সহীহ বুখারী শরীফ অধ্যায় "মাগাযী" হাদিস নং - ৪৩০১ থেকে ৪৪০০
৪৩০১
৪৩০২
৪৩০৩
৪৩০৪
৪৩০৯
৪৩১০
৪৩১১
৪৩১২
৪৩১৩
৬৪/৫৫. অধ্যায়ঃ
৪৩১৪
৪৩১৫
৪৩১৬
৪৩১৭
৪৩১৮
৪৩১৯
৪৩২০
৪৩২১
৪৩২২
৬৪/৫৬. অধ্যায়ঃ
৪৩২৩
৬৪/৫৭. অধ্যায়ঃ
৪৩২৪
৪৩২৫
৪৩২৬
৪৩২৭
৪৩২৮
৪৩২৯
৪৩৩০
৪৩৩১
৪৩৩২
৪৩৩৩
৪৩৩৪
৪৩৩৫
৪৩৩৬
৪৩৩৭
৬৪/৫৮. অধ্যায়ঃ
৪৩৩৮
৬৪/৫৯. অধ্যায়ঃ
৪৩৩৯
৬৪/৬০. অধ্যায়ঃ
৪৩৪০
৬৪/৬১. অধ্যায়ঃ
৪৩৪১
৪৩৪২
৪৩৪৩
৪৩৪৪
৪৩৪৫
৪৩৪৬
৪৩৪৭
৪৩৪৮
৬৪/৬২. অধ্যায়ঃ
৪৩৪৯
৪৩৫০
৪৩৫২
৪৩৫৩
৪৩৫৪
৬৪/৬৩. অধ্যায়ঃ
৪৩৫৫
৪৩৫৬
৪৩৫৭
৬৪/৬৪. অধ্যায়ঃ
৪৩৫৮
৬৪/৬৫. অধ্যায়ঃ
৪৩৫৯
৬৪/৬৬. অধ্যায়ঃ
৪৩৬০
৪৩৬১
৪৩৬২
৬৪/৬৭.অধ্যায়ঃ
৪৩৬৩
৪৩৬৪
৬৪/৬৮. অধ্যায়ঃ
৪৩৬৫
৬৪/৬৯. অধ্যায়ঃ
৪৩৬৬
৪৩৬৭
৬৪/৭০ অধ্যায়ঃ
৪৩৬৮
৪৩৬৯
৪৩৭০
৪৩৭১
৬৪/৭১ অধ্যায়ঃ
৪৩৭২
৪৩৭৩
৪৩৭৪
৪৩৭৫
৪৩৭৬
৪৩৭৭
৬৪/৭২. অধ্যায়ঃ
৪৩৭৮
৪৩৭৯
৬৪/৭৩. অধ্যায়ঃ
৪৩৮০
৪৩৮১
৪৩৮২
৬৪/৭৪. অধ্যায়ঃ
৪৩৮৩
৬৪/৭৫. অধ্যায়ঃ
৪৩৮৪
৪৩৮৫
৪৩৮৬
৪৩৮৭
৪৩৮৮
৪৩৮৯
৪৩৯০
৪৩৯১
৬৪/৭৬. অধ্যায়ঃ
৪৩৯২
৪৩৯৩
৬৪/৭৭. অধ্যায়ঃ
৪৩৯৪
৬৪/৭৮. অধ্যায়ঃ
৪৩৯৫
৪৩৯৬
৪৩৯৭
৪৩৯৮
৪৩৯৯
৪৪০০
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى أَخْبَرَنَا هِشَامٌ عَنْ مَعْمَرٍ عَنْ
الزُّهْرِيِّ عَنْ سُنَيْنٍ أَبِيْ جَمِيْلَةَ قَالَ أَخْبَرَنَا وَنَحْنُ مَعَ
ابْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ وَزَعَمَ أَبُوْ جَمِيْلَةَ أَنَّهُ أَدْرَكَ النَّبِيَّ
صلى الله عليه وسلم وَخَرَجَ مَعَهُ عَامَ الْفَتْحِ.
যুহরী
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি সুনায়ন আবূ জামীলাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেছেন। যুহরী (রহঃ) বলেন, আমরা (সাঈ'দ) ইব্ন মুসায়্যাব (রহঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ
সময় আবূ জামীলাহ (রাঃ) দাবি করেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর সাথে মাক্কাহ বিজয়ের বছর (যুদ্ধের জন্য) বেরিয়েছিলেন। (আ.প্র. ৩৯৬২,
ই.ফা. ৩৯৬৭)
৪৩০২
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ أَيُّوْبَ
عَنْ أَبِيْ قِلَابَةَ عَنْ عَمْرِو بْنِ سَلَمَةَ قَالَ قَالَ لِيْ أَبُوْ
قِلَابَةَ أَلَا تَلْقَاهُ فَتَسْأَلَهُ قَالَ فَلَقِيْتُهُ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ
كُنَّا بِمَاءٍ مَمَرَّ النَّاسِ وَكَانَ يَمُرُّ بِنَا الرُّكْبَانُ
فَنَسْأَلُهُمْ مَا لِلنَّاسِ مَا لِلنَّاسِ مَا هَذَا الرَّجُلُ فَيَقُوْلُوْنَ
يَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَهُ أَوْحَى إِلَيْهِ أَوْ أَوْحَى اللهُ بِكَذَا
فَكُنْتُ أَحْفَظُ ذَلِكَ الْكَلَامَ وَكَأَنَّمَا يُقَرُّ فِيْ صَدْرِيْ
وَكَانَتْ الْعَرَبُ تَلَوَّمُ بِإِسْلَامِهِمْ الْفَتْحَ فَيَقُوْلُوْنَ
اتْرُكُوْهُ وَقَوْمَهُ فَإِنَّهُ إِنْ ظَهَرَ عَلَيْهِمْ فَهُوَ نَبِيٌّ صَادِقٌ
فَلَمَّا كَانَتْ وَقْعَةُ أَهْلِ الْفَتْحِ بَادَرَ كُلُّ قَوْمٍ بِإِسْلَامِهِمْ
وَبَدَرَ أَبِيْ قَوْمِيْ بِإِسْلَامِهِمْ فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ جِئْتُكُمْ
وَاللهِ مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَقًّا فَقَالَ صَلُّوْا
صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِيْنِ كَذَا وَصَلُّوْا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِيْنِ كَذَا
فَإِذَا حَضَرَتْ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ
أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا فَنَظَرُوْا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا
مِنِّيْ لِمَا كُنْتُ أَتَلَقَّى مِنْ الرُّكْبَانِ فَقَدَّمُوْنِيْ بَيْنَ
أَيْدِيْهِمْ وَأَنَا ابْنُ سِتٍّ أَوْ سَبْعِ سِنِيْنَ وَكَانَتْ عَلَيَّ
بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّيْ فَقَالَتْ امْرَأَةٌ مِنَ
الْحَيِّ أَلَا تُغَطُّوْا عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ فَاشْتَرَوْا فَقَطَعُوْا
لِيْ قَمِيْصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِيْ بِذَلِكَ الْقَمِيْصِ.
আম্র
ইবনু সালামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আইয়ুব (রহঃ) বলেছেন, আবূ কিলাবাহ আমাকে বললেন,
তুমি 'আম্র ইবনু সালামাহ'র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে (তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে)
জিজ্ঞাস কর না কেন? আবূ কিলাবাহ (রহঃ) বলেন, অতঃপর আমি 'আম্র ইবনু সালামাহ্র
সঙ্গে দেখা করে তাঁকে (তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন,
আমরা লোকজনের চলার পথের পাশে একটি ঝরণার কাছে বাস করতাম। আমাদের পাশ দিয়ে অনেক
কাফেলা চলাচল করত। তখন আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতাম, (মক্কার) লোকজনের অবস্থা কী?
মক্কার লোকজনের অবস্থা কী? আর ঐ লোকটির কী অবস্থা? তারা বলত, ঐ ব্যক্তি তো দাবী
করে যে, আল্লাহ তাঁকে রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন, তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন।
(কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করে বলত) তাঁর কাছে আল্লাহ এ রকম ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন।
('আম্র ইবনু সালামা'হ বলেন) তখন আমি সে বাণীগুলো মুখস্থ করে নিতাম যেন তা আমার
হৃদয়ে গেঁথে থাকত। সমগ্র আরব ইসলাম গ্রহণের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর বিজয়ের অপেক্ষা করছিল। তারা বলত, তাঁকে তার নিজ গোত্রের লোকেদের সঙ্গে
(আগে) বোঝাপড়া করতে দাও। অতঃপর তিনি যদি তাদের উপর বিজয়ী হন তবে তিনি সত্য নাবী।
এরপর মাক্কাহ বিজয়ের ঘটনা ঘটল। এবার সব গোত্রই তাড়াহুড়া করে ইসলাম গ্রহণ করতে
লাগল। আমাদের কাওমের ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আমার পিতা বেশ তাড়াহুড়া করলেন।
তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ফিরে এসে বললেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি সত্য নাবীর নিকট থেকে
তোমাদের কাছে এসেছি। তিনি বলে দিয়েছেন যে, অমুক সময়ে তোমরা অমুক সলাত এবং অমুক সময়
অমুক সলাত আদায় করবে। এভাবে সলাতের সময় হলে তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের
মধ্যে যে কুরআন অধিক জানে সে সলাতের ইমামাত করবে। সবাই এ রকম একজন লোক খুঁজলেন।
কিন্তু আমার চেয়ে অধিক কুরআন জানা একজনকেও পাওয়া গেল না। কেননা আমি কাফেলার লোকদের
থেকে কুরআন শিখেছিলাম। কাজেই সকলে আমাকেই তাদের সামনে এগিয়ে দিল। অথচ তখনো আমি ছয়
কিংবা সাত বছরের বালক। আমার একটি চাদর ছিল, যখন আমি সাজদাহ্য় যেতাম তখন চাদরটি
আমার গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যেত। তখন গোত্রের জনৈকা মহিলা বলল, তোমরা
আমাদের দৃষ্টি থেকে তোমাদের ক্বারীর নিতম্ব আবৃত করে দাও না কেন? তারা কাপড় খরিদ
করে আমাকে একটি জামা তৈরি করে দিল। এ জামা পেয়ে আমি এত খুশি হয়েছিলাম যে, আর
কিছুতে এত খুশি হইনি। (আ.প্র. ৩৯৬৩, ই.ফা. ৩৯৬৮)
৪৩০৩
عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ عَنْ مَالِكٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ
عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنْ النَّبِيِّ
صلى الله عليه وسلم وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ يُوْنُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ
أَخْبَرَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ عُتْبَةُ
بْنُ أَبِيْ وَقَّاصٍ عَهِدَ إِلَى أَخِيْهِ سَعْدٍ أَنْ يَقْبِضَ ابْنَ
وَلِيْدَةِ زَمْعَةَ وَقَالَ عُتْبَةُ إِنَّهُ ابْنِيْ فَلَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم مَكَّةَ فِي الْفَتْحِ أَخَذَ سَعْدُ بْنُ أَبِيْ
وَقَّاصٍ ابْنَ وَلِيْدَةِ زَمْعَةَ فَأَقْبَلَ بِهِ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم وَأَقْبَلَ مَعَهُ عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ فَقَالَ سَعْدُ بْنُ
أَبِيْ وَقَّاصٍ هَذَا ابْنُ أَخِيْ عَهِدَ إِلَيَّ أَنَّهُ ابْنُهُ قَالَ عَبْدُ
بْنُ زَمْعَةَ يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذَا أَخِيْ هَذَا ابْنُ زَمْعَةَ وُلِدَ عَلَى
فِرَاشِهِ فَنَظَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى ابْنِ وَلِيْدَةِ
زَمْعَةَ فَإِذَا أَشْبَهُ النَّاسِ بِعُتْبَةَ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ فَقَالَ
رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هُوَ لَكَ هُوَ أَخُوْكَ يَا عَبْدُ بْنَ
زَمْعَةَ مِنْ أَجْلِ أَنَّهُ وُلِدَ عَلَى فِرَاشِهِ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم احْتَجِبِيْ مِنْهُ يَا سَوْدَةُ لِمَا رَأَى مِنْ شَبَهِ عُتْبَةَ
بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ قَالَتْ عَائِشَةُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ وَقَالَ ابْنُ
شِهَابٍ وَكَانَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ يَصِيْحُ بِذَلِكَ.
আয়িশাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, 'উত্বাহ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তার ভাই সা'দ [ইবনু আবূ
ওয়াক্কাস (রাঃ)]-কে ওয়াসিয়াত করে গিয়েছিল যে, সে যেন যাম'আহ্র বাঁদীর সন্তানটি
তাঁর নিজের কাছে নিয়ে নেয়। 'উত্বাহ বলেছিল, পুত্রটি আমার ঔরসজাত। রসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাক্কাহ বিজয়কালে সেখানে আগমন করলেন তখন
সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস যাম'আহ্র বাঁদীর সন্তানটি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত করলেন। তাঁর সঙ্গে আবদ্ ইবনু যাম'আহ (যামআর পুত্র)-ও
আসলেন। সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস বললেন, সন্তানটি তো আমার ভাতিজা। আমার ভাই আমাকে
বলে গিয়েছেন যে, এ সন্তান তার ঔরসজাত কিন্তু আবদ্ ইবনু যাম'আহ তার দাবী পেশ করে
বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! এ আমার ভাই, এ যাম'আহ্র সন্তান, তাঁর বিছানায় এর জম্ম
হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন যাম'আহ্র ক্রীতদাসীর
সন্তানের প্রতি নযর দিয়ে দেখলেন যে, সন্তানটি আকৃতিতে 'উত্বাহ ইবনু আবূ
ওয়াক্কাসের সঙ্গেই অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বললেন, হে আব্দ ইবনু যাম'আহ! একে নিয়ে যাও। সে তোমার ভাই। কেননা সে তার
(তোমার পিতা যাম'আহ্র) বিছানায় জম্মগ্রহণ করেছে। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সন্তানটির আকৃতি 'উত্বাহ ইবনু আবী ওয়াক্কাসের আকৃতির মত
হওয়ার কারণে (তাঁর স্ত্রী) সাওদা বিনতে যাম'আহ (রাঃ)-কে বললেন, হে সওদা! তুমি তার
থেকে পর্দা করবে। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন, 'আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন যে, এরপর
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, শয্যা যার, ছেলে তার। আর
ব্যভিচারীর জন্য আছে পাথর। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেছেন, আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এ
কথাটি উচ্চৈঃস্বরে বলতেন। [২০৫৩] (আ.প্র. ৩৯৬৪, ই.ফা. ৩৯৬৯)
৪৩০৪
مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا يُوْنُسُ
عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ امْرَأَةً
سَرَقَتْ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ غَزْوَةِ الْفَتْحِ
فَفَزِعَ قَوْمُهَا إِلَى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ يَسْتَشْفِعُوْنَهُ قَالَ
عُرْوَةُ فَلَمَّا كَلَّمَهُ أُسَامَةُ فِيْهَا تَلَوَّنَ وَجْهُ رَسُوْلِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَتُكَلِّمُنِيْ فِيْ حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ قَالَ
أُسَامَةُ اسْتَغْفِرْ لِيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَلَمَّا كَانَ الْعَشِيُّ قَامَ
رَسُوْلُ اللهِ خَطِيْبًا فَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ
أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ النَّاسَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوْا إِذَا
سَرَقَ فِيْهِمْ الشَّرِيْفُ تَرَكُوْهُ وَإِذَا سَرَقَ فِيْهِمْ الضَّعِيْفُ
أَقَامُوْا عَلَيْهِ الْحَدَّ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ
فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا ثُمَّ أَمَرَ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم بِتِلْكَ الْمَرْأَةِ فَقُطِعَتْ يَدُهَا فَحَسُنَتْ
تَوْبَتُهَا بَعْدَ ذَلِكَ وَتَزَوَّجَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ فَكَانَتْ تَأْتِيْ
بَعْدَ ذَلِكَ فَأَرْفَعُ حَاجَتَهَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم .
উরওয়াহ
ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর যামানায় মক্কা বিজয় অভিযানের সময়ে এক স্ত্রীলোক চুরি করেছিল। তাই তার
গোত্রের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)- এর কাছে এসে রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ জানালো।
'উরওয়াহ (রাঃ) বলেন, উসামাহ (রাঃ)- এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে কথা বলা মাত্র তাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি
উসামাহ (রাঃ)- কে বললেন, তুমি কি আল্লাহ্র নির্ধারিত শাস্তিগুলোর একটি শাস্তির
ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করছ? উসামাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার
জন্য আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এরপর সন্ধ্যা হলে রসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। যথাযথভাবে আল্লাহ্র
হাম্দ-সানা করে বললেন, "আম্মা বা'দ" তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা এ জন্য
ধ্বংস হয়েছিল যে, তারা তাদের মধ্যকার উচ্চ শ্রেণীর কোন লোক চুরি করলে তাকে ছেড়ে
দিত। পক্ষান্তরে কোন দুর্বল লোক চুরি করলে তার উপর নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করত।
যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ, যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত তা
হলে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সেই মহিলাটির ব্যাপারে আদেশ দিলেন। ফলে তার হাত কেটে দেওয়া হল। অবশ্য পরবর্তীকালে
সে উত্তম তওবার অধিকারিণী হয়েছিল এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। 'আয়িশাহ (রাঃ)
বলেন, এরপর সে আমার কাছে প্রায়ই আসত। আমি তার প্রয়োজনাদি রসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে তুলে ধরতাম। [২৬৪৮] (আ.প্র. ৩৯৬৫ ,
ই.ফা. ৩৯৭০)
৪৩০৯
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ
أَبِيْ بِشْرٍ عَنْ مُجَاهِدٍ قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا
إِنِّيْ أُرِيْدُ أَنْ أُهَاجِرَ إِلَى الشَّأْمِ قَالَ لَا هِجْرَةَ وَلَكِنْ
جِهَادٌ فَانْطَلِقْ فَاعْرِضْ نَفْسَكَ فَإِنْ وَجَدْتَ شَيْئًا وَإِلَّا
رَجَعْتَ.
মুজাহিদ
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা
আনহু)- কে বললাম, আমি সিরিয়া দেশে হিজরাত করার ইচ্ছা করেছি। তিনি বললেন, এখন
হিজরাত নয়, এখন জিহাদ। সুতরাং যাও, নিজ অন্তরের সঙ্গে বুঝে দেখ, জিহাদের সাহস
খুঁজে পাও কিনা, তা না হলে হিজরাতের ইচ্ছা থেকে ফিরে আস। (৩৮৯৯) (আ.প্র. ৩৯৬৮,
ই.ফা. ৩৯৭৩)
৪৩১০
وَقَالَ النَّضْرُ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ أَخْبَرَنَا أَبُوْ بِشْرٍ
سَمِعْتُ مُجَاهِدًا قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ فَقَالَ لَا هِجْرَةَ الْيَوْمَ أَوْ
بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ.
নায্র
[ইবনু শুমায়ল (রহঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
মুজাহিদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেছেন) আমি
ইবনু 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বললে তিনি উত্তরে বললেন, বর্তমানে
হিজরাতের কোন প্রয়োজন নেই, অথবা তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর পরে কোন হিজরাত নেই। অতঃপর তিনি উপরোল্লিখিত হাদীসের মত বর্ণনা করেন।
[৩৮৯৯] (আ.প্র. ৩৯৬৮, ই.ফা. ৩৯৭৩)
৪৩১১
إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيْدَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ قَالَ
حَدَّثَنِيْ أَبُوْ عَمْرٍو الْأَوْزَاعِيُّ عَنْ عَبْدَةَ بْنِ أَبِيْ لُبَابَةَ
عَنْ مُجَاهِدِ بْنِ جَبْرٍ الْمَكِّيِّ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ
اللهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُوْلُ لَا هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ.
মুজাহিদ
ইবনু জাব্র আল-মাক্কী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা
আনহু) বলতেনঃ মাক্কাহ বিজয়ের পর আর কোন হিজরাত নেই। [৩৮৯৯] (আ.প্র. ৩৯৬৯, ই.ফা.
৩৯৭৪)
৪৩১২
إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيْدَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ قَالَ
حَدَّثَنِي الْأَوْزَاعِيُّ عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِيْ رَبَاحٍ قَالَ زُرْتُ
عَائِشَةَ مَعَ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ فَسَأَلَهَا عَنِ الْهِجْرَةِ فَقَالَتْ
لَا هِجْرَةَ الْيَوْمَ كَانَ الْمُؤْمِنُ يَفِرُّ أَحَدُهُمْ بِدِيْنِهِ إِلَى
اللهِ وَإِلَى رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم مَخَافَةَ أَنْ يُفْتَنَ عَلَيْهِ
فَأَمَّا الْيَوْمَ فَقَدْ أَظْهَرَ اللهُ الإِسْلَامَ فَالْمُؤْمِنُ يَعْبُدُ
رَبَّهُ حَيْثُ شَاءَ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ.
আত্বা
ইবনু আবূ রাবাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি 'উবায়দ ইবনু 'উমায়র (রহঃ) সহ
'আয়িশা (রাযিআল্লাহু আনহা)- এর সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। সে সময় 'উবায়দ (রহঃ) তাঁকে
হিজরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, বর্তমানে কোন হিজরাত নেই। আগে মু'মিন
ব্যক্তি তার দ্বীনকে ফিতনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের দিকে
(মদিনায়) পালিয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে আল্লাহ ইসলামকে বিজয় দান করেছেন। তাই এখন
মু'মিন যেখানে চায় আল্লাহ্র 'ইবাদাত করতে পারে। তবে বর্তমানে জিহাদ এবং নিয়্যাত
করা যাবে। [৩০৮০] (আ.প্র. ৩৯৭০, ই.ফা. ৩৯৭৫)
৪৩১৩
إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَاصِمٍ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ
أَخْبَرَنِيْ حَسَنُ بْنُ مُسْلِمٍ عَنْ مُجَاهِدٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم قَامَ يَوْمَ الْفَتْحِ فَقَالَ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ مَكَّةَ يَوْمَ
خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ فَهِيَ حَرَامٌ بِحَرَامِ اللهِ إِلَى يَوْمِ
الْقِيَامَةِ لَمْ تَحِلَّ لِأَحَدٍ قَبْلِيْ وَلَا تَحِلُّ لِأَحَدٍ بَعْدِيْ
وَلَمْ تَحْلِلْ لِيْ قَطُّ إِلَّا سَاعَةً مِنْ الدَّهْرِ لَا يُنَفَّرُ
صَيْدُهَا وَلَا يُعْضَدُ شَوْكُهَا وَلَا يُخْتَلَى خَلَاهَا وَلَا تَحِلُّ
لُقَطَتُهَا إِلَّا لِمُنْشِدٍ فَقَالَ الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ
إِلَّا الإِذْخِرَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّهُ لَا بُدَّ مِنْهُ لِلْقَيْنِ
وَالْبُيُوْتِ فَسَكَتَ ثُمَّ قَالَ إِلَّا الإِذْخِرَ فَإِنَّهُ حَلَالٌ وَعَنْ
ابْنِ جُرَيْجٍ أَخْبَرَنِيْ عَبْدُ الْكَرِيْمِ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ
عَبَّاسٍ بِمِثْلِ هَذَا أَوْ نَحْوِ هَذَا رَوَاهُ أَبُوْ هُرَيْرَةَ عَنْ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
মুজাহিদ
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবার জন্য দাঁড়িয়ে বললেন, যেদিন আল্লাহ সমুদয় আসমান ও যমীন
সৃষ্টি করেছেন, সেই দিন থেকেই তিনি মাক্কাহ নগরীকে সম্মান দান করেছেন। তাই আল্লাহ
কর্তৃক এ সম্মান প্রদানের কারণে এটি ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। আমার
পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি, আমার পরে কারো জন্যও তা হালাল করা হবে না। আর
আমার জন্যও মাত্র একদিনের সামান্য অংশের জন্যই তা হালাল করা হয়েছিল। তার
শিকারযোগ্য প্রাণীকে বিতাড়িত করা যাবে না। ঘাস সংগৃহীত হবে না। বিজ্ঞপ্তির
উদ্দেশ্য ব্যতীত রাস্তায় পতিত বস্তু উত্তোলিত হবে না। তখন 'আব্বাস ইবনু 'আবদুল
মুত্তালিব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! ইয্খির ঘাস
ব্যতীত। কেননা ইয্খির ঘাস আমাদের কর্মকার ও বাড়ির (ছাউনির) কাজে লাগে। তখন
রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ থাকলেন। এর কিছুক্ষণ পরে বললেন,
ইয্খির ব্যতীত। ইয্খির ঘাস কাটা অনুমোদিত। অন্য সানাদে ইবনু জুরায়জ (রহঃ).....
ইবনু 'আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া এ হাদীস
আবূ হুরায়রা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) ও নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)
থেকে বর্ণনা করেছেন। [১৩৪৯] (আ.প্র. ৩৯৭১, ই.ফা. ৩৯৭৬)
৬৪/৫৫. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহ্র বাণীঃ
এবং হুনায়নের দিনে, যখন
তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে গর্বিত করে তুলেছিল; কিন্তু সে সংখ্যাধিক্য তোমাদের
কোন কাজে আসেনি এবং সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল তোমাদের প্রতি এ পৃথিবী এত প্রশস্ত হওয়া
সত্ত্বেও, পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়েছিলে। অতঃপর আল্লাহ নিজের তরফ থেকে
প্রশান্তি অবর্তীর্ণ করলেন তাঁরা রসূলের প্রতি এবং মু'মিনদের প্রতি, আর তিনি
অবর্তীর্ণ করলেন এমন এক সেনাবাহিনী যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। তিনি কাফিরদের শাস্তি
দিলেন এবং তা ছিল কাফিরদের কর্মফল। আর আল্লাহ এরপরও তাওবার তাওফীক দেন যাদের ইচ্ছা
করেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরাহ আত-তওবাহ ৯/২৫-২৭)
৪৩১৪
مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ نُمَيْرٍ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ
هَارُوْنَ أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيْلُ رَأَيْتُ بِيَدِ ابْنِ أَبِيْ أَوْفَى
ضَرْبَةً قَالَ ضُرِبْتُهَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ حُنَيْنٍ
قُلْتُ شَهِدْتَ حُنَيْنًا قَالَ قَبْلَ ذَلِكَ.
ইসমাঈল
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি 'আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফা
(রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর হাতে একটি আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। তিনি বলেছেন,
হুনাইনের দিন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে থাকা অবস্থায় আমাকে
এ আঘাত করা হয়েছিল। আমি বললাম, আপনি কি হুনাইন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন? তিনি বললেন,
এর পূর্বেও (সংঘটিত যুদ্ধগুলোতে) অংশ নিয়েছি। (আ.প্র. ৩৯৭২, ই.ফা. ৩৯৭৭)
৪৩১৫
مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيْرٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قَالَ
سَمِعْتُ الْبَرَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا أَبَا
عُمَارَةَ أَتَوَلَّيْتَ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَقَالَ أَمَّا أَنَا فَأَشْهَدُ عَلَى
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ لَمْ يُوَلِّ وَلَكِنْ عَجِلَ سَرَعَانُ
الْقَوْمِ فَرَشَقَتْهُمْ هَوَازِنُ وَأَبُوْ سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ آخِذٌ
بِرَأْسِ بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ يَقُوْلُ
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ أَنـَا ابْنُ عـَبـْدِ الْـمُـطِّلـِبْ.
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ أَنـَا ابْنُ عـَبـْدِ الْـمُـطِّلـِبْ.
আবূ
ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি বারাআ ইব্নু 'আযিব (রাঃ) –
কে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি এসে তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আবূ 'উমারাহ! হুনাইনের
দিন কি আপনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন? তখন তিনি বলেন যে, আমি তো নিজেই নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন
করেননি। তবে মুজাহিদদের অগ্রবর্তী যোদ্ধাগণ (গানীমাত সংগ্রহের জন্য) তাড়াহুড়া করলে
হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা তাঁদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় আবূ সুফ্ইয়ান
ইবনুল হারিস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর সাদা খচ্চরটির মাথা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। আর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলেছিলেন-
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
আমি 'আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। [২৮৬৪] (আ.প্র. ৩৯৭৩, ই.ফা. ৩৯৭৮)
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
আমি 'আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। [২৮৬৪] (আ.প্র. ৩৯৭৩, ই.ফা. ৩৯৭৮)
৪৩১৬
أَبُو الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قِيْلَ
لِلْبَرَاءِ وَأَنَا أَسْمَعُ أَوَلَّيْتُمْ مَعَ النَّبِيِّ يَوْمَ حُنَيْنٍ
فَقَالَ أَمَّا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَلَا كَانُوْا رُمَاةً فَقَالَ :
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ أَنـَا ابْنُ عـَبـْدِ الْـمُـطِّلـِبْ.
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ أَنـَا ابْنُ عـَبـْدِ الْـمُـطِّلـِبْ.
আবূ
ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি শুনলাম যে, বারাআ ইবনু 'আযিব (রাযিআল্লাহু
তাআলা আনহু)- কে জিজ্ঞেস করা হল, হুনাইন যুদ্ধের দিন আপনারা কি নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন? তিনি বললেন, কিন্তু নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি। তবে তারা (হাওয়াযিনের
লোকেরা) ছিল দক্ষ তীরন্দাজ, তাদের তীর বর্ষণে মুসলিমরা পিছনে হটলেও নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) (অটলভাবে দাঁড়িয়ে) বলছিলেন-
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
আমি 'আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। [২৮৬৪] (আ.প্র. ৩৯৭৪, ই.ফা. ৩৯৭৯)
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
আমি 'আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। [২৮৬৪] (আ.প্র. ৩৯৭৪, ই.ফা. ৩৯৭৯)
৪৩১৭
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ
أَبِيْ إِسْحَاقَ سَمِعَ الْبَرَاءَ وَسَأَلَهُ رَجُلٌ مِنْ قَيْسٍ أَفَرَرْتُمْ
عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ حُنَيْنٍ فَقَالَ لَكِنْ رَسُوْلَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَفِرَّ كَانَتْ هَوَازِنُ رُمَاةً وَإِنَّا لَمَّا
حَمَلْنَا عَلَيْهِمْ انْكَشَفُوْا فَأَكْبَبْنَا عَلَى الْغَنَائِمِ
فَاسْتُقْبِلْنَا بِالسِّهَامِ وَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ وَإِنَّ أَبَا سُفْيَانَ بْنَ الْحَارِثِ
آخِذٌ بِزِمَامِهَا وَهُوَ يَقُوْلُ:
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ
قَالَ إِسْرَائِيْلُ وَزُهَيْرٌ نَزَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ بَغْلَتِهِ.
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ
قَالَ إِسْرَائِيْلُ وَزُهَيْرٌ نَزَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ بَغْلَتِهِ.
আবূ
ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বারআ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বলতে
শুনেছেন যে, তাঁকে কায়স গোত্রের এক লোক জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, হুনাইনের দিন আপনারা
কি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট হতে পালিয়েছিলেন? তখন
তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কিন্তু পালিয়ে যাননি।
হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ছিল সুদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা যখন তাদের উপর আক্রমণ চালালাম
তখন তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। আমরা গানীমাত তুলতে শুরু করলাম তখন আমরা তাদের
তীরন্দাজ বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়লাম। তখন আমি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তাঁর সাদা রংয়ের খচ্চরটির পিঠে আরোহিত অবস্থায় দেখলাম। আর
আবূ সুফ্ইয়ান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর খচ্চরটির লাগাম ধরেছিলেন। তিনি
বলছিলেন-
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
বর্ণনাকারী ইসরাঈল এবং যুহায়র (রহঃ) বলেছেন যে, তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর খচ্চর থেকে অবতরন করেছিলেন। [২৮৬৪; মুসলিম ৩২/২৮, হাঃ ১৭৭৬, আহমাদ ১৮৪৯৫] (আ.প্র. ৩৯৭৫, ই.ফা. ৩৯৮০)
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
বর্ণনাকারী ইসরাঈল এবং যুহায়র (রহঃ) বলেছেন যে, তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর খচ্চর থেকে অবতরন করেছিলেন। [২৮৬৪; মুসলিম ৩২/২৮, হাঃ ১৭৭৬, আহমাদ ১৮৪৯৫] (আ.প্র. ৩৯৭৫, ই.ফা. ৩৯৮০)
৪৩১৮
سَعِيْدُ بْنُ عُفَيْرٍ قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ عُقَيْلٌ
عَنْ ابْنِ شِهَابٍ ح و حَدَّثَنِيْ إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا يَعْقُوْبُ بْنُ
إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَخِي ابْنِ شِهَابٍ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ شِهَابٍ
وَزَعَمَ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ مَرْوَانَ وَالْمِسْوَرَ بْنَ
مَخْرَمَةَ أَخْبَرَاهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ حِيْنَ
جَاءَهُ وَفْدُ هَوَازِنَ مُسْلِمِيْنَ فَسَأَلُوْهُ أَنْ يَرُدَّ إِلَيْهِمْ
أَمْوَالَهُمْ وَسَبْيَهُمْ فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
مَعِيْ مَنْ تَرَوْنَ وَأَحَبُّ الْحَدِيْثِ إِلَيَّ أَصْدَقُهُ فَاخْتَارُوْا
إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ إِمَّا السَّبْيَ وَإِمَّا الْمَالَ وَقَدْ كُنْتُ
اسْتَأْنَيْتُ بِكُمْ وَكَانَ أَنْظَرَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
بِضْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً حِيْنَ قَفَلَ مِنْ الطَّائِفِ فَلَمَّا تَبَيَّنَ
لَهُمْ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم غَيْرُ رَادٍّ إِلَيْهِمْ إِلَّا
إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ قَالُوْا فَإِنَّا نَخْتَارُ سَبْيَنَا فَقَامَ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمُسْلِمِيْنَ فَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ
أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ إِخْوَانَكُمْ قَدْ جَاءُوْنَا
تَائِبِيْنَ وَإِنِّيْ قَدْ رَأَيْتُ أَنْ أَرُدَّ إِلَيْهِمْ سَبْيَهُمْ فَمَنْ
أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يُطَيِّبَ ذَلِكَ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ
أَنْ يَكُوْنَ عَلَى حَظِّهِ حَتَّى نُعْطِيَهُ إِيَّاهُ مِنْ أَوَّلِ مَا
يُفِيْءُ اللهُ عَلَيْنَا فَلْيَفْعَلْ فَقَالَ النَّاسُ قَدْ طَيَّبْنَا ذَلِكَ
يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّا لَا
نَدْرِيْ مَنْ أَذِنَ مِنْكُمْ فِيْ ذَلِكَ مِمَّنْ لَمْ يَأْذَنْ فَارْجِعُوْا
حَتَّى يَرْفَعَ إِلَيْنَا عُرَفَاؤُكُمْ أَمْرَكُمْ فَرَجَعَ النَّاسُ
فَكَلَّمَهُمْ عُرَفَاؤُهُمْ ثُمَّ رَجَعُوْا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم فَأَخْبَرُوْهُ أَنَّهُمْ قَدْ طَيَّبُوْا وَأَذِنُوْا هَذَا الَّذِيْ
بَلَغَنِيْ عَنْ سَبْيِ هَوَازِنَ.
