সহীহ বুখারী শরীফ অধ্যায় "ঈমান" হাদিস নং -৩৬থেকে ৫৮

জিহাদ ঈমানের শামিল।
৩৬
حَدَّثَنَا حَرَمِيُّ بْنُ حَفْصٍ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، قَالَ حَدَّثَنَا عُمَارَةُ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو زُرْعَةَ بْنُ عَمْرِو بْنِ جَرِيرٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ انْتَدَبَ اللَّهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِهِ لاَ يُخْرِجُهُ إِلاَّ إِيمَانٌ بِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي أَنْ أُرْجِعَهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ، أَوْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ، وَلَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي مَا قَعَدْتُ خَلْفَ سَرِيَّةٍ، وَلَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ
আবূ যুর‘আহ ইব্‌নু ‘আম্‌র ইব্‌নু জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, যদি সে শুধু আল্লাহর উপর ঈমান এবং তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমানের কারণে বের হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা দেন যে, আমি তাকে তার পুণ্য বা গানীমাত (ও বাহন) সহ ঘরে ফিরিয়ে আনবো কিংবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো।

আর আমার উম্মতের উপর কষ্টদায়ক হবে বলে যদি মনে না করতাম তবে কোন সেনাদলের সঙ্গে না গিয়ে বসে থাকতাম না। আমি অবশ্যই এটা ভালবাসি যে, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই।
(২৭৮৭, ২৭৯৭, ২৯৭২, ৩১২৩, ৭২২৬, ৭২২৭, ৭৪৫৭, ৭৪৬৩; মুসলিম ৩৩/২৮ হাঃ ১৮৭৬, আহমাদ ৯১৯৮, ৯৪৮১, ৯৪৮৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৫)
/২৭. অধ্যায়ঃ
রমযানের রাত্রিতে নফল ‘ইবাদাত’ ঈমানের অঙ্গ।
৩৭
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏"‏‏
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্‌ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬)
/২৮. অধ্যায়ঃ
সওয়াবের আকাঙ্ক্ষায় রমাযানের সিয়াম পালন ঈমানের অঙ্গ।
৩৮
حَدَّثَنَا ابْنُ سَلاَمٍ، قَالَ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রমযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৭)
/২৯. অধ্যায়ঃ
দ্বীন হচ্ছে সহজ।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ আল্লাহর নিকট নিষ্ঠা ও উদারতার দ্বীনই হচ্ছে অধিক পছন্দনীয়।
৩৯
حَدَّثَنَا عَبْدُ السَّلاَمِ بْنُ مُطَهَّرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ مَعْنِ بْنِ مُحَمَّدٍ الْغِفَارِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ، وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلاَّ غَلَبَهُ، فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا، وَاسْتَعِينُوا بِالْغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَىْءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং (মধ্যপন্থার) নিকটে থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (‘ইবাদাত সহযোগে) সাহায্য চাও।
(৫৬৭৩, ৬৪৬৩, ৭২৩৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৮)
/৩০. অধ্যায়ঃ
সালাত ঈমানের শামিল।
আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ এরূপ নন যে তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করবেন- (সূরা আল-বাক্বারাহ ২/১৪৩); অর্থাৎ বায়তুল্লাহ্‌র নিকট (বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে) আদায়কৃত তোমাদের সালাতকে তিনি নষ্ট করবেন না।
৪০
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ خَالِدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ أَوَّلَ مَا قَدِمَ الْمَدِينَةَ نَزَلَ عَلَى أَجْدَادِهِ ـ أَوْ قَالَ أَخْوَالِهِ ـ مِنَ الأَنْصَارِ، وَأَنَّهُ صَلَّى قِبَلَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا، أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا، وَكَانَ يُعْجِبُهُ أَنْ تَكُونَ قِبْلَتُهُ قِبَلَ الْبَيْتِ، وَأَنَّهُ صَلَّى أَوَّلَ صَلاَةٍ صَلاَّهَا صَلاَةَ الْعَصْرِ، وَصَلَّى مَعَهُ قَوْمٌ، فَخَرَجَ رَجُلٌ مِمَّنْ صَلَّى مَعَهُ، فَمَرَّ عَلَى أَهْلِ مَسْجِدٍ، وَهُمْ رَاكِعُونَ فَقَالَ أَشْهَدُ بِاللَّهِ لَقَدْ صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قِبَلَ مَكَّةَ، فَدَارُوا كَمَا هُمْ قِبَلَ الْبَيْتِ، وَكَانَتِ الْيَهُودُ قَدْ أَعْجَبَهُمْ إِذْ كَانَ يُصَلِّي قِبَلَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، وَأَهْلُ الْكِتَابِ، فَلَمَّا وَلَّى وَجْهَهُ قِبَلَ الْبَيْتِ أَنْكَرُوا ذَلِكَ‏.‏ قَالَ زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ فِي حَدِيثِهِ هَذَا أَنَّهُ مَاتَ عَلَى الْقِبْلَةِ قَبْلَ أَنْ تُحَوَّلَ رِجَالٌ وَقُتِلُوا، فَلَمْ نَدْرِ مَا نَقُولُ فِيهِمْ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى ‏{‏وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ‏}‏
