشَرٌ يُوشِكَ أنْ يَأتِي
رَسُولُ ربِّي فَأُجِيبَ، وَأنَا تَارِكٌ فِيكُم ثَقَلَيْنِ : أوَّلُهُمَا كِتَابُ
اللهِ، فِيهِ الهُدَى وَالنُّورُ، فَخُذُوا بِكِتَابِ الله، وَاسْتَمْسِكُوا
بِهِ»، فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ الله، وَرَغَّبَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: «وَأهْلُ
بَيْتِي أُذكِّرُكُمُ اللهَ في أهلِ بَيْتي، أُذَكِّرُكُمُ الله في أَهلِ
بَيتي»فَقَالَ لَهُ حُصَيْنٌ : وَمَنْ أهْلُ بَيتهِ يَا زَيْدُ، أَلَيْسَ
نِسَاؤُهُ مِنْ أهْلِ بَيْتِهِ ؟ قَالَ : نِسَاؤُهُ مِنْ أهْلِ بَيتهِ، وَلكِنْ
أهْلُ بَيتِهِ مَنْ حُرِمَ الصَّدَقَةَ بَعدَهُ، قَالَ : وَمَنْ هُمْ ؟ قَالَ :
هُمْ آلُ عَلِيٍّ وَآلُ عَقِيلٍ وَآلُ جَعفَرَ وآلُ عَبَّاسٍ . قَالَ : كُلُّ
هَؤُلاَءِ حُرِمَ الصَّدَقَةَ ؟ قَالَ : نَعَمْ. رواه مسلم ، وفي رواية: ألاَ وَإنّي
تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَليْنِ : أحَدُهُما كِتَابُ الله وَهُوَ حَبْلُ الله، مَنِ
اتَّبَعَهُ كَانَ عَلَى الهُدَى، وَمَنْ تَرَكَهُ كَانَ عَلَى ضَلالَة
ইয়াযীদ
ইবনু হাইয়ান থেকে বর্ণিতঃ
বলেন,
আমি, হুস্বাইন ইবনু সাবরাহ ও ‘আমর ইবনু মুসলিম যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)র নিকট
গেলাম। যখন আমরা তাঁর পাশে বসলাম, তখন হুস্বাইন তাঁকে বললেন, ‘হে যায়দ! আপনি
প্রভূত কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছেন; আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর পিছনে নামায
পড়েছেন। হে যায়দ! আপনি প্রভূত কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন কথা শুনান, যা আপনি (স্বয়ং) তাঁর নিকট থেকে
শুনেছেন।’ তিনি বললেন, ‘হে ভাতিজা! আল্লাহর কসম! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং (নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে) আমার যে যুগটা কেটেছে, তাও যথেষ্ট পুরানো
হয়ে গেছে। (ফলে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে কথা আমার
স্মরণে ছিল, তার কিছু ভুলে গেছি। সুতরাং আমি যা বলব, তা গ্রহণ কর এবং যা বর্ণনা
করব না, তার জন্য আমাকে বাধ্য করো না।’
অতঃপর তিনি বললেন, ‘একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে
মক্কা ও মদ্বীনার মধ্যে ‘খুম’ নামক ঝর্ণার নিকটে খুতবাহ দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন।
তিনি সর্বাগ্রে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং ওয়ায করলেন ও উপদেশ দিলেন। অতঃপর বললেন,
‘‘আম্মা বা‘দ। হে লোকেরা! শোনো, আমি একজন মানুষ মাত্র, শীঘ্রই (আমার নিকট) আমার
প্রতিপালকের দূত আসবেন এবং আমি (আল্লাহর নিকট যাওয়ার জন্য) তাঁর ডাকে সাড়া দেব।
আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে একটি
আল্লাহর কিতাব, যাতে হিদায়াত ও আলো রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর
এবং তা মযবুত করে ধারণ কর।’’ সুতরাং তিনি আল্লাহর কিতাবের উপর (আমল করার প্রতি)
উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘(আর দ্বিতীয় বস্তুটি হচ্ছে,) আমার
পরিবার; আমি তোমাদেরকে আমার পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহর স্মরণ দিচ্ছি।
আমি তোমাদেরকে আমার পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহর স্মরণ দিচ্ছি।’’ তারপর হুস্বাইন
তাঁকে বললেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পরিবার কারা? হে যায়দ! তাঁর
স্ত্রীরা কি তাঁর পরিবারভুক্ত নন?’ তিনি (যায়দ) বললেন, ‘(নিঃসন্দেহে) স্ত্রীরা
তাঁর পরিবারভুক্ত। কিন্তু তাঁর পরিবার (বলতে) তাঁরা, যাঁদের উপর তাঁর (মৃত্যুর) পর
সাদকাহ হারাম করা হয়েছে।’ হুস্বাইন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাঁরা কারা?’ যায়দ জবাব দিলেন,
‘তাঁরা হচ্ছেন আলীর পরিবার, আক্বীলের পরিবার, জা‘ফরের পরিবার এবং আব্বাসের
পরিবার।’ হুস্বাইন বললেন, ‘এদের সকলের প্রতি সাদকাহ হারাম করা হয়েছে?’ তিনি বললেন,
‘হ্যাঁ।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, শোনো, ‘‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) জিনিস
ছেড়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে একটি হল আল্লাহর কিতাব; আর তা আল্লাহর রশি। যে ব্যক্তি তার
অনুসরণ করবে, সে সঠিক পথে থাকবে এবং যে তা পরিহার করবে, সে ভ্রষ্টতায়
থাকবে।’’(মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৪০৮, আহমাদ ১৮৭৮০, ১৮৮২৬, দারেমী ৩৩১৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫১
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
عَن أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رضي الله عنه - مَوقُوفاً عَلَيهِ - أنَّهُ قَالَ :
ارْقَبُوا مُحَمداً صلى الله عليه وسلم في أهْلِ بَيْتِهِ . رواه البخاري
বনু
উমার (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেছেন, ‘‘তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি তাঁর
পরিবারবর্গের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন কর।’’ (বুখারী)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৭১৩, ৩৭৫১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪৪
উলামা, বয়স্ক ও সম্মানী
ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করা, তাঁদেরকে অন্যান্যদের উপর প্রাধান্য দেওয়া, তাঁদের উচ্চ
আসন দেওয়া এবং তাঁদের মর্যাদা প্রকাশ করার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ﴾ [الزمر: ٩]
অর্থাৎ “বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? বুদ্ধিমান লোকেরাই কেবল
উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরা যুমার ৯ আয়াত)
৩৫২
وَعَن أَبي مَسعُودٍ عُقبَةَ بنِ عَمرٍو
البَدرِي الأَنصَارِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم: «يَؤُمُّ القَوْمَ أقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ الله، فَإنْ
كَانُوا في القِراءَةِ سَوَاءً، فأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ، فَإنْ كَانُوا في
السُّنَّةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإنْ كَانُوا في الهِجْرَةِ
سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ سِنّاً، وَلاَ يَؤُمّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ في
سُلْطَانِهِ، وَلاَ يَقْعُدْ في بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إلاَّ بِإذْنهِ».
رواه مسلم
وفي رواية لَهُ: «فَأقْدَمُهُمْ سِلْماً» بَدَلَ «سِنّاً» أيْ إسْلاماً .
وفي رواية: يَؤُمُّ القَومَ أقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ، وَأقْدَمُهُمْ قِراءةً،
فَإنْ كَانَتْ قِرَاءتُهُمْ سَوَاءً فَيَؤُمُّهُمْ أقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإنْ
كَانُوا في الهِجْرَةِ سَواء، فَليَؤُمُّهُمْ أكْبَرُهُمْ سِنّاً
আবূ
মাসঊদ উক্ববাহ ইবনু ‘আমর বাদরী আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জামাআতের ইমামতি ঐ ব্যক্তি করবে, যে
তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল কুরআন পড়তে জানে। যদি তারা পড়াতে সমান হয়, তাহলে তাদের
মধ্যে যে সুন্নাহ (হাদীস) বেশী জানে সে (ইমামতি করবে)। অতঃপর তারা যদি সুন্নাহতে
সমান হয়, তাহলে তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে হিজরতকারী। যদি হিজরতে সমান হয়, তাহলে তাদের
মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ (ইমামতি করবে)। আর কোনো ব্যক্তি যেন কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বস্থলে
ইমামতি না করে এবং গৃহে তার বিশেষ আসনে তার বিনা অনুমতিতে না বসে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৬৭৩, তিরমিযী ২৩৫, নাসায়ী ৭৮০, আবূ দাউদ ৫৮২,
ইবনু মাজাহ ৯৮০, আহমাদ ১৬৬১৫, ১৬৬৪৩, ২১৮৩৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫৩
وَعَنهُ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا في الصَّلاةِ،
وَيَقُولُ: «اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا، فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ، لِيَلِني
مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ
الَّذِينَ يَلُونَهُمْ». رواه مسلم
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করার সময় আমাদের
(বাজুর উপরি অংশে) কাঁধ ছুঁয়ে বলতেন, ‘‘তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও এবং বিভিন্নরূপে
দাঁড়ায়ো না, (নতুবা) তোমাদের অন্তরসমূহ বিভিন্ন হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা
বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান, তারাই যেন আমার নিকটে (প্রথম কাতারে আমার পশ্চাতে) থাকে।
অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাদের যারা নিকটবর্তী
তারা।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৪৩২, নাসায়ী ৮০৭, ৮১২, আবূ দাউদ ৬৭৪, ইবনু
মাজাহ ৯৭৬, আহমাদ ১৬৬৫৩, দারেমী ১২৬৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫৪
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله
عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
«لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ
يَلُونَهُمْ»ثَلاثاً: «وَإيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأسْوَاق». رواه مسلم
আব্দুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক ও
বুদ্ধিমান তারা যেন আমার নিকটে দাঁড়ায়। অতঃপর যারা (উভয় ব্যাপারে) তাদের
নিকটবর্তী।’’ এরূপ তিনি তিন বার বললেন। (অতঃপর তিনি বললেন,) ‘‘আর তোমরা (মসজিদে)
বাজারের ন্যায় হৈচৈ করা হতে দূরে থাকো।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৪৩২, তিরমিযী ২২৮, আবূ দাউদ ৬৭৪, আহমাদ ৪৩৬০,
দারেমী ১২৬৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫৫
وَعَن أَبي يَحيَى، وَقِيلَ : أَبي
مُحَمَّدٍ سَهلِ بنِ أَبي حَثْمَةَ الأنصَارِي رضي الله عنه، قَالَ : انطَلَقَ
عَبدُ اللهِ ابنُ سهْلٍ وَمُحَيِّصَةُ بنُ مَسْعُودٍ إِلَى خَيْبَرَ وَهِيَ
يَومَئذٍ صُلْحٌ، فَتَفَرَّقَا، فَأتَى مُحَيِّصَةُ إِلَى عبدِ اللهِ بنِ سَهلٍ
وَهُوَ يَتشَحَّطُ في دَمِهِ قَتِيلاً، فَدَفَنَهُ، ثُمَّ قَدِمَ المَدِينَةَ
فَانْطَلَقَ عَبدُ الرَّحمَانِ بنُ سَهلٍ وَمُحَيِّصَةُ وحُوَيِّصَةُ ابْنَا
مَسْعُودٍ إِلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، فَذَهَبَ عَبدُ الرَّحمَانِ
يَتَكَلَّمُ، فَقَالَ: «كَبِّرْ كَبِّرْ»وَهُوَ أحْدَثُ القَوم، فَسَكَتَ،
فَتَكَلَّمَا، فَقَالَ: أتَحْلِفُونَ وتَسْتَحِقُّونَ قَاتِلَكُمْ ؟وذكر تمام
الحديث . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
ইয়াহয়্যা মতান্তরে আবূ মুহাম্মাদ সাহ্ল ইবনু আবূ হাসমা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু সাহ্ল এবং মুহাইয়িস্বাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) খায়বার রওয়ানা
হলেন। সে সময় (সেখানকার ইয়াহুদী এবং মুসলিমের মধ্যে) সন্ধি ছিল। (খায়বার পৌঁছে স্ব
স্ব প্রয়োজনে) তাঁরা পরস্পর পৃথক হয়ে গেলেন। অতঃপর মুহাইয়িস্বাহ আব্দুল্লাহ ইবনু
সাহলের নিকট এলেন, যখন তিনি আহত হয়ে রক্তাক্ত দেহে তড়পাচ্ছিলেন। সুতরাং
মুহাইয়িস্বাহ তাঁকে (তাঁর মৃত্যুর পর) সেখানেই সমাধিস্থ করলেন। তারপর তিনি মদ্বীনা
এলেন।
(মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মৃতের ভাই) আব্দুর রহমান ইবনু সাহ্ল এবং মাসউদের দুই ছেলে মুহাইয়িস্বাহ
ও হুওয়াইয়িস্বাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলেন। আব্দুর রহমান
কথা বলতে গেলেন। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘বয়োজ্যেষ্ঠকে কথা বলতে দাও, বয়োজ্যেষ্ঠকে কথা বলতে দাও।’’ আর ওদের মধ্যে আব্দুর
রহমান বয়সে ছোট ছিলেন। ফলে তিনি চুপ হয়ে গেলেন এবং তাঁরা দু’জন কথা বললেন। (সব
ঘটনা শোনার পর) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি কসম খাচ্ছ
এবং (নিজ ভাইয়ের) হত্যাকারী থেকে অধিকার চাচ্ছ?’’ অতঃপর তিনি সম্পূর্ণ হাদীস
বর্ণনা করলেন। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১৭৩, ২৭০২, ৬১৪২, ৬৮৯৮, ৭১৯২, মুসলিম
১৬৬৯, তিরমিযী ১৪২২, নাসায়ী ৪৭১৩, ৪৭১৪, ৪৭১৫, ৪৭১৬, আবূ দাউদ ৪৫২০, ৪৫২১, ৪৫২৩, ইবনু
মাজাহ ২৬৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫৬
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ
النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ مِنْ قَتْلَى
أُحُد يَعْنِي في القَبْرِ، ثُمَّ يَقُولُ: أيُّهُمَا أكْثَرُ أخذاً للقُرآنِ
؟فَإذَا أُشيرَ لَهُ إِلَى أحَدِهِمَا قَدَّمَهُ في اللَّحْدِ . رواه البخاري
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’জনকে একটি কবরে একত্র করে
জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘‘এদের মধ্যে কুরআন হিফয কার বেশী আছে?’’ সুতরাং দু’জনের কোন
একজনের দিকে ইশারা করা হলে প্রথমে তাঁকে বগলী কবরে রাখছিলেন। (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩৪৩, ১৩৪৫, ১৩৪৬, ১৩৪৮, ১৩৫১, ১৩৫২,
১৩৫৩, ৪০৮০, তিরমিযী ১০৩৬, নাসায়ী ১৯৫৫, ২০২১, আবূ দাউদ ৩১৩৮, ইবনু মাজাহ ১৫১৪, আহমাদ
১৩৭৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫৭
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا
: أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أرَانِي فِي المَنَامِ أتَسَوَّكُ
بِسِوَاكٍ، فَجَاءَنِي رَجُلاَنِ، أحَدُهُما أَكبَرُ مِنَ الآخَرِ، فَنَاوَلْتُ
السِّوَاكَ الأصْغَرَ، فَقِيلَ لِي : كَبِّرْ، فَدَفَعْتهُ إِلَى الأكْبَرِ
مِنْهُمَا». رواه مسلم مسنداً والبخاري تعليقاً.
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি নিজেকে স্বপ্নে দাঁতন করতে দেখলাম।
অতঃপর দু’জন লোক এল, একজন অপরজনের চেয়ে বড় ছিল। আমি ছোটজনকে দাঁতনটি দিলাম, তারপর
আমাকে বলা হল, ‘বড়জনকে দাও।’ সুতরাং আমি তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটিকে (দাঁতন)
দিলাম।’’ (মুসলিম, বুখারী ছিন্ন সনদে) [১]
[১] মুসলিম ২২৭১, ৩০০৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫৮
وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ :
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ مِنْ إجْلالِ
اللهِ تَعَالَى : إكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ المُسْلِمِ، وَحَامِلِ القُرآنِ غَيْرِ
الغَالِي فِيهِ، وَالجَافِي عَنْهُ، وَإكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ المُقْسِط». حديث
حسن رواه أَبُو داود
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘পাকা চুলওয়ালা বয়স্ক
মুসলিমের, কুরআন বাহক (হাফেয ও আলেম)-এর যে কুরআনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন ও
অবজ্ঞাকারী নয় এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর সম্মান করা এক প্রকার আল্লাহ তা‘আলাকে
সম্মান করা।’’ (আবূ দাউদ) [১]
[১] আবূ দাউদ ৪৮৪৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৫৯
وَعَن عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَن أبِيهِ، عَن
جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ غِيرنَا، وَيَعْرِفْ شَرَفَ
كَبيرِنَا حديث صحيح رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ الترمذي: حديث حسن
صحيح.وَفي رِوَايَةِ أبي دَاوُد: حَقَّ كَبيرِنَا
আমর
ইবনু শুআইব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের
ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান জানে না।’’ (সহীহ হাদীস, আবূ
দাঊদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ) আবূ দাঊদের এক বর্ণনায় আছেঃ ‘‘আমাদের বড়দের অধিকার
জানে না।’’ [১]
[১] তিরমিযী ১৯২০, আহমাদ ৬৬৯৪, ৬৮৯৬, ৭০৩৩
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৩৬০
وَعَنْ مَيْمُوْنَ بْنِ أَبِيْ شَبِيْبٍ
رَحِمَهُ اللهُ أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا مَرَّ بِهَا سَائِلٌ،
فَأَعْطَتْهُ كِسْرَةً، وَمَرَّ بِهَا رَجُلٌ عَلَيْهِ ثِيَابٌ وهَيْئَةٌ،
فَأَقْعَدََتْهُ، فَأَكَلَ فَقِيْلَ لَهَا فِيْ ذٰلِكَ ؟ فَقَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم: « أَنْزِلُوْا النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ»رواه أبو داود .
لٰكِنْ قَالَ : مَيْمُوْنُ لَمْ يُدْرِكْ عَائِشَةَ .
وَقَدْ ذَكَرَهُ مُسْلِمٌ فِيْ أَوَّلِ صَحِيْحِهِ تَعْلِيْقاً فَقَالَ : وَذُكَرَ
عَنْ عائِشَةَ رَضِيَ اللَّه عَنْهَا قَالَتْ: أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم أَنْ نُنْزِلَ النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ، وَذَكَرَهُ الْحَاكِمُ أَبُوْ
عَبْدِ اللهِ فِيْ كِتابِهِ: «مَعْرْفَةُ عُلُوْمِ الْحَدِيْثِ»وقال : هو حديثٌ
صحيح
মাইমুন
ইবনু আবি শাবীব রাহিমাহুল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ
‘আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সামনে দিয়ে একজন ভিক্ষুক যাচ্ছিল। তিনি তাকে এক টুকরা রুটি
প্রদান করলেন। আবার তার সম্মুখ দিয়ে সজ্জিত পোশাকে এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তাকে তিনি
বসালেন এবং খাবার খাওয়ালেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “মানুষকে তার মর্যাদা
অনুযায়ী স্থান দাও।” হাদীসটি ইমাম আবূ দাউদ উদ্ধৃত করেছেন। কিন্তু বলেছেন, আয়িশাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সঙ্গে মাইমুনের সাক্ষাৎ হয়নি।
ইমাম মুসলিম তার সহীহ হাদীস গ্রন্থে এটাকে মু‘আল্লাক হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ‘‘আমাদেরকে আদেশ করেছেন মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দিতে’’। এ
হাদীসটি ইমাম হাকিম আবূ ‘আবদুল্লাহ (রাহ:) তার ‘‘মারিফাতু উলুমিল হাদীস’’ গ্রন্থে
বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এটি সহীহ হাদীস।[১]
[১] আমি (আলবানী) বলছিঃ হাকিম আবূ আব্দিল্লাহ্ তার ‘‘মা‘রিফাতু
উলূমিল হাদীস’’ গ্রন্থে যে, বলেছেন : হাদীসটি সহীহ্। কিন্তু তিনি যেরূপ বলেছেন আসলে
হাদীসটি সেরূপ নয়, এর সনদে বিচ্ছিন্নতা থাকার কারণে। যেমনটি আমি ‘‘আল মিশকাত’’ গ্রন্থে
(তাহ্ক্বীক সানীতে - ৪৯৮৯) আলোচনা করেছি। আবূ দাঊদ (নিজেই) বলেনঃ বর্ণনাকারী মাইমূন
আয়েশাকে পাননি। আরও দেখুনঃ সিলসিলাহ যয়ীফাহ ১৮৯৪নং)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৩৬১
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله
عَنهُمَا، قَالَ : قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنٍ، فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أخِيهِ
الحُرِّ بنِ قَيسٍ، وَكَانَ مِنَ النَّفَرِ الَّذِينَ يُدْنِيهِمْ عُمَرُ رضي الله
عنه، وَكَانَ القُرَّاءُ أصْحَابَ مَجْلِس عُمَرَ رضي الله عنه وَمُشاوَرَتِهِ
كُهُولاً كانُوا أَوْ شُبَّاناً، فَقَالَ عُيَيْنَةُ لابْنِ أخيهِ : يَا ابْنَ أخِي،
لَكَ وَجْهٌ عِنْدَ هَذَا الأمِيرِ فَاسْتَأذِنْ لِي عَلَيهِ، فاسْتَأذَن فَأذِنَ
لَهُ عُمَرُ. فَلَمَّا دَخَلَ قَالَ: هِي يَا ابنَ الخَطَّابِ، فَواللهِ مَا
تُعْطِينَا الْجَزْلَ وَلا تَحْكُمُ فِينَا بالعَدْلِ. فَغَضِبَ عُمَرُ رضي الله
عنه حَتَّى هَمَّ أنْ يُوقِعَ بِهِ. فَقَالَ لَهُ الحُرُّ : يَا أميرَ
المُؤْمِنينَ، إنَّ الله تَعَالَى قَالَ لِنَبيِّهِ صلى الله عليه وسلم: ﴿ خذ
العفو وأمر بالعرف وأعرض عن الجاهلين﴾ [الاعراف: ١٩٩] وَإنَّ هَذَا مِنَ
الجَاهِلِينَ، واللهِ مَا جَاوَزَهاَ عُمَرُ حِينَ تَلاَهَا، وكَانَ وَقَّافاً
عِنْدَ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى . رواه البخاري
ইবনু
আব্বাস থেকে বর্ণিতঃ
উয়াইনাহ
ইবনু হিস্বন এলেন এবং তাঁর ভাতিজা হুর্র ইবনু কাইসের কাছে অবস্থান করলেন। এই
(হুর্র) উমার (রাঃ)-এর খেলাফত কালে ঐ লোকগুলির মধ্যে একজন ছিলেন যাদেরকে তিনি তাঁর
নিকটে রাখতেন। আর কুরআন-বিশারদগণ বয়স্ক হন অথবা যুবক হন তাঁরা উমার (রাঃ)-এর সভাষদ
ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়াইনাহ তাঁর ভাতিজাকে বললেন, ‘হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! এই
খলীফার কাছে তোমার বিশেষ সম্মান রয়েছে। তাই তুমি আমার জন্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ
করার অনুমতি চাও।’ ফলে তিনি অনুমতি চাইলেন। সুতরাং উমার তাকে অনুমতি দিলেন।
অতঃপর যখন উয়াইনাহ ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন উমার ((রাঃ))কে বললেন, ‘হে ইবনু
খাত্ত্বাব! আল্লাহর কসম! আপনি আমাদেরকে পর্যাপ্ত দান দেন না এবং আমাদের মধ্যে
ন্যায় বিচার করেন না!’ (এ কথা শুনে) উমার (রাঃ) রেগে গেলেন। এমনকি তাকে মারতে
উদ্যত হলেন। তখন হুর্র তাঁকে বললেন, ‘হে আমীরুল মু’মেনীন! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর
নবীকে বলেন, ‘‘তুমি ক্ষমাশীলতার পথ অবলম্বন কর। ভাল কাজের আদেশ প্রদান কর এবং
মূর্খদিগকে পরিহার করে চল।’’ (সূরা আল আ’রাফ ১৯৮ আয়াত) আর এ এক মূর্খ।’
আল্লাহর কসম! যখন তিনি (হুর্র) এই আয়াত পাঠ করলেন, তখন উমার (রাঃ) একটুকুও আগে
বাড়লেন না। আর তিনি আল্লাহর কিতাবের কাছে (অর্থাৎ তাঁর নির্দেশ শুনে) থেমে যেতেন।
(বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৬৪২, ৭২৮৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৬২
وَعَن أَبي سَعِيدٍ سَمُرَةَ بنِ جُندُبٍ
رضي الله عنه، قَالَ : لَقَد كُنتُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
غُلاماً، فَكُنْتُ أحْفَظُ عَنْهُ، فَمَا يَمْنَعُنِي مِنَ القَوْلِ إلاَّ أنَّ
هَاهُنَا رِجَالاً هُمْ أسَنُّ مِنِّي . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
সাঈদ সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কিশোর ছিলাম। আমি
তাঁর কথাগুলি মুখস্থ করে নিতাম। কিন্তু আমাকে বর্ণনা করতে একটাই জিনিস বাধা সৃষ্টি
করত যে, সেখানে আমার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ উপস্থিত থাকত।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৩২, মুসলিম ৯৬৪, তিরমিযী ১০৩৫, নাসায়ী
১৯৭৬, ১৯৭৯, আবূ দাউদ ৩১৯৫, ইবনু মাজাহ ১৪৯৩, আহমাদ ১৯৬৪৯, ১৯৭০১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৬৩
وعن أَنس رضي الله عنه قال : قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم: «ما أَكْرَم شَابٌّ شَيْخاً لِسِنِّهِ إِلاَّ قَيَّضَ اللهِ
لَهُ مَنْ يُكْرِمُهُ عِنْد سِنِّه»رواه الترمذي وقال حديث غريب
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি কোনো বৃদ্ধ লোককে কোনো যুবক তার
বার্ধক্যের কারণে সম্মান দেখায়, তবে তার বৃদ্ধাবস্থায় আল্লাহ এমন লোককে নির্ধারণ
করে দিবেন, যে তাকে সম্মান দেখাবে।” তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেছেন।[১]
[১] আমি (আলবানী) বলছিঃ আমি হাদীসটি সম্পর্কে ‘‘সিলসিলাহ্
য‘ঈফা’’ গ্রন্থের (৩০৪) নং হাদীসে আলোচনা করেছি এবং এর দু’টি সমস্যা উল্লেখ করেছি।
[ওকাইলী ইয়াযীদ ইবনু বায়ান সম্পর্কে বলেনঃ তার মুতাবা‘য়াত করা হয়নি। আর হাদীসটি একমাত্র
তার মাধ্যমেই চেনা যায়। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি দুর্বল। আর ইমাম বুখারী বলেনঃ তার ব্যাপারে
বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। ইবনু আদী বলেনঃ এটি মুনকার হাদীস। আর তার শাইখ আবুর রিহাল সম্পর্কে
ইবনু আদী বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন, মুনকারুল হাদীস। ইমাম বুখারী বলেনঃ তার নিকট আজব
আজব বর্ণনা রয়েছে। দেখুন উক্ত (৩০৪) নম্বর হাদীসে]।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪৫
ভাল লোকদের সাথে সাক্ষাৎ
করা, তাঁদের সাহচর্য গ্রহণ করা, তাঁদেরকে ভালবাসা, তাঁদেরকে বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া,
তাঁদের কাছে দো‘আ চাওয়া এবং বরকতময় স্থানসমূহের দর্শন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَإِذۡ قَالَ مُوسَىٰ لِفَتَىٰهُ لَآ أَبۡرَحُ حَتَّىٰٓ أَبۡلُغَ مَجۡمَعَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ أَوۡ أَمۡضِيَ حُقُبٗا ٦٠ ﴾ [الكهف: ٦٠] إِلَى قوله تَعَالَى : ﴿ قَالَ لَهُۥ مُوسَىٰ هَلۡ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰٓ أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمۡتَ رُشۡدٗا ٦٦ ﴾ [الكهف: ٦٦]
অর্থাৎ “(স্মরণ কর,) যখন মূসা তার সঙ্গীকে বলেছিল, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না
পৌঁছে আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।” -এখান থেকে আল্লাহর বাণী:-
“মূসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হতে আমাকে শিক্ষা
দেবেন এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?” (সূরা কাহফ ৬০-৬৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ﴾ [الكهف: ٢٨]
অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে
তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত
৩৬৪
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ
أَبُو بَكرٍ لِعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم : انْطَلِقْ بِنَا إِلَى أُمِّ أيْمَنَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا
نَزُورُهَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
يَزُورُهَا، فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَيْهَا، بَكَتْ، فَقَالاَ لَهَا : مَا
يُبْكِيكِ ؟ أمَا تَعْلَمِينَ أنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لرَسُولِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، فَقَالَتْ : مَا أبْكِي أَنْ لاَ أَكُونَ أَعْلَمُ أنَّ مَا
عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرٌ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَلَكِنْ أبكي
أنَّ الوَحْيَ قدِ انْقَطَعَ مِنَ السَّماءِ، فَهَيَّجَتْهُمَا عَلَى البُكَاءِ،
فَجَعَلا يَبْكِيَانِ مَعَهَا . رواه مسلم
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনাবসানের পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) উমার
(রাঃ)-কে বললেন, ‘চলুন, আমরা উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, যেমন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন।’
সুতরাং যখন তাঁরা উম্মে আইমানের কাছে পৌঁছলেন, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। অতঃপর তাঁরা
তাঁকে বললেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য (দুনিয়া থেকে) অধিক উত্তম?
তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি এ জন্য কান্না করছি না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য আল্লাহর নিকট যা রয়েছে, তা অধিকতর উত্তম সে কথা আমি
জানি না। কিন্তু আমি এজন্য কাঁদছি যে, আসমান হতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল।’ উম্মে
আইমান (তাঁর এ দুঃখজনক কথা দ্বারা) ঐ দু’জনকে কাঁদতে বাধ্য করলেন। ফলে তাঁরাও তাঁর
সাথে কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৪৫৪, ইবনু মাজাহ ১৬৩৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৬৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم: «أنَّ رَجُلاً زَارَ أَخَاً لَهُ في قَريَة
أُخْرَى، فَأرْصَدَ الله تَعَالَى عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكاً، فَلَمَّا أتَى
عَلَيهِ، قَالَ : أيْنَ تُريدُ ؟ قَالَ : أُريدُ أخاً لي في هذِهِ القَريَةِ .
قَالَ : هَلْ لَكَ عَلَيهِ مِنْ نِعْمَة تَرُبُّهَا عَلَيهِ ؟ قَالَ : لا، غَيْرَ
أنِّي أحْبَبْتُهُ في الله تَعَالَى، قَالَ : فإنِّي رَسُولُ الله إلَيْكَ بَأنَّ
اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أحْبَبْتَهُ فِيهِ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি অন্য কোন গ্রামে তার ভাইয়ের
সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বের হল। আল্লাহ তা‘আলা তার রাস্তায় এক ফেরেশতাকে বসিয়ে
দিলেন, তিনি তার অপেক্ষা করতে থাকলেন। যখন সে তাঁর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাকে
বললেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ সে বলল, ‘এ লোকালয়ে আমার এক ভাই আছে, আমি তার কাছে
যাচ্ছি।’
ফিরিশতা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার প্রতি কি তার কোন অনুগ্রহ রয়েছে, যার বিনিময় দেওয়ার
জন্য তুমি যাচ্ছ?’ সে বলল, ‘না, আমি তার নিকট কেবলমাত্র এই জন্য যাচ্ছি যে, আমি
তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।’ ফেরেশতা বললেন, ‘(তাহলে শোনো) আমি তোমার নিকট
আল্লাহর দূত হিসাবে (এ কথা জানাবার জন্য) এসেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে
ভালবাসেন; যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাস।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৫৬৭, আহমাদ ৯০৩৬, ৯৬৪২, ৯৮৮৭, ১০২২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৬৬
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ عَادَ مَرِيضاً أَوْ زَارَ أخاً لَهُ في
اللهِ، نَادَاهُ مُنَادٍ : بِأنْ طِبْتَ، وَطَابَ مَمْشَاكَ، وَتَبَوَّأتَ مِنَ
الجَنَّةِ مَنْزِلاً». رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن، وفي بعض النسخ: غريب
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো
রোগীকে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নেয় অথবা তার কোনো আল্লাহর ওয়াস্তে কৃত ভাই এর সাথে
সাক্ষাৎ করে, সে ব্যক্তিকে এক (গায়বী) আহ্বানকারী আহ্বান করে বলে, ‘সুখী হও তুমি,
সুখকর হোক তোমার ঐ যাত্রা (সাক্ষাতের জন্য যাওয়া)। আর তোমার স্থান হোক জান্নাতের
প্রাসাদে।’’ (তিরমিযী, হাসান বা গরীব সূত্রে)[১]
[১] তিরমিযী ২০০৮, ইবনু মাজাহ ১৪৪৩
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৩৬৭
وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه
أَنَّ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِنَّمَا مَثَلُ الجَلِيسِ
الصَّالِحِ وَجَلِيسِ السُّوءِ، كَحَامِلِ المِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ،
فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إمَّا أنْ يُحْذِيَكَ، وَإمَّا أنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ،
وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الكِيرِ : إمَّا أنْ
يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً مُنْتِنَةً». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আবূ
মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল,
কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী
(আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা
তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে
দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২১০১, ৫৫৩৪, মুসলিম ২৬২৮, আহমাদ ১৯১২৭,
১৯১৬৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৬৮
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «تُنْكَحُ المَرْأَةُ لأَرْبَعٍ :
لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ
الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاك». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘চারটি গুণ দেখে মহিলাকে বিবাহ
করা হয়; তার ধন-সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য এবং তার দ্বীন-ধর্ম
দেখে। তুমি দ্বীনদার পাত্রী লাভ করে সফলকাম হও। (অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।)’’
(বুখারী)
[১] সহীহুল বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ
দাউদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯২৩৭, দারেমী ২১৭০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৬৯
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم لِجِبرِيلَ: «مَا
يَمْنَعُكَ أنْ تَزُورَنَا أكثَرَ مِمَّا تَزُورُنَا ؟»فَنَزَلَتْ : ﴿ وما نتنزل
إلا بأمر ربك له ما بين أيدينا وما خلفنا وما بين ذلك﴾ [مريم: ٦٤] رواه البخاري
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রাঈলকে বললেন, ‘আপনি যতটা আমার সঙ্গে
সাক্ষাৎ করেন তার চেয়ে বেশী সাক্ষাৎ করতে আপনার বাধা কিসের?’ ফলে এ আয়াত অবতীর্ণ
হল, ‘‘(জিবরীল বললেন,) আমরা তোমার প্রতিপালকের আদেশ ব্যাতিরেকে অবতরণ করি না। যা
আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে এবং উভয়ের মধ্যস্থলে রয়েছে সে সকলই তাঁর মালিকানাধীন।’’
(সূরা মারয়্যাম ৬৪ আয়াত, বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৭৩১, ৩২১৮, ৭৪৫৫, তিরমিযী ৩১৫৮, আহমাদ
২০৪৪, ২০৭৯, ৩৩৫৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭০
وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لا تُصَاحِبْ إلاَّ مُؤْمِناً، وَلاَ
يَأْكُلْ طَعَامَكَ إلاَّ تَقِيٌّ». رواه أَبُو داود والترمذي بإسناد لا بأس بِهِ
.
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মু’মিন মানুষ ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না
এবং তোমার খাবার যেন পরহেযগার ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ না খায়।’’ (আবূ দাউদ,
তিরমিযী) [১]
[১] তিরমিযী ২৩৯৫, আবূ দাউদ ৪৮৩২, আহমাদ ১০৯৪৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭১
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ
النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ،
فَليَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ رواه أَبُو داود والترمذي بإسناد صحيح،
وَقالَ الترمذي: حديث حسن
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপর হয়। অতএব
তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।’’ (আবূ দাউদ,
তিরিমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]
[১] তিরমিযী ২৩৭৮, আবূ দাউদ ৪৮৩৩, আহমাদ ৭৯৬৮, ৮২১২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭২
وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله
عنه: أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةٍ: قِيلَ لِلنَّبِي صلى الله عليه وسلم: الرَّجُلُ يُحِبُّ القَومَ
وَلَمَّا يَلْحَقْ بِهِمْ؟ قَالَ: المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালবাসে
(কিয়ামতে) সে তারই সাথী হবে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল,
‘‘কোনো ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসে, কিন্তু (আমলে) তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি।
তিনি বললেন, মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬১৭০, মুসলিম ২৬৪১, আহমাদ ১৯০০২, ১৯০৩২,
১৯১৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭৩
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ أَعرَابِياً
قَالَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم : مَتَى السَّاعَةُ ؟ قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: مَا أعْدَدْتَ لَهَا ؟ قَالَ :
حُبَّ الله وَرَسُولهِ، قَالَ: أنْتَ مَعَ مَنْ أحْبَبْتَ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ،
وهذا لفظ مسلم، وفي رواية لهما : مَا أعْدَدْتُ لَهَا مِنْ كَثيرِ صَوْمٍ، وَلاَ
صَلاَةٍ، وَلاَ صَدَقَةٍ، وَلَكِنِّي أُحِبُّ الله وَرَسُولَهُ
আনাস
ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর
রাসূল! কিয়ামত কবে ঘটবে?’ তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তুমি এর জন্য কি প্রস্তুতি
নিয়েছ?’’ সে বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যাকে
ভালবাস, তারই সাথী হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম শব্দগুলি মুসলিমের) [১]
উভয়ের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমি বেশি নামায-রোযা ও সাদকাহর মাধ্যমে প্রস্তুতি
নিতে পরিনি। কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি। (তিনি বললেন, তুমি যাকে
ভালবাস, তারই সাথী হবে।)’’
[১] সহীহুল বুখারী ৩৬৮৮, ৬১৬৭, ৬১৭১, ৭১৫৩, মুসলিম ২৬৩৯,
তিরমিযী ২৩৮৫, ২৩৮৬, নাসায়ী ৫১২৭, আহমাদ ১১৬০২, ১১৬৬৫, ১২২১৪, ১২২৮১, ১২২৯২, ১২৩০৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭৪
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ
: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ : يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، كَيْفَ تَقُولُ في رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْماً وَلَمْ
يَلْحَقْ بِهِمْ؟ فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: «المَرْءُ مَعَ مَنْ
أحَبَّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসে, কিন্তু (আমলে) তাদের
সমকক্ষ হতে পারেনি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘মানুষ
যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬১৬৯, ৬১৬৮, মুসলিম ২৬৪১, আহমাদ ৩৮১০,
১৯১৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «النَّاسُ مَعَادِنٌ كَمَعَادِنِ الذَّهَبِ
وَالفِضَّةِ، خِيَارُهُمْ في الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ في الإسْلاَمِ إِذَا
فَقُهُوا، وَالأرْوَاحُ جُنُودٌ مُجَنَّدَةٌ، فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ،
ومَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَفَ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সোনা-রূপার খনিরাজির মত মানব জাতিও নানা
গোত্রের খনিরাজি। যারা জাহেলী যুগে উত্তম ছিল, তারা ইসলামী যুগেও উত্তম; যখন তারা
দ্বীনের গভীর জ্ঞান লাভ করে। আর আত্মাসমূহ সমবেত সৈন্যদলের মত। সুতরাং আপোসে যে
আত্মাদল পরিচিত ও অভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে মিলন ও বন্ধুত্ব স্থাপিত
হয়ে থাকে এবং যে আত্মাদল আপোসে অপরিচিত ও ভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে
বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য প্রকট হয়ে ওঠে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৩৫৩, ৩৩৭৪, ৩৩৮৩, ৩৪৯০, ৩৪৯৪, ৪৬৮৯,
৬০৫৮, ৭১৭৯, মুসলিম ২৬৩৮, ২৩৭৮, ২৫২৬, তিরমিযী ২০২৫, আবূ দাউদ ৪৮৩৪, ৪৮৭২, আহমাদ ৭৪৪৪,
৭৪৮৮, ৭৮৩০, ৮০০৮, ৮২৩৩, ৮৫৬৩, ৮৮৩৬, ৮৯২০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭৬
وروى البخاري قوله: الأَرْوَاحُ إِلخ، من
رواية عائشة رضي اللَّه عنها
বুখারী
থেকে বর্ণিতঃ
‘‘আত্মাসমূহ
সমবেত সৈন্যদলের মত। সুতরাং আপোসে যে আত্মাদল পরিচিত ও অভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে
আত্মাদলের মাঝে মিলন ও বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়ে থাকে এবং যে আত্মাদল আপোসে অপরিচিত ও
ভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য প্রকট হয়ে ওঠে।’’ এ
অংশটুকু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭৭
وَعَن أُسَيْرِ بنِ عَمرٍو، وَيُقَالُ :
ابنِ جَابِرٍ، قَالَ : كَانَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه إِذَا أتَى
عَلَيهِ أمْدَادُ أهْلِ اليَمَنِ سَألَهُمْ : أفِيكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ ؟
حَتَّى أتَى عَلَى أُوَيْسٍ رضي الله عنه، فَقَالَ لَهُ : أنْتَ أُوَيْسُ ابْنُ
عَامِر ؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ ؟ قَالَ :
نَعَمْ . قَالَ : فَكَانَ بِكَ بَرَصٌ، فَبَرَأْتَ مِنْهُ إلاَّ مَوْضِعَ دِرْهَمٍ
؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : لَكَ وَالِدةٌ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : سَمِعْتُ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «يَأتِي
عَلَيْكُمْ أُويْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أمْدَادِ أهْلِ اليَمَنِ مِنْ مُرَادٍ،
ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ كَانَ بِهِ بَرَصٌ، فَبَرَأَ مِنْهُ إلاَّ موْضِعَ دِرْهَمٍ،
لَهُ وَالدةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ لَوْ أقْسَمَ عَلَى الله لأَبَرَّهُ، فإنِ
اسْتَطَعْتَ أنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَل»فَاسْتَغْفِرْ لي فَاسْتَغْفَرَ لَهُ،
فَقَالَ لَهُ عُمَرُ : أيْنَ تُريدُ ؟ قَالَ : الكُوفَةَ، قَالَ : ألاَ أكْتُبُ
لَكَ إِلَى عَامِلِهَا؟ قَالَ : أكُونُ في غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ،
فَلَمَّا كَانَ مِنَ العَامِ المُقْبِلِ حَجَّ رَجُلٌ مِنْ أشْرَافِهِمْ، فَوافَقَ
عُمَرَ، فَسَألَهُ عَنْ أُوَيْسٍ، فَقَالَ : تَرَكْتُهُ رَثَّ البَيْتِ قَليلَ
المَتَاعِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم، يَقُولُ: «يَأتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أمْدَادٍ مِنْ
أهْلِ اليَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ
مِنْهُ إلاَّ مَوضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ لَوْ أقْسَمَ
عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ، فَإنِ اسْتَطْعتَ أنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ،
فَافْعَلْ»فَأتَى أُوَيْساً، فَقَالَ : اسْتَغْفِرْ لِي . قَالَ : أنْتَ أحْدَثُ
عَهْداً بسَفَرٍ صَالِحٍ، فَاسْتَغْفِرْ لي . قَالَ : لَقِيتَ عُمَرَ ؟ قَالَ :
نَعَمْ، فاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَفَطِنَ لَهُ النَّاسُ، فَانْطَلَقَ عَلَى وَجْهِهِ .
رواه مسلم
وَفي رِوَايَةٍ لِمُسلِمٍ أَيضاً عَن أُسَيْر بنِ جَابِرٍ رضي الله عنه : أنَّ
أهْلَ الكُوفَةِ وَفَدُوا عَلَى عُمَرَ رضي الله عنه، وَفِيهمْ رَجُلٌ مِمَّنْ
كَانَ يَسْخَرُ بِأُوَيْسٍ، فَقَالَ عُمَرُ : هَلْ هاهُنَا أَحَدٌ مِنَ
القَرَنِيِّينَ ؟ فَجَاءَ ذلِكَ الرَّجُلُ، فَقَالَ عمرُ : إنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَدْ قَالَ: إنَّ رَجُلاً يَأتِيكُمْ مِنَ
اليَمَنِ يُقَالُ لَهُ : أُوَيْسٌ، لاَ يَدَعُ باليَمَنِ غَيْرَ أُمٍّ لَهُ، قَدْ
كَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَدَعَا الله تَعَالَى، فَأذْهَبَهُ إلاَّ مَوضِعَ الدِّينَارِ
أَو الدِّرْهَمِ، فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ
وفي رِوَايَةٍ لَهُ : عَن عُمَرَ رضي الله عنه، قَالَ : إنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: إنَّ خَيْرَ التَّابِعِينَ
رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ : أُوَيْسٌ، وَلَهُ وَالِدَةٌ وَكَانَ بِهِ بَيَاضٌ،
فَمُرُوهُ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ
উসাইর
ইবনু ‘আমর মতান্তরে ইবনু জাবের থেকে বর্ণিতঃ
উমার
(রাঃ)-এর নিকট যখনই ইয়ামান থেকে সহযোগী যোদ্ধারা আসতেন, তখনই তিনি তাঁদেরকে
জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি উয়াইস ইবনু ‘আমের আছে?’ শেষ পর্যন্ত (এক দলের
সঙ্গে) উয়াইস (ক্বারনী) (রাঃ) (মদ্বীনা) এলেন। অতঃপর উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস
করলেন, ‘তুমি কি উয়াইস ইবনু আমের?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’
উমার (রাঃ) বললেন, ‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের)?’ উয়াইস বললেন,
‘হ্যাঁ।’ তিনি (পুনরায়) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার শরীরে শ্বেত রোগ ছিল, তা এক দিরহাম
সম জায়গা ব্যতীত (সবই) দূর হয়ে গেছে?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘তোমার
মা আছে?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের) উয়াইস ইবনু
আমের ইয়ামানের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের কাছে আসবে। তার দেহে ধবল দাগ আছে, যা এক
দিরহাম সম স্থান ছাড়া সবই ভাল হয়ে গেছে।
সে তার মায়ের সাথে সদাচারী হবে। সে যদি আল্লাহর প্রতি কসম খায়, তবে আল্লাহ তা পূরণ
করে দেবেন। সুতরাং (হে উমার!) তুমি যদি নিজের জন্য তাকে দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনার দো‘আ
করাতে পার, তাহলে অবশ্যই করবে।’’ সুতরাং তুমি আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা
প্রার্থনা কর।’
শোনামাত্র উয়াইস উমারের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। অতঃপর উমার তাঁকে বললেন, ‘তুমি
কোথায় যাবে?’ উয়াইস বললেন, ‘কূফা।’ তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমার জন্য সেখানকার
গর্ভনরকে পত্র লিখে দেব না?’ উয়াইস বললেন, ‘আমি সাধারণ গরীব-মিসকীনদের সাথে থাকতে
ভালবাসি।’
অতঃপর যখন আগামী বছর এল তখন কূফার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হজ্জে এল। সে
উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাকে উয়াইস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে
বলল, ‘আমি তাঁকে এই অবস্থায় ছেড়ে এসেছি যে, তিনি একটি ভগ্ন কুটির ও স্বল্প
সামগ্রীর মালিক ছিলেন।’ উমার (রাঃ) বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের) উয়াইস ইবনু
আমের ইয়ামানের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের নিকট আসবে। তার দেহে ধবল রোগ আছে, যা এক
দিরহামসম স্থান ছাড়া সবই ভালো হয়ে গেছে। সে তার মায়ের সাথে সদাচারী (মা-ভক্ত) হবে।
সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেবেন। যদি তুমি তোমার
জন্য তার দ্বারা ক্ষমাপ্রার্থনার দো‘আ করাতে পার, তাহলে অবশ্যই করবে।’’
অতঃপর সে (কূফার লোকটি হজ্জ সম্পাদনের পর) উয়াইস (ক্বারনীর) নিকট এল এবং বলল,
‘আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ উয়াইস বললেন, ‘তুমি এক শুভযাত্রা থেকে নব
আগমন করেছ। অতএব তুমি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘তুমি
উমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছ?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ সুতরাং উয়াইস তার জন্য
ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। (এসব শুনে) লোকেরা (উয়াইসের) মর্যাদা জেনে নিল। সুতরাং তিনি
তার সামনের দিকে (অন্যত্র) চলে গেলেন। (মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় উসাইর ইবনু জাবের (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, কুফার কিছু লোক
উমার (রাঃ)-এর নিকট এল। তাদের মধ্যে একটি লোক ছিল, সে উয়াইসের সাথে উপহাস করত।
উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে ক্বার্ন গোত্রের কেউ আছে কি?’
অতঃপর ঐ ব্যক্তি এল। উমার (রাঃ) বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের নিকট ইয়ামান থেকে উয়াইস নামক একটি লোক আসবে। সে
ইয়ামানে কেবলমাত্র তার মা-কে রেখে আসবে। তার দেহে ধবল রোগ ছিল। সে আল্লাহর কাছে
দো‘আ করলে আল্লাহ তা এক দ্বীনার অথবা এক দিরহাম সম স্থান ব্যতীত সবই দূর করে
দিয়েছেন। সুতরাং তোমাদের কারো যদি তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন তোমাদের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা করে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ তাবেঈন হল এক ব্যক্তি,
যাকে উয়াইস বলা হয়। তার মা আছে। তার ধবল রোগ ছিল। তোমরা তাকে আদেশ করো, সে যেন
তোমাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমাপ্রার্থনা করে।’’ [১]
[১] মুসলিম ২৫৪২, আহমাদ ২৬৮, দারেমী ৪৩৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৭৮
وَعَنْ عَمَرَ بْنِ الْخَطَّابَ رضي الله
عنه قَالَ : اِسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فِيْ العُمْرَةِ،
فَأَذِنَ لِيْ، وَقَالَ: «لَا تَنْسَنَا يَا أَخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ»فَقَالَ
كَلِمَةً مَا يسُرُّنِيْ أَنَّ لِيْ بِهَا الـدُّنْيَا. وفي روايةٍ قَالَ:
«أَشْرِكْنَا يَا أخَيَّ فِيْ دُعَائِكَ».حديثٌ صحيحٌ رواه أَبو داود، والترمذي
وقال : حديثٌ حسنٌ صحيحٌ .
উমার
ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
উমরাহ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি চাইলাম।
তিনি অনুমতি দিয়ে বললেন, “প্রিয় ভাই আমার, তোমার দু’আর সময় আমাদেরকে যেন ভুলো না।”
(উমার বলেন) এমন বাক্য তিনি উচ্চারণ করলেন, যার বিনিময়ে গোটা পৃথিবীটা আমার হয়ে
গেলেও তা আমার কাছে আনন্দদায়ক (বিবেচিত) নয়।
অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
“ভাইয়া! তোমার দু‘আয় তুমি আমাদেরকেও শরীক রেখো।” (আবূ দাউদ ও তিরমিযি) যঈফ। [১]
[১] এটিকে আবূ দাঊদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন আর তিরমিযী
বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ্। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন ‘‘মিশকাত’’ নং (২২৪৮) ও
‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ নং (২৬৪)। হাদীসটি দুর্বল হওয়ার কারণ এই যে, বর্ণনাকারী আসেম ইবনু
ওবাইদুল্লাহ্ দুর্বল। তাকে ইবনু আদী, ইবনু হাজার আসকালানী প্রমুখ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৩৭৯
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ : كَانَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم يَزُورُ قُبَاءَ رَاكِباً وَمَاشِياً،
فَيُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وفي رواية : كَانَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم يَأتي مَسْجِد قُبَاءَ كُلَّ
سَبْتٍ رَاكباً، وَمَاشِياً وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُهُ
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হয়ে ও পায়ে হেঁটে (মসজিদে) কুবার যিয়ারত
করতেন। অতঃপর তাতে দু’ রাকআত নামায পড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১১৯২, ১১৯৪, ৭৩১৬, মুসলিম ১৩৯৯, নাসায়ী
৫৬৪, ৬৯৮, ৫৬৩, আবূ দাউদ ২০৪০, আহমাদ ৪৪৭১, ৪৫৯৮, ৪৬৮০, ৪৭৫৭, ৪৮৩১, মুওয়াত্তা মালিক
৪০২, ৫১৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪৬
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
কারো সাথে ভালবাসা রাখার মাহাত্ম্য এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও যে ব্যক্তি অন্য
কাউকে ভালবাসে তাকে সে ব্যাপারে অবহিত করা ও কী বলে অবহিত করবে তার বিবরণ
৩৮০
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ
صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «ثَلاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاوَةَ
الإيمَانِ : أنْ يَكُونَ اللهُ وَرَسُولُهُ أحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سَوَاهُمَا،
وَأنْ يُحِبّ المَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إلاَّ للهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أنْ يَعُودَ في
الكُفْرِ بَعْدَ أنْ أنْقَذَهُ الله مِنْهُ، كَمَا يَكْرَهُ أنْ يُقْذَفَ في
النَّارِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকে, সে ঈমানের
মিষ্টতা লাভ করে থাকে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয়
হবে; কাউকে ভালোবাসলে কেবল আল্লাহ’র জন্যই ভালবাসবে। আর কুফরী থেকে তাকে আল্লাহর
বাঁচানোর পর পুনরায় তাতে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করবে, যেমন সে নিজেকে আগুনে
নিক্ষিপ্ত করাকে অপছন্দ করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৬, ২১, ৬০৪১, ৬৯৪১, মুসলিম ৪৩, তিরমিযী
২৬২৪, নাসায়ী ৪৯৮৭, ৪৯৮৮, ৪৯৮৯, ইবনু মাজাহ ৪০৩৩, আহমাদ ১১৫৯১, ১১৭১২, ১২৩৫৪, ১২৩৭২,
১২৩৯০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৮১
و عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى
الله عليه وسلم قال: " سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله: إما
عادل، وشاب نشأ في عبادة الله عز وجل، ورجل قلبه معلق بالمساجد. ورجلان تحابا في
الله اجتمعا عليه ، وتفرقا عليه، ورجل دعته امرأة ذات حسن وجمال، فقال: إني أخاف
الله، ورجل تصدق بصدقة، فأخفاها حتى لا تعلم شماله ما تنفق يمينه، ورجل ذكر الله
خاليًا ففاضت عيناه" ((متفق عليه)) .
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
আমি
বললাম, ‘হে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আমাকে (কোন স্থানের
সরকারী) কর্মচারী কেন নিযুক্ত করছেন না?’ তিনি নিজ হাত আমার কাঁধের উপর মেরে
বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! তুমি দুর্বল এবং (এ পদ) আমানত ও এটা কিয়ামতের দিন অপমান ও
অনুতাপের কারণ হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তা হকের সাথে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) গ্রহণ করল
এবং নিজ দায়িত্ব (যথাযথভাবে) পালন করল (তার জন্য এ পদ লজ্জা ও অনুতাপের কারণ
নয়)।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ১৮২৫, ১৮২৬, আহমাদ ২১০০২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৮২
وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنّ الله تَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ
القِيَامَةِ : أيْنَ المُتَحَابُّونَ بِجَلاَلِي ؟ اليَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي
ظِلِّي يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلِّي». رواه مسلم
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা
কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘আমার মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পরস্পরকে যারা ভালবেসেছিল
তারা কোথায়? আজকের দিন আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় আশ্রয় দেব, যেদিন আমার (আরশের) ছায়া
ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৫৬৬, আহমাদ ৭১৯০, ৮২৫০, ৮৬১৪, ১০৪০১, ১০৫২৭,
মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৬, দারেমী ২৭৫৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৮৩
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لاَ تَدْخُلُوا
الجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا، وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا، أوَلاَ
أدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ ؟ أفْشُوْا السَّلَامَ
بَيْنَكُمْ». رواه مسلم
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই সত্তার কসম যার
হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না; যতক্ষণ না তোমরা মু’মিন
হবে। এবং তোমরা মু’মিন হতে পারবে না; যে পর্যন্ত না তোমরা পরস্পরে ভালবাসা রাখবে।
আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ বলে দেব না, যখন তোমরা তা করবে, তখন তোমরা একে অপরকে
ভালবাসতে লাগবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৫৪, তিরমিযী ২৬৮৮, আবূ দাউদ ৫১৯৩, ইবনু মাজাহ
৬৮, ৩৬৯২, আহমাদ ৮৮৪১, ৯৪১৬, ৯৮২১, ২৭৩১৪, ১০২৭২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৮৪
وَعَنه، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه
وسلم: «أنَّ رَجُلاً زَارَ أَخَاً لَهُ في قَريَة أُخْرَى، فَأرْصَدَ الله
تَعَالَى عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكاً»، وَذَكَرَ الحدِيثَ إلى قَولِهِ: « إِنَّ
اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أحْبَبْتَهُ فِيهِ». رواه مسلم
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি অন্য কোন গ্রামে তার ভাইয়ের
সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বের হল। আল্লাহ তা‘আলা তার রাস্তায় এক ফেরেশতাকে বসিয়ে
দিলেন, তিনি তার অপেক্ষা করতে থাকলেন।’’ অতঃপর বাকী হাদীস উল্লেখ করে বললেন,
‘‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ভালবাসেন যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাস।’’ (মুসলিম)
(৩৬৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য) [১]
[১] মুসলিম ২৫৬৭, ৯০৩৬, ৯৬৪২, ৯৮৮৭, ১০২২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৮৫
وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم أنَّهُ قَالَ في الأنصَارِ: «لاَ
يُحِبُّهُمْ إلاَّ مُؤمِنٌ، وَلاَ يُبْغِضُهُمْ إلاَّ مُنَافِقٌ، مَنْ أحَبَّهُمْ
أَحَبَّهُ الله، وَمَنْ أبْغَضَهُمْ أبْغَضَهُ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
বারা’
ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘তাদেরকে কেবলমাত্র
মু’মিনই ভালোবাসে এবং তাদের প্রতি কেবলমাত্র মুনাফিকই বিদ্বেষ রাখে। যে ব্যক্তি
তাদেরকে ভালবাসবে, আল্লাহও তাকে ভালবাসবেন। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বিদ্বেষ
রাখবে, আল্লাহও তার প্রতি বিদ্বেষ রাখবেন।’’(বুখারী-মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৭৮৩, মুসলিম ৭৫, তিরমিযী ৩৯০০, ইবনু
মাজাহ ১৬৩, আহমাদ ১৮০৩০, ১৮১০৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৮৬
وَعَن مُعَاذٍ رضي الله عنه، قَالَ :
سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: قَالَ
اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ - : المُتَحَابُّونَ في جَلالِي، لَهُمْ مَنَابِرُ مِنْ
نُورٍ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّونَ وَالشُّهَدَاءُ. رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن
صحيح
মু‘আয
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘আমার মর্যাদার ওয়াস্তে যারা আপোসে ভালবাসা স্থাপন করবে, তাদের (বসার) জন্য হবে
নূরের মিম্বর; যা দেখে নবী ও শহীদগণ ঈর্ষা করবেন।’’(তিরমিযী, হাসান সূত্রে) [১]
[১] তিরমিযী ২৩৯০, আহমাদ ২১৫২৫, ২১৫৫৯, ২১৫৭৫, ২২২৭৬
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৩৮৭
وَعَن أَبي إِدرِيسَ الخَولاَني رَحِمَهُ
الله، قَالَ :دخَلْتُ مَسْجِدَ دِمَشْقَ، فَإذَا فَتَىً بَرَّاقُ الثَّنَايَا
وَإِذَا النَّاسُ مَعَهُ، فَإِذَا اخْتَلَفُوا في شَيْءٍ، أَسْنَدُوهُ إِلَيْه،
وَصَدَرُوا عَنْ رَأيِهِ، فَسَأَلْتُ عَنْهُ، فَقِيلَ : هَذَا مُعَاذُ بْنُ جَبَل
رضي الله عنه. فَلَمَّا كَانَ مِنَ الغَدِ، هَجَّرْتُ، فَوَجَدْتُهُ قَدْ
سَبَقَنِي بالتَّهْجِيرِ، ووَجَدْتُهُ يُصَلِّي، فانْتَظَرتُهُ حَتَّى قَضَى
صَلاتَهُ، ثُمَّ جِئْتُهُ مِنْ قِبَلِ وَجْهِهِ، فَسَلَّمْتُ عَلَيهِ، ثُمَّ
قُلْتُ : وَاللهِ إنّي لأَحِبُّكَ لِلّهِ، فَقَالَ : آلله ؟ فَقُلْتُ : اللهِ،
فَقَالَ : آللهِ ؟ فَقُلْتُ : اللهِ، فَأخَذَنِي بِحَبْوَةِ رِدَائِي، فجبذني
إِلَيْهِ، فَقَالَ : أبْشِرْ ! فإنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: قَالَ الله تَعَالَى: وَجَبَتْ مَحَبَّتي
لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ، وَالمُتَجَالِسينَ فِيَّ، وَالمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ،
وَالمُتَبَاذِلِينَ فِيَّ .حديث صحيح رواه مالك في الموطأ بإسناده الصحيح
আবূ
ইদ্রীস খাওলানী রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ
আমি
দিমাশকের মসজিদে প্রবেশ করে এক যুবককে দেখতে পেলাম, তাঁর সামনের দাঁতগুলি খুবই
চকচকে এবং তাঁর সঙ্গে কিছু লোকও (বসে) রয়েছে। যখন তারা কোনো বিষয়ে মতভেদ করছে, তখন
(সিদ্ধান্তের জন্য) তাঁর দিকে রুজু করছে এবং তাঁর মত গ্রহণ করছে। সুতরাং আমি তাঁর
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম (যে, ইনি কে)? (আমাকে) বলা হল যে, ‘ইনি মু‘আয ইবনু
জাবাল।’ অতঃপর আগামী কাল আমি আগেভাগেই মসজিদে গেলাম। কিন্তু দেখলাম সেই (যুবকটি)
আমার আগেই পৌঁছে গেছেন এবং তাঁকে নামাযরত অবস্থায় পেলাম। সুতরাং তাঁর নামায শেষ
হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করলাম।
অতঃপর আমি তাঁর সামনে এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর বললাম, ‘আল্লাহর কসম! আমি
আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর
কসম।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম।’ অতঃপর তিনি
আমার চাদরের আঁচল ধরে আমাকে তাঁর দিকে টানলেন, তারপর বললেন, ‘সুসংবাদ নাও।’
কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ
তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যারা পরস্পরের মধ্যে মহব্বত রাখে, একে
অপরের সঙ্গে বসে, একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ এবং একে অপরের জন্য খরচ করে, তাদের জন্য
আমার মহব্বত ও ভালবাসা ওয়াজেব হয়ে যায়।’’(মুওয়াত্তা বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]
[১] আহমাদ ২১৫২৫, ২১৬২৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৮৮
وَعَن أَبي كَرِيمَةَ المِقدَادِ بنِ مَعدِ
يكَرِب رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إِذَا أَحَبَّ
الرَّجُلُ أخَاهُ، فَليُخْبِرْهُ أَنَّهُ يُحِبُّهُ - رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَالتِّرمِذِي، وَقالَ: حديث صحيح
আবূ
কারীমা মিকদাদ ইবনু মা‘দীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কোন মানুষ তার ভাইকে ভালবাসে, তখন
সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে ভালবাসে।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে) [১]
[১] আবূ দাউদ ৫১২৪, আহমাদ ১৬৭১৯
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৩৮৯
وَعَن مُعَاذٍ رضي الله عنه : أَنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أَخَذَ بِيَدِهِ، وَقَالَ:
«يَا مُعَاذُ، وَاللهِ، إنِّي لأُحِبُّكَ، ثُمَّ أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لاَ
تَدَعَنَّ في دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ تَقُولُ : اَللهم أعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ،
وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ».حديث صحيح، رواه أَبُو داود والنسائي بإسناد
صحيح
মু‘আয
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বললেন, ‘‘হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ!
নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, হে মু‘আয! তুমি
প্রত্যেক নামাযের পশ্চাতে এ শব্দগুলো বলা ছাড়বে না, ‘আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী আলা
যিকরিকা ওয়াশুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার যিকর করার,
তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এবং উত্তমরূপে তোমার ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে
সাহায্য কর।) (আবূ দাউদ, নাসায়ী বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]
[১] নাসায়ী ১৩০৩, আবূ দাউদ ১৫২২, আহমাদ ২১৬২১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৯০
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أنَّ رَجُلاً
كَانَ عِنْدَ النَّبيِّ، صلى الله عليه وسلم، فَمَرَّ رَجُلٌ بِهِ، فَقَالَ : يَا
رَسُولَ الله، أنِّي لأُحِبُّ هَذَا، فَقَالَ لَهُ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم:
أأعْلَمْتَهُ ؟ قَالَ : لاَ . قَالَ: «أعْلِمْهُ» فَلَحِقَهُ، فَقَالَ : إنِّي
أُحِبُّكَ في الله، فَقَالَ : أَحَبَّكَ الَّذِي أحْبَبْتَنِي لَهُ . رواه أَبُو
داود بإسناد صحيح
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট (বসে) ছিল। অতঃপর এক
ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। (যে বসেছিল) সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল!
