নবী-রাসূলগণের দা'ওয়াতী মূলনীতি - অধ্যায় -০৮
নবী-রাসূলগণের দা'ওয়াতী মূলনীতি - অধ্যায় -০৮, মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী
৮। নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াতী মূলনীতি (أصول من دعوة الأنبياء والرسل)
১। তাওহীদ, আল্লাহর উপর ঈমান এবং শরীকবিহীন একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে দা‘ওয়াত দান ( الدعوة إلى التوحيد والإيمان بالله وعبادته وحده لا شريك له)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَا
أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا
إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ ﴾ [الأنبياء: 25]
‘আর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এ অহি অবতরণ করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া:২৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ
وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4) ﴾ [الإخلاص: 1 - 4]
‘বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। (১) আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। (২) তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। (৩) আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই’ (সূরা আল-ইখলাছ: ১-৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا
اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ﴾ [النحل: 36]
‘আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এমর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর ত্বাগূতকে’ (সূরা আন-নাহল: ৩৬)।
২। মানুষের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌঁছানো এবং তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করা ও তাদেরকে নছীহত করা (إبلاغ دين الله إلى الناس،
والنصح لهم)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿الَّذِينَ
يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا
اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا (39) ﴾ ... [الأحزاب: 39]
‘যারা আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দেয় ও তাঁকে ভয় করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট’ (সূরা আল-আহযাব: ৩৯)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿يَاأَيُّهَا
الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ
فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ
لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ (67) ﴾ [المائدة: 67]
‘হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও এবং যদি তুমি না কর, তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না’ (সূরা আল-মায়েদা: ৬৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿هَذَا بَلَاغٌ لِلنَّاسِ وَلِيُنْذَرُوا بِهِ وَلِيَعْلَمُوا
أَنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ وَلِيَذَّكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ ﴾[إبراهيم: 52]
‘ইহা মানুষের জন্য পয়গাম। আর যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনি কেবল এক ইলাহ, আর যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা ইব্রাহীম: ৫২)।
৩। গ্রাম-গঞ্জ, বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার সর্বত্রই দা‘ওয়াতের বিস্তার ঘটানো (دعوة الناس وغشيانهم في المدن
والقرى والبيوت والأسواق)
আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ) সম্পর্কে বলেন:
﴿اذْهَبْ
أَنْتَ وَأَخُوكَ بِآيَاتِي وَلَا تَنِيَا فِي ذِكْرِي (42) اذْهَبَا إِلَى
فِرْعَوْنَ إِنَّهُطَغَى (43) فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ
يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى (44) قَالَا رَبَّنَا إِنَّنَا نَخَافُ أَنْ يَفْرُطَ
عَلَيْنَا أَوْ أَنْ يَطْغَى (45) قَالَ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ
وَأَرَى (46) ﴾[طه: 42 - 46]
‘তুমি ও তোমার ভাই আমার আয়াতসমূহ নিয়ে যাও এবং আমাকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কোনরূপ অলসতা করো না। (৪২) তোমরা দু’জন ফির‘আউনের নিকট যাও, কেননা সে তো সীমালংঘন করেছে। (৪৩) তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (৪৪) তারা বলল, হে আমাদের রব! আমরা তো আশংকা করছি যে, সে আমাদের উপর বাড়াবাড়ি করবে অথবা সীমালংঘন করবে। (৪৫) তিনি বললেন, তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি’ (সূরা ত্বহা: ৪২-৪৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ
أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ )
[يوسف: 108]
‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।
وكان - صلى الله عليه وسلم - يطوف على الناس في مكة في موسم الحج
ويقول لهم: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ قُولُوا: لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله تُفْلِحُوا».
صحيح/ أخرجه أحمد برقم (16603)
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জের সময় মক্কায় মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের বলতেন, হে মানব সমাজ! তোমরা বল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, তাহলে সফলকাম হবে (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬০৩, ছহীহ)।
وَعَنْ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنّ النّبِيّ -
صلى الله عليه وسلم - رَكِبَ حِمَاراً، عَلَيْهِ إكَافٌ، تَحْتَهُ قَطِيفَةٌ
فَدَكِيّةٌ، وَأَرْدَفَ وَرَاءَهُ أُسَامَةَ، وَهُوَ يَعُودُ سَعْدَ بْنَ
عُبَادَةَ فِي بَنِي الحَارِثِ بْنِ الخَزْرَجِ، وَذَاكَ قَبْلَ وَقْعَةِ بَدْرٍ،
حَتّىَ مَرّ بِمَجْلِسٍ فِيهِ أَخْلاَطٌ مِنَ المُسْلِمِينَ وَالمُشْرِكِينَ
عَبَدَةِ الأَوْثَانِ، واليَهُودِ. فِيهِمْ عَبْدالله بْنُ أُبَيٍّ، وَفِي
المَجْلِسِ عَبْدالله بْنُ رَوَاحَةَ، فَلَمّا غَشِيَتِ المَجْلِسَ عَجَاجَةُ
الدّابّةِ، خَمّرَ عَبْدالله بْنُ أُبَيّ أَنْفَهُ بِرِدَائِهِ. ثُمّ قَالَ: لاَ تُغَبّرُوا
عَلَيْنَا. فَسَلّمَ عَلَيْهِمُ النّبِيّ - صلى الله عليه وسلم -. ثُمّ وَقَفَ
فَنَزَلَ. فَدَعَاهُمْ إلَى الله وَقَرَأَ عَلَيْهِمُ القُرْآنَ. متفق عليه، أخرجه
البخاري برقم (5663) , ومسلم برقم (1798)، واللفظ له.
উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি গাধায় আরোহণ করলেন, যার উপর জীন (বসার গদি) ছিল এবং তার নিচে একটি ফদকী মখমল বিছানো ছিল। তিনি তার পশ্চাতে উসামাহ (রা.) কে বসালেন। বনী হারিছ ইবনু খাযরাজ গোত্রের এলাকায় তিনি সা‘দ ইবনু উবাদা (রা.)-কে (অসুস্থ অবস্থায়) দেখতে যাচ্ছিলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। তিনি এমন একটি মজলিস অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, মুশরিক, পৌত্তলিক ও ইয়াহূদীরা একত্রে বসেছিল। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও ছিল এবং মজলিসে আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রা.)ও ছিলেন। যখন মজলিসটি সাওয়ারীর ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই তার নাক চাদর দিয়ে ঢেকে নিল। এরপর বলল, আপনারা আমাদের উপর ধূলি উঠাবেন না। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সালাম দিলেন। তারপর তিনি সেখানে থামলেন এবং নামলেন। আর তাদের আল্লাহর পথে দা‘ওয়াত দিলেন এবং তাদের সম্মুখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করলেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৮)।
৪। সর্বদা আল্লাহর প্রশংসা করা এবং সর্বাবস্থায় তার যিকর করা ও তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা (دوام الثناء على الله، وذكره
واستغفاره في جميع الأحوال)
আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আ.) সম্পর্কে বলেন:
(الْحَمْدُ
لِلَّهِ الَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِنَّ
رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ (39)) ... [إبراهيم: 39]
‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ঈসমাইল ও ইসহাককে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দো‘আ শ্রবণকারী’ (সূরা ইব্রাহীম: ৩৯)।
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ
- صلى الله عليه وسلم - يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أحْيَانِهِ. أخرجه مسلم برقم
(373)
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৭৩)।
وَعَنِ الأَغَرِّ المُزَنِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ
اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِنَّهُ لَيُغَانُ عَلَى قَلْبِي، وَإِنِّي
لأَسْتَغْفِرُ اللهَ فِي اليَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ». أخرجه مسلم برقم (2702)
‘আগার আল মুযানী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আমার অন্তরে কখনো কখনো অলসতা দেখা দেয়, তাই আমি দৈনিক একশ’ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রর্থনা করে থাকি (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০২)।
৫। আল্লাহর দিকে ও যে পথ তার কাছে পৌঁছে দেয়, সেদিকে এবং ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা মানুষদের যে ওয়াদা করেছেন, সে দিকে তাদেরকে আহবান করা (الدعوة إلى الله، وإلى الطريق
الموصل إليه، وما وعد الله به الناس يوم القيامة)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ هَذِهِ
سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي
وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ (108)) [يوسف: 108]
‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(ادْعُ إِلَى
سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ
بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ
وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ (125)) ... [النحل: 125].
‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতর পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রব-ই জানেন কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়াত প্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন’(সূরা আন-নাহল: ১২৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ
أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ
فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ (7)) ... [الشورى: 7].
‘আর এভাবেই আমি তোমার উপর আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি, যাতে তুমি মূল জনপদ ও তার আশপাশের বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করতে পার, আর যাতে ‘একত্রিত হওয়ার দিন’-এর ব্যাপারে সতর্ক করতে পার, যাতে কোন সন্দেহ নেই, সেদিন একদল থাকবে জান্নাতে, আরেক দল যাবে জ্বলন্ত আগুনে’(সূরা আশ-শুরা: ৭)।
৬। দা‘ওয়াত ও ইবাদত উভয়ের মাঝে সমতা বজায় রাখা (التوازن بين العبادة والدعوة)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَاأَيُّهَا
الْمُزَّمِّلُ (1) قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا (2) نِصْفَهُ أَوِ انْقُصْ
مِنْهُ قَلِيلًا (3) أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا (4))
[المزمل: 1 - 4].
‘হে বস্ত্রাবৃত! (১) রাত্রি জাগরণ কর, তবে কিছু অংশ ব্যতীত। (২) রাতের অর্ধেক কিংবা তারচেয়ে কিছুটা কম কর। (৩) অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আর স্পষ্ট ভাবে ধীরে ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর’(সূরা আল-মুযযাম্মিল: ১-৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(يَاأَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ (1) قُمْ فَأَنْذِرْ (2) وَرَبَّكَ
فَكَبِّرْ (3) وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ (4) وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ (5)) ... [المدثر:
1 - 5]
‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! (১) উঠ, তারপর সতর্ক কর। (২) আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। (৩) এবং তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র কর। (৪) আর অপবিত্রতা বর্জন কর’ (সূরা আল-মুদ্দাছছির: ১-৫)।
৭। জ্ঞানার্জন, আমল ও জ্ঞানদানের মাঝে সমতা সৃষ্টি করা (التوازن بين العلم والعمل
والتعليم)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَكِنْ
كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ
تَدْرُسُونَ (79)) [آل عمران: 79].
