যাদু প্রতিরোধের উপায় - অধ্যায়-১৬
যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি-অধ্যায়-১৬, ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বালী
১৬.যাদু প্রতিরোধের উপায়
যাদু প্রতিরোধের উপায়
যে সমাজে যাদু দ্বারা মানুষের ক্ষতি সাধন করা হয় এবং যাদুর প্রাদুর্ভাব বেশি, বিশেষ করে নব দম্পতির জন্য সেখানে পূর্বেই এর বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার যে সব করণীয় বিষয় আছে তা এখানে বর্ণনা করা হবে। এক্ষেত্রে এক বিশেষ প্রশ্নের গুরুত্ব রাখেঃ নব দম্পতির জন্য কি যাদু প্রতিরোধের কোন উপায় রয়েছে, যার ফলে যদিও তাদের জন্য যাদু করা হয়; কিন্তু তাতে তাদের কোন ক্ষতি হবে না? উত্তরঃ হ্যাঁ অবশ্যই উপায় রয়েছে, যা অচিরেই বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ! কিন্তু তার পূর্বে পাঠকদের জন্য এ ঘটনাটি বর্ণনা করা ভালো মনে করি ।
এক পরহেযগার যুবকের ঘটনা। সে একজন খতীব ও দায়ী, তার গ্রামে ছিল এক যাদুকর। যে মানুষকে যাদুর ভয় দেখিয়ে অর্থ লুটে নিত। গ্রামের যারা বিয়ে করতো বা করাতো তারা সবাই তাকে বিয়ের পূর্বেই টাকা-পয়সা দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট রাখত। সে যেন স্বামী-স্ত্রীর মিলনে বাধা সৃষ্টিকারী যাদুর মাধ্যমে ক্ষতি না করে।
আর এই পর্যহেগার যুবক এই যাদুকরের বিরুদ্ধে খুতবায় ও স্থানে স্থানে মানুষকে বলত এবং যাদুকরের কাছে যেতে নিষেধ করত। আর সে ছিল অবিবাহিত, এখন সে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিল; কিন্তু তার মনে ভয় যাদুকর হয়ত তাকে যাদু করবে। আর গ্রামের লোকজনও তার বিষয়ে আশঙ্কা করছিল। শেষ পর্যন্ত সেই যুবক আমার কাছে এসে তার ঘটনা ও পরিস্থিতি বর্ণনা করল। বলল যে, যাদুকর তাকে ভয় দেখিয়েছে এখন কার জয় হবে গ্রামের মানুষ তার দেখার অপেক্ষায় আছে। আপনি আমাকে কি যাদুর প্রভাব থেকে রক্ষার জন্যে কিছু বলতে পারেন?
যাদুকর আমাকে শক্তিশালী যাদু করবে এবং আপ্রাণ চেষ্টা করবে আমার ক্ষতি করতে। কেননা আমি প্রকাশ্যে তাকে অপমান করেছি। আমি বললাম হ্যাঁ আমি অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করব, তবে শর্ত হল যে, আপনি যাদুকরকে জানিয়ে দিবেন যে, আমি অমুক তারিখে বিয়ে করতে যাচ্ছি। আর আমি তোমাকে চ্যালেঞ্জ করছি, তুমি যা ইচ্ছা তাই কর এমনকি সকল যাদুকরকে একত্রিত করে যাদু কর । আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
যুবক আমার কথায় সামান্য দ্বিধাগ্রস্ত হল এরপর বলল, আপনি কি পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছেন? আমি বললাম হ্যাঁ অবশ্যই বিজয় ও সফলতা কেবল মু'মিনদের জন্যে আর লাঞ্ছনা ও অবমাননা অপরাধীদের প্রাপ্য ।
অতঃপর বাস্তবে তাই হল যুবক আমার কথা মত চ্যালেঞ্জ করে। আর সেই কঠিন দিনের অপেক্ষা লোকজন করতে থাকে। আমি যুবককে যাদু থেকে রক্ষার জন্যে কিছু আমল বলে দিলাম, যা নিম্নে বর্ণনা করব । এরপর যুবক বিয়ে করে বাসর রাত অতিক্রম করে। আর তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়। আর যাদুকর বিফল ও অপদস্থ হয়। এরপর সবার কাছে যুবক সম্মানের পাত্র এবং যাদুকর লোকজনের দৃষ্টিতে অসম্মানিত হয়। আল্লাহু আকবার, তারই সকল প্রশংসা, বিজয় তো এক আল্লাহর পক্ষ হতেই।