নিঃসন্দেহে আমি একে ভালবাসি।’ (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
বললেন, ‘‘তুমি কি (এ কথা) তাকে জানিয়েছ?’’ সে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে
জানিয়ে দাও।’’ সুতরাং সে (দ্রুত) তার পিছনে গিয়ে (তাকে) বলল, ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে
তোমাকে ভালবাসি।’ সে বলল, ‘যাঁর ওয়াস্তে তুমি আমাকে ভালবাস, তিনি তোমাকে
ভালবাসুন।’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]
[১] আবূ দাউদ ৫১২৫, আহমাদ ১২০২২, ১২১০৫, ১৩১২৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪৭
বান্দাকে আল্লাহর ভালবাসার
নিদর্শনাবলী, এমন নিদর্শন অবলম্বন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং তা অর্জন করার জন্য
প্রয়াসী হওয়ার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]
অর্থাৎ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ
তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ অত্যন্ত
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ يُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوۡمَةَ لَآئِمٖۚ ذَٰلِكَ فَضۡلُ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٥٤ ﴾ [المائدة: ٥٤]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ তার দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক
সম্প্রদায় আনয়ন করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে
মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন
নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করবে না, এ আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। বস্তুত
আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা মায়েদাহ ৫৪ আয়াত)
৩৯১
عَن أبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الله تَعَالَى
قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيّاً فَقَدْ آذَنْتُهُ بالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ
عَبْدِي بشَيءٍ أَحَبَّ إلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي
يَتَقرَّبُ إلَيَّ بالنَّوافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإذَا أَحبَبتُهُ كُنْتُ
سَمعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، ويَدَهُ الَّتي
يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشي بِهَا، وَإنْ سَأَلَني أعْطَيْتُهُ،
وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ ». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি
আমার কোনো বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার
বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম
জিনিস হল তা, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরযের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা
আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ
করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি।
অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার
ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার
ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে
দেই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায়, তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেই।’’(বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫০২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৯২
وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: إِذَا أَحَبَّ اللهُ تَعَالَى العَبْدَ، نَادَى جِبْريلَ: إنَّ الله
تَعَالَى يُحِبُّ فُلاناً، فَأَحْبِبْهُ، فَيُحِبُّهُ جِبريلُ، فَيُنَادِي في
أَهْلِ السَّمَاءِ: إنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلاناً، فَأحِبُّوهُ، فَيُحِبُّهُ أهْلُ
السَّمَاءِ، ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ القَبُولُ في الأرْضِ . متفق عليه .
وَفي رِوَايَةٍ لمسلم: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم: إنَّ الله تَعَالى إِذَا أَحَبَّ عَبداً دَعَا جِبرِيلَ، فَقَالَ: إنّي
أُحِبُّ فُلاَناً فأحْبِبهُ، فَيُحِبُّهُ جِبرِيلُ، ثمَّ يُنَادِي في السَّمَاءِ،
فَيَقُولُ: إنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلاَناً فَأَحِبُّوهُ، فَيُحِبُّهُ أَهلُ
السَّمَاءِ، ثمَّ يُوضَعُ لهُ القَبُولُ في الأَرضِ، وَإِذَا أبْغَضَ عَبْداً
دَعَا جِبْريلَ، فَيَقُولُ: إنّي أُبْغِضُ فُلاناً فَأبْغِضْهُ . فَيُبغِضُهُ
جِبريلُ ثُمَّ يُنَادِي في أَهْلِ السَّماءِ: إنَّ اللهَ يُبْغِضُ فُلاناً
فَأبْغِضُوهُ، فَيُبْغِضُهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ تُوضَعُ لَهُ البَغْضَاءُ في
الأَرْضِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন
তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুককে ভালবাসেন, অতএব তুমিও তাকে
ভালবাস।’ সুতরাং জিবরীলও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে
ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসো।’
তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করার
ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩২০৯, ৬০৪০, ৭৪৮৫, মুসলিম ২৬৩৭, তিরমিযী
৩১৬১, আহমাদ ৭৫৭০, ৮২৯৫, ৯০৮৮, ১০২৩৭, ১০২৯৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৯৩
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بَعَثَ رَجُلاً عَلٰى
سَريَّةٍ فَكَانَ يَقْرَأُ لأَصْحَابِهِ في صَلاَتِهِمْ فَيَخْتِمُ بـ { قُل هُوَ
الله أَحَدٌ }، فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذلِكَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَ: سَلُوهُ لأَيِّ شَيْءٍ يَصْنَعُ ذٰلِكَ» ؟ فَسَألُوهُ فَقَالَ:
لأَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمٰنِ فَأَنَا أُحِبُّ أنْ أقْرَأ بِهَا . فَقَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: أخْبِرُوهُ أنَّ اللهَ تَعَالَى
يُحِبُّهُ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে একটি মুজাহিদ দলের আমীর করে জিহাদে
পাঠালেন। তিনি যখন নামাযে ইমামতি করতেন, তখনই (প্রত্যেক রাকআতে সূরা পড়ার পর)
‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস) দিয়ে (ক্বিরাআত) শেষ করতেন। মুজাহিদগণ সেই
অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে
বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘তাঁকে জিজ্ঞাসা কর, কেন সে এ কাজটি করেছে?’’
সুতরাং তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই সূরাটিতে পরম করুণাময়
(আল্লাহ)র গুণাবলী রয়েছে। এই জন্য সূরাটি তেলাওয়াত করতে আমি ভালবাসি।’ তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ
তা‘আলাও তাকে ভালবাসেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭৩৭৫, মুসলিম ৮১৩, নাসায়ী ৯৯৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪৮
নেক লোক, দুর্বল ও গরীব
মানুষদেরকে কষ্ট দেওয়া থেকে ভীতিপ্রদর্শন
ল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨ ﴾ [الاحزاب: ٥٨]
অর্থাৎ “যারা বিনা অপরাধে বিশবাসী পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা
অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।” সূরা আহযাব ৫৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَأَمَّا ٱلۡيَتِيمَ فَلَا تَقۡهَرۡ ٩ وَأَمَّا ٱلسَّآئِلَ فَلَا تَنۡهَرۡ ١٠ ﴾ [الضحا: ٩، ١٠]
অর্থাৎ “অতএব তুমি পিতৃহীনের প্রতি কঠোর হয়ো না। এবং ভিক্ষুককে ধমক দিও না।” (সূরা
যুহা ৯-১০ আয়াত)
৩৯৪
وَعَن جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله
عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: « مَنْ صَلَّى صَلاةَ
الصُّبْحِ فَهُوَ في ذِمَّةِ الله فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ الله مِنْ ذِمَّته
بشَيءٍ، فَإنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ منْ ذمَّته بشَيءٍ يُدْركْهُ، ثُمَّ يَكُبُّهُ
عَلَى وَجْهِهِ في نَارِ جَهَنَّمَ ». رواه مسلم
জুন্দুব
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায (জামাআতে) পড়ল,
সে আল্লাহর জামানতে চলে এল। সুতরাং আল্লাহ যেন অবশ্যই তোমাদের কাছে তার জামানতের
কিছু দাবী না করেন। কারণ, যার কাছেই তিনি তাঁর জামানতের কিছু দাবী করবেন, তাকে
পাকড়াও করবেন। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’’ (মুসলিম)[১]
[১] মুসলিম ৬৫৭, তিরমিযী ২২২, আহমাদ ১৮৩২৬, ১৮৩৩৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৪৯
লোকের বাহ্যিক অবস্থা ও
কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিধান প্রয়োগ করা হবে এবং তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহকে
সঁপে দেওয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ ﴾ [التوبة: ٥]
অর্থাৎ “কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে
তাদের পথ ছেড়ে দাও।” (সূরা তওবাহ ৫ আয়াত)
৩৯৫
وَعنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا:
أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: »أُمِرْتُ أنْ
أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَأنَّ
مُحَمَّداً رَسُولُ الله، وَيُقيمُوا الصَّلاةَ، وَيُؤتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا
فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءهُمْ وَأمْوَالَهُمْ إلاَّ بحَقِّ
الإسْلاَمِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى الله تَعَالَى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমাকে লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ
দেওয়া হয়েছে; যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন উপাস্য নেই
এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে।
যখন তারা এ কাজগুলো সম্পাদন করবে, তখন তারা আমার নিকট থেকে তাদের রক্ত (জান) এবং
মাল বাঁচিয়ে নেবে; কিন্তু ইসলামের হক ব্যতীত (অর্থাৎ সে যদি কাউকে হত্যা করে, তবে
তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করা হবে।) আর তাদের হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত
হবে।’’[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৫, মুসলিম ২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৯৬
وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ طَارِقِ بنِ
أَشْيَمَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم، يَقُولُ: «مَنْ قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَكَفَرَ بما
يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى الله
تَعَالَى ». رواه مسلم
আবূ
আব্দুল্লাহ ত্বারেক ইবনু আশয়্যাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি ‘লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্যকে অস্বীকার করল, তার মাল
ও রক্ত হারাম হয়ে গেল ও তার (অন্তরের) হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে।’’(মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৩, আহমাদ ১৫৪৪৮, ২৬২৭০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৯৭
وَعَن أَبي مَعبَدٍ المِقدَادِ بنِ
الأسْوَدِ رضي الله عنه، قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم:
أرَأيْتَ إنْ لَقِيتُ رَجُلاً مِنَ الكُفَّارِ، فَاقْتتَلْنَا، فَضَرَبَ إحْدَى
يَدَيَّ بِالسَّيْفِ، فَقَطَعَها، ثُمَّ لاَذَ مِنِّي بِشَجَرَةٍ، فَقَالَ:
أسْلَمْتُ لِلّهِ، أَأَقْتُلُهُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدَ أنْ
قَالَهَا ؟ فَقَالَ: «لاَ تَقْتُلهُ » فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَطَعَ إحْدَى يَدَيَّ، ثُمَّ قَالَ ذَلِكَ بَعْدَ مَا قَطَعَهَا ؟!
فَقَالَ: لا تَقتُلْهُ، فإنْ قَتَلْتَهُ فَإنَّهُ بِمَنْزِلَتِكَ قَبْلَ أنْ
تَقْتُلَهُ، وَإنَّكَ بِمَنْزِلَتِهِ قَبْلَ أنْ يَقُولَ كَلِمَتَهُ الَّتِي قَالَ
- مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
মা‘বাদ মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ‘‘আপনি বলুন, যদি আমি কোন
কাফেরের সম্মুখীন হই এবং পরস্পরের মধ্যে লড়ি, অতঃপর সে তরবারি দিয়ে আমার হাত কেটে
দেয়, তারপর আমার (পাল্টা) আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সে একটি গাছের আশ্রয় নিয়ে বলে,
‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ইসলাম গ্রহণ করলাম।’ তার এ কথা বলার পর হে আল্লাহর রাসূল!
আমি কি তাকে হত্যা করব?’’
তিনি বললেন, ‘‘তাকে হত্যা করো না।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে আমার একটি
হাত কেটে ফেলবে। কাটার পর সে ঐ কথা বলবে তাও?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাকে হত্যা করো
না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তাহলে (মনে রাখ) সে তোমার সেই মর্যাদা পেয়ে যাবে,
যাতে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে ছিলে। আর তুমি তার ঐ কথা বলার পূর্বের অবস্থায়
উপনীত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪০১৯, ৬৮৬৫, মুসলিম ৯৫, আবূ দাউদ ২৬৪৪,
আহমাদ ২৩২৯৯, ২৩৩০৫, ২৩৩১৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৯৮
وَعَن أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ الله
عَنهُمَا، قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
إِلَى الْحُرَقَةِ مِنْ جُهَيْنَةَ فَصَبَّحْنَا القَوْمَ عَلَى مِيَاهِهِمْ،
وَلَحِقْتُ أنَا وَرَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ رَجُلاً مِنْهُمْ، فَلَمَّا
غَشَيْنَاهُ، قَالَ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، فَكفَّ عَنْهُ الأَنْصَارِي،
وطَعَنْتُهُ برُمْحِي حَتَّى قَتَلْتُهُ، فَلَمَّا قَدِمْنَا المَدِينَةَ، بَلَغَ
ذلِكَ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لِي: «يَا أُسَامَة، أقَتَلْتَهُ
بَعْدَ مَا قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ ؟! » قُلْتُ: يَا رَسُولَ الله، إِنَّمَا
كَانَ مُتَعَوِّذاً، فَقَالَ: «أقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ
اللهُ ؟! » فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا عَلَيَّ حَتَّى تَمنْيَّتُ أنِّي لَمْ أكُنْ
أسْلَمْتُ قَبْلَ ذلِكَ اليَوْمِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উসামা
ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহাইনা গোত্রের এক
শাখা হুরাকার দিকে পাঠালেন। অতঃপর আমরা সকাল সকাল পানির ঝর্নার নিকট তাদের উপর
আক্রমণ করলাম। (যুদ্ধ চলাকালীন) আমি ও একজন আনসারী তাদের এক ব্যক্তির পিছনে ধাওয়া
করলাম। যখন আমরা তাকে ঘিরে ফেললাম, তখন সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল। আনসারী থেমে
গেলেন, কিন্তু আমি তাকে আমার বল্লম দিয়ে গেঁথে দিলাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে
হত্যা করে ফেললাম। অতঃপর যখন আমরা মদ্বীনা পৌঁছলাম, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌঁছল।
তিনি বললেন, ‘‘হে উসামা! তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও কি তুমি তাকে হত্যা
করেছ?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য এরূপ করেছে।’
পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরও তুমি তাকে খুন করেছ?’’ তিনি
আমার সামনে এ কথা বারবার বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আজকের
পূর্বে আমি ইসলাম গ্রহণ না করতাম (অর্থাৎ এখন আমি মুসলিম হতাম)। (বুখারী ও মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪২৬৯, ৬৮৭২, মুসলিম ৯৬, আবূ দাউদ ২৬৪৩,
আহমাদ ২১২৩৮, ২১২৯৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৩৯৯
وَعَن جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله
عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بَعَثَ بَعْثاً
مِنَ المُسْلِمينَ إِلَى قَومٍ مِنَ المُشرِكينَ، وَأنَّهُمْ التَقَوْا، فَكَانَ
رَجُلٌ مِنَ المُشْركينَ إِذَا شَاءَ أنْ يَقْصِدَ إِلَى رَجُل مِنَ المُسْلِمينَ
قَصَدَ لَهُ فَقَتَلَهُ، وَأنَّ رَجُلاً مِنَ المُسْلِمِينَ قَصَدَ غَفْلَتَهُ .
وَكُنَّا نَتَحَدَّثُ أنَّهُ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، فَلَمَّا رَفَعَ عَلَيهِ
السَّيفَ، قَالَ: لا إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، فَقَتَلهُ، فَجَاءَ البَشيرُ إِلَى
رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَسَألَهُ وَأخبَرَهُ، حَتَّى أخْبَرَهُ خَبَرَ
الرَّجُلِ كَيْفَ صَنَعَ، فَدَعَاهُ فَسَألَهُ، فَقَالَ: «لِمَ قَتَلْتَهُ ؟ »
فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أوْجَعَ في المُسلِمِينَ،
وَقَتَلَ فُلاَناً وَفُلاَناً، وَسَمَّى لَهُ نَفَراً، وَإنِّي حَمَلْتُ عَلَيهِ،
فَلَمَّا رَأى السَّيفَ، قَالَ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ . قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: أقَتَلْتَهُ ؟ قَالَ: نَعَمْ . قَالَ:
«فَكَيفَ تَصْنَعُ بلاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، إِذَا جَاءتْ يَوْمَ القِيَامَةِ ؟ »
قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، اسْتَغْفِرْ لِي . قَالَ: وكَيفَ
تَصْنَعُ بِلاَ إِلٰهَ إلاَّ الله إِذَا جَاءَتْ يَوْمَ القِيَامَةِ ؟ فَجَعَلَ
لاَ يَزِيدُ عَلَى أنْ يَقُولَ: «كَيفَ تَصْنَعُ بِلاَ إِلٰهَ إلاَّ الله إِذَا
جَاءتْ يَوْمَ القِيَامَةِ . رواه مسلم
জুনদুব
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম মুজাহিদ্বীনের একটি দল এক মুশরিক
সম্প্রদায়ের দিকে পাঠালেন। তাদের পরস্পরের মধ্যে মুকাবেলা হল। মুশরিকদের মধ্যে
একটি লোক ছিল সে যখন কোনো মুসলিমকে হত্যা করার ইচ্ছা করত, তখন সুযোগ পেয়ে তাঁকে
হত্যা করে দিত। (এ অবস্থা দেখে) একজন মুসলিম (তাকে খুন করার জন্য) তার অমনোযোগিতার
সুযোগ গ্রহণ করলেন। আমরা পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করছিলাম যে, উনি হলেন উসামা ইবনু
যায়দ। (অতঃপর যখন সুযোগ পেয়ে) উসামা তরবারি উত্তোলন করলেন, তখন সে বলল, ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’। কিন্তু তিনি তাকে হত্যা করে দিলেন। অতঃপর (মুসলিমদের যুদ্ধে জয়ী
হওয়ার সংবাদ নিয়ে) সুসংবাদবাহী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট এল। তিনি তাকে (যুদ্ধের ব্যাপারে) জিজ্ঞাসা করলেন। সে তাঁকে (সমস্ত) সংবাদ
দিল।
এমনকি শেষ পর্যন্ত সে ঐ ব্যক্তিরও খবর অবহিত করল। তিনি উসামাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে
বললেন, ‘‘তুমি কেন তাকে হত্যা করেছ?’’ উসামা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে
মুসলিমদেরকে খুবই কষ্ট দিয়েছে এবং অমুক অমুককে হত্যাও করেছে।’ উসামা কিছু লোকের নামও
নিলেন। ‘(এ দেখে) আমি তার উপর হামলা করলাম। অতঃপর সে যখন তরবারি দেখল, তখন বলল,
‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘তুমি তাকে হত্যা করে দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘কিয়ামতের
দিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করবে?’’ উসামা বললেন, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ তিনি বললেন,
‘‘কিয়ামতের দিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করবে?’’ (তিনি
বারংবার একথা বলতে থাকলেন এবং) এর চেয়ে বেশী কিছু বললেন না, ‘‘কিয়ামতের দিন যখন
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করবে?’’(মুসলিম)[১]
[১] মুসলিম ৯৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০০
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عُتبَةَ بنِ
مَسعُودٍ، قَالَ: سَمِعْتُ عُمَرَ بنَ الخَطَّابِ رضي الله عنه، يَقُولُ: إنَّ
نَاساً كَانُوا يُؤْخَذُونَ بِالوَحْيِ في عَهْدِ رَسُولِ الله صلى الله عليه
وسلم، وَإنَّ الوَحْيَ قَدِ انْقَطَعَ، وإِنَّمَا نَأخُذُكُمُ الآنَ بما ظَهَرَ
لَنَا مِنْ أعمَالِكُمْ، فَمَنْ أظْهَرَ لَنَا خَيْراً أمَّنَّاهُ وَقَرَّبْنَاهُ،
وَلَيْسَ لَنَا مِنْ سَرِيرَتِهِ شَيْء، اللهُ يُحَاسِبُهُ فِي سَرِيرَتِهِ،
وَمَنْ أظْهَرَ لَنَا سُوءاً لَمْ نَأمَنْهُ وَلَمْ نُصَدِّقْهُ وَإنْ قَالَ: إنَّ
سَرِيرَتَهُ حَسَنَةٌ . رواه البخاري
আব্দুল্লাহ
ইবনু উত্বাহ্ ইবনু মাসঊদ থেকে বর্ণিতঃ
আমি
উমার ইবনু খাত্তাবকে বলতে শুনেছি, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
যুগে কিছু লোককে অহী দ্বারা পাকড়াও করা হত। কিন্তু অহী এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
(সুতরাং) এখন আমরা তোমাদের বাহ্যিক কার্যকলাপ দেখে তোমাদেরকে পাকড়াও করব। অতঃপর যে
ব্যক্তি আমাদের জন্য ভাল কাজ প্রকাশ করবে, তাকে আমরা নিরাপত্তা দেব এবং তাকে আমরা
নিকটে করব। আর তাদের অন্তরের অবস্থার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহই তার
অন্তরের হিসাব নেবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের জন্য মন্দ কাজ প্রকাশ করবে, তাকে আমরা
নিরাপত্তা দেব না এবং তাকে সত্যবাদীও মনে করব না; যদিও সে বলে আমার ভিতর (নিয়ত)
ভাল।’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৬৪১, নাসায়ী ৪৭৭৭, আবূ দাউদ ৪৫৩৭,
আহমাদ ২৮৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫০
আল্লাহ ও তাঁর আযাবকে ভয় করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِيَّٰيَ فَٱرۡهَبُونِ ﴾ [البقرة: ٤٠]
অর্থাৎ “তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।” (সূরা বাক্বারাহ ৪০ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ بَطۡشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ ١٢ ﴾ [البروج: ١٢]
অর্থাৎ “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও বড়ই কঠিন।” (সূরা বুরুজ ১২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ أَخۡذُ رَبِّكَ إِذَآ أَخَذَ ٱلۡقُرَىٰ وَهِيَ ظَٰلِمَةٌۚ إِنَّ أَخۡذَهُۥٓ أَلِيمٞ شَدِيدٌ ١٠٢ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّمَنۡ خَافَ عَذَابَ ٱلۡأٓخِرَةِۚ ذَٰلِكَ يَوۡمٞ مَّجۡمُوعٞ لَّهُ ٱلنَّاسُ وَذَٰلِكَ يَوۡمٞ مَّشۡهُودٞ ١٠٣ وَمَا نُؤَخِّرُهُۥٓ إِلَّا لِأَجَلٖ مَّعۡدُودٖ ١٠٤ يَوۡمَ يَأۡتِ لَا تَكَلَّمُ نَفۡسٌ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ فَمِنۡهُمۡ شَقِيّٞ وَسَعِيدٞ ١٠٥ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ شَقُواْ فَفِي ٱلنَّارِ لَهُمۡ فِيهَا زَفِيرٞ وَشَهِيقٌ ١٠٦ ﴾ [هود: ١٠٢، ١٠٦]
অর্থাৎ “আর এরূপই তাঁর পাকড়াও; যখন তিনি কোন অত্যাচারী জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও
করেন। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যাতনাদায়ক কঠিন। নিশ্চয় এ সব ঘটনায় সে
ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে যে ব্যক্তি আখেরাতের শাস্তিকে ভয় করে। ওটা এমন একটা
দিন হবে যেদিন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হবে এবং ওটা হবে সকলের উপস্থিতির দিন। আর
আমি ওটা নির্দিষ্ট একটি কালের জন্যই বিলম্বিত করছি। যখন সেদিন আসবে তখন কোন
ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কথাও বলতে পারবে না। সুতরাং তাদের মধ্যে কেউ হবে
দুর্ভাগ্যবান এবং কেউ হবে সৌভাগ্যবান। অতএব যারা দুর্ভাগ্যবান তারা তো হবে
জাহান্নামে; তাতে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ হতে থাকবে।” (সূরা হূদ ১০২-১০৬ আয়াত)
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেন,
﴿وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفۡسَهُۥۗ﴾ [ال عمران: ٢٨]
অর্থাৎ “আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন।” (আলে ইমরান ২৮ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَوۡمَ يَفِرُّ ٱلۡمَرۡءُ مِنۡ أَخِيهِ ٣٤ وَأُمِّهِۦ وَأَبِيهِ ٣٥ وَصَٰحِبَتِهِۦ وَبَنِيهِ ٣٦ لِكُلِّ ٱمۡرِيٕٖ مِّنۡهُمۡ يَوۡمَئِذٖ شَأۡنٞ يُغۡنِيهِ ٣٧ ﴾ [عبس: ٣٤، ٣٧]
অর্থাৎ “সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভ্রাতা হতে এবং তার মাতা ও তার পিতা হতে, তার
পত্নী ও তার সন্তান হতে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা নিজেকে
সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।” (সূরা আবাসা ৩৪-৩৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمۡۚ إِنَّ زَلۡزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَيۡءٌ عَظِيمٞ ١ يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ كُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٞ ٢ ﴾ [الحج: ١، ٢]
অর্থাৎ “হে মানবমণ্ডলী! তোমরা ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে; (আর জেনে রেখো যে,)
নিঃসন্দেহে কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে
সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী নিজ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক
গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। আর মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত
নয়; বস্তুত আল্লাহর শাস্তি বড় কঠিন।” (সূরা হজ্জ্ব ১-২ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَلِمَن خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ ﴾ [الرحمن: ٤٦]
অর্থাৎ “আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য
রয়েছে দু’টি (জান্নাতের) বাগান।” (সূরা আর-রাহমান ৪৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَأَقۡبَلَ بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ يَتَسَآءَلُونَ ٢٥ قَالُوٓاْ إِنَّا كُنَّا قَبۡلُ فِيٓ أَهۡلِنَا مُشۡفِقِينَ ٢٦ فَمَنَّ ٱللَّهُ عَلَيۡنَا وَوَقَىٰنَا عَذَابَ ٱلسَّمُومِ ٢٧ إِنَّا كُنَّا مِن قَبۡلُ نَدۡعُوهُۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡبَرُّ ٱلرَّحِيمُ ٢٨ ﴾ [الطور: ٢٥، ٢٨]
অর্থাৎ “তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করবে এবং বলবে, নিশ্চয় আমরা পূর্বে
পরিবার-পরিজনের মধ্যে শংকিত অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ
করেছেন এবং আমাদেরকে উত্তপ্ত ঝড়ো হাওয়ার শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় আমরা
পূর্বেও আল্লাহকে আহবান করতাম। নিশ্চয় তিনি কৃপাময়, পরম দয়ালু।” (সূরা ত্বূর ২৫-২৮
আয়াত)
৪০১
عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ:
حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم وَهُوَ
الصَّادِقُ المَصدُوقُ: إنَّ أحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ في بَطْنِ أُمِّهِ
أربَعِينَ يَوماً نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ
مُضْغَةً مِثْلَ ذلِكَ، ثُمَّ يُرْسَلُ المَلَكُ، فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ،
وَيُؤْمَرُ بِأرْبَعِ كَلِمَاتٍ: بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأجَلِهِ وَعَمَلِهِ
وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ . فَوَالَّذِي لاَ إِلٰهَ غَيْرُهُ إنَّ أحَدَكُمْ
لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ الجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وبيْنَهَا إلاَّ
ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيهِ الكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ النَّارِ
فَيدْخُلُهَا، وَإنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا
يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إلاَّ ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيهِ الكِتَابُ
فَيعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ الجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যিনি
সত্যবাদী ও যাঁর কথা সত্য বলে মানা হয় সেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, ‘‘তোমাদের এক জনের সৃষ্টির উপাদান মায়ের গর্ভে চল্লিশ
দিন যাবৎ বীর্যের আকারে থাকে। অতঃপর তা অনুরূপভাবে চলিলশ দিনে জমাটবদ্ধ
রক্তপিন্ডের রূপ নেয়। পুনরায় তদ্রূপ চল্লিশ দিনে গোশে্তর টুকরায় রূপান্তরিত হয়।
অতঃপর তার নিকট ফেরেশতা পাঠানো হয়। সুতরাং তার মাঝে ‘রূহ’ স্থাপন করা হয় এবং চারটি
কথা লিখার আদেশ দেওয়া হয়; তার রুযী, মৃত্যু, আমল এবং পাপিষ্ট না পুণ্যবান হবে তা
লিখা হয়। সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! (জন্মের পর) তোমাদের এক
ব্যক্তি (বাহ্যদৃষ্টিতে) জান্নাতবাসীদের মত কাজ-কর্ম করতে থাকে এবং তার ও
জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থেকে যায়।
এমতাবস্থায় তার (তাকদিরের) লিখন এগিয়ে আসে এবং সে জাহান্নামীদের মত আমল করতে লাগে;
ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের অন্য এক ব্যক্তি প্রথমে (বাহ্যদৃষ্টিতে)
জাহান্নামীদের মত আমল করে এবং তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থাকে।
এমতাবস্থায় তার (তাকদীরের) লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নাতীদের মত ক্রিয়াকর্ম
আরম্ভ করে; পরিণতিতে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।’’ (বুখারী-মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩২০৮, ৩৩৩২, ৬৫৯৪, ৭৪৫৪, মুসলিম ২৬৪৩,
তিরমিযী ২১৩৭, আবূ দাউদ ৪৭০৮, ইবনু মাজাহ ৭৬, আহমাদ ৩৫৪৩, ৩৬১৭, ৪০৮০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০২
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «يُؤتَى بِجَهَنَّمَ يَومَئذٍ لَهَا سَبْعُونَ
ألفَ زِمَامٍ، مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبعُونَ ألْفَ مَلَكٍ يَجُرُّونَهَا ». رواه
مسلم
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন
জাহান্নামকে এ অবস্থায় নিয়ে আসা হবে যে, তার সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রত্যেক
লাগামের সাথে সত্তর হাজার ফিরিশতা থাকবেন। তাঁরা তা টানতে থাকবেন।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৮৪২, তিরমিযী ২৫৭৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০৩
وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «إنَّ
أهْوَنَ أهْلِ النَّارِ عَذَاباً يَوْمَ القِيَامَةِ لَرَجُلٌ يُوضَعُ في أخْمَصِ
قَدَمَيْهِ جَمْرَتَانِ يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ . مَا يَرَى أنَّ أَحَداً
أشَدُّ مِنْهُ عَذَاباً، وَأنَّهُ لأَهْوَنُهُمْ عَذَاباً ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
নু‘মান
ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,
‘‘কিয়ামতের দিবসে ঐ ব্যক্তির সর্বাপেক্ষা হাল্কা আযাব হবে, যার দু’ পায়ের তলায়
জ্বলন্ত দু’টি অঙ্গার রাখা হবে। যার ফলে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে। সে মনে করবে
না যে, তার চেয়ে কঠিন আযাব অন্য কেউ ভোগ করছে। অথচ তারই আযাব সবার চেয়ে হাল্কা!’’
(বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫৬১, ৬৫৬২, মুসলিম ২১৩, তিরমিযী ২৬০৪,
আহমাদ ১৭৯২৩, ১৭৯৪৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০৪
وَعَن سَمُرَةَ بنِ جُندُبٍ رضي الله عنه:
أنَّ نَبيَّ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ:«مِنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ النَّارُ
إِلَى كَعْبَيهِ، وَمنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ إِلَى رُكْبَتَيهِ، وَمنْهُمْ مَنْ
تَأخُذُهُ إِلَى حُجزَتِهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ إِلَى تَرْقُوَتِهِ ». رواه
مسلم
সামুরাহ
ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জাহান্নামীদের মধ্যে কিছু লোকের
পায়ের গাঁট পর্যন্ত আগুন হবে, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো
কারো কণ্ঠাস্থি (গলার নিচের হাড়) পর্যন্ত হবে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৮৪৫, আহমাদ ১৯৫৯৭, ১৯৬৯৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০৫
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا:
أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يَقُومُ
النَّاسُ لِرَبِّ العَالَمِينَ حَتَّى يَغِيبَ أحَدُهُمْ في رَشْحِهِ إِلَى
أنْصَافِ أُذُنَيهِ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন লোকেরা বিশ্বজাহানের
প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হবে (এবং তাদের এত বেশি ঘাম হবে যে,) তাদের মধ্যে কেউ
তার ঘামে তার অর্ধেক কান পর্যন্ত ডুবে যাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৯৩৮, ৬৫০১, মুসলিম ২৮৬২, তিরমিযী ২৪২২,
৩৩৩৫, ইবনু মাজাহ ৪২৭৮, আহমাদ ৪৫৯৯, ৪৬৮৩, ৪৮৪৭, ৫২৯৬, ৫৩৬৫, ৫৭৮৯
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০৬
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ:
خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم خُطبَةً مَا
سَمِعْتُ مِثلَهَا قَطُّ، فَقَالَ: «لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ، لَضحِكْتُمْ
قَلِيلاً وَلَبَكَيتُمْ كَثِيراً » فَغَطَّى أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم وَجُوهَهُمْ، وَلَهُمْ خَنِينٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية: بَلَغَ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَنْ أَصْحَابِهِ شَيْءٌ فَخَطَبَ،
فَقَالَ: «عُرِضَتْ عَلَيَّ الجَنَّةُ وَالنَّارُ، فَلَمْ أرَ كَاليَومِ في
الخَيرِ وَالشَّرِّ، وَلَوْ تَعْلَمونَ مَا أعلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً
وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيراً» فَمَا أتَى عَلَى أصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم يَوْمٌ أَشَدُّ مِنْهُ، غَطَّوْا رُؤُسَهُمْ وَلَهُمْ خَنِينٌ .
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাদেরকে এমন ভাষণ শুনালেন যে, ওর মত (ভাষণ)
কখনোও শুনিনি। তিনি বললেন, ‘‘যা আমি জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা কম
হাসতে এবং বেশি কাঁদতে।’’ (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁদের চেহারা ঢেকে নিলেন এবং তাদের কান্নার রোল আসতে
লাগল। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৬২১, ৯৩, ৫৪০, ৬৩৬২, ৬৪৮৬, ৭০৯১, ৭২৯৪,
৭২৯৫, মুসলিম ২৩৫৯, আহমাদ ১১৫০৩, ১২২৪৮, ১২৩৭৫, ১২৪০৯, ১২৭৩৫, ১৩২৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০৭
وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ العَرَقُ
إلْجَاماً». قَالَ: وَأَشَارَ رَوَعَنِ المِقدَادِ رضي الله عنه، قَالَ: سمِعْتُ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «تُدْنَى
الشَّمْسُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنَ الخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ
مِيلٍ ». قَالَ سُلَيْم بنُ عَامِرٍ الرَّاوِي عَنِ المِقدَادِ: فَوَاللهِ مَا
أدْرِي مَا يَعنِي بِالمِيلِ، أَمَسَافَةَ الأرضِ أَمِ المِيلَ الَّذِي تُكْتَحَلُ
بِهِ العَيْنُ ؟ قَالَ: «فَيكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أعْمَالِهِمْ في
العَرَقِ، فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنهُم مَن يَكُونُ إِلَى
رُكبَتَيهِ، وَمِنهُم مَنْ يَكُونُ إِلَى حِقْوَيْهِ، سُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم بيدهِ إِلَى فِيهِ . رواه مسلم
মিক্বদাদ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন
সূর্যকে সৃষ্টজীবের এত কাছে করে দেওয়া হবে যে, তার মধ্যে এবং সৃষ্টজীবের মধ্যে
মাত্র এক মাইলের ব্যবধান থাকবে।’’ মিক্বদাদ থেকে বর্ণনাকারী সুলাইম ইবনু আমের
বলেন, আল্লাহর কসম! আমি জানিনা যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মীল’
শব্দের কী অর্থ নিয়েছেন, যমীনের দূরত্ব (মাইল), নাকি (সুরমাদানীর) শলাকা যার
দ্বারা চোখে সুরমা লাগানো হয়? ‘‘সুতরাং মানুষ নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবতে
থাকবে। তাদের মধ্যে কারো তার পায়ের গাঁট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত (ঘাম হবে)
এবং তাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও হবে যাদেরকে ঘাম লাগাম লাগিয়ে দেবে।’’ (অর্থাৎ নাক
পর্যন্ত ঘামে ডুববে।) এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
মুখের দিকে ইশারা করলেন। (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৮৬৪, তিরমিযী ২৪২১, আহমাদ ৯৩৩০১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০৮
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يَعْرَقُ النَّاسُ
يَومَ القِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ في الأَرضِ سَبْعِينَ ذِراعاً،
وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মানুষের প্রচণ্ড ঘাম হবে।
এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত পর্যন্ত নিচে যাবে। আর তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে
নিমজ্জিত থাকবে। এমন কি কান পর্যন্তও।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫৩২, মুসলিম ২৮৬৩, আহমাদ ৯১৪৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪০৯
وَعَنهُ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم إذْ سَمِعَ وَجْبَةً، فَقَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا هَذَا ؟ »
قُلْنَا: اللهُ وَرَسُولُهُ أعْلَمُ . قَالَ: «هذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ في
النَّارِ مُنْذُ سَبْعينَ خَريفاً، فَهُوَ يَهْوِي في النَّارِ الآنَ حَتَّى
انْتَهَى إِلَى قَعْرِها فَسَمِعْتُمْ وَجْبَتَهَا ». رواه مسلم
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
হলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম।
অকস্মাৎ তিনি কোনো জিনিস পড়ার আওয়াজ শুনলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তোমরা জান এটা
কি?’’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বেশী জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘এটা ঐ পাথর,
যেটিকে সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, এখনই তা জাহান্নামের
গভীরতায় (তলায়) পৌঁছল। ফলে তারই পড়ার আওয়াজ তোমরা শুনতে পেলে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৮৪৪, আহমাদ ৮৬২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪১০
عَن عَدِي بنِ حَاتمٍ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْكُمْ مِنْ
أَحَدٍ إلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَينَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ،
فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ
مِنْهُ فَلاَ يَرى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنظُرُ بَيْنَ يَدَيهِ فَلاَ يَرَى إلاَّ
النَّار تِلقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَو بِشِقِّ تَمْرَةٍ» . متفق
عليه
আদী
ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক
কথা বলবেন; তার ও তাঁর মাঝে কোন আনুবাদক থাকবে না। (সেখানে) সে তার ডানদিকে
তাকাবে, সুতরাং সেদিকে তা-ই দেখতে পাবে যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছিল। বামদিকে তাকাবে,
সুতরাং সেদিকেও নিজের কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর সামনে তাকাবে, সুতরাং তার চেহারার
সামনে জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক
টুকরো সাদকাহ করে হয়।’’ (বুখারী-মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪১৩, ১৪১৭, ৩৫৯৫, ৬০২৩, ৬৫৩৯, ৬৫৬৩,
৭৪৪৩, ৭৫১২, মুসলিম ১০১৬, নাসায়ী ২৫৫২, ২৫৫৩, আহমাদ ১৭৭৮২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪১১
وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنِّي أَرَى مَا لاَ
تَرَوْنَ، أطَّتِ السَّمَاءُ وَحُقَّ لَهَا أنْ تَئِطَّ، مَا فِيهَا مَوضِعُ
أرْبَعِ أصَابعَ إلاَّ وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِداً للهِ تَعَالَى .
وَاللهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ، لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيْتُمْ
كَثِيراً، وَمَا تَلَذَّذْتُمْ بالنِّسَاءِ عَلَى الفُرُشِ، وَلَخَرَجْتُمْ إِلَى
الصُّعُدَاتِ تَجْأرُونَ إِلَى اللهِ تَعَالَى - رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আমি দেখি, যা তোমরা দেখতে পাও না। আকাশ কটকট্ করে শব্দ করছে। আর
এ শব্দ তার করা সাজে। এতে চার আঙ্গুল পরিমাণ এমন জায়গা নেই, যেখানে কোনো ফেরেশতা
আল্লাহর জন্য সিজদায় নিজ কপাল অবনত রাখেননি। আল্লাহর কসম! তোমরা যদি জানতে যা আমি
জানি, তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে এবং বিছানায় তোমরা স্ত্রীদের সাথে আনন্দ
উপভোগ করতে না। (বরং) তোমরা আল্লাহর আশ্রয় নেওয়ার জন্য পথে পথে বের হয়ে
যেতে।’’(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ) [১]
[১] তিরমিযী ২৩১২, ইবনু মাজাহ ৪১৯০, আহমাদ ২১০০৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪১২
وَعَن أَبي بَرزَةَ نَضْلَةَ بنِ عُبَيدٍ
الأسلَمِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَومَ القِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ
عُمُرِهِ فِيمَ أفنَاهُ ؟ وَعَنْ عِلمِهِ فِيمَ فَعَلَ فِيهِ ؟ وَعَنْ مَالِهِ
مِنْ أيْنَ اكْتَسَبَهُ ؟ وَفيمَ أنْفَقَهُ ؟ وَعَنْ جِسمِهِ فِيمَ أبلاهُ ؟ رواه
الترمذي، وَقالَ: حديث حسن صحيح
আবূ
বারযাহ নাদ্বলাহ ইবনে উবাইদ আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন বান্দার পা দু’খানি সরবে
না। (অর্থাৎ আল্লাহর নিকট থেকে যাওয়ার তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না।) যতক্ষণ না তাকে
প্রশ্ন করা হবে; তার আয়ু সম্পর্কে, সে তা কিসে ক্ষয় করেছে? তার ইলম (বিদ্যা)
সম্পর্কে, সে তাতে কী আমল করেছে? তার মাল সম্পর্কে, কী উপায়ে তা উপার্জন করেছে এবং
তা কোন্ পথে ব্যয় করেছে? আর তার দেহ সম্পর্কে, কোন কাজে সে তা ক্ষয় করেছে?’’
(তিরমিযী, হাসান সূত্রে) [১]
[১] তিরমিযী ২৪১৭, দারেমী ৫৩৭
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪১৩
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، رضي الله عنه،
قَالَ: قَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: « يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ
أَخْبَارَهَا ثُمَّ قَالَ: أَتَدْرُوْنَ مَا أَخْبَارَهَا؟ قَالُوْا: اَللهُ
وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ . قَالَ: فَإِنَّ أَخْبَارَهَا أَنْ تَشْهَدَ عَلىٰ كُلِّ
عَبْدٍ أَوْ أَمَةٍ بِمَا عَلىٰ ظَهْرِهَا، تَقُوْلُ: عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا فِيْ
يَوْمٍ كَذَا وَكَذَا، فَهَذِهِ أَخْبَارَهَا - رواه الترمذي وقال: حديث حسن.
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ ‘‘সেদিন তা (যমীন) তার
প্রত্যেক বিষয় বর্ণনা করবে’’- (সূরা আয্-যিলযালঃ ৪)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ
তোমরা কি জানো যমীন সেদিন কী বর্ণনা করবে? উপস্থিত সকলেই বললেন, আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ যমীন বলবে, এই এই কর্ম তুমি এই এই দিন করেছো। এগুলো
হলো তার বর্ণনা।[১]
[১] আমি (আলবানী) বলছিঃ তিরমিযীর কোন কোন কপিতে সহীহ্
শব্দটি নেই আর হাদীসটির বর্ণনাকারীদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটিই সঠিকের নিকটবর্তী।
দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ (৪৮৩৪)। হাদীসটিকে ইবনু হিববান (২৫৮৬) ও হাকিমও (২/৫৩২)
বর্ণনা করেছেন। এর এক বর্ণনাকারী ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবী সুলাইমান সম্পর্কে ইমাম বুখারী
বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস আর হাফিয ইবনু হাজার তাকে হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল আখ্যা
দিয়েছেন। [৪৮৩৪]।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৪১৪
وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: كَيْفَ
أنْعَمُ ! وَصَاحِبُ القَرْنِ قَدِ التَقَمَ القَرْنَ، وَاسْتَمَعَ الإذْنَ مَتَى
يُؤمَرُ بالنَّفْخِ فَيَنْفُخُ فَكَأنَّ ذلِكَ ثَقُلَ عَلَى أصْحَابِ رسولِ الله
صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَهُمْ: قُولُوا: حَسْبُنَا الله وَنِعْمَ الوَكِيلُ .
رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسنٌ
আবূ
সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি কেমন করে হাসিখুশি করব, অথচ শিঙ্গা
ওয়ালা (ইস্রাফীল তো ফুৎকার দেওয়ার জন্য) শিঙ্গা মুখে ধরে আছেন। আর তিনি কান লাগিয়ে
আছেন যে, তাঁকে কখন ফুৎকার দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে এবং তিনি ফুৎকার দেবেন।’’ অতঃপর
এ কথা যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের জন্য ভারী বোধ
হল। সুতরাং তিনি তাঁদেরকে বললেন, ‘‘তোমরা বল, ‘হাসবুনাল্লাহু অনি‘মাল অকীল।’
অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম সাহায্যকারী।’’ (তিরমিযী, হাসান) [১]
[১] তিরমিযী ২৪৩১, ৩২৪৩, আহমাদ ১০৬৫৫
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪১৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: مَنْ خَافَ أدْلَجَ،
وَمَنْ أدْلَجَ بَلَغَ المَنْزِلَ. أَلاَ إنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ، ألاَ
إنَّ سِلْعَةَ الله الجَنَّةُ . رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسن
বূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি গভীর রাত্রিকে ভয় করে
সে যেন সন্ধ্যা রাত্রেই সফর শুরু করে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যারাত্রে চলতে শুরু করে
সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। সাবধান! আল্লাহর পণ্য বড় দামী। শোনো! আল্লাহর পণ্য হল
জান্নাত।’’ (তিরমিযী, হাসান)[১]
[১] তিরমিযী ২৪৫০
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪১৬
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ:
«يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ القِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلاً قُلْتُ: يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ جَمِيعاً يَنْظُرُ
بَعضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ؟! قَالَ: يَا عائِشَةُ، الأمرُ أشَدُّ مِنْ أنْ
يُهِمَّهُمْ ذلِكَ
وفي رواية: الأَمْرُ أهمُّ مِنْ أنْ يَنْظُرَ بَعضُهُمْ إِلَى بَعضٍ . مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষকে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে খালি
পা, উলঙ্গ ও খাতনাবিহীন অবস্থায়।’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি বললাম, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! পুরুষ ও মহিলারা একে অপরের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে?’ তিনি বললেন,
‘‘হে আয়েশা! তাদের এরূপ ইচ্ছা করার চাইতেও কঠিন হবে তখনকার অবস্থা।’’ (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫২৭, মুসলিম ২৮৫৯, নাসায়ী ২০৮৩, ২০৮৪,
ইবনু মাজাহ ৪২৭৬, আহমাদ ২৩৭৪৪, ২৪০৬৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫১
আল্লাহর দয়ার আশা রাখার
গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [الزمر: ٥٣]
অর্থাৎ “ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা), হে আমার দাসগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি
যুলুম করেছ, তারা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ মাফ
করে দেবেন। নিশ্চয় তিনই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা যুমার ৫৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَهَلۡ نُجَٰزِيٓ إِلَّا ٱلۡكَفُورَ﴾ [سبا: ١٧]
অর্থাৎ “আমি অকৃতজ্ঞ (বা অস্বীকারকারী)কেই শাস্তি দিয়ে থাকি। (সূরা সাবা ১৭ আয়াত)
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেন,
﴿ إِنَّا قَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡنَآ أَنَّ ٱلۡعَذَابَ عَلَىٰ مَن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ ٤٨ ﴾ [طه: ٤٨]
অর্থাৎ “নিশ্চয় আমাদের প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি তার
জন্য, যে মিথ্যা মনে করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (সূরা ত্বাহা ৪৮ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ ﴾ [الاعراف: ١٥٦]
অর্থাৎ “আমার দয়া তা তো প্রত্যেক বস্তুতে পরিব্যাপ্ত।” (সূরা আ’রাফ ১৫৬ আয়াত)
৪১৭
وَعَن عُبَادَةَ بنِ الصَّامِتِ رضي الله
عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ
شَهِدَ أنَّ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأنَّ مُحَمداً
عَبْدهُ ورَسُولُهُ، وَأنَّ عِيسَى عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ وَكَلِمَتُهُ
ألْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ ورُوحٌ مِنْهُ، وَأنَّ الجَنَّةَ حَقٌّ، وَالنَّارَ
حَقٌّ، أدْخَلَهُ اللهُ الجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ العَمَلِ ». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ
وفي رواية لمسلم: مَنْ شَهِدَ أنْ لا إِلٰهَ إلاَّ اللهُ وَأنَّ مُحَمَّداً
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، حَرَّمَ اللهُ عَلَيهِ النَّارَ
উবাদাহ
ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, একমাত্র
আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা
ও রাসূল এবং ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, আর তাঁর বাণী যা তিনি মারয়্যামের
মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন এবং তাঁর (পক্ষ থেকে সৃষ্ট) রূহ। আর জান্নাত সত্য ও
জাহান্নাম সত্য। তাকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তাতে সে যে কর্মই করে
থাকুক না কেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৪৩৫, মুসলিম ২৮, তিরমিযী ২৬৩৮, আহমাদ
২২১৬৭, ২২২১৬৩, ২২২৬২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪১৮
وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم: يَقُولُ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ -: مَنْ جَاءَ
بِالحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أمْثَالِهَا أَوْ أزْيَد، وَمَنْ جَاءَ بالسَيِّئَةِ
فَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا أَوْ أغْفِرُ . وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي
شِبْراً تَقَرَّبْتُ مِنْهُ ذِرَاعاً، وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعاً
تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعاً، وَمَنْ أتَانِي يَمْشِي أتَيْتُهُ هَرْوَلَةً، وَمَنْ
لَقِيَني بِقُرَابِ الأرْضِ خَطِيئَةً لاَ يُشْرِكُ بِي شَيئاً، لَقِيتُهُ
بِمِثْلِهَا مَغفِرَةً . رواه مسلم
আবূ
যার্র থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি
একটি নেকী করবে, তার জন্য দশ গুণ নেকী রয়েছে অথবা ততোধিক বেশী। আর যে ব্যক্তি একটি
পাপ করবে, তার বিনিময় (সে) ততটাই (পাবে; তার বেশী নয়) অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে
দেব। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি এক বিঘত নিকটবর্তী হবে, আমি তার প্রতি এক হাত
নিকটবর্তী হব। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি এক হাত নিকটবর্তী হবে, আমি তার প্রতি
দু’হাত নিকটবর্তী হব। যে আমার দিকে হেঁটে আসবে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাব। আর যে
ব্যক্তি প্রায় পৃথিবী সমান পাপ করে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, অথচ সে আমার সাথে
কাউকে শরীক করেনি, তার সাথে আমি তত পরিমাণই ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাৎ করব।’’ (মুসলিম)
[১]
[১] মুসলিম ২৬৮৭, ইবনু মাজাহ ৩৮২১, আবূ দাউদ ২০৮০৮, ২০৮৫৩,
২০৮৬৬, ২০৯৬১, ২০৯৭৭, ২০৯৯৪, ২১০৫৫, দারেমী ২৭৮৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪১৯
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ
أَعرَابِي إِلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، مَا الموجِبَتَانِ؟ قَالَ: مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بالله شَيئاً
دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً دَخَلَ النَّار . رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল!
(জান্নাত ও জাহান্নাম) ওয়াজেবকারী (অনিবার্যকারী) কর্ম দু’টি কি?’ তিনি বললেন,
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে
ব্যক্তি তার সাথে কোনো জিনিসকে অংশীদার করবে (এবং তওবা না করে ঐ অবস্থাতেই সে
মৃত্যুবরণ করবে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৯৩, আবূ দাউদ ১৪০৭৯, ১৪৩০১, ১৪৫৯৮, ১৪৭৭৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২০
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ
النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم وَمُعَاذٌ رَدِيفُهُ عَلَى الرَّحْلِ، قَالَ: يَا
مُعَاذُ قَالَ: لَبِّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَسَعْدَيْكَ،
قَالَ: يَا مُعَاذُ قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: يَا مُعَاذُ قَالَ: لَبِّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم وسَعْدَيْكَ، ثَلاثاً، قَالَ: «مَا مِنْ عَبْدٍ يَشْهَدُ أَن لاَ إِلٰهَ
إلاَّ الله، وَأنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ صِدْقاً مِنْ قَلْبِهِ إلاَّ
حَرَّمَهُ الله عَلَى النَّار ». قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
أفَلاَ أُخْبِرُ بِهَا النَّاس فَيَسْتَبْشِرُوا ؟ قَالَ: «إِذاً يَتَّكِلُوا ».
فأخبر بِهَا مُعاذٌ عِنْدَ موتِه تَأثُّماً . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মু‘আয
যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সওয়ারীর উপর বসেছিলেন, তখন তিনি
তাঁকে বললেন, ‘‘হে মু‘আয!’’ মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি এবং
আপনার খিদমতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’ তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘‘হে মু‘আয!’’ মু‘আয
বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি হাজির আছি এবং আপনার খিদমতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’
তিনি (আবার) বললেন, ‘‘হে মু‘আয!’’ (মুআযও) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত
আছি এবং আপনার খিদমতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ কথা তিনবার বললেন। (এরপর) তিনি বললেন, ‘‘যে কোন বান্দা খাঁটি মনে
সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ (সত্য) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা
ও তাঁর রাসূল, তাকে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন।’’
মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এই খবর বলে দেব না? যেন তারা
(শুনে) আনন্দিত হয়।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তো তারা (এরই উপর) ভরসা করে নেবে (এবং
আমল ত্যাগ করে বসবে)।’’ অতঃপর মু‘আয (ইলম গোপন রাখার) পাপ থেকে বাঁচার জন্য তাঁর
মুত্যুর সময় (এ হাদীসটি) জানিয়ে দিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১২৮, ১২৯, মুসলিম ৩২, আবূ দাউদ ১১৯২৩,
১২১৯৫, ১৩১৪, ১৩৩৩১, ২১৪৮৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২১
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ أَوْ أَبي سَعِيدٍ
الخُدرِي رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا - شَكَّ الرَّاوِي - ولاَ يَضُرُّ الشَّكُّ في
عَينِ الصَّحَابيّ ؛ لأنَّهُمْ كُلُّهُمْ عُدُولٌ- قَالَ: لَمَّا كَانَ غَزوَةُ
تَبُوكَ، أصَابَ النَّاسَ مَجَاعَةٌ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، لَوْ أذِنْتَ لَنَا فَنَحَرْنَا نَواضِحَنَا فَأكَلْنَا وَادَّهَنَّا؟
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: افْعَلُوا فَجاء
عُمَرُ رضي الله عنه، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إنْ فَعَلْتَ
قَلَّ الظَّهْرُ، وَلَكِن ادعُهُمْ بفَضلِ أزْوَادِهِمْ، ثُمَّ ادعُ الله لَهُمْ
عَلَيْهَا بِالبَرَكَةِ، لَعَلَّ الله أنْ يَجْعَلَ في ذلِكَ البَرَكَةَ . فَقَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «نَعَمْ » فَدَعَا بِنَطْع
فَبَسَطَهُ، ثُمَّ دَعَا بِفضلِ أزْوَادِهِمْ، فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجِيءُ بكَفّ
ذُرَةٍ وَيَجِيءُ بِكَفّ تَمرٍ وَيَجِيءُ الآخرُ بِكِسرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى
النَّطعِ مِنْ ذلِكَ شَيءٌ يَسيرٌ، فَدَعَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم بِالبَرَكَةِ، ثُمَّ قَالَ: خُذُوا في أوعِيَتِكُمْ فَأَخَذُوا في
أوْعِيَتِهِم حَتَّى مَا تَرَكُوا في العَسْكَرِ وِعَاءً إلاَّ مَلأُوهُ
وَأَكَلُوا حَتَّى شَبعُوا وَفَضَلَ فَضْلَةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم: أشْهَدُ أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَأنّي رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، لا يَلْقَى الله بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ
فَيُحْجَبَ عَنِ الجَنَّةِ . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) অথবা আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
অবশ্য
সাহাবীর ব্যক্তিত্ব নির্ণয়ে সন্দেহ ক্ষতিকর কিছু নয়। কেননা সকল সাহাবাই
নির্ভরযোগ্য।) সাহাবী বলেন, তাবুকের যুদ্ধের সময় সাহাবীগণ অতিশয় খাদ্য-সংকটে
পড়লেন। সুতরাং তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা
আমাদের সেচক উট জবাই করে তার গোশত ভক্ষণ এবং চর্বি ব্যবহার করি?’ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ঠিক আছে) তোমরা কর। (এ সংবাদ শুনে) উমার
(রাঃ) এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি আপনি (এমন) করেন, তাহলে সওয়ারী কমে যাবে।
বরং আপনি (এই করুন যে,) তাদেরকে নিজেদের অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্য আনতে বলুন এবং তাদের
জন্য তাতে আল্লাহর কাছে বরকতের দো‘আ করুন। সম্ভবতঃ আল্লাহ তাতে বরকত দেবেন।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ, (তাই-ই করি।)’’
সুতরাং তিনি চামড়ার একখানি দস্তরখান আনিয়ে নিয়ে তা বিছালেন। অতঃপর তিনি তাঁদের
অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্য জমা করার নির্দেশ দিলেন। ফলে কেউ তো এক খাবল ভুট্টা আনলেন,
কেউ তো এক খাবল খুরমা এবং কেউ তো রুটির একটি টুকরাও আনলেন। পরিশেষে কিছু পরিমাণ
খাদ্য জমা হয়ে গেল। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের দো‘আ
করলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘তোমরা আপন আপন পাত্রে নিয়ে নাও।’’ সুতরাং তাঁরা সব সব
পাত্রে নিতে আরম্ভ করলেন। এমনকি সৈন্যের মধ্যে কোন পাত্র শূন্য রইল না। তাঁরা
সকলেই খেয়ে তৃপ্ত হলেন এবং কিছু বেঁচেও গেল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য
নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যে কোন বান্দা সন্দেহমুক্ত হয়ে এ দু’টি (সাক্ষ্য) নিয়ে
আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, তাকে যে জান্নাতে যেতে বাধা দেওয়া হবে -তা হতেই পারে
না (বরং সে বিনা বাধায় জান্নাতে প্রবেশ করবে)।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৭, আবূ দাউদ ৯১৭০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২২
وَعَن عِتْبَانَ بن مالك رضي الله عنه وَهُوَ
مِمَّن شَهِدَ بَدراً، قَالَ: كُنتُ أُصَلِّي لِقَوْمِي بَني سَالِم، وَكَانَ
يَحُولُ بَيْنِي وبَيْنَهُمْ وَادٍ إِذَا جَاءَتِ الأَمْطَار، فَيَشُقُّ عَلَيَّ
اجْتِيَازُهُ قِبَلَ مَسْجِدِهم، فَجِئتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم فَقُلتُ لَهُ: إنّي أنْكَرْتُ بَصَرِي وَإنَّ الوَادِي الَّذِي
بَيْنِي وبَيْنَ قَومِي يَسِيلُ إِذَا جَاءَتِ الأمْطَارُ فَيَشُقُّ عَلَيَّ
اجْتِيَازُهُ فَوَدِدْتُ أنَّكَ تَأتِي فَتُصَلِّي في بَيْتِي مَكَاناً أتَّخِذُهُ
مُصَلّى، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
«سَأفْعَلُ » فَغَدَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
وَأَبُو بَكرٍ رضي الله عنه بَعْدَ مَا اشْتَدَّ النَّهَارُ، وَاسْتَأذَنَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فَأذِنْتُ لَهُ، فَلَمْ يَجْلِسْ حَتَّى
قَالَ: «أيْنَ تُحِبُّ أنْ أُصَلِّيَ مِنْ بَيْتِكَ ؟ » فَأشَرْتُ لَهُ إِلَى
المَكَانِ الَّذِي أُحِبُّ أَنْ يُصَلِّيَ فِيهِ، فَقَامَ رَسُول الله صلى الله
عليه وسلم فَكَبَّرَ وَصَفَفْنَا وَرَاءَهُ فَصَلَّى رَكعَتَينِ ثُمَّ سَلَّمَ
وَسَلَّمْنَا حِينَ سَلَّمَ فَحَبَسْتُهُ عَلَى خَزيرَةٍ تُصْنَعُ لَهُ، فَسَمِعَ
أهلُ الدَّارِ أنَّ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم في بَيْتِي فَثَابَ رِجالٌ
مِنْهُمْ حَتَّى كَثُرَ الرِّجَالُ في البَيْتِ، فَقَالَ رَجُلٌ: مَا فَعَلَ
مَالِكٌ لا أرَاهُ ! فَقَالَ رَجُلٌ: ذلِكَ مُنَافِقٌ لا يُحِبُّ الله ورسولَهُ،
فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: لاَ تَقُلْ ذلِكَ، ألاَ تَرَاهُ قَالَ:
لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله يَبْتَغي بِذَلِكَ وَجهَ الله تَعَالَى فَقَالَ: اللهُ
ورَسُولُهُ أعْلَمُ أمَّا نَحْنُ فَوَاللهِ مَا نَرَى وُدَّهُ وَلاَ حَدِيثَهُ إلاَّ
إِلَى المُنَافِقينَ ! فَقَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: فإنَّ الله قَدْ
حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله يَبْتَغِي بذَلِكَ
وَجْهَ الله . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইতবান
ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যিনি
বদর যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেন,
আমি আমার গোত্র বানু সালেমের নামাযে ইমামতি করতাম। আমার ও তাদের (মসজিদের) মধ্যে
একটি উপত্যকা ছিল। বৃষ্টি হলে ঐ উপত্যকা পেরিয়ে তাদের মসজিদে যাওয়া আমার জন্য
কষ্টকর হত। তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির
হয়ে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার দৃষ্টিশক্তিতে কমতি অনুভব করছি। (এ ছাড়া)
আমার ও আমার গোত্রের মধ্যকার উপত্যকাটি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে যায়। তখন তা পার
হওয়া আমার জন্য কষ্টকর হয়। তাই আমার একান্ত আশা যে, আপনি এসে আমার ঘরের এক স্থানে
নামায আদায় করবেন। আমি সে স্থানটি নামাযের স্থান রূপে নির্ধারিত করে নেব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আচ্ছা তাই করব।’’
সুতরাং পরের দিন সূর্যের তাপ যখন বেড়ে উঠল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর (রাঃ) আমার বাড়ীতে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি না বসেই আমাকে
জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তোমার ঘরের কোন্ স্থানে আমার নামায পড়া তুমি পছন্দ কর?’’ আমি যে
স্থানে তাঁর নামায পড়া পছন্দ করেছিলাম, তাঁকে সেই স্থানের দিকে ইশারা করে (দেখিয়ে)
দিলাম। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নামাযে) দাঁড়িয়ে তকবীর
বললেন। আমরা সারিবদ্ধভাবে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি দু’রাকআত নামায পড়ে
সালাম ফিরালেন। তাঁর সালাম ফিরার সময় আমরাও সালাম ফিরালাম। তারপর তাঁর জন্য যে
‘খাযীর’ (চর্বি দিয়ে পাকানো আটা) প্রস্তুত করা হচ্ছিল, তা খাওয়ার জন্য তাঁকে আটকে
দিলাম। ইতোমধ্যে মহল্লার লোকেরা শুনল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমার বাড়িতে। সুতরাং তাদের কিছু লোক এসে জমায়েত হল। এমনকি বাড়িতে অনেক
লোকের সমাগম হল।
তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘মালেক (ইবনে দুখাইশিন) করল কী? তাকে দেখছি না যে?’ একজন
জবাব দিল, ‘সে মুনাফিক! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে না।’ তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এমন কথা বলো না। তুমি কি মনে কর না যে,
সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে?’’ সে ব্যক্তি
বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তবে আল্লাহর কসম! আমরা মুনাফিকদের সাথেই
তার ভালবাসা ও আলাপ-আলোচনায় তাকে দেখতে পাই।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে
দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে।’’
(বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭৭, ১৮৯, ৪২৫, ৪২৪, ৬৬৭, ৬৮৬, ৮৩৮,
৮৪০, ১১৮৬, ৪০১০, ৫৪০১, ৬৩৫৪, ৬৪২২, ৬৯৩৮, মুসলিম ৩৩, আবূ দাউদ ১৪১১, ইবনু মাজাহ ৬৬০,
৭৫৪, আহমাদ ২৩১০৯, ২৩১২৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২৩
وَعَن عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه،
قَالَ: قُدِمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بسَبْيٍ
فَإِذَا امْرَأةٌ مِنَ السَّبْيِ تَسْعَى، إِذْ وَجَدَتْ صَبياً في السَّبْيِ
أخَذَتْهُ فَألْزَقَتهُ بِبَطْنِهَا فَأَرضَعَتْهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: أتَرَوْنَ هذِهِ المَرْأةَ طَارِحَةً وَلَدَها
في النَّارِ؟ قُلْنَا: لاَ وَاللهِ. فَقَالَ: للهُ أرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ هذِهِ
بِوَلَدِهَا . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উমার
ইবনে খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একবার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী এল। তিনি
দেখলেন যে, বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা (তার শিশুটি হারিয়ে গেলে এবং স্তনে দুধ জমে
উঠলে বাচ্চার খোঁজে অস্থির হয়ে) দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ সে বন্দীদের মধ্যে কোনো শিশু
পেলে তাকে ধরে কোলে নিয়ে (দুধ পান করাতে লাগল। অতঃপর তার নিজের বাচ্চা পেয়ে গেলে
তাকে বুকে-পেটে লাগিয়ে) দুধ পান করাতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি মনে কর যে, এই মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে?’’