‘বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে’ (সূরা আলে ইমরান: ৭৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا
يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ
يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو
الْأَلْبَابِ (9)) [الزمر: 9].
‘যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিদজাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখেরাতকে ভয় করে এবং তার রব-এর রহমত প্রত্যাশা করে (সে কি তার সমান যে এরূপ করে না)। বল, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান? বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা আয-যুমার: ৯)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَالَّذِينَ
يُمَسِّكُونَ بِالْكِتَابِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ
الْمُصْلِحِينَ ) [الأعراف: 170]
‘আর যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং ছালাত কায়েম করে, নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করি না’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৭০)।
৮। বোধগম্য ভাষায় মানুষকে দা‘ওয়াত দান (دعوة الناس بلغتهم)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا
أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ
اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (4))
... [إبراهيم: 4]
‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের নিকট বর্ণনা দেয়।সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা ইব্রাহীম: ৪)।
৯। আল্লাহর দিকে আহবান করে কাফের শাসকদের নিকট বার্তা প্রেরণ (الكتابة إلى ملوك الكفار
بالدعوة إلى الله)
আল্লাহ তা‘আলা সাবার রাণীর কথা উল্লেখ করে বলেন:
(قَالَتْ
يَاأَيُّهَا الْمَلَأُ إِنِّي أُلْقِيَ إِلَيَّ كِتَابٌ كَرِيمٌ (29) إِنَّهُ مِنْ
سُلَيْمَانَ وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (30) أَلَّا
تَعْلُوا عَلَيَّ وَأْتُونِي مُسْلِمِينَ (31)) [النمل: 29 - 31].
‘সে বলল, হে পরিষদবর্গ! নিশ্চয় আমাকে এক সম্মানজনক পত্র দেয়া হয়েছে। (২৯) নিশ্চয় এটা সুলাইমানের পক্ষ থেকে। আর নিশ্চয় এটা পরম করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। (৩০) যাতে তোমরা আমার প্রতি উদ্ধত না হও এবং অনুগত হয়ে আমার কাছে আস’ (সূরা আন-নামল: ২৯-৩১)।
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنّ نَبِيّ الله - صلى الله
عليه وسلم - كَتَبَ إلَى كِسْرَى، وَإِلَى قَيْصَرَ، وَإلَى النّجَاشِي، وَإلَى
كُلّ جَبّارٍ، يَدْعُوهُمْ إلَى اللهِ تَعَالَى. أخرجه مسلم برقم (1774)
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিসরা (পারস্যের সম্রাট), কায়ছার (রোমের সম্রাট) ও নাজাশী এবং অন্যান্য প্রভাবশালী শাসকগণের নিকট পত্র লিখেন, যাতে তিনি তাদের আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৪)।
১০। উপদেশ ও শিক্ষার জন্য নবীগণের সাথে বিভিন্ন জাতির অবস্থা উল্লেখ করা (ذكر أحوال الأمم مع الأنبياء
للعظة والاعتبار)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَكُلًّا
نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ
وَجَاءَكَ فِي هَذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ (120))
[هود: 120]
‘আর রাসূলদের এসকল সংবাদ আমি তোমার নিকট বর্ণনা করছি, যার দ্বারা আমি তোমার মনকে স্থির করি এবং এতে তোমার নিকট এসেছে সত্য, মুমিনদের জন্য শিক্ষা ও উপদেশ’ (সূরা হূদ: ১২০)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِأُولِي الْأَلْبَابِ مَا
كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ
كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةًلِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ (111)) [يوسف: 111].
‘তাদের এ কাহিনীগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা, এটা কোন বানানো গল্প নয়, বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর হেদায়াত ও রহমত ঐ কওমের জন্য, যারা ঈমান আনে’ (সূরা ইউসূফ: ১১১)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(فَاقْصُصِ
الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ (176)) [الأعراف: 176]
‘অতএব, তুমি কাহিনী বর্ণনা কর, যাতে তারা চিন্তা করে’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৭৬)।
১১। দা‘ওয়াত দানে অটল থাকা এবং যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করা (الاستمرار بالدعوة، وعدم
الالتفات إلى المعارضين)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاصْدَعْ
بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ (94) إِنَّا كَفَيْنَاكَ
الْمُسْتَهْزِئِينَ (95) الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ
فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ (96)) ... [الحجر: 94 - 96]
‘সুতরাং তোমাকে যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচার কর এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। (৯৪) নিশ্চয় আমি তোমার জন্য উপহাসকারীদের বিপক্ষে যথেষ্ট। (৯৫) যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ নির্ধারণ করে। অতএব, তারা অচিরেই জানতে পারবে’(সূরা আল-হিজর: ৯৪-৯৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(يَاأَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ
رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ
مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ (67)) [المائدة:
67]
‘হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও এবং যদি তুমি না কর, তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না’ (সূরা আল-মায়েদা: ৬৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَلَا يَصُدُّنَّكَ عَنْ آيَاتِ اللَّهِ بَعْدَ إِذْ أُنْزِلَتْ
إِلَيْكَ وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ (87))
[القصص: 87].
‘আর আল্লাহর আয়াতসমূহ তোমার প্রতি অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে তা থেকে বিরত রাখতে না পারে, তোমার রবের দিকে তুমি আহবান কর এবং তুমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ: ৮৭)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَلَا تُطِعِ
الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا (52)) ... [الفرقان: 52]
‘সুতরাং তুমি কাফেরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি কুরআনের সাহায্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম কর’ (সূরা আল-ফুরক্বন: ৫২)।
১২। ভয় ও ক্ষতির আশঙ্কা হলে কাফেরদের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করা (مداراة الكفار عند الخوف
والخطر)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا
يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ
وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا
مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ
(28)) [آل عمران: 28]
‘মুমিনরা যেন মুমিনদের ব্যতীত কাফেরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোন ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন এবং আল্লাহর নিকটই প্রত্যাবর্তন’ (সূরা আলে ইমরান: ২৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ
أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ
صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ (106))
[النحل: 106]
‘যে ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে এবং যাদের অন্তর কুফরী দ্বারা উন্মুক্ত হয়েছে, তাদের উপরই আল্লাহর ক্রোধ এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা আযাব; ঐ ব্যক্তি ছাড়া, যাকে বাধ্য করা হয় (কুফরী করতে) অথচ তার অন্তর থাকে ঈমানে পরিতৃপ্ত’ (সূরা আন-নাহল: ১০৬)।
১৩। মানুষের প্রতি দয়া ও কোমল আচরণ করা। আর তাদেরকে ক্ষমা ও মার্জনা করা (رحمة الناس واللين لهم، والعفو
والصفح عنهم)
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَمَا
أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ (107)) ... [الأنبياء: 107]
‘আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবেই প্রেরণ করেছি’(সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ
فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْحَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ
وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ
عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّالْمُتَوَكِّلِينَ (159)) [آل عمران: 159].
‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তারপর আপনি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেন:
(خُذِ
الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ (199)) ...
[الأعراف: 199].
‘তুমি ক্ষমা প্রদর্শন কর এবং ভালো কাজের আদেশ দাও। আর মূর্খদের থেকে বিমুখ থাক’(সূরা আল-আ‘রাফ:১৯৯)।
আল্লাহ তা‘আলা মূসা ও হারূন (আলাইহুমাছ-ছালাতু ওয়াস-সালাম)-কে বলেন:
(اذْهَبَا
إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى (43) فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ
يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى (44)) [طه: 43 - 44].
‘তোমরা দু’জন ফির‘আউনের নিকট যাও। কেননা সে তো সীমালংঘন করেছে। (৪৩) তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (সূরা ত্বহা: ৪৩-৪৪)।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেন:
(وَإِنَّ
السَّاعَةَ لَآتِيَةٌ فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ (85)) [الحجر 85]
‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে। সুতরাং তুমি সুন্দরভাবে তাদেরকে এড়িয়ে যাও’ (সূরা আল-হিজর: ৮৫)।
১৪। সৃষ্টির প্রতি বন্ধুত্ব, দয়া ও সহানুভুতি দেখানো (ال الرأفة والحرص والشفقة
على الخلق)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَقَدْ
جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ
عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ (128)) ... [التوبة: 128].
‘নিশ্চয় তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তা তার জন্য কষ্টদায়ক যা তোমাদেরকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আত-তাওবা: ১২৮)।
১৫। সকল কাজে সততা অবলম্বন করা (الصدق في جميع الأمور)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِي
جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ أُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ (33)) [الزمر:33].
‘আর যে সত্য নিয়ে এসেছে এবং যে তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই হল মুত্তাকী’ (সূরা আয-যুমার: ৩৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا
نَبِيًّا (41)) ... [مريم: 41].
‘আর স্মরণ কর এই কিতাবে ইবরাহীমকে। নিশ্চয় তিনি ছিলেন পরম সত্যবাদী, নবী’ (সূরা মারয়াম: ৪১)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(يَاأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119)) [التوبة:
119].
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (সূরা আত-তাওবা: ১১৯)।
১৬। সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করা (الصبر في جميع الأحوال)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ
كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَى مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّى
أَتَاهُمْ نَصْرُنَا وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ وَلَقَدْ جَاءَكَ مِنْ
نَبَإِ الْمُرْسَلِينَ (34)) [الأنعام: 34]
‘আর অবশ্যই তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে অস্বীকার করা হয়েছে, অতঃপর তারা তাদেরকে অস্বীকার করা ও কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেছেন, যতক্ষণ না আমার সাহায্য তাদের কাছে এসেছে। আর আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই এবং অবশ্যই রাসূলগণের কিছু সংবাদ তোমার কাছে এসেছে’ (সূরা আল-আন‘আম: ৩৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ
الَّذِينَ لَا يُوقِنُونَ (60)) [الروم: 60]
‘অতএব, তুমি ছবর কর। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা হক। আর যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে না, তারা যেন তোমাকে অস্থির করতে না পারে (সূরা আর-রূম: ৬০)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ وَلَا تَحْزَنْ
عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِمَّا يَمْكُرُونَ (127) إِنَّ اللَّهَ مَعَ
الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ (128)) ... [النحل: 127 - 128].
‘আর তুমি ছবর কর। তোমার ছবর তো শুধু আল্লাহর তাওফীকেই। তারা যেসব ষড়যন্ত্র করছে, তুমি সে বিষয়ে সংকীর্ণমনা হয়ো না। (১২৭) নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল’ (সূরা আন-নাহল: ১২৭-১২৮)।
১৭। সকল কাজে ইখলাছ-নিষ্ঠতা বজায় রাখা (الإخلاص في جميع الأمور)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّا
أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ
الدِّينَ (2) أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ) ... [الزمر: 2 - 3].