মারওয়ান
এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন মুসলিম হয়ে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এলো এবং তাদের (যুদ্ধে ফেলে
যাওয়া) সম্পদ ও বন্দীদেরকে ফেরত দেয়ার প্রার্থনা জানালো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং
তাদের বললেন, আমার সঙ্গে যারা আছে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। সত্য কথাই আমার কাছে অধিক
প্রিয়। কাজেই তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদ- এ দু’টির যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে
পার। আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে ফিরে আসার পথে দশ রাতেরও অধিক সময় তাদের জন্য অপেক্ষা
করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যখন এটা স্পষ্ট
হয়ে গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু’টির মধ্যে
একটির অধিক ফেরত দিতে সম্মত নন, তখন তারা বললেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ
করতে চাই। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সম্মুখে
গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করে বললেন, আম্মা বা‘দু,
তোমাদের (মুসলিম) ভাইয়েরা তওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আমি তাদের বন্দীদেরকে তাদের
নিকট ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত করেছি। অতএব তোমাদের মধ্যে যে আমার এ সিদ্ধান্তকে খুশি
মনে গ্রহণ করবে সে (বন্দী) ফেরত দিক। আর তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের অধিকারকে
অবশিষ্ট রেখে তা এভাবে ফেরত দিতে চাইবে যে, ফাইয়ের সম্পদ থেকে (আগামীতে) আল্লাহ
আমাকে সর্বপ্রথম যা দান করবেন তা দিয়ে আমি তার এ বন্দীর মূল্য পরিশোধ করব, তবে সে
তাই করুক। তখন সকল লোক উত্তর করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার প্রথম সিদ্ধান্ত
খুশিমনে গ্রহণ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের
মধ্যে এ ব্যাপারে কে খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে আর কে খুশিমনে অনুমতি দেয়নি আমি তা
বুঝতে পারিনি। তাই তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের মধ্যকার বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে
আলাপ কর। তাঁরা আমার কাছে বিষয়টি পেশ করবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ
ব্যক্তিগণ তাদের সঙ্গে আলাপ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট ফিরে এসে জানাল যে, সবাই তাঁর (প্রথম) সিদ্ধান্তকেই খুশি মনে মেনে নিয়েছে এবং
(যুদ্ধবন্দী ফেরত দেয়ার) অনুমতি দিয়েছে। [ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহ.) বলেন]
হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের বিষয়ে এ হাদীসটিই আমার কাছে পৌঁছেছে। [২৩০৭, ২৩০৮]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮১)
৪৩১৯
سَعِيْدُ بْنُ عُفَيْرٍ قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ عُقَيْلٌ
عَنْ ابْنِ شِهَابٍ ح و حَدَّثَنِيْ إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا يَعْقُوْبُ بْنُ
إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَخِي ابْنِ شِهَابٍ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ شِهَابٍ
وَزَعَمَ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ مَرْوَانَ وَالْمِسْوَرَ بْنَ
مَخْرَمَةَ أَخْبَرَاهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ حِيْنَ
جَاءَهُ وَفْدُ هَوَازِنَ مُسْلِمِيْنَ فَسَأَلُوْهُ أَنْ يَرُدَّ إِلَيْهِمْ
أَمْوَالَهُمْ وَسَبْيَهُمْ فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
مَعِيْ مَنْ تَرَوْنَ وَأَحَبُّ الْحَدِيْثِ إِلَيَّ أَصْدَقُهُ فَاخْتَارُوْا
إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ إِمَّا السَّبْيَ وَإِمَّا الْمَالَ وَقَدْ كُنْتُ
اسْتَأْنَيْتُ بِكُمْ وَكَانَ أَنْظَرَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
بِضْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً حِيْنَ قَفَلَ مِنْ الطَّائِفِ فَلَمَّا تَبَيَّنَ
لَهُمْ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم غَيْرُ رَادٍّ إِلَيْهِمْ إِلَّا
إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ قَالُوْا فَإِنَّا نَخْتَارُ سَبْيَنَا فَقَامَ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمُسْلِمِيْنَ فَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ
أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ إِخْوَانَكُمْ قَدْ جَاءُوْنَا
تَائِبِيْنَ وَإِنِّيْ قَدْ رَأَيْتُ أَنْ أَرُدَّ إِلَيْهِمْ سَبْيَهُمْ فَمَنْ
أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يُطَيِّبَ ذَلِكَ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ
أَنْ يَكُوْنَ عَلَى حَظِّهِ حَتَّى نُعْطِيَهُ إِيَّاهُ مِنْ أَوَّلِ مَا
يُفِيْءُ اللهُ عَلَيْنَا فَلْيَفْعَلْ فَقَالَ النَّاسُ قَدْ طَيَّبْنَا ذَلِكَ
يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّا لَا
نَدْرِيْ مَنْ أَذِنَ مِنْكُمْ فِيْ ذَلِكَ مِمَّنْ لَمْ يَأْذَنْ فَارْجِعُوْا
حَتَّى يَرْفَعَ إِلَيْنَا عُرَفَاؤُكُمْ أَمْرَكُمْ فَرَجَعَ النَّاسُ
فَكَلَّمَهُمْ عُرَفَاؤُهُمْ ثُمَّ رَجَعُوْا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم فَأَخْبَرُوْهُ أَنَّهُمْ قَدْ طَيَّبُوْا وَأَذِنُوْا هَذَا الَّذِيْ
بَلَغَنِيْ عَنْ سَبْيِ هَوَازِنَ.
মারওয়ান
এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন মুসলিম হয়ে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এলো এবং তাদের (যুদ্ধে ফেলে
যাওয়া) সম্পদ ও বন্দীদেরকে ফেরত দেয়ার প্রার্থনা জানালো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং
তাদের বললেন, আমার সঙ্গে যারা আছে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। সত্য কথাই আমার কাছে অধিক
প্রিয়। কাজেই তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদ- এ দু’টির যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে
পার। আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে ফিরে আসার পথে দশ রাতেরও অধিক সময় তাদের জন্য অপেক্ষা
করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যখন এটা স্পষ্ট
হয়ে গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু’টির মধ্যে
একটির অধিক ফেরত দিতে সম্মত নন, তখন তারা বললেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ
করতে চাই। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সম্মুখে
গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করে বললেন, আম্মা বা‘দু,
তোমাদের (মুসলিম) ভাইয়েরা তওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আমি তাদের বন্দীদেরকে তাদের
নিকট ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত করেছি। অতএব তোমাদের মধ্যে যে আমার এ সিদ্ধান্তকে খুশি
মনে গ্রহণ করবে সে (বন্দী) ফেরত দিক। আর তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের অধিকারকে
অবশিষ্ট রেখে তা এভাবে ফেরত দিতে চাইবে যে, ফাইয়ের সম্পদ থেকে (আগামীতে) আল্লাহ
আমাকে সর্বপ্রথম যা দান করবেন তা দিয়ে আমি তার এ বন্দীর মূল্য পরিশোধ করব, তবে সে
তাই করুক। তখন সকল লোক উত্তর করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার প্রথম সিদ্ধান্ত
খুশিমনে গ্রহণ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের
মধ্যে এ ব্যাপারে কে খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে আর কে খুশিমনে অনুমতি দেয়নি আমি তা
বুঝতে পারিনি। তাই তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের মধ্যকার বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে
আলাপ কর। তাঁরা আমার কাছে বিষয়টি পেশ করবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ
ব্যক্তিগণ তাদের সঙ্গে আলাপ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট ফিরে এসে জানাল যে, সবাই তাঁর (প্রথম) সিদ্ধান্তকেই খুশি মনে মেনে নিয়েছে এবং
(যুদ্ধবন্দী ফেরত দেয়ার) অনুমতি দিয়েছে। [ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহ.) বলেন]
হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের বিষয়ে এ হাদীসটিই আমার কাছে পৌঁছেছে। [২৩০৭, ২৩০৮]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮১)
৪৩২০
أَبُو النُّعْمَانِ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ
نَافِعٍ أَنَّ عُمَرَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ح حَدَّثَنِيْ مُحَمَّدُ بْنُ
مُقَاتِلٍ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ
نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا قَفَلْنَا مِنْ
حُنَيْنٍ سَأَلَ عُمَرُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنْ نَذْرٍ كَانَ نَذَرَهُ
فِي الْجَاهِلِيَّةِ اعْتِكَافٍ فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
بِوَفَائِهِ وَقَالَ بَعْضُهُمْ حَمَّادٌ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ
عُمَرَ وَرَوَاهُ جَرِيْرُ بْنُ حَازِمٍ وَحَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ أَيُّوْبَ
عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
নাফি'
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, হে
আল্লাহ্র রসূল! .... হাদীসটি অন্য সানাদে মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ)... ইব্নু
'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুনায়নের যুদ্ধ থেকে
ফেরার কালে 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-
কে জাহিলিয়্যাতের যুগে মানৎ করা তাঁর একটি ই'তিকাফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সেটি পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেউ
কেউ বলেছেন, হাদীসটি হাম্মাদ-আইয়ূব-নাফি' (রহঃ) ইবনু 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা
আনহু) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া জারীর ইবনু হাযিম এবং হাম্মাদ ইব্নু সালামাহ
(রহঃ) ও এ হাদীসটি আইয়ূব, নাফি' (রহঃ) ইবনু 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সূত্রে
নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। [২০৩২] (আ.প্র. ৩৯৭৭,
ই.ফা. ৩৯৮২)
৪৩২১
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ يَحْيَى بْنِ
سَعِيْدٍ عَنْ عُمَرَ بْنِ كَثِيْرِ بْنِ أَفْلَحَ عَنْ أَبِيْ مُحَمَّدٍ مَوْلَى
أَبِيْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم عَامَ حُنَيْنٍ فَلَمَّا الْتَقَيْنَا كَانَتْ لِلْمُسْلِمِيْنَ
جَوْلَةٌ فَرَأَيْتُ رَجُلًا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ قَدْ عَلَا رَجُلًا مِنَ
الْمُسْلِمِيْنَ فَضَرَبْتُهُ مِنْ وَرَائِهِ عَلَى حَبْلِ عَاتِقِهِ بِالسَّيْفِ
فَقَطَعْتُ الدِّرْعَ وَأَقْبَلَ عَلَيَّ فَضَمَّنِيْ ضَمَّةً وَجَدْتُ مِنْهَا
رِيْحَ الْمَوْتِ ثُمَّ أَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَأَرْسَلَنِيْ فَلَحِقْتُ عُمَرَ
بْنَ الْخَطَّابِ فَقُلْتُ مَا بَالُ النَّاسِ قَالَ أَمْرُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ
ثُمَّ رَجَعُوْا وَجَلَسَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَنْ قَتَلَ قَتِيْلًا
لَهُ عَلَيْهِ بَيِّنَةٌ فَلَهُ سَلَبُهُ فَقُلْتُ مَنْ يَشْهَدُ لِيْ ثُمَّ
جَلَسْتُ قَالَ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ فَقُمْتُ
فَقُلْتُ مَنْ يَشْهَدُ لِيْ ثُمَّ جَلَسْتُ قَالَ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم مِثْلَهُ فَقُمْتُ فَقَالَ مَا لَكَ يَا أَبَا قَتَادَةَ
فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ رَجُلٌ صَدَقَ وَسَلَبُهُ عِنْدِيْ فَأَرْضِهِ مِنِّيْ
فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ لَاهَا اللهِ إِذًا لَا يَعْمِدُ إِلَى أَسَدٍ مِنْ أُسْدِ
اللهِ يُقَاتِلُ عَنْ اللهِ وَرَسُوْلِهِ فَيُعْطِيَكَ سَلَبَهُ فَقَالَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صَدَقَ فَأَعْطِهِ فَأَعْطَانِيْهِ فَابْتَعْتُ
بِهِ مَخْرَفًا فِيْ بَنِيْ سَلِمَةَ فَإِنَّهُ لَأَوَّلُ مَالٍ تَأَثَّلْتُهُ فِي
الإِسْلَامِ.
আবূ
ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখী
হলাম তখন মুসলিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। এ সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে
দেখলাম, সে মুসলিমদের এক ব্যক্তিকে পরাভূত করে ফেলেছে। তাই আমি কাফির লোকটির
পশ্চাৎ দিকে গিয়ে তরবারি দিয়ে তার কাঁধ ও ঘাড়ের মাঝে শক্ত শিরার উপর আঘাত হানলাম
এবং লোকটির গায়ের লৌহ বর্মটি কেটে ফেললাম। এ সময় সে আমার উপর আক্রমণ করে বসল এবং
আমাকে এত জোরে চাপ দিয়ে জড়িয়ে ধরল যে, আমি আমার মৃত্যুর বাতাস অনুভব করলাম। এরপর
মৃত্যু লোকটিকে পেয়ে বসল আর আমাকে ছেড়ে দিল। এরপর আমি 'উমার [ইবনুল খাত্তাব
(রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর] কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মুসলিমদের হলটা কী? তিনি
বললেন, মহান শক্তিধর আল্লাহ্র ইচ্ছা। এরপর সবাই (আবার) ফিরে এল (এবং মুশরিকদের
উপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধে জয়ী হল)। যুদ্ধের পর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) বসলেন এবং ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি কোন মুশরিক যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং
তার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে তাঁকে তার (নিহত ব্যক্তির) পরিত্যক্ত সকল সম্পদ দেয়া
হবে। এ ঘোষণা শুনে আমি দাঁড়িয়ে বললাম, আমার পক্ষে কেউ সাক্ষ্য দিবে কি? আমি বসে
পড়লাম। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- ও অনুরূপ ঘোষণা দিলে আমি দাঁড়ালাম।
তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবূ ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা
আনহু) তোমার কী হয়েছে? আমি তাঁকে ব্যাপারটি জানালাম। এ সময় এক ব্যক্তি বলল, আবূ
ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) ঠিকই বলেছেন, নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত
বস্ত্রগুলো আমার কাছে আছে। সুতরাং সেগুলো আমার প্রাপ্তির ব্যাপারে আপনি তাঁকে
সম্মত করুন। তখন আবূ বাক্র (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, না আল্লাহ্র শপথ! তা
হতে পারে না। আল্লাহ্র সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ
করেছে তার যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদি তোমাকে দিয়ে দেয়ার ইচ্ছা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) করতে পারে না। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন,
আবূ বাক্র ঠিকই বলছে। সুতরাং এসব দ্রব্য তুমি তাঁকে (আবূ ক্বাতাদাহ) দিয়ে দাও।
[আবূ ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন] তখন সে আমাকে দ্রব্যগুলো দিয়ে দিল।
এ দ্রব্যগুলোর বিনিময়ে আমি বানী সালামাহ্র এলাকায় একটি বাগান কিনলাম। আর ইসলাম
গ্রহণের পর এটিই হল প্রথম সম্পদ যেটা ছিল আমার আর্থিক বুনিয়াদ। [২১০০] (আ.প্র.
৩৯৭৮/৩৯৭৯, ই.ফা. ৩৯৮৩)
৪৩২২
وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ يَحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ عَنْ عُمَرَ بْنِ
كَثِيْرِ بْنِ أَفْلَحَ عَنْ أَبِيْ مُحَمَّدٍ مَوْلَى أَبِيْ قَتَادَةَ أَنَّ
أَبَا قَتَادَةَ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمَ حُنَيْنٍ نَظَرْتُ إِلَى رَجُلٍ مِنَ
الْمُسْلِمِيْنَ يُقَاتِلُ رَجُلًا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ وَآخَرُ مِنَ
الْمُشْرِكِيْنَ يَخْتِلُهُ مِنْ وَرَائِهِ لِيَقْتُلَهُ فَأَسْرَعْتُ إِلَى
الَّذِيْ يَخْتِلُهُ فَرَفَعَ يَدَهُ لِيَضْرِبَنِيْ وَأَضْرِبُ يَدَهُ فَقَطَعْتُهَا
ثُمَّ أَخَذَنِيْ فَضَمَّنِيْ ضَمًّا شَدِيْدًا حَتَّى تَخَوَّفْتُ ثُمَّ تَرَكَ
فَتَحَلَّلَ وَدَفَعْتُهُ ثُمَّ قَتَلْتُهُ وَانْهَزَمَ الْمُسْلِمُوْنَ
وَانْهَزَمْتُ مَعَهُمْ فَإِذَا بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي النَّاسِ فَقُلْتُ
لَهُ مَا شَأْنُ النَّاسِ قَالَ أَمْرُ اللهِ ثُمَّ تَرَاجَعَ النَّاسُ إِلَى
رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
مَنْ أَقَامَ بَيِّنَةً عَلَى قَتِيْلٍ قَتَلَهُ فَلَهُ سَلَبُهُ فَقُمْتُ
لِأَلْتَمِسَ بَيِّنَةً عَلَى قَتِيْلِيْ فَلَمْ أَرَ أَحَدًا يَشْهَدُ لِيْ
فَجَلَسْتُ ثُمَّ بَدَا لِيْ فَذَكَرْتُ أَمْرَهُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ جُلَسَائِهِ سِلَاحُ هَذَا الْقَتِيْلِ الَّذِيْ
يَذْكُرُ عِنْدِيْ فَأَرْضِهِ مِنْهُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ كَلَّا لَا يُعْطِهِ أُصَيْبِغَ
مِنْ قُرَيْشٍ وَيَدَعَ أَسَدًا مِنْ أُسْدِ اللهِ يُقَاتِلُ عَنْ اللهِ
وَرَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
فَأَدَّاهُ إِلَيَّ فَاشْتَرَيْتُ مِنْهُ خِرَافًا فَكَانَ أَوَّلَ مَالٍ
تَأَثَّلْتُهُ فِي الإِسْلَامِ.
আবূ
ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধের দিন আমি দেখলাম যে,
এক মুসলিম এক মুশরিকের সঙ্গে লড়াই করছে। আরেক মুশরিক মুসলিম ব্যক্তিটির পেছন থেকে
তাকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করছে। তখন আমি তার হাতের উপর আঘাত ক'রে তা কেটে
ফেললাম। সে আমাকে ধরে ভীষণ ভাবে চাপ দিল। এমনকি আমি শঙ্কিত হয়ে পড়লাম। এরপর সে
আমাকে ছেড়ে দিল ও দুর্বল হয়ে পড়ল। আমি তাকে আক্রমণ করে হত্যা করলাম। মুসলিমগণ
পালাতে লাগলে আমিও তাঁদের সঙ্গে পালালাম। হঠাৎ লোকের মাঝে 'উমার ইবনুল খাত্তাব
(রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে দেখতে পেলাম। তাকে বললাম, লোকজনের অবস্থা কী? তিনি
বললেন, আল্লাহ্র যা ইচ্ছা। এরপর লোকেরা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম)- এর নিকট ফিরে এলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)
বললেন, “যে (মুসলিম) ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেশ করতে পারবে নিহত
ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ সে-ই পাবে। আমি যাকে হত্যা করেছি তার সম্পর্কে সাক্ষী
খোঁজার জন্য আমি দাঁড়ালাম। কিন্তু আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে এমন কাউকে পেলাম না।
তখন বসে পড়লাম। এরপর আমার সুযোগমত ঘটনাটি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম)- কে জানালাম। তখন তাঁর পাশে উপবিষ্ট একজন বললেন- উল্লিখিত নিহত ব্যক্তির
হাতিয়ার আমার কাছে আছে, সেগুলো আমাকে দিয়ে দেয়ার জন্য আপনি তাকে সম্মত করুন। তখন
আবূ বাক্র (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, না, তা হতে পারে না। আল্লাহ্র
সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তাকে না দিয়ে এ
কুরাইশী দুর্বল ব্যক্তিকে তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] দিতে
পারেন না। রাবী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন
এবং আমাকে তা দিয়ে দিলেন। আমি এর দ্বারা একটি বাগান কিনলাম। আর ইসলাম গ্রহণের পর
এটিই ছিল প্রথম সম্পদ, যদ্দারা আমি আমার আর্থিক বুনিয়াদ করেছি। [২১০০] (আ.প্র.
৩৯৭৮/৩৯৭৯, ই.ফা. ৩৯৮৩)
৬৪/৫৬. অধ্যায়ঃ
আওতাসের যুদ্ধ
৪৩২৩
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ بُرَيْدِ بْنِ
عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ
لَمَّا فَرَغَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ حُنَيْنٍ بَعَثَ أَبَا عَامِرٍ
عَلَى جَيْشٍ إِلَى أَوْطَاسٍ فَلَقِيَ دُرَيْدَ بْنَ الصِّمَّةِ فَقُتِلَ
دُرَيْدٌ وَهَزَمَ اللهُ أَصْحَابَهُ قَالَ أَبُوْ مُوْسَى وَبَعَثَنِيْ مَعَ
أَبِيْ عَامِرٍ فَرُمِيَ أَبُوْ عَامِرٍ فِيْ رُكْبَتِهِ رَمَاهُ جُشَمِيٌّ
بِسَهْمٍ فَأَثْبَتَهُ فِيْ رُكْبَتِهِ فَانْتَهَيْتُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ يَا عَمِّ
مَنْ رَمَاكَ فَأَشَارَ إِلَى أَبِيْ مُوْسَى فَقَالَ ذَاكَ قَاتِلِي الَّذِيْ
رَمَانِيْ فَقَصَدْتُ لَهُ فَلَحِقْتُهُ فَلَمَّا رَآنِيْ وَلَّى فَاتَّبَعْتُهُ
وَجَعَلْتُ أَقُوْلُ لَهُ أَلَا تَسْتَحْيِيْ أَلَا تَثْبُتُ فَكَفَّ
فَاخْتَلَفْنَا ضَرْبَتَيْنِ بِالسَّيْفِ فَقَتَلْتُهُ ثُمَّ قُلْتُ لِأَبِيْ
عَامِرٍ قَتَلَ اللهُ صَاحِبَكَ قَالَ فَانْزِعْ هَذَا السَّهْمَ فَنَزَعْتُهُ
فَنَزَا مِنْهُ الْمَاءُ قَالَ يَا ابْنَ أَخِيْ أَقْرِئْ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم السَّلَامَ وَقُلْ لَهُ اسْتَغْفِرْ لِيْ وَاسْتَخْلَفَنِيْ أَبُوْ
عَامِرٍ عَلَى النَّاسِ فَمَكُثَ يَسِيْرًا ثُمَّ مَاتَ فَرَجَعْتُ فَدَخَلْتُ
عَلَى النَّبِيِّ فِيْ بَيْتِهِ عَلَى سَرِيْرٍ مُرْمَلٍ وَعَلَيْهِ فِرَاشٌ قَدْ
أَثَّرَ رِمَالُ السَّرِيْرِ بِظَهْرِهِ وَجَنْبَيْهِ فَأَخْبَرْتُهُ بِخَبَرِنَا
وَخَبَرِ أَبِيْ عَامِرٍ وَقَالَ قُلْ لَهُ اسْتَغْفِرْ لِيْ فَدَعَا بِمَاءٍ
فَتَوَضَّأَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِيْ
عَامِرٍ وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ ثُمَّ قَالَ اللهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيْرٍ مِنْ خَلْقِكَ مِنْ النَّاسِ فَقُلْتُ وَلِيْ
فَاسْتَغْفِرْ فَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ ذَنْبَهُ
وَأَدْخِلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُدْخَلًا كَرِيْمًا قَالَ أَبُوْ بُرْدَةَ
إِحْدَاهُمَا لِأَبِيْ عَامِرٍ وَالْأُخْرَى لِأَبِيْ مُوْسَى.
আবূ
মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়ন যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর
নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে একটি
সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের [৭৪] বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে
তিনি দুরাইদ ইবনু সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার
সঙ্গীদেরকেও পরাস্ত করেন। আবূ মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)-এর সঙ্গে
আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর হাঁটুতে একটি
তীর নিক্ষিপ্ত হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাটুর মধ্যে বসিয়ে
দিয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন
তিনি আবূ মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ
যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার
কাছে গিয়ে পৌছালাম আর সে আমাকে দেখামাত্র ভাগতে শুরু করল। আমি এ কথা বলতে বলতে তার
পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও। লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দু'জনে
তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা করে ফেললাম। তারপর আমি আবূ
আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন।
তিনি বললেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান
থেকে কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দু'আ করতে
বলবে। আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর স্থলে আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ
করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচেছিলাম, তারপর ইন্তিকাল করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি
ফিরে এসে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর গৃহে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন
পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (যৎসামান্য) একটি বিছানা
ছিল। কাজেই তাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে
আমাদের এবং আবূ 'আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)– এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও
বললাম যে, (মৃত্যুর পূর্বে বলে গিয়েছেন) তাঁকে [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম)- কে] আমার মাগফিরাতের জন্য দু'আ করতে বলবে। এ কথা শুনে নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পানি আনতে বললেন এবং 'উযু করলেন। তারপর তাঁর দু'হাত উপরে তুলে
তিনি বললেন। হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা আবূ আমিরকে ক্ষমা করো। (হস্তদ্বয়
উত্তোলনের কারণে) আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখতে পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে
আল্লাহ! ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক মাখলুকের উপর, অনেক মানুষের উপর
শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও (দু'আ করুন)। তিনি দু'আ করলেন এবং
বললেন, হে আল্লাহ! 'আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং ক্বিয়ামাত
দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। বর্ণনাকারী আবূ বুরদা (রাযিআল্লাহু
তাআলা আনহু) বলেন, দু'টি দু'আর একটি ছিল আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর
জন্য আর অপরটি ছিল আবূ মূসা (আশআরী) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর জন্য। [২৮৮৪;
মুসলিম ৪৪/৩৮, হাঃ ২৪৯৮, আহ্মাদ ১৯৭১৩] (আ.প্র. ৩৯৮০, ই.ফা. ৩৯৮৪)
[৭৪] তায়িফের অদূরে একটি উপত্যকার অধিবাসীদের কওমে
আওতাস বলা হতো। অষ্টম হিজরী সনে হুনায়ন যুদ্ধের পর পরই তাদেরকে দমন করার জন্য আবূ মূসা
আশ'আরীর ভাতিজা আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে পাঠানো হয়েছিল।
৬৪/৫৭. অধ্যায়ঃ
তায়িফের যুদ্ধ
মূসা ইবনু 'উকবাহ
(রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেছেন এ যুদ্ধ অষ্টম হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছে।
৪৩২৪
الْحُمَيْدِيُّ سَمِعَ سُفْيَانَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ
زَيْنَبَ بِنْتِ أَبِيْ سَلَمَةَ عَنْ أُمِّهَا أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنْهَا دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَعِنْدِيْ مُخَنَّثٌ
فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ أُمَيَّةَ يَا عَبْدَ اللهِ أَرَأَيْتَ
إِنْ فَتَحَ اللهُ عَلَيْكُمْ الطَّائِفَ غَدًا فَعَلَيْكَ بِابْنَةِ غَيْلَانَ
فَإِنَّهَا تُقْبِلُ بِأَرْبَعٍ وَتُدْبِرُ بِثَمَانٍ وَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله
عليه وسلم لَا يَدْخُلَنَّ هَؤُلَاءِ عَلَيْكُنَّ قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ وَقَالَ
ابْنُ جُرَيْجٍ الْمُخَنَّثُ هِيْتٌ حَدَّثَنَا مَحْمُوْدٌ حَدَّثَنَا أَبُوْ
أُسَامَةَ عَنْ هِشَامٍ بِهَذَا وَزَادَ وَهُوَ مُحَاصِرُ الطَّائِفِ يَوْمَئِذٍ.
উম্মু
সালামাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
আমার কাছে এক হিজড়া ব্যক্তি বসা ছিল, এমন সময়ে
নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি শুনলাম যে, সে
(হিজড়া ব্যক্তি) 'আবদুল্লাহ ইবনু উমাইয়া (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বলছে, হে
'আবদুল্লাহ! কী বল, আগামীকাল যদি আল্লাহ তোমাদেরকে তায়েফের উপর বিজয় দান করেন তা
হলে গাইলানের কন্যাকে নিয়ে নিও। কেননা সে (এতই কোমলদেহী), সামনের দিকে আসার সময়
তার পিঠে চারটি ভাঁজ পড়ে আবার পিঠ ফিরালে সেখানে আটটি ভাঁজ পড়ে। [উম্মু সালামাহ
(রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন] তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
এদেরকে তোমাদের কাছে ঢুকতে দিও না। [৭৫] ইবনু উয়াইনাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)
বর্ণনা করেন যে, ইবনু জুরাইজ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেছেন, হিজড়ার নাম ছিল
হীত। (আ.প্র. ৩৯৮১, ই.ফা. ৩৯৮৫)
হিশাম (রহঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি এ হাদীসে এতুটুকু বৃদ্ধি করেছেন যে, সেদিন তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] তায়িফ অবরোধ করা অবস্থায় ছিলেন। [৫২৩৫, ৫৮৮৭; মুসলিম ৩৯/১৩, হাঃ ২১৮০, আহমাদ ২৬৫৫২] (আ.প্র. ৩৯৮২, ই.ফা. ৩৯৮৬)
হিশাম (রহঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি এ হাদীসে এতুটুকু বৃদ্ধি করেছেন যে, সেদিন তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] তায়িফ অবরোধ করা অবস্থায় ছিলেন। [৫২৩৫, ৫৮৮৭; মুসলিম ৩৯/১৩, হাঃ ২১৮০, আহমাদ ২৬৫৫২] (আ.প্র. ৩৯৮২, ই.ফা. ৩৯৮৬)
[৭৫] হিজড়াদের সম্মুখেও পর্দার বিধান প্রযোজ্য।
৪৩২৫
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ أَبِي
الْعَبَّاسِ الشَّاعِرِ الْأَعْمَى عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ لَمَّا
حَاصَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الطَّائِفَ فَلَمْ يَنَلْ مِنْهُمْ
شَيْئًا قَالَ إِنَّا قَافِلُوْنَ إِنْ شَاءَ اللهُ فَثَقُلَ عَلَيْهِمْ
وَقَالُوْا نَذْهَبُ وَلَا نَفْتَحُهُ وَقَالَ مَرَّةً نَقْفُلُ فَقَالَ اغْدُوْا
عَلَى الْقِتَالِ فَغَدَوْا فَأَصَابَهُمْ جِرَاحٌ فَقَالَ إِنَّا قَافِلُوْنَ
غَدًا إِنْ شَاءَ اللهُ فَأَعْجَبَهُمْ فَضَحِكَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
وَقَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً فَتَبَسَّمَ قَالَ قَالَ الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا
سُفْيَانُ الْخَبَرَ كُلَّهُ.
আবদুল্লাহ
ইবনু 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়া সাল্লাম) তায়িফ অবরোধ করলেন। কিন্তু তাদের নিকট কিছুই হাসিল করতে পারেননি। তাই
তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ আমরা (অবরোধ উঠিয়ে মাদীনাহ্র দিকে) ফিরে যাব। কথাটি
সহাবীদের মনে ভারী লাগল। তাঁরা বললেন, আমরা চলে যাব, তায়িফ বিজয় করব না?
বর্ণনাকারী একবার কাফিলুন শব্দের স্থলে নাকফুলো (অর্থাৎ আমরা 'যুদ্ধবিহীন ফিরে
যাব') বর্ণনা করেছেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে
সকালে গিয়ে লড়াই কর। তাঁরা (পরদিন) সকালে লড়াই করতে গেলেন, এতে তাঁদের অনেকেই আহত
হলেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইনশাআল্লাহ আমরা
আগামীকাল ফিরে চলে যাব। তখন সহাবাদের কাছে কথাটি মনঃপূত হল। এতে নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হাসলেন। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান (রহঃ) একবার বর্ণনা করেছেন যে,
তিনি মুচকি হাসি হেসেছেন। হুমাইদী (রহঃ) বলেন, সুফ্ইয়ান আমাদেরকে এ হাদীসের পূর্ণ
সূত্রটিতে 'খবর' শব্দটি ব্যবহার করে বর্ণনা করেছেন। [৬০৮৬, ৭৪৮০; মুসলিম ৩২/২৯,
হাঃ ১৭৭৮, আহমাদ ৪৫৮৮] (আ.প্র. ৩৯৮৩, ই.ফা. ৩৯৮৭)
৪৩২৬
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ
عَاصِمٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا عُثْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَهُوَ أَوَّلُ
مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَبَا بَكْرَةَ وَكَانَ تَسَوَّرَ
حِصْنَ الطَّائِفِ فِيْ أُنَاسٍ فَجَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
فَقَالَا سَمِعْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ مَنْ ادَّعَى إِلَى
غَيْرِ أَبِيْهِ وَهُوَ يَعْلَمُ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ.
وَقَالَ هِشَامٌ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ أَوْ أَبِيْ عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَأَبَا بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ عَاصِمٌ قُلْتُ لَقَدْ شَهِدَ عِنْدَكَ رَجُلَانِ حَسْبُكَ بِهِمَا قَالَ أَجَلْ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَأَوَّلُ مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَنَزَلَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثَالِثَ ثَلَاثَةٍ وَعِشْرِيْنَ مِنْ الطَّائِفِ.
وَقَالَ هِشَامٌ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ أَوْ أَبِيْ عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَأَبَا بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ عَاصِمٌ قُلْتُ لَقَدْ شَهِدَ عِنْدَكَ رَجُلَانِ حَسْبُكَ بِهِمَا قَالَ أَجَلْ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَأَوَّلُ مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَنَزَلَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثَالِثَ ثَلَاثَةٍ وَعِشْرِيْنَ مِنْ الطَّائِفِ.
আবূ
‘উসমান [নাহ্দী (রহঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হাদীসটি শুনেছি সা‘দ থেকে,
যিনি আল্লাহর পথে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) থেকেও
শুনেছি যিনি (তায়িফ অবরোধকালে) সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনসহ তায়িফের পাঁচিলের উপর
চড়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা দু’জনই বলেছেন,
আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি
জেনে শুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।
হিশাম (রহ.) বলেন, মা‘মার (রহ.) আমাদের কাছে ‘আসিম-আবুল ‘আলিয়া (রহ.) অথবা আবূ ‘উসমান নাহদী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি সা‘দ এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি শুনেছি। আসিম (রহ.) বলেন, আমি (আবুল ‘আলিয়া অথবা আবূ ‘উসমান) (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দু’জন রাবী বর্ণনা করেছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপরজন হলেন তায়েফ থেকে (প্রাচীর টপকে) এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন। [৬৭৬৬, ৬৭৬৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৮)
হিশাম (রহ.) বলেন, মা‘মার (রহ.) আমাদের কাছে ‘আসিম-আবুল ‘আলিয়া (রহ.) অথবা আবূ ‘উসমান নাহদী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি সা‘দ এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি শুনেছি। আসিম (রহ.) বলেন, আমি (আবুল ‘আলিয়া অথবা আবূ ‘উসমান) (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দু’জন রাবী বর্ণনা করেছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপরজন হলেন তায়েফ থেকে (প্রাচীর টপকে) এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন। [৬৭৬৬, ৬৭৬৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৮)
৪৩২৭
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ
عَاصِمٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا عُثْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَهُوَ أَوَّلُ
مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَبَا بَكْرَةَ وَكَانَ تَسَوَّرَ
حِصْنَ الطَّائِفِ فِيْ أُنَاسٍ فَجَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
فَقَالَا سَمِعْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ مَنْ ادَّعَى إِلَى
غَيْرِ أَبِيْهِ وَهُوَ يَعْلَمُ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ.
وَقَالَ هِشَامٌ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ أَوْ أَبِيْ عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَأَبَا بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ عَاصِمٌ قُلْتُ لَقَدْ شَهِدَ عِنْدَكَ رَجُلَانِ حَسْبُكَ بِهِمَا قَالَ أَجَلْ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَأَوَّلُ مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَنَزَلَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثَالِثَ ثَلَاثَةٍ وَعِشْرِيْنَ مِنْ الطَّائِفِ.
وَقَالَ هِشَامٌ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ أَوْ أَبِيْ عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَأَبَا بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ عَاصِمٌ قُلْتُ لَقَدْ شَهِدَ عِنْدَكَ رَجُلَانِ حَسْبُكَ بِهِمَا قَالَ أَجَلْ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَأَوَّلُ مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَنَزَلَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثَالِثَ ثَلَاثَةٍ وَعِشْرِيْنَ مِنْ الطَّائِفِ.
আবূ
‘উসমান [নাহ্দী (রহঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হাদীসটি শুনেছি সা‘দ থেকে,
যিনি আল্লাহর পথে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) থেকেও
শুনেছি যিনি (তায়িফ অবরোধকালে) সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনসহ তায়িফের পাঁচিলের উপর
চড়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা দু’জনই বলেছেন,
আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে
শুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।
হিশাম (রহ.) বলেন, মা‘মার (রহ.) আমাদের কাছে ‘আসিম-আবুল ‘আলিয়া (রহ.) অথবা আবূ ‘উসমান নাহদী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি সা‘দ এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি শুনেছি। আসিম (রহ.) বলেন, আমি (আবুল ‘আলিয়া অথবা আবূ ‘উসমান) (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দু’জন রাবী বর্ণনা করেছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপরজন হলেন তায়েফ থেকে (প্রাচীর টপকে) এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন। [৬৭৬৬, ৬৭৬৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৮)
হিশাম (রহ.) বলেন, মা‘মার (রহ.) আমাদের কাছে ‘আসিম-আবুল ‘আলিয়া (রহ.) অথবা আবূ ‘উসমান নাহদী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি সা‘দ এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি শুনেছি। আসিম (রহ.) বলেন, আমি (আবুল ‘আলিয়া অথবা আবূ ‘উসমান) (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দু’জন রাবী বর্ণনা করেছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপরজন হলেন তায়েফ থেকে (প্রাচীর টপকে) এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন। [৬৭৬৬, ৬৭৬৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৮)
৪৩২৮
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ بُرَيْدِ بْنِ
عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ
كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ نَازِلٌ بِالْجِعْرَانَةِ
بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِيْنَةِ وَمَعَهُ بِلَالٌ فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ أَلَا تُنْجِزُ لِيْ مَا وَعَدْتَنِيْ فَقَالَ
لَهُ أَبْشِرْ فَقَالَ قَدْ أَكْثَرْتَ عَلَيَّ مِنْ أَبْشِرْ فَأَقْبَلَ عَلَى
أَبِيْ مُوْسَى وَبِلَالٍ كَهَيْئَةِ الْغَضْبَانِ فَقَالَ رَدَّ الْبُشْرَى
فَاقْبَلَا أَنْتُمَا قَالَا قَبِلْنَا ثُمَّ دَعَا بِقَدَحٍ فِيْهِ مَاءٌ
فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيْهِ وَمَجَّ فِيْهِ ثُمَّ قَالَ اشْرَبَا مِنْهُ
وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوْهِكُمَا وَنُحُوْرِكُمَا وَأَبْشِرَا فَأَخَذَا الْقَدَحَ
فَفَعَلَا فَنَادَتْ أُمُّ سَلَمَةَ مِنْ وَرَاءِ السِّتْرِ أَنْ أَفْضِلَا
لِأُمِّكُمَا فَأَفْضَلَا لَهَا مِنْهُ طَائِفَةً.