আমরা বললাম, ‘না, আল্লাহর কসম!’ তারপর তিনি বললেন, ‘‘এই মহিলাটি তার সন্তানের উপর
যতটা দয়ালু, আল্লাহ তার বান্দাদের উপর তার চেয়ে অধিক দয়ালু।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৯৯, মুসলিম ২৭৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২৪
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: لَمَّا خَلَقَ الله
الخَلْقَ كَتَبَ في كِتَابٍ، فَهُوَ عِنْدَهُ فَوقَ العَرْشِ: إنَّ رَحْمَتِي
تَغْلِبُ غَضَبي . متفق عليه
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন সৃষ্টিজগত
তৈরী সম্পন্ন করলেন, তখন একটি কিতাবে লিখে রাখলেন, যা তাঁরই কাছে তাঁর আরশের উপর
রয়েছে, ‘‘অবশ্যই আমার রহমত আমার গযব অপেক্ষা অগ্রগামী।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩১৯৪,৭৪০৪, ৭৪২২, ৭৪৫৩, ৭৫৫৩, ৭৫৫৪,
মুসলিম ২৭৫১, তিরমিযী ৩৫৪৩, ইবনু মাজাহ ১৮৯, ৪২৯৫, আহমাদ ৭২৫৭, ৭৪৪৮, ৭৪৭৬, ২৭৩৪৩,
৮৪৮৫, ৮৭৩৫, ৯৩১৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২৫
وَعَنهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: جَعَلَ اللهُ الرَّحْمَةَ مِئَةَ
جُزْءٍ، فَأمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ، وَأنْزَلَ في الأرْضِ جُزْءاً
وَاحِداً، فَمِنْ ذلِكَ الجُزءِ يَتَرَاحَمُ الخَلائِقُ، حَتَّى تَرْفَعَ
الدَّابّةُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةَ أنْ تُصِيبَهُ
وَفي رِوَايَةٍ: إنّ للهِ تَعَالَى مئَةَ رَحمَةٍ، أنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً
وَاحِدَةً بَيْنَ الجِنِّ وَالإنسِ وَالبهائِمِ وَالهَوامّ، فَبِهَا
يَتَعَاطَفُونَ، وبِهَا يَتَرَاحَمُونَ، وبِهَا تَعْطِفُ الوَحْشُ عَلَى
وَلَدِهَا، وَأخَّرَ اللهُ تَعَالَى تِسْعاً وَتِسْعينَ رَحْمَةً يرْحَمُ بِهَا
عِبَادَهُ يَوْمَ القِيَامَة . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وَرَوَاهُ مُسلِمٌ أَيضاً مِنْ رِوَايَةِ سَلْمَانَ الفَارِسيِّ رضي الله عنه،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: إنَّ للهِ
تَعَالَى مِئَةَ رَحْمَةٍ فَمِنْهَا رَحْمَةٌ يَتَرَاحمُ بِهَا الخَلْقُ بَيْنَهُمْ،
وَتِسْعٌ وَتِسعُونَ لِيَومِ القِيَامَةِ
وَفي رِوَايَةٍ: إنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ
وَالأَرْضَ مَئَةَ رَحْمَةٍ كُلُّ رَحْمَةٍ طِبَاقُ مَا بَيْنَ السَّماءِ إِلَى
الأرْضِ، فَجَعَلَ مِنْهَا في الأَرضِ رَحْمَةً فَبِهَا تَعْطفُ الوَالِدَةُ عَلَى
وَلَدِهَا، وَالوَحْشُ وَالطَّيْرُ بَعْضُهَا عَلَى بَعْض، فَإذا كَانَ يَوْمُ
القِيَامَةِ أَكمَلَهَا بِهذِهِ الرَّحمَةِ
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘আল্লাহ
রহমতকে একশ ভাগ করেছেন। তার মধ্যে নিরানববই ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর
পৃথিবীতে একভাগ অবতীর্ণ করেছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই সৃষ্টজগৎ একে অন্যের উপর দয়া
করে। এমনকি জন্তু তার বাচ্চার উপর থেকে পা তুলে নেয় এই ভয়ে যে, সে ব্যথা পাবে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর একশটি রহমত আছে, যার মধ্য হতে একটি মাত্র
রহমত তিনি মানব-দানব, পশু ও কীটপতঙ্গের মধ্যে অবতীর্ণ করেছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই
(সৃষ্টজীব) একে অপরকে মায়া করে, তার কারণেই একে অন্যকে দয়া করে এবং তার কারণেই
হিংস্র জন্তুরা তাদের সন্তানকে মায়া করে থাকে। বাকী নিরানব্বইটি আল্লাহ আখেরাতের
জন্য রেখে দিয়েছেন, যার দ্বারা তিনি কিয়ামতের দিন আপন বান্দাদের উপর রহম করবেন।’’
(বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসটিকে ইমাম মুসলিমও সালমান ফারেসী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার একশটি রহমত আছে,
যার মধ্য হতে মাত্র একটির কারণে সৃষ্টিজগৎ একে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে। আর
নিরানব্বইটি (রহমত) কিয়ামতের দিনের জন্য রয়েছে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আসমান যমীন সৃষ্টি করার দিন একশটি রহমত
সৃষ্টি করলেন। প্রতিটি রহমত আসমান ও যমীনের মধ্যস্থল পরিপূর্ণ (বিশাল)। অতঃপর তিনি
তার মধ্য হতে একটি রহমত পৃথিবীতে অবতীর্ণ করলেন। ঐ একটির কারণেই মা তার সন্তানকে
মায়া করে এবং হিংস্র প্রাণী ও পাখীরা একে অন্যের উপর দয়া করে থাকে। অতঃপর যখন
কিয়ামতের দিন হবে, তখন আল্লাহ এই রহমত দ্বারা সংখ্যা পূর্ণ করবেন।’’ (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬০০০, ৬৪৬৯, মুসলিম ২৭৫২, তিরমিযী ৩৫৪১,
ইবনু মাজাহ ৪২৯৩, আহমাদ ৮২১০, ৯৩২৬, ৯৯১০, ১০২৯২, ১০৪২৯, দারেমী ২৭৮৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২৬
وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه
وسلم فِيمَا يَحكِي عَن رَبَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، قَال: أذْنَبَ عَبْدٌ
ذَنْباً، فَقَالَ: اَللهم اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، فَقَالَ الله تَبَاركَ وَتَعَالَى:
أذنَبَ عَبدِي ذَنباً، فَعَلِمَ أنَّ لَهُ رَبّاً يَغْفِرُ الذَّنْبَ، وَيَأْخُذُ
بِالذَّنْبِ، ثُمَّ عَادَ فَأذْنَبَ، فَقَالَ: أيْ رَبِّ اغْفِرْ لِي ذَنْبي،
فَقَالَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: أذنَبَ عبدِي ذَنباً، فَعَلِمَ أنَّ لَهُ رَبّاً،
يَغْفِرُ الذَّنْبَ، وَيَأْخُذُ بالذَّنْبِ، قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِي فَلْيَفْعَلْ
مَا شَاءَ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন, কোন বান্দা একটি
পাপ করে বলল, ‘হে প্রভু! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহ তাবারাকা অতা‘আলা
বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন প্রভু আছেন,
যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন।’ অতঃপর সে আবার পাপ করল এবং বলল,
‘হে প্রভু! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহ তাবারাকা অতা‘আলা বলেন, ‘আমার
বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন প্রভু আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা
করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সুতরাং সে যা
ইচ্ছা করুক।’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭৫০৭, মুসলিম ২৭৫৮, আহমাদ ৭৮৮৮, ৯০০৩,
১০০০৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২৭
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ لَمْ
تُذْنِبُوا، لَذَهَبَ الله بِكُمْ، وَجَاءَ بِقَومٍ يُذْنِبُونَ،
فَيَسْتَغْفِرُونَ اللهَ تَعَالَى، فَيَغْفِرُ لَهُمْ ». رواه مسلم
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার
প্রাণ আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে অপসারিত করবেন এবং এমন
জাতির আবির্ভাব ঘটাবেন যারা পাপ করবে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবে। আর তিনি
তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৭৪৯, তিরমিযী ২৫২৬, আহমাদ ৭৯৮৩, ৮০২১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২৮
وَعَن أَبي أَيُّوبَ خَالِدِ بنِ زَيدٍ رضي
الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
يَقُولُ: «لَوْلاَ أنَّكُمْ تُذْنِبُونَ، لَخَلَقَ الله خَلْقاً يُذْنِبُونَ،
فَيَسْتَغْفِرونَ، فَيَغْفِرُ لَهُمْ ». رواه مسلم
আবূ
আইয়ূব খালেদ ইবনে যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা যদি
গুনাহ না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা গুনাহ করবে তারপর
তারা (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা চাইবে। আর তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’ (মুসলিম)
[১]
[১] মুসলিম ২৭৪৮, তিরমিযী ৩৫৩৯, আবূ দাউদ ২৩০০৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪২৯
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
كُنَّا قُعُوداً مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، مَعَنَا أَبُو بَكْرٍ
وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، في نَفَرٍ فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم مِنْ بَيْنِ أظْهُرِنَا، فَأبْطَأَ عَلَيْنَا فَخَشِينَا
أنْ يُقتَطَعَ دُونَنَا، فَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فَكُنْتُ أوَّلَ مَنْ فَزِعَ
فَخَرَجْتُ أبْتَغِي رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، حَتَّى
أتَيْتُ حَائِطاً للأنْصَارِ ... وَذَكَرَ الحَدِيثَ بِطُولِهِ إِلَى قوله:
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: اذهَبْ فَمَن
لَقِيتَ وَرَاءَ هَذَا الحَائِطِ يَشْهَدُ أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله،
مُسْتَيقِناً بِهَا قَلبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসেছিলাম। আমাদের সঙ্গে আবূ
বাকর ও উমার (রাঃ)ও লোকদের একটি দলে উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্য থেকে উঠে (কোথাও) গেলেন। তারপর তিনি
আমাদের নিকট ফিরে আসতে বিলম্ব করলেন। সুতরাং আমরা ভয় করলাম যে, আমাদের অবর্তমানে
তিনি (শত্রু) কবলিত না হন। অতঃপর আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে (সভা থেকে) উঠে গেলাম।
সর্বপ্রথম আমিই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর খোঁজে বের হলাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত এক আনসারীর বাগানে এলাম। (অতঃপর)
তিনি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন, যাতে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি যাও! অতঃপর (এ বাগানের বাইরে) যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ
ঘটবে, যে হৃদয়ের দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সাক্ষ্য দেবে, তাকে
তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দাও।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৩১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩০
وعن عبد الله بن عمرو بن العاص، رضي الله
عنهما، أن النبي، صلى الله عليه وسلم، تلا قول الله عز وجل في إبراهيم، صلى الله
عليه وسلم: {رب إنهن أضللن كثيراً من الناس فمن تبعني فإنه مني}
((إبراهيم:36))، وقول عيسى، صلى الله عليه وسلم:{إن تعذبهم فإنهم
عبادك وإن تغفر لهم فإنك أنت العزيز الحكيم} ((المائدة: 118))، فرفع
يديه وقال: "اللهم أمتى أمتى” وبكى، فقال الله عز وجل:"
" يا جبريل اذهب إلى محمد وربك أعلم، فسله ما يبكيه؟ “ فأتاه جبريل،
فأخبره رسول الله صلى الله عليه وسلم، بما قال: وهو أعلم، فقال الله تعالى:
"يا جبريل اذهب إلى محمد فقل: إنا سنرضيك في أمتك ولا نسؤوك"
((رواه مسلم)).
আব্দুল্লাহ
ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
ব্যাপারে আল্লাহর এ বাণী পাঠ করলেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক! এসব প্রতিমা বহু মানুষকে
বিভ্রান্ত করেছে; সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার
অবাধ্য হলে তুমি তো চরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’’ (সূরা ইব্রাহীম ৩৬) এবং ঈসা আলাইহিস
সালাম-এর উক্তি (এ আয়াতটি পাঠ করলেন), ‘‘যদি তুমি তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর, তবে
তারা তোমার বান্দা। আর যদি তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি অবশ্যই প্রবল
পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।’’ (সূরা মায়েদাহ ১১৮ আয়াত) অতঃপর তিনি তাঁর হাত দু’খানি
উঠিয়ে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমার উম্মত, আমার উম্মত।’’
অতঃপর তিনি কাঁদতে লাগলেন। আল্লাহ আয্যা অজাল্ল বললেন, ‘হে জিব্রীল! তুমি
মুহাম্মাদের নিকট যাও---আর তোমার রব বেশী জানেন---তারপর তাকে কান্নার কারণ
জিজ্ঞাসা কর?’ সুতরাং জিব্রীল তাঁর নিকট এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে সে কথা জানালেন, যা তিনি (তাঁর উম্মত সম্পর্কে) বলেছিলেন---আর
আল্লাহ তা অধিক জানেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘হে জিব্রীল! তুমি (পুনরায়)
মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং বল, আমি তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করে দেব
এবং অসন্তুষ্ট করব না।’ (মুসলিম) [১]
[১]
[১] মুসলিম ২০২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩১
وَعَن مُعَاذِ بنِ جَبَلٍ رضي الله عنه،
قَالَ: كُنْتُ رِدْفَ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم عَلَى حِمَارٍ، فَقَالَ: يَا
مُعَاذُ، هَلْ تَدْرِي مَا حَقُّ الله عَلَى عِبَادِهِ ؟ وَمَا حَقُّ العِبَادِ
عَلَى الله ؟ قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أعْلَمُ . قَالَ: فإنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى
العِبَادِ أنْ يَعْبُدُوهُ، وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيئاً، وَحَقَّ العِبَادِ
عَلَى اللهِ أنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لا يُشْرِكُ بِهِ شَيئاً . فقلتُ: يَا رَسُولَ
الله، أفَلا أُبَشِّرُ النَّاسَ ؟ قَالَ: لاَ تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوا .
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
মু‘আয
ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
গাধার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সওয়ার ছিলাম। তিনি বললেন,
‘‘হে মু‘আয! তুমি কি জানো, বান্দার উপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক
কী?’’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘বান্দার উপর
আল্লাহর হক এই যে, সে তাঁরই ইবাদত করবে, এতে তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না।
আর আল্লাহর উপর বান্দার হক এই যে, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না
তিনি তাকে আযাব দেবেন না।’’ অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে
(এ) সুসংবাদ দেব না?’ তিনি বললেন, ‘‘তাদেরকে সুসংবাদ দিও না। কেননা, তারা (এরই
উপর) ভরসা করে বসবে। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৮৫৬, ৫৯৬৭, ৬২৬৭, ৬৫০০, ৭৩৭৩, মুসলিম
৩০, তিরমিযী ২৬৪৩, আবূ দাউদ ২৫৫৯, ইবনু মাজাহ ৪২৯৬, আহমাদ ১৩৩৩১, ২১৪৮৬, ২১৪৯৯, ২১৫০১,
২১৫৩৪, ম২১৫৫৩, ২১৫৬৮, ২১৫৯১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩২
وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: المُسْلِمُ إِذَا سُئِلَ في
القَبْرِ يَشْهَدُ أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَأنّ مُحَمّداً رَسُولُ الله،
فَذَلِكَ قَولُهُ تَعَالَى: ﴿ يثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت في الحياة
الدنيا وفي الآخرة﴾ [ابراهيم: ٢٧] . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
বারা
ইবনে আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে যখন কবরে প্রশ্ন করা হয়, তখন
সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।
এই অর্থ রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীতে, ‘যারা মু’মিন তাদেরকে আল্লাহ
সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে প্রতিষ্ঠা দান করেন।’’ (সূরা
ইব্রাহীম ১৭ আয়াত) (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩৬৯, ৪৬৯৯, মুসলিম ২৮৭১, তিরমিযী ৩১২০,
নাসায়ী ২০৫৬, ২০৫৭, আবূ দাউদ ৪৭৫০, ইবনু মাজাহ ৪২৬৯, আহমাদ ১৮০১৩, ১৮০৬৩, ১৮১০৩, ১৮১৪০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩৩
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إنّ الكَافِرَ إِذَا عَمِلَ حَسَنَةً، أُطعِمَ
بِهَا طُعْمَةً مِنَ الدُّنْيَا، وَأَمَّا المُؤْمِنُ فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى
يَدَّخِرُ لَهُ حَسَنَاتِهِ في الآخِرَةِ، وَيُعْقِبُهُ رِزْقاً في الدُّنْيَا
عَلَى طَاعَتِهِ
وَفي رِوَايَةٍ: إنَّ الله لاَ يَظْلِمُ مُؤْمِناً حَسَنَةً يُعْطَى بِهَا في
الدُّنْيَا، وَيُجْزَى بِهَا في الآخِرَةِ . وَأَمَّا الكَافِرُ فَيُطْعَمُ
بِحَسَنَاتِ مَا عَمِلَ للهِ تَعَالَى فِي الدُّنْيَا، حَتَّى إِذَا أفْضَى إِلَى
الآخرَةِ، لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَةٌ يُجْزَى بِهَا. رواه مسلم
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাফের যখন দুনিয়াতে কোনো পুণ্য কাজ করে,
তখন বিনিময়ে তাকে দুনিয়ার (কিছু আনন্দ/খাবার জাতীয়) উপভোগ করতে দেওয়া হয়। (আর
আখেরাতে সে এর কিছুই প্রতিদান পাবে না)। কিন্তু মু’মিনের জন্য আল্লাহ তা’আলা
আখেরাতে তার প্রতিদানকে সঞ্চিত করে রাখেন এবং দুনিয়াতে তিনি তাকে জীবিকা দেন তাঁর
আনুগত্যের বিনিময়ে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মহান আল্লাহ কোন মু’মিনের উপর তার নেকীর ব্যাপারে যুলুম
করেন না। তাকে তার প্রতিদান দুনিয়াতেও দেওয়া হয় এবং আখেরাতেও দেওয়া হবে। কিন্তু
কাফেরকে ভাল কাজের বিনিময়--যা সে আল্লাহর জন্য করে--দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয়। এমন
কি যখন সে আখেরাতে পাড়ি দেবে, তখন তার এমন কোনো পুণ্য থাকবে না যে, তার বিনিময়ে
তাকে কিছু (পুরস্কার) দেওয়া যাবে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৮০৮, আহমাদ ১১৮২৮, ১১৮৫৫, ১৩৬০৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩৪
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَثَلُ الصَّلَوَاتِ
الخَمْسِ كَمَثَلِ نَهْرٍ جَارٍ غَمْرٍ عَلَى بَابِ أحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ
كُلَّ يَوْم خَمْسَ مَرَّات ». رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের উদাহরণ প্রচুর
পানিতে পরিপূর্ণ ঐ নদীর মত, যা তোমাদের কারো দুয়ারের (সামনে বয়ে) প্রবাহিত হয়,
যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৬৬৮, আহমাদ ১৩৮৬৩, ১৩৯৯৯, ১৪৪৩৯, দারেমী ১১৮২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩৫
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
يَقُولُ:«مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ، فَيقُومُ عَلَى جَنَازَتهِ أرْبَعُونَ
رَجُلاً لاَ يُشْرِكُونَ بِاللهِ شَيئاً، إلاَّ شَفَّعَهُمُ اللهُ فِيهِ ». رواه
مسلم
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে কোনো মুসলিম মারা
যায় আর তার জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক শরীক হয়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে
না। নিশ্চয় আল্লাহ তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবূল করেন।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৯৪১, আহমাদ ২৫০৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩৬
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ:
كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم في قُبَّة نَحْواً مِنْ أربَعِينَ،
فَقَالَ:أتَرْضَونَ أنْ تَكُونُوا رُبُعَ أهْلِ الجَنَّةِ ؟ قُلْنَا: نَعَمْ .
قَالَ: أتَرْضَوْنَ أنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أهلِ الجَنَّةِ ؟ قُلْنَا: نَعَمْ،
قَالَ: وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمّدٍ بيَدِهِ، إنِّي لأَرْجُو أنْ تَكُونُوا نِصْفَ
أهْلِ الجَنَّةِ وَذَلِكَ أنَّ الجنَّةَ لاَ يَدْخُلُهَا إلاَّ نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ،
ومَا أنْتُم في أهْلِ الشِّركِ إلاَّ كَالشَّعْرَةِ البَيْضَاءِ فِي جِلدِ
الثَّورِ الأَسْوَدِ، أَوْ كَالشَّعْرَةِ السَّودَاءِ في جِلدِ الثَّورِ الأحْمَر
. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
প্রায় চল্লিশ জন মানুষ রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একটি
তাঁবুতে ছিলাম। একসময় তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি পছন্দ কর যে, তোমরা জান্নাতবাসীদের
এক চতুর্থাংশ হবে?’’ আমরা বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি
জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ হতে পছন্দ কর?’’ আমরা বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন,
‘‘তাঁর শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশী যে,
জান্নাতবাসীদের অর্ধেক তোমরাই হবে। এটা এ জন্য যে, শুধুমাত্র মুসলিম প্রাণ ছাড়া
অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর মুশরিকদের তুলনায় তোমরা এরূপ, যেরূপ কালো
বলদের গায়ে (একটি) সাদা লোম অথবা লাল বলদের গায়ে (একটি) কালো লোম।’’ (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৫২৮, ৬৬৪২, মুসলিম ২০২১, তিরমিযী ২৫৪৭,
ইবনু মাজাহ ৪২৮৩, আহমাদ ৩৬৪৩, ৪১৫৫, ৪২৩৯, ৪৩১৬
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩৭
وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله
عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: إِذَا
كَانَ يَوْمُ القِيَامَةِ دَفَعَ اللهُ إِلَى كُلِّ مُسْلِم يَهُودِياً أَوْ
نَصْرَانِياً، فَيَقُولُ: هَذَا فِكَاكُكَ مِنَ النَّارِ
وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهُ، عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يَجِيءُ
يَوْمَ القِيَامَةِ نَاسٌ مِنَ المُسْلِمينَ بِذُنُوبٍ أَمْثَال الجِبَالِ
يَغْفِرُهَا الله لَهُمْ ». رواه مسلم
আবূ
মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমকে
একজন ইয়াহুদী অথবা খ্রিষ্টানকে দিয়ে বলবেন, ‘এই তোমার জাহান্নাম থেকে বাঁচার
মুক্তিপণ।’’
উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকেই অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন কিছু সংখ্যক মুসলিম পাহাড় সম পাপ নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ
তা (সবই) তাদের জন্য ক্ষমা করে দেবেন।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৭৬৭, আহমাদ ১৮৯৯১, ১৯০৬৬, ১৯১০৩, ১৯১৫৩, ১৯১৬১,
১৯১৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ:
يُدْنَى المُؤْمِنُ يَوْمَ القِيَامَة مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ كَنَفَهُ
عَلَيهِ، فَيُقَرِّرُهُ بذُنُوبِهِ، فَيَقُولُ: أَتَعرِفُ ذَنْبَ كَذَا ؟ أتَعرِفُ
ذَنْبَ كَذَا ؟ فَيَقُولُ: رَبِّ أعْرِفُ، قَالَ: فَإنِّي قَدْ سَتَرْتُهَا
عَلَيْكَ فِي الدُّنْيا، وَأنَا أغْفِرُهَا لَكَ اليَومَ، فَيُعْطَى صَحِيفَةَ
حَسَنَاتِهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন
ঈমানদারকে রাব্বুল আলামীনের এত নিকটে নিয়ে আনা হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নিজ
পর্দা রেখে তার পাপসমূহের স্বীকারোক্তি আদায় করে নেবেন। তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘এই
পাপ তুমি জান কি? এই পাপ চিন কি?’ মু’মিন বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি জানি।’
তিনি বলবেন, ‘আমি পৃথিবীতে তোমার পাপকে গোপন রেখেছি, আর আজ তা তোমার জন্য ক্ষমা
করে দিচ্ছি।’ অতঃপর তাকে তার নেক আমলের আমলনামা দেওয়া হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[১]
[১] সহীহুল বুখারী ২৪৪১, ৪৬৮৫, ৬০৭০, ৭৫১৪, মুসলিম ২৭৬৮,
ইবনু মাজাহ ১৮৩, আহমাদ ৫৪১৩, ৫৭৯১
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৩৯
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه: أنَّ
رَجُلاً أصَابَ مِن امْرَأة قُبْلَةً، فَأتَى النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم
فَأخْبَرَهُ، فَأنْزَلَ اللهُ تَعَالَى: ﴿ وأقم الصلاة طرفي النهار وزلفاً من
الليل إن الحسنات يذهبن السيئات﴾ [هود: ١١٤] فَقَالَ الرجل: أَلِي هَذَا يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ: «لِجَمِيعِ أُمَّتِي كُلِّهِمْ ».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমা দিয়ে ফেলে। পরে সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বিষয়টি জানায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন,
‘‘দিনের দু’প্রান্তে সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম ভাগে নামায কায়েম কর।
নিশ্চয়ই পুণ্যরাশি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়।’’ (সূরা হূদ ১১৪) লোকটি জিজ্ঞেস করল, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! এ কি শুধু আমার জন্য?’ তিনি বললেন, ‘‘না, এ আমার সকল উম্মতের
জন্য।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৫২৬, ৪৬৮৭, মুসলিম ২৭৬৩, তিরমিযী ৩১১২,
৩১১৪, আবূ দাউদ ৪৪৬৮, ইবনু মাজাহ ১৩৯৮, ৪২৫৪, আবূ দাউদ ৩৬৪৫, ৩৮৪৪, ৪০৮৩, ৪২৩৮, ৪৩১৩
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪০
وَعَن أَنَسٍ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى
النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
أَصَبْتُ حَدّاً، فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، وَحَضَرَتِ الصَّلاةُ، فَصَلَّى مَعَ
رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَلَمَّا قَضَى الصَّلاةَ، قَالَ: يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، إنِّي أصَبْتُ حَدّاً فَأقِمْ فيَّ كِتَابَ اللهِ .
قَالَ: «هَلْ حَضَرْتَ مَعَنَا الصَّلاةَ »؟ قَالَ: نَعَمْ . قَالَ: «قَدْ غُفِرَ
لَكَ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল!
আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি; তাই আমার উপর দণ্ড প্রয়োগ করুন।’ ইতিমধ্যে নামাযের
সময় হল। সেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নামায পড়ল।
নামায শেষ করে পুনরায় সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে
ফেলেছি; তাই আমার উপর আল্লাহর কিতাবে ঘোষিত দণ্ড প্রয়োগ করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি
কি আমাদের সাথে নামায আদায় করেছ?’’ সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চই তোমার
অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৮২৩, মুসলিম ২৭৬৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪১
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الله لَيرْضَى عَنِ العَبْدِ أنْ
يَأكُلَ الأَكْلَةَ، فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا، أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ،
فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا ». رواه مسلم
উক্ত
সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বান্দার (এ কাজে)
সন্তুষ্ট হন যে, (কিছু) খেলে সে তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা কিছু পান করলে
সে তার উপর তাঁর প্রশংসা করে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৭৩৪, তিরমিযী ১৮১৬, আহমাদ ১১৫৬২, ১১৭৫৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪২
وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، عَنِ
النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إنَّ اللهَ تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ
باللَّيلِ ليَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بالنَّهَارِ لِيَتُوبَ
مُسِيءُ اللَّيلِ، حَتَّى تَطلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا ». رواه مسلم
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা রাতে নিজ হাত প্রসারিত
করেন, যেন দিবাভাগের অপরাধী তাওবাহ করে নেয়। আর তিনি দিনেও নিজ হাত প্রসারিত করেন,
যেন রাতের অপরাধী তাওবাহ করে নেয়। যতক্ষণ না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হবে (এ নিয়ম
অব্যাহত থাকবে)।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৭৫৯, আহমাদ ১৯০৩৫, ১৯১২২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪৩
وَعَن أَبي نَجِيحٍ عَمرِو بنِ عَبَسَةَ
السُّلَمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: كُنْتُ وأنَا في الجاهِلِيَّةِ أظُنُّ أنَّ
النَّاسَ عَلَى ضَلاَلَةٍ، وَأَنَّهُمْ لَيْسُوا عَلَى شَيْءٍ، وَهُمْ يَعْبُدُونَ
الأَوْثَانَ، فَسَمِعْتُ بِرَجُلٍ بِمَكَّةَ يُخْبِرُ أخْبَاراً، فَقَعَدْتُ عَلَى
رَاحِلَتِي، فَقَدِمْتُ عَلَيهِ، فإِذَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم مُسْتَخْفِياً، جُرَءَاءُ عَلَيهِ قَومُهُ، فَتَلَطَّفَتُ حَتَّى
دَخَلْتُ عَلَيهِ بِمَكَّةَ، فَقُلْتُ لَهُ: مَا أنْتَ ؟ قَالَ: أَنَا نَبيٌّ
قُلْتُ: وَمَا نَبِيٌّ ؟ قَالَ:أرْسَلَنِي الله قُلْتُ: وَبِأَيِّ شَيْء أرْسَلَكَ
؟ قَالَ: أَرْسَلَنِي بِصِلَةِ الأرْحَامِ، وَكَسْرِ الأَوْثَانِ، وَأنْ يُوَحَّدَ
اللهُ لاَ يُشْرَكُ بِهِ شَيْء قُلْتُ: فَمَنْ مَعَكَ عَلَى هَذَا ؟ قَالَ: حُرٌّ
وَعَبْدٌ وَمَعَهُ يَوْمَئذٍ أَبُو بَكرٍ وَبِلاَلٌ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قُلْتُ: إنّي مُتَّبِعُكَ، قَالَ: إنَّكَ لَنْ تَسْتَطيعَ ذلِكَ يَومَكَ هَذَا،
ألا تَرَى حَالي وحالَ النَّاسِ ؟ وَلَكِنِ ارْجعْ إِلَى أهْلِكَ فَإِذَا سَمِعْتَ
بِي قَدْ ظَهرْتُ فَأتِنِي قَالَ: فَذَهَبْتُ إِلَى أهْلِي وقَدِمَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم المَدِينَةَ حَتَّى قَدِمَ نَفَرٌ مِنْ
أهْلِي المَدِينَةَ، فَقُلتُ: مَا فَعَلَ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي قَدِمَ
المَدِينَةَ ؟ فَقَالُوا: النَّاس إلَيهِ سِرَاعٌ، وَقَدْ أَرَادَ قَومُهُ
قَتْلَهُ، فلَمْ يَسْتَطِيعُوا ذلِكَ، فقَدِمْتُ المَدِينَةَ، فَدَخَلْتُ عَلَيهِ،
فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَعْرِفُني ؟ قَالَ:نَعَمْ،
أنْتَ الَّذِي لَقَيْتَنِي بمكّةَ قَالَ: فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، أخْبِرنِي عَمَّا عَلَّمَكَ الله وأَجْهَلُهُ، أخْبِرْنِي عَنِ
الصَّلاَةِ ؟ قَالَ: صَلِّ صَلاَةَ الصُّبْحِ، ثُمَّ اقْصُرْ عَنِ الصَّلاَةِ
حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ قِيدَ رُمْحٍ، فَإنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطلُعُ
بَيْنَ قَرْنَيْ شَيطَان، وَحينَئذٍ يَسجُدُ لَهَا الكُفَّارُ، ثُمَّ صَلِّ فَإنَّ
الصَلاَةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بالرُّمْحِ، ثُمَّ
اقْصُرْ عَنِ الصَّلاةِ، فَإنَّهُ حينئذ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ، فإذَا أقْبَلَ
الفَيْءُ فَصَلِّ، فَإنَّ الصَّلاةَ مَشْهُودَةٌ مَحضُورَةٌ حَتَّى تُصَلِّي
العَصرَ، ثُمَّ اقْصرْ عَنِ الصَّلاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فإنَّهَا
تَغْرُبُ بينَ قَرْنَيْ شَيطَانٍ، وَحِينَئذٍ يَسْجُدُ لَهَا الكُفّارُ قَالَ:
فَقُلتُ: يَا نَبيَّ اللهِ، فَالوُضُوءُ حَدِّثنِي عَنْهُ ؟ فَقَالَ: مَا مِنْكُمْ
رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُوءَهُ، فَيَتَمَضْمَضُ وَيسْتَنْشِقُ فَيَسْتَنْثِرُ، إلاَّ
خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ المَاءِ، ثُمَّ يَغْسِلُ
يَدَيهِ إِلَى المِرفقَيْن، إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أنَامِلِهِ مَعَ
الماءِ، ثُمَّ يَمْسَحُ رَأسَهُ، إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رَأسِهِ مِن أطْرَافِ
شَعْرِهِ مَعَ الماَءِ، ثُمَّ يَغسِلُ قَدَمَيهِ إِلَى الكَعْبَيْنِ، إلاَّ
خَرَّتْ خَطَايَا رِجلَيْهِ مِنْ أنَاملِهِ مَعَ الماَءِ، فَإنْ هُوَ قَامَ
فَصَلَّى، فَحَمِدَ الله تَعَالَى، وَأَثنَى عَلَيهِ ومَجَّدَهُ بالَّذِي هُوَ
لَهُ أهْلٌ، وَفَرَّغَ قَلبَهُ للهِ تَعَالَى، إلاَّ انْصَرفَ مِنْ خَطِيئَتِهِ
كَهَيئَتِه يَومَ وَلَدَتهُ أُمُّهُ . فَحَدَّثَ عَمرُو بنُ عَبَسَةَ بِهَذَا
الحَدِيثِ أَبَا أُمَامَةَ صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ
لَهُ أَبُو أُمَامَة: يَا عَمْرَو بنَ عَبَسَةَ، انْظُر مَا تقولُ! فِي مَقَامٍ
وَاحِدٍ يُعْطَى هَذَا الرَّجُلُ ؟ فَقَالَ عَمْرٌو: يَا أَبَا أُمَامَةَ، لَقَد
كَبُرَتْ سِنّي، وَرَقَّ عَظمِي، وَاقْتَرَبَ أجَلِي، وَمَا بِي حَاجَةٌ أنْ
أكْذِبَ عَلَى اللهِ تَعَالَى، وَلاَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، لَوْ
لَمْ أسمعه مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إلاَّ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَينِ
أَوْ ثَلاثاً، حَتَّى عَدَّ سَبْعَ مَرَّات، مَا حَدَّثْتُ أبَداً بِهِ، وَلكنِّي
سَمِعتُهُ أكثَرَ مِن ذَلِكَ . رواه مسلم
আবূ
নাজীহ ‘আমর ইবনে ‘আবাসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জাহেলিয়াতের
(প্রাগৈসলামিক) যুগ থেকেই আমি ধারণা করতাম যে, লোকেরা পথভ্রষ্টতার উপর রয়েছে এবং
এরা কোন ধর্মেই নেই, আর ওরা প্রতিমা পূজা করছে। অতঃপর আমি এক ব্যক্তির ব্যাপারে
শুনলাম যে, তিনি মক্কায় অনেক আজব আজব খবর বলছেন। সুতরাং আমি আমার সওয়ারীর উপর বসে
তাঁর কাছে এসে দেখলাম যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,
তিনি গুপ্তভাবে (ইসলাম প্রচার করছেন), আর তাঁর সম্প্রদায় (মুশরিকরা) তাঁর প্রতি
(দুর্ব্যবহার করে) দুঃসাহসিকতা প্রদর্শন করছে। সুতরাং আমি বিচক্ষণতার সাথে কাজ
নিলাম। পরিশেষে আমি মক্কায় তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি
কী?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি নবী।’’
আমি বললাম, ‘নবী কী?’ তিনি বললেন, ‘‘আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।’’ আমি
বললাম, ‘কী নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ
রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না
করার নির্দেশ দিয়ে।’’ আমি বললাম, ‘এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে?’ তিনি বললেন, ‘‘একজন
স্বাধীন মানুষ এবং একজন কৃতদাস।’’ তখন তাঁর সঙ্গে আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ) ছিলেন।
আমি বললাম, ‘আমিও আপনার অনুগত।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি এখন এ কাজ কোনো অবস্থাতেই করতে
পারবে না। তুমি কি আমার অবস্থা ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাও না? অতএব তুমি (এখন)
বাড়ি ফিরে যাও। অতঃপর যখন তুমি আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার
কাছে এসো।’’
সুতরাং আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট চলে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পরিশেষে) মদ্বীনা চলে এলেন, আর আমি স্বপরিবারেই ছিলাম। অতঃপর
আমি খবরাখবর নিতে আরম্ভ করলাম এবং যখন তিনি মদ্বীনায় আগমন করলেন, তখন আমি (তাঁর
ব্যাপারে) লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। অবশেষে আমার পরিবারের কিছু লোক মদ্বীনায়
এল। আমি বললাম, ‘ঐ লোকটার অবস্থা কি, যিনি (মক্কা ত্যাগ করে) মদ্বীনা এসেছেন?’
তারা বলল, ‘লোকেরা তার দিকে ধাবমান। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা
করেছিল; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হয়নি।’
অতঃপর আমি মদ্বীনা এসে তাঁর খিদমতে হাযির হলাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর
রাসূল! আপনি আমাকে চিনতে পারছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তো ঐ ব্যক্তি, যে
মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিল।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা
আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা---তা আমাকে বলুন? আমাকে নামায
সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি ফজরের নামায পড়। তারপর সূর্য এক বল্লম বরাবর
উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। কারণ তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয়
(অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং সে সময় কাফেররা তাকে সিজদা করে।
পুনরায় তুমি নামায পড়। কেননা, নামাযে ফেরেশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন, যতক্ষণ না ছায়া
বল্লমের সমান হয়ে যায়। অতঃপর নামায থেকে বিরত হও। কেননা, তখন জাহান্নামের আগুন
উস্কানো হয়। অতঃপর যখন ছায়া বাড়তে আরম্ভ করে, তখন নামায পড়। কেননা, এ নামাযে
ফেরেশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন। পরিশেষে তুমি আসরের নামায পড়। অতঃপর সূর্য ডোবা
পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকো। কেননা, সূর্য শয়তানের দু’ শিঙ্গের মধ্যে অস্ত
যায় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং তখন কাফেররা তাকে সিজদাহ করে।’’
পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে ওযূ সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন,
‘‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি নিকটে করে (হাত ধোওয়ার পর) কুল্লি করে এবং নাকে পানি
নিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর
সে যখন আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধোয়, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির
শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার হাত দু’খানি কনুই পর্যন্ত
ধোয়, তখন তার হাতের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়।
অতঃপর সে যখন তার মাথা মাসাহ করে, তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের ডগার পানির সাথে
ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পা দু’খানি গাঁট পর্যন্ত ধোয়, তখন তার পায়ের পাপরাশি
তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে গিয়ে নামায পড়ে, আল্লাহর
প্রশংসা ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে--যার তিনি যোগ্য এবং অন্তরকে আল্লাহ তা‘আলার
জন্য খালি করে, তাহলে সে ঐ দিনকার মত নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন তার মা তাকে
প্রসব করেছিল।’’
তারপর ‘আমর ইবনে আবাসাহ (রাঃ) এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আবূ উমামা (রাঃ)র নিকট বর্ণনা করলেন। আবূ উমামাহ (রাঃ) তাঁকে
বললেন, ‘হে ‘আমর ইবনে ‘আবাসাহ! তুমি যা বলছ তা চিন্তা করে বল! একবার ওযূ করলেই কি
এই ব্যক্তিকে এতটা মর্যাদা দেওয়া হবে?’ ‘আমর বললেন, ‘হে আবূ উমামাহ! আমার বয়স ঢের
হয়েছে, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যুও নিকটবর্তী। (ফলে এ অবস্থায়)
আল্লাহ তা‘আলা অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মিথ্যা
আরোপ করার আমার কী প্রয়োজন আছে?
যদি আমি এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে একবার,
দু’বার, তিনবার এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, তাহলে কখনই তা বর্ণনা করতাম না।
কিন্তু আমি তাঁর নিকট এর চেয়েও অধিকবার শুনেছি।’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ৮৩২, নাসায়ী ১৪৭, ৫৭২, ৫৮৪, ইবনু মাজাহ ২৮৩,
১২৫১, ১৩৫৪, আহমাদ ১৬৫৬৬, ১৬৫৭১, ১৬৫৭৮, ১৬৫৮০, ১৮৯৪০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪৪
وَعَن أَبي مُوسَى الأشعَرِي رضي الله عنه،
عَنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا أرَادَ اللهُ تَعَالَى رَحمَةَ
أُمَّةٍ، قَبَضَ نَبيَّهَا قَبْلَها، فَجَعَلَهُ لَهَا فَرطاً وَسَلَفاً بَيْنَ
يَدَيْهَا، وإذَا أَرَادَ هَلَكَةَ أُمَّةٍ، عَذَّبَهَا وَنَبِيُّهَا حَيٌّ،
فَأَهلَكَهَا وَهُوَ حَيٌّ يَنظُرُ، فَأَقَرَّ عَينَهُ بِهَلاَكِهَا حِينَ
كَذَّبُوهُ وَعَصَوا أمْرَهُ ». رواه مسلم
আবূ
মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন উম্মতের প্রতি
অনুগ্রহ করার ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নবীকে তাদের পূর্বেই তুলে নেন। অতঃপর তিনি
তাঁকে সেই উম্মতের জন্য অগ্রগামী ও ব্যবস্থাপক বানিয়ে দেন। আর যখন তিনি কোন
উম্মতকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন, তখন তাদেরকে তাদের নবীর উপস্থিতিতে শাস্তি দেন।
তিনি নিজ জীবদ্দশায় তাদের ধ্বংস স্বচক্ষে দেখেন। সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে
নবীর চক্ষুশীতল করেন, যখন তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী মনে করে এবং তাঁর আদেশ অমান্য
করে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২২৮৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫২
আল্লাহর কাছে ভাল আশা রাখার
মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা (মূসা আলাইহিস
সালাম-এর অনুসারী) এক নেক বান্দার ব্যাপারে সংবাদ দিয়ে বলেন,
﴿ وَأُفَوِّضُ أَمۡرِيٓ إِلَى ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ٤٤ فَوَقَىٰهُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِ مَا مَكَرُواْۖ ﴾ [غافر: ٤٤، ٤٥]
অর্থাৎ “আমি আমার ব্যাপার আল্লাহকে সোপর্দ করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দাসদের প্রতি
সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে ওদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হতে রক্ষা করলেন
এবং কঠিন শাস্তি ফিরআউন সম্প্রদায়কে গ্রাস করল।” (সূরা গাফির ৪৪-৪৫ আয়াত)
৪৪৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن
رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أَنَّهُ قَالَ: «قَالَ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ
-: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ حَيْثُ يَذْكُرُنِي، وَاللهِ،
للهُ أفْرَحُ بِتَوبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أحَدِكُمْ يَجِدُ ضَالَّتَهُ بالفَلاَةِ،
وَمَنْ تَقَرَّبَ إلَيَّ شِبْراً، تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعاً، وَمَنْ
تَقَرَّبَ إِلَيَّ ذِرَاعاً، تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعاً، وَإِذَا أقْبَلَ
إِلَيَّ يَمْشِي أقْبَلْتُ إِلَيْهِ أُهَرْوِلُ ». متفقٌ عليه
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ আয্যা অজাল্ল বলেন, ‘আমি সেইরূপ,
যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন যে আমাকে স্মরণ করে।
আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি
অপেক্ষা বেশি খুশী হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আর যে
ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর
হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর
হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।’’
(বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, মুসলিম ২৬৭৫,
তিরমিযী ২৩৮৮, ইবনু মাজাহ ৩৭২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ২৭৪০৯, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪,
৯৪৫৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪৬
وَعَن جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم قَبلَ مَوْتِه بِثَلاَثَةِ أَيَّامٍ، يَقُولُ: «لاَ يَمُوتَنّ أحَدُكُمْ
إِلاَّ وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللهِ - عَزَّ وَجَلَّ ». رواه مسلم
জাবের
ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর তিনদিন পূর্বে তাঁকে
বলতে শুনেছেন, ‘‘আল্লাহর প্রতি সুধারণা না রেখে তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই মৃত্যুবরণ
না করে।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৭৭৭, আবূ দাউদ ৩১১৩, ইবনু মাজাহ ৪১৩৭, আহমাদ
১৩৭১১, ১৩৯৭৭, ১৪০৭২, ১৪১২৩, ১৪১৭০, ১৪৭৭৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪৭
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «قَالَ اللهُ
تَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ
عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ وَلاَ أُبَالِي . يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَت ذُنُوبُكَ
عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِي . يَا
ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايا، ثُمَّ
لَقَيْتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئاً، لأَتَيْتُكَ بقُرَابِها مَغْفِرَةً ». رواه
الترمذي، وقال: حديث حسن»
নাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যাবৎ তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, তাবৎ
আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম
সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও,
আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী
পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক,
তাহলে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।’’ (তিরমিযী, হাসান)
[১]
[১] তিরমিযী ৩৫৪০
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫৩
একই সাথে আল্লাহর প্রতি ভয় ও
আশা রাখার বিবরণ
জ্ঞাতব্য যে, সুস্থ অবস্থায়
বান্দার উচিত হল, অন্তরে আল্লাহর আযাবের ভয় এবং তাঁর রহমতের আশা রাখা। এ ক্ষেত্রে
ভয় ও আশা উভয়ই সমান হবে। পক্ষান্তরে অসুস্থ অবস্থায় নিছকভাবে আশা রাখা উচিত। কুরআন
ও সুন্নাহ এবং অন্যান্য স্পষ্ট উক্তিতে এ কথার ভূরি ভূরি প্রমাণ বর্তমান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَلَا يَأۡمَنُ مَكۡرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ﴾ [الاعراف: ٩٩]
অর্থাৎ “তারা কি আল্লাহর কৌশলের ভয় রাখে না? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত
কেউই আল্লাহর কৌশলের হতে নিরাপদ বোধ করে না।” (সূরা আ‘রাফ ৯৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّهُۥ لَا يَاْيَۡٔسُ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ﴾ [يوسف: ٨٧]
অর্থাৎ “অবিশ্বাসী (কাফের) সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয় না।”
(সূরা ইউসুফ ৮৭ আয়াত)
অন্য জায়গায় তিনি বলেন,
﴿ يَوۡمَ تَبۡيَضُّ وُجُوهٞ وَتَسۡوَدُّ وُجُوهٞۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٦]
অর্থাৎ “সেদিন কতকগুলো মুখমণ্ডল সাদা (উজ্জ্বল) হবে এবং কতকগুলো মুখমণ্ডল কালো
হবে।” (আলে ‘ইমরান ১০৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٦٧ ﴾ [الاعراف: ١٦٧]
অর্থাৎ “আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে সত্বর এবং তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালুও।” (সূরা আ‘রাফ ১৬৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِي نَعِيمٖ ١٣ وَإِنَّ ٱلۡفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٖ ١٤ ﴾ [الانفطار: ١٣، ١٤]
অর্থাৎ “পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে এবং পাপাচারীরা থাকবে (জাহীম)
জাহান্নামে।” (সূরা ইনফিত্বার ১৩-১৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَأَمَّا مَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٦ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ ٧ وَأَمَّا مَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٨ فَأُمُّهُۥ هَاوِيَةٞ ٩ ﴾ [القارعة: ٦، ٩]
অর্থাৎ “তখন যার (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, সে তো সন্তোষময় জীবনে (সুখে) থাকবে।
কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে, তার স্থান হবে হাবিয়াহ।” (সূরা ক্বারিয়াহ ৬-৯ আয়াত)
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আশা ও ভয় রাখার কথা কুরআন মাজীদের কোন কোন স্থানে
মাত্র একটি আয়াতে, কোন স্থানে দু’টি আয়াতে এবং কোন স্থানে তিন বা ততোধিক আয়াতে
একত্রে বিবৃত হয়েছে।
৪৪৮
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَوْ يَعْلَمُ
الْمُؤمِنُ مَا عِنْدَ الله مِنَ العُقُوبَةِ، مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ،
وَلَوْ يَعْلَمُ الكَافِرُ مَا عِنْدَ الله مِنَ الرَّحْمَةِ، مَا قَنَطَ مِنْ جَنَّتِهِ
أحَدٌ ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যদি মু’মিন জানত যে, আল্লাহর নিকট কী
শাস্তি রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাতের আশা করত না। আর যদি কাফের জানত যে, আল্লাহর
নিকট কী করুণা রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না।’’ (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৭৫৫, তিরমিযী ৩৫৪২, আহমাদ ৮২১০, ২৭৫০৬, ৯৯১০
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৪৯
وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله
عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ:« إِذَا
وُضِعَتِ الجنازةُ واحْتَمَلَهَا النَّاسُ أَوِ الرِّجَالُ عَلَى أعناقِهِمْ،
فَإنْ كَانَتْ صَالِحَةً، قَالَتْ: قَدِّمُونِي قَدِّمُونِي، وَإنْ كَانَتْ غَيْرَ
صَالِحَةٍ، قَالَتْ: يَا وَيْلَهَا! أَيْنَ تَذْهَبُونَ بِهَا؟ يَسْمَعُ صَوْتَهَا
كُلُّ شَيْءٍ إِلاَّ الإنْسانُ، وَلَوْ سَمِعَهُ صَعِقَ». رواه البخاري
আবূ
সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন জানাযা খাটে রাখা
হয় এবং লোকেরা অথবা পুরুষরা কাঁধে বহন করতে শুরু করে, তখন সে নেককার হলে বলতে
থাকে, ‘আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও।’ আর বদকার হলে সে
বলতে থাকে, ‘হায় ধ্বংস আমার! তোমরা এটিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?’ মানুষ ছাড়া সবাই তার
শব্দ শুনতে পায়। মানুষ তা শুনলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত। (বা মারা যেত।)’’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৩১৪, ১৩১৬, ১৩৮০, নাসায়ী ১৯০১, আহমাদ
১০৯৭৯, ১১১৫৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫০
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «الجَنَّةُ أقْرَبُ
إِلى أحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ، وَالنَّارُ مِثْلُ ذلك ». رواه البخاري
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাত তোমাদের কারো জুতোর ফিতার
চাইতেও বেশী নিকটবর্তী, আর জাহান্নামও তদ্রূপ।’’ (বুখারী) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৪৮৮, আহমাদ ৩৬৫৮, ৩৯১৩, ৪২০৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫৪
আল্লাহর ভয়ে এবং তাঁর
সাক্ষাতের আনন্দে কান্না করার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيَخِرُّونَ لِلۡأَذۡقَانِ يَبۡكُونَ وَيَزِيدُهُمۡ خُشُوعٗا۩ ١٠٩ ﴾ [الاسراء: ١٠٩]
অর্থাৎ “তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে (সিজদা) দেয় এবং এ (কুরআন) তাদের বিনয়
বৃদ্ধি করে।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ১০৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ أَفَمِنۡ هَٰذَا ٱلۡحَدِيثِ تَعۡجَبُونَ ٥٩ وَتَضۡحَكُونَ وَلَا تَبۡكُونَ ٦٠ ﴾ [النجم: ٥٩، ٦٠]
অর্থাৎ “তোমরা কি এই কথায় বিস্ময়বোধ করছ? এবং হাসি-ঠাট্টা করছ! ক্রন্দন করছ না?”
(সূরা নাজম ৫৯-৬০ আয়াত)
৪৫১
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ لِي النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم: «اِقْرَأْ عَليَّ القُرْآنَ » قُلتُ: يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أَقرَأُ عَلَيْكَ، وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ ؟!
قَالَ: «إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أسْمَعَهُ مِنْ غَيرِي » فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ سُورَةَ
النِّسَاءِ، حَتَّى جِئْتُ إِلى هذِهِ الآيَةِ: ﴿ فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد
وجئنا بك على هؤلاء شهيداً ﴾ [النساء: ٤١] قَالَ: «حَسْبُكَ الآنَ » فَالَتَفَتُّ
إِلَيْهِ فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ . متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি আমার সামনে কুরআন
তিলাওয়াত কর।’’ উত্তরে আমি আরজ করলাম, ‘আমি আপনার সামনে তিলাওয়াত করব, অথচ তা
আপনার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি অন্যের কাছ থেকে তা শুনতে
ভালবাসি।’’ অতএব আমি সূরা ‘নিসা’ তিলাওয়াত করলাম। পরিশেষে যখন আমি এ আয়াতে এসে
পৌঁছলাম; যার অর্থ, ‘‘তখন তাদের কী অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন
সাক্ষী (নবী) উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব?’’ তখন তিনি
আমাকে বললেন, ‘‘যথেষ্ট, এবার থাম।’’ আমি তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর চক্ষু দু’টি থেকে
অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছে। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৪৫৮২, ৫০৪৯, ৫০৫০, ৫০৫৫, ৫০৫৬, মুসলিম
৮০০, তিরমিযী ৩০২৪, ৩০২৫, আবূ দাউদ ৩৬৬৮, ইবনু মাজাহ ৪১৯৪, আহমাদ ৩৫৪০, ৩৫৯৫, ৪১০৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫২
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَبَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم خُطبَةً مَا سَمِعْتُ
مِثلَهَا قَطُّ، فَقَالَ: «لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ، لَضحِكْتُمْ قَلِيلاً
وَلَبَكَيتُمْ كَثِيراً ». فَغَطَّى أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
وَجُوهَهُمْ، وَلَهُمْ خَنِينٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এমন ভাষণ দিলেন যে, ওর মত (ভাষণ) কখনোও
শুনিনি। (তাতে) তিনি বললেন, ‘‘যা আমি জানি তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা কম
হাসতে এবং অধিক কাঁদতে।’’ (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁদের চেহারা ঢেকে নিলেন এবং তাদের বিলাপের রোল আসতে
লাগল। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৯৩, ৫৪০, ৪৬২১, ৬৩৬২, ৬৪৮৬, ৭০৯১, ৭২৯৪,
৭২৯৫, মুসলিম ২৩৫৯, আহমাদ ১১৬৩৩, ১২২৪৮, ১২৩৭৫, ১২৪০৯, ১২৭৩৫, ১৩২৫৪
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫৩
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَلِجُ النَّارَ
رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ في الضَّرْعِ، وَلاَ
يَجْتَمِعُ غُبَارٌ في سَبِيلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ ». رواه الترمذي، وقال:
حديثٌ حَسنٌ صحيحٌ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না,
যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে, যতক্ষণ না (দোহনকৃত) দুধ বাঁটে ফিরে যাবে।
(অর্থাৎ দু’টোই অসম্ভব)। আর আল্লাহর রাস্তার ধুলো ও জাহান্নামের ধোঁয়া একত্রিত হবে
না।’’ (তিরমিযী, হাসান সহীহ) [১]
[১] তিরমিযী ১৬৩৩, ২৩১১, নাসায়ী ৩১০৭, ৩১০৮, ৩১০৯, ৩১১০,
১৩১১১, ৩১১২, ইবনু মাজাহ ২৭৭৪, আহমাদ ১০১৮২
হাদিসের মানঃহাসান সহিহ
৪৫৪
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:« سَبْعَةٌ
يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ،
وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ الله تَعَالَى، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ
بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا
عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إنِّي
أخَافُ الله، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ
شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ
عَيْنَاهُ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে সেই
দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না;
(তারা হল,) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ তা‘আলার
ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের
প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে
বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার
উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী
(ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই
ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত
পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার
উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’ (বুখারী-মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, ৬৮০৬, মুসলিম ১০৩১,
তিরমিযী ২৩৯১, নাসায়ী ৫৩৮০, আহমাদ ৯৩৭৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫৫
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ الشِّخِّيرِ رضي
الله عنه، قَالَ: أَتَيتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
وَهُوَ يُصَلِّي وَلِجَوْفِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ المِرْجَلِ مِنَ البُكَاءِ . حديث
صحيح رواه أَبو داود والترمذي في الشمائل بإسناد صحيح
আব্দুল্লাহ
ইবনে শিখখীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি
নামায পড়ছিলেন এবং তাঁর বুক থেকে চুলার হাঁড়ির (ফুটন্ত পানির) মত কান্নার অস্ফুট রোল
শোনা যাচ্ছিল।’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে, শামায়েলে তিরমিযী বিশুদ্ধ সূত্রে) [১]
[১] নাসায়ী ১২১৪, আবূ দাউদ ৯০৪, আহমাদ ১৫৮৭৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫৬
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لأُبَي بنِ كَعبٍ رضي الله
عنه: «إنَّ الله - عَزَّ وَجَلَّ - أَمَرَنِي أَنْ أقْرَأَ عَلَيْكَ: ﴿ لَمۡ
يَكُنِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ﴾ [البينة: ١] قَالَ: وَسَمَّانِي ؟ قَالَ: «نَعَمْ »
فَبَكَى أُبَيٌّ . متفقٌ عَلَيْهِ . وَفِي رِوَايَةٍ: فَجَعَلَ أُبَيٌّ يَبْكِي .
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ)-কে বললেন,
‘‘আল্লাহ আমাকে আদেশ করলেন যে, আমি তোমাকে ‘সূরা লাম য়্যাকুনিল্লাযীনা কাফারু’ পড়ে
শুনাই।’’ উবাই ইবন কা‘ব বললেন, ‘(আল্লাহ কি) আমার নাম নিয়েছেন?’ তিনি বললেন,
‘‘হ্যাঁ।’’ সুতরাং উবাই (খুশীতে) কেঁদে ফেললেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, উবাই কাঁদতে
লাগলেন। (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৩৮০৯, ৪৯৫৯, ৪৯৬০, ৪৯৬১, মুসলিম ৭৯৯,
তিরমিযী ৩৭৯২, আহমাদ ১১৯১১, ১১৯৯৫, ১২৫০৮, ১২৮৭৩, ১৩০৩০, ১৩৪৭২, ১৩৬১৮
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫৭
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
أَبُو بَكرٍ لِعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: انْطَلِقْ بِنَا إِلَى أُمِّ أيْمَنَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا
نَزُورُهَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَزُورُهَا،
فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَيْهَا، بَكَتْ، فَقَالاَ لَهَا: مَا يُبْكِيكِ ؟ أمَا
تَعْلَمِينَ أنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
فَقَالَتْ: مَا أبْكِي أَنْ لاَ أَكُونَ أَعْلَمُ أنَّ مَا عِنْدَ الله تَعَالَى
خَيْرٌ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَلَكِنْ أبكي أنَّ الوَحْيَ قدِ
انْقَطَعَ مِنَ السَّماءِ، فَهَيَّجَتْهُمَا عَلَى البُكَاءِ، فَجَعَلا
يَبْكِيَانِ مَعَهَا . رواه مسلم
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনাবসানের পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) উমার
(রাঃ)-কে বললেন, ‘চলুন, আমরা উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, যেমন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন।’
সুতরাং যখন তাঁরা উম্মে আইমানের কাছে পৌঁছলেন, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। অতঃপর তাঁরা
তাঁকে বললেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য (দুনিয়া থেকে) অধিক উত্তম?’
তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি এ জন্য কান্না করছি না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা অধিকতর উত্তম, সে কথা আমি
জানি না। কিন্তু আমি এ জন্য কাঁদছি যে, আসমান হতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল।’ উম্মে
আইমান (তাঁর এ দুঃখজনক কথা দ্বারা) ঐ দু’জনকে কাঁদতে বাধ্য করলেন। ফলে তাঁরাও তাঁর
সাথে কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম) [১]
[১] মুসলিম ২৪৫৪, ইবনু মাজাহ ১৬৩৫
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ: لَمَّا اشْتَدَّ بِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَجَعُهُ، قِيلَ لَهُ
فِي الصَّلاَةِ، فَقَالَ: مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ فَقَالَت
عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: إنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ رَقِيقٌ، إِذَا قَرَأَ
القُرْآنَ غَلَبَهُ البُكَاءُ، فَقَالَ: مُرُوهُ فَليُصَلِّ
وَفِي رِوَايَةٍ عَن عَائِشَةٍَ، رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: قُلتُ: إنَّ أَبَا
بَكْرٍ إِذَا قَامَ مَقَامَكَ لَمْ يُسْمِعِ النَّاسَ مِنَ البُكَاءِ . متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
(মরণ রোগে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কষ্ট বেড়ে গেল, তখন
তাঁকে (জামা‘আত সহকারে) নামায পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা
আবূ বকরকে নামায পড়াতে বল।’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘আবূ বকর নরম মনের
মানুষ, কুরআন পড়লেই তিনি কান্না সামলাতে পারেন না।’ কিন্তু পুনরায় তিনি বললেন,
‘‘তাকে নামায পড়াতে বল।’’
আয়েশা থেকে অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘আবূ বকর যখন আপনার জায়গায়
দাঁড়াবেন, তখন তিনি কান্নার কারণে লোকদেরকে (কুরআন) শুনাতে পারবেন না।’ (বুখারী ও
মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ৬৮২, ১৯৮, ৬৬৪, ৬৬৫, ৬৭৯, ৬৮৩, ৬৮৭,
৭১২, ৭১৩, ৭১৬, ২৫৮৮, ৩০৯৯, ৩৩৮৪, ৪৪৪২, ৪৪৪৫, ৫৭১৪, ৭৩০৩, মুসলিম ৪১৮, তিরমিযী ৩৬৭২,
ইবনু মাজাহ ১১২৩২, ১২৩৩, ১৬১৮, আহমাদ ৫১১৯, ২৩৫৮৩, ২৪১২৬, ২৫৭৯১, মুওয়াত্তা মালিক ৪১৪,
দারেমী ১২৫৭
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৫৯
وَعَن إِبرَاهِيمَ بنِ عَبدِ الرَّحمَانِ
بنِ عَوفٍ: أَنَّ عَبدَ الرَّحمَانِ بنَ عَوفٍ رضي الله عنه أُتِيَ بِطَعَامٍ
وَكَانَ صَائِماً، فَقَالَ: قُتِلَ مُصْعَبُ بنُ عُمَيْرٍ رضي الله عنه، وَهُوَ
خَيْرٌ مِنِّي، فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مَا يُكَفَّنُ فِيهِ إِلاَّ بُرْدَةٌ إِنْ
غُطِّيَ بِهَا رَأسُهُ بَدَتْ رِجْلاهُ ؛ وَإنْ غُطِّيَ بِهَا رِجْلاَهُ بَدَا
رَأسُهُ، ثُمَّ بُسِطَ لَنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا بُسِطَ - أَو قَالَ: أُعْطِينَا
مِنَ الدُّنْيَا مَا أُعْطِينَا- قَدْ خَشِينا أنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ
لَنَا، ثُمَّ جَعَلَ يَبكِي حَتَّى تَرَكَ الطَّعَامَ . رواه البخاري
ইব্রাহীম
ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একদিন
আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর কাছে খাবার আনা হল, তখন তাঁর রোযা
ছিল। তিনি বললেন, ‘মুস‘আব ইবনে ‘উমাইর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু শহীদ হলেন। আর তিনি
ছিলেন আমার চেয়ে ভাল লোক। (অথচ) তাঁকে কাফন দেওয়ার মত এমন একটি চাদর ভিন্ন অন্য
কিছু পাওয়া গেল না, যা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে পা দু’টি বের হয়ে যাচ্ছিল এবং পা
দু’টি ঢাকলে মাথা বের হয়ে যাচ্ছিল! তারপর আমাদের জন্য পৃথিবীর যে প্রাচুর্য দেওয়া
হল, তা হল।' অথবা তিনি বললেন, ‘আমাদেরকে পার্থিব সম্পদ যা দেওয়া হল, তা হল। আমাদের
আশংকা হয় যে, আমাদের সৎকর্মের (বিনিময়) আমাদের জন্য ত্বরান্বিত করা হয়েছে। অতঃপর
তিনি কাঁদতে লাগলেন, এমনকি খাবারও পরিহার করলেন।’
(সহীহুল বুখারী ১২৭৫, ১২৭৪, ৪০৪৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬০
وَعَن أَبي أُمَامَة صُدَيِّ بنِ عَجلاَنَ
البَاهِلِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: لَيْسَ
شَيْءٌ أحَبَّ إِلَى اللهِ تَعَالَى مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأثَرَيْنِ: قَطَرَةُ
دُمُوعٍ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَقَطَرَةُ دَمٍ تُهَرَاقُ في سَبيلِ اللهِ.
وَأَمَّا الأَثَرَانِ: فَأَثَرٌ فِي سَبيلِ اللهِ تَعَالَى، وَأَثَرٌ فِي
فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ الله تَعَالَى . رواه الترمذي، وقال: حديثٌ حسنٌ
আবূ
উমামাহ সুদাই ইবনে ‘আজলান বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট দু’টি বিন্দু এবং দু’টি
চিহ্ন অপেক্ষা কোনো বস্তু প্রিয় নয়। (এক) ঐ অশ্রু বিন্দু যা আল্লাহর ভয়ে বের হয়
(দুই) ঐ রক্ত বিন্দু যা আল্লাহর পথে বহিয়ে দেওয়া হয়।কিন্তু দু’টি চিহ্ন যা আল্লাহর
ভয়ে বের হয় (দুই) ঐ রক্ত বিন্দু যা আল্লাহর পথে বহিয়ে দেওয়া হয়।কিন্তু দু’টি চিহ্ন
হলঃ (এক) ঐ চিহ্ন যা আল্লাহর পথে (জিহাদ করে) হয় (দুই) আল্লাহর কোনো ফরয কাজ আদায়
করে যে চিহ্ন (দাগ) পড়ে।’’ (তিরমিযী, হাসান)
এ বিষয়ে আরো হাদীস রয়েছে। তার মধ্যে একটি ‘ইরবায ইবনে সারিয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু
‘আনহু-এর হাদীস, ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন
মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল।’
যা ১৬১ নম্বরে অতিবাহিত হয়েছে।
(তিরমিযী ১৬৬৯)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫৫
দুনিয়াদারি ত্যাগ করার
মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
৪৬১
عَن عَمرِو بنِ عَوفٍ الأنصَارِي رضي الله
عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بَعَثَ أَبَا
عُبَيدَةَ بنَ الجَرَّاحِ رضي الله عنه إِلَى الْبَحْرَيْنِ يَأتِي بِجِزْيَتِهَا،
فَقَدِمَ بمَالٍ مِنَ الْبَحْرَيْنِ، فَسَمِعَتِ الأَنْصَارُ بقُدُومِ أَبي
عُبيْدَةَ، فَوَافَوْا صَلاَةَ الفَجْرِ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، انْصَرفَ،
فَتَعَرَّضُوا لَهُ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم حِيْنَ رَآهُمْ، ثُمَّ قَالَ: أظُنُّكُمْ سَمعتُمْ أنَّ أَبَا عُبَيْدَةَ
قَدِمَ بِشَيْءٍ مِنَ الْبَحْرَيْنِ ؟ فَقَالُوا: أَجَل، يَا رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، فَقَالَ: أبْشِرُوا وَأَمِّلُوا مَا يَسُرُّكُمْ، فَوَالله مَا
الفَقْرَ أخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنِّي أخْشَى أنْ تُبْسَط الدُّنْيَا عَلَيْكُمْ
كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا
تَنَافَسُوهَا، فَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أهْلَكَتْهُمْ . متفقٌ عَلَيْهِ
.