‘নিশ্চয় আমি তোমার কাছে সত্য সহকারে এই কিতাব নাযিল করেছি; অতএব আল্লাহর ‘ইবাদত কর, তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। (২) জেনে রেখ! আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদত-আনুগত্য’ (সূরা আয-যুমার: ২-৩)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(هُوَ
الْحَيُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَادْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ الْحَمْدُ
لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (65)) [غافر: 65].
‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা দ্বীনকে তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করে তাঁকে ডাক। সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগতসমূহের রব’ (সূরা গাফের: ৬৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ
الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ
الْقَيِّمَةِ (5)) [البينة: 5].
‘আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে, তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে,ছালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দ্বীন’ (সূরা বাইয়্যিনা: ৫)।
১৮। বদান্যতা, সেবা-যত্ন করা ও বিনয়ী হওয়া (الجود والخدمة والتواضع)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(هَلْ أَتَاكَ
حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ (24) إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ
فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ (25) فَرَاغَ إِلَى أَهْلِهِ
فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ (26) فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ
(27)) .. [الذاريات: 24 - 27]
‘তোমার কাছে কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে? (২৪) যখন তারা তার কাছে আসলেন এবং বললেন, ‘সালাম’, উত্তরে তিনিও বললেন, ‘সালাম’। এঁরা তো অপরিচিত লোক। (২৫) অতঃপর তিনি দ্রুত চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেলেন এবং একটি মোটা-তাজা গো-বাছুর (ভাজা) নিয়ে আসলেন। (২৬) অতঃপর তিনি তা তাদের সামনে পেশ করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা কি খাবে না?’ (সূরা আয-যারিয়াত: ২৪-২৭)।
আল্লাহ তা‘আলা দু’জন মহিলা সম্পর্কে মূসা (আ.)-এর ঘটনা উল্লেখ করে বলেন:
(قَالَ مَا
خَطْبُكُمَا قَالَتَا لَانَسْقِي حَتَّى يُصْدِرَ الرِّعَاءُ وَأَبُونَا شَيْخٌ
كَبِيرٌ (23) فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي
لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ (24)) [القصص: 23 - 24]
‘তিনি বললেন, তোমাদের ব্যাপার কী? তারা বলল, আমরা (আমাদের পশুগুলোর) পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা তাদের (পশুগুলো) নিয়ে সরে যায়। আর আমাদের পিতা একজন অতিবৃদ্ধ। (২৩) তখন মূসা তাদের পক্ষে (পশুগুলোকে) পানি পান করিয়ে দিলেন। তারপর ছায়ায় ফিরে গেলেন এবং বললেন, হে আমার রব, নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী’ (সূরা ক্বাছাছ: ২৩-২৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ
بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَاتَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ
تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ
عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُفُرُطًا (28)) [الكهف: 28]
‘আর তুমি নিজকে ধৈর্যশীল রাখ তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে। তোমার দু’চোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ঐব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার যিকর থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে’ (সূরা আল-কাহাফ: ২৮)।
وَعَنِ عُمَرَ رَضيَ اللهُ عَنهُ قالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ – صلى
الله عليه وسلم – يَقُولُ: «لا تُطْرُونِي كَمَا أطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ
مَرْيَمَ، فَإِنَّمَا أنَا عَبْدُهُ، فَقُولُوا: عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ». أخرجه
البخاري برقم (3445)
উমার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন ঈসা মারইয়াম সম্পর্কে খ্রিস্টানরা বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি তার বান্দা, তাই তোমরা বলবে, আল্লাহর বানদা ও তার রাসূল (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৪৫)।
১৯। পার্থিব জীবনে চাকচিক্যতা থেকে দূরে থাকা (الإعراض عن زينة الحياة الدنيا)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَا
تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ زَهْرَةَ
الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَى
(131) وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ
رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى (132)) [طه: 131 - 132]
‘আর তুমি কখনো প্রসারিত করো না তোমার দু’চোখ সেসবের প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে দুনিয়ার জীবনের জাঁক-জমক স্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসাবে দিয়েছি। যাতে আমি সে বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার রবের প্রদত্ত রিযক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিকতর স্থায়ী। (১৩১) এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে ছালাত আদায়ে আদেশ দাও এবং নিজেও তার উপর অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে কোন রিযক চাই না। আমিই তোমাকে রিযক দেই আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য’ (সূরা ত্বহা: ১৩১-১৩২)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
وَزِينَتُهَا وَمَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَى أَفَلَا تَعْقِلُونَ (60))
... [القصص: 60].
‘আর তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা দুনিয়ার জীবনের ভোগ ও সৌন্দর্য মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা-ই উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি বুঝবে না?’ (সূরা ক্বাছাছ: ৬০)।
২০। সৎকাজে প্রতিযোগিতা করা (المسارعة إلى فعل الخيرات)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَسَارِعُوا
إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ
أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ (133) الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ
وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ
يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ (134)) ... [آل عمران: 133 - 134].
‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্ত্তত করা হয়েছে। (১৩৩) যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান: ১৩৩-১৩৪)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
( سَابِقُوا
إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ
وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ذَلِكَ فَضْلُ
اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ (21))
[الحديد:21]
‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মত। তা প্রস্তত করা হয়েছে যারা আল্লাহ ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনে, তাদের জন্য। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল’ (সূরা আল-হাদীদ: ২১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا
رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ (90)) ... [الأنبياء: 90].
‘তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী’ (সূরা আল-আম্বিয়া: ৯০)।
২১।
(আল্লাহ ও রাসূলের) আনুগত্যে উৎসাহ দান ও অবাধ্যতায় নিরুৎসাহিত করা (الترغيب في الطاعات، والترهيب
من المعاصي)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ
يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (13) وَمَنْ يَعْصِ
اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا
وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ (14)) [النساء: 13 - 14].
‘আর যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা। (১৩) আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে, আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব’ (সূরা আন-নিসা: ১৩-১৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَنْ
جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
(160)) ... [الأنعام: 160].
‘যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ। আর যে অসৎকাজ নিয়ে এসেছে, তাকে অনুরূপই প্রতিদান দেয়া হবে এবং তাদেরকে যুলম করা হবে না’ (সূরা আল-আন‘আম: ১৬০)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ (7) وَمَنْ
يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ (8)) ... [الزلزلة: 7 - 8].
‘অতএব, কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখবে, (৭) আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কাজ করলে তাও সে দেখবে’ (সূরা আয-যিলযাল: ৭-৮)।
২২। জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর কালিমা সুউচ্চ করার চেষ্টা করা (المجاهدة بالنفس والمال لإعلاء
كلمة الله)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّمَا
الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا
وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِيسَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ
الصَّادِقُونَ (15)) ... [الحجرات: 15]
‘মুমিন কেবল তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ’ (সূরা আল-হুজরাত: ১৫)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(لَكِنِ
الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ
وَأُولَئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (88)) ...
[التوبة: 88].
‘কিন্তু রাসূল ও তার সাথে মুমিনরা তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করে, আর সেসব লোকদের জন্যই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম’ (সূরা আত-তাওবা: ৮৮)।
২৩। আল্লাহর পথে জিহাদ করা (الجهاد في سبيل الله)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَكَأَيِّنْ
مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا
أَصَابَهُمْ فِيسَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللَّهُ
يُحِبُّ الصَّابِرِينَ (146)) [آل عمران: 146]
‘আর কত নবী যুদ্ধ করেছেন, তাদের সাথে বহু আল্লাহওয়ালা ছিলেন। তবে আল্লাহর পথে তাদেরকে যা আক্রান্ত করেছে, তার জন্য তারা হতোদ্যম হননি। আর তারা দুর্বল হননি এবং তারা নত হননি। আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান: ১৪৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ
وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ (73)) ...
[التوبة: 73]
‘হে নবী! কাফের এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের উপর কঠোর হও, আর তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম এবং তা কতইনা নিকৃষ্ট স্থান’ (সূরা আত-তাওবা: ৭৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ
لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ (193)) ...
[البقرة: 193]
‘আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফেতনা খতম হয়ে যায় এবং দ্বীন আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। সুতরাং তারা যদি বিরত হয়, তাহলে যালিমরা ব্যতীত (কারো উপর) কোন কঠোরতা নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৩)।
২৪। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা (الأمر بالمعروف والنهي عن
المنكر)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلْتَكُنْ
مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ
وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (104)) [آل عمران:
104]
‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম’ (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(الَّذِينَ
يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا
عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ
وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ
عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي
كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ
وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
(157)) ... [الأعراف: 157]
‘যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যিনি নিরক্ষর নবী; যার গুণাবলী তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যিনি তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেনও বারণ করেন অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্ত্ত হালাল করেন আর অপবিত্র বস্ত্ত হারাম করেন। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করেন। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৭)।
২৫। সুসংবাদ ও ভীতি প্রদর্শন করা (البشارة والنذارة)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَاأَيُّهَا
النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45)
وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا (46) وَبَشِّرِ
الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُمْ مِنَ اللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا (47)) ... [الأحزاب:
45 - 47]
হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে (৪৫) এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসাবে। (৪৬) আর তুমি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে বিরাট অনুগ্রহ' (সূরা আল-আহযাব: ৪৫-৪৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِينَ
وَمُنْذِرِينَ) [الكهف: 56]
‘আর আমি তো রাসূলদেরকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই পাঠিয়েছি’ (সূরা আল-কাহাফ: ৫৬)।
وَعَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ رَسُولُ
الله - صلى الله عليه وسلم -، إذَا بَعَثَ أَحَداً مِنْ أَصْحَابِهِ فِي بَعْضِ
أَمْرِهِ، قَالَ: «بَشِّرُوا وَلاَ تُنَفِّرِوا، وَيَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا».
