সহিহ ফাযায়েলে আমল


সহিহ ফাযায়েলে আমল

ফাযায়েলে তাওহীদ

পরিচ্ছেদঃ

শিরকে আসগার

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিব না, যে বিষয়টি আমার কাছে মাসীহ দাজ্জালের চাইতেও ভয়ঙ্কর? সাহাবীগণ বললেন : হ্যাঁ। তিনি বললেন : তা হচ্ছে গোপন শিরক। (এর উদাহরণ হলো) একজন মানুষ দাঁড়িয়ে শুধু এ জন্যই তার সালাতকে খুব সুন্দরভাবে আদায় করে যে, কোন মানুষ তার সালাত দেখছে। (ইবনু মাজাহ হা/৪২০৪। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।)

হাদিসের মানঃহাসান হাদিস

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি কাউকে দেখাবার উদ্দেশ্যে সলাত পড়লো সে শির্‌ক করলো, যে ব্যক্তি কাউকে দেখাবার উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করলো সে শির্‌ক করলো, যে ব্যক্তি অপরকে দেখাবার উদ্দেশ্যে সদাক্বাহ করলো সে শির্‌ক করলো (আহমাদ হা/১৭১৪০, ত্বাবারানী কাবীর হা/৬৯৯৩)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তিকে কা’বা ঘরের শপথ করতে শুনে বললেন, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর শপথ করবে না। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে সে কুফরী করলো বা শির্‌ক করলো। (তিরমিযী হা/১৫৩৫, হাকিম, সহীহাহ হা/২০৪২। ইমাম তিরমিযী বলেন : এই হাদীসটি হাসান। ইমাম হাকিম ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে জিনিস তোমার উপকারে আসবে তার দিকে অগ্রসর হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও আর অক্ষমতা প্রকাশ করো না। যদি তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে তাহলে এ কথা বলো না : ‘যদি আমি এ রকম করতাম তাহলে অবশ্যই এমন হতো।’ বরং তুমি এ কথা বলো : ‘আল্লাহ্ যা তাক্বদীরে রেখেছেন এবং ইচ্ছা করেছেন তাই হয়েছে।’ কেননা ‘যদি’ কথাটি শয়তানের জন্য কুমন্ত্রণার পথ খুলে দেয়। (সহীহ মুসলিম, আহমাদ)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক মুসলিম ব্যক্তি স্বপ্নে এক ইয়াহুদী ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করলে ইয়াহুদী লোকটি তাকে বললো। তোমরা অত্যন্ত ভাল জাতি যদি না তোমরা শির্‌ক করতে। তোমরা বলে থাকো- ‘আল্লাহ্ যা চান এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) যা চান।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে এ স্বপ্নের কথা বলা হলে তিনি বলেন : “আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের এ বিষয় সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত আছি তোমরা সেভাবে কথা না বলে এভাবে বলো : “আল্লাহ্ এককভাবে যা চান অতঃপর মুহাম্মাদ (সাঃ) যা চান।” (ইবনু মাজাহ হা/২১১৮, সিলসিলাহ সহীহাহ হা/১৩৭ : শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে কোন বিষয়ে কথা বলার প্রসঙ্গে বললো : ‘আল্লাহ্ এবং আপনি যা চান। লোকটির এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন : ‘তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে নিলে?।” (তাফসীর ইবনু কাসীর, আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৩৯)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কোন কিছুকে অশুভ মনে করা শির্‌ক। (আহমাদ হা/৩৬৮৭, শায়খ আলবানী ও ইবনু হিব্বাস একে সহীহ বলেছেন)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী পণ্ডিত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কাছে এসে বললো; ‘হে মুহাম্মাদ! আমরা তাওরাত কিতাবে দেখেছি যে, আল্লাহ্ তা’আলা সাত আসমানকে এক আঙ্গুলে এবং যমীনসমূহকে এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজিকে এক আঙ্গুলে, পানি এক অঙ্গুলের, ভুতলের সমস্ত জিনিসকে এক আঙ্গুলে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে এক আঙ্গুলে রেখে বলবেন : আমিই সম্রাট।’ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইয়াহুদী পণ্ডিতের কথার সমর্থনে এমনভাবে হেসে দিলেন যে, তাঁর দাঁত মোবারক দেখা যাচিছল। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন : “তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা নিরূপণ করতে পারেনি। ক্বিয়ামাতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে।” (সূরাহ আয-যুমার : ৬৮)
(২) আল্লাহ্ পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে রাখবেন। অতঃপর এগুলোকে ঝাকুনি দিয়ে বলবেন : আমিই রাজাধিরাজ, আমিই আল্লাহ। (সহীহ মুসলিম)
(৩) আল্লাহ্ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন। পানি এবং ভুতলে যা কিছু আছে তা এক আঙ্গুলে রাখবেন। (সহীহুল বুখারী)
(৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন। অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে বলবেন : আমিই বাদশাহ। অত্যাচারী ও যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়? অতঃপর সমস্ত পৃথিবীগুলোকে ভাঁজ করবেন। অতঃপর সেগুলোকে বাম হাতে নিয়ে বলবেন : আমিই মহারাজ। অত্যাচারী ও যালিমরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়?। (সহীহ মুসলিম)
(৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : সাত আসমান এবং সাত যমীন আল্লাহ্ তা’আলার হাতের তালুতে ঠিক যেন তোমাদের কারো হাতে একটি সরিষার দানার মত। (তাফসীর ইবনু জারীর আত-তাবারী)
(৬) ‘আবদুল্লাহ্ বিন যায়িদ (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কুরসীর মধ্যে সাত আকাশের অবস্থান যেন একটি ঢালের মধ্যে নিক্ষিপ্ত সাতটি দিরহামের ন্যায়। আর ‘আরশের মধ্যে কুরসীর অবস্থান ঠিক তেমন, যেমন খোলা ময়দানে পড়ে থাকা একটি আংটি। (তাফসীর ইবনু কাসীর)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : “ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই ব্যক্তি পাবে যার কাছে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সর্বাধিক প্রিয়।” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আরো বলেন : “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় হই।” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১

‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে আমার নিজের আত্মা ব্যতীত সব চাইতে ভালবাসি। তখন নাবী (সাঃ) বললেন : ঐ সত্ত্বার কসম করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার নিকট তোমার আত্মার চাইতে প্রিয় না হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন নও। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন: এখন আপনি আমার আত্মার চেয়েও অধিক প্রিয়। (সহীহুল বুখারী)

ক্বিয়ামাতের দিন মহান আল্লাহ্ বান্দাকে বলবেন : অন্যায় কাজ দেখার পর কোন জিনিস তোমাকে তা পরিবর্তন করতে বাধা দিল? তখন বান্দা বলবে, হে প্রতিপালক! মানুষের ভয়ে তা করিনি। আল্লাহ্ বলবেন : মানুষের চেয়ে আমিই তো ভয়ের অধিকতর হক্বদার ছিলাম। (ইবনু মাজাহ্)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন : “তোমরা আমার মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করো না যেমন প্রশংসা করেছিল নাসারারা ঈসা ইবনু মারইয়ামের ব্যাপারে। আমি তো আল্লাহ্ বান্দা মাত্র। তাই তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বলবে।” (সহীহুল বুখারী)

এর অর্থ হল, তোমরা আমার মিথ্যা প্রশংসা করো না, আর আমার প্রশংসা জ্ঞাপনে সীমা অতিক্রম করো না। যেমন নাসারারা ঈসা (আঃ)- এর সীমালঙ্ঘন করেছিল, অতঃপর তারা তাঁর উলুহিয়্যাতের দাবী করেছিল। আর তোমরা আমার সেই গুণ বর্ণনা করো যে গুণে আমার প্রতিপালক আমাকে গুণান্বিত করেছেন। সুতরাং তোমরা বল : আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা কিছু লোক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলতে শুরু করলো : হে আল্লাহর রাসূল! হে আমাদের সরদার, হে আমাদের সরদার তনয়! এসব শুনে নাবী (সাঃ) বললেন : “হে লোকেরা! তোমরা আজ পর্যন্ত আমাকে যেভাবে ডাকতে সেভাবে ডাক। শয়তান যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলতে না পারে। আমি তো মুহাম্মাদ। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আল্লাহ্ আমাকে যে স্থান ও মর্যাদা দিয়েছেন, তোমরা আমাকে তার চাইতে উঁচু স্থানে উঠাতে চেও না-এটা আমি পছন্দ করি না।”