বারাআ (ইব্‌নু ‘আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় হিজরত করে সর্বপ্রথম আনসারদের মধ্যে তাঁর নানাদের গোত্র [আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন] বা মামাদের গোত্রে এসে ওঠেন। তিনি ষোল-সতের মাস বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন। কিন্তু তাঁর পছন্দ ছিল যে, তাঁর কিবলা বাইতুল্লাহ্‌র দিকে হোক। আর তিনি (বাইতুল্লাহ্‌র দিকে) প্রথম যে সালাত আদায় করেন, তা ছিল আসরের সালাত এবং তাঁর সঙ্গে একদল লোক সে সালাত আদায় করেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা সালাত আদায় করেছিলেন তাঁদের একজন লোক বের হয়ে এক মাসজিদে মুসল্লীদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা তখন রুকূ‘ অবস্থায় ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ “আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, এইমাত্র আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মক্কার দিকে ফিরে সালাত আদায় করে এসেছি। তখন তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন সে অবস্থায়ই বাইতুল্লাহ্‌র দিকে ঘুরে গেলেন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বায়তুল মাকদিস-এর দিকে সালাত আদায় করতেন তখন ইয়াহুদীদের ও আহলি-কিতাবদের নিকট এটা খুব ভাল লাগত; কিন্তু তিনি যখন বায়তুল্লাহ্‌র দিকে তাঁর মুখ ফিরালেন তখন তারা এটা খুব অপছন্দ করল। যুহায়র (রহঃ) বলেন, আবূ ইসহাক (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে আমার নিকট যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাতে এ কথাও রয়েছে যে, কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে বেশ কিছু লোক মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং শাহাদাত বরণ করেছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে আমরা কি বলব, সেটা আমাদের জানা ছিল না। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ (وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ) “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সালাতকে বিনষ্ট করবেন না”।

(৩৯৯, ৪৪৭৬, ৪৪৯২, ৭২৫২; মুসলিম ৫/২ হাঃ ৫২৫, আহমাদ ১৮৫৬৪, ১৮৭৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯)
/৩১. অধ্যায়ঃ
সুন্দরভাবে ইসলাম গ্রহণ
৪১
قَالَ مَالِكٌ أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ، أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَسَارٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ إِذَا أَسْلَمَ الْعَبْدُ فَحَسُنَ إِسْلاَمُهُ يُكَفِّرُ اللَّهُ عَنْهُ كُلَّ سَيِّئَةٍ كَانَ زَلَفَهَا، وَكَانَ بَعْدَ ذَلِكَ الْقِصَاصُ، الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ، وَالسَّيِّئَةُ بِمِثْلِهَا إِلاَّ أَنْ يَتَجَاوَزَ اللَّهُ عَنْهَا
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলাম উত্তম হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। অতঃপর শুরু হয় প্রতিফল; একটি পূণ্যের বিনিময়ে দশ হতে সাতশ গুণ পর্যন্ত; আর একটি পাপ কাজের বিনিময়ে ঠিক ততটুকু মন্দ প্রতিফল। অবশ্য আল্লাহ যদি ক্ষমা করে দেন তবে তা অন্য ব্যাপার।
(৩৯৯, ৪৪৭৬, ৪৪৯২, ৭২৫২; মুসলিম ৫/২ হাঃ ৫২৫, আহমাদ ১৮৫৬৪, ১৮৭৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯)
৪২
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا أَحْسَنَ أَحَدُكُمْ إِسْلاَمَهُ، فَكُلُّ حَسَنَةٍ يَعْمَلُهَا تُكْتَبُ لَهُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ، وَكُلُّ سَيِّئَةٍ يَعْمَلُهَا تُكْتَبُ لَهُ بِمِثْلِهَا
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উত্তমরূপে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তখন সে যে আমালে সালেহ (নেক আমল) করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে সাতশ গুণ পর্যন্ত (পুণ্য) লেখা হয়। আর সে যে পাপ কাজ করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য ঠিক ততটুকুই পাপ লেখা হয়।
(মুসলিম ১/৫৯ হাঃ ১২৯, আহমাদ ৮২২৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০)
/৩২. অধ্যায়ঃ
আল্লাহ তা‘আলার কাছে সবচেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমল সেটাই যা নিয়মিত করা হয়।