أخرجه مسلم برقم (1732)
আবু মূসা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তার কোন ছাহাবীকে কোন কাজে পাঠাতেন, তখন তাকে এ কথা বলতেন যে, তোমরা লোকদেরকে শুভ সংবাদ দেবে; ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াবে না, সহজ করবে; কঠিন করবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৩২)।
২৬। মুমিনদের অন্তরকে তাদের রবের সাথে সংযুক্ত করা এবং তারা ঈমান আনলে ঈমানের উপর অবিচল থাকলে তাদেরকে কল্যাণ ও জান্নাতের ওয়াদা দেওয়া ( ربط قلوب المؤمنين بربهم،
ووعدهم بالخير والجنة إذا آمنوا واستقاموا)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ
الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ
الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ
الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ (30) نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ
الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ
فِيهَا مَا تَدَّعُونَ (31) نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ (32)) ... [فصلت: 30 -
32]
‘নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাই আমাদের রব’, অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে অবতীর্ণ হনএবং বলেন, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার ওয়াদাপ্রাপ্ত তোমরা হয়েছিলে। (৩০) ‘আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু ও আখেরাতেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরও থাকবে যা তোমরা দাবী করবে। (৩১) পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ’ (সূরা হা-মীম সাজদা: ৩০-৩২)।
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: كُنْتُ
خَلْفَ رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَوْماً فَقَالَ: يَا غُلاَمُ إِنِّي
أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ، احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ
تُجَاهَكَ، إِذا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَإِذا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ باللهِ،
وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بشَيْءٍ لَمْ
يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ، وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى
أَنْ يَضُرُّوكَ بشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ
عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ». صحيح/ أخرجه أحمد برقم
(2669) , وأخرجه الترمذي برقم (2516)
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পিছনে (আরোহী) ছিলাম। তিনি বললেন: ওহে বালক! আমি তোমাকে কিছু কথা শিখিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর (বিধানসমূহের) হিফাযত করবে, তিনি তোমার হিফাযত করবেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য রাখবে, তাকে তোমার সামনে পাবে। যখন কিছু চাইবে, তখন আল্লার কাছেই চাইবে, যখন সাহায্য চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখ, সমস্ত উম্মতও যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তোমার তাক্বদীরে যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া কোন উপকার তারা তোমার করতে পারবে না। আর সব উম্মত যদি তোমার ক্ষতি করতে একত্রিত হয়ে যায়, তবে তোমার তাক্বদীরে আল্লাহ তা‘আলা যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে আর লিখিত কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে’ (আহমাদ, হা/২৬৬৯; তিরমিযী, হা/২৫১৬)। এ হাদীছটি হাসান-ছহীহ।
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ
- صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا
بَيْنَ رِجْلَيْهِ أضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ» أخرجه البخاري برقم (6474)
সাহল ইবনু সা‘দ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু
(লজ্জাস্থান)-এর হিফাযতের নিশ্চয়তা আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৭৪)।
২৭। একগুঁয়ে কাফের ও মুনাফিকদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করা (الغلظة والشدة على الكفار
والمنافقين المعاندين)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَاأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا
فِيكُمْ غِلْظَةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ (123)) [التوبة:
123].
‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন’ (সূরা আত-তাওবা: ১২৩)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(يَاأَيُّهَا
النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ
وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ (73)) [التوبة: 73]
হে নবী! কাফের এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর এবং তাদের উপর কঠোর হও, আর তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম এবং তা কতইনা নিকৃষ্ট স্থান’ (সূরা আত-তাওবা: ৭৩)।
২৮। দা‘ওয়াতের বিনিময়ে পারিশ্রমিক না চাওয়া (عدم سؤال أو طلب المال على
الدعوة)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ مَا
سَأَلْتُكُمْ مِنْ أَجْرٍ فَهُوَ لَكُمْ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ
وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ (47)) ... [سبأ: 47]
‘বল, ‘আমি তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাইনি, বরং তা তোমাদেরই। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর নিকট রয়েছে এবং তিনি সব কিছুর উপরই সাক্ষী’ (সূরা সাবা: ৪৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا
عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ ) [الشعراء: 109]
‘আর এর উপর আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না; আমার প্রতিদান শুধু জগৎসমূহের রবের নিকট] (সূরা আশ-শুআ‘রা: ১০৯)।
২৯। জ্ঞান অন্বেষণ করা ও মানুষকে তা শিক্ষা দেয়া (طلب العلم وتعليمه الناس)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقُلْ رَبِّ
زِدْنِي عِلْمًا (114)) [طه: 114]
‘হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন’ (সূরা ত্বহা: ১১৪)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(هُوَ الَّذِي
بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ
وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ
قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (2)) ... [الجمعة: 2]
‘তিনিই উম্মীদের[1] মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল’ (সূরা আল-জুমুআ': ২)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَلَكِنْ
كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ
تَدْرُسُونَ (79)) [آل عمران: 79]
‘বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে’ (সূরা আলে ইমরান: ৭৯)।
[1]উম্মী দ্বারা আরবের লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে।
৩০। আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করা, আর সর্বদা ইবাদত ও যিকরের মাধ্যমে রূহ ও শরীরকে শক্তিশালী করা (- تطهير النفس، وتقوية الروح
والبدن بدوام العبادة والذكر)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ
نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ (97) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ
رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ (98) وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ
الْيَقِينُ (99)) ... [الحجر: 97 - 99]
‘আর অবশ্যই আমি জানি যে, তারা যা বলে, তাতে তোমার অন্তর সঙ্কুচিত হয়। (৯৭) সুতরাং তুমি তোমার রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ কর এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (৯৮) আর ইয়াক্বীন আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর’ (সূরা আল-হিজর:৯৭-৯৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا
كَثِيرًا (41) وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا (42)) [الأحزاب: 41 - 42]
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর অধিক যিকর কর (৪১) এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর কর’(সূরা আল-আহযাব: ৪১-৪২)।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ فَاطِمَةَ
أَتَتِ النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - تَسْأَلُهُ خَادِماً، وَشَكَتِ
العَمَلَ، فَقَالَ: «مَا أَلْفَيْتِيهِ عِنْدَنَا» قَالَ: «أَلاَ أَدُلُّكِ عَلَى
مَا هُوَ خَيْرٌ لَكِ مِنْ خَادِمٍ؟ تُسَبِّحِينَ ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ،
وَتَحْمَدِينَ ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ، وَتُكَبِّرِينَ أَرْبَعاًوَثَلاَثِينَ حِينَ
تَأْخُذِينَ مَضْجَعَكِ» متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (3113) , ومسلم برقم
(2728)، واللفظ له
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ফাতিমা (রা.) একজন খাদিমের জন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকটে আসলেন এবং কর্মের-কষ্টের অভিযোগ করলেন। তিনি বললেন, আমার নিকটে তো কোন খাদিম নেই। তিনি বললেন, তবে আমি কি তোমাকে এমন বিষয়ের নির্দেশনা দিবো না, যা তোমার জন্য খাদিমের তুলনায় অধিক উত্তম? যখন তুমি শয্যাগ্রহণ করবে, তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লা-হ এবং ৩৪ বার আল্লা-হু আকবার পড়ে নিবে। (ছহীহ বুখারী, হা/৩১১৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২৮)।
৩১। যারা মুসলমানদের অতি কষ্ট দেয়, তাদের জন্য বদ দু‘আ করা (الدعاء على من اشتد أذاه
للمسلمين)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَ
مُوسَى رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي
الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَنْ سَبِيلِكَ رَبَّنَا اطْمِسْ
عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّى يَرَوُا
الْعَذَابَ الْأَلِيمَ (88) قَالَ قَدْ أُجِيبَتْ دَعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيمَا
وَلَا تَتَّبِعَانِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ (89)) [يونس: 88 - 89]
‘আর মূসা বললেন, হে আমাদের রব!আপনি ফির‘আউন ও তার পরিষদবর্গকে দুনিয়াবী জীবনে সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছেন। হে আমাদের রব! যাতে তারা আপনার পথ হতে গোমরাহ করতে পারে। হে আমাদের রব!তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দিন, তাদের অন্তরসমূহকে কঠোর করে দিন। ফলে তারা ঈমান আনবে না, যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখে। (৮৮) তিনি বললেন, তোমাদের দো‘আ কবুল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং যারা জানে না, তাদের পথ অনুসরণ করো না’(সূরা ইউনুস:৮৮-৮৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَقَالَ نُوحٌ رَبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ
الْكَافِرِينَ دَيَّارًا (26) إِنَّكَ إِنْ تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلَا
يَلِدُوا إِلَّا فَاجِرًا كَفَّارًا (27)) ... [نوح: 26 - 27].
‘আর নূহ বললেন, ‘হে আমার রব! যমীনের উপর কোনও কাফেরকে অবশিষ্ট রাখবেন না। (২৬) আপনি যদি তাদেরকে অবশিষ্ট রাখেন, তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং দুরাচারী ও কাফের ছাড়া অন্য কারো জন্ম দেবে না’ (সূরা নূহ:২৬-২৭)।
وَعَنْ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أنَّ
النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - كَانَ يُصَلِّي عِنْدَ البَيْتِ وَأبُو جَهْلٍ
وَأصْحَابٌ لَهُ جُلُوسٌ إذْ قال بَعْضُهُمْ لِبَعْض: أيُّكُمْ يَجِيءُ بِسَلَى
جَزُورِ بَنِي فُلانٍ، فَيَضَعُهُ عَلَى ظَهْرِ مُحَمَّدٍ إذَا سَجَدَ؟
فَانْبَعَثَ أشْقَى القَوْمِ فَجَاءَ بِهِ، فَنَظَرَ حَتَّى سَجَدَ النَّبِيُّ -
صلى الله عليه وسلم -، وَضَعَهُ عَلَى ظَهْرِهِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ وَأنَا أنظُر لا
أُغِيّرُ شَيْئاً، لَوْ كَانَ لِي مَنَعَةٌ، قال: فَجَعَلُوا يَضْحَكُونَ
وَيُحِيلُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ، وَرَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -
سَاجِدٌ لا يَرْفَعُ رَأْسَهُ، حَتَّى جَاءَتْهُ فَاطِمَةُ فَطَرَحَتْ عَنْ
ظَهْرِهِ، فَرَفَعَ رَأْسَهُ ثُمَّ قالَ: «الَّلهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ».