আবূ
মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম)- এর নিকট মাক্কাহ ও মাহীনাহ্র মধ্যবর্তী জিরানা নামক স্থানে অবস্থান
করছিলাম। তখন বিলাল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর কাছে ছিলেন। এমন সময়ে নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আপনি আমাকে যে
ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পূরণ করবেন না? তিনি তাঁকে বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর। সে বলল, সুসংবাদ
গ্রহণ কর কথাটি তো আপনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তখন তিনি ক্রোধ ভরে আবূ মূসা ও
বিলাল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর দিকে ফিরে বললেন, লোকটি সুসংবাদ ফিরিয়ে
দিয়েছে। তোমরা দু'জন তা গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে বললেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম। এরপর
তিনি পানির একটি পাত্র আনতে বললেন। তিনি এর মধ্যে নিজের উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুয়ে
কুল্লি করলেন। তারপর বললেন, তোমরা উভয়ে এ থেকে পান করো এবং নিজেদের মুখমণ্ডল ও
বুকে ছিটিয়ে দাও। আর সুসংবাদ গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে পাত্রটি তুলে নিয়ে নির্দেশ মত
কাজ করলেন। এমন সময় উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু আনহা) পর্দার আড়াল থেকে ডেকে
বললেন, তোমাদের মায়ের জন্যও অতিরিক্ত কিছু রাখ। কাজেই তাঁরা এ থেকে অতিরিক্ত কিছু
তাঁর [উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু আনহা)- এর] জন্য রাখলেন। [১৮৮] (আ.প্র. ৩৯৮৫,
ই.ফা. ৩৯৮৯)
৪৩২৯
يَعْقُوْبُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ حَدَّثَنَا ابْنُ
جُرَيْجٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عَطَاءٌ أَنَّ صَفْوَانَ بْنَ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ
أَخْبَرَهُ أَنَّ يَعْلَى كَانَ يَقُوْلُ لَيْتَنِيْ أَرَى رَسُوْلَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم حِيْنَ يُنْزَلُ عَلَيْهِ قَالَ فَبَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله
عليه وسلم بِالْجِعْرَانَةِ وَعَلَيْهِ ثَوْبٌ قَدْ أُظِلَّ بِهِ مَعَهُ فِيْهِ
نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ إِذْ جَاءَهُ أَعْرَابِيٌّ عَلَيْهِ جُبَّةٌ مُتَضَمِّخٌ
بِطِيْبٍ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ كَيْفَ تَرَى فِيْ رَجُلٍ أَحْرَمَ
بِعُمْرَةٍ فِيْ جُبَّةٍ بَعْدَمَا تَضَمَّخَ بِالطِّيْبِ فَأَشَارَ عُمَرُ إِلَى
يَعْلَى بِيَدِهِ أَنْ تَعَالَ فَجَاءَ يَعْلَى فَأَدْخَلَ رَأْسَهُ فَإِذَا
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُحْمَرُّ الْوَجْهِ يَغِطُّ كَذَلِكَ سَاعَةً
ثُمَّ سُرِّيَ عَنْهُ فَقَالَ أَيْنَ الَّذِيْ يَسْأَلُنِيْ عَنِ الْعُمْرَةِ
آنِفًا فَالْتُمِسَ الرَّجُلُ فَأُتِيَ بِهِ فَقَالَ أَمَّا الطِّيْبُ الَّذِيْ
بِكَ فَاغْسِلْهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ وَأَمَّا الْجُبَّةُ فَانْزِعْهَا ثُمَّ
اصْنَعْ فِيْ عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِيْ حَجِّكَ.
সাফওয়ান
ইবনু ইয়া'লা ইব্নু উমাইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইয়া'লা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলতেন যে,
আহা! রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার
মুহূর্তে যদি তাঁকে দেখতে পেতাম। ইয়া'লা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন ইতোমধ্যে
নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) জি'রানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর
উপর একটি কাপড় টানিয়ে ছায়া করে দেয়া হয়েছিল। আর সেখানে তাঁর সঙ্গে তাঁর কতিপয়
সাহাবীও ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে এক বেদুঈন আসল। তাঁর গায়ে ছিল একটি খুশবু মাখানো
জোব্বা। সে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী যে গায়ে
খুশবু মাখানো জোব্বা পরিধান ক'রে 'উমরাহ্ আদায়ের জন্য ইহ্রাম বেঁধেছে? (এমন সময়)
'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হাত দিয়ে ইশারা করে ইয়া'লা (রাযিআল্লাহু তাআলা
আনহু)- কে আসতে বললেন। ইয়া'লা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) এলে 'উমার (রাযিআল্লাহু
তাআলা আনহু) তাঁর মাথাটি (কাপড়ের ছায়ায়) ঢুকিয়ে দিলেন। [তখন তিনি ইয়া'লা
(রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) দেখতে পেলেন যে] নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-
এর চেহারা লাল বর্ণ হয়ে রয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাস জোরে চলছে। এ অবস্থা কিছুক্ষণ
পর্যন্ত ছিল, তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। তখন তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] বললেন, সে লোকটি কোথায়, কিছুক্ষণ আগে যে আমাকে “উমরাহ্র
বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। লোকটিকে খুঁজে আনা হলে তিনি বললেনঃ তোমার গায়ে যে খুশবু
রয়েছে তা তুমি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জোব্বাটি খুলে ফেল। তারপর হাজ্জ পালনে যা কর,
'উমরাহ্তেও সেগুলোই কর। [১৫৩৬] (আ.প্র. ৩৯৮৬, ই.ফা. ৩৯৯০)
৪৩৩০
مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ
يَحْيَى عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيْمٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَاصِمٍ
قَالَ لَمَّا أَفَاءَ اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ حُنَيْنٍ
قَسَمَ فِي النَّاسِ فِي الْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَلَمْ يُعْطِ الْأَنْصَارَ
شَيْئًا فَكَأَنَّهُمْ وَجَدُوْا إِذْ لَمْ يُصِبْهُمْ مَا أَصَابَ النَّاسَ
فَخَطَبَهُمْ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلَّالًا
فَهَدَاكُمْ اللهُ بِيْ وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِيْنَ فَأَلَّفَكُمْ اللهُ بِيْ
وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمْ اللهُ بِيْ كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا اللهُ
وَرَسُوْلُهُ أَمَنُّ قَالَ مَا يَمْنَعُكُمْ أَنْ تُجِيْبُوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم قَالَ كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمَنُّ
قَالَ لَوْ شِئْتُمْ قُلْتُمْ جِئْتَنَا كَذَا وَكَذَا أَتَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ
النَّاسُ بِالشَّاةِ وَالْبَعِيْرِ وَتَذْهَبُوْنَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم إِلَى رِحَالِكُمْ لَوْلَا الْهِجْرَةُ لَكُنْتُ امْرًَا مِنَ الْأَنْصَارِ
وَلَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَشِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الْأَنْصَارِ
وَشِعْبَهَا الْأَنْصَارُ شِعَارٌ وَالنَّاسُ دِثَارٌ إِنَّكُمْ سَتَلْقَوْنَ
بَعْدِيْ أُثْرَةً فَاصْبِرُوْا حَتَّى تَلْقَوْنِيْ عَلَى الْحَوْضِ.
আবদুল্লাহ
ইবনু যায়দ ইবনু 'আসিম (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের দিবসে আল্লাহ যখন
রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে গানীমাতের সম্পদ দান করলেন তখন
তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ়
করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই দিলেন না। ফলে তাঁরা যেন
নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যেরা যা পেয়েছে তাঁরা তা পাননি। অথবা তিনি বলেছেনঃ
তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যোরা যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে আনসারগণ! আমি কি
তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট পাইনি, অতঃপর আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদের হিদায়াত দান করেছেন?
তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে পরস্পরকে জুড়ে
দিয়েছেন। তোমারা ছিলে দরিদ্র, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত
করেছেন। এভাবে যখনই তিনি কোন কথা বলেছেন তখন আনসারগণ জবাবে বলেছেন, আল্লাহ এবং
তাঁর রসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র রসূলের জবাব দিতে
তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলেছেন তার উত্তরে বলে
যাচ্ছেন, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেন, তোমরা
ইচ্ছা করলে বলতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন (সংকটময়) সময়ে এসেছিলেন কিন্তু
তোমরা কি কথায় সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বক্রী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা
তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহ্র নাবীকে সঙ্গে নিয়ে। যদি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আমাকে
হিজরাত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম।
যদি লোকজন উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই
চলব। আনসারগণ হল (নাববী) ভিতরের পোশাক আর অন্যান্য লোক হল উপরের পোশাক। আমার
বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্য ধারণ করবে
(দ্বীনের উপর টিকে থাকবে) যে পর্যন্ত না তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ
কর। [৭২৪৫; মুসলিম ১২/৪৬, হাঃ ১০৬১, আহমাদ ১৬৪৭০] (আ.প্র. ৩৯৮৭, ই.ফা. ৩৯৯১)
৪৩৩১
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا هِشَامٌ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ
الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ
قَالَ نَاسٌ مِنَ الْأَنْصَارِ حِيْنَ أَفَاءَ اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ صلى الله
عليه وسلم مَا أَفَاءَ مِنْ أَمْوَالِ هَوَازِنَ فَطَفِقَ النَّبِيُّ صلى الله
عليه وسلم يُعْطِيْ رِجَالًا الْمِائَةَ مِنَ الإِبِلِ فَقَالُوْا يَغْفِرُ اللهُ
لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُعْطِيْ قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا
وَسُيُوْفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ قَالَ أَنَسٌ فَحُدِّثَ رَسُوْلُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم بِمَقَالَتِهِمْ فَأَرْسَلَ إِلَى الْأَنْصَارِ فَجَمَعَهُمْ
فِيْ قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ وَلَمْ يَدْعُ مَعَهُمْ غَيْرَهُمْ فَلَمَّا
اجْتَمَعُوْا قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا حَدِيْثٌ
بَلَغَنِيْ عَنْكُمْ فَقَالَ فُقَهَاءُ الْأَنْصَارِ أَمَّا رُؤَسَاؤُنَا يَا
رَسُوْلَ اللهِ فَلَمْ يَقُوْلُوْا شَيْئًا وَأَمَّا نَاسٌ مِنَّا حَدِيْثَةٌ
أَسْنَانُهُمْ فَقَالُوْا يَغْفِرُ اللهُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
يُعْطِيْ قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا وَسُيُوْفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ
فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَإِنِّيْ أُعْطِيْ رِجَالًا حَدِيْثِيْ
عَهْدٍ بِكُفْرٍ أَتَأَلَّفُهُمْ أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ
بِالأَمْوَالِ وَتَذْهَبُوْنَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى رِحَالِكُمْ
فَوَاللهِ لَمَا تَنْقَلِبُوْنَ بِهِ خَيْرٌ مِمَّا يَنْقَلِبُوْنَ بِهِ قَالُوْا
يَا رَسُوْلَ اللهِ قَدْ رَضِيْنَا فَقَالَ لَهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
سَتَجِدُوْنَ أُثْرَةً شَدِيْدَةً فَاصْبِرُوْا حَتَّى تَلْقَوْا اللهَ
وَرَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم فَإِنِّيْ عَلَى الْحَوْضِ قَالَ أَنَسٌ فَلَمْ
يَصْبِرُوْا.
আনাস
ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে হাওয়াযিন গোত্রের সম্পদ থেকে গানীমাত হিসেবে যতটুকু দান
করতে চেয়েছেন দান করলেন, তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কতিপয় লোককে
একশ' করে উট দান করলেন। (এ অবস্থা দেখে) আনসারদের কিছুসংখ্যক লোক বলে ফেললেন,
আল্লাহ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে ক্ষমা করুন, তিনি
কুরায়শদেরকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে বাদ দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তলোয়ার থেকে এখলো তাদের
রক্ত টপটপ করে পড়ছে। আনাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, তাঁদের একটি চামড়ার তৈরি
তাঁবুতে জমায়েত এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে অনুমতি দিলেন না। এরপর
তাঁরা সবাই জমায়েত হলে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের
নিকট হতে কী কথা আমার নিকট পৌঁছল? আনসারদের জ্ঞানীগুণী লোকেরা বললেনঃ হে আল্লাহ্র
রসূল! আমাদের নেতৃস্থানীয় কেউ তো কিছু বলেনি, তবে আমাদের কতিপয় কমবয়সী লোকেরা
বলেছে যে, আল্লাহ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে ক্ষমা করুন,
তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গানীমাতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের
তরবারীগুলো থেকে এখনো তাদের রক্ত টপটপ করে পড়ছে। তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) বললেন, আমি অবশ্য এমন কিছু লোককে দিচ্ছি যারা সবেমাত্র কুফ্র ত্যাগ করে
ইসলামে প্রবেশ করেছে। আর তা এ জন্যে যেন তাদের মনকে আমি ঈমানের উপর সুদৃঢ় করতে
পারি। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক ফিরে যাবে ধন-সম্পদ নিয়ে আর
তোমরা বাড়ি ফিরে যাবে (আল্লাহ্র) নাবীকে সঙ্গে নিয়ে? আল্লাহ্র কসম! তোমরা যে
জিনিস নিয়ে ফিরে যাবে তা অনেক উত্তম ঐ ধন-সম্পদ অপেক্ষা, যা নিয়ে তারা ফিরে যাবে।
আনসারগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেন, অচিরেই তোমরা (নিজেদের উপর) অন্যদের প্রবল
অগ্রাধিকার দেখতে পাবে। অতএব, (আমার মৃত্যুর পর) আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের সঙ্গে
সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে। আমি হাউজে কাউসারের নিকট থাকব। আনাস
(রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, কিন্তু তাঁরা (আনসাররা) ধৈর্যধারণ করেননি। [৩১৪৬]
(আ.প্র. ৩৯৮৮, ই.ফা. ৩৯৯২)
৪৩৩২
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِي التَّيَّاحِ عَنْ
أَنَسٍ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ فَتْحِ مَكَّةَ قَسَمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم غَنَائِمَ بَيْنَ قُرَيْشٍ فَغَضِبَتْ الْأَنْصَارُ قَالَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالدُّنْيَا
وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالُوْا بَلَى قَالَ لَوْ
سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا أَوْ شِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الْأَنْصَارِ أَوْ
شِعْبَهُمْ.
আনাস
(ইবনু মালিক) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিনে রসূল
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের মধ্যে গানীমাতের মাল বন্টন করে দিলেন।
এতে আনসারগণ নাখোশ হয়ে গেলেন। তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন,
তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকজন পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা
আল্লাহ্র রসূলকে নিয়ে ফিরবে? তাঁরা উত্তর দিলেন, অবশ্যই (আমরা সন্তুষ্ট)।
রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি লোকজন কোন উপত্যকা বা
গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যাকা বা গিরিপথ দিয়ে চলব। [৩১৪৬] (আ.প্র.
৩৯৮৯, ই.ফা. ৩৯৯৩)
৪৩৩৩
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا أَزْهَرُ عَنْ ابْنِ عَوْنٍ
أَنْبَأَنَا هِشَامُ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ
قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ حُنَيْنٍ الْتَقَى هَوَازِنُ وَمَعَ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم عَشَرَةُ آلَافٍ وَالطُّلَقَاءُ فَأَدْبَرُوْا قَالَ يَا مَعْشَرَ
الْأَنْصَارِ قَالُوْا لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ لَبَّيْكَ
نَحْنُ بَيْنَ يَدَيْكَ فَنَزَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَنَا
عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ فَانْهَزَمَ الْمُشْرِكُوْنَ فَأَعْطَى الطُّلَقَاءَ
وَالْمُهَاجِرِيْنَ وَلَمْ يُعْطِ الْأَنْصَارَ شَيْئًا فَقَالُوْا فَدَعَاهُمْ
فَأَدْخَلَهُمْ فِيْ قُبَّةٍ فَقَالَ أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ
بِالشَّاةِ وَالْبَعِيْرِ وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَسَلَكَتْ
الْأَنْصَارُ شِعْبًا لَاخْتَرْتُ شِعْبَ الْأَنْصَارِ.
আনাস
(ইবনু মালিক) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়ন [৭৬]- এর দিন নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হাওয়াযিন গোত্রের মুখোমুখি হলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল
দশ হাজার (মুহাজির ও আনসার সৈনিক) এবং (মক্কার) নও-মুসলিম। যুদ্ধে এরা
পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। এ মুহূর্তে তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)]
বললেন, ওহে আনসার সকল! তাঁরা জওয়াব দিলেন, আমরা হাযির, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার
সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত এবং আপনার সামনেই আমরা উপস্থিত। নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্র
বান্দা এবং তাঁর রসূল। মুশরিকরা পরাজিত হল। তিনি নও-মুসলিম এবং মুহাজিরদেরকে
(গানীমাতে) বণ্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দিলেন না। (এতে তারা নিজেদের
মধ্যে সে কথা বলাবলি করছিল।) তখন তিনি তাদেরকে ডেকে এনে একটি তাঁবুর ভিতর জমায়েত
করলেন এবং বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকবে না যে, লোকজন বাক্রী ও উট নিয়ে যাবে আর
তোমরা আল্লাহ্র রসূলকে নিয়ে। এরপর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরো
বললেন, যদি লোকজন উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসাররা গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি
আনসারদের গিরিপথকেই বেছে নেব। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯০, ই.ফা. ৩৯৯৪)
[৭৬]
মাক্কাহ বিজয়ের পর হাওয়াযিন ও সাকীফ গোত্রগুলো চিন্তা করলো তারা যদি মুসলিমদেরকে পরাজিত
করতে পারে তাহলে মাক্কাহবাসীর যে সব বাগান ও জায়গীর তায়িফে রয়েছে সেগুলো বিনা বাধায়
তাদেরই হয়ে যাবে। আর মুসলিমদের উপর মূর্তি ভাঙ্গার অপরাধের প্রতিশোধও নেয়া যাবে।
তারা বানূ মুযার ও বানূ হেলাল গোত্রকেও তাদের সাথে নিয়ে নিলো এবং চার হাজার বীর যোদ্ধা নিয়ে মাক্কাহর পথে রওয়ানা হলো। তারা হুনায়নের উপত্যকায় এসে অবতরণ করলো। তাদের নেতা মালিক ইবনু 'আউফের পরামর্শক্রমে তাদের স্ত্রী, শিশু, মাল ও গবাদি পশুকেও সঙ্গে নিয়ে ছিল, তাঁর যুক্তি ছিল এর ফলে কেউ যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাবে না।
এ সংবাদ শুনে নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ হতে সামনে অগ্রসর হলেন এবং তাঁর সঙ্গে মাক্কাহর আরও দু'হাজার লোক যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অমুসলিমরাও ছিল এবং চুক্তিবদ্ধ মূর্তী পূজকরাও ছিল। সৈন্যদের মোট সংখ্যা বারো হাজারে দাঁড়িয়েছিল। নিজেদের সংখ্যাধিক্য দেখে সৈন্যদের মনে অহংকারও এসে গিয়েছিল এবং এজন্যে তারা যেখানে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এরূপ স্থলেও সতর্কতা অবলম্বন করেনি। শত্রুপক্ষ পূর্ব হতেই সেখানে প্রস্তুত হয়েছিল। পাহাড়ের আবশ্যকীয় ঘাটিগুলি অধিকার করে এবং নিকটবর্তী উপত্যকায় বহু সংখ্যক আব্যর্থ লক্ষ্য তীরন্দাজ সৈন্য বসিয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থা বেশ মযবুত করে নিয়েছিল। প্রাতঃকালে মুসলিম বাহিনী অগ্রসর হবার আয়োজন করেছে, এমন সময় হাওয়াযেনের বিরাট বাহিনী প্রচন্ড বেগে তাদের উপর আপতিত হলো। নব দীক্ষিত মুসলিম এবং অমুসলিম সৈন্যরা আগ্রহাতিশয্য বশতঃ বাহিনীর অগ্রে যাত্রা করছিল। তাদের অনেকের নিকট আবশ্যকীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ছিল না। তারা অসতর্ক অবস্থায় শত্রুদের ঘাটির নিকট পৌঁছল। এমতাবস্থায় শত্রুরা তাদের উপর এতো তীর বর্ষণ করলো যে, অগ্রবর্তী সেনাদল মুখ ফিরিয়ে পালাতে শুরু করলো। মুসলিমরা এটা সামলে নিয়ে শত্রু পক্ষের আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেন বটে, কিন্তু অগ্রবর্তী সৈন্যদলের ঐ ঘৃণিত পলায়নের জন্য তখন এমনই বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল যে, তাদের সে চেষ্টায় বিশেষ কোন ফল হলো না। এই ভীষণ দুর্যোগের মধ্যে পতিত হয়েও রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুহূর্তের জন্যেও বিচলিত হননি। এই সময় তিনি নিজের শ্বেত খচ্চরের উপর আরোহণ করে মুসলিমদেরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে লাগলেন। কিন্তু ঐ বিশৃঙ্খলা ও কোলাহলের মধ্যে তাঁর কণ্ঠস্বর কারো কর্ণে প্রবেশ করলো না। দু'একজন ব্যতীত সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। ঐ সময় আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর খচ্চরের লাগাম এবং আবু সুফ্ইয়ান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর পালানের রেকাব ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। মাত্র আর দু-তিন জন মুসলিম তাঁর পাশে টিকে ছিলেন।
দ্বাদশ সহস্র আত্নোৎসর্গী সৈন্য চক্ষের পলকে উধাও হয়ে গেছে। অগনিত শত্রু সেনা নাঙ্গা তরবারী হস্তে আক্রমণ করতে আসছে, সেদিকে তাঁর একটুও লক্ষ নেই। ঐ সময় তিনি খচ্চর হতে অবতরন করলেন এবং নতজানু হয়ে নিজের পরম জনের নিকট সাহায্য ও শক্তি প্রার্থনা করতে লাগলেন। তারপর পুনরায় খচ্চরে আরোহণ করে অগণিত শত্রুদলের উপর আক্রমণ করার জন্য তিনি দ্রুতবেগে আগ্রসর হলেন। ঐ সময় তিনি দৃঢ় কন্ঠে ও গুরুগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করলেনঃ (আরবী)
“আমি নাবী, এতে মিথ্যার লেশমাত্র নেই, আমি 'আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।” ভাবার্থ ছিলঃ আমার সত্যবাদিতার মাপকাঠি কোন সেনাবাহিনীর জয় বা পরাজয় নয়, বরং আমার সত্যবাদিতা স্বয়ং আমার স্বত্ত্বার দ্বারা হয়ে থাকে।”
ঐ সময় 'আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) একটি উচ্চ স্থানে আরোহণ পূর্বক তার স্বভাব সিদ্ধ উচ্চ কন্ঠে মুসলিমদেরকে আহবান করতে লাগলেনঃ হে আনসার বীরগণ! হে শাজারার বায়'আতকারীগণ! হে মুসলিম বীরবৃন্দ! হে মুহাজিরগণ! কোথায় তোমরা? এই দিকে ছুটে এসো।”
সদ্য প্রসূত গাভী যেমন স্বীয় বৎসের বিপদ দর্শনে চীৎকার করতে করতে ছুটে আসে, 'আব্বাসের (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) আহবান শ্রবন করে মুসলিম সৈনিকগণ এরূপ ছুটে আসতে লাগলেন। অতঃপর নতুনভাবে সৈন্যদের শ্রেণী বিন্যাস করা হলো। আনসার ও মুহাজিরকে আগে বাড়িয়ে দেয়া হল। এরপর তারা শত্রু পক্ষকে সমবেতভাবে আক্রমণ করলেন। শত্রুরা মুসলিমদের তরবারির সামনে বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারলো না। তারা স্ত্রী পুত্র রণ সম্ভার ও সমস্ত ধণ দৌলত যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলেই ইতস্ততঃ পালিয়ে গেল।
পলায়নের পর শত্রু পক্ষের কতক সৈন্য তাদের নেতা মালিক ইবনু আওফের সাথে তায়িফের দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করলো।
দ্বিতীয় দল, যাদের সাথে তাদের পরিবার বর্গ ছিল এবং ধন-সম্পদ ছিল, আওতাসের ঘাঁটিতে গিয়ে আত্নগোপন করলো।
রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়িফের দূর্গ অবরোধের নির্দেশ দিলেন এবং আওতাসের দিকে আবু আমির আশ'আরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) পৌঁছে শত্রুদের স্ত্রী-পুত্র ও ধন-সম্পদের উপর অধিকার লাভ করলেন। নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যখন আওতাসের ফলাফল অবগত হলেন তখন তিনি দূর্গের অবরোধ উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেন। কেননা, ঐ লোকগুলি স্ত্রী-পুত্র নিয়ে কঠিন বিপদে পড়েছিল।
আওতাসের ২৪ হাজার উট, চল্লিশ হাজার বকরী, চার হাজার উকিয়া চাঁদি এবং ছয় হাজার নারী ও শিশু মুসলিমদের হস্তগত হয়েছিল।
রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও যুদ্ধ ক্ষেত্রেই ছিলেন। এমন সময় হাওয়াযেন গোত্রের ছয় জন সর্দার আসলো এবং করুণার আবেদন পেশ করলো।
তাদের মধ্যে ঐ লোকগুলি ছিল যারা তায়েফে নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর উপর পাথর বর্ষণ করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত যায়েদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সেখান হতে রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে অজ্ঞান অবস্থায় উঠিয়ে নিয়ে আসেন।
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হাঁ আমি স্বয়ং তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম (এবং এই অপেক্ষার মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে যায় এবং গানীমাতের মালও বন্টিত হয়নি)। আমি আমার অংশের এবং আমার বংশের ভাগের বন্দীদেরকে সহজেই ছেড়ে দিতে পারি। আর আমার সাথে যদি শুধু আনসার ও মুহাজিরই থাকতো তাহলে সবাইকে ছেড়ে দেয়াও কঠিন ছিল না। কিন্তু তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছ যে, এই সেনাবাহিনীতে আমার সাথে ঐ লোকেরা রয়েছে যারা এখনও মুসলিম হয়নি। এ জন্যে একটা কৌশলের প্রয়োজন আছে। তোমরা আগামীকাল ফজরের ছালাতের সময়ে এসো এবং সাধারণ সমাবেশে তোমাদের আবেদন পেশ করো। ঐ সময় কোন এক উপায় বের হয়ে আসবে।” তিনি আরো বললেনঃ “তোমরা হয় ধনমাল নেয়া পছন্দ করো অথবা স্ত্রী-পুত্র। কেননা, আক্রমণকারী সৈন্যদের সব কিছুই ছেড়ে দেয়া কঠিন।”
পরের দিন ঐ নেতৃ বর্গই আসলো এবং তারা সাধারণ সমাবেশে নিজেদের বন্দীদের মুক্তির আবেদন নাবী কারীমের (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) খিদমতে পেশ করলো।
তুলনাবিহীন দয়া দাক্ষিণ্য ও করুণা প্রদর্শনঃ রাহমাতের নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আমি আমার ও বানু আবদিল মুত্তালিবের বন্দীদেরকে কোন বিনিময় গ্রহণ ছাড়াই মুক্ত করে দিচ্ছি।” আনসার ও মুহাজিররা তাঁর এ ঘোষণা শুনে বললেনঃ “আমরাও নিজ নিজ বন্দীদেরকে কোন মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত করে দিলাম।”
এখন বাকী থাকল বানু সালিম ও বানু ফাযরাহ্। তাদের কাছে এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল যে, আক্রমণকারী সৈন্যদের প্রতি (যারা ভাগ্যক্রমে পরাজিত হয়েছে) এরূপ দয়া প্রদর্শন করা হবে। এ জন্য তারা নিজ নিজ অংশের বন্দীদেরকে মুক্ত করল না। রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ডাকলেন। প্রত্যেক বন্দীর মূল্য ছয়টি উট নির্ধারণ করা হলো। এই মূল্য নাবী কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নিজেই প্রদান করলেন। এভাবে বাকী বন্দীদেরকে তিনি মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বন্দীদের প্রত্যেককে নতুন বস্ত্র পরিয়ে বিদায় করলেন।
দুধ-বোনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনঃ এই বন্দীদের মধ্যে দাই হালীমার কন্যা শায়মা বিনতুল হারিসও ছিল। নাবী কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঐ দুধ-বোনকে চিনতে পারলেন এবং তার সম্মানে নিজের চাদরখানা মাটিতে বিছিয়ে দিলেন। অতঃপর তাকে বললেনঃ “যদি তুমি আমার কাছে থাকো তাহলে ভালো কথা। আর যদি তুমি নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিরে যেতে চাও তাহলে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।” সে ফিরে যেতে চাওয়ায় রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সসম্মানে তার কওমের মধ্যে পাঠিয়ে দিলেন।
অকৃত্রিম সহচরদের আন্তরিকতার নমুনাঃ গানীমাতের মাল রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ জায়গাতেই বন্টন করে দিলেন। বড় বড় অংশ তিনি ঐ লোকদেরকে প্রদান করলেন যারা অল্পদিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আনসারদেরকে, যারা অত্যন্ত অকৃত্রিম ছিলেন, কিছুই দিলেন না। তিনি বললেনঃ “আনসারদের সাথে আমি নিজেই আছি। মানুষ ধন-দৌলত নিয়ে নিজ নিজ বাড়ীতে যাবে, আর আনসারগণ আল্লাহ্র রসূলকে (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে নিজেদের বাড়ীতে প্রবেশ করবে।”
আনসারগণ এতে এতো সন্তুষ্ট হন যে সম্পদ প্রাপকরা এমন সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেননি। (রাহমাতুল লিল 'আলামীন)
তারা বানূ মুযার ও বানূ হেলাল গোত্রকেও তাদের সাথে নিয়ে নিলো এবং চার হাজার বীর যোদ্ধা নিয়ে মাক্কাহর পথে রওয়ানা হলো। তারা হুনায়নের উপত্যকায় এসে অবতরণ করলো। তাদের নেতা মালিক ইবনু 'আউফের পরামর্শক্রমে তাদের স্ত্রী, শিশু, মাল ও গবাদি পশুকেও সঙ্গে নিয়ে ছিল, তাঁর যুক্তি ছিল এর ফলে কেউ যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাবে না।
এ সংবাদ শুনে নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ হতে সামনে অগ্রসর হলেন এবং তাঁর সঙ্গে মাক্কাহর আরও দু'হাজার লোক যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অমুসলিমরাও ছিল এবং চুক্তিবদ্ধ মূর্তী পূজকরাও ছিল। সৈন্যদের মোট সংখ্যা বারো হাজারে দাঁড়িয়েছিল। নিজেদের সংখ্যাধিক্য দেখে সৈন্যদের মনে অহংকারও এসে গিয়েছিল এবং এজন্যে তারা যেখানে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এরূপ স্থলেও সতর্কতা অবলম্বন করেনি। শত্রুপক্ষ পূর্ব হতেই সেখানে প্রস্তুত হয়েছিল। পাহাড়ের আবশ্যকীয় ঘাটিগুলি অধিকার করে এবং নিকটবর্তী উপত্যকায় বহু সংখ্যক আব্যর্থ লক্ষ্য তীরন্দাজ সৈন্য বসিয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থা বেশ মযবুত করে নিয়েছিল। প্রাতঃকালে মুসলিম বাহিনী অগ্রসর হবার আয়োজন করেছে, এমন সময় হাওয়াযেনের বিরাট বাহিনী প্রচন্ড বেগে তাদের উপর আপতিত হলো। নব দীক্ষিত মুসলিম এবং অমুসলিম সৈন্যরা আগ্রহাতিশয্য বশতঃ বাহিনীর অগ্রে যাত্রা করছিল। তাদের অনেকের নিকট আবশ্যকীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ছিল না। তারা অসতর্ক অবস্থায় শত্রুদের ঘাটির নিকট পৌঁছল। এমতাবস্থায় শত্রুরা তাদের উপর এতো তীর বর্ষণ করলো যে, অগ্রবর্তী সেনাদল মুখ ফিরিয়ে পালাতে শুরু করলো। মুসলিমরা এটা সামলে নিয়ে শত্রু পক্ষের আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেন বটে, কিন্তু অগ্রবর্তী সৈন্যদলের ঐ ঘৃণিত পলায়নের জন্য তখন এমনই বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল যে, তাদের সে চেষ্টায় বিশেষ কোন ফল হলো না। এই ভীষণ দুর্যোগের মধ্যে পতিত হয়েও রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুহূর্তের জন্যেও বিচলিত হননি। এই সময় তিনি নিজের শ্বেত খচ্চরের উপর আরোহণ করে মুসলিমদেরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে লাগলেন। কিন্তু ঐ বিশৃঙ্খলা ও কোলাহলের মধ্যে তাঁর কণ্ঠস্বর কারো কর্ণে প্রবেশ করলো না। দু'একজন ব্যতীত সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। ঐ সময় আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর খচ্চরের লাগাম এবং আবু সুফ্ইয়ান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর পালানের রেকাব ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। মাত্র আর দু-তিন জন মুসলিম তাঁর পাশে টিকে ছিলেন।
দ্বাদশ সহস্র আত্নোৎসর্গী সৈন্য চক্ষের পলকে উধাও হয়ে গেছে। অগনিত শত্রু সেনা নাঙ্গা তরবারী হস্তে আক্রমণ করতে আসছে, সেদিকে তাঁর একটুও লক্ষ নেই। ঐ সময় তিনি খচ্চর হতে অবতরন করলেন এবং নতজানু হয়ে নিজের পরম জনের নিকট সাহায্য ও শক্তি প্রার্থনা করতে লাগলেন। তারপর পুনরায় খচ্চরে আরোহণ করে অগণিত শত্রুদলের উপর আক্রমণ করার জন্য তিনি দ্রুতবেগে আগ্রসর হলেন। ঐ সময় তিনি দৃঢ় কন্ঠে ও গুরুগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করলেনঃ (আরবী)
“আমি নাবী, এতে মিথ্যার লেশমাত্র নেই, আমি 'আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।” ভাবার্থ ছিলঃ আমার সত্যবাদিতার মাপকাঠি কোন সেনাবাহিনীর জয় বা পরাজয় নয়, বরং আমার সত্যবাদিতা স্বয়ং আমার স্বত্ত্বার দ্বারা হয়ে থাকে।”
ঐ সময় 'আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) একটি উচ্চ স্থানে আরোহণ পূর্বক তার স্বভাব সিদ্ধ উচ্চ কন্ঠে মুসলিমদেরকে আহবান করতে লাগলেনঃ হে আনসার বীরগণ! হে শাজারার বায়'আতকারীগণ! হে মুসলিম বীরবৃন্দ! হে মুহাজিরগণ! কোথায় তোমরা? এই দিকে ছুটে এসো।”
সদ্য প্রসূত গাভী যেমন স্বীয় বৎসের বিপদ দর্শনে চীৎকার করতে করতে ছুটে আসে, 'আব্বাসের (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) আহবান শ্রবন করে মুসলিম সৈনিকগণ এরূপ ছুটে আসতে লাগলেন। অতঃপর নতুনভাবে সৈন্যদের শ্রেণী বিন্যাস করা হলো। আনসার ও মুহাজিরকে আগে বাড়িয়ে দেয়া হল। এরপর তারা শত্রু পক্ষকে সমবেতভাবে আক্রমণ করলেন। শত্রুরা মুসলিমদের তরবারির সামনে বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারলো না। তারা স্ত্রী পুত্র রণ সম্ভার ও সমস্ত ধণ দৌলত যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলেই ইতস্ততঃ পালিয়ে গেল।
পলায়নের পর শত্রু পক্ষের কতক সৈন্য তাদের নেতা মালিক ইবনু আওফের সাথে তায়িফের দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করলো।
দ্বিতীয় দল, যাদের সাথে তাদের পরিবার বর্গ ছিল এবং ধন-সম্পদ ছিল, আওতাসের ঘাঁটিতে গিয়ে আত্নগোপন করলো।
রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়িফের দূর্গ অবরোধের নির্দেশ দিলেন এবং আওতাসের দিকে আবু আমির আশ'আরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) পৌঁছে শত্রুদের স্ত্রী-পুত্র ও ধন-সম্পদের উপর অধিকার লাভ করলেন। নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যখন আওতাসের ফলাফল অবগত হলেন তখন তিনি দূর্গের অবরোধ উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেন। কেননা, ঐ লোকগুলি স্ত্রী-পুত্র নিয়ে কঠিন বিপদে পড়েছিল।
আওতাসের ২৪ হাজার উট, চল্লিশ হাজার বকরী, চার হাজার উকিয়া চাঁদি এবং ছয় হাজার নারী ও শিশু মুসলিমদের হস্তগত হয়েছিল।
রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও যুদ্ধ ক্ষেত্রেই ছিলেন। এমন সময় হাওয়াযেন গোত্রের ছয় জন সর্দার আসলো এবং করুণার আবেদন পেশ করলো।
তাদের মধ্যে ঐ লোকগুলি ছিল যারা তায়েফে নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর উপর পাথর বর্ষণ করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত যায়েদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সেখান হতে রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে অজ্ঞান অবস্থায় উঠিয়ে নিয়ে আসেন।
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হাঁ আমি স্বয়ং তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম (এবং এই অপেক্ষার মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে যায় এবং গানীমাতের মালও বন্টিত হয়নি)। আমি আমার অংশের এবং আমার বংশের ভাগের বন্দীদেরকে সহজেই ছেড়ে দিতে পারি। আর আমার সাথে যদি শুধু আনসার ও মুহাজিরই থাকতো তাহলে সবাইকে ছেড়ে দেয়াও কঠিন ছিল না। কিন্তু তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছ যে, এই সেনাবাহিনীতে আমার সাথে ঐ লোকেরা রয়েছে যারা এখনও মুসলিম হয়নি। এ জন্যে একটা কৌশলের প্রয়োজন আছে। তোমরা আগামীকাল ফজরের ছালাতের সময়ে এসো এবং সাধারণ সমাবেশে তোমাদের আবেদন পেশ করো। ঐ সময় কোন এক উপায় বের হয়ে আসবে।” তিনি আরো বললেনঃ “তোমরা হয় ধনমাল নেয়া পছন্দ করো অথবা স্ত্রী-পুত্র। কেননা, আক্রমণকারী সৈন্যদের সব কিছুই ছেড়ে দেয়া কঠিন।”
পরের দিন ঐ নেতৃ বর্গই আসলো এবং তারা সাধারণ সমাবেশে নিজেদের বন্দীদের মুক্তির আবেদন নাবী কারীমের (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) খিদমতে পেশ করলো।
তুলনাবিহীন দয়া দাক্ষিণ্য ও করুণা প্রদর্শনঃ রাহমাতের নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আমি আমার ও বানু আবদিল মুত্তালিবের বন্দীদেরকে কোন বিনিময় গ্রহণ ছাড়াই মুক্ত করে দিচ্ছি।” আনসার ও মুহাজিররা তাঁর এ ঘোষণা শুনে বললেনঃ “আমরাও নিজ নিজ বন্দীদেরকে কোন মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত করে দিলাম।”
এখন বাকী থাকল বানু সালিম ও বানু ফাযরাহ্। তাদের কাছে এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল যে, আক্রমণকারী সৈন্যদের প্রতি (যারা ভাগ্যক্রমে পরাজিত হয়েছে) এরূপ দয়া প্রদর্শন করা হবে। এ জন্য তারা নিজ নিজ অংশের বন্দীদেরকে মুক্ত করল না। রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ডাকলেন। প্রত্যেক বন্দীর মূল্য ছয়টি উট নির্ধারণ করা হলো। এই মূল্য নাবী কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নিজেই প্রদান করলেন। এভাবে বাকী বন্দীদেরকে তিনি মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বন্দীদের প্রত্যেককে নতুন বস্ত্র পরিয়ে বিদায় করলেন।
দুধ-বোনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনঃ এই বন্দীদের মধ্যে দাই হালীমার কন্যা শায়মা বিনতুল হারিসও ছিল। নাবী কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঐ দুধ-বোনকে চিনতে পারলেন এবং তার সম্মানে নিজের চাদরখানা মাটিতে বিছিয়ে দিলেন। অতঃপর তাকে বললেনঃ “যদি তুমি আমার কাছে থাকো তাহলে ভালো কথা। আর যদি তুমি নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিরে যেতে চাও তাহলে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।” সে ফিরে যেতে চাওয়ায় রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সসম্মানে তার কওমের মধ্যে পাঠিয়ে দিলেন।
অকৃত্রিম সহচরদের আন্তরিকতার নমুনাঃ গানীমাতের মাল রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ জায়গাতেই বন্টন করে দিলেন। বড় বড় অংশ তিনি ঐ লোকদেরকে প্রদান করলেন যারা অল্পদিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আনসারদেরকে, যারা অত্যন্ত অকৃত্রিম ছিলেন, কিছুই দিলেন না। তিনি বললেনঃ “আনসারদের সাথে আমি নিজেই আছি। মানুষ ধন-দৌলত নিয়ে নিজ নিজ বাড়ীতে যাবে, আর আনসারগণ আল্লাহ্র রসূলকে (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে নিজেদের বাড়ীতে প্রবেশ করবে।”
আনসারগণ এতে এতো সন্তুষ্ট হন যে সম্পদ প্রাপকরা এমন সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেননি। (রাহমাতুল লিল 'আলামীন)
৪৩৩৪
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ قَالَ
سَمِعْتُ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَمَعَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نَاسًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ إِنَّ قُرَيْشًا
حَدِيْثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ وَمُصِيْبَةٍ وَإِنِّيْ أَرَدْتُ أَنْ
أَجْبُرَهُمْ وَأَتَأَلَّفَهُمْ أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَرْجِعَ النَّاسُ
بِالدُّنْيَا وَتَرْجِعُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى
بُيُوْتِكُمْ قَالُوْا بَلَى قَالَ لَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَسَلَكَتْ الْأَنْصَارُ
شِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الْأَنْصَارِ أَوْ شِعْبَ الْأَنْصَارِ.
