রাহে বেলায়াত প্রথম অধ্যায় অনুচ্ছেদ-২৯
জ. মাসনূন যিকরের শ্রেণীবিভাগ - ৭. দু‘আ বা প্রার্থনা বিষয়ক বাক্যাদি - (খ) দু‘আর সুন্নাত-সম্মত নিয়ম ও আদব - সপ্তম ভাগ
২০. দু‘আর শেষে হাত দিয়ে মুখমন্ডল মোছা
দু‘আ বা মুনাজাতের
সময় হাত উঠানোর
বিষয়ে
যেরূপ
অনেকগুলি
সহীহ
হাদীস
পাওয়া
যায়, দু‘আ শেষে
হাত দুটি
দ্বারা
মুখমন্ডল
মোছার
বিষয়ে
তদ্রূপ
কোনো
হাদীস
পাওয়া
যায় না। এ বিষয়ে
দুই একটি
হাদীস
বর্ণিত
হয়েছে
অত্যন্ত
দুর্বল
সনদে।
একটি
হাদীসে
বলা হয়েছেঃ
إذا فرغتم فامسحوا بها وجوهكم
“দু‘আ শেষ হলে তোমরা হাত দু’টি দিয়ে তোমদের মুখ মুছবে।” হাদীসটি আবু দাউদ সংকলিত করে বলেনঃ “এই হাদীসটি কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, সবগুলিই অত্যন্ত দুর্বল ও একেবারেই অচল। এই সনদটিও দুর্বল।”[1]
অন্য হাদীসে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ لَمْ يَحُطَّهُمَا
حَتَّى يَمْسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ
“রাসূলুল্লাহ
(সা.) যদি দু‘আ করতে
হাত তুলতেন
তাহলে
হাত দু’টি দ্বারা
মুখ না মুছে
তা নামাতেন
না।”[2]
হাদীসটির সনদ দুর্বল। কারণ হাম্মাদ ইবনু ঈসা আল-জুহানী (মৃ. ২০৮ হি) নামক এক ব্যক্তি এই হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী। তিনি বলেছেন যে, তিনি তার উস্তাদ হানযালাহ ইবনু আবী সুফিয়ান, তিনি সালেম, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু উমার, তিনি উমার (রাঃ) থেকে হাদীসটি শুনেছেন। হাদীসটি উমার থেকে অন্য কোনো সূত্রে কেউ বর্ণনা করেননি। উমরের অন্য কোনো ছাত্র বা আব্দুল্লাহর অন্য কোনো ছাত্র, বা সালেমের
অন্য
কোনো
ছাত্র
বা হানযালার
অন্য
কোনো
ছাত্র
এই হাদীসটি
বর্ণনা
করেননি।
মূলত
এই হাম্মাদই
একমাত্র
ব্যক্তি
যিনি
হাদীসটিকে
রাসূলুল্লাহ
(সা.)-এর কর্ম
বলে দাবি
করেছেন।
এই হাম্মাদ
জীবনে
যতগুলি
হাদীস
বর্ণনা
করেছেন
সবগুলি
হাদীস
পর্যালোচনা
করে তার যুগের
হাদীসের
ইমামগণ
দেখেছেন
যে, তিনি
হাদীস
ঠিকমতো
মুখস্থ
রাখতে
পারতেন
না। তার বর্ণিত
সব হাদীসের
সনদ ও শব্দ
তিনি
উল্টেপাল্টে
গুলিয়ে
ফেলেছেন।
এজন্য
তাঁরা
তাঁকে
‘যয়ীফ’
বা দুর্বল
বর্ণনাকারী
বলে ঘোষণা
করেছেন।
কোনো
কোনো
মুহাদ্দিস
বলেছেন
যে, তিনি
ইচ্ছা
করে বানোয়াটভাবে এসকল উল্টোপাল্টা হাদীস বলেছেন।
তৃতীয়
হিজরীর
প্রখ্যাত
মুহাদ্দিস
আবু যুর’আ (মৃ. ২৬৪ হি) বলেন,
হাদীসটি
মুনকার
বা একেবারেই
দুর্বল।
আমার
ভয় হয় হাদীসটি
ভিত্তিহীন
বা বানোয়াট।
একারণে
কোনো
কোনো
আলিম
দু’আর পরে হাত দু’টি দিয়ে
মুখ মোছাকে
বিদ’আত বলেছেন।
কারণ
এ বিষয়ে
একটিও
সহীহ,
হাসান
বা অল্প
দুর্বল
কোনো
হাদীস
নেই।
এছাড়া
দু‘আর সময় হাত উঠানো
সাহাবী
ও তাবেয়ীগণের
যুগে
পরিচিত
ও প্রচলিত
ছিল, কিন্তু
দু‘আ শেষে
হাত দিয়ে
মুখ মোছার
কোনো
প্রকার
উল্লেখ
পাওয়া
যায় না।[3]
অপরপক্ষে
কোনো
কোনো
আলিম
উপরের
হাদীসের
দুর্বলতা
স্বীকার
করেও
একে গ্রহণযোগ্য
বলে উল্লেখ
করেছেন।
৯ম হিজরী
শতকের
অন্যতম
মুহাদ্দিস
ইবনু
হাজার
(মৃ. ৮৫২ হি) বলেন,
হাদীসটির
সনদ দুর্বল
হলেও
অনেকগুলি
সূত্রে
বিভিন্ন
সনদে
বর্ণিত
হওয়ার
কারণে
মূল বিষয়টিকে
গ্রহণযোগ্য
বা হাসান
বলা উচিত।[4]
সুনানে
তিরমিযীর
কোনো
কেনো
পান্ডুলিপিতে
দেখা
যায় যে ইমাম
তিরিমিযী
হাদীসটি
হাসান
বা সহীহ
বলেছেন।
কিন্তু
ইমাম
নববী
(মৃ. ৬৭৬ হি) বলেন
যে, সুনানে
তিরমিযীর
সকল নির্ভরযোগ্য
ও প্রচলিত
কপি ও পান্ডুলিপিতে
ইমাম
তিরমিযীর
মতামত
হিসাবে
উল্লেখ
আছে যে, হাদীসটি
গরীব
বা দুর্বল।
ইমাম
নববীও
এ বিষয়ক
সকল হাদীস
যয়ীফ
বলে উল্লেখ করেছেন।[5] ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম বাইহাকী (মৃ. ৫৬৮ হি) বলেনঃ দু‘আ শেষে দুই হাত দিয়ে মুখ মোছার বিষয়ে হাদীস যয়ীফ, তবে কেউ কেউ সে হাদীসের উপর আমল করে থাকে।”[6]
তৃতীয়
হিজরী
শতকের
প্রখ্যাত
মুহাদ্দিস
আব্দুর
রাজ্জাক
সান’আনী (মৃ. ২১১ হি) তার উস্তাদ
ইমাম
মা’মার ইবনু
রাশিদ
(মৃ. ১৫৪ হি) থেকে
ইমাম
মুহাম্মাদ
ইবনু
মুসলিম
ইবনু
শিহাব
আয-যুহরী
(মৃ. ১২৫ হি) থেকে
বিষয়টি
বর্ণনা
করে বলেন,
আমি দেখেছি
যে, কখনো
কখনো
আমার
উস্তাদ
মা’মার এভাবে
দু‘আর শেষে
মুখ মুছতেন
এবং আমিও
কখনো
কখনো
তা করে থাকি।[7]
এ থেকে
বুঝা
যায় যে তাবেয়ীগণের
যুগে
কেউ কেউ দু‘আ-মুনাজাতের
শেষে
এভাবে
মুখ মুছতেন।
এভাবে
আমরা
দেখি
যে, দু‘আর সময় হাত উঠানো
যেরূপ
প্রমাণিত
সুন্নাত,
দু‘আ শেষে
হাত দুটি
দিয়ে
মুখমন্ডল
মুছা
অনুরূপ
প্রমাণিত
বিষয়
নয়। এ বিষয়ে
দু’একটি
দুর্বল
হাদীস
আছে, যার সম্মিলিত
রূপ থেকে
কোনো
কোনো
আলিমের
মতে এভাবে
মুখ মোছা
জায়েয
বা মুস্তাহাব।
আল্লাহই
ভালো
জানেন।
[1] সুনানু
আবী দাউদ
২/৭৮, নং ১৪৮৫,
মুসতাদরাক
হাকিম
১/৭১৯।
[2] সুনানুত
তিরমিযী
৫/৪৬৩, নং ৩৩৮৬।
[3] সিলসিলাতুস
সহীহাহ
২/১৪৪-১৪৫, ফাদ্দুল
বিয়া,
পৃ. ৫২-৫৩, ইরওয়াউল
গালীল
২/১৭৮।
[4] ইবনু
হাজার,
বুলুগুল
মারাম,
পৃ. ২৮৪।
[5] নাবাবী,
আল-আযকার,
পৃ. ৫৬৯।
[6] বাইহাকী,
আস-সুনানুল
কুবরা
২/২১২।
[7] আব্দুর
রাজ্জাক
সান’আনী, আল-মুসান্নাফ
২/২৪৭।
No comments