ثَلاثَ مَرَّاتٍ فَشَقَّ عَلَيْهِمْ إذْ دَعَا عَلَيْهِمْ، قالَ: وَكَانُوا
يَرَوْنَ أنَّ الدَّعْوَةَ فِي ذَلِكَ البَلَدِ مُسْتَجَابَةٌ، ثُمَّ سَمَّى:
«الَّلهُمَّ عَلَيْكَ بِأبِي جَهْلٍ، وَعَلَيْكَ بِعُتْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ،
وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَالوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ، وَأمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ،
وَعُقْبَةَ بْنِ أبِي مُعَيْطٍ» وَعَدَّ السَّابِعَ فَلَمْ نحْفَظهْ، قال:
فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَدْ رَأيْتُ الَّذِينَ عَدَّ رَسُولُ اللهِ -
صلى الله عليه وسلم - صَرْعَى فِي القَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ. متفق عليه، أخرجه
البخاري برقم (240) , واللفظ له، ومسلم برقم (1794)
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা বায়তুল্লাহর পাশে ছালাত আদায় করছিলেন এবং সেখানে আবূ জাহাল ও তার সাথীরা বসে ছিল। এমন সময় তাদের একজন অন্যজনকে বলে উঠল, তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়িভুঁড়ি এনে মুহাম্মাদ যখন সাজদাহ করেন, তখন তার পিঠের উপর চাপিয়ে দিতে পারে? তখন গোত্রের পাষণ্ড (উক্ববাহ) তাড়াতাড়ি গিয়ে তা নিয়ে এলো এবং তার প্রতি লক্ষ্য রাখল। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সাজাদায় গেলেন, তখন সে তার পিঠের উপর দুই কাধের মাঝখানে তা রেখে দিল। ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন, আমি (এ দৃশ্য) দেখেছিলাম কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। হায়! আমার যদি বাধা দেওয়ার শক্তি থাকত! তিনি বলেন, তারা হাসতে লাগল এবং একে অন্যের উপর লুটোপুটি খেতে লাগল। আর আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন সাজাদায় থাকলেন, মাথা উঠালেন না। অবশেষে ফাতিমা (রা.) এসে সেটি তার পিঠের উপর হতে ফেলে দিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল মাথা উঠিয়ে বললেন: হে আল্লাহ! আপনি কুরাইশকে ধ্বংস করুন। এরূপ তিনবার বললেন। তিনি যখন তাদের বদ দু‘আ করেন, তখন তা তাদের অন্তরে ভয় জাগিয়ে তুলল। বর্ণনাকারী বলেন, তারা জানত যে, এ শহরে দু‘আ কবূল হয়। অতঃপর তিনি নাম ধরে বললেন: হে আল্লাহ! আবূ জাহালকে ধ্বংস করুন এবং উতবাহ ইবনু রবী‘আহ, শায়বাহ ইবনু রবী‘আহ, ওয়ালীদ ইবনু উতবাহ, উমাইয়াহ ইবনে খালাফ ও উক্ববা ইবনু আবি মু‘আইতকে ধ্বংস করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও বলেছিলেন কিন্তু তিনি স্মরণ রাখতে পারেননি। ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন: সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আল্লাহর রাসূল যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন, তাদের আমি বদরের কূপের মধ্যে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৪)।
৩২। কাফের-মুশরিকদের জন্য হেদায়াতের দু‘আ করা (الدعاء للكفار والمشركين
بالهداية)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَا
افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ
(89)) [الأعراف: 89].
‘হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে যথার্থ ফয়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৮৯)।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَدِمَ
الطُّفَيْلُ وَأَصْحَابُهُ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ دَوْساً قَدْ
كَفَرَتْ وَأَبَتْ، فَادْعُ اللهَ عَلَيْهَا، فَقِيلَ: هَلَكَتْ دَوْسٌ فَقَالَ:
«اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْساً وَائْتِ بِهِمْ». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم
(2937)، ومسلم برقم (4524)، واللفظ له
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুফায়েল ও তার সঙ্গীরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দাওস সম্প্রদায় কুফরী অবলম্বন করেছে এবং ইসলাম কবূলে স্বীকৃতি দেয়নি। অতএব, আপনি তাদের বিপক্ষক্ষে বদ্দু‘আ করুন। তখন বলা হলো, দাওস ধ্বংস হৌক। তিনি বললেন, اللَّهُمَّ اهْدِ
دَوْساً وَائْتِ بِهِمْ “হে আল্লাহ! দাওসকে হেদায়াত দান করো এবং তাদেরকে (আমার নিকট) এনে দাও” (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫২৪/৪৫২৪)।
وَعَنْ أَبي هُرَيْرَة رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كُنْتُ أَدْعُو
أُمِّي إِلَى الإِسْلاَمِ وَهِيَ مُشْرِكَةٌ، فَدَعَوْتُهَا يَوْماً
فَأَسْمَعَتْنِي فِي رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - مَا أَكْرَهُ،
فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - وَأَنَا أَبْكِي، قُلْتُ: يَا
رَسُولَ اللهِ! إِنِّي كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الإِسْلاَمِ فَتَأْبَى
عَلَيَّ، فَدَعَوْتُهَا اليَوْمَ فَأَسْمَعَتْنِي فِيكَ مَا أَكْرَهُ، فَادْعُ
اللهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله
عليه وسلم -: «اللَّهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ». فَخَرَجْتُ
مُسْتَبْشِراً بِدَعْوَةِ نَبِيِّ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -، فَلَمَّا جِئْتُ
فَصِرْتُ إِلَى البَابِ، فَإِذَا هُوَ مُجَافٌ، فَسَمِعَتْ أُمِّي خَشْفَ
قَدَمَيَّ، فَقَالَتْ: مَكَانَكَ! يَا أَبَا هُرَيْرَةَ! وَسَمِعْتُ خَضْخَضَةَ
المَاءِ، قَالَ: فَاغْتَسَلَتْ وَلَبِسَتْ دِرْعَهَا وَعَجِلَتْ عَنْ خِمَارِهَا،
فَفَتَحَتِ البَابَ، ثُمَّ قَالَتْ، يَاأَبَا هُرَيْرَةَ! أَشْهَدُ أَنْ لاَ
إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، قَالَ:
فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -، فَأَتَيْتُهُ وَأَنَا
أَبْكِي مِنَ الفَرَحِ، قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ! أَبْشِرْ قَدِ
اسْتَجَابَ اللهُ دَعْوَتَكَ وَهَدَى أُمَّأَبِي هُرَيْرَةَ! فَحَمِدَ اللهَ
وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ خَيْراً. أخرجه مسلم برقم (2491)
আবূ কাছীর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার মা মুশরিক থাকা অবস্থায় আমি তাকে ইসলামের দিকে আহবান করতাম। একদা আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহবান জানালে তিনি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ ব্যাপারে আমাকে এমন কথা শুনালেন, যা আমার নিকট অপছন্দনীয় মনে হচ্ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দা‘ওয়াত দিয়েছিলাম আর তিনি আমার দা‘ওয়াত অস্বীকার করে আসছেন। তারপর আমি তাকে আজ দা‘ওয়াত দেওয়াতে তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে এমন কথা শুনালেন, যা আমি অপছন্দ করি। অতএব, আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন যেন তিনি আবূ হুরায়রার মাকে হেদায়াত দান করেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: হে আল্লাহ! আবূ হুরায়রার মাকে হেদায়াত দান করো। তারপর রাসূলুল্লাহ-এর দু‘আর কারণে আমি খুশি মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি ঘরে পৌঁছলাম, তখন তার দরজা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমর মা আমার পায়ের আওয়াযশুনতে পেলেন। তারপর তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা! একটু দাঁড়াও (থামো)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং শরীরে চাদর দিলেন। আর তাড়াতাড়ি করে ওড়না জড়িয়ে নিলেন, তারপর বাড়ির দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষক্ষে কোন ইলাহ নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার বান্দা ও রাসূল। তিনি বলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। তারপর তার নিকট গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সুখবর শুনুন। আল্লাহ আপনার দু‘আ কবুল করেছেন এবং আবূ হুরায়রার মাকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করেছেন। তারপর তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন ও তার প্রশংসা করলেন। আর বললেন, উত্তম (ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৯১)।
وَعَنْ عَبْداللهِ بنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ:
كَأَنّي أَنْظُرُ إلَى رَسُولِ الله - صلى الله عليه وسلم -.يَحْكِي نَبِيّا مِنَ
الأَنْبِيَاءِ ضَرَبَهُ قَوْمُهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدّمَ عَنْ وَجْهِهِ
وَيَقُولُ: «رَبّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ». متفق عليه،
أخرجه البخاري برقم (3477) , واللفظ له، ومسلم برقم (1792)
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি যেন এখনো নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখছি, যখন তিনি একজন নবীর অবস্থা বর্ণনা করছিলেন যে, তার স্বজাতিরা তাকে প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে আর তিনি তার চেহারা হতে রক্ত মুছে ফেলছেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তারা জানে না (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৭৭; (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯২)।
৩৩। সবসময় ও সর্বাবস্থায় দা‘ওয়াতী কাজ করা (القيام بالدعوة في جميع الأوقات
والأحوال)
আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ) সম্পর্কে বলেন:
(قَالَ رَبِّ
إِنِّي دَعَوْتُ قَوْمِي لَيْلًا وَنَهَارًا (5) فَلَمْ يَزِدْهُمْ دُعَائِي
إِلَّا فِرَارًا (6) وَإِنِّي كُلَّمَا دَعَوْتُهُمْ لِتَغْفِرَ لَهُمْ جَعَلُوا
أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِمْ وَاسْتَغْشَوْا ثِيَابَهُمْ وَأَصَرُّوا
وَاسْتَكْبَرُوا اسْتِكْبَارًا (7) ثُمَّ إِنِّي دَعَوْتُهُمْ جِهَارًا (8) ثُمَّ
إِنِّي أَعْلَنْتُ لَهُمْ وَأَسْرَرْتُ لَهُمْ إِسْرَارًا (9) فَقُلْتُ
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا (10)) .[نوح: 5 - 10]
তিনি বললেন, ‘হে আমার রব! আমি তো আমার ক্বওমকে রাত-দিন আহবান করেছি। (৫) অতঃপর আমার আহবান কেবল তাদের পলায়নই বাড়িয়ে দিয়েছে। (৬) আর যখনই আমি তাদেরকে আহবান করেছি ‘যেন আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন’, তারা নিজেদের কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে, নিজদেরকে পোষাকে আবৃত করেছে, (অবাধ্যতায়) অনঢ় থেকেছে এবং দম্ভভরে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে। (৭) তারপর আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে আহবান করেছি।(৮) অতঃপর তাদেরকে আমি প্রকাশ্যে এবং অতি গোপনেও আহবান করেছি। (৯) এবং বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’ (সূরা নূহ:৫-১০)।
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصّامِتِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قالَ:
دَعَانَا رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - فَبَايَعْنَاهُ، فَكَانَ فِيمَا
أَخَذَ عَلَيْنَا، أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السّمْعِ وَالطّاعَةِ، فِي مَنْشَطِنَا
وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا، وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَأَنْ لاَ
نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ، قَالَ: «إلاّ أَنْ تَرَوْا كُفْراً بَوَاحاً
عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيهِ بُرْهَانٌ». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (7055،
7056) , واللفظ له، ومسلم برقم (1709)
উবাদা ইবনু সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে আহবান করলেন। আমরা তার কাছে বায়‘আত করলাম। এরপর তিনি (উবাদাহ) বললেন, আমাদের থেকে যে ওয়াদা তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণরূপে শোনা ও মানার উপর বায়‘আত করলাম। আরও (বায়‘আত করলাম) যে, আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঝগড়া করব না। কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফরী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা। (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫৫,৭০৫৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৯)।
৩৪। পরামর্শ করে কাজ করা (الشورى)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَشَاوِرْهُمْ
فِي الْأَمْرِ) [آل عمران: 159]
‘আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ কর’ (সূরা আলে ইমরান: ১৯৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ) [الشورى: 38].