আনাস
ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) আনসারদের লোকজনকে জমায়েত করে বললেন, কুরাইশরা সবেমাত্র জাহিলীয়্যাত
ছেড়েছে আর তারা দুর্দশাগ্রস্ত। তাই আমি তাদেরকে অনুদান দিয়ে তাদের মন জয় করার
ইচ্ছা করেছি। তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর
তোমরা তোমাদের ঘরে ফিরে যাবে আল্লাহ্র রসূলকে নিয়ে। তারা বললেন, অবশ্যই আমরা
সন্তুষ্ট। তিনি আরো বললেন, যদি লোকজন উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসাররা গিরিপথ দিয়ে
চলে, তা হলে আনসারদের গিরিপথ অথবা তিনি বলেছেন, আনসারদের উপত্যকা দিয়েই চলব।
[৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯১, ই.ফা. ৩৯৯৫)
৪৩৩৫
قَبِيْصَةُ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ لَمَّا قَسَمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قِسْمَةَ
حُنَيْنٍ قَالَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ مَا أَرَادَ بِهَا وَجْهَ اللهِ
فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَتَغَيَّرَ وَجْهُهُ
ثُمَّ قَالَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَى مُوْسَى لَقَدْ أُوْذِيَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا
فَصَبَرَ.
আবদুল্লাহ
(ইবনু মাস'ঊদ) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) হুনাইনের গানীমাত বন্টন করলেন, তখন আনসারদের এক ব্যক্তি বলে ফেলল যে, এই
বন্টনের ব্যাপারে তিনি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করেননি। কথাটি শুনে আমি নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে আসলাম এবং তাঁকে কথাটি জানিয়ে দিলাম।
তখন তাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ, মূসা (আঃ)– এর
উপর রাহমাত বর্ষণ করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল। তাতে তিনি ধৈর্য
ধারণ করেছিলেন। [৩১৫০] (আ.প্র. ৩৯৯২, ই.ফা. ৩৯৯৬)
৪৩৩৬
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِيْ
وَائِلٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ
حُنَيْنٍ آثَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نَاسًا أَعْطَى الْأَقْرَعَ مِائَةً
مِنَ الإِبِلِ وَأَعْطَى عُيَيْنَةَ مِثْلَ ذَلِكَ وَأَعْطَى نَاسًا فَقَالَ
رَجُلٌ مَا أُرِيْدَ بِهَذِهِ الْقِسْمَةِ وَجْهُ اللهِ فَقُلْتُ لَأُخْبِرَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَحِمَ اللهُ مُوْسَى قَدْ أُوْذِيَ
بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ.
আবদুল্লাহ
(ইবনু মাস'ঊদ) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের দিন নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কোন কোন লোককে (গানীমাতের মাল) প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার
দেন। যেমন আকরা'কে একশ' উট দিয়েছিলেন। 'উয়াইনাহ্কে ততই দিয়েছিলেন। অন্যদেরকেও
দিয়েছিলেন। এতে এক ব্যক্তি বলে উঠল, এ বণ্টনে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি।
(রাবী বলেন) তখন আমি বললাম, অবশ্যই আমি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে
এ কথা জানিয়ে দিব। [এ কথা জানানো হলে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)]
বললেন, আল্লাহ মূসা (আঃ)- এর উপর রহম করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল।
তাতে তিনি ধৈর্য ধারণ করেন। [৩১৫০] (আ.প্র. ৩৯৯৩, ই.ফা. ৩৯৯৭)
৪৩৩৭
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ حَدَّثَنَا ابْنُ
عَوْنٍ عَنْ هِشَامِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ
مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمَ حُنَيْنٍ أَقْبَلَتْ
هَوَازِنُ وَغَطَفَانُ وَغَيْرُهُمْ بِنَعَمِهِمْ وَذَرَارِيِّهِمْ وَمَعَ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَشَرَةُ آلَافٍ وَمِنْ الطُّلَقَاءِ فَأَدْبَرُوْا
عَنْهُ حَتَّى بَقِيَ وَحْدَهُ فَنَادَى يَوْمَئِذٍ نِدَاءَيْنِ لَمْ يَخْلِطْ
بَيْنَهُمَا الْتَفَتَ عَنْ يَمِيْنِهِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ قَالُوْا
لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَبْشِرْ نَحْنُ مَعَكَ ثُمَّ الْتَفَتَ عَنْ
يَسَارِهِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ قَالُوْا لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ
اللهِ أَبْشِرْ نَحْنُ مَعَكَ وَهُوَ عَلَى بَغْلَةٍ بَيْضَاءَ فَنَزَلَ فَقَالَ
أَنَا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ فَانْهَزَمَ الْمُشْرِكُوْنَ فَأَصَابَ
يَوْمَئِذٍ غَنَائِمَ كَثِيْرَةً فَقَسَمَ فِي الْمُهَاجِرِيْنَ وَالطُّلَقَاءِ
وَلَمْ يُعْطِ الْأَنْصَارَ شَيْئًا فَقَالَتْ الْأَنْصَارُ إِذَا كَانَتْ
شَدِيْدَةٌ فَنَحْنُ نُدْعَى وَيُعْطَى الْغَنِيْمَةَ غَيْرُنَا فَبَلَغَهُ ذَلِكَ
فَجَمَعَهُمْ فِيْ قُبَّةٍ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ مَا حَدِيْثٌ
بَلَغَنِيْ عَنْكُمْ فَسَكَتُوْا فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَلَا
تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالدُّنْيَا وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ
تَحُوْزُوْنَهُ إِلَى بُيُوْتِكُمْ قَالُوْا بَلَى فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله
عليه وسلم لَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَسَلَكَتْ الْأَنْصَارُ شِعْبًا
لَأَخَذْتُ شِعْبَ الْأَنْصَارِ وَقَالَ هِشَامٌ قُلْتُ يَا أَبَا حَمْزَةَ
وَأَنْتَ شَاهِدٌ ذَاكَ قَالَ وَأَيْنَ أَغِيْبُ عَنْهُ.
আনাস
ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়নের দিন হাওয়াযিন, গাতফান ও
অন্যান্য গোত্রগুলো নিজেদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিসহ যুদ্ধক্ষেত্রে এল। আর নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে ছিল দশ হাজার (ও কিছু সংখ্যক) তুলাকা
[৭৭] সৈনিক। যুদ্ধে তারা সবাই তাঁর পাশ থেকে পিছনে সরে গেল। ফলে তিনি একাকী রয়ে
গেলেন। সেই সময়ে তিনি আলাদা আলাদাভাবে দু'টি ডাক দিয়েছিলেন, তিনি ডান দিকে ফিরে
বলেছিলেন, ওহে আনসারগণ! তাঁরা সবাই উত্তর করলেন, আমরা উপস্থিত হে আল্লাহ্র রসূল!
আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। এরপর তিনি বাম দিকে ফিরে বলেছিলেন, ওহে
আনসারগণ! তাঁরা সবাই উত্তরে বললেন, আমরা উপস্থিত হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি সুসংবাদ
নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাদা রঙের
খচ্চরটির পিঠে ছিলেন। তিনি নিচে নেমে পড়লেন এবং বললেন, আমি আল্লাহ্র বান্দা এবং
তাঁর রসূল। (শেষে) মুশরিকরাই পরাজিত হল। সে যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ গানীমাত হস্তগত
হল। তিনি সেসব সম্পদ মুহাজির এবং নও-মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। আর
আনসারদেরকে কিছুই দেননি। তখন আনসারদের (কেউ কেউ) বললেন, কঠিন মুহূর্ত আসলে ডাকা হয়
আমাদেরকে আর গানীমাত দেয়া হয় অন্যদেরকে। কথাটি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তাই তিনি তাদেরকে একটি তাঁবুতে জমায়েত করে বললেন, ওহে
আনসারগণ! একী কথা আমার কাছে পৌঁছল? তাঁরা চুপ করে থাকলেন। তিনি বললেন, হে আনসারগণ!
তোমরা কি খুশি থাকবে না যে, লোকজন দুনিয়ার ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা (বাড়ি
ফিরে যাবে আল্লাহ্র রসূলকে সঙ্গে নিয়ে? তাঁরা বললেনঃ অবশ্যই। তখন নবী
(সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে চলে আর
আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে চলে তাহলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই গ্রহণ করে নেব।
বর্ণনাকারী হিশাম (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আবূ হামযাহ (আনাস ইবনু মালিক)
আপনি কি এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি তাঁর নিকট হতে কখন বা
অনুপস্থিত থাকতাম? [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯৪, ই.ফা. ৩৯৯৮)
[৭৭]
ইবনু হাজার আসকালানী ও কিরমানী প্রভৃতি হাদীসবেত্তাগণের মতে তুলাকা শব্দের পূর্বে একটি
ওয়াও উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ দশ হাজার মুহাজির ও আনসার এবং মুক্তিপ্রাপ্ত লোকজন।
৬৪/৫৮. অধ্যায়ঃ
নাজদের দিকে প্রেরিত অভিযান
৪৩৩৮
أَبُو النُّعْمَانِ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ حَدَّثَنَا أَيُّوْبُ عَنْ نَافِعٍ
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم سَرِيَّةً قِبَلَ نَجْدٍ فَكُنْتُ فِيْهَا فَبَلَغَتْ سِهَامُنَا اثْنَيْ
عَشَرَ بَعِيْرًا وَنُفِّلْنَا بَعِيْرًا بَعِيْرًا فَرَجَعْنَا بِثَلَاثَةَ
عَشَرَ بَعِيْرًا.
ইবনু
'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাজদের দিকে একটি সৈন্যদল প্রেরিত
হয়েছিল, তাতে আমিও ছিলাম। আমাদের সবার ভাগে (গানীমাতের) বারোটি করে উট পৌঁছল। আর
একটি একটি করে উট অধিকও দেয়া হল। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে
পাঠিয়েছিলেন আর আমরা তেরোটি করে উট নিয়ে ফিরে আসলাম। [৩১৩৪] (আ.প্র. ৩৯৯৫, ই.ফা.
৩৯৯৯)
৬৪/৫৯. অধ্যায়ঃ
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক খালিদ ইবনু ওয়ালিদ
(রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে জাযীমাহ্র দিকে প্রেরণ
৪৩৩৯
مَحْمُوْدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ ح و
حَدَّثَنِيْ نُعَيْمٌ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ
الزُّهْرِيِّ عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم خَالِدَ بْنَ الْوَلِيْدِ إِلَى بَنِيْ جَذِيْمَةَ فَدَعَاهُمْ إِلَى
الإِسْلَامِ فَلَمْ يُحْسِنُوْا أَنْ يَقُوْلُوْا أَسْلَمْنَا فَجَعَلُوْا
يَقُوْلُوْنَ صَبَأْنَا صَبَأْنَا فَجَعَلَ خَالِدٌ يَقْتُلُ مِنْهُمْ وَيَأْسِرُ
وَدَفَعَ إِلَى كُلِّ رَجُلٍ مِنَّا أَسِيْرَهُ حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمٌ أَمَرَ
خَالِدٌ أَنْ يَقْتُلَ كُلُّ رَجُلٍ مِنَّا أَسِيْرَهُ فَقُلْتُ وَاللهِ لَا
أَقْتُلُ أَسِيْرِيْ وَلَا يَقْتُلُ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِيْ أَسِيْرَهُ حَتَّى
قَدِمْنَا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرْنَاهُ فَرَفَعَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم يَدَهُ فَقَالَ اللهُمَّ إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا
صَنَعَ خَالِدٌ مَرَّتَيْنِ.
সালিমের
পিতা ['আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) এক অভিযানে খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বানী জাযিমার
বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। (সেখানে পৌঁছে) খালিদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাদেরকে
ইসলামের দা'ওয়াত দিলেন। কিন্তু 'আমরা ইসলাম কবূল করলাম', এ কথাটি তারা ভালভাবে
বুঝিয়ে বলতে পারছিল না। তাই তারা বলতে লাগল, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করলাম, আমরা
স্বধর্ম ত্যাগ করলাম। খালিদ তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করতে থাকলেন এবং আমাদের
প্রত্যকের কাছে বন্দীদেরকে সোপর্দ করতে থাকলেন। অবশেষে একদিন তিনি আদেশ দিলেন
আমাদের সবাই যেন নিজ নিজ বন্দীকে হত্যা করে ফেলি। আমি বললাম, আল্লাহ্র কসম! আমি
আমার বন্দীকে হত্যা করব না। আর আমার সঙ্গীদের কেউই তাঁর বন্দীকে হত্যা করবে না।
অবশেষে আমরা নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে ফিরে আসলাম। আমরা তাঁর
কাছে এ ব্যাপারটি উল্লেখ করলাম। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তখন দু'হাত
তুলে বললেন, হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তার দায় থেকে মুক্ত হওয়ার কথা তোমার
নিকট জ্ঞাপন করছি। এ কথাটি তিনি দু'বার বললেন। [৭১৮৯] (আ.প্র. ৩৯৯৬, ই.ফা. ৪০০০)
৬৪/৬০. অধ্যায়ঃ
'আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা সাহমী এবং আলকামাহ ইবনু মুজাযযিল মুদাল্লিজীর
সৈন্যাভিযান, যাকে আনসারদের সৈন্যাভিযানও বলা হয়
৪৩৪০
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ قَالَ
حَدَّثَنِيْ سَعْدُ بْنُ عُبَيْدَةَ عَنْ أَبِيْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَلِيٍّ
رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سَرِيَّةً
فَاسْتَعْمَلَ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يُطِيْعُوْهُ فَغَضِبَ
فَقَالَ أَلَيْسَ أَمَرَكُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ تُطِيْعُوْنِيْ
قَالُوْا بَلَى قَالَ فَاجْمَعُوْا لِيْ حَطَبًا فَجَمَعُوْا فَقَالَ أَوْقِدُوْا
نَارًا فَأَوْقَدُوْهَا فَقَالَ ادْخُلُوْهَا فَهَمُّوْا وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ
يُمْسِكُ بَعْضًا وَيَقُوْلُوْنَ فَرَرْنَا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
مِنْ النَّارِ فَمَا زَالُوْا حَتَّى خَمَدَتْ النَّارُ فَسَكَنَ غَضَبُهُ
فَبَلَغَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَوْ دَخَلُوْهَا مَا خَرَجُوْا
مِنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوْفِ.
আলী
(ইবনু আবূ ত্বলিব) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং আনসারদের এক ব্যক্তিকে তার সেনাপতি
নিযুক্ত করে তিনি তাদেরকে তাঁর (সেনাপতির) আনুগত্য করার নির্দেশ দেন। (কোন কারণে)
আমীর রাগান্বিত হয়ে যান। তিনি বললেন, নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কি
তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করতে নির্দেশ দেননি? তাঁরা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন,
তাহলে তোমরা কিছু কাঠ সংগ্রহ করে আনো। তাঁরা কাঠ সংগ্রহ করলেন। তিনি বললেন,
এগুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও। তাঁরা ওতে আগুন লাগালেন। তখন তিনি বললেন, এবার তোমরা
সকলে এ আগুনে প্রবেশ কর। তাঁরা আগুনে প্রবেশ করতে সংকল্প করে ফেললেন। কিন্তু তাদের
কয়েকজন অন্যদের বাধা দিয়ে বলতে লাগলেন, আগুন থেকেই তো আমরা পালিয়ে গিয়ে নবী (সল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এভাবে ইতস্তত করতে করতে আগুন নিভে
গেল এবং তার ক্রোধও ঠান্ডা হল। এরপর এ সংবাদ নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম)- এর কাছে পৌঁছল তিনি বললেন, যদি তারা আগুনে ঝাঁপ দিত তা হলে ক্বিয়ামাতের
দিন পর্যন্ত এ আগুন থেকে বের হতে পারত না। আনুগত্য (করতে হবে) কেবল সৎ কাজের।
(আ.প্র. ৩৯৯৭, ই.ফা. ৪০০১)
৬৪/৬১. অধ্যায়ঃ
বিদায় হাজ্জের পূর্বে আবূ মূসা আশ'আরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) এবং
মু'আয [ইবনু জাবল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)]- কে ইয়ামানে প্রেরণ
৪৩৪১
مُوْسَى حَدَّثَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ عَنْ
أَبِيْ بُرْدَةَ قَالَ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَبَا مُوْسَى
وَمُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ إِلَى الْيَمَنِ قَالَ وَبَعَثَ كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا
عَلَى مِخْلَافٍ قَالَ وَالْيَمَنُ مِخْلَافَانِ ثُمَّ قَالَ يَسِّرَا وَلَا
تُعَسِّرَا وَبَشِّرَا وَلَا تُنَفِّرَا فَانْطَلَقَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا
إِلَى عَمَلِهِ وَكَانَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا إِذَا سَارَ فِيْ أَرْضِهِ كَانَ
قَرِيْبًا مِنْ صَاحِبِهِ أَحْدَثَ بِهِ عَهْدًا فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَسَارَ
مُعَاذٌ فِيْ أَرْضِهِ قَرِيْبًا مِنْ صَاحِبِهِ أَبِيْ مُوْسَى فَجَاءَ يَسِيْرُ
عَلَى بَغْلَتِهِ حَتَّى انْتَهَى إِلَيْهِ وَإِذَا هُوَ جَالِسٌ وَقَدْ اجْتَمَعَ
إِلَيْهِ النَّاسُ وَإِذَا رَجُلٌ عِنْدَهُ قَدْ جُمِعَتْ يَدَاهُ إِلَى عُنُقِهِ
فَقَالَ لَهُ مُعَاذٌ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ قَيْسٍ أَيُّمَ هَذَا قَالَ هَذَا
رَجُلٌ كَفَرَ بَعْدَ إِسْلَامِهِ قَالَ لَا أَنْزِلُ حَتَّى يُقْتَلَ قَالَ
إِنَّمَا جِيْءَ بِهِ لِذَلِكَ فَانْزِلْ قَالَ مَا أَنْزِلُ حَتَّى يُقْتَلَ
فَأَمَرَ بِهِ فَقُتِلَ ثُمَّ نَزَلَ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللهِ كَيْفَ تَقْرَأُ
الْقُرْآنَ قَالَ أَتَفَوَّقُهُ تَفَوُّقًا قَالَ فَكَيْفَ تَقْرَأُ أَنْتَ يَا
مُعَاذُ قَالَ أَنَامُ أَوَّلَ اللَّيْلِ فَأَقُوْمُ وَقَدْ قَضَيْتُ جُزْئِيْ
مِنْ النَّوْمِ فَأَقْرَأُ مَا كَتَبَ اللهُ لِيْ فَأَحْتَسِبُ نَوْمَتِيْ كَمَا
أَحْتَسِبُ قَوْمَتِي.
আবূ
বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আবূ মূসা এবং মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠালেন। বর্ণনাকারী
বলেন, তৎকালে ইয়ামানে দু’টি প্রদেশ ছিল। তিনি তাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে
পাঠিয়ে বলে দিলেন, তোমরা কোমল হবে, কঠোর হবে না। অনীহা সৃষ্টি হতে দেবে না। এরপর
তাঁরা দু’জনে নিজ নিজ কর্ম এলাকায় চলে গেলেন। আবূ বুরদা (রাঃ) বললেন, তাঁদের
প্রত্যেকেই যখন নিজ নিজ এলাকায় সফর করতেন এবং অন্যজনের কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে
যেতেন তখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় করতেন। এভাবে মু‘আয (রাঃ) একবার
তাঁর এলাকায় এমন স্থানে সফর করছিলেন, যে স্থানটি তাঁর সাথী আবূ মূসা (রাঃ)-এর
এলাকার নিকটবর্তী ছিল। সুযোগ পেয়ে তিনি খচ্চরের পিঠে চড়ে (আবূ মূসার এলাকায়) পৌঁছে
গেলেন। তখন তিনি দেখলেন যে, আবূ মূসা (রাঃ) বসে আছেন আর তাঁর চারপাশে অনেক লোক
জমায়েত হয়ে আছে। আরো দেখলেন, পাশে এক লোককে তার গলার সঙ্গে উভয় হাত বেঁধে রাখা
হয়েছে। মু‘আয (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (আবূ মূসা)। এ
লোকটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, এ লোকটি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মু‘আয
(রাঃ) বললেন, তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি সাওয়ারী থেকে নামব না। আবূ মূসা (রাঃ)
বললেন, এ উদ্দেশেই তাকে আনা হয়েছে, কাজেই আপনি নামুন। তিনি বললেন, না তাকে হত্যা
না করা পর্যন্ত আমি নামব না। ফলে আবূ মূসা (রাঃ) হুকুম করলেন এবং লোকটিকে হত্যা
করা হল। এরপর মু‘আয (রাঃ) নামলেন। মু‘আয (রাঃ) বললেন, ওহে ‘আবদুল্লাহ! আপনি কীভাবে
কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন, আমি (দিবা-রাত্রি) কিছুক্ষণ পরপর কিছু অংশ করে
তিলাওয়াত করে থাকি। তিনি বললেন, আর আপনি কীভাবে তিলাওয়াত করেন, হে মু‘আয? উত্তরে
তিনি বললেন, আমি রাতের প্রথমাংশে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে আমি
উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তাওফীক দান করেন তিলাওয়াত করতে থাকি। এতে আমি
আমার নিদ্রার অংশকেও (সওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি, আমি আমার দাঁড়িয়ে তিলাওয়াতকে
যেমনি (সাওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি। [৪৩৪৫; মুসলিম ৩২/৩, হাঃ ১৭৩৩, আহমাদ ১৯৭৬৩]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০০২)
৪৩৪২
مُوْسَى حَدَّثَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ عَنْ
أَبِيْ بُرْدَةَ قَالَ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَبَا مُوْسَى
وَمُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ إِلَى الْيَمَنِ قَالَ وَبَعَثَ كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا
عَلَى مِخْلَافٍ قَالَ وَالْيَمَنُ مِخْلَافَانِ ثُمَّ قَالَ يَسِّرَا وَلَا
تُعَسِّرَا وَبَشِّرَا وَلَا تُنَفِّرَا فَانْطَلَقَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا
إِلَى عَمَلِهِ وَكَانَ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا إِذَا سَارَ فِيْ أَرْضِهِ كَانَ
قَرِيْبًا مِنْ صَاحِبِهِ أَحْدَثَ بِهِ عَهْدًا فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَسَارَ
مُعَاذٌ فِيْ أَرْضِهِ قَرِيْبًا مِنْ صَاحِبِهِ أَبِيْ مُوْسَى فَجَاءَ يَسِيْرُ
عَلَى بَغْلَتِهِ حَتَّى انْتَهَى إِلَيْهِ وَإِذَا هُوَ جَالِسٌ وَقَدْ اجْتَمَعَ
إِلَيْهِ النَّاسُ وَإِذَا رَجُلٌ عِنْدَهُ قَدْ جُمِعَتْ يَدَاهُ إِلَى عُنُقِهِ
فَقَالَ لَهُ مُعَاذٌ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ قَيْسٍ أَيُّمَ هَذَا قَالَ هَذَا
رَجُلٌ كَفَرَ بَعْدَ إِسْلَامِهِ قَالَ لَا أَنْزِلُ حَتَّى يُقْتَلَ قَالَ
إِنَّمَا جِيْءَ بِهِ لِذَلِكَ فَانْزِلْ قَالَ مَا أَنْزِلُ حَتَّى يُقْتَلَ
فَأَمَرَ بِهِ فَقُتِلَ ثُمَّ نَزَلَ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللهِ كَيْفَ تَقْرَأُ
الْقُرْآنَ قَالَ أَتَفَوَّقُهُ تَفَوُّقًا قَالَ فَكَيْفَ تَقْرَأُ أَنْتَ يَا
مُعَاذُ قَالَ أَنَامُ أَوَّلَ اللَّيْلِ فَأَقُوْمُ وَقَدْ قَضَيْتُ جُزْئِيْ
مِنْ النَّوْمِ فَأَقْرَأُ مَا كَتَبَ اللهُ لِيْ فَأَحْتَسِبُ نَوْمَتِيْ كَمَا
أَحْتَسِبُ قَوْمَتِي.
আবূ
বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আবূ মূসা এবং মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠালেন। বর্ণনাকারী
বলেন, তৎকালে ইয়ামানে দু’টি প্রদেশ ছিল। তিনি তাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে
পাঠিয়ে বলে দিলেন, তোমরা কোমল হবে, কঠোর হবে না। অনীহা সৃষ্টি হতে দেবে না। এরপর
তাঁরা দু’জনে নিজ নিজ কর্ম এলাকায় চলে গেলেন। আবূ বুরদা (রাঃ) বললেন, তাঁদের
প্রত্যেকেই যখন নিজ নিজ এলাকায় সফর করতেন এবং অন্যজনের কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে
যেতেন তখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় করতেন। এভাবে মু‘আয (রাঃ) একবার
তাঁর এলাকায় এমন স্থানে সফর করছিলেন, যে স্থানটি তাঁর সাথী আবূ মূসা (রাঃ)-এর
এলাকার নিকটবর্তী ছিল। সুযোগ পেয়ে তিনি খচ্চরের পিঠে চড়ে (আবূ মূসার এলাকায়) পৌঁছে
গেলেন। তখন তিনি দেখলেন যে, আবূ মূসা (রাঃ) বসে আছেন আর তাঁর চারপাশে অনেক লোক
জমায়েত হয়ে আছে। আরো দেখলেন, পাশে এক লোককে তার গলার সঙ্গে উভয় হাত বেঁধে রাখা
হয়েছে। মু‘আয (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (আবূ মূসা)। এ
লোকটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, এ লোকটি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মু‘আয
(রাঃ) বললেন, তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি সাওয়ারী থেকে নামব না। আবূ মূসা (রাঃ)
বললেন, এ উদ্দেশেই তাকে আনা হয়েছে, কাজেই আপনি নামুন। তিনি বললেন, না তাকে হত্যা
না করা পর্যন্ত আমি নামব না। ফলে আবূ মূসা (রাঃ) হুকুম করলেন এবং লোকটিকে হত্যা
করা হল। এরপর মু‘আয (রাঃ) নামলেন। মু‘আয (রাঃ) বললেন, ওহে ‘আবদুল্লাহ! আপনি কীভাবে
কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন, আমি (দিবা-রাত্রি) কিছুক্ষণ পরপর কিছু অংশ করে
তিলাওয়াত করে থাকি। তিনি বললেন, আর আপনি কীভাবে তিলাওয়াত করেন, হে মু‘আয? উত্তরে
তিনি বললেন, আমি রাতের প্রথমাংশে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে আমি
উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ আমাকে যতটুকু তাওফীক দান করেন তিলাওয়াত করতে থাকি। এতে আমি
আমার নিদ্রার অংশকেও (সওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি, আমি আমার দাঁড়িয়ে তিলাওয়াতকে
যেমনি (সাওয়াবের বিষয় বলে) মনে করি। [৪৩৪৫; মুসলিম ৩২/৩, হাঃ ১৭৩৩, আহমাদ ১৯৭৬৩]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০০২)
৪৩৪৩
إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا خَالِدٌ عَنْ الشَّيْبَانِيِّ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ
أَبِيْ بُرْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ فَسَأَلَهُ
عَنْ أَشْرِبَةٍ تُصْنَعُ بِهَا فَقَالَ وَمَا هِيَ قَالَ الْبِتْعُ وَالْمِزْرُ
فَقُلْتُ لِأَبِيْ بُرْدَةَ مَا الْبِتْعُ قَالَ نَبِيْذُ الْعَسَلِ وَالْمِزْرُ
نَبِيْذُ الشَّعِيْرِ فَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ رَوَاهُ جَرِيْرٌ وَعَبْدُ
الْوَاحِدِ عَنْ الشَّيْبَانِيِّ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ.
আবূ
মূসা আশ'আরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁকে
(আবূ মূসাকে গভর্নর নিযুক্ত করে) ইয়ামানে পাঠিয়েছেন। তখন তিনি ইয়ামানে তৈরি করা হয়
এমন কতিপয় শরাব সম্পর্কে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করলেন।
তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, ঐগুলো কী কী? আবূ মূসা (রাযিআল্লাহু
তাআলা আনহু) বললেন, তা হল বিত্উ ও মিয্র শরাব। বর্ণনাকারী সা'ঈদ (রহঃ) বলেন, আমি
আবূ বুরদাহকে জিজ্ঞেস করলাম বিত্উ কী? তিনি বললেন, বিত্উ হল মধু থেকে গ্যাঁজানো
রস আর মিয্র হল যবের গ্যাঁজানো রস। (সা'ঈদ বলেন) তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া
সাল্লাম) বললেন, সকল নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম। হাদীসটি জারীর এবং 'আবদুল ওয়াহিদ
শাইবানী (রহঃ)- এর মাধ্যমে আবূ বুরদা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সূত্রেও বর্ণনা
করেছেন। [২২৬১] (আ.প্র. ৩৯৯৯, ই.ফা. ৪০০৩)
৪৩৪৪
مُسْلِمٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا سَعِيْدُ بْنُ أَبِيْ بُرْدَةَ
عَنْ أَبِيْهِ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم جَدَّهُ أَبَا مُوْسَى
وَمُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ يَسِّرَا وَلَا تُعَسِّرَا وَبَشِّرَا وَلَا
تُنَفِّرَا وَتَطَاوَعَا فَقَالَ أَبُوْ مُوْسَى يَا نَبِيَّ اللهِ إِنَّ
أَرْضَنَا بِهَا شَرَابٌ مِنْ الشَّعِيْرِ الْمِزْرُ وَشَرَابٌ مِنَ الْعَسَلِ
الْبِتْعُ فَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ فَانْطَلَقَا فَقَالَ مُعَاذٌ لِأَبِيْ
مُوْسَى كَيْفَ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ قَالَ قَائِمًا وَقَاعِدًا وَعَلَى
رَاحِلَتِيْ وَأَتَفَوَّقُهُ تَفَوُّقًا قَالَ أَمَّا أَنَا فَأَنَامُ وَأَقُوْمُ
فَأَحْتَسِبُ نَوْمَتِيْ كَمَا أَحْتَسِبُ قَوْمَتِيْ وَضَرَبَ فُسْطَاطًا
فَجَعَلَا يَتَزَاوَرَانِ فَزَارَ مُعَاذٌ أَبَا مُوْسَى فَإِذَا رَجُلٌ مُوْثَقٌ
فَقَالَ مَا هَذَا فَقَالَ أَبُوْ مُوْسَى يَهُوْدِيٌّ أَسْلَمَ ثُمَّ ارْتَدَّ
فَقَالَ مُعَاذٌ لَأَضْرِبَنَّ عُنُقَهُ تَابَعَهُ الْعَقَدِيُّ وَوَهْبٌ عَنْ
شُعْبَةَ وَقَالَ وَكِيْعٌ وَالْنَّضْرُ وَأَبُوْ دَاوُدَ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ
سَعِيْدٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَوَاهُ
جَرِيْرُ بْنُ عَبْدِ الْحَمِيْدِ عَنْ الشَّيْبَانِيِّ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ.
আবূ
বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তার দাদা আবূ মূসা ও মু‘আয
(রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শাসক হিসেবে) ইয়ামানে পাঠালেন। এ সময়
তিনি বললেন, তোমরা লোকজনের সঙ্গে সহজ আচরণ করবে। কখনো কঠিন আচরণ করবে না। মানুষের
মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করবে। কখনো তাদের মনে অনীহা সৃষ্টি করবে না
এবং একে অপরকে মেনে চলবে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আমাদের এলাকায়
মিয্র নামের এক প্রকার শরাব যব থেকে তৈরি করা হয় আর বিত্উ নামের এক প্রকার শরাব
মধু থেকে তৈরি করা হয় (এগুলো সম্পর্কে হুকুম দিন)। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, নেশা সৃষ্টিকারী সকল বস্তুই হারাম। এরপর দু’জনেই চলে গেলেন।
মু‘আয আবূ মূসাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি উত্তর
দিলেন, দাঁড়িয়ে, বসে, সাওয়ারীর পিঠে সাওয়ার অবস্থায় এবং কিছুক্ষণ পরপরই তিলাওয়াত
করি। তিনি বললেন, আর আমি রাতের প্রথমদিকে ঘুমিয়ে পড়ি তারপর (শেষ ভাগে তিলাওয়াতের
জন্য সালাতে) দাঁড়িয়ে যাই। এভাবে আমি আমার নিদ্রার সময়কেও আমার সালাতে দাঁড়ানোর
মতই সওয়াবের বিষয় মনে করে থাকি। এরপর (উভয়েই নিজ শাসন এলাকায়) তাঁবু খাটালেন এবং
পরস্পরের সাক্ষাৎ বজায় রেখে চললেন। (এক সময়) মু‘আয (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ)-এর
সাক্ষাতে এসে দেখলেন, সেখানে এক ব্যক্তি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকটি কে? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, লোকটি ইয়াহূদী ছিল, ইসলাম গ্রহণ
করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মু‘আয (রাঃ) বললেন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেবো। শু‘বাহ
থেকে আকাদী এবং ওয়াহ্ব এভাবেই বর্ণনা করেছেন। আর ওকী (রহ.) নযর ও আবূ দাঊদ (রহ.) এ
হাদীসের সানাদে শু’বাহ (রহ.) সা‘ঈদ-সাঈদের পিতা-সাঈদের দাদা নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি জারীর ইবনু ‘আবদুল হামীদ (রহ.)
শাইবানী (রহ.)-এর মাধ্যমে আবূ বুরদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। [২২৬১, ৪৩৪২] (আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৪০০০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০০৪)
৪৩৪৫
مُسْلِمٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا سَعِيْدُ بْنُ أَبِيْ بُرْدَةَ
عَنْ أَبِيْهِ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم جَدَّهُ أَبَا مُوْسَى
وَمُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ يَسِّرَا وَلَا تُعَسِّرَا وَبَشِّرَا وَلَا
تُنَفِّرَا وَتَطَاوَعَا فَقَالَ أَبُوْ مُوْسَى يَا نَبِيَّ اللهِ إِنَّ
أَرْضَنَا بِهَا شَرَابٌ مِنْ الشَّعِيْرِ الْمِزْرُ وَشَرَابٌ مِنَ الْعَسَلِ
الْبِتْعُ فَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ فَانْطَلَقَا فَقَالَ مُعَاذٌ لِأَبِيْ
مُوْسَى كَيْفَ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ قَالَ قَائِمًا وَقَاعِدًا وَعَلَى
رَاحِلَتِيْ وَأَتَفَوَّقُهُ تَفَوُّقًا قَالَ أَمَّا أَنَا فَأَنَامُ وَأَقُوْمُ
فَأَحْتَسِبُ نَوْمَتِيْ كَمَا أَحْتَسِبُ قَوْمَتِيْ وَضَرَبَ فُسْطَاطًا
فَجَعَلَا يَتَزَاوَرَانِ فَزَارَ مُعَاذٌ أَبَا مُوْسَى فَإِذَا رَجُلٌ مُوْثَقٌ
فَقَالَ مَا هَذَا فَقَالَ أَبُوْ مُوْسَى يَهُوْدِيٌّ أَسْلَمَ ثُمَّ ارْتَدَّ
فَقَالَ مُعَاذٌ لَأَضْرِبَنَّ عُنُقَهُ تَابَعَهُ الْعَقَدِيُّ وَوَهْبٌ عَنْ
شُعْبَةَ وَقَالَ وَكِيْعٌ وَالْنَّضْرُ وَأَبُوْ دَاوُدَ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ
سَعِيْدٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَوَاهُ
جَرِيْرُ بْنُ عَبْدِ الْحَمِيْدِ عَنْ الشَّيْبَانِيِّ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ.