[ নাবী (সাঃ) সার্বিকভাবে তাদের মধ্যে উত্তম এবং সৃষ্টির সেরা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ব্যাপারে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা অপছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি আল্লাহর একত্ববাদ রক্ষার্থে এবং তাঁর অধিকারের ব্যাপারে সীমালঙ্খন ও বাড়াবাড়ি থেকে তাদেরকে দূরে রাখার জন্য এরূপ বলতে নিষেধ করেন। তিনি তাদেরকে এমন দুটি গুণের দ্বারা তাঁর প্রশংসা করতে বলেন, যা বান্দার জন্য সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। যাতে কোন বাড়াবাড়ি নেই এবং আক্বীদাহ্ বিশ্বাসের প্রতি ক্ষতিকর আশংকা নেই। তা হলো : ‘আবদুল্লাহ্ ওয়া রাসূলূহু অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল – লেখক ]

নাসায়ী ‘সুনানুল কুবরা’ হা/১০০৭৮, আহমাদ হা/১৩৫৯৬, ১৩৫৩০, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

ফাযায়িলে কালেমা

১৪ - ৭২

পরিচ্ছেদঃ

ইসলাম গ্রহণ ও ঈমান আনার ফাযীলাত

১৪

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল। যে কোন বান্দা সন্দেহাতীতভাবে এই বাক্য দু’টির ওপর ঈমান আনবে, সে আল্লাহ্‌র সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৪৮- তাহক্বীক্ব শু’আইব আরনাউত্ব ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ : হাদীস সহীহ : তাহক্বীক্ব শায়খ আহমাদ শাকির : এর সানাদ সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫

‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন: হে খাত্তাবের পূত্র ! যাও, লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, কেবলমাত্র ঈমানদার লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। ‘উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি বের হলাম এবং ঘোষণা করলাম : শুনে রাখো, ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [১]

[১] হাদীস সহীহ ; সহীহ মুসলিম হা/৩২৩, তাহক্বীক্ব আলবানী : হাদীস সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৬

‘উক্ববাহ্ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং পরকালের প্রতি ঈমান রেখে মারা যাবে, তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের আটটি দরজার মধ্যকার যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করো।” (আহমাদ হা/৯৭- শায়খ শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : হাদীসটি হাসান লিগাইরিহি। এর শাওয়াদিহ বর্ণনা রয়েছে)

হাদিসের মানঃহাসান লিগাইরিহি

১৭

সুফিয়ান ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ইসলামের এমন একটি কথা বলে দিন যা আপনার পরে বা আপনি ছাড়া অন্য কাউকে আমি জিজ্ঞেস করবো না। তিনি (সাঃ) বললেন : তুমি বলো : আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অতঃপর এরই উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।” (সহীহ মুসলিম হা/১৬৮)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৮

‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি বলে : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আর নিশ্চয়ই ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা, তাঁর বান্দীর (মারইয়ামের) পুত্র ও তাঁর সেই কালেমা যা তিনি মারইয়ামকে পৌঁছিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ হতে প্রেরিত একটি রূহ মাত্র, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য” - তাকে জান্নাতের আটটি দরজার যেটি দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে, প্রবেশ করাবেন।

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৩১৮০

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “তার ‘আমল যা-ই হোক না কেন আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (সহীহুল বুখারী হা/৩১৮০, সহীহ মুসলিম হা/১৫০)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৯

আবূ বুরদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। এক, ঐ ব্যক্তি যে আহলে কিতাবের অন্তর্ভূক্ত নিজের নাবীর (আ) উপর ঈমান এনেছে আবার মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপরও ঈমান এনেছে। দুই, ঐ ক্রীতদাস যে মহান আল্লাহর হক আদায় করার পাশাপাশি স্বীয় মুনিবের হকও আদায় করে। তিন, ঐ ব্যক্তি যার কোন ক্রীতদাসী রয়েছে। আর সে তাকে উত্তম আদব শিখিয়েছে এবং উত্তমরূপে ইলম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে।

হাদীস সহীহ্ : সহীহুল বুখারী হা/৯৫- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ মুসলিম হা/৪০৪, আহমাদ হা/১৯৫৩২- তাহক্বীক্ব শু’আইব আরনাউত্ব : সানাদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। আহমাদ শাকির বলেন : সানাদ সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২০

মাঈয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, সকল আমলের মধ্যে সর্বোত্তম ‘আমল কোনটি? তিনি (সাঃ) বললেন : আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা, যিনি একক। এরপর আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করা, অতঃপর কবুল হাজ্জ। এ ‘আমলগুলো ও অন্যান্য আমলের মধ্যে ফাযীলাতের দিক দিয়ে এই পরিমাণ ব্যবধান রয়েছে যে পরিমাণ ব্যবধান রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার দূরত্বের মাঝে।” [১]

[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/১৯০১০, শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : হাদীস সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২১

‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল” আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। [১]