‘তাদের কার্যাবলী তাদের মাধ্যমে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে’ (সূরা আশ-শুরা: ৩৮)।
৩৫। আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা আর তারই উপর ভরসা করা (قوة اليقين على الله، والتوكل
عليه وحده)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِلَّا
تَنْصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُواثَانِيَ
اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ
اللَّهَ مَعَنَا فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ
لَمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَى وَكَلِمَةُ
اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللَّهُعَزِيزٌ حَكِيمٌ (40)) [التوبة:40]
‘যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বের করে দিল, তিনি ছিলেন দু’ জনের দ্বিতীয়জন যখন তারা উভয়ে পাহাড়ের একটি গুহায় অবস্থান করছিলেন, তিনি তার সঙ্গীকে বললেন, তুমি পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার উপর তাঁর পক্ষ হতে প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাকে এমন এক সৈন্য বাহিনী দ্বারা সাহায্য করলেন যাদেরকে তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফেরদের বাণী অতি নিচু করে দিলেন। আর আল্লাহর বাণীই সুউচ্চ। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান’ (সূরা আত-তাওবা: ৪০)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَلَمَّا تَرَاءَى الْجَمْعَانِ قَالَ أَصْحَابُ مُوسَى إِنَّا
لَمُدْرَكُونَ (61) قَالَ كَلَّا إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ (62)
فَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنِ اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْبَحْرَ فَانْفَلَقَ فَكَانَ
كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ (63)) ... [الشعراء: 61 - 63]
‘অতঃপর যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সাথীরা বলল, অবশ্যই ‘আমরা ধরা পড়ে গেলাম!’ (৬১) মূসা বললেন, ‘কক্ষনো নয়; আমার সাথে আমার রব রয়েছেন। নিশ্চয় অচিরেই তিনি আমাকে পথনির্দেশ দেবেন।’ (৬২) অতঃপর আমি মূসার প্রতি অহি পাঠালাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর।’ ফলে তা বিভক্ত হয়ে গেল। তারপর প্রত্যেক ভাগ বিশাল পাহাড়সদৃশ হয়ে গেল’ (সূরা আশ-শুআ‘রা: ৬১-৬৩)।
৩৬। সর্বাবস্থায় দু‘আ করা ও ভীতিসহকারে ছালাত আদায় করা (الدعاء والفزع إلى الصلاة
في جميع الأحوال)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كَذَّبَتْ
قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ فَكَذَّبُوا عَبْدَنَا وَقَالُوا مَجْنُونٌ وَازْدُجِرَ
(9) فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانْتَصِرْ (10) فَفَتَحْنَا أَبْوَابَ
السَّمَاءِ بِمَاءٍ مُنْهَمِرٍ (11) وَفَجَّرْنَا الْأَرْضَ عُيُونًا فَالْتَقَى
الْمَاءُ عَلَى أَمْرٍ قَدْ قُدِرَ (12) وَحَمَلْنَاهُ عَلَى ذَاتِ أَلْوَاحٍ
وَدُسُرٍ (13)) .. [القمر: 9 - 13]
‘তাদের পূর্বে নূহের কওমও অস্বীকার করেছিল। তারা আমার বান্দাকে অস্বীকার করেছিল আর বলেছিল, ‘পাগল’ এবং তাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। (৯) অতঃপর তিনি তার রবকে আহবান করলেন যে, নিশ্চয় আমি পরাজিত, অতএব, তুমিই প্রতিশোধ গ্রহণ কর। (১০) ফলে, আমি বর্ষণশীল বারিধারার মাধ্যমে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দিলাম। (১১) আর ভূমিতে আমি ঝর্ণা উৎসারিত করলাম। ফলে, সকল পানি মিলিত হলো নির্ধারিত নির্দেশনা অনুসারে। (১২) আর আমি তাকে (নূহকে) কাঠ ও পেরেক নির্মিত নৌযানে আরোহন করালাম’(সূরা আল-ক্বামার: ৯-১৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي
مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ (9)) ... [الأنفال: 9]
‘আর স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট ফরিয়াদ করছিলে, তখন তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পর পর আগমনকারী এক হাযার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করছি’ (সূরা আল-আনফাল: ৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ
إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ (45)) . [البقرة: 45]
‘আর তোমরা ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় তা বিনয়ী ব্যতীত অন্যদের উপর কঠিন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ৪৫)।
وَعَنْ حُذيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبيُّ -
صلى الله عليه وسلم - إِذا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى. حسن/ أخرجه أحمد برقم (23688)
, وأخرجه أبو داود برقم (1319)
হুযায়ফা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: নবী(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখন ছালাতে মশগূল হয়ে যেতেন (মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৮৮; সুনানে আবূ দাঊদ, হা/১৩১৯, ‘হাসান’)।
৩৭। সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিকট চাওয়া ও অভাব-অভিযোগ পেশ করা (تقديم الشكوى والسؤال إلى
الله في جميع الأحوال)
আল্লাহ তা‘আলা ইয়া‘কুব (আঃ) সম্পর্কে বলেন:
(قَالَ
إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ وَأَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا
تَعْلَمُونَ) [يوسف: 86]
‘তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কাছেই আমার দুঃখ-বেদনার অভিযোগ জানাচ্ছি। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না’ (সূরা ইউসুফ: ৮৬)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَأَيُّوبَ
إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
(83) فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِنْ ضُرٍّ وَآتَيْنَاهُ أَهْلَهُ
وَمِثْلَهُمْمَعَهُمْ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَذِكْرَى لِلْعَابِدِينَ (84))
[الأنبياء: 83 - 84]
‘আর স্মরণ কর আইঊবের কথা, যখন তিনি তার রবকে আহবান করে বলেছিলেন, আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (৮৩) তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত দুঃখ-কষ্ট ছিল, তা দূর করে দিলাম এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। আর তাদের সাথে তাদের মত আরো তাকে দিলাম; আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ’ (সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৩-৮৪)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَزَكَرِيَّا
إِذْ نَادَى رَبَّهُ رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنْتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
(89) فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَوَهَبْنَا لَهُ يَحْيَى وَأَصْلَحْنَا لَهُ زَوْجَهُ
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا
وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ (90)) ... [الأنبياء: 89 - 90]
‘আর স্মরণ কর যাকারিয়ার কথা, যখন তিনি তার রবকে আহবান করে বলেছিলেন, হে আমার রব! আমাকে একা রেখ না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী। (৮৯) অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া আর তার জন্য তার স্ত্রীকে উপযোগী করেছিলাম। তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী’ (সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৯-৯০)।
৩৮। ভাল পরিবেশকে আঁকড়ে ধরা ও মন্দ পরিবেশ বর্জন করা (لزوم البيئة الصالحة، وهجر
بيئة السوء)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَاأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119))
[التوبة:119].
‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (সূরা আত-তাওবা: ১১৯)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ
بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ
تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ
عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا (28)) ... [الكهف:
28].
‘আর তুমি নিজকে ধৈর্যশীল রাখ তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে। তোমার দু’চোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ঐব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার যিকর থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে’ (সূরা আল-কাহাফ: ২৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ يَسْعَى قَالَ
يَامُوسَى إِنَّ الْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ فَاخْرُجْ إِنِّي
لَكَ مِنَ النَّاصِحِينَ (20) فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا يَتَرَقَّبُ قَالَ رَبِّ
نَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ (21)) [القصص: 20 - 21].
‘আর শহরের দূরপ্রান্ত থেকে একজন লোক ছুটে আসল। সে বলল, হে মূসা! নিশ্চয় পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যার পরামর্শ করছে, তাই তুমি বেরিয়ে যাও, নিশ্চয় আমি তোমার জন্য কল্যাণকামীদের একজন। (২০) তখন তিনি ভীত প্রতীক্ষারত অবস্থায় শহর থেকে বেরিয়ে পড়লেন। বললেন, হে আমার রব! আপনি যালিম কওম থেকে আমাকে রক্ষা করুন’ (সূরা আল-ক্বাছাছ: ২০-২১)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَإِمَّا
يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ
الظَّالِمِينَ ) .[الأنعام: 68]
‘আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে উপদেশ দানের পর যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসো না’ (সূরা আল-আন‘আম: ৬৮)।
৩৯। শরী‘আত সম্মত ব্যবস্থাপনা গ্রহণের সাথে সাথে এক আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া এবং নিজের ক্ষমতা-শক্তিকে কিছুই জ্ঞান না করা (الاعتماد على الله وحده،
ونفي النفس، مع فعل الأسباب المشروعة)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ لَا
أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ
أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ
أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ (188)) ... [الأعراف: 188].
