সহিহ বুখারী শরীফ অধ্যায় "আযান" হাদিস নং -৬০৩ থেকে ৬২০
আযানের সূচনা ।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “আর যখন তোমরা সালাতের জন্য আহবান কর, তখন
তারা একে হাসি-তামাশা ও খেলা বলে মনে করে। কারণ তারা এমন লোক যাদের বোধশক্তি নেই”-
(সূরা আল-মাদিয়াহ ৫/৫৮)। আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেছেনঃ “আর যখন জুমুয়া’র দিনে
সালাতের জন্য ডাকা হয় ।” (সূরা আল-জুমু’আহ ৬২/৯)
৬০৩
حَدَّثَنَا عِمْرَانُ بْنُ مَيْسَرَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ
الْوَارِثِ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ الْحَذَّاءُ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ أَنَسٍ،
قَالَ ذَكَرُوا النَّارَ وَالنَّاقُوسَ، فَذَكَرُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى،
فَأُمِرَ بِلاَلٌ أَنْ يَشْفَعَ الأَذَانَ وَأَنْ يُوتِرَ الإِقَامَةَ.
তিনি বলেন, (জামা’আতে সালাত আদায়ের জন্য) সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) আগুন
জ্বালানো অথবা নাকূস বাজানোর কথা আলোচনা করেন। আবার এগুলোকে (যথাক্রমে) ইয়াহুদী ও
নাসারাদের প্রথা বলে উল্লেখ করা হয়। অতঃপর বিলাল (রাঃ)-কে আযানের বাক্য দু’বার করে
ও ইক্বামাতের বাক্য বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়।[১]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৭৬)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৭৬)
[১] বুখারী ছাড়াও মুসলিম ও
আবূ দাউদে ইক্বামতের বাক্যগুলো একবার করে বলার সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তথাপিও আধুনিক
প্রকাশনীর টীকায় লেখা “হানাফীগণ অন্য এক হাদীসের ভিত্তিতে ইক্বামাতের বাক্যগুলো
দু’বার করে বলেন ।” এ কথার জবাবে সাধারন পাঠকের উদ্দেশে মুহাদ্দিসীনদের কতিপয়
মতামত পেশ করা হলঃ
হাফিয আবূ ‘উমর বিন ‘আবদুর রব বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহওয়াইহি, দাউদ বিন আলী, মোহাম্মদ বিন জরীর প্রভৃতি ইক্বামতের শব্দগুলি একবার বা দু’বার করে বলার উভয়বিধ অভিমত গ্রহন করেছেন। তাঁদের দৃষ্টিতে উভয় নিয়মই বিশুদ্ধ, বৈধ ও গ্রহণযোগ্য এবং ঐচ্ছিক ব্যাপার-যে ইচ্ছা করবে একবারও বলতে পারবে এবং অপরপক্ষে যে ইচ্ছা করবে দু’বার করেও বলতে পারবে। (তুহফা সহ তিরমিযী ১ম খণ্ড ১৭৪পৃঃ)
হাফিয আবু আওয়ানাহ তদীয় মসনদ গ্রন্থে ১ম খণ্ড ৩৩০ পৃষ্ঠায় বলেন, বিলালের আযানের ইক্বামাত একবার করে বলার নিয়ম মনসূখ হয়নি। আবূ মাহযূরাহ্র হাদীস হতে ইক্বামাত দু’বার করে বলা প্রমাণিত হলেও তা হতে অধিক সহীহ আনাসের হাদীসে একবার করে বলা প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং উসূলে হাদীস শাস্ত্রের বিধান ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে বিরোধক্ষেত্রে যা অধিক সহীহ তা-ই গ্রহণ করা উত্তম ও একান্ত বাঞ্ছনীয়। ইমাম আবদুল ওয়াহহাব শা’রানী হানাফী ‘কাশ্ফুল গুম্মা’ ১ম খণ্ড ১২৮ পৃষ্ঠায় আবুদল্লাহ বিন যায়দের আযানের সাথে উল্লেখিত ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলার নিয়মের উল্লেখ করেছেন। উক্ত গ্রন্থে ১২৯ পৃষ্ঠায় তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলালকে আযানের শব্দগুলি দু’বার করে এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীসের উল্লেখ করেছেন ।
শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) তদীয় সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘গুনিয়াতুত তালেবীন’-এর ৮ পৃষ্ঠায় ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলার স্বপক্ষে তাঁর নিজের মন্তব্য পেশ করেছেন। মোটের উপর আমরা ইমাম আহমাদ, ইসহাক বিন রাহওয়াইহি এবং অন্যান্য ওলামায়ে কিরামের ন্যায় ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে অথবা দু’বার করে বলার উভয়বিধ অভিমতের বৈধতা ও প্রামাণিকতা স্বীকার করি; অধিকন্তু আমরা উভয়বিধ ‘আমলকে জায়েজ বলে মনে করি। কিন্তু যেহেতু ইক্বামাতের শব্দগুলি দু’বার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীস হতে একবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীস অধিক প্রামাণ্য ও বিশুদ্ধ এবং তা বহু সূত্রে বর্ণিত এমনকি ইমাম বুখারী ও মুসলিম উভয় কর্তৃক গৃহীত, কাজেই আমরা ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলা সর্বোত্তম মনে করি ।
হাফিয আবূ ‘উমর বিন ‘আবদুর রব বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহওয়াইহি, দাউদ বিন আলী, মোহাম্মদ বিন জরীর প্রভৃতি ইক্বামতের শব্দগুলি একবার বা দু’বার করে বলার উভয়বিধ অভিমত গ্রহন করেছেন। তাঁদের দৃষ্টিতে উভয় নিয়মই বিশুদ্ধ, বৈধ ও গ্রহণযোগ্য এবং ঐচ্ছিক ব্যাপার-যে ইচ্ছা করবে একবারও বলতে পারবে এবং অপরপক্ষে যে ইচ্ছা করবে দু’বার করেও বলতে পারবে। (তুহফা সহ তিরমিযী ১ম খণ্ড ১৭৪পৃঃ)
হাফিয আবু আওয়ানাহ তদীয় মসনদ গ্রন্থে ১ম খণ্ড ৩৩০ পৃষ্ঠায় বলেন, বিলালের আযানের ইক্বামাত একবার করে বলার নিয়ম মনসূখ হয়নি। আবূ মাহযূরাহ্র হাদীস হতে ইক্বামাত দু’বার করে বলা প্রমাণিত হলেও তা হতে অধিক সহীহ আনাসের হাদীসে একবার করে বলা প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং উসূলে হাদীস শাস্ত্রের বিধান ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে বিরোধক্ষেত্রে যা অধিক সহীহ তা-ই গ্রহণ করা উত্তম ও একান্ত বাঞ্ছনীয়। ইমাম আবদুল ওয়াহহাব শা’রানী হানাফী ‘কাশ্ফুল গুম্মা’ ১ম খণ্ড ১২৮ পৃষ্ঠায় আবুদল্লাহ বিন যায়দের আযানের সাথে উল্লেখিত ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলার নিয়মের উল্লেখ করেছেন। উক্ত গ্রন্থে ১২৯ পৃষ্ঠায় তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলালকে আযানের শব্দগুলি দু’বার করে এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীসের উল্লেখ করেছেন ।
শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) তদীয় সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘গুনিয়াতুত তালেবীন’-এর ৮ পৃষ্ঠায় ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলার স্বপক্ষে তাঁর নিজের মন্তব্য পেশ করেছেন। মোটের উপর আমরা ইমাম আহমাদ, ইসহাক বিন রাহওয়াইহি এবং অন্যান্য ওলামায়ে কিরামের ন্যায় ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে অথবা দু’বার করে বলার উভয়বিধ অভিমতের বৈধতা ও প্রামাণিকতা স্বীকার করি; অধিকন্তু আমরা উভয়বিধ ‘আমলকে জায়েজ বলে মনে করি। কিন্তু যেহেতু ইক্বামাতের শব্দগুলি দু’বার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীস হতে একবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীস অধিক প্রামাণ্য ও বিশুদ্ধ এবং তা বহু সূত্রে বর্ণিত এমনকি ইমাম বুখারী ও মুসলিম উভয় কর্তৃক গৃহীত, কাজেই আমরা ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে বলা সর্বোত্তম মনে করি ।
৬০৪
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ
الرَّزَّاقِ، قَالَ أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي نَافِعٌ، أَنَّ
ابْنَ عُمَرَ، كَانَ يَقُولُ كَانَ الْمُسْلِمُونَ حِينَ قَدِمُوا الْمَدِينَةَ
يَجْتَمِعُونَ فَيَتَحَيَّنُونَ الصَّلاَةَ، لَيْسَ يُنَادَى لَهَا، فَتَكَلَّمُوا
يَوْمًا فِي ذَلِكَ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ اتَّخِذُوا نَاقُوسًا مِثْلَ نَاقُوسِ
النَّصَارَى. وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ بُوقًا مِثْلَ قَرْنِ الْيَهُودِ.
فَقَالَ عُمَرُ أَوَلاَ تَبْعَثُونَ رَجُلاً يُنَادِي بِالصَّلاَةِ. فَقَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا بِلاَلُ قُمْ فَنَادِ
بِالصَّلاَةِ ".
নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইব্নু ‘উমর (রাঃ) বলতেন যে, মুসলমানগণ যখন মদীনায় আগমন
করেন, তখন তাঁরা সালাতের সময় অনুমান করে সমবেত হতেন। এর জন্য কোন ঘোষণা দেয়া হতো
না। একদা তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। কয়েকজন সাহাবী বললেন, নাসারাদের ন্যায় নাকূস
বাজানোর ব্যবস্থা করা হোক। আর কয়েকজন বললেন, ইয়াহূদীদের শিঙ্গার ন্যায় শিঙ্গা
ফোঁকানোর ব্যবস্থা করা হোক। ‘উমর (রাঃ) বললেন, সালাতের ঘোষণা দেয়ার জন্য তোমরা কি
একজন লোক পাঠাতে পার না? তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেনঃহে বিলাল, উঠ এবং সালাতের জন্য ঘোষণা দাও। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬৯, ইসলামী
ফাউন্ডেশনঃ ৫৭৭)
হাদিস
১০/২. অধ্যায়ঃ
দু’ দু’বার আযানের শব্দ বলা ।
৬০৫
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ
بْنُ زَيْدٍ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ عَطِيَّةَ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ،
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ أُمِرَ بِلاَلٌ أَنْ يَشْفَعَ، الأَذَانَ وَأَنْ يُوتِرَ
الإِقَامَةَ إِلاَّ الإِقَامَةَ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)-কে আযানের শব্দ দু’ দু’বার এবং قَدْقَامَتِ الصَّلاَةُ ব্যতীত ইক্বামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
(৬০৩)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৭৮)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৭৮)
৬০৬
حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، قَالَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ،
قَالَ أَخْبَرَنَا خَالِدٌ الْحَذَّاءُ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ
مَالِكٍ، قَالَ لَمَّا كَثُرَ النَّاسُ قَالَ ـ ذَكَرُوا ـ أَنْ يَعْلَمُوا وَقْتَ
الصَّلاَةِ بِشَىْءٍ يَعْرِفُونَهُ، فَذَكَرُوا أَنْ يُورُوا نَارًا أَوْ
يَضْرِبُوا نَاقُوسًا، فَأُمِرَ بِلاَلٌ أَنْ يَشْفَعَ الأَذَانَ وَأَنْ يُوتِرَ
الإِقَامَةَ.
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মুসলিমগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাঁরা সালাতের সময়ের জন্য এমন কোন
সংকেত নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলেন, যার সাহায্যে সালাতের সময় উপস্থিত এ কথা বুঝা
যায়। কেউ কেউ বলেলেন, আগুন জ্বালানো হোক, কিংবা ঘণ্টা বাজানো হোক। তখন বিলাল
(রাঃ)-কে আযানের শব্দগুলো দু’ দু’বার এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার
নির্দেশ দেয়া হলো।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৭৯)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৭৯)
১০/৩. অধ্যায়ঃ
“কাদ কামাতিস্-সালাহ” ব্যতীত ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা ।
৬০৭
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ
بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ
أُمِرَ بِلاَلٌ أَنْ يَشْفَعَ، الأَذَانَ، وَأَنْ يُوتِرَ الإِقَامَةَ. قَالَ
إِسْمَاعِيلُ فَذَكَرْتُ لأَيُّوبَ فَقَالَ إِلاَّ الإِقَامَةَ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)-কে আযানের বাক্যগুলো দু’ দু’বার এবং
ইক্বামাতের বাক্যগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়। ইসমাঈল (রহঃ) বলেন, আমি এ
হাদীস আইয়ূবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তবে ‘কাদ্কামাতিস্ সলাতু’ ছাড়া।
১০/৪. অধ্যায়ঃ
আযানের মর্যাদা ।
৬০৮
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا
مَالِكٌ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاَةِ
أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهُ ضُرَاطٌ حَتَّى لاَ يَسْمَعَ التَّأْذِينَ، فَإِذَا
قَضَى النِّدَاءَ أَقْبَلَ، حَتَّى إِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلاَةِ أَدْبَرَ، حَتَّى
إِذَا قَضَى التَّثْوِيبَ أَقْبَلَ حَتَّى يَخْطُرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهِ،
يَقُولُ اذْكُرْ كَذَا، اذْكُرْ كَذَا. لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ، حَتَّى
يَظَلَّ الرَّجُلُ لاَ يَدْرِي كَمْ صَلَّى ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে
আযানের শব্দ না শুনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন
সালাতের জন্য ইক্বামাত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইক্বামাত শেষ হলে সে পুনরায়
ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত
বিষয়গুলো সে মনে করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পোঁছে যে, সে কয় রাক’আত সালাত
আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না।
১০/৫. অধ্যায়ঃ
আযানের আওয়াজ উচ্চ করা ।
উমর ইব্ন আবদুল আযীয (রহঃ) (মুয়াজ্জিনকে) বলতেন, স্বাভাবিক কণ্ঠে
সাদাসিধাভাবে আযান দাও, নতুবা এ পদ ছেড়ে দাও।
৬০৯
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا
مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ
بْنِ أَبِي صَعْصَعَةَ الأَنْصَارِيِّ، ثُمَّ الْمَازِنِيِّ عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ
أَخْبَرَهُ أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ قَالَ لَهُ " إِنِّي أَرَاكَ
تُحِبُّ الْغَنَمَ وَالْبَادِيَةَ، فَإِذَا كُنْتَ فِي غَنَمِكَ أَوْ بَادِيَتِكَ
فَأَذَّنْتَ بِالصَّلاَةِ فَارْفَعْ صَوْتَكَ بِالنِّدَاءِ، فَإِنَّهُ لاَ
يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ وَلاَ إِنْسٌ وَلاَ شَىْءٌ إِلاَّ
شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ". قَالَ أَبُو سَعِيدٍ سَمِعْتُهُ مِنْ
رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাকে তার পিতা সংবাদ দিয়েছেন যে, আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তাঁকে বললেন,
আমি দেখছি তুমি বক্রী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালোবাসো। তাই তুমি যখন বক্রী নিয়ে
থাকো, বা বন-জঙ্গলে থাকো এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন উচ্চকণ্ঠে আযান দাও।
কেননা, জিন্, ইনসান বা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়ায্যিনের আওয়াজ শুনবে, সে
কিয়ামাতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, এ কথা আমি আল্লাহ্র
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছি।
১০/৬. অধ্যায়ঃ
আযানের কারণে রক্তপাত হতে নিরাপত্তা পাওয়া ।
৬১০
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا
إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا غَزَا بِنَا قَوْمًا لَمْ يَكُنْ
يَغْزُو بِنَا حَتَّى يُصْبِحَ وَيَنْظُرَ، فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا كَفَّ
عَنْهُمْ، وَإِنْ لَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا أَغَارَ عَلَيْهِمْ، قَالَ فَخَرَجْنَا
إِلَى خَيْبَرَ فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ لَيْلاً، فَلَمَّا أَصْبَحَ وَلَمْ
يَسْمَعْ أَذَانًا رَكِبَ وَرَكِبْتُ خَلْفَ أَبِي طَلْحَةَ، وَإِنَّ قَدَمِي
لَتَمَسُّ قَدَمَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم. قَالَ فَخَرَجُوا إِلَيْنَا
بِمَكَاتِلِهِمْ وَمَسَاحِيهِمْ فَلَمَّا رَأَوُا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم
قَالُوا مُحَمَّدٌ وَاللَّهِ، مُحَمَّدٌ وَالْخَمِيسُ. قَالَ فَلَمَّا رَآهُمْ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ
أَكْبَرُ، خَرِبَتْ خَيْبَرُ، إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ
صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ ".
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই আমাদের নিয়ে
কোন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতেন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা
করতেন না বরং লক্ষ্য রাখতেন, যদি তিনি আযান শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে
অভিযান পরিচালনা করা হতে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে অভিযান
চালাতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং রাতের বেলায়
তাদের সেখানে পোঁছলাম। যখন প্রভাত হলো এবং তিনি আযান শুনতে পেলেন না; তখন আল্লাহ্র
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ার হলেন। আমি আবূ তালহা (রাঃ)-এর
পিছনে সওয়ার হলাম। আমার পা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পায়ের সাথে
লেগে যাচ্ছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, তারা তাদের থলে ও কোদাল নিয়ে বেরিয়ে আমাদের দিকে
আসলো। হঠাৎ তারা যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পেলো, তখন বলে
উঠল, ‘এ যে মুহাম্মাদ, আল্লাহ্র শপথ! মুহাম্মাদ তাঁর পঞ্চ বাহিনী সহ!’ আনাস (রাঃ)
বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দেখে বলে উঠলেনঃ
‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিণায়
অবতরণ করি, তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হয় মন্দ।’
১০/৭. অধ্যায়ঃ
মুয়াজ্জিনের আযান শুনলে যা বলতে হয় ।
৬১১
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا
مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي
سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ "
إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا مِثْلَ ما يَقُولُ الْمُؤَذِّنُ
".
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন
তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তাই বলবে।
৬১২
حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ،
عَنْ يَحْيَى، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحَارِثِ، قَالَ
حَدَّثَنِي عِيسَى بْنُ طَلْحَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ، يَوْمًا فَقَالَ
مِثْلَهُ إِلَى قَوْلِهِ " وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
".
‘ঈসা ইব্নু তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা তিনি মু’আবিয়াহ (রাঃ)-কে (আযানের জবাব দিতে) শুনেছেন যে, তিনি
‘আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ পর্যন্ত মুআযযিনের মতই বলেছেন।
৬১৩
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاهَوَيْهِ، قَالَ حَدَّثَنَا وَهْبُ
بْنُ جَرِيرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ يَحْيَى، نَحْوَهُ. قَالَ يَحْيَى
وَحَدَّثَنِي بَعْضُ، إِخْوَانِنَا أَنَّهُ قَالَ لَمَّا قَالَ حَىَّ عَلَى
الصَّلاَةِ. قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ. وَقَالَ
هَكَذَا سَمِعْنَا نَبِيَّكُمْ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ.
ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইয়াহ্ইয়া (রহ.) বলেছেন, আমার কোনো ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে,
মুআয্যিন যখন حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ বলল, তখন তিনি (মু‘আবিয়াহ (রাঃ) لاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ বললেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমরা এরূপ বলতে শুনেছি। (৬১২)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৮৬)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৮৬)
১০/৮. অধ্যায়ঃ
আযানের দু’আ ।
৬১৪
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ
أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ
اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ قَالَ
حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ
وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ
وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي
يَوْمَ الْقِيَامَةِ ".
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে
ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করেঃ ‘হে আল্লাহ্-এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের
মালিক, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ
মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকামে মাহমুদে পোঁছে দিন যার অঙ্গীকার আপনি
করেছেন’–ক্বিয়ামাতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে। [১]
[১] আযানের জওয়াবে কয়েকটি
বিষয় বাড়তিভাবে চালু হয়েছে, যা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেনঃ “যে ব্যক্তি
ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যারোপ করলো, সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল ।”
(বুখারী, মিশকাত ১৯৮ ‘ইলম অধ্যায়)
(১) অত্র হাদীসের শেষাংশে ‘ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী’আদ। (২) বায়হাক্বীতে (১ম খণ্ডের ৪১০ পৃঃ) বর্ণিত আযানের দু’আর শুরুতে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বি হাক্কি হা-যিহিদ দা’ওয়াতে। (৩) ইমাম তাহাভীর শারহু মা’আনিল আসার-এ বর্ণিত ‘আ-তি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদান। (৪) ইবনুস সুন্নীর ‘ফী ‘আমালিল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ’ গ্রন্থে ওয়াদ দারাজাতার রাফী’আহ। রাফী’ঈ প্রণীত ‘আল মুহাররির গ্রন্থে আযানের দু’আর শেষে বর্ণিত ‘ইয়া আরহামার রা-হিমীন। আযানের জওয়াবে প্রচলিত বাড়তি বিষয়গুলো অবশ্যই পরিত্যাজ্য। অতিরিক্ত শব্দগুলো সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। (মুহাদ্দিস শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী কৃত ‘ইরওয়াইল গালীল, ১ম খণ্ড ২৬০-২৬১ পৃষ্ঠা হাদীস নং ২৪৩) রেডিও ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত দু’আয় ‘ওয়ারযুকনা শা’আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ’ বাক্যটি যা যোগ করা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই ।
(১) অত্র হাদীসের শেষাংশে ‘ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী’আদ। (২) বায়হাক্বীতে (১ম খণ্ডের ৪১০ পৃঃ) বর্ণিত আযানের দু’আর শুরুতে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বি হাক্কি হা-যিহিদ দা’ওয়াতে। (৩) ইমাম তাহাভীর শারহু মা’আনিল আসার-এ বর্ণিত ‘আ-তি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদান। (৪) ইবনুস সুন্নীর ‘ফী ‘আমালিল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ’ গ্রন্থে ওয়াদ দারাজাতার রাফী’আহ। রাফী’ঈ প্রণীত ‘আল মুহাররির গ্রন্থে আযানের দু’আর শেষে বর্ণিত ‘ইয়া আরহামার রা-হিমীন। আযানের জওয়াবে প্রচলিত বাড়তি বিষয়গুলো অবশ্যই পরিত্যাজ্য। অতিরিক্ত শব্দগুলো সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। (মুহাদ্দিস শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী কৃত ‘ইরওয়াইল গালীল, ১ম খণ্ড ২৬০-২৬১ পৃষ্ঠা হাদীস নং ২৪৩) রেডিও ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত দু’আয় ‘ওয়ারযুকনা শা’আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ’ বাক্যটি যা যোগ করা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই ।
১০/৯. অধ্যায়ঃ
আযানের ব্যাপারে কুরআহর মাধ্যমে নির্বাচন।
উল্লেখ করা হয়েছে যে,একদল লোক আযান দেয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করল।
সা’দ (রাঃ) তাঁদের মধ্যে কুরআহর (লটারি) মাধ্যমে নির্বাচন করলেন।
৬১৫
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا
مَالِكٌ، عَنْ سُمَىٍّ، مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لَوْ
يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا
إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي
التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ
وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আযানে ও
প্রথম কাতারে কী (ফযীলত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত, কুরআহর মাধ্যমে বাছাই ব্যতীত
এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহলে অবশ্যই তারা কুরআহর মাধ্যমে ফায়সালা করত।
যুহরের সালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছে, যদি তারা জানত,
তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ‘ইশা ও ফজরের সালাত (জামা’আতে) আদায়ের কী
ফযীলত তা যদি তারা জানত, তাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা হাজির হত।
১০/১০. অধ্যায়ঃ
আযানের মধ্যে কথা বলা ।
সুলাইমান ইব্ন সুরাদ (রহঃ) আযানের মধ্যে কথা বলেছেন। হাসান বসরী
(রহঃ) বলেন, আযান বা ইকামত দেওয়ার সময় হেসে ফেললে কোন দোষ নেই।
৬১৬
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ أَيُّوبَ،
وَعَبْدِ الْحَمِيدِ، صَاحِبِ الزِّيَادِيِّ وَعَاصِمٍ الأَحْوَلِ عَنْ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ خَطَبَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ فِي يَوْمٍ رَدْغٍ،
فَلَمَّا بَلَغَ الْمُؤَذِّنُ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ. فَأَمَرَهُ أَنْ
يُنَادِيَ الصَّلاَةُ فِي الرِّحَالِ. فَنَظَرَ الْقَوْمُ بَعْضُهُمْ إِلَى
بَعْضٍ فَقَالَ فَعَلَ هَذَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ وَإِنَّهَا عَزْمَةٌ.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার বর্ষণ মুখর দিনে ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাদের
উদ্দেশ্যে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। এদিকে মুয়াজ্জিন আযান দিতে গিয়ে যখন ----- -এ পোঁছল,
তখন তিনি তাকে এ ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিলেন যে, ‘লোকেরা যেন আবাসে সালাত আদায় করে
নেয়।’ এতে লোকেরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। তখন ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন,
তাঁর চেয়ে যিনি অধিক উত্তম ছিলেন (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তিনিই এরূপ করেছেন। অবশ্য জুমু’আর সালাত ওয়াজিব। (তবে ওযরের কারণে নিজ আবাসস্থলে
সালাত আদায় করার অনুমতি আছে)।
১০/১১. অধ্যায়ঃ
সময় বলে দেয়ার লোক থাকলে অন্ধ ব্যক্তি আযান দিতে পারে ।
৬১৭
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ
ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ،
فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ ". ثُمَّ
قَالَ وَكَانَ رَجُلاً أَعْمَى لاَ يُنَادِي حَتَّى يُقَالَ لَهُ أَصْبَحْتَ
أَصْبَحْتَ.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, বিলাল (রাঃ) রাত থাকতেই আযান দেন। কাজেই ইব্নু উম্মে মাকতূম (রাঃ) আযান
না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা (সাহরীর) পানাহার করতে পার। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, ইব্নু
উম্মে মাকতূম (রাঃ) ছিলেন অন্ধ। যতক্ষণ না তাঁকে বলে দেওয়া হত যে, ‘ভোর হয়েছে, ভোর
হয়েছে’–ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না।
১০/১২. অধ্যায়ঃ
ফজরের সময় হবার পর আযান দেয়া ।
৬১৮
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا
مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ أَخْبَرَتْنِي
حَفْصَةُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا اعْتَكَفَ
الْمُؤَذِّنُ لِلصُّبْحِ وَبَدَا الصُّبْحُ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ
قَبْلَ أَنْ تُقَامَ الصَّلاَةُ.
হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন মুয়াজ্জিন সুবহে সাদিকের প্রতীক্ষায় থাকত (ও আযান
দিত) এবং ভোর স্পষ্ট হতো- জামা’আত দাঁড়ানোর পূর্বে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংক্ষেপে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করে নিতেন।
৬১৯
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، عَنْ
يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ بَيْنَ النِّدَاءِ وَالإِقَامَةِ مِنْ
صَلاَةِ الصُّبْحِ.
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের
আযান ও ইক্বামাতের মাঝে দু’ রাক’আত সালাত সংক্ষেপে আদায় করতেন।
৬২০
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ،
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ بِلاَلاً يُنَادِي
بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ
".
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিলাল
(রাঃ) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা (সাহ্রী) পানাহার করতে থাক; যতক্ষণ
না ইব্নু উম্মে মাকতূম (রাঃ) আযান দেন।[১]
[১] আধুনিক প্রকাশনীর ৫৮৫
নং হাদীসের টীকায় লিখেছেন যে, বিলাল (রাঃ) তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য আযান দিতেন।
কিন্তু কথাটি ভুল কারণ পরবর্তী হাদীস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ হচ্ছে যে, তাহাজ্জুদ
সালাত আদায়কারী ব্যক্তির অবসর গ্রহণ ও ঘুমন্ত মানুষকে জাগ্রত করার জন্য (যাতে তারা
সাহারী খেতে পারে) বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন। আর যারা জাগ্রত অবস্থায় সাহারী খেতেন
তারা যেন এই আযান শুনে সাহারী খাওয়া বন্ধ না করেন। মক্কা মদীনায় ফজরের আযানের
মাত্র আধা ঘণ্টা পূর্বে এ আযান এখনও চালু আছে। এবং এটা তাহাজ্জুদের আযান নয়।
নাসায়ী, বাইহাকী, ইব্নু খুযাইমাহ, ইব্নুস সাকান থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যাতে
প্রমাণিত হয় যে, শুধুমাত্র প্রথম আযানে “আস্ সলাতু খাইরুম মিনান নাওম” আছে। আর
দ্বিতীয়তে অর্থাৎ ফজরের মূল আযানে নেই। বিস্তারিত দেখুন সুবুলুস সালাম ২য় খণ্ড ১৮৫
পৃষ্ঠা ।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী লিখিত তামামুল মিন্নাহ গ্রন্থের ১৪৬ পৃষ্ঠা থেকে ১৪৮ পৃষ্ঠায় দীর্ঘ আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে তিনি বলেছেনঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, দ্বিতীয় আযানে তাসবীব বা আসসলাতু খাইরুম মিনান নাওম বলা বিদ’আত–সুন্নত বিরোধী। সুন্নাতের বিরোধিতা আরো বেশী সাব্যস্ত হয় প্রথম আযানকে উৎখাত করে সে আযানের তাসবীব বা শব্দবিশেষ “আস্ সলাতু খাইরুম মিনান নাওমকে দ্বিতীয় আযানে যুক্ত করায়। আর বাড়াবাড়ি করে দ্বিতীয় আযানে সাব্যস্ত করা হয়। (তামামুল মিন্নাহ ১৪৮ পৃঃ)
ইমাম তাহাবী প্রথম আযানে তাসবীব হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচিত ইব্নু ‘উমর ও আবূ মাহযূরাহর সুস্পষ্ট হাদীস দু’টি উল্লেখ করার পর বলেছেন। এটিই ইমাম আবূ হানিফাহ, ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মত। ( তামুমুল মিন্নাহ ১৪৮. পৃষ্ঠা)
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী সুন্নাহ বিরোধী আমল প্রচলন হওয়ার দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেনঃ একঃ ইসলামী দুনিয়ার অধিকাংশ মুয়াযযিন সুন্নাত বিরোধী আমল অব্যাহত রেখেছেন এবং খুব কম সংখ্যক আলিম এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দুইঃ অধিকাংশগণই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান ছাড়াই আলোচনা করেছেন। তাঁরা তাসবীব ফজরের প্রথম আযানে যেমনটি স্পষ্টভাবে সহীহ হাদীসগুলোতে এসেছে- তেমনটি ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। একমাত্র ইবনু রাসলান এবং সাম’আনী অধিকাংশের বিরোধিতা করে সহীহ হাদীস অনুযায়ী ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন ।
ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম এ কথাটি ফারয সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ ঘুমের সাথে ফারয সালাতের তুলনা হতে পারে না। এটি হতে পারে নফল সালাতের ক্ষেত্রে। কারণ উত্তমতার প্রসঙ্গ আনলে উভয়টি করা বৈধ হয়। এখানে ফারয সালাত বাদ দিয়ে ঘুমানো যাবে এমন কথা কেউ বলতে পারবেন না। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে তাসবীব প্রথম আযানের সাথে সংশ্লিষ্ট, দ্বিতীয় আযানে নয়। যা বিভিন্ন দেশে চালু আছে। উল্লেখ্য সিরিয়া ও জর্দানের যে সব এলাকায় আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানীর দা’ওয়াত ও তাবলীগের ব্যাপকা প্রচার লাভ করেছে সে সব জায়গায় এবং সুদানের সালাফীগণও (আনসারুস সুন্নাহ) ফজরের দ্বিতীয় আযানে তাসবীব ব্যাবহার করেন না ।
শাইখ উসাইমিন “প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে” এ আম হাদীস দ্বারা তিনি উপরে বর্ণিত আযান বলতে সকালের আযানকে বুঝিয়েছেন। কারণ দ্বিতীয় আযানটি হচ্ছে ইক্বামাত। এ হাদীস দ্বারা তাসবীব ফজরের দ্বিতীয় আযানে সাব্যস্ত করা অযৌক্তিক। কারণ ইক্বামাতকে যদি আযান হিসেবে ধরা হয় তাহলে সেটি ফজরের ক্ষেত্রে তৃতীয় আযান, দ্বিতীয় নয়। যখন বিষয়টি ফজরের আযানকে ঘিরেই তখন স্পষ্টভাবে যেখানে প্রথম বলা হয়েছে তখন দ্বিতীয় আযান হিসেবে দ্বিতীয় আযানকেই ধরতে হবে। তৃতীয়টিকে নয়। আর যারা “প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে” এই আম হাদীসের উপর আমল করতে গিয়ে ফজরের তিনটি আযানকে অস্বীকার করবেন। তারা কি ৬২০ নং হাদীসের বিলাল (রাঃ) প্রথম আযান দেয়ার সময় পানাহার বন্ধ না করে উম্মু মাকতূমের ইক্বামাত পর্যন্ত পানাহার করে থাকেন ।
এই আযান দেয়ার পূর্বে সতর্ক করার জন্য কোন কিছু বলা জায়িয নয়। ফজরে অন্য মুয়াযযিন আযান দিবে যাতে দুই আযানের পার্থক্য নিরূপণ করা যায়। শুধু তাই নয় প্রথম আযানে আসসলাতু খাইরুম.... আছে যা উম্মে মাকতূমের আযানে ছিল না। (সুবুলুস সালাম) [আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভালো জানেন]
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী লিখিত তামামুল মিন্নাহ গ্রন্থের ১৪৬ পৃষ্ঠা থেকে ১৪৮ পৃষ্ঠায় দীর্ঘ আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে তিনি বলেছেনঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, দ্বিতীয় আযানে তাসবীব বা আসসলাতু খাইরুম মিনান নাওম বলা বিদ’আত–সুন্নত বিরোধী। সুন্নাতের বিরোধিতা আরো বেশী সাব্যস্ত হয় প্রথম আযানকে উৎখাত করে সে আযানের তাসবীব বা শব্দবিশেষ “আস্ সলাতু খাইরুম মিনান নাওমকে দ্বিতীয় আযানে যুক্ত করায়। আর বাড়াবাড়ি করে দ্বিতীয় আযানে সাব্যস্ত করা হয়। (তামামুল মিন্নাহ ১৪৮ পৃঃ)
ইমাম তাহাবী প্রথম আযানে তাসবীব হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচিত ইব্নু ‘উমর ও আবূ মাহযূরাহর সুস্পষ্ট হাদীস দু’টি উল্লেখ করার পর বলেছেন। এটিই ইমাম আবূ হানিফাহ, ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মত। ( তামুমুল মিন্নাহ ১৪৮. পৃষ্ঠা)
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী সুন্নাহ বিরোধী আমল প্রচলন হওয়ার দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেনঃ একঃ ইসলামী দুনিয়ার অধিকাংশ মুয়াযযিন সুন্নাত বিরোধী আমল অব্যাহত রেখেছেন এবং খুব কম সংখ্যক আলিম এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দুইঃ অধিকাংশগণই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান ছাড়াই আলোচনা করেছেন। তাঁরা তাসবীব ফজরের প্রথম আযানে যেমনটি স্পষ্টভাবে সহীহ হাদীসগুলোতে এসেছে- তেমনটি ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। একমাত্র ইবনু রাসলান এবং সাম’আনী অধিকাংশের বিরোধিতা করে সহীহ হাদীস অনুযায়ী ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন ।
ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম এ কথাটি ফারয সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ ঘুমের সাথে ফারয সালাতের তুলনা হতে পারে না। এটি হতে পারে নফল সালাতের ক্ষেত্রে। কারণ উত্তমতার প্রসঙ্গ আনলে উভয়টি করা বৈধ হয়। এখানে ফারয সালাত বাদ দিয়ে ঘুমানো যাবে এমন কথা কেউ বলতে পারবেন না। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে তাসবীব প্রথম আযানের সাথে সংশ্লিষ্ট, দ্বিতীয় আযানে নয়। যা বিভিন্ন দেশে চালু আছে। উল্লেখ্য সিরিয়া ও জর্দানের যে সব এলাকায় আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানীর দা’ওয়াত ও তাবলীগের ব্যাপকা প্রচার লাভ করেছে সে সব জায়গায় এবং সুদানের সালাফীগণও (আনসারুস সুন্নাহ) ফজরের দ্বিতীয় আযানে তাসবীব ব্যাবহার করেন না ।
শাইখ উসাইমিন “প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে” এ আম হাদীস দ্বারা তিনি উপরে বর্ণিত আযান বলতে সকালের আযানকে বুঝিয়েছেন। কারণ দ্বিতীয় আযানটি হচ্ছে ইক্বামাত। এ হাদীস দ্বারা তাসবীব ফজরের দ্বিতীয় আযানে সাব্যস্ত করা অযৌক্তিক। কারণ ইক্বামাতকে যদি আযান হিসেবে ধরা হয় তাহলে সেটি ফজরের ক্ষেত্রে তৃতীয় আযান, দ্বিতীয় নয়। যখন বিষয়টি ফজরের আযানকে ঘিরেই তখন স্পষ্টভাবে যেখানে প্রথম বলা হয়েছে তখন দ্বিতীয় আযান হিসেবে দ্বিতীয় আযানকেই ধরতে হবে। তৃতীয়টিকে নয়। আর যারা “প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যে সালাত রয়েছে” এই আম হাদীসের উপর আমল করতে গিয়ে ফজরের তিনটি আযানকে অস্বীকার করবেন। তারা কি ৬২০ নং হাদীসের বিলাল (রাঃ) প্রথম আযান দেয়ার সময় পানাহার বন্ধ না করে উম্মু মাকতূমের ইক্বামাত পর্যন্ত পানাহার করে থাকেন ।
এই আযান দেয়ার পূর্বে সতর্ক করার জন্য কোন কিছু বলা জায়িয নয়। ফজরে অন্য মুয়াযযিন আযান দিবে যাতে দুই আযানের পার্থক্য নিরূপণ করা যায়। শুধু তাই নয় প্রথম আযানে আসসলাতু খাইরুম.... আছে যা উম্মে মাকতূমের আযানে ছিল না। (সুবুলুস সালাম) [আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভালো জানেন]
No comments