৪৩
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ هِشَامٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا امْرَأَةٌ قَالَ ‏"‏ مَنْ هَذِهِ ‏"‏‏.‏ قَالَتْ فُلاَنَةُ‏.‏ تَذْكُرُ مِنْ صَلاَتِهَا‏.‏ قَالَ ‏"‏ مَهْ، عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُونَ، فَوَاللَّهِ لاَ يَمَلُّ اللَّهُ حَتَّى تَمَلُّوا ‏"‏‏.‏ وَكَانَ أَحَبَّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَامَ عَلَيْهِ صَاحِبُهُ
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তাঁর নিকট আসেন, তাঁর নিকট তখন এক মহিলা ছিলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘ইনি কে?’ ‘আয়িশা (রাঃ) উত্তর দিলেন, অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর সলাতের উল্লেখ করলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘থাম, তোমরা যতটুকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা‘আলা ততক্ষণ পর্যন্ত (সওয়াব দিতে) বিরত হন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়। আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল সেটাই, যা আমলকারী নিয়মিত করে থাকে।
(১১৫১; মুসলিম ২/৩১ হাঃ ৭৮৫, আহমাদ ২৪৯৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪১)
/৩৩. অধ্যায়ঃ
ঈমানের বৃদ্ধি ও হ্রাস।
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “আমি তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম”- (সূরা কাহাফ ১৮/১৩)। “যাতে মু‘মিনদের ঈমান আরো বেড়ে যায়”- (সূরা মুদ্‌দাসসির ৭৪/৩১)। তিনি আরও ইরশাদ করেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম”- (সূরা আল-মায়িদাহ্‌ ৫/৩); পূর্ণ জিনিস থেকে কিছু বাদ দেয়া হলে তা অপূর্ণ হয়।
৪৪
حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ، قَالَ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ ‏"‏‏.‏ قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ قَالَ أَبَانُ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ حَدَّثَنَا أَنَسٌ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مِنْ إِيمَانٍ ‏"‏‏.‏ مَكَانَ ‏"‏ مِنْ خَيْرٍ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পূণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পূণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।

আবূ ‘আবদুল্লাহ বলেন, আবান (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, আনাস (রাঃ) হতে এবং তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে নেকী –এর স্থলে ‘ঈমান’ শব্দটি রিওয়ায়াত করেছেন।

(৪৪৭৬, ৬৫৬৫, ৭৪১০, ৭৪৪০, ৭৫০৯, ৭৫১০, ৭৫১৬; মুসলিম ১/৮৪ হাঃ ১৯৩, আহমাদ ১২১৫৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪২)
৪৫
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ الصَّبَّاحِ، سَمِعَ جَعْفَرَ بْنَ عَوْنٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الْعُمَيْسِ، أَخْبَرَنَا قَيْسُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، أَنَّ رَجُلاً، مِنَ الْيَهُودِ قَالَ لَهُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، آيَةٌ فِي كِتَابِكُمْ تَقْرَءُونَهَا لَوْ عَلَيْنَا مَعْشَرَ الْيَهُودِ نَزَلَتْ لاَتَّخَذْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ عِيدًا‏.‏ قَالَ أَىُّ آيَةٍ قَالَ ‏{‏الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا‏}‏‏.‏ قَالَ عُمَرُ قَدْ عَرَفْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ وَالْمَكَانَ الَّذِي نَزَلَتْ فِيهِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ قَائِمٌ بِعَرَفَةَ يَوْمَ جُمُعَةٍ‏.‏
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জনৈক ইয়াহূদী তাঁকে বললঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহূদী জাতির উপর অবতীর্ণ হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে খুশীর দিন হিসেবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? সে বললঃ “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম” –(সূরাহ্‌ মায়িদাহ্‌ ৫/৩)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি; তিনি সেদিন ‘আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুমু‘আহ্‌র দিন।
(৪৪০৭, ৪৬০৬, ৭২৬৮; মুসলিম ৪৩/১ হাঃ ৩০১৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৩)
/৩৪. অধ্যায়ঃ
যাকাত ইসলামের অঙ্গ।
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ “তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে, যাকাত দিতে। আর এ-ই সঠিক দ্বীন।” (সূরা বায়্যিনাহ্‌ ৯৮:৫)