‘আমর ইবনে ‘আউফ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আবূ উবাইদাহ ইবনে জার্রাহকে জিযিয়া
(ট্যাক্স) আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। অতঃপর তিনি বাহরাইন থেকে (প্রচুর) মাল
নিয়ে এলেন। আনসারগণ তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে শরীক হলেন। যখন তিনি নামায পড়ে (নিজ বাড়ি) ফিরে যেতে
লাগলেন, তখন তারা তাঁর সামনে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদেরকে দেখে হেসে বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, তোমরা আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু
(মাল) নিয়ে এসেছে, তা শুনেছ।’’ তারা বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘সুসংবাদ গ্রহণ
কর এবং তোমরা সেই আশা রাখ, যা তোমাদেরকে আনন্দিত করবে। তবে আল্লাহর কসম! তোমাদের
উপর দারিদ্র্য আসবে আমি এ আশংকা করছি না। বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী
উম্মতের ন্যায় তোমাদেরও পার্থিব জীবনে প্রশস্ততা আসবে। আর তাতে তোমরা
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যেমন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। অতঃপর তা তোমাদেরকে
ধ্বংস করে দেবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।’’
(সহীহুল বুখারী ৩১৫৮, ৪০১৫, ৬৪২৫, মুসলিম ২৯৬১, তিরমিযী
২৪৬২, ইবনু মাজাহ ৩৯৯৭, আহমাদ ১৬৭৮৩, ১৮৪৩৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬২
وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
قَالَ: جَلَسَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَلَى
الْمِنْبَرِ، وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ، فَقَالَ: «إنَّ ممَّا أخَافُ عَلَيْكُمْ مِنْ
بَعْدِي مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَزِينَتِهَا». متفقٌ
عَلَيْهِ
আবূ
সাইদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। অতঃপর
তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদের উপর যার আশঙ্কা করছি তা হল এই যে, তোমাদের উপর দুনিয়ার
শোভা ও সৌন্দর্য (এর দরজা) খুলে দেওয়া হবে।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪৬৫, ৯২২, ২৮৪২, ৬৪২৭, মুসলিম ১০৫২, নাসায়ী
২৫৮১, ইবনু মাজাহ ৩৯৯৫, আহমাদ ১০৫৫১, ১০৭৭৩, ১১৪৫৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬৩
وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإنَّ
الله تَعَالَى مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا، فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ،
فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ ». رواه مسلم
উক্ত
রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং
আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। অতঃপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা
কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির
ব্যাপারে।’’
(মুসলিম ২৭৪২, তিরমিযী ২১৯১, ইবনু মাজাহ ৪০০০, আহমাদ ১০৭৫৯,
১০৭৮৫, ১১০৩৪, ১১১৯৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬৪
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: اَللهم لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشَ الآخِرَةِ
. متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত
জীবন।’’
(সহীহুল বুখারী ২৮৩৪, ২৮৩৫, ২৯৬১, ৩৭৯৫, ৩৭৯৬, ৪০৯৯, ৪১০০,
৬৪১৩, ৭২০১, মুসলিম ১৮০৫, তিরমিযী ৩৮৫৭, ইবনু মাজাহ ৭৪২, আহমাদ ১১৭৬৮, ১২৩১১, ১২৩২১,
১২৩৪৬, ১২৪৩৯, ১২৫৩৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬৫
وَعَنهُ، عَن رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاَثَةٌ: أهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ:
فَيَرْجِعُ اثْنَانِ، وَيَبْقَى وَاحِدٌ: يَرْجِعُ أهْلُهُ وَمَالُهُ وَيبْقَى
عَمَلُهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে
(সঙ্গে যায়)। দাফনের পর দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হল
তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর
তার আমল তার সাথেই থেকে যায়।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৫১৪, মুসলিম ২৯৬০, তিরমিযী ২৩৭৯, নাসায়ী
১৯৩৭, আহমাদ ১১৬৭০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬৬
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «يُؤْتَى بِأنْعَمِ أهْلِ الدُّنْيَا مِنْ
أهْلِ النَّارِ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَيُصْبَغُ فِي النَّارِ صَبْغَةً، ثُمَّ
يُقَالُ: يَا ابْنَ آدَمَ، هَلْ رَأيْتَ خَيْراً قَطُّ ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ
قَطُّ ؟ فَيَقُولُ: لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ، وَيُؤْتَى بِأشَدِّ النَّاسِ بُؤسَاً
في الدُّنْيَا مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ، فَيُصْبَغُ صَبْغَةً في الجَنَّةِ، فَيُقَالُ
لَهُ: يَا ابْنَ آدَمَ، هَلْ رَأيْتَ بُؤساً قَطُّ ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ
قَطُّ ؟ فيَقُولُ: لاَ وَاللهِ، مَا مَرَّ بِي بُؤْسٌ قَطُّ، وَلاَ رَأيْتُ
شِدَّةً قَطُّ ». رواه مسلم
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে
এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে
জাহান্নামে একবার (মাত্র) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি
কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে?’ সে বলবে, ‘না।
আল্লাহর কসম! হে প্রভু!’। আর জান্নাতীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে,
যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাত্র একবার) চুবানোর পর বলা
হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি (দুনিয়াতে) কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ
গেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন
বিপদও দেখিনি।’’
(মুসলিম ২৮০৭, আহমাদ ১২৬৯৯, ১৩২৪৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬৭
وَعَنِ المُسْتَوْرِدِ بنِ شَدَّادٍ رضي
الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:«
مَا الدُّنْيَا في الآخِرَةِ إِلاَّ مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ أُصْبُعَهُ في
اليَمِّ، فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ ». رواه مسلم
মুস্তাওরিদ
ইবনে শাদ্দাদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আখেরাতের মুকাবেলায় দুনিয়ার
দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে,
আঙ্গুলটি সমুদ্রের কতটুকু পানি নিয়ে ফিরছে।’’
(মুসলিম ২৮৫৮, তিরমিযী ২৩২৩, ইবনু মাজাহ ৪১০৮, আহমাদ ১৭৫৪৭,
১৭৫৪৮, ১৭৫৫৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬৮
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِالسُّوقِ وَالنَّاسُ
كَنَفَتَيْهِ، فَمَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ، فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ
بِأُذُنِهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَيُّكُم يُحِبُّ أنْ يَكُونَ هَذَا لَهُ بِدرْهَم ؟
فَقَالُوا: مَا نُحِبُّ أنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ ؟ ثُمَّ قَالَ:
أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ ؟ قَالُوا: وَاللهِ لَوْ كَانَ حَيّاً كَانَ عَيْباً،
إنَّهُ أسَكُّ فَكَيْفَ وَهُوَ ميِّتٌ ! فَقَالَ: فوَاللهِ للدُّنْيَا أهْوَنُ
عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ . رواه مسلم
জাবের
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের পাশ দিয়ে গেলেন।
এমতাবস্থায় যে, তাঁর দুই পাশে লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ছোট কানবিশিষ্ট একটি মৃত ছাগল
ছানার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি তার কান ধরে বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের
পরিবর্তে এটাকে নেওয়া পছন্দ করবে?’’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা কোনো জিনিসের বিনিময়ে এটা
নেওয়া পছন্দ করব না এবং আমরা এটা নিয়ে করবই বা কি?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি পছন্দ
কর যে, (বিনামূল্যে) এটা তোমাদের হোক?’’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি এটা জীবিত
থাকত তবুও সে ছোট কানের কারণে দোষযুক্ত ছিল। এখন তো সে মৃত (সেহেতু একে কে নেবে)?’
তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর কসম! তোমাদের নিকট এই মৃত ছাগল ছানাটা যতটা নিকৃষ্ট, দুনিয়া
আল্লাহর নিকট তার চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট।’’
(মুসলিম ২৯৫৭, আবূ দাউদ ১৮৬, আহমাদ ১৪৫১৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৬৯
وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ:
كُنْتُ أَمْشِي مَعَ النَّبي صلى الله عليه وسلم فِي حَرَّةٍ بِالمَدِينَةِ،
فَاسْتَقْبَلَنَا أُحُدٌ، فقال:« يَا أَبَا ذَرٍّ » قُلتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَ: «مَا يَسُرُّنِي أنَّ عِنْدِي مِثْلَ أُحُدٍ
هَذَا ذَهَباً تَمْضِي عَلَيَّ ثَلاَثَةُ أيّامٍ وَعِنْدِي مِنْهُ دِينَارٌ،
إِلاَّ شَيْءٌ أرْصُدُهُ لِدَيْنٍ، إِلاَّ أنْ أقُولَ بِهِ في عِبَادِ الله
هَكَذَا وَهَكَذَا وَهكَذَا» عَن يَمِينِهِ وَعَن شِمَالِهِ وَمِنْ خَلْفِهِ،
ثُمَّ سَارَ، فَقَالَ: «إنَّ الأَكْثَرينَ هُمُ الأَقَلُّونَ يَوْمَ القِيَامَةِ
إِلاَّ مَنْ قَالَ بالمَالِ هكَذَا وَهكَذَا وَهكَذَا » عَن يَمِينِهِ وَعَن
شِمَالِهِ وِمنْ خَلْفِهِ «وَقَلِيلٌ مَاهُمُ». ثُمَّ قَالَ لِي: «مَكَانَكَ لاَ
تَبْرَحْ حَتَّى آتِيكَ» ثُمَّ انْطَلَقَ في سَوادِ اللَّيْلِ حَتَّى تَوَارَى،
فَسَمِعْتُ صَوتاً، قَدِ ارْتَفَع، فَتَخَوَّفْتُ أنْ يَكُونَ أحَدٌ عَرَضَ
لِلنَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، فَأرَدْتُ أنْ آتِيهِ فَذَكَرتُ قَوْلَه: «لا
تَبْرَحْ حَتَّى آتِيَكَ » فَلَم أبْرَحْ حَتَّى أتَانِي، فَقُلْتُ: لَقَدْ
سَمِعْتُ صَوتاً تَخَوَّفْتُ مِنْهُ، فَذَكَرْتُ لَهُ، فَقَالَ: «وَهَلْ
سَمِعْتَهُ ؟ » قُلتُ: نَعَمْ، قَالَ: «ذَاكَ جِبريلُ أتَانِي فَقَالَ: مَنْ مَاتَ
مِنْ أُمَّتِكَ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئاً دَخَلَ الْجَنَّةَ »، قلت: وَإنْ
زَنَى وَإنْ سَرَقَ ؟ قَالَ:« وَإنْ زَنَى وَإنْ سَرَقَ ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا
لفظ البخاري
আবূ
যার্র রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মদীনার কালো পাথুরে
যমীনে হাঁটছিলাম। উহুদ পাহাড় আমাদের সামনে পড়ল। তিনি বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! এতে
আমি খুশী নই যে, আমার নিকট এই উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ থাকবে, এ অবস্থায় তিনদিন
অতিবাহিত হবে অথচ তার মধ্য হতে একটি দীনারও আমার কাছে অবশিষ্ট থাকবে। অবশ্য তা
থাকবে যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য বাকী রাখব অথবা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এইভাবে এইভাবে
এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করব।’’
অতঃপর (কিছু আগে) চলে তিনি বললেন, ‘‘প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন নিঃস্ব
হবে। অবশ্য সে নয় যে সম্পদকে (ফোয়ারার মত) এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও
পিছনে ব্যয় করে। কিন্তু এ রকম লোকের সংখ্যা নেহাতই কম।’’
তারপর তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে)
এসেছি।’’ এরপর তিনি রাতের অন্ধকারে চলতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি অদৃশ্য
হয়ে গেলেন। হঠাৎ আমি এক জোর শব্দ শুনলাম। আমি ভয় পেলাম যে, কোনো শত্রু হয়তো নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পড়েছে। সুতরাং আমি তাঁর নিকট যাওয়ার
ইচ্ছা করলাম, কিন্তু তাঁর কথা আমার স্মরণ হল, ‘‘তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি
তোমার কাছে (ফিরে) এসেছি।’’ সুতরাং আমি তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত বসে থাকলাম।
(তিনি ফিরে এলে) আমি বললাম, ‘আমি এক জোর শব্দ শুনলাম, যাতে আমি ভয় পেলাম।’ সুতরাং
যা শুনলাম আমি তা তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, ‘‘তুমি শব্দ শুনেছিলে?’’
আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘‘তিনি জিব্রাঈল ছিলেন। তিনি আমার কাছে এসে
বললেন, ‘আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মরবে, সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আমি বললাম, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও কি?’
তিনি বললেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬২৬৮, ১২৩৭, ২৩৮৮, ৩২২২, ৫৮২৭, ৬৪৪৩, ৬৪৪৪,
৭৪৮৭, মুসলিম ৯৪, তিরমিযী ২৬৪৪, আহমাদ ২০৮৪০, ২০৯০৫, ২০৯১৫, ২০৯৫৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭০
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن
رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ أُحُدٍ ذَهَباً،
لَسَرَّنِي أنْ لاَ تَمُرَّ عَلَيَّ ثَلاَثُ لَيالٍ وَعِنْدِي مِنْهُ شَيْءٌ
إِلاَّ شَيْءٌ أرْصُدُهُ لِدَيْنٍ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি আমার নিকট উহুদ পাহাড় সমান সোনা
থাকত, তাহলে আমি এতে আনন্দিত হতাম যে, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ মত বাকী রেখে অবশিষ্ট
সবটাই তিন দিন অতিবাহিত না হতেই আল্লাহর পথে খরচ করে ফেলি।’’
(সহীহুল বুখারী ২৩৮৯, ৬৪৪৫, ৭২২৮, মুসলিম ৯৯১, ইবনু মাজাহ
৪১৩২, আহমাদ ৭৪৩৫, ২৭৪১২, ৮৩৮৯, ৮৫৭৮, ৮৯২৭, ৯১৪৫, ২৭২২৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭১
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: انْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ أسْفَلَ مِنْكُمْ
وَلاَ تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ ؛ فَهُوَ أجْدَرُ أنْ لاَ تَزْدَرُوا
نِعْمَةَ الله عَلَيْكُمْ. متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ مسلم
وَفِي رِوَايَةِ البُخَارِي: إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ
في المَالِ وَالخَلْقِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أسْفَل مِنْهُ
উক্ত
সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(দুনিয়ার ধন-দৌলত ইত্যাদির দিক দিয়ে)
তোমাদের মধ্যে যে নীচে তোমরা তার দিকে তাকাও এবং যে তোমাদের উপরে তার দিকে তাকায়ো
না। যেহেতু সেটাই হবে উৎকৃষ্ট পন্থা যে, তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা
তুচ্ছ মনে করবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৪৯০, মুসলিম ২৯৬৩, আহমাদ ২৭৩৬৪, ৯৮৮৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭২
وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ، وَالدِّرْهَمِ، وَالقَطِيفَةِ،
وَالخَمِيصَةِ، إنْ أُعْطِيَ رَضِيَ، وَإنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ ». رواه
البخاري
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ধ্বংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের
গোলাম ও উত্তম পোশাক-আশাক ও উত্তম চাদরের গোলাম (দুনিয়াদার)! যদি তাকে দেওয়া হয়,
তাহলে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়।’’
(সহীহুল বুখারী ২৮৮৭, ৭৪৩৫, তিরমিযী ২৫৭৫, ইবনু মাজাহ
৪১৩৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭৩
وَعَنهُ رضي الله عنه، قَالَ: لَقَدْ
رَأيْتُ سَبعِينَ مِنْ أهْلِ الصُّفَّةِ، مَا مِنهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ:
إمَّا إزارٌ، وَإمَّا كِسَاءٌ، قَدْ رَبَطُوا في أعنَاقِهِمْ، فَمِنْهَا مَا
يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْن، وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الكَعْبَيْنِ، فَيَجْمَعُهُ
بِيَدِهِ كَراهِيَةَ أنْ تُرَى عَوْرَتُهُ . رواه البخاري
উক্ত
সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
তিনি বলেন, ‘আমি সত্তরজন (আহলে সুফ্ফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা
ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, (এক সঙ্গে
দু’টি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। অতঃপর সেই বস্ত্র
কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত
দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়!’
(সহীহুল বুখারী ৪৪২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭৪
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ، وَجَنَّةُ
الكَافِرِ ». رواه مسلم
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়া মু’মিনের জন্য
জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’’
(মুসলিম ২৯৫৬, তিরমিযী ২৩২৪, ইবনু মাজাহ ৪১১৩, আহমাদ ৮০৯০,
২৭৪৯১, ৯৯১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭৫
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
بِمَنْكِبَيَّ، فَقَالَ: «كُنْ في الدُّنْيَا كَأنَّكَ غَرِيبٌ، أَو عَابِرُ
سَبيلٍ» . وَكَانَ ابنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، يَقُولُ: إِذَا أمْسَيتَ
فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ المَسَاءَ،
وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ . رواه البخاري
ইবনে
উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, ‘‘তুমি এ
দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।’’ আর ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে
সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু
সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’
(সহীহুল বুখারী ৬৪১৬, তিরমিযী ২৩৩৩, ইবনু মাজাহ ৪১১৪,
আহমাদ ৪৭৫০, ৪৯৮২, ৬১২১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭৬
وَعَن أَبي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ
السَّاعِدِي رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَ: يَا رَسُولَ الله، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ
أحَبَّنِي اللهُ وَأحَبَّنِي النَّاسُ، فَقَالَ: «ازْهَدْ في الدُّنْيَا يُحِبّك
اللهُ، وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبّك النَّاسُ ». حديث حسن رواه ابن
ماجه وغيره بأسانيد حسنة
আবুল
আব্বাস সাহ্ল ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল!
আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও
আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে
ভালবাসবেন। আর লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে
ভালবাসবে।’’
(ইবনে মাজাহ প্রমুখ, হাসান সূত্রে, সিলসিলাহ সহীহাহ ৯৪৪নং)
(ইবনু মাজাহ ৪১০২)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪৭৭
وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه، مَا أَصَابَ
النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا، فَقَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِي مَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ
مَا يَمْلأ بِهِ بَطْنَهُ. رواه مسلم
নু‘মান
ইবনে বাশীর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে
দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে সে কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায়
থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট
ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’
(মুসলিম ২৯৭৭, ২৯৭৮, তিরমিযী ২৩৭২, ইবনু মাজাহ ৪১৪৬, আহমাদ
২৪২৪৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭৮
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنهَا،
قَالَتْ: تُوُفِّي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، وَمَا
فِي بَيْتِي مِنْ شَيْءٍ يَأكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلاَّ شَطْرُ شَعِيرٍ فِي رَفٍّ
لِي، فَأكَلْتُ مِنْهُ حَتَّى طَالَ عَلَيَّ، فَكِلْتُهُ فَفَنِيَ . متفقٌ
عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
,
‘রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন যে, তখন
একটা প্রাণীর খেয়ে বাঁচার মত কিছু খাদ্য আমার ঘরে ছিল না। তবে আমার তাকের মধ্যে
যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। কিন্তু যখন একদিন মেপে নিলাম, সেদিনই
তা শেষ হয়ে গেল।’
(সহীহুল বুখারী ৩০৯৭, ৬৪৫১, মুসলিম ২৯৭৩, তিরমিযী ২৪৬৭,
ইবনু মাজাহ ৩৩৪৫, আহমাদ ২৪২৪৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৭৯
وَعَن عَمرِو بنِ الحَارِثِ أَخِي
جُوَيْرِيَّةَ بِنتِ الحَارِثِ أُمِّ المُؤْمِنِينَ، رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ: مَا تَرَكَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عِنْدَ
مَوْتِهِ دِينَاراً، وَلاَ دِرْهَماً، وَلاَ عَبْداً، وَلاَ أَمَةً، وَلاَ شَيْئاً
إِلاَّ بَغْلَتَهُ الْبَيضَاءَ الَّتي كَانَ يَرْكَبُهَا، وَسِلاَحَهُ، وَأرْضاً
جَعَلَهَا لاِبْنِ السَّبِيلِ صَدَقَةً . رواه البخاري
উম্মুল
মু’মিনীন জুয়াইরিয়্যাহ বিনতে হারেসের ভাই ‘আমর ইবনে হারেস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিতঃ
‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর সময় কোনো দীনার, দিরহাম, ক্রীতদাস,
ক্রীতদাসী এবং কোনো জিনিসই ছেড়ে যাননি। তবে তিনি ঐ সাদা খচ্চরটি ছেড়ে গেছেন, যার
উপর তিনি সওয়ার হতেন এবং তাঁর হাতিয়ার ও কিছু জমি; যা তিনি মুসাফিরদের জন্য সাদকাহ
করে গেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ৪৪৬১, ২৭৩৯, ২৮৭৩, ২৯১২, ৩০৯৮, নাসায়ী
৩৫৯৪, ৩৫৯৫, ৩৫৯৬, আহমাদ ১৭৯৯০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৮০
وَعَن خَبَّابِ بنِ الأَرَتِّ رضي الله
عنه، قَالَ: هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَلْتَمِسُ وَجْهَ
اللهِ تَعَالَى، فَوَقَعَ أجْرُنَا عَلَى اللهِ، فَمِنَّا مَنْ مَاتَ وَلَمْ
يَأكُل مِنْ أجْرِهِ شَيْئاً، مِنْهُمْ: مُصْعَبُ بن عُمَيْرٍ رضي الله عنه،
قُتِلَ يَوْمَ أُحُد، وَتَرَكَ نَمِرَةً، فَكُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا
رَأْسَهُ، بَدَتْ رِجْلاَهُ، وَإِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رِجْلَيْهِ، بَدَا رَأسُهُ،
فَأمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، أنْ نُغَطِّي
رَأسَهُ، وَنَجْعَلُ عَلَى رِجْلَيْهِ شَيْئاً مِنَ الإذْخِرِ، وَمِنَّا مَنْ
أيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ، فَهُوَ يَهْدِبُهَا . متفقٌ عَلَيْهِ
খাব্বাব
ইবনে আরাত্ত্ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
‘আমরা আল্লাহর চেহারা (সন্তুষ্টি) লাভের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (মদীনা) হিজরত করলাম। যার সওয়াব আল্লাহর নিকট আমাদের
প্রাপ্য। এরপর আমাদের কেউ এ সওয়াব দুনিয়াতে ভোগ করার পূর্বেই বিদায় নিলেন। এর
মধ্যে মুস‘আব ইবনে উমাইর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু; তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হলেন এবং
শুধুমাত্র একখানা পশমের রঙিন চাদর রেখে গেলেন। আমরা (কাফনের জন্য) তা দিয়ে তাঁর
মাথা ঢাকলে তাঁর পা বেরিয়ে গেল। আর পা ঢাকলে তাঁর মাথা বেরিয়ে গেল। তাই
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, ‘‘তা দিয়ে
ওর মাথাটা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর ‘ইযখির’ ঘাস বিছিয়ে দাও।’’ আর আমাদের মধ্যে এমনও
লোক রয়েছেন, যাঁদের ফল পেকে গেছে। আর তাঁরা তা সংগ্রহ করছেন।’
(সহীহুল বুখারী ১২৭৬, ৩৮৯৭, ৩৯১৪, ৪০৪৭, ৪০৮২, ৬৪৩২, ৬৪৪৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৮১
وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِي رضي
الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
لَوْ كَانَت الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ الله جَنَاحَ بَعُوضَةٍ، مَا سَقَى
كَافِراً مِنْهَا شَرْبَةَ مَاءٍ . رواه الترمذي وقال:حديث حسن صحيح
সাহল
ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান
দুনিয়ার (মূল্য বা ওজন) থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও
পান করাতেন না।’’
(তিরমিযী ২৩২০, ইবনু মাজাহ ৪১১০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৮২
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «أَلاَ
إنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا، إِلاَّ ذِكْرَ اللهِ
تَعَالَى، وَمَا وَالاهُ، وَعَالِماً وَمُتَعَلِّماً» رواه الترمذي، وقال:حديث
حسنٌ
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘শোনো!
নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা কিছু আছে (সবই)। তবে আল্লাহর
যিক্র এবং তার সাথে সম্পৃক্ত জিনিস, আলেম ও তালেবে-,ইল্ম নয়।’’
(তিরমিযী ২৩২২, ইবনু মাজাহ ৪১১২)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪৮৩
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله
عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: لاَ
تَتَّخِذُوا الضَّيْعَةَ فَتَرْغَبُوا في الدُّنْيَا». رواه الترمذي، وقال: حديثٌ
حسنٌ
আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা জমি-জায়গা, বাড়ি-বাগান ও
শিল্প-ব্যবসায়ে বিভোর হয়ে পড়ো না। কেননা, (তাহলে) তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে
পড়বে।’’
(তিরমিযী ২৩২৮, আহমাদ ৩৫৬৯, ৪০৩৮, ৪২২২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৮৪
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: مَرَّ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ نُعَالِجُ خُصّاً لَنَا، فَقَالَ: «مَا هَذَا ؟ »
فَقُلْنَا: قَدْ وَهَى، فَنَحَنُ نُصْلِحُهُ، فَقَالَ: «مَا أرَى الأَمْرَ إِلاَّ
أعْجَلَ مِنْ ذَلِكَ » . رواه أَبو داود والترمذي بإسناد البخاري ومسلم، وقال
الترمذي:حديثٌ حسنٌ صحيحٌ
আব্দুল্লাহ
ইবনে ‘আমর ইবনুল আ’স রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন।
এমতাবস্থায় যে, আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর সংস্কার করছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘এটা
কী?’’ আমরা বললাম, ‘কুঁড়ে ঘরটি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল, তাই আমরা তা
মেরামত করছি।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি ব্যাপারটিকে (মৃত্যুকে) এর চাইতেও নিকটবর্তী
ভাবছি।’’
(তিরমিযী ২৩৩৫, আবূ দাউদ ৫২৩৫, ইবনু মাজাহ ৪১৬০, আহমাদ
৬৪৬৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৮৫
وَعَن كَعبِ بنِ عِيَاضٍ رضي الله عنه،
قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ:
إنَّ لِكُلِّ أُمَّةٍ فِتْنَةً، وفِتْنَةُ أُمَّتِي: المَالُ » رواه الترمذي،
وقال: حديثٌ حسنٌ صحيحٌ »
কা‘ব
ইবনে ‘ইয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি; ‘‘প্রত্যেক উম্মতের
জন্য ফিতনা রয়েছে এবং আমার উম্মতের ফিতনা হচ্ছে মাল।’’
(তিরমিযী ২৩৩৬, আহমাদ ১৭০১৭)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪৮৬
وَعَنْ أَبِيْ عَمْرٍو، وَيُقَاُلُ: أَبُوْ
عَبْدِ الله، وَيُقَالُ: أَبُوْ لَيْلىٰ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ رضي الله عنه،
أَنَّ النَّبِيَّصلى الله عليه وسلم قَالَ: « لَيْسَ لِإِبْنِ آدَمَ حَقٌّ فِيْ
سِوٰى هٰذِهِ الْخِصَالِ: بَيْتٌ يَسْكُنُهُ، وَثَوْبٌ يُوَارِي عَوْرَتَهُ وَجِلْفُ
الخُبْزُ، وَالمَاءِ » رواه الترمذي وقال: حديث صحيح.
আবূ
‘আমর ‘উসমান ইবনু আফ্ফান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আদম সন্তানের তিনটি বস্তু ব্যতীত কোন
বস্তুর অধিকার নেই। তা হলো: তার বসবাস করার জন্য একটি বাড়ি, শরীর আবৃত করার জন্য
কিছু কাপড় এবং কিছু রুটি ও পানি। হাদীসটি তিরমিযী বর্ণনা করে বলেন, এটি সহীহ
হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বরং হাদীসটি দুর্বল। এর সনদ দুর্বল
হওয়ার দু’টি কারণ রয়েছে। ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ গ্রন্থে (১০৬৩) এর দুর্বল হওয়ার কারণ
সম্পর্কে আলোচনা করেছি। (১) বর্ণনাকারী হুরাইস ইবনুস সায়েব সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ
তার সমস্যা ছিল না কিন্তু তিনি উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু এর উদ্ধৃতিতে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন, অথচ এটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়নি। আর সাজী তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। (২) দ্বিতীয় কারণ
হচ্ছে এই যে, হাদীসটি আসলে ইসরাঈলী কোন এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত হয়েছে। দারাকুতনীকে এ
হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেনঃ হুরাইস সন্দেহ্ করেছেন। সঠিক
হচ্ছে এই যে, হাসান ইবনু হুমরান কোন এক কিতাবী হতে বর্ণনা করেছেন। দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্
য‘ঈফা’’ উক্ত নম্বরে।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৪৮৭
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ الشِّخِّيرِ رضي
الله عنه، أنه قَالَ: أتَيْتُ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، وَهُوَ يَقْرَأُ: ﴿
ألهاكم التكاثر﴾ [التكاثر: ١] قَالَ:« يَقُولُ ابْنُ آدَمَ: مَالِي، مالي، وَهَلْ
لَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مِنْ مَالِكَ إِلاَّ مَا أكَلْتَ فَأفْنَيْتَ، أَو لَبِسْتَ
فَأَبْلَيْتَ، أَوْ تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ ؟! » رواه مسلم
আব্দুল্লাহ
ইবনে শিখ্খীর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, এমতাবস্থায় যে, তিনি ‘আলহাকুমুত
তাকাসুর’ অর্থাৎ প্রাচুর্য্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে।
(সূরা তাকাসুর) পড়ছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘আদম সন্তান বলে, ‘আমার মাল, আমার মাল।’ অথচ
হে আদম সন্তান! তোমার কি এ ছাড়া কোন মাল আছে, যা তুমি খেয়ে শেষ করে দিয়েছ অথবা যা
তুমি পরিধান করে পুরাতন করে দিয়েছ অথবা সাদকাহ করে (আখেরাতের জন্য) জমা রেখেছ।’’
(মুসলিম ২৯৫৮, তিরমিযী ২৩৪২, নাসায়ী ৩৬১২, আহমাদ ১৫৮৭০,
১৫৮৮৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৮৮
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مُغَفَّلٍ رضي الله
عنه، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم: يَا رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، وَاللهِ إنِّي لأُحِبُّكَ، فَقَالَ: «انْظُرْ مَاذَا تَقُولُ ؟ »
قَالَ: وَاللهِ إنِّي لأُحِبُّكَ، ثَلاَثَ مَرَّات، فَقَالَ: «إنْ كُنْتَ
تُحِبُّنِي فَأَعِدَّ لِلْفَقْرِ تِجْفَافاً، فإنَّ الفَقْرَ أسْرَعُ إِلَى مَنْ
يُحِبُّني مِنَ السَّيْلِ إِلَى مُنْتَهَاهُ ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن » .
আব্দুল্লাহ
ইবনে মুগাফ্ফাল থেকে বর্ণিতঃ
একদা
এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর
কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে
বল।’’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ এরূপ সে তিনবার বলল।
তিনি বললেন, ‘‘যদি তুমি আমাকে ভালবাসো, তাহলে দারিদ্রের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখো।
কেননা, যে আমাকে ভালবাসবে স্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চাইতেও বেশি
দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য তার নিকট আগমন করবে।’’
(হাদীসটিকে শাইখ আলবানী প্রথমে দুর্বল আখ্যা দিলেও তিনি
পরবর্তীতে পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন এবং ‘‘সিলসিলাহ্ সহীহাহ্’’ গ্রন্থে (২৮২৭)
সহীহ্ আখ্যা দেন। তিরমিযী ২৩৫০)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪৮৯
وَعَن كَعبِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَا
ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلاَ فِي غَنَمٍ بِأفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ المَرْءِ
عَلَى المَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينهِ». رواه الترمذي، وقال:حديث حسن صحيح»
কা‘ব
ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ছাগলের পালে দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে
বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে মানুষের সম্পদ ও সম্মানের প্রতি
লোভ-লালসা তার দ্বীনের জন্য বেশী ক্ষতিকারক।’’
(তিরমিযী ২৩৭৬, আহমাদ ১৫৩৫৭, ১৫৩৬৭, দারেমী ২৭৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৯০
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله
عنه، قَالَ: نَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَلَى
حَصيرٍ، فَقَامَ وَقَدْ أثَّرَ في جَنْبِهِ، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، لَوْ اتَّخَذْنَا لَكَ وِطَاءً . فَقَالَ: «مَا لِي وَلِلدُّنْيَا ؟
مَا أَنَا في الدُّنْيَا إِلاَّ كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ
وَتَرَكَهَا » رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح »
আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা চাটাই-এর উপর শুলেন। অতঃপর তিনি
এই অবস্থায় উঠলেন যে, তাঁর পার্শ্বদেশে তার দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমরা বললাম, ‘হে
আল্লাহর রসূল! যদি (আপনার অনুমতি হয়, তাহলে) আমরা আপনার জন্য নরম গদি বানিয়ে দিই।’
তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক? আমি তো (এ) জগতে ঐ সওয়ারের মত যে
ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রামের জন্য) গাছের ছায়ায় থামল। পুনরায় সে চলতে আরম্ভ করল এবং
ঐ গাছটি ছেড়ে দিল।’’
(তিরমিযী ২৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৪১১৬৯, আহমাদ ৩৭০১, ৪১৯৬)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪৯১
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «يَدْخُلُ
الفُقَرَاءُ الْجَنَّةَ قَبْلَ الأَغْنِيَاءِ بِخَمْسِمئَةِ عَامٍ ». رواه
الترمذي، وقال: حديث صحيح »
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘গরীব মু’মিনরা ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে
জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’
(তিরমিযী ২৩৫৩, ২৩৫৪, ইবনু মাজাহ ৪১২২, আহমাদ ৭৮৮৬, ৮৩১৬,
২৭৭৯৩, ১০২৭৬, ১০২৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৯২
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ وَعِمْرَانَ بنِ
الحُصَيْنِ رضي الله عنهما، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ:
«اطَّلَعْتُ في الجَنَّةِ فَرَأيْتُ أكْثَرَ أهْلِهَا الفُقَرَاءَ، وَاطَّلَعْتُ
في النَّارِ فَرَأيْتُ أكْثَرَ أهْلِهَا النِّسَاءَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
আব্বাস ও ইমরান ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি বেহেশ্তের মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম,
তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই গরীব লোক। আর দোযখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ
অধিবাসীরাই মহিলা।’’
(সহীহুল বুখারী ৩২৪১, ৫১৯৮, ৬৪৪৯, ৬৫৪৬, মুসলিম ২৭৩৮,
তিরমিযী ২৬০৩, আহমাদ ১৯৩১৫, ১৯৪২৫, ১৯৪৮০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৯৩
ورواه البخاري أيْضاً من روايةِ عِمْرَان
بنِ الحُصَينِ ..
ইমাম
বুখারী থেকে বর্ণিতঃ
উক্ত
হাদীসকে ইমরান ইবনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৯৪
وَعَن أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ الله
عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «قُمْتُ عَلَى بَابِ
الجَنَّةِ، فَكَانَ عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا المَسَاكِينُ، وَأصْحَابُ الجَدِّ
مَحبُوسُونَ، غَيْرَ أنَّ أصْحَابِ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِم إِلَى النَّارِ».
متفقٌ عَلَيْهِ
উসামাহ
ইবনে যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি জান্নাতের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখতে
পেলাম, সেখানে অধিকাংশ নিঃস্ব লোক রয়েছে। আর ধনবানরা তখনো (হিসাবের জন্য) অবরুদ্ধ
রয়েছে। অথচ দোযখীদেরকে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়ে গেছে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫১৯৬, ৬৫৪৭, মুসলিম ২৭৩৬, আহমাদ ২১২৭৫,
২১৩১৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৯৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أصْدَقُ كَلِمَةٍ قَالَهَا شَاعِرٌ
كَلِمَةُ لَبِيدٍ: ألاَ كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلاَ اللهَ بَاطِلُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সবচেয়ে সত্য কথা যা কোন কবি বলেছেন, তা
হল লাবীদ (কবির) কথা, (তিনি বলেছেন,) ‘শোনো, আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই বাতিল।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৮৪১, ৬১৪৭, ৬৪৮৯, মুসলিম ২২৫৬, তিরমিযী
২৮৪৯, ইবনু মাজাহ ৩৭৫৭, আহমাদ ৭৩৩৬, ৮৮৪০, ৮৮৬৬, ৯৪৪৪, ৯৫৯০, ৯৭২৪, ৯৮৭০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫৬
উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন
যাপন করা, পানাহার ও পোশাক ইত্যাদি মনোরঞ্জনমূলক বস্তুতে অল্পে তুষ্ট হওয়া এবং
প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন করার মাহাত্ম্য
৪৯৬
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت: مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم مِنْ خُبْزِ شَعِيرٍ
يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ . متفقٌ عَلَيْهِ .
وفي رواية: مَا شَبِعَ آلُ محَمّدٍ صلى الله عليه وسلم مُنْذُ قَدِمَ المَدِينَةَ
مِنْ طَعَامِ البُرِّ ثَلاثَ لَيَالٍ تِبَاعاً حَتَّى قُبِضَ .
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
‘মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিজন তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত ক্রমাগত দু’দিন
যবের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।’
(সহীহুল বুখারী ৫৪১৬, ৫৪২৩, ৫৪৩৮, ৬৪৫৪, ৬৬৮৭, মুসলিম
২৯৭০, তিরমিযী ২৩৫৭, নাসায়ী ৪৪৩২, ইবনু মাজাহ ৩১৫৯, ৩৩১৩, ৩৩৪৪, ৩৩৪৬, আহমাদ ২৩৬৩১,
২৩৮৯৯, ২৪১৪৪, ২৪৪৪১, ২৪৪৪২, ২৪৫২৬, ২৪৬৯৮, ২৫১০১৩, ২৫২২৩, ২৫২৯৭, দারেমী ১৯৫৯)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৪৯৭
وَعَن عُروَةَ، عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنهَا، أنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ: وَاللهِ، يَا ابْنَ أُخْتِي، إنْ كُنَّا
نَنْظُرُ إِلَى الهِلاَلِ، ثُمَّ الهِلالِ: ثَلاَثَةُ أَهلَّةٍ في شَهْرَيْنِ،
وَمَا أُوقِدَ فِي أبْيَاتِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَارٌ. قُلْتُ: يَا
خَالَةُ! فَمَا كَانَ يُعِيشُكُمْ ؟ قَالَت: الأَسْوَدَانِ التَّمْرُ وَالمَاءُ،
إِلاَّ أنَّهُ قَدْ كَانَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم جِيرَانٌ مِنَ
الأَنْصَارِ، وكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ وَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلَى رَسُولِ
اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ ألْبَانِهَا فَيَسْقِينَا . متفقٌ عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
,
তিনি (একবার) উরওয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, ‘হে ভগিনীপুত্র! আমরা দু’মাসের
মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর গৃহসমূহে (রান্নার) জন্য আগুন জ্বালানো হত না।’ উরওয়াহ বললেন,
‘খালা! তাহলে আপনারা কী খেয়ে জীবন কাটাতেন?’ তিনি বললেন, ‘কালো দু’টো জিনিস দিয়ে।
অর্থাৎ শুকনো খেজুর আর পানিই (আমাদের খাদ্য হত)। অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর প্রতিবেশী কয়েকজন আনসারী সাহাবীর দুগ্ধবতী উটনী ও ছাগী ছিল। তাঁরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দুধ পাঠতেন, তখন তিনি
আমাদেরকে তা পান করাতেন।’
(সহীহুল বুখারী ২৫৬৭, ৬৪৫৮, ৬৪৫৯, মুসলিম ২৯৭২, তিরমিযী
২৪৭১, ইবনু মাজাহ ৪১৪৪, ৪১৪৫, আহমাদ ১৩৭১২, ১৩৮৯৯, ১৪০৪০, ২৪২৪৭, ২৪৯৬৩, ২৫৪৭৩, ২৫৫৪৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৯৮
وَعَن أَبي سَعِيدٍ المَقبُرِيِّ، عَن أَبي
هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّهُ مَرَّ بِقَومٍ بَيْنَ أَيدِيهِمْ شَاةٌ
مَصْلِيَّةٌ، فَدَعَوْهُ فَأبَى أَنْ يأْكُلَ . وَقَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ
الشَّعيرِ . رواه البخاري
আবূ
সা‘ঈদ মাক্ববুরী থেকে বর্ণিতঃ
,
একদা আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের
সামনে ভুনা বকরী ছিল। তারা তাঁকে (খেতে) ডাকল। তিনি খেতে রাজী হলেন না এবং বললেন,
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ তিনি
কোন দিন যবের রুটিও পেট পুরে খাননি।’
(সহীহুল বুখারী ৫৪১৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৪৯৯
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: لَمْ
يَأكُلِ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى خِوَانٍ حَتَّى مَاتَ، وَمَا أكَلَ
خُبْزاً مُرَقَّقاً حَتَّى مَاتَ . رواه البخاري . وفي رواية لَهُ: وَلاَ رَأى
شَاةً سَمِيطاً بعَيْنِهِ قَطُّ .
আনাস
ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো (টেবিল জাতীয় উঁচু স্থানে) এর উপর খাবার রেখে
আহার করেননি এবং তিনি মৃত্যু পর্যন্ত পাতলা (চাপাতি) রুটি খাননি। বুখারীর অন্য এক
বর্ণনায় আছে, আর তিনি কখনোও ভুনা (গোটা) বকরী স্বচক্ষে দেখেননি।
অবশ্য অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তিনি ঐ শ্রেণীর উঁচু স্থানে রেখে খাবার
খেতেন। সুতরাং ঐভাবে খাওয়া অবৈধ নয়।
(সহীহুল বুখারী ৫৪২১, ৫৩৮৫, ৫৩৮৬, ৫৪১৫, ৬৪৫০, ৬৪৫৭, তিরমিযী
১৭১৮, ২৩৬৩, ইবনু মাজাহ ৩২৯২, ৩২৯৩, ৩৩৩৯, আহমাদ ১১৮৮৭, ১১৯১৬, ১১৯৬৫, ১৩১৯৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০০
وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه، مَا أَصَابَ
النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا، فَقَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِي مَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ
مَا يَمْلأ بِهِ بَطْنَهُ. رواه مسلم
নু‘মান
ইবনে বাশীর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
উমার
ইবনুল খাত্ত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে
দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে, সে কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায়
থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট
ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’
(মুসলিম ২৯৭৭, ২৯৭৮, তিরমিযী ২৩৭২, ইবনু মাজাহ ৪১৪৬, আহমাদ
১৬০, ১৭৮৯২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০১
وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه،
قَالَ: مَا رَأى رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم النَّقِيَّ مِنْ حِينِ
ابْتَعَثَهُ الله تَعَالَى حَتَّى قَبضَهُ الله تَعَالَى . فَقِيلَ لَهُ: هَلْ
كَانَ لَكُمْ في عَهدِ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنَاخِلُ ؟ قَالَ: مَا
رَأى رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم مُنْخُلاً مِنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللهُ
تَعَالَى حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ تَعَالَى، فَقِيلَ لَهُ: كَيْفَ كُنْتُمْ
تَأكُلُونَ الشَّعِيرَ غَيْرَ مَنْخُولٍ ؟ قَالَ: كُنَّا نَطحَنُهُ وَنَنْفُخُهُ،
فيَطيرُ مَا طَارَ، وَمَا بَقِيَ ثَرَّيْنَاهُ . رواه البخاري
সাহ্ল
ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ
তা‘আলা যখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (রসূলরূপে)
পাঠিয়েছেন, তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত (চালুনে চালা) ময়দা দেখেননি। অতঃপর জিজ্ঞাসা
করা হল, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কি আপনাদের আটা
চালার চালুনি ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে (রসূলরূপে) পাঠানোর পর থেকে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত তিনি আটা চালার চালুনি
দেখেননি।’ তাঁকে বলা হল, ‘তাহলে আপনারা আচালা যবের আটা কিভাবে খেতেন?’ তিনি বললেন,
‘আমরা যব পিষে ফুঁক দিতাম, এতে যা উড়ার উড়ে যেত, আর যা অবশিষ্ট থাকত তা ভিজিয়ে
খামীর বানাতাম।’
(সহীহুল বুখারী ৫৪১৩, ৫৪১০, তিরমিযী ২৩৬৪, ইবনু মাজাহ
৩৩৩৫, আহমাদ ২২৩০৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০২
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
خَرَجَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ لَيْلَةٍ، فَإذَا هُوَ
بأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، فَقَالَ:«مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ
بُيُوتِكُما هَذِهِ السَّاعَةَ ؟ » قَالاَ: الجُوعُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم. قَالَ: «وَأَنَا، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لأَخْرَجَنِي الَّذِي
أَخْرَجَكُما، قُومَا»، فقَامَا مَعَهُ، فَأتَى رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ، فَإِذَا
هُوَ لَيْسَ في بيْتِهِ، فَلَمَّا رَأَتْهُ المَرْأَةُ، قَالَت: مَرْحَبَاً
وَأهلاً .فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
«أيْنَ فُلاَنُ ؟ » قَالَت: ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لنَا المَاءَ . إِذْ جَاءَ
الأَنْصَارِيُّ، فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَصَاحِبَيْهِ،
ثُمَّ قَالَ: الحَمْدُ للهِ، مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أكْرَمَ أضْيَافاً مِنِّي،
فَانْطَلَقَ فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ، فَقَالَ:
كُلُوا، وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم: « إيْاكَ وَالْحَلُوبَ » فَذَبَحَ لَهُمْ، فَأكَلُوا مِنَ الشَّاةِ
وَمِنْ ذَلِكَ العِذْقِ وَشَرِبُوا . فَلَمَّا أنْ شَبِعُوا وَرَوُوا قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لأَبي بَكْر وَعُمَرَ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا
النَّعِيمِ يَوْمَ القِيَامَةِ، أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ، ثُمَّ
لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أصَابَكُمْ هَذَا النَّعِيمُ ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একদিন অথবা কোন এক রাতে (ঘর থেকে) বের হলেন,
অতঃপর অকস্মাৎ আবূ বাক্র ও উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) এর সঙ্গে তাঁর দেখা হল।
তিনি বললেন, ‘‘এ সময় তোমরা বাড়ী থেকে কেন বের হয়েছ?’’ তাঁরা বললেন, ‘ক্ষুধার
তাড়নায় হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ
রয়েছে। আমিও সেই কারণে বাড়ি থেকে বের হয়েছি, যে কারণে তোমরা বের হয়েছ। তোমরা ওঠো
(এবং আমার সঙ্গে চল)।’’ অতঃপর তাঁরা দু’জনে তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। তারপর তিনি এক
আনসারীর বাড়ী এলেন। আনসারী সে সময় বাড়ীতে ছিলেন না। যখন তাঁর স্ত্রী নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলেন তখন অভ্যর্থনা ও স্বাগত জানালেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ‘‘অমুক (আনসারী)
কোথায়?’’ তিনি বললেন, ‘আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন।’ এর মধ্যে আনসারী এসে
গেলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে
বললেন, ‘আলহামদু লিল্লাহ, আজ আমার (বাড়ীর) চেয়ে সম্মানিত মেহমান কারো (বাড়ীতে)
নেই।’ অতঃপর তিনি চলে গেলেন এবং খেজুরের একটা কাঁদি আনলেন, যাতে কাঁচা, শুকনো এবং
পাকা (টাটকা) খেজুর ছিল। অতঃপর আনসারী বললেন, ‘আপনারা খান এবং তিনি নিজে ছুরি
ধরলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ‘‘দুধালো ছাগল
জবাই করো না।’’ অতঃপর তিনি (ছাগল) জবাই করলেন। তাঁরা ছাগলের (মাংস) খেলেন, ঐ খেজুর
কাঁদি থেকে খেজুর খেলেন এবং পানি পান করলেন। তারপর তাঁরা যখন (পানাহার করে)
পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাক্র ও উমার
(রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)কে বললেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে!
নিশ্চয় তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ক্ষুধা
তোমাদেরকে বাড়ী থেকে বের করেছিল, কিন্তু এখন এ নিয়ামত উপভোগ করে নিজেদের (বাড়ী)
ফিরে যাচ্ছ।’’
(মুসলিম ২০৩৮, তিরমিযী ২৩৬৯, ইবনু মাজাহ ৩১৮০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০৩
وَعَن خَالِدِ بنِ عُمَيْرٍ العَدَوِيِّ،
قَالَ: خَطَبَنَا عُتْبَةُ بنُ غَزْوَانَ، وَكَانَ أمِيراً عَلَى البَصْرَةِ،
فَحَمِدَ الله وَأثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ الدُّنْيَا
قَدْ آذَنَتْ بِصُرْمٍ، وَوَلَّتْ حَذَّاءَ، وَلَمْ يَبْقَ مِنْهَا إِلاَّ
صُبَابَةٌ كَصُبَابَةِ الإنَاءِ يَتَصَابُّهَا صَاحِبُهَا، وَإِنَّكُمْ
مُنْتَقِلُونَ مِنْهَا إِلَى دَارٍ لاَ زَوَالَ لَهَا، فَانْتَقِلُوا بِخَيرِ مَا
بِحَضْرَتِكُمْ، فَإِنَّهُ قَدْ ذُكِرَ لَنَا أنَّ الحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفِيرِ
جَهَنَّمَ فَيَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَاماً، لاَ يُدْرِكُ لَهَا قَعْراً،
وَاللهِ لَتُمْلأَنَّ أَفَعَجِبْتُمْ ؟! وَلَقدْ ذُكِرَ لَنَا أنَّ مَا بَيْنَ
مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ مَسيرَةُ أرْبَعِينَ عَاماً،
وَليَأتِيَنَّ عَلَيْهَا يَوْمٌ وَهُوَ كَظِيظٌ مِنَ الزِّحَامِ، وَلَقَدْ
رَأيْتُنِي سَابعَ سَبْعَةٍ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، مَا لَنَا
طَعَامٌ إِلاَّ وَرَقُ الشَّجَرِ، حَتَّى قَرِحَتْ أشْدَاقُنَا، فَالتَقَطْتُ
بُرْدَةً فَشَقَقْتُهَا بَيْنِي وَبَيْنَ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ، فاتَّزَرْتُ
بِنِصْفِهَا، وَاتَّزَرَ سَعْدٌ بِنِصْفِهَا، فَمَا أصْبَحَ اليَوْمَ مِنَّا أحَدٌ
إِلاَّ أَصْبَحَ أمِيراً عَلَى مِصرٍ مِنَ الأَمْصَارِ، وَإنِّي أعُوذُ بِاللهِ
أنْ أكُونَ فِي نَفْسِي عَظِيماً، وَعِنْدَ اللهِ صَغِيراً . رواه مسلم
খালেদ
ইবনে উমাইর আদাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
একদা বাসরার গভর্নর উত্বাহ ইবনে গাযওয়ান খুতবাহ দিলেন। তিনি (খুতবায় সর্বপ্রথমে)
আল্লাহর প্রশংসা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘আম্মা বাদ! নিশ্চয় দুনিয়া তার ধ্বংসের কথা
ঘোষণা করে দিয়েছে এবং সে মুখ ফিরিয়ে দ্রুতগতিতে পলায়মান আছে। এখন তার (বয়স)
পাত্রের তলায় অবশিষ্ট পানীয়র মত বাকী রয়ে গেছে, যা পাত্রের মালিক (সবশেষে) পান
করে। (আর তোমরা এ দুনিয়া থেকে এমন (পরকালের) গৃহের দিকে প্রত্যাবর্তন করছ যার ক্ষয়
নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের সামনের উত্তম জিনিস নিয়ে প্রত্যাবর্তন কর। কারণ,
আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, জাহান্নামের উপর কিনারা থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করা
হয়েছে, তা ওর মধ্যে সত্তর বছর পর্যন্ত পড়তে থাকবে, তবুও তা তার গভীরতায় (শেষ
প্রান্তে) পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহর কসম! জাহান্নামকে (মানুষ দিয়ে) পরিপূর্ণ করে
দেওয়া হবে। তোমরা এটা আশ্চর্য মনে করছ? আর আমাদেরকে এও জানানো হয়েছে যে, জান্নাতের
দুয়ারের দু’টি চৌকাঠের মধ্যভাগের দূরত্ব চল্লিশ বছরের পথ। তার উপর এমন এক দিন আসবে
যে, তাতে লোকের ভিড়ে পরিপূর্ণ থাকবে।
আমি (ইসলাম প্রচারের শুরুতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে
সাত জনের মধ্যে একজন ছিলাম। (তখন আমাদের এ অবস্থা ছিল যে,) গাছের পাতা ছাড়া আমাদের
অন্য কিছুই খাবার ছিল না। এমনকি (তা খেয়ে) আমাদের কশে ঘা হয়ে গেল। (সে সময়) আমি
একখানি চাদর কুড়িয়ে পেলাম, অতঃপর তা আমি দু’টুকরো করে আমার এবং সা‘দ ইবনে খালেদের
মধ্যে ভাগ করে নিলাম। তারপর আমি তার অর্ধেকটাকে লুঙ্গী বানিয়ে পরলাম এবং সা‘দও
অর্ধেক লুঙ্গী বানিয়ে পরলেন। কিন্তু আজ আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোন না কোন শহরের
শাসনকর্তা হয়ে আছে। আর আমি নিজের কাছে বড় এবং আল্লাহর কাছে ছোট হওয়া থেকে আশ্রয়
প্রার্থনা করছি।’
(মুসলিম ২৯৬৭, তিরমিযী ২৫৭৫, ইবনু মাজাহ ৪১৫৬, আহমাদ ১৭১২৩,
২০০৮৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০৪
وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله
عنه، قَالَ: أخْرَجَتْ لَنَا عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا كِسَاءً وَإزاراً
غَلِيظاً، قالَتْ: قُبِضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم في
هَذَيْنِ . متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
মূসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা আমাদের জন্য একখানি চাদর এবং একখানি মোটা লুঙ্গী বের করে
বললেন, ‘এ দু’টি (পরে থাকা অবস্থা)তেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মৃত্যুবরণ করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ৩১০৮, ৫৮১৮, মুসলিম ২০৮০, তিরমিযী ১৭৩৩,
আবূ দাউদ ৪০৩৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৫১, আহমাদ ২৩৫১৭, ২৪৪৭৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০৫
وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله
عنه، قَالَ: إنِّي لأَوَّلُ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ في سَبِيلِ اللهِ، وَلَقَدْ
كُنَّا نَغْزُو مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ
وَرَقُ الْحُبْلَةِ، وَهذَا السَّمُرُ، حَتَّى إنْ كَانَ أحَدُنَا لَيَضَعُ كَمَا
تَضَعُ الشَّاةُ مَا لَهُ خَلْطٌ . متفقٌ عَلَيْهِ
সা‘দ
ইবনে আবী অক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
তিনি বলেন, ‘আমিই প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছি। আমরা যখন
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে থেকে যুদ্ধ করি, তখন আমাদের
অবস্থা এরূপ ছিল যে, হুবলাহ গাছের পাতা ও এই বাবলা ছাড়া আমাদের অন্য কিছুই খাবার
ছিল না। এ জন্য আমাদের প্রত্যেকেই ছাগলের লাদির মত মলত্যাগ করতেন; যার একটি
আরেকটির সাথে মিশত না।’
(সহীহুল বুখারী ৭৫৫, ৭৫৮, ৭৭০, ৩৭২৮, ৫৪১২, ৬৪৫৩, মুসলিম
৪৫৩, ২৯৬৬, তিরমিযী ২৩৬৫, নাসায়ী ১০০২, ১০০৩, আবূ দাউদ ৮০৩, ইবনু মাজাহ ১৩১, আহমাদ
১৫১৩, ১৫৫১, ১৫৬০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০৬
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم: « اَللهم اجْعَلْ رِزْقَ آلِ مُحَمّدٍ
قُوتاً ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করতেন, ‘‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার-পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকা প্রদান কর।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৪৬০, মুসলিম ১০৫৫, তিরমিযী ২৩৬১, ইবনু
মাজাহ ৪১৩৯, আহমাদ ৭১৩৩, ৯৪৬১, ৯৮৭৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০৭
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
وَاللهِ الَّذِي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ، إنْ كُنْتُ لأَعْتَمِدُ بِكَبِدِي عَلَى
الأَرْضِ مِنَ الجُوعِ، وَإنْ كُنْتُ لأَشُدُّ الحَجَرَ عَلَى بَطنِي مِنَ
الْجُوعِ . وَلَقَدْ قَعَدْتُ يَوماً عَلَى طَرِيقِهِمُ الَّذِي يَخْرُجُونَ
مِنْهُ، فَمَرَّ بِي النِّبيُّ صلى الله عليه وسلم، فَتَبَسَّمَ حِيْنَ رَآنِي،
وَعَرَفَ مَا فِي وَجْهِي وَمَا فِي نَفْسِي، ثُمَّ قَالَ: «أَبَا هِرٍّ » قُلْتُ:
لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْحَقْ » وَمَضَى
فَاتَّبَعْتُهُ، فَدَخَلَ فَاسْتَأذَنَ، فَأَذِنَ لِي فَدَخَلْتُ، فَوَجَدَ
لَبَنَاً في قَدَحٍ، فَقَالَ: « مِنْ أَيْنَ هَذَا اللَّبَنُ ؟ » قَالُوا:
أهْدَاهُ لَكَ فُلانٌ -أَو فُلانَةٌ- قَالَ: « أَبَا هِرٍّ » قُلتُ: لَبَّيْكَ يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْحَقْ إِلَى أهْلِ الصُّفَّةِ
فَادْعُهُمْ لِي » قَالَ: وَأهْلُ الصُّفَّةِ أضْيَافُ الإِسْلاَمِ، لاَ يَأوُونَ
علَى أهْلٍ وَلاَ مَالٍ وَلاَ عَلَى أحَدٍ، وَكَانَ إِذَا أتَتْهُ صَدَقَةٌ بَعَثَ
بِهَا إلَيْهِمْ، وَلَمْ يَتَنَاوَلْ مِنْهَا شَيْئاً، وَإِذَا أتَتْهُ هَدِيَّةٌ
أرْسَلَ إلَيْهِمْ، وَأصَابَ مِنْهَا، وأشْرَكَهُمْ فِيهَا . فَسَاءَنِي ذَلِكَ،
فَقُلْتُ: وَمَا هَذَا اللَّبَنُ في أهْلِ الصُّفَّةِ ! كُنْتُ أحَقُّ أنْ أُصِيبَ
مِنْ هَذَا اللَّبَنِ شَرْبَةً أتَقَوَّى بِهَا، فَإذَا جَاءُوا وَأمَرَنِي
فَكُنْتُ أنَا أُعْطِيهِمْ ؛ وَمَا عَسَى أنْ يَبْلُغَنِي مِنْ هَذَا اللَّبَنِ .
وَلَمْ يَكُنْ مِنْ طَاعَةِ اللهِ وَطَاعَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
بُدٌّ، فَأَتَيْتُهُمْ فَدَعَوْتُهُمْ، فَأقْبَلُوا وَاسْتَأذَنُوا، فَأَذِنَ
لَهُمْ وَأخَذُوا مَجَالِسَهُمْ مِنَ الْبَيْتِ، قَالَ: «يَا أَبَا هِرٍّ »
قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «خُذْ
فَأعْطِهِمْ » قَالَ: فَأخَذْتُ القَدَحَ، فَجَعَلْتُ أُعْطِيهِ الرَّجُل
فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ الْقَدَحَ، فَأُعْطِيهِ
الرَّجُلَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ الْقَدَحَ،
فَأُعْطِيهِ الرَّجُلَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ
الْقَدَحَ حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، وَقَدْ رَوِيَ
الْقَوْمُ كُلُّهُمْ، فَأخَذَ الْقَدَحَ فَوَضَعَهُ عَلَى يَدِهِ، فَنَظَرَ إليَّ
فَتَبَسَّمَ، فَقَالَ: «أَبَا هِرٍّ » قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، قَالَ: « بَقيتُ أنَا وَأنْتَ » قُلْتُ: صَدَقْتَ يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ:«اقْعُدْ فَاشْرَبْ » فَقَعَدْتُ فَشَرِبْتُ،
فَقَالَ« اشْرَبْ » فَشَرِبْتُ، فَمَا زَالَ يَقُولُ: «اشْرَبْ » حَتَّى قُلْتُ:
لاَ، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ أجِدُ لَهُ مَسْلكاً ! قَالَ:« فَأرِنِي »
فَأعْطَيْتُهُ الْقَدَحَ، فَحَمِدَ الله تَعَالَى، وَسَمَّى وَشَرِبَ الفَضْلَةَ .
رواه البخاري
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
তিনি বলেন, সেই আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! আমি ক্ষুধার জ্বালায়
মাটিতে কলিজা (পেট) লাগাতাম এবং পেটে পাথর বাঁধতাম। একদিন লোকেরা যে রাস্তায় বের
হয়, সে রাস্তায় বসে গেলাম। কিছুক্ষণ পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
অতিক্রম করা কালীন সময়ে দেখে মুচকি হাসলেন এবং আমার চেহারার অবস্থা ও মনের কথা
বুঝে ফেলে বললেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’
তিনি বললেন, ‘‘আমার পিছন ধর।’’ সুতরাং তিনি চলতে লাগলেন এবং আমি তাঁর অনুসরণ করতে
লাগলাম। তিনি (নিজ ঘরে) প্রবেশ করলেন। অতঃপর তিনি আমার জন্য অনুমতি চাইলেন। তারা
আমার জন্য অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। ঘরে এক পিয়ালা দুধ (দেখতে) পেলেন। তিনি
বললেন, ‘‘এ দুধ কোত্থেকে এল?’’ তারা বলল, ‘আপনার জন্য অমুক লোক বা মহিলা উপঢৌকন
পাঠিয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর
রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘আহলে সুফ্ফাদের ডেকে আন।’’ তাঁরা ইসলামের মেহমান ছিলেন,
তাঁদের কোন আশ্রয় ছিল না। ছিল না কোন পরিবার ও ধন-সম্পদ বা অন্য কিছু। (সাদকাহ ও
হাদিয়াতে তাঁদের জীবন কাটত।) তাঁর নিকট কোন সাদকাহ এলে তিনি সবটুকুই তাঁদের নিকট
পাঠিয়ে দিতেন। তা থেকে তিনি কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর কোন হাদিয়া বা উপঢৌকন এলেও
তাঁদের নিকট পাঠাতেন। কিন্তু তা থেকে কিছু গ্রহণ করতেন এবং তাঁদেরকে তাতে শরীক
করতেন। (তিনি যখন তাঁদেরকে ডাকতে বললেন,) তখন আমাকে খারাপ লাগল। আমি (মনে মনে)
বললাম, ‘এই টুকু দুধে আহলে সূফ্ফাদের কী হবে? আমিই তো বেশী হকদার যে, এই দুধ পান
করে একটু শক্তিশালী হতাম। কিন্তু যখন তাঁরা আসবেন এবং তিনি আমাকে আদেশ করলে আমি
তাঁদেরকে দুধ পরিবেশন করব। তারপর আমার ভাগে এই দুধের কতটুকুই বা জুটবে!’ অথচ
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মান্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না। সুতরাং আমি
তাঁদের নিকট এসে তাঁদেরকে ডাকলাম। তাঁরা এসে প্রবেশ অনুমতি নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে
নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির,
হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘পিয়ালা নাও এবং ওদেরকে দাও।’’ সুতরাং আমি
পিয়ালাটি নিয়ে এক একজনকে দিতে লাগলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা
ফেরৎ দিলেন। অতঃপর আর একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ
দিলেন। অতঃপর আর একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ
দিলেন। এইভাবে পরিশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে উপস্থিত
হলাম। সে পর্যন্ত তাঁদের সবাই পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন। অতঃপর তিনি পিয়ালাটি
নিয়ে নিজের হাতে রাখলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’
আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘এখন বাকী আমি আর
তুমি।’’ আমি বললাম, ‘ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘বসো এবং পান
কর।’’ আমি বসে পান করলাম। তিনি আবার বললেন, ‘‘পান কর।’’ সুতরাং আমি আবার পান
করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে পান করার কথা বলতেই থাকলেন। পরিশেষে আমি বললাম, ‘না। (আর পারব
না।) সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, এর জন্য আমার পেটে আর কোন
জায়গা নেই!’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘কৈ আমাকে দেখাও।’’ সুতরাং আমি তাঁকে পিয়ালা দিলে
তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করলেন।
(সহীহুল বুখারী ৫৩৭৫, ৬২৪৬, ৬৪৫২, তিরমিযী ২৪৭৭, আহমাদ
১০৩০১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০৮
وَعَن مُحَمَّدِ بنِ سِيرِينَ، عَن أَبي
هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: لَقَدْ رَأيْتُنِي وَإنِّي لأَخِرُّ فِيمَا بَيْنَ
مِنْبَرِ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى حُجْرَةِ عائِشَةَ رضي الله عنها
مَغْشِيّاً عَلَيَّ، فَيَجِيءُ الجَائِي، فَيَضَعُ رِجْلَهُ عَلَى عُنُقِي،
وَيَرَى أنِّي مَجْنُونٌ وَمَا بِي مِنْ جُنُونٍ، مَا بِي إِلاَّ الْجُوعُ . رواه
البخاري
মুহাম্মাদ
ইবনে সীরীন আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘আমার এ অবস্থা ছিল যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
মিম্বর এবং আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহার কক্ষের মধ্যস্থলে (ক্ষুধার জ্বালায়) বেহুশ
হয়ে পড়ে থাকতাম। অতঃপর আগন্তুক আসত এবং আমাকে পাগল মনে করে সে তার পা আমার
গর্দানের উপর রাখত, অথচ আমার মধ্যে কোন পাগলামি ছিল না। কেবলমাত্র ক্ষুধা ছিল।
(যার তীব্রতায় আমি চৈতন্য হারিয়ে ফেলতাম!)’