[১] হাদীস সহীহ্ : সহীহ্ মুসলিম হা/১৫১শির্‌ক

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২২

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

“নাবী (সাঃ) বলেন: যে কোন বান্দা এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেন। তখন মু’আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এ সুসংবাদ জানিয়ে দিব না? তিনি (সাঃ) বললেন, তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করে থাকবে (‘আমল ছেড়ে দেবে)। অতঃপর মু’আয (রাঃ) স্বীয় মৃত্যুর সময় (ইলম গোপন করার গুনাহের ভয়ে) এ হাদীস বর্ণনা করেন।”

তিরমিযী হা/৩৩৮৩, ইবনু মাজাহ্ হা/৩৮০০, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

হাদিসের মানঃহাসান হাদিস

২৩

আবূ ‘আমরাহ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল। আর আমি আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিচ্ছি- যে কোন বান্দা এ (কালেমা) দু’টির প্রতি ঈমান রেখে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, এ দুটো অবশ্যই তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে। [১]

[১] সহীহ লিগাইরিহি : ইবনু হিব্বান হা/২২১- হাদীসের শব্দাবলী তার- তাহক্বীক্ব আলবানী : সহীহ লিগাইরিহি।

হাদিসের মানঃসহিহ লিগাইরিহি

২৪

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : যে কোন ব্যক্তি এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, সে খাঁটি অন্তরে এই সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল”- আল্লাহ তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন। [১]

[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/২১৯৯৮- আলবানী : হাসান সহীহ্

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৫

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো যে, সে আল্লাহর প্রতি আন্তরিক ও মুখলেস ছিল, যিনি অদ্বিতীয়, যার কোন শরীক নেই, এবং সলাত ক্বায়িম করেছে, যাকাত দিয়েছে। সে তো এরূপ অবস্থায় বিদায় নিলো যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তষ্ট। এটাই হলো আল্লাহর দ্বীন, যা নিয়ে রাসূলগণ আগমন করেছিলেন এবং তাদের রবের পক্ষ হতে প্রচার করেছেন।

মুস্তাদরাক হাকিম হা/৩২৩৫। ইমাম হাকিম বলেন : এই হাদীসের সানাদ সহীহ। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৬

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা কিছু সংখ্যক মুশরিক লোক যারা মুশরিক অবস্থায় ব্যাপকহারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং যেনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছে তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো : আপনি যা বলেন এবং যে দিকে আহ্বান করেন তা খুবই উত্তম। তবে আমাদেরকে বলুন, অতীত জীবনে আমরা যে সমস্ত মন্দ কাজ করেছি তা মুছে যাবে কিনা? (তাহলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করবো)। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো : “যে সমস্ত লোক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ্ মানেনা, আল্লাহর হারাম করা কোন প্রাণকে অকারণে হত্যা করে না এবং যেনা করে না। যারা ঐসব কাজে লিপ্ত হবে তারা নিজেদের পাপের প্রতিফল পাবে”- (সূরাহ্ আল-ফুরক্বান : ৬৮)। আরো অবতীর্ণ হলো : “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছো, তারা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, তিনি তো ক্ষমাশীল”- (সূরাহ্ আয-যুমার : ৫৩)

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/ ৩৩৭-হাদীসের শব্দাবলী তার।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৭

‘আমার ইবনু ‘আবাসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা অত্যন্ত বৃদ্ধ একটি লোক তার লাঠির উপর ভর করে নাবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! (কাফির অবস্থায়) আমি বহু ওয়াদা ভঙ্গ করেছি এবং অসংখ্য পাপ কাজ করেছি, সুতরাং আমার ক্ষমার ব্যবস্থা আছে কি? তিনি (সাঃ) জবাবে বললেন : তুমি কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই? লোকটি বললো, হ্যাঁ, আর আমি এ সাক্ষ্যও দেই যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। নাবী (সাঃ) বললেন : তাহলে তো তোমার সমস্ত ওয়াদা ভঙ্গ ও গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।

আহমাদ হা/১৯৪৩২, তাহক্বীক্ব শু’আইব : হাদীসটি সহীহ এর শাওয়াহিদ দ্বারা। এছাড়া আরো বহু শাহেদ বর্ণনা রয়েছে)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