৪৬
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنْ عَمِّهِ أَبِي سُهَيْلِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ سَمِعَ طَلْحَةَ بْنَ عُبَيْدِ اللَّهِ، يَقُولُ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ، ثَائِرُ الرَّأْسِ، يُسْمَعُ دَوِيُّ صَوْتِهِ، وَلاَ يُفْقَهُ مَا يَقُولُ حَتَّى دَنَا، فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَنِ الإِسْلاَمِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ ‏"‏‏.‏ فَقَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهَا قَالَ ‏"‏ لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ‏"‏‏.‏ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ وَصِيَامُ رَمَضَانَ ‏"‏‏.‏ قَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهُ قَالَ ‏"‏ لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ‏"‏‏.‏ قَالَ وَذَكَرَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الزَّكَاةَ‏.‏ قَالَ هَلْ عَلَىَّ غَيْرُهَا قَالَ ‏"‏ لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَوَّعَ ‏"‏‏.‏ قَالَ فَأَدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ وَاللَّهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ‏.‏ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ
ত্বলহা ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈক নাজ্‌দবাসী আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলো। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়ায শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু সে কি বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে নিকটে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত’ ; সে বলল, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো সালাত আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘আর রমযানের সাওম।’ সে বলল, ‘আমার উপর এছাড়া আরো সাওম আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার।’ বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, ‘আমার উপর এছাড়া আরো আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল হিসেবে দিতে পার।’ বর্ননাকারী বলেন, ‘সে ব্যক্তি এই বলে চলে গেলেন; ‘আল্লাহর শপথ’ আমি এর চেয়ে অধিকও করব না এবং কমও করব না।’ তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘সে কৃতকার্য হবে যদি সত্য বলে থাকে।’
(১৮৯১, ২৬৭৮, ৬৯৫৬; মুসলিম ১/২ হাঃ ১১, আহমাদ ১৩৯০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৪)
/৩৫. অধ্যায়ঃ
জানাযার পিছে পিছে যাওয়া ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।
৪৭
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَلِيٍّ الْمَنْجُوفِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا رَوْحٌ، قَالَ حَدَّثَنَا عَوْفٌ، عَنِ الْحَسَنِ، وَمُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ مُسْلِمٍ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، وَكَانَ مَعَهُ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا، وَيَفْرُغَ مِنْ دَفْنِهَا، فَإِنَّهُ يَرْجِعُ مِنَ الأَجْرِ بِقِيرَاطَيْنِ، كُلُّ قِيرَاطٍ مِثْلُ أُحُدٍ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ رَجَعَ قَبْلَ أَنْ تُدْفَنَ فَإِنَّهُ يَرْجِعُ بِقِيرَاطٍ ‏"‏‏.‏ تَابَعَهُ عُثْمَانُ الْمُؤَذِّنُ قَالَ حَدَّثَنَا عَوْفٌ عَنْ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ‏.‏
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও পুণ্যের আশায় কোন মুসলমানের জানাযার অনুগমন করে এবং তার সালাত-ই-জানাযা আদায় করে ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সঙ্গে থাকে, সে দুই কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কীরাত হল উহুদ পর্বতের মতো। আর যে ব্যক্তি শুধু তার জানাযা আদায় করে, তারপর দাফন সম্পন্ন হবার পূর্বেই চলে আসে, সে এক কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। ‘উসমান আল-মুয়ায্‌যিন (রহঃ)....আবূ হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(১৩২৩, ১৩২৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৫)
/৩৬. অধ্যায়ঃ
অজান্তে মু’মিনের আমল বিনষ্ট হবার ভয়।