আবূ
বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তার দাদা আবূ মূসা ও মু‘আয
(রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শাসক হিসেবে) ইয়ামানে পাঠালেন। এ সময়
তিনি বললেন, তোমরা লোকজনের সঙ্গে সহজ আচরণ করবে। কখনো কঠিন আচরণ করবে না। মানুষের
মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করবে। কখনো তাদের মনে অনীহা সৃষ্টি করবে না
এবং একে অপরকে মেনে চলবে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আমাদের এলাকায়
মিয্র নামের এক প্রকার শরাব যব থেকে তৈরি করা হয় আর বিত্উ নামের এক প্রকার শরাব
মধু থেকে তৈরি করা হয় (এগুলো সম্পর্কে হুকুম দিন)। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, নেশা সৃষ্টিকারী সকল বস্তুই হারাম। এরপর দু’জনেই চলে গেলেন।
মু‘আয আবূ মূসাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি উত্তর
দিলেন, দাঁড়িয়ে, বসে, সাওয়ারীর পিঠে সাওয়ার অবস্থায় এবং কিছুক্ষণ পরপরই তিলাওয়াত
করি। তিনি বললেন, আর আমি রাতের প্রথমদিকে ঘুমিয়ে পড়ি তারপর (শেষ ভাগে তিলাওয়াতের
জন্য সালাতে) দাঁড়িয়ে যাই। এভাবে আমি আমার নিদ্রার সময়কেও আমার সালাতে দাঁড়ানোর
মতই সওয়াবের বিষয় মনে করে থাকি। এরপর (উভয়েই নিজ শাসন এলাকায়) তাঁবু খাটালেন এবং
পরস্পরের সাক্ষাৎ বজায় রেখে চললেন। (এক সময়) মু‘আয (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ)-এর
সাক্ষাতে এসে দেখলেন, সেখানে এক ব্যক্তি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকটি কে? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, লোকটি ইয়াহূদী ছিল, ইসলাম গ্রহণ
করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। মু‘আয (রাঃ) বললেন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেবো। শু‘বাহ
থেকে আকাদী এবং ওয়াহ্ব এভাবেই বর্ণনা করেছেন। আর ওকী (রহ.) নযর ও আবূ দাঊদ (রহ.) এ
হাদীসের সানাদে শু’বাহ (রহ.) সা‘ঈদ-সাঈদের পিতা-সাঈদের দাদা নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি জারীর ইবনু ‘আবদুল হামীদ (রহ.)
শাইবানী (রহ.)-এর মাধ্যমে আবূ বুরদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। [২২৬১, ৪৩৪২] (আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৪০০০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০০৪)
৪৩৪৬
عَبَّاسُ بْنُ الْوَلِيْدِ هُوَ النَّرْسِيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ
عَنْ أَيُّوْبَ بْنِ عَائِذٍ حَدَّثَنَا قَيْسُ بْنُ مُسْلِمٍ قَالَ سَمِعْتُ
طَارِقَ بْنَ شِهَابٍ يَقُوْلُ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيُّ رَضِيَ
اللهُ عَنْهُ قَالَ بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى أَرْضِ
قَوْمِيْ فَجِئْتُ وَرَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُنِيخٌ بِالأَبْطَحِ
فَقَالَ أَحَجَجْتَ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ قَيْسٍ قُلْتُ نَعَمْ يَا رَسُوْلَ
اللهِ قَالَ كَيْفَ قُلْتَ قَالَ قُلْتُ لَبَّيْكَ إِهْلَالًا كَإِهْلَالِكَ قَالَ
فَهَلْ سُقْتَ مَعَكَ هَدْيًا قُلْتُ لَمْ أَسُقْ قَالَ فَطُفْ بِالْبَيْتِ
وَاسْعَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ حِلَّ فَفَعَلْتُ حَتَّى مَشَطَتْ
لِي امْرَأَةٌ مِنْ نِسَاءِ بَنِيْ قَيْسٍ وَمَكُثْنَا بِذَلِكَ حَتَّى
اسْتُخْلِفَ عُمَرُ
আবূ
মূসা আশ'আরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়া সাল্লাম) আমাকে আমার গোত্রের এলাকায় (শাসক করে) পাঠালেন। (বিদায় হাজ্জের বছর)
রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আবতাহ নামক স্থানে অবস্থান করার সময়
আমি তাঁর সাক্ষাতে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে 'আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! তুমি
ইহরাম বেঁধেছ কি? আমি বললাম, জী হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি বললেন, (তালবিয়া)
কীভাবে বলেছিলে? আমি উত্তর দিলাম, আমি এরূপ বলেছি যে, হে আল্লাহ! আমি হাযির হয়েছি
এবং আপনার [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর] ইহরামের মতো ইহ্রাম
বাঁধলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ কর এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী আদায়
কর, তারপর হালাল হয়ে যাও। আমি সে রকমই করলাম। এমনকি বানী কাইসের জনৈকা মহিলা আমার
চুল পর্যন্ত আঁচড়িয়ে দিয়েছিল। আর আমরা 'উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর খিলাফত
কাল পর্যন্ত এভাবেই 'আমাল করতে থাকলাম। [১৫৫৯] (আ.প্র. ৪০০১, ই.ফা. ৪০০৫)
৪৩৪৭
حِبَّانُ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ عَنْ زَكَرِيَّاءَ بْنِ إِسْحَاقَ عَنْ
يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ صَيْفِيٍّ عَنْ أَبِيْ مَعْبَدٍ مَوْلَى ابْنِ
عَبَّاسٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِيْنَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ
إِنَّكَ سَتَأْتِيْ قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَإِذَا جِئْتَهُمْ
فَادْعُهُمْ إِلَى أَنْ يَشْهَدُوْا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ
مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ فَإِنْ هُمْ طَاعُوْا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ
أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِيْ كُلِّ يَوْمٍ
وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ طَاعُوْا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ
فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى
فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ طَاعُوْا لَكَ بِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ
أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُوْمِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ
وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ.
قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ طَوَّعَتْ طَاعَتْ وَأَطَاعَتْ لُغَةٌ طِعْتُ وَطُعْتُ وَأَطَعْتُ.
قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ طَوَّعَتْ طَاعَتْ وَأَطَاعَتْ لُغَةٌ طِعْتُ وَطُعْتُ وَأَطَعْتُ.
ইবনু
'আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবনু জাবালকে ইয়ামানে পাঠানোর সময় তাঁকে বললেন, অচিরেই তুমি আহলে
কিতাবদের এক গোত্রের কাছে যাচ্ছ। যখন তুমি তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ
দা‘ওয়াত দেবে তারা যেন সাক্ষ্য দেয় যে ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’, এরপর তারা যদি তোমার এ কথা মেনে
নেয়, তখন তাদেরকে এ কথা জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তোমাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচবার
সালাত ফরয করে দিয়েছেন। তারা তোমার এ কথা মেনে নিলে তুমি তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে,
আল্লাহ তোমাদের উপর যাকাত ফরয করে দিয়েছেন, যা তাদের বিত্তশালীদের নিকট হতে গ্রহণ
করা হবে এবং তাদের অভাবগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে
নেয়, তা হলে (যাকাত গ্রহণ কালে) তাদের মালের উৎকৃষ্টতম অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত
থাকবে। মাযলুমদের বদদু‘আকে ভয় করবে, কেননা মাযলুমের বদদু‘আ এবং আল্লাহর মাঝখানে
কোন আড়াল থাকে না। [১৩৯৫] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০০২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০০৬)
আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহ.)] বলেন, طَوَّعَتْ، طَاعَتْ এবং أَطَاعَتْ সমার্থবোধক শব্দ, طِعْتُ، طُعْتُ এবং أَطَعْتُ -এগুলোর একই অর্থ।
আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহ.)] বলেন, طَوَّعَتْ، طَاعَتْ এবং أَطَاعَتْ সমার্থবোধক শব্দ, طِعْتُ، طُعْتُ এবং أَطَعْتُ -এগুলোর একই অর্থ।
৪৩৪৮
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ حَبِيْبِ بْنِ أَبِيْ
ثَابِتٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُوْنٍ أَنَّ مُعَاذًا
رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَمَّا قَدِمَ الْيَمَنَ صَلَّى بِهِمْ الصُّبْحَ فَقَرَأَ
{وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا} فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ لَقَدْ
قَرَّتْ عَيْنُ أُمِّ إِبْرَاهِيْمَ.
زَادَ مُعَاذٌ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ حَبِيْبٍ عَنْ سَعِيْدٍ عَنْ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَرَأَ مُعَاذٌ فِيْ صَلَاةِ الصُّبْحِ سُوْرَةَ النِّسَاءِ فَلَمَّا قَالَ {وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا} قَالَ رَجُلٌ خَلْفَهُ قَرَّتْ عَيْنُ أُمِّ إِبْرَاهِيْمَ.
زَادَ مُعَاذٌ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ حَبِيْبٍ عَنْ سَعِيْدٍ عَنْ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَرَأَ مُعَاذٌ فِيْ صَلَاةِ الصُّبْحِ سُوْرَةَ النِّسَاءِ فَلَمَّا قَالَ {وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا} قَالَ رَجُلٌ خَلْفَهُ قَرَّتْ عَيْنُ أُمِّ إِبْرَاهِيْمَ.
আম্র
ইবনু মাইমূন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মু‘আয (ইবনু জাবাল) (রাঃ) ইয়ামানে পৌঁছার পর
লোকজনকে নিয়ে ফাজ্রের সালাত আদায় করলেন। তাতে তিনি وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا
অর্থাৎ আল্লাহ ইবরাহীমকে বন্ধু বানিয়ে নিলেন- (সূরাহ আন্-নিসা ৪/১২৫) আয়াতটি
তিলাওয়াত করলেন। তখন কাওমের এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইবরাহীমের মায়ের চোখ ঠান্ডা হয়ে
গেছে।
মু‘আয (রাঃ) আরও অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন ‘আমর (রাঃ) থেকে। নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (ইবনু জাবাল) (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠালেন। সেখানে মু‘আয (রাঃ) ফাজ্রের সালাতে সূরাহ নিসা তিলাওয়াত করলেন। যখন তিনি পড়লেন وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا তখন তাঁর পেছনে এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইবরাহীমের মায়ের চোখ ঠান্ডা হয়ে গেছে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০০৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০০৭)
মু‘আয (রাঃ) আরও অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন ‘আমর (রাঃ) থেকে। নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (ইবনু জাবাল) (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠালেন। সেখানে মু‘আয (রাঃ) ফাজ্রের সালাতে সূরাহ নিসা তিলাওয়াত করলেন। যখন তিনি পড়লেন وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا তখন তাঁর পেছনে এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইবরাহীমের মায়ের চোখ ঠান্ডা হয়ে গেছে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০০৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০০৭)
৬৪/৬২. অধ্যায়ঃ
বিদায় হাজ্জের পূর্বে 'আলী ইবনু আবু ত্বলিব এবং খালিদ ইবনু ওয়ালিদ
(রা.)- কে ইয়ামানে প্রেরণ
৪৩৪৯
أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ حَدَّثَنَا شُرَيْحُ بْنُ مَسْلَمَةَ حَدَّثَنَا
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ يُوْسُفَ بْنِ إِسْحَاقَ بْنِ أَبِيْ إِسْحَاقَ حَدَّثَنِيْ
أَبِيْ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بَعَثَنَا
رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَعَ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيْدِ إِلَى الْيَمَنِ
قَالَ ثُمَّ بَعَثَ عَلِيًّا بَعْدَ ذَلِكَ مَكَانَهُ فَقَالَ مُرْ أَصْحَابَ
خَالِدٍ مَنْ شَاءَ مِنْهُمْ أَنْ يُعَقِّبَ مَعَكَ فَلْيُعَقِّبْ وَمَنْ شَاءَ
فَلْيُقْبِلْ فَكُنْتُ فِيْمَنْ عَقَّبَ مَعَهُ قَالَ فَغَنِمْتُ أَوَاقٍ ذَوَاتِ
عَدَدٍ.
আহমাদ
ইবনু 'উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ)-
এর সঙ্গে ইয়ামানে পাঠালেন। বারাআ (রাঃ) বলেন, তিনি খালিদ (রাঃ)- এর স্থলে 'আলী
(রাঃ)- কে পাঠিয়ে বলে দিলেন যে, খালিদ (রাঃ)- এর সাথীদেরকে বলবে, তাদের মধ্যে যে
তোমার সঙ্গে (ইয়ামানের দিকে) যেতে ইচ্ছা করে সে যেন তোমার সাথে চলে যায়, আর যে
(মদিনায়) ফিরে যেতে চায় সে যেন ফিরে যায়। (রাবী বলেন) তখন আমি 'আলী (রাঃ)- এর
অনুগামীদের মধ্যে থাকলাম। ফলে আমি গানীমাত হিসেবে অনেক পরিমাণ উকিয়া [৭৮] লাভ
করলাম। (আ.প্র. ৪০০৪, ই.ফা. ৪০০৮)
[৭৮]
এক উকিয়া = ৪০ দিরহাম সমপরিমাণ।
৪৩৫০
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ حَدَّثَنَا
عَلِيُّ بْنُ سُوَيْدِ بْنِ مَنْجُوْفٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ
أَبِيْهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
عَلِيًّا إِلَى خَالِدٍ لِيَقْبِضَ الْخُمُسَ وَكُنْتُ أُبْغِضُ عَلِيًّا وَقَدْ
اغْتَسَلَ فَقُلْتُ لِخَالِدٍ أَلَا تَرَى إِلَى هَذَا فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ يَا بُرَيْدَةُ
أَتُبْغِضُ عَلِيًّا فَقُلْتُ نَعَمْ قَالَ لَا تُبْغِضْهُ فَإِنَّ لَهُ فِي
الْخُمُسِ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ.
বুরাইদাহ
(রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) 'আলী (রাঃ)- কে খুমুস (গানীমাতের এক-পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ
(রাঃ)- এর কাছে পাঠালেন। (রাবী বুরাইদাহ বলেন,) আমি 'আলী (রাঃ)- এর প্রতি অসন্তুষ্ট,
আর তিনি গোসলও করেছেন। (রাবী বলেন) তাই আমি খালিদ (রাঃ)- কে বললাম, আপনি কি তার
দিকে দেখছেন না? এরপর আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে ফিরে
আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, হে বুরাইদাহ! তুমি কি 'আলীর
প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি বললাম জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বলেলন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেক না।
কারণ খুমুসে তার প্রাপ্য এর চেয়েও অধিক আছে। (আ.প্র. ৪০০৫, ই.ফা. ৪০০৯)
৪৩৫১
قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا
عَبْدُ الْوَاحِدِ عَنْ عُمَارَةَ بْنِ الْقَعْقَاعِ بْنِ شُبْرُمَةَ حَدَّثَنَا
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِيْ نُعْمٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَعِيْدٍ
الْخُدْرِيَّ يَقُوْلُ بَعَثَ عَلِيُّ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ
إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْيَمَنِ بِذُهَيْبَةٍ فِيْ
أَدِيْمٍ مَقْرُوْظٍ لَمْ تُحَصَّلْ مِنْ تُرَابِهَا قَالَ فَقَسَمَهَا بَيْنَ
أَرْبَعَةِ نَفَرٍ بَيْنَ عُيَيْنَةَ بْنِ بَدْرٍ وَأَقْرَعَ بْنِ حابِسٍ وَزَيْدِ
الْخَيْلِ وَالرَّابِعُ إِمَّا عَلْقَمَةُ وَإِمَّا عَامِرُ بْنُ الطُّفَيْلِ
فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِهِ كُنَّا نَحْنُ أَحَقَّ بِهَذَا مِنْ هَؤُلَاءِ
قَالَ فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَلَا
تَأْمَنُوْنِيْ وَأَنَا أَمِيْنُ مَنْ فِي السَّمَاءِ يَأْتِيْنِيْ خَبَرُ السَّمَاءِ
صَبَاحًا وَمَسَاءً قَالَ فَقَامَ رَجُلٌ غَائِرُ الْعَيْنَيْنِ مُشْرِفُ
الْوَجْنَتَيْنِ نَاشِزُ الْجَبْهَةِ كَثُّ اللِّحْيَةِ مَحْلُوْقُ الرَّأْسِ
مُشَمَّرُ الإِزَارِ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اتَّقِ اللهَ قَالَ وَيْلَكَ
أَوَلَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الْأَرْضِ أَنْ يَتَّقِيَ اللهَ قَالَ ثُمَّ وَلَّى
الرَّجُلُ قَالَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلَا أَضْرِبُ
عُنُقَهُ قَالَ لَا لَعَلَّهُ أَنْ يَكُوْنَ يُصَلِّيْ فَقَالَ خَالِدٌ وَكَمْ
مِنْ مُصَلٍّ يَقُوْلُ بِلِسَانِهِ مَا لَيْسَ فِيْ قَلْبِهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم إِنِّيْ لَمْ أُوْمَرْ أَنْ أَنْقُبَ عَنْ قُلُوْبِ النَّاسِ
وَلَا أَشُقَّ بُطُوْنَهُمْ قَالَ ثُمَّ نَظَرَ إِلَيْهِ وَهُوَ مُقَفٍّ فَقَالَ
إِنَّهُ يَخْرُجُ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمٌ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ رَطْبًا لَا
يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنْ الدِّيْنِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ
مِنْ الرَّمِيَّةِ وَأَظُنُّهُ قَالَ لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لَأَقْتُلَنَّهُمْ
قَتْلَ ثَمُوْدَ.
আবূ
সা'ঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, 'আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) ইয়ামান
থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এক প্রকার (রঙিন)
চামড়ার থলে করে সামান্য কিছু স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত মাটি
পরিষ্কার করা হয়নি। আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) চার জনের মাঝে স্বর্ণখণ্ডটি বণ্টন করে দিলেন। তারা হলেন, 'উয়াইনাহ ইবনু
বাদ্র, আকরা ইবনু হাবিস, যায়দ আল-খায়ল এবং চতুর্থ জন 'আলক্বামাহ কিংবা 'আমির ইবনু
তুফায়ল (রাঃ)। তখন সাহাবীগণের মধ্য থেকে একজন বললেন, এটা পাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের
অপেক্ষা আমরাই অধিক হাকদার ছিলাম। (রাবী) বলেন, কথাতি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। তাই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না অথচ আমি আসমানের অধিবাসীদের আস্থাভাজন,
সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে। রাবী বলেন, এমন সময়ে এক ব্যাক্তি উঠে
দাঁড়াল। লোকটির চোখ দু'টি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উঁচু কপাল
বিশিষ্ট, দাড়ি অতি ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গী উপরে উত্থিত। সে বলল, হে
আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্কে ভয় করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহ্কে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি
অধিক হাকদার নই? রাবী আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, লোকটি চলে গেলে খালিদ বিন
ওয়ালীদ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না?
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না হতে পারে সে সলাত আদায়
করে। খালিদ (রাঃ) বললেন, অনেক সলাত আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা
উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে নেই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেড়ে দেখার জন্য বলা হয়নি। তারপর তিনি লোকটির
দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বললেন, এ ব্যাক্তির
বংশ থেকে এমন জাতির উদ্ভব হবে যারা শ্রুতিমধুর কণ্ঠে আল্লাহ্র কিতাব তিলাওয়াত
করবে অথচ আল্লাহ্র বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দ্বীন থকে এভাবে
বেরিয়ে যাবে যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। (বর্ণনাকারী বলেন)
আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাদেরকে পাই তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে
সামূদ জাতির মতো হত্যা করে দেব। [৩৩৪৪; মুসলিম ১২/৪৭, হাঃ ১০৬৪, আহমাদ ১১৬৯৫]
(আ.প্র. ৪০০৬, ই.ফা. ৪০১০)
৪৩৫২
الْمَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ عَطَاءٌ قَالَ
جَابِرٌ أَمَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا أَنْ يُقِيْمَ عَلَى
إِحْرَامِهِ زَادَ مُحَمَّدُ بْنُ بَكْرٍ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ عَطَاءٌ قَالَ
جَابِرٌ فَقَدِمَ عَلِيُّ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بِسِعَايَتِهِ
قَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِمَ أَهْلَلْتَ يَا عَلِيُّ قَالَ
بِمَا أَهَلَّ بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَأَهْدِ وَامْكُثْ
حَرَامًا كَمَا أَنْتَ قَالَ وَأَهْدَى لَهُ عَلِيٌّ هَدْيًا.
জাবির
(রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) 'আলী (রাঃ)- কে তাঁর কৃত ইহরামের উপর স্থির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মুহাম্মাদ ইবনু বাক্র জুরায়জ-'আত্বা (রহঃ)-জাবির (রাঃ) সূত্রে আরও বর্ণনা করেন যে,
জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ 'আলী ইবনু আবূ ত্বলিব তাঁর আদায়কৃত কর খুমুস নিয়ে (মাক্কায়)
আসলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, হে 'আলী! তুমি
কিসের ইহ্রাম বেঁধেছ? তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেটির
ইহ্রাম বেঁধেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তা হলে তুমি
কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দাও এবং ইহ্রাম বাঁধা এ অবস্থায় অবস্থান করতে থাক।
বর্ণনাকারী [জাবির (রাঃ)] বলেন, সে সময় 'আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর জন্য কুরবানীর পশু পাঠিয়েছিলেন। [১৫৫৭; মুসলিম ১৫/১৭, হাঃ ১২১৬]
(আ.প্র. ৪০০৭, ই.ফা. ৪০১১)
৪৩৫৩
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ عَنْ حُمَيْدٍ الطَّوِيْلِ
حَدَّثَنَا بَكْرٌ أَنَّهُ ذَكَرَ لِابْنِ عُمَرَ أَنَّ أَنَسًا حَدَّثَهُمْ أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَحَجَّةٍ فَقَالَ أَهَلَّ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالْحَجِّ وَأَهْلَلْنَا بِهِ مَعَهُ فَلَمَّا
قَدِمْنَا مَكَّةَ قَالَ مَنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً
وَكَانَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم هَدْيٌ فَقَدِمَ عَلَيْنَا عَلِيُّ
بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ مِنَ الْيَمَنِ حَاجًّا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم بِمَ أَهْلَلْتَ فَإِنَّ مَعَنَا أَهْلَكَ قَالَ أَهْلَلْتُ بِمَا أَهَلَّ
بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَأَمْسِكْ فَإِنَّ مَعَنَا هَدْيًا.
বাকর
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে এ কথা উল্লেখ করা
হল, ‘আনাস (রাঃ) লোকেদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হাজ্জ ও ‘উমরাহর জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন,
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছেন, তাঁর সঙ্গে
আমরাও হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধি। যখন আমরা মক্কা্য় পৌঁছলাম তিনি বললেন, তোমাদের
যার সঙ্গে কুরবানীর পশু নেই সে যেন তার হাজ্জের ইহরাম ‘উমরাহর ইহরামে পরিণত করে।
অবশ্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। অতঃপর ‘আলী
ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) হাজ্জের উদ্দেশে ইয়ামান থেকে আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁকে) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? কারণ আমাদের
সঙ্গে তোমার স্ত্রী পরিবার আছে। তিনি উত্তর দিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যেটির ইহরাম বেঁধেছেন আমি সেটিরই ইহরাম বেঁধেছি। নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে (এ অবস্থায়ই) থাক, কেননা আমাদের সঙ্গে কুরবানীর
পশু আছে। [মুসলিম ১৫/২৭, হাঃ ১২৩১, ১২৩২] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০০৮, ইসলামী
ফাউন্ডেশনঃ ৪০১২)
৪৩৫৪
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ عَنْ حُمَيْدٍ الطَّوِيْلِ
حَدَّثَنَا بَكْرٌ أَنَّهُ ذَكَرَ لِابْنِ عُمَرَ أَنَّ أَنَسًا حَدَّثَهُمْ أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ وَحَجَّةٍ فَقَالَ أَهَلَّ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالْحَجِّ وَأَهْلَلْنَا بِهِ مَعَهُ فَلَمَّا
قَدِمْنَا مَكَّةَ قَالَ مَنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً
وَكَانَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم هَدْيٌ فَقَدِمَ عَلَيْنَا عَلِيُّ
بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ مِنَ الْيَمَنِ حَاجًّا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم بِمَ أَهْلَلْتَ فَإِنَّ مَعَنَا أَهْلَكَ قَالَ أَهْلَلْتُ بِمَا أَهَلَّ
بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَأَمْسِكْ فَإِنَّ مَعَنَا هَدْيًا.
বাকর
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে এ কথা উল্লেখ করা
হল, ‘আনাস (রাঃ) লোকেদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হাজ্জ ও ‘উমরাহর জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন,
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধেছেন, তাঁর সঙ্গে
আমরাও হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধি। যখন আমরা মক্কা্য় পৌঁছলাম তিনি বললেন, তোমাদের
যার সঙ্গে কুরবানীর পশু নেই সে যেন তার হাজ্জের ইহরাম ‘উমরাহর ইহরামে পরিণত করে।
অবশ্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। অতঃপর ‘আলী
ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) হাজ্জের উদ্দেশে ইয়ামান থেকে আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁকে) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? কারণ আমাদের
সঙ্গে তোমার স্ত্রী পরিবার আছে। তিনি উত্তর দিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যেটির ইহরাম বেঁধেছেন আমি সেটিরই ইহরাম বেঁধেছি। নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে (এ অবস্থায়ই) থাক, কেননা আমাদের সঙ্গে কুরবানীর
পশু আছে। [মুসলিম ১৫/২৭, হাঃ ১২৩১, ১২৩২] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০০৮, ইসলামী
ফাউন্ডেশনঃ ৪০১২)
৬৪/৬৩. অধ্যায়ঃ
যুল খালাসার যুদ্ধ
৪৩৫৫
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا خَالِدٌ حَدَّثَنَا بَيَانٌ عَنْ قَيْسٍ عَنْ
جَرِيْرٍ قَالَ كَانَ بَيْتٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ يُقَالُ لَهُ ذُو الْخَلَصَةِ
وَالْكَعْبَةُ الْيَمانِيَةُ وَالْكَعْبَةُ الشَّأْمِيَّةُ فَقَالَ لِي النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم أَلَا تُرِيْحُنِيْ مِنْ ذِي الْخَلَصَةِ فَنَفَرْتُ فِيْ
مِائَةٍ وَخَمْسِيْنَ رَاكِبًا فَكَسَرْنَاهُ وَقَتَلْنَا مَنْ وَجَدْنَا عِنْدَهُ
فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَدَعَا لَنَا
وَلِأَحْمَسَ.
জারীর
(ইবনু 'আবদুল্লাহ্ বাজালী) (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে একটি ঘর ছিল
যাকে বলে 'যুল খালাসা', ইয়ামানী কা'বা এবং সিরীয় কা'বা [৭৯] বলা হত। নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি কি যুল-খালাসা
থেকে আমাকে স্বস্তি দেবে না? এ কথা শুনে আমি একশ' পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী নিয়ে ছুটে
চললাম। আর এ ঘরটি ভেঙ্গে টুকরা করে দিলাম এবং যাদেরকে পেলাম তাদের হত্যা করে
ফেললাম। অবশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে এ
সংবাদ জানালাম। তিনি আমাদের জন্য এবং (আমাদের গোত্র) আহমাসের জন্য দু'আ করলেন।
[৩০২০] (আ.প্র. ৪০০৯, ই.ফা. ৪০১৩)
[৭৯]
এটি একটি মাসজিদের মত। সম্ভবত মাক্কাহ্র বাইতুল্লাহ্র ঘরটি তৈরী করা হয়েছিল। সেখানে
আল্লাহ্র মুকাবালায় দেবদেবীর পূজা হোত। ইয়ামনী কা'বা বলার অর্থ হচ্ছে এটির অবস্থান
ছিল ইয়ামানে আর সিরীয় কা'বা বলার অর্থ ছিল এর দরজা খুলতো সিরিয়ার দিকে। কাযী ইয়ায বলেন,
কোন বর্ণনায় কা'বা ইয়ামানী ও কা'বা সিরীয় এর মাঝখানে ওয়াও হরফটি নেই। এর অর্থ হচ্ছে
একে কখনো ইয়ামানী কা'বা আবার কখনো সিরীয় কা'বা বলা হয়তো।
৪৩৫৬
مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ
حَدَّثَنَا قَيْسٌ قَالَ قَالَ لِيْ جَرِيْرٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لِي
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَلَا تُرِيْحُنِيْ مِنْ ذِي الْخَلَصَةِ وَكَانَ
بَيْتًا فِيْ خَثْعَمَ يُسَمَّى الْكَعْبَةَ الْيَمانِيَةَ فَانْطَلَقْتُ فِيْ
خَمْسِيْنَ وَمِائَةِ فَارِسٍ مِنْ أَحْمَسَ وَكَانُوْا أَصْحَابَ خَيْلٍ وَكُنْتُ
لَا أَثْبُتُ عَلَى الْخَيْلِ فَضَرَبَ فِيْ صَدْرِيْ حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ
أَصَابِعِهِ فِيْ صَدْرِيْ وَقَالَ اللهُمَّ ثَبِّتْهُ وَاجْعَلْهُ هَادِيًا
مَهْدِيًّا فَانْطَلَقَ إِلَيْهَا فَكَسَرَهَا وَحَرَّقَهَا ثُمَّ بَعَثَ إِلَى
رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُوْلُ جَرِيْرٍ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ
بِالْحَقِّ مَا جِئْتُكَ حَتَّى تَرَكْتُهَا كَأَنَّهَا جَمَلٌ أَجْرَبُ قَالَ
فَبَارَكَ فِيْ خَيْلِ أَحْمَسَ وَرِجَالِهَا خَمْسَ مَرَّاتٍ.
ক্বায়স
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) থেকে আমাকে বলেছেন যে,
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল খালাসা
থেকে স্বস্তি দেবে না? যুল খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি ঘর, যার নাম দেয়া হয়েছিল
ইয়ামানী কা'বা। এ কথা শুনে আমি আহ্মাস গোত্র থেকে একশ' পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য
নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে
স্থিরভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার
বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমি আমার বুকের উপর তার আঙ্গুলগুলোর ছাপ
পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দু'আ করলেন, হে আল্লাহ! একে স্থির রাখুন এবং তাকে
হিদায়াত দানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং
ঘরটি ভেঙ্গে দিলেন আর তা জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর তিনি [জারীর (রাঃ)] রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীদের দূত [রসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে] বলল, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে
সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে চর্মরোগে আক্রান্ত কাল উটের মতো রেখে আপনার
কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহমাস গোত্রের
অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর জন্য পাঁচবার বারাকাতের দু'আ করলেন। [৩০২০] (আ.প্র.
৪০১০, ই.ফা. ৪০১৪)
৪৩৫৭
يُوْسُفُ بْنُ مُوْسَى أَخْبَرَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ إِسْمَاعِيْلَ
بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ عَنْ قَيْسٍ عَنْ جَرِيْرٍ قَالَ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم أَلَا تُرِيْحُنِيْ مِنْ ذِي الْخَلَصَةِ فَقُلْتُ بَلَى
فَانْطَلَقْتُ فِيْ خَمْسِيْنَ وَمِائَةِ فَارِسٍ مِنْ أَحْمَسَ وَكَانُوْا أَصْحَابَ
خَيْلٍ وَكُنْتُ لَا أَثْبُتُ عَلَى الْخَيْلِ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم فَضَرَبَ يَدَهُ عَلَى صَدْرِيْ حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ يَدِهِ
فِيْ صَدْرِيْ وَقَالَ اللهُمَّ ثَبِّتْهُ وَاجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا قَالَ
فَمَا وَقَعْتُ عَنْ فَرَسٍ بَعْدُ قَالَ وَكَانَ ذُو الْخَلَصَةِ بَيْتًا
بِالْيَمَنِ لِخَثْعَمَ وَبَجِيْلَةَ فِيْهِ نُصُبٌ تُعْبَدُ يُقَالُ لَهُ
الْكَعْبَةُ قَالَ فَأَتَاهَا فَحَرَّقَهَا بِالنَّارِ وَكَسَرَهَا قَالَ وَلَمَّا
قَدِمَ جَرِيْرٌ الْيَمَنَ كَانَ بِهَا رَجُلٌ يَسْتَقْسِمُ بِالأَزْلَامِ
فَقِيْلَ لَهُ إِنَّ رَسُوْلَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَا هُنَا فَإِنْ
قَدَرَ عَلَيْكَ ضَرَبَ عُنُقَكَ قَالَ فَبَيْنَمَا هُوَ يَضْرِبُ بِهَا إِذْ
وَقَفَ عَلَيْهِ جَرِيْرٌ فَقَالَ لَتَكْسِرَنَّهَا وَلَتَشْهَدَنَّ أَنْ لَا إِلَهَ
إِلَّا اللهُ أَوْ لَأَضْرِبَنَّ عُنُقَكَ قَالَ فَكَسَرَهَا وَشَهِدَ ثُمَّ
بَعَثَ جَرِيْرٌ رَجُلًا مِنْ أَحْمَسَ يُكْنَى أَبَا أَرْطَاةَ إِلَى النَّبِيِّ
صلى الله عليه وسلم يُبَشِّرُهُ بِذَلِكَ فَلَمَّا أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا جِئْتُ حَتَّى
تَرَكْتُهَا كَأَنَّهَا جَمَلٌ أَجْرَبُ قَالَ فَبَرَّكَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم عَلَى خَيْلِ أَحْمَسَ وَرِجَالِهَا خَمْسَ مَرَّاتٍ.
জারীর
(রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমকে যুল খালাসা থেকে স্বস্তি দেবে না? আমি
বললামঃ অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশ' পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী
সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিল অভিজ্ঞ অশ্বচালক। কিন্তু আমি ঘোড়ার উপর স্থির
হয়ে বসতে পারতাম না। এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে
জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর
হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দু'আ করলেনঃ হে আল্লাহ! একে স্থির রাখুন
এবং তাকে হিদায়াতদানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে দিন। জারীর (রাঃ) বলেনঃ এরপর আর
কখনো আমি আমার ঘোড়া থকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল খালাসা ছিল ইয়ামানের
অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি ছিল যেগুলোর পূজা
করা হত এবং এ ঘরটিকে বলা হত কা'বা। রাবী (কায়স্) বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন
এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর একে ভেঙ্গে চুরে ফেললেন। রাবী আরও বলেন, আর
যখন জারীর (রাঃ) ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে
ভাগ্য নির্ণয় করত। লোকটিকে বলা হল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করেন তাহলে তোমার
গর্দান উড়িয়ে দেবেন। রাবী বলেন, এরপর যখন সে ভাগ্য নির্ণয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই
অবস্থায় জারীর (রাঃ) সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান
উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করল। এরপর
জারীর (রাঃ) আবূ আরতাত ডাক নাম বিশিষ্ট আহমাস গোত্রের এক ব্যক্তিকে নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট পাঠালেন এ সংবাদ শোনানোর জন্য। লোকটি
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! সে
সত্তার কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী সহকারে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে চর্মরোগে
আক্রান্ত উটের মতো আমি কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের
বারাকাতের জন্য পাঁচবার দু'আ করলেন। [৩০২০] (আ.প্র. ৪০১১, ই.ফা. ৪০১৫)
৬৪/৬৪. অধ্যায়ঃ
যাতুস্ সালাসিল যুদ্ধ
ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ
(রহঃ)- এর মতে, এটি লাখম ও জুযাম গোত্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধ।
ইবনু ইসহাক (রহঃ) ইয়াযীদ (রহঃ)- এর মাধ্যমে 'উরওয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, যাতুস্ সালাসিল হল বালী, উযরা এবং বনিল কাইন গোত্রসমূহের নির্মিত নগর।
ইবনু ইসহাক (রহঃ) ইয়াযীদ (রহঃ)- এর মাধ্যমে 'উরওয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, যাতুস্ সালাসিল হল বালী, উযরা এবং বনিল কাইন গোত্রসমূহের নির্মিত নগর।
৪৩৫৮
إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا خَالِدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ عَنْ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ
عَنْ أَبِيْ عُثْمَانَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ عَمْرَو
بْنَ الْعَاصِ عَلَى جَيْشِ ذَاتِ السُّلَاسِلِ قَالَ فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ أَيُّ
النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ عَائِشَةُ قُلْتُ مِنْ الرِّجَالِ قَالَ
أَبُوْهَا قُلْتُ ثُمَّ مَنْ قَالَ عُمَرُ فَعَدَّ رِجَالًا فَسَكَتُّ مَخَافَةَ
أَنْ يَجْعَلَنِيْ فِيْ آخِرِهِمْ.
আবূ
'উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) আমর ইবনুল আস (রাঃ)- কে (সেনাপতি হিসেবে) যাতুস্ সালাসিল [৮০] বাহিনীর
বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। আমর ইবনুল আস বলেনঃ (যুদ্ধ শেষে) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কাছে কোন্ লোকটি
অধিকতর প্রিয়? তিনি উত্তর দিলেন, 'আয়িশাহ (রাঃ)। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে?