(সহীহুল বুখারী ৭৩২৪, তিরমিযী ২৩৬৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫০৯
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت: تُوُفِّي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم وَدِرْعُهُ
مَرْهُونَةٌ عِنْدَ يَهُودِي في ثَلاثِينَ صَاعاً مِنْ شَعِير . متفق عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর
বর্ম ত্রিশ সা’ (প্রায় ৭৫ কেজি) যবের বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক রাখা ছিল।’
(সহীহুল বুখারী ২০৬৮, ২০৯৬, ২২০০, ২২৫১, ২২৫২, ২৩৮৬, ২৫০৯,
২৫১৩, ২৯১৬, ৪৪৬৭, মুসলিম ১৬০৩, নাসায়ী ৪৬০৯, ৪৬৫০, ইবনু মাজাহ ২৪৩৬, আহমাদ ২৩৬২৬,
২৪৭৪৬, ২৫৪০৩, ২৫৪৬৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১০
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: رَهَنَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم دِرْعَهُ بِشَعِيرٍ، وَمَشَيْتُ إِلَى النَّبيِّ
صلى الله عليه وسلم بخُبْزِ شَعِيرٍ وَإهَالَةِ سَنِخَةٍ، وَلَقَدْ سَمِعْتُهُ
يَقُولُ:«مَا أصْبَحَ لآلِ مُحَمّدٍ صَاعٌ وَلاَ أمْسَى» وَإنَّهُمْ لَتِسْعَةُ
أبيَات. رواه البخاري
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যবের বিনিময়ে তাঁর বর্ম বন্ধক
রেখেছিলেন। আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যবের রুটি ও (নষ্ট
হওয়া) দুর্গন্ধময় পুরানো চর্বি নিয়ে গেছি। আমি তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে) বলতে শুনেছি যে, ‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে কোন সকাল বা সন্ধ্যায়
এক সা’ (প্রায় আড়াই কেজি কোন খাদ্যবস্তু) থাকে না।’’ (আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন,) তখন তাঁরা মোট নয় ঘর (পরিবার) ছিলেন।’
(সহীহুল বুখারী ২০৬৯, ২৫০৮, তিরমিযী ১২১৫, নাসায়ী ৪৫১০,
ইবনু মাজাহ ২৪৩৭, ৪১৪৭, আহমাদ ১১৫৮২, ১১৯৫২, ১২৭৫৭, ১৩০২৩, ১৩০৮৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১১
وَ عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه،
قَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ سَبعِينَ مِنْ أهْلِ الصُّفَّةِ، مَا مِنهُمْ رَجُلٌ
عَلَيْهِ رِدَاءٌ: إمَّا إزارٌ، وَإمَّا كِسَاءٌ، قَدْ رَبَطُوا في أعنَاقِهِمْ،
فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْن، وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الكَعْبَيْنِ،
فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَراهِيَةَ أنْ تُرَى عَوْرَتُهُ . رواه البخاري
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘আমি সত্তরজন (আহলে সুফ্ফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা
ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, (এক সঙ্গে
দু’টি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। অতঃপর সেই বস্ত্র
কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত
দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়।’
(সহীহুল বুখারী ৪৪২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১২
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت: كَانَ فِرَاشُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أُدْمٍ حَشْوُهُ
لِيفٌ. رواه البخاري
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিছানা চামড়ার তৈরী ছিল এবং তার ভিতরে ছিল
খেজুর গাছের ছোবড়া।’
(সহীহুল বুখারী ৬৪৫৬, মুসলিম ২০৮২, তিরমিযী ১৭৬১, আবূ
দাউদ ৪১৪৬, ৪১৪৭, ইবনু মাজাহ ৪১৫১, আহমাদ ২৩৬৮৯, ২৩৭৭২, ২৩৯৩০, ২৪২৪৭, ২৫২০১, ২৫২৪৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১৩
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ: كُنَّا جُلُوساً مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إِذْ جَاءَ رَجُلٌ
مِنَ الأنْصَارِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، ثُمَّ أدْبَرَ الأَنْصَاريُّ، فَقَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «يَا أخَا الأنْصَارِ، كَيْفَ أخِي
سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ ؟ » فَقَالَ: صَالِحٌ، فَقَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه
وسلم: «مَنْ يَعُودُهُ مِنْكُمْ ؟ » فَقَامَ وَقُمْنَا مَعَهُ، وَنَحْنُ بضْعَةَ
عَشَرَ، مَا عَلَيْنَا نِعَالٌ، وَلاَ خِفَافٌ، وَلاَ قَلاَنِسُ، وَلاَ قُمُصٌ،
نَمْشِي في تِلك السِّبَاخِ، حَتَّى جِئْنَاهُ، فَاسْتَأْخَرَ قَوْمُهُ مِنْ
حَوْلِه حَتَّى دَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
وَأصْحَابُهُ الَّذِينَ مَعَهُ. رواه مسلم
ইবনে
উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম, ইতোমধ্যে এক আনসারী
এলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন। অতঃপর আনসারী ফিরে যেতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আনসারের ভাই! আমার ভাই সা‘দ ইবনে
উবাদাহ কেমন আছে?’’ তিনি বললেন, ‘ভাল আছে।’ তারপর রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কে তাকে (অসুস্থ সা‘দকে) দেখতে যাবে?’’ সুতরাং
তিনি উঠে দাড়ালেন এবং আমরাও উঠে দাঁড়ালাম। আমরা দশের কিছু বেশী ছিলাম। আমাদের দেহে
জুতো, মোজা, টুপী এবং জামা কিছুই ছিল না। আমরা ঐ পাথুরে যমিনে পায়ে হেঁটে
যাচ্ছিলাম, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট পৌঁছে
গেলাম। তার গৃহবাসীরা তাঁর নিকট থেকে সরে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ তাঁর নিকটবর্তী হলেন।
(মুসলিম ৯২৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১৪
وَعَن عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، أنّه قَالَ: «خَيْرُكُمْ
قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ». قَالَ
عِمْرَانُ: فَمَا أدْري قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَرَّتَيْنِ أَو
ثَلاَثاً« ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ،
وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يُوفُونَ، وَيَظْهَرُ
فِيهمُ السَّمَنُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
উমামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল (আল্লাহর
পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত
মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে।’’
(মুসলিম ১০৩৬, তিরমিযী ২৩৪৩, আহমাদ ২১৭৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১৫
وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: يَا ابْنَ آدَمَ،
إنَّكَ أَنْ تَبْذُلَ الفَضْلَ خَيرٌ لَكَ، وَأنْ تُمسِكَهُ شَرٌ لَكَ، ولاَ
تُلاَمُ عَلَى كَفَافٍ، وَابْدأ بِمَنْ تَعُولُ ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
صحيح
আবূ
উমামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত
মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল।
আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার
দায়িত্বে।’’
(মুসলিম ১০৩৬, তিরমিযী ২৩৪৩, আহমাদ ২১৭৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১৬
وَعَن عُبيْدِ اللهِ بنِ مِحْصَنٍ
الأَنصَارِيِّ الخَطمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ أصْبَحَ مِنْكُمْ آمِناً في سِربِهِ، مُعَافَىً في
جَسَدِهِ، عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ، فَكَأنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا
بِحَذَافِيرِهَا». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن »
উবাইদুল্লাহ
ইবনে মিহস্বান আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঘরে অথবা
গোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে সকাল করেছে এবং তার কাছে একদিনের খাবার আছে,
তাকে যেন পার্থিব সমস্ত সম্পদ দান করা হয়েছে।’’
(তিরমিযী ২৩৪৬, ইবনু মাজাহ ৪১৪১)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৫১৭
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أن رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «قَدْ أفْلَحَ مَنْ أسْلَمَ، وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافاً، وَقَنَّعَهُ اللهُ
بِمَا آتَاهُ ». رواه مسلم
আব্দুল্লাহ
ইবনে ‘আমর ইবনুল আ’স রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ
করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট
করেছেন।’’
(মুসলিম ১০৫৪, তিরমিযী ২৩৪৮, ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, আহমাদ ৬৫৭২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১৮
وَعَن أَبي مُحَمَّدٍ فَضَالَة بنِ عُبَيدٍ
الأنصاريِّ رضي الله عنه: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم، يَقُولُ: طُوبَى لِمَنْ هُدِيَ لِلإسْلاَمِ، وَكَانَ عَيْشُهُ كَفَافاً
وَقَنِعَ . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
আবূ
মুহাম্মাদ ফাযালা ইবনে উবাইদ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘তার জন্য শুভ সংবাদ
যাকে ইসলামের পথ দেখানো হয়েছে, পরিমিত জীবিকা দেওয়া হয়েছে এবং সে (যা পেয়েছে তাতে)
পরিতুষ্ট আছে।’’
(তিরমিযী ২৩৪৯, আহমাদ ২৩৪২৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫১৯
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
يَبِيتُ اللَّيَالِيَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِياً، وَأهْلُهُ لاَ يَجِدُونَ
عَشَاءً، وَكَانَ أكْثَرُ خُبْزِهِمْ خُبزَ الشَّعيرِ. رواه الترمذي، وقال:حديث
حسن صحيح
ইবনে
আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে কয়েক রাত অনাহারে কাটাতেন এবং
পরিবার-পরিজনরা রাতের খাবার পেতেন না। আর তাদের অধিকাংশ রুটি হত যবের।’
(তিরমিযী ২৩৬০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৭, আহমাদ ২৩০৩, ৩৫৩৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫২০
وعن فَضَالَةَ بنِ عُبَيدٍ رضي الله عنه:
أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا صَلَّى
بِالنَّاسِ، يَخِرُّ رِجَالٌ مِنْ قَامَتِهِمْ في الصَّلاةِ مِنَ الخَصَاصَةِ ـ
وَهُمْ أصْحَابُ الصُّفَّةِ ـ حَتَّى يَقُولَ الأعْرَابُ: هؤُلاَء مَجَانِينٌ .
فَإذَا صلَّى رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم انْصَرَفَ إلَيْهِمْ، فَقَالَ:
«لَوْ تَعْلَمُونَ مَا لَكُمْ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى، لأَحْبَبْتُمْ أنْ
تَزْدَادُوا فَاقَةً وَحَاجَةً ». رواه الترمذي، وقال: «حديث صحيح »
ফাযালাহ
ইবনে ‘উবাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকদের নামায পড়াতেন, তখন কিছু লোক ক্ষুধার
কারণে (দুর্বলতায়) পড়ে যেতেন, আর তাঁরা ছিলেন আহলে সুফ্ফাহ। এমনকি মরুবাসী
বেদুঈনরা বলত, ‘এরা পাগল।’ একদা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নামায সেরে তাদের দিকে মুখ ফিরালেন, তখন বললেন, ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে যা
রয়েছে, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা এর চাইতেও অভাব ও দারিদ্র্য পছন্দ করতে।’’
(তিরমিযী ২৩৬৮, আহমাদ ২৩৪২০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫২১
وَعَن أَبي كَرِيمَةَ المِقدَامِ بنِ مَعدِ
يكَرِبَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم، يَقُولُ: مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرّاً مِنْ بَطْنٍ، بِحَسْبِ
ابنِ آدَمَ أُكُلاَتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فإنْ كانَ لاَ مَحالةَ فثُلُثٌ
لِطَعَامِهِ، وَثُلُثٌ لِشَرابِهِ، وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ . رواه الترمذي، وقال:
حديث حسن
আবূ
কারীমা মিক্বদাদ ইবনে মা’দীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোন মানুষ এমন কোন
পাত্র পূর্ণ করেনি, যা পেট চাইতে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদণ্ড সোজা (শক্ত)
রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ
খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়র জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য
হওয়া উচিত।’’
(তিরমিযী ২৩৮০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৯, আহমাদ ১৬৭৩৫)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৫২২
وَعَن أَبي أُمَامَةَ إِيَاسِ بنِ ثَعلَبَةَ
الأَنْصَارِيِّ الحَارِثِي رضي الله عنه، قَالَ: ذَكَرَ أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم يَوماً عِنْدَهُ الدُّنْيَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: ألاَ تَسْمَعُونَ ؟ ألاَ تَسْمَعُونَ ؟ إنَّ
البَذَاذَةَ مِنَ الإِيمَانِ، إنَّ البَذَاذَةَ مِنَ الإِيمَانِ يَعْنِي:
التَّقَحُّلَ . رواهُ أَبو داود
"البذاذة" بالباء الموحدة والذالين المعجمتين، وهي رثاثة الهيئة،
وترك فاخر اللباس. وأما "التقحل" فبالقاف والحاء، قال أهل
اللغة: المتقحل: هو الرجل اليابس الجلد من خشونة العيش، وترك الترفة.
আবূ
উমামাহ ইয়াস ইবনে সা‘লাবাহ আনসারী হারেসী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁর নিকট দুনিয়ার
কথা আলোচনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি
শুনতে পাও না? তোমরা কি শুনতে পাও না? আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ। আড়ম্বরহীনতা
ঈমানের অঙ্গ।’’ অর্থাৎ বিলাসহীনতা।
البذاذة হল
সাদাসিধা বেশভূষা ব্যবহার করা এবং জাঁকজমক তথা আড়ম্বরপূর্ণ লেবাস বর্জন করা। আর التقحل হল
শৌখিনতা ও বিলাসিতা বর্জন করার সাথে রুক্ষ-শুষ্ক দেহ অবলম্বন করা। (এ উভয়ই
মু’মিনের গুণ।)
(আবূ দাউদ ৪১৬১, ইবনু মাজাহ ৪১১৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫২৩
وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ جَابِرِ بنِ عَبدِ
اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
صلى الله عليه وسلم، وَأمَّرَ عَلَيْنَا أَبَا عُبَيْدَةَ رضي الله عنه،
نَتَلَقَّى عِيراً لِقُرَيْشٍ، وَزَوَّدَنَا جِرَاباً مِنْ تَمْرٍ لَمْ يَجِدْ
لَنَا غَيْرَهُ، فَكَانَ أَبو عُبيدَةَ يُعْطِينَا تَمْرَةً تَمْرَةً، فَقِيلَ:
كَيْفَ كُنْتُمْ تَصْنَعُونَ بِهَا ؟ قَالَ: نَمَصُّهَا كَمَا يَمَصُّ الصَّبي،
ثُمَّ نَشْرَبُ عَلَيْهَا مِنَ الْمَاءِ، فَتَكْفِينَا يَوْمَنَا إِلَى اللَّيْلِ،
وَكُنَّا نَضْرِبُ بِعِصيِّنَا الخَبَطَ، ثُمَّ نَبُلُّهُ بِالماءِ فَنَأكُلُهُ .
قَالَ: وَانْطَلَقْنَا عَلَى سَاحِلِ الْبَحْرِ، فَرُفِعَ لَنَا عَلَى سَاحِلِ
الْبَحْرِ كَهَيْئَةِ الكَثِيبِ الضَّخْمِ، فَأَتَيْنَاهُ فَإذَا هِيَ دَابَّةٌ
تُدْعَى الْعَنْبَرَ، فَقَالَ أَبُو عُبَيْدَةَ: مَيْتَةٌ، ثُمَّ قَالَ: لاَ، بَلْ
نَحْنُ رُسُلُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَفِي سَبِيلِ اللهِ وَقَدِ
اضْطُرِرْتُمْ فَكُلُوا، فَأقَمْنَا عَلَيْهِ شَهْراً، وَنَحْنُ ثَلاَثُمِئَةٍ
حَتَّى سَمِنَّا، وَلَقَدْ رَأيْتُنَا نَغْتَرِفُ مِن وَقْبِ عَيْنِهِ بِالقِلاَلِ
الدُّهْنَ وَنَقْطَعُ مِنْهُ الفِدَرَ كالثَّوْرِ أَوْ كَقَدْرِ الثَّوْرِ،
وَلَقَدْ أَخَذَ مِنَّا أَبُو عُبَيْدَةَ ثَلاثَةَ عَشَرَ رَجُلاً فَأقْعَدَهُمْ
في وَقْبِ عَيْنِهِ وَأخَذَ ضِلْعاً مِنْ أضْلاَعِهِ فَأقَامَهَا ثُمَّ رَحَلَ
أعْظَمَ بَعِيرٍ مَعَنَا فَمَرَّ مِنْ تَحْتهَا وَتَزَوَّدْنَا مِنْ لَحْمِهِ
وَشَائِقَ، فَلَمَّا قَدِمْنَا المَدِينَةَ أَتَيْنَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم فَذَكَرْنَا ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ:« هُوَ رِزْقٌ
أخْرَجَهُ اللهُ لَكُمْ، فَهَلْ مَعَكُمْ مِنْ لَحْمِهِ شَيْءٌ فَتُطْعِمُونَا ؟ »
فَأرْسَلْنَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْهُ فَأكَلَهُ . رواه
مسلم
আবূ
আব্দুল্লাহ জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (এক অভিযানে) পাঠালেন এবং
আবূ উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে আমাদের নেতা বানালেন। (আমাদেরকে পাঠানোর
উদ্দেশ্য ছিল,) আমরা যেন কুরাইশের এক কাফেলার পশ্চাদ্ধাবন করি। তিনি আমাদেরকে
পাথেয় স্বরূপ এক থলি খেজুর দিলেন। আমাদেরকে দেওয়ার মত এ ছাড়া অন্য কিছু পেলেন না।
সুতরাং আবূ উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদেরকে একটি একটি করে খেজুর দিতেন।
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনারা সেটা দিয়ে কী করতেন?’ তিনি বললেন, ‘আমরা তা
বাচ্চার চুষার মত চুষতাম, তারপর পানি পান করতাম। সুতরাং এটা আমাদের জন্য সারাদিন
রাত পর্যন্ত যথেষ্ট হত। আর আমরা লাঠি দ্বারা গাছের পাতা ঝরাতাম, তারপর তা পানিতে
ভিজিয়ে খেতাম।
আমরা (একবার) সমুদ্র উপকূলে পথ চলছিলাম, অতঃপর সমুদ্রতীরে বালির বড় ঢিবির মত একটি
জিনিস দেখতে পেলাম। এরপর তার কাছাকাছি এসে দেখলাম যে, একটা বড় জন্তু, যাকে আম্বার
(মাছ) বলা হয়।’ আবূ উবাইদাহ বললেন, ‘এটা তো মৃত (ফলে তা আমাদের জন্য অবৈধ)।’
পুনরায় তিনি বললেন, ‘না (অবৈধ নয়) বরং আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর দূত এবং আল্লাহর পথে (বের হয়েছি) আর তোমরা (এখন) নিরুপায়, সেহেতু
খাও।’
সুতরাং আমরা তিনশ’জন লোক একমাস তারই দ্বারা জীবনধারণ করলাম, এমনকি শেষ পর্যন্ত
আমরা মোটা হয়ে গেলাম। আমরা ঐ জন্তুর চোখের গর্ত থেকে ঘড়া ঘড়া তেল বের করতাম এবং
বলদের মত মাংসের ফালি কাটতাম। একদা আবূ উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদের মধ্য
হতে তেরো জনকে নিয়ে ঐ মাছের একটি চোখের কোটরে বসিয়ে দিলেন। আর তার পাঁজরের একখানি
হাড় নিয়ে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি আমাদের সব চেয়ে বড় উটটার উপর হাওদা চাপিয়ে তার
নীচে দিয়ে পার করে দিলেন। আমরা তার মাংস ফালি পাথেয় স্বরূপ সাথে নিলাম। অতঃপর যখন
আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম এবং তাঁর কাছে ঐ
মাছের কথা আলোচনা করলাম, তখন তিনি বললেন, ‘‘তা জীবিকা ছিল, যা আল্লাহ তা‘আলা
তোমাদের জন্য বের করেছিলেন। আমাদেরকে খাওয়ানোর মত তোমাদের কাছে তার কিছু মাংস আছে
কি?’’ (এ কথা শুনে) আমরা তাঁর নিকট কিছু মাংস পাঠালাম, সুতরাং তিনি তা ভক্ষণ
করলেন।
(মুসলিম ১৯৩৫, সহীহুল বুখারী ২৪৮৩, ৫২৪৩, তিরমিযী ২৪৭৫,
নাসায়ী ৪৩৫১, ৪৩৫২, ৪৩৫৩, ৪৩৫৪, আবূ দাউদ ৩৮৪০, ইবনু মাজাহ ৪১৫৯, আহমাদ ১৩৮৪৪, ১৩৮৭৪,
১৩৯০৩, ১৩৯২৬, ১৪৬২৯, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৩০, দারেমী ২০১২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫২৪
وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيْدٍ رَضِيَ
اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ كُمُّ قَمِيْصِ رَسُوْلِِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
إِلىٰ الرُّسْغِ. رواه أبو داؤد والترمذي وقال: حديث حسن.
আসমা
বিনতু ইয়াযীদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামার হাতা ছিলো কব্জি পর্যন্ত। (তিরমিযী
হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
আমি (আলবানী) বলছিঃ এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ (২৪৫৮)।
এর সনদের মধ্যে শাহ্র ইবনু হাওশাব নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তিনি মন্দ হেফ্য
শক্তির কারণে দুর্বল। হাফেয ইবনু হাজার ‘‘আত্তাক্বরীব’’ গ্রন্থে বলেনঃ তিনি
সত্যবাদী, বেশী বেশী মুরসাল এবং সন্দেহমূলক বর্ণনাকারী। আবূ হাতিম ও ইবনু আদী
প্রমুখও বলেছেন তার হেফ্য শক্তিতে দুর্বলতা ছিল।
[দেখুন ‘‘য‘ঈফা’’ হাদীস নং ৬৮৩৬]।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৫২৫
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: إنَّا
كُنَّا يَوْمَ الْخَنْدَقِ نَحْفِرُ، فَعَرَضَتْ كُدْيَةٌ شَدِيدَةٌ، فَجَاؤُوا
إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَوا: هَذِهِ كُدْيَةٌ عَرَضَتْ في
الخَنْدَقِ . فَقَالَ: «أنَا نَازِلٌ » ثُمَّ قَامَ، وَبَطْنُهُ مَعْصُوبٌ
بِحَجَرٍ، وَلَبِثْنَا ثَلاَثَة أيّامٍ لاَ نَذُوقُ ذَوَاقاً فَأخَذَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم المِعْوَلَ، فَضَرَبَ فَعَادَ كَثِيباً أهْيَلَ أَو أهْيَمَ،
فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ائْذَنْ لِي إِلَى البَيْتِ،
فَقُلتُ لامْرَأتِي: رَأيْتُ بالنَّبيِّ صلى الله عليه وسلم شَيئاً مَا في ذَلِكَ
صَبْرٌ فَعِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَقَالَت: عِنْدي شَعِيرٌ وَعَنَاقٌ، فَذَبَحْتُ
العَنَاقَ وَطَحَنْتُ الشَّعِيرَ حَتَّى جَعَلْنَا اللَّحْمَ في البُرْمَةِ، ثُمَّ
جِئْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، وَالعَجِينُ قَدِ انْكَسَرَ، وَالبُرْمَةُ
بَيْنَ الأثَافِيِّ قَدْ كَادَتْ تَنْضِجُ، فَقُلتُ: طُعَيْمٌ لِي، فَقُمْ أنْتَ
يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَرَجُلٌ أَوْ رَجُلانِ، قَالَ: «كَمْ هُوَ
» ؟ فَذَكَرْتُ لَهُ، فَقَالَ:«كَثِيرٌ طَيِّبٌ قُل لَهَا لاَ تَنْزَعِ
البُرْمَةَ، وَلاَ الخُبْزَ مِنَ التَّنُّورِحَتَّى آتِي » فَقَالَ: «قُومُوا »،
فَقَامَ المُهَاجِرُونَ وَالأنْصَارُ، فَدَخَلْتُ عَلَيْهَا فَقُلتُ: وَيْحَكِ
قَدْ جَاءَ النبيُّ صلى الله عليه وسلم وَالمُهَاجِرُونَ وَالأنْصَارُ وَمَن
مَعَهُمْ ! قَالَت: هَلْ سَألَكَ ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «ادْخُلُوا وَلاَ
تَضَاغَطُوا » فَجَعَلَ يَكْسرُ الخُبْزَ، وَيَجْعَلُ عَلَيْهِ اللَّحْمَ،
وَيُخَمِّرُ البُرْمَةَ وَالتَّنُّورَ إِذَا أخَذَ مِنْهُ، وَيُقَرِّبُ إِلَى
أصْحَابِهِ ثُمَّ يَنْزِعُ، فَلَمْ يَزَلْ يِكْسِرُ وَيَغْرِفُ حَتَّى شَبِعُوا،
وَبَقِيَ مِنْهُ، فَقَالَ: «كُلِي هَذَا وَأهِدي، فَإنَّ النَّاسَ أصَابَتْهُمْ
مَجَاعَةٌ ». متفقٌ عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ جَابِرٍ: لَمَّا حُفِرَ الخَنْدَقُ رَأيْتُ بِالنَّبِيِّ
صلى الله عليه وسلم خَمَصاً، فَانْكَفَأْتُ إِلَى امْرَأتِي، فَقُلتُ: هَلْ
عِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَإنّي رَأيْتُ بِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَمَصاً
شَديداً، فَأخْرَجَتْ إلَيَّ جِرَاباً فِيه صَاعٌ مِنْ شَعِيرٍ، وَلَنَا بَهِيمَةٌ
دَاجِنٌ فَذَبَحْتُهَا، وَطَحَنتِ الشَّعِيرَ، فَفَرَغَتْ إِلَى فَرَاغي،
وَقَطَعْتُهَا فِي بُرْمَتِهَا، ثُمَّ وَلَّيْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، فَقَالَت: لاَ تَفْضَحْنِي بِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ
مَعَهُ، فَجِئتُهُ فَسَارَرْتُهُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، ذَبَحْنَا بَهِيمَةً لَنَا، وَطَحَنْتُ صَاعاً مِنْ شَعِيرٍ، فَتَعَالَ
أنْتَ وَنَفَرٌ مَعَكَ، فَصَاحَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَ: «يَا أهلَ الخَنْدَقِ: إنَّ جَابِراً قَدْ صَنَعَ سُؤْراً
فَحَيَّهَلاً بِكُمْ» فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «لاَ تُنْزِلُنَّ
بُرْمَتَكُمْ وَلاَ تَخْبِزُنَّ عَجِينَكُمْ حَتَّى أجِيءَ » فَجِئْتُ، وَجَاءَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْدُمُ النَّاسَ، حَتَّى جِئْتُ امْرَأتِي،
فَقَالَتْ: بِكَ وَبِكَ ! فقُلْتُ: قَدْ فَعَلْتُ الَّذِي قُلْتِ . فَأخْرَجَتْ
عَجِيناً، فَبسَقَ فِيهِ وَبَاركَ، ثُمَّ عَمَدَ إِلَى بُرْمَتِنا فَبصَقَ
وَبَارَكَ، ثُمَّ قَالَ: ادْعِي خَابزَةً فَلْتَخْبِزْ مَعَكِ، وَاقْدَحِي مِنْ
بُرْمَتِكُمْ، وَلاَ تُنْزِلُوهَا وَهُم ألْفٌ، فَأُقْسِمُ بِاللهِ لأَكَلُوا
حَتَّى تَرَكُوهُ وَانْحَرَفُوا، وَإنَّ بُرْمَتَنَا لَتَغِطُّ كَمَا هِيَ، وَإنَّ
عَجِينَنَا لَيُخْبَزُ كَمَا هُوَ .
জাবের
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, খন্দক যুদ্ধের সময় আমরা পরিখা খনন করছিলাম। সেই সময় এক খন্ড কঠিন পাথর
বেরিয়ে এলে (যা ভাঙ্গা যাচ্ছিল না) সকলেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট এসে বললেন, ‘খন্দকের মধ্যে এক খন্ড পাথর বেরিয়েছে (আমরা তা ভাঙ্গতে পারছি
না)।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘‘আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব।’’ অতঃপর তিনি
দাঁড়ালেন। সে সময়ে তাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও অনাহারে ছিলাম; তিনদিন
কোন কিছুই খাইনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এসে) একটি গাঁইতি হাতে নিয়ে
পাথরের উপর আঘাত করলেন, ফলে তৎক্ষণাৎ তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকা রাশিতে পরিণত
হল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বাড়ী যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন।’
(তিনি অনুমতি দিলে বাড়ী পৌঁছে) আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে আমি এমন কিছু দেখেছি, যা আমি সহ্য করতে পারছি না। তোমার নিকট
কোন খাবার আছে কি?’ সে বলল, ‘আমার নিকট কিছু যব ও একটি বকরীর বাচ্চা আছে।’
সুতরাং বকরীর বাচ্চাটি আমি যবেহ করলাম এবং সে যব পিষে দিল। অতঃপর গোশ্ত ডেকচিতে
দিয়ে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। সে সময় আটা খামির
হচ্ছিল এবং ডেকচি চুলার ঝিঁকের উপর ছিল ও গোশ্ত প্রায় রান্না হয়ে এসেছিল। তখন আমি
বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার (বাড়ীতে) সামান্য কিছু খাবার আছে। ফলে একজন বা
দু’জন সাথে নিয়ে আপনি উঠে আসুন।’ তিনি বললেন, ‘‘ কী পরিমাণ খাবার আছে?’’ আমি তাঁর
নিকট সব খুলে বললে তিনি বললেন, ‘অনেক এবং উত্তম আছে।’ অতঃপর তিনি আমাকে বললেন,
‘‘তুমি তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, সে যেন আমি না আসা পর্যন্ত ডেকচি চুলা থেকে না
নামায় এবং রুটি তৈরী না করে।’’ তারপর (সকলের উদ্দেশ্যে) তিনি বললেন, ‘‘তোমরা উঠ!
(জাবির তোমাদেরকে খাবারের দাওয়াত দিয়েছে।)’’ মুহাজির ও আনসারগণ উঠলেন (এবং চলতে
লাগলেন)। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললাম, ‘তোমার সর্বনাশ হোক! (এখন কী
হবে?) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মুহাজির, আনসার এবং তাদের অন্য সাথীদের
নিয়ে চলে আসছেন।’ তিনি (জাবেরের স্ত্রী) বললেন, ‘তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞাসা
করেছিলেন?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ (স্ত্রী বললেন, ‘তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক
জানেন। আমাদের কাছে যা আছে তা তো আপনি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন।’ জাবের বলেন, তখন
আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দূর হল। আমি বললাম, ‘তুমি ঠিকই বলেছ।’) তারপর নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘‘তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং
ভিড় করো না।’’ এ বলে তিনি রুটি টুকরো করে তার উপর গোশ্ত দিয়ে সাহাবাদের মাঝে বিতরণ
করতে শুরু করলেন। (এগুলো পরিবেশন করার সময়) তিনি ডেকচি ও চুলা ঢেকে রেখেছিলেন।
এভাবে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করতে লাগলেন। এতে সকলে তৃপ্তি সহকারে
খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তিনি (জাবেরের স্ত্রীকে) বললেন, ‘‘এ তুমি খাও এবং
অন্যকে উপহার দাও। কেননা, লোকদেরকে ক্ষুধা পেয়েছে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন পরিখা খনন করা হল, তখন
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভুখা দেখলাম। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর
নিকট গিয়ে বললাম, ‘তোমার নিকট কোন (খাবার) জিনিস আছে কি? কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত দেখলাম।’ সুতরাং সে একটি
চামড়ার থলি বের করল, যাতে এক সা’ (আড়াই কিলো পরিমাণ) যব ছিল। আর আমাদের নিকট একটি
গৃহপালিত ছাগলের বাচ্চা ছিল। আমি তা জবাই করলাম এবং আমার স্ত্রী যব পিষল। আমার
(মাংস বানানোর কাজ সম্পন্ন করা পর্যন্ত) সেও যব পিষার কাজ সেরে নিল। পুনরায় আমি মাংস
টুকরো টুকরো করে হাঁড়িতে রাখলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট যেতে লাগলাম। সে বলল, ‘আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদের কাছে আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না।’ সুতরাং আমি তাঁর নিকট
এলাম এবং চুপি চুপি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আমাদের একটি ছাগল জবাই করেছি
এবং আমার স্ত্রী এক সা যব পিষেছে। সুতরাং আপনি আসুন এবং আপনার সাথে কিছু লোক।’ এ
কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিৎকার করে বললেন, ‘‘হে
পরিখা খননকারীরা! জাবের খাবার তৈরী করেছে, তোমরা এসো।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘যে পর্যন্ত আমি না আসি, সে পর্যন্ত তুমি চুলা
থেকে ডেকচি নামাবে না এবং আটার রুটি তৈরী করবে না।’’ অতঃপর আমি এলাম এবং নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এলেন। তিনি লোকদের আগে আগে হাঁটতে লাগলেন। পরিশেষে
আমি আমার স্ত্রীর নিকট এলাম (এবং তাকে সকলের আসার সংবাদ দিলাম)। সে আমাকে ভৎর্সনা
করতে লাগল। আমি বললাম, ‘(এতে আমার দোষ কি?) আমি তো তা-ই করেছি যা তুমি আমাকে
বলেছিলে।’ (যাই হোক) সে খমীর বের করে দিল। তিনি তাতে থুতু মারলেন এবং বরকতের দোআ
করলেন। তারপর তিনি আমাদের ডেকচির নিকট গিয়ে তাতেও থুতু মারলেন এবং বরকতের দোআ
করলেন। আর তিনি (আমার স্ত্রীকে) বললেন, ‘‘একজন মহিলা ডাকো; সে তোমার সাথে রুটি
তৈরী করুক এবং তুমি ডেচকি থেকে (মাংস) পাত্রে দিতে থাক, কিন্তু চুলা থেকে তা
নামাবে না।’’
তাঁরা সংখ্যায় এক হাজার ছিলেন। জাবের বলেন, আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি যে, ‘সকলেই
খাবার খেলেন এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা কিছু অবশিষ্ট রেখে চলে গেলেন। আর আমাদের ডেকচি
আগের মত ফুটতেই থাকল এবং আমাদের আটা থেকে রুটি প্রস্তুত হতেই রইল।’
(সহীহুল বুখারী ৩০৭০, ৪১০১, ৪১০২, মুসলিম ২০৩৯, তিরমিযী
২৮৪২, আহমাদ ১৩৭৯৯, ১৩৮০৯, ১৪৬১০, দারেমী ৪২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫২৬
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
أَبُو طَلْحَةَ لأُمِّ سُلَيمٍ: قَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم ضَعِيفاً أعْرِفُ فِيهِ الجُوعَ، فَهَلْ عِنْدَكِ مِنْ شَيْءٍ ؟ فَقَالَتْ:
نَعَمْ، فَأخْرَجَتْ أقْرَاصاً مِنْ شَعِيرٍ، ثُمَّ أخَذَتْ خِمَاراً لَهَا،
فَلَفَّتِ الخُبْزَ بِبَعْضِهِ، ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ ثَوْبِي وَرَدَّتْنِي
بِبَعْضِهِ، ثُمَّ أرْسَلَتْني إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَذَهَبتُ
بِهِ، فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، جَالِساً
في المَسْجِدِ، وَمَعَهُ النَّاسُ، فَقُمْتُ عَلَيْهمْ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «أرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ ؟ » فَقُلتُ:
نَعَمْ، فَقَالَ: «ألِطَعَامٍ ؟ » فَقُلتُ: نَعَمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «قُومُوا » فَانْطَلَقُوا وَانْطَلَقْتُ
بَيْنَ أَيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْتُ أَبَا طَلْحَةَ فَأخْبَرْتُهُ، فَقَالَ أَبُو
طَلْحَةَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ، قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم بالنَّاسِ وَلَيْسَ عِنْدَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ ؟ فَقَالَتْ: الله
وَرَسُولُهُ أعْلَمُ . فَانْطَلَقَ أَبو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، فَأقْبَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
صلى الله عليه وسلم مَعَهُ حَتَّى دَخَلاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم: «هَلُمِّي مَا عِنْدَكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ » فَأتَتْ
بِذَلِكَ الخُبْزِ، فَأمَرَ بِهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم فَفُتَّ، وَعَصَرَتْ عَلَيْهِ أمُّ سُلَيْمٍ عُكّةً فَآدَمَتْهُ، ثُمَّ قَالَ
فِيهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مَا شَاءَ اللهُ أنْ
يَقُولَ، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ » فأَذِنَ لَهُمْ فَأكَلُوا حَتَّى
شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ » فأذِنَ لَهُم حَتَّى
أكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالقَوْمُ سَبْعُونَ رَجُلاً أَو
ثَمَانُونَ . متفقٌ عَلَيْهِ .
وفي رواية: فَمَا زَالَ يَدْخُلُ عَشرَةٌ، وَيخرجُ عَشرَةٌ حَتَّى لَمْ يَبْقَ
مِنْهُمْ أحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ، فَأكَلَ حَتَّى شَبِعَ، ثُمَّ هَيَّأهَا فَإذَا
هِيَ مِثْلُهَا حِيْنَ أكَلُوا مِنْهَا .
وفي رواية: فَأَكَلُوا عَشرَةً عَشرةً، حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ
رَجُلاً، ثُمَّ أكَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَعْدَ ذَلِكَ وَأهْلُ
البَيْتِ، وَتَرَكُوا سُؤْراً .
وفي رواية: ثُمَّ أفْضَلُوا مَا بَلَغُوا جِيرَانَهُمْ .
وفي رواية عن أنس، قَالَ: جِئتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم يوماً، فَوَجَدْتُهُ جَالِساً مَعَ أصْحَابِه، وَقَدْ عَصَبَ بَطْنَهُ،
بِعِصَابَةٍ، فَقُلتُ لِبَعْضِ أصْحَابِهِ: لِمَ عَصَبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم بَطْنَهُ ؟ فَقَالَوا: مِنَ الجُوعِ، فَذَهَبْتُ إِلَى
أَبي طَلْحَةَ، وَهُوَ زَوْجُ أُمِّ سُلَيْمٍ بِنْتِ مِلْحَانَ، فَقُلتُ: يَا
أبتَاهُ، قَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ، فَسَألْتُ بَعْضَ أصْحَابِهِ، فَقَالُوا: من الجُوعِ
. فَدَخَلَ أَبُو طَلْحَةَ عَلَى أُمِّي، فَقَالَ: هَلْ مِنْ شَيءٍ ؟ قَالَت:
نَعَمْ، عِنْدِي كِسَرٌ مِنْ خُبْزٍ وَتَمَرَاتٌ، فَإنْ جَاءنَا رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم وَحْدَهُ أشْبَعْنَاهُ، وَإنْ جَاءَ آخَرُ
مَعَهُ قَلَّ عَنْهُمْ ... وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ
আনাস
ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
(একদা
আমার সৎবাপ) আবূ ত্বালহা (আমার মা) উম্মে সুলাইমকে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কণ্ঠস্বরটা খুব ক্ষীণ শুনলাম। আমি বুঝতে
পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমার নিকট কিছু আছে কি?’ উম্মে সুলাইম বললেন,
‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি তার ওড়নার এক অংশ দিয়ে বেঁধে গোপনে আমার
কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তাঁর সাথে কিছু লোক
ছিল। আমি তাদের নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমাকে আবূ ত্বালহা
পাঠিয়েছে?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘কোন খাবারের জন্য নাকি?’’ আমি
বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
(সাথীদেরকে) বললেন, ‘‘ওঠ।’’ সুতরাং তাঁরা রওনা হলেন। আমিও তাঁদের আগে আগে চলতে
লাগলাম এবং আবূ ত্বালহার নিকট এসে খবর জানালাম। তখন আবূ ত্বালহা বললেন, ‘হে উম্মে
সুলাইম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোক নিয়ে আসছেন। অথচ
আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্রী নেই (এখন কী করা যায়)?’ উম্মে
সুলাইম বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভাল জানেন।’ অতঃপর আবূ তালহা (আগে) গিয়ে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে আগমন করলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! তোমার নিকট যা কিছু আছে
নিয়ে এসো।’ সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলিকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ করলেন। অতঃপর তার উপর উম্মে
সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে তরকারি বানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় কি কি বলে (ফুঁক) দিলেন। তারপর বললেন, ‘‘দশজনকে
আসতে বল।’’ তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেল।
তারপর বললেন, ‘‘আরো দশজনকে আসতে বল।’’ তখন আরও দশজন এসে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর
বললেন, ‘‘আরো দশজনকে আসতে বল।’’ এভাবে আগত লোকদের সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া-দাওয়া
করলেন। আর আগত লোকদের সংখ্যা ছিল ৭০ কিংবা ৮০ জন। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, দশজন করে প্রবেশ করতে এবং বের হতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত
এমন কোন ব্যক্তি বাকী রইল না, যে প্রবেশ করে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়নি। অতঃপর ঐ
খাবার জমা করে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে।
অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন করে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে
তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং গৃহবাসীরা খেলেন
এবং তাঁরাও কিছু (খাবার) ছেড়ে দিলেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর তাঁরা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের
নিকট পৌঁছে দিলেন।
আরো অন্য এক বর্ণনায় আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তারপর দেখলাম যে,
তিনি তাঁর সাথীদের সঙ্গে বসে আছেন। তখন তিনি তাঁর পেটে পটি বেঁধে ছিলেন। আমি তাঁর
কিছু সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন
তাঁর পেটে পট্টি বেঁধে আছেন।’ তাঁরা বললেন, ‘ক্ষুধার কারণে।’ অতঃপর আমি (আমার মা)
উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী আবূ ত্বালহার নিকট গেলাম এবং বললাম, ‘আব্বা!
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেটে পট্টি বাঁধা অবস্থায়
দেখলাম। আমি তাঁর কিছু সাথীকে (এর কারণ) জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেন, ক্ষুধা।’
অতঃপর আবূ ত্বালহা আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, ‘তোমার কাছে কিছু আছে কি?’ মা
বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে কয়েক টুকরো রুটি এবং কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট একাই আসেন, তাহলে তাঁকে পরিতৃপ্তি
সহকারে খাওয়াব; আর যদি তাঁর সাথে অন্য লোকও এসে যায়, তাহলে তাঁদের জন্য এ খাবার কম
হয়ে যাবে।’ অতঃপর বাকী হাদীস পূর্বরূপ।
(সহীহুল বুখারী ৪২২, ৩৫৭৮, ৫৩৮১, ৫৪৫০, ৫৬৮৮, মুসলিম ২০৪০,
তিরমিযী ৩৬৩০, আহমাদ ১২০৮২, ১২৮৭০, ১৩০১৫, ১৩১৩৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৫, দারেমী ৪৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫৭
অল্পে তুষ্টি, চাওয়া হতে
দূরে থাকা এবং মিতাচারিতা ও মিতব্যয়িতার মাহাত্ম্য এবং অপ্রয়োজনে চাওয়ার
নিন্দাবা/পাশাদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে
নেই।” (সূরা হূদ ৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ “(দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে,
জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক
লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে;
তারা লোকদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
অর্থাৎ “যারা ব্যয় করলে অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা এ দুয়ের
মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (সূরা ফুরকান ৬৭ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
অর্থাৎ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।
আমি তাদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমার আহার্য যোগাবে।”
(সূরা যারিয়াত ৫৬-৫৭ আয়াত)
এ ব্যাপারে পূর্বের দুই পরিচ্ছেদে অধিকাংশ হাদীস পার হয়েছে। আরো কিছু হাদীস
নিম্নরূপঃ-
৫২৭
عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَيْسَ الغِنَى عَن كَثرَةِ العَرَض،
وَلكِنَّ الغِنَى غِنَى النَّفْسِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ-হুরাইরা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বিষয় সম্পদের আধিক্য ধনবত্তা নয়, প্রকৃত
ধনবত্তা হলো অন্তরের ধনবত্তা।’’
ধনবত্তা।’’ (সহীহুল বুখারী ৬৪৪৬, মুসলিম ১০৫১, তিরমিযী
২৩৭৩, ইবনু মাজাহ ৪১৩৭, আহমাদ ৭২৭৪, ৭৫০২, ২৭৩৯১, ৮৮১৭, ৯৩৬৪, ৯৪২৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫২৮
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أن رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «قَدْ أفْلَحَ مَنْ أسْلَمَ، وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافاً، وَقَنَّعَهُ اللهُ
بِمَا آتَاهُ ». رواه مسلم
আব্দুল্লাহ
ইবনে আম্র ইবনুল ‘আস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ
করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট
করেছেন।’’
(মুসলিম ১০৫৪, তিরমিযী ২৩৪৮, ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, আহমাদ ৬৫৭২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫২৯
وَعَن حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ رضي الله عنه،
قَالَ: سألتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فَأعْطَانِي،
ثُمَّ سَألْتُهُ فَأَعْطَانِي، ثُمَّ سَألْتُهُ فَأعْطَانِي، ثُمَّ قَالَ: «يَا
حَكِيم، إنَّ هَذَا المَالَ خَضِرٌ حُلْوٌ، فَمَنْ أخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفسٍ
بُورِكَ لَهُ فِيهِ، وَمَنْ أخَذَهُ بإشرَافِ نَفسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ،
وَكَانَ كَالَّذِي يَأكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ، وَاليَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ
اليَدِ السُّفْلَى» قَالَ حَكِيم: فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ أرْزَأُ أحَداً بَعْدَكَ شَيْئاً حَتَّى
أُفَارِقَ الدُّنْيَا، فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ رضي الله عنه يَدْعُو حَكيماً
لِيُعْطِيَه العَطَاء، فَيَأبَى أنْ يَقْبَلَ مِنْهُ شَيْئاً، ثُمَّ إنَّ عُمَرَ
رضي الله عنه دَعَاهُ لِيُعْطِيَه فَأَبَى أنْ يَقْبَلَهُ. فَقَالَ: يَا مَعْشَرَ
المُسْلِمِينَ، أُشْهِدُكُمْ عَلَى حَكيمٍ أنّي أعْرِضُ عَلَيْهِ حَقَّهُ الَّذِي
قَسَمَهُ اللهُ لَهُ في هَذَا الفَيءِ فَيَأبَى أَنْ يَأخُذَهُ . فَلَمْ يَرْزَأْ
حَكِيمٌ أحَداً مِنَ النَّاسِ بَعْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى
تُوُفِّي . متفقٌ عَلَيْهِ
হাকীম
ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলে তিনি আমাকে
দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর
বললেন, ‘‘হে হাকীম! এ সম্পদ শ্যামল-সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি (লোভহীন) প্রশস্ত হৃদয়ে তা
গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ গ্রহণ
করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে হবে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু
তার ক্ষুধা মেটে না। উপর হাত নিচু হাত হতে উত্তম।’’ (দাতা গ্রহীতা হতে উত্তম।)
হাকীম বলেন, আমি বললাম, ‘যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! ইয়া
রাসূলুল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না।’
তারপর আবূ বাক্র রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হাকীমকে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন,
কিন্তু তাঁর নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। অতঃপর উমার রাদ্বিয়াল্লাহু
‘আনহু তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ
করতে অস্বীকার করলেন। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘হে মুসলিমগণ! হাকীমের
ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি তাঁর কাছে ‘ফাই’ থেকে তাঁর
প্রাপ্য পেশ করছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।’’ (সত্য সত্যই) হাকীম
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মানুষের নিকট
থেকে কিছু গ্রহণ করেননি। (‘ফাই’ সেই মালকে বলা হয়, যা বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষ ত্যাগ
করে পালিয়ে যায় অথবা যা সন্ধির মাধ্যমে লাভ হয়। পক্ষান্তরে যে মাল দস্তুরমত যুদ্ধ
করে জয়যুক্ত হয়ে অর্জিত হয় তাকে ‘মালে গনীমত’ বলা হয়।)
( সহীহুল বুখারী ১৪২৮, ১৪৭২, ২৮৫০, ৩১৩৪, ৬৪৪১, মুসলিম
১০৩৪, ১০৩৫, তিরমিযী ২৪৬৩, নাসায়ী ২৫৩১, ২৫৩৪, ২৫৪৩, ২৫৪৪, ২৬০১, ২৬০২, ২৬০৩, আবূ দাউদ
১৬৭৬, আহমাদ ৭১১৫, ৭৩০১, ৭৩৮১, ৭৬৮৩, ৮৪৮৭, ৮৫২৬, ৮৮৭৮, দারেমী ১৬৫০, ১৬৫১, ১৬৫২, ১৬৫৩,
২৭৫০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩০
وَعَن أَبي بُردَةَ، عَن أَبي مُوسَى
الأَشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
في غَزاةٍ وَنَحْنُ سِتَّةُ نَفَرٍ بَيْنَنَا بَعِيرٌ نَعْتَقِبُهُ، فَنقِبَت
أَقدَامُنَا وَنَقِبَت قَدَمِي، وَسَقَطَت أظْفَارِي، فَكُنَّا نَلُفُّ عَلَى
أرْجُلِنا الخِرَقَ، فَسُمِّيَت غَزْوَةَ ذَاتِ الرِّقَاعِ لِمَا كُنَّا نَعْصِبُ
عَلَى أرْجُلِنَا مِنَ الخِرَقِ، قَالَ أَبُو بُردَةَ: فَحَدَّثَ أَبُو مُوسَى
بِهَذَا الحَدِيثِ، ثُمَّ كَرِه ذَلِكَ، وَقَالَ: مَا كُنْتُ أصْنَعُ بِأنْ
أذْكُرَهُ ! قَالَ: كأنَّهُ كَرِهَ أنْ يَكُونَ شَيْئاً مِنْ عَمَلِهِ أفْشَاهُ .
متفقٌ عَلَيْهِ
.
আবূ বুরদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আবূ
মুসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘কোন যুদ্ধে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে রওনা হলাম। আমরা ছিলাম ছ’জন। আমাদের একটি মাত্র উঁট ছিল।
পর্যায়ক্রমে এক এক করে আমরা তার পিঠে আরোহন করলাম। (হেঁটে হেঁটে) আমাদের পা ফেটে
গেল। আমার পা দু’খানাও ফেটে গেল, খসে গেল নখগুলো। এ কারণে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া
বাঁধলাম। এ জন্য এ যুদ্ধকে ‘যাতুর রিকা’ (নেকড়া-ওয়ালা) যুদ্ধ বলা হয়। কেননা, এ
যুদ্ধে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া দিয়ে পট্টি বেঁধেছিলাম।’’
আবূ মূসা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু উক্ত ঘটনা বর্ণনা করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এ
ঘটনা বর্ণনা করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলেন, ‘আমি এভাবে বর্ণনা করাকে ভাল মনে
করি না।’ সম্ভবতঃ তিনি পছন্দ করতেন না যে, তাঁর কিছু আমল তিনি প্রকাশ করুন।
(সহীহুল বুখারী ৪১২৮, মুসলিম ১৮১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩১
وَعَن عَمرِو بنِ تَغْلِبَ رضي الله عنه:
أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أُتِيَ بِمَالٍ أَوْ
سَبْيٍ فَقَسَّمَهُ، فَأعْطَى رِجَالاً، وَتَرَكَ رِجَالاً، فَبَلغَهُ أنَّ
الَّذِينَ تَرَكَ عَتَبُوا، فَحَمِدَ اللهَ، ثُمَّ أثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ:
«أمَّا بعْدُ، فَواللهِ إنِّي لأُعْطِي الرَّجُلَ وَأدَعُ الرَّجُلَ، وَالَّذِي
أدَعُ أحَبُّ إلَيَّ مِنَ الَّذِي أُعْطِي، وَلَكِنِّي إنَّمَا أُعْطِي أقْوَاماً
لِمَا أرَى في قُلُوبِهِمْ مِنَ الجَزَعِ وَالهَلَعِ، وَأكِلُ أقْوَاماً إِلَى مَا
جَعَلَ اللهُ في قُلُوبِهم مِنَ الغِنَى وَالخَيْرِ، مِنْهُمْ عَمْرُو بنُ
تَغْلِبَ » قَالَ عَمْرُو بنُ تَغْلِبَ: فَوَاللهِ مَا أُحِبُّ أنَّ لِي
بِكَلِمَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم حُمْرَ النَّعَم . رواه البخاري
‘আমর
ইবনে তাগলিব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মাল অথবা যুদ্ধবন্দী নিয়ে আসা হল। অতঃপর
তিনি তা বণ্টন করলেন। তিনি কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে ছাড়লেন। তারপর তিনি
খবর পেলেন যে, যাদেরকে তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সুতরাং তিনি
(ভাষণের প্রারম্ভে) আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘‘আম্মা
বা‘দ! আল্লাহর কসম! আমি কাউকে দিই এবং কাউকে ছাড়ি। যাকে ছাড়ি সে আমার নিকট ঐ
ব্যক্তি চেয়ে উত্তম, যাকে দিই। কিন্তু আমি কিছু লোককে কেবলমাত্র এই জন্য দিই যে,
আমি তাদের অন্তরে অস্থিরতা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করি এবং অন্য কিছু লোককে আমি ঐ ধনবত্তা
ও কল্যাণের দিকে সঁপে দিই, যা আল্লাহ তাদের অন্তরে নিহিত রেখেছেন। তাদের মধ্যে
‘আমর ইবনে তাগলিব একজন।’’
আম্র ইবনে তাগলিব বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর এ কথার বিনিময়ে লাল উঁট নেওয়াও পছন্দ করি না।’
(সহীহুল বুখারী ৯২৩, ৩১৪৫, ৭৫৩৫, আহমাদ ২০১৪৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩২
وَعَن حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ رضي الله عنه،
أنّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ
السُّفْلَى، وَابْدَأ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ
غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ ».
متفق عليه، وهذا لفظ البخاري، ولفظ مسلم أخصر.
হাকীম
ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের
(গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে
দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা
করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে
বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য করে দেন।’’ (বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি
বুখারীর, মুসলিমের শব্দগুচ্ছ অধিকতর সংক্ষিপ্ত)
(সহীহুল বুখারী ১৪২৮, ১৪৭২, ২৭৫০, ৩১৪৩, ৬৪৪১, মুসলিম
১০৩৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩৩
وَعَن أَبي عَبدِ الرَّحمٰنِ مُعَاوِيَةَ
بنِ أبي سُفيَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
صلى الله عليه وسلم: «لاَ تُلْحِفُوا في الْمَسْأَلَةِ، فَوَاللهِ لاَ يَسْأَلُنِي
أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئاً، فَتُخْرِجَ لَهُ مَسْأَلَتُهُ مِنِّي شَيْئاً وَأنَا
لَهُ كَارِهٌ، فَيُبَارَكَ لَهُ فِيمَا أعْطَيْتُهُ ». رواه مسلم
আবূ
আব্দুর রহমান মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা নাছোড় বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করো না।
আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে যে কেউ আমার নিকট কোন কিছু চাইবে, অতঃপর আমার অনিচ্ছা
সত্ত্বেও যদি আমার কাছ থেকে কিছু বের হয় (কাউকে কিছু দিই), তাহলে তাতে বরকত হবে
না।’’
(মুসলিম ১০৩৮, নাসায়ী ২৫৯৩, আহমাদ ১৬৪৫০, মুওয়াত্তা মালিক
১৮৯১, দারেমী ১৬৪৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩৪
وَعَن أَبي عَبدِ الرَّحمَانِ عَوفِ بنِ
مَالِكٍ الأَشْجَعِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «ألاَ تُبَايِعُونَ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم » وَكُنَّا حَدِيثِي عَهْدٍ
بِبَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
ثمَّ قَالَ: «ألا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم » فَبَسَطْنَا
أيْدِيَنَا، وَقُلنَا: قدْ بَايَعنَاكَ فَعَلامَ نُبَايِعُكَ ؟ قَالَ: «عَلَى أنْ
تَعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً، وَالصَّلَوَاتِ الخَمْسِ
وَتُطِيعُوا اللهَ» وأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيفَةً « وَلاَ تَسْألُوا النَّاسَ
شَيْئاً ». فَلَقَدْ رَأيْتُ بَعْضَ أُولئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوطُ أحَدِهِمْ
فَمَا يَسأَلُ أحَداً يُنَاوِلُهُ إيّاهُ . رواه مسلم
আবূ
আব্দুর রহমান ‘আওফ ইবনে মালিক আশজা‘ঈ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ৯ জন অথবা ৮ জন
অথবা ৭ জন লোক ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে বায়‘আত করবে না?’’ (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন) অথচ আমরা কিছু
সময় পূর্বেই তাঁর সাথে বায়‘আত করে ফেলেছি। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল!
আমরা তো আপনার সাথে বায়‘আত করে ফেলেছি।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি
রাসূলুল্লাহর সাথে বায়‘আত করবে না?’’ সুতরাং আমরা নিজেদের হাতগুলো বিস্তার করলাম
এবং বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার সাথে বায়‘আত করেছি। সুতরাং এখন কোন্ কথার
উপর আপনার সাথে বায়‘আত করব?’ তিনি বললেন, ‘‘এ কথার উপর যে, তোমরা এক আল্লাহর
উপাসনা করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়বে এবং
আল্লাহর আনুগত্য করবে।’’ আর একটি কথা তিনি চুপিসারে বললেন, “তোমরা লোকদের নিকট কোন
কিছু চাইবে না।” অতঃপর আমি (বায়‘আত গ্রহণকারীদের) মধ্যে কিছু লোককে দেখছি যে,
তাঁদের মধ্যে কারো চাবুক যদি যমীনে পড়ে যেত, তাহলে তিনি কাউকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন
না। (বরং স্বয়ং সওয়ারী থেকে নেমে তা উঠিয়ে নিতেন।)
(মুসলিম ১০৪৩, নাসায়ী ৪৬০, আবূ দাউদ ১৬৪২, ইবনু মাজাহ
২৮৬৭, আহমাদ ২৩৪৭৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩৫
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا:
أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: لاَ تَزَالُ الْمَسْأَلةُ بأَحَدِكُمْ
حَتَّى يَلْقَى اللهَ تَعَالَى وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ . متفقٌ
عَلَيْهِ
ইবনে
উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা ভিক্ষা
করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তো (সে এই অবস্থায় সাক্ষাৎ
করবে যে,) তার চেহারায় কোন মাংস টুকরা থাকবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪৭৫, ৪৭১৮, মুসলিম ১০৪০, নাসায়ী ২৫৮৫,
আহমাদ ৪৬২৪, ৫৫৮৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩৬
وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ، وَذَكَرَ
الصَّدَقَةَ وَالتَّعَفُّفَ عَنِ الْمَسْأَلَةِ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ
اليَدِ السُّفْلَى » وَاليَدُ العُلْيَا هِيَ المُنْفِقَةُ، وَالسُّفْلَى هِيَ
السَّائِلَةُ. متفقٌ عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর আরোহণ করে বললেন এবং তিনি সাদকাহ ও
ভিক্ষা করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। (এই সুযোগে) তিনি বললেন,
‘‘উঁচু হাত নিচু হাত চেয়ে উত্তম, আর দানকারীর হাত হচ্ছে উঁচু হাত এবং ভিক্ষাকারী
হাত হচ্ছে নিচু হাত।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪২৯, মুসলিম ১০৩৩, নাসায়ী ২৫৩৩, আবূ দাউদ
১৬৪৮, আহমাদ ৪৪৬০, ৫৩২২, ৫৬৯৫, ৬০০৩, ৬৩৬৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮১, দারেমী ১৬৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩৭
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ سَألَ النَّاسَ
تَكَثُّراً فإنَّمَا يَسْألُ جَمْراً ؛ فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ ».
رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধি করার জন্য
মানুষের নিকট ভিক্ষা করে, সে আসলে আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করে থাকে। ফলে (সে এখন তা)
অল্প ভিক্ষা করুক অথবা বেশী।’’
(মুসলিম ১০৪১, ইবনু মাজাহ ১৮৩৮, আহমাদ ৭১২৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৩৮
وَعَن سَمُرَةَ بنِ جُنْدُبٍ رضي الله عنه،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ
المَسْأَلَةَ كَدٌّ يَكُدُّ بِهَا الرَّجُلُ وَجْهَهُ، إِلاَّ أنْ يَسْأَلَ
الرَّجُلُ سُلْطاناً أَوْ في أمْرٍ لاَ بُدَّ مِنْهُ ». رواه الترمذي، وقال: حديث
حسن صحيح
সামুরাহ
ইবনে জুন্দুব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ভিক্ষা করা এক জখম করার কাজ, তা দ্বারা
মানুষ নিজ চেহারাকে জখম করে। কিন্তু সে ব্যক্তি যদি বাদশাহর কাছে চায় অথবা নিরুপায়
হয়ে চায় (তাহলে তা স্বতন্ত্র)।’’
(তিরমিযী, হাসান সহীহ) (তিরমিযী ৬৮১, নাসায়ী ২৫৯৯, ২৬০০,
আহমাদ ১৯৬০০, ১৯৭০৭)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৫৩৯
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ أصَابَتْهُ
فَاقَةٌ فَأنْزَلَهَا بالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ، وَمَنْ أنْزَلَهَا
باللهِ، فَيُوشِكُ اللهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ ». رواه أَبُو داود
والترمذي، وقال: حديث حسن
ইবনে
মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে অভাবগ্রস্ত হয় এবং তার অভাব লোকদের
নিকট প্রকাশ করে, তার অভাব দূর করা হয় না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর নিকট প্রকাশ
করে, আল্লাহ তাকে শীঘ্র অথবা বিলম্বে জীবিকা প্রদান করেন।’’ (আবু দাউদ, তিরমিযী,
হাসান সূত্রে)
(তিরমিযী ২৩২৬, আবূ দাউদ ১৬৪৫, আহমাদ ৩৫৮৮, ৪২০৭)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৫৪০
وَعَن ثَوبَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَكَفَّلَ لِي أنْ
لاَ يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئاً، وَأتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ ؟ » فَقُلتُ:
أنَا، فَكَانَ لاَ يَسْأَلُ أحَداً شَيْئاً . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
সাওবান
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য এ কথার
জামিন হবে যে, সে লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন
হব।’’ আমি বললাম, ‘আমি (এর জামিন)।’ সুতরাং সাওবান কারো নিকট কোন কিছু চাইতেন না।
(আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)
(আবূ দাউদ ১৬৪৩, নাসায়ী ২৫৯০, ইবনু মাজাহ ১৮৩৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৪১
وَعَن أَبي بِشْرٍ قَبيصَةَ بنِ
المُخَارِقِ رضي الله عنه، قَالَ: تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأتَيْتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أسْأَلُهُ فِيهَا، فَقَالَ: أقِمْ حَتَّى
تَأتِيَنَا الصَّدَقَةُ فَنَأمُرَ لَكَ بِهَا ثُمَّ قَالَ: يَا قَبيصةُ، إنَّ
المَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ إِلاَّ لأَحَدِ ثلاثَةٍ: رَجُلٌ تَحَمَّلَ حَمَالَةً،
فَحَلَّتْ لَهُ المَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَها، ثُمَّ يُمْسِكُ، وَرَجُلٌ
أصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَهُ، فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى
يُصِيبَ قِوَاماً مِنْ عَيش - أَوْ قَالَ: سِدَاداً مِنْ عَيْشٍ - وَرَجُلٌ
أصَابَتْهُ فَاقَةٌ، حَتَّى يَقُولَ ثَلاَثَةٌ مِنْ ذَوِي الحِجَى مِنْ قَوْمِه:
لَقَدْ أصَابَتْ فُلاناً فَاقَةٌ. فَحلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ
قِوَاماً مِن عَيش، أَوْ قَالَ: سِدَاداً مِن عَيشٍ، فَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ
المسألَةِ يَا قَبِيصَةُ سُحْتٌ، يَأكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتاً . رواه مسلم
.
আবূ বিশর ক্বাবীস্বাহ ইবনে মুখারেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একবার
এক অর্থদন্ডের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে থাকলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, ‘‘সাদকার মাল আসা
পর্যন্ত তুমি অবস্থান কর। এলে তোমাকে তা দেওয়ার আদেশ করব।’’ অতঃপর তিনি বললেন,
‘‘হে ক্বাবীস্বাহ! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া বৈধ নয়; (১) যে ব্যক্তি
অর্থদন্ডে পড়বে (কারো দিয়াত বা জরিমানা দেওয়ার যামিন হবে), তার জন্য চাওয়া হালাল।
অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করবে। (২) যে ব্যক্তি দুর্যোগগ্রস্ত হবে
এবং তার মাল ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল
অবস্থা ফিরে না এসেছে। (৩) যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন
জ্ঞানী লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ। আর এ
ছাড়া হে ক্বাবীস্বাহ অন্য লোকের জন্য চেয়ে (মেগে) খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম
খাওয়া হবে।’’
(মুসলিম ১০৪৪, নাসায়ী ২৫৭৯, ২৫৯১, আবূ দাউদ ১৬৪০, আহমাদ
১৫৪৮৬, ২০০৭৮, দারেমী ১৬৭৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৪২
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: لَيْسَ المسكينُ
الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ،
وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلكِنَّ المِسكينَ الَّذِي لاَ يَجِدُ غِنىً
يُغْنِيهِ، وَلاَ يُفْطَنُ لَهُ فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ، وَلاَ يَقُومُ فَيَسْألُ
النَّاسَ . متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক গ্রাস ও দু’গ্রাস এবং একটি খেজুর ও
দু’টি খেজুরের জন্য যে লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় সে মিসকীন নয়। (আসলে)
মিসকীন তো সেই, যার কাছে (অপর থেকে) অমুখাপেক্ষী হওয়ার মত মাল নেই এবং (বাহ্যতঃ)
তাকে গরীবও বুঝায় না যে, তাকে সাদকাহ দেওয়া যাবে। আর সে উঠে লোকের কাছে চায়ও না।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪৭৯, ১৪৭৬, ৪৫৩৯, মুসলিম ১০৩৯, নাসায়ী
২৫৭১, ২৫৭২, ২৫৭৮, আবূ দাউদ ১৬৩১, আহমাদ ৭৪৮৬, ২৭৪০৪, ৮৮৬৭, ৮৮৯৫, ৯৪৫৪, মুওয়াত্তা
মালিক ১৪৩৭, দারেমী ১৬১৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫৮
বিনা চাওয়ায় এবং বিনা
লোভ-লালসায় যে মাল পাওয়া যাবে তা নেওয়া জায়েয
৫৪৩
عَن سَالِمِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ،
عَن أَبِيهِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ، عَن عَمَرَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يُعْطِيني العَطَاءَ،
فَأقُولُ: أَعطِهِ مَنْ هُوَ أفْقَرُ إِلَيْهِ مِنّي. فَقَالَ:«خُذْهُ، إِذَا
جَاءَكَ مِنْ هَذَا المَالِ شَيْءٌ وَأنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلاَ سَائِلٍ،
فَخُذْهُ فَتَمَوَّلْهُ، فَإنْ شِئْتَ كُلْهُ، وَإنْ شِئْتَ تَصَدَّقْ بِهِ، وَمَا
لاَ، فَلاَ تُتبِعهُ نَفْسَكَ» قَالَ سَالِمٌ: فَكَانَ عَبدُ الله لاَ يَسألُ
أحَداً شَيْئاً، وَلاَ يَرُدُّ شَيْئاً أُعْطِيَه. متفقٌ عَلَيْهِ
.
সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যখন কিছু দান করতেন, তখন
আমি বলতাম, ‘আমার চেয়ে যে বেশি অভাবী তাকে দিন।’ (একদা) তিনি বললেন, ‘‘তুমি তা
নিয়ে নাও। যখন তোমার কাছে এই মাল আসে, আর তোমার মনে লোভ না থাকে এবং তুমি তা
যাচনাও না করে থাক, তাহলে তা গ্রহণ কর এবং তা নিজের মালের সাথে মিলিয়ে নাও। অতঃপর
তোমার ইচ্ছা হলে তা খাও, নতুবা দান করে দাও। এ ছাড়া তোমার মনকে তাতে ফেলে রেখো
না।’’
সালেম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমার বলেন, ‘এ কারণেই (আমার আব্বা) আব্দুল্লাহ কারো কাছে
কিছু চাইতেন না এবং তাঁকে কেউ কিছু দিতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করতেন না। (বরং
গ্রহণ করে নিতেন।)’
(সহীহুল বুখারী ১৪৭৩, ৭১৬৪, মুসলিম ১০৪৫, নাসায়ী ২৬০৫,
২৬০৬, ২৬০৭, ২৬০৮, আবূ দাউদ ১৬৪৭, আহমাদ ১০১, ১৩৭, ২৮১, ৩৭৩, দারেমী ১৬৪৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৫৯
স্বহস্তে উপার্জিত খাবার
খাওয়া, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া
প্রসঙ্গে
৫৪৪
وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ الزُبَيرِ بنِ
العَوَّامِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: «لأَنْ يَأخُذَ أحَدُكُمْ أحبُلَهُ ثُمَّ يَأتِيَ الجَبَلَ، فَيَأْتِيَ
بحُزمَةٍ مِنْ حَطَبٍ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا، فَيكُفَّ اللهُ بِهَا
وَجْهَهُ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أنْ يَسْألَ النَّاسَ، أعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ ».
رواه البخاري
আবূ
আব্দুল্লাহ যুবাইর ইবনে ‘আওয়াম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে পাহাড়
যাওয়া এবং কাঠের বোঝা পিঠে করে বয়ে আনা ও তা বিক্রি করা, যার দ্বারা আল্লাহ তার
চেহারাকে (অপমান থেকে) বাঁচান, লোকদের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম; তারা তাকে
দিক বা না দিক।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী ১৪৭১, ২০৭৫, ২৩৭৩, ইবনু মাজাহ ১৮৩৬,
আহমাদ ১৪১০, ১৪৩২
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৪৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لأَنْ يَحْتَطِبَ
أحَدُكُمْ حُزْمَةً عَلَى ظَهْرِهِ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أنْ يَسْألَ أَحَداً،
فَيُعْطِيَهُ أَوْ يَمْنَعَهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কারো কাঠের বোঝা
সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে অনেক ভাল; সে
দিক বা না দিক।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪৭০, ১৪৮০, ২০৭৪, ২৩৭৪, মুসলিম ১০৪২,
তিরমিযী ৬৮০, নাসায়ী ২৫৮৯, আহমাদ ৭২৭৫, ৭৪৩৯, ৭৯২৭, ৮৮৮৯, ৯১৪০, ৯৫৫৮, ৯৭৯৬, মুওয়াত্তা
মালিক ১৮৮৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৪৬
وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «كَانَ دَاوُدُ عليه السلام لا يَأكُلُ إِلاَّ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ».
رواه البخاري
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দাঊদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন
ছাড়া খেতেন না।’’
(সহীহুল বুখারী ২০৭৩, ৩৪১৭, ৪৭১৩, আহমাদ ২৭৩৭৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৪৭
وَعَنهُ: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «كَانَ زَكرِيّا عليه السلام نَجَّاراً ». رواه
مسلم
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছুতোর
(কাঠ-মিস্ত্রী) ছিলেন।’’
(মুসলিম ২৩৭৯, ইবনু মাজাহ ২১৫০, আহমাদ ৭৮৮৭, ৯০০৪, ৯৯২১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৪৮
وَعَنِ المِقدَامِ بنِ مَعْدِيكَرِبَ رضي
الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَاماً
قَطُّ خَيْراً مِنْ أنْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِه، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ
عليه السلام كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ». رواه البخاري
মিকদাম
ইবনে মা‘দীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার
কেউ কখনো খায়নি। আল্লার নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন থেকে খেতেন।’’
(সহীহুল বুখারী ২০৭২, ইবনু মাজাহ ২১৩৮, আহমাদ ১৬৭২৯, ১৫৭৩৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬০
দানশীলতা এবং আল্লাহর উপর
ভরসা করে পুণ্য কাজে ব্যয় করার বিবরণ
৫৪৯
وعن ابن مسعود رضي الله عنه، عن النبيِّ
صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لا حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ
اللهُ مَالاً، فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ في الحَقّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ
حِكْمَةً، فَهُوَ يَقْضِي بِهَا ويُعَلِّمُهَا » متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়
(১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে হক পথে অকাতরে
দান করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং (২) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত দান
করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।’’
(সহীহুল বুখারী ৭৩, ১৪০৯, ৭১৪১, ৭৩১৬, মুসলিম ৮১৬, ইবনু
মাজাহ ৪২১৬৮, আহমাদ ৩৬৪৩, ৪০৯৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫০
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «أيُّكُم مَالُ وَارِثِهِ أحبُّ إِلَيْهِ مِنْ
مَالِهِ ؟ » قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، مَا مِنَّا أحَدٌ
إِلاَّ مَالُهُ أحَبُّ إِلَيْهِ . قَالَ: «فإنَّ مَالَهُ مَا قَدَّمَ وَمَالَ
وَارِثِهِ مَا أخَّرَ ». رواه البخاري
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে এমন
ব্যক্তি কে আছে, যে নিজের সম্পদের চেয়ে তার ওয়ারেসের সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে
করে?’’ তাঁরা জবাব দিলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি কেউ নেই,
যে তার নিজের সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে করে না।’ তখন তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই মানুষের
নিজের সম্পদ তাই, যা সে আগে পাঠিয়েছে। আর এ ছাড়া যে মাল বাকী থাকবে, তা হল
ওয়ারেসের মাল।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৪৪২, নাসায়ী ৩৬১২, আহমাদ ৩৬১৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫১
عَن عَدِي بنِ حَاتمٍ رضي الله عنه، قَالَ:
سَمِعتُ النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ
تَمْرَةٍ ». مُتَّفَقٌ عليه
আদী
ইবনে হাতেম রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো;
যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়!’’
(সহীহুল বুখারী ১৪১৩, ১৪১৭, ৩৫৯৫, ৬০২৩, ৬৫৩৯, ৬৫৬৩, ৭৪৪৩,
৭৫১২, মুসলিম ১০১৬, নাসায়ী ২৫৫২, ২৫৫৩, আহমাদ ১৭৭৮২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫২
وَعَن جَابرٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَا
سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم شَيْئاً قَطُّ،
فَقَالَ: لاَ . متفقٌ عَلَيْهِ
জাবের
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এমন কোনো জিনিসই চাওয়া হয়নি, যা জবাব দিয়ে
তিনি ‘না’ বলেছেন।
(সহীহুল বুখারী ৬০৩৪, মুসলিম ২৩১১, আহমাদ ১৩৭৭২, দারেমী
৭০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫৩
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:« مَا مِنْ يَوْمٍ
يُصبِحُ العِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ، فَيَقُولُ أحَدُهُمَا:
اَللهم أعْطِ مُنْفِقاً خَلَفاً، وَيَقُولُ الآخَرُ: اَللهم أعْطِ مُمْسِكاً
تَلَفاً». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দু’জন
ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’
আর অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪৪২, মুসলিম ১০১০, আহমাদ ২৭২৯৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫৪
وَعَنهُ: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «قَالَ الله تَعَالَى: أنفِق يَا ابْنَ آدَمَ
يُنْفَقْ عَلَيْكَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি
(অভাবীকে) দান কর, আল্লাহ তোমাকে দান করবেন।’
(সহীহুল বুখারী ৪৬৮৪, ৫৩৫২, ৭৪১১, ৭৪১৯, ৭৪৯৬, তিরমিযী
৩০৪৫, ইবনু মাজাহ ১৯৭, আহমাদ ৭২৫৬, ২৭৩৫৭, ২৭৩৭০, ৯৬৬১, ১০১২২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫৫
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَجُلاً سَألَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم: أيُّ الإِسلاَمِ خَيْرٌ ؟ قَالَ:« تُطْعِمُ الطَّعَامَ،
وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ ». متفقٌ
عَلَيْهِ
‘আব্দুল্লাহ
ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইসলামের
কোন্ কাজটি উত্তম?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘‘তুমি অন্নদান করবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত
সবাইকে সালাম দেবে।’’
(সহীহুল বুখারী ১২, ২৮, ৬২৩৬, মুসলিম ৩৯, তিরমিযী ১৮৫৫,
নাসায়ী ৫০০০, আবূ দাউদ ৫১৫৪, ইবনু মাজাহ ৩২৫৩, ৩৬৯৪, আহমাদ ৬৫৪৫, ৬৮০৯, দারেমী ২০৮১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫৬
وَعَنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صلى
الله عليه وسلم:«أرْبَعُونَ خَصْلَةً: أعْلاَهَا مَنيحَةُ العَنْزِ، مَا مِنْ
عَامِلٍ يَعْمَلُ بِخَصْلَة مِنْهَا ؛ رَجَاءَ ثَوَابِهَا وتَصْدِيقَ
مَوْعُودِهَا، إلاَّ أدْخَلَهُ اللهُ بِهَا الجَنَّةَ». رواه البخاري
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘চল্লিশটি সৎকর্ম আছে, তার মধ্যে উচ্চতম
হল, দুধ পানের জন্য (কোন দরিদ্রকে) ছাগল সাময়িকভাবে দান করা। যে কোন আমলকারী এর
মধ্য হতে যে কোন একটি সৎকর্মের উপর প্রতিদানের আশা করে ও তার প্রতিশ্রুত
পুরস্কারকে সত্য জেনে আমল করবে, তাকে আল্লাহ তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ
করাবেন।’’ (বুখারী, ১৪২ নম্বরেও গত হয়েছে।)
(সহীহুল বুখারী ২৬৩১, আবূ দাউদ ১৬৮৩, আহমাদ ৬৪৫২, ৬৭৯২,
৬৮১৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫৭
وَعَن أَبي أُمَامَة صُدّيِّ بنِ عَجْلانَ
رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
«يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ أن تَبْذُلَ الفَضلَ خَيْرٌ لَكَ، وَأن تُمْسِكَه شَرٌّ
لَكَ، وَلاَ تُلاَمُ عَلَى كَفَافٍ، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ، وَاليَدُ
الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى ». رواه مسلم
আবূ
উমামাহ সুদাই বিন আজলান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল
(আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর
প্রয়োজন মত মালে তুমি নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার
দায়িত্বে। আর উপরের (উপুড়) হাত নিচের (চিৎ) হাত অপেক্ষা উত্তম।’’
(মুসলিম ১০৩৬, তিরমিযী ২৩৪৩, আহমাদ ১২৭৬২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫৮
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَا
سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَلَى الإسْلاَمِ
شَيْئاً إِلاَّ أعْطَاهُ، وَلَقَدْ جَاءَهُ رَجُلٌ فَأعْطَاهُ غَنَماً بَيْنَ
جَبَلَيْنِ، فَرجَعَ إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ: يَا قَوْمِ، أسْلِمُوا فإِنَّ
مُحَمَّداً يُعطِي عَطَاءَ مَن لاَ يَخْشَى الفَقْر، وَإنْ كَانَ الرَّجُلُ
لَيُسْلِمُ مَا يُريدُ إِلاَّ الدُّنْيَا، فَمَا يَلْبَثُ إِلاَّ يَسِيراً حَتَّى
يَكُونَ الإسْلاَمُ أحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا . رواه مسلم
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
ইসলামের
স্বার্থে (অর্থাৎ নও মুসলিমের পক্ষ থেকে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট যা চাওয়া হত, তিনি তা-ই দিতেন। (একবার) তাঁর নিকট এক ব্যক্তি
এল। তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলের সমস্ত বকরীগুলো দিয়ে দিলেন। অতঃপর সে তার
সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা,
মুহাম্মাদ ঐ ব্যক্তির মত দান করেন, যার দরিদ্রতার ভয় নেই।’ যদিও কোন ব্যক্তি
কেবলমাত্র দুনিয়া অর্জন করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করত। কিন্তু কিছুদিন পরেই ইসলাম তার
নিকট দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু থেকে প্রিয় হয়ে যেত।
(মুসলিম ২৩১২, আহমাদ ১১৬৩৯, ১২৩৭৯, ১৩৩১৯, ১৩৬১৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৫৯
وَعَن عُمَرَ رضي الله عنه، قَالَ: قَسَمَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَسْماً، فَقُلْتُ: يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، لَغَيْرُ هؤلاَءِ كَانُوا أحَقَّ بِهِ مِنْهُمْ؟
فَقَالَ:« إنَّهُمْ خَيَّرُونِي أنْ يَسأَلُوني بِالفُحْشِ، أَوْ يُبَخِّلُونِي،
وَلَسْتُ بِبَاخِلٍ ». رواه مسلم
উমার
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু মাল বণ্টন করলেন। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে
আল্লাহর রসূল! অন্য লোকেরা এদের চেয়ে এ মালের বেশি হকদার ছিল।’ তিনি বললেন, ‘‘এরা
আমাকে দু’টি কথার মধ্যে একটা না একটা গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। হয় তারা আমার নিকট
অভদ্রতার সাথে চাইবে (আর আমাকে তা সহ্য করে তাদেরকে দিতে হবে) অথবা তারা আমাকে
কৃপণ আখ্যায়িত করবে। অথচ, আমি কৃপণ নই।’’
(মুসলিম ১০৫৬, আহমাদ ১২৮, ২৩৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬০
وَعَن جُبَيرِ بنِ مُطعِمٍ رضي الله عنه،
قَالَ: بَيْنَمَا هُوَ يَسِيرُ مَعَ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم مَقْفَلَهُ مِنْ
حُنَيْن، فَعَلِقَهُ الأعْرَابُ يَسْألُونَهُ، حَتَّى اضْطَرُّوهُ إِلَى سَمُرَةٍ،
فَخَطِفَت رِدَاءَهُ، فَوَقَفَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «
أعْطُونِي رِدَائي، فَلَوْ كَانَ لِي عَدَدُ هذِهِ العِضَاهِ نَعَماً،
لَقَسَمْتُهُ بَينَكُمْ، ثُمَّ لاَ تَجِدُونِي بَخِيلاً وَلاَ كَذّاباً وَلاَ
جَبَاناً ». رواه البخاري
জুবাইর
ইবনে মুত্বইম রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফিরার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সঙ্গে আসছিলেন। (পথিমধ্যে) কতিপয় বেদুঈন তাঁর নিকট অনুনয়-বিনয় করে চাইতে আরম্ভ
করল, এমন কি শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে বাধ্য করে একটি বাবলা গাছের কাছে নিয়ে গেল।
যার ফলে তাঁর চাদর (গাছের কাঁটায়) আটকে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেমে গেলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা আমাকে আমার চাদরখানি দাও। যদি আমার নিকট এসব
(অসংখ্য) কাঁটা গাছের সমান উঁট থাকত, তাহলে আমি তা তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম।
অতঃপর তোমরা আমাকে কৃপণ, মিথ্যুক বা কাপুরুষ পেতে না।’’
(সহীহুল বুখারী ২৮২১, ৩১৪৮, আহমাদ ১৬৩১৫, ১৬৩৩৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬১
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا نَقَصَتْ
صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ، وَمَا زَادَ اللهُ عَبْداً بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزّاً، وَمَا
تَواضَعَ أحَدٌ للهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ - عز وجل ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সাদকাহ করলে মাল কমে যায় না এবং ক্ষমা
করার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা (ক্ষমাকারীর) সম্মান বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর
(সন্তুষ্টির) জন্য বিনয়ী হলে, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল তাকে উচ্চ করেন।’’
(মুসলিম ২৫৮৮, তিরমিযী ২০২৯, আহমাদ ৭১৬৫, ৮৭৮২, ৯৩৬০,
মুয়াত্তা মালিক ১৮৮৫, দারেমী ১৬৭৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬২
وَعَن أَبي كَبشَةَ عَمرِو بنِ سَعدٍ
الأنمَارِي رضي الله عنه: أنّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم، يَقُولُ: «ثَلاَثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ، وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثاً
فَاحْفَظُوهُ: مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ، وَلاَ ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلَمَةً
صَبَرَ عَلَيْهَا إِلاَّ زَادَهُ اللهُ عِزّاً، وَلاَ فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ
مَسألَةٍ إِلاَّ فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقرٍ» - أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا-
«وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثاً فَاحْفَظُوهُ» قَالَ: «إنَّمَا الدُّنْيَا لأرْبَعَةِ
نَفَرٍ: عَبْدٍ رَزَقَهُ اللهُ مَالاً وَعِلماً، فَهُوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ،
وَيَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَيَعْلَمُ للهِ فِيهِ حَقَّاً، فَهَذَا بِأَفضَلِ
المَنَازِلِ . وَعَبْدٍ رَزَقهُ اللهُ عِلْماً، وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالاً، فَهُوَ
صَادِقُ النِّيَّةِ، يَقُولُ: لَوْ أنَّ لِي مَالاً لَعَمِلتُ بِعَمَلِ فُلانٍ،
فَهُوَ بنيَّتِهِ، فأجْرُهُمَا سَوَاءٌ . وَعَبْدٍ رَزَقَهُ الله مَالاً، وَلَمَ
يَرْزُقْهُ عِلْماً، فَهُوَ يَخبطُ في مَالِهِ بغَيرِ عِلْمٍ، لاَ يَتَّقِي فِيهِ
رَبَّهُ، وَلاَ يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَلاَ يَعْلَمُ للهِ فِيهِ حَقّاً، فَهذَا
بِأَخْبَثِ المَنَازِلِ . وَعَبْدٍ لَمْ يَرْزُقْهُ اللهُ مَالاً وَلاَ عِلْماً،
فَهُوَ يَقُولُ: لَوْ أنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ فِيهِ بعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ
بنِيَّتِهِ، فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
আবূ
কাবশাহ ‘আমর ইবনে সা’দ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘আমি তিনটি
জিনিসের ব্যাপারে শপথ করছি এবং তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরণ রাখোঃ (১) কোন
বান্দার মাল সাদকাহ করলে কমে যায় না। (২) কোন বান্দার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা
হলে এবং সে তার উপর ধৈর্য-ধারণ করলে আল্লাহ নিশ্চয় তার সম্মান বাড়িয়ে দেন, আর (৩)
কোন বান্দা যাচ্ঞার দুয়ার উদ্ঘাটন করলে আল্লাহ তার জন্য দরিদ্রতার দরজা উদ্ঘাটন
করে দেন।’’ অথবা এই রকম অন্য শব্দ তিনি ব্যবহার করলেন।
‘‘আর তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরণ রাখো।’’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ায় চার
প্রকার লোক আছে; (১) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন। অতঃপর
সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে এবং তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে। আর তাতে যে
আল্লাহর হক রয়েছে তা সে জানে। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্তরে
অবস্থান করবে। (২) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন; কিন্তু মাল
দান করেননি। সে নিয়তে সত্যনিষ্ঠ, সে বলে যদি আমার মাল থাকত, তাহলে আমি (পূর্বোক্ত)
অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময় পাবে; এদের উভয়ের প্রতিদান
সমান। (৩) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ মাল দান করেছেন; কিন্তু (ইসলামী) জ্ঞান দান
করেননি। সুতরাং সে না জেনে অবৈধরূপে নির্বিচারে মাল খরচ করে; সে তাতে আল্লাহকে ভয়
করে না, তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে না এবং তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তাও
সে জানে না। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে। আর (৪) ঐ
বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান কিছুই দান করেননি। কিন্তু সে বলে, যদি
আমার নিকট মাল থাকত, তাহলে আমিও (পূর্বোক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত
অনুসারে বিনিময় পাবে; এদের উভয়ের পাপ সমান।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে)
(তিরমিযী ২৩২৫, ইবনু মাজাহ ৪২২৮, আহমাদ ১৭৫৭০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬৩
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا:
أنَّهُمْ ذَبَحُوا شَاةً، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم:«مَا بَقِيَ
مِنْهَا ؟ قَالَت: مَا بَقِيَ مِنْهَا إِلاَّ كَتِفُها. قَالَ: بَقِيَ كُلُّهَا
غَيْرُ كَتِفِهَا ». رواه الترمذي، وقال: حديث صحيح »
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
একদা
তাঁরা একটি ছাগল জবাই করলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘ছাগলটির কতটা (মাংস) অবশিষ্ট আছে?’’ (আয়েশা) বললেন, ‘কেবলমাত্র কাঁধের মাংস ছাড়া
তার কিছুই বাকী নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘(বরং) কাঁধের মাংস ছাড়া সবটাই বাকী আছে।’’
(তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬৪
وَعَن أَسمَاءَ بِنتِ أَبي بَكرٍ
الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَت: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ تُوكِي فَيُوكَى عَلَيْكِ». وَفِي رِوَايَةٍ:
«أنفقي أَوِ انْفَحِي، أَوْ انْضَحِي، وَلاَ تُحصِي فَيُحْصِي اللهُ عَلَيْكِ،
وَلاَ تُوعي فَيُوعي اللهُ عَلَيْكِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আসমা
বিনতে আবূ বাক্র (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি সম্পদ বেঁধে (জমা করে) রেখো
না, এরূপ করলে তোমার নিকট (আসা থেকে) তা বেঁধে রাখা হবে।’’ অন্য এক বর্ণনায় আছে,
‘‘খরচ কর, অথবা ছেড়ে দাও, অথবা প্রবাহমান কর, গুনে গুনে রেখো না, এরূপ করলে
আল্লাহও তোমাকে গুনে গুনে দেবেন। আর তুমি জমা করে রেখো না, এরূপ করলে আল্লাহও
তোমার প্রতি (খরচ না করে) জমা করে রাখবেন।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪৩৩, ১৪৩৪, ২৫৯০, ২৫৯১, মুসলিম ১০২৯,
তিরমিযী ১৯৬০, নাসায়ী ২৫৫১, আবূ দাউদ ১৬৯৯, আহমাদ ২৪৫৫৮, ২৬৩৭২, ২৬৩৮২, ২৬৩৯৪, ২৬৪৩০,
২৬৪৪০, ২৬৪৪৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّه
سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «مَثَل
البَخِيلِ وَالمُنْفِقِ، كَمَثَلِ رَجُلَيْنِ عَلَيْهِمَا جُنَّتَانِ مِنْ حَدِيدٍ
مِنْ ثُدِيِّهِمَا إِلَى تَرَاقِيهِمَا، فَأَمَّا المُنْفِقُ فَلاَ يُنْفِقُ
إِلاَّ سَبَغَتْ - أَوْ وَفَرَتْ - عَلَى جِلْدِهِ حَتَّى تُخْفِيَ بَنَانَهُ،
وَتَعْفُو أثرَهُ، وأمَّا البَخِيلُ، فَلاَ يُرِيدُ أَنْ يُنْفِقَ شَيْئاً إِلاَّ
لَزِقَتْ كُلُّ حَلْقَةٍ مَكَانَهَا، فَهُوَ يُوسِّعُهَا فَلاَ تَتَّسِعُ ». متفقٌ
عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘কৃপণ ও দানশীলের
দৃষ্টান্ত এমন দুই ব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দু’টি লোহার বর্ম রয়েছে। যা তাদের
বুক থেকে টুঁটি পর্যন্ত বিস্তৃত। সুতরাং দানশীল যখন দান করে, তখনই সেই বর্ম তার
সারা দেহে বিস্তৃত হয়ে যায়, এমনকি (তার ফলে) তা তার আঙ্গুলগুলোকেও ঢেকে ফেলে এবং
তার পদচিহ্ন (পাপ বা ত্রুটি) মুছে দেয়। পক্ষান্তরে কৃপণ যখনই কিছু দান করার ইচ্ছা
করে, তখনই বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্থানে এঁটে যায়। সে তা প্রশস্ত করতে চাইলেও তা
প্র্রশস্ত হয় না।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪৪৪, ২৯১৭, ৫৭৯৭, মুসলিম ১০২১, নাসায়ী
২৫৪৭, ২৫৪৮, আহমাদ ৭৪৩৪, ৮৮১৪, ১০৩৯১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬৬
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَصَدَّقَ بعَدلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ
طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيبَ، فَإنَّ اللهَ يَقْبَلُهَا
بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهَا كَمَا يُرَبِّي أحَدُكُمْ فَلُوَّهُ
حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি (তার) বৈধ
উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে একটি খেজুর পরিমাণও কিছু দান করে---আর আল্লাহ তো বৈধ
অর্থ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণই করেন না---সে ব্যক্তির ঐ দানকে আল্লাহ ডান হাতে গ্রহণ
করেন। অতঃপর তা ঐ ব্যক্তির জন্য লালন-পালন করেন; যেমন তোমাদের কেউ তার অশ্ব-শাবককে
লালন-পালন করে থাকে। পরিশেষে তা পাহাড়ের মত হয়ে যায়।’’
(সহীহুল বুখারী ১৪১০, মুসলিম ১০১৪, তিরমিযী ৬৬১, নাসায়ী
২৫২৫, ইবনু মাজাহ ১৮৪২, আহমাদ ৭৫৭৮, ৮১৮১, ৮৭৮৩, ৮৯৯২, ৯১৪২, ৯১৪৯, মুওয়াত্তা মালিক
১৮৭৪, দারেমী ১৬৭৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৬৭
وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِفَلاَةٍ مِنَ الأَرْضِ، فَسَمِعَ
صَوْتاً في سَحَابَةٍ، اِسقِ حَدِيقَةَ فُلانٍ، فَتَنَحَّى ذَلِكَ السَّحَابُ
فَأفْرَغَ مَاءَهُ فِي حَرَّةٍ، فإِذَا شَرْجَةٌ مِنْ تِلْكَ الشِّرَاجِ قَدِ
اسْتَوْعَبَت ذَلِكَ الماءَ كُلَّهُ، فَتَتَبَّعَ المَاءَ، فإذَا رَجُلٌ قَائمٌ في
حَدِيقَتِهِ يُحَوِّلُ الماءَ بِمِسحَاتِهِ، فَقَالَ لَهُ: يَا عَبْدَ اللهِ، مَا
اسمُكَ ؟ قال: فُلانٌ لِلاِسمِ الَّذِي سَمِعَ في السَّحَابَةِ، فَقَالَ لَهُ: يَا
عَبدَ اللهِ، لِمَ تَسْألُنِي عَنِ اسْمِي؟ فَقَالَ: إنِّي سَمِعْتُ صَوتْاً فِي
السَّحَابِ الَّذِي هَذَا مَاؤُهُ، يَقُولُ: اِسْقِ حَدِيقَةَ فُلاَنٍ لاِسمِكَ،
فَمَا تَصْنَعُ فِيهَا، فَقَالَ: أمَا إِذ قُلتَ هَذَا، فَإنِّي أنْظُرُ إِلَى مَا
يَخْرُجُ مِنْهَا، فَأتَصَدَّقُ بِثُلُثِهِ، وَآكُلُ أنَا وَعِيَالِي ثُلُثاً،
وَأردُّ فِيهَا ثُلُثَهُ . رواه مسلم
উক্ত
রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক ব্যক্তি বৃক্ষহীন
প্রান্তরে মেঘ থেকে শব্দ শুনতে পেল, ‘অমুকের বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ কর।’ অতঃপর সেই
মেঘ সরে গিয়ে কালো পাথুরে এক ভূমিতে বর্ষণ করল। তারপর (সেখানকার) নালাসমূহের মধ্যে
একটি নালা সম্পূর্ণ পানি নিজের মধ্যে জমা করে নিল। লোকটি সেই পানির অনুসরণ করে
কিছু দূর গিয়ে দেখল, একটি লোক কোদাল দ্বারা নিজ বাগানের দিকে পানি ঘুরাচ্ছে। সে
তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার নাম কি ভাই?’ বলল, ‘অমুক।’ এটি ছিল সেই নাম, যে নাম
মেঘের আড়ালে সে শুনেছিল। বাগান-ওয়ালা বলল, ‘ওহে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম কেন
জিজ্ঞাসা করলে?’ লোকটি বলল, ‘আমি মেঘের আড়াল থেকে তোমার নাম ধরে তোমার বাগানে
বৃষ্টি বর্ষণ করতে আদেশ শুনলাম। তুমি কি এমন কাজ কর?’ বাগান-ওয়ালা বলল, ‘এ কথা যখন
বললে, তখন বলতে হয়; আমি এই বাগানের উৎপন্ন ফল-ফসলকে ভেবে-চিন্তে তিন ভাগে ভাগ করি।
অতঃপর তার এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি আমার পরিজন সহ খেয়ে থাকি এবং বাকী এক ভাগ
বাগানের চাষ-খাতে ব্যয় করি।’’
(মুসলিম ২৯৮৪, আহমাদ ৭৮৮১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬১
কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
৫৬৮
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اتَّقُوا الظُّلْمَ ؛
فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ القِيَامَةِ . وَاتَّقُوا الشُّحَّ ؛ فَإنَّ
الشُّحَّ أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، حَمَلَهُمْ عَلَى أنْ سَفَكُوا
دِمَاءهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ ». رواه مسلم
জাবের
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা,
অত্যাচার কিয়ামতের দিনের অন্ধকার। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাক। কেননা, কৃপণতা তোমাদের
পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। (এই কৃপণতাই) তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, ফলে তারা
নিজেদের রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুসমূহকে হালাল করে
নিয়েছিল।’’
(মুসলিম ২৫৭৮, আহমাদ ১৪০৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ-৬২
ত্যাগ ও সহমর্মিতা প্রসঙ্গে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তারা (অপরকে) নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়।” (সূরা
হাশ্র ৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ “আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে
অন্নদান করে।” (সূরা দাহার ৮ আয়াত)
৫৬৯
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: جاء رجل
إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: إنى مجهود، فأرسل إلى بعض نسائه، فقالت:
والذى بعثك بالحق ما عندى إلا ماء، ثم أرسل إلى أخرى، فقالت مثل ذلك، حتى قلن كلهن
مثل ذلك: لا والذى بعثك بالحق ما عندى إلا ماء. فقال النبي صلى الله عليه وسلم
“ من يضيفه هذا الليلة؟” فقال رجل من الأنصار: أنا يا رسول الله، فانطلق به
إلى رحله ، فقال لامرأته: أكرمي ضيف رسول الله صلى الله عليه وسلم
وفى رواية قال لامرأته : هل عندك شئ؟ قالت: لا، إلا قوت صبيانى. قال:
فعلليهن بشئ.وإذا أرادوا العشاء فنوميهم. وإذا دخل ضيفنا فأطفئ السراج وأريه
أنا نأكل، فقعدوا وأكل الضيف وبات طاويين، فلما أصبح ، غدا على النبي صلى الله
عليه وسلم فقال: “لقد عجب الله من صنيعكما بضيفكما الليلة” ((متفق
عليه)) .
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘আমি ক্ষুধায় কাতর
হয়ে আছি।’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন স্ত্রীর নিকট
সংবাদ পাঠালেন। তিনি বললেন, ‘সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যের সঙ্গে পাঠিয়েছেন!
আমার কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই।’ অতঃপর অন্য স্ত্রীর নিকট পাঠালেন। তিনিও অনুরূপ
কথা বললেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত সকল (স্ত্রী)ই ঐ একই কথা বললেন, ‘সেই সত্তার কসম,
যিনি আপনাকে সত্যের সাথে পাঠিয়েছেন! আমার কাছে পানি ছাড়া কোন কিছুই নেই।’ তারপর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আজকের রাতে কে একে মেহমান হিসাবে
গ্রহণ করবে?’’ এক আনসারী বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি একে মেহমান হিসাবে গ্রহণ
করব।’ সুতরাং তিনি তাকে সাথে করে নিজ গৃহে নিয়ে গেলেন এবং তাঁর স্ত্রীকে বললেন,
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেহমানের খাতির কর।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি (আনসারী) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘তোমার নিকট কোন কিছু
আছে কি?’ তিনি বললেন না, ‘কেবলমাত্র বাচ্চাদের খাবার আছে।’ তিনি বললেন, ‘কোন জিনিস
দ্বারা তাদেরকে ভুলিয়ে রাখবে এবং তারা যখন রাত্রে খাবার চাইবে, তখন তাদেরকে ঘুম
পাড়িয়ে দেবে। অতঃপর যখন আমাদের মেহমান (ঘরে) প্রবেশ করবে, তখন বাতি নিভিয়ে দেবে
এবং তাকে দেখাবে যে, আমরাও খাচ্ছি।’ সুতরাং তাঁরা সকলেই খাওয়ার জন্য বসে গেলেন;
মেহমান খাবার খেল এবং তাঁরা দু’জনে উপবাসে রাত কাটিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন তিনি সকালে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘তোমরা
দু’জনের আজকের রাতে তোমাদের মেহমানের সাথে তোমাদের ব্যবহারে আল্লাহ বিস্মিত
হয়েছেন!’’
(সহীহুল বুখারী ৩৭৯৮, মুসলিম ২০৫৪, তিরমিযী ৩৩০৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৭০
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:«طَعَامُ الاثْنَيْنِ كَافِي الثَّلاَثَةِ،
وَطَعَامُ الثَّلاَثَةِ كَافِي الأربَعَةِ» متفقٌ عَلَيْهِ . وَفِي رِوَايَةٍ
لِمُسلِمٍ عَن جَابِرٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ:
طَعَامُ الوَاحِدِ يَكْفِي الاثْنَيْنِ، وَطَعَامُ الاثْنَيْنِ يَكْفِي
الأَرْبَعَةَ، وَطَعَامُ الأَرْبَعَة يَكْفِي الثَّمَانِية
উক্ত
রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু’জনের খাবার
তিনজনের জন্য এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’’
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একজনের খাবার দু’জনের জন্য, দু’জনের
খাবার চারজনের জন্য এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৩৯২, মুসলিম ২০৫৮, তিরমিযী ১৮২০, আহমাদ
৭২৭৮, ৯০২৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৭১
وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي سَفَرٍ مَعَ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم إذْ جَاءَ
رَجُلٌ عَلَى رَاحِلَةٍ لَهُ، فَجَعَلَ يَصرِفُ بَصَرَهُ يَميناً وَشِمَالاً،
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ كَانَ مَعَهُ
فَضْلُ ظَهْرٍ فَليَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ ظَهرَ لَهُ، وَمَنْ كَانَ لَهُ
فَضْلٌ مِنْ زَادٍ، فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ زَادَ لَهُ ». فَذَكَرَ مِنْ
أصْنَافِ المالِ مَا ذَكَرَ حَتَّى رَأيْنَا أنَّهُ لاَ حَقَّ لأَحَدٍ مِنَّا فِي
فَضْلٍ . رواه مسلم
আবূ
সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একদা
আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরে ছিলাম। ইতোমধ্যে একটি লোক
তার একটি সওয়ারীর উপর চড়ে (আমাদের নিকট) এল এবং ডানে ও বামে তার দৃষ্টি ফিরাতে
লাগল। (এ দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যার নিকট
উদ্বৃত্ত সওয়ারী আছে, সে যেন তা ঐ ব্যক্তিকে দেয় যার নিকট কোন সওয়ারী নেই। আর যার
নিকট উদ্বৃত্ত পাথেয় (খাদ্য) রয়েছে, সে যেন ঐ ব্যক্তিকে দেয় যার কোন পাথেয় নেই।’’
এভাবে তিনি বিভিন্ন প্রকার মালের কথা উল্লেখ করলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, উদ্বৃত্ত
মালে আমাদের কারো অধিকার নেই।
(মুসলিম ১৭২৮, আবূ দাউদ ১৬৬৩, আহমাদ ১০৯০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৭২
وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه: أنَّ
أمْرَأةً جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِبُرْدَةٍ مَنْسُوجَةٍ،
فَقَالَتْ: نَسَجْتُهَا بِيَدَيَّ لأَكْسُوكَهَا، فَأَخَذَهَا النَّبيُّ صلى الله
عليه وسلم مُحْتَاجاً إِلَيْهَا، فَخَرَجَ إِلَيْنَا وَإنَّهَا إزَارُهُ، فَقَالَ
فُلانٌ: اكْسُنِيهَا مَا أحْسَنَهَا ! فَقَالَ: «نَعَمْ » فَجَلَسَ النَّبيُّ صلى
الله عليه وسلم في المَجْلِسِ، ثُمَّ رَجَعَ فَطَواهَا، ثُمَّ أرْسَلَ بِهَا
إِلَيْهِ: فَقَالَ لَهُ الْقَومُ: مَا أحْسَنْتَ ! لَبِسَهَا النَّبيُّ صلى الله
عليه وسلم مُحتَاجَاً إِلَيْهَا، ثُمَّ سَألْتَهُ وَعَلِمْتَ أنَّهُ لاَ يَرُدُّ
سَائِلاً، فَقَالَ: إنّي وَاللهِ مَا سَألْتُهُ لأَلْبِسَهَا، إنَّمَا سَألْتُهُ
لِتَكُونَ كَفَنِي . قَالَ سَهْلٌ: فَكَانَتْ كَفَنَهُ . رواه البخاري
সাহল
ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একটি (হাতে) বুনা চাদর
নিয়ে এল। সে বলল, ‘আপনার পরিধানের জন্য চাদরটি আমি নিজ হাতে বুনেছি।’ আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন এবং তাঁর চাদরের প্রয়োজনও ছিল।
তারপর তিনি লুঙ্গীরূপে পরিধান করে আমাদের সামনে আসলেন। তখন অমুক ব্যক্তি বলল, ‘এটি
আমাকে পরার জন্য দান করে দিন। এটি কত সুন্দর!’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, (তাই দেব।)’’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে (কিছুক্ষণ) বসলেন। অতঃপর ফিরে গিয়ে তা
ভাঁজ করে ঐ লোকটির কাছে পাঠিয়ে দিলেন। লোকেরা বলল, ‘তুমি কাজটা ভাল করলে না। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তাঁর প্রয়োজনে পরেছিলেন, তবুও তুমি চেয়ে বসলে।
অথচ তুমি জান যে, তিনি কারো চাওয়া রদ করেন না।’ ঐ ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি
তা পরার উদ্দেশ্যে চাইনি, আমার চাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য যে, তা আমার কাফন হবে।’
সাহ্ল বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তা তাঁর কাফনই হয়েছিল।’
(সহীহুল বুখারী ১২৭৭, ২০৯৩, ৫৮১০, ৬০৩৬, নাসায়ী ৫৩২১,
ইবনু মাজাহ ৩৫৫৫, আহমাদ ২২৩১৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৭৩
وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ
الأشْعَرِيِّينَ إِذَا أرْمَلُوا في الغَزْوِ، أَوْ قَلَّ طَعَامُ عِيَالِهِمْ
بِالمَديِنَةِ، جَمَعُوا مَا كَانَ عِنْدَهُمْ في ثَوْبٍ وَاحِدٍ، ثُمَّ
اقْتَسَمُوهُ بَيْنَهُمْ في إنَاءٍ وَاحدٍ بِالسَّوِيَّةِ، فَهُمْ مِنِّي وَأنَا
مِنْهُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
মূসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আশআরী গোত্রের লোকদের যখন জিহাদের
পাথেয় ফুরিয়ে যায় অথবা মদীনাতে তাদের পরিবার পরিজনদের খাদ্য কমে যায়, তখন তারা
তাদের নিকট যা কিছু থাকে, তা সবই একটি কাপড়ে জমা করে। অতঃপর তা নিজেদের মধ্যে একটি
পাত্রে সমানভাবে বণ্টন করে নেয়। সুতরাং তারা আমার (দলভুক্ত) এবং আমিও তাদের (দলভুক্ত)।’’
(সহীহুল বুখারী ২৪৮৬, মুসলিম ২৫০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬৩
আখেরাতের কাজে প্রতিযোগিতা
করা এবং বরকতময় জিনিস অধিক কামনা করার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَفِي ذَٰلِكَ فَلۡيَتَنَافَسِ ٱلۡمُتَنَٰفِسُونَ﴾ [المطففين: ٢٦]
অর্থাৎ “এ ব্যাপারে (জান্নাত লাভের জন্য) প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।” (সূরা
মুত্বাফফিফীন ২৬ আয়াত)
৫৭৪
وَعَن سَهْلِ بن سَعدٍ رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أُتِيَ بِشَرابٍ، فَشَرِبَ
مِنْهُ وَعَنْ يَمِينِهِ غُلاَمٌ، وَعَنْ يَسَارِهِ الأشْيَاخُ، فَقَالَ
لِلغُلاَمِ: « أتَأذَنُ لِي أنْ أُعْطِيَ هَؤُلاَءِ ؟ » فَقَالَ الغُلامُ: لاَ
وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، لاَ أُوْثِرُ بِنَصِيبي مِنْكَ
أحَداً . فَتَلَّهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم في
يَدِهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
সাহ্ল
ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে কোন পানীয় পরিবেশন করা হল।
তিনি তা থেকে পান করলেন। তাঁর ডান দিকে ছিল একটি বালক আর বাম দিকে ছিল কয়েকজন
বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। (নিয়ম হল, ডান দিকে আগে দেওয়া তাই) তিনি বালকটিকে বললেন,
‘‘তুমি কি আমাকে অনুমতি দেবে, আমি ঐ বয়স্ক লোকদেরকে আগে পান করতে দিই?’’ বালকটি
বলল, ‘আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রসূল! আপনার কাছ থেকে আমার ভাগে আসা জিনিসের
ক্ষেত্রে আমি কাউকে আমার উপর অগ্রাধিকার দেব না।’ (সা‘দ বলেন,) ‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন পেয়ালাটি তার হাতে তুলে দিলেন।’ (বুখারী ও
মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী ২৩৫১, ২৩৬৬, ২৪৫১, ২৬০২, ২৬০৫, ৫৬২০, মুসলিম
২০৩০, আহমাদ ২২৩১৭, ২২৩৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৭৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بَيْنَا أيُّوبُ عليه السلام يَغْتَسِلُ
عُرْيَاناً، فَخَرَّ عَلَيْهِ جَرَادٌ مِنْ ذَهَبٍ، فَجَعَلَ أيُّوبُ يَحْثِي في
ثَوْبِهِ، فَنَادَاهُ رَبُّهُ - عَزَّ وَجَلَّ -: يَا أيُّوبُ، ألَمْ أكُنْ
أغْنَيتكَ عَمَّا تَرَى ؟! قَالَ: بَلَى وَعِزَّتِكَ وَلَكِنْ لاَ غِنى بِيْ عَنْ
بَرَكَتِكَ ». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একদা আইয়ূব আলাইহিস সালাম উলঙ্গ হয়ে
গোসল করছিলেন। অতঃপর তাঁর উপর সোনার পঙ্গপাল পড়তে লাগল। আইয়ূব আলাইহিস সালাম তা
আঁজলা ভরে ভরে বস্ত্রে রাখতে আরম্ভ করলেন। সুতরাং তাঁর প্রতিপালক আয্যা অজাল্ল
তাঁকে ডাক দিলেন, ‘হে আইয়ূব! তুমি যা দেখছ তা হতে কি আমি তোমাকে অমুখাপেক্ষী করে
দিইনি?’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই, তোমার ইজ্জতের কসম! কিন্তু আমি তোমার বরকত হতে
অমুখাপেক্ষী নই।’’
(সহীহুল বুখারী ২৭৯, ৩৩৯১, ৭৪৯৩, নাসায়ী ৪০৯, আহমাদ ৭২৬৭,
৭৯৭৮, ২৭৩৭৬, ৮৩৬৪, ৯৯৮০, ১০২৬০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬৪
কৃতজ্ঞ ধনীর মাহাত্ম্য
কৃতজ্ঞ ধনী ঐ ব্যক্তি যে বৈধ
পন্থায় ধনার্জন করে এবং তা বৈধ ও বিধেয় পথে ব্যয় করে।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ﴾ [الليل: ٥، ٧]
অর্থাৎ “সুতরাং যে দান করে ও আল্লাহকে ভয় করে, এবং সদ্বিষয়কে সত্যজ্ঞান করে।
অচিরেই আমি তার জন্য সুগম করে দেব (জান্নাতের) সহজ পথ।” (সূরা লায়ল ৫-৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَسَيُجَنَّبُهَا ٱلۡأَتۡقَى ١٧ ٱلَّذِي يُؤۡتِي مَالَهُۥ يَتَزَكَّىٰ ١٨ وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُۥ مِن نِّعۡمَةٖ تُجۡزَىٰٓ ١٩ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ رَبِّهِ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٢٠ وَلَسَوۡفَ يَرۡضَىٰ ٢١ ﴾ [الليل: ١٧، ٢١]
অর্থাৎ “আর আল্লাহভীরুকে তা থেকে দূরে রাখা হবে। যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধন-সম্পদ
দান করে এবং তার প্রতি কারো কোন অনুগ্রহের প্রতিদানে নয়। কেবল তার মহান পালনকর্তার
সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায়। আর সে অচিরেই সন্তুষ্ট হবে।” (সূরা ঐ ১৭-২১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِن تُبۡدُواْ ٱلصَّدَقَٰتِ فَنِعِمَّا هِيَۖ وَإِن تُخۡفُوهَا وَتُؤۡتُوهَا ٱلۡفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَئَِّاتِكُمۡۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ٢٧١ ﴾ [البقرة: ٢٧١]
অর্থাৎ “তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপনে কর এবং
অভাবগ্রস্তকে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। এতে তিনি তোমাদের কিছু কিছু পাপ
মোচন করবেন, বস্তুত তোমরা যা কর, আল্লাহ তা অবহিত।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭১ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
<صلى الله عليه وسلمm>﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيۡءٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٞ ٩٢ ﴾ [ال عمران: ٩٢]
অর্থাৎ “তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস
আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ
অবহিত।” (সূরা আলে ইমরান ৯২ আয়াত)
৫৭৬
وعن ابن مسعود رضي الله عنه، عن النبيِّ
صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لا حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ
اللهُ مَالاً، فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ في الحَقّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ
حِكْمَةً، فَهُوَ يَقْضِي بِهَا ويُعَلِّمُهَا » متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়ঃ
(১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে হক পথে অকাতরে
দান করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং
(২) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা
ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।’’
(বুখারী ও মুসলিম এটি ৫৪৯ নম্বরে গত হয়েছে।)
(সহীহুল বুখারী ৭৩, ১৪০৯, ৭১৪১, ৭৩০, ইবনু মাজাহ ৪২০৮,
আহমাদ ৩৬৪৩, ৪০৯৮, মুসলিম ৮১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৭৭
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ:
رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ القُرْآنَ، فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ
النَّهَارِ، وَرَجُلٌ آتَاهُ مَالاً، فَهُوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ
النَّهَارِ». متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়ঃ
(১) ঐ ব্যক্তির (হিংসা করা যায়) যাকে আল্লাহ কুরআন (শিক্ষা) দিয়েছেন অতঃপর সে দিবারাত্রি
তার যত্ন করে (তেলাওয়াত ও আমল করে) এবং (২) ঐ ব্যক্তির (হিংসা করা যায়) যাকে মহান
আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর সে দিবারাত্রি তা দান করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫০২৫, ৭৫২৯, মুসলিম ৮১৫, তিরমিযী ১৯৩৬,
ইবনু মাজাহ ৪২০৯, আহমাদ ৪৫৩৬, ৪৯০৫, ৫৫৮৬, ৬১৩২, ৬৩৬৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৭৮
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
فُقَراءَ المُهَاجِرينَ أتَوْا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَوا: ذَهَبَ أهْلُ الدُّثُورِ بِالدَّرَجَاتِ العُلَى، وَالنَّعِيم
المُقِيمِ، فَقَالَ: «وَمَا ذَاك ؟» فَقَالَوا: يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي،
وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَيَتَصَدَّقُونَ وَلاَ نَتَصَدَّقُ، وَيَعْتِقُونَ
وَلاَ نَعْتِقُ، فَقَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم:«أفَلا أُعَلِّمُكُمْ
شَيْئاً تُدْرِكُونَ بِهِ مَنْ سَبَقَكُمْ، وَتَسْبِقُونَ بِهِ مَنْ بَعْدَكُمْ،
وَلاَ يَكُونُ أحَدٌ أفْضَلَ مِنْكُمْ إِلاَّ مَنْ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُمْ؟»
قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «تُسَبِّحُونَ
وَتُكَبِّرُونَ وَتَحْمِدُونَ، دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاثاً وَثَلاثِينَ مَرَّةً
» فَرَجَعَ فُقَرَاء المُهَاجِرِينَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
فَقَالَوا: سَمِعَ إخْوَانُنَا أهلُ الأمْوالِ بِمَا فَعَلْنَا، فَفَعَلُوا
مِثلَهُ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «ذَلِكَ
فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ ». متفقٌ عَلَيْهِ، وَهَذا لفظ رواية مسلم
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একদা
গরীব মুহাজির (সাহাবাগণ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন,
‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো উঁচু উঁচু মর্যাদা ও চিরস্থায়ী সম্পদের অধিকারী হয়ে
গেল।’ তিনি বললেন, ‘‘তা কিভাবে?’’ তাঁরা বললেন, ‘তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায
পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি। কিন্তু তারা সাদকাহ করছে, আর আমরা করতে
পারছি না। তারা দাস মুক্ত করছে, আর আমরা পারছি না।’ এ কথা শুনে আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস শিখিয়ে দেব
না, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের মর্যাদা লাভ করবে, তোমাদের পরবর্তীদের
থেকে অগ্রবর্তী থাকবে এবং তোমাদের মত কাজ যে করবে, সে ছাড়া অন্য কেউ তোমাদের চাইতে
শ্রেষ্ঠতর হতে পারবে না?’’ তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! (আমাদেরকে তা
শিখিয়ে দিন।)’ তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পরে ৩৩ বার করে
‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবে।’’ অতঃপর গরীব
মুহাজিরগণ পুনরায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন,
‘আমরা যে আমল করছি, সে আমল আমাদের ধনী ভাইয়েরা শোনার পর তারাও আমল শুরু করে
দিয়েছে? (এখন তো তারা আবার আমাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ে যাবে।)’ আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এ হল আল্লাহর অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা
তা দান করেন।’’ (বুখারী, মুসলিম, শব্দগুলি মুসলিমের)
(সহীহুল বুখারী ৮৪৩, ৬৩২৯, মুসলিম ৫৯৫, আবূ দাউদ ১৫০৪,
ইবনু মাজাহ ৪৮৮, ৯২৭, আহমাদ ৭২০২, ৮৬১৬, ৯৮৯৭, দারেমী ১৩৫৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬৫
মরণকে স্মরণ এবং কামনা-বাসনা
কম করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ أُجُورَكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۖ فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَۗ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ١٨٥ ﴾ [ال عمران: ١٨٥]
অর্থাৎ “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল
পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। যাকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে এবং (যে)
বেহেশ্তে প্রবেশলাভ করবে সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই
নয়।” (সূরা আলে ইমরান ১৮৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ ﴾ [لقمان: ٣٤]
অর্থাৎ “কেউ জানে না আগামী কাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ দেশে তার
মৃত্যু ঘটবে।” (সূরা লুকমান ৩৪ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ﴾ [الاعراف: ٣٤]
অর্থাৎ “অতঃপর যখন তাদের সময় আসে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব অথবা অগ্রগামী করতে
পারে না।” (সূরা নাহ্ল ৬১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُلۡهِكُمۡ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ٩ وَأَنفِقُواْ مِن مَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوۡلَآ أَخَّرۡتَنِيٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ قَرِيبٖ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠ وَلَن يُؤَخِّرَ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِذَا جَآءَ أَجَلُهَاۚ وَٱللَّهُ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ ١١ ﴾ [المنافقون: ٩، ١١]
অর্থাৎ “হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর
স্মরণ হতে উদাসীন না করে, যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদেরকে যে
রুযী দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে (অন্যথায়
মৃত্যু আসলে সে বলবে,) ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে
আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ কিন্তু নির্ধারিত কাল যখন
উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কখনো কাউকেও অবকাশ দেবেন না। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে
সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” (সূরা মুনাফিকূন ৯-১১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ٱرۡجِعُونِ ٩٩ لَعَلِّيٓ أَعۡمَلُ صَٰلِحٗا فِيمَا تَرَكۡتُۚ كَلَّآۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَاۖ وَمِن وَرَآئِهِم بَرۡزَخٌ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ ١٠٠ فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَلَآ أَنسَابَ بَيۡنَهُمۡ يَوۡمَئِذٖ وَلَا يَتَسَآءَلُونَ ١٠١ فَمَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٢ وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ فِي جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ١٠٣ تَلۡفَحُ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ وَهُمۡ فِيهَا كَٰلِحُونَ ١٠٤ أَلَمۡ تَكُنۡ ءَايَٰتِي تُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ ١٠٥ قَالُواْ رَبَّنَا غَلَبَتۡ عَلَيۡنَا شِقۡوَتُنَا وَكُنَّا قَوۡمٗا ضَآلِّينَ ١٠٦ رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡهَا فَإِنۡ عُدۡنَا فَإِنَّا ظَٰلِمُونَ ١٠٧ قَالَ ٱخۡسَُٔواْ فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ ١٠٨ إِنَّهُۥ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ ١٠٩ فَٱتَّخَذۡتُمُوهُمۡ سِخۡرِيًّا حَتَّىٰٓ أَنسَوۡكُمۡ ذِكۡرِي وَكُنتُم مِّنۡهُمۡ تَضۡحَكُونَ ١١٠ إِنِّي جَزَيۡتُهُمُ ٱلۡيَوۡمَ بِمَا صَبَرُوٓاْ أَنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ١١١ قَٰلَ كَمۡ لَبِثۡتُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ عَدَدَ سِنِينَ ١١٢ قَالُواْ لَبِثۡنَا يَوۡمًا أَوۡ بَعۡضَ يَوۡمٖ فَسَۡٔلِ ٱلۡعَآدِّينَ ١١٣ قَٰلَ إِن لَّبِثۡتُمۡ إِلَّا قَلِيلٗاۖ لَّوۡ أَنَّكُمۡ كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١١٤ أَفَحَسِبۡتُمۡ أَنَّمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ عَبَثٗا وَأَنَّكُمۡ إِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُونَ ١١٥ ﴾ [المؤمنون: ٩٩، ١١٥]
অর্থাৎ “যখন তাদের (অবিশ্বাসী ও পাপীদের) কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, ‘হে
আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় (দুনিয়ায়) প্রেরণ কর। যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে
সৎকর্ম করতে পারি।’ না এটা হবার নয়; এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র; তাদের সামনে
বারযাখ (যবনিকা) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে
সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ-খবর নিবে না।
সুতরাং যাদের (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের (নেকীর) পাল্লা
হাল্কা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের
মুখমন্ডলকে দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। তোমাদের নিকট কি আমার
আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হতো না? অথচ তোমরা সেগুলিকে মিথ্যা মনে করতে। তারা বলবে, ‘হে
আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রান্ত
সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! এই আগুন হতে আমাদেরকে উদ্ধার কর; অতঃপর আমরা যদি
পুনরায় অবিশ্বাস করি তাহলে অবশ্যই আমরা সীমালংঘনকারী হব।’ আল্লাহ বলবেন, ‘‘তোমরা
হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না। আমার বান্দাদের মধ্যে একদল
ছিল যারা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস করেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে
ক্ষমা করে দাও ও আমাদের উপর দয়া কর, তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা
ভুলিয়ে দিয়েছিল; তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে। আমি আজ তাদেরকে তাদের
ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।’’ তিনি বলবেন, ‘তোমরা
পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন অথবা
একদিনের কিছু অংশ, তুমি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ।’ তিনি বলবেন, ‘তোমরা
অল্পকালই অবস্থান করেছিলে; যদি তোমরা জানতে। তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি
তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?” সূরা
মুমিনূন ৯৯-১১৫ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
أَلَمۡ يَأۡنِ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن تَخۡشَعَ قُلُوبُهُمۡ لِذِكۡرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلۡحَقِّ وَلَا يَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلُ فَطَالَ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَمَدُ فَقَسَتۡ قُلُوبُهُمۡۖ وَكَثِيرٞ مِّنۡهُمۡ فَٰسِقُونَ ١٦ ﴾ [الحديد: ١٦]
অর্থাৎ “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের সময় কি আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে
সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হবে? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব
দেওয়া হয়েছিল তাদের মত তারা হবে না? বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তর কঠিন
হয়ে পড়েছিল। আর তাদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী।” (সূরা হাদীদ ১৬ আয়াত)
৫৭৯
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
بِمَنْكِبَيَّ، فَقَالَ: «كُنْ في الدُّنْيَا كَأنَّكَ غَرِيبٌ، أَو عَابِرُ
سَبيلٍ» . وَكَانَ ابنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، يَقُولُ: إِذَا أمْسَيتَ
فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ المَسَاءَ،
وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ . رواه البخاري
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে
বললেন, ‘‘তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।’’ আর ইবনে উমার
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না
এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত
অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ
কর।’ (বুখারী, এটি ৪৭৫ নম্বরে গত হয়েছে।)
(সহীহুল বুখারী ৬৪১৬, তিরমিযী ২৩৩৩, ইবনু মাজাহ ৪১১৪,
আহমাদ ৪৭৫, ৪৯৮২, ৬১২১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৮০
وَعَنهُ: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ، لَهُ شَيْءٌ يُوصِي فِيهِ، يَبيتُ
لَيْلَتَيْنِ إِلاَّ وَوَصِيَّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ، هَذَا
لفظ البخاري .
وفي روايةٍ لمسلمٍ: «يَبِيتُ ثَلاَثَ لَيَالٍ» قَالَ ابنُ عُمَرَ: مَا مَرَّتْ
عَلَيَّ لَيْلَةٌ مُنْذُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ذَلِكَ
إِلاَّ وَعِنْدِي وَصِيَّتِي
উক্ত
সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে মুসলমানের নিকট অসিয়ত করার মত কোন
কিছু আছে, তার জন্য দু’ রাত কাটানো জায়েয নয় এমন অবস্থা ছাড়া যে, তার অসিয়ত-নামা
তার নিকট লিখিত (প্রস্তুত) থাকা উচিত।’’ (বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় তিন রাত কাটানোর কথা রয়েছে। ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন, ‘আমি যখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা
বলতে শুনেছি, তখন থেকে আমার উপর এক রাতও পার হয়নি এমন অবস্থা ছাড়া যে আমার
অসিয়ত-নামা আমার নিকট প্রস্তুত আছে।’
(সহীহুল বুখারী ২৭৩৮, মুসলিম ১৬২৭, তিরমিযী ৯৭৪, ২১১৮,
নাসায়ী ৩৬১৫, ৩৬১৬, ৩৬১৮, ৩৬১৯, আবূ দাউদ ২৮৬২, ইবনু মাজাহ ২৬৯৯, আহমাদ ৪৪৫৫, ৪৫৬৪,
৪৮৮৪, ৫০৯৮, ৫১৭৫, ৫৪৮৭, ৫৮৯৪, ৬০৫৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৯২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৮১
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَّ
النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم خُطُوطاً، فَقَالَ: هَذَا الإنْسَانُ، وَهَذَا
أجَلُهُ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إذْ جَاءَ الخَطُّ الأَقْرَبُ رواه البخاري
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একবার
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি রেখা আঁকলেন এবং বললেন, ‘‘এটা হল
মানুষ, (এটা তার আশা-আকাঙ্ক্ষা) আর এটা হল তার মৃত্যু, সে এ অবস্থার মধ্যেই থাকে;
হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা (অর্থাৎ মৃত্যু) এসে পড়ে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৪১৮, তিরমিযী ২৩৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২৩২,
আহমাদ ১১৮২৯, ১১৯৭৯, ১২০৩৬, ১৩২৮৫, ১৩৩৮৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৮২
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ:
خَطَّ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم خَطّاً مُرَبَّعاً، وَخَطَّ خَطّاً في
الوَسَطِ خَارِجَاً مِنْهُ، وَخَطَّ خُطَطاً صِغَاراً إِلَى هَذَا الَّذِي في
الْوَسَطِ مِنْ جَانِبهِ الَّذِي في الوَسَط، فَقَالَ: « هَذَا الإنْسَانُ، وَهذَا
أجَلُهُ مُحيطاً بِهِ ـ أَوْ قَدْ أحَاطَ بِهِ ـ وَهذَا الَّذِي هُوَ خَارِجٌ
أمَلُهُ، وَهذِهِ الْخُطَطُ الصِّغَارُ الأَعْرَاضُ، فَإنْ أخْطَأَهُ هَذَا،
نَهَشَهُ هَذَا، وَإنْ أخْطَأَهُ هَذَا، نَهَشَهُ هَذَا ». رواه البخاري
ইবনে
মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চতুর্ভুজ আঁকলেন এবং এর মাঝখানে
একটি রেখা টানলেন যেটি চতুর্ভুজের বাইরে চলে গেল। তারপর দু পাশ দিয়ে মাঝের রেখার
সাথে ভিতরের দিকে কয়েকটা ছোট ছোট রেখা মেলালেন এবং বললেন, ‘‘এ মাঝামাঝি রেখাটা হল
মানুষ। আর চতুর্ভুজটি হল তার মৃত্যু; যা তাকে ঘিরে রেখেছে। আর বাইরের দিকে বর্ধিত
রেখাটি হল তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর ছোট ছোট রেখাগুলো নানা রকম বিপদাপদ। যদি সে এর
একটাকে এড়িয়ে যায়, তবে অন্যটা তাকে আক্রমণ করে। আর অন্যটাকেও যদি এড়িয়ে যায়, তবে
পরবর্তী অন্য একটি তাকে আক্রমণ করে।’’ (এর নক্সা নিম্নরূপঃ-মৃত্যু আপদ-বিপদ)
(সহীহুল বুখারী ৬৪১৭, তিরমিযী ২৪৫৪, ইবনু মাজাহ ৪২৩১,
আহমাদ ৩৬৪৪, ৪১৩১, ৪৪২৩, দারেমী ২৭২৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৮৩
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « بَادِرُوْا بِالأَعْمَالِ
سَبْعاً، هَلْ تَنْتَظِرُوْنَ إلاَّ فَقْراً مُنْسِياً، أَوْ غِنَى مُطغِياً، أَوْ
مَرَضاً مُفسِداً، أو هَرَماً مُفَنِّداً، أَو مَوْتاً مُجْهِزِاً، أَوْ
الدَّجَّالَ، فَشَرُّ غَائِبٍ يُنْتَظَرُ،أَوِ السَّاعَةَ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى
وَأَمَرُّ ؟، » رواهُ الترمذي وقال: حديثٌ حسنٌ.
