রাহে বেলায়াত প্রথম অধ্যায় অনুচ্ছেদ-১৭ এবং ১৮
ছ. বিশেষ যিকরের বিশেষ ফযীলত
উপরের হাদীসগুলি থেকে আমরা সাধারণভাবে যিকরের গুরুত্ব ও ফযীলত জানতে পারলাম। কোনো মুমিন যেকোনো- ভাবে মুখে, মনে বা কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ করলে উপরের হাদীসগুলিতে বর্ণিত অপরিমেয় ফযীলত লাভ করবেন বলে আমরা আশা করি। যিকরের ফযীলতের উপর আরো অগণিত হাদীস রয়েছে, যেগুলিতে যিকরের বিশেষ বিশেষ শব্দ ও বাক্য উল্লেখ করে সেই বাক্য দ্বারা যিকর করলে মুমিন কিভাবে ও কী পরিমাণ মর্যাদা, রহমত, বরকত ও সাওয়াব অর্জন করবেন তা রাসূলুল্লাহ (সা.) উল্লেখ করেছেন। এ সকল হাদীসগুলিকে আমরা দুই প্রকারে ভাগ করতে পারি। প্রথম প্রকারের হাদীসে সর্বদা বেশি বেশি পালন করার জন্য কিছু যিকর ও তার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকারের হাদীসে বিশেষ সময়ে পালনের জন্য কিছু যিকরের কথা উল্লেখ করে তার ফলাফল বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর হাদীসগুলি আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে সময় নির্ধারিত যিকরের আলোচনার সময় উল্লেখ করব, ইনশাআল্লাহ। সেখানে আমরা দেখব সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা, ফরয সালাতের পর, ঘুমানোর সময়, শেষ রাত্রে ইত্যাদি সময়ে পালনের জন্য বিশেষ বিশেষ যিকর মহানবী (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন। সাথে সাথে সেসকল যিকর পালনের ফলে মুমিন জাগতিক, দৈহিক, পারিবারিক, মানসিক, আত্মিক ও পারলৌকিক দিক দিয়ে কিভাবে লাভবান হবেন ও কী মহান মর্যাদা, উন্নতি অর্জন করবেন তার বিবরণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বিস্তারিতভাবে উম্মতকে জানিয়েছেন।
জ. মাসনূন যিকরের শ্রেণীবিভাগ
‘মাসনূন’ অর্থ সুন্নাত-সম্মত বা সুন্নাত নির্দেশিত। রাসূলে আকরাম (সা.) আমাদেরকে কেবলমাত্র শুধু যিকরের উৎসাহ দিয়েছেন তাই নয়, কিভাবে কখন কোন্ কোন্ শব্দ উচ্চারণ করে আল্লাহর যিকর করতে হবে তাও বিস্তারিত শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি উম্মতকে আলোকিত রাজপথের উপর রেখে গিয়েছেন। উম্মতের কাজ শুধু তার অনুসরণ করা।
আমি ইতঃপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, মাসনূন যিকর সবই বাক্য, শুধুমাত্র নাম বা শব্দ জপ করে কোনো যিকর সুন্নাতে বর্ণিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণের আচরিত বা নির্দেশিত এ জাতীয় যিকরসমূহকে আমরা নিম্নরূপে বিভক্ত করতে পারি :
১. আল্লাহর একত্ব জ্ঞাপক বাক্যাদি ;
২. আল্লাহর পবিত্রতা জ্ঞাপক বাক্যাদি ;
৩. আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপক বাক্যাদি ;
৪. আল্লার শ্রেষ্ঠত্ব জ্ঞাপক বাক্যাদি ;
৫. আল্লাহর উপর নির্ভরতা জ্ঞাপক বাক্যাদি ;
৬. আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা বিষয়ক বাক্যাদি ;
৭. আল্লাহর নিকট সাধারণ প্রার্থনা, দু‘আ বা জাগতিক ও পারলৌকিক যে কোনো কল্যাণ যাচ্ঞা করা বিষয়ক বাক্যাদি;
৮. আল্লাহর নিকট তাঁর মহান রাসূল (সা.)-এর জন্য সালাত ও সালাম প্রার্থনা জ্ঞাপক বাক্যাদি;
৯. আল্লাহর কালাম বা কুরআন করীম পাঠের মাধ্যমে যিকর। কুরআন কারীম তিলাওয়াত সকল যিকরের মূল। এর বাইরের মাসনূন যিকরের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর স্তুতি, প্রশংসা, ক্ষমতা বা পবিত্রতা জপ করেন অথবা সাথে সাথে কিছু প্রার্থনা করেন। এই প্রার্থনা নিজের ক্ষমার জন্য, প্রয়োজন মেটানোর জন্য বা অন্য কারো জন্য, বিশেষত মহানবী (সা.)-এর মর্যাদার জন্য। আমি ৯ প্রকার যিকর সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আল্লাহর তাওফীক প্রার্থনা করছি।
No comments