ইবরাহীম তায়মীয়ূ (রহঃ) বলেনঃ আমার ‘আমলের সাথে যখন আমার কথা তুলনা করি, তখন আশঙ্কা হয়, আমি না মিথ্যাবাদী হই। ইব্‌নু আবূ মুলায়কাহ (রহঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এমন ত্রিশজন সাহাবীকে পেয়েছি, যাঁরা সকলেই নিজেদের সম্পর্কে নিফাকের ভয় করতেন। তাঁরা কেউ এ কথা বলতেন না যে, তিনি জিবরীল (আ) ও মীকাঈল (আ)-এর তুল্য ঈমানের অধিকারী। হাসান (বসরী) (রহঃ) হতে বর্ণিত। নিফাকের ভয় মু’মিনই করে থাকে। আর কেবল মুনাফিকই তা থেকে নিশ্চিত থাকে। তওবা না করে পরস্পর লড়াই করা ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্ক থাকা। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “এবং তারা (মুত্তাকীরা) যা করে ফেলে, জেনে শুনে তার পুনরাবৃত্তি করে না।” (সূরা আল ‘ইমরান ৩/১৩৫)
৪৮
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَرْعَرَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زُبَيْدٍ، قَالَ سَأَلْتُ أَبَا وَائِلٍ عَنِ الْمُرْجِئَةِ،، فَقَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ سِ باب الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
যুবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আবূ ওয়াইল (রহঃ)-কে মুরজিআ’ [১] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ (ইব্‌ন মাস‘ঊদ) আমার নিকট বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।
(৬০৪৪,৭০৭৬; মুসলিম ১/২৮, হাঃ ৬৪, আহমাদ ৩৬৪৭ ) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬)
 [১] একটি বাতিল ফিরকা, যাদের মত হল, ভাল হোক বা মন্দ কোন আমলের মূল্য নেই এবং ঈমান আনার পর কোন গুনাহ ক্ষতিকর নয়।
৪৯
أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ يُخْبِرُ بِلَيْلَةِ الْقَدْرِ، فَتَلاَحَى رَجُلاَنِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ فَقَالَ ‏ "‏ إِنِّي خَرَجْتُ لأُخْبِرَكُمْ بِلَيْلَةِ الْقَدْرِ، وَإِنَّهُ تَلاَحَى فُلاَنٌ وَفُلاَنٌ فَرُفِعَتْ وَعَسَى أَنْ يَكُونَ خَيْرًا لَكُمُ الْتَمِسُوهَا فِي السَّبْعِ وَالتِّسْعِ وَالْخَمْسِ
‘উবাদাহ ইব্‌নু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লায়লাতুল কদ্‌র সম্পর্কে জানানোর জন্য বের হলেন। তখন দু’জন মুসলমান বিবাদ করছিল। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের লাইলাতুল কদ্‌র সম্পর্কে জানানোর জন্য বেরিয়েছিলাম; কিন্তু তখন অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর হয়তো বা এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তোমরা তা অনুসন্ধান কর (রমযানের) ২৭, ২৯ ও ২৫ তম রাতে।

(২০২৩, ৬০৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৭)
/৩৭. অধ্যায়ঃ
জিবরীল (‘আঃ) কর্তৃক আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঈমান, ইসলাম, ইহসান ও কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন।
জিবরীল (‘আঃ) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ঈমান, ইসলাম, ইহসান ও কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন আর তাঁকে দেওয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তর। তারপর তিনি বললেনঃ জিবরীল (‘আঃ) তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। তিনি এসব বিষয়কে দ্বীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঈমান সম্পর্কে আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দলকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে বিবরণ দিয়েছেন এবং আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ
“কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবূল করা হবে না। (সূরা আল-‘ইমরান ৩/৮৫)
৫০
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا أَبُو حَيَّانَ التَّيْمِيُّ، عَنْ أَبِي زُرْعَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَارِزًا يَوْمًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ مَا الإِيمَانُ قَالَ ‏"‏ الإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَبِلِقَائِهِ وَرُسُلِهِ، وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ ‏"‏‏.‏ قَالَ مَا الإِسْلاَمُ قَالَ ‏"‏ الإِسْلاَمُ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكَ بِهِ، وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ ‏"‏‏.‏ قَالَ مَا الإِحْسَانُ قَالَ ‏"‏ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ‏"‏‏.‏ قَالَ مَتَى السَّاعَةُ قَالَ ‏"‏ مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَسَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا إِذَا وَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رُعَاةُ الإِبِلِ الْبُهْمُ فِي الْبُنْيَانِ، فِي خَمْسٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ اللَّهُ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ تَلاَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏{‏إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ‏}‏ الآيَةَ‏.‏ ثُمَّ أَدْبَرَ فَقَالَ ‏"‏ رُدُّوهُ ‏"‏‏.‏ فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ يُعَلِّمُ النَّاسَ دِينَهُمْ ‏"‏‏.‏ قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ جَعَلَ ذَلِكَ كُلَّهُ مِنَ الإِيمَانِ‏