প্রতিরোধের প্রথম উপায়ঃ খালি পেটে সাতটি আজওয়া খেজুর খাওয়া
সম্ভব হলে মদীনা থেকে আজওয়া খেজুরের ব্যবস্থা করবে আর না হয় যে কোন প্রকারের আজওয়া খেজুর চলবে। আল্লাহর রাসূলের হাদীসে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর সকাল বেলায় আহার করবে সেদিন তাকে কোন বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না।" (বুখারীঃ ১০/২৮৭)
দ্বিতীয় উপায়ঃ ওযু অবস্থায় থাকলে যাদুর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না
কেননা এমন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে ফেরেশতা নির্ধারত হয়ে থাকে । ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের অঙ্গসমূহকে পবিত্র রাখ, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে পবিত্র করবেন কেননা যে ব্যক্তিই পবিত্র অবস্থায় রাত্রি যাপন করবে পোশাকের ন্যায় তার শরীরে এক হেফাযতকারী ফেরেশতা নির্ধারণ করে দিবেন। রাতের যে মুহুর্তে সে পার্শ্ব পরিবর্তন করবে তখনই ফেরেশতা তার জন্য প্রার্থনা করবে যে, হে আল্লাহ তোমার বান্দাকে ক্ষমা কর সে ওযু অবস্থায় ঘুমিয়েছে।
তৃতীয় উপায়ঃ জামাআতের সাথে নামাযের পাবন্দি
জামাআতের সাথে নামায পড়লে শয়তানের অনিষ্ট হতে নিরাপদ হওয়া যায়। আর নামায থেকে গাফেল হলে শয়তান তাকে বশীভূত করে ফেলে। আবু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন যখন কোন গ্রামে অথবা মরুভূমিতে কমপক্ষে তিন ব্যক্তি বিদ্যমান থাকে অতঃপর তারা যদি জামাআতে নামায আদায় না করে তবে শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নেয়।
তাই তোমরা জামাআতের সাথে নামায পড়ার প্রতি গুরুত্ব দিও। কেননা বাঘের শিকার সেই ছাগল হয়ে থাকে, যে পাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
যায়। (বুখারীঃ ৩/৩৪ ও মুসলিমঃ ৬/৬৩)
চতুর্থ উপায়ঃ তাহাজ্জুদের নামায আদায়
যে ব্যক্তি নিজেকে যাদুর অনিষ্ট হতে রক্ষা করতে চায় সে যেন রাত্রির কিছু অংশ হলেও রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করে। এ থেকে একেবারে বিমূখ না থাকে কেননা তা থেকে বিমূখ থাকা শয়তানের প্রভাব পড়ার কারণ হয়ে থাকে। আর শয়তান যদি পেয়ে বসে তবে যাদু ক্রিয়া সহজ হয়।
ইবনে মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকটে এক ব্যক্তির বিষয়ে অভিযোগ করা হয় যে, সে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল। এমনকি ফজরের নামাযও আদায় করতে পারেনি। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শয়তান তার কানে পেশাব করে দিয়েছে। (বুখারীঃ ৬/৩৩৫, মুসলিমঃ ৬/৬৩)
ইবনে উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি বেতের নামায আদায় না করেই সকাল করে সে যেন মাথায় এক ৪০ গজ বিশিষ্ট রশি নিয়ে সকাল করে।" (ইবনে হাজার ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করে বলেন তার সূত্র সঠিকঃ ৩/২৫)
পঞ্চম উপায়ঃ বাথরুমে প্রবেশের সময় দুআ পড়া
বাথরুম ও অনুরূপ অপবিত্র স্থানে শয়তানের আস্তানা গড়ে ওঠে, আর শয়তান মুসলমানের বিরুদ্ধে এ ধরণের জায়গায় সুযোগ খুজে। লেখক বলেন, এক শয়তান জ্বিন আমাকে বলে, আমি এই ব্যক্তিকে আক্রমণ এজন্যে করেছিলাম যে, সে বাথরুমে যাওয়ার পূর্বে আউযুবিল্লাহ পড়ত না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই শয়তানের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন এবং আমি বললাম যে এই ব্যক্তিকে ছেড়ে দাও। আলহামদুলিল্লাহ সে ছেড়ে চলে যায়।