তিনি বললেন, তার ('আয়িশাহ্র) পিতা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বললেন, 'উমার
(রাঃ)। এভাবে তিনি পর পর আরো কয়েকজনের নাম বললেন। আমি চুপ হয়ে গেলাম এ ভয়ে যে,
আমাকে না তিনি সকলের শেষে গণ্য করে বসেন। [৩৬৬২] (আ.প্র. ৪০১২, ই.ফা. ৪০১৬)
[৮০] অর্থাৎ শিকল যুদ্ধ। শিকল যুদ্ধ বলার কারণ হিসেবে
জালালুদ্দীন সুয়ূতী কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। অষ্টম হিজরীর জুমাদাল আখির মাসে সংঘটিত
এ যুদ্ধে বিপক্ষ দলের সৈন্যরা জীবনপণ যুদ্ধ করার জন্য এবং যাতে কেউ যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে
পলায়ন করতে না পারে সে জন্য পরস্পর পরস্পরকে শিকল দিয়ে সংযুক্ত করে রেখেছিল।
৬৪/৬৫. অধ্যায়ঃ
জারীর (রাঃ)- এর ইয়ামান গমন
৪৩৫৯
عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِيْ شَيْبَةَ الْعَبْسِيُّ حَدَّثَنَا ابْنُ
إِدْرِيْسَ عَنْ إِسْمَاعِيْلَ بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ عَنْ قَيْسٍ عَنْ جَرِيْرٍ
قَالَ كُنْتُ بِالْيَمَنِ فَلَقِيْتُ رَجُلَيْنِ مِنْ أَهْلِ الْيَمَنِ ذَا
كَلَاعٍ وَذَا عَمْرٍو فَجَعَلْتُ أُحَدِّثُهُمْ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم فَقَالَ لَهُ ذُوْ عَمْرٍو لَئِنْ كَانَ الَّذِيْ تَذْكُرُ مِنْ أَمْرِ
صَاحِبِكَ لَقَدْ مَرَّ عَلَى أَجَلِهِ مُنْذُ ثَلَاثٍ وَأَقْبَلَا مَعِيْ حَتَّى
إِذَا كُنَّا فِيْ بَعْضِ الطَّرِيْقِ رُفِعَ لَنَا رَكْبٌ مِنْ قِبَلِ
الْمَدِيْنَةِ فَسَأَلْنَاهُمْ فَقَالُوْا قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم وَاسْتُخْلِفَ أَبُوْ بَكْرٍ وَالنَّاسُ صَالِحُوْنَ فَقَالَا أَخْبِرْ
صَاحِبَكَ أَنَّا قَدْ جِئْنَا وَلَعَلَّنَا سَنَعُوْدُ إِنْ شَاءَ اللهُ
وَرَجَعَا إِلَى الْيَمَنِ فَأَخْبَرْتُ أَبَا بَكْرٍ بِحَدِيْثِهِمْ قَالَ
أَفَلَا جِئْتَ بِهِمْ فَلَمَّا كَانَ بَعْدُ قَالَ لِيْ ذُوْ عَمْرٍو يَا
جَرِيْرُ إِنَّ بِكَ عَلَيَّ كَرَامَةً وَإِنِّيْ مُخْبِرُكَ خَبَرًا إِنَّكُمْ
مَعْشَرَ الْعَرَبِ لَنْ تَزَالُوْا بِخَيْرٍ مَا كُنْتُمْ إِذَا هَلَكَ أَمِيْرٌ
تَأَمَّرْتُمْ فِيْ آخَرَ فَإِذَا كَانَتْ بِالسَّيْفِ كَانُوْا مُلُوْكًا
يَغْضَبُوْنَ غَضَبَ الْمُلُوْكِ وَيَرْضَوْنَ رِضَا الْمُلُوْكِ.
জারীর
(রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইয়ামানে ছিলাম। এ সময়ে একদা
যুকালা ও যু'আমর নামে ইয়ামানের দু'ব্যক্তির সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হল। আমি তাদেরকে
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর হাদীস শোনাতে লাগলাম।
(বর্ণনাকারী বলেন) এমন সময়ে যু'আমর জারীর (রাঃ)- কে বললেন, তুমি যা বর্ণনা করছ তা
যদি তোমার সাথীরই [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর] কথা হয়ে থাকে তা
হলে জেনে নাও যে, তিনদিন আগে তিনি ইন্তিকাল করে গেছেন। [৮১] (জারীর বলেন, এ কথা
শুনে আমি মদীনার দিকে ছুটলাম) তারা দু'জনেও আমার সঙ্গে সম্মুখের দিকে চললেন। অতঃপর
আমরা একটি রাস্তার ধারে পৌঁছলে মদীনার দিক থেকে আসা একদল সওয়ারীর সাক্ষাৎ পেলাম।
আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর ওফাত হয়ে গেছে। মুসলিমদের পরামর্শক্রমে আবূ বাক্র (রাঃ) খলীফা
নির্বাচিত হয়েছেন। তারপর তারা দু'জন (আমাকে) বলল, (মদিনায়) তোমার সাথী [আবূ বাক্র
(রাঃ)]- কে বলবে যে, আমরা কিছুদূর পর্যন্ত এসেছিলাম। সম্ভবত আবার আসব ইনশাআল্লাহ,
এ কথা বলে তারা দু'জনে ইয়ামানের দিকে ফিরে গেল। এরপর আমি আবূ বাক্র (রাঃ)- কে
তাদের কথা জানালাম। তিনি বললেন, তাদেরকে তুমি নিয়ে আসলে না কেন? পরে আরেক সময়
যু'আমর আমাকে বললেন, হে জারীর! তুমি আমার চেয়ে অধিক সম্মানী। তবুও আমি তোমাকে একটা
কথা জানিয়ে দিচ্ছি যে, তোমরা আরব জাতি ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ
পর্যন্ত তোমরা একজন আমীর মারা গেলে অপরজনকে (পরামর্শের ভিত্তিতে) আমীর বানিয়ে
নেবে। আর তা যদি তরবারির জোরে ফায়সালা হয় তা হলে তোমাদের আমীরগণ রাজা বাদশাহর মতোই
হয়ে যাবে। তারা রাজাদের রাগ করার মতই রাগ করবে। রাজাদের খুশি হওয়ার মতই খুশি হবে।
(আ.প্র. ৪০১৩, ই.ফা. ৪০১৭)
[৮১]
যু'আমর সম্ভবত কারো মুখে পূর্বেই অবগত হয়েছিলেন অথবা এও হতে পারে যে, তিনি জাহেলী যুগে
জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন এবং সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে এ কথা বলেছিলেন। আল্লহই ভাল
জানেন।
৬৪/৬৬. অধ্যায়ঃ
সীফুল বাহরের যুদ্ধ
এ যুদ্ধে মুসলিমগণ কুরাইশের
একটি কাফেলার প্রতিক্ষায় ছিল এবং তাঁদের সেনাপতি ছিলেন আবূ 'উবাইদাহ (রাঃ)।
৪৩৬০
إِسْمَاعِيْلُ قَالَ حَدَّثَنِيْ مَالِكٌ عَنْ وَهْبِ بْنِ كَيْسَانَ عَنْ
جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ قَالَ بَعَثَ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعْثًا قِبَلَ السَّاحِلِ وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ أَبَا
عُبَيْدَةَ بْنَ الْجَرَّاحِ وَهُمْ ثَلَاثُ مِائَةٍ فَخَرَجْنَا وَكُنَّا
بِبَعْضِ الطَّرِيْقِ فَنِيَ الزَّادُ فَأَمَرَ أَبُوْ عُبَيْدَةَ بِأَزْوَادِ
الْجَيْشِ فَجُمِعَ فَكَانَ مِزْوَدَيْ تَمْرٍ فَكَانَ يَقُوْتُنَا كُلَّ يَوْمٍ
قَلِيْلٌ قَلِيْلٌ حَتَّى فَنِيَ فَلَمْ يَكُنْ يُصِيْبُنَا إِلَّا تَمْرَةٌ
تَمْرَةٌ فَقُلْتُ مَا تُغْنِيْ عَنْكُمْ تَمْرَةٌ فَقَالَ لَقَدْ وَجَدْنَا
فَقْدَهَا حِيْنَ فَنِيَتْ ثُمَّ انْتَهَيْنَا إِلَى الْبَحْرِ فَإِذَا حُوْتٌ
مِثْلُ الظَّرِبِ فَأَكَلَ مِنْهَا الْقَوْمُ ثَمَانِيَ عَشْرَةَ لَيْلَةً ثُمَّ
أَمَرَ أَبُوْ عُبَيْدَةَ بِضِلَعَيْنِ مِنْ أَضْلَاعِهِ فَنُصِبَا ثُمَّ أَمَرَ
بِرَاحِلَةٍ فَرُحِلَتْ ثُمَّ مَرَّتْ تَحْتَهُمَا فَلَمْ تُصِبْهُمَا.
জাবির
ইবনু 'আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) সমুদ্র তীরের দিকে একটি সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। আবূ 'উবাইয়দাহ ইবনুল
জাররাহ্ (রাঃ)-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তাঁরা সংখ্যায় ছিল তিনশ'। (রাবী
বলেন) আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমরা এক রাস্তায় ছিলাম তখন আমাদের রসদপত্র শেষ হয়ে গেল,
তাই আবূ উবাইদাহ (রাঃ) আদেশ দিলেন সমগ্র সেনাদলের অবশিষ্ট পাথেয় একত্রিত করতে।
অতএব সব একত্রিত করা হল। মাত্র দু'থলে খেজুর হল। এরপর তিনি প্রত্যহ অল্প অল্প করে
আমাদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ করতে লাগলেন। যখন তাও শেষ হয়ে গেল। তখন কেবল একটি করে খেজুর
আমরা পেতাম। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি জাবির (রাঃ)-কে বললাম, একটি করে খেজুর খেয়ে
আপনাদের কতটুকু ক্ষুধা মিটত? তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম! একটি খেজুর পাওয়াও বন্ধ
হয়ে গেলে আমরা একটির কদরও বুঝতে পারলাম। এরপর আমরা সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম।
তখন আমরা পর্বতের মতো বড় একটি মাছ পেয়ে গেলাম। বাহিনীর সকলে আঠারো দিন পর্যন্ত তা
খেল। তারপর আবূ উবাইদা (রাঃ) মাছটির পাঁজরের দু'টি হাড় আনতে হুকুম দিলেন। (দু'টি
হাড় আনা হলে) সেগুলো দাঁড় করানো হল। এরপর তিনি একটি সওয়ারী প্রস্তুত করতে বললেন।
সাওয়ারী প্রস্তুত হল এবং হাড় দু'টির নিচ দিয়ে সওয়ারীটি অতিক্রম করল। কিন্তু হাড়
দু'টিতে কোনই স্পর্শ লাগল না। [২৪৮৩] (আ.প্র. ৪০১৪, ই.ফা. ৪০১৮)
৪৩৬১
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ الَّذِيْ
حَفِظْنَاهُ مِنْ عَمْرِو بْنِ دِيْنَارٍ قَالَ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ
اللهِ يَقُوْلُ بَعَثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثَلَاثَ مِائَةِ
رَاكِبٍ أَمِيْرُنَا أَبُوْ عُبَيْدَةَ بْنُ الْجَرَّاحِ نَرْصُدُ عِيْرَ قُرَيْشٍ
فَأَقَمْنَا بِالسَّاحِلِ نِصْفَ شَهْرٍ فَأَصَابَنَا جُوْعٌ شَدِيْدٌ حَتَّى
أَكَلْنَا الْخَبَطَ فَسُمِّيَ ذَلِكَ الْجَيْشُ جَيْشَ الْخَبَطِ فَأَلْقَى لَنَا
الْبَحْرُ دَابَّةً يُقَالُ لَهَا الْعَنْبَرُ فَأَكَلْنَا مِنْهُ نِصْفَ شَهْرٍ
وَادَّهَنَّا مِنْ وَدَكِهِ حَتَّى ثَابَتْ إِلَيْنَا أَجْسَامُنَا فَأَخَذَ
أَبُوْ عُبَيْدَةَ ضِلَعًا مِنْ أَضْلَاعِهِ فَنَصَبَهُ فَعَمَدَ إِلَى أَطْوَلِ
رَجُلٍ مَعَهُ قَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً ضِلَعًا مِنْ أَضْلَاعِهِ فَنَصَبَهُ
وَأَخَذَ رَجُلًا وَبَعِيْرًا فَمَرَّ تَحْتَهُ قَالَ جَابِرٌ وَكَانَ رَجُلٌ مِنَ
الْقَوْمِ نَحَرَ ثَلَاثَ جَزَائِرَ ثُمَّ نَحَرَ ثَلَاثَ جَزَائِرَ ثُمَّ نَحَرَ
ثَلَاثَ جَزَائِرَ ثُمَّ إِنَّ أَبَا عُبَيْدَةَ نَهَاهُ وَكَانَ عَمْرٌو يَقُوْلُ
أَخْبَرَنَا أَبُوْ صَالِحٍ أَنَّ قَيْسَ بْنَ سَعْدٍ قَالَ لِأَبِيْهِ كُنْتُ فِي
الْجَيْشِ فَجَاعُوْا قَالَ انْحَرْ قَالَ نَحَرْتُ قَالَ ثُمَّ جَاعُوْا قَالَ
انْحَرْ قَالَ نَحَرْتُ قَالَ ثُمَّ جَاعُوْا قَالَ انْحَرْ قَالَ نَحَرْتُ ثُمَّ
جَاعُوْا قَالَ انْحَرْ قَالَ نُهِيْتُ.
জাবির
ইবনু 'আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) আমাদের তিনশ' সাওয়ারীর একটি সৈন্যবাহিনীকে কুরাইশদের একটি কাফেলার
উপর সুযোগ মতো আক্রমন চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। আবূ 'উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্ (রাঃ)
ছিলেন আমাদের সেনাপতি। আমরা অর্ধমাস সমুদ্র তীরে অবস্থান করলাম। ভয়ানক ক্ষুধা
আমাদেরকে পেয়ে বসল। ক্ষুধার জ্বালায় গাছের পাতা খেতে থাকলাম। এ জন্যই এ
সৈন্যবাহিনীর নাম রাখা হয়েছে জায়শুল খাবাত অর্থাৎ পাতাওয়ালা সেনাদল। এরপর সমুদ্র
আমাদের জন্য আম্বর নামক একটি প্রাণী নিক্ষেপ করল। আমরা অর্ধমাস ধরে তা থেকে খেলাম।
এর চর্বি শরীরে লাগালাম। ফলে আমাদের শরীর পূর্বের মত হৃষ্টপুষ্ট হয়ে গেল। এরপর আবূ
'উবাইদাহ (রাঃ) আম্বরটির শরীর থেকে একটি পাঁজর ধরে খাড়া করালেন। এরপর তাঁর সাথীদের
মধ্যকার সবচেয়ে লম্বা লোকটিকে আসতে বললেন। সুফ্ইয়ান (রাঃ) আরেক বর্ণনায় বলেছেন,
আবূ 'উবাইদাহ (রাঃ) আম্বরটির পাঁজরের হারগুলোর মধ্য থেকে একটি হাড় ধরে খাড়া করালেন
এবং (ঐ) লোকটিতে উটের পিঠে বসিয়ে এর নিচ দিয়ে অতিক্রম করালেন। জাবির (রাঃ) বলেন,
সেনাদলের এক ব্যক্তি (খাদ্যের অভাভ দেখে) প্রথমে তিনটি উট যবহ করেছিলেন, তারপর আরো
তিনটি উট যবেহ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবহ করেছিলেন। এরপর 'আবূ উবাইদাহ
(রাঃ) তাকে (উট যবহ করতে) নিষেধ করলেন। আমর ইবনু দীনার (রাঃ) বলতেন , আবূ সালিহ
(রহঃ) আমাদের জানিয়েছেন হে, কায়স ইবনু সা'দ (রাঃ) (অভিযান থেকে ফিরে এসে) তাঁর
পিতার কাছে বর্ণনা করেছিলেন যে, সেনাদলে আমিও ছিলাম, সেনাদল ক্ষুধার্ত হয়ে পরল,
(কথাটা শোনামাত্র কায়সের পিতা) সা'দ বললেন, এমতাবস্থায় তুমি উট যবহ করে দিতে। কায়স
বললেন, (হ্যাঁ) আমি উট যবেহ করেছি। তিনি বললেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হয়ে
গেল। এবারো তার পিতা বললেন, তুমি যবহ করতে। তিনি বললেন, (হ্যাঁ) যবহ করেছি। তিনি
বললেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সা'দ বললেন, এবারো উট যবহ করতে। তিনি বললেন,
(হ্যাঁ) যবহ করেছি। তিনি বললেন, এরপরও আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সা'দ (রাঃ) বললেন,
উট যবহ করতে। যখন কায়স ইবনু সা'দ (রাঃ) বললেন, তখন আমাকে (যবহ করতে) নিষেধ করা হল।
[৮২] [২৪৮৩; মুসলিম ৩৪/৪, হাঃ ১৯৩৫, আহমাদ ১৪৩১৯] (আ.প্র. ৪০১৫, ই.ফা. ৪০১৯)
[৮২]
নিষেধ করার কারণ ছিল এই যে, উতগুলো কায়স ইবনু সা'দ এর ছিল না এবং তার পিতা সা'দ (রা.)-এর
ছিল। পিতার অনুমতি ব্যতীত পুত্র পিতার সম্পদ হতে খরচ করতে পারে না।
৪৩৬২
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ
عَمْرٌو أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ غَزَوْنَا جَيْشَ
الْخَبَطِ وَأُمِّرَ أَبُوْ عُبَيْدَةَ فَجُعْنَا جُوْعًا شَدِيْدًا فَأَلْقَى
الْبَحْرُ حُوْتًا مَيِّتًا لَمْ نَرَ مِثْلَهُ يُقَالُ لَهُ الْعَنْبَرُ
فَأَكَلْنَا مِنْهُ نِصْفَ شَهْرٍ فَأَخَذَ أَبُوْ عُبَيْدَةَ عَظْمًا مِنْ
عِظَامِهِ فَمَرَّ الرَّاكِبُ تَحْتَهُ فَأَخْبَرَنِيْ أَبُو الزُّبَيْرِ أَنَّهُ
سَمِعَ جَابِرًا يَقُوْلُ قَالَ أَبُوْ عُبَيْدَةَ كُلُوْا فَلَمَّا قَدِمْنَا
الْمَدِيْنَةَ ذَكَرْنَا ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ كُلُوْا
رِزْقًا أَخْرَجَهُ اللهُ أَطْعِمُوْنَا إِنْ كَانَ مَعَكُمْ فَأَتَاهُ بَعْضُهُمْ
فَأَكَلَهُ.
জাবির
(রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা জাইশুল খাবাত-এর যুদ্ধে
অংশগ্রহণ করেছিলাম, আবূ উবাইদাহ (রাঃ)-কে আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল। পথে
আমরা ভীষণ ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ি। তখন সমুদ্র আমাদের জন্য একটি মরা মাছ তীরে
নিক্ষেপ করে দিল। এত বড় মাছ আমরা আর কখনো দেখিনি, একে আমবার বলা হয়। এরপর মাছটি
থেকে আমারা অর্ধমাস আহার করলাম। একবার আবূ 'উবাইদাহ (রাঃ) মাছটির হাড়গুলোর একটি
হাড় তুলে ধরলেন আর সওয়ারীর পিঠে চড়ে একজন হারটির নিচ দিয়ে অতিক্রম করল। (ইবনু
জুরায়জ বলেন) আবূ যুবায়র (রহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি জাবির (রাঃ) থেকে
শুনেছেন, জাবির (রাঃ) বলেনঃ ঐ সময়ে আবূ 'উবাইদাহ (রাঃ) বললেনঃ তোমারা মাছটি আহার
কর। এরপর আমরা মাদীনাহ ফিরে আসলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে
বিষয়টি অবগত করলাম। তিনি বললেন, খাও। এটি তোমাদের জন্য রিয্ক, আল্লাহ পাঠিয়ে
দিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরকেও খাওয়াও। মাছটির কিছু অংশ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এনে দেয়া হল। তিনি তা খেলেন। [২৪৮৩]
(আ.প্র. ৪০১৬, ই.ফা. ৪০২০)
৬৪/৬৭.অধ্যায়ঃ
হিজরাতের নবম বছর লোকজনসহ আবূ বাক্র (রাঃ)-এর হাজ্জ পালন
৪৩৬৩
سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ أَبُو الرَّبِيْعِ حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ عَنْ
الزُّهْرِيِّ عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ
أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيْقَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بَعَثَهُ فِي الْحَجَّةِ الَّتِيْ
أَمَّرَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيْهَا قَبْلَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ
يَوْمَ النَّحْرِ فِيْ رَهْطٍ يُؤَذِّنُ فِي النَّاسِ لَا يَحُجُّ بَعْدَ الْعَامِ
مُشْرِكٌ وَلَا يَطُوْفُ بِالْبَيْتِ عُرْيَانٌ.
আবূ
হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হাজ্জের পূর্ববর্তী হাজ্জে নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ)-কে আমীরুল হাজ্জ
নিযুক্ত করেছিলেন। সে সময় দশ তারিখে আবূ বাক্র (রাঃ) তাঁকে [আবূ হুরায়রা
(রাঃ)-কে] একটি ছোট দলসহ লোকজনের মধ্যে এ ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন যে, আগামী
বছর কোন মুশরিক হাজ্জ করতে পারবে না। আর উলঙ্গ অবস্থায় কেউ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে
পারবে না।[৮৩] (আ.প্র. ৪০১৭, ই.ফা. ৪০২১)
[৮৩]
পূর্বে নারী পুরুষ নির্বিশেষে উলঙ্গ হয়ে কা'বা তাওয়াফ করতো। তাই এহেন জঘন্য কাজ না
করার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন।
৪৩৬৪
عَبْدُ اللهِ بْنُ رَجَاءٍ حَدَّثَنَا إِسْرَائِيْلُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ
عَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ آخِرُ سُوْرَةٍ نَزَلَتْ كَامِلَةً
بَرَاءَةٌ وَآخِرُ سُوْرَةٍ نَزَلَتْ خَاتِمَةُ سُوْرَةِ {النِّسَآءِ
يَسْتَفْتُوْنَكَ قُلْ اللهُ يُفْتِيْكُمْ فِي الْكَلَالَةِ}.
বারাআ
(ইবনু আযিব) (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সর্বশেষ যে সূরাটি পূর্ণরূপে
অবতীর্ণ হয়েছিল তা ছিল সূরাহ বারাআত। আর সর্বশেষ যে আয়াতটি সমাপ্তিরূপে অবতীর্ণ
হয়েছিল সেটি ছিল সূরা আন-নিসার এ আয়াতঃ অর্থাৎ লোকেরা আপনার কাছে সমাধান জানতে
চায়, বলুন পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে আল্লাহ সমাধান
জানাচ্ছেন- (সূরাহ আন-নিসা ৪/১৭৬) [৪৬০৫, ৪৬৫৪,৬৭৪৪] (আ.প্র. ৪০১৮, ই.ফা. ৪০২২)
৬৪/৬৮. অধ্যায়ঃ
বানী তামীমের প্রতিনিধি দল
৪৩৬৫
أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ أَبِيْ صَخْرَةَ عَنْ صَفْوَانَ
بْنِ مُحْرِزٍ الْمَازِنِيِّ عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا
قَالَ أَتَى نَفَرٌ مِنْ بَنِيْ تَمِيْمٍ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ
اقْبَلُوا الْبُشْرَى يَا بَنِيْ تَمِيْمٍ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ قَدْ
بَشَّرْتَنَا فَأَعْطِنَا فَرُئِيَ ذَلِكَ فِيْ وَجْهِهِ فَجَاءَ نَفَرٌ مِنَ
الْيَمَنِ فَقَالَ اقْبَلُوا الْبُشْرَى إِذْ لَمْ يَقْبَلْهَا بَنُوْ تَمِيْمٍ
قَالُوْا قَدْ قَبِلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ.
ইমরান
ইবনু হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বানু তামীমের একটি প্রতিনিধি দল
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, হে
বানু তামীম! সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা বললঃ হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি সুসংবাদ দিয়ে
থাকেন, এবার আমাদেরকে কিছু (অর্থ-সম্পদ) দিন। কথাটি শুনে তাঁর চেহারায় অসন্তোষের
ভাব প্রকাশ পেল। এরপর ইয়ামানের একটি প্রতিনিধি দল আসলে তিনি তাঁদেরকে বললেন, বানু
তামীম যখন সুসংবাদ গ্রহণ করলই না তখন তোমরা সেটি গ্রহণ কর। তারা বললেন, আমরা তা
গ্রহণ করলাম হে আল্লাহ্র রসূল! [৩১৯০] (আ.প্র. ৪০১৯, ই.ফা. ৪০২৩)
৬৪/৬৯. অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নেই
বানু তামীমের উপগোত্র বানু
আমবার-এর বিরুদ্ধে 'উইয়াইনাহ ইবনু হিস্ন ইবনু হুযাইফাহ ইবনু বাদ্রের যুদ্ধ। ইবনু
ইসহাক (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'উইয়াইনাহ (রাঃ)-কে
এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পাঠিয়েছেন। তারপর তিনি রাতের শেষ ভাগে তাদের উপর
আক্রমন চালিয়ে কিছু লোককে হত্যা করেন এবং তাদের মহিলাদেরকে বন্দী করেন।
৪৩৬৬
زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ عُمَارَةَ بْنِ
الْقَعْقَاعِ عَنْ أَبِيْ زُرْعَةَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ
قَالَ لَا أَزَالُ أُحِبُّ بَنِيْ تَمِيْمٍ بَعْدَ ثَلَاثٍ سَمِعْتُهُ مِنْ
رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُهَا فِيْهِمْ هُمْ أَشَدُّ أُمَّتِيْ
عَلَى الدَّجَّالِ وَكَانَتْ فِيْهِمْ سَبِيَّةٌ عِنْدَ عَائِشَةَ فَقَالَ
أَعْتِقِيْهَا فَإِنَّهَا مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيْلَ وَجَاءَتْ صَدَقَاتُهُمْ
فَقَالَ هَذِهِ صَدَقَاتُ قَوْمٍ أَوْ قَوْمِي.
আবূ
হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট থেকে তিনটি কথা শুনার পর থেকে আমি বানী তামীমকে ভালবাসতে
থাকি। (তিনি বলেছেন) তারা আমার উম্মাতের মধ্যে দাজ্জালের বিরোধিতায় সবচেয়ে অধিক
কঠোর হবে। তাদের গোত্রের একটি বাঁদী 'আয়িশাহ (রাঃ)- এর কাছে ছিল। রসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, একে আযাদ করে দাও, কারণ সে ইসমাঈল
(আ.)- এর বংশধর। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে তাদের
সাদকাহ্র অর্থ-সম্পদ আসলে তিনি বললেন, এটি একটি কাওমের সদাকাহ বা তিনি বললেন, এটি
আমার কাওমের সদাকাহ। [২৫৪৩] (আ.প্র. ৪০২০, ই.ফা. ৪০২৪)
৪৩৬৭
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ يُوْسُفَ أَنَّ ابْنَ
جُرَيْجٍ أَخْبَرَهُمْ عَنْ ابْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ
الزُّبَيْرِ أَخْبَرَهُمْ أَنَّهُ قَدِمَ رَكْبٌ مِنْ بَنِيْ تَمِيْمٍ عَلَى
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ أَمِّرْ الْقَعْقَاعَ بْنَ
مَعْبَدِ بْنِ زُرَارَةَ قَالَ عُمَرُ بَلْ أَمِّرْ الْأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ
قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ مَا أَرَدْتَ إِلَّا خِلَافِيْ قَالَ عُمَرُ مَا أَرَدْتُ
خِلَافَكَ فَتَمَارَيَا حَتَّى ارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُهُمَا فَنَزَلَ فِيْ {ذٰلِكَ
يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُقَدِّمُوْا} حَتَّى انْقَضَتْ.
আবদুল্লাহ
ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বানী তামীম গোত্র থেকে একটি অশ্বারোহী দল নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে আসল। আবূ বাকর (রাঃ) প্রস্তাব
দিলেন, কা'কা ইবনু মা'বাদ ইবনু যারারা (রাঃ)-কে এদের আমীর নিযুক্ত করে দিন। 'উমার
(রাঃ) বললেন, বরং আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ)-কে আমীর বানিয়ে দিন। আবূ বাকর (রাঃ)
বললেন, আমার বিরোধিতা করাই তোমার উদ্দেশ্য। 'উমার (রাঃ) বললেন, আপনার বিরোধিতা
করার ইচ্ছা আমি কখনো করি না। এর উপর দু'জনের বাক-বিতণ্ডা চলতে চলতে শেষ পর্যায়ে
উভয়ের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। ফলে এ সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হল, “হে মুমিনগণ! আল্লাহ
এবং তার রসূলের সামনে তোমরা কোন ব্যাপারে অগ্রবর্তী হয়ো না। বরং আল্লাহকে ভয় কর,
আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। হে মু'মিনগণ! তোমরা নাবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের
কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চৈঃস্বরে কথা বল তাঁর সঙ্গে
সেরূপ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো না। কারণ এতে তোমাদের 'আমাল নিস্ফল হয়ে যাবে তোমাদের
অজ্ঞাতসারে”- (সূরাহ আল-হুজুরাত ৪৯/১-২)। [৪৮৪৫, ৪৮৪৭, ৭৩০২] (আ.প্র. ৪০২১, ই.ফা.
৪০২৫)
৬৪/৭০ অধ্যায়ঃ
'আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল
৪৩৬৮
إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا أَبُوْ عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ حَدَّثَنَا قُرَّةُ
عَنْ أَبِيْ جَمْرَةَ قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا إِنَّ لِيْ
جَرَّةً يُنْتَبَذُ لِيْ نَبِيْذٌ فَأَشْرَبُهُ حُلْوًا فِيْ جَرٍّ إِنْ أَكْثَرْتُ
مِنْهُ فَجَالَسْتُ الْقَوْمَ فَأَطَلْتُ الْجُلُوْسَ خَشِيْتُ أَنْ أَفْتَضِحَ
فَقَالَ قَدِمَ وَفْدُ عَبْدِ الْقَيْسِ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
فَقَالَ مَرْحَبًا بِالْقَوْمِ غَيْرَ خَزَايَا وَلَا النَّدَامَى فَقَالُوْا يَا
رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ الْمُشْرِكِيْنَ مِنْ مُضَرَ وَإِنَّا
لَا نَصِلُ إِلَيْكَ إِلَّا فِيْ أَشْهُرِ الْحُرُمِ حَدِّثْنَا بِجُمَلٍ مِنَ
الْأَمْرِ إِنْ عَمِلْنَا بِهِ دَخَلْنَا الْجَنَّةَ وَنَدْعُوْ بِهِ مَنْ
وَرَاءَنَا قَالَ آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ الإِيْمَانِ
بِاللهِ هَلْ تَدْرُوْنَ مَا الإِيْمَانُ بِاللهِ شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلَهَ
إِلَّا اللهُ وَإِقَامُ الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءُ الزَّكَاةِ وَصَوْمُ رَمَضَانَ
وَأَنْ تُعْطُوْا مِنَ الْمَغَانِمِ الْخُمُسَ وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ مَا
انْتُبِذَ فِي الدُّبَّاءِ وَالنَّقِيْرِ وَالْحَنْتَمِ وَالْمُزَفَّتِ.
আবূ
জামরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(তিনি বলেন) আমি ইবনু 'আব্বাস (রাঃ)-কে বললামঃ
আমার একটি কলসী আছে। তাতে আমার জন্য (খেজুর ভিজিয়ে) নাবীয তৈরী করা হয় এবং পানি
মিঠা হলে আমি তা আরেকটি পাত্রে ঢেলে পানি করি। কিন্তু কখনো যদি ঐ পানি অধিক পরিমাণ
পান করে লোকজনের সঙ্গে বসে যাই এবং দীর্ঘ সময় মাসজিদে বসে থাকি তখন আমার ভয় হয় যে,
(নেশার কারণে) আমি অপমাণিত হব। তখন ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) বলেন, 'আবদুল কায়স গোত্রের
একটি প্রতিনিধি দল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে আসলে
তিনি বললেন, কাওমের জন্য খোশ-আমদেদ যাদের আগমণ না ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় হয়েছে, না
অপমানিত অবস্থায়। তারা আরয করল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের ও আপনার মধ্যে মুদার
গোত্রের মুশরিকরা প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। এ জন্য আমিরা আপনার কাছে নিশিদ্ধ মাসসমূহ
ব্যতীত অন্য সময়ে আসতে পারি না। কাজেই আমাদেরকে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা বলে দিন,
যেগুলোর উপর 'আমাল করলে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। আর যারা আমাদের পেছনে
(বাড়িতে) রয়ে গেছে তাদেরকে এর দা'ওয়াত দেব। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি জিনিস পালন করার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি
জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলছি। আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিচ্ছি। তোমরা কি
জান আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনা কাকে বলে? তা হলঃ 'আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই'-
এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, আর সালাত আদায় করা, যাকাত দেয়া, রমাযানের সওম পালন করা এবং
গানীমাতের মালের এক-পঞ্চমাংশ জমা দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি জিনিস- লাউয়ের
পাত্র, কাঠের তৈরী নাকীর নামক পাত্র, সবুজ কলসী এবং মুযাফফাত নামক তৈল মাখানো
পাত্রে নাবীয [৮৪] তৈরী করা থেকে নিষেধ করছি। [৫৩] (আ.প্র. ৪০২২, ই.ফা. ৪০২৬)
[৮৪]- খেজুরের পানি থেকে তৈরী খুবই নেশা সৃষ্টিকারী
এক জাতীয় মদকে নাবীয বলা হয় এবং উপরোক্ত পাত্রগুলো ব্যবহারই হতো মদ প্রস্তুতের জন্য।
এ কারণে এগুলোর ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে।
৪৩৬৯
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ أَبِيْ
جَمْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُوْلُ قَدِمَ وَفْدُ عَبْدِ الْقَيْسِ
عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا هَذَا
الْحَيَّ مِنْ رَبِيْعَةَ وَقَدْ حَالَتْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ كُفَّارُ مُضَرَ
فَلَسْنَا نَخْلُصُ إِلَيْكَ إِلَّا فِيْ شَهْرٍ حَرَامٍ فَمُرْنَا بِأَشْيَاءَ
نَأْخُذُ بِهَا وَنَدْعُوْ إِلَيْهَا مَنْ وَرَاءَنَا قَالَ آمُرُكُمْ بِأَرْبَعٍ
وَأَنْهَاكُمْ عَنْ أَرْبَعٍ الإِيْمَانِ بِاللهِ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ
إِلَّا اللهُ وَعَقَدَ وَاحِدَةً وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ
وَأَنْ تُؤَدُّوْا لِلهِ خُمْسَ مَا غَنِمْتُمْ وَأَنْهَاكُمْ عَنْ الدُّبَّاءِ
وَالنَّقِيْرِ وَالْحَنْتَمِ وَالْمُزَفَّتِ.
আবূ
জামরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) থেকে
শুনেছি, তিনি বলেছেন- আবদুল কায়স গোত্রে একটি প্রতিনিধি দল নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা অর্থাৎ এই ছোট্ট
দল রাবী'আহ'র গোত্র। আমাদের এবং আপনার মাঝখানে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে মুদার গোত্রের
মুশরিকরা। কাজেই আমরা নিষিদ্ধ মাসগুলো ব্যতীত অন্য সময়ে আপনার কাছে আসতে পারি না।
এ জন্য আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বিষয়ের নির্দেশ দিয়ে দিন যেগুলোর উপর আমরা 'আমাল
করতে থাকব এবং যারা আমাদের পেছনে রয়েছে তাদেরকেও সেই দিকে আহ্বান জানাব। তিনি
বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের হুকুম দিচ্ছি এবং চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি।
(বিষয়গুলো হল) আল্লাহ্র উপর ঈমান আনা অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই এ
কথার সাক্ষ্য দেয়া। (কথাটি বলে) তিনি আঙ্গুলের সাহায্যে এক গুণলেন। আর সলাত আদায়
করা, যাকাত দেয়া এবং তোমরা যে গানীমাত লাভ করবে তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্র জন্য
জমা দেয়া। আর আমি তোমাদেরকে লাউয়ের পাত্র, নাকীর নামক খোদাইকৃত কাঠের পাত্র, সবুজ
কলসী এবং মুযাফফাত নামক তৈল মাখানো পাত্র ব্যবহার থেকে নিষেধ করছি। [৫৩] (আ.প্র.
৪০২৩, ই.ফা. ৪০২৭)
৪৩৭০
يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ حَدَّثَنِي ابْنُ وَهْبٍ أَخْبَرَنِيْ عَمْرٌو
وَقَالَ بَكْرُ بْنُ مُضَرَ عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ عَنْ بُكَيْرٍ أَنَّ
كُرَيْبًا مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ حَدَّثَهُ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ وَعَبْدَ
الرَّحْمَنِ بْنَ أَزْهَرَ وَالْمِسْوَرَ بْنَ مَخْرَمَةَ أَرْسَلُوْا إِلَى
عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا فَقَالُوا اقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلَامَ مِنَّا
جَمِيْعًا وَسَلْهَا عَنْ الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعَصْرِ وَإِنَّا أُخْبِرْنَا
أَنَّكِ تُصَلِّيْهَا وَقَدْ بَلَغَنَا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى
عَنْهَا قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَكُنْتُ أَضْرِبُ مَعَ عُمَرَ النَّاسَ عَنْهُمَا
قَالَ كُرَيْبٌ فَدَخَلْتُ عَلَيْهَا وَبَلَّغْتُهَا مَا أَرْسَلُوْنِيْ فَقَالَتْ
سَلْ أُمَّ سَلَمَةَ فَأَخْبَرْتُهُمْ فَرَدُّوْنِيْ إِلَى أُمِّ سَلَمَةَ بِمِثْلِ
مَا أَرْسَلُوْنِيْ إِلَى عَائِشَةَ فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ
صلى الله عليه وسلم يَنْهَى عَنْهُمَا وَإِنَّهُ صَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ دَخَلَ
عَلَيَّ وَعِنْدِيْ نِسْوَةٌ مِنْ بَنِيْ حَرَامٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَصَلَّاهُمَا
فَأَرْسَلْتُ إِلَيْهِ الْخَادِمَ فَقُلْتُ قُوْمِيْ إِلَى جَنْبِهِ فَقُوْلِيْ
تَقُوْلُ أُمُّ سَلَمَةَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلَمْ أَسْمَعْكَ تَنْهَى عَنْ
هَاتَيْنِ الرَّكْعَتَيْنِ فَأَرَاكَ تُصَلِّيْهِمَا فَإِنْ أَشَارَ بِيَدِهِ
فَاسْتَأْخِرِيْ فَفَعَلَتْ الْجَارِيَةُ فَأَشَارَ بِيَدِهِ فَاسْتَأْخَرَتْ
عَنْهُ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ يَا بِنْتَ أَبِيْ أُمَيَّةَ سَأَلْتِ عَنْ
الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعَصْرِ إِنَّهُ أَتَانِيْ أُنَاسٌ مِنْ عَبْدِ
الْقَيْسِ بِالإِسْلَامِ مِنْ قَوْمِهِمْ فَشَغَلُوْنِيْ عَنْ الرَّكْعَتَيْنِ
اللَّتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ فَهُمَا هَاتَانِ.
