রাহে বেলায়াত চতুর্থ অধ্যায় - অনুচ্ছেদ-৮, সিয়াম ও আনুষঙ্গিক কিছু যিকর
রাহে বেলায়াত চতুর্থ অধ্যায় - অনুচ্ছেদ-৮, সিয়াম ও আনুষঙ্গিক কিছু যিকর
যিকর নং
: ১৫৮
নতুন
চাঁদ
দেখার
যিকর
:
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ (باليمن) وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ وَالتَّوْفِيقِ لِمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى رَبُّنَا (ربي) وَرَبُّكَ اللَّهُ
উচ্চারণ : আল্লা-হু আকবার। আল্লা-হুম্মা, আহিল্লাহু ‘আলাইনা- বিলআমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-ম। (ওয়াততাওফীক্বি লিমা- ইউ’হিব্বু রাববুনা- ওয়া ইয়ারদ্বা-) রাব্বুনা- ওয়া রাববুকাল্লা-হু।
অর্থঃ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। হে আল্লাহ, আপনি এই নতুন চাঁদের (নতুন মাসের) সূচনা করুন কল্যাণ, নিরাপত্তা ও ঈমানের সাথে, শান্তি ও ইসলামরে সাথে (এবং আমাদের প্রভু যা ভালবাসেন এবং পছন্দ করেন তা পালনের তাওফীকসহ।) আমাদের ও তোমার হে নতুন চাঁদ প্রভু আল্লাহ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) হেলাল বা নতুন চাঁদ দেখলে (প্রথম ২/৩ দিনের চাঁদকে হেলাল বলা হয়) এই কথাগুলি বলতেন।[1] রমযান ও সকল মাসের নতুন চাঁদ দেখে এই দু‘আ পাঠ করা মাসনূন। অনেকে চাঁদকে সালাম করে। কাজটি উদ্ভট ও বানোয়াট।
মুখে সিয়ামের নিয়্যাত পাঠ সুন্নাত বিরোধী
সিয়ামের শুরুতে কোনো মাসনূন যিকর নেই। মুখে সিয়ামের নিয়্যাত পাঠ করা সুন্নাত বিরোধী কর্ম। “নাওয়াইতুআন” বলে যত প্রকার নিয়েত প্রচলিত সবই বানোয়াট কথা। রাসূলুল্লাহ (সা.), তাঁর সাহাবীগণ, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীগণ ও চার ইমামসহ কোনো ইমাম এগুলি বলেননি বা শেখাননি। সিয়াম পালনকারী সিয়াম অবস্থায় বেশি বেশি দু‘আ করবেন ; কারণ সিয়াম অবস্থার দু‘আ কবুল হয়, বিশেষত ইফতারের সময়। ইফতারের ২/১ টি মাসনূন যিকরঃ
যিকর নং ১৫৯ : ইফতারের দু‘আ-১
ذَهَبَ الظَّمَأُ، وَابْتَلَّتِ
الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
উচ্চারণঃ যাহাবায যামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূক্বু, ওয়া সাবাতাল আজরু, ইন শা-আল্লা-হ।
অর্থঃ পিপাসা চলে গেল, শিরা উপশিরা আর্দ্র হলো এবং মহান আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কার নিশ্চিত (পাওনা) হলো।”[2]
যিকর নং ১৬০ : ইফতারের দু‘আ-২
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) ইফতারের সময় বলতেন :
اللهم إني أسألك برحمتك التي وسعت كل
شيء أن تغفر لي
উচ্চারণ : “আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আসআলূকা বিরা‘হমাতিকাল্লাতী ওয়াসি‘আত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরালী।
অর্থঃ “হে আল্লাহ, আপনার সর্বব্যপী রহমতের ওসীলা দিয়ে আমি আপনার কাছে চাইছি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।”[3]
যিকর নং ১৬১ : ইফতারের দু’আ-৩
একটি যয়ীফ বা অনির্ভরযোগ্য হাদীসে নিম্নের দু’আটি বর্ণিত হয়েছেঃ
اللهم لك صمت وعلى رزقك أفطرت - فتقبل
مني إنك أنت السميع العليم
অর্থঃ “হে আল্লাহ, আপনার জন্যই আমি সিয়াম পালন করেছি এবং আপনার রিযক দ্বারা ইফতার করেছি। অতএব আপনি আমার নিকট থেকে (আমার এই কর্ম) কবুল করে নিন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।” হাদীসটি যয়ীফ।[4]
যিকর নং ১৬২ : খাবারের পূর্বের যিকর
بسم الله بسم الله في أوله واخره
রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন, খাদ্যগ্রহণের পূর্বে (বিসমিল্লা-হ), অর্থাৎ “আল্লাহর নামে” বলতে। যদি কেহ খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম বলতে ভুলে যায়, তাহলে বলবে : (বিসমিল্লা-হি ফী আউআলিহী ওয়া আ-খিরিহী), অর্থাৎ “আল্লাহর নামে এর প্রথমে এবং এর শেষে”।[5]
যিকর নং ১৬৩ : খাবারের পরের যিকর
الحمد لله الذي أطعمني هذا الطعامَ
ورزَقنيه من غير حولٍ مني ولا قوة
উচ্চারণ: আল‘হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত‘আমানী হা-যাত্ব ত্বা‘আ-মা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি ‘হাওলিম মিন্নী ওয়ালা- ক্বুওয়াহ।
অর্থঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এই খাদ্য খাইয়েছেন এবং আমাকে তা প্রদান করেছেন, আমার কোনো অবলম্বন ও ক্ষমতা ছাড়াই।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যদি কেউ খাদ্য গ্রহণ করে এই কথাগুলি বলে তাহলে তার পূর্বাপর সকল (সাধারণ সগীরা) গোনাহ ক্ষমা করা হবে।”[6]
যিকর নং ১৬৪ : গৃহকর্তার জন্য অতিথির দু‘আ-১
اللهم أطعم من أطعمني وأسق من أسقاني
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা, আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী, ওয়াসক্বি মান আসক্বা-নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ, যে আমাকে খাইয়েছে তাকে আপনি খাদ্য প্রদান করুন এবং যে আমাকে পান করিয়েছে তাকে আপনি পানীয় প্রদান করুন।[7]
যিকর নং ১৬৫ : গৃহকর্তার জন্য অতিথির দু‘আ-২
أفطر عندكم الصائمون، وأكل طعامكم
الأبرار، وصلّت عليكم الملائكة
উচ্চারণ: আফত্বারা ‘ইনদাকুমুস স্বা-ইমূন, ওয়া আকালা ত্ব‘আ-মাকুমুল আবরা-র, ওয়া স্বাল্লাত ‘আলাইকুমুল মালা-ইকাহ।
অর্থঃ তোমাদের কাছে রোযাদারগণ ইফতার করুন, তোমাদের খাদ্য নেককার মানুষেরা ভক্ষণ করুন এবং তোমাদের জন্য ফিরিশতাগণ দু‘আ করুন।
কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ইফতার করালে বা সিয়াম ছাড়া অন্য সময়ে কোনো খাদ্য খাওয়ালে তিনি এ কথা বলে তার জন্য দু‘আ করতেন।[8]
যিকর নং ১৬৬ : গৃহকর্তার জন্য অতিথির দু‘আ-৩
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا
رَزَقْتَهُمْ، واغْفِرْ لَهُمْ، وارْحَمْهُمْ
“হে আল্লাহ, আপনি এদের যে রিযক প্রদান করেছেন তাতে বরকত প্রদান করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদেরকে রহমত করুন।”
আব্দুল্লাহ্ বিনু বিশর বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার পিতার বাড়িতে আগমন করেন। তিনি তার সামনে কিছু খাদ্য পেশ করেন। তিনি তা থেকে কিছু খাদ্য গ্রহণ করেন। আমার পিতা তাঁর নিকট দু’আ চান। তখন তিনি এ কথাগুলি বলেন।[9]
[1] সুনানুত তিরমিযী ৫/৫০৪, নং ৩৪৫১, সুনানুদ দারিমী ২/৭, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৩৯।
[2] হাদিসটি গ্রহনযোগ্য। সুনানু আবী দাউদ ২/৩০৬, নং ২৩৫৭।
[3] হাদিসটি গ্রহনযোগ্য। সুনানু ইবনি মাজাহ ১/৫৫৭, নং ১৭৫৩, মিসবাহুয যুজাজাহ ২/৮১।
[4] সুনানু আবী দাউদ ২/৩০৬, নং ২৩৫৮, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৫৬, যাকারিয়্যা, আল-ইখবার ১১০।
[5] সুনানুত তিরমিযী ৪/২৮৮, নং ১৮৫৮, সুনানু ইবনি মাজাহ ২/১০৮৬, নং ৩২৬৪। হাদিসটি সহীহ।
[6] সুনানুত তিরমিযী ৫/৫০৮, ৩৪৫৮, আবু দাউদ ৪/৪২, নং ৪০২৩, ইবনু মাজাহ ২/১০৩৯, নং ৩২৮৫।
[7] সহীহ মুসলিম ৩/১৬২৫, নং ২০৫৫।
[8] সহীহ ইবনু হিব্বান ১২/১০৭, সুনানু আবী দাউদ ৩/৩৬৭, সুনানি ইবনি মাজাহ ১/৫৫৬, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৩৪।
[9] মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৬১৫।
No comments