এক জ্বিন আমাকে বলল যে, হে মুসলমানগণ! তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা শক্তিশালী অস্ত্র দান করেছেন; তোমরা তা দিয়ে আমাদেরকে পরাস্থ করতে পার; কিন্তু তোমরা তা ব্যবহার কর না। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তা কি? উত্তরে সে বললঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যিকিরসমূহ।
হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাথরুমে প্রবেশকালীন সময়ে এই দু'আ পড়তেনঃ
اللهم
إني أعوذ بك من الخبث والخبائث
অর্থঃ আল্লাহর নামে শুর করছি, হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট জ্বিন ও দুষ্ট পরি থেকে। (বুখারীঃ ১/২৯২, ফাতহ ও মুসলিমঃ ৪/৭০, নববী)
ষষ্ঠ উপায়ঃ নামাযের শুরুতে আউযুবিল্লাহ পড়া
যুবায়ের বিন মুতয়িম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখেছেন যে, তিনি নামাযে এই যিকিরসমূহ পড়ছিলেনঃ
الله
اكبر كبيرا والحمد لله كثيرا وسبحان الله بكرة واصيلا
আর তিনবারঃ
اعوذ
بالله من الشيطان الرجيم من نفخه ونفثه وهمزه
(আবু দাউদঃ ১/২০৩ আলবানী সহীহ বলেছেন)
সপ্তম উপায়ঃ বিয়ের পর মহিলাকে শয়তান থেকে রক্ষা করা
পুরুষ যখন তার স্ত্রীর কাছে বাসর রাতে যাবে তখন তার কপালে হাত রেখে এই দু'আ পড়বেঃ
اللهم
إنى أسألك خيرها وخيرما جبلتها عليه، وأعوذبك من شرها وشرما جبلتها عليه
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এই নারীর থেকে মঙ্গল ও কল্যাণকর বস্তু চাই। আর সে যে সন্তান ধারণ করবে তার থেকেও কল্যাণ কামনা করি। (আলবানী হাসান বলেছেন)
অষ্টম উপায়ঃ নামায দ্বারা দাম্পত্য জীবন শুরু করা
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, যখন তোমার নিকট তোমার স্ত্রী বাসর রাতে আসবে তখন তুমি তাকে নিয়ে দুরাকআত নামায পড় এবং নামাযের পর এই দুআ পড়ঃ
اللهم
بارك لى فى أهلي وبارك لهم فى اللهم اجمع بيننا ما جمعت بخير وفرق بيننا إذا فرقت
الى الخير
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমার জন্যে আমার স্ত্রী ও ভবিষ্যত প্রজন্ম বরকতময় কর এবং আমাকে আমার স্ত্রীর জন্যে বরকতময় করে দাও। হে আল্লাহ যতক্ষণ আমরা উভয়েই একত্রে থাকি ভালভাবেই যেন থাকি আর যদি আমাদের মাঝে কল্যাণ না থাকে তবে আমাদেরকে বিচ্ছেদ করে দিও। (ইমাম তাবরানী বর্ণনা করেছেন আর আলবানী তা সহীহ বলেছেন।)
নবম উপায়ঃ সহবাসের সময় শয়তান থেকে রক্ষার ব্যবস্থা
ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাসের জন্যে যাবে তখন এই দু'আ পড়বেঃ
بسم
الله اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان ما رزقتنا فقضي بينهما ولد لم يضره
অর্থঃ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি হে আল্লাহ! তুমি আমাদের উভয়কে শয়তান থেকে রক্ষা কর। আর আমাদের সন্তানদেরকেও শয়তান থেকে রক্ষা কর। (বুখারী ১/২৯২)
এই সঙ্গমে যেই সন্তান জন্মলাভ করবে তাকে শয়তান কখনও ক্ষতি করতে পারবে না ।
এক জ্বিন ইসলাম গ্রহণের পর আমাকে বলল যে, সে যেই ব্যক্তিকে ধরেছিল সে যখনই নিজের স্ত্রীর সাথে সহবাস করত তখন আমিও তার সাথে অংশগ্রহণ করতাম। কেননা সে দু'আ পড়ত না। সুবহানাল্লাহ আমাদের কাছে কত মূল্যবান সম্পদ রয়েছে যার মূল্য আমরা দেই না।