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ সাতটি জিনিস প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই
তোমরা ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হওঃ (১) তোমরা কি এমন দারিদ্রতার জন্য অপেক্ষা করছো
যা অমনোযোগী (অক্ষম) করে দেয়, (২) অথবা এ রকম প্রাচুর্যের যা ধর্মদ্রোহী বানিয়ে
ফেলে, (৩) অথবা এমন রোগ-ব্যাধির যা (শারিরীক সামর্থ্যকে) ধ্বংস করে দেয়, (৪) অথবা
এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে বিনষ্ট করে দেয়, (৫) অথবা এমন মৃত্যুর যা
হঠাৎই উপস্থিত হয়, (৬) কিংবা দাজ্জালের, যা অপেক্ষমান অনুপস্থিত বিষয়ের মধ্যে
নিকৃষ্টতর, (৭) অথবা কিয়ামাতের যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও তিক্তকর।
(তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান। কিন্তু হাদীসটি হাসান নয়
বরং দুর্বল। আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সনদে দুর্বলতা রয়েছে আর এ সম্পর্কে আমি ‘‘সিলসিলাহ্
য‘ঈফা’’ গ্রন্থে (নং ১৬৬৬) ব্যাখ্যা প্রদান করেছি। আমি এর কোন শাহেদ পাচ্ছি না। তিরমিযী
কর্তৃক বর্ণিত সনদে মুহরিয ইবনু হারূন নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তার সম্পর্কে ইমাম
বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। অন্য একটি সূত্রে এ মুহরিয না থাকলেও সেটির মধ্যে
নাম উল্লেখ না করা এক অজ্ঞাত ব্যক্তি হতে মা‘মার বর্ণনা করেছেন আর সে অজ্ঞাত ব্যক্তি
মাকবূরী হতে বর্ণনা করেছেন। ফলে অন্য সূত্রটিও এ মাজহূল বর্ণনাকারীর কারণে দুর্বল।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
৫৮৪
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: أكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ
يَعْنِي: المَوْتَ . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আনন্দনাশক বস্তু
অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
(তিরমিযী ২৩০৬, আহমাদ ৮১০৪, ৮২৪১, ৮৬৩২, ৯০২৫, ১০২৬২)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৫৮৫
وَعَن أُبَيِّ بنِ كَعبٍ رضي الله عنه:
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم إِذَا ذَهَبَ ثُلُثُ
اللَّيْلِ قَامَ، فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، اذْكُرُوا اللهَ، جَاءتِ
الرَّاجِفَةُ، تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ، جَاءَ المَوْتُ بِمَا فِيهِ، جَاءَ
المَوْتُ بِمَا فِيهِ » قُلْتُ: يَا رَسُول اللهِ، إنِّي أُكْثِرُ الصَّلاَةَ
عَلَيْكَ، فَكَمْ أجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِي ؟ فَقَالَ: «مَا شِئْتَ» قُلْتُ:
الرُّبُع، قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ » قُلْتُ:
فَالنِّصْف ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ » قُلْتُ:
فالثُّلُثَيْنِ ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ» قُلْتُ:
أجعَلُ لَكَ صَلاَتِي كُلَّهَا ؟ قَالَ: «إذاً تُكْفَى هَمَّكَ، وَيُغْفَر لَكَ
ذَنْبُكَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
উবাই
ইবনে কা‘ব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
যখন
রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হয়ে যেত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উঠে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘‘হে লোক সকল! আল্লাহকে স্মরণ কর। কম্পনকারী (প্রথম
ফুৎকার) এবং তার সহগামী (দ্বিতীয় ফুৎকার) চলে এসেছে এবং মৃত্যুও তার ভয়াবহতা নিয়ে
হাজির।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি (আমার দো‘আতে) আপনার উপর দরূদ বেশি
পড়ি। অতএব আমি আপনার প্রতি দরূদ পড়ার জন্য (দো‘আর) কতটা সময় নির্দিষ্ট করব?’ তিনি
বললেন, ‘‘তুমি যতটা ইচ্ছা কর।’’ আমি বললাম, ‘এক চতুর্থাংশ?’ তিনি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যতটা চাও। যদি তুমি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম
হবে।’’ আমি বললাম, ‘অর্ধেক (সময়)?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা চাও; যদি বেশি কর, তাহলে
তা ভাল হবে।’’ আমি বললাম, ‘দুই তৃতীয়াংশ?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা চাও (তাই কর)।
যদি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম।’’ আমি বললাম, ‘আমি আমার (দো‘আর) সম্পূর্ণ
সময় দরূদের জন্য নির্দিষ্ট করব!’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তো (এ কাজ) তোমার দুশ্চিন্তা
(দূর করার) জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপকে মোচন করা হবে।’’ (তিরমিযী, হাসান
সূত্রে)
(তিরমিযী ২৪৫৭, আহমাদ ২০৭৩৫)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬৬
পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করা
মুস্তাহাব এবং তার দো‘আ
৫৮৬
عَن بُرَيْدَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَن
زِيَارَةِ القُبُورِ فَزُورُوهَا ». رواه مسلم . وفي رواية: فَمَنْ أرَادَ أنْ
يَزُورَ القُبُورَ فَلْيَزُرْ ؛ فإنَّهَا تُذَكِّرُنَا الآخِرَةَ
বুরাইদাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে (পূর্বে) কবর যিয়ারত করা
থেকে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত কর।’’ (মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘সুতরাং যে ব্যক্তি কবর যিয়ারত
করতে চায়, সে যেন তা করে। কারণ তা আখেরাত স্মরণ করায়।’’ (মুসলিম ১৯৭৭, ৯৭৭, নাসায়ী
২০৩২, ২০৩৩, ৪৪২৯, ৫৬৫১, ৫৬৫২, আবূ দাউদ ৩২৩৫, ৩৬৯৮, আহমাদ ২২৪৪৯, ২২৪৯৪, ২২৫০৬, ২২৫২৯,
২২৫৪৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৮৭
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم - كُلَّمَا
كَانَ لَيْلَتُهَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم - يَخْرُجُ مِنْ آخِرِ
اللَّيْلِ إِلَى البَقِيعِ، فَيَقُولُ: «السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ
مُؤْمِنِينَ، وَأتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ، غَداً مُؤَجَّلْونَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ
اللهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، اَللهم اغْفِرْ لأهْلِ بَقِيعِ الغَرْقَدِ». رواه مسلم
আয়েশাহ
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে তাঁর পালাতে রাতের শেষভাগে বাকী‘
(নামক মদীনার কবরস্থান) যেতেন এবং বলতেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম দা-রা ক্বাওমিম
মু’মিনীন অআতাকুম মা তূ‘আদূন, গাদাম মুআজ্জালূন। অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম
লাহিক্বুন। আল্লাহুম্মাগফির লিআহলি বাকী‘ইল গারক্বাদ।’
অর্থাৎ হে মুসলমান কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের নিকট তা
চলে এসেছে যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছিল, আগামী কাল (কিয়ামত) পর্যন্ত (বিস্তারিত
পুরস্কার ও শাস্তি) বিলম্বিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরাও তোমাদের সাথে
মিলিত হব। হে আল্লাহ! তুমি বাক্বী‘উল গারক্বাদবাসীদেরকে ক্ষমা কর।
(মুসলিম ৯৭৪, নাসায়ী ২০৩৭, ২০৩৯, ইবনু মাজাহ ১৫৪৬, আহমাদ
২৩৯০৪, ২৩৯৫৪, ২৪২৮০, ২৪৯৪৩, ২৫৩২৭, ২৫৪৮৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৮৮
وَعَن بُرَيدَةَ ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى المَقَابِرِ أنْ يَقُولَ
قَائِلُهُمْ:«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أهلَ الدِّيَارِ مِنَ المُؤْمِنينَ
وَالمُسلمينَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقونَ، أسْألُ اللهَ لَنَا
وَلَكُمُ العَافِيَةَ ». رواه مسلم
বুরাইদা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
যখন
সাহাবীগণ কবরস্থান যেতেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিক্ষা
দিতেন যে, তোমরা এ দো‘আ পড়ো,
‘আসসালা-মু আলাইকুম আহলাদ্দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা অলমুসলিমীন, অইন্না
ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিক্বূন, আসআলুল্লা-হা লানা অলাকুমুল আ-ফিয়াহ।’
অর্থাৎ হে মু’মিন ও মুসলিম কবরবাসিগণ! যদি আল্লাহ চান তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে
মিলিত হব। আমি আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা চাচ্ছি।
(মুসলিম ৯৭৫, নাসায়ী ২০৪০, ইবনু মাজাহ ১৫৪৭, আহমাদ ২২৪৭৬,
২২৫৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৮৯
وَعَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه،
قَالَ: مَرَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِقُبُوْرٍ بِالمَدِينَةِ
فَأَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بوَجْهِهِ فَقَالََ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ
القُبُوْرِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ
بِالأَثَرِ» رواهُ الترمذي وقال: حديثٌ حسن.
ইবনু
‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
মাদীনার
কিছু সংখ্যক কবর অতিক্রম করার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে
দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ ‘‘হে কবরের অধিবাসীরা! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক,
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের অগ্রগামী। আমরা
তোমাদের উত্তরসূরি।’’- (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসের সনদটি দুর্বল। (আহকামুল
জানায়েয’’ গ্রন্থে (পৃ ১৯৭) এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। উল্লেখ্য এর এক বর্ণনাকারী কাবূস
ইবনু আবী যিবইয়ান, তার সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। ইবনু হিববান বলেনঃ
তিনি মন্দ হেফযের অধিকারী, তিনি তার পিতার উদ্ধৃতিতে এমন কিছু বর্ণনা করেছেন যার কোন
ভিত্তি নেই। আর এ হাদীসটি তার পিতার উদ্ধৃতিতেই বর্ণনাকৃত। আবূ হাতিম প্রমুখ বলেনঃ
তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। ‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ (৫৩২ নং) এর ব্যাখ্যা দেখুন।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬৭
কোন কষ্টের কারণে
মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
৫৯০
عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: « لَا يَتَمَنَّ
أحَدُكُمُ المَوْتَ، إمَّا مُحْسِناً فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ، وَإمَّا مُسِيئاً
فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ البخاري .
وَفي رِوَايَةٍ لِّمُسلِمٍ عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم، قَالَ: لاَ يَتَمَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ، وَلاَ يَدْعُ بِهِ
مِنْ قَبْلِ أنْ يَأتِيَهُ ؛ إنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ، وَإنَّهُ لاَ
يَزِيدُ المُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلاَّ خَيْراً
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু
কামনা না করে। কেননা, সে পুণ্যবান হলে সম্ভবতঃ সে পুণ্য বৃদ্ধি করবে। আর পাপী
হলে (পাপ থেকে) তাওবাহ করতে পারবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তা আসার পূর্বে কেউ যেন তার
জন্য দো‘আ না করে। কারণ, সে মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ মু’মিনের আয়ু
কেবল মঙ্গলই বৃদ্ধি করবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৯, ৫৬৭৩, ৬৪৬৩, ৭২৩৫, মুসলিম ২৮১৬, ২৬৮২,
নাসায়ী ৫০৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২০১, আহমাদ ৭১৬২, ৭৪৩০, ৭৫৩৩, ২৭৪৭০, ৮১৩০, ৮৩২৪, ৮৮২১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯১
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:«لاَ يَتَمَنَّيَنَّ
أحَدُكُمُ المَوْتَ لِضُرٍّ أصَابَهُ، فَإنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً،
فَلْيَقُلْ: اَللهم أحْيِني مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْراً لِي، وَتَوَفَّنِي
إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيراً لي». متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন কোন বিপদের কারণে
মৃত্যু কামনা না করে। আর যদি কেউ এমন অবস্থাতে পতিত হয় যে, তাকে মৃত্যু কামনা
করতেই হয়, তাহলে সে (মৃত্যু কামনা না করে দো‘আ করে) বলবে, ‘হে আল্লাহ! যতদিন
পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখ। আর যদি আমার
জন্য মৃত্যুই মঙ্গলজনক হয়, তাহলে আমাকে মৃত্যু দাও।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৬৭১, ৬৩৫১, ৭২৩৩, মুসলিম ২৬৮০, তিরমিযী
৯৭১, নাসায়ী ১৮২০, ১৮২১, ১৮২২, আবূ দাউদ ৩১০৮, ইবনু মাজাহ ৪২৬৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯২
وَعَن قَيسِ بنِ أَبي حَازِمٍ، قَالَ:
دَخَلْنَا عَلَى خَبَّابِ بنِ الأرَتِّ رضي الله عنه نَعُودُهُ وَقَدِ اكْتَوَى
سَبْعَ كَيَّاتٍ، فَقَالَ: إنَّ أَصْحَابَنَا الَّذِينَ سَلَفُوا مَضَوْا، وَلَمْ
تَنْقُصْهُمُ الدُّنْيَا، وَإنَّا أصَبْنَا مَا لاَ نَجِدُ لَهُ مَوْضِعاً إِلاَّ
التُّرَابَ وَلَولاَ أنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَانَا أنْ نَدْعُوَ
بالمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ . ثُمَّ أتَيْنَاهُ مَرَّةً أُخْرَى وَهُوَ يَبْنِي
حَائِطاً لَهُ، فَقَالَ: إنَّ المُسْلِمَ لَيُؤْجَرُ فِي كُلِّ شَيْءٍ يُنْفِقُهُ
إِلاَّ فِي شَيْءٍ يَجْعَلُهُ في هَذَا التُّرَابِ . متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ
رواية البخاري
কাইস
ইবনে আবী হাযেম থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
অসুস্থ খাব্বাব ইবন আরাত্ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে দেখা করতে গেলাম। সে সময় তিনি
(তাঁর দেহে চিকিৎসার জন্য) সাতবার দেগেছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমাদের সাথীরা যাঁরা
(পূর্বেই) মারা গেছেন তাঁরা এমতাবস্থায় চলে গেছেন যে, দুনিয়া তাদের আমলের সওয়াবে
কোন রকম কমতি করতে পারেনি। আর আমরা এমন (সম্পদ) লাভ করেছি, যা মাটি ছাড়া অন্য
কোথাও রাখার জায়গা পাচ্ছি না। যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে
মৃত্যু-কামনা করতে নিষেধ না করতেন, তাহলে (রোগ-যন্ত্রণার কারণে) আমি মৃত্যুর জন্য
দো‘আ করতাম।’ (কাইস বলেন,) অতঃপর আমরা অন্য এক সময় তাঁর কাছে এলাম। তখন তিনি তাঁর
(বাড়ির) দেওয়াল তৈরী করছিলেন। তিনি বললেন, ‘মুসলিম ব্যক্তিকে তার সকল প্রকার ব্যয়ের
উপর সওয়াব দান করা হয়, তবে এ মাটিতে ব্যয়কৃত জিনিস ব্যতীত।’
(সহীহুল বুখারী ৫৬৭২, ৬৩৪৯, ৬৪৩০, ৬৪৩১, ৭২৩৪, মুসলিম
২৬৮১, তিরমিযী ২৪৮৩, নাসায়ী ১৮২৩, আহমাদ ২০৫৫০, ২০৫৬২, ২০৫৬৭, ২০৫৭৪, ২৬৬০২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬৮
হারাম বস্তুর ব্যাপারে
সাবধানতা অবলম্বন এবং সন্দিহান বস্তু পরিহার করার গুরুত্ব
৫৯৩
وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم، يَقُولُ: «إنَّ الحَلاَلَ بَيِّنٌ، وَإنَّ الحَرامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا
مُشْتَبَهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى
الشُّبُهَاتِ، اسْتَبْرَأَ لِدِينهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ
وَقَعَ في الحَرَامِ، كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الحِمَى يُوشِكُ أنْ يَرْتَعَ
فِيهِ، ألاَ وَإنَّ لكُلّ مَلِكٍ حِمَىً، ألاَ وَإنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ،
ألاَ وَإنَّ فِي الجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَت صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ،
وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، ألاَ وَهِيَ القَلْبُ » متفقٌ
عَلَيْهِ
নু‘মান
ইবনে বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই
হালাল বিবৃত ও স্পষ্ট এবং হারাম বিবৃত ও স্পষ্ট, আর উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দিহান
বস্তু; যা অনেক লোকেই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি এই সন্দিহান বস্তুসমূহ হতে দূরে
থাকবে, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে বাঁচিয়ে নেবে এবং যে ব্যক্তি সন্দিহানে পতিত হবে
(সন্দিগ্ধ বস্তু ভক্ষণ করবে), সে হারামে পতিত হবে। (এর উদাহরণ সেই) রাখালের মত, যে
নিষিদ্ধ চারণভূমির আশেপাশে পশু চরায়, তার পক্ষে নিষিদ্ধ সীমানায় পড়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। শোন! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত চারণভূমি থাকে। আর শোন! আল্লাহর
সংরক্ষিত চারণভূমি হল তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। শোন! দেহের মধ্যে একটি মাংসপিন্ড
রয়েছে; যখন তা সুস্থ থাকে, তখন গোটা দেহটাই সুস্থ হয়ে থাকে। আর যখন তা খারাপ হয়ে
যায়, তখন গোটা দেহটাই খারাপ হয়ে যায়। শোন! তা হল হৃৎপিন্ড (অন্তর)।’’
(সহীহুল বুখারী ৫২, ২০৫১, মুসলিম ১৫৯৯, তিরমিযী ১২০৫,
নাসায়ী ৪৪৫৩, ৫৭১০, আবূ দাউদ ৩৩২৯, ইবনু মাজাহ ৩৯৮৪, আহমাদ ১৭৮৮৩, ১৭৯০৩, ২৭৬৩৮, ১৭৯৪৫,
দারেমী ২৫৩১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯৪
وعن أنسٍ رضي الله عنه: أنَّ النبيَّ صلى
الله عليه وسلم وَجَدَ تَمْرَةً فِي الطَّرِيقِ، فَقَالَ: «لَوْلاَ أنِّي أخَافُ
أنْ تَكُونَ مِنَ الصَّدَقَة لأَكَلْتُهَا ». متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
একদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথে একটি খেজুর পেলেন। অতঃপর তিনি বললেন,
‘‘যদি আমার এর সাদকাহ হওয়ার আশঙ্কা না হত, তাহলে আমি এটি খেয়ে ফেলতাম।’’
(সহীহুল বুখারী ২০৫৫, ২৪৩১, ২৪৩৩, মুসলিম ১০৭১, আবূ দাউদ
১৬৫১, ১৬৫২, আহমাদ ২৭৪১৮, ১১৭৮০, ১১৯৩৪, ১২৫০২, ১২৫৯৩, ১৩১২১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯৫
وَعَنِ النَّوَّاسِ بنِ سَمْعَانَ رضي الله
عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «البِرُّ: حُسْنُ الخُلُقِ،
وَالإِثْمُ: مَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ، وَكَرِهْتَ أنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ
». رواه مسلم
নাওয়াস
ইবনে সাম‘আন রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পুণ্যবত্তা হল সচ্চরিত্রতার নাম এবং পাপ
হল তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক---এ কথা তুমি
অপছন্দ কর।’’
(মুসলিম ২৫৫৩, তিরমিযী ২৩৮৯, আহমাদ ১৭১৭৯, দারেমী ২৭৮৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯৬
وَعَن وَابِصَةَ بنِ مَعبَدٍ رضي الله عنه،
قَالَ: أتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ:«
جئتَ تَسْألُ عَنِ البِرِّ ؟ » قُلْتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: «اسْتَفْتِ قَلْبَكَ،
البرُّ: مَا اطْمَأنَّت إِلَيْهِ النَّفسُ، وَاطْمأنَّ إِلَيْهِ القَلْبُ،
وَالإثْمُ: مَا حَاكَ في النَّفْسِ، وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ، وَإنْ أفْتَاكَ
النَّاسُ وَأفْتَوكَ » حديث حسن، رواه أحمد والدَّارمِيُّ في مُسْنَدَيْهِمَا
ওয়াবেস্বাহ
ইবনে মা‘বাদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। অতঃপর তিনি
বললেন, ‘‘তুমি পুণ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’
তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার অন্তরকে (ফতোয়া) জিজ্ঞাসা কর। পুণ্য হল তা, যার প্রতি
তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয়। আর পাপ হল তা, যা মনে খট্কা সৃষ্টি
করে এবং অন্তর সন্দিহান হয়; যদিও লোকেরা তোমাকে (তার বৈধ হওয়ার) ফতোয়া দিয়ে
থাকে।’’
(আহমাদ, দারেমী) (আহমাদ ১৭৫৩৮, ১৭৫৪০, ১৭৫৪৫, দারেমী ২৫৩৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯৭
وَعَن أَبي سِرْوَعَةَ عُقبَةَ بنِ
الحارِثِ رضي الله عنه: أنَّهُ تَزَوَّجَ ابنَةً لأبي إهَابِ بنِ عَزِيزٍ،
فَأتَتْهُ امْرَأةٌ، فَقَالَتْ: إنّي قَدْ أرضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي قَدْ
تَزَوَّجَ بِهَا . فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ: مَا أعْلَمُ أنَّك أَرضَعْتِنِي وَلاَ
أخْبَرْتِني، فَرَكِبَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِالمَدِينَةِ،
فَسَأَلَهُ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
«كَيْفَ ؟ وَقَد قِيلَ» فَفَارَقَهَا عُقْبَةُ وَنَكَحَتْ زَوْجاً غَيْرَهُ . رواه
البخاري
আবূ
সিরওয়াআহ উক্ববাহ ইবনে হারেস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
আবূ ইহাব ইবনে ‘আযীযের এক কন্যাকে বিবাহ করলেন। অতঃপর তার নিকট এক মহিলা এসে বলল,
‘আমি উক্ববাহকে এবং তার স্ত্রীকে দুধপান করিয়েছি।’ ‘উক্ববাহ তাকে বললেন, ‘তুমি যে
আমাকে দুধ পান করিয়েছ তা তো আমি জানি না, আর তুমি আমাকে তার খবরও দাওনি।’ অতঃপর
উক্ববাহ (সওয়ারীর উপর) সওয়ার হয়ে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট মদীনায় এলেন এবং এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সব বৃত্তান্ত শুনে) বললেন, ‘‘যখন এ কথা বলা হয়েছে, তখন তুমি কি
করে বিবাহ বন্ধন অটুট রাখবে?’’ সুতরাং উক্ববাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে ত্যাগ
করলেন এবং সে মহিলা অন্য স্বামী গ্রহণ করল।
(সহীহুল বুখারী ৮৮, ২০৫২, ২৬৪০, ২৬৫৯, ২৬৬০, ৫১০৫, তিরমিযী
১১৫১, নাসায়ী ৩৩৩০, আবূ দাউদ ৩৬০৩, আবূ দাউদ ১৫৭১৫, ১৮৯৩০, দারেমী ২২৫৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯৮
وَعَنِ الحَسَنِ بنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، قَالَ: حَفِظتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «دَعْ مَا
يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
আলীর
পুত্র হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (এ হাদীস) স্মরণ রেখেছি, ‘‘তা
বর্জন কর, যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে এবং তা গ্রহণ কর, যাতে তোমার সন্দেহ নেই।’’ (তিরমিযী,
সহীহ)
(তিরমিযী ২৫১৮, নাসায়ী ৫৭১১, আবূ দাউদ ২৭৮১৯, দারেমী ২৫৩২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৫৯৯
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ: كَانَ لأبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رضي الله عنه غُلاَمٌ يُخْرِجُ لَهُ
الخَرَاجَ، وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يَأكُلُ مِنْ خَرَاجِهِ، فَجَاءَ يَوْماً
بِشَيءٍ، فَأكَلَ مِنْهُ أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ لَهُ الغُلامُ: تَدْرِي مَا هَذَا
؟ فَقَالَ أَبُو بكر: وَمَا هُوَ ؟ قَالَ: كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لإنْسَانٍ في
الجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الكَهَانَةَ، إِلاَّ أنّي خَدَعْتُهُ، فَلَقِيَنِي،
فَأعْطَانِي لِذَلِكَ، هَذَا الَّذِي أكَلْتَ مِنْهُ، فَأدْخَلَ أَبُو بَكْرٍ
يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِي بَطْنِهِ . رواه البخاري
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
আবূ
বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর একজন ক্রীতদাস ছিল, যে চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে
ধার্যকৃত কর আদায় করত। আর আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সেই আদায়কৃত
অর্থ ভক্ষণ করতেন। (অবশ্য প্রত্যহ সে অর্থ হালাল কি না, তা জিজ্ঞাসা করে নিতেন।)
একদিনের ঘটনা, ঐ ক্রীতদাস কোন একটা জিনিস এনে তাঁর খিদমতে হাজির করল। আর তিনি
(সেদিন ভুলে কিছু জিজ্ঞাসা না করে) তা থেকে কিছু খেয়ে ফেললেন। দাসটি বলল, ‘আপনি কি
জানেন, এটা কী জিনিস (যা আপনি ভক্ষণ করলেন)?’ আবূ বাক্র রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু
বললেন, ‘তা কী?’ দাসটি বলল, ‘আমি জাহেলী যুগে একজন মানুষের ভাগ্য গণনা করেছিলাম।
অথচ আমার ভাগ্য গণনা করার মত ভাল জ্ঞান ছিল না। আসলে আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। সে
আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাকে (পারিশ্রমিকস্বরূপ) এই জিনিস দিলো, যা আপনি ভক্ষণ
করলেন।’ এ কথা শুনে আবূ বাকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের হাত স্বীয় মুখের
ভিতরে প্রবেশ করালেন এবং পেটের মধ্যে যা কিছু ছিল বমি করে বের করে দিলেন!
(সহীহুল বুখারী ৩৮৪২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০০
وَعَن نَافِعٍ: أَنَّ عُمَرَ بنَ الخَطّابِ
رضي الله عنه كَانَ فَرَضَ لِلمُهَاجِرينَ الأَوَّلِينَ أرْبَعَةَ الآفٍ وَفَرَضَ
لابْنِهِ ثَلاَثَة آلافٍ وَخَمْسَمئَةٍ، فَقيلَ لَهُ: هُوَ مِنَ المُهَاجِرينَ
فَلِمَ نَقَصْتَهُ ؟ فَقَالَ: إنَّمَا هَاجَرَ بِهِ أبُوهُ . يَقُولُ: لَيْسَ هُوَ
كَمَنْ هَاجَرَ بِنَفْسِهِ . رواه البخاري
নাফে’
থেকে বর্ণিতঃ
উমার
ইবনে খাত্ত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু সর্বপ্রথম হিজরতকারীদের জন্য চার হাজার করে
ভাতা নির্দিষ্ট করলেন এবং তাঁর ছেলে (আব্দুল্লাহর) জন্য সাড়ে তিন হাজার নির্দিষ্ট
করলেন। তাঁকে বলা হল যে, ‘তিনিও তো মুহাজিরদের একজন; অতএব আপনি তাঁর ভাতা কম করলেন
কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তার পিতা তাকে সাথে নিয়ে হিজরত করেছে।’ উমার
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘সে তার মত নয়, যে একাকী হিজরত করেছে।’
(সহীহুল বুখারী ৩৯১২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০১
وَعَنْ عَطِيَّةَ بْنِ عُرْوَةَ
السَّعْدِيِّ الصَّحَابِيِّ رضي الله عنه قَالَ . قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم« لَا يَبْلُغُ العَبْدُ أَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ حَتّىٰ
يَدَعَ مَالَا بَأْسَ بِهِ حَذْراً مِمَّا بِهِ بَأْسٌ ».رواهُ الترمذي وقال:
حديثٌ حسن.
‘আতিয়্যাহ্
ইবনু ‘উরওয়াহ্ আস-সা‘দী সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ পর্যন্ত বান্দাহ্
মুত্তাক্বীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারে না, সে যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দোষ হয়ে বাঁচার
জন্য নিষ্প্রয়োজনীয় বিষয়াদি পরিত্যাগ না করে। (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সনদটি দুর্বল। ‘‘গায়াতুল মারাম ফী তাখরীজে আহাদীসিল হালাল
অল হারাম’’ গ্রন্থে পৃ (১৭৮)তে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। শাইখ আলবানী হাদীসটিকে
‘‘মিশকাত’’ গ্রন্থে (২৭৭৫) পূর্বে হাসান আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত
পরিবর্তন করে পরে এটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। কারণ সনদের বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ্
ইবনু ইয়াযীদ দেমাস্কী দুর্বল।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৬৯
যুগের মানুষ খারাপ হলে অথবা
ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কা হলে অথবা হারাম ও সন্দিহান জিনিসে পতিত হওয়ার ভয়
হলে অথবা অনুরূপ কোন কারণে নির্জনতা অবলম্বন করা উত্তম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَفِرُّوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۖ إِنِّي لَكُم مِّنۡهُ نَذِيرٞ مُّبِينٞ ٥٠ ﴾ [الذاريات: ٥٠]
অর্থাৎ “সুতরাং তোমরা আল্লাহর দিকে পলায়ন কর; নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের
জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী।” (সূরা যারিয়াহ ৫০ আয়াত)
৬০২
وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله
عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «إنَّ الله
يُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيَّ الغَنِيّ الْخَفِيَّ ». رواه مسلم
সা‘দ
ইবনে আবী অক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ
তা‘আলা ঐ বান্দাকে ভালোবাসেন, যে পরহেযগার (সংযমশীল), অমুখাপেক্ষী ও
আত্মগোপনকারী।’’
(মুসলিম ২৯৬৫, আহমাদ ১৪৪৪, ১৫৩২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০৩
وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: أيُّ النَّاسِ أفْضَلُ يَا رَسُولَ الله ؟ قَالَ: مُؤْمِنٌ
مُجَاهِدٌ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ في سَبيلِ اللهِ قَالَ: ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ: ثُمَّ
رَجُلٌ مُعْتَزِلٌ فِي شِعْبٍ مِنَ الشِّعَابِ يَعْبُدُ رَبَّهُ . وفي رواية:
يَتَّقِي اللهَ، وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম?’ তিনি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ঐ মু’মিন যে আল্লাহর পথে তার জান ও মাল দিয়ে যুদ্ধ
করে।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তারপর ঐ
ব্যক্তি যে কোন গিরিপথে নির্জনে নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে আল্লাহকে ভয় করে এবং লোকদেরকে নিজের মন্দ আচরণ থেকে
নিরাপদে রাখে।’’
(সহীহুল বুখারী ২৭৮৬, ৬৪৯৪, মুসলিম ১৮৮৮, তিরমিযী ১৬৬০,
নাসায়ী ৩১০৫, আবূ দাউদ ২৪৮৫, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৮, আহমাদ ১০৭৪১, ১০৯২৯, ১১১৪১, ১১৪২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০৪
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «يُوشِكُ أنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالِ المُسْلِمِ
غَنَمٌ يَتَّبِعُ بِهَا شَعَفَ الجِبَالِ، وَمَواقعَ الْقَطْر يَفِرُّ بِدينِهِ
مِنَ الفِتَنِ ». رواه البخاري
উক্ত
রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সত্বর এমন এক সময় আসবে যে, ছাগল-ভেড়াই
মুসলিমের সর্বোত্তম মাল হবে; যা নিয়ে সে ফিতনা থেকে তার দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য
পাহাড়-চূড়ায় এবং বৃষ্টিবহুল (অর্থাৎ, তৃণবহুল) স্থানে পলায়ন করবে।’’
(সহীহুল বুখারী ১৯, ৩৩০০, ৩৬০০, ৬৪৯৫, ৭০৮৮, নাসায়ী ৫০৩৬,
আবূ দাউদ ৪২৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৯৮০, আহমাদ ১০৬৪৯, ১০৮৬১, ১০৯৯৮, ১১১৪৮, ১১৪২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০৫
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيّاً إِلاَّ رَعَى
الْغَنَمَ » فَقَالَ أصْحَابُهُ: وأنْتَ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، كُنْتُ أرْعَاهَا عَلَى
قَرَارِيطَ لأَهْلِ مَكَّةَ ». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন নবী প্রেরণ
করেননি, যিনি বকরী চরাননি।’’ তাঁর সাহাবীগণ বললেন, ‘আর আপনিও?’ তিনি বললেন,
‘‘হ্যাঁ! আমিও কয়েক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম।’’
(সহীহুল বুখারী ২২৬২, ইবনু মাজাহ ২১৪৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০৬
وَعَنهُ، عَن رَسُولِ الله صلى الله عليه
وسلم، أنَّه قَالَ: «مِنْ خَيْرِ مَعَاشِ النَّاسِ لَهُم رَجُلٌ مُمْسِكٌ عِنَانَ
فَرَسِهِ فِي سَبيلِ الله، يَطيرُ عَلَى مَتْنِهِ كُلَّمَا سَمِعَ هَيْعَةً أَوْ
فَزعَةً، طَارَ عَلَيْهِ يَبْتَغِي القَتْلَ، أَوْ المَوْتَ مَظَانَّه، أَوْ
رَجُلٌ فِي غُنَيمَةٍ في رَأسِ شَعَفَةٍ مِنْ هذِهِ الشَّعَفِ، أَوْ بَطنِ وَادٍ
مِنْ هذِهِ الأَوْدِيَةِ، يُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَيُؤتِي الزَّكَاةَ، وَيَعْبُدُ
رَبَّهُ حَتَّى يأتِيَهُ اليَقِينُ، لَيْسَ مِنَ النَّاسِ إِلاَّ فِي خَيْرٍ».
رواه مسلم
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম জীবন সেই
ব্যক্তির, যে আল্লাহর পথে তার ঘোড়ার লাগাম ধরে আছে। যখনই সে যুদ্ধের ভয়ানক শব্দ
শোনে, তখনই সেখানে তার পিঠে চড়ে দ্রুতগতিতে পৌঁছে যায়। দ্রুতগতিতে পৌঁছে সে হত্যা
অথবা মৃত্যুর সম্ভাব্য জায়গাগুলো খোঁজ করে। অথবা সর্বোত্তম জীবন সেই ব্যক্তির, যে
কতিপয় ছাগল-ভেড়া নিয়ে কোন পাহাড়-চূড়ায় কিংবা কোন উপত্যকার মাঝে বসবাস করে। সেখানে
সে তার নিকট মৃত্যু আসা পর্যন্ত নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং নিজ
প্রতিপালকের ইবাদত করে। লোকদের মধ্যে এ ব্যক্তি উত্তম অবস্থায় রয়েছে।’’
(মুসলিম ১৮৮৯, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৭, আহমাদ ৮৮৯৭, ৯৪৩০, ১০৪০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ৭০
মানুষের সাথে মিলামিশা,
জুম‘আহ, জামা‘আত, ঈদ ও যিকিরের মজলিস (জালসায় ও দ্বীনী মজলিসে) লোকদের সাথে
উপস্থিত হওয়া, রোগীকে সাক্ষাৎ করে কুশল জিজ্ঞাসা করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা,
অভাবীদের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করা, অজ্ঞকে পথ প্রদর্শন করা এবং অনুরূপ অন্যান্য
কল্যাণময় কাজের জন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা তার জন্য মুস্তাহাব, যে ভাল কাজের
নির্দেশ এবং মন্দ কাজ থেকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আর অপরকে কষ্ট দেওয়া থেকে সে
নিজেকে বিরত রাখে এবং অপরের পক্ষ থেকে কষ্ট পৌঁছলে ধৈর্য ধারণ করে।
(ইমাম নাওয়াবী রাহিমাহুল্লাহ
বলেন,) জেনে রাখো যে, লোকদের সাথে মিলামিশার যে পদ্ধতি আমি বর্ণনা করেছি সেটাই
স্বীকৃত; যা রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং বাকী নবীদের পদ্ধতি
ছিল। অনুরূপ পদ্ধতি ছিল খুলাফায়ে রাশেদীন এবং তাঁদের পরে সাহাবা ও তাবেঈনদের এবং
তাঁদের পরে মুসলিমদের উলামা ও সজ্জনদের। এই অভিমত অধিকাংশ তাবেঈন ও তাঁদের
পরবর্তীদেরও। ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ এবং অধিকাংশ ফিক্হবিদও এই মত পোষণ করেছেন।
(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমা‘ঈন) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [المائدة: ٢]
অর্থাৎ “কল্যাণকর ও সংযমশীলতার পথে একে অপরের সহযোগিতা কর।” (সূরা মায়েদা ২ আয়াত)
এ মর্মে আর অনেক বিদিত আয়াত রয়েছে।[১]
পরিচ্ছদঃ ৭১
মু’মিনদের জন্য বিনয়ী ও
বিনম্র হওয়ার গুরুত্ব
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “তুমি তোমার অনুসারী বিশ্বাসীদের প্রতি সদয় হও।” (সূরা শু‘আরা ২১৫ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ﴾ [المائدة: ٥٤]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক
সম্প্রদায় আনয়ন করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে
মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর।” (সূরা মাইদাহ ৫৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ﴾ [الحجرات: ١٣]
অর্থাৎ “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে
তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত
হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক
আল্লাহ-ভীরু।” (সূরা হুজরাত ১৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿فَلَا تُزَكُّوٓاْ أَنفُسَكُمۡۖ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَنِ ٱتَّقَىٰٓ﴾ [النجم: ٣٢]
অর্থাৎ “তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনই সম্যক জানেন আল্লাহভীরু কে।” (সূরা নাজ্ম
৩২আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَنَادَىٰٓ أَصۡحَٰبُ ٱلۡأَعۡرَافِ رِجَالٗا يَعۡرِفُونَهُم بِسِيمَىٰهُمۡ قَالُواْ مَآ أَغۡنَىٰ عَنكُمۡ جَمۡعُكُمۡ وَمَا كُنتُمۡ تَسۡتَكۡبِرُونَ ٤٨ أَهَٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقۡسَمۡتُمۡ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحۡمَةٍۚ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمۡ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٤٩ ﴾ [الاعراف: ٤٨، ٤٩]
অর্থাৎ “আ‘রাফবাসিগণ কিছু লোককে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনতে পেরে তাদেরকে আহবান করে
বলবে, তোমাদের দল ও তোমাদের অহংকার কোন কাজে আসল না। দেখ এদেরই সম্বন্ধে কি তোমরা
শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ এদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না। এদেরকেই বলা হবে, তোমরা
বেহেশ্তে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা আ’রাফ
৪৮-৪৯ আয়াত)
৬০৭
وَعَن عِيَاضِ بنِ حِمَارٍ رضي الله عنه،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « إنَّ الله
أوْحَى إِلَيَّ أنْ تَوَاضَعُوا حَتَّى لاَ يَفْخَرَ أحَدٌ عَلَى أحَدٍ، وَلاَ
يَبْغِي أحَدٌ عَلَى أحَدٍ ». رواه مسلم
‘ইয়ায
ইবনে হিমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী পাঠালেন
যে, তোমরা পরস্পরে নম্র ব্যবহার অবলম্বন কর। যাতে কেউ যেন কারো প্রতি গর্ব না করে
এবং কেউ যেন কারো প্রতি যুলুম না করে।’’
(মুসলিম ২৮৬৫, আবূ দাউদ ৪৮৯৫, ইবনু মাজাহ ৪১৭৯, আহমাদ
১৭০৩০, ১৭৮৭৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০৮
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ،
وَمَا زادَ اللهُ عَبْداً بعَفْوٍ إِلاَّ عِزّاً، وَمَا تَوَاضَعَ أحَدٌ للهِ
إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সাদকা করলে মাল কমে যায় না এবং ক্ষমা
করলে আল্লাহ বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়,
আল্লাহ তাকে (মর্যাদায়) উচ্চ করেন।’’
(মুসলিম ২৫৮৮, তিরমিযী ২০২৯, আহমাদ ৭১৬৫, ৮৭৮২, ৯৩৬০,
মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮৫, দারেমী ১৬৭৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬০৯
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أنَّهُ مَرَّ
عَلَى صِبيَانٍ، فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ، وَقَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم يَفعَلُه . متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
কতিপয়
শিশুর পাশ দিয়ে গেলেন অতঃপর তিনি তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকমই করতেন।’
(সহীহুল বুখারী ৬২৪৭, মুসলিম ২১৬৮, তিরমিযী ২৬৯৬, আবূ
দাউদ ৫২০২, ইবনু মাজাহ ৩৭০০, আহমাদ ১১৯২৮, ১২৩১৩, ১২৪৮৫, ১২৬১০, ২৬৩৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১০
وَعَنهُ، قَالَ: إِنْ كَانَتِ الأَمَةُ
مِنْ إمَاءِ المَدينَةِ لَتَأْخُذُ بِيَدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم،
فَتَنْطَلِقُ بِهِ حَيْثُ شَاءتْ . رواه البخاري
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘মদীনার ক্রীতদাসীদের মধ্যে এক ক্রীতদাসী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর হাত ধরে নিত, তারপর সে (নিজের প্রয়োজনে) তার ইচ্ছামত তাঁকে নিয়ে
যেত।’
(সহীহুল বুখারী ৬০৭২, ৪৯৭৮, ৬৬৫৭, মুসলিম ২৮৫৩, তিরমিযী
২৬০৫, ইবনু মাজাহ ৪১১৬, আহমাদ ১৮২৫৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১১
وَعَنِ الأَسْوَدِ بنِ يَزيدَ، قَالَ:
سُئِلَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا مَا كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
يَصْنَعُ فِي بَيْتِهِ ؟ قَالَت: كَانَ يَكُونُ في مِهْنَةِ أهْلِهِ ـ يَعنِي:
خِدمَة أَهلِه ـ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ، خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ . رواه
البخاري
আসওয়াদ
ইবনে ইয়াযীদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঘরে কী কাজ করতেন?’ তিনি বললেন, ‘গৃহস্থালি কাজ করতেন; অর্থাৎ স্ত্রীর
কাজে সহযোগিতা করতেন। অতঃপর নামাযের (সময়) হলে তিনি নামাযের জন্য বেরিয়ে যেতেন।’
(বুখারী)
* (এই গৃহস্থালি কাজের ব্যাখ্যায় মা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, ‘তিনি নিজের
জুতা পরিষ্কার করতেন, কাপড় সিলাই করতেন, দুধ দোহাতেন এবং নিজের খিদমত নিজে করতেন।’
তাছাড়া এ কথা বিদিত যে, তাঁর একাধিক দাস-দাসীও ছিল।)
(সহীহুল বুখারী ৬৭৬, ৫৩৬৩, ৬০৩৯, তিরমিযী ২৪৫৮৯, আহমাদ
২৩৭০৬, ২৪৪২৭, ২৫১৮২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১২
وَعَن أَبي رِفَاعَةَ تَمِيمِ بنِ أُسَيْدٍ
رضي الله عنه، قَالَ: انْتَهَيْتُ إِلَى رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم وَهُوَ
يَخطُبُ، فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، رَجُلٌ غَرِيبٌ جَاءَ
يَسْألُ عَن دِينهِ لاَ يَدْرِي مَا دِينُهُ ؟ فَأقْبَلَ عَليَّ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، وتَرَكَ خُطْبَتَهُ حَتَّى انْتَهَى إلَيَّ،
فَأُتِيَ بِكُرْسيٍّ، فَقَعَدَ عَلَيْهِ، وَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ
اللهُ، ثُمَّ أَتَى خُطْبَتَهُ فَأتَمَّ آخِرَهَا . رواه مسلم
আবূ
রিফাআহ তামীম ইবনে উসাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম তখন তিনি খুতবা
দিচ্ছিলেন। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল! আমি একজন বিদেশী মানুষ নিজের দ্বীন
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছি, আমি জানি না আমার দ্বীন কী?’ (এ কথা শুনে) আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে ফিরলেন এবং খুতবা দেওয়া বর্জন
করলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি আমার নিকটে এলেন। অতঃপর একটি চেয়ার আনা হল। তিনি
তার উপর বসে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আমাকে শিখাতে লাগলেন। অতঃপর
তিনি খুতবায় ফিরে এসে তার শেষাংশটুকু পুরা করলেন।
(মুসলিম ৮৭৬, নাসায়ী ৫৩৭৭, আহমাদ ২০২২৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১৩
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أكَلَ طَعَاماً، لَعِقَ
أصَابِعَهُ الثَّلاَثَ . قَالَ: وَقَالَ: إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ
فَلْيُمِط عَنهَا الأَذَى، وَلِيَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْها لِلشَّيْطان . وأَمَرَ
أن تُسلَتَ القَصْعَةُ، قَالَ: فإنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ في أيِّ طَعَامِكُمُ
البَرَكَة . رواه مسلم
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আহার করতেন তখন স্বীয়
তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, ‘‘কারো খাবারের লুকমা নিচে পড়ে গেলে সে যেন তা
তুলে পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলে এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে।’’ আর তিনি আমাদেরকে
খাদ্যপাত্র (বা বাসন) ভালভাবে চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘তোমরা জান
না যে, তোমাদের কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’
(মুসলিম ২০৩৪, তিরমিযী ১৮০৩, আবূ দাউদ ৩৮৪৫, আহমাদ ১২৪০৪,
১৩৬৭৫, দারেমী ১৯৪২, ২০২৫, ২০২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১৪
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيّاً إِلاَّ رَعَى
الْغَنَمَ ». فَقَالَ أصْحَابُهُ: وأنْتَ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، كُنْتُ أرْعَاهَا
عَلَى قَرَارِيطَ لأَهْلِ مَكَّةَ ». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন নবী প্রেরণ
করেননি, যিনি বকরী চরাননি। তাঁর সাহাবীগণ বললেন, আর আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি
কয়েক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম।’’
(সহীহুল বুখারী ২২৬২, ইবনু মাজাহ ২১৪৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১৫
وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «لَوْ دُعِيتُ إِلَى كُراعٍ أَوْ ذِرَاعٍ لأَجَبْتُ، وَلَو أُهْدِيَ
إِلَيَّ ذِرَاعٌ أَوْ كُرَاعٌ لَقَبِلْتُ ». رواه البخاري
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি আমাকে ছাগলাদির পা অথবা বাহু
খাওয়ানোর জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চয় তা কবুল করব। আর যদি আমাকে পা
অথবা বাহু উপঢৌকন দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চয় তা সাদরে গ্রহণ করব।’’
(সহীহুল বুখারী ২৫৬৮, ৫১৭৮, আহমাদ ৯২০১, ৯৮৫৫, ৯৮৮৩, ১০২৭৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১৬
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَتْ
نَاقَةُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم العَضْبَاءُ لاَ تُسْبَقُ، أَوْ لاَ
تَكَادُ تُسْبَقُ، فَجَاءَ أعْرَابيٌّ عَلَى قَعُودٍ لَهُ، فَسَبَقَهَا، فَشَقَّ
ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ حَتَّى عَرَفَهُ، فَقَالَ: «حَقٌّ عَلَى اللهِ أنْ
لاَ يَرْتَفِعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ وَضَعَهُ ». رواه البخاري
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আয্ববা নামক উটনীটি প্রতিযোগিতায় কোনদিন হারত
না অথবা তাকে অতিক্রম করে কেউ যেতে পারত না। একবার এক বেদুঈন তার একটি সওয়ারী উঁটে
সওয়ার হয়ে আসলে সেটি তার আগে চলে গেল। মুসলিমদের কাছে তা কষ্টদায়ক মনে হল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা জানতে পারলে বললেন, ‘‘আল্লাহর
বিধান হল, দুনিয়ার কোনো জিনিস উন্নত হলে, তিনি তাকে অবনত করেন।’’
(সহীহুল বুখারী ২৮৭১, ২৮৭২, ৬৫০১, নাসায়ী ৩৫৮৮, আবূ দাউদ
৪৮০২, আহমাদ ১১৫৯৯, ১৩২৪৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭২
অহংকার প্রদর্শন ও গর্ববোধ
করা অবৈধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿تِلۡكَ ٱلدَّارُ ٱلۡأٓخِرَةُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوّٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فَسَادٗاۚ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِينَ٨٣﴾ [القصص: ٨٣]
অর্থাৎ “এ আখেরাতের আবাস; যা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত
হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর মুত্তাকীদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম।” (সূরা
ক্বাসাস ৮৩ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ ﴾ [الاسراء: ٣٧]
অর্থাৎ “ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ
করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত-প্রমাণ হতে পারবে না।” (সূরা ইসরা ৩৭
আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخۡتَالٖ فَخُورٖ ١٨ ﴾ [لقمان: ١٨]
অর্থাৎ “মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না;
কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না।” (সূরা লুকমান ১৮ আয়াত)
‘গাল ফুলায়ো না’ অর্থাৎ অহংকারের সাথে চেহারা বিকৃত করো না।
মহান আল্লাহ কারূন সম্বন্ধে বলেন,
﴿ إِنَّ قَٰرُونَ كَانَ مِن قَوۡمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَيۡهِمۡۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ مِنَ ٱلۡكُنُوزِ مَآ إِنَّ مَفَاتِحَهُۥ لَتَنُوٓأُ بِٱلۡعُصۡبَةِ أُوْلِي ٱلۡقُوَّةِ إِذۡ قَالَ لَهُۥ قَوۡمُهُۥ لَا تَفۡرَحۡۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡفَرِحِينَ ٧٦ وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡيَاۖ وَأَحۡسِن كَمَآ أَحۡسَنَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ وَلَا تَبۡغِ ٱلۡفَسَادَ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٧٧ قَالَ إِنَّمَآ أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ عِندِيٓۚ أَوَ لَمۡ يَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَهۡلَكَ مِن قَبۡلِهِۦ مِنَ ٱلۡقُرُونِ مَنۡ هُوَ أَشَدُّ مِنۡهُ قُوَّةٗ وَأَكۡثَرُ جَمۡعٗاۚ وَلَا يُسَۡٔلُ عَن ذُنُوبِهِمُ ٱلۡمُجۡرِمُونَ ٧٨ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ فِي زِينَتِهِۦۖ قَالَ ٱلَّذِينَ يُرِيدُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا يَٰلَيۡتَ لَنَا مِثۡلَ مَآ ُوتِيَ قَٰرُونُ إِنَّهُۥ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٧٩ وَقَالَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ وَيۡلَكُمۡ ثَوَابُ ٱللَّهِ خَيۡرٞ لِّمَنۡ ءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗاۚ وَلَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلصَّٰبِرُونَ ٨٠ فَخَسَفۡنَا بِهِۦ وَبِدَارِهِ ٱلۡأَرۡضَ فَمَا كَانَ لَهُۥ مِن فِئَةٖ يَنصُرُونَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُنتَصِرِينَ ٨١ ﴾ [القصص: ٧٦، ٨١]
অর্থাৎ “কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি যুলুম করেছিল। আমি
তাকে ধনভান্ডার দান করেছিলাম যার চাবিগুলি বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও
কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, আল্লাহ
দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তার মাধ্যমে পরলোকের কল্যাণ
অনুসন্ধান কর। আর তুমি তোমার ইহলোকের অংশ ভুলে যেয়ো না। তুমি (পরের প্রতি) অনুগ্রহ
কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে
চেয়ো না। আল্লাহ অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না। সে বলল, ‘এ সম্পদ আমি
আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি।’ সে কি জানত না আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে
ধ্বংস করেছেন যারা তার থেকেও শক্তিতে ছিল প্রবল, সম্পদে ছিল প্রাচুর্যশালী? আর
অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করা হবে না। কারূন তার সম্প্রদায়ের
সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে বাহির হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, আহা!
কারূনকে যা দেওয়া হয়েছে সেরূপ যদি আমাদেরও থাকত; প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান। আর
যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক্ তোমাদের! যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে
তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা অন্য কেউ পায় না।
অতঃপর আমি কারূনকে ও তার প্রাসাদকে মাটিতে ধসিয়ে দিলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোন দল
ছিল না যে আল্লাহর শাস্তির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও
আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।” (সূরা ক্বাস্বাস ৭৬-৮১ আয়াত)
৬১৭
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله
عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ
كَانَ في قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّة مِنْ كِبْرٍ ! » فَقَالَ رَجُلٌ: إنَّ
الرَّجُلَ يُحِبُّ أنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَناً، ونَعْلُهُ حَسَنَةً ؟
قَالَ:«إنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الجَمَالَ، الكِبْرُ: بَطَرُ الحَقِّ وَغَمْطُ
النَّاسِ » رواه مسلم
আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে,
সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ একটি লোক বলল, ‘মানুষ তো ভালবাসে যে, তার
পোশাক সুন্দর হোক ও তার জুতো সুন্দর হোক, (তাহলে)?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ সুন্দর,
তিনি সৌন্দর্যকে ভালবাসেন। (সুন্দর পোশাক ও সুন্দর জুতো ব্যবহার অহংকার নয়, বরং)
অহংকার হল, সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’’
(মুসলিম ৯১, তিরমিযী ১৯৯৮, ১৯৯৯, আবূ দাউদ ৪০৯১, ইবনু
মাজাহ ৫৯, ৪১৭৩, আহমাদ ৩৭৭৯, ৩৯০৩, ৩৯৩৭, ৪২৯৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১৮
وَعَن سَلَمَةَ بنِ الأكوَعِ رضي الله عنه:
أنّ رَجُلاً أكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِشِمَالِهِ، فَقَالَ:
«كُلْ بيَمِينِكَ» قَالَ: لاَ أسْتَطِيعُ ! قَالَ: لاَ اسْتَطَعْتَ » مَا مَنَعَهُ
إِلاَّ الكِبْرُ . قَالَ: فما رفَعها إِلَى فِيهِ. رواه مسلم
সালামাহ
ইবনে আকওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার বাম হাত দ্বারা খেল। তিনি
বললেন, ‘‘তোমার ডান হাত দ্বারা খাও।’’ সে বলল, ‘আমি অপারগ।’ তিনি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি (যেন ডান হাতে খেতে) না পারো।’’ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা মানতে তাকে অহংকারই বাধা দিয়েছিল।
বর্ণনাকারী বলেন, ‘(তারপর) থেকে সে তার ডান হাত মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।’
(মুসলিম ২০২১, আহমাদ ১৬০৫৮, ১৬০৬৪, ১৬০৯৫, দারেমী ২০৩২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬১৯
وَعَن حَارِثَةَ بنِ وهْبٍ رضي الله عنه
قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
يَقُولُ:«أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ النَّارِ ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوّاظٍ
مُسْتَكْبِرٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
হারেসাহ
ইবনে অহাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘আমি তোমাদেরকে
জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন
হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।’’
(সহীহুল বুখারী ৪৯১৮, ৬০৭২, ৬৬৫৭, মুসলিম ২৮৫৩, তিরমিযী
২৬০৫, ইবনু মাজাহ ৪১১৬, আহমাদ ১৮২৫৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২০
وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه،
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «احْتَجَّتِ الجَنَّةُ وَالنَّارُ،
فَقَالَت النَّارُ: فِيَّ الْجَبَّارُونَ والمُتَكَبِّرُونَ . وَقَالَتِ
الجَنَّةُ: فيَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَمَسَاكِينُهُم، فَقَضَى اللهُ بَينَهُمَا:
إِنَّكِ الجَنَّّةُ رَحْمَتِي أرْحَمُ بِكِ مَنْ أشَاءُ، وَإنَّكِ النَّارُ
عَذَابِي أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أشَاءُ، وَلِكِلَيْكُمَا عَلَيَّ مِلْؤُهَا». رواه
مسلم
আবূ
সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাত এবং জাহান্নাম পরস্পরের মধ্যে
ঝগড়া করল। জাহান্নাম বলল, ‘আমার মধ্যে বড় বড় উদ্ধত এবং অহংকারীরা বসবাস করবে।’ আর
জান্নাত বলল, ‘আমার মধ্যে দুর্বল এবং মিসকীনরা বসবাস করবে।’ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা
তাদের মধ্যে মীমাংসা করলেন যে, ‘হে জান্নাত! তুমি আমার অনুগ্রহ, আমি তোমার দ্বারা
যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। এবং হে জাহান্নাম! তুমি আমার শাস্তি, আমি তোমার
দ্বারা যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দেব। আর তোমাদের দুটোকেই পরিপূর্ণ করা আমার
দায়িত্ব।’’
(সহীহুল বুখারী ৪৮৪৯, ৪৮৫০, ৭৪৪৯, মুসলিম ২৮৪৭, ২৮৪৬,
তিরমিযী ২৫৫৭, ২৫৬১, আহমাদ ৭৬৬১, ২৭৩৮১, ২৮২২৪, ১০২১০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২১
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: لاَ يَنْظُرُ اللهُ
يَوْمَ القِيَامَةِ إِلَى مَنْ جَرَّ إزَارَهُ بَطَراً . متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির
দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না, যে অহংকারের সাথে তার লুঙ্গি (প্যাণ্ট্,
পায়জামা মাটিতে) ছেঁচড়াবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৭৮৮, মুসলিম ২০৮৭, আহমাদ ৮৭৭৮, ৮৯১০,
৯০৫০, ৯২৭০, ৯৫৪৫, ২৭২৫৩, ৯৮৫১, ১০১৬৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৯৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২২
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ
القِيَامَة، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ
ألِيمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ ». رواه مسلم
.
উক্ত রাবী থেকে বর্ণিতঃ
,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা
কিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং
তাদের দিকে (অনুগ্রহের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক
শাস্তি, (১) ব্যভিচারী বৃদ্ধ, (২) মিথ্যাবাদী বাদশাহ এবং (৩) অহংকারী গরীব।’’
(মুসলিম ১০৭, আহমাদ ৭৩৯৩, ৯৩১১, ৯৮৬৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২৩
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «قَالَ الله - عَزَّ وَجَلَّ -: العِزُّ
إِزَارِي، وَالكِبرِيَاءُ رِدَائِي، فَمَنْ يُنَازِعُنِي فِي وَاحِدٍ مِنهُمَا
فَقَد عَذَّبْتُهُ ». رواه مسلم
সাবেক
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘সম্মান আমার লুঙ্গি
এবং গর্ব আমার চাদর। (অর্থাৎ খাস আমার গুণ।) সুতরাং যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে এর
মধ্য থেকে যে কোন একটি টেনে নিতে চাইবে, আমি তাকে শাস্তি দেব।’’
(মুসলিম ২৬২০, আবূ দাউদ ৪০৯০, ইবনু মাজাহ ৪১৭৪, আহমাদ
৭৩৩৫, ৮৬৭৭, ৯০৯৫, ৯২২৪, ৯৪১০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২৪
وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمشِي فِي حُلَّةٍ
تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ، مُرَجِّلٌ رَأسَهُ، يَخْتَالُ فِي مَشْيَتهِ، إِذْ خَسَفَ
اللهُ بِهِ، فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ في الأَرضِ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ ». متفقٌ
عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একদা (পূর্ববর্তী উম্মতের) এক
ব্যক্তি একজোড়া পোশাক পরে, গর্বভরে, মাথা আঁচড়ে অহংকারের সাথে চলা-ফেরা করছিল।
ইত্যবসরে আল্লাহ তার (পায়ের নীচের মাটিকে) ধসিয়ে দিলেন। সুতরাং সে কিয়ামত দিবস
পর্যন্ত মাটির গভীরে নেমে যেতেই থাকবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৭৮৯, মুসলিম ২০৮৮, আহমাদ ৭৫৭৪, ২৭৩৯৪,
৮৮২২, ৯০৮২, ৯৫৭৬, ১০০১০, ১০০৭৭, ১০৪৮৮, দারেমী ৪৩৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২৫
وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رضي الله
عنهقَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لَا يَزَالُ الرَّجُلُ
يَذْهَبُ بِنفْسِهِ حَتّىٰ يُكْتَبَ فِي الجَبَّارِيْنَ، فَيُصِيْبُهُ مَا
أَصَابَهُمْ » رواهُ الترمذي وقال: حديث حسن .
সালামাহ্
ইবনুল আক্ওয়া’ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অহংকারবশত নিজকে বড় মনে করে
লোকজনকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে। পরিশেষে অহংকারী ও উদ্ধতদের মধ্যে তার নাম লিখা
হয়, তারপর সে অহংকারী ও উদ্ধত লোকদের বিপদে পতিত হয়।
(তিরমিযি) হাদীসটি যঈফ। সিলসিলাহ যয়ীফাহ ১৯১৪নং)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭৩
সচ্চরিত্রতার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা ক্বালাম ৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ “সেই ধর্মভীরুদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল
অবস্থায় দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে।” (সূরা আলে ইমরান
১৩৪ আয়াত)
৬২৬
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم أحْسَنَ النَّاسِ خُلُقاً .
متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মানুষের চাইতে বেশি সুন্দর
চরিত্রের ছিলেন।’
(সহীহুল বুখারী ৬২০৩, ৬১২৯, মুসলিম ২১৫০, তিরমিযী ৩৩৩,
১৯৬৯, আবূ দাউদ ৬৫৮, ৪৯৬৯, ইবনু মাজাহ ৩৭২০, ৩৭৪০, আহমাদ ১১৭২, ১১৭৮৯, ১২২১৫, ১২৩৪২,
১২৪৩৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২৭
وَعَنهُ، قَالَ: مَا مَسِسْتُ دِيبَاجاً
وَلاَ حَرِيراً ألْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَلاَ
شَمَمْتُ رَائِحَةً قَطُّ أطْيَبَ مِنْ رَائِحَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، وَلَقَدْ خَدَمتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
عَشْرَ سِنِينَ، فَمَا قَالَ لِي قَطُّ: أُفٍّ، وَلاَ قَالَ لِشَيءٍ فَعَلْتُهُ:
لِمَ فَعَلْتَه ؟ وَلاَ لشَيءٍ لَمْ أفعَلهُ: ألاَ فَعَلْتَ كَذَا ؟ متفقٌ
عَلَيْهِ
সাবেক
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর করতল অপেক্ষা অধিকতর কোমল কোনো পুরু বা পাতলা
রেশম আমি স্পর্শ করিনি। আর তাঁর শরীরের সুগন্ধ অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধ কোন বস্তু
আমি কখনো শুঁকিনি। আর আমি দশ বছর পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করেছি। তিনি কখনোও আমার জন্য ‘উঃ’ শব্দ বলেননি। কোন কাজ করে
বসলে তিনি এ কথা জিজ্ঞেস করেননি যে, ‘তুমি এ কাজ কেন করলে?’ এবং কোন কাজ না করলে
তিনি বলেননি যে, ‘তা কেন করলে না?’
(সহীহুল বুখারী ৩৫৪৭, ৩৫৪৮, ৩৫৫০, ৩৫৬১, ৩৫৮৯৪, ৫৮৯৫,
৫৯০০, ৫৯০৩, ৫৯০৪, ৫৯০৫, ৫৯০৬, ৫৯১২, ৫৯০৭, মুসলিম ২৩৩৮, ২৩৪১, ২৩৪৭, তিরমিযী ১৮৫৪,
৩৬২৩, নাসায়ী ৫০৫৩, ৫০৮৬, ৫০৮৭, ৫২৩৪, ৫২৩৫, আবূ দাউদ ৪১৮৫, ৪১৮৬, ইবনু মাজাহ ৩৬২৯,
৩৬৩৪, আহমাদ ১২৩৭৩, ১১৫৫৪, ১১৫৭৭, ১১৬৪২, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৩৪, ১৭০৭, দারেমী ৬১৬২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২৮
وَعَنِ الصَّعبِ بنِ جَثَّامَةَ رضي الله
عنه، قَالَ: أَهدَيتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
حِمَاراً وَحْشِيّاً، فَرَدَّهُ عَلَيَّ، فَلَمَّا رَأَى مَا فِي وَجهِي، قَالَ: «
إِنَّا لَمْ نَرُدَّهُ عَلَيْكَ إِلاَّ ِلأَنَّا حُرُمٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
সা‘ব
ইবনে জাস্সামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (শিকার করা) এক জংলী গাধা উপঢৌকন
দিলাম। কিন্তু তিনি তা আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি আমার চেহারায় (বিষণ্ণতার
চিহ্ন) দেখে বললেন, ‘‘আমরা ইহরামের অবস্থায় আছি, তাই আমরা এটি তোমাকে ফিরিয়ে
দিলাম।’’ (বুখারী ও মুসলিম) (যেহেতু ইহরাম অবস্থায় শিকার করা ও তার গোশ্ত খাওয়া
নিষিদ্ধ।)
(সহীহুল বুখারী ১৮২৫, ২৫৭৩, ২৫৯৬, মুসলিম ১১৯৩, ১১৯৪,
তিরমিযী ৮৪৯, নাসায়ী ২৮১৯, ২৮২০, ২৮২৩, ইবনু মাজাহ ৩০৯০, আহমাদ ১৫৯৮৭, ১৫৯৮৮, ১৬২২১,
১৬২৩৫, ২৭৮১২, মুওয়াত্তা মালিক ৭৯৩, দারেমী ১৮২৮, ১৮৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬২৯
وَعَنِ النَّوَاسِ بنِ سَمعَانَ رضي الله
عنه، قَالَ: سَأَلتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَن
البِرِّ وَالإثمِ، فَقَالَ: « البِرُّ: حُسنُ الخُلُقِ، والإثمُ: مَا حَاكَ فِي
صَدرِكَ، وكَرِهْتَ أن يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ ». رواه مسلم
নাওয়াস
ইবনে সাম‘আন রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করলাম, তিনি বললেন, ‘‘পুণ্য হল সচ্চরিত্রতার নাম। আর পাপ হল তাই, যা তোমার অন্তরে
সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক এ কথা তুমি অপছন্দ কর।’’
(মুসলিম ২৫৫৩, তিরমিযী ২৩৮৯, আহমাদ ১৭১৭৯, দারেমী ২৭৮৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৩০
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: لَمْ يَكُن رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم فَاحِشاً وَلاَ مُتَفَحِّشاً، وَكَانَ يَقُولُ: « إنَّ مِنْ
خِيَارِكُمْ أحْسَنَكُمْ أخْلاَقاً ». متفقٌ عَلَيْهِ
আব্দুল্লাহ
ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রকৃতিগতভাবে কথা ও কাজে) অশ্লীল ছিলেন না
এবং (ইচ্ছাকৃতভাবেও) অশ্লীল ছিলেন না। আর তিনি বলতেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই
ব্যক্তিই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৭৫৮, ৩৫৫৯, ৩৭৬০, ৩৮০৬, ৩৮০৮, ৪৯৯৯, ৬০২৯,
৬০৩৫, মুসলিম ২৩২১, ২৪৬৪, তিরমিযী ১৯৭৫, ৩৮১০, আহমাদ ৫৪৬৮, ৬৬৯৬, ২৭৬৭০, ৬৭৭৪, ৬৭৯৮,
৬৯৯৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৩১
وَعَن أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه:
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: مَا مِنْ شَيْءٍ أثْقَلُ فِي
مِيزَانِ العَبدِ المُؤْمِنِ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ حُسْنِ الخُلُقِ، وَإنَّ
الله يُبْغِضُ الفَاحِشَ البَذِيَّ. رواه الترمذي، وقال:حديث حسن صحيح
আবূ
দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কিয়ামতের দিন (নেকী) ওজন করার
দাঁড়ি-পাল্লায় সচ্চরিত্রতার চেয়ে কোনো বস্তুই অধিক ভারী হবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা
অশ্লীল ও চোয়াড়কে অপছন্দ করেন।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
(তিরমিযী ২০০২, আবূ দাউদ ৪৭৯৯, আহমাদ ২৬৯৭১, ২৬৯৮৪, ২৭০০৫)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৬৩২
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَنْ أكثرِ مَا
يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ ؟ قَالَ:«تَقْوَى اللهِ وَحُسنُ الخُلُقِ »،
وَسُئِلَ عَنْ أكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ، فَقَالَ: « الفَمُ
وَالفَرْجُ ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح »
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি
জান্নাতে নিয়ে যাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র।’’ আর তাঁকে (এটাও)
জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে?’ তিনি বললেন,
‘‘মুখ ও যৌনাঙ্গ (অর্থাৎ উভয় দ্বারা সংঘটিত পাপ)।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে)
(তিরমিযী ২০০৪, ইবনু মাজাহ ৪২৪৬, আহমাদ ৭৮৪৭, ৮৮৫২, ৯৪০৩)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৬৩৩
وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «أكْمَلُ المُؤمِنِينَ إِيمَاناً أحسَنُهُمْ
خُلُقاً، وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ ». رواه الترمذي، وقال: حديث
حسن صحيح
সাবেক
রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সে
ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দরতম। আর তোমাদের
উত্তম ব্যক্তি তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ
সূত্রে)
(তিরমিযী ১১৬২, আহমাদ ৭৩৫৪, ৯৭৫৬, ১০৪৩৬, দারেমী ২৭৯২)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
৬৩৪
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت:
سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «إنَّ
المُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِه دَرَجَةَ الصَّائِمِ القَائِمِ». رواه
أَبُو داود
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই মু’মিন তার
সদাচারিতার কারণে দিনে (নফল) রোযাদার এবং রাতে (নফল) ইবাদতকারীর মর্যাদা পেয়ে
থাকে।’’
(আবূ দাউদ ৪৭৯৮, আহমাদ ২৩৮৩৪, ২৪০৭৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৩৫
وَعَن أَبِي أُمَامَةَ البَاهِليِّ رضي
الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «
أنَا زَعِيمٌ بِبَيتٍ في رَبَضِ الجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ المِرَاءَ وَإنْ كَانَ
مُحِقّاً، وَبِبَيْتٍ في وَسَطِ الجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الكَذِبَ وَإنْ كَانَ
مَازِحاً، وَبِبَيْتٍ في أعلَى الجَنَّةِ لِمَنْ حَسُنَ خُلُقُهُ » . حديث صحيح،
رواه أَبُو داود بإسناد صحيح .