‘আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম এবং আমার কোন অমঙ্গল কখনও স্পর্শ করত না। আমি তো ঈমানদারদের জন্য শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৮৮)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَلَمْ
تَقْتُلُوهُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ قَتَلَهُمْ وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ
وَلَكِنَّ اللَّهَ رَمَى وَلِيُبْلِيَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْهُ بَلَاءً حَسَنًا
إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (17)) [الأنفال: 17]
‘সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি; বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি নিক্ষেপ করনি যখন তুমি নিক্ষেপ করেছিলে; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছেন এবং যাতে তিনি তাঁর পক্ষ হতে মুমিনদেরকে পরীক্ষা করেন উত্তম পরীক্ষা। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (সূরা আল-আনফাল:১৭)।
وَعَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ أنَّ رَسُولَ اللهِ -
صلى الله عليه وسلم - كَانَ يَقُولُ: «لا إِلَهَ إِلا اللهُ وَحْدَهُ، أعَزَّ
جُنْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَغَلَبَ الاحْزَابَ وَحْدَهُ فَلا شَيْءَ
بَعْدَهُ». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (4114) , ومسلم برقم (2724)
আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, এক আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার অর্থে কোন ইলাহ নেই। তিনিই তার বাহিনীকে মর্যাদাবান করেছেন, তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাভূত করেছেন। এরপর শত্রু ভয় বলতে আর কিছুই থাকল না (ছহীহ বুখারী, হা/৪১১৪; (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২৪)।
৪০। মহান আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যদিও তা বিবেক সম্মত না হয়।
মহান আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যদিও তা বিবেক সম্মত না হয়। যেমন- নূহ (আঃ) শুকনো পাড়ে নৌকা তৈরি করেন, ইব্রাহিম (আঃ) স্ত্রী-পুত্রকে মানবহীন স্থানে রেখে আসেন, যেখানে কোন তরুলতাও ছিল না। আর আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে সাপ ধরতে এবং সমুদ্রের পানির উপর প্রহার করতে আদেশ দেন এবং তিনি তা বাস্তবায়ন করেন।
]امتثال أوامر
الله عز وجل وإن كانت على خلاف العقل:
كما صنع نوح - صلى الله عليه وسلم - السفينة على اليابسة، وترك إبراهيم - صلى الله
عليه وسلم - زوجته وولده بواد غير ذي زرع، وأمر الله موسى - صلى الله عليه وسلم -
بأخذ الحية، وضَرْب البحر فَفَعل.[
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَصْنَعُ الْفُلْكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ مَلَأٌ مِنْ
قَوْمِهِ سَخِرُوا مِنْهُ قَالَ إِنْ تَسْخَرُوا مِنَّا فَإِنَّا نَسْخَرُ
مِنْكُمْ كَمَا تَسْخَرُونَ (38)) ... [هود: 38].
‘আর তিনি নৌকা তৈরী করতে লাগলেন এবং যখনই তার কওমের নেতৃস্থানীয় কোন ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যেত, তাকে নিয়ে উপহাস করত। তিনি বললেন, যদি তোমরা আমাদের নিয়ে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদের নিয়ে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ’ (সূরা হূদ: ৩৮)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(رَبَّنَا
إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ
الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ) ... [إبراهيم: 37]
‘হে আমাদের রব! নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব! যাতে তারা ছালাত কায়েম করে’ (সূরা ইব্রাহীম: ৩৭)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَمَا تِلْكَ
بِيَمِينِكَ يَامُوسَى (17) قَالَ هِيَ عَصَايَ أَتَوَكَّأُ عَلَيْهَا وَأَهُشُّ
بِهَا عَلَى غَنَمِي وَلِيَ فِيهَا مَآرِبُ أُخْرَى (18) قَالَ أَلْقِهَا
يَامُوسَى (19) فَأَلْقَاهَا فَإِذَا هِيَ حَيَّةٌ تَسْعَى (20) قَالَ خُذْهَا
وَلَا تَخَفْ سَنُعِيدُهَا سِيرَتَهَا الْأُولَى (21)) ...[طه: 17 - 21]
‘আর হে মূসা! তোমার ডান হাতে ওটা কি? (১৭) তিনি বললেন, ‘এটি আমার লাঠি; আমি এর উপর ভর করি, এটি দিয়ে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা পাড়ি এবং এটি আমার আরো অনেক কাজে লাগে।’ (১৮) তিনি বললেন, ‘হে মূসা! ওটা ফেলে দাও।’ (১৯) অতঃপর তিনি তা ফেলে দিলেন; অমনি সেটা সাপ হয়ে ছুটতে লাগল। (২০) তিনি বললেন, ওটা ধর এবং ভয় কর না, আমি ওকে ওর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব’
(সূরা ত্বহা: ১৭-২১)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(فَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنِ اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْبَحْرَ
فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ (63)) ... [الشعراء:
63].
‘তিনি বললেন, ওটা ধর এবং ভয় কর না, আমি ওকে ওর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব’ (সূরা আশ-শুআ‘রা: ৬৩)।
৪১। আল্লাহর পথে কষ্ট হলে ও বিতাড়িত হলে সহ্য করা (تحمل الأذى والطرد في سبيل
الله)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ
حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ
خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا
حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا
إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ (214)) ... [البقرة: 214]
‘নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, কখন আল্লাহর সাহায্য (আসবে)? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২১৪)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَمَا لَنَا
أَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللَّهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا وَلَنَصْبِرَنَّ
عَلَى مَا آذَيْتُمُونَا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ (12))
[إبراهيم: 12]
‘আর আমরা কেন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করব না, অথচ তিনিই আমাদেরকে আমাদের পথের দিশা দিয়েছেন। আর তোমরা আমাদের যে কষ্ট দিচ্ছ, আমরা তার উপর অবশ্যই ছবর করব। আর আল্লাহর উপরই যেন তাওয়াক্কুলকারীরা তাওয়াক্কুল করে’ (সূরা ইবরাহীম: ১২)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ
يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ
الْمَاكِرِينَ (30)) ... [الأنفال: 30]
‘আর যখন কাফেররা তোমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল, তোমাকে বন্দী করতে অথবা তোমাকে হত্যা করতে কিংবা তোমাকে বের করে দিতে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে উত্তম’ (সূরা আল-আনফাল: ৩০)।
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أنَّهَا قالتْ لِلنَّبِيِّ
- صلى الله عليه وسلم -: هَلْ أتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أشَدَّ مِنْ يَوْمِ
أُحُدٍ؟ قال: «لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ مَا لَقِيتُ، وَكَانَ أشَدَّ مَا
لَقِيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ العَقَبَةِ، إِذْ عَرَضْتُ نَفْسِي عَلَى ابْنِ
عَبْدِيَالِيلَ بْنِ عَبْدِ كُلالٍ، فَلَمْ يُجِبْنِي إِلَى مَا أرَدْتُ،
فَانْطَلَقْتُ وَأنَا مَهْمُومٌ عَلَى وَجْهِي، فَلَمْ أسْتَفِقْ إِلا وَأنَا
بِقَرْنِ الثَّعَالِبِ. متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (3231) , واللفظ له، ومسلم
برقم (1795)
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জীবনে কি উহুদ দিবসের চেয়েও অধিকতর কঠিন কোন দিন এসেছে? তিনি বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের হাতে ‘আক্বাবার’ দিন যে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তা এর চেয়েও অধিকতর কঠিন ছিল, যখন আমি (আল্লাহর পানে দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে) ইবনু ‘আব্দে ইয়ালীল ইবনু আব্দে কিলালের কাছে নিজেকে পেশ করছিলাম। কিন্তু সে আমার কাঙ্ক্ষিত ডাকে সাড়া দেয়নি। তখন আমি অত্যন্ত বিষণ্ণ অবস্থায় সম্মুখের দিকে চলতে লাগলাম এবং কারনুছ-ছা‘আলিব নামক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি সংজ্ঞা ফিরে পাইনি (ছহীহ বুখারী, হা/৩২৩১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৫)।
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ -
صلى الله عليه وسلم -: «لَقَدْ أُخِفْتُ فِي اللهِ وَمَا يُخَافُ أَحَدٌ وَلَقَدْ
أُوذِيتُ فِي اللهِ وَمَا يُؤْذى أَحَدٌ وَلَقَدْ أَتَتْ عَلَيَّ ثلاَثونَ مِنْ
بَيْنِ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَمَا لِي وَلِبلاَلٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهُ ذو كَبدٍ
إِلاَّ شَيْءٌ يُوَارِيهِ إِبْطُ بلاَلٍ» صحيح/ أخرجه الترمذي برقم (2472) , وهذا
لفظه، وأخرجه ابن ماجه برقم (151)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর পথে আমাকে যে রূপ ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, সেরূপ ভীতি আর কাউকে প্রদর্শন করা হয়নি। আর আল্লাহর পথে আমাকে যে রূপ কষ্ট দেওয়া হয়েছে, অন্য কাউকে সেরূপ কষ্ট দেওয়া হয়নি। আমার উপর দিয়ে ত্রিশটি দিবা-রাত্রি এমনভাবে অতিবাহিত হয়েছে যে, বেলালের বগলের মধ্যে রক্ষিত সামান্য খাদ্য ছিল আমার ও বেলালের সম্বল। তা ছাড়া এতটুকু আহারও ছিল না, যা কোন প্রাণধারী প্রাণী খেয়ে বাঁচতে পারে (তিরমিযী, হা/২৪৭২; ইবনু মাজাহ, হা/১৫১; ‘ছহীহ’)।
৪২। নিন্দা-ভৎর্সনা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও মিথ্যা অপবাদে ধৈর্যধারণ করা (الصبر على الاتهام والتعيير
والاستهزاء)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كَذَلِكَ مَا
أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ
مَجْنُونٌ (52)أَتَوَاصَوْا بِهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ (53)) ... [الذاريات:
52 - 53]
‘এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে যে রাসূলই এসেছেন, তারা বলেছে, ‘এ তো একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ।’ (৫২) তারা কি একে অন্যকে এ বিষয়ে অছিয়ত করেছে? বরং এরা সীমালংঘনকারী জাতি’ (সূরা আয-যারিয়াত: ৫২-৫৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ
سَخِرُوا مِنْهُمْ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ (10)) ... [الأنعام: 10].
‘নিশ্চয়ই আপনার পূর্ববর্তী রাসূলগণের সাথেও উপহাস করা হয়েছে। অতঃপর যারা তাঁদের সাথে উপহাস করেছিল, তাদেরকে ঐ শাস্তি বেষ্টন করে নিল, যা নিয়ে তারা উপহাস করত’ (সূরা আল-আন‘আম: ১০)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(بَلْ قَالُوا
أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ بَلِ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌ فَلْيَأْتِنَا بِآيَةٍ
كَمَا أُرْسِلَ الْأَوَّلُونَ (5)) ... [الأنبياء: 5].