দশম উপায়ঃ শোয়ার পূর্বে আয়াতুল কুরসী পড়া
নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে ওযু করবে, তারপর আয়াতুল কুরসী পড়ে আল্লাহর যিকির করতে করতে ঘুমিয়ে যাবে। বিশুদ্ধ সনদে বর্নিত হয়েছে যে, শয়তান আৰু হুরাইরাকে (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলল যে ব্যক্তিই শুয়ার পূর্বে আয়াতুল কুরসী পড়ে, সেই রাতে তার জন্যে আল্লাহ তায়ালা এক ফেরেশতা নিযুক্ত করেন। আর শয়তান সেই রাতে সেই ব্যক্তির কাছে সকাল পর্যন্ত যেতে পারে না।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার এ বর্ণনা স্বীকার করে বললেনঃ হে আবু হুরাইরা শয়তান তোমাকে সত্যই বলেছে অথচ সে মিথ্যাবাদী। (বুখারীঃ ৪/৪৮৭)
একাদশ উপায়ঃ মাগরিবের নামাযের পর এই আমলগুলো করাঃ
(১) সূরা বাকারার ১-৫ আয়াত পড়া।
(২) আয়াতুল কুরসী এবং এর পরের আয়াত।
(৩) সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত।
এই আমলের দ্বারা আপনি ২৪ ঘন্টা শয়তান ও সর্বপ্রকার যাদু থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
দ্বাদশ উপায়ঃ ফজরের নামাযের পর নিম্নোক্ত কালেমা পড়া
لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ،
وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ
شَيْءٍ قَدِيرٌ
এটাকে ফজরের নামাযের পর ১০০ বার পড়ুন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তিই এমনটি করবে সে দশটি দাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে এবং একশত পুণ্য তার আমলনামায় লেখা হবে এবং একশত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর সেই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। আর এর থেকে অধিক পূণ্যের কাজ আর হতে পারে না; কিন্তু সেই যে এর অধিক আমল করবে।" (বুখারীঃ ৬/৩৩৮ ও মুসলিমঃ ১৭/১৭)
ত্রয়োদশ উপায়ঃ মসজিদে প্রবেশকালীন সময়ে নিম্নের এই দু'আ পড়া
أعوذ بالله العظيم وبوجهه الكريم
وسلطانه القديم من الشيطان الرجيم
অর্থঃ আমি সুমহান আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং তার মহান চেহারার এবং তার চিরস্থায়ী ক্ষমতার আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যক্তিই তা পড়ল শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাটি দিন আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল।" (আবু দাউদঃ ১/১২৭ নববী ও আলবানী সহীহ বলেছেন।
চতুর্দশ উপায়ঃ সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নের দু'আ তিনবার পড়া
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ
مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ
الْعَلِيمُ
অর্থঃ “শুরু করছি আল্লাহর নামে যার নামের সাথে যমীন আসমানের কোন বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সব শুনেন ও জানেন । (তিরমিয়ীঃ ৫/১৩৩ সঠিক সূত্রে)
পঞ্চদশ উপায়ঃ বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় নিম্নের দু'আ পড়া
بسم الله توكلت على الله لا حول ولا
قوة إلا بالله
অর্থঃ আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর উপর ভরসা করলাম । আল্লাহ ব্যতীত কারো শক্তি ও সামর্থ নেই।
যখন আপনি এই দু'আ পড়ে বাড়ি থেকে বের হবেন তখন আপনার জন্য এক সুসংবাদ দেয়া হয় যে, আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্যে যথেষ্ট । আপনি সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেলেন, সঠিক পথ পেয়েছেন এবং শয়তান আপনার থেকে দূরে চলে গেল। আর এক শয়তান অন্য সার্থী শয়তানকে বলে যে, তুমি এই ব্যক্তিকে কিছুতেই ক্ষতি করতে পারবে না। কেননা সে আজ সঠিক পথপ্রাপ্ত, তার জন্য যথেষ্ট এবং সুরক্ষিত।" (আবৃ দাউদঃ ৪/৩২৫ সনদ সহীহ)
ষষ্ঠদশ উপায়ঃ ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর নিম্নের দু'আ পড়বে
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ
التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি।
সপ্তদশ উপায়ঃ সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আ পড়া
أعوذ بكلمات الله التامة من غضبه
وعقابه وشر عباده ومن همزات الشياطين وأن يحضرون
অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার আশ্রয় প্রার্থনা করি তার অসম্ভষ্টি ও শাস্তি থেকে এবং তার বান্দার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে ও শয়তানের সংস্পর্শ থেকে।
অষ্টাদশ উপায়ঃ সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আ পড়া
اللهم انى اعوذبوجه الكريم وكلماتك
التامات من شر ما انت اخذ بناضية اللهم انت تكشف المأثم والمغرم اللهم انه لا يهزم
جندك ولا يخلف وعدك سبحانك وبحمدك
অর্থঃ হে আল্লাহ তোমার দয়ালু ও পবিত্র চেহারার মাধ্যমে এবং তোমার পরিপূর্ণ কালেমার মাধ্যমে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা তোমার আয়ত্বাধীন রয়েছে। হে আল্লাহ তুমি পাপ ও দেনা মুক্ত কর । হে আল্লাহ তোমার সেনাদল পরাস্থ হয় না আর না তোমার ওয়াদা ভঙ্গ হয়। আমরা তোমারই গুণকীর্তন ও প্রশংসা বর্ণনা করি।
উনবিংশ উপায়ঃ সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আ পড়া
أعوذ بوجه الله العظيم الذي لا شيء
أعظم منه وبكلمات الله التامات التي لا يجاوزهن بر ولا فاجر وبأسماء الله الحسنى
كلها ما علمت وما لم أعلم من شر ما خلق وذرأ وبرأ ، ومن شر كل ذي شر لا أطيق شره ،
ومن شر كل ذي شر أنت آخذ بناصيته، إن ربي على صراط مستقيم
অর্থঃ আমি মহান আল্লাহ তায়ালার সুমহান চেহারার আশ্রয় প্রার্থনা করি যার থেকে বড় আর কিছু নেই এবং আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কালেমার মাধ্যমে আশ্রয় চাই যাকে ব্যতীত কোন কল্যাণ ও অনিষ্ট অতিক্রম করে না । আর আল্লাহ তায়ালা সুন্দর নামসমূহের মাধ্যমে যা আমি জানি ও যা জানি না আশ্রয় প্রার্থনা করি সৃষ্টি জগতের সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে যা তোমার আয়ত্বাধীন। নিশ্চয় আমার প্রভু সরল সোজা পথে।
বিংশ উপায়ঃ সকাল-সন্ধ্যায় এই দু'আ পড়া
تحصنت بالله الذي لا إله إلا هو ،
إلهي وإله كل شيء ، واعتصمت بربي ورب كل شيء ، وتوكلت على الحي الذي لا يموت ،
وستدفعت الشر بلا حول ولا قوة إلا بالله ، حسبي الله ونعم الوكيل ، حسبي الرب من
العباد ، حسبي الخالق من المخلوق ، حسبي الرازق من المرزوق ، حسبي الذي هو حسبي ،
حسبي الذي بيده ملكوت كل شيء وهو يجير ولا يجار عليه ، حسبي الله وكفى ، سمع الله
من دعا، ليس وراء الله مرمى ، حسبي الله لا إله إلا هو عليه توكلت وهو رب العرش
العظيم
অর্থঃ সেই আল্লাহকে রক্ষা কর্তা মেনেছি যাকে ব্যতীত আমার কোন উপাস্য নেই। তিনি আমার এবং সকল কিছুর উপাস্য। আমি আমার প্রভুকে আঁকড়ে ধরেছি এবং সেই চিরঞ্জীবির উপর ভরসা রাখি যার মৃত্যু নেই। এবং তারই কাছে অনিষ্টকে দমন করার সামর্থ চাই কেননা শক্তি-সামর্থ কেবল আল্লাহ তায়ালার । আল্লাহই আমার জন্যে যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম সাহায্যকারী। আমার প্রভু বান্দাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্যে যথেষ্ট। সৃষ্টি কর্তা আমার জন্য যথেষ্ট সমস্ত সৃষ্টিজগত থেকে রক্ষার জন্যে। রিযিকদাতা হিসেবে আমার জন্যে যথেষ্ট। রিযিক গ্রহণকারীদের থেকে রক্ষা করতে । তার কাছেই আশ্রয় নিতে হয় তার বিরুদ্ধে নয়। আমার আল্লাহ আমার জন্যে যথেষ্ট যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর তার উপরই আমার আস্থা এবং তিনিই মহৎ আরশের প্রভু।
যৌন ক্ষমতা নষ্টকারী যাদুর এক বাস্তব উদাহরণ
এ বিষয়ে অনেক ঘটনা রয়েছে; কিন্তু সংক্ষেপে একটি ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করেছি।
এক যুবক তার যে ভাই নতুন বিবাহ করেছে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসল। তার দাম্পত্য জীবনের ব্যর্থতা নিয়ে অনেক কবিরাজ যাদুকরের কাছে গমন করেছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
আমি যখন তা জানতে পারলাম তখন আমি তাকে প্রথম ইখলাসের সাথে তাওবা করালাম এবং সে যেন সেই সব দাজ্জালদেরকে মিথু্যক বলে বিশ্বাস করে যাতে আমার চিকিৎসায় তার ফায়েদা হয়। সে আমাকে বলল যে, এখন তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, তারা মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। আমি তাকে সাতটি সবুজ ও তাজা বরই পাতা যোগাড় করতে বললাম; কিন্তু তা ব্যবস্থা হল না। এরপর কপুরের সাতটি পাতা ব্যবস্থা করা হয় যা পাথরের শিলপাটা দিয়ে পিষে পানিতে মিশ্রিত করলাম এবং তাতে আয়াতুল কুরসী এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে ফু দিলাম এবং তাকে বললাম, এই পানি সে পান করবে এবং তা দিয়ে গোসল করবে।
আলহামদুলিল্লাহ এই চিকিৎসার পর মুহুর্তেই তার উপর যাদুর প্রভাব ধ্বংস হয়ে গেছে ।
এই প্রকার যাদুর প্রভাবে পাগল হয়ে যায়
এক সচেতন যুবকের বিয়ের পর বাসর রাত থেকে পুরুষত্বহীন হয়ে ধীরে ধীরে কিছুদিন পর সে পাগল হয়ে গেল। তার ঘটনা ছিল যে, তার স্ত্রী যাদুকরের কাছে গিয়েছিল যে সে যেন তার স্বামীকে এমন যাদু করে তাতে, সে অন্য সব নারীকে ঘৃণার চোখে দেখে। যাদুকর এমনটিই করল; কিন্তু সে তার যাদুতে এমন কিছু ভুল পদ্ধতি গ্রহণ করল যেন, পরবর্তীতে যখন মহিলা তার স্বামীকে যাদুর বস্তু খাবারের সাথে মিশিয়ে তার স্বামীকে খাওয়াল তখন থেকে তার স্বামী সকল নারীকে ঘৃণা করতে লাগল এমন কি তার স্ত্রীকেও । মহিলা যাদু নষ্ট করার জন্যে যখন পুনরায় যাদুকরের কাছে যায় তখন যাদুকরের মৃত্যু হয়ে গেছে। এরপর সেই ব্যক্তি পাগল হয়ে যায়; কিন্তু যখন আমি কুলের পাতায় উপরোক্ত পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলাম তখন সে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয় ও তার স্ত্রীর সাথে সহবাসে সক্ষম হয়।
No comments