২৮

ইবনু শিমাসাহ আল-মাহরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) যখন মৃত্যু শয্যায় ছিলেন, আমরা তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদলেন এবং দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবছিলেন। তার ছেলে বলতে লাগলো, হে আব্বা, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কি আপনাকে এই সুসংবাদ দেননি? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে বললেন, অবশ্যই আমরা যা কিছু পুঁজি সঞ্চয় করেছি তন্মধ্যে “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল”- সবচেয়ে উত্তম সঞ্চয়। আমি আমার জীবনে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করে এসেছি। (প্রথম পর্যায়) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রতি আমার চেয়ে অধিক বিদ্বেষ পোষণ করতে আর কাউকে দেখিনি। তখন আমার ইচ্ছা ছিল যে, যদি আমি সুযোগ পাই তাহলে তাঁকে হত্যা করে মনের ঝাল মেটাব। (দ্বিতীয় পর্যায় হলো) অতঃপর যখন আল্লাহ্ আমার অন্তরে ইসলামের প্রেরণা ঢেলে দিলেন, আমি নাবী (সাঃ)-এর কাছে এসে বললাম, আপনার ডান হাত প্রসারিত করুন। আমি আপনার কাছে বাই’আত করবো। তিনি তাঁর ডান হাত প্রসারিত করলে আমি আমার হাতখানা টেনে নিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে ‘আমর! তোমরা কি হয়েছে? আমি বললাম, আমি কিছু শর্ত করতে চাই। তিনি বললেন : তুমি কি শর্ত করতে চাও। আমি বললাম, আমি এই শর্ত করতে চাই যে, আমাকে ক্ষমা করা হোক। তিনি বললেন : হে ‘আমর! তুমি জান না ইসলাম পূর্বেকার সমস্ত অপরাধ ধ্বংস করে দেয়? অনুরূপভাবে হিজরাত ও হাজ্জের দ্বারাও পূর্বের সমস্ত অপরাধ ধ্বংস হয়ে যায়? তখন থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় ছিলো না। তার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার এমনি এক প্রভাব ছিলো যে, আমি কখনো তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে স্থির থাকতে পারতাম না। যদি কেউ আমাকে তাঁর দৈহিক সৌষ্ঠবের বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ করতো তাও আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু হতো তাহলে আমি আশা করতে পারতাম যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত। (তৃতীয় পর্যায় হলো) অতঃপর আমার ওপর বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব ন্যাস্ত হলো। আমি অবগত নই যে, এগুলোর মধ্যে আমার অবস্থা কেমন?। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ্ মুসলিম হা/৩৩৬

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

ইসলাম গ্রহণে অতীতের সৎ ‘আমল নষ্ট হয় না

২৯

হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, যে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বলুন, জাহিলী যুগে ভাল কাজ মনে করে আমি যে দান-খয়রাত করেছি, দাস মুক্ত করেছি বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেছি, তার জন্য কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে কি? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন : তুমি অতীত জীবনে যে সব সাওয়াবের কাজ করেছো তা সহকারেই তুমি মুসলিম হয়েছো। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ্ মুসলিম হা/৩৩৯

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

ইসলাম গ্রহণ নিরাপত্তার বিধান দেয়

৩০

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলছেন : আমি মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি যতক্ষণ না তারা এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহামাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত ক্বায়িম করবে এবং যাকাত দিবে। তারা যদি এটা করে তাহলে আমার পক্ষ থেকে তাদের রক্ত ও সম্পদের নিরাপত্তার ঘোষণা রইল। তবে ইসলামের হাক্ব ব্যতীত। তাদের হিসাব্ আল্লাহর উপর। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/২৪, সহীহ মুসলিম হা/১৩৫

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩১

হাকিম ইবনু হিযাম থেকে বর্ণিতঃ

“আল্লাহর শপথ! আমি জাহিলী যুগে যেসব নেক কাজ করেছি তা কখনো পরিত্যাগ করবো না, বরং ইসলামের মধ্যেও অনুরূপ করবো।” (সহীহ মুসলিম হা/৩৪০)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩২

হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ থেকে বর্ণিতঃ

“হাকিম হিযাম জাহিলী যুগে একশো দাস মুক্ত করেছেন এবং সওয়ারীর জন্য একশো উট দান করেছিলেন। অতঃপর মুসলিম হওয়ার পরও পুনরায় একশো দাস মুক্ত করেছেন এবং আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য একশো উট দান করেছেন। অতঃপর নাবী (সাঃ)-এর নিকট আসলেন।” হাদীসের বাকী অংশ পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। (সহীহ মুসলিম হা/১৪১)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