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনসমক্ষে উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় তাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলেন ‘ঈমান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, (ক্বিয়ামাতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইসলাম কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করবেন না, সালাত প্রতিষ্ঠা করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযান-এর সিয়ামব্রত পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইহসান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘আপনি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেনঃ ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত নন। তবে আমি আপনাকে ক্বিয়ামাতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (ক্বিয়ামাতের জ্ঞান) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।’ অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ ‘কিয়ামাতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই নিকট.......।’ (সূরা লুক্বমান ৩১/৩৪)

এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল (‘আঃ) ; লোকদেরকে তাদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন।’ আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব বিষয়কে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
(৪৭৭৭; মুসলিম ১/১ হাঃ ৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৮)
/৩৮. অধ্যায়ঃ
২/৩৮. অধ্যায়ঃ
৫১
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ حَمْزَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ، أَخْبَرَهُ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو سُفْيَانَ، أَنَّ هِرَقْلَ، قَالَ لَهُ سَأَلْتُكَ هَلْ يَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ، فَزَعَمْتَ أَنَّهُمْ يَزِيدُونَ، وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ حَتَّى يَتِمَّ‏.‏ وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ سَخْطَةً لِدِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ، فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ، وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ حِينَ تُخَالِطُ بَشَاشَتُهُ الْقُلُوبَ، لاَ يَسْخَطُهُ أَحَدٌ‏
‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হারব আমার নিকট বর্ণনা করেন, হিরাক্লিয়াস তাঁকে বলেছিল, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলে, তারা সংখ্যায় বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপার এরূপই থাকে যতক্ষণ না তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেউ তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, ‘না।’ প্রকৃত ঈমান এরূপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৯)
/৩৯. অধ্যায়ঃ
দ্বীন রক্ষাকারীর মর্যাদা।
৫২
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّاءُ، عَنْ عَامِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيِنِهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ كَرَاعٍ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى، يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ‏.‏ أَلاَ وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، أَلاَ إِنَّ حِمَى اللَّهِ فِي أَرْضِهِ مَحَارِمُهُ، أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ‏.‏ أَلاَ وَهِيَ الْقَلْبُ ‏"‏‏
নু‘মান ইব্‌নু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয় হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্‌ সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহ্‌রই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)।
(২০৫১; মুসলিম ২২/২০ হাঃ ১৫৯৯, আহমাদ ১৮৩৯৬, ১৮৪০২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০,ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫০)
/৪০. অধ্যায়ঃ