বুকায়র
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনু 'আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদকৃত
গোলাম কুরাইব (রহঃ) তাকে বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু 'আব্বাস, আবদুর রহমান ইবনু আযহার
এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) (এ তিনজনে) আমাকে 'আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে পাঠিয়ে
বললেন, তাঁকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে এবং তাঁকে আসরের পরের দু'রাক'আত
সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। কারণ আমরা অবহিত হয়েছি যে, আপনি নাকি এই দু'রাক'আত
সলাত আদায় করেন অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু'রাক'আত সলাত আদায়
করতে নিষেধ করেছেন- এ হাদীসও আমাদের কাছে পৌঁছেছে। ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি
'উমার (রাঃ)-এর উপস্থিতিতে এ দু'রাক'আত সলাত আদায়কারী লোকদেরকে প্রহার করতাম।
কুরায়ব (রহঃ) বলেন, আমি তাঁর ['আয়িশাহ (রাঃ) কাছে গেলাম এবং তারা আমাকে যে
ব্যাপারে পাঠিয়েছেন তা জানালাম। তিনি বললেন, বিষয়টি উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর কাছে
জিজ্ঞেস কর। এরপর আমি তাঁদেরকে জানালে তাঁরা আবার আমাকে উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর
কাছে পাঠালেন যেভাবে তারা আমাকে 'আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখন উম্মু
সালামাহ (রাঃ) বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি,
তিনি দু'রাক'আত সলাত আদায় করা থেকে নিষেধ করেছেন। কিন্তু একদিন তিনি 'আসরের সলাত
আদায় করে আমার ঘরে ঘরে প্রবেশ করলেন। এ সময় আমার কাছে ছিল আনসারদের বানী হারাম
গোত্রের কতিপয় মহিলা। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'রাক'আত সলাত
আদায় করলেন। আমি তখন পরিচারিকাদের পাঠিয়ে বললাম, তুমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে এবং বলবে, “উম্মু সালামাহ (রাঃ) আপনাকে
এ কথা বলছেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি কি আপনাকে এ দু'রাক'আত আদায় করা থেকে নিষেধ
করতে শুনিনি অথচ দেখতে পাচ্ছি আপনি সে দু'রাক'আত আদায় করছেন?” এরপর যদি তিনি হাত
দিয়ে ইঙ্গিত করেন তাহলে পিছনে সরে যাবে। পরিচারিকা গিয়ে সেভাবেই বলল। তিনি হাত
দিয়ে ইংগিত করলেন। পরিচারিকা পেছনের দিকে সরে গেল। সলাত সম্পাদন করে তিনি বললেন,
হে আবূ উমাইয়্যার কন্যা! (উম্মু সালামাহ) তুমি আমাকে আসরের পরের দু'রাক'আত সলাতের
কথা জিজ্ঞেস করছে। আসলে আজ 'আবদুল কায়স গোত্র থেকে তাদের কতিপয় লোক আমার কাছে
ইসলাম গ্রহণ করতে এসেছিল। তাঁরা আমাকে ব্যস্ত রাখার কারণে যুহরের পরের দু'আক'আত
সলাত করতে পারিনি। সেই দু'রাক'আত হল এ দু'রাক'আত সলাত। [১২৩৩] (আ.প্র. ৪০২৪, ই.ফা.
৪০২৮)
৪৩৭১
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ الْجُعْفِيُّ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَامِرٍ
عَبْدُ الْمَلِكِ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ هُوَ ابْنُ طَهْمَانَ عَنْ أَبِيْ
جَمْرَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَوَّلُ جُمُعَةٍ
جُمِّعَتْ بَعْدَ جُمُعَةٍ جُمِّعَتْ فِيْ مَسْجِدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم فِيْ مَسْجِدِ عَبْدِ الْقَيْسِ بِجُوَاثَى يَعْنِيْ قَرْيَةً مِنَ
الْبَحْرَيْنِ.
ইবনু
'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদে জুমু'আহর সলাত জারী করার পরে সর্বপ্রথম যে মাসজিদে
জুমু'আহর সলাত জারী করা হয়েছিল তা হল বাহরাইনের জুয়াসা এলাকায় অবস্থিত 'আবদুল
ক্বায়স গোত্রের মাসজিদ। [৮৯২] (আ.প্র. ৪০২৫, ই.ফা. ৪০২৯)
৬৪/৭১ অধ্যায়ঃ
বানু হানীফার প্রতিনিধি দল এবং সুমামাহ ইবনু উসাল (রাঃ)-এর ঘটনা
৪৩৭২
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ قَالَ حَدَّثَنِيْ
سَعِيْدُ بْنُ أَبِيْ سَعِيْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم خَيْلًا قِبَلَ نَجْدٍ
فَجَاءَتْ بِرَجُلٍ مِنْ بَنِيْ حَنِيْفَةَ يُقَالُ لَهُ ثُمَامَةُ بْنُ أُثَالٍ
فَرَبَطُوْهُ بِسَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ فَخَرَجَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ فَقَالَ عِنْدِيْ خَيْرٌ
يَا مُحَمَّدُ إِنْ تَقْتُلْنِيْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ
عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ كُنْتَ تُرِيْدُ الْمَالَ فَسَلْ مِنْهُ مَا شِئْتَ فَتُرِكَ
حَتَّى كَانَ الْغَدُ ثُمَّ قَالَ لَهُ مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ قَالَ مَا
قُلْتُ لَكَ إِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ فَتَرَكَهُ حَتَّى كَانَ بَعْدَ
الْغَدِ فَقَالَ مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ فَقَالَ عِنْدِيْ مَا قُلْتُ لَكَ
فَقَالَ أَطْلِقُوْا ثُمَامَةَ فَانْطَلَقَ إِلَى نَجْلٍ قَرِيْبٍ مِنَ
الْمَسْجِدِ فَاغْتَسَلَ ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا
إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ يَا مُحَمَّدُ
وَاللهِ مَا كَانَ عَلَى الْأَرْضِ وَجْهٌ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ وَجْهِكَ فَقَدْ
أَصْبَحَ وَجْهُكَ أَحَبَّ الْوُجُوْهِ إِلَيَّ وَاللهِ مَا كَانَ مِنْ دِيْنٍ
أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ دِيْنِكَ فَأَصْبَحَ دِيْنُكَ أَحَبَّ الدِّيْنِ إِلَيَّ
وَاللهِ مَا كَانَ مِنْ بَلَدٍ أَبْغَضُ إِلَيَّ مِنْ بَلَدِكَ فَأَصْبَحَ
بَلَدُكَ أَحَبَّ الْبِلَادِ إِلَيَّ وَإِنَّ خَيْلَكَ أَخَذَتْنِيْ وَأَنَا
أُرِيْدُ الْعُمْرَةَ فَمَاذَا تَرَى فَبَشَّرَهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم وَأَمَرَهُ أَنْ يَعْتَمِرَ فَلَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ قَالَ لَهُ قَائِلٌ
صَبَوْتَ قَالَ لَا وَلَكِنْ أَسْلَمْتُ مَعَ مُحَمَّدٍ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم وَلَا وَاللهِ لَا يَأْتِيْكُمْ مِنَ الْيَمَامَةِ حَبَّةُ حِنْطَةٍ
حَتَّى يَأْذَنَ فِيْهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। তারা সুমামাহ ইবনু উসাল
নামক বনু হানীফার এক লোককে ধরে আনলেন এবং মাসজিদে নাববীর একটি খুঁটির সঙ্গে তাঁকে
বেঁধে রাখলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে গিয়ে বললেন,
ওহে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে উত্তর দিল, হে মুহাম্মাদ! আমার কাছে
তো ভালই মনে হচ্ছে। যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে আপনি একজন খুনিকে হত্যা করবেন। আর
যদিকে আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি
অর্থ সম্পদ পেতে চান তাহলে যতটা ইচ্ছা দাবী করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) তাকে সেই অবস্থার উপর রেখে দিলেন। এভাবে পরের দিন আসল। নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার তাকে বললেন, ওহে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে?
সে বলল, আমার কাছে সেটিই মনে হচ্ছে যা আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, যদি আপনি অনুগ্রহ
করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি তাকে সেই অবস্থায় রেখে
দিলেন। এভাবে এর পরের দিনও আসল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন
মনে হচ্ছে? সে বলল, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে যা আমি পূর্বেই বলেছি। নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা সুমামাহর বন্ধন ছেড়ে দাও। এবার
সুমামাহ মাসজিদে নাববীতে প্রবেশ করল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন
ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র রসূল। (তিনি
বললেন) হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্র কসম! ইতোপূর্বে আমার কাছে যমীনের উপর আপনার
চেহারার চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় আর কোন চেহারা ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারাই আমার
কাছে সকল চেহারা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আল্লাহ্র কসম! আমার কাছে আপনার দ্বীন
অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত অন্য কোন দ্বীন ছিল না। এখন আপনার দীনই আমার কাছে সকল দ্বীনের
চেয়ে প্রিয়তম। আল্লাহ্র কসম! আমার মনে আপনার শহরের চেয়ে অধিক খারাপ শহর আর কোনটি
ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সকল শহরের চেয়ে অধিক প্রিয়। আপনার
অশ্বারোহী সৈনিকগণ আমাকে ধরে এনেছে, সে সময় আমি 'উমরাহর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলাম।
এখন আপনি আমাকে কী হুকুম করেন? তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তাঁকে সু-সংবাদ প্রদান করলেন এবং 'উমরাহ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি যখন
মক্কায় আসলেন তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি উত্তর করলেন, না,
বরং আমি মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ইসলাম
গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহ্র কসম! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুমতি
ব্যতীত তোমাদের কাছে ইয়ামামাহ থেকে গমের একটি দানাও আসবে না। [৪৬২; মুসলিম ৩২/১৯,
হাঃ ১৭৬৪] (আ.প্র. ৪০২৬, ই.ফা. ৪০৩০)
৪৩৭৩
أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ
حُسَيْنٍ حَدَّثَنَا نَافِعُ بْنُ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُمَا قَالَ قَدِمَ مُسَيْلِمَةُ الْكَذَّابُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم فَجَعَلَ يَقُوْلُ إِنْ جَعَلَ لِيْ مُحَمَّدٌ الْأَمْرَ مِنْ
بَعْدِهِ تَبِعْتُهُ وَقَدِمَهَا فِيْ بَشَرٍ كَثِيْرٍ مِنْ قَوْمِهِ فَأَقْبَلَ
إِلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَعَهُ ثَابِتُ بْنُ قَيْسِ بْنِ
شَمَّاسٍ وَفِيْ يَدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قِطْعَةُ جَرِيْدٍ حَتَّى
وَقَفَ عَلَى مُسَيْلِمَةَ فِيْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ لَوْ سَأَلْتَنِيْ هَذِهِ
الْقِطْعَةَ مَا أَعْطَيْتُكَهَا وَلَنْ تَعْدُوَ أَمْرَ اللهِ فِيْكَ وَلَئِنْ
أَدْبَرْتَ لَيَعْقِرَنَّكَ اللهُ وَإِنِّيْ لَأَرَاكَ الَّذِيْ أُرِيْتُ فِيْهِ
مَا رَأَيْتُ وَهَذَا ثَابِتٌ يُجِيْبُكَ عَنِّيْ ثُمَّ انْصَرَفَ عَنْهُ.
ইবনু
'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর যুগে একবার মিথ্যুক মুসাইলামাহ (মাদীনাহয়) এসেছিল। সে বলতে লাগল,
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি আমাকে তাঁর পরে তাঁর
স্থলাভিষিক্ত করে যায় তাহলে আমি তাঁর অনুগত হয়ে যাব। সে তার গোত্রের বহু লোকজনসহ
এসেছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিত ইবনু কায়স ইবনু
সাম্মাসকে সঙ্গে নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। মুসাইলামাহ তার সঙ্গী-সাথীদের মাঝে ছিল,
এই অবস্থায় তিনি তার কাছে পৌঁছলেন। তিনি বললেন, যদি তুমি আমার কাছে এ ডালটিও চাও
তবে তাও আমি তোমাকে দেব না। তোমার ব্যাপারে আল্লাহ্র নির্দেশ কক্ষনো লঙ্ঘিত হবে
না। যদি তুমি আমার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস
করে দিবেন। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখতে পাচ্ছি যেমনটি আমাকে (স্বপ্নে) দেখানো
হয়েছে। এই সাবিত আমার পক্ষ হতে তোমাকে জবাব দেবে। এরপর তিনি তার নিকট হতে চলে
আসলেন। [৩৬২০] (আ.প্র. ৪০২৭, ই.ফা. ৪০৩১)
৪৩৭৪
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَسَأَلْتُ عَنْ قَوْلِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم إِنَّكَ أُرَى الَّذِيْ أُرِيْتُ فِيْهِ مَا أَرَيْتُ فَأَخْبَرَنِيْ أَبُوْ
هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ
رَأَيْتُ فِيْ يَدَيَّ سِوَارَيْنِ مِنْ ذَهَبٍ فَأَهَمَّنِيْ شَأْنُهُمَا
فَأُوْحِيَ إِلَيَّ فِي الْمَنَامِ أَنْ انْفُخْهُمَا فَنَفَخْتُهُمَا فَطَارَا
فَأَوَّلْتُهُمَا كَذَّابَيْنِ يَخْرُجَانِ بَعْدِيْ أَحَدُهُمَا الْعَنْسِيُّ
وَالْآخَرُ مُسَيْلِمَةُ.
ইবনু
'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর উক্তি “আমি তোমাকে তেমনই দেখতে পাচ্ছি যেমন আমাকে দেখানো হয়েছিল”
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাকে জানালেন যে, রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একদিন আমি ঘুমাচ্ছিলাম তখন স্বপ্নে
দেখলাম, আমার দু'হাতে স্বর্ণের দু'টি কঙ্কন। কঙ্কন দু'টি আমাকে চিন্তিত করল। তখন
ঘুমের মধ্যেই আমার প্রতি ওয়াহী করা হল, কাঁকন দু'টিতে ফুঁ দাও। আমি সে দু'টিতে ফুঁ
দিলে তা উড়ে গেল। আমি এর ব্যাখ্যা করেছি দু'জন মিথ্যাচারী (নাবী) যারা আমার পরে
বের হবে। তাদের একজন 'আনসী, অন্যজন মুসাইলামাহ। [৩৬২১] (আ.প্র. ৪০২৭, ই.ফা. ৪০৩১)
৪৩৭৫
إِسْحَاقُ بْنُ نَصْرٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنْ مَعْمَرٍ عَنْ
هَمَّامٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ قَالَ
رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيْتُ بِخَزَائِنِ
الْأَرْضِ فَوُضِعَ فِيْ كَفِّيْ سِوَارَانِ مِنْ ذَهَبٍ فَكَبُرَا عَلَيَّ
فَأَوْحَى اللهُ إِلَيَّ أَنْ انْفُخْهُمَا فَنَفَخْتُهُمَا فَذَهَبَا
فَأَوَّلْتُهُمَا الْكَذَّابَيْنِ اللَّذَيْنِ أَنَا بَيْنَهُمَا صَاحِبَ
صَنْعَاءَ وَصَاحِبَ الْيَمَامَةِ.
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি ঘুমাচ্ছিলাম এমতাবস্থায় (স্বপ্নে) আমাকে পৃথিবীর
সকল দেয়া হল এবং আমার হাতে দু'টি স্বর্ণ কঙ্কন রাখা হল। এ দু'টি আমার কাছে গুরুতর
মনে হল। তখন ওয়াহী যোগে আমাকে জানানো হল যে, ও দু'টিতে ফুঁ দাও। আমি ফুঁ দিলাম,
তখন ও দু'টি উধাও হয়ে গেল। আমি এ দু'টির ব্যাখ্যা করলাম যে, এরা সেই দু'
মিথ্যাচারী (নাবী) যাদের মাঝখানে আমি অবস্থান করছি। অর্থাৎ সান'আর অধিবাসী (আসওয়াদ
আনসী) এবং ইয়ামামার অধিবাসী (মুসাইলামাতুল কাযযাব)। [৩৬২১; মুসলিম ৪২/৪, হাঃ ২২৭৪,
আহমাদ ১১৮১৪] (আ.প্র. ৪০২৮, ই.ফা. ৪০৩২)
৪৩৭৬
الصَّلْتُ بْنُ مُحَمَّدٍ قَالَ سَمِعْتُ مَهْدِيَّ بْنَ مَيْمُوْنٍ قَالَ
سَمِعْتُ أَبَا رَجَاءٍ الْعُطَارِدِيَّ يَقُوْلُ كُنَّا نَعْبُدُ الْحَجَرَ
فَإِذَا وَجَدْنَا حَجَرًا هُوَ أَخْيَرُ مِنْهُ أَلْقَيْنَاهُ وَأَخَذْنَا
الْآخَرَ فَإِذَا لَمْ نَجِدْ حَجَرًا جَمَعْنَا جُثْوَةً مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ
جِئْنَا بِالشَّاةِ فَحَلَبْنَاهُ عَلَيْهِ ثُمَّ طُفْنَا بِهِ فَإِذَا دَخَلَ
شَهْرُ رَجَبٍ قُلْنَا مُنَصِّلُ الْأَسِنَّةِ فَلَا نَدَعُ رُمْحًا فِيْهِ
حَدِيْدَةٌ وَلَا سَهْمًا فِيْهِ حَدِيْدَةٌ إِلَّا نَزَعْنَاهُ وَأَلْقَيْنَاهُ
شَهْرَ رَجَبٍ.
আবূ
রাজা উতারিদী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(ইসলাম পূর্ব যুগে) আমরা একটি পাথরের পূজা
করতাম। যখন এ অপেক্ষা উত্তম কোন পাথর পেতাম তখন এটিকে নিক্ষেপ করে দিয়ে অপরটির
পূজা আরম্ভ করতাম। কোন পাথর না পেলে কিছু মাটি একত্রিত করে স্তুপ বানিয়ে নিতাম। তারপর
একটি বাকরী এনে সেই স্তুপের উপর দোহন করতাম তারপর এর চারপাশে তাওয়াফ করতাম। আর রজব
মাস এলে আমরা বলতাম, এটা তীর থেকে ফলা বিচ্ছিন্ন করার মাস। কাজেই আমরা রজব মাসে সব
ক'টি তীর ও বর্শা থেকে এর তীক্ষ্ণাংশ খুলে রেখে দিতাম। রজব মাসব্যাপী আমরা এগুলো
খুলে নিক্ষেপ করতাম। (আ.প্র. ৪০২৯, ই.ফা. ৪০৩৩)
৪৩৭৭
وَسَمِعْتُ أَبَا رَجَاءٍ يَقُوْلُ كُنْتُ يَوْمَ بُعِثَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم غُلَامًا أَرْعَى الإِبِلَ عَلَى أَهْلِيْ فَلَمَّا سَمِعْنَا
بِخُرُوْجِهِ فَرَرْنَا إِلَى النَّارِ إِلَى مُسَيْلِمَةَ الْكَذَّابِ.
রাবী
মাহদী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি আবূ রাজা (রহঃ)- কে বলতে শুনেছি যে, নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নবুয়ত লাভের সময় আমি ছিলাম অল্প বয়স্ক
বালক। আমি আমাদের উট চরাতাম। যখন আমরা তাঁর অভিযানের কথা শুনলাম তখন আমরা পালিয়ে
এলাম জাহান্নামের দিকে অর্থ্যাত মিথ্যাচারী (নাবী) মুসাইলামাহ্র দিকে। (আ.প্র.
৪০২৯, ই.ফা. ৪০৩৩)
৬৪/৭২. অধ্যায়ঃ
আসওয়াদ 'আনসীর ঘটনা
৪৩৭৮
سَعِيْدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْجَرْمِيُّ حَدَّثَنَا يَعْقُوْبُ بْنُ
إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا أَبِيْ عَنْ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ عُبَيْدَةَ بْنِ
نَشِيْطٍ وَكَانَ فِيْ مَوْضِعٍ آخَرَ اسْمُهُ عَبْدُ اللهِ أَنَّ عُبَيْدَ اللهِ
بْنَ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ قَالَ بَلَغَنَا أَنَّ مُسَيْلِمَةَ الْكَذَّابَ
قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ فَنَزَلَ فِيْ دَارِ بِنْتِ الْحَارِثِ وَكَانَ تَحْتَهُ
بِنْتُ الْحَارِثِ بْنِ كُرَيْزٍ وَهِيَ أُمُّ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَامِرٍ
فَأَتَاهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَعَهُ ثَابِتُ بْنُ قَيْسِ بْنِ
شَمَّاسٍ وَهُوَ الَّذِيْ يُقَالُ لَهُ خَطِيْبُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم وَفِيْ يَدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَضِيْبٌ فَوَقَفَ عَلَيْهِ
فَكَلَّمَهُ فَقَالَ لَهُ مُسَيْلِمَةُ إِنْ شِئْتَ خَلَّيْتَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ
الْأَمْرِ ثُمَّ جَعَلْتَهُ لَنَا بَعْدَكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
لَوْ سَأَلْتَنِيْ هَذَا الْقَضِيْبَ مَا أَعْطَيْتُكَهُ وَإِنِّيْ لَأَرَاكَ
الَّذِيْ أُرِيْتُ فِيْهِ مَا أُرِيْتُ وَهَذَا ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ
وَسَيُجِيْبُكَ عَنِّيْ فَانْصَرَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم .
উবাইদুল্লাহ
ইবনু 'আবদুল্লাহ ইবনু 'উত্বাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমাদের কাছে এ খবর পৌঁছে যে, [রসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর যামানায়] মিথ্যাচারী মুসাইলামাহ একবার
মদিনায় এসে হারিসের কন্যার ঘরে অবস্থান করেছিল। হারিস ইবনু কুরাইয়ের কন্যা তথা
'আবদুল্লাহ ইবনু 'আমিরের মা ছিল তার (মুসাইলামাহ্র) স্ত্রী। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে আসলেন। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাবিত ইবনু কায়স ইবনু
শাম্মাস (রাঃ) আর তিনি হলেন সেই ব্যাক্তি যাঁকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)- এর খতীর বলা হত। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। তিনি তার কাছে গিয়ে তার সঙ্গে কথাবার্তা
বললেন। মুসাইলামাহ তাঁকে [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে]
বলল, আপনি ইচ্ছা করলে আমার এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের মাঝে বাধা এভাবে তুলে দিতে
পারেন যে, আপনার পরে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দিবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি যদি এ ডালটিও আমার কাছে চাও, তাও আমি তোমাকে দেব
না। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখছি যেমনটি আমাকে (স্বপ্নযোগে) দেখানো হয়েছে। এই সাবিত
ইবনু কায়স আমার পক্ষ থেকে তোমার জবাব দেবে। এ কথা বলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) চলে গেলেন। [৩৬২০] (আ.প্র. ৪০৩০, ই.ফা. ৪০৩৪)
৪৩৭৯
قَالَ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ سَأَلْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ
عَبَّاسٍ عَنْ رُؤْيَا رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم الَّتِيْ ذَكَرَ فَقَالَ
ابْنُ عَبَّاسٍ ذُكِرَ لِيْ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُرِيْتُ أَنَّهُ وُضِعَ فِيْ يَدَيَّ سِوَارَانِ مِنْ
ذَهَبٍ فَفُظِعْتُهُمَا وَكَرِهْتُهُمَا فَأُذِنَ لِيْ فَنَفَخْتُهُمَا فَطَارَا
فَأَوَّلْتُهُمَا كَذَّابَيْنِ يَخْرُجَانِ فَقَالَ عُبَيْدُ اللهِ أَحَدُهُمَا
الْعَنْسِيُّ الَّذِيْ قَتَلَهُ فَيْرُوْزُ بِالْيَمَنِ وَالْآخَرُ مُسَيْلِمَةُ
الْكَذَّابُ.
উবাইদুল্লাহ
ইবনু 'আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি “আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ)- কে
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর উল্লেখিত স্বপ্ন সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলাম। তিনি ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) বললেন, [আবু হুরায়রা কর্তৃক] আমাকে বলা
হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি ঘুমাচ্ছিলাম
এমতাবস্থায় আমাকে দেখানো হল যে, আমার দু'হাতে দু'টি সোনার কাঁকন রাখা হয়েছে। ও
দু'টি আমার কাছে বীভৎস ঠেকল এবং তা অপছন্দ করলাম। আমাকে (ফুঁ দিতে ) বলা হলে আমি ও
দু'টিকে ফুঁ দিলাম। সে দু'টি উড়ে গেল। আমি এ দু'টির ব্যাখ্যা করলাম যে, দু'টি
মিথ্যাচারী (নাবী) আবির্ভূত হবে। 'উবাইদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, এ দু'জনের একজন হল
আসওয়াদ আল'আনসী, যাকে ফাইরুয নামক এক ব্যাক্তি ইয়ামানে হত্যা করে আর অপরজন হল
মুসাইলামাহ। [৩৬২১] (আ.প্র. ৪০৩০, ই.ফা. ৪০৩৪)
৬৪/৭৩. অধ্যায়ঃ
নাজরান অধিবাসীদের ঘটনা
৪৩৮০
عَبَّاسُ بْنُ الْحُسَيْنِ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ عَنْ
إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنْ صِلَةَ بْنِ زُفَرَ عَنْ حُذَيْفَةَ
قَالَ جَاءَ الْعَاقِبُ وَالسَّيِّدُ صَاحِبَا نَجْرَانَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى
الله عليه وسلم يُرِيْدَانِ أَنْ يُلَاعِنَاهُ قَالَ فَقَالَ أَحَدُهُمَا
لِصَاحِبِهِ لَا تَفْعَلْ فَوَاللهِ لَئِنْ كَانَ نَبِيًّا فَلَاعَنَّا لَا
نُفْلِحُ نَحْنُ وَلَا عَقِبُنَا مِنْ بَعْدِنَا قَالَا إِنَّا نُعْطِيْكَ مَا
سَأَلْتَنَا وَابْعَثْ مَعَنَا رَجُلًا أَمِيْنًا وَلَا تَبْعَثْ مَعَنَا إِلَّا
أَمِيْنًا فَقَالَ لَأَبْعَثَنَّ مَعَكُمْ رَجُلًا أَمِيْنًا حَقَّ أَمِيْنٍ
فَاسْتَشْرَفَ لَهُ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ قُمْ يَا
أَبَا عُبَيْدَةَ بْنَ الْجَرَّاحِ فَلَمَّا قَامَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم هَذَا أَمِيْنُ هَذِهِ الْأُمَّةِ.
হুযাইফাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাজরান এলাকার দু'জন সরদার আকিব
এবং সাইয়িদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এসে তাঁর
সঙ্গে মুবাহালা করতে চেয়েছিল। বর্ণনাকারী হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, তখন তাদের একজন তার
সঙ্গীকে বলল, এরুপ করো না। কারণ আল্লাহ্র কসম! তিনি যদি নবী হয়ে থাকেন আর আমরা
তাঁর সঙ্গে মুবাহালা [৭৯] করি তাহলে আমরা এবং আমাদের পরবর্তী সন্তান-সন্ততি (কেউ)
রক্ষা পাবে না। তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলল,
আপনি আমাদের নিকট হতে যা চাবেন আপনাকে আমরা তা-ই দেব। তবে এর জন্য আপনি আমাদের সঙ্গে
একজন আমানতদার ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিন। আমানতদার ব্যাতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে আমাদের
সঙ্গে পাঠাবেন না। তিন বললেন, আমি তোমাদের সঙ্গে এমন একজন আমানতদার পাঠাবো যে
প্রকৃতই আমানতদার এবং পাক্কা আমানতদার। এ পদে ভূষিত হওয়ার জন্য রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাহাবীগণ আগ্রহান্বিত হলেন। তখন তিনি
বললেন, যে আবূ 'উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্! তুমি উঠে দাঁড়াও। তিনি যখন দাঁড়ালেন, তখন
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ হচ্ছে উম্মতের সত্যিকার
আমানতদার। [৩৭৪৫] (আ.প্র. ৪০৩১, ই.ফা. ৪০৩৫)
[৭৯]
পরস্পর পরস্পরকে নির্দিষ্ট পদ্বতিতে অভিসম্পাত করাকে মুবাহালা বলা হয়ে থাকে। পদ্বতিটি
হলোঃ উভয় পক্ষ স্বীয় পরিবার পরিজনসহ লোকালয় ত্যাগ করে জঙ্গলে চলে যাবে এবং সেখানে এ
বলে আল্লাহ্র নিকট দু'আ করবে যে, আমাদের মাধ্যে যে মিথ্যাবাদী তার প্রতি ধ্বংস নেমে
আসুক।
৪৩৮১
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا
شُعْبَةُ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ عَنْ صِلَةَ بْنِ زُفَرَ عَنْ حُذَيْفَةَ
رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ أَهْلُ نَجْرَانَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم فَقَالُوا ابْعَثْ لَنَا رَجُلًا أَمِيْنًا فَقَالَ لَأَبْعَثَنَّ إِلَيْكُمْ
رَجُلًا أَمِيْنًا حَقَّ أَمِيْنٍ فَاسْتَشْرَفَ لَهُ النَّاسُ فَبَعَثَ أَبَا
عُبَيْدَةَ بْنَ الْجَرَّاحِ.
হুযাইফাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাজরান অধিবাসীরা নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমাদের জন্য একজন আমানতদার
ব্যক্তি পাঠিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তোমাদের কাছে আমি একজন আমানতদার ব্যক্তিকেই পাঠাব
যিনি সত্যিই আমানতদার। লোকেরা এ সম্মান অর্জনের জন্য আগ্রহান্বিত হল। নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আবূ উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্ (রাঃ)- কে
পাঠালেন। [৩৭৪৫] (আ.প্র. ৪০৩২, ই.ফা. ৪০৩৬)
৪৩৮২
أَبُو الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ خَالِدٍ عَنْ أَبِيْ قِلَابَةَ
عَنْ أَنَسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِكُلِّ أُمَّةٍ أَمِيْنٌ
وَأَمِيْنُ هَذِهِ الْأُمَّةِ أَبُوْ عُبَيْدَةَ بْنُ الْجَرَّاحِ.
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন আমানতদার রয়েছে। আর এ উম্মাতের
আমানতদার হল আমূ 'উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্। [৩৭৪৪] (আ.প্র. ৪০৩৩, ই.ফা. ৪০৩৭)
৬৪/৭৪. অধ্যায়ঃ
ওমান ও বাহরাইনের ঘটনা
৪৩৮৩
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ سَمِعَ ابْنُ الْمُنْكَدِرِ
جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم لَوْ قَدْ جَاءَ مَالُ الْبَحْرَيْنِ لَقَدْ
أَعْطَيْتُكَ هَكَذَا وَهَكَذَا ثَلَاثًا فَلَمْ يَقْدَمْ مَالُ الْبَحْرَيْنِ
حَتَّى قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا قَدِمَ عَلَى أَبِيْ
بَكْرٍ أَمَرَ مُنَادِيًا فَنَادَى مَنْ كَانَ لَهُ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم دَيْنٌ أَوْ عِدَةٌ فَلْيَأْتِنِيْ قَالَ جَابِرٌ فَجِئْتُ أَبَا بَكْرٍ
فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَوْ جَاءَ مَالُ
الْبَحْرَيْنِ أَعْطَيْتُكَ هَكَذَا وَهَكَذَا ثَلَاثًا قَالَ فَأَعْطَانِيْ قَالَ
جَابِرٌ فَلَقِيْتُ أَبَا بَكْرٍ بَعْدَ ذَلِكَ فَسَأَلْتُهُ فَلَمْ يُعْطِنِيْ
ثُمَّ أَتَيْتُهُ فَلَمْ يُعْطِنِيْ ثُمَّ أَتَيْتُهُ الثَّالِثَةَ فَلَمْ
يُعْطِنِيْ فَقُلْتُ لَهُ قَدْ أَتَيْتُكَ فَلَمْ تُعْطِنِيْ ثُمَّ أَتَيْتُكَ
فَلَمْ تُعْطِنِيْ ثُمَّ أَتَيْتُكَ فَلَمْ تُعْطِنِيْ فَإِمَّا أَنْ تُعْطِيَنِيْ
وَإِمَّا أَنْ تَبْخَلَ عَنِّيْ فَقَالَ أَقُلْتَ تَبْخَلُ عَنِّيْ وَأَيُّ دَاءٍ
أَدْوَأُ مِنَ الْبُخْلِ قَالَهَا ثَلَاثًا مَا مَنَعْتُكَ مِنْ مَرَّةٍ إِلَّا
وَأَنَا أُرِيْدُ أَنْ أُعْطِيَكَ وَعَنْ عَمْرٍو عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ
سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ جِئْتُهُ فَقَالَ لِيْ أَبُوْ بَكْرٍ
عُدَّهَا فَعَدَدْتُهَا فَوَجَدْتُهَا خَمْسَ مِائَةٍ فَقَالَ خُذْ مِثْلَهَا
مَرَّتَيْنِ.
জাবির
ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, বাহরাইনের অর্থ-সম্পদ (জিযিয়া) আসলে তোমাকে এত দেব, এত
দেব এত দেব। তিনবার বললেন। এরপর বাহরাইন থেকে আর কোন অর্থ-সম্পদ আসেনি। আমতাবস্থায়
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর ওফাত হয়ে গেল। এরপর আবূ বাকরের
যুগে যখন সেই অর্থ সম্পদ আসল তখন তিনি একজন ঘোষণাকারীকে নির্দেশ দিলেন। সে ঘোষণা
করলঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে যার প্রাপ্য ঋণ আছে কিংবা
কোন ওয়াদা অপূর্ণ আছে সে যেন আমার কাছে আসে। জাবির (রাঃ) বলেনঃ আমি আবূ বাকর
(রাঃ)- এর কাছে এসে তাঁকে জানালাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আমাকে বলেছিলেন, যদি বাহরাইন থেকে অর্থ-সম্পদ আসে তা হলে তোমাকে আমি এত দেব, এত
দেব এত দেব। তিনবার বললেন। জাবির (রাঃ) বলেনঃ তখন আবূ বকর (রাঃ) আমাকে অর্থ-সম্পদ
দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, এরপর (আবার) আমি আবূ বকর (রাঃ)- এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম
এবং তার কাছে মাল চাইলাম। কিন্তু তিনি আমাকে কিছুই দিলেন না। এরপর আমি তাঁর কাছে
দ্বিতীয়বার আসি, তিনি আমাকে কিছুই দেননি। এরপর আমি তাঁর কাছে তৃতীয়বার এলাম। তখনো
তিনি আমাকে কিছুই দিলেন না। কাজেই আমি তাঁকে বললামঃ আমি আপনার কাছে এসেছিলাম
কিন্তু আপনি আমাকে দেননি। তারপর (আবার) এসেছিলাম তখনো দেননি। এরপরেও এসেছিলাম তখনো
আমাকে আপনি দেননি। কাজেই এখন হয় আপনি আমাকে সম্পদ দিবেন নয়তো আমি মনে করবঃ আপনি
আমার ব্যাপারে কৃপণতা করছেন। তখন তিনি বললেনঃ এ কী বলছ 'আমার ব্যাপারে কৃপণতা
করছেন'। কৃপণতা থেকে মারাত্মক ব্যাধি আর কি হতে পারে। কথাটি তিনি তিনবার বললেন।
(এরপর তিনি বললেন) যতবারই আমি তোমাকে সম্পদ দেয়া থেকে বিরত রয়েছি ততবারই আমার
ইচ্ছা ছিল যে, তোমাকে দেব। 'আম্র [ইবনু দীনার (রহঃ)] মুহাম্মাদ ইবনু 'আলী (রাঃ)-
এর কাছে আসলে তিনি আমাকে বললেন, এ (আশরাফী) গুলো গুণো, আমি এগুলো গুণে দেখলাম
এখানে পাঁচশ' (আশরাফী) রয়েছে। তিনি বললেন, এ পরিমাণ আরো দু'বার উঠিয়ে নাও।
[২২৯৬](আ.প্র. ৪০৩৪, ই.ফা. ৪০৩৮)
৬৪/৭৫. অধ্যায়ঃ
আশ'আরী ও ইয়ামানবাসীদের আগমন
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) থেকে আবূ আশ'আরী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আশ'আরীগণ আমার অন্তর্ভুক্ত
আর আমি তাদের অন্তর্ভূক্ত।
৪৩৮৪
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ وَإِسْحَاقُ بْنُ نَصْرٍ قَالَا حَدَّثَنَا
يَحْيَى بْنُ آدَمَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِيْ زَائِدَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ
إِسْحَاقَ عَنِ الْأَسْوَدِ بْنِ يَزِيْدَ عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِيَ اللهُ
عَنْهُ قَالَ قَدِمْتُ أَنَا وَأَخِيْ مِنَ الْيَمَنِ فَمَكَثْنَا حِيْنًا مَا
نُرَى ابْنَ مَسْعُوْدٍ وَأُمَّهُ إِلَّا مِنْ أَهْلِ الْبَيْتِ مِنْ كَثْرَةِ دُخُوْلِهِمْ
وَلُزُوْمِهِمْ لَهُ.