নাবী (সাঃ)- কে না দেখে ঈমান আনার ফাযীলাত

৩৩

আবূ ‘আবদুল রহমান জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় দুইজন আরোহীকে আসতে দেখা গেলো। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাদেরকে দেখে বললেন, এদেরকে কিন্দা ও মাযহিজ গোত্রের মনে হচ্ছে। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলো, তখন তাদের সাথে মাযহিজ গোত্রের কিছু লোকও ছিল।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর দুই আগুন্তুকের মধ্যকার একজন বাই’আত গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকটবর্তী হলো। যখন তিনি তাঁর (সাঃ) হাত নিজের হাতে নিলেন তখন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি আপনার সাথে সাক্ষ্যৎ করলো এবং আপনার উপর ঈমান আনলো, আপনাকে সত্য বলে মানলো এবং আপনার অনুসরণ করলো সে কি পাবে? তিনি (সাঃ) বললেন : তার জন্য সুসংবাদ (মোবারকবাদ)। অতঃপর লোকটি তাঁর হাতের উপর হাত বুলিয়ে বাই’আত গ্রহণ করে চলে গেলো।
অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তি অগ্রসর হলো। সেও বাই’আত গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর হাত নিজের হাতে রেখে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি আপনাকে না দেখে আপনার উপর ঈমান আনলো, আপনাকে সত্য বলে মানলো এবং আপনার অনুসরণ করলো সে কি পাবে? তিনি (সাঃ) বললেন : তার জন্য সুসংবাদ, তার জন্য সুসংবাদ, তার জন্য সুসংবাদ। অতঃপর এ লোকটিও তাঁর হাতের উপর নিজের হাত বুলিয়ে বাই’আত গ্রহণ করে চলে গেলো। [১]

[১] সানাদ হাসান :আহমাদ হা/ ১৭৩৮৮- হাদীসের শব্দাবলী তার- তাহক্বীক্ব শু’আইব আরনাউত্ব : সানাদ হাসান।

হাদিসের মানঃহাসান হাদিস

৩৪

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার প্রতি ঈমান এনেছে তার জন্য একবার সুসংবাদ। আর যে ব্যক্তি আমাকে দেখে নাই, তথাপি আমার প্রতি ঈমান এনেছে তার জন্য সাত বার (বারবার) মোবারকবাদ।”

আহমাদ হা/১২৫৭৮- তাহক্বীক্ব শু’আইব আরনাউত্ব : সানাদ দুর্বল, তবে হাদীসটি হাসান লিগাইরিহি। এছাড়া আবূ ইয়ালা হা/৩৩৯১। হাদীসটির শাওয়াহিদ বর্ণনা আছে। তন্মধ্যে আবূ সাঈদ খুদরী হতে এর শাহিদ হাদীস রয়েছে আহমাদ হা/১১৬৭৩

হাদিসের মানঃহাসান লিগাইরিহি

৩৫

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আমার আকাঙ্খা হয়, যদি আমার ভাইদের সাথে অমার সাক্ষ্য হতো! তখন নাবী (সাঃ)-এর সাহাবীগণ বলেন : আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি (সাঃ) বললেন : “তোমরা তো আমার সাহাবী। আমার ভাই হলো তারা, যারা আমাকে না দেখে আমার উপর ঈমান আনবে।”

আহমাদ হা/১২৫৭৯, আবূ ইয়ালা হা/৩৩৯০, ত্বাবারানী আওসাত হা/৫৪৯০। শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : সানাদ দুর্বল, তবে হাদীসটি হাসান লিগাইরিহি। এর শাহেদ হাদীস রয়েছে।

হাদিসের মানঃহাসান লিগাইরিহি

৩৬

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

একদা কিছু লোক “আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর সামনে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাহাবীদের ঈমান সম্পর্কে আলোচনা করলো তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, যারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে দেখেছেন তাদের সামনে তাঁর সত্যতা একেবারেই সুস্পষ্ট ছিল। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। সবচেয়ে উত্তম ঈমান হলো ঐ ব্যক্তির যে না দেখে ঈমান এনেছে। অতঃপর এর প্রমাণে তিনি এ আয়াত পড়লেন : “আলিফ, লাম-মীম, এটা এমন কিতাব যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। মুত্তাকীনদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ, যারা গায়েবের প্রতি ঈমান রাখে।”

মুস্তাদরাক হাকিম হা/২৯৮৮। ইমাম হাকিম বলেন : এই হাদীস বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

যে ‘আমলের দ্বারা ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়

৩৭

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ)- কে বলেছেন। তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই পাবে। এক, তার অন্তরে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে বেশি হবে। দুই, যে কোন ব্যক্তির সাথে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে। তিন, ঈমানের পর কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া তার কাছে এরূপ অপছন্দনীয় যেরূপ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৬৪২৮- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ সহীহ মুসলিম হা/১৭৪

