রাসুল (সাঃ) এর উপদেশ

উপদেশ

পরিচ্ছেদঃ

উপদেশ গ্রহণের গুরুত্ব

عَنْ تَمِيْمِ الدَّارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ الدِّيْنُ النَّصِيحَةُ ثَلَاثًا. قُلْنَا لِمَنْ؟ قَالَ لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ.

তামীম আদ-দারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘দ্বীন হচ্ছে উপদেশ’। অর্থাৎ যথাযথভাবে কল্যাণ কামনা করা। কথাটি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার বললেন। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম নেতাদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানের জন্য (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ.

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে বায়’আত বা শপথ করেছি ছালাত প্রতিষ্ঠা করার, যাকাত প্রদান করার এবং সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার (বুখারী হা/৫৭, ৫২৪; মুসলিম হা/৫৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثاً وَيَسْخَطُ لَكُمْ ثَلاَثاً يَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوْهُ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئاً وَأَنْ تَعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعاً وَلاَ تَفَرَّقُوْا وَأَنْ تُنَاصِحُوْا مَنْ وَلاَّهُ اللهُ أَمْرَكُمْ وَيَسْخَطُ لَكُمْ قِيْلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةُ الْمَالِ وَكَثْرَةُ السُّؤَالِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। (১) যখন তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করো না। (২) আল্লাহর বিধানকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর আর বিচ্ছিন্ন হও না এবং (৩) আল্লাহ যাকে তোমাদের কাজের নেতা হিসাবে নির্বাচন করেন, তার জন্য তোমরা পরস্পরে কল্যাণ কামনা কর। এ তিনটি কাজে আল্লাহ তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। আর তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন- (১) অপ্রয়োজনীয় কথা বললে (২) সম্পদ নষ্ট করলে এবং (৩) অনর্থক বেশী প্রশ্ন করলে’ (আহমাদ হা/৮৭৮৫; ইবনু হিব্বান হা/৩৩৮৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মানার উদ্দেশ্যে উপদেশ শুনতে হবে

عَنْ إبْنِ عَبَّاسٍ قَالَ إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ الْقَيْسِ لَمَّا أَتَوُا النَّبِىَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنِ الْقَوْمُ أَوْ مَنِ الْوَفْدُ قَالُوا رَبِيعَةُ. قَالَ مَرْحَبًا بِالْقَوْمِ أَوْ بِالْوَفْدِ غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ نَدَامَى. فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّا لاَ نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيَكَ إِلاَّ فِى شَهْرِ الْحَرَامِ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الْحَىُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فَصْلٍ، نُخْبِرْ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلْ بِهِ الْجَنَّةَ. وَسَأَلُوهُ عَنِ الأَشْرِبَةِ. فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ، وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ، أَمَرَهُمْ بِالإِيمَانِ بِاللهِ وَحْدَهُ. قَالَ أَتَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللهِ وَحْدَهُ. قَالُوا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامُ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ، وَصِيَامُ رَمَضَانَ، وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ الْمَغْنَمِ الْخُمُسَ. وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ عَنِ الْحَنْتَمِ وَالدُّبَّاءِ وَالنَّقِيرِ وَالْمُزَفَّتِ. وَرُبَّمَا قَالَ الْمُقَيَّرِ. وَقَالَ احْفَظُوهُنَّ وَأَخْبِرُوا بِهِنَّ مَنْ وَرَاءَكُمْ.

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আব্দুল ক্বায়েম গোত্রের প্রতিনিধিদল যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দরবারে এসে পৌঁছালো, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোন গোত্র অথবা কোন্ প্রতিনিধিদল (রাবী সন্দেহ)? তারা বলল, রবী’আহ গোত্র। তিনি বললেন, তোমাদের গোত্রকে অথবা তোমাদের প্রতিনিধিদলকে মুবারকবাদ যা অপমানহীন ও অনুতাপবিহীন। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ‘হরম’-এর (যুদ্ধ নিষিদ্ধ) মাসগুলি ব্যতীত আমরা আপনার নিকটে আসতে পারিনা। কেননা আমাদের ও আপনার মাঝে কাফের ‘মুযার’ গোত্রটি অন্তরায় হয়ে আছে। অতএব আপনি আমাদেরকে এমন পরিষ্কার চূড়ান্ত কিছু বিষয় নির্দেশ করুন, যা আমরা আমাদের বাকী লোকদের গিয়ে বলতে পারি ও যার দ্বারা আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাবী বলেন, তারা তাঁকে পানপাত্র সমূহের ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করল। জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দিলেন ও চারটি বিষয়ে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেন কেবলমাত্র এক আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য। অতঃপর বললেন, তোমরা কি জানো কেবলমাত্র আল্লাহর উপরে বিশ্বাস স্থাপনের অর্থ কী? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। অতঃপর ছালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও রামাযানের ছিয়াম পালন করা। এতদ্ব্যতীত জিহাদলব্ধ গণীমতের মাল থেকে এক পঞ্চমাংশ তোমরা নেতার নিকটে জমা দিবে।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে চারটি পাত্র সম্পর্কে নিষেধ করলেন, যা হ’ল : (১) ‘হান্তাম’ অর্থাৎ শরাব তৈরীর কলসী যার গর্দান সবুজ ও লাল রংয়ের (২) ‘দুব্বা’ অর্থাৎ লাউ বা চাল কুমড়ার শুকনা খোল দ্বারা প্রস্তুত মদ্যভাণ্ড (৩) ‘লাক্বীব’ অর্থাৎ গাছের গুঁড়িতে গর্ত করে সেখানে শরাব বানানোর পাত্র বিশেষ (৪) ‘মোযাফফাত’ অর্থাৎ আলকাতরা’ বা অনুরূপ গাঢ় তৈলজাতীয় বস্তু দ্বারা মোড়ানো মদ্যপাত্র বিশেষ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বললেন, তোমরা এগুলি বিষয় স্মরণ রাখবে ও তোমাদের বাকী লোকদের জানিয়ে দিবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৭; বাংলা মিশকাত হা/১৬)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ছাহাবীগণ শরী’আত শোনার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসতেন এবং সে অনুপাতে আমল করে জান্নাত পাওয়ার আকাংখা পোষণ করতেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَحَوْلَهُ عِصَابَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ بَايِعُونِى عَلَى أَنْ لاَ تُشْرِكُوا بِاللهِ شَيْئًا، وَلاَ تَسْرِقُوا، وَلاَ تَزْنُوا، وَلاَ تَقْتُلُوا أَوْلاَدَكُمْ، وَلاَ تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ، وَلاَ تَعْصُوا فِى مَعْرُوفٍ، فَمَنْ وَفَى مِنْكُمْ فَأَجْرُهُ عَلَى اللهِ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ فِى الدُّنْيَا فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا ثُمَّ سَتَرَهُ اللهُ، فَهُوَ إِلَى اللهِ إِنْ شَاءَ عَفَا عَنْهُ، وَإِنْ شَاءَ عَاقَبَهُ. فَبَايَعْنَاهُ عَلَى ذَلِكَ.

ওবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা একদল ছাহাবী দ্বারা আবেষ্টিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বললেন, তোমরা আমার নিকটে বায়’আত কর এ বিষয়ে যে, (১) তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না (২) চুরি করবে না। (৩) যেনা করবে না (৪) তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না (৫) কারু প্রতি অপবাদ দিবে না (৬) মা’রূফ তথা শরী’আত সংগত বিষয়ে অবাধ্যতা করবে না। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এসব অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকটে রয়েছে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এসবের কোন একটি করবে, তার জন্য যদি দুনিয়াতে (আইন সঙ্গতভাবে) শাস্তি হয়, তবে সেটা তার জন্য কাফফারা হবে (এজন্য আখেরাতে পুনরায় শাস্তি হবে না)। আর যে ব্যক্তি উক্ত পাপসমূহের কোন একটি করেছে, অথচ আল্লাহ তা ঢেকে দিয়েছেন (বা দুনিয়ায় কোন শাস্তি হয়নি), তাহলে সে বিষয়টি আল্লাহর উপরে নির্ভর করে। তিনি ইচ্ছা করলে উক্ত অপরাধ মাফ করতে পারেন, শাস্তিও দিতে পারেন। রাবী বলেন, আমরা এসকল কথার উপরে তাঁর নিকটে বায়’আত করলাম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮)। অত্র হাদীছে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে কথাগুলি বলতেন সে কথাগুলি মেনে চলার জন্য ছাহাবীদের নিকট থেকে ওয়াদা বা অঙ্গীকার নিতেন। কোন কোন ছাহাবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মুখ থেকে কিছু শুনে বলতেন, وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَا أَزِيْدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ. ‘আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যা শুনলাম তার কম-বেশী করব না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪)।

ছাহাবীগণ জান্নাতে প্রবেশের এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের আমল শুনতে চাইতেন (তিরমিযী, মিশকাত হা/২৯, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

عَنْ أبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَكُوْنُ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُوْنَ كَذَّبُوْنَ يَأتُوْنَكُمْ مِنَ الأحَادِيْثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أنْتُمْ وَلاَ أبَائُكُمْ فَإيَّاكُمْ وَ إيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّوْنَكُمْ وَلاَ يُفْتِنُوْنَكُمْ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘শেষ যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব অলীক কথা-বার্তা উপস্থিত করবে, যা না তোমরা শুনেছ না তোমাদের বাপ-দাদা শুনেছে। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে বেঁচে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে বাঁচাও। অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে বিরত থাক। যাতে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং তোমাদের বিপথগামী করতে না পারে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হতে সাবধান

পরিচ্ছেদঃ

অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হতে সাবধান

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ يُدْنِى الْمُؤْمِنَ فَيَضَعُ عَلَيْهِ كَنَفَهُ، وَيَسْتُرُهُ فَيَقُوْلُ أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا فَيَقُوْلُ نَعَمْ أَىْ رَبِّ. حَتَّى إِذَا قَرَّرَهُ بِذُنُوْبِهِ وَرَأَى فِى نَفْسِهِ أَنَّهُ هَلَكَ قَالَ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِى الدُّنْيَا، وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ. فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ، وَأَمَّا الْكَافِرُ وَالْمُنَافِقُوْنَ فَيَقُوْلُ الأَشْهَادُ هَؤُلاَءِ الَّذِيْنَ كَذَبُوْا عَلَى رَبِّهِمْ، أَلاَ لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِيْنَ.

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘(ক্বিয়ামতের দিন) আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে নিজের নিকটবর্তী করবেন এবং আল্লাহ্ তা’আলা নিজ বাজু তার উপরে রেখে তাকে ঢেকে নিবেন। অতঃপর আল্লাহ্ সেই বান্দাকে বলবেন, আচ্ছা! বল দেখি, এই গোনাহটি তুমি করেছ কি? এই গোনাহটি সম্পর্কে তুমি অবগত আছ কি? সে বলবে হ্যাঁ, হে আমার রব! আমি অবগত আছি। শেষ পর্যন্ত এক একটি করে তার কৃত সমস্ত গোনাহের স্বীকৃতি আদায় করবেন। এদিকে সে বান্দা মনে মনে এই ধারণা করবে যে, সে এই সমস্ত অপরাধের কারণে নির্ঘাত ধ্বংস হবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, দুনিয়াতে আমি তোমার এই সমস্ত অপরাধ ঢেকে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দিবো। অতঃপর তাকে নেকীর আমলনামা দেওয়া হবে। আর কাফের ও মুনাফিকদেরকে সমস্ত সৃষ্টির সম্মুখে আনয়ন করা হবে এবং উচ্চস্বরে এই ঘোষণা দেওয়া হবে- এরা তারা, যারা স্বীয় পরওয়ারদিগারের বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করত। জেনে রাখ, এই সমস্ত যালিমদের উপর আজ আল্লাহর লা’নত’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৫১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩১৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَضَحِكَ فَقَالَ هَلْ تَدْرُوْنَ مِمَّ أَضْحَكُ. قَالَ قُلْنَا اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ. قَالَ مِنْ مُخَاطَبَةِ الْعَبْدِ رَبَّهُ يَقُوْلُ يَا رَبِّ أَلَمْ تُجِرْنِىْ مِنَ الظُّلْمِ قَالَ يَقُوْلُ بَلَى. قَالَ فَيَقُوْلُ فَإِنِّىْ لاَ أُجِيْزُ عَلَى نَفْسِىْ إِلاَّ شَاهِدًا مِنِّىْ قَالَ فَيَقُوْلُ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ شَهِيْدًا وَبِالْكِرَامِ الْكَاتِبِيْنَ شُهُوْدًا قَالَ فَيُخْتَمُ عَلَى فِيْهِ فَيُقَالُ لأَرْكَانِهِ انْطِقِى. قَالَ فَتَنْطِقُ بِأَعْمَالِهِ قَالَ ثُمَّ يُخَلَّى بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَلاَمِ قَالَ فَيَقُوْلُ بُعْدًا لَكُنَّ وَسُحْقًا. فَعَنْكُنَّ كُنْتُ أُنَاضِلُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ছিলাম, হঠাৎ তিনি হাসলেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান আমি কেন হাসছি? আমরা বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, ক্বিয়ামতের দিন বান্দা যে তার রবের সাথে  কথা বলবে, সেই কথাটি স্মরণ করে হাসছি। বান্দা বলবে, হে রব! তুমি কি আমাকে যুলম হতে নিরাপত্তা দান করনি? আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ, তখন বান্দা বলবে, আজ আমি আমার সম্পর্কে আপনজন ব্যতীত আমার বিরুদ্ধে অন্য কারও সাক্ষ্য গ্রহণ করব না। তখন আল্লাহ বলবেন, আজ তুমি নিজেই তোমার সাক্ষী হিসাবে এবং কিরামান-কাতেবীনের সাক্ষ্যই তোমার জন্য যথেষ্ট। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তার মুখের উপর মোহর লাগিয়ে দিবেন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হবে, তোমরা কে কখন কি কি কাজ করেছো বল। তখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ তাদের কৃতকর্মসমূহ প্রকাশ করে দিবে। এরপর তার মুখকে স্বাভাবিক অবস্থায় খুলে দেওয়া হবে। তখন সে স্বীয় অঙ্গসমূহকে লক্ষ্য করে আক্ষেপের সাথে বলবে, হে দুর্ভাগা অঙ্গসমূহ! তোরা দূর হ! তোদের ধ্বংস হৌক! তোদের জন্যই তো আমি আমার রবের সাথে ঝগড়া করেছিলাম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৫৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩২০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ هَلْ تُضَارُّوْنَ فِىْ رُؤْيَةِ الشَّمْسِ فِى الظَّهِيْرَةِ لَيْسَتْ فِىْ سَحَابَةٍ. قَالُوْا لاَ. قَالَ فَهَلْ تُضَارُّوْنَ فِىْ رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَيْسَ فِىْ سَحَابَةٍ. قَالُوْا لاَ. قَالَ فَوَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لاَ تُضَارُّوْنَ فِىْ رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ إِلاَّ كَمَا تُضَارُّوْنَ فِىْ رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا قَالَ فَيَلْقَى الْعَبْدَ فَيَقُوْلُ أَىْ فُلْ أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ فَيَقُوْلُ بَلَى. قَالَ فَيَقُوْلُ أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلاَقِىَّ فَيَقُوْلُ لاَ. فَيَقُوْلُ فَإِنِّىْ أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِى. ثُمَّ يَلْقَى الثَّانِىَ فَيَقُوْلُ أَىْ فُلْ أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ فَيَقُولُ بَلَى أَىْ رَبِّ.
فَيَقُوْلُ أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلاَقِىَّ فَيَقُوْلُ لاَ. فَيَقُوْلُ فَإِنِّى أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِىْ. ثُمَّ يَلْقَى الثَّالِثَ فَيَقُوْلُ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ فَيَقُولُ يَا رَبِّ آمَنْتُ بِكَ وَبِكِتَابِكَ وَبِرُسُلِكَ وَصَلَّيْتُ وَصُمْتُ وَتَصَدَّقْتُ. وَيُثْنِى بِخَيْرٍ مَا اسْتَطَاعَ فَيَقُولُ هَا هُنَا إِذًا قَالَ ثُمَّ يُقَالُ لَهُ الآنَ نَبْعَثُ شَاهِدَنَا عَلَيْكَ. وَيَتَفَكَّرُ فِىْ نَفْسِهِ مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْهَدُ عَلَىَّ فَيُخْتَمُ عَلَى فِيْهِ وَيُقَالُ لِفَخِذِهِ وَلَحْمِهِ وَعِظَامِهِ انْطِقِى فَتَنْطِقُ فَخِذُهُ وَلَحْمُهُ وَعِظَامُهُ بِعَمَلِهِ وَذَلِكَ لِيُعْذِرَ مِنْ نَفْسِهِ. وَذَلِكَ الْمُنَافِقُ وَذَلِكَ الَّذِىْ يَسْخَطُ اللهُ عَلَيْهِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন, দ্বিপ্রহরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের মধ্যে পরস্পরে বাধা সৃষ্টি হয়? তারা বললেন, না। তিনি আরও বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার রাত্রে পূর্ণ চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন প্রকারের অসুবিধা হয়? তারা বললেন, না। অতঃপর তিনি বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এই দু’টির কোন একটিকে দেখতে তোমাদের যেই পরিমাণ অসুবিধা হয়, সেই দিন তোমাদের রবকে দেখতে সেই পরিমাণ অসুবিধাও হবে না। এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তখন আল্লাহ তা’আলা কোন এক বান্দাকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে মর্যাদা দান করিনি? আমি কি তোমাকে সর্দারী দান করিনি? আমি কি তোমাকে বিবি দান করিনি? আমি কি তোমার জন্য ঘোড়া ও উটকে অনুগত করে দেয়নি? আমি কি তোমাকে এই সুযোগ দেয়নি যে, তুমি নিজ সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিবে এবং তাদের নিকট হতে এক-চতুর্থাংশ মাল ভোগ করবে? জবাবে বান্দা বলবে, হ্যাঁ, (হে আমার প্রতিপালক!)। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে বললেন, আচ্ছা বল দেখি, তোমার কি এই ধারণা ছিল যে, তুমি আমার সাক্ষাৎ লাভ করবে? বান্দা বলবে, না। এইবার আল্লাহ বলবেন, (দুনিয়াতে) তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে আজ আমিও (আখেরাতে) অনুরূপভাবে তোমাকে ভুলে থাকব। (অর্থাৎ তোমাকে আযাবে লিপ্ত রাখব)। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন, সেও অনুরূপ বলবে। তারপর তৃতীয় এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাকেও অনুরূপ কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার প্রতি, তোমার কিতাবের প্রতি এবং তোমার সমস্ত নবীগণের প্রতি ঈমান এনেছি, ছালাত আদায় করেছি, ছিয়াম পালন করেছি এবং দান-ছাদাক্বা করেছি। মোটকথা, সে সাধ্য পরিমাণ নিজের নেক কার্যসমূহের একটি তালিকা আল্লাহর সম্মুখে তুলে ধরব। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আচ্ছা! তুমি তো তোমার কথা বললে, এখন এখানেই দাঁড়াও, এক্ষুণি তোমার ব্যাপারে সাক্ষী উপস্থিত করছি। এই কথা শুনে বান্দা মনে মনে চিন্তা করবে, এমন কে আছে যে, এখানে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে?
অতঃপর তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেওয়া হবে এবং তার রানকে বলা হবে, তুমি বল, তখন তার রান, হাড়, মাংস প্রভৃতি এক একটি করে বলে ফেলবে, এরা যা যা করেছিল। তার মুখে মোহর লাগিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে এই জন্য সাক্ষী গ্রহণ করা হবে, যেন সেই বান্দা কোন ওযর-আপত্তি পেশ করতে না পারে। বস্তুতঃ যেই বান্দার কথা আলোচনা করা হয়েছে, সে হ’ল মুনাফিক এবং এই কারণেই আল্লাহ তার প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হবেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৫৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩২১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلاً مِّنْ أُمَّتِىْ عَلَى رُءُوْسِ الْخَلاَئِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَّتِسْعِيْنَ سِجِلاًّ كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا أَظَلَمَكَ كَتَبَتِى الْحَافِظُوْنَ فَيَقُوْلُ لاَ يَا رَبِّ فَيَقُوْلُ أَفَلَكَ عُذْرٌ فَيَقُوْلُ لاَ يَا رَبِّ فَيَقُوْلُ بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً فَإِنَّهُ لاَ ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتُخْرَجُ بِطَاقَةٌ فِيْهَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ فَيَقُوْلُ احْضُرْ وَزْنَكَ فَيَقُوْلُ يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلاَّتِ فَقَالَ إِنَّكَ لاَ تُظْلَمُ قَالَ فَتُوْضَعُ السِّجِلاَّتُ فِىْ كِفَّةٍ وَالْبِطَاقَةُ فِىْ كِفَّةٍ فَطَاشَتِ السِّجِلاَّتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ فَلاَ يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللهِ شَىْءٌ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন এমন এক ব্যক্তিকে জনসম্মুখে উপস্থিত করা হবে, যার আমলনামা খোলা হবে নিরানব্বই ভলিয়মে এবং প্রতি ভলিয়ম বিস্তীর্ণ হবে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আচ্ছা বল দেখি, তুমি এর কোন একটিকে অস্বীকার করতে পারবে? অথবা আমার লিখক ফেরেশতাগণ কি তোমার প্রতি যুলুম করেছে? সে বলবে, না। হে আমার রব্ব! আল্লাহ তা’আলা জিজ্ঞেস করবেন, তবে কি তোমার পক্ষ হতে কোন ওযর পেশ করার আছে? সে বলবে, না; হে আমার রব! তখন আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ, তোমার একটি নেকী আমার নিকট রক্ষিত আছে। তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ, আজ তোমার প্রতি কোন যুলুম বা অবিচার করা হবে না। এরপর এক টুকরা কাগজ বের করা হবে, যাতে লিখা আছে, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ [অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ, (মা‘বূদ) নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল]। অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার আমলের ওযন দেখার জন্য উপস্থিত হও। তখন সে বলবে, হে আমার রব! ঐ সমস্ত বিরাট বিরাট দফতরের মুকাবিলায় এই এক টুকরা কাগজের মূল্যই বা কি আছে? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার উপর কোন অবিচার করা হবে না। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অতঃপর ঐ সমস্ত দফতরগুলি এক পাল্লায় এবং এই কাগজের টুকরাখানি আরেক পাল্লায় থাকবে। কাগজের টুকরা যে পাল্লায় থাকবে তা ভারী হয়ে নীচের দিকে ঝুঁকে থাকবে। মোটকথা, আল্লাহর নামের সাথে অন্য কোন জিনিস ওযনই হতে পারবে না’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫৫৫৯; বাংলা মিশকাত হা/৫৩২৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১

عَنْ عَدِىِّ بْنِ حَاتِمٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَا مِنْكُمْ أَحَدٌ إِلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ، لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ مِنْ عَمَلِهِ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.

আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সাথে তার রব কথাবার্তা বলবেন না। তার ও তার রবের মধ্যে কোন দোভাষী এবং এমন কোন পর্দা থাকবে না, যা তাকে আড়াল করে রাখবে। সে তার ডানে তাকাবে, তখনও পূর্বে প্রেরিত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। আবার বামে তাকাবে, তখনও পূর্ব প্রেরিত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। আর সম্মুখের দিকে তাকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। যা একেবারে চেহারার সম্মুখে অবস্থিত। সুতরাং খেজুর ছালের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম হতে বাঁচতে চেষ্টা কর’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৫০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩১৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২

عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تُكَلِّمَ السِّبَاعُ الإِنْسَ وَحَتَّى تُكَلِّمَ الرَّجُلَ عَذَبَةُ سَوْطِهِ وَشِرَاكُ نَعْلِهِ وَتُخْبِرَهُ فَخِذُهُ بِمَا أَحْدَثَ أَهْلُهُ مِنْ بَعْدِهِ.

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! সেই সময় পর্যন্ত ক্বিয়ামত কায়েম হবে না যে পর্যন্ত না হিংস্র পশু মানুষের সাথে কথা বলবে এবং যে পর্যন্ত না কারও চাবুক তার সাথে কথা বলবে, তার জুতার ফিতা তার সাথে কথা বলবে। আর তার উরু তাকে জানিয়ে দিবে যে, তার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী কি করেছে’ (তিরমিযী, বাংলা মিশকাত হা/৫২২৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩

عَنْ بَهز بْنِ حَكِيْمٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: إِنَّكُمْ تُدْعَوْن مُفَدَّمة أَفْوَاهُكُمْ بالفِدَام، فَأَوَّلُ مَا يُسْأَلُ عَنْ أَحَدِكُمْ فَخِذُهُ وَكَتِفُهُ.

বাহয ইবনু হাকিম তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ

বাহয ইবনু হাকিম তার পিতার মধ্যস্থতায় বর্ণনা করেন, তার দাদা বলেন, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদেরকে মুখ বন্ধ করে ডাকা হবে। সেদিন তোমাদের মুখ বন্ধ থাকবে। সর্বপ্রথম তোমাদের উরু এবং কাধকে জিজ্ঞেস করা হবে’ (নাসাঈ, ইবনু কাছীর হা/৫৬৬৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ إِنَّ أَوَّلَ عَظْمٍ مِنَ الْإِنْسَانِ يَتَكَلَّمُ يَوْمَ يُختَم عَلَى الْأَفْوَاهِ، فَخذُه مِنَ الرِّجل الْيُسْرَى.