আবূ
মূসা আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি এবং আমার ভাই ইয়ামান থেকে এসে
দীর্ঘ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছি। এ সময়ে ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) ও তাঁর মায়ের অধিক
আসা-যাওয়া ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে
আমরা তাঁদরকে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত মনে করেছিলাম। [৩৭৬৩] (আ.প্র. ৪০৩৫, ই.ফা.
৪০৩৯)
৪৩৮৫
أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ السَّلَامِ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ أَبِيْ
قِلَابَةَ عَنْ زَهْدَمٍ قَالَ لَمَّا قَدِمَ أَبُوْ مُوْسَى أَكْرَمَ هَذَا
الْحَيَّ مِنْ جَرْمٍ وَإِنَّا لَجُلُوْسٌ عِنْدَهُ وَهُوَ يَتَغَدَّى دَجَاجًا
وَفِي الْقَوْمِ رَجُلٌ جَالِسٌ فَدَعَاهُ إِلَى الْغَدَاءِ فَقَالَ إِنِّيْ
رَأَيْتُهُ يَأْكُلُ شَيْئًا فَقَذِرْتُهُ فَقَالَ هَلُمَّ فَإِنِّيْ رَأَيْتُ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَأْكُلُهُ فَقَالَ إِنِّيْ حَلَفْتُ لَا آكُلُهُ
فَقَالَ هَلُمَّ أُخْبِرْكَ عَنْ يَمِيْنِكَ إِنَّا أَتَيْنَا النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم نَفَرٌ مِنَ الْأَشْعَرِيِّيْنَ فَاسْتَحْمَلْنَاهُ فَأَبَى أَنْ
يَحْمِلَنَا فَاسْتَحْمَلْنَاهُ فَحَلَفَ أَنْ لَا يَحْمِلَنَا ثُمَّ لَمْ
يَلْبَثْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ أُتِيَ بِنَهْبِ إِبِلٍ فَأَمَرَ
لَنَا بِخَمْسِ ذَوْدٍ فَلَمَّا قَبَضْنَاهَا قُلْنَا تَغَفَّلْنَا النَّبِيَّ صلى
الله عليه وسلم يَمِيْنَهُ لَا نُفْلِحُ بَعْدَهَا أَبَدًا فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ
يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّكَ حَلَفْتَ أَنْ لَا تَحْمِلَنَا وَقَدْ حَمَلْتَنَا
قَالَ أَجَلْ وَلَكِنْ لَا أَحْلِفُ عَلَى يَمِيْنٍ فَأَرَى غَيْرَهَا خَيْرًا
مِنْهَا إِلَّا أَتَيْتُ الَّذِيْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهَا.
যাহদাম
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ মূসা (রাঃ) এ এলাকায় এসে জারম
গোত্রের লোকদেরকে সম্মানিত করেছেন। একদা আমারা তাঁর কাছে বসা ছিলাম। এ সময়ে তিনি
মুরগীর গোশ্ত দিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি বসা ছিল।
তিনি তাকে খানা খেতে ডাকলেন। সে বলল, আমি মুরগীটিকে এমন জিনিস খেতে দেখেছি যার
জন্য খেতে আমার অরুচি লাগছে। তিনি বললেন, এসো। কেননা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে মুরগী খেতে দেখেছি। সে বলল, আমি শপথ করে ফেলছি যে, এটি
খাব না। তিনি বললেন, এসে পড়। তোমার শপথ সম্বন্ধে আমি তোমাকে জানাচ্ছি যে, আমরা
আশ'আরীদের একটি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর দরবারে এসে তাঁর
কাছে সাওয়ারী চেয়েছিলাম। তিনি আমাদেরকে সওয়ারী দিতে অস্বীকার করলেন। এরপর আমরা
(আবার) তাঁর কাছে সাওয়ারী চাইলাম। তিনি তখন শপথ করে বললেন যে, আমাদেরকে তিনি
সওয়ারী দেবেন না। কিছুক্ষণ পরেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে
গানীমাতের কিছু উট আনা হল। তিনি আমাদেরকে পাঁচটি করে উট দেয়ার আদেশ দিলেন। উটগুলো
হাতে নেয়ার পর আমরা পরস্পর বললাম, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
কে তাঁর শপথ থেকে অমনোযোগী করে ফেলছি এমন অবস্থায় আর কখনো আমরা কামিয়াব হতে পারব
না। কাজেই আমি তাঁর কাছে এসে বললাম। হে আল্লাহ্র রাসুল! আপনি শপথ করেছিলেন যে,
আমাদের সাওয়ারী দেবেন না। এখন তো আপনি আমাদের সাওয়ারী দিলেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই।
তবে আমার নিয়ম হল, আমি যদি কোন ব্যাপারে শপথ করি আর এর বিপরীতে কোনটিকে এ অপেক্ষা
উত্তম মনে করি তাহলে উত্তমটিকেই গ্রহণ করে নেই। [৩১৩৩] (আ.প্র. ৪০৩৬, ই.ফা. ৪০৪০)
৪৩৮৬
عَمْرُوْ بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَاصِمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ
حَدَّثَنَا أَبُوْ صَخْرَةَ جَامِعُ بْنُ شَدَّادٍ حَدَّثَنَا صَفْوَانُ بْنُ
مُحْرِزٍ الْمَازِنِيُّ حَدَّثَنَا عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ قَالَ جَاءَتْ بَنُوْ
تَمِيْمٍ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَبْشِرُوْا يَا بَنِيْ
تَمِيْمٍ قَالُوْا أَمَّا إِذْ بَشَّرْتَنَا فَأَعْطِنَا فَتَغَيَّرَ وَجْهُ
رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ الْيَمَنِ فَقَالَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم اقْبَلُوا الْبُشْرَى إِذْ لَمْ يَقْبَلْهَا بَنُوْ
تَمِيْمٍ قَالُوْا قَدْ قَبِلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ.
ইমরান
ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বানী তামীমের লোকজন রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, হে বানী
তামীম! সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা বলল, আপনি সুসংবাদ তো দিলেন, কিন্তু আমাদের (কিছু
অর্থ-সম্পদ) দান করুন। কথাটি শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। এমন সময়ে ইয়ামানী কিছু লোক আসল। নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বানী তামীম যখন সুসংবাদ গ্রহণ করল না, তাহলে তোমরাই
তা গ্রহণ কর। তাঁরা বলল, হে আল্লাহ্র রসুল! আমরা তা গ্রহণ করলাম। [৩১৯০] (আ.প্র.
৪০৩৭, ই.ফা. ৪০৪১)
৪৩৮৭
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ الْجُعْفِيُّ حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيْرٍ
حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ إِسْمَاعِيْلَ بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ عَنْ قَيْسِ بْنِ
أَبِيْ حَازِمٍ عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ
الإِيْمَانُ هَا هُنَا وَأَشَارَ بِيَدِهِ إِلَى الْيَمَنِ وَالْجَفَاءُ وَغِلَظُ
الْقُلُوْبِ فِي الْفَدَّادِيْنَ عِنْدَ أُصُوْلِ أَذْنَابِ الإِبِلِ مِنْ حَيْثُ
يَطْلُعُ قَرْنَا الشَّيْطَانِ رَبِيْعَةَ وَمُضَرَ.
আবু
মাস'ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানের
দিকে তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে বলেছেন, ঈমান হল ওখানে। [৮০] আর কঠোরতা ও হৃদয়হীনতা
হল রাবী'আহ ও মুযার গোত্রদ্বয়ের সেসব মানুষের মধ্যে যারা উটের লেজের কাছে দাঁড়িয়ে
চীৎকার দেয়, যেখান থেকে শয়তানের দু' শিং উদিত হয়। [৮১] [৩৩০২] (আ.প্র. ৪০৩৮, ই.ফা.
৪০৪২)
[৮০]
ইয়ামানের দিকে ইংগিত করার কোন গভীর অর্থও থাকতে পারে। তবে আপাত দৃষ্টিতে যা মনে হয়
,এখানে ইয়ামানবাসীদের দ্রুত ও সুন্দরভাবে ঈমান আনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু
এর মধ্যে ইয়ামানবাসীদের ঈমানের প্রতি কোন নেতিবাচক ইঙ্গিত নেই।
[৮১] বিভিন্ন হাদীসে ইয়ামান থেকে ফিতনার আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে।
[৮১] বিভিন্ন হাদীসে ইয়ামান থেকে ফিতনার আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে।
৪৩৮৮
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِيْ عَدِيٍّ عَنْ شُعْبَةَ
عَنْ سُلَيْمَانَ عَنْ ذَكْوَانَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَتَاكُمْ أَهْلُ الْيَمَنِ هُمْ أَرَقُّ
أَفْئِدَةً وَأَلْيَنُ قُلُوْبًا الإِيْمَانُ يَمَانٍ وَالْحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ
وَالْفَخْرُ وَالْخُيَلَاءُ فِيْ أَصْحَابِ الإِبِلِ وَالسَّكِيْنَةُ وَالْوَقَارُ
فِيْ أَهْلِ الْغَنَمِ.
وَقَالَ غُنْدَرٌ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ سُلَيْمَانَ سَمِعْتُ ذَكْوَانَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
وَقَالَ غُنْدَرٌ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ سُلَيْمَانَ سَمِعْتُ ذَكْوَانَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
আবু
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে
অত্যন্ত কোমল ও দরদী। ঈমান হল ইয়ামানীদের, হিকমাত হল ইয়ামানীদের, গরিমা ও অহংকার
রয়েছে উট-ওয়ালাদের মধ্যে, বাক্রী পালকদের মধ্যে আছে প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য।
গুনদার (রহঃ) এ হাদীসটি শু'বাহ-সুলাইমান-যাকওয়ান (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। [৩৩০১] (আ.প্র. ৪০৩৯, ই.ফা. ৪০৪৩)
গুনদার (রহঃ) এ হাদীসটি শু'বাহ-সুলাইমান-যাকওয়ান (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। [৩৩০১] (আ.প্র. ৪০৩৯, ই.ফা. ৪০৪৩)
৪৩৮৯
إِسْمَاعِيْلُ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَخِيْ عَنْ سُلَيْمَانَ عَنْ ثَوْرِ بْنِ
زَيْدٍ عَنْ أَبِي الْغَيْثِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم قَالَ الإِيْمَانُ يَمَانٍ وَالْفِتْنَةُ هَا هُنَا هَا هُنَا يَطْلُعُ
قَرْنُ الشَّيْطَانِ.
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ ঈমান হল ইয়ামানীদের। আর ফিতনা হল ওখানে, যেখানে উদিত হল শয়তানের শিং।
[৩৩০১] (আ.প্র. ৪০৪০, ই.ফা. ৪০৪৪)
৪৩৯০
أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ حَدَّثَنَا أَبُو الزِّنَادِ عَنِ
الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم قَالَ أَتَاكُمْ أَهْلُ الْيَمَنِ أَضْعَفُ قُلُوْبًا وَأَرَقُّ
أَفْئِدَةً الْفِقْهُ يَمَانٍ وَالْحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ.
আবু
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে
অত্যন্ত কোমল। আর মনের দিক থেকে অত্যন্ত দয়ার্দ্র। ফিকহ্ হল ইয়ামানীদের আর হিকমাত
হল ইয়ামানীদের। [৩৩০১] (আ.প্র. ৪০৪১, ই.ফা. ৪০৪৫)
৪৩৯১
عَبْدَانُ عَنْ أَبِيْ حَمْزَةَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ
عَلْقَمَةَ قَالَ كُنَّا جُلُوْسًا مَعَ ابْنِ مَسْعُوْدٍ فَجَاءَ خَبَّابٌ
فَقَالَ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَيَسْتَطِيْعُ هَؤُلَاءِ الشَّبَابُ أَنْ
يَقْرَءُوْا كَمَا تَقْرَأُ قَالَ أَمَا إِنَّكَ لَوْ شِئْتَ أَمَرْتُ بَعْضَهُمْ
يَقْرَأُ عَلَيْكَ قَالَ أَجَلْ قَالَ اقْرَأْ يَا عَلْقَمَةُ فَقَالَ زَيْدُ بْنُ
حُدَيْرٍ أَخُوْ زِيَادِ بْنِ حُدَيْرٍ أَتَأْمُرُ عَلْقَمَةَ أَنْ يَقْرَأَ
وَلَيْسَ بِأَقْرَئِنَا قَالَ أَمَا إِنَّكَ إِنْ شِئْتَ أَخْبَرْتُكَ بِمَا قَالَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِيْ قَوْمِكَ وَقَوْمِهِ فَقَرَأْتُ خَمْسِيْنَ
آيَةً مِنْ سُوْرَةِ مَرْيَمَ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ كَيْفَ تَرَى قَالَ قَدْ
أَحْسَنَ قَالَ عَبْدُ اللهِ مَا أَقْرَأُ شَيْئًا إِلَّا وَهُوَ يَقْرَؤُهُ ثُمَّ
الْتَفَتَ إِلَى خَبَّابٍ وَعَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ أَلَمْ يَأْنِ
لِهَذَا الْخَاتَمِ أَنْ يُلْقَى قَالَ أَمَا إِنَّكَ لَنْ تَرَاهُ عَلَيَّ بَعْدَ
الْيَوْمِ فَأَلْقَاهُ.
رَوَاهُ غُنْدَرٌ عَنْ شُعْبَةَ.
رَوَاهُ غُنْدَرٌ عَنْ شُعْبَةَ.
আলক্বামাহ
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ)- এর কাছে
বসা ছিলাম। তখন সেখানে 'আব্বাস (রাঃ) এসে বললেন, হে আবূ 'আবদুর রহমান ('আবদুর
রহমানের পিতা 'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ [৮২])! এসব তরুণ কি আপনার তিলাওয়াতের মতো
তিলাওয়াত করতে পারে? তিনি বললেনঃ আপনি যদি চান তাহলে একজনকে হুকুম দেই যে, সে আপনাকে
তিলাওয়াত করে শুনাবে। তিনি বললেন, অবশ্যই। ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) বললেন, ওহে 'আলকামাহ,
পড়। তখন যিয়াদ ইবনু হুদাইরের ভাই যায়দ ইবনু হুদাইর বলল, আপনি আলকামাহ্কে পড়তে
হুকুম করেছেন, অথচ সে তো আমাদের মধ্যে ভাল তিলাওয়াতকারী নয়। ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ)
বললেন, যদি তুমি চাও তাহলে আমি তোমার গোত্র ও তার গোত্র সম্পর্কে নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বলেছেন তা জানিয়ে দিতে পারি। (আলকামাহ
বলেন) এরপর আমি সূরায়ে মারইয়াম থেকে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করলাম। 'আবদুল্লাহ (রাঃ)
বললেন, আপনার কেমন মনে হয়? তিনি বললেন, বেশ ভালই পরেছে। 'আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন,
আমি যা কিছু পড়ি তার সবই সে পড়ে। এরপর তিনি খাব্বাবের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন,
তার হাতে একটি সোনার আংটি। তিনি বললেন, এখনো কি এ আংটি খুলে ফেলার সময় হয়নি?
খাব্বাব (রাঃ) বললেন, আজকের পর আর এটি আমার হাতে দেখতে পাবেন না। অতঃপর তিনি আংটিটি
ফেলে দিলেন।
হাদীসটি গুনদার (রহঃ) শু'বাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। (আ.প্র. ৪০৪২, ই.ফা. ৪০৪৬)
হাদীসটি গুনদার (রহঃ) শু'বাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। (আ.প্র. ৪০৪২, ই.ফা. ৪০৪৬)
[৮২]
তিনি অত্যন্ত সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারতেন। রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) যে সকল সহাবী থেকে কুরআন শিখার জন্য বলেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম।
৬৪/৭৬. অধ্যায়ঃ
দাউস গোত্র এবং তুফাইল ইবনু 'আমর দাউসীর ঘটনা
৪৩৯২
أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ ابْنِ ذَكْوَانَ عَنْ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ
الطُّفَيْلُ بْنُ عَمْرٍو إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنَّ
دَوْسًا قَدْ هَلَكَتْ عَصَتْ وَأَبَتْ فَادْعُ اللهَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ اللهُمَّ
اهْدِ دَوْسًا وَأْتِ بِهِمْ.
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তুফায়ল ইবনু 'আমর (রাঃ) নবী (রাঃ)-
এর কাছে এসে বললেন, দাওস গোত্র হালাক হয়ে গেছেন। তারা নাফরমানী করেছে এবং (দ্বীনের
দাওয়াত) গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সুতরাং আপনি তাদের প্রতি বদদু'আ করুন। তখন নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আল্লাহ! দাওস গোত্রকে হিদায়াত দান
করুন এবং দ্বীনের পথে নিয়ে আসুন। [২৯৩৭] (আ.প্র. ৪০৪৩, ই.ফা. ৪০৪৭)
৪৩৯৩
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ حَدَّثَنَا
إِسْمَاعِيْلُ عَنْ قَيْسٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَمَّا قَدِمْتُ عَلَى
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ فِي الطَّرِيْقِ:
يَا لَيْـلَـةً مِـنْ طُوْلِـهَـا وَعَنَائِهَا عَلَى أَنَّهَا مِنْ دَارَةِ الْكُفْرِ نَجَّتِ
وَأَبَقَ غُلَامٌ لِيْ فِي الطَّرِيْقِ فَلَمَّا قَدِمْتُ عَلَى النَّبِيِّ فَبَايَعْتُهُ فَبَيْنَا أَنَا عِنْدَهُ إِذْ طَلَعَ الْغُلَامُ فَقَالَ لِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَا أَبَا هُرَيْرَةَ هَذَا غُلَامُكَ فَقُلْتُ هُوَ لِوَجْهِ اللهِ فَأَعْتَقْتُهُ.
يَا لَيْـلَـةً مِـنْ طُوْلِـهَـا وَعَنَائِهَا عَلَى أَنَّهَا مِنْ دَارَةِ الْكُفْرِ نَجَّتِ
وَأَبَقَ غُلَامٌ لِيْ فِي الطَّرِيْقِ فَلَمَّا قَدِمْتُ عَلَى النَّبِيِّ فَبَايَعْتُهُ فَبَيْنَا أَنَا عِنْدَهُ إِذْ طَلَعَ الْغُلَامُ فَقَالَ لِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَا أَبَا هُرَيْرَةَ هَذَا غُلَامُكَ فَقُلْتُ هُوَ لِوَجْهِ اللهِ فَأَعْتَقْتُهُ.
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর কাছে আশার জন্য রওয়ানা হয়ে রাস্তার মধ্যে বলেছিলাম-
হে সুদীর্ঘ ও চরম পরিশ্রমের রাত!
এ রাত আমাকে দারুল কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছে।
আমার একটি গোলাম ছিল। পথে সে পালিয়ে গেল। এরপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এসে বাই'আত করলাম। অতঃপর একদিন আমি তাঁর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় গোলামটি এসে হাযির। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে আবূ হুরায়রা! এই যে তোমার গোলাম। আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশে সে আযাদ- এ কথা বলে আমি তাকে আযাদ করে দিলাম। [২৫৩০] (আ.প্র. ৪০৪৪, ই.ফা. ৪০৪৮)
হে সুদীর্ঘ ও চরম পরিশ্রমের রাত!
এ রাত আমাকে দারুল কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছে।
আমার একটি গোলাম ছিল। পথে সে পালিয়ে গেল। এরপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এসে বাই'আত করলাম। অতঃপর একদিন আমি তাঁর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় গোলামটি এসে হাযির। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে আবূ হুরায়রা! এই যে তোমার গোলাম। আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশে সে আযাদ- এ কথা বলে আমি তাকে আযাদ করে দিলাম। [২৫৩০] (আ.প্র. ৪০৪৪, ই.ফা. ৪০৪৮)
৬৪/৭৭. অধ্যায়ঃ
তায়ী গোত্রের প্রতিনিধি দল এবং 'আদী ইবনু হাতিম [৮৩]-এর কাহিনী
[৮৩] দাতা হাতেম তাঈ নামে
বিখ্যাত তাঈ গোত্রের শাসক এর পুত্র হচ্ছে 'আদী ইবনু হাতীম।
রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নির্দেশক্রমে সে এলাকায় অভিযান
চালালে তিনি স্বীয় পরিজন নিয়ে পলায়ন করেন। পরে তিনি স্বয়ং মাদীনাহ্য় এসে
রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট ইসলাম গ্রহণ করেন।
৪৩৯৪
مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ حَدَّثَنَا عَبْدُ
الْمَلِكِ عَنْ عَمْرِو بْنِ حُرَيْثٍ عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ قَالَ أَتَيْنَا
عُمَرَ فِيْ وَفْدٍ فَجَعَلَ يَدْعُوْ رَجُلًا رَجُلًا وَيُسَمِّيْهِمْ فَقُلْتُ
أَمَا تَعْرِفُنِيْ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ قَالَ بَلَى أَسْلَمْتَ إِذْ
كَفَرُوْا وَأَقْبَلْتَ إِذْ أَدْبَرُوْا وَوَفَيْتَ إِذْ غَدَرُوْا وَعَرَفْتَ
إِذْ أَنْكَرُوْا فَقَالَ عَدِيٌّ فَلَا أُبَالِيْ إِذًا.
আদী
ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একটি প্রতিনিধি দলসহ 'উমার
(রাঃ)- এর দরবারে আসলাম। তিনি প্রত্যেকের নাম নিয়ে একজন একজন করে ডাকতে শুরু
করলেন। তাই আমি বললাম, হে আমীরুল মু'মিনীন! আপনি কি আমাকে চিনেন? তিনি বললেন, হাঁ
চিনি। লোকজন যখন ইসলামকে অস্বীকার করেছিল তখন তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ। লোকজন যখন
পিঠ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন তুমি সম্মুখে অগ্রসর হয়েছ। লোকেরা যখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে
তুমি তখন ইসলাম পালনের ওয়াদা পূরণ করেছ। লোকেরা যখন দ্বীনকে অস্বীকার করেছে তুমি
তখন দ্বীনকে চিনে নিয়ে গ্রহণ করেছ। এ সব কথা শুনে আদী (রাঃ) বললেন, তাহলে আমার আর
কোন চিন্তা নেই। (আ.প্র. ৪০৪৫, ই.ফা. ৪০৪৯)
৬৪/৭৮. অধ্যায়ঃ
বিদায় হাজ্জ
৪৩৯৫
إِسْمَاعِيْلُ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ
خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ
فَأَهْلَلْنَا بِعُمْرَةٍ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ
كَانَ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيُهْلِلْ بِالْحَجِّ مَعَ الْعُمْرَةِ ثُمَّ لَا يَحِلَّ
حَتَّى يَحِلَّ مِنْهُمَا جَمِيْعًا فَقَدِمْتُ مَعَهُ مَكَّةَ وَأَنَا حَائِضٌ
وَلَمْ أَطُفْ بِالْبَيْتِ وَلَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَشَكَوْتُ إِلَى
رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ انْقُضِيْ رَأْسَكِ وَامْتَشِطِيْ
وَأَهِلِّيْ بِالْحَجِّ وَدَعِي الْعُمْرَةَ فَفَعَلْتُ فَلَمَّا قَضَيْنَا
الْحَجَّ أَرْسَلَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَعَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ
بْنِ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ إِلَى التَّنْعِيْمِ فَاعْتَمَرْتُ فَقَالَ
هَذِهِ مَكَانَ عُمْرَتِكِ قَالَتْ فَطَافَ الَّذِيْنَ أَهَلُّوْا بِالْعُمْرَةِ
بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ حَلُّوْا ثُمَّ طَافُوْا
طَوَافًا آخَرَ بَعْدَ أَنْ رَجَعُوْا مِنْ مِنًى وَأَمَّا الَّذِيْنَ جَمَعُوا
الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَإِنَّمَا طَافُوْا طَوَافًا وَاحِدًا.
আয়িশাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জে রওয়ানা হই। তখন আমরা 'উমরাহ্র
(নিয়তে) ইহ্রাম বাঁধি। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা
দিলেন, যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু রয়েছে, তাঁরা যেন হাজ্জ ও 'উমরাহ্ উভয়ের একসঙ্গে
ইহরামের নিয়ত করে এবং হাজ্জ ও 'উমরাহ্র উভয়টি সমাধা করার পূর্বে হালাল না হয়।
এভাবে তাঁর সঙ্গে আমি মক্কায় পৌঁছে এবং ঋতুবতী হয়ে পড়ি। এ কারণে আমি বাইতুল্লাহর
তওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী করতে পারলাম না। এ দুঃখ আমি রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার
মাথার ছুল ছেড়ে দাও এবং মাথা (চিরুনী দ্বারা) আঁচড়াও আর কেবল হাজ্জের ইহ্রাম বাঁধ
ও 'উমরাহ্ ছেরে দাও। আমি তাই করলাম। এরপর আমরা যখন হাজ্জের কাজসমূহ সম্পন্ন
করলাম, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আবু বাক্র
সিদ্দীক (রাঃ)- এর পুত্র 'আবদুর রহমান (রাঃ)- এর সঙ্গে তানঈম-এ পাঠিয়ে দিলেন।
(সেখান থেকে ইহ্রাম বেঁধে) 'উমরাহ্ আদায় করলাম। তখন তিনি [রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, এই 'উমরাহ্ তোমার পূর্বের কাযা
'উমরাহ্ পূর্ণ করল। 'আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, যারা 'উমরাহ্র ইহ্রাম বেঁধেছিলেন তারা
বাইতুল্লাহ্ তওয়াফ করে এবং সাফা ও মারওয়া সায়ী করার পর হালাল হয়ে যান এবং পরে
মিনা থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর আর এক তওয়াফ আদায় করেন। আর যাঁরা হাজ্জ ও 'উমরাহ্র
ইহ্রাম এক সঙ্গে বাঁধেন, তাঁরা কেবল এক তওয়াফ আদায় করেন। [২৯৪] (আ.প্র. ৪০৪৬,
ই.ফা. ৪০৫০)
৪৩৯৬
عَمْرُوْ بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا ابْنُ
جُرَيْجٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ عَطَاءٌ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ إِذَا طَافَ بِالْبَيْتِ
فَقَدْ حَلَّ فَقُلْتُ مِنْ أَيْنَ قَالَ هَذَا ابْنُ عَبَّاسٍ قَالَ مِنْ قَوْلِ
اللهِ تَعَالَى {ثُمَّ مَحِلُّهَا إِلَى الْبَيْتِ الْعَتِيْقِ} وَمِنْ أَمْرِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَصْحَابَهُ أَنْ يَحِلُّوْا فِيْ حَجَّةِ
الْوَدَاعِ قُلْتُ إِنَّمَا كَانَ ذَلِكَ بَعْدَ الْمُعَرَّفِ قَالَ كَانَ ابْنُ
عَبَّاسٍ يَرَاهُ قَبْلُ وَبَعْدُ.
ইবনু
'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মুহরিম ব্যক্তি যখন বাইতুল্লাহ তওয়াফ করল তখন
সে তাঁর ইহ্রাম থেকে হালাল হয়ে গেল। আমি (ইবনু জুরায়জ) জিজ্ঞেস করলাম যে, ইবনু
'আব্বাস (রাঃ) এ কথা কী করে বলতে পারেন? রাবী 'আত্বা (রহঃ) উত্তরে বলেন, আল্লাহ
তা'আলার এই কালামের দলীল থেকে যে, এরপর তার হালাল হওয়ার স্থল হচ্ছে বাইতুল্লাহ এবং
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক তাঁর সহাবীদের বিদায় হাজ্জের (এ
কাজের পর) হালাল হয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়ার ঘটনা থেকে। আমি বললামঃ এ হুকুম তো
'আরাফাহ-এ উকূফ করার পর প্রযোজ্য। তখন 'আত্বা (রহঃ) বললেন, ইবনু 'আব্বাস (রাঃ)- এর
মতে উকূফে 'আরাফাহ্র পূর্বাপর উভয় অবস্থার জন্য এ হুকুম। [মুসলিম ১৫/৩২, হাঃ
১২৪৫] (আ.প্র. ৪০৪৭, ই.ফা. ৪০৫১)
৪৩৯৭
بَيَانٌ حَدَّثَنَا النَّضْرُ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَيْسٍ قَالَ
سَمِعْتُ طَارِقًا عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ
قَدِمْتُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْبَطْحَاءِ فَقَالَ أَحَجَجْتَ
قُلْتُ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَهْلَلْتَ قُلْتُ لَبَّيْكَ بِإِهْلَالٍ كَإِهْلَالِ
رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ طُفْ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا
وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ حِلَّ فَطُفْتُ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ
وَأَتَيْتُ امْرَأَةً مِنْ قَيْسٍ فَفَلَتْ رَأْسِي.
আবূ
মূসা আশ'আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি (বিদায় হাজ্জে) মক্কার বাত্হা
নামক স্থানে নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে মিলিত হলাম। তখন
তিনি আমাকে জিজ্ঞস করলেন, 'তুমি কি হাজ্জের ইহ্রাম বেঁধেছ? আমি বললাম, হাঁ। তখন
তিনি আমাকে (পুনরায়) জিজ্ঞেস করলেন। কোন্ প্রকারে হাজ্জের ইহরামের নিয়ত করেছ? আমি
বললাম, 'আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর ইহরামের মতো
ইহরামের নিয়ত করে তালবিয়াহ পড়েছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেন, বাইতুল্লাহ তওয়াফ কর এবং সফা ও মারওয়াহ্ সায়ী কর। এরপর (ইহ্রাম খুলে)
হালাল হয়ে যাও। তখন আমি বাইতুল্লাহ্ তওয়াফ করলাম ও সফা এবং মারওয়াহ্ সায়ী করলাম।
এরপর আমি ক্বায়স গোত্রের এক মহিলার কাছে গেলাম, সে আমার চুল আঁচড়ে দিল (তাতে আমি
ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে গেলাম)। [১৫৫৯] (আ.প্র. ৪০৪৮, ই.ফা. ৪০৫২)
৪৩৯৮
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ الْمُنْذِرِ أَخْبَرَنَا أَنَسُ بْنُ عِيَاضٍ
حَدَّثَنَا مُوْسَى بْنُ عُقْبَةَ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ أَخْبَرَهُ
أَنَّ حَفْصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
أَخْبَرَتْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ أَزْوَاجَهُ أَنْ
يَحْلِلْنَ عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ فَقَالَتْ حَفْصَةُ فَمَا يَمْنَعُكَ فَقَالَ
لَبَّدْتُ رَأْسِيْ وَقَلَّدْتُ هَدْيِيْ فَلَسْتُ أَحِلُّ حَتَّى أَنْحَرَ
هَدْيِي.
ইবনু
'উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)- এর সহধর্মিণী হাফসাহ (রাঃ) ইবনু 'উমার (রাঃ)- কে জানিয়েছেন যে, বিদায়
হাজ্জের বছর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের হালাল হয়ে
যেতে নির্দেশ দেন। তখন হাফসাহ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী কারণে হালাল হচ্ছেন
না? তদুত্তরে তিনি বললেন, আমি আঠা জাতীয় বস্তু দ্বারা আমার মাথার চুল জমাট করে
ফেলেছি এবং কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদাহ [৮৪] বেঁধে দিয়েছি। কাজেই, আমি আমার
কুরবানীর পশু যবহ করার পূর্বে হালাল হতে পারব না। [১৫৬৬] (আ.প্র. ৪০৪৯, ই.ফা.
৪০৫৩)
[৮৪] বিশেষ এক ধরনের মালা যা দেখে বুঝা যেতো যে,
এটিকে হাজ্জে কুরবানী করা হবে।
৪৩৯৯
أَبُو الْيَمَانِ قَالَ حَدَّثَنِيْ شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ وَقَالَ
مُحَمَّدُ بْنُ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا الْأَوْزَاعِيُّ قَالَ أَخْبَرَنِي ابْنُ
شِهَابٍ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُمَا أَنَّ امْرَأَةً مِنْ خَثْعَمَ اسْتَفْتَتْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ وَالْفَضْلُ بْنُ عَبَّاسٍ رَدِيْفُ رَسُوْلِ
اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فَرِيْضَةَ اللهِ
عَلَى عِبَادِهِ أَدْرَكَتْ أَبِيْ شَيْخًا كَبِيْرًا لَا يَسْتَطِيْعُ أَنْ
يَسْتَوِيَ عَلَى الرَّاحِلَةِ فَهَلْ يَقْضِيْ أَنْ أَحُجَّ عَنْهُ قَالَ نَعَمْ.
ইবনু
'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আশ'আম গোত্রের এ মহিলা বিদায় হাজ্জের সময়
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট জিজ্ঞেস করে। এ সময় ফদল
ইবনু 'আব্বাস(রাঃ) (সওয়ারীতে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর
পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। মহিলাটি আবেদন করল, হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ তাঁর
বান্দাদের প্রতি হাজ্জ ফরয করেছেন। আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় ফরয হল যে, তিনি
অতীব বয়োবৃদ্ধ, যে কারণে সওয়ারীর উপর ঠিক হয়ে বসতেও সমর্থ নন। এমতাবস্থায় আমি তাঁর
পক্ষ থেকে হাজ্জ আদায় করলে তা আদায় হবে কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বললেন, হাঁ। [১৫১৩] (আ.প্র. ৪০৫০, ই.ফা. ৪০৫৪)
৪৪০০
مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا سُرَيْجُ بْنُ النُّعْمَانِ حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ عَنْ
نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَقْبَلَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم عَامَ الْفَتْحِ وَهُوَ مُرْدِفٌ أُسَامَةَ عَلَى الْقَصْوَاءِ
وَمَعَهُ بِلَالٌ وَعُثْمَانُ بْنُ طَلْحَةَ حَتَّى أَنَاخَ عِنْدَ الْبَيْتِ
ثُمَّ قَالَ لِعُثْمَانَ ائْتِنَا بِالْمِفْتَاحِ فَجَاءَهُ بِالْمِفْتَاحِ
فَفَتَحَ لَهُ الْبَابَ فَدَخَلَ النَّبِيُّ وَأُسَامَةُ وَبِلَالٌ وَعُثْمَانُ
ثُمَّ أَغْلَقُوْا عَلَيْهِمْ الْبَابَ فَمَكَثَ نَهَارًا طَوِيْلًا ثُمَّ خَرَجَ
وَابْتَدَرَ النَّاسُ الدُّخُوْلَ فَسَبَقْتُهُمْ فَوَجَدْتُ بِلَالًا قَائِمًا
مِنْ وَرَاءِ الْبَابِ فَقُلْتُ لَهُ أَيْنَ صَلَّى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم فَقَالَ صَلَّى بَيْنَ ذَيْنِكَ الْعَمُوْدَيْنِ الْمُقَدَّمَيْنِ وَكَانَ الْبَيْتُ
عَلَى سِتَّةِ أَعْمِدَةٍ سَطْرَيْنِ صَلَّى بَيْنَ الْعَمُوْدَيْنِ مِنْ
السَّطْرِ الْمُقَدَّمِ وَجَعَلَ بَابَ الْبَيْتِ خَلْفَ ظَهْرِهِ وَاسْتَقْبَلَ
بِوَجْهِهِ الَّذِيْ يَسْتَقْبِلُكَ حِيْنَ تَلِجُ الْبَيْتَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ
الْجِدَارِ قَالَ وَنَسِيْتُ أَنْ أَسْأَلَهُ كَمْ صَلَّى وَعِنْدَ الْمَكَانِ
الَّذِيْ صَلَّى فِيْهِ مَرْمَرَةٌ حَمْرَاءُ.
ইবনু
'উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ফতেহ মক্কার বছর রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগিয়ে চললেন। তিনি (তাঁর) কসওয়া নামক উটনীর
উপর উসামাহ (রাঃ)- কে পিছনে বসালেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল ও 'উসমান ইবনু ত্বলহা
(রাঃ)। অবশেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাঁর বাহনকে)
বাইতুল্লাহ্র নিকট বসালেন। তারপর 'উসমান (ইবনু ত্বলহা) (রাঃ)- কে বললেন, আমার
কাছে চাবি নিয়ে এসো। তিনি তাঁকে চাবি এনে দিলেন। এরপর কা'বা শরীফের দরজা তাঁর জন্য
খোলা হল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), উসামাহ, বিলাল এবং
'উসমান (রাঃ) কা'বা ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। এরপর তিনি
দিবা ভাগের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন এবং পরে বের হয়ে আসেন। তখন
লোকেরা কা'বার অভ্যন্তরে প্রবেশ করার জন্য তাড়াহুড়া করতে থাকে। আর আমি তাদের
অগ্রণী হই এবং বিলাল (রাঃ)- কে কা'বার দরজার পিছনে দাঁড়ানো অবস্থায় পাই। তখন আমি
তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন্ স্থানে
সলাত আদায় করেছেন? তিনি বললেন, ঐ সামনের দু'স্তম্ভের মাঝখানে। এ সময় বাইতুল্লাহ্র
দুই সারিতে ছয়টি স্তম্ভ ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনের সারির
দু'খামের মাঝখানে সলাত আদায় করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বাইতুল্লাহ্র দরজা তার পিছনে রেখেছিলেন এবং তাঁর চেহারা ছিল বাইতুল্লাহ্য়
প্রবেশকালে সামনে যে দেয়াল পড়ে সেদিকে। ইবনু 'উমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয় রাক'আত সলাত আদায় করেছেন তা জিজ্ঞেস করতে
আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আর যে স্থানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সলাত আদায় করছিলেন সেখানে লাল বর্ণের মর্মর পাথর ছিল। [৩৯৭] (আ.প্র ৪০৫১, ই.ফা.
৪০৫৫)
No comments