গানীমাতের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা ঈমানের শামিল।
৫৩
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْجَعْدِ، قَالَ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي جَمْرَةَ، قَالَ كُنْتُ أَقْعُدُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ، يُجْلِسُنِي عَلَى سَرِيرِهِ فَقَالَ أَقِمْ عِنْدِي حَتَّى أَجْعَلَ لَكَ سَهْمًا مِنْ مَالِي، فَأَقَمْتُ مَعَهُ شَهْرَيْنِ، ثُمَّ قَالَ إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ الْقَيْسِ لَمَّا أَتَوُا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ مَنِ الْقَوْمُ أَوْ مَنِ الْوَفْدُ ‏"‏‏.‏ قَالُوا رَبِيعَةُ‏.‏ قَالَ ‏"‏ مَرْحَبًا بِالْقَوْمِ ـ أَوْ بِالْوَفْدِ ـ غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ نَدَامَى ‏"‏‏.‏ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا لاَ نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيَكَ إِلاَّ فِي شَهْرِ الْحَرَامِ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الْحَىُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فَصْلٍ، نُخْبِرْ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلْ بِهِ الْجَنَّةَ‏.‏ وَسَأَلُوهُ عَنِ الأَشْرِبَةِ‏.‏ فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ، وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ، أَمَرَهُمْ بِالإِيمَانِ بِاللَّهِ وَحْدَهُ‏.‏ قَالَ ‏"‏ أَتَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ ‏"‏‏.‏ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ‏.‏ قَالَ ‏"‏ شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامُ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ، وَصِيَامُ رَمَضَانَ، وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ الْمَغْنَمِ الْخُمُسَ ‏"‏‏.‏ وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ عَنِ الْحَنْتَمِ وَالدُّبَّاءِ وَالنَّقِيرِ وَالْمُزَفَّتِ‏.‏ وَرُبَّمَا قَالَ الْمُقَيَّرِ‏.‏ وَقَالَ ‏"‏ احْفَظُوهُنَّ وَأَخْبِرُوا بِهِنَّ مَنْ وَرَاءَكُمْ ‏"‏‏.‏
আবূ জামরাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে বসতাম। তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন। একবার তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার ধন-সম্পদ হতে কিয়দংশ প্রদান করবো। আমি তাঁর সাথে দু’মাস থাকলাম। অতঃপর একদা তিনি বললেন, আবদুল কায়েস-এর একটি প্রতিনিধি দল আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করলে তিনি বললেনঃ তোমরা কোন্‌ গোত্রের? কিংবা বললেন, কোন প্রতিনিধিদলের? তারা বললো, ‘রাবী‘আ গোত্রের।’ তিনি বললেনঃ স্বাগতম সে গোত্র বা সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না হয়েই আগমন করেছে। তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল! শাহরুল হারাম ব্যতীত অন্য কোন সময় আমরা আপনার নিকট আগমন করতে পারি না। আমাদের এবং আপনার মধ্যে মুযার গোত্রীয় কাফিরদের বসবাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট নির্দেশ দিন, যাতে করে আমরা যাদের পিছনে ছেড়ে এসেছি তাদের অবগত করতে পারি এবং যাতে করে আমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারি। তারা পানীয় সম্বন্ধেও জিজ্ঞেস করলো। তখন তিনি তাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ এবং চারটি বিষয় হতে নিষেধ করলেন। তাদেরকে এক আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপনের নির্দেশ দিয়ে বললেনঃ ‘এক আল্লাহর প্রতি কিভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা হয় তা কি তোমরা অবগত আছো?’ তাঁরা বললো, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত।’ তিনি বললেনঃ ‘তা হচ্ছে এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা; আর তোমরা গানীমাতের সম্পদ হতে এক-পঞ্চমাংশ আদায় করবে। তিনি তাদেরকে চারটি বিষয় হতে বিরত থাকতে বললেন। আর তা হচ্ছেঃ সবুজ কলস, শুকনো কদুর খোল, খেজুর বৃক্ষের গুড়ি হতে তৈরী বাসন এবং আলকাতরা দ্বারা রাঙানো পাত্র। রাবী বলেন, বর্ণনাকারী (মুযাফ্‌ফাত-এর স্থলে) কখনও আন্‌নাক্বীর উল্লেখ করেছেন (দু’টি শব্দের অর্থ একইরূপ) ; তিনি আরো বলেন, তোমরা এ বিষয়গুলো ভালো করে জেনে নাও এবং অন্যদেরও এগুলো অবগত করো।

(৮৭, ৫২৩, ১৩৯৮, ৩০৯৫, ৩৫১০, ৪৩৬৮, ৪২৬৯, ৬১৭৬, ৭২৬৬, ৭৫৫৬; মুসলিম ১/৬ হাঃ ১৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫১)
/৪১. অধ্যায়ঃ
‘আমলসমূহ সংকল্প ও পুণ্যের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যক্তির প্রাপ্য তার সংকল্প অনুযায়ী।