উকবা ইবনু আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষের যখন মুখ বন্ধ থাকবে, তখন তার বাম উরুর হাড় সর্বপ্রথম কথা বলবে’ (ইবনু কাছীর ৫৬৭১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

আত্মসাৎ

পরিচ্ছেদঃ

আত্মসাৎ

১৫

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ إِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ لاَ يَزْنِىْ الزَّانِىْ حِيْنَ يَزْنِىْ وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ السَّارِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً ذَاتَ شَرَفٍ يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَغُلُّ أَحَدُكُمْ حِيْنَ يَغُلُّ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَإِيَّاكُمْ إِيَّاكُمْ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) এরশাদ করেন, (১) কোন যেনাকার যেনা করতে পারে না যখন সে যেনা করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। (২) কোন মদখোর মদপান করতে পারে না যখন সে মদ্যপান করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। (৩) কোন চোর চুরি করতে পারে না যখন সে চুরি করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। (৪) কোন ডাকাত এরূপে ডাকাতি বা ছিনতাই করতে পারে না যে লোক তার প্রতি নযর উঠিয়ে দেখে (অর্থাৎ প্রকাশ্যে) যখন সে ডাকাতি করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। (৫) তোমাদের কেউ গণীমতের মালে (বা কোন মালে) খেয়ানত করতে পারে না যখন সে খেয়ানত করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। অতএব তোমরা সাবধান হও? তোমরা সাবধান হও’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষ যখন খিয়ানত করে তখন মুমিন থাকে না। মুমিন হওয়ার জন্য তওবা করতে হবে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اُؤْتُمِنَ خَانَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত হচ্ছে তিনটা- যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং যখন তার নিকট কোন কিছু আমানত রাখা হয়, তা সে খিয়ানত করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَلَّمَا خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِلاَّ قَالَ لاَ إِيْمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ دِيْنَ لِمَنْ لاَ عَهْدَ لَهُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন, যাতে একথাগুলি বলেননি যে, ‘যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই এবং যার অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দ্বীন-ধর্ম নেই’ (আহমাদ হা/১১৯৩৫, মিশকাত হা/৩৫, বাংলা মিশকাত হা/৩১)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আমানত রক্ষা করা এবং অঙ্গীকার পূরণ করা পূর্ণ মুমিন হওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَدِّ الْأَمَانَةَ إِلَى مَنْ ائْتَمَنَكَ وَلاَ تَخُنْ مَنْ خَانَكَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে তাকে সময় মত আমানত বুঝিয়ে দাও। আর যে তোমার সাথে খিয়ানত করে তার খিয়ানত করো না‘ (তিরমিযী, আবুদাঊদ, দারেমী, মিশকাত হা/২৯৩৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯

عَنْ سَعِيدِ بْنِ زَيْدِ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنْ الأَرْضِ ظُلْمًا فَإِنَّهُ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ أَرَضِيْنَ.

সাঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অত্যাচার করে অর্ধহাত যমীন দখল করেছে, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন অনুরূপ সাতটি যমীন তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৩৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০

عَنْ سَالِمٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ أَخَذَ مِنَ الْأَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرْضِيْنَ.

তাবেঈ সালেম তাঁর বাপ আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর হতে থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে অনধিকারে কারো কিছু যমীন নিয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক যমীন পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৯৫৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১

عَنْ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ: أَيُّمَا رَجُلٍ ظَلَمَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ كَلَّفَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَحْفِرَهُ حَتَّى يَبْلُغَ آخِرَ سَبْعِ أَرَضِيْنَ ثُمَّ يُطَوَّقَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاس.

ইয়া’লা ইবনু মুররা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যেকোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিগত জমি দখল করে তাকে আল্লাহ তা সাত তবকের শেষ পর্যন্ত খুঁড়তে বাধ্য করবেন। অতঃপর তার গলায় তা শিকলরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে, যাবৎ না মানুষের বিচার শেষ করা হয়’ (আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৬০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قِيلَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَىُّ النَّاسِ أَفْضَلُ قَالَ كُلُّ مَخْمُوْمِ الْقَلْبِ صَدُوْقِ اللِّسَانِ. قَالُوْا صَدُوْقُ اللِّسَانِ نَعْرِفُهُ فَمَا مَخْمُوْمُ الْقَلْبِ قَالَ هُوَ التَّقِىُّ النَّقِىُّ لاَ إِثْمَ فِيهِ وَلاَ بَغْىَ وَلاَ غِلَّ وَلاَ حَسَدَ.

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল, মানুষের মধ্যে উত্তম কে? তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক নিষ্কলুষ অন্তঃকরণ সত্যভাষী’। সাহাবাগণ আরয করলেন, ‘সুদূকুল লিসান’ তো আমরা বুঝি, তবে ‘মাখ্মূমুল কালব’ কি? তিনি বললেন, ‘নির্মল ও পবিত্র অন্তঃকরণ, যা পাপ করেনি, যুলুম করেনি, যা খিয়ানত করেনি ও যা হিংসা-বিদ্বেষ হতে মুক্ত’ (ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/৫২২১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৩

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيْكَ فَلاَ عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدُّنْيَا حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيْثٍ وَحُسْنُ خَلِيْقَةٍ وَعِفَّةٌ فِىْ طُعْمَةٍ.

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন তোমার মধ্যে চারটি বস্তু বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যায় তাতে তোমার কোন ক্ষতি নেই। আমানত রক্ষা করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র হওয়া এবং খানা-পিনাতে সতর্কতা অবলম্বন করা’ (আহমাদ, শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/৫২২২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৪

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْروٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِذَا أَصَابَ غَنِيْمَةً أَمَرَ بِلَالًا فَنَادَى فِي النَّاسِ فَيَجِيْئُوْنَ بِغَنَائِمِهِمْ فَيُخَمِّسُهُ وَيُقَسِّمُهُ فَجَاءَ رَجُلٌ يَوْمًا بَعْدَ ذَلِكَ بِزِمَامٍ مِنْ شَعَرٍ فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذَا فِيْمَا كُنَّا أَصَبْنَاهُ مِنَ الْغَنِيْمَةِ قَالَ: أَسْمَعْتَ بِلَالًا نَادَى ثَلَاثًا؟ قَالَ: نَعَمْ قَالَ: فَمَا مَنَعَكَ أَنْ تَجِيءَ بِهِ؟ فَاعْتَذَرَ قَالَ: كُنْ أَنْتَ تَجِيءُ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَلَنْ أَقْبَلَهُ عَنْكَ.

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যখনই গনীমতের মাল লাভ করতেন, তখন বেলাল (রাঃ)-কে আদেশ করতেন। (তিনি যেন লোকদের যার কাছে যাকিছু আছে তা উপস্থিত করার জন্য ঘোষণা করেন)। তিনি জনগণের মধ্যে ঘোষণা করতেন, তখন লোকেরা তাদের স্ব স্ব গনীমত নিয়ে আসত। অতঃপর সমস্ত মাল হতে (বায়তুল মালের) এক-পঞ্চমাংশ বের করতেন এবং অবশিষ্টগুলি লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। একদা এক ব্যক্তি এর (খুমুস বের করা এবং সমস্ত মাল বিতরণ করে দেওয়ার) পর একখানা পশমের লাগাম নিয়ে আসল এবং বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইহা গনীমতের মাল, যা আমি পেয়েছিলাম। তার কথা শুনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, বেলাল যে তিন তিনবার ঘোষণা করেছিল, তুমি কি তা শুনেছ? সে বলল, হ্যাঁ, (শুনেছি)। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সেই সময় তা আনতে তোমাকে কে বাধা দিয়েছিল? তখন সে বিভিন্ন ওযর পেশ করল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও, তুমি ক্বিয়ামতের দিন এই রশি নিয়েই উপস্থিত হবে। আমি তোমার নিকট হতে এটা গ্রহণ করব না’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪০১২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৫

عَنْ خَوْلَةَ بِنْتِ قَيْسٍ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ إِنَّ هَذِهِ الْمَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ فَمَنْ أَصَابَهُ بِحَقِّهِ بُوْرِكَ لَهُ فِيْهِ وَرُبَّ مُتَخَوِّضٍ فَمَا شَاءَتْ بِهِ نَفْسُهُ مِنْ مَالِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ لَيْسَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَّا النَّارُ.

খাওলাহ বিনতে কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই পার্থিব সম্পদ শ্যামল ও সুমিষ্ট (অর্থাৎ আকর্ষণীয়) তবে যেই ব্যক্তি ন্যায়ভাবে প্রাপ্ত হয় তাতে তার বরকত হয়। আবার বহু লোক এমনও আছে, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সম্পদে (অর্থাৎ গনীমতের মালে) যথেচ্ছা তসরূপ করে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন ব্যতীত আর কিছুই না’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪০১৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৬

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ذَاتَ يَوْمٍ فَذَكَرَ الْغُلُوْلَ فَعَظَّمَهُ وَعَظَّمَ أَمْرَهُ ثُمَّ قَالَ لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ بَعِيْرٌ لَهُ رُغَاءٌ يَقُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَغِثْنِى. فَأَقُوْلُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ. لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ فَرَسٌ لَهُ حَمْحَمَةٌ فَيَقُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَغِثْنِى. فَأَقُوْلُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ. لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ شَاةٌ لَهَا ثُغَاءٌ يَقُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَغِثْنِى. فَأَقُوْلُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ. لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ نَفْسٌ لَهَا صِيَاحٌ فَيَقُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَغِثْنِى. فَأَقُوْلُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ. لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ رِقَاعٌ تَخْفِقُ فَيَقُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَغِثْنِى. فَأَقُوْلُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ. لاَ أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ صَامِتٌ فَيَقُوْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَغِثْنِى فَأَقُوْلُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের মাঝে বক্তব্য দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন, তিনি খিয়ানত সম্পর্ককে বক্তব্য দিলেন এবং খিয়ানতের বিষয়টি খুব বড় করে পেশ করলেন। তারপর তিনি বললেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে আমি এমন অবস্থায় পাব যে, তার কাঁধের উপর উট চিৎকার করতে থাকবে। সে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে রক্ষা করুন। আমি বলব, আজ আল্লাহর সামনে তোমার জন্য সামান্য কিছু করার ক্ষমতা আমি রাখি না, যা পূর্বেই বলেছি। ক্বিয়ামতের দিন আমি তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় পাব যে, তার কাঁধের উপর ঘোড়া চিৎকার করতে থাকবে। সে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে রক্ষা করুন, আমি বলব, আজ আল্লাহর সামনে তোমার জন্য সামান্য কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই, যা আমি পূর্বেই বলেছি। ক্বিয়ামতের দিন আমি যেন তোমাদের কাউকে এই অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে কাঁধের উপর একটি ছাগল বহন করছে এবং আমাকে বলবে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলব, আমি কিছুই করতে পারব না।
আমিতো তোমাকে আল্লাহর বিধান পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি। কিয়ামতের দিন আমি যেন তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে নিজের কাঁধের উপর চিৎকার রত একটি মানুষ বহন করে নিয়ে আসবে আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলব, আজ আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। আমি আল্লাহর বিধান তোমাকে পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি। ক্বিয়ামতের দিন আমি যেন তোমাদের কাউকে এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে নিজের কাঁধের উপর কাপড় ইত্যাদির এক খণ্ড বহন করে নিয়ে আসছে। আর তা ভীষণভাবে তার কাঁধের উপর দুলছে, তখন সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন, আর আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। কিয়ামতে আমি যেন তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় না দেখতে পাই যে, সে নিজের কাঁধের উপর অচেতন সম্পদ (সোনা-চাঁদি) বহন করে নিয়ে আসছে। আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলব, আজ আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারব না। আমি তো তোমাকে আল্লাহর বিধান পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৯৯৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৭

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ أَهْدَى رَجُلٌ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم غُلاَمًا يُقَالُ لَهُ مِدْعَمَ فَبَيْنَمَا مِدْعَمٌ يَحُطُّ رَحْلاً لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِذْ أَصَابَهُ سَهْمٌ عَائِرٌ فَقَتَلَهُ فَقَالَ النَّاسُ هَنِيئًا لَهُ الْجَنَّةُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كَلاَّ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِي أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنْ الْمَغَانِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمُ لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِكَ النَّاسُ جَاءَ رَجُلٌ بِشِرَاكٍ أَوْ شِرَاكَيْنِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ شِرَاكٌ مِنْ نَارٍ أَوْ شِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

মিদআম নামে একটি গোলাম রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে হাদিয়া দিয়েছিল। মিদআম এক সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উটের পিঠের হাওদা নামাচ্ছিল এমতাবস্থায় একটি তীর এসে তাকে লাগে এবং সে মারা যায়। ছাহাবীগণ বলেন, তার জন্য জান্নাত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কখনই নয়। আল্লাহর কসম, নিশ্চয়ই ঐ চাদরটি যেটি সে খায়বারের গনীমত বণ্টন করার পূর্বে আত্মসাৎ করেছিল সে চাদরটি জাহান্নামের আগুন তার উপর উত্তেজিত করছে। এ কথা শুনে একজন লোক একটি জুতার ফিতা বা দু’টি জুতার ফিতা রসূলের নিকট নিয়ে আসল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, একটি বা দু’টি জুতার ফিতা আত্মসাৎ করলেও জাহান্নামে যাবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৯৯৭; বাংলা ৮ম খণ্ড, হা ৩৮২১)। অত্র হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আত্মসাৎকৃত বস্তু ক্ষুদ্র হলেও তার পরিণাম জাহান্নাম।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৮

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ كَانَ عَلَى ثَقَلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ كَرْكَرَةُ فَمَاتَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم هُوَ فِي النَّارِ فَذَهَبُوا يَنْظُرُونَ إِلَيْهِ فَوَجَدُوا عَبَاءَةً قَدْ غَلَّهَا.

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর গনীমতের মালের এক ব্যক্তি দায়িত্বশীল ছিল, যে কারকারা নামে পরিচিত। সে মারা গেলে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা করেন। ছাহাবীগণ তার নিকট গিয়ে দেখলেন সে একটি চাদর আত্মসাৎ করেছিল (ইবনু মাজাহ, হা/২৮৪১, হাদীছ ছহীহ, বুখারী, মিশকাত হা/৩৯৯৮; বাংলা ৮ম খণ্ড, হা/৩৮২২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৯

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ حَدَّثَنِي عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيْبَرَ أَقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ صَحَابَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالُوا فُلاَنٌ شَهِيدٌ فُلاَنٌ شَهِيدٌ حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ فَقَالُوا فُلاَنٌ شَهِيدٌ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كَلاَّ إِنِّي رَأَيْتُهُ فِي النَّارِ فِي بُرْدَةٍ غَلَّهَا.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ওমর (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘খায়বারের যুদ্ধের দিন ছাহাবীগণের একটি দল বাড়ী ফিরে আসছিলেন। ঐ সময় ছাহাবীগণ বললেন, অমুক অমুক শহীদ, শেষ পর্যন্ত এমন এক ব্যক্তিকে ছাহাবীগণ শহীদ বললেন, যার ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কখনো নয়, আমি তাকে জাহান্নামে দেখছি সে একটি চাদর আত্মসাৎ করেছে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৩৪; বাংলা ৮ম খণ্ড, হা/৩৮৫৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩০

عَنْ خَوْلَةَ الأَنْصَارِيَّةِ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ إِنَّ رِجَالاً يَتَخَوَّضُوْنَ فِيْ مَالِ اللهِ بِغَيْرِ حَقٍّ فَلَهُمْ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

খাওলা আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সম্পদ দখল করবে। ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম রয়েছে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৩৯৯৫; বাংলা মিশকাত ৮ম খণ্ড, হা/৩৮১৯ ‘জিহাদ’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩১

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ রাসূলগণকে যা আদেশ করেছেন মুমিনদেরও তাই আদেশ করেছেন। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি লোকের আলোচনা করলেন, যে ব্যক্তি সফরে থাকায় ধুলায় মলিন হয়। আকাশের দিকে দু’হাত উত্তোলন করে প্রার্থনা করছে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, তার জীবিকা নির্বাহ হারাম, কিভাবে তার দো’আ কবুল হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০, বাংলা মিশকাত ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/২৬৪০, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)। অত্র হাদীছে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে খাদ্য পানি পোষাক হারাম থাকলে ইবাদত কবুল হবে না।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩২

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لاَ يُبَالِي الْمَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلاَلِ أَمْ مِنْ الْحَرَامِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষ হালাল-হারাম উপার্জনে বিবেচনা করবে না’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩৩

عَنْ كَعَبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بِالْحَرَامِ.

কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট শরীর জান্নাতে যাবে না’ (মিশকাত/২৭৮৭ ; বাংলা ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাঃ/২৬৬৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩৪

عَنْ النُّعْمَانِ بْنَ بَشِيْرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنْ النَّاسِ فَمَنْ اتَّقَى الْشُبْهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ كَالرَاعِيْ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ أَلاَ وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلاَ وَإِنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلاَ وَهِيَ الْقَلْبُ.

নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘হালালও স্পষ্ট হারামও স্পষ্ট। উভয়ের মধ্যে কিছু অস্পষ্ট রয়েছে, যা অনেক মানুষ জানে না। যে ব্যক্তি অস্পষ্ট থেকে বেঁচে থাকবে সে তার দ্বীন ও তার মর্যাদাকে পূর্ণ করে নিবে। আর যে ব্যক্তি অস্পষ্ট গ্রহণ করবে সে হারামকে গ্রহণ করবে। যেমন একটি রাখাল ক্ষেতের সীমানায় ছাগল চরালে শস্য খেতে যেতে পারে। মনে রেখো, প্রত্যেক বাদশার একটি সীমা রয়েছে আর আল্লাহর সীমানা হচ্ছে তাঁর হারাম। নিশ্চয়ই শরীরে একটি টুকরা আছে, টুকরাটি ঠিক থাকলে সম্পূর্ণ শরীর ঠিক থাকবে, টুকরাটি নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ শরীর নষ্ট হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে অন্তর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

হালাল ও হারাম

পরিচ্ছেদঃ

হালাল ও হারাম

৩৫

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَأَنَّ اللهَ أَمَرَ المؤْمنيْنَ بِمَا أمرَ بِهِ المرسَليْنَ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِّيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّىْ يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না। (এবং সর্বক্ষেত্রে পাক-পবিত্রতার আদেশই তিনি করেছেন। সেই সম্পর্কে) আল্লাহ রাসূলগণকে যে আদেশ করছেন, মুমিনগণকেও সেই আদেশই করেছেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উল্লেখ করলেন, এক ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধূলা-বালি। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি উভয় হস্ত আসমানের দিকে উঠিয়ে কাতর স্বরে হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, তার জীবিকা নির্বাহ হারাম, কিভাবে তার দো’আ কবুল হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩৬

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يُبَالِي الْمَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلَالِ أَمْ مِنَ الْحَرَامِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের সম্মুখে এমন এক যুগ আসবে যে, কেউ পরওয়া করবে না কি উপায়ে মাল লাভ করল; হারাম না হালাল উপায়ে’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩৭

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبْهَاتِ استبرَأَ لدِينهِ وعِرْضِهِ ومَنْ وقَعَ فِي الشبُّهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيهِ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُله أَلا وَهِيَ الْقَلْبُ.

নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘হালাল এবং হারাম সুস্পষ্ট, আর ঊভয়ের মধ্যে অনেক সন্দেহজনক বিষয় বা বস্তু আছে।(যেগুলি হালালের অন্তর্ভুক্ত না হারামের অন্তর্ভুক্ত,) সে সম্পর্কে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্রে যেই ব্যক্তি সন্দেহের বস্তুকে পরিহার করে চলবে, তার দ্বীন এবং আবরু-ইজ্জত, মান-সম্মান পাক-পবিত্র থাকবে। পক্ষান্তরে যেই ব্যক্তি সন্দেহের কাজে লিপ্ত হবে, সে অচিরেই হারামেও লিপ্ত হয়ে পড়বে। (ফলে তার দ্বীন এবং মান-সম্মান কলুষিত হবে।) যেমন যেই রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার ধারে চরাবে, খুব সম্ভব তার পশু নিষিদ্ধ এলাকার ভিতরেও মুখ ঢুকিয়ে দিবে। তোমরা ম্মরণ রেখো প্রত্যেক বাদশাই নিজ পশুপালের চারণভুমি (নিষিদ্ধ এলাকা) বানিয়ে রাখেন। তদ্রূপ (সকল বাদশাহর বাদশাহ) আল্লাহ তা’আলার চারণভূমি তাঁর হারাম বস্তুসমূহকে নির্ধারিত করে রেখেছেন। ‘মনে রেখো মানুষের দেহের ভিতরে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা সঠিক থাকলে সমস্ত দেহই সঠিক থাকে। আর সেই অংশের বিকৃতি ঘটলে সম্পূর্ণ দেহেরই বিকৃতি ঘটে। সেই গোশতের টুকরাটি হল অন্তর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩৮

وَعَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ثَمَنُ الْكَلْبِ خَبِيْثٌ وَمَهْرُ الْبَغِيِّ خَبِيْثٌ وَكَسْبُ الْحَجَّامِ خَبِيْثٌ.

রাফে ‘ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কুকুর বিক্রয়ের মুল্য ঘৃণিত বস্তু, ব্যভিচারের বিনিময়ও অতি জঘন্য, সিঙ্গা লাগানোর মূল্যও ঘৃণিত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩৯

عَنْ أَبِيْ مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم نَهَى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَمَهْرِ الْبَغِيِّ وَحُلْوَانِ الْكَاهِنِ.

আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘কুকুরের মূল্য, যিনাকারীনীর উপার্জন ও গণকের উপার্জন খেতে নিষেধ করেছেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪০

وَعَن أَبِيْ حُجَيْفَةَ أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ وَثَمَنِ الْكَلْبِ وَكَسْبِ الْبَغِيِّ وَلَعَنَ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ وَالْمُصَوِّرَ.

আবু হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করেছেন, রক্ত বিক্রয় মূল্য হতে, কুকুর বিক্রয়ের মূল্য হতে, ব্যভিচার বা যেনার বিনিময় হতে এবং তিনি লা’নত করেছেন সুদ গ্রহীতার প্রতি ও সুদদাতার প্রতি। তিনি আরও লা’নত করেছেন ঐ ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোন অংশ (নাম বা চিত্র ইত্যাদি) উলকী করে এবং যে উলকী করায়। এতদ্ভিন্ন ছবি অংকনকারীর প্রতিও লা’নত করেছেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৬৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪১

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نبَتَ منَ السُّحْتِ وكلُّ لحمٍ نبَتَ منَ السُّحْتِ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ.

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন’ (আহমাদ, দারেমী, বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৭২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪২

عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ.

হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এই বাণীটি আমি ভালভাবে স্মরণ রেখেছি যে, যে কাজে মনে খটকা লাগে, সে কাজ পরিহার করে খটকাহীন কাজ অবলম্বন কর। সত্য ও শুদ্ধের ক্ষেত্রে দ্বিধার সৃষ্টি হয় না, মিথ্যা ও অশুদ্ধের ক্ষেত্রেই দ্বিধার সৃষ্টি হয় (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৭৭৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৩

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلَا تَشْتَرُوهُنَّ وَلَا تُعَلِّمُوْهُنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ وَفِيْ مِثْلِ هَذَا نَزَلَتْ (وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِيْ لَهُوَ الحَديْثِ).

আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় করিও না, তার মূল্য হারাম। তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। এই শ্রেণীর কার্য যারা করে তাদের সম্পর্কেই পবিত্র কুরআনের এ আয়াত অবর্তীণ হয়েছে, ‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা রং-তামাশার গাথা (তথা গান) ক্রয় করে (তাদের জন্য লাঞ্ছনাময় শাস্তি রয়েছে)’ (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৪

عنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ لِأَبِيْ بَكْرٍ غُلاَمٌ يُخْرِجُ لَهُ الْخَرَاجَ وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يَأْكُلُ مِنْ خَرَاجِهِ فَجَاءَ يَوْمًا بِشَيْءٍ فَأَكَلَ مِنْهُ أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لَهُ الْغُلاَمُ أَتَدْرِي مَا هَذَا فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ وَمَا هُوَ قَالَ كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لِإِنْسَانٍ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الْكِهَانَةَ إِلاَّ أَنِّي خَدَعْتُهُ فَلَقِيَنِي فَأَعْطَانِي بِذَلِكَ فَهَذَا الَّذِي أَكَلْتَ مِنْهُ فَأَدْخَلَ أَبُو بَكْرٍ يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِي بَطْنِهِ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ)-এর একজন গোলাম ছিল। তিনি তার জন্য রাজস্ব নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি তার রাজস্ব হতে খেতেন। একদিন সে কিছু সম্পদ নিয়ে আসে এবং তিনি সেখান হতে কিছু খান। তখন গোলাম তাঁকে বলল, আপনি এ খাদ্য সম্পর্কে কি জানেন? তিনি বললেন এ কেমন খাদ্য? গোলাম বলল, আমি জাহেলী যুগে গণকী করতাম। আমি মানুষকে ধোঁকা দিতাম। ঐ সময়ের এক লোকের সাথে দেখা হলে সে আমাকে এ খাদ্য প্রদান করে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে সব বমন করে দিলেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৭৮৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৫

عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ.

আবুবকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৮৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৬

عَنْ أَنَسٍ قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتَمْرَةٍ فِي الطَّرِيْقِ فَقَالَ لَوْلَا أَنِّيْ أَخَافُ أَنْ تَكُوْنَ مِنَ الصَّدَقَةِ لَأَكَلْتُهَا.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাস্তায় পড়া একটি খেজুরের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, ‘ছাদাক্বার খেজুর বলে যদি আমার সন্দেহ না হত, নিশ্চয়ই আমি তা খেতাম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮২১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৭

وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ أَخَذَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ تَمْرَةً مِنْ تَمْرِ الصَّدَقَةِ فَجَعَلَهَا فِيْ فِيْهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كِخْ كِخْ لِيَطْرَحَهَا ثُمَّ قَالَ أَمَا شَعَرْتَ أَنَّا لَا نَأْكُلُ الصَّدَقَةَ؟

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা (রাসূলের দৌহিত্র) হাসান ইবনে আলী (রাঃ) যাকাতের একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন (এটা দেখে) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ক্ষ, ক্ষ, যাতে তা সে ফেলে দেয়। অতঃপর বললেন, নানু তুমি জান না! আমরা যে যাকাত খাই না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮২২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

সত্য-মিথ্যা

পরিচ্ছেদঃ

সত্য-মিথ্যা

৪৮

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ تَقُوْلُوْا لِلْمُنَافِقِ سَيِّدٌ فَإِنَّهُ إِنْ يَكُ سَيِّدًا فَقَدْ أَسْخَطْتُمْ رَبَّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ.

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা মুনাফিক মানুষকে নেতা হিসাবে গ্রহণ কর না। যদি নেতা মুনাফিক হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করলে। অন্য বর্ণনায় আছে যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যুক মুনাফিক ব্যক্তিকে বলে, হে আমার নেতা! তখন সে তার প্রতিপালককে রাগান্বিত করল’ (আবুদাঊদ হা/৪৯৭৭; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৭৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৯

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَنَا زَعِيْمٌ بِبَيْتٍ فِىْ رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا وَبِبَيْتٍ فِىْ وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِىْ أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ.

আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দেয়ার জন্য যামীন, যে তর্ক পরিহার করে হক হলেও। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দেয়ার জন্য যামীন, যে মিথ্যা পরিহার করে মযাক করে হলেও এবং আরও একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চে নিয়ে দেয়ার জন্য যিম্মাদার, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে’ (আবুদাঊদ হা/৪৮০০; বায়াহাক্বী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৭৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫০

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ عَنْ أَبِيْ قُرَادٍ السُّلَمِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَدَعَا بِطَهُوْرٍ فَغَمَسَ يَدَهُ فِيْهِ فَتَوَضَّأَ، فَتَتَّبَعْنَاهُ، فَحَسَوْنَاهُ، فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ مَا حَمَلَكُمْ عَلَى مَا صَنَعْتُمْ؟ قُلْنَا: حُبُّ اللهِ تَعَالَى وَرَسُوْلِهِ قَالَ فَإِنْ أَحْبَبْتُمْ أَنْ يُحِبَّكُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَرَسُوْلَهُ، فَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَحْسِنُوْا جِوَارَ مَنْ جَاوَرَكُمْ.

আব্দুর রহমান ইবনু হারিছ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আমরা একদা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকটে ছিলাম। তিনি ওযূর পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তাতে হাত ডুবালেন এবং ওযূ করলেন। আমরা তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁর নিকট হতে অঞ্জলী ভরে ওযূর পানি নিলাম। তিনি বললেন, তোমরা এ কাজ করতে উৎসাহিত হলে কেন? আমরা বললাম, এটা হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা। তিনি বললেন, তোমরা যদি চাও যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে ভালবাসবেন তাহলে তোমাদের নিকট আমানত রাখা হলে, তা প্রদান কর। কথা বললে, সত্য বল। তোমাদের প্রতিবেশীর সাথে ভাল আচরণ কর’ (ত্বাবারাণী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫১

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيْكَ فَلاَ عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدُّنْيَا حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيْثٍ وَحُسْنُ خَلِيْقَةٍ وَعِفَّةٌ فِىْ طُعْمَةٍ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন তোমার মাঝে চারটি জিনিস থাকবে, তখন দুনিয়ার সবকিছু হারিয়ে গেলেও তোমার কোন সমস্যা নেই। (১) আমানত রক্ষা করা (২) সত্য কথা বলা (৩) সুন্দর চরিত্র (৪) বৈধ রুযী’ (আহমাদ, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫২

عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ وَالْكَذِبَ رِيْبَةٌ.

হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অবগত হয়েছি, তিনি বলেছেন, ‘তুমি সন্দেহযুক্ত কথা ও কর্ম ছেড়ে যাতে সন্দেহ নেই সে দিকে ফিরে যাও। নিশ্চয়ই সত্য প্রশান্তির নাম এবং মিথ্যা সন্দেহ ও অশান্তির নাম’ (তিরমিযী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৩

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قِيْلَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَىُّ النَّاسِ أَفْضَلُ قَالَ كُلُّ مَخْمُوْمِ الْقَلْبِ صَدُوْقِ اللِّسَانِ. قَالُوْا صَدُوْقُ اللِّسَانِ نَعْرِفُهُ فَمَا مَخْمُوْمُ الْقَلْبِ قَالَ هُوَ التَّقِىُّ النَّقِىُّ لاَ إِثْمَ فِيْهِ وَلاَ بَغْىَ وَلاَ غِلَّ وَلاَ حَسَدَ.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলা হল, সবচেয়ে ভাল মানুষ কে? তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তরের অধিকারী এবং সত্য কথার অধিকারী ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম মানুষ’। ছাহাবীগণ বললেন, আমরা সত্য কথার অধিকারী জানি। কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তর কি জিনিস তা জানি না। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি স্বচ্ছ ও পরহেযগার। যার মধ্যে (১) পাপ নেই, পাপ হলেই ক্ষমা চায় (২) সীমালংঘন নেই (৩) খিয়ানত নেই (৪) হিংসা নেই (ইবনু মাজাহ হা/৪২১৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৪

عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّهُ مَعَ الْبِرِّ وَهُمَا فِى الْجَنَّةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّهُ مَعَ الْفُجُوْرِ وَهُمَا فِى النَّارِ.

আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা সত্য গ্রহণ কর। সত্য নেকীর সাথে রয়েছে। আর উভয়টি জান্নাতে যাবে। আর মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। মিথ্যা পাপের সাথে রয়েছে। উভয়ই জাহান্নামে যাবে’ (ইবনু হিব্বান, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৫

عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ مُجَانِبٌ لِلإِيْمَانِ.

আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই মিথ্যা ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে’ (বায়হাক্বী কুবরা হা/২০৬১৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৬

عَن أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَنَّهُ قَالَ مَنْ قَالَ لِصَبِىٍّ تَعَالَ هاَكَ ثُمَّ لَمْ يُعْطِهِ فَهِىَ كَذْبَةٌ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে তার বাচ্চাকে বলল, আসো নাও। অতঃপর তাকে কিছু দিল না। সে একজন মিথ্যুক মহিলা’ (আহমাদ হা/৯৮৩৫; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪২০৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৭

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَامِرٍ قَالَ دَعَتْنِيْ أُمِّيْ يَوْمًا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَاعِدٌ فِيْ بَيْتِنَا فَقَالَتْ: هَا تَعَالَ أُعْطِيْكَ. فَقَالَ لَهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: مَا أَرَدْتِ أَنْ تُعْطِيْهِ؟ قَالَتْ: أَرَدْتُ أَنْ أُعْطِيَهُ تَمْرًا. فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: أَمَا إِنَّكِ لَوْ لَمْ تُعْطِيْهِ شَيْئًا كُتِبَتْ عَلَيْكِ كَذِبَةٌ.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমার মা আমাকে ডাকলেন, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের বাড়িতে বসেছিলেন, সে বলল, আস তোমাকে কিছু দিব। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি তাকে কি দিবে? সে বলল, আমি তাকে খেজুর দিব। তিনি বললেন, মনে রেখ, তুমি যদি তাকে কিছু না দাও, তাহলে তুমি একজন মিথ্যুক মহিলা বলে লেখা হবে’ (বায়হাক্বী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪২০৮; মিশকাত হা/৪৮৮২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৮

عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيْمٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: وَيْلٌ لِمَنْ يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ.

বাহয ইবনু হাকীম তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ

তার দাদা বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, সেই ব্যক্তির জন্য ধ্বংস নিশ্চিত যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস’ (তিরমিযী হা/২৩১৫; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪২০৯; মিশকাত হা/৪৮৩৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৯

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ. وَفِي رِوَايَةٍ: وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ: شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলবেন না। তাদের পবিত্র করবেন না। তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকাবেন না। তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। (১) বৃদ্ধ ব্যভিচারকারী (২) মিথ্যুক শাসক (৩) অহংকারী গরীব’ (মুসলিম হা/১০৭; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪২১০; মিশকাত হা/৫১০৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬০

عَنْ عَمَّارٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ كَانَ لَهُ وَجْهَانِ فِى الدُّنْيَا كَانَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِسَانَانِ مِنْ نَارٍ.

আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যার দুনিয়াতে দু’টি মুখ হবে, ক্বিয়ামতের মাঠে তার মুখে আগুনের দু’টি জিহ্বা হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪৮৭৩; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪২১৫)। পরকালে আগুনের জিহ্বা হবে তাদের, যারা মানুষের সাথে মিথ্যা কথা বলে, চোগলখুরী করে ও পরনিন্দা করে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬১

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ الْكَبَائِرُ الْإِشْرَاكُ بِاللهِ وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَالْيَمِيْنُ الْغمُوْسُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ وَفِي رِوَايَةِ أَنَسٍ: وَشَهَادَةُ الزُّورِ بَدَلُ: الْيَمِيْنُ الْغُمُوْسُ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, ‘বড় বড় কবীরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা’ (বুখারী)। কিন্তু আনাসের বর্ণনায় ‘মিথ্যা কসম’-এর পরিবর্তে ‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ শব্দ রয়েছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬২

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ. زَادَ مُسْلِمٌ: وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ. ثُمَّ اتَّفَقَا: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اُؤْتُمِنَ خَانَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত হচ্ছে তিনটা- যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং যখন তার নিকট কোন কিছু (জিনিস বা কথা) আমানত রাখা হয়, তাতে সে খিয়ানত করে’। মুসলিমের বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, ‘যদিও সে ছালাত আদায় করে, ছিয়াম পালন করে এবং মনে করে যে, সে মুসলমান’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৩

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذا خَاصَمَ فَجَرَ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে পাক্কা মুনাফিক এবং যার মধ্যে এর একটা থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিকীর একটা স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করবে। (১) যখন তার নিকট কিছু আমানত রাখা হয়, তাতে সে খিয়ানত করে, (২) সে যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, (৩) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং (৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া করে, তখন সে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৪

عَنْ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللهِ الثَّقَفِيِّ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا أَخْوَفُ مَا تَخَافُ عَلَيَّ؟ قَالَ: فَأَخَذَ بِلِسَانِ نَفْسِهِ وَقَالَ هَذَا.

সুফিয়ান ইবনু আব্দুল্লাহ ছাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার জন্য যে জিনিসগুলি ভয়ের কারণ বলে আপনি মনে করেন তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ংকর কোনটি? বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি নিজের জিহ্বা ধরলেন এবং বললেন, ‘এটা’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৮৪৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৫

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم اِضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ، أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اُصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ.

উবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের পক্ষ হতে আমাকে ছয়টি বিষয়ের জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব। (১) তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। (২) যখন ওয়াদা কর, তা পূর্ণ করবে। (৩) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়, তা আদায় করবে। (৪) নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে। (৫) স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং (৬) স্বীয় হস্তকে (অন্যায় কাজ হতে) বিরত রাখবে’ (আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৮৭০, সনদ হাসান)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৬

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ الصِّدْقَ بِرٌّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا وَإِنَّ الْكَذِبَ فُجُوْرٌ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ كَذَّابًا-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্য একটি পুণ্যময় কাজ। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে, তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা হচ্ছে পাপকাজ। পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত বাংলা ৯ম খণ্ড হা/৪৬১৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৭

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ يَضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ-

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে (এই অঙ্গীকার করবে যে, সে) তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তুর এবং তার দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর যিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হব’ (বুখারী, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৬০১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৮

থেকে বর্ণিতঃ

সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অভ্যাস ছিল তিনি ফজরের ছালাত শেষে প্রায় আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কেউ আজ রাত্রে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের কেউ স্বপ্ন দেখে থাকলে সে তাঁর নিকট বলত। আর তিনি আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তার তা’বীর বর্ণনা করতেন। যথারীতি একদিন সকালে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ (আজ রাত্রে) কোন স্বপ্ন দেখেছে কি? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, কিন্তু আমি দেখেছি। আজ রাত্রে দুই ব্যক্তি আমার নিকট আসল এবং তারা উভয়ে আমার হাত ধরে একটি পবিত্র ভূমির দিকে (সম্ভবত তা শাম বা সিরিয়ার দিকে) নিয়ে গেল। দেখলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর অপর এক ব্যক্তি লোহার সাঁড়াশি হাতে দাঁড়ানো। সে তা উক্ত বসা ব্যক্তির গালের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় এবং তা দ্বারা চিরে গর্দানের পিছন পর্যন্ত নিয়ে যায়। অতঃপর তার দ্বিতীয় গালের সাথে অনুরূপ ব্যবহার করে। ইত্যবসরে প্রথম গালটি ভাল হয়ে যায়। আবার সে (প্রথমে যেভাবে চিরেছিল) পুনরায় তাই করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। সম্মুখের দিকে চললাম।
অবশেষে আমরা এমন এক ব্যক্তির কাছে এসে পৌঁছলাম, যে ঘাড়ের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে, আর অপর এক ব্যক্তি একখানা ভারী পাথর নিয়ে তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার আঘাতে শায়িত ব্যক্তির মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ করছে। যখনই সে পাথরটি নিক্ষেপ করে (মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ করে) তা গড়িয়ে দূরে চলে যায়, তখনই সে লোকটি পুনরায় পাথরটি তুলে আনতে যায় সে ফিরে আসার পূর্বে ঐ ব্যক্তির মাথাটি পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যায় এবং পুনরায় সে তা দ্বারা তাকে আঘাত করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম। অবশেষে একটি গর্তের নিকট এসে পৌঁছলাম, যা তন্দুরের মত ছিল। তার উপর অংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। তার তলদেশে আগুন প্রজ্জ্বলিত ছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠত, তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উপরে উঠে আসত এবং উক্ত গর্ত হতে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হত আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা শিথিল হত, তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যেত। তার মধ্যে রয়েছে কতিপয় উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন, সুতরাং সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম এবং একটি রক্তের নহরের নিকট এসে পৌঁছলাম। দেখলাম, তার মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং নহরের তীরে একজন লোক দণ্ডায়মান। আর তার সম্মুখে রয়েছে প্রস্তরখণ্ড। নহরের ভিতরের লোকটি যখন তা থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে কিনারার দিকে অগ্রসর হতে চায়, তখন তীরে দাঁড়ানো লোকটি ঐ লোকটির মুখ লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে এবং সে লোকটিকে ঐ স্থানে ফিরিয়ে দেয় যেখানে সে ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? সঙ্গীদ্বয় বলল, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখে অগ্রসর হয়ে শ্যামল সুশোভিত একটি বাগানে পৌঁছলাম। বাগানে ছিল একটি বিরাট বৃক্ষ। আর উক্ত বৃক্ষটির গোড়ায় উপবিষ্ট ছিলেন, একজন বৃদ্ধ লোক এবং বিপুল সংখ্যক বালক। এ বৃক্ষটির সন্নিকটে আরেক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, যার সম্মুখে রয়েছে আগুন, যাকে সে প্রজ্বলিত করছে। এরপর আমার সঙ্গীদ্বয় আমাকে ঐ বৃক্ষের উপরে আরোহণ করালো এবং সেখানে তারা আমাকে বৃক্ষরাজির মাঝখানে এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করালো যে, এরূপ সুন্দর ও মনোরম ঘর আমি আর কখনো দেখিনি। তার মধ্যে ছিল কতিপয় বৃদ্ধ, যুবক, নারী ও বালক। অনন্তর তারা উভয়ে আমাকে সে ঘর হতে বের করে বৃক্ষের আরও উপরে চড়ালো এবং এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করালো যা প্রথমটি হতে সমধিক সুন্দর ও উত্তম। তাতেও দেখলাম, কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক। অনন্তর আমি উক্ত সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, আপনারা উভয়েই তো আমাকে আজ সারা রাতে অনেক কিছু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালেন। এখন বলেন, আমি যা কিছু দেখেছি তার তাৎপর্য কি? তারা উভয়ে বলল, হ্যাঁ, (আমরা তা জানাবো)। ঐ যে এক ব্যক্তিকে দেখেছেন সাঁড়াশি দ্বারা যার গাল চিরা হচ্ছে, সে মিথ্যাবাদী, সে মিথ্যা বলত এবং তার নিকট হতে মিথ্যা রটানো হত। এমনকি তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত। অতএব তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণ করা হবে, যা আপনি দেখেছেন। আর যে ব্যক্তির মস্তক পাথর মেরে ঘায়েল করতে দেখেছেন, সে ঐ ব্যক্তি, আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু সে কুরআন হতে গাফেল হয়ে রাত্রে ঘুমাতো এবং দিনেও তার নির্দেশ মোতাবেক আমল করত না। সুতরাং তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণই করা হবে, যা আপনি দেখেছেন। আর (আগুনের) তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন, তারা হল যেনাকারী (নারী-পুরুষ)। আর ঐ ব্যক্তি যাকে (রক্তের) নহরে দেখেছেন, সে হল সুদখোর। আর ঐ বৃদ্ধ ব্যক্তি যাকে একটি বৃক্ষের গোড়ায় উপবিষ্ট দেখেছেন, তিনি হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর চতুস্পার্শ্বের শিশুরা হল মানুষের সন্তানাদি। আর যে লোকটিকে অগ্নিকুণ্ড প্রজ্বলিত করতে দেখেছেন, সে হল দোযখের দারোগা মালেক। আর প্রথম যে ঘরটিতে আপনি প্রবেশ করেছিলেন, তা (জান্নাতের মধ্যে) সর্বসাধারণ মুমিনদের গৃহ। আর যে ঘর যে পরে দেখেছেন, তা শহীদদের ঘর। আর আমি হলাম, জিব্রাঈল এবং ইনি হলেন মীকাঈল। এবার আপনি মাথা উপরের দিকে তুলে দেখুন। তখন আমি মাথাটি তুলে দেখলাম, যেন আমার মাথার উপরে মেঘের মত কোন একটি জিনিস রয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, একের পর এক স্তরবিশিষ্ট সাদা মেঘের মত কোন জিনিস দেখলাম। তাঁরা বললেন, তা আপনারই বাসস্থান। আমি বললাম, আমাকে সুযোগ দিন আমি আমার ঘরে প্রবেশ করি। তারা বললেন, এখনও আপনার হায়াত বাকী আছে, যা আপনি এখনো পূর্ণ করেননি। আপনার যখন নির্দিষ্ট হায়াত পূর্ণ হবে, তখন আপনি আপনার বাসস্থানে প্রবেশ করবেন’ (বুখারী, বাংলা মিশকাত হা/৪৪১৬)। এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা মিথ্যা কথা বলবে, লোহার সাঁড়াশি দ্বারা তার গাল চিরে ফেলা হবে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৯

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: ثَلَاثٌ مُنْجِيَاتٌ وَثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ: فَتَقْوَى اللهِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَّةِ وَالْقَوْلُ بِالْحَقِّ فِي الرِّضَى وَالسُّخْطِ وَالْقَصْدُ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ. وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتُ: فَهَوًى مُتَّبَعٌ وَشُحٌّ مُطَاعٌ وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা (২) সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং (৩) সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রবৃত্তির অনুসরণ করা (২) কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবং (৩) আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫১২২, সনদ হাসান)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

নেশাদার দ্রব্য

পরিচ্ছেদঃ

নেশাদার দ্রব্য


মদ এমন একটি বস্তু যা বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর বিবেক আচ্ছন্ন হলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল অশ্লীল কর্মের মূল। উল্লেখ্য যে, মদ কোন নির্ধারিত বস্তুর নাম নয়। যেসব বস্তু বেশী পরিমাণ খেলে বিবেকের ক্ষতি হয় তার অল্প বস্তুও মদ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمْ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنْ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنتَهُونَ-

হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব তোমরা এগুলি থেকে বেঁচে থাক। যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তোমাদের মাঝে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শত্র“তা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে চায় এবং আল্লাহর যিক্‌র ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে চায়। তাহলে কি তোমরা বিরত থাকবে’? (মায়িদাহ ৯০-৯১)

৭০

عَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم اِجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإنَّهاَ أُمُّ الْخَبَائِثِ فَمَنْ لَمْ يَجْتَنِبْهَا فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَاسْتَحَقَّ الْعَذَابَ بِمَعْصِيَةِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ قال الله تعالى وَمَن يَعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِيْنٌ.

ওছমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাক। কেননা নেশাদার দ্রব্য হচ্ছে অশ্লীল কর্মের মূল। যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকে না তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করার কারণে সে শাস্তির হক্বদার হয়’। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তার সীমালঙ্ঘন করে, আল্লাহ তাকে এমন আগুনে প্রবেশ করাবেন যেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’ (নিসা ১৪; নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭১

عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا وَمَاتَ لَمْ يَتُبْ مِنْهَا وَهُوَ مُدْمِنُهَا لَمْ يَشْرَبْهَا فِي الْآخِرَةِ.

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সব নেশাদার দ্রব্য মদ আর সব ধরনের মদ হারাম। যে ব্যক্তি সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পান করে তওবা বিহীন অবস্থায় মারা যাবে সে পরকালে সুস্বাদু পানীয় পান করতে পাবে না’ (মুসলিম ২/১৬৭ পৃঃ, ‘মদ্যপান’ অধ্যায়, ‘সকল নেশাদার দ্রব্য হারাম’ অনুচ্ছেদে, মিশকাত হা/৩৬৩৮; বাংলা মিশকাত ৭ম খণ্ড, হা/৩৪৭২ ‘হুদূদ’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭২

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ عَلَى اللهِ عَهْدًا لِمَنْ شَرِبَ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ اللهُ فِيْ طِينَةِ الْخَبَالِ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ قَالَ عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে- নেশাদার দ্রব্য পানকারীদের আল্লাহ “ত্বিনাতে খাবাল” পান করাবেন। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! ‘ত্বিনাতে খাবাল’ কি জিনিস? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, জাহান্নামীদের শরীর হতে গলে পড়া রক্তপুজ মিশ্রিত অত্যন্ত গরম তরল পদার্থ’ (মুসলিম ২/১৬৭ পৃঃ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৩

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مُدْمِنُ الخَمْرِ كَعَابِدِ وَثَنٍ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পান কারী মূর্তিপূজকের ন্যায় অপরাধী’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৫, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৪

عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ.

আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৬, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৫

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَاقٌّ وَلاَ قَمَّارٌ وَلاَمَنَّانٌ وَلاَ مُدْمِنُ خَمْرٍ.

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে যাবে না’ (দারেমী, মিশকাত হা/৩৬৫৩; বাংলা মিশকাত ৭ম খণ্ড, হা/৩৪৮৬ ‘শাস্তি’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৬

عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسَرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ أَبَدًا اَلدَّيُوْثُ وَالرَّجْلَةُ مِنَ النِّسَاءِ وَمُدْمِنُ الْخَمْرِ.

আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ কখনো জান্নাতে যাবে না। (১) যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দেয়। (২) পুরুষের বেশধারী নারী। (৩) নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী’ (তাবরাণী, তারগীব হা/৩৩৮১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৭

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمْ اَلْجَنَّةَ مُدْمِنُ الخَمْرِ وََالعَاقُّ وَالدَّيُوْتُ الَّذِيْ يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ.

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন। (১) সর্বদা মদপানকারী, (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ও (৩) পরিবারে বেপর্দার সুযোগ দানকারী (দায়ূছ)’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬৫৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৮

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِى أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ ثَلاَثَةٌ لاَ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الخَمْرِ وَقَاطِعُ الرِّحْمِ وَمُصدِّق بِالسِّحْرِ.

আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না। (১) সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী। (২) আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী। (৩) যাদুকে বিশ্বাসকারী’ (আহমাদ, মিশকাত, হাদীছ ছহীহ হা/৩৬৫৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৯

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ رَدَغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا رَدَغَةُ الْخَبَالِ قَالَ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ-

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য পান করবে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে যাবে। যদি তওবাহ করে তাহলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। আবার নেশাদার দ্রব্য পান করলে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। যদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবা করে তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। আবার যদি নেশাদার দ্রব্য পান করে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। এ অবস্থায় মারা গেলে জাহান্নামে যাবে। তওবা করলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। লোকটি যদি চতুর্থবার মদ পান করে আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামাতের দিন ‘রাদাগাতুল খাবাল’ পান করাবেন। ছাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! ‘রাদাগাতু খাবাল’ কী? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আগুনের তাপে জাহান্নামীদের শরীর হতে গলে পড়া রক্তপূজ মিশ্রিত গরম তরল পদার্থ’ (ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/ ২৭৩৮, হাদীছ ছহীহ)।

মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর লোকের প্রতি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অভিশাপ করেছেন। (১) যে লোক মদের নির্যাস বের করে (২) প্রস্তুতকারক (৩) মদপানকারী (৪) যে পান করায় (৫) আমদানীকারক (৬) যার জন্য আমদানী করা হয় (৭) বিক্রেতা (৮) ক্রেতা (৯) সরবরাহকারী এবং (১০) এর লভ্যাংশ ভোগকারী’ (তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৭৭৬; বঙ্গানুবাদ ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/ ২৬৫৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮০

عَنْ اَبِىْ مَالِكِ الْاَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَشْرَبَنّ نَاسُ من امّتِىْ الخَمَرَ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اِسْمِهَا يُعْزَفُ عَلى رُؤوْسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ يَخْسِفُ اللهُ بِهِمُ الْاَرْضَ ويَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرْدَةَ والْخَنَازِيْرَ.

