কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম অধ্যায়-১৪ তাওরাত-ইঞ্জিলের বিধান রহিত হওয়া প্রসঙ্গ
তাওরাত-ইঞ্জিলের বিধান রহিত হওয়া প্রসঙ্গ
ঈসায়ী প্রচারকগণ বলেন, আল্লাহর বিধান তো রহিত হয় না। কারণ আল্লাহর বিধান রহিত হওয়ার অর্থ আগের বিধানটি আল্লাহ না বুঝে দিয়েছিলেন। এরূপ তো চিন্তা করা যায় না। এজন্য তাওরাত-ইঞ্জিলও মানতে হবে। নিম্নের বিষয়গুলি লক্ষ্য করুন:
প্রথমত, যারা কিতাবুল মোকাদ্দসকে আল্লাহর কিতাব বলে বিশ্বাস করে তাদের এ কথা বলার সুযোগ নেই। কারণ, আমরা দেখেছি যে, কিতাবুল মোকাদ্দসের ‘খোদা’ অনেক কাজই না বুঝে করেন এবং পরে আফসোস করেন[1]।
দ্বিতীয়ত, তাওরাত-ইঞ্জিল পাওয়া গেলে তো তা মানতে হবে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, প্রচলিত কিতাবুল মোকাদ্দস থেকে অনেক গ্রন্থ হারিয়ে গিয়েছে, অনেক কিছু সংযোজিত হয়েছে এবং বিকৃত হয়েছে। এগুলির মূল শিক্ষা ও বিধান কুরআনে সংরক্ষিত।
তৃতীয়ত, আল্লাহর বিধান যে রহিত হয় তার অগণিত নমুনা কিতাবুল মোকাদ্দসে বিদ্যমান। এ গ্রন্থের বর্ণনানুসারে সামান্য কয়েকটি নমুনা দেখুন:
(ক) আদম (আ)-এর শরীয়তে ভাই-বোনের বিবাহ বৈধ ছিল। ইবরাহীম (আ)-এর স্ত্রী সারা তার বৈমাত্রেয় বোন ছিলেন। (আদিপুস্তক ২০/১২)। কিন্তু মূসা (আ)-এর শরীয়তে আপন ভগ্নি, বৈমাত্রেয় ভগ্নি ও বৈপিত্রেয় ভগ্নি সকল প্রকারের ভগ্নিকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ। এইরূপ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ স্বামী-স্ত্রী উভয়কে হত্যা করা অত্যাবশ্যক। (লেবীয় ১৮/৯, ২০/১৭, দ্বিতীয় বিবরণ ২৭/২২)।
(খ) নূহ (আ)-এর শরীয়তে সকল প্রাণী ভক্ষণ বৈধ ছিল (আদিপুস্তক ৯/৩)। কিন্তু মূসা (আ)-এর শরীয়তে এ বৈধতা রহিত করে অধিকাংশ প্রাণী হারাম করা হয় (লেবীয় ১১/৪-৮; দ্বিতীয় বিবরণ১৪/৭-৮)
(গ) ইবরাহীম (আ)-এর শরীয়তে দু বোনকে একত্রে বিবাহ বৈধ ছিল। ইয়াকূব (আ) লেয়া ও রাহেল দু বোনকে বিবাহ করেন (আদিপুস্তক ২৯/১৫-৩৫)। মূসা (আ)-এর শরীয়তে দু বোনকে একত্রে বিবাহের বৈধতা “রহিত” হয়। (লেবীয় ১৮/১৮)
(ঘ) মূসা (আ)-এর শরীয়তে যে কোনো কারণে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়া বৈধ ছিল এবং তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করাও অন্য পুরুষের জন্য বৈধ ছিল (দ্বিতীয় বিবরণ ২৪/১-২)। কিন্তু ঈসা (আ)-এর শরীয়তে একমাত্র ব্যভিচারের অপরাধ ছাড়া কোনো স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে না এবং অন্য কোনো ব্যক্তি সে পরিত্যাক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারবে না। এইরূপ বিবাহ ব্যভিচার বলে গণ্য হবে। (মথি ৫/৩১-৩২ ও ১৯/৩-৯)চতুর্থত: পরবর্তী বিধান বা কিতাবের কারণে পূর্ববর্তী বিধান পরিবর্তিত, রহিত বা বাতিল হওয়ার বিষয়ে খৃস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাধু পল লিখেছেন: “যখন ইমামের পদ বদলানো হয় তখন শরীয়তও বদলাবার দরকার হয় ((ইব্রীয়/ইবরানী ৭/১২) এভাবে বারংবার সাধু পল লিখেছেন যে, নতুন কিতাব ও নতুন ইমাম যখন আগমন করেন তখন পুরাতন শরীয়ত লুপ্ত ও রহিত হয়। (ইব্রীয়/ইবরানী ৭/১৮, ৮/৭, ১৩, ১০/৯) এ সকল বক্তব্য প্রমাণ করে যে, পরবর্তী বিধান দ্বারা পূর্ববর্তী বিধান রহিত হওয়াই নিয়ম। সাধু পলের নেতৃত্বে খৃস্টানগণ মূসার শরীয়তের সব কিছুই রহিত করে দেন। কাজেই পলের ধর্মের অনুসারীদের জন্য আল্লাহর বিধান রহিত হওয়া অস্বীকার করা প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।
[1] এগুলো তাদের গ্রন্থের কথা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। লেখক বা কোনো মুসলিমই এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করে না। [সম্পাদক]
No comments