আবূ
উমামাহ বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ
সীমায় একটি ঘর দেওয়ার জন্য জামিন হচ্ছি, যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও কলহ-বিবাদ
বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে
উপহাসছলেও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু
জায়গায় একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যার চরিত্র সুন্দর।’’
(আবূ দাউদ ৪৮০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৩৬
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ
الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إنَّ مِنْ أحَبِّكُمْ إليَّ، وَأقْرَبِكُمْ
مِنِّي مَجْلِساً يَوْمَ القِيَامَةِ، أحَاسِنَكُم أخْلاَقاً، وَإنَّ أبْغَضَكُمْ
إلَيَّ وَأبْعَدَكُمْ مِنِّي يَوْمَ القِيَامَةِ، الثَّرْثَارُونَ
وَالمُتَشَدِّقُونَ وَالمُتَفَيْهقُونَ » قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، قَدْ عَلِمْنَا الثَّرْثَارُونَ وَالمُتَشَدِّقُونَ ، فمَا
المُتَفَيْهقُونَ ؟ قَالَ: المُتَكَبِّرُونَ ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
وروى الترمذي عن عبد الله بن المبارك رحمه الله في تفسير حسن الخلق قال: هو
طلاقة الوجه، وبذل المعروف، وكف الأذى.
জাবের
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং
কিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকটতম ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের
মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের মধ্যে আমার নিকট ঘৃণ্যতম এবং কিয়ামতের দিন
অবস্থানে আমার নিকট থেকে দূরতম হবে তারা; যারা অনর্থক অত্যধিক আবোল-তাবোল বলে ও
বাজে বকে এমন বাচাল ও বখাটে লোক; আলস্যভরে বা কায়দা করে টেনে টেনে কথা বলে। আর
অনুরূপ অহংকারীরা।’’
(তিরমিযী ২০১৮)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭৪
সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও
কোমলতার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ﴾ [ال عمران: ١٣٤]
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের জন্য বেহেশত প্রস্তুত রাখা হয়েছে যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল
অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ
(বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩]
অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে
এড়িয়ে চল।” (সূরা আ’রাফ ১৯৯ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَا تَسۡتَوِي ٱلۡحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُۚ ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِي بَيۡنَكَ وَبَيۡنَهُۥ عَدَٰوَةٞ كَأَنَّهُۥ وَلِيٌّ حَمِيمٞ ٣٤ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٣٥ ﴾ [فصلت: ٣٤، ٣٥]
অর্থাৎ “ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে
যাদের সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এ চরিত্রের
অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা ধৈর্যশীল, এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা
মহাভাগ্যবান। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয়
প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩৪-৩৬ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ٤٣ ﴾ [الشورا: ٤٣]
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।”
(সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
৬৩৭
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
ِلأَشَجِّ عَبْدِ القَيْسِ: « إِنَّ فِيكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللهُ:
الْحِلْمُ وَالأنَاةُ ». رواه مسلم
ইবনে
আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশাজ্জ্ আব্দুল কায়েসকে বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় তোমার
মধ্যে এমন দু’টি স্বভাব রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন; সহনশীলতা ও চিন্তা-ভাবনা করে
কাজ করা।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৩, মুসলিম ১৭, তিরমিযী ১৫৯৯, ২৬১১, নাসায়ী
৫০৩১, ৫৫৪৮, ৫৬৪৩, ৫৬৯২, আবূ দাউদ ৩৬৯০, ৩৬৯২, ৩৬৯৬, ৪৬৭৭, আহমাদ ২০১০, ২৪৭২, ২৬৪৫,
২৭৬৪, ৩১৫৬, ৩৩৯৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৩৮
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ اللهَ
رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الأَمْرِ كُلِّه ». متفقٌ عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কোমল; তিনি প্রত্যেকটি
ব্যাপারে কোমলতা ও নম্রতাকে ভালবাসেন।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৯২৭, ২৯৩৫, ৬০২৪, ৬০৩০, ৬২৫৬, ৬৩৯৫, ৬৪০১,
মুসলিম ২১৬৫, তিরমিযী ২৭০১, ইবনু মাজাহ ৩৬৯৮, আহমাদ ২৩৫৭০, ২৪০৩২, ২৪২৩০, ২৪৫০৮, ২৫০১৫,
২৫৩৯৩, দারেমী ২৭৯৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৩৯
وَعَنهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: « إنَّ اللهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفقَ، وَيُعْطِي عَلَى الرِّفقِ،
مَا لاَ يُعْطِي عَلَى العُنْفِ، وَمَا لاَ يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ ». رواه
مسلم
উক্ত
বর্ণনাকারিণী থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতাকে
ভালবাসেন। তিনি নম্রতার উপরে যা দেন তা তিনি কঠোরতা এবং অন্য কোন জিনিসের উপর দেন
না।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৯২৭, মুসলিম ২৫৯৩, তিরমিযী ২৭০১, আহমাদ
২৩৫৭০, ২৪০৩২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪০
وَعَنهَا: أنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: « إنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ في شَيْءٍ إِلاَّ زَانَهُ، وَلاَ
يُنْزَعُ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ شَانَهُ ». رواه مسلم
সাবেক
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নম্রতা যে জিনিসেই থাকে, তাকে তা সুন্দর
বানিয়ে দেয় এবং তা যে জিনিস থেকেই বের করে নেওয়া হয়, তাকে তা অসুন্দর বানিয়ে
দেয়।’’
(মুসলিম ২৫৯৪, আবূ দাউদ ২৪৭৮, ৪৮০৮, আহমাদ ২৩৭৮৬, ২৪২৮৭,
২৪৪১৭৪, ২৪৮৫৮, ২৫১৮১, ২৫৩৩৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪১
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
بَالَ أعْرَابيٌّ فِي المَسجدِ، فَقَامَ النَّاسُ إِلَيْهِ لِيَقَعُوا فِيهِ،
فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: « دَعُوهُ وَأرِيقُوا عَلَى بَوْلِهِ
سَجْلاً مِنْ مَاءٍ، أَوْ ذَنُوباً مِنْ مَاءٍ، فَإنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ
وَلَم تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ ». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
এক
বেদুঈন মসজিদের ভিতরে প্রস্রাব করে দিল। সুতরাং লোকেরা তাকে ধমক দেওয়ার জন্য উঠে
দাঁড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ওকে ছেড়ে দাও এবং প্রস্রাবের
উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কেননা তোমাদেরকে সহজ নীতি অবলম্বন করার জন্য পাঠানো
হয়েছে, কঠোর নীতি অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়নি।’’
(সহীহুল বুখারী ২২০, ৬১২৮, তিরমিযী ১৪৭, নাসায়ী ৫৬, ৩৩০,
আবূ দাউদ ৩৮০, ইবনু মাজাহ ৫২৯, আহমাদ ৭২১৪, ৭৭৪০, ১০১৫৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪২
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا، وَبَشِّرُوا
وَلاَ تُنَفِّرُوا ». متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সহজ কর, কঠিন করো না এবং
(লোকদেরকে) সুসংবাদ দাও। তাদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করো না।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৯, ৬১২৫, মুসলিম ১৭৩৪, আহমাদ ১১৯২৪, ১২৭৬৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪৩
وَعَن جَرِيرِ بنِ عبدِ اللهِ رضي الله
عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
يَقُولُ: « مَنْ يُحْرَمِ الرِفْقَ، يُحْرَمِ الخَيْرَ كلَّهُ ». رواه مسلم
জারীর
ইবনে আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যাকে নম্রতা থেকে
বঞ্চিত করা হয়, তাকে সমস্ত মঙ্গল থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া হয়।’’
(মুসলিম ২৫৯২, আবূ দাউদ ৪৮০৯, ইবনু মাজাহ ৩৬৮৭, আহমাদ
২৭৮২৯, ১৮৭৬৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪৪
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم: أَوْصِنِي . قَالَ: «لاَ تَغْضَبْ
»، فَرَدَّدَ مِرَاراً، قَالَ: « لاَ تَغْضَبْ ». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘আপনি আমাকে কিছু অসিয়ত করুন!’
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’ সে
ব্যক্তি এ কথাটি কয়েকবার বলল। তিনি (প্রত্যেক বারেই একই কথা) বললেন, ‘‘তুমি
রাগান্বিত হয়ো না।’’
(সহীহুল বুখারী ৬১১৬, তিরমিযী ২০২০, আহমাদ ২৭৩১১, ৯৬৮২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪৫
وَعَن أَبي يَعلَى شَدَّادِ بنِ أَوسٍ رضي
الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: « إنَّ الله كَتَبَ
الإحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإذَا قَتَلْتُم فَأحْسِنُوا القِتْلَة، وَإِذَا
ذَبَحْتُمْ فَأحْسِنُوا الذِّبْحَةَ، وَليُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَه، وَلْيُرِح
ذَبِيحَتَهُ ». رواه مسلم
আবূ
ইয়া’লা শাদ্দাদ ইবনে আওস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ প্রতিটি কাজকে উত্তমরূপে
(অথবা অনুগ্রহের সাথে) সম্পাদন করাটাকে ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যখন (কাউকে)
হত্যা করবে, তখন ভালভাবে হত্যা করো এবং যখন (পশু) জবাই করবে, তখন ভালভালে জবাই
করো। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, সে যেন নিজ ছুরি ধারাল করে নেয় এবং যবেহযোগ্য পশুকে
আরাম দেয়।’’ (অর্থাৎ জবাই-এর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে।)
(মুসলিম ১৯৫৫, তিরমিযী ১৪০৯, নাসায়ী ৪৪০৫, ৪৪১১, ৪৪১২,
৪৪১৩, ৪৪১৪, আবূ দাউদ ২৮১৫, ইবনু মাজাহ ৩১৭০, আহমাদ ১৬৬৬৪, ১৬৬৭৯, ১৫৬৮৯, দারেমী ১৯৭০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪৬
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت: مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بَيْنَ
أمْرَيْنِ قَطُّ إِلاَّ أَخَذَ أيْسَرَهُمَا، مَا لَمْ يَكُنْ إثماً، فَإنْ كَانَ
إثماً، كَانَ أبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ . وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لِنَفْسِهِ في شَيْءٍ قَطُّ، إِلاَّ أن تُنْتَهَكَ
حُرْمَةُ الله، فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ تَعَالَى . متفقٌ عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখনই দু’টি কাজের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া হত,
তখনই তিনি সে দু’টির মধ্যে সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন; যদি সে কাজটি গর্হিত না হত।
কিন্তু তা গর্হিত কাজ হলে তিনি তা থেকে সকলের চেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। আর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য কখনই কোন বিষয়ে প্রতিশোধ
গ্রহণ করেননি। কিন্তু (কেউ) আল্লাহর হারামকৃত কাজ করে ফেললে তিনি কেবলমাত্র
আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।’
(সহীহুল বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৭,
আবূ দাউদ ৪৭৮৫, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪০২৮, ২৪২৯৯, ২৪৩০৯, ২৪৩২৫, ২৪৭৬০, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪৭
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: ألاَ أُخْبِرُكُمْ
بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّار ؟ أَوْ بِمَنْ تَحْرُمُ عَلَيْهِ النَّار ؟
تَحْرُمُ عَلَى كُلِّ قَرِيبٍ، هَيّنٍ، لَيِّنٍ، سَهْلٍ رواه الترمذي، وقال:حديث
حسن
ইবনে
মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে সে সমস্ত লোক সম্পর্কে
বলব না, যারা জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম অথবা যাদের জন্য জাহান্নামের আগুন
হারাম? এ (আগুন) প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম হবে, যে মানুষের নিকটবর্তী, নম্র,
সহজ ও সরল।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
(তিরমিযী ২৪৮৮, আহমাদ ৩৯২৮)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭৫
মার্জনা করা এবং মূর্খদেরকে
এড়িয়ে চলার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে
এড়িয়ে চল।” (সূরা আ’রাফ ১৯৯ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
অর্থাৎ “তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা হিজ্র ৮৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ “তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি
পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন?” (সূরা নূর ২২ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল
অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ
(বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।”
(সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
৬৪৮
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا:
أَنَّهَا قَالَت لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم: هَلْ أتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ
أشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ ؟ قَالَ: لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ، وَكَانَ أشَدُّ
مَا لَقيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ، إذْ عَرَضْتُ نَفْسِي عَلَى ابْنِ عَبْدِ
يَالِيْلَ بْنِ عَبْدِ كُلاَلٍ، فَلَمْ يُجِبْني إِلَى مَا أرَدْتُ، فَانْطَلَقْتُ
وَأنا مَهْمُومٌ عَلَى وَجْهِي، فَلَمْ أسْتَفِقْ إِلاَّ وأنَا بِقَرْنِ الثَّعَالِبِ،
فَرَفَعْتُ رَأْسِي، وَإِذَا أنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أظَلَّتْنِي، فَنَظَرْتُ
فَإذَا فِيهَا جِبريلُ عليه السلام، فَنَادَاني، فَقَالَ: إنَّ الله تَعَالَى قَدْ
سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ، وَقَد بَعَثَ إلَيْكَ
مَلَكَ الجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بمَا شِئْتَ فِيهِمْ . فَنَادَانِي مَلَكُ
الجِبَالِ، فَسَلَّمَ عَلَيَّ، ثُمَّ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إنَّ اللهَ قَدْ سَمِع
قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ، وَأنا مَلَكُ الجِبال، وَقَدْ بَعَثَنِي رَبِّي إلَيْكَ
لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرِكَ، فَمَا شِئْتَ، إنْ شئْتَ أطْبَقْتُ عَلَيْهِمُ
الأَخْشَبَيْنِ . فَقَالَ النبي صلى الله عليه وسلم: « بَلْ أرْجُو أنْ يُخْرِجَ
اللهُ مِنْ أصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً
. متفقٌ عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘আপনার উপর কি উহুদের দিনের
চেয়েও কঠিন দিন এসেছে?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমার কওম থেকে বহু কষ্ট পেয়েছি এবং
সবচেয়ে বেশি কষ্ট আক্বাবার দিন পেয়েছি, যেদিন আমি নিজেকে ইবনে আব্দে ইয়ালীল ইবনে
আব্দে কুলাল (ত্বায়েফের এক বড় সর্দার) এর উপর (ইসলামের দিকে আহবান করার জন্য) পেশ
করেছিলাম। সে আমার দাওয়াত গ্রহণ করল না। সুতরাং আমি চিন্তিত হয়ে চলতে শুরু করলাম।
তারপর ‘ক্বারনুস সা‘আলিব’ (বর্তমানে সাইল কাবীর) নামক স্থানে পৌঁছলে সেখানে কিছু
স্বস্তি অনুভব করলাম। আমি (আকাশের দিকে) মাথা উঠিয়ে দেখতে পেলাম যে, একটা মেঘখন্ড
আমার উপর ছায়া করে আছে। অতঃপর গভীর দৃষ্টিতে দেখলাম, তাতে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম
রয়েছেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘আপনার কওম আপনাকে যে কথা বলেছে এবং তারা আপনাকে
যে জবাব দিয়েছে, তা সবই মহান আল্লাহ শুনেছেন। অতঃপর তিনি আপনার নিকট পর্বতমালার
ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি তাঁকে তাদের (ত্বায়েফবাসীদের) ব্যাপারে যা ইচ্ছা
আদেশ দেন।’ অতঃপর পর্বতমালার ফেরেশতা আমাকে আওয়াজ দিলেন এবং আমাকে সালাম দিয়ে
বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনার কওম আপনাকে যা বলেছে, তা (সবই) মহান আল্লাহ শুনেছেন।
আমি হচ্ছি পর্বতমালার ফেরেশতা। আমার প্রভু আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, যেন আপনি
আমাকে তাদের ব্যাপারে (কোন) নির্দেশ দেন। সুতরাং আপনি কী চান? আপনি চাইলে, আমি
(মক্কার) বড় বড় পাহাড় দু’টিকে তাদের উপর চাপিয়ে দেব।’ (এ কথা শুনে) নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘(এমন কাজ করবেন না) বরং আমি আশা করছি যে,
মহান আল্লাহ তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা এক আল্লাহর
উপাসনা করবে এবং তাঁর সাথে কোন জিনিসকে শরীক করবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ৩২৩১, ৭৩৮৯, মুসলিম ১৭৯৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৪৯
وَعَنهَا، قَالَتْ: مَا ضَرَبَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم شَيْئاً قَطُّ بِيَدِهِ، وَلاَ
امْرَأةً وَلاَ خَادِماً، إِلاَّ أنْ يُجَاهِدَ فِي سَبيلِ اللهِ، وَمَا نِيلَ
مِنْهُ شَيْءٌ قَطُّ فَيَنْتَقِمَ مِنْ صَاحِبِهِ، إِلاَّ أن يُنْتَهَكَ شَيْءٌ
مِنْ مَحَارِمِ اللهِ تَعَالَى، فَيَنْتَقِمُ للهِ تَعَالَى . رواه مسلم
উক্ত
আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কখনো কাউকে স্বহস্তে মারেননি, না কোন স্ত্রীকে না কোন দাস-দাসীকে। কারো দিক থেকে
তিনি কোন কষ্ট পেলে কষ্টদাতার নিকট থেকে প্রতিশোধ নেননি। হ্যাঁ, যদি আল্লাহর
হারামকৃত কোন জিনিস লংঘন করা হত (অর্থাৎ কেউ চুরি, ব্যভিচার ইত্যাদি কাজ করে
ফেলত), তাহলে আল্লাহর জন্যই তিনি প্রতিশোধ নিতেন (শাস্তি দিতেন)।’
(সহীহুল বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৭,
২৩২৮, আবূ দাউদ ৪৭৮৫, ৪৭৮৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৪, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪০২৮, ২৪২৯৯, ২৪৩০৯, ২৪৩২৫,
২৫৭৩০, ২৭৬৫৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭১, দারেমী ২২১৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৫০
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنْتُ
أَمشِي مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهِ بُرْدٌ نَجْرَانيٌّ
غَلِيظُ الحَاشِيَةِ، فأدْرَكَهُ أعْرَابِيٌّ فَجَبذَهُ بِرِدَائِهِ جَبْذَةً
شَديدةً، فَنَظَرْتُ إِلَى صَفْحَةِ عَاتِقِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، وَقَدْ
أثَّرَتْ بِهَا حَاشِيَةُ الرِّدَاءِ مِنْ شِدَّةِ جَبْذَتِهِ، ثُمَّ قَالَ: يَا
مُحَمَّدُ، مُر لِي مِنْ مَالِ اللهِ الَّذِي عِنْدَكَ . فَالتَفَتَ إِلَيْهِ،
فَضَحِكَ ثُمَّ أَمَرَ لَهُ بِعَطَاءٍ . متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে পথ চলছিলাম। সে সময় তাঁর উপর মোটা পেড়ে
একখানি নাজরানী চাদর ছিল। অতঃপর পথে এক বেদুঈনের সঙ্গে দেখা হল। সে তাঁর চাদর ধরে
খুব জোরে টান দিল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁধের এক পাশে
দেখলাম যে, খুব জোরে টানার কারণে চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। পুনরায় সে বলল, ‘ওহে
মুহাম্মাদ! তোমার নিকট আল্লাহর যে মাল আছে, তা থেকে আমাকে দেওয়ার আদেশ কর।’ তিনি
তার দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসলেন। অতঃপর তাকে (কিছু মাল) দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।
(সহীহুল বুখারী ৩১৪৯, ৫৮০৯, ৬০৮৮, মুসলিম ১০৫৭, ইবনু মাজাহ
৩৫৫৩, আহমাদ ১২১৩৯, ১২৭৮২, ১২৯২৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৫১
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ:
كَأَنِّي أَنظُرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَحْكِي نَبِيّاً مِنَ
الأَنبِيَاءِ، صَلَوَاتُ اللهِ وَسَلامُه عَلَيْهِمْ، ضَرَبَهُ قَوْمُهُ
فَأدْمَوْهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ، ويَقُولُ: « اَللهم اغْفِرْ
لِقَوْمِي ؛ فَإنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবীদের মধ্যে এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি,
তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে রক্তাক্ত করে দিয়েছে, আর তিনি তাঁর চেহারা থেকে রক্ত মুছছেন
এবং বলছেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও। কেননা তারা অজ্ঞ।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৪৭৭, ৬৯২৯, মুসলিম ১৭৯২, ইবনু মাজাহ ৪০২৫,
আহমাদ ৩৬০০, ৪০৪৭, ৪০৯৬, ৪১৯১, ৪৩১৯, ৪৩৫৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৫২
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: « لَيْسَ الشَّديدُ
بِالصُّرَعَةِ، إنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ ».
متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কুশ্তিগীর বীর সে নয়, যে প্রতিন্দ্বীকে
চিৎপাত করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে বীর সেই, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে
পারে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬১১৪, মুসলিম ২৬০৯, আহমাদ ৭১৭৮, ৭৫৮৪,
১০৩২৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭৬
কষ্ট সহ্য করার মাহাত্ম্য
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের
জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ
সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে
ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।”
(সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
এ ব্যাপারে পূর্বোক্ত পরিচ্ছেদের হাদীসসমূহ উল্লেখ্য। আরো একটি হাদীসঃ
৬৫৩
عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ
رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إنّ لِي قَرَابةً أصِلُهُمْ
وَيَقْطَعُوني، وَأُحْسِنُ إلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إلَيَّ، وَأحْلَمُ عَنْهُمْ
وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ، فَقَالَ: « لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكأنَّمَا
تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ، وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا
دُمْتَ عَلَى ذلِكَ ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা
বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, আর তারা আমার সাথে
দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ
করে।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ
(অর্থাৎ এ কাজে তারা গোনাহগার হয়।) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের
বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অবিচল থাকবে।’’
(মুসলিম ২৫৫৮, আহমাদ ৭৯৩২, ২৭৪৯৯, ৯৯১৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭৭
শরীয়তের নির্দেশাবলী লংঘন
করতে দেখলে ক্রোধান্বিত হওয়া এবং আল্লাহর দ্বীনের সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ﴾ [الحج: ٣٠]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর নিষিদ্ধ (স্থান বা) বিধানসমূহের সম্মান করলে তার প্রতিপালকের
নিকট তার জন্য এটাই উত্তম।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩০ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ إِن تَنصُرُواْ ٱللَّهَ يَنصُرۡكُمۡ وَيُثَبِّتۡ أَقۡدَامَكُمۡ ٧ ﴾ [محمد: ٧]
অর্থাৎ “যদি তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য
করবেন, এবং তোমাদের পা দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৭ আয়াত)
৬৫৪
وَعَن أَبي مَسعُودٍ عُقْبَةَ بنِ عَمْرٍو
البَدْرِي رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَ: إنِّي لأَتَأخَّرُ عَن صَلاةِ الصُّبْحِ مِنْ أَجْلِ فُلاَنٍ
مِمَّا يُطِيلُ بِنَا ! فَمَا رَأيْتُ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم غَضِبَ في
مَوْعِظَةٍ قَطُّ أشَدَّ مِمَّا غَضِبَ يَوْمَئذٍ ؛ فَقَالَ: « يَا أَيُّهَا
النَّاسُ، إنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِينَ، فَأيُّكُمْ أمَّ النَّاسَ فَلْيُوجِزْ ؛
فَإنَّ مِنْ وَرَائِهِ الكَبِيرَ وَالصَّغِيرَ وَذَا الحَاجَةِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
মাসঊদ উক্বাহ ইবনে আমর বাদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘অমুক ব্যক্তি লম্বা
নামায পড়ায়, তার জন্য আমি ফজরের নামায থেকে পিছনে থাকি।’ অতঃপর আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোন ভাষণে সেদিনকার থেকে বেশী রাগান্বিত হতে
দেখিনি। তিনি বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে কিছু লোক লোকদের মধ্যে ঘৃণা
সৃষ্টি করছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের ইমামতি করবে, সে যেন সংক্ষেপে
নামায পড়ায়। কারণ তার পিছনে বৃদ্ধ, শিশু এবং এমনও লোক রয়েছে যার কোন প্রয়োজন
আছে।’’
(সহীহুল বুখারী ৯০, ৭০২, ৭০৪, ৬১১০, ৭১৫৯, মুসলিম ৪৬৬,
ইবনু মাজাহ ৯৪৮, আহমাদ ২৭৪৪০, ১৬৬১৭, ২১৮৩৯, দারেমী ১২৫৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৫৫
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت: قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مِنْ سَفرٍ،
وَقَدْ سَتَرْتُ سَهْوَةً لِي بِقِرَامٍ فِيهِ تَمَاثِيلُ، فَلَمَّا رَآهُ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم هَتَكَهُ وَتَلَوَّنَ وَجهُهُ،
وَقَالَ: « يَا عَائِشَةُ، أشَدُّ النَّاسِ عَذَاباً عِنْدَ اللهِ يَوْمَ
القيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بخَلْقِ اللهِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফর থেকে (বাড়ী) ফিরলেন। সে
সময় আমি ঘরের সামনে তাকে একটি পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছিলাম, যাতে অনেক ছবি ছিল। অতঃপর
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখলেন তখন ছিঁড়ে ফেলে দিলেন।
(রাগে) তাঁর চেহারা (লাল)বর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে আয়েশা! কিয়ামতের
দিন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক কঠিন শাস্তি তাদের হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্ট জীবের মত
আকৃতি (অঙ্কণ বা নির্মাণ) করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৯৫৪, ২৪৮, ২৫০, ২৬১, ২৬২, ২৬৩, ২৭৩, ২৯৫,
২৯৬, ৩০১, ৩০২, ২০২৮, ২০২৯, ২০৩১, ২০৪৬, ২৪৭৯, ৫৯২৫, ৫৯৫৬, ৬১০৯, ৭৩৩৯, মুসলিম ৩১৬,
৩১৯, ৩২১, তিরমিযী ১৩২, ১৭৫৫, ২৪৬৮, নাসায়ী ২৩২, ২৩৩, ২৩৫, ২৪৩, ২৪৪, ২৪৭, ২৪৮, ২৭৫,
আবূ দাউদ ৭৭, ২৪২, ২৪৩, ইবনু মাজাহ ৩৭৬, ৬৩২, ৬৩৬, আহমাদ ২৩৪৯৪, ম২৩৫৬১, ২৩৬৪০, মুওয়াত্তা
মালিক ১০০, ১২৮, ১৩৫, ৬৯৩, দারেমী ৭৪৮, ১০৩৩, ১০৩৭, ১০৫৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৫৬
وَعَنهَا: أَنَّ قُرَيْشاً أهَمَّهُمْ
شَأنُ المَرأَةِ المَخزُومِيَّةِ الَّتي سَرَقَتْ، فَقَالُوا: مَنْ يُكَلِّمُ
فِيهَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم ؟ فَقَالُوا: مَنْ
يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلاَّ أُسَامَةُ بنُ زَيْدٍ حِبُّ رَسُولِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم ؟ فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم: « أتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللهِ تَعَالَى ؟! » ثُمَّ
قامَ فَاخْتَطَبَ، ثُمَّ قَالَ: « إنَّمَا أهْلَك مَنْ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ
كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ
الضَّعِيفُ أقامُوا عَلَيْهِ الحَدَّ، وَايْمُ الله، لَوْ أَنَّ فَاطمَةَ بِنْتَ
مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعتُ يَدَهَا ». متفقٌ عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
,
যে মাখযূমী মহিলাটি চুরি করেছিল তার ব্যাপারটি কুরায়েশদেরকে চিন্তান্বিত করে
তুলেছিল। সুতরাং তারা বলল, ‘এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় উসামাহ বিন যায়দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আর কে সাহস করতে
পারবে?’ ফলে উসামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর সাথে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত দণ্ডবিধির ব্যাপারে
তুমি সুপারিশ করছ?’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন,
‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ জন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত
ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন দুর্বল ব্যক্তি
চুরি করত, তখন তারা তাকে শাস্তি প্রদান করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা
ফাতেমা চুরি করত, তাহলে আমি তারও হাত কেটে দিতাম।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৪৭৫, ২৬৪৮, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০,
মুসলিম ১৬৮৮, তিরমিযী ১৪৩০, নাসায়ী ৪৮৯৫, ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, ৪৮১৯, ৪৯০০, ৪৯০১, ৪৯০২, ৪৯০৩,
আবূ দাউদ ৪৩৭৩, ইবনু মাজাহ ২৫৪৭, আহমাদ ২২৯৬৮, ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৫৭
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ
صلى الله عليه وسلم رَأى نُخَامَةً فِي القِبلَةِ، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِ حَتَّى
رُؤِيَ في وَجْهِهِ ؛ فَقَامَ فَحَكَّهُ بِيَدِهِ، فَقَالَ: « إِنَّ أَحَدَكُمْ
إِذَا قَامَ فِي صَلاَتِهِ فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّهُ، وَإنَّ رَبَّهُ بَيْنَهُ
وَبيْنَ القِبلَةِ، فَلاَ يَبْزُقَنَّ أحَدُكُمْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ، وَلَكِنْ
عَنْ يَسَارِهِ، أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ » ثُمَّ أخَذَ طَرَفَ رِدَائِهِ فَبَصَقَ
فِيهِ، ثُمَّ رَدَّ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ، فَقَالَ: « أَوْ يَفْعَلُ هَكَذَا ».
متفقٌ عَلَيْهِ
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার (দিকের দেওয়ালে) থুথু দেখতে পেলেন এটা তাঁর
প্রতি খুব ভারী মনে হল; এমনকি তাঁর চেহারায় সে চিহ্ন দেখা গেল। ফলে দাঁড়ালেন এবং
তিনি তা নিজ হাত দ্বারা ঘষে তুলে ফেললেন। তারপর বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন নামাযে
দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে কানে কানে (ফিসফিস করে কথা) বলে। আর তার
প্রতিপালক তার ও কেবলার মধ্যস্থলে থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কেবলার দিকে থুথু
না ফেলে; বরং তার বামে অথবা পদতলে ফেলে। অতঃপর তিনি তাঁর চাদরের এক প্রান্ত ধরে
তাতে থুথু নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি তার এক অংশকে আর এক অংশের সাথে রগড়ে দিয়ে
বললেন, কিংবা এইরূপ করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৪০৫, ২৪১, ৪১২, ৪১৩, ৪১৭, ৫৩১, ৫৩২, ৮২২,
১২১৪, মুসলিম ৪৯৩, নাসায়ী ৩০৮, ৭২৮, আবূ দাউদ ৪৬০, ইবনু মাজাহ ৭৬২, ২০২৪, আহমাদ ১১৬৫১,
১২৩৯৮, ১২৫৪৭, ১২৫৭৯, ১২৬৫৩, ১২৮০৪, ১৩৪২৪, ১৩৪৭৭, ১৩৫৩৬, ১৩৬৮৫, দারেমী ৪১৩৯৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭৮
প্রজাদের সাথে শাসকদের কোমল
ব্যবহার করা, তাদের মঙ্গল কামনা করা, তাদের প্রতি স্নেহপরবশ হওয়ার আদেশ এবং
প্রজাদেরকে ধোঁকা দেওয়া, তাদের প্রতি কঠোর হওয়া, তাদের সবার্থ উপেক্ষা করা, তাদের
ও তাদের প্রয়োজন সম্বন্ধে উদাসীন হওয়া নিষিদ্ধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “তোমার অনুসারী বিশ্বাসীদের প্রতি তুমি সদয় হও।” (সূরা শুআরা ২১৫ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন
এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ
দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” (সূরা নাহ্ল ৯০ আয়াত)
৬৫৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «
كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ: الإمَامُ رَاعٍ
وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ في أهلِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ
رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ في بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ
رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ في مال سيِّدِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ،
وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ » متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি
মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে
জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে
জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে
জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা
বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে
জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের
দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’
(সহীহুল বুখারী ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০,
৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিযী ১৭০৫, আবূ দাউদ ২৯২৮, আহমাদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৫৯
وَعَن أَبي يَعلَى مَعْقِل بنِ يَسارٍ رضي
الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ يَستَرْعِيهِ اللهُ رَعِيَّةً، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ
وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ، إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الجَنَّة ». متفقٌ
عليه
وَفِي رِوَايَةٍ: فَلَمْ يَحُطْهَا بِنُصْحِهِ لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الجَنَّة
وَفي رِوَايَةٍ لِمُسلِمٍ: مَا مِنْ أميرٍ يَلِي أُمُورَ المُسْلِمينَ، ثُمَّ لاَ
يَجْهَدُ لَهُمْ وَيَنْصَحُ لَهُمْ، إِلاَّ لَمْ يَدْخُلْ مَعَهُمُ الْجَنَّةَ
আবূ
য়্যা’লা মা‘ক্বিল ইবনে য়্যাসার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোনো বান্দাকে আল্লাহ
কোন প্রজার উপর শাসক বানালে, যেদিন সে মরবে সেদিন যদি সে প্রজার প্রতি ধোঁকাবাজি
করে মরে, তাহলে আল্লাহ তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দেবেন।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘অতঃপর সে (শাসক) তার হিতাকাঙ্ক্ষিতার সাথে তাদের
অধিকারসমূহ রক্ষা করল না, সে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।’’
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে কোনো আমীর মুসলিমদের দেখাশুনার দায়িত্ব নিল,
অতঃপর সে তাদের (সমস্যা দূর করার) চেষ্টা করল না এবং তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হল না, সে
তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ৭১৫০, ৭১৫১, মুসলিম ১৪২, আহমাদ ১৯৭৭৮,
১৯৮০৪, দারেমী ২৭৯৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬০
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ
فِي بَيْتِي هَذَا: «اَللهم مَنْ وَلِيَ مِنْ أمْرِ أُمَّتِي شَيْئاً فَشَقَّ
عَلَيْهِمْ، فَاشْقُقْ عَلَيْهِ، وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئاً
فَرَفَقَ بِهِمْ، فَارفُقْ بِهِ». رواه مسلم
আয়েশা
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এই ঘরে বলতে শুনেছি, ‘‘হে
আল্লাহ! যে কেউ আমার উম্মতের কোন কাজের কিছু দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে কষ্টে ফেলবে,
তুমি তাকে কষ্টে ফেলো। আর যে কেউ আমার উম্মতের কোন কাজের কিছু দায়িত্ব নিয়ে তাদের
সাথে নম্রতা করবে, তুমি তার সাথে নম্রতা করো।’’
(মুসলিম ১৮২৮, আহমাদ ২৩৮১৬, ২৪১০১, ২৫৬৬৭, ২৫৬৮০, ২৫৭০৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬১
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « كَانَتْ بَنُو
إسرَائِيلَ تَسُوسُهُم الأَنبِيَاء، كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبيٌّ،
وَإنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي، وَسَيكُونُ بَعْدِي خُلفَاءُ فَيَكثُرُونَ»،
قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَمَا تَأْمُرُنَا ؟ قَالَ: «
أَوْفُوا بِبَيْعَةِ الأَوَّلِ فَالأَوَّلِ، ثُمَّ أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ،
وَاسْأَلُوا اللهَ الَّذِي لَكُمْ، فَإنَّ اللهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا
اسْتَرْعَاهُمْ ». متفقٌ عليه
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বানী ইস্রাঈলদের (দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের
কাজ) পরিচালনা করতেন নবীগণ। যখনই কোন নবী মারা যেতেন, তখনই অন্য আর এক নবী তাঁর
প্রতিনিধি হতেন। (জেনে রাখ) আমার পর কোন নবী নেই, বরং আমার পর অধিক সংখ্যায় খলীফা
হবে।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদেরকে কী নির্দেশ দিচ্ছেন?’
তিনি বললেন, ‘‘যার নিকট প্রথমে বায়‘আত করবে, তা পালন করবে। তারপর যার নিকট বায়‘আত
করবে, তা পালন করবে। অতঃপর তাদের অধিকার আদায় করবে এবং তোমাদের অধিকার আল্লাহর
কাছে চেয়ে নেবে। কারণ, মহান আল্লাহ তাদেরকে প্রজাপালনের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করবেন।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৪৫৫, মুসলিম ১৮৪২, ইবনু মাজাহ ২৮৭১, আহমাদ
৭৯০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬২
وَعَن عَائِذِ بنِ عَمرٍو رضي الله عنه:
أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عُبَيْدِ اللهِ بنِ زِيَادٍ، فَقَالَ لَهُ: أيْ بُنَيَّ،
إنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «
إنَّ شَرَّ الرِّعَاءِ الحُطَمَةُ» فإيَاكَ أن تَكُونَ مِنْهُمْ . متفقٌ عَلَيْهِ
‘আয়েয
ইবনে ‘আমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
উবাইদুল্লাহ
ইবনে যিয়াদের নিকট গেলেন। অতঃপর তিনি তাকে বললেন, ‘হে বৎস! আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় নিকৃষ্টতম শাসক সে, যে
প্রজাদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে।’’ সুতরাং তুমি তাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে
দূরে থাকো।’
(মুসলিম ১৮৩০, আহমাদ ২০১১৪ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬৩
وَعَن أَبي مَريَمَ الأَزدِيِّ رضي الله
عنه: أنّه قَالَ لِمُعَاوِيَةَ رضي الله عنه: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: مَنْ وَلاَّهُ اللهُ شَيْئاً مِنْ أُمُورِ
المُسْلِمِينَ، فَاحْتَجَبَ دُونَ حَاجَتِهِمْ وَخَلَّتِهِمْ وَفَقْرِهِمْ،
احْتَجَبَ اللهُ دُونَ حَاجَتِهِ وَخَلَّتِهِ وَفَقْرِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ .
فَجَعَلَ مُعَاوِيَةُ رَجُلاً عَلَى حَوَائِجِ النَّاسِ . رواه أَبُو داود
والترمذي
আবূ
মারয়্যাম আযদী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু মু‘আবিয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তিকে আল্লাহ
মুসলিমদের কোনো (রাজ) কার্যে নিযুক্ত করলেন, অতঃপর সে তাদের অভাব-অভিযোগ, প্রয়োজন
ও অনটন থেকে অদৃশ্য থাকল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সে ব্যক্তির অভাব-অভিযোগ, প্রয়োজন ও
অনটন থেকে অদৃশ্য থাকবেন।“ (তা পূরণ করবেন না।)
(তিরমিযী ১৩৩২, আহমাদ ১৭৫৭২, আবূ দাউদ ২৯৪৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৭৯
ন্যায়পরায়ণ শাসকের মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচরণের নির্দেশ দেন---।” (সূরা নাহ্ল ৯০
আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
অর্থাৎ “সুবিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা হুজুরাত
৩৮১ আয়াত)
৬৬৪
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عن
النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ
يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ
الله - عز وجل -، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ
تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ
امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إنِّي أخَافُ الله، وَرَجُلٌ
تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ
يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ ». مُتَّفَقٌ
عَلَيهِ .
আবু
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে সেই
দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না;
(তারা হল,) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ আয্যা
অজাল্লার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে
(মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর
সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর
মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি
যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে
বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত
যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে
আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, ৬৮০৬, মুসলিম ১০৩১, তিরমিযী
২৩৯১, নাসায়ী ৫৩৮০, আহমাদ ৯৩৭৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬৫
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: «إنَّ المُقْسِطِينَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ:
الَّذِينَ يَعْدِلُونَ في حُكْمِهِمْ وأَهْلِيْهِم وَمَا وَلُوْا ». رواه مسلم
‘আব্দুল্লাহ
ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় ন্যায় বিচারকরা আল্লাহর নিকট
জ্যোতির মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। যারা তাদের বিচারে এবং তাদের গৃহবাসীদের মধ্যে
ও যে সমস্ত কাজে তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে, তাতে তারা ইনসাফ করে’’
(মুসলিম ১৮২৭, নাসায়ী ৫৩৭৯, আহমাদ ৬৪৪৯, ৬৪৫৬, ৬৮৫৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬৬
وَعَن عَوفِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه،
قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ:
خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ، وَتُصَلُّونَ
عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ . وشِرَارُ أئِمَّتِكُم الَّذِينَ
تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ، وَتَلعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ، قَالَ:
قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أفَلاَ نُنَابِذُهُم ؟ قَالَ:
لاَ، مَا أقَامُوا فِيْكُمُ الصَّلاَةَ . لاَ، مَا أقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ .
رواه مسلم
আওফ
ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট
শাসকবৃন্দ তারা, যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে, তোমরা তাদের
জন্য দো‘আ কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দো‘আ করে। আর তোমাদের নিকৃষ্টতম শাসকবৃন্দ
তারা, যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে, তোমরা তাদেরকে অভিশাপ
কর এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ করে।’’ (বর্ণনাকারী) বলেন, আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর
রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব না?’ তিনি বললেন, ‘‘না, যতক্ষণ পর্যন্ত
তারা তোমাদের মধ্যে নামায প্রতিষ্ঠা করবে। না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে
নামায প্রতিষ্ঠা করবে।’’
(মুসলিম ১৮৫৫, আহমাদ ২৩৪৬১, ২৩৪৭৯, দারেমী ২৭৯৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬৭
وَعَن عِياضِ بن حِمارٍ رضي الله عنه،
قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «
أهلُ الجَنَّةِ ثَلاَثَةٌ: ذُو سُلطَانٍ مُقْسِطٌ مُوَفَّقٌ، وَرَجُلٌ رَحيمٌ
رَقِيقُ القَلْبِ لكُلِّ ذي قُرْبَى ومُسْلِمٍ، وعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيالٍ».
رواه مسلم
‘ইয়ায
ইবনে হিমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘জান্নাতী তিন
প্রকার। (১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, যাকে ভাল কাজ করার তওফীক দেওয়া হয়েছে। (২) ঐ
ব্যক্তি যে প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিমের প্রতি দয়ালু ও নম্র-হৃদয় এবং (৩) সেই
ব্যক্তি যে বহু সন্তানের (গরীব) পিতা হওয়া সত্ত্বেও হারাম ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে
দূরে থাকে।
(মুসলিম ২৮৬৫, আবূ দাউদ ৪৮৯৫, ইবনু মাজাহ ৪১৭৯, আহমাদ
১৭০৩০, ১৭৮৭৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৮০
বৈধ কাজে শাসকবৃন্দের
আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং অবৈধ কাজে তাদের আনুগত্য করা হারাম
মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসূলের অনুগত হও ও তোমাদের
নেতৃবর্গের।” (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত)
৬৬৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا،
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: عَلَى المَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ
والطَّاعَةُ فِيمَا أحَبَّ وكَرِهَ، إِلاَّ أنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيةٍ، فَإِذَا
أُمِرَ بِمَعْصِيةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ . متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
‘উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমের জন্য (তার শাসকদের) কথা শোনা ও
মানা ফরয, তাকে সে কথা পছন্দ লাগুক অথবা অপছন্দ লাগুক; যতক্ষণ না তাকে পাপকাজের
নির্দেশ দেওয়া হয়। অতঃপর যখন তাকে পাপকাজের আদেশ দেওয়া হবে তখন তার কথা শোনাও
মানাও ফরয নয়।’’
(সহীহুল বুখারী ২৯৫৫, ৭১৪৪, মুসলিম ১৮৩৯, ২৭৩৫, তিরমিযী
১৭০৭, আবূ দাউদ ২৬২৬, ইবনু মাজাহ ২৮৬৪, আহমাদ ৪৬৫৪, ৬২৪২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৬৯
وَعَنهُ، قَالَ: كُنَّا إِذَا بَايَعْنَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَلَى السَّمعِ والطَّاعَةِ،
يَقُولُ لَنَا: « فِيمَا اسْتَطَعْتُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তাঁর কথা
শোনার ও আনুগত্য করার উপর বায়‘আত করছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘যাতে তোমাদের
সাধ্য রয়েছে।’’
(সহীহুল বুখারী ৭২০২, মুসলিম ১৮৬৭, তিরমিযী ১৫৯৩, নাসায়ী
৪১৮৭, ৪১৮৮, আবূ দাউদ ২৯৪০, আহমাদ ৪৫৫১, ৫২৬০, ৫৫০৬, ৫৭৩৭, ৬২০৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৪১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭০
وَعَنهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: مَنْ خَلَعَ يَداً مِنْ طَاعَةٍ
لَقِيَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ حُجَّةَ لَهُ، وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ في
عُنُقِهِ بَيْعَةٌ، مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً . رواه مسلم
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: وَمَنْ مَاتَ وَهُوَ مُفَارِقٌ لِلجَمَاعَةِ، فَإنَّهُ
يَمُوتُ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি (বৈধ
কাজে শাসকের) আনুগত্য করা থেকে হাত গুটিয়ে নিল, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে এ
অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার জন্য কোন প্রমাণ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি
(রাষ্ট্রনেতার হাতে) বায়‘আত না করে মৃত্যুবরণ করল, সে জাহেলিয়াতের মরা মরল।’’
এর অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘যে (রাষ্ট্রীয়) জামাআত ত্যাগ করে মারা গেল, সে
জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।’’
(মুসলিম ১৮৫১, আহমাদ ৫৩৬৩, ৫৫২৬, ৫৬৪৩, ৫৬৮৫, ৫৮৬৩, ৬০১২,
৬১৩১, ৬৩৮৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭১
وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « اِسْمَعُوا وأطِيعُوا،
وَإنِ استُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشيٌّ، كَأَنَّ رأْسَهُ زَبيبةٌ ». رواه
البخاري
আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(শাসকদের) কথা শোনো এবং (তাদের)
আনুগত্য কর; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো ক্রীতদাসকে (নেতা) নিযুক্ত করা হয়; যেন
তার মাথাটা কিশমিশ। (অর্থাৎ কিশমিশের ন্যায় ক্ষুদ্র ও বিশ্রী তবুও)!’’
(সহীহুল বুখারী ৬৯৩, ৬৯৬, ৭১৪২, ইবনু মাজাহ ২৮৬০, আহমাদ
১১৭২৬, ১২৩৪১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭২
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « عَلَيْكَ السَّمْعُ
وَالطَّاعَةُ في عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ، وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ، وَأثَرَةٍ
عَلَيْكَ ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমার প্রতি দুঃখে-সুখে,
হর্ষে-বিষাদে এবং তোমার উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়ে (শাসকের) কথা শোনা ও
(তার) আনুগত্য করা ফরয।’’
(সহীহুল বুখারী ১৮৩৬, নাসায়ী ৪১৫৫, আহমাদ ৮৭৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭৩
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرٍو رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ،
فَنَزَلْنَا مَنْزِلاً، فَمِنَّا مَنْ يُصْلِحُ خِبَاءَهُ، وَمِنّا مَنْ
يَنْتَضِلُ، وَمِنَّا مَنْ هُوَ في جَشَرِهِ، إذْ نَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: الصَّلاةَ جَامِعَةً. فَاجْتَمَعْنَا إِلَى رَسُول الله صلى
الله عليه وسلم، فَقَالَ: « إنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبيٌّ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ
حَقّاً عَلَيْهِ أنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ،
وَيُنْذِرَهُم شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ . وَإنَّ أُمَّتَكُمْ هذِهِ جُعِلَ
عَافِيَتُهَا في أوَّلِهَا، وَسَيُصيبُ آخِرَهَا بَلاَءٌ وَأمُورٌ تُنْكِرُونَهَا،
وَتَجِيءُ فِتنَةٌ يُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضاً، وَتَجِيءُ الفتنَةُ فَيقُولُ
المُؤْمِنُ: هذه مُهلكتي، ثُمَّ تنكشفُ، وتجيء الفتنةُ فيقولُ المؤمنُ: هذِهِ
هذِهِ . فَمَنْ أحَبَّ أنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ، ويُدْخَلَ الجَنَّةَ،
فَلْتَأتِهِ منيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنَ باللهِ واليَوْمِ الآخِرِ، وَلْيَأتِ إِلَى
النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أنْ يُؤتَى إِلَيْهِ. وَمَنْ بَايَعَ إمَاماً فَأعْطَاهُ
صَفْقَةَ يَدِهِ، وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ، فَلْيُطِعْهُ إن استَطَاعَ، فإنْ جَاءَ
آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنْقَ الآخَرِ ». رواه مسلم
‘আব্দুল্লাহ
ইবনে ‘আমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমরা
আল্লাহর রসূলের সাথে এক সফরে ছিলাম। অতঃপর (বিশ্রামের জন্য) এক স্থানে অবতরণ
করলাম। তারপর আমাদের কিছু লোক তাঁবু ঠিক করছিল এবং কতক লোক তীরন্দাজিতে
প্রতিযোগিতা করছিল ও কতক লোক জন্তুদের ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘোষণাকারী ঘোষণা করল যে, ‘‘নামাযের জন্য জমায়েত
হও।’’ সুতরাং আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একত্রিত
হলাম। তারপর তিনি বললেন, ‘‘আমার পূর্বে প্রত্যেক নবীর জন্য জরুরী ছিল, তাঁর
উম্মতকে এমন কর্মসমূহের নির্দেশ দেওয়া, যা তিনি তাদের জন্য ভালো মনে করেন এবং এমন
কর্মসমূহ থেকে ভীতি-প্রদর্শন করা, যা তিনি তাদের জন্য মন্দ মনে করেন। আর তোমাদের
এই উম্মত এমন, যাদের প্রথমাংশে নিরাপত্তা রাখা হয়েছে এবং তাদের শেষাংশে রয়েছে
পরীক্ষা (ফিতনা-ফাসাদ) এবং এমন ব্যাপার সকল, যা তোমরা পছন্দ করবে না। এমন ফিতনা
প্রকাশ পাবে যে, একটি অন্যটি হাল্কা করে দেবে (অর্থাৎ পরের ফিতনাটি আগের ফিতনা
অপেক্ষা গুরুতর হবে)। ফিতনা এসে গেলে মু’মিন ব্যক্তি বলবে, এটাই আমার ধ্বংসের কারণ
হবে। অতঃপর তা দূরীভূত হবে। পুনরায় অন্য ফিতনা প্রকাশ পাবে, তখন মু’মিন বলবে,
‘এটাই এটাই (আমার সবচেয়ে বড় ফিতনা)।’ অতএব যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে
থাকতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে ভালবাসে, তার নিকট এই অবস্থায় মৃত্যু আসুক যে, সে
আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং লোকদের সাথে সেই ব্যবহার প্রদর্শন করে,
যা সে নিজের সাথে প্রদর্শন পছন্দ করে। আর যে ব্যক্তি রাষ্ট্রনেতার সাথে বায়‘আত
করে, সে নিজের হাত এবং নিজ অন্তরের ফল (নিষ্ঠা) তাকে দিয়ে দেয়, সে সাধ্যমত তার
আনুগত্য করুক। অতঃপর অন্য কেউ যদি তার (প্রথম ইমামের) সাথে (ক্ষমতা কাড়ার) ঝগড়া
করে, তাহলে দ্বিতীয়জনের গর্দান উড়িয়ে দাও।’’
(মুসলিম ১৮৪৪, নাসায়ী ৪১৯১, আবূ দাউদ ৪২৪৮, ইবনু মাজাহ
৩৯৫৬, আহমাদ ৬৪৬৫, ৬৭৫৪, ৬৭৭৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭৪
আবূ
হুনাইদা ওয়াইল ইবনে হুজর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
সালামাহ
ইবনে য়্যাযীদ জু‘ফী আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা
করলেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি বলুন, যদি আমাদের উপর (অসৎ) শাসক নিযুক্ত হয় এবং
আমাদের কাছে তাদের অধিকার চায় ও আমাদেরকে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। অতএব এ
ব্যাপারে আপনি কী নির্দেশ দেন?’ তিনি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পুনরায় তিনি
জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা
(তাদের) কথা শুনো এবং (তাদের) আনুগত্য করো। কারণ তাদের দায়িত্বে তা রয়েছে, যা
তাদের উপর চাপানো হয়েছে (অর্থাৎ সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা) এবং তোমাদের দায়িত্বে তা
রয়েছে, যা তোমাদের উপর অর্পণ করা হয়েছে (অর্থাৎ নেতা ও শাসকের আনুগত্য)।’’
(মুসলিম ১৮৪৬, তিরমিযী ২১৯৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭৫
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله
عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «
إنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِي أثَرَةٌ وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا ! » قَالُوا: يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، كَيْفَ تَأمُرُ مَنْ أدْرَكَ مِنَّا ذَلِكَ ؟
قَالَ: « تُؤَدُّونَ الحَقَّ الَّذِي عَلَيْكُمْ، وَتَسْأَلُونَ اللهَ الَّذِي
لَكُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
.
‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার পর স্বেচ্ছাচারী শাসন হবে এবং
অন্যান্য (আপত্তিকর) ব্যাপার সকল প্রকাশ পাবে, যা তোমরা অপছন্দ করবে।’’ সাহাবীরা
বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে যে এ যুগ পাবে, তাকে আপনি কী আদেশ
দিচ্ছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের প্রতি যে হক রয়েছে, তা তোমরা আদায় করবে এবং
তোমাদের যে হক (শাসকের উপর রয়েছে), তা আল্লাহর কাছে চেয়ে নেবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৬০৩, মুসলিম ১৮৪৩, তিরমিযী ২১৯০, আহমাদ
৩৬৩৩, ২৭২০৭, ৪০৫৬, ৪১১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭৬
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « مَنْ أطَاعَنِي
فَقَدْ أطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ
الأَمِيرَ فَقَدْ أطَاعَنِي، وَمَنْ يَعصِ الأميرَ فَقَدْ عَصَانِي ». متفقٌ
عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার
আনুগত্য করল, সে (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যে আমার অবাধ্যতা করল, সে
(আসলে) আল্লাহর অবাধ্যতা করল। আর যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য করল, সে (আসলে) আমার
আনুগত্য করল এবং যে নেতার অবাধ্যতা করল, সে (আসলে) আমার অবাধ্যতা করল।’’
(সহীহুল বুখারী ২৯৫৭, নাসায়ী ৪১৯৩, ৫৫১০, ইবনু মাজাহ ৩,
২৮৫৯, আহমাদ ৭২৯০, ৭৩৮৬, ৭৬০০, ২৭৩৫০, ৮৩০০, ৮৫১১, ৮৭৮৮, ৯১২১, ৯৬৯৬, ৯৭৩৯, ১০২৫৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭৭
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «
مَنْ كَرِهَ مِنْ أمِيرِهِ شَيْئاً فَلْيَصْبِرْ، فَإنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ
السُّلطَانِ شِبْراً مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ». متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার নেতার কোন কাজ অপছন্দ
করবে, তার উচিত হবে (তার উপর) ধৈর্য ধারণ করা। কারণ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও
শাসকের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাবে, তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৭০৫৩, ৭০৫৪, ৭১৪৩, মুসলিম ১৮৪৯, আহমাদ
২৪৮৩, ২৬৯৭, ২৫১৯, দারেমী ২৫১৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৭৮
وَعَن أَبي بَكرَةَ رضي الله عنه، قَالَ:
سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: مَنْ
أهانَ السُّلطَانَ أَهَانَهُ الله . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
আবূ
বাক্রাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি বাদশাহকে
অপমান করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন।’’
(তিরমিযী ২২২৪, আহমাদ ১৯৯২০, ১৯৯৮২)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৮১
পদ চাওয়া নিষেধ এবং
রাষ্ট্রীয় পদ পরিহার করাই উত্তম; যদি সেই একমাত্র তার যোগ্য অথবা তার নিযুক্ত হওয়া
জরুরী না হয়
মহান আল্লাহ বলেন,
(আরবী)
অর্থাৎ “এ আখেরাতের আবাস; যা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত
হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। সাবধানীদের জন্য শুভ পরিণাম।” (সূরা ক্বাসাস ৮৩
আয়াত)
৬৭৯
وَعَن أَبي سَعِيدٍ عَبدِ الرَّحمَانِ بنِ
سَمُرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم: « يَا عَبْدَ الرَّحمَانِ بنَ سَمُرَةَ، لاَ تَسْأَلِ الإمَارَةَ
؛ فَإِنّكَ إِنْ أُعْطِيتَهَا عَنْ غَيْرِ مَسْألَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا، وَإنْ
أُعْطِيتَهَا عَنْ مَسْألَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ،
فَرَأيْتَ غَيْرَهَا خَيْراً مِنْهَا، فَأتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَكَفِّرْ عَنْ
يَمِينكَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
সা‘ঈদ আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘হে আব্দুর রহমান বিন সামুরাহ!
তুমি সরকারী পদ চেয়ো না। কারণ তুমি যদি তা না চেয়ে পাও, তাহলে তাতে তোমাকে সাহায্য
করা হবে। আর যদি তুমি তা চাওয়ার কারণে পাও, তাহলে তা তোমাকে সঁপে দেওয়া হবে। (এবং
তাতে আল্লাহর সাহায্য পাবে না।) আর যখন তুমি কোন কথার উপর কসম খাবে, অতঃপর তা থেকে
অন্য কাজ উত্তম মনে করবে, তখন উত্তম কাজটা কর এবং তোমার কসমের কাফফারা দিয়ে দাও।’’
(সহীহুল বুখারী ৭১৪৬, ৬৬২২, ৬৭২২, ৭১৪৭, মুসলিম ১৬৫২,
তিরমিযী ১৫২৯, নাসায়ী ৩৭৮২, ৩৭৮৩, ৩৭৮৪, ৫৩৮৫, আবূ দাউদ ২৯২৯, ৩২৭৭, আহমাদ ২০০৯৩, ২০০৯৫,
২০০১৫, দারেমী ২৩৪৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৮০
وَعَن أَبي ذرٍّ رضي الله عنه، قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «يَا أَبَا ذَرٍّ،
إنِّي أرَاكَ ضَعِيفاً، وَإنِّي أُحِبُّ لَكَ مَا أُحِبُّ لِنَفْسِي . لاَ
تَأَمَّرَنَّ عَلَى اثْنَيْنِ، وَلاَ تَوَلَّيَنَّ مَالَ يَتِيمٍ ». رواه مسلم
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! আমি
তোমাকে দুর্বল দেখছি এবং আমি তোমার জন্য তাই ভালবাসি, যা আমি নিজের জন্য ভালবাসি।
(সুতরাং) তুমি অবশ্যই দু’জনের নেতা হয়ো না এবং এতীমের মালের তত্ত্বাবধায়ক হয়ো
না।’’
(মুসলিম ১৮২৬, ১৮২৫, আহমাদ ২১০০২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৮১
وَعَنهُ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ
اللهِ، ألا تَسْتَعْمِلُني ؟ فَضَرَبَ بِيَدِهِ عَلَى مَنْكِبِي، ثُمَّ قَالَ: «
يَا أَبَا ذَرٍّ، إنَّكَ ضَعِيفٌ، وَإِنَّهَا أَمَانَةٌ، وَإنَّهَا يَوْمَ
الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ، إِلاَّ مَنْ أخَذَهَا بِحَقِّهَا، وَأدَّى
الَّذِي عَلَيْهِ فِيهَا ». رواه مسلم
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ রসূল! আপনি আমাকে (কোন স্থানের সরকারী) কর্মচারী কেন
নিযুক্ত করছেন না?’ তিনি নিজ হাত আমার কাঁধের উপর মেরে বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র!
তুমি দুর্বল এবং (এ পদ) আমানত ও এটা কিয়ামতের দিন অপমান ও অনুতাপের কারণ হবে।
কিন্তু যে ব্যক্তি তা হকের সাথে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) গ্রহণ করল এবং নিজ দায়িত্ব
(যথাযথভাবে) পালন করল (তার জন্য এ পদ লজ্জা ও অনুতাপের কারণ নয়)।’’
(মুসলিম ১৮২৫, ১৮২৬, আহমাদ ২১০০২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৮২
وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إنَّكُمْ
سَتَحْرِصُونَ عَلَى الإمَارَةِ، وَسَتَكونُ نَدَامَةً يَوْمَ القِيَامَةِ - رواه
البخاري
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অতি সত্বর নেতৃত্বের লোভ করবে।
(কিন্তু স্মরণ রাখো) এটি কিয়ামতের দিন অনুতাপের কারণ হবে।
(সহীহুল বুখারী ৭১৪৮, নাসায়ী ৪২১১, ৫৩৮৫, আহমাদ ৯৪৯৯,
৯৮০৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৮২
বাদশাহ, বিচারক এবং অন্যান্য
নেতৃবৃন্দকে সৎ মন্ত্রী ও উপদেষ্টা নিযুক্ত করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তাদেরকে
খারাপ সঙ্গী থেকে ও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা থেকে ভীতি-প্রদর্শন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(আরবী)
অর্থাৎ “বন্ধুরা সেদিন একে অপরের শত্রু হয়ে পড়বে, তবে সাবধানীরা নয়।” (সূরা যুখরুফ
৬৭ আয়াত)
৬৮৩
وَعَن أَبي سَعِيدٍ وَأَبِي هُرَيرَةَ
رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: « مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبِيٍّ، وَلاَ اسْتَخْلَفَ مِنْ خَلِيفَةٍ
إِلاَّ كَانَتْ لَهُ بِطَانَتَانِ: بِطَانَةٌ تَأمُرُهُ بِالمَعْرُوفِ وتَحُضُّهُ
عَلَيْهِ، وَبِطَانَةٌ تَأمُرُهُ بِالشَّرِّ وَتَحُضُّهُ عَلَيْهِ، وَالمَعْصُومُ
مَنْ عَصَمَ اللهُ ». رواه البخاري
আবূ
সাঈদ ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখনই কোন নবী প্রেরণ করেন এবং
কোন খলীফা নির্বাচিত করেন, তখনই তাঁর জন্য দু’জন সঙ্গী নিযুক্ত করে দেন। একজন
সঙ্গী তাঁকে ভাল কাজের নির্দেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর দ্বিতীয়জন সঙ্গী
তাঁকে মন্দ কাজের নির্দেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর রক্ষা পান কেবলমাত্র
তিনিই, যাকে আল্লাহ রক্ষা করেন।’’
(সহীহুল বুখারী ৭১৯৮, নাসায়ী ৪২১১, ৫৩৮৫, আহমাদ ৯৪৯৯,
৯৮০৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
৬৮৪
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا،
قَالَت: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « إِذَا
أرَادَ اللهُ بِالأَمِيرِ خَيْراً، جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ صِدقٍ، إنْ نَسِيَ
ذَكَّرَهُ، وَإنْ ذَكَرَ أعَانَهُ، وَإِذَا أرَادَ بِهِ غَيْرَ ذَلِكَ جَعَلَ لَهُ
وَزِيرَ سُوءٍ، إنْ نَسِيَ لَمْ يُذَكِّرْهُ، وَإنْ ذَكَرَ لَمْ يُعِنْهُ ». رواه
أَبُو داود بإسنادٍ جيدٍ عَلَى شرط مسلم
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ কোন শাসকের মঙ্গল চান,
তখন তিনি তার জন্য সত্যনিষ্ঠ (শুভাকাঙ্ক্ষী) মন্ত্রী নিযুক্ত করে দেন। শাসক (কোন
কথা) ভুলে গেলে সে তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং স্মরণ থাকলে তার সাহায্য করে। আর
যখন আল্লাহ তার অন্য কিছু (অমঙ্গল) চান, তখন তার জন্য মন্দ মন্ত্রী নিযুক্ত করে
দেন। শাসক বিস্মৃত হলে সে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় না এবং স্মরণ থাকলে তার সাহায্য
করে না।’’
(আবূ দাউদ ২৯৩২, নাসায়ী ৪২০২)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছদঃ ৮৩
যে ব্যক্তি নেতা, বিচারক
অথবা অন্যান্য সরকারী পদ চাইবে অথবা পাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করবে অথবা তার জন্য
ইঙ্গিত করবে তাকে পদ দেওয়া নিষেধ
৬৮৫
عَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِيِّ رضي الله
عنه، قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم أنَا وَرَجُلاَنِ مِنْ
بَنِي عَمِّي، فَقَالَ أحَدُهُمَا: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم!
أمِّرْنَا عَلَى بَعْضِ مَا وَلاَّكَ اللهُ - عز وجل -، وَقَالَ الآخَرُ مِثلَ
ذَلِكَ، فَقَالَ: « إنَّا وَاللهِ لاَ نُوَلِّي هَذَا العَمَلَ أحَداً سَألَهُ،
أَوْ أحَداً حَرَصَ عَلَيْهِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
আবূ
মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
এবং আমার চাচাতো দু’ভাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। সে দু’জনের
মধ্যে একজন বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহান আল্লাহ আপনাকে যে সব শাসন-ক্ষমতা দান
করেছেন, তার মধ্যে কিছু (এলাকার) শাসনভার আমাকে প্রদান করুন।’ দ্বিতীয়জনও একই কথা
বলল। উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর কসম! যে সরকারী পদ চেয়ে নেয় অথবা তার প্রতি লোভ
রাখে, তাকে অবশ্যই আমরা এ কাজ দিই না।’’
(সহীহুল বুখারী ৭১৪৯, ২২৬১, ৬৯২৩, ৭১৫৬, ৭১৫৭, নাসায়ী
৪, ৫৩৮২, আবূ দাউদ ২৯৩০, ৩০৭৯, ৪৩৫৪, আহমাদ ১৯০১৪, ১৯১৬৭, ১৯১৮৮, ১৯২৩৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
No comments