আবু মালিক আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমার কিছু উম্মত মদ পান করবে এবং তার নাম রাখবে ভিন্ন। তাদের নেতাদেরকে গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সম্মান করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ভুমিকম্পের মাধ্যমে মাটিতেই ধসিয়ে দিবেন। আর তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করবেন’ (বুখারী, ইবনে মাজাহ হা/৪০২০)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল মানুষ মদ্যপান করবে, তবে মদের নাম অন্য হবে। আর নেতা ও দায়িত্বশীলদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা। এদের চরিত্র হবে নোংরা, এদের প্রিয় কাজ হবে অশ্লীলতা। তাদের স্বভাব ও কৃষ্টি-কালচার হবে শূকর ও বানরের ন্যায়। এরা স্বপরিবারে পাশ্চাত্যদের স্বভাব চরিত্র গ্রহণ করবে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮১

عَنْ مُعَاذِبْنِ جَبَلٍ عَنْ رَسُوْلِ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ إِنَّ هَذَا الْاَمْرَ بَدَأ نُبْوَةً وَرَحْمَةً ثُمّ يَكُوْنُ خِلَافَةً وَرَحْمَةً ثُمَّ مُلْكًا عَضُوْضًا ثم كَائِنٌ جَبْرِيّةً وَعُتُوًا وفَسَادًا فِى الْاَرْضِ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحَرِيْرَ والْفُرُوْجَ والْخُمُوْرَ يُرْزَقُوْنَ عَلى ذلِكَ وَيُنْصَرُوْنَ حتّى يَلْقُوا اللهَ.

মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ইসলামের সূচনা বা রাজত্ব শুরু হয়েছে নবী ও দয়া দ্বারা। তারপর রাজত্ব আসবে খেলাফত ও রহমত দ্বারা, তারপর আসবে অত্যাচারী শাসকদের যুগ। তারপর আসবে কঠোরতা, উচ্ছৃংখলতা, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীর যুগ। এসব অত্যাচারী শাসকেরা রেশমী কাপড় পরিধান করা, অবৈধভাবে নারীদের লজ্জাস্থান উপভোগ করা এবং মদ পান করাকে হালাল মনে করবে। এরপরও তাদের প্রচুর রুযী দেয়া হবে। দুনিয়াবী যে কোন কাজে তাদের সাহায্য করা হবে। অবশেষে এ পাপের মধ্যে লিপ্ত থেকে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে’ (বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৫১৪৩, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮২

عَنْ اَنَسٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ اِنَّ مِنْ اَشْرَاطِ السّاعَةِ اَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ ويَكْثُرَ الْجَهْلُ ويكثُر الزِّنَا ويكثُرَ شرْبُ الْخَمْرِ ويَقِلَّ الرِّجَالُ ويكثُر َالنّسَاءُ حتىّ يَكُوْنَ لِخَمْسِيْنَ اِمْرَاةً القَيِّمُ الْوَاحِدُ وفى رواية يقلُّ الْعِلْمُ ويظْهَرُ الْجَهْلُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে রয়েছে (১) বিদ্যা উঠে যাবে (২) মূর্খতা বেড়ে যাবে (৩) ব্যাভিচার বেশি হবে (৪) মদপান বৃদ্ধি পাবে (৫) পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে (৬) নারীর সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে। এমনকি একজন পুরুষ ৫০ জন মহিলার পরিচালক হবে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘বিদ্যা কমে যাবে এবং মূর্খতা প্রকাশ পাবে’ (বুখারী, মুসলিম মিশকাত হা/৫২০৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৩

عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ فِى هَذِهِ الْاُمّةِ خَسْفٌ وقَذْفٌ وَمَسْخٌ وَذَلِكَ اِذَا شَرِبُوْا الْخُمُوْرَ واتَّخَذُوْا القَيْنَاتِ وَضَرَبُوْا بِالْمَعَازِفِ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৪

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيُبَيِّتَنَّ قَوْمٌ مِنْ هَذِهِ الْأمَّةِ عَلَى طَعَامٍ وَشَرَابٍ وَلَهْوٍ فَيَصْبَحُوْا قَدْ مَسَخُوْا قِرْدَةً وَخَنَازِرًا.

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘অবশ্য অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু সম্প্রদায় রাত্রী অতিবাহিত করবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য-পানীয়তে ভোগ বিলাসী হয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদন ও আমোদ-প্রমোদে। এমতাবস্থায় তাদের সকাল হবে শূকর ও বানরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৬০৪, ২৬৯৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৫

عَنْ مُعَاذٍ قَالَ أَوْصَانِى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بِعَشْرِ كَلِمَاتٍ قَالَ لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئاً وَإِنْ قُتِلْتَ وَحُرِّقْتَ وَلاَ تَعُقَّنَّ وَالِدَيْكَ وَإِنْ أَمَرَاكَ أَنْ تَخْرُجَ مِنْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ وَلاَ تَتْرُكَنَّ صَلاَةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّداً فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ صَلاَةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّداً فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ وَلاَ تَشْرَبَنَّ خَمْراً فَإِنَّهُ رَأْسُ كُلِّ فَاحِشَةٍ وَإِيَّاكَ وَالْمَعْصِيَةَ فَإِنَّ بِالْمَعْصِيَةِ حَلَّ سَخَطُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَإِيَّاكَ وَالْفِرَارَ مِنَ الزَّحْفِ وَإِنْ هَلَكَ النَّاسُ وَإِذَا أَصَابَ النَّاسَ مُوْتَانٌ وَأَنْتَ فِيْهِمْ فَاثْبُتْ وَأَنْفِقْ عَلَى عِيَالِكَ مِنْ طَوْلِكَ وَلاَ تَرْفَعْ عَنْهُمْ عَصَاكَ أَدَباً وَأَخِفْهُمْ فِى اللهِ.

মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে দশটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক করবে না, যদিও তোমাকে নিহত করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। (২) তুমি তোমার পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না, যদি তারা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন ও তোমার মাল-মাত্তা ছেড়ে যেতে বলেন। (৩) ইচ্ছা করে কখনও ফরয ছালাত ত্যাগ করবে না। কেননা যে ইচ্ছা করে ফরয ছালাত ছেড়ে দিবে, তার (হেফাযতের) পক্ষে আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্ব উঠে যাবে। (এখন তাকে কাফেরের ন্যায় হত্যা করা যেতে পারে)। (৪) কখনও শরাব পান করবে না। কেননা তা সমস্ত অশ্লীলতার মূল। (৫) সাবধান! (সর্বদা) গোনাহ হতে বেঁচে থাকবে। কেননা গোনাহগার দ্বারা আল্লাহর ক্রোধ পৌঁছে থাকে! (৬) খবরদার! জিহাদ হতে পলায়ন করবে না। যদিও সকল লোক ধ্বংস হয়ে যায়। (৭) যখন লোকের মধ্যে মহামারী দেখা দিবে আর তুমি সেখানে থাকবে, তখন তথায় অবস্থান করবে (পলায়ন করবে না)। (৮) তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে (কার্পণ্য করে তাদের খাওয়ার কষ্ট দিবে না)। (৯) তাদের (পরিবারের লোকদের) আদব-কায়দা শিক্ষা দানের ব্যাপারে শাসন হতে কখনও বিরত থাকবে না। (১০) এবং আল্লাহর সম্পর্কে তাদের ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৬১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৬

عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ قَالَ أَوْصَانِىْ خَلِيْلِىْ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ.

আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমার দোস্ত আমাকে অছিয়ত করেছেন, ‘নেশাদার দ্রব্য পান কর না। নিশ্চয়ই তা সব ধরনের অন্যায়ের চাবী’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৭

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সব ধরনের নেশাদার দ্রব্য হারাম’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৮৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৮

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ.

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঐ বস্তু যা বিবেকের ক্ষতি করে সেসবই মদ। আর সব ধরনের মদই হারাম’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৯০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৯

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ.

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে বস্তু বেশী পরিমাণ খেলে বিবেকের ক্ষতি হয়, তার কমও হারাম’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৯৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯০

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ الْخَمْرَ وَثَمَنَهَا وَحَرَّمَ الْمَيْتَةَ وَثَمَنَهَا وَحَرَّمَ الْخِنْزِيرَ وَثَمَنَهُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নেশাদার দ্রব্য এবং তার মূল্য হারাম করেছেন। মৃতপ্রাণী ও তার মূল্য হারাম করেছেন। শূকর ও তার মূল্য হারাম করেছেন’ (আবুদাউদ হা/৩৪৮৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯১

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ عَامَ الْفَتْحِ وَهُوَ بِمَكَّةَ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ وَالْمَيْتَةَ وَالْخِنْزِيْرَ وَالْأَصْنَامَ.

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি মক্কা বিজয়ের বছর নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মক্কায় বলতে শুনেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মদ, মৃতপ্রাণী, শূকর ও মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছন’ (আবুদাউদ হা/৩৪৮৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯২

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ يَلِجُ حَائِطَ الْقُدُسِ مُدْمِنُ خَمْرٍ وَلاَ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَلاَ الْمَنَّانُ عَطَاءَهُ.

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। খোটা দানকারী জান্নাতে যাবে না’ (তারগীব হা/২৩৬৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৩

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ لَمْ يَرْضَ اللهُ عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকে বর্ণিতঃ

‘যে ব্যক্তি মদ পান করবে আল্লাহ তার উপর ৪০ দিন সন্তুষ্ট হবেন না’ (আহমাদ হা/২৭৬৪৪; তারগীব হা/৩৪১০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৪

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم كَانَ يَضْرِبُ فِي الخَمْرِ بِالنِّعَالِ وَالجَرَبِ اَرْبَعِيْنَ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নেশাদার দ্রব্যপানকারীকে জুতা ও বেতের মাধ্যমে ৪০ বার মারতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬১৫; বাংলা মিশকাত ৭ম খণ্ড, হা/৩৪৫১ ‘শাস্তি’ অধ্যায়)।

ওমর (রাঃ)-এর যুগে নেশাদার দ্রব্য পানকারীদের সংখ্যা বেশী হলে তিনি ৮০ বেত্রাঘাত করতেন (বুখারী, মিশকাত হা/৩৬১৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

গান বাজনা

পরিচ্ছেদঃ

গান বাজনা

৯৫

عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ.

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ (বুখারী হা/৫৫৯০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৬

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ والكُوْبَةَ.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মদ, জুয়া ও সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন’ (বায়হাক্বী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৫০৩; বাংলা মিশকাত ৮ম খণ্ড হা/৪৩০৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৭

عَنْ أَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوْهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوْهُنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ.

আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৮

عَنْ نَافِعٍ قَالَ سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ مِزْمَارًا قَالَ فَوَضَعَ إِصْبَعَيْهِ عَلَى أُذُنَيْهِ وَنَأَى عَنْ الطَّرِيقِ وَقَالَ لِي يَا نَافِعُ هَلْ تَسْمَعُ شَيْئًا قَالَ فَقُلْتُ لاَ قَالَ فَرَفَعَ إِصْبَعَيْهِ مِنْ أُذُنَيْهِ وَقَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَسَمِعَ مِثْلَ هَذَا فَصَنَعَ مِثْلَ هَذَا.

নাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা ইবনু ওমর (রাঃ) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেলে তিনি তাঁর দুই কানে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গেলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, নাফে’ তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম, না। তিনি তার দুই আঙ্গুল দুই কান হতে বের করে বললেন, আমি একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গিয়েছিলেন এবং আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেভাবে আজ তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম (ছহীহ আবূদাঊদ হা/ ৪৯২৪, সনদ ছহীহ)।
অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের শব্দ যেন কানে না আসে তার সম্ভবপর চেষ্টা করতে হবে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৯

عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ فِى هذِه الْاُمّةِ خَسْفٌ وقَذْفٌ وَمَسْخٌ وذلِكَ اِذَا شَرِبُوْا الْخُمُوْرَ واتَّخَذُوْا القَيْنَاتِ وَضَرَبُوْا بِالْمَعَازِفِ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গজবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্য যন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০০

عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيُبَيِّتَنَّ قَوْمٌ مِنْ هذِهِ الْأمَّةِ عَلَى طَعَامٍ وَشَرَابٍ وَلَهْوٍ فَيَصْبَحُوْا قَدْ مَسَخُوْا قِرْدَةً وَخَنَازِيْرَ.

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু সম্প্রদায় রাত্রী অতিবাহিত করবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য-পানীয়তে ভোগ বিলাসী হয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদন আনন্দ প্রমোদে। এমতাবস্থায় তাদের সকাল হবে শুকুর ও বানরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৬০৪, ২৬৯৯)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, এক শ্রেণীর অর্থশালী মানুষেরা নানা ধরনের মদ ও পানীয়ের ব্যবস্থা করে অতি ভোগ-বিলাসে দিনাতিপাত করবে। নানা ধরনের আমোদ-প্রমোদে ও বিনোদনে রাত্রী যাপন করবে। এর মাধ্যম হবে নায়িকা, মদ ও বাদ্য যন্ত্র। এ ধরণের লোকেরা শুকুর ও বানরে পরিণত হবে। হয় তাদের আকৃতি শুকুর ও বানরের মত হবে, অথবা তাদের হালাল-হারামের বিবেচনা থাকবে না। এজন্য নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে শুকুরের সাথে তুলনা করেছন। তাদের চাল-চলন হবে বিজাতিদের মত অর্থাৎ তাদের স্ত্রী ও মেয়েরা বিজাতিদের মত নানা পোশাক পরবে। আর এদের কাছে যেনা হবে সাধারণ কাজ। এদের বাড়ী-গাড়ি হবে কুকুর ও বিভিন্ন ধরনের মূর্তিতে পরিপূর্ণ। তাই তাদেরকে বানরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ তারা বিজাতিদের অনুকরণ করবে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০১

عَنْ اَبِىْ مَالِكِ الْاَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَشْرَبَنّ نَاسُ من امّتِىْ الخَمَرَ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اِسْمِهَا يُعْزَفُ عَلى رُؤوْسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ يَخْسِفُ اللهُ بِهِمُ الْاَرْضَ ويَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرْدَةَ والْخَنَازِيْرَ.

আবু মালিক আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমার কিছু উম্মত মদ পান করবে এবং তার নাম রাখবে ভিন্ন। তাদের নেতাদেরকে গায়িকা ও বাদ্য যন্ত্র দিয়ে সম্মান করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভুমিকম্পের মাধ্যমে মাটিতেই ধসিয়ে দিবেন। আর তাদেরকে বানর ও শুকুরে পরিণত করবেন’ (বুখারী, ইবনে মাজাহ হা/৪০২০)। হাদীছে বুঝা গেল মানুষ মদ্যপান করবে, তবে মদের নাম অন্য হবে। আর নেতা ও দায়িত্বশীলদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে বাদ্য যন্ত্র ও গায়িকা। এদের চরিত্র হবে নোংরা, এদের প্রিয় কাজ হবে অশ্লীলতা। তাদের স্বভাব ও কৃষ্টি-কালচার হবে শুকুর ও বানোরের ন্যায়। এরা স্বপরিবারে পাশ্চাত্যদের স্বভাব চরিত্র গ্রহণ করবে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০২

عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلى رَسُوْلِ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أنَّ رسولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: وَإِنّ مِمّا أتَخَوَّفُ مِنْهُ عَلى أمّتِىْ أئِمّةً مُضِلِّيْنَ، وَسَتَعْبُدُ قَبَاِئلُ مِنْ أمّتى الْاَوْثَانَ، وَسَتَلْحَقُ قبائِلُ مِنْ أمتىْ بِالْمُشِركِيْنَ-

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দাস ছাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি সবচেয়ে যাদের বেশি ভয় করি তারা হচ্ছে নেতা ও এক শ্রেণীর আলেম সমাজ। অচিরেই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে। আর অতি শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক হিন্দু বা বিজাতিদের সাথে মিশে যাবে’ (ইবনে মাজাহ হা/৩৯৫২, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

অবৈধ সম্পর্ক

পরিচ্ছেদঃ

অবৈধ সম্পর্ক

১০৩

عَنْ عُبَادَةَ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ خُذُوْا عَنِّي خُذُوْا عَنِّي قَدْ جَعَلَ الله لَهُنَّ سَبِيْلاً البِكْرُ بِالْبِكْرِ جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيْبُ عَامٍ وَالثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِائَةٍ وَالرَّجْمُ.

উবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘তোমরা আমার নিকট হতে আল্লাহর বিধান গ্রহণ কর, কথাটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’বার বললেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম করতে হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৫৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৭ম খণ্ড, হা/৩৪০২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৪

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمْ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ قَالَ أَبُوْ مُعَاوِيَةَ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের তিনি পবিত্রও করবেন না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছেন (১) বৃদ্ধ যেনাকার (২) মিথ্যাবাদী শাসক এবং (৩) অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৮৮২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৫

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم : لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ رَجُلٌ زَنَى بَعْدَ إِحْصَانٍ فَإِنَّهُ يُرْجَمُ وَرَجُلٌ خَرَجَ مُحَارِبًا لِلَّهِ وَرَسُوْلِهِ فَإِنَّهُ يُقْتَلُ أَوْ يُصْلَبُ أَوْ يُنْفَى مِنَ الأَرْضِ أَوْ يَقْتُلُ نَفْسًا فَيُقْتَلُ بِهَا.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এমন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তবে তিন শ্রেণীর মানুষকে হত্যা করতে হয়। (১) এমন মানুষ যে বিবাহ করার পর যেনা করল। তাকে রজম করতে হবে। (২) এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে অবস্থান করল, তাকে হত্যা করা হবে, না হয় শূলী দেওয়া হবে, না হয় যমীন হতে নির্বাসন করা হবে। (৩) এমন ব্যক্তি যে কাউকে হত্যা করল, তাকে হত্যা করা হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪৩৫৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৬

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ كُتِبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ نَصِيبُهُ مِنَ الزِّنَى مُدْرِكٌ ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلاَمُ وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের উপর যেনার একটি অংশ লিখা হয়েছে। সে তা পাবেই। মানুষের দু’চোখের যেনা দেখা। দু’কানের যেনা শুনা। জিহ্বার যেনা কথা বলা। হাতের যেনা স্পর্শ করা। পায়ের যেনা যেনার পথে চলা। অন্তরের যেনা হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা করা। লজ্জাস্থান তার সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে’ (মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৭

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِي رضي الله عنهما عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم، قَالَ : تُفْتَحُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ نِصْفَ اللَّيْلِ، فَيُنَادِيْ مُنَادٍ: هَلْ مِنْ دَاعٍ فَيُسْتَجَابُ لَهُ، هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَيُعْطَى، هَلْ مِنْ مَكْرُوْبٍ فَيُفَرَّجُ عَنْهُ، فَلاَ يَبْقَى مُسْلِمٌ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ، لَهُ إِلاَّ زَانِيَةً تَبْغِي بِفَرْجِهَا، أَوْ عَشَّارًا. وَفِىْ رِوَايَةٍ إِنَّ اللهَ يَدْنُو مِنْ خَلْقِهِ فَيَغْفِرُ لِمَنْ يَسْتَغْفِرُ إِلاَّ لِبَغِيٍّ بِفَرْجِهَا.

ওছমান ইবনে আবিল আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘অর্ধরাতে আকাশের দরজা খোলা হয়। তখন আল্লাহ আহ্বান করে বলেন, কোন প্রার্থনাকারী আছে কি তার প্রার্থনা কবুল করা হবে? কোন সাহায্য প্রার্থী ব্যক্তি আছে কি তাকে সাহায্য করা হবে? কোন সংকটে নিমজ্জিত ব্যক্তি আছে কি তার সংকট দূর করা হবে? এ সময় কোন মুসলমান দো‘আ করলে তার দো‘আ কবুল করা হয়। তবে অশ্লীল কাজে লিপ্ত যে নারী তার প্রার্থনা কবুল হয় না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর মাখলূকের পাশে থাকেন। যে ক্ষমা চায় তাকে ক্ষমা করেন। তবে যে নারী অশ্লীল কাজে লিপ্ত তাকে ক্ষমা করেন না’ (আহমাদ, আত-তারগীব হা/৩৪২০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৮

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ إِنَّ أَخْوَفُ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الزِّنَا وَالشَّهْوَةُ الْخَفِيَّةُ.

আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উপর যে ব্যাপারে বেশী ভয় করি তা হচ্ছে যেনা ও গোপন প্রবৃত্তি’ (আত-তারগীব হা/৩৪১৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৯

عَنْ أبِيْ أُمَامَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ: بَيْنَا أَنَا نَائِمُ إِذْ أَتَانِيْ رَجُلاَنِ فَأَخَذَا بِضَبْعِيْ فَأَتَيَا بِيْ ... فَإِذَا أَنَا بِقَوْمٍ أَشَدُّ شَيْءٍ اِنْتِفَاخًا وَأَنْتَنَهُ رِيْحًا كَأَنَّ رِيْحَهُمُ الْمَرَحِيْضُ قُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ هَؤُلاَءِ الزَّانُوْنَ وَالزَّوَانِيْ-

আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরা ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারিণী’ (আত-তারগীব হা/৩৪২৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১০

عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ جَاءَ مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ طَهِّرْنِيْ فَقَالَ وَيْحَكَ ارْجِعْ فَاسْتَغْفِرِ اللهَ وَتُبْ إِلَيْهِ. فَقَالَ فَرَجَعَ غَيْرَ بَعِيْدٍ ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ طَهِّرْنِيْ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى إِذَا كَانَتِ الرَّابِعَةُ قَالَ لَهُ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِيْمَ أُطَهِّرُكَ؟ قَالَ مِنَ الزِّنَا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَبِهِ جُنُوْنٌ؟ فَأُخْبِرَ أَنَّهُ لَيْسَ بِمَجْنُوْنٍ فَقَالَ أَشَرِبَ خَمْرًا؟ فَقَامَ رَجُلٌ فَاسْتَنْكَهَهُ فَلَمْ يَجِدْ مِنْهُ رِيْحَ خَمْرٍ فَقَالَ أَزَنَيْتَ؟ قَالَ نَعَمْ فَأَمَرَ بِهِ فَرُجِمَ فَلَبِثُوا يَوْمَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةً ثُمَّ جَاءَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ اسْتَغْفِرُوْا لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ قُسِّمَتْ بَيْنَ أُمَّةٍ لَوَسِعَتْهُمْ ثُمَّ جَاءَتْهُ امْرَأَةٌ مِنْ غَامِدٍ مِنَ الْأَزْدِ فَقَالَتْ: يَا رَسُوْلَ اللهِ طَهِّرْنِيْ فَقَالَ وَيَحَكِ ارْجِعِي فَاسْتَغْفِرِيْ اللهَ وَتُوْبِي إِلَيْهِ فَقَالَتْ تُرِيْدُ أَنْ تَرْدُدَنِيْ كَمَا رَدَدْتَ مَاعِزَ بْنَ مَالِكٍ إِنَّهَا حُبْلَى مِنَ الزِّنَا فَقَالَ أَنْتِ؟ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ لَهَا حَتَّى تَضَعِي مَا فِيْ بَطْنِكِ قَالَ فكَفَلَها رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ حَتَّى وَضَعَتْ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ قَدْ وَضَعَتِ الغامديَّةُ فَقَالَ إِذاً لَا نَرْجُمُهَا وَنَدْعُ وَلَدَهَا صَغِيْرًا لَيْسَ لَهُ مَنْ يُرْضِعُهُ فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ إِلَيَّ رَضَاعُهُ يَا نَبِيَّ اللهِ قَالَ: فَرَجَمَهَا. وَفِيْ رِوَايَةٍ أَنَّهُ قَالَ لَهَا اذْهَبِيْ حَتَّى تَلِدِيْ فَلَمَّا وَلَدَتْ قَالَ اذْهَبِيْ فَأَرْضِعِيْهِ حَتَّى تَفْطِمِيْهِ فَلَمَّا فَطَمَتْهُ أَتَتْهُ بِالصَّبِيِّ فِي يَدِهِ كِسْرَةُ خُبْزٍ فَقَالَتْ: هَذَا يَا نَبِيَّ اللهِ قَدْ فَطَمْتُهُ وَقَدْ أَكَلَ الطَّعَامَ فَدَفَعَ الصَّبِيَّ إِلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَحُفِرَ لَهَا إِلَى صَدْرِهَا وَأَمَرَ النَّاسَ فَرَجَمُوهَا فَيُقْبِلُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ بِحَجْرٍ فَرَمَى رَأْسَهَا فَتَنَضَّحَ الدَّمُ عَلَى وَجْهِ خَالِدٍ فَسَبَّهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَهْلاً يَا خَالِدُ فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا صَاحِبُ مَكْسٍ لَغُفِرَ لَهُ ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَصَلَّى عَلَيْهَا وَدُفِنَتْ.