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৩৮

‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) - কে বলতে শুনেছেন: যে ব্যক্তি সন্তুষ্টিচিত্তে আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে নিজের দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) - কে রাসূল হিসেবে মেনে নিয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করেছে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৬০

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- বলার ফাযীলাত

৩৯

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : ইবনু হিব্বান হা/২০১, সিলসিলাহ্ সহীহাহ হা/২৩৫৫- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪০

মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এর সাক্ষ্য দিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (ইবনু হিব্বান, আবূ নু’আইম, আহমাদ। এর সানাদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। সিলসিলাহ্ সহীহাহ্ হা/২৩৫৫)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪১

‘ইতবান বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে, ক্বিয়ামাতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।” (আহমাদ হা/১৬৪৮২, সহীহুল বুখারী, সহীহ্ মুসলিম, বায়হাক্বীর ‘আসমা ওয়াস সিফাত’ ও দূররে মানসুর)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪২

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) তাকে বললেন। লোকদের মাঝে ঘোষণা দাও : “যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই”- সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বাযযার, সহীহ্ জামিউল সাগীর হা/৮৫১- তাহক্বীক্ব আলবানী : সহীহ)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৩

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : ঈমানের সত্তর বা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৮, সহীহ মুসলিম হা/১৬২-০, কোন বর্ণনায় রয়েছে : ‘সবচেয়ে উঁচু শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং কোন বর্ণনায় রয়েছে : ‘সবচেয়ে বড় শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ অনুরূপ। যেমন ত্বাবারানীতে বর্ণিত হয়েছে।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৪

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেন : সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এবং সর্বোত্তম দু’আ হলো ‘আল-হামদুলিল্লাহ্’। [১]

[১] হাদীস সহীহ : তিরমিযী হা/৩৩৮৩, ইবনু মাজাহ হা/৩৮০০, ইবনু হিব্বান, নাসায়ী, মুস্তাদরাক হাকিম হা/১৮৩৪ যাহাবীর তা’লীক্বসহ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৫

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : নূহ (আঃ) স্বীয় ইন্তিকালের সময় তাঁর দুই ছেলেকে ডেকে বলেছেন : আমি তো অক্ষম হয়ে পড়েছি। তাই আমি তোমাদেরকে অসিয়ত করে যাচ্ছি। আমি তোমাদেরকে দু’টি বিষয়ে আদেশ করছি এবং দু’টি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। আমি তোমাদেরকে শির্‌ক এবং অহংকার থেকে নিষেধ করছি। আর যে দুটি বিষয়ে আদেশ করছি তার একটি হলো : “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”। কেননা সমস্ত আসমান ও যমীন এবং এর মাছে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” রাখা হয়, তাহলে কালেমার পাল্লাই ঝুলে যাবে (ভারি হবে)। আর যদি সমস্ত আসমান-যমীন (সাত আকাশ ও সাত যমীন) এবং এর মধ্যকার যা কিছু আছে, একটি হালকা বা গোলাকার করে তার উপর এ কালেমাকে রাখা হয় তাহলে ওজনের কারণে তা ভেঙ্গে যাবে। আর আমি তোমাদেরকে আদেশ করছি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামাদিহি’ (পাঠ করার জন্য), কেননা এটা প্রত্যেক বস্তুর তাসবীহ, এর দ্বারাই প্রত্যেক বস্তুকে রিযিক্ব দেয়া হয়। [১]

[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/৬৫৮৩, ৭১০১- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৬

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন : একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ক্বিয়ামাতের দিন আপনার শাফা’আত দ্বারা কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন : হাদীসের প্রতি তোমার আগ্রহ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তোমার আগে এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞেস করবে না। (অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন: আমার শাফায়া’আত দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ঐ ভাগ্যবান ব্যক্তি যে অন্তরের ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে।’

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৯৭- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ আহমাদ হা/৮৮৫৮

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৭

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে একদিন না একদিন এই কালেমা অবশ্যই তার উপকারে আসবে। যদিও ইতিপূর্বে তাকে কিছুটা শাস্তি ভোগ করতে হবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : বাযযার হা/৮২৯২- হাদীসের শব্দাবলী তার, ত্বাবারানীর কাবীর হা/১৪০, ৭৩৩, ১১১১, সহীহ আত-তারগীব হা/১৫২৫। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আল্লামা হায়সামী ‘মাজমাউয যাওয়ায়িদ’ গ্রন্থে (হা/১৩) বলেন : এর রিজাল সহীহ্ রিজাল।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৮

আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি এই কালেমা গ্রহণ করবে যা আমি আমার চাচার (আবূ ত্বালিবের) কাছে পেশ করেছিলাম এবং তিনি তা প্রত্যাখান করেছিলেন, সেই কালেমা এই ব্যক্তির নাজাতের উপায় হবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/২০শির্‌ক শু’আইব আরনাঊত্ব বলেন : বর্ণনাটি সহীহ এর শাওয়াহিদ দ্বারা।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৪৯

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে এই কালেমা তাকে ঐ সময়ে মুক্তি দিবে যখন তার উপর মুসিবত আসবে।” (সিলসিলাহ সহীহাহ্ হা/ ১৯৩২)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫০

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন : এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে যবের দানার ওজন পরিমাণও কল্যাণ (ঈমান) থাকবে। এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে গমের দানার ওজন পরিমাণও কল্যাণ থাকবে। অতঃপর এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে অণু পরিমাণও কল্যাণ থাকবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৬৮৬১- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ সহীহ মুসলিম হা/৪৯৯

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫১

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: মহান আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে সমস্ত হাশরবাসীর সামনে আলাদা করে এনে উপস্থিত করবেন। তিনি তার সামনে ৯৯টি ‘আমলনামার খাতা খুলে ধরবেন। প্রতিটি খাতা দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি এসব ‘আমলনামার কোন কিছুকে অস্বীকার করো। ‘আমলনামা লিখার কাজে নিয়োজিত আমার ফিরিশতারা কি তোমার উপর কোন জুলুম করেছে? সে বলবে, না। অতঃপর প্রশ্ন করা হবে, এ সমস্ত গুনাহের পক্ষে তোমার একটি নেকী আমার কাছে রয়েছে। আজ তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না। অতঃপর একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে, যাতে লিখা থাকবে : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।’ বলা হবে, যাও এটাকে ওজন করে নাও। সে আরজ করবে, এতোগুলো দফতরের মোকাবেলায় এই সামান্য কাগজের টুকরা কি কাজে আসবে। বলা হবে, আজ তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না। অতঃপর ঐ দফতরগুলোকে এক পাল্লায় রাখা হবে এবং অপর পাল্লায় কাগজের ঐ টুকরাটি রাখা হবে। তখন দফতরওয়ালা পাল্লাটির মোকাবেলায় ঐ কাগজের টুকরার পাল্লাটি ওজনে ভারি হয়ে যাবে। আসল কথা হলো, আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন কিছুই ভারি হতে পারে না। [১]

[১] হাদীস সহীহ : তিরমিযী হা/২৬৩৯

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫২

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কোন বান্দা এমন নেই যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আর তার জন্য আকাশসমূহের দরজাগুলো খূলে যায় না। এমনকি এ কালেমা সোজা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবে শর্ত হচ্ছে, এর পাঠকারী কবীরাহ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকবে। [১]

[১] হাদীস হাসান : তিরমিযী হ/৩৫৯০- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ জামিঊস সাগীর হা/৫৬৪৮। ইমাম তিরমিযী বলেন। এ সূত্রে হাদীসটি হাসান ও গরীব। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

হাদিসের মানঃহাসান হাদিস

৫৩

হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কাপড়ের কারুকার্য যেমন মুছে যায় তেমনি ইসলামও এক সময় অস্পষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি লোকেরা এটাও জানবে না যে, সিয়াম কি, সলাত কি, কুরবানী কি এবং সদাক্বাহ কি জিনিস। একটি রাত আসবে যখন অন্তরসমূহ থেকে কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবে এবং যমীনের উপর কুরআনের একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকবে না। তখন মানুষদের মধ্যে একদল বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা অবশিষ্ট থাকবে। তারা বলবে, আমরা আমাদের বাপ-দাদার (পূর্ব পুরুষের) কাছ থেকে এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” শুনেছিলাম, সেজন্য আমরাও এই কালেমা পাঠ করি। তখন সিলাহ্ বিন যুফার হুযাইফাহ (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলো, তারা যেহেতু ঐ সময় সলাত, সিয়াম, কুরবানী এবং সদাক্বাহ সম্পর্খে অবহিত থাকবে না, তাহলে এই কালেমা তাদের কী উপকারে আসবে? হুযাইফাহ (রাঃ) কোন জবাব