‘বরং তারা বলে, এগুলো অলীক কল্পনা, হয় সে এটি মন থেকে বানিয়েছে নয়তো সে একজন কবি। অতএব, সে আমাদের কাছে এমন নিদর্শন নিয়ে আসুক, যেরূপ নিদর্শনসহ প্রেরিত হয়েছিলেন পূর্ববর্তীগণ’ (সূরা আল-আম্বিয়া:৫)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ
(97) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ (98) وَاعْبُدْ
رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ (99)) ... [الحجر: 97 - 99]
‘আর অবশ্যই আমি জানি যে, তারা যা বলে, তাতে তোমার অন্তর সঙ্কুচিত হয়। (৯৭) সুতরাং তুমি তোমার রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ কর এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (৯৮) আর ইয়াকীন আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর’ (সূরা আল-হিজর: ৯৭-৯৯)।
৪৩। কাফেরদের সামনে মান-সম্মান বজায় রাখা ও অবিচল থাকা। (إظهار العزة والجَلَد أمام
الكفار المعاندين)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ
إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِلَّةَ
إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ (161)) [الأنعام: 161].
‘বল, নিশ্চয় আমার রব আমাকে সোজা পথের হেদায়াত দিয়েছেন। তা সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, ইবরাহীমের আদর্শ, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’ (সূরা আল-আন‘আম: ১৬১)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(قَدْ كَانَتْ
لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا
لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ
كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ
أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ) ... [الممتحنة: 4].
‘ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল, তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলছিল, ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর, তা হতে আমরা সম্পর্কমুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি এবং উদ্রেক হলো আমাদের-তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো’ (সূরা আল-মুমতাহিনা: ৪)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
3 - (قَالُوا
لَنْ نُؤْثِرَكَ عَلَى مَا جَاءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِي فَطَرَنَا
فَاقْضِ مَا أَنْتَ قَاضٍ إِنَّمَا تَقْضِي هَذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا (72)
إِنَّا آمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَا أَكْرَهْتَنَا
عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِ وَاللَّهُ خَيْرٌ وَأَبْقَى (73)) ... [طه: 72 - 73]
‘তারা বলল, আমাদের নিকট যে সকল স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তার উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ফায়সালা করতে চাও, তাই করো। তুমিতো কেবল এ দুনিয়ার জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার। (৭২) নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ এবং যে যাদু তুমি আমাদেরকে করতে বাধ্য করেছ, তা ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী’ (সূরা ত্বহা:৭২-৭৩)।
৪৪। শত্রুর সংখ্যা বেশী হলেও তাদের মোকাবেলায় অনড়-অটল থাকা, বীরত্ব প্রকাশ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করা (التوكل على الله، والشجاعة
والثبات أمام الأعداء وإن كثروا)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاتْلُ
عَلَيْهِمْ نَبَأَ نُوحٍ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ يَاقَوْمِ إِنْ كَانَ كَبُرَ
عَلَيْكُمْ مَقَامِي وَتَذْكِيرِي بِآيَاتِ اللَّهِ فَعَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْتُ
فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ
غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنْظِرُونِ (71)) [يونس: 71].
‘আর তুমি তাদেরকে নূহের সংবাদ পড়ে শুনাও, যখন তিনি তার কওমকে বললেন, হে আমার কওম! আমার অবস্থান এবং আল্লাহর আয়াতসমূহের মাধ্যমে আমার উপদেশ দান যদি তোমাদের কাছে ভারী মনে হয়, তবে আমি আল্লাহর উপরই ভরসা করলাম। সুতরাং তোমরা অভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো এবং (সাথে নাও) তোমাদের শরীকদের। অতঃপর তোমাদের বিষয়টি যেন তোমাদের নিকট অস্পষ্ট না থাকে। এরপর আমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত কর এবং আমাকে অবকাশ দিও না’ (সূরা ইউনুস:৭১)।
আল্লাহ তা‘আলা হূদ (আঃ)-এর কথা উল্লেখ করে বলেন:
(قَالَ إِنِّي
أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ (54) مِنْ
دُونِهِ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُونِ (55) إِنِّي تَوَكَّلْتُ
عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آخِذٌ
بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ (56)) ... [هود: 54 - 56].
‘তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি আর তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমি অবশ্যই তা থেকে মুক্ত, যাকে তোমরা শরীক কর। (৫৪) আল্লাহ ব্যতীত। সুতরাং তোমরা সকলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর, তারপর আমাকে অবকাশ দিও না। (৫৫) আমি অবশ্যই তাওয়াক্কুল করেছি আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর উপর, প্রতিটি বিচরণশীল প্রাণীরই তিনি নিয়ন্ত্রণকারী। নিশ্চয় আমার রব সরল পথে আছেন’ (সূরা হূদ: ৫৪-৫৬)।
৪৫। বিপদমুক্তি ও প্রয়োজন মেটানোর জন্য আল্লাহর কুদরত (শক্তি) থেকে উপকৃত হওয়া (الاستفادة من قدرة الله لكشف
الكربات، وقضاء الحاجات)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَذَا
النُّونِ إِذْ ذَهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَى
فِي الظُّلُمَاتِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ
الظَّالِمِينَ (87) فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذَلِكَ
نُنْجِي الْمُؤْمِنِينَ (88)) ... [الأنبياء: 87 - 88].
‘আর স্মরণ কর যুন-নূন-এর কথা, যখন তিনি রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর তিনি অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিলেন, ‘আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (৮৭) অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি’ (সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৭-৮৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَإِذِ اسْتَسْقَى مُوسَى لِقَوْمِهِ فَقُلْنَا اضْرِبْ بِعَصَاكَ
الْحَجَرَ فَانْفَجَرَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا قَدْ عَلِمَ كُلُّ
أُنَاسٍ مَشْرَبَهُمْ كُلُوا وَاشْرَبُوا مِنْ رِزْقِ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي
الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ (60)) ... [البقرة: 60].
‘আর যখন মূসা তার জাতির জন্য পানি চাইলেন, তখন আমি বললাম, তুমি তোমার লাঠি দ্বারা পাথরকে আঘাত কর। ফলে তা থেকে উৎসারিত হলো বারোটি ঝর্ণা। প্রতিটি দল তাদের পানি পানের স্থান জেনে নিল। তোমরা আল্লাহর রিযক থেকে আহার কর ও পান কর এবং ফাসাদকারী হয়ে যমীনে ঘুরে বেড়িয়ো না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ৬০)।
৪৬। মর্যাদা ও ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের দা‘ওয়াতের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া (العناية بذوي المكانة من
الناس)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ
أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ (23) إِلَى فِرْعَوْنَ
وَهَامَانَ وَقَارُونَ فَقَالُوا سَاحِرٌ كَذَّابٌ (24)) ... [غافر: 23 - 24].
‘আর অবশ্যই আমি মূসাকে প্রেরণ করেছিলাম আমার নিদর্শনাবলী ও স্পষ্ট প্রমাণসহ। (২৩) ফির‘আউন, হামান ও কারূনের প্রতি। অতঃপর তারা বলল, ‘সে এক যাদুকর, চরম মিথ্যাবাদী’ (সূরা গাফির:২৩-২৪)।
আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ) সম্পর্কে বলেন:
(اذْهَبْ
أَنْتَ وَأَخُوكَ بِآيَاتِي وَلَا تَنِيَا فِي ذِكْرِي (42) اذْهَبَا إِلَى
فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى (43) فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ
يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى (44)) [طه: 42 -44].
‘তুমি ও তোমার ভাই আমার আয়াতসমূহ নিয়ে যাও এবং আমাকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কোনরূপ অলসতা করো না। (৪২) তোমরা দু’জন ফির‘আউনের নিকট যাও, কেননা সে তো সীমালংঘন করেছে। (৪৩) তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (সূরা ত্বহা:৪২-৪৪)।
وَعَنْ أبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ - صلى
الله عليه وسلم - قَالَ: «لَوْ آمَنَ بِي عَشَرَةٌ مِنَ اليَهُودِ لآمَنَ بِي
اليَهُودُ». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (3941) واللفظ له، ومسلم برقم (2793)
আবূ হুরায়রা (রা.) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যদি আমার উপর দশজন ইয়াহূদী ঈমান আনতো, তবে গোটা ইয়াহূদী সম্প্রদায়ই ঈমান আনত (ছহীহ বুখারী, হা/৩৯৪১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৯৩)।
৪৭। প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদাই দ্বীনের উপর অটল থাকা (الاستقامة على الدين ظاهراً
وباطناً)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْتَقِمْ
كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ
بَصِيرٌ (112)) [هود: 112].
‘সুতরাং যেভাবে তুমি নির্দেশিত হয়েছ, সেভাবে তুমি এবং তোমার সাথী যারা তওবা করেছে, সকলে অবিচল থাক। আর সীমালঙ্ঘন করো না। তোমরা যা করছ, নিশ্চয় তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা’ (সূরা হূদ: ১১২)।
আল্লাহ তা‘আলা শু‘আইব (আঃ)-এর কথা উল্লেখ করে বলেন:
(وَمَا
أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ إِنْ أُرِيدُ إِلَّا
الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ عَلَيْهِ
تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ (88)) [هود: 88].
‘যে কাজ থেকে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি, তোমাদের বিরোধিতা করে সে কাজটি আমি করতে চাই না। আমি আমার সাধ্যমত সংশোধন চাই। আল্লাহর সহায়তা ছাড়া আমার কোন তাওফীক্ব নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করেছি এবং তাঁরই নিকট ফিরে যাই’ (সূরা হূদ: ৮৮)।
৪৮। মানুষের সাথে সুন্দর কথা বলা (حسن الكلام مع الناس)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَاأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا (70)) ...
[الأحزاب: 70]
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’ (সূরা আল-আহযাব: ৭০)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَإِذْ أَخَذْنَا
مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ
إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ
حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا
قَلِيلًا مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُونَ (83) ﴾ [البقرة: 83]
‘আর যখন আমি বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতিত কারো ইবাদত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বল, ছালাত কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা ফিরে গেলে। আর তোমরা (স্বীকার করে অতঃপর তা থেকে) বিমুখ হও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ৮৩)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَقُلْ
لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ
بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا (53) ﴾
[الإسراء: 53]
‘আর আমার বান্দাদেরকে বলো, তারা যেন এমন কথা বলে যা অতি সুন্দর। নিশ্চয় শয়তান তাদের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করে; নিশ্চয় শয়তান মানুষের স্পষ্ট শত্রু’ (সূরা বানী ইসরাঈল: ৫৩)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿اذْهَبَا
إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى (43) فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ
يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى (44)﴾ [طه: 43 - 44]
‘তোমরা দু’জন ফির‘আউনের নিকট যাও, কেননা সে সীমালংঘন করেছে। (৪৩) তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (সূরা ত্বহা: ৪৩-৪৪)।
No comments