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা মায়েয ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, ‘আক্ষেপ তোমার প্রতি, চলে যাও, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে গিয়েই পুনরায় ফিরে আসলেন এবং আবারও বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবারও তাঁকে পূর্বের ন্যায় বললেন। এইভাবে তিনি যখন চতুর্থবার এসে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! আমি তোমাকে কোন্ জিনিস হতে পবিত্র করব? তিনি বললেন, যিনা হতে। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ছাহাবাদেরকে) জিজ্ঞেস করলেন, ‘লোকটি কি পাগল’? লোকেরা বলল, না তো? তিনি পাগল নন। তিনি আবার বললেন, ‘লোকটি কি মদ পান করেছে’? তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাঁর মুখ শুঁকে দেখেন; কিন্তু মদের কোন গন্ধ তাঁর মুখ হতে পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সত্যই যিনা করেছ’? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ। এরপর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাঁকে রজম করা হল। এই ঘটনার দুই/তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ছাহাবাদের সম্মুখে) এসে বললেন, তোমরা মায়েয ইবনে মালেকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা সে এমন তওবাই করেছে, যদি তা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তবে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।
অতঃপর আয্দ বংশের গামেদী গোত্রীয় একটি মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, তোমার প্রতি আক্ষেপ! চলে যাও, আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার কর এবং তওবা কর। তখন মহিলাটি বলল, আপনি মায়েয ইবনে মালেককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাকেও কি সেভাবে ফিরিয়ে দিতে চান? দেখুন, আমার এই গর্ভ যিনার! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি (সত্যই গর্ভবতী)? মহিলাটি বলল, জি হ্যাঁ।
অতঃপর তিনি বললেন, যাও, তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আনছারী এক লোক মহিলাটির সন্তান প্রসব হওয়ার সময় পর্যন্ত তাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর ঐ লোকটি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে এসে বলল, হুযুর! গামেদী মহিলাটির গর্ভ খালাছ হয়ে গিয়েছে। এবার তিনি বললেন, এই শিশু বাচ্চাটিকে রেখে আমরা মহিলাটিকে রজম করতে পারব না। এমতাবস্থায় যে, তাকে দুধ পান করাবার মত কেউই নেই। এমন সময় আর একজন আনছারী দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমিই তার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাকে রজম করলেন ।
অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাটিকে বললেন, ‘তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর’। অতঃপর সন্তান প্রসবের পর যখন আসল, তখন বললেন, আবারও চলে যাও এবং তাকে দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়ান পর্যন্ত অপেক্ষা কর। পরে যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ হয়, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খণ্ড রুটির টুকরা দিয়ে তাকে সঙ্গে করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হল। এইবার মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর নবী! এই দেখুন (বাচ্চাটির) দুধ ছাড়ান হয়েছে, এমনকি সে নিজের হাতের খানাও খেতে পারে। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলে দিলেন। পরে মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। অতএব তার জন্য বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করা হল। তৎপর লোকদেরকে নির্দেশ করলেন, তারা মহিলাটিকে রজম করল। খালেদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার মাথায় একখণ্ড পাথর নিক্ষেপ করতেই রক্ত ছিটে এসে তাঁর মুখমণ্ডলের উপর পড়ল। তাই তিনি মহিলাটিকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করে গাল-মন্দ করলেন। (এটা শুনে) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে খালেদ, থাম! সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! মহিলাটি এমন (খালেছ) তওবা করেছে, যদি কোন বড় যালেমও এই ধরনের তওবা করে, তারও মাগফেরাত হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ার আদেশ করলেন। অতঃপর তার জানাযা পড়লেন এবং তাকে দাফনও করা হল’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৬২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১১

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِذَا صَلَّى أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَقَالَ: مَنْ رَأَى مِنْكُمُ اللَّيْلَةَ رُؤْيَا؟ قَالَ: فَإِنْ رَأَى أَحَدٌ قَصَّهَا فَيَقُوْلُ: مَا شَاءَ اللهُ فَسَأَلَنَا يَوْمًا فَقَالَ: هَلْ رَأَى مِنْكُمْ أَحَدٌ رُؤْيَا؟ قُلْنَا: لَا قَالَ: لَكِنِّي رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ رَجُلَيْنِ أَتَيَانِي فَأَخَذَا بِيَدَيَّ فَأَخْرَجَانِي إِلَى أَرْضٍ مُقَدَّسَةٍ فَإِذَا رَجُلٌ جَالِسٌ وَرَجُلٌ قَائِمٌ بِيَدِهِ كَلُّوْبٌ مِنْ حَدِيْدٍ يُدْخِلُهُ فِيْ شِدْقِهِ فَيَشُقُّهُ حَتَّى يَبْلُغَ قَفَاهُ ثُمَّ يَفْعَلُ بِشِدْقِهِ الْآخَرِ مِثْلَ ذَلِكَ وَيَلْتَئِمُ شِدْقُهُ هَذَا فَيَعُوْدُ فَيَصْنَعُ مِثْلَهُ. قُلْتُ: مَا هَذَا؟ قَالَا: انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ عَلَى قَفَاهُ وَرَجُلٌ قَائِمٌ عَلَى رَأْسِهِ بِفِهْرٍ أَوْ صَخْرَةٍ يَشْدَخُ بِهَا رَأْسَهُ فَإِذَا ضَرَبَهُ تَدَهْدَهَ الْحَجَرُ فَانْطَلَقَ إِلَيْهِ لِيَأْخُذَهُ فَلَا يَرْجِعُ إِلَى هَذَا حَتَّى يَلْتَئِمَ رَأْسُهُ وَعَادَ رَأْسُهُ كَمَا كَانَ فَعَادَ إِلَيْهِ فَضَرَبَهُ فَقُلْتُ: مَا هَذَا؟ قَالَا: انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا إِلَى ثَقْبٍ مِثْلِ التَّنُّورِ أَعْلَاهُ ضَيِّقٌ وَأَسْفَلَهُ وَاسِعٌ تَتَوَقَّدُ تَحْتَهُ نَارٌ فَإِذَا ارْتَفَعَتِ ارْتَفَعُوْا حَتَّى كَادَ أَنْ يَخْرُجُوْا مِنْهَا وَإِذَا خَمَدَتْ رَجَعُوا فِيهَا وَفِيهَا رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ فَقُلْتُ: مَا هَذَا؟ قَالَا: انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ مِنْ دَمٍ فِيهِ رَجُلٌ قَائِمٌ عَلَى وَسْطِ النَّهَرِ وَعَلَى شَطِّ النَّهَرِ رَجُلٌ بَيْنَ يَدَيْهِ حِجَارَةٌ فَأَقْبَلَ الرَّجُلُ الَّذِي فِي النَّهَرِ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَخْرُجَ رَمَى الرَّجُلُ بِحَجَرٍ فِي فِيْهِ فَرَدَّهُ حَيْثُ كَانَ فَجَعَلَ كُلَّمَا جَاءَ لِيَخْرُجَ رَمَى فِي فِيْهِ بِحَجَرٍ فَيَرْجِعُ كَمَا كَانَ فَقُلْتُ مَا هَذَا؟ قَالَا: انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى رَوْضَةٍ خَضْرَاءَ فِيْهَا شَجَرَةٌ عَظِيمَةٌ وَفِيْ أَصْلِهَا شَيْخٌ وَصِبْيَانٌ وَإِذَا رَجُلٌ قَرِيْبٌ مِنَ الشَّجَرَةِ بَيْنَ يَدَيْهِ نَارٌ يُوْقِدُهَا فَصَعِدَا بِيَ الشَّجَرَةَ فَأَدْخَلاَنِيْ دَارًا أَوْسَطَ الشَّجَرَةِ لَمْ أَرَ قَطُّ أَحْسَنَ مِنْهَا فِيهَا رِجَالٌ شُيُوخٌ وَشَبَابٌ وَنِسَاءٌ وَصِبْيَانٌ ثُمَّ أَخْرَجَانِي مِنْهَا فَصَعِدَا بِي الشَّجَرَة فَأَدْخَلاَنِيْ دَارًا هِيَ أَحْسَنُ وَأَفْضَلُ مِنْهَا فِيهَا شُيُوْخٌ وَشَبَابٌ فَقُلْتُ لَهُمَا: إِنَّكُمَا قَدْ طَوَّفْتُمَانِي اللَّيْلَةَ فَأَخْبِرَانِي عَمَّا رَأَيْتُ قَالَا: نَعَمْ أَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي رَأَيْتَهُ يُشَقُّ شِدْقُهُ فَكَذَّابٌ يُحَدِّثُ بِالْكَذْبَةِ فَتُحْمَلُ عَنْهُ حَتَّى تَبْلُغَ الْآفَاقَ فَيُصْنَعُ بِهِ مَا تَرَى إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَالَّذِي رَأَيْتَهُ يُشْدَخُ رَأْسُهُ فَرَجُلٌ عَلَّمَهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَنَامَ عَنْهُ بِاللَّيْلِ وَلَمْ يَعْمَلْ بِمَا فِيهِ بِالنَّهَارِ يُفْعَلُ بِهِ مَا رَأَيْتَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَالَّذِيْ رَأَيْتَهُ فِي الثَّقْبِ فَهُمُ الزُّنَاةُ وَالَّذِيْ رَأَيْتَهُ فِي النَّهَرِ آكِلُ الرِّبَا وَالشَّيْخُ الَّذِيْ رَأَيْتَهُ فِيْ أَصْلِ الشَّجَرَةِ إِبْرَاهِيْمُ وَالصِّبْيَانُ حَوْلَهُ فَأَوْلَادُ النَّاسِ وَالَّذِيْ يُوْقِدُ النَّارَ مَالِكٌ خَازِنِ النَّارِ وَالدَّارُ الْأُولَى الَّتِي دَخَلْتَ دَارُ عَامَّةِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَأَمَّا هَذِهِ الدَّارُ فَدَارُ الشُّهَدَاءِ وَأَنَا جِبْرِيْلُ وَهَذَا مِيكَائِيْلُ فَارْفَعْ رَأْسَكَ فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا فَوْقِي مِثْلُ السَّحَابِ وَفِي رِوَايَةٍ مِثْلُ الرَّبَابَةِ الْبَيْضَاءِ قَالَا: ذَلِكَ مَنْزِلُكَ قُلْتُ: دَعَانِيْ أَدْخُلْ مَنْزِلِي قَالَا: إِنَّهُ بَقِيَ لَكَ عُمُرٌ لَمْ تَسْتَكْمِلْهُ فَلَوِ اسْتَكْمَلْتَهُ أَتَيْتَ مَنْزِلَكَ.

সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অভ্যাস ছিল তিনি ফজরের ছালাত শেষে প্রায় আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কেউ আজ রাত্রে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের কেউ স্বপ্ন দেখে থাকলে সে তাঁর নিকট বলত। আর তিনি আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তার তা‘বীর বর্ণনা করতেন। যথারীতি একদিন সকালে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ (আজ রাত্রে) কোন স্বপ্ন দেখেছে কি? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, কিন্তু আমি দেখেছি। আজ রাত্রে দুই ব্যক্তি আমার নিকট আসল এবং তারা উভয়ে আমার হাত ধরে একটি পবিত্র ভূমির দিকে (সম্ভবত তা শাম বা সিরিয়ার দিকে) নিয়ে গেল। দেখলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর অপর এক ব্যক্তি লোহার সাঁড়াশি হাতে দাঁড়ানো। সে তা উক্ত বসা ব্যক্তির গালের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় এবং তা দ্বারা চিরে গর্দানের পিছন পর্যন্ত নিয়ে যায়। অতঃপর তার দ্বিতীয় গালের সাথে অনুরূপ ব্যবহার করে। ইত্যবসরে প্রথম গালটি ভাল হয়ে যায়। আবার সে (প্রথমে যেভাবে চিরেছিল) পুনরায় তাই করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। সম্মুখের দিকে চললাম। অবশেষে আমরা এমন এক ব্যক্তির কাছে এসে পৌঁছলাম, যে ঘাড়ের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে, আর অপর এক ব্যক্তি একখানা ভারী পাথর নিয়ে তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার আঘাতে শায়িত ব্যক্তির মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ করছে। যখনই সে পাথরটি নিক্ষেপ করে (মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ করে) তা গড়িয়ে দূরে চলে যায়, তখনই সে লোকটি পুনরায় পাথরটি তুলে আনতে যায় সে ফিরে আসার পূর্বে ঐ ব্যক্তির মাথাটি পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যায় এবং পুনরায় সে তা দ্বারা তাকে আঘাত করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম। অবশেষে একটি গর্তের নিকট এসে পৌঁছলাম, যা তন্দুরের মত ছিল। তার উপর অংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। তার তলদেশে আগুন প্রজ্জ্বলিত ছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠত, তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উপরে উঠে আসত এবং উক্ত গর্ত হতে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হত আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা শিথিল হত, তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যেত। তার মধ্যে রয়েছে কতিপয় উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন, সুতরাং সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম এবং একটি রক্তের নহরের নিকট এসে পৌঁছলাম। দেখলাম, তার মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং নহরের তীরে একজন লোক দণ্ডায়মান। আর তার সম্মুখে রয়েছে প্রস্তরখণ্ড। নহরের ভিতরের লোকটি যখন তা থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে কিনারার দিকে অগ্রসর হতে চায়, তখন তীরে দাঁড়ানো লোকটি ঐ লোকটির মুখ লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে এবং সে লোকটিকে ঐ স্থানে ফিরিয়ে দেয় যেখানে সে ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? সঙ্গীদ্বয় বলল, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখে অগ্রসর হয়ে শ্যামল সুশোভিত একটি বাগানে পৌঁছলাম। বাগানে ছিল একটি বিরাট বৃক্ষ। আর উক্ত বৃক্ষটির গোড়ায় উপবিষ্ট ছিলেন, একজন বৃদ্ধ লোক এবং বিপুল সংখ্যক বালক। এ বৃক্ষটির সন্নিকটে আরেক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, যার সম্মুখে রয়েছে আগুন, যাকে সে প্রজ্বলিত করছে। এরপর আমার সঙ্গীদ্বয় আমাকে ঐ বৃক্ষের উপরে আরোহণ করালো এবং সেখানে তারা আমাকে বৃক্ষরাজির মাঝখানে এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করালো যে, এরূপ সুন্দর ও মনোরম ঘর আমি আর কখনো দেখিনি। তার মধ্যে ছিল কতিপয় বৃদ্ধ, যুবক, নারী ও বালক। অনন্তর তারা উভয়ে আমাকে সে ঘর হতে বের করে বৃক্ষের আরও উপরে চড়ালো এবং এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করালো যা প্রথমটি হতে সমধিক সুন্দর ও উত্তম। তাতেও দেখলাম, কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক। অনন্তর আমি উক্ত সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, আপনারা উভয়েই তো আমাকে আজ সারা রাতে অনেক কিছু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালেন। এখন বলেন, আমি যা কিছু দেখেছি তার তাৎপর্য কি? তারা উভয়ে বলল, হ্যাঁ, (আমরা তা জানাবো)। ঐ যে এক ব্যক্তিকে দেখেছেন সাঁড়াশি দ্বারা যার গাল চিরা হচ্ছে, সে মিথ্যাবাদী, সে মিথ্যা বলত এবং তার নিকট হতে মিথ্যা রটানো হত। এমনকি তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত। অতএব তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণ করা হবে, যা আপনি দেখেছেন। আর যে ব্যক্তির মস্তক পাথর মেরে ঘায়েল করতে দেখেছেন, সে ঐ ব্যক্তি, আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু সে কুরআন হতে গাফেল হয়ে রাত্রে ঘুমাতো এবং দিনেও তার নির্দেশ মোতাবেক আমল করত না। সুতরাং তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণই করা হবে, যা আপনি দেখেছেন। আর (আগুনের) তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন, তারা হল যেনাকারী (নারী-পুরুষ)। আর ঐ ব্যক্তি যাকে (রক্তের) নহরে দেখেছেন, সে হল সুদখোর। আর ঐ বৃদ্ধ ব্যক্তি যাকে একটি বৃক্ষের গোড়ায় উপবিষ্ট দেখেছেন, তিনি হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর চতুস্পার্শ্বের শিশুরা হল মানুষের সন্তানাদি। আর যে লোকটিকে অগ্নিকুণ্ড প্রজ্বলিত করতে দেখেছেন, সে হল দোযখের দারোগা মালেক। আর প্রথম যে ঘরটিতে আপনি প্রবেশ করেছিলেন, তা (জান্নাতের মধ্যে) সর্বসাধারণ মুমিনদের গৃহ। আর যে ঘর যে পরে দেখেছেন, তা শহীদদের ঘর। আর আমি হলাম, জিব্রাঈল এবং ইনি হলেন মীকাঈল। এবার আপনি মাথা উপরের দিকে তুলে দেখুন। তখন আমি মাথাটি তুলে দেখলাম, যেন আমার মাথার উপরে মেঘের মত কোন একটি জিনিস রয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, একের পর এক স্তরবিশিষ্ট সাদা মেঘের মত কোন জিনিস দেখলাম। তাঁরা বললেন, তা আপনারই বাসস্থান। আমি বললাম, আমাকে সুযোগ দিন আমি আমার ঘরে প্রবেশ করি। তারা বললেন, এখনও আপনার হায়াত বাকী আছে, যা আপনি এখনো পূর্ণ করেননি। আপনার যখন নির্দিষ্ট হায়াত পূর্ণ হবে, তখন আপনি আপনার বাসস্থানে প্রবেশ করবেন’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৬২১; বাংলা মিশকাত হা/৪৪১৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

ছবি ও মূর্তি

পরিচ্ছেদঃ

ছবি ও মূর্তি

১১২

عَنْ أَبِيْ طَلْحَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ تَدْخُلُ الْمَلاَئِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلاَ تَصَاوِيْرُ-

আবু ত্বালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (বুখারী ২/৮৮০ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৪৮৯; বাংলা মিশকাত ৮ম খণ্ড, হা/৪২৯৮ ‘পোষাক’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৩

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُونَ-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি ‘আল্লাহর নিকট ছবি মূর্তি অংকনকারীর সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে’ (বুখারী ৮৮০ পৃঃ, মিশকাত হা/৪৪৯৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৪

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ إِنَّ الَّذِيْنَ يَصْنَعُوْنَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা এসব ছবি-মূর্তি তৈরি করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে তোমরা যেসব ছবি-মূর্তি তৈরি করেছ তাতে আত্মা দান কর’ (বুখারী হা/৫৯৫১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৫

عَنْ ابْنِ عَبٌَاسٍ قاَلَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ مَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ اَنْ يَنْفُخَ فِيْهَا وَلَيْسَ بِنَافِخِ.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি মাত্র একটি ছবি-মূর্তিও তৈরি করবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাতে আত্মা দান করতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু তার পক্ষে কখনোই তা সম্ভব হবে না’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৪৯৯, ‘পোষাক’ অধ্যায় )।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৬

عَنْ عَئِشَةَ أَنٌَ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَمْ يَكُنْ يَتْرُكُ فِيْ بَيْتِهِ شَيْئًا فِيْهِ تَصَالِيْبُ إِلاٌَ نَقَضَهُ-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবিপূর্ণ কোন কিছু তাঁর বাড়ীতে দেখলে তা ছিড়ে বা ভেঙ্গে ফেলতেন’ (বুখারী হা/৫৯৫২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৭

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مِنْ سَفَرٍ وَقَدْ سَتَرْتُ بِقِرَامٍ لِيْ عَلَى سَهْوَةٍ لِيْ فِيْهَا تَمَاثِيْلُ فَلَمَّا رَآهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم هَتَكَهُ وَقَالَ أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِيْنَ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِِ اللهِ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফর হতে আসলেন, এমতাবস্থায় আমি একটি ছবিপূর্ণ পর্দা তাকের উপর দিয়ে রেখেছিলাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা দেখে ছিড়ে টুকরা করে দিলেন এবং বললেন, ‘যারা ছবি-মূর্তি অংকন করে ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি হবে’ (বুখারী হা/৫৯৫৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৮

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مِنْ سَفَرٍ وَعَلَّقْتُ دُرْنُوْكًا فِيهِ تَمَاثِيْلُ فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَنْزِعَهُ فَنَزَعْتُهُ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক সফর থেকে আসলেন, এমতাবস্থায় আমি একটি ছবিপূর্ণ পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেটা সরিয়ে ফেলতে বললেন, আমি তা সরিয়ে দিলাম (বুখারী হা/৫৯৫৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৯

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ قِرَامٌ لِعَائِشَةَ سَتَرَتْ بِهِ جَانِبَ بَيْتِهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَمِيْطِي عَنَّا قِرَامَكِ هَذَا فَإِنَّهُ لاَ تَزَالُ تَصَاوِيْرُهُ تَعْرِضُ فِيْ صَلاَتِيْ-

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাঃ)-এর একটি চাদর ছিল যা দ্বারা তিনি তাঁর ঘরের এক পার্শ্ব পর্দা করে রেখেছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, ‘আমার নিকট থেকে চাদর সরাও তার ছবিগুলি সর্বদা আমার সামনে আসছে’ (বুখারী হা/৩৭৪, ৫৯৫৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২০

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّهَا اشْتَرَتْ نُمْرُقَةً فِيْهَا تَصَاوِيْرُ فَلَمَّا رَآهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَامَ عَلَى الْبَابِ فَلَمْ يَدْخُلْهُ فَعَرَفْتُ فِيْ وَجْهِهِ الْكَرَاهِيَةَ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَتُوْبُ إِلَى اللهِ وَإِلَى رَسُوْلِهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاذَا أَذْنَبْتُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَا بَالُ هَذِهِ النُّمْرُقَةِ قُلْتُ اشْتَرَيْتُهَا لَكَ لِتَقْعُدَ عَلَيْهَا وَتَوَسَّدَهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُعَذَّبُوْنَ فَيُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ وَقَالَ إِنَّ الْبَيْتَ الَّذِيْ فِيْهِ الصُّوَرُ لاَ تَدْخُلُهُ الْمَلاَئِكَةُ.

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাঃ) একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন, তাতে ছবি আঁকা ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরে প্রবেশের সময় তা দেখতে পেলেন। তিনি ঘরে প্রবেশ না করে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন। আয়েশা (রাঃ) তাঁর মুখ দেখে বুঝতে পেরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট তওবা করছি। আমি কি পাপ করেছি? (আপনি ঘরে প্রবেশ করছেন না কেন?) । রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘এই ছোট বালিশটি কোথায় পেলে’? তিনি বললেন, আমি এটা এজন্য ক্রয় করেছি যে, যাতে আপনি হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘নিশ্চয়ই যারা এই সমস্ত ছবি তোলে বা অংকন করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং বলা হবে, তোমরা যাদের তৈরি করেছ তাদের জীবিত কর। তিনি বললেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (বুখারী হা/৫৯৬১)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে ঘরে ছবি থাকবে সে ঘরে প্রবেশ করা যাবে না।
আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ)-কে ছবি-মূর্তি ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন (নূহ ২৩)। ইবরাহীম (আঃ) ছবি-মূর্তি ভেঙ্গে খান খান করেছিলেন (আম্বিয়া ৫৮)। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি-মূর্তি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দেয়ার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম, মিশকত হা/১৬৯৬; বাংলা মিশকাত ৪র্থ খণ্ড, হা/১৬০৫ ‘জানাযা’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২১

عَنْ عَائِشَةَ قَالَت دَخَلَ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَقَدْ سَتَرْتُ سَهْوَةً لِيْ بِقِرَامٍ فِيْهِ تَمَاثِيْلُ وَفِيْ رِوَايَةٍ فِيْهِ اَلْخَيْلُ ذَوَاتٌ الأَجْنِحَةِ فَلَمَّا رَاهُ هَتَكَهُ تَلَوَّنَ وَجْهُهُ وَقَالَ يَا عَائِشَةُ اَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَلَّذِيْنَ يَضَاهُوْنَ بِخَلْقِ اللهِ وَفِيْ رِوَايَةٍ إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ وَيُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ ثُمَّ قَالَ إِنَّ الْبَيْتَ الَّذِيْ فِيْهِ الصُّوَرُ لاَ تَدْخُلُوْهُ الْمَلاَئِكَةُ قَالَتْ عَائِشَةُ فَقَطَعْنَاهُ مِنْهُ وِسَادَةً أَوْ وِسَادَتَيْنِ فَقَدْ رَأَيْتُهُ مُتَّكِئًا عَلَى إِحْدَهُمَا وَفِيْهَا صُوْرَةٌ-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাছে আসলেন, এমতাবস্থায় আমি আমার অঙ্গিনার সম্মুখভাগে একটি পাতলা কাপড় দ্বারা পর্দা করেছিলাম, যাতে অনেক ছবি ছিল। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এতে পাখা বিশিষ্ট ঘোড়ার ছবি ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন এটা দেখলেন, তখন সেটা ছিড়ে ফেললেন এবং তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, ‘আয়েশা! ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে ঐ লোকদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাদৃশ্য তৈরি করে’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ছবির মালিকদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছ তা জীবিত কর। যে বাড়িতে ছবি টাঙ্গানো থাকে সে বাড়িতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আমি ঐ ছবিওয়ালা কাপড়টিকে কেটে একটি বা দু’টি বালিশ তৈরি করলাম। আমি তার একটির উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে হেলান দিয়ে থাকতে দেখেছি’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৮৯, ৪৪৯২, ৪৪৯৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২২

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَتَانِيْ جِبْرِيْلُ فَقَالَ إِنِّي كُنْتُ أَتَيْتُكَ الْبَارِحَةَ فَلَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَكُوْنَ دَخَلْتُ عَلَيْكَ الْبَيْتَ الَّذِيْ كُنْتَ فِيْهِ إِلاَّ أَنَّهُ كَانَ فِيْ بَابِ الْبَيْتِ تِمْثَالُ الرِّجَالِ وَكَانَ فِي الْبَيْتِ قِرَامُ سِتْرٍ فِيْهِ تَمَاثِيْلُ وَكَانَ فِي الْبَيْتِ كَلْبٌ فَمُرْ بِرَأْسِ التِّمْثَالِ الَّذِيْ بِالْبَابِ فَلْيُقْطَعْ فَلْيُصَيَّرْ كَهَيْئَةِ الشَّجَرَةِ وَمُرْ بِالسِّتْرِ فَلْيُقْطَعْ وَيُجْعَلْ مِنْهُ وِسَادَتَيْنِ مُنْتَبَذَتَيْنِ يُوْطَآَنِ وَمُرْ بِالْكَلْبِ فَيُخْرَجْ فَفَعَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসে বললেন, আমি গত রাতে আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি ঘরে প্রবেশ করিনি। কারণ গৃহদ্বারে অনেকগুলি ছবি ছিল এবং ঘরের দরজায় এক খানা পর্দা টাঙ্গানো ছিল যাতে অনেকগুলি প্রাণীর ছবি ছিল। আর ঘরের অভ্যন্তরে ছিল একটি কুকুর। বস্তুত যে ঘরে এ সমস্ত জিনিস থাকে, আমরা সে ঘরে প্রবেশ করি না। সুতরাং ঐ সমস্ত ছবিগুলির মাথা কেটে ফেলার আদেশ দিন, যা ঘরের দরজায় রয়েছে। তা কাটা হলে গাছের আকৃতি হয়ে যাবে এবং পর্দাটি সম্পর্কে আদেশ দিন তাকে কেটে দু’টি গদি তৈরি করা হবে, যা বিছানা এবং পায়ের নিচে থাকবে। আর কুকুরটি সম্পর্কে আদেশ দিন যেন তাকে ঘর থেকে বের করা হয়। সুতরাং রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাই করলেন’ (তিরমিযী হা/২৮০৬, মিশকাত হা/৪৫০২, সনদ ছহীহ)।
অত্র হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছবি টাঙ্গানো যাবে না। কারণ এতে রহমতের ফেরেশতা আসে না। উল্লেখ্য যে, সব ধরনের ছবি হারাম। শরীর বিশিষ্ট হোক বা শরীর ছাড়া হোক, ছায়া বিশিষ্ট হোক বা ছায়া ছাড়া হোক, সব প্রকার ছবি নিষিদ্ধ। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’। এতে তিনি সব ছবিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। নির্দিষ্টভাবে কোন প্রকার উল্লেখ করেননি। সেজন্য তিনি পর্দা ছিড়ে ফেলেছেন এবং ছবি সরানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন। এটা সুস্পষ্ট দলীল যে, ছবির আসল আকৃতি পরিবর্তন করে দিলে তা ব্যবহার করা বৈধ হয়ে যায়। কারণ ছবির চিহ্ন পরিবর্তনের ফলে অন্য আকৃতি তৈরি হয়। তবে যে ছবিতে প্রকৃত উপকারিতা আছে আমরা সে ছবি তৈরি করা জায়েয মনে করি। আর এ উপকারিতাসমূহ প্রতাখ্যান করা সহজ নয়, যার পদ্ধতি মূলত বৈধ। যেমন চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় এবং ভূগোলবিদদের ও শিকার সংগ্রহকারীদের প্রয়োজন হয়। এমনকি কোন কোন সময় তা ওয়াজিব হয়ে যায়।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৩

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَخْبَرَتْنِىْ مَيْمُوْنَةُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَصْبَحَ يَوْمًا وَاجِمًا فَقَالَتْ مَيْمُونَةُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَقَدِ اسْتَنْكَرْتُ هَيْئَتَكَ مُنْذُ الْيَوْمِ. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ وَعَدَنِى أَنْ يَلْقَانِى اللَّيْلَةَ فَلَمْ يَلْقَنِى أَمَ وَاللهِ مَا أَخْلَفَنِى. قَالَ فَظَلَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَوْمَهُ ذَلِكَ عَلَى ذَلِكَ ثُمَّ وَقَعَ فِى نَفْسِهِ جِرْوُ كَلْبٍ تَحْتَ فُسْطَاطٍ لَهُ فَأَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِهِ مَاءً فَنَضَحَ مَكَانَهُ فَلَمَّا أَمْسَى لَقِيَهُ جِبْرِيْلُ فَقَالَ لَهُ قَدْ كُنْتَ وَعَدْتَنِى أَنْ تَلْقَانِى الْبَارِحَةَ. قَالَ أَجَلْ وَلَكِنَّا لاَ نَدْخُلُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلاَ صُوْرَةٌ. فَأَصْبَحَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَوْمَئِذٍ فَأَمَرَ بِقَتْلِ الْكِلاَبِ حَتَّى إِنَّهُ يَأْمُرُ بِقَتْلِ كَلْبِ الْحَائِطِ الصَّغِيْرِ وَيَتْرُكُ كَلْبَ الْحَائِطِ الْكَبِيْرِ.

মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) মায়মুনা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চিন্তিত অবস্থায় ভোর করলেন এবং বললেন, জিব্রীল (আঃ) এই রাতে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে ওয়াদা করেছিলেন। কিন্তু সাক্ষাৎ করেননি। আল্লাহর কসম! তিনি তো কখনো আমার সাথে কথা দিয়ে খেলাফ করেন না। অতঃপর তাঁর মনে পড়ল ঐকুকুর ছানাটির কথা, যা তাঁর খাটের নিচে ছিল, তা বের করার নিদের্শ দিলেন। এরপর তাকে বের করে দেওয়া হল। অতঃপর কুকুরটি যে জায়গায় বসা ছিল তিনি সেই জায়গায় কিছু পানি নিজ হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিলেন পরে যখন বিকাল হল জিব্রীল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, গত রাতে আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করার ওয়াদা করেছিলেন। তিনি বললেন হ্যাঁ, সাক্ষাতের ওয়াদা করেছিলাম কিন্তু আমরা এমন ঘরে প্রবেশ করি না, যে ঘরে কুকুর বা ছবি থাকে। পরের দিন সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমস্ত কুকুর মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিলেন। এমনকি ছোট ছোট বাগানের হেফাযতে রক্ষিত কুকুরগুলিকে ছেড়ে দেন। অর্থাৎ এগুলিকে মারতে বলেননি’ (মুসলিম হা/২১০৫; মিশকাত হা/৪৪৯০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৪

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ أَعْرَسْتُ فِيْ عَهْدِ أَبِيْ فَأَذَنَّ أَبِيْ النَّاسَ وَكَانَ أَبُوْ أَيُّوْبَ فِيْمَنْ آذَنَا وَقَدْ سُتِرُوْا بَيْتِيْ بِنِجَادٍ أَخْضَرَ فَاَقْبَلَ أَبُوْ أَيُّوْبَ فَدَخَلَ فَرَأَنِيْ قَائِمًا وَأَطَّلَعَ فَرَأى الْبَيْتَ مُسْتَتِرًا بِنِجِاَدِ أَخْضَرَ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللهِ أَتَسْتُرُوْنَ الْجُدُرَ قَالَ أَبِيْ وَأَسْتَحْيِِ غَلَبَتْنَا النِّسَاءُ يَا أَبَا أَيُّوْبَ فَقَالَ مَنْ كُنْتُ أَخْشَى عَلَيْهِ أَنْ تَغْلِبْنَهُ النِّسَاءُ فَلَمْ أَكُنْ أَخْشَى عَلَيْكَ أَنْ تَغْلِبْنَكَ ثُمَّ قَالَ لاَ أَطْعَمُ لَكُمْ طَعَامًا وَلاَ أَدْخُلُ لَكُمْ بَيْتًا ثُمَّ خَرَجَ رَحِمَهُ اللهُ.

সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

আমি আমার পিতা বেঁচে থাকা অবস্থায় বিবাহ করলাম। আমার পিতা লোকজনকে দাওয়াত দিলেন। দাওয়াত প্রাপ্তদের একজন আমার ঘরটি সবুজ রংয়ের বিভিন্ন কাপড়, বিছানা ও বালিশ দ্বারা সাজিয়েছিলেন। আবু আইয়ুব এসে ঘরে ঢুকলেন এবং তিনি আমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলেন। তিনি অনুসন্ধান করে দেখলেন, সবুজ কাপড় দ্বারা বাড়ি-ঘর পর্দা করা হয়েছে। তিনি বললেন, হে আব্দুল্লাহ! তোমরা কি দেওয়ালে পর্দা লাগাও? আমার পিতা লজ্জিত হয়ে বললেন, হে আবু আইয়ুব! মহিলারা এ কাজে আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছে। তখন আবু আইয়ুব বললেন, যাদের উপর মহিলারা প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে মনে করতাম, আপনাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম না। এরপর তিনি বললেন, আমি তোমাদের খাদ্য খাব না। তোমাদের ঘরেও প্রবেশ করব না। অতঃপর তিনি বের হয়ে গেলেন (ত্বাবারাণী, আদাবুয যিফাফ ২০১ পৃঃ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৫

عَنْ أَسْلَمَ مَوْلَى عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ حِيْنَ قَدِمَ الشَّامَ فَصَنَعَ لَهُ رَجُلٌ مِنَ النَّصَارَى فَقَالَ لِعُمَرَ إِنِّيْ أُحِبُّ أَنْ تَجِيْئَنِيْ وَتَكْرَمَنِيْ اَنْتَ وَأَصْحَابُكَ وَهُوَ رَجُلٌ مِنْ عُظَمَاءِ الشَّامِ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ إِنَّا لاَ نَدْخُلُ كَنَائِِسَكُمْ مِنْ اَجْلِ الصُّوَرِ الَّتِيْ فِيْهَا.

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

ওমর (রাঃ) যখন সিরিয়াতে আসলেন, তাঁর জন্য এক খ্রিস্টান লোক খাদ্য তৈরি করল। সে ওমর (রাঃ)-কে বলল, আমি পসন্দ করি আপনি আমার বাড়িতে আসবেন এবং আপনি ও আপনার সাথীরা আমাকে সম্মানিত করবেন। এ লোক ছিল সিরিয়ার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের একজন। ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, আমরা তোমাদের গীর্জায় ছবি থাকার কারণে প্রবেশ করি না (বায়হাকী, আদাবুয যিফাফ ১৬৪ পৃঃ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৬

عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَجُلاً صَنَعَ لَهُ طَعَامًا فَدَعَاهُ فَقَالَ أَفِي الْبَيْتِ صُوْرَةٌ؟ قَالَ نَعَمْ فَأَبَى أَنْ يَّدْخُلَ حَتَّى كَسَرَ الصُّوْرَةَ ثُمَّ دَخَلَ.

আবু মাসউদ উকবাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক লোক তাঁর জন্য খাদ্য তৈরি করল। এরপর তাঁকে দাওয়াত দিল। অতঃপর তিনি বললেন, ঘরে কি ছবি আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি ঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকার করলেন, শেষ পর্যন্ত ছবি ভেঙ্গে ফেলা হল। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন (বায়হাকী, আদাবুয যিফাফ ১৬৫ পৃঃ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৭

قَالَ الْإِمَامُ الأَوْزَاعِيُّ لاَ نَدْخُلُ وَلِيْمَةً فِيْهَا طَبْلٌ وَلاَ مِعْزَافٌ.

ইমাম আওযাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘আমরা ঐ ওয়ালীমাতে যাই না, যাতে তবালা ও বাদ্যযন্ত্র থাকে (আদাবুয যিফাফ, ১৬৫ পৃঃ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০

সুদ ও ঘুষ

পরিচ্ছেদঃ

সুদ ও ঘুষ

১২৮

عَنْ جَابِرٍ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وقَالَ هُمْ سَوَاءٌ.

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী ও সূদের দু’সাক্ষীর প্রতি অভিশাপ করেছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অভিশাপে তারা সবাই সমান (মুসলিম, মিশকাত হা/২৮০৭; বাংলা ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/২৬৮৩ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ‘সুদ’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৯

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ حَنْظَلَةَ غَسِيْلِ الْمَلاَئِكَةِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم دِرْهَمُ رِبَا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَيَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةِ وَثَلاَثِيْنَ زِنْيَةً.

আবদুল্লাহ ইবনু হানযালাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি জেনে শুনে এক দিরহাম বা একটি মুদ্রা সুদ গ্রহণ করলে ছত্রিশবার যেনা করার চেয়ে কঠিন হবে’ (আহমাদ, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৮২৫; বাংলা মিশকাত হা/২৭০১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩০

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكَحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সুদের পাপের ৭০টি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে মাতাকে বিবাহ করা’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৬, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩১

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فَإِنَّ عَاقِبَتَهُ تَصِيْرُ إِلَى قَلٍّ.

ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সুদ এমন বস্তু যার পরিণাম হচ্ছে সংকুচিত হওয়া যদিও তা বৃদ্ধি মনে হয়’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩২

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الرَاشِيَ وَالْمُرْتَشِيْ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুষ গ্রহণকারী ও ঘুষ প্রদানকারীর উপর অভিশাপ করেছেন (ইবনু মাজাহ, সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/৩৭৫৩ ‘নেতৃত্ব’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৩

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ شَفَعَ لِأَخِيْهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيْمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا.

আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করল এবং সেই সুপারিশের প্রতিদান স্বরূপ তাকে কিছু উপহার দিল। যদি সে তা গ্রহণ করে তাহলে সে সূদের দরজাসমূহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হল’ (আবূদাঊদ, সনদ হাসান, মিশকাত, হা/৩৭৫৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৪

عَنْ بُرَيْدَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَرَزَقْنَاهُ رِزْقًا فَمَا أَخَذَ بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ غُلُوْلٌ.

বুরায়দাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি যাকে ভাতা দিয়ে কোন কাজের দায়িত্ব প্রদান করেছি সে যদি ভাতা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করে তাহলে তা হবে খিয়ানাত’ (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৩৭৪৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৫

عَنْ خَوْلَةَ الْأَنْصَارِيَّةِ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ رِجَالاً يَتَخَوَّضُوْنَ فِيْ مَالِ اللهِ بِغَيْرِحَقٍّ فَلَهُمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

খাওয়ালাহ আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিছু লোক আল্লাহর সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম’ (বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৪৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১

শিরক

পরিচ্ছেদঃ

শিরক

১৩৬

عَنْ عَبْدُ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَىُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ قَالَ أَنْ تَدْعُوَ ِللهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ. قَالَ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ مَخَافَةَ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ. قَالَ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ أَنْ تُزَانِىَ حَلِيلَةَ جَارِكَ فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ تَصْدِيقَهَا (وَالَّذِينَ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ وَلاَ يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلاَ يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا) الآية.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকটে কোন গোনাহটি সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, আল্লাহর কোন সমকক্ষ সাব্যস্ত করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। লোকটি বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তোমার সন্তানকে হত্যা করা এই ভয়ে যে, সে তোমার সাথে খাবে (অর্থাৎ দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা)। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া’। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একথারই সত্যায়ন করে আল্লাহ পাক (নেক্কার লোকদের প্রশংসায় আয়াত নাযিল করেন, ‘আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে আহ্বান করে না এবং যারা অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করে না যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন এবং যারা ব্যভিচার করে না’ (ফুরক্বান ৬৮; বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৭

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ الْكَبَائِرُ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَالْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ. وَفِي رِوَايَةِ أَنَسٍ: وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ.

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন যে, ‘কাবীরা গোনাহ সমূহ হল- (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা (২) পিতামাতার অবাধ্য হওয়া (৩) মানুষ হত্যা করা এবং (৪) মিথ্যা শপথ করা’ (বুখারী হা/৬৬৭৫)। কিন্তু আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় ‘মিথ্যা শপথ’-এর বদলে ‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ শব্দ এসেছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৮

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ. قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় হতে দূরে থাকবে। ছাহাবীগণ বললেন, সেগুলি কী? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা (২) জাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করেছেন (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল (অন্যায়ভাবে) ভক্ষণ করা (৬) জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরলা নির্দোষ মুমিন মহিলাদের নামে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৯

عَنْ مُعَاذٍ قَالَ أَوْصَانِىْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بِعَشْرِ كَلِمَاتٍ قَالَ لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا وَإِنْ قُتِلْتَ وَحُرِّقْتَ وَلاَ تَعُقَّنَّ وَالِدَيْكَ وَإِنْ أَمَرَاكَ أَنْ تَخْرُجَ مِنْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ وَلاَ تَتْرُكَنَّ صَلاَةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّداً فَإِنَّ مَنْ تَرَكَ صَلاَةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّداً فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللهِ وَلاَ تَشْرَبَنَّ خَمْراً فَإِنَّهُ رَأْسُ كُلِّ فَاحِشَةٍ وَإِيَّاكَ وَالْمَعْصِيَةَ فَإِنَّ بِالْمَعْصِيَةِ حَلَّ سَخَطُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَإِيَّاكَ وَالْفِرَارَ مِنَ الزَّحْفِ وَإِنْ هَلَكَ النَّاسُ وَإِذَا أَصَابَ النَّاسَ مَوْتٌ وَأَنْتَ فِيْهِمْ فَاثْبُتْ وَأَنْفِقْ عَلَى عِيَالِكَ مِنْ طَوْلِكَ وَلاَ تَرْفَعْ عَنْهُمْ عَصَاكَ أَدَباً وَأَخِفْهُمْ فِى اللهِ.

মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ১০টি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না। যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয় (২) তুমি তোমার পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না। যদিও তারা তোমাকে তোমার পরিবার ও মাল-সম্পদ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন (৩) ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো ফরয ছালাত ত্যাগ করবে না। তার পক্ষে আল্লাহর যিম্মাদারী উঠে যাবে (৪) কখনোই মাদক সেবন করবে না। কেননা এটিই হল সকল অশ্লীলতার মূল (৫) সর্বদা গোনাহ থেকে দূরে থাকবে। কেননা গোনাহের মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয় (৬) সাবধান! জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করবে না। যদিও সকল লোক ধ্বংস হয়ে যায়। (৭) যদি কোথাও মহামারী দেখা দেয়, এমতাবস্থায় তুমি যদি সেখানে থাক, তাহলে তুমি সেখানে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবে (মৃত্যুর ভয়ে পালাবে না)। (৮) তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে (অযথা কৃপণতা করে তাদের কষ্ট দিবে না)। (৯) তাদের উপর থেকে শাসনের লাঠি তুলে নিবে না এবং (১০) তাদেরকে সর্বদা আল্লাহর ভয় দেখাবে’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৬১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪০

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم : مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ وَمَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ.

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করবে সে জাহান্নামে যাবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করবে না সে জান্নাতে যাবে’ (মুসলিম, মিশকাত, বাংলা মিশকাত ১ম খণ্ড হা/৩৪, ‘ঈমান’ অধ্যায় হা/৩৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪১

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ الله تَعَالَى : يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ مَا دَعَوْتَنِيْ وَرَجَوْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ وَلاَ أُبَالِي. يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوْبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِيْ. يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ لَقِيْتَنِيْ لاَ تُشْرِكْ بِيْ شَيْئاً، لأَتَيْتُكَ بقُرَابِهَا مَغْفِرَةً-

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪২

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيْمَةً فَلاَ أَتَمَّ اللهُ لَهُ وَمَنْ تَعَلَّقَ وَدَعَةً فَلاَ وَدَعَ اللهُ لَهُ.

উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তা‘বীয ব্যবহার করবে আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দিবেন না। আর যে কড়ি ব্যবহার করবে আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না’ (আহমাদ হা/১৬৭৬৩, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৩

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَقْبَلَ إِلَيْهِ رَهْطٌ فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ بَايَعْتَ تِسْعَةً وَتَرَكْتَ هَذَا قَالَ إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيْمَةً فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا فَبَايَعَهُ وَقَالَ مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ-

উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দলটির ৯ জনকে বায়‘আত করালেন এবং একজনকে বায়‘আত করালেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি ৯ জনকে বায়‘আত করালেন আর একজনকে ছেড়ে দিলেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তার সাথে একটি তা‘বীয রয়েছে’। তখন লোকটি হাত ভিতরে ঢুকিয়ে তা‘বীয ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকেও বায়‘আত করালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তা‘বীয ব্যবহার করল সে শির্ক করল’ (আহমাদ হা/১৬৭৭১, হাদীছ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৪

عَنْ رُوَيْفَعَ بْنَ ثَابِتٍ يَقُولُ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ يَا رُوَيْفِعُ لَعَلَّ الْحَيَاةَ سَتَطُوْلُ بِكَ بَعْدِيْ فَأَخْبِرْ النَّاسَ أَنَّهُ مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَهُ أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا أَوْ اسْتَنْجَى بِرَجِيعِ دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ فَإِنَّ مُحَمَّدًا بَرِيءٌ مِنْهُ إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ-

রুওয়াইফী‘আ ইবনু ছাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘হে রুওয়াইফা! হয়তো তুমি আমার পরেও অনেক দিন বেঁচে থাকবে। সুতরাং তুমি লোকদেরকে এ কথা বলে দিও যে, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিট দিল অথবা তা‘বীয জাতীয় বেল্ট বা সুতা (ছেলে-মেয়ের বা প্রাণীর গলায়) পরাল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইসতেঞ্জা করল, নিশ্চয়ই তার সাথে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কোন সম্পর্ক নেই’ (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৩৫১ সনদ ছহীহ, বাংলা মিশকাত ২য় খণ্ড, হা/৩২৪ ‘পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৫

قَالَتْ حَفْصَةُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً.

হাফছাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট যাবে এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করবে ৪০ দিন তার ছালাত কবুল করা হবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৮ম খণ্ড হা/৪৩৯৩ ‘জ্যোতিষীর গণনা’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৬

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ وَالْحَسَنِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ أَتَى كَاهِنًا أَوْ عَرَّافًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم.

আবূ হুরাইরা ও হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট আসল এবং তার বলা কথার প্রতি বিশ্বাস করল সে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর যা (কুরআন মাজীদ) অবতীর্ণ হয়েছে তাকে অস্বীকার করল’ (আহমাদ ২/৪২৯পৃঃ)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাতের রাশি দেখে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ প্রকাশ করা, হাত চালিয়ে হারিয়ে যাওয়া বস্তুর সংবাদ দেয়া, টিয়া পাখির মাধ্যমে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ প্রকাশ করা গণকের নিকট হারিয়ে যাওয়া বস্তু জানতে চাওয়া এগুলো সবই শিরক।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৭

عَنْ أَبِيْ وَاقِدٍ اللَّيْثِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَمَّا خَرَجَ إِلَى حُنَيْنٍ مَرَّ بِشَجَرَةٍ لِلْمُشْرِكِينَ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ أَنْوَاطٍ يُعَلِّقُوْنَ عَلَيْهَا أَسْلِحَتَهُمْ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم سُبْحَانَ اللهِ هَذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوْسَى اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ-

আবু ওয়াক্বিদ আল-লায়ছী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে হুনাইনের (যুদ্ধের) উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি। এক স্থানে পৌত্তলিকদের একটি কুল গাছ ছিল যার চারপাশে তারা বসত এবং তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। গাছটিকে তারা (যাতুল আনওয়াত) বলত। আমরা একদিন একটি কুল গাছের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের যেমন নির্ধারিত গাছ আছে আমাদের জন্যও তেমনি একটি গাছ নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আল্লাহু আকবার’ তোমাদের এ দাবী পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথা বলেছ যা বনী ইসরাঈলরা মূসা (আঃ)-কে বলেছিল। তারা বলেছিল, হে মূসা! মুশরিকদের যেমন মা‘বূদ আছে আমাদের জন্য তেমন মা‘বূদ বানিয়ে দাও। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা মূর্খের মত কথাবার্তা বলছ’ (আ‘রাফ ১৩৮)। ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতিই অবলম্বন করছ’ (তিরমিযী হা/২১০৬, হাদীছ ছহীহ)। অত্র কুরআন ও হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন কিছুর মাধ্যমে বরকত হাছিল করা শিরক।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৮

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيْعَ اللهَ فَلْيُطِعْهُ وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلاَ يَعْصِهِ

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে মানত করে সে যেন তা পুরা করার মাধ্যমে আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত করে সে যেন আল্লাহর নাফরমানী না করে (মানত পূরণ না করে)’ (বুখারী, মিশকাত হা/৩৪২৭, বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৭ম খণ্ড হা/৩২৮১)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর নামে বৈধ স্থানে মানত মানা যায় এবং তা পালন করা যরূরী (বাক্বারাহ ২৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৯

عَنْ خَوْلَةَ بِنْتِ حَكِيْمٍ السُّلَمِيَّةِ تَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ مَنْ نَزَلَ مَنْزِلاً ثُمَّ قَالَ أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ حَتَّى يَرْتَحِلَ مِنْ مَنْزِلِهِ ذَلِكَ-

খাওলাহ বিনতে হাকীম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কোন বাড়িতে বা স্থানে অবতীর্ণ হয়ে বলবে, أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‘আমি আল্লাহর পূর্ণ কালামের নিকট তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই’। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঐ স্থান ত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৪২২, বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৫ম খণ্ড, হা/২৩১০ ‘বিভিন্ন সময়ের দো‘আ’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫০

قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا هذه أَسْمَاءُ رِجَالٍ صَالِحِيْنَ مِنْ قَوْمِ نُوْحٍ فَلَمَّا هَلَكُوا أَوْحَى الشَّيْطَانُ إِلَى قَوْمِهِمْ أَنْ اَنْصِبُوْا إِلَى مَجَالِسِهِمْ الَّتِي كَانُوْا يَجْلِسُوْنَ أَنْصَابًا وَسَمُّوْهَا بِأَسْمَائِهِمْ فَفَعَلُوْا فَلَمْ تُعْبَدْ حَتَّى إِذَا هَلَكَ أُوْلَئِكَ وَتَنَسَّخَ الْعِلْمُ عُبِدَتْ.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এগুলি হচ্ছে নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেককার ব্যক্তিদের নাম, তারা যখন মৃত্যুবরণ করল, তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলল, যেসব জায়গায় তাদের মজলিস বসত সেসব জায়গায় তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং তাদের সম্মানার্থে তাদের নামেই মূর্তিগুলির নামকরণ কর। তখন তারা তাই করল। তবে তাদের জীবদ্দশায় ঐ সমস্ত মূর্তির পূজা করা হয়নি, কিন্তু মূর্তি স্থাপনকারীরা যখন মৃত্যুবরণ করল এবং মূর্তি স্থাপনের ইতিকথা ভুলে গেল তখনই এগুলির ইবাদত শুরু হল’ (বুখারী ২/৭৩২ পৃঃ)। অত্র হাদীছে মূর্তিপূজার সূচনা প্রমাণিত হয়।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫১

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِيْ مَرَضِهِ الَّذِي لَمْ يَقُمْ مِنْهُ لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জীবনের শেষ অসুখে বলেছিলেন, ‘ইহুদী-খৃষ্টানদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। তারা তাদের নবীদের ক্ববরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছিল’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭১২ বঙ্গানুবাদ মিশকাত ২য় খণ্ড হা/৬৫৯ ‘মসজিদসমূহ ও ছালাতের স্থান’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫২

عَنْ جُنْدَب قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ : أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ إِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ.

জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ‘মনে রেখ নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী এবং নেককার লোকদের ক্ববরকে মসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা ক্ববরকে মসজিদ বানাইওনা। আমি তোমাদেরকে ক্ববরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করছি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৭১৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫৩

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رضى الله عنه قَالَ دَخَلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَكَّةَ وَحَوْلَ الْبَيْتِ سِتُّونَ وَثَلاَثُمِائَةِ نُصُبٍ فَجَعَلَ يَطْعُنُهَا بِعُودٍ فِى يَدِهِ وَيَقُوْلُ (جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا) (جَاءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيدُ).

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

(মক্কা বিজয়ের দিন) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন কা‘বা ঘরের চারপাশে তিনশ’ ষাটটি মূর্তি ছিল। তখন তিনি তাঁর হাতের ছড়ি দিয়ে এগুলোকে ঠোকা দিতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘সত্য এসেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই’ (বানী ইসরাঈল ৮১)। ‘সত্য এসেছে আর অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে এবং না পারে পুনরাবৃত্তি করতে’ (বুখারী হা/৪৭২০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫৪

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ.

আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রার্থনা করে বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ক্ববরকে মূর্তিতে পরিণত করো না যার ইবাদত করা হবে। আল্লাহ ঐ জাতির উপর রাগান্বিত হয়েছেন যারা তাদের নবীগণের ক্ববরকে মসজিদে পরিণত করেছে’ (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৭৫০ সনদ ছহীহ, বঙ্গানুবাদ মিশকাত ২য় খণ্ড হা/৬৯৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫৫

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক; তার একটি হচ্ছে যাদু (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ১ম খণ্ড, হা/৪৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫৬

عَنْ بَجَالَةَ بْنَ عَبْدَةَ أَنَّهُ قَالَ أَتَانَا كِتَابُ عُمَرَ قَبْلَ مَوْتِهِ بِسَنَةٍ أَنْ اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ.

বাজালাহ ইবনু আবাদাহ থেকে বর্ণিতঃ

ওমর (রাঃ) মুসলিম গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় বলেছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা কর’ (বুখারী, বায়হাক্বী, আল-কাবায়ির ২৬ পৃঃ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫৭

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْاَشْعَرِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ وَقَاطِعُ رَحِمٍ وَمُصَدِّقٌ بِالسِّحْرِ.

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না। (১) সর্বদা মদপানকারী, (২) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী, (৩) যাদুর প্রতি বিশ্বাসকারী’ (আহমাদ, মিশকাত হা/৩৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৭ম খণ্ড হা/৩৪৮৯ ‘মদের বিবরণ ও মদ্যপায়ীর প্রতি ভীতিপ্রদগণ’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫৮

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ عَدْوَى وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ، وفي رواية وَلاَ نَوْءَ وَلاَ صَفَرَ وَلاَ غُوْلَ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘দীন ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ, পেঁচা পাখির ডাকের মন্দ প্রতিক্রিয়া, পেটে পীড়াদায়ক সাপ, নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও ভুত বা দ্বৈত বলে কিছু নেই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৭৮-৪৫৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৮ম খণ্ড, হা/৪৩৭৬-৭৭ ‘শুভ ও অশুভ লক্ষণ’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫৯

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قال الطَيْرَةُ شِرْكٌ قَالَهُ ثَلاَثًا.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘অশুভ বা কুলক্ষণ ফল গ্রহণ করা শির্কী কাজ। কথাটি তিনি তিনবার বললেন (আবূদাঊদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৫৮৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৮ম খণ্ড হা/৪৩৮২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬০

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ رَدَّتْهُ الطِّيَرَةُ مِنْ حَاجَةٍ فَقَدْ أَشْرَكَ قَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا كَفَّارَةُ ذَلِكَ قَالَ أَنْ يَقُولَ أَحَدُهُمْ اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ.

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কুলক্ষণ বা অশুভ ধারণা যে ব্যক্তিকে তার স্বীয় প্রয়োজন, দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে দূরে রাখল, সে মূলত শির্ক করল। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এর কাফ্ফারা কী? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা এ দো‘আ পড়- اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ ‘হে আল্লাহ! তোমার মঙ্গল ব্যতীত কোন মঙ্গল নেই। তোমার অশুভ ছাড়া কোন অশুভ নেই এবং তুমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই’ (আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৫, ৩/৫৪ পৃষ্ঠা)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬১

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنْ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ وفي روايةٍ : فَاَنَا مِنْهُ بَرِيٌ هُوَ الَّذِيْ عَمَلَهُ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি অংশীদারদের অংশীদারিত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে আমি ঐ অংশীদারকেও অংশীদারীকে প্রত্যাখ্যান করি’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘আমি ঐ ব্যক্তির কর্ম হতে মুক্ত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩১৫ বঙ্গানুবাদ ৯ম খণ্ড হা/৫০৮৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬২

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيٍّ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ الْمَسِيْحَ الدَّجَّالَ فَقَالَ اَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِيْ مِنَ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ فَقُلْنَا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الشِرْكُ الخَفْيِ اَنْ يَقُوْمَ الرَّجُلُ فَيُصَلِّيَ فَيُرِيْدُ صَلاَتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظْرِ رَجُلٍ

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। এমতাবস্থায় আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে পরস্পর আলোচনা করছিলাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ে সংবাদ দিব না? যে বিষয়টি আমার কাছে দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর? ছাহাবীগণ বললেন, জ্বি হাঁ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা হচ্ছে গোপন শির্ক । (আর এর উদাহরণ হচ্ছে) একজন মানুষ ছালাতে দাঁড়িয়ে এই খেয়ালে ছালাত আদায় করে যে, কোন মানুষ তার ছালাত আদায় করা দেখছে’ (ইবনু মাজাহ, সনদ হাসান, মিশকাত হা/৫৩৩৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৯ম খণ্ড হা/৫১০১)। আলবানী হাদীছটি ছহীহ বলেছেন।
মানুষের প্রশংসা এবং সম্মান অর্জনের জন্য কোন আমল করা। অথবা কেবলমাত্র পার্থিব কোন স্বার্থের জন্য কাজ করা, যা মানুষের খুলুছিয়াত এবং তাওহীদকে কলুষিত করে। লোক দেখানো, সুনাম অর্জন, নেতৃত্ব দান, দুনিয়ার স্বার্থ উদ্ধার ইত্যাদি বিষয়গুলোর কোন একটি আল্লাহর ইবাদতের দ্বারা আশা করা শিরক।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২

বিদ’আত

পরিচ্ছেদঃ

বিদ’আত

১৬৩

عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬৪

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য’ (মুসলিম হা/১৭১৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬৫

عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْىِ هَدْىُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ. وَفِيْ نَسَائِي (وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ).

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬৬

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ أَبْغَضُ النَّاسِ إِلَى اللهِ ثَلاَثَةٌ مُلْحِدٌ فِى الْحَرَمِ، وَمُبْتَغٍ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ، وَمُطَّلِبُ دَمِ امْرِئٍ بِغَيْرِ حَقٍّ لِيُهَرِيْقَ دَمَهُ.

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত।- (১) যে ব্যক্তি হারামে নিষিদ্ধ কাজ করে (২) যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে জাহেলী যুগের রীতি চালুর আকাংখা করে (৩) যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো রক্ত কামনা করে স্রেফ রক্তপাতের উদ্দেশ্যে’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৪২)। ইসলামী রীতি-নীতি ছাড়া সবকিছুই জাহেলী রসম-রেওয়াজ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬৭

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى قِيْلَ وَمَنْ أبَى؟ قَالَ مَنْ أَطَاعَنِىْ دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِىْ فَقَدْ أَبَى.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে অসম্মত। জিজ্ঞেস করা হ’ল, কে অসম্মত? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করবে, সে (জান্নাতে যেতে) অসম্মত’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৪৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬৮

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ يَقُوْلُ جَاءَتْ مَلاَئِكَةٌ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَهْوَ نَائِمٌ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ. فَقَالُوْا إِنَّ لِصَاحِبِكُمْ هَذَا مَثَلاً فَاضْرِبُوْا لَهُ مَثَلاً. فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ. فَقَالُوْا مَثَلُهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا، وَجَعَلَ فِيْهَا مَأْدُبَةً وَبَعَثَ دَاعِيًا، فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِىَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنَ الْمَأْدُبَةِ، وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّاعِىَ لَمْ يَدْخُلِ الدَّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنَ الْمَأْدُبَةِ. فَقَالُوْا أَوِّلُوْهَا لَهُ يَفْقَهْهَا فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ. فَقَالُوْا فَالدَّارُ الْجَنَّةُ، وَالدَّاعِى مُحَمَّدٌ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمُحَمَّدٌ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ.

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ‘একদিন একদল ফেরেশতা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকটে আসলেন। এমতাবস্থায় তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। ফেরেশতাগণ পরস্পরে বললেন যে, তোমাদের এই সাথীর জন্য একটি উদাহরণ রয়েছে। তাঁকে উদাহরণটি বল। তখন তাদের কেউ কেউ বললেন, তিনি যে নিদ্রিত। জবাবে অন্যরা বললেন, তাঁর চক্ষু নিদ্রিত কিন্তু তাঁর অন্তর জাগ্রত। তখন তাদের কেউ কেউ বললেন, তাঁর উদাহরণটি হল, যেমন এক ব্যক্তি একটি গৃহ নির্মাণ করেন। অতঃপর সেখানে একটি ভোজের আয়োজন করেন। অতঃপর (লোকদের আহ্বান করার জন্য) তিনি একজন আহ্বায়ক পাঠালেন। এখন যে ব্যক্তি তার আহ্বানে সাড়া দিল, সে উক্ত গৃহে প্রবেশ করতে পারল এবং খাদ্য গ্রহণ করল। আর যে ব্যক্তি তার আহ্বানে সাড়া দিল না, সে উক্ত গৃহে প্রবেশ করতে পারল না এবং খেতেও পারল না। অতঃপর তারা পরস্পরকে বললেন, তাঁকে এই উদাহরণের তাৎপর্য বলে দাও, যাতে তিনি বুঝতে পারেন। এবারেও কেউ কেউ বললেন, তিনি তো নিদ্রিত। অন্যরা বললেন, তাঁর চক্ষু নিদ্রিত, কিন্তু তাঁর অন্তর জাগ্রত। তারা বললেন, গৃহটি হল ‘জান্নাত’। আহ্বায়ক হলেন ‘মুহাম্মাদ’ (এবং গৃহ নির্মাণ ও খাদ্য প্রস্তুতকারী হলেন ‘আল্লাহ’)। অতএব যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের অবাধ্য হল, সে আল্লাহর অবাধ্য হল। মুহাম্মাদ হলেন মানুষের মধ্যে (ঈমান ও কুফরের) পার্থক্যকারী’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৪৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬৯

عَنْ أنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُولُ جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوْتِ أَزْوَاجِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَلَمَّا أُخْبِرُوا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا فَقَالُوا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ. قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّى أُصَلِّى اللَّيْلَ أَبَدًا. وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُومُ الدَّهْرَ وَلاَ أُفْطِرُ. وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا. فَجَاءَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ أَنْتُمُ الَّذِيْنَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللهِ إِنِّى لأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ، لَكِنِّى أَصُومُ وَأُفْطِرُ، وَأُصَلِّى وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِى فَلَيْسَ مِنِّى.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদিন তিনজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের নিকটে এল তাঁর ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য। অতঃপর যখন রাসূলের ইবাদত সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা হল। তখন তারা যেন তাকে কম মনে করল এবং বলল, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমরা কত দূরে! তাঁর আগে-পিছের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের একজন বলল, আমি এখন থেকে সর্বদা সারা রাত ছালাতে রত থাকব। অন্যজন বলল, আমি প্রতিদিন ছিয়ামে কাটাব, কখনো ইফতার করব না। অন্যজন বলল, আমি নারীসঙ্গ থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করব না। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মধ্যে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, তোমরাই কি সেই লোকেরা, যারা এমনামন কথা বলছিলে? শুনে রাখ, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু ও সর্বাধিক পরহেযগার। কিন্তু আমি ছিয়াম রাখি আবার ছেড়েও দেই। ছালাত পড়ি, নিদ্রাও যাই। আমি বিবাহ করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে ব্যক্তি আমার শরী‘আতের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭০

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُوْرِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে সৎ পথের দিকে আহ্বান করে, তার জন্য সেই পরিমাণ ছওয়াব রয়েছে, যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে। অথচ এতে তাদের নিজস্ব ছওয়াবে কোনরূপ কমতি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কাউকে পথভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করে, তার জন্যও ঠিক সেই পরিমাণ গোনাহ রয়েছে, যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে। অথচ তাদের নিজস্ব গোনাহে কোনরূপ কমতি হবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭১

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بَدَأَ الإِسْلاَمُ غَرِيبًا وَسَيَعُوْدُ كَمَا بَدَأَ غَرِيْبًا فَطُوْبَى لِلْغُرَبَاءِ. وَفِيْ التِّرْمِذِىِّ (إِنَّ الدِّيْنَ بَدَأَ غَرِيْبًا فَطُوْبَى لِلْغُرَبَاءِ الَّذِيْنَ يُصْلِحُوْنَ مَا أَفْسَدَ النَّاسُ مِنْ بَعْدِيْ مِنْ سُنَّتِيْ).

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন যে, ‘ইসলাম মুষ্টিমেয় লোকদের মাধ্যমে সূচনা করেছে। সত্বর তা মুষ্টিমেয় লোকদের মধ্যেই ফিরে আসবে, যেমন সূচনাতে ছিল। অতএব সুসংবাদ হল ঐ মুষ্টিমেয় লোকদের জন্য’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৯)। আর তিরমিযী গ্রন্থে রয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সংখ্যালঘু অবস্থায় দ্বীন ছড়িয়ে পড়েছে। আর সংখ্যালঘুরাই সফল। আর তারা ওরাই, যারা আমার পরে আমার সুন্নাতের সংশোধন করে মানুষ যেগুলির বিপর্যয় ঘটিয়েছে’ (তিরমিযী হা/২৬৩০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭২

عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ذَاتَ يَوْمٍ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيْغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا فَقَالَ أُوْصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِى فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ.

ইরবায বিন সারিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন। অতঃপর আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় ওয়ায করলেন যে, চক্ষু সমূহ অশ্রুসজল হয়ে গেল এবং হৃদয় সমূহ ভীত-বিহ্বল হয়ে গেল। এমন সময় একজন লোক বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! মনে হচ্ছে এটা বিদায়ী উপদেশ। অতএব আপনি আমাদেরকে আরও বেশী উপদেশ দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ভীতির উপদেশ দিচ্ছি এবং তোমাদের আমীরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশী গোলাম হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি হতে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের ব্যাপারে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হল বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭৩

عَنْ جَابِرٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم حِينَ أَتَاهُ عُمَرُ فَقَالَ إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيثَ مِنْ يَهُودَ تُعْجِبُنَا أَفْتَرَى أَنْ نَكْتُبَ بَعْضَهَا؟ فَقَال أَمُتَهَوِّكُوْنَ أَنْتُمْ كَمَا تَهَوَّكَتِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى؟ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً وَلَوْ كَانَ مُوْسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلاَّ إِتِّبَاعِيْ.

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন যখন ওমর (রাঃ) তাঁর কাছে এসে বললেন, আমরা ইহুদীদের নিকটে তাদের অনেক পুরানো ধর্মীয় কাহিনীগুলি, যা আমাদের নিকটে চমৎকার বোধ হয়, তার কিছু কিছু লিখে রাখার জন্য আপনি আমাদের অনুমতি দিবেন কি? তখন জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা কি দিকভ্রান্ত হয়েছ, যেমন ইহুদী-নাছারারা দিকভ্রান্ত হয়েছে? অথচ আমি তোমাদের কাছে এসেছি উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন দ্বীন নিয়ে। যদি আজকে মূসাও বেঁচে থাকতেন, তাহলে তাঁর পক্ষেও আমার অনুসরণ ব্যতীত গত্যন্তর থাকত না’ (আহমাদ, বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, মিশকাত হা/১৭৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭৪

عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ مُرْسَلًا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ رَسُوْلِهِ.

ইমাম মালেক বিন আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইমাম মালেক বিন আনাস (রাঃ) মুরসাল সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন যে, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্তু ছেড়ে গেলাম। তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না, যতদিন তোমরা সে দু’টিকে কঠিনভাবে ধরে থাকবে। সে দু’টি বস্তু হল : আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত’ (মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৮৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭৫

عَنْ حَسَّانَ قَالَ مَا ابْتَدَعَ قَوْمٌ بِدْعَةً فِيْ دِيْنِهِمْ إِلاَّ نَزَعَ اللهُ مِنْ سُنَّتِهِمْ مِثْلَهَا ثُمَّ لاَ يُعِيْدُهَا إِلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

হাসসান বিন আত্বিয়াহ মুহারেবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘যখনই কোন সম্প্রদায় তাদের দ্বীনের মধ্যে কোন বিদ‘আত সৃষ্টি করে, তখনই আল্লাহ তাদের মধ্য হতে সেই পরিমাণ সুন্নাত উঠিয়ে নেন। অতঃপর ক্বিয়ামত অবধি তা আর তাদের মধ্যে ফিরে আসে না’ (দারেমী, মিশকাত হা/১৮৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭৬

عَنْ جَابِرٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالَ فَقَالَ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوْسَى فَاتَّبَعْتُمُوْهُ وَتَرَكْتُمُوْنِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيْلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِيْ لاَتَّبَعَنِيْ.

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন নিহিত, তার কসম করে বলছি, যদি আজ মূসা তোমাদের নিকটে আবির্ভূত হতেন। আর তোমরা তার অনুসরণ করতে এবং আমাকে পরিত্যাগ করতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা সরল পথ হতে বিচ্যুত হতে। যদি মূসা বেঁচে থাকতেন ও আমার নবুঅতকাল পেতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি আমার অনুসরণ করতেন’ (দারেমী, মিশকাত হা/১৯৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭৭

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: مَا كَتَبْنَا عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِلَّا الْقُرْآنَ وَمَا فِيْ هَذِهِ الصَّحِيفَةِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: الْمَدِينَةُ حَرَامٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إِلَى ثَوْرٍ فمنْ أحدَثَ فِيهَا حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ ذمَّةُ المسلميْنَ واحدةٌ يَسْعَى بِهَا أَدْنَاهُمْ فَمَنْ أَخْفَرَ مُسْلِمًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ وَمَنْ وَالَى قَوْمًا بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهِ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلاَ عَدْلٌ.

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

কুরআন এবং এই কাগজে যা আছে তা ব্যতীত আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট হতে আর কিছু লিখে নেইনি। তিনি বলেন, এতে আছে- রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মদীনা হারাম (সম্মানার্হ) আইর হতে সওর পর্যন্ত। যে তাতে কোন বিদ‘আত সৃষ্টি করবে অথবা বিদ‘আত সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দিবে, তার উপর আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত। তার ফরয বা নফল কিছুই কবুল করা হবে না। সকল মুসলমানের প্রতিশ্রুতি এক, তাদের ক্ষুদ্র ব্যক্তিও তার চেষ্টা করতে পারে। অতএব যে ব্যক্তি কোন মুসলামানে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে তার উপর আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের লা‘নত; তার ফরয বা নফল কোনটাই গ্রহণ করা হবে না। আর যে ব্যক্তি নিজের মালিকদের অনুমতি ব্যতীত অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে, তার উপর আল্লাহ্ ও ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের লা‘নত; তার ফরয বা নফল কোনটাই গ্রহণ করা হবে না’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬০৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭৮

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا: كِتَابُ اللهِ، وَسُنَّةُ نَبِيِّهِ الْحَدِيْث.

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে যা ছেড়ে যাচ্ছি, তা শক্তভাবে গ্রহণ করলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হচ্ছে- আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাত’ (আত-তারগীব হা/৬২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৭৯

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رضي الله عنه قَالَ الِاقْتِصَادُ فِي السُّنَّةِ أَحْسَنُ مِنَ الِاجْتِهَادِ فِي الْبِدْعَةِ.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘শরী‘আতে নতুন কাজ সম্পর্কে চিন্তা করার চেয়ে মধ্যম পন্থায় সুন্নাতের উপর আমল করা অতীব উত্তম’ (আত-তারগীব হা/৬৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮০

عَنْ عُمَرَ رضى الله عنه أَنَّهُ جَاءَ إِلَى الْحَجَرِ الأَسْوَدِ فَقَبَّلَهُ، فَقَالَ إِنِّىْ أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّى رَأَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ.

উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি হাজারে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না’ (বুখারী হা/১৫৯৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮১

عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ كُنَّا مَعَ ابْنِ عُمَرَ فِيْ سَفَرٍ، فَمَرَّ بِمَكَانٍ فَحَادَ عَنْهُ، فَسُئِلَ لِمَ فَعَلْتَ؟ فَقَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَعَلَ هَذَا فَفَعَلْتُ.

তাবেঈ মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমরা একদা এক সফরে ইবনু ওমরের সাথে ছিলাম। তিনি এক স্থান দিয়ে পার হওয়ার সময় একটু জায়গা রাস্তা থেকে সরে পার হলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হল- আপনি কেন এরূপ করলেন? তিনি বললেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এই স্থানে এরূপ করতে দেখেছি, তাই আমি করলাম’ (আহমাদ হা/৪৮৭০; তারগীব হা/৭০)। একেই অনুসরণ বলে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮২

عَنْ أَبِيْ بَرْزَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّمَا أَخْشَى عَلَيْكُمْ شَهَوَاتِ الْغَيِّ فِيْ بُطُوْنِكُمْ وَفُرُوْجِكُمْ وَمُضِلَّاتِ الْهَوَى.

আবু বারযাহ আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ব্যাপারে তোমাদের অবৈধ উপার্জনের প্রবৃত্তি এবং অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়ার প্রবৃত্তি সম্পর্কে ভয় করি এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সুন্নাতের ব্যাপারে ভ্রান্ত পথে চলার আশংকা করি’ (মুসনাদু বাযযার হা/৩৮৪৪; আত-তারগীব হা/৭৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩

পরনিন্দা

পরিচ্ছেদঃ

পরনিন্দা

১৮৩

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, তা হচ্ছে- আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র। আর জিজ্ঞেস করা হল, মানুষকে কোন জিনিস সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? তিনি বললেন, তা হচ্ছে- মুখ বা জিহ্বা ও অপরটি লজ্জাস্থান’ (তিরমিযী, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৬২১, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে জিহ্বা। কারণ জিহ্বা দ্বারা মানুষ সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করতে পারে। এর কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমাজে বিশৃংখলা, অশান্তি, অরাজকতা ও নৈরাজ্য নেমে আসে। এজন্য জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করা যরূরী।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮৪

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ يَضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ-

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে (এই অঙ্গীকার করবে যে, সে) তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তুর এবং তার দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর যিম্মাদার হবে তবে আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হব’ (বুখারী, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৬০১)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হবেন। কারণ লজ্জাস্থান হচ্ছে সমাজে অশ্লীলতা বিস্তারের মাধ্যম। এর কারণে মানুষ অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। এসব থেকে বেঁচে থাকার জন্য লজ্জাস্থানের হেফাযত করা আবশ্যক।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮৫

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم تَجِدُوْنَ شَرَّ النَّاسِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِيْ يَأْتِيْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَيَأْتِيْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ঐ ব্যক্তিকে পাবে, যে দ্বিমুখী। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে তাদের কাছে যায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২২; বাংলা মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৬১১)। অত্র হাদীছ দু’টি হতে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জিহ্বা ও লজ্জাস্থান কবীরা গুনাহ সমূহের উৎস। কেননা মানুষ মুখ দ্বারা মিথ্যাচার, গালমন্দ, চোগলখুরী, ধোঁকাবাজি, গীবত-তোহমত, অভিসম্পাৎ প্রভৃতি কবীরা গোনাহ করে থাকে। কিন্তু মানুষ এসব পাপ থেকে সাবধান হওয়ার ন্যূনতম চেষ্টা করে না। এগুলি থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের জিহ্বাকে সংবরণ করা অত্যাবশ্যক। কেননা এগুলির ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘চোগলখোর ও খোটাদানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮৬

عَنْ أَبِيْ الدَّرْدَاءِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ إِنَّ اللَّعَّانِيْنَ لاَ يَكُونُوْنَ شُهَدَاءَ وَلاَ شُفَعَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

আবুদ্দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই অভিশাপকারী কখনো ক্বিয়ামতের মাঠে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হতে পারবে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২০; বাংলা মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৬০৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮৭

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ لَا يُلْقِيْ لَهَا بَالاً يَرْفَعُهُ اللهُ بِهَا دَرَجَاتٍ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ لَا يُلْقِي لَهَا بَالًا يَهْوِيْ بِهَا فِيْ جَهَنَّمَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ لَهُمَا يَهْوِيْ بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনও এমন কথা বলে যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিদ্যমান। অথচ সে তার গুরুত্ব জানে না। আল্লাহ এর দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। পক্ষান্তরে বান্দা এমন কথা বলে, যাতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। অথচ সে তার অনিষ্ট সম্পর্কে অবগত নয়। আর এ কথাই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, এই কথাই তাকে জাহান্নামের এত গভীরে পৌঁছে দেয়, যার পরিধি পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব পরিমাণ’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৮১৩; বাংলা মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৬০২ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)। উল্লিখিত হাদীছ সমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষের যবান সাংঘাতিক জিনিস, যা মানুষকে জান্নাতের উচ্চ শিখরে পৌঁছে দেয়, আবার জাহান্নামের গভীর গহ্বরেও নিক্ষেপ করে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮৮

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ الصِّدْقَ بِرٌّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا وَإِنَّ الْكَذِبَ فُجُورٌ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ كَذَّابًا-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা একটি পুণ্যময় কাজ। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা হচ্ছে পাপকাজ। পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত ৯ম খণ্ড হা/৪৬১৩)। তাই আমাদের সকলের উচিত কথা বলার পূর্বে চিন্তা-ভাবনা করে বলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিপূর্ণ কথা বলার চেষ্টা করা। যাতে আল্লাহর অসন্তোষ রয়েছে, সেসব কথা বলা থেকে বিরত থাকা। অনুরূপভাবে সত্য বলার চেষ্টা করা এবং মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকা। সেই সাথে আল্লাহর যিকরে মশগূল থাকা। আল্লাহর বাণী ‘নিশ্চয়ই যে সকল নারী-পুরুষ বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন’ (আহযাব ৩৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮৯

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ

হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯০

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا الْغِيْبَةُ قَالَ ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِيْهِ مَا أَقُوْلُ قَالَ إِنْ كَانَ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدْ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدْ بَهَتَّهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জান গীবত কি’? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। তিনি বললেন, ‘তোমার কোন ভাই সম্পর্কে এমন কথা বল, যা সে অপসন্দ করে’। জিজ্ঞেস করা হল, আমি যা বলি যদি তা আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে আপনার কি অভিমত? তখন তিনি বললেন, ‘তুমি যা বল তার মধ্যে তা থাকলে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার মধ্যে তা না থাকে যা তুমি বল, তখন তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে’ (মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯১

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ شَرَّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ، وفي رواية إتِّقَاءَ فَحْشِهِ-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদায় সেই ব্যক্তিই মন্দ বলে সাব্যস্ত হবে, যার অনিষ্টের ভয়ে লোকেরা তাকে ত্যাগ করেছে’। অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘যার অশ্লীলতার ভয়ে লোকেরা তাকে পরিত্যাগ করেছে’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯২

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ-

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, নাজাতের উপায় কি? তিনি বললেন, ‘নিজের জিহ্বা আয়ত্তে রাখ, নিজের ঘরে পড়ে থাক এবং নিজের পাপের জন্য রোদন কর’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৮৩৭; বাংলা মিশকাত হা/৪৬২৬, সনদ হাসান)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯৩

عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ كَانَ ذَا وَجْهَيْنِ فِي الدُّنْيَا كَانَ لَهُ لِسَانَانِ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী, ক্বিয়ামতের দিন তার (মুখে) আগুনের দু’টি জিহ্বা হবে’ (দারেমী, মিশকাত হা/৪৮৪৬; বাংলা মিশকাত হা/৪৬৩৩, সনদ হাসান)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯৪

عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلَا بِاللَّعَّانِ وَلَا الْفَاحِشِ وَلَا الْبَذِيْءِ-

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ভর্ৎসনাকারী, অভিসম্পাৎকারী, অশ্লীল গালমন্দকারী ও নির্লজ্জ হতে পারে না’ (তিরমিযী, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৮৪৭; বাংলা মিশকাত হা/৪৬৩৪, সনদ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯৫

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم حَسْبُكَ مِنْ صَفِيَّةَ كَذَا وَكَذَا تَعْنِيْ قَصِيْرَةً فَقَالَ لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ بِهَا الْبَحْرَ لَمَزِجَتْهُ-

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বললাম, ছাফিয়্যা সম্পর্কে আপনাকে এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে, সে এইরূপ এইরূপ। তিনি এটা দ্বারা বুঝাতে চাইলেন যে, তিনি বেঁটে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘যদি তোমার এ কথাকে সমুদ্রের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা সমুদ্রের রং পরিবর্তন করে দেবে’ (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাউদ, মিশকাত হা/৪৮৫৩; বাংলা মিশকাত হা/৪৬৪০, সনদ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯৬

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم اضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ، أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اُصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ.

উবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের পক্ষ হতে আমাকে ছয়টি বিষয়ের জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব। (১) তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। (২) যখন ওয়াদা কর, তা পূর্ণ করবে। (৩) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়, তা আদায় করবে। (৪) নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে। (৫) স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং (৬) স্বীয় হস্তকে (অন্যায় কাজ হতে) বিরত রাখবে’ (আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৮৭০; বাংলা মিশকাত হা/৪৬৫৬, সনদ হাসান)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯৭

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الحَدِيْثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوْا، وَلاَ تَجَسَّسُوْا، وَلاَ تَنَاجَشُوْا، وَلاَ تَحَاسَدُوْا، وَلاَ تَبَاغَضُوْا، وَلاَ تَدَابَرُوْا وَكُوْنُوْا عِبَادَ الله إِخْوَانًا.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কারো সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা হতে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা। কারো কোন দোষের কথা জানতে চেষ্টা কর না। গোয়েন্দাগিরি কর না, ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকাবাজি কর না, পরস্পর হিংসা রেখ না, পরস্পর শত্রুতা কর না এবং একে অন্যের পিছনে লেগ না। বরং পরস্পর এক আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাক। অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘পরস্পর লোভ-লালসা কর না’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বাংলা মিশকাত হা/৪৮০৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯৮

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ صَعِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْمِنْبَرَ فَنَادَى بِصَوْتٍ رَفِيعٍ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ مَنْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الْإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ، لاَ تُؤْذُوْا الْمُسْلِمِيْنَ وَلاَ تُعَيِّرُوْهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهَ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ اَلْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِىْ جَوْفِ رَحْلِهِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বরে আরোহন করে উচ্চৈঃস্বরে বললেন, ‘হে ঐ সকল লোক! যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছে, কিন্তু ঈমান তাদের অন্তরে প্রোথিত হয়নি, তোমরা মুসলমানদেরকে কষ্ট দিয়ো না, তাদেরকে ভর্ৎসনা কর না এবং তাদের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান কর না। কেননা যে তার মুসলিম ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করে বেড়ায়, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করবেন। আর আল্লাহ যার দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করবেন, তাকে অপদস্থ করবেন, সে তার বাহনের পেটের মধ্যে অবস্থান করলেও’ (তিরমিযী হা/২০৩২, হাদীছ হাসান, ‘মুমিনকে সম্মান করা’ অনুচ্ছেদ; বাংলা মিশকাত হা/৪৮২৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯৯

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَمَّا عُرِجَ بِيْ رَبِّيْ مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُوْنَ وُجُوْهَهُمْ وَصُدُوْرَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هؤُلاَءِ يَا جِبْرِيْلُ؟ قَالَ هؤُلاَءِ الَّذِيْنَ يَأكُلُوْنَ لُحُوْمَ النَّاسِ وَيَقَعُوْنَ فِيْ أعْرَاضِهِمْ-

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমার পরওয়ারদেগার যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে গেলেন, তখন আমি কতিপয় লোকের নিকট দিয়ে গমন করলাম, যাদের নখ ছিল তামার। তা দ্বারা তারা নিজেদের মুখমণ্ডল ও বক্ষ আঁচড়াতে ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বললেন, ঐ সকল লোক যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইযযত আব্রুর হানি করত’ (আবুদাউদ, বাংলা মিশকাত হা/৪৮২৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪

সদাচরণ

পরিচ্ছেদঃ

সদাচরণ

২০০

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: إِنَّ اللهَ تَعَالَى رَفِيْقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِيْ عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِيْ عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لَا يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: قَالَ لِعَائِشَةَ: عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ وَالْفُحْشَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُوْنُ فِيْ شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْء إِلَّا شَانَهُ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোমল, তিনি কোমলতাকে ভালবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোন আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না’।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০১

عَنْ جَرِيْرٍ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: مَنْ يُحْرَمُ الرِّفْقَ يُحْرَمُ الْخَيْرَ.

জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

জারীর (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘যাকে কোমলতা ও নম্রতা হতে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০২

عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَرَّ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِى الْحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإِيْمَانِ.

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক আনছারী ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সে তার ভাইকে লজ্জা করার ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিল। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কারণ লজ্জা হল ঈমানের অংশ’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০৩

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِى إِلاَّ بِخَيْرٍ وَفِيْ رِوَايَةٍ : اَلْحَيَاءُ خَيْرٌ كُلُّهُ.

ইমরান ইবনু হুছায়েন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘লজ্জা কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না’। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘লজ্জার সবকিছুই কল্যাণ’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০৪

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ الأُوْلَى إِذَا لَمْ تَسْتَحِى فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ.

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘পূর্ববর্তী নবীগণ হতে লোকেরা যা পেয়েছে এবং আজও যা বিদ্যমান তা হল যখন তোমার লজ্জা থাকবে না, তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫০৭২)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০৫

عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ الأَنْصَارِىِّ قَالَ سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَنِ الْبِرِّ وَالإِثْمِ فَقَالَ الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالإِثْمُ مَا حَاكَ فِىْ صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ.

নাওয়াস ইবনু সাম‘আন আল-আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘একদা আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে নেকী ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘নেকী হল উত্তম চরিত্র আর পাপ হল যে কাজ তোমার অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করে এবং ঐ কাজটি তুমি জনসমাজে প্রকাশ হওয়া অপসন্দ কর’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০৬

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَىَّ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আমার কাছে অধিক প্রিয়, যার চরিত্র ভাল’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫০৭৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০৭

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বপেক্ষা উত্তম, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০৮

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: مَنْ أُعْطِيَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ أُعْطِي حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَنْ حُرِمَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ حُرِمَ حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যাকে নম্রতার কিছু অংশ প্রদান করা হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের বিরাট কল্যাণের অংশ দেওয়া হয়েছে। আর যাকে সেই কোমলতা হতে বঞ্চিত করা হয়েছে তাকে উক্ত ইহকাল ও পরকালের বিরাট কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে’ (শরহু সুন্নাহ, মিশকাত হা/৫০৭৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০৯

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: الْحَيَاءُ مِنَ الإِيْمَانِ وَالإِيْمَانُ فِى الْجَنَّةِ وَالْبَذَاءُ مِنَ الْجَفَاءِ وَالْجَفَاءُ فِى النَّارِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অংশ, আর ঈমানের ফলাফল জান্নাত। পক্ষান্তরে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অংশ, আর দুশ্চরিত্রতার পরিণতি জাহান্নাম’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৭৭, সনদ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১০

عَنْ رَجُلٍ مِنْ مُزَيْنَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا خَيْرُ مَا أُعْطِيَ الْإِنْسَانُ؟ قَالَ: الْخُلُقُ الْحَسَنُ.

মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি থেকে বর্ণিতঃ

একদা ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সর্বোত্তম কোন্ জিনিসটি, যা মানব জাতিকে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, উত্তম চরিত্র (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫০৭৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১১

عَنْ حَارِثَةَ ابْنِ وَهْبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ.

হারেছ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কঠোর ও রুক্ষ্ম স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫০৮০, সনদ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১২

عَنْ أَبِىْ الدَّرْدَاءِ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: إِنَّ أَثْقَلَ شَىْءٍ يُوْضَعُ فِىْ مِيْزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُلُقٌ حَسَنٌ وَإِنَّ اللهَ يَبْغَضُ الْفَاحِشَ الْبَذِىءَ.

আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় সর্বাপেক্ষা ভারী যে জিনিসটি রাখা হবে, তা হল উত্তম চরিত্র। আর আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলভাষী দুশ্চরিত্রকে ঘৃণা করেন’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১৩

عَنْ عَائِشَةَ رَحِمَهَا اللهُ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘ঈমানদার ব্যক্তিরা তাদের উত্তম চরিত্র দ্বারা নফল ছিয়াম পালনকারী ও রাতে ইবাদকারীর মর্যাদা লাভ করবে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫০৮২, সনদ ছহীহ)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১৪

عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ.

আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘তুমি যেখানে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে। কোন কারণে মন্দ কাজ হয়ে গেলে তার পর পরই ভাল কাজ করবে। ভাল কাজ পাপকে মুছে ফেলবে। আর সদাচরণের মাধ্যমে মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকবে’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১৫

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: اَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ وَبِمَنْ تَحْرُمُ النَّارُ عَلَيْهِ عَلَى كُلِّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ قَرِيْبٍ سَهْلٍ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকের সংবাদ দিব না? যার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়; আর আগুনও তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যার মেজায নরম, স্বভাব কোমল, মানুষের নিকটতম (মিশুক) এবং আচরণ সরল সহজ’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১৬

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيْمٌ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ঈমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়’ (তিরমিযী হা/১৯৬৪; মিশকাত হা/৫০৮৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫

আল্লাহর জন্য ভালবাসা

পরিচ্ছেদঃ

আল্লাহর জন্য ভালবাসা

২১৭

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيْلَ فَقَالَ إِنِّىْ أُحِبُّ فُلاَنًا فَأَحِبَّهُ، قَالَ فَيُحِبُّهُ جِبْرِيْلُ ثُمَّ يُنَادِى فِى السَّمَاءِ فَيَقُوْلُ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلاَنًا فَأَحِبُّوْهُ. فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ، قَالَ ثُمَّ يُوْضَعُ لَهُ الْقَبُوْلُ فِى الأَرْضِ. وَإِذَا أَبْغَضَ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيْلَ فَيَقُوْلُ إِنِّىْ أُبْغِضُ فُلاَنًا فَأَبْغِضْهُ، قَالَ فَيُبْغِضُهُ جِبْرِيْلُ ثُمَّ يُنَادِىْ فِىْ أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللهَ يُبْغِضُ فُلاَنًا فَأَبْغِضُوْهُ، قَالَ فَيُبْغِضُوْنَهُ ثُمَّ تُوْضَعُ لَهُ الْبَغْضَاءُ فِى الأَرْضِ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোন ব্যক্তিকে ভালবাসেন, তখন জিবরীলকে ডেকে বলেন, আমি অমুক ব্যক্তিকে ভালবাসি, সুতরাং তুমিও তাকে ভালবাস। অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) তাকে ভালবাসতে থাকেন। তারপর আকাশবাসীকে বলে দেন যে, আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ভালবাসেন। অতএব তোমরা তাকে ভালবাস। তখন আকাশের সকল ফেরেশতা তাকে ভালবাসতে থাকেন। অতঃপর সে ব্যক্তির জন্য যমীনেও জনপ্রিয়তা দান করা হয়। আর আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন তখন জিবরাঈলকে ডেকে বলেন, আমি অমুক ব্যক্তিকে ঘৃণা করি, তুমিও তাকে ঘৃণা কর। তখন জিবরাঈলও তাকে ঘৃণা করেন। এরপর আকাশবাসীকে বলে দেন যে, আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, তোমরাও তাকে ঘৃণা কর। তখন আকাশবাসীরা তাকে ঘৃণা করতে থাকে। অতঃপর তার জন্য যমীনেও মানুষের মনে ঘৃণা সৃষ্টি করা হয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০০৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১৮

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: إِنَّ اللهَ يَقُوْلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّوْنَ بِجَلاَلِى الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِىْ ظِلِّىْ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّىْ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, যারা আমার মর্যাদার খাতিরে পরস্পরে ভালবাসা স্থাপন করেছে, তারা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় স্থান দিব। আজ এমন দিন, আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০০৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১৯

عَنْ أَبِىْ مُوْسَى رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيْرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُّحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيْرِ إِمَّا أَنْ يُّحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيْحًا خَبِيْثَةً.

আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ভাল এবং মন্দ লোকের সাথে বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত যথাক্রমে আতর বিক্রেতা ও কামারের হাঁপরে ফুঁক দানকারীর মত। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু আতর দিতে পারে অথবা তুমি তার নিকট থেকে কিছু কিনে নিতে পার, অন্যথা তুমি তার সুঘ্রাণ পাবেই। আর কামারের হাঁপরের ফুলকি তোমার জামা-কাপড় জ্বালিয়ে দিতে পারে। এটা না হলেও তুমি তার ধোঁয়ার গন্ধ পাবেই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০১০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২০

عَن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ قَالَ اللهُ تَعَالَى: وَجَبَتْ مَحَبَّتِيْ لِلْمُتَحَابِّيْنَ فِيَّ وَالْمُتَجَالِسِيْنَ فِيَّ وَالْمُتَزَاوِرِيْنَ فِيَّ وَالْمُتَبَاذِلِيْنَ فِيَّ.

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পরস্পরকে ভালবাসে, আমার উদ্দেশে সমাবেশে মিলিত হয়, আমার উদ্দেশে পরস্পরে সাক্ষাৎ করে এবং আমার উদ্দেশ্যেই নিজেদের মাল-সম্পদ ব্যয় করে, আমার ভালবাসা তাদের জন্য অবধারিত’ (মালেক, মিশকাত হা/৫০১১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২১

عَنْ الْمِقْدَادِ بْنِ مَعْدِيْكَرِبَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ إِذَا أَحَبَّ الرَّجُلُ أَخَاهُ فَلْيُخْبِرْهُ أَنَّهُ أَحَبَّهُ.

মিকদাদ ইবনু মা‘দীকারাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি অপর কোন (মুসলমান) ভাইকে মহব্বত করে, তখন তাকে যেন জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে মহব্বত করে’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০১৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২২

عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ: لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِىٌّ.

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, ‘ঈমানদার ব্যতীত কাউকেও সাথী হিসাবে গ্রহণ কর না। আর পরহেযগার ব্যতীত অন্য কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫০১৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬

সৃষ্টির প্রতি দয়া

পরিচ্ছেদঃ

সৃষ্টির প্রতি দয়া

২২৩

عَن جَرِيرِ بْنِ عَبْدُ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لَا يَرْحَمُ النَّاسَ

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা সে ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন না যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৪৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২৪

عَن عائشةَ قَالَتْ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ أَتُقَبِّلُوْنَ الصِّبْيَانَ؟ فَمَا نُقَبِّلُهُمْ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أوَ أَمْلِكُ لَكَ أَنْ نَزَعَ اللهُ مِنْ قَلْبِكَ الرَّحْمَةَ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা এক বেদুঈন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমতে আসল (সে দেখল ছাহাবায়ে কেরাম নিজেদের শিশু সন্তানদের চুমু দিয়ে আদর করছেন।) তখন সে বলল, তোমরা কি শিশুদেরকে চুম্বন কর? আমরা তো শিশুদের চুম্বন করি না। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার অন্তর হতে স্নেহ-মমতা বের করে ফেলেন তবে আমি কি তা বাধা দিতে সক্ষম হব?’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৪৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২৫

عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَتْ جَاءَتْنِيْ امْرَأَةٌ مَعَهَا ابْنَتَانِ تَسْأَلُنِيْ فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِيْ غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَحَدَّثْتُهُ فَقَالَ مَنْ يَلِي مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ شَيْئًا فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنْ النَّارِ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা এক মহিলা তার দু’টি কন্যা সাথে নিয়ে আমার কাছে আসল। মহিলাটি আমার কাছে কিছু ভিক্ষা চাইল। তখন আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু ছিল না। আমি তা তাকে দিয়ে দিলাম। সে তা দুই ভাগ করে তার দুই কন্যাকে দিলো এবং নিজে তা থেকে কিছু খেল না। তারপর সে উঠে চলে গেলো। এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাড়িতে প্রবেশ করলেন। আমি ঘটনাটি তাঁর কাছে পেশ করলাম। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি কন্যাদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করে, তাহলে এই কন্যাগণ তার জন্য জাহান্নামের অন্তরাল হবে’ (বুখারী হা/৫৯৯৫; মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৪৯)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২৬

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ هَكَذَا وَضَمَّ أَصَابِعَهُ-

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যার লালন-পালন করবে তাদের পূর্ণ বয়স্কা হওয়া পর্যন্ত, ক্বিয়ামতের দিন সে আমার সাথে এভাবে আসবে। এ বলে তিনি নিজের আঙ্গুলসমূহ একত্রিত করে দেখালেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫০)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২৭

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم السَّاعِيْ عَلَى الْأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِيْنِ كَالْمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَحْسِبُهُ قَالَ يَشُكُّ الْقَعْنَبِيُّ كَالْقَائِمِ لَا يَفْتُرُ وَكَالصَّائِمِ لَا يُفْطِرُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকীনদের সহযোগী আল্লাহর পথে জিহাদকারীর ন্যায় এবং তাহাজ্জুদগুযার ব্যক্তির ন্যায়, যে অলস হয় না এবং এমন ছিয়াম পালনকারীর ন্যায়, যে ইফতার করে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫১)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২৮

عَنْ سَهْلٍ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَأَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيْمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا.

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি ও ইয়াতীম পালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি তরজনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁকা রেখে ইশারা করে দেখালেন’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৯৫২ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২৯

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ فِيْ تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى.

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তুমি ঈমানদারদেরকে তাদের পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়া-অনুগ্রহের ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোন অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন সমস্ত শরীর তার জন্য বিনিদ্র ও জ্বরে আক্রান্ত হয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৩)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৩০

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْمُؤْمِنُوْنَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَى عَيْنُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ وَإِنِ اشْتَكَى رَأْسُهُ اشْتَكَى كُلُّهُ.

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সকল মুমিন এক ব্যক্তির মত, যদি তার চক্ষু অসুস্থ হয় তখন তার সর্বাঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর যদি তার মাথায় ব্যথা হয় তখন তার সমস্ত শরীরই ব্যথিত হয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৪)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৩১

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا ثُمَّ شَبكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ.

আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘একজন মু‘মিন অপর মুমিনের জন্য এক গৃহের মত, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় রাখে। অতঃপর তিনি এক হাতের অঙ্গুলীগুলি অপর হাতের অঙ্গুলীর মধ্যে প্রবিষ্ট করলেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৫)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৩২

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَنَّهُ كَانَ إِذَا أَتَاهُ السَّائِلُ أَوْ صَاحِبُ الْحَاجَةِ قَالَ: اشْفَعُوْا فَلْتُؤْجَرُوْا وَيَقْضِيْ اللهُ عَلَى لِسَانِ رَسُوْلِهِ مَا شَاءَ.

আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যখন কোন ভিক্ষুক বা অভাবী আসত তখন তিনি ছাহাবীদেরকে বলতেন, ‘তোমরা সুপারিশ কর, এতে তোমাদেরকে নেকী দেওয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের মুখ দিয়ে যে ফায়ছালা চান তা জারি করবেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৬)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৩৩

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُوْمًا. فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ أَنْصُرُهُ مَظْلُوْمًا فَكَيْفَ أَنْصُرُهُ ظَالِمًا؟ قَالَ: تَمْنَعُهُ مِنَ الظُّلْمِ فَذَاكَ نَصْرُكَ إِيَّاهُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তুমি তোমার (মুসলমান) ভাইকে সাহায্য কর, চাই সে অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! অত্যাচারিতকে তো সাহায্য করব, কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে সাহয্য করব? তিনি বললেন, তাকে যুলুম করা হতে বিরত রাখ। এটাই হল তার প্রতি তোমার সাহায্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৭)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৩৪

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِىْ حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِىْ حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই, সে তার উপর যুলুম করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবেন না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ- ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৮)।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

No comments

Powered by Blogger.