কাজেই ঈমান, উযূ, সালাত, যাকাত, হাজ্জ, সিয়াম এবং অন্যান্য বিধানসমূহ সবই এর শামিল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “বলুন প্রত্যেকেই আপন স্বভাব অনুসারে কর্ম সম্পাদন করে থাকে।” (সূরা আল-ইসরা ১৭/৮৪)
অর্থাৎ সংকল্প অনুসারে। মানুষ তার পরিবারবর্গের জন্য পুণ্যের আশায় যা ব্যয় করে, তা সদাক্বাহ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (এখন মক্কা হতে হিজরত নেই) তবে কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত অবশিষ্ট রয়েছে।
৫৪
‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কর্মসমূহ সংকল্পের সাথে সম্পৃক্ত এবং প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য তার সংকল্প অনুযায়ী। কাজেই যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ ও তদীয় রসূলের উদ্দেশ্যে হয়েছে বলেই ধরা হবে। আর যার হিজরত হয় দুনিয়া অর্জনের জন্য বা কোন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।

(১; মুসলিম ৩৩/৪৫ হাঃ ১৯০৭, আহমাদ ১৬৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫২)
৫৫
আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সদাক্বাহ হয়ে যায়।
(৪০০৬, ৫৩৫১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৩)
৫৬
সা‘আদ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।’
(১২৯৫, ২৭৪২, ২৭৪৪, ৩৯৩৬, ৪৪০৯, ৫৩৫৪, ৫৬৫৯, ৫৬৬৮, ৬৩৭৩, ৬৭৩৩; মুসলিম ২৫/১ হাঃ ১৬২৮, আহমাদ ১৫৪৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৪)
/৪২. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ “দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর রসূলের জন্য, মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য এবং সমগ্র মুসলিমের জন্য।”
আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘যদি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি আস্থা রাখে।’ (সূরা আত্‌-তাওবাহ্‌ ৯/৯১)
৫৭
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ‏.‏
জারীর ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ আল-বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছি সালাত কায়িম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার।
(৫২৪, ১৪০১, ২১৫৭, ২৭১৪, ২৭১৫, ৭২০৪; মুসলিম ১/২৩ হাঃ ৫৬, আহমাদ ৩২৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৫)
৫৮
حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ، قَالَ سَمِعْتُ جَرِيرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ يَوْمَ مَاتَ الْمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ قَامَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ عَلَيْكُمْ بِاتِّقَاءِ اللَّهِ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَالْوَقَارِ وَالسَّكِينَةِ حَتَّى يَأْتِيَكُمْ أَمِيرٌ، فَإِنَّمَا يَأْتِيكُمُ الآنَ، ثُمَّ قَالَ اسْتَعْفُوا لأَمِيرِكُمْ، فَإِنَّهُ كَانَ يُحِبُّ الْعَفْوَ‏.‏ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ أُبَايِعُكَ عَلَى الإِسْلاَمِ‏.‏ فَشَرَطَ عَلَىَّ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ‏.‏ فَبَايَعْتُهُ عَلَى هَذَا، وَرَبِّ هَذَا الْمَسْجِدِ إِنِّي لَنَاصِحٌ لَكُمْ‏.‏ ثُمَّ اسْتَغْفَرَ وَنَزَلَ‏.‏
যিয়াদ ইব্‌নু ‘ইলাকা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ মুগীরাহ ইব্‌নু শু‘বাহ (রাঃ) [১] যেদিন ইন্তিকাল করেন সেদিন আমি জারীর ইবনূ ‘আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ)-এর নিকটে শুনেছি, তিনি (মিম্বারে) দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা করে বললেন, তোমরা এক আল্লাহকে ভয় করো যাঁর কোন অংশীদার নেই এবং নতুন কোন নেতার আগমন না হওয়া পর্যন্ত শৃংখলা বজায় রাখো, অতি সত্বর তোমাদের নেতা আগমন করবেন। অতঃপর জারীর (রাঃ) বললেন, তোমাদের নেতার জন্য ক্ষমা চাও; কেননা, তিনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অতঃপর বললেন, একদা আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে আরয করলাম, আমি আপনার নিকট ইসলামের বায়‘আত নিতে চাই। তিনি (অন্যান্য বিষয়ের সাথে) আমার উপর শর্ত দিয়ে বললেনঃ আর সকল মুসলমানের মঙ্গল কামনা করবে। অতঃপর আমি তাঁর নিকট এ শর্তের উপর বায়‘আত নিলাম। এ মাসজিদের প্রতিপালকের শপথ! আমি তোমাদের মঙ্গলকামনাকারী। অতঃপর তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং (মিম্বার হতে) নেমে গেলেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৬)
 [১] বিখ্যাত সাহাবী। তিনি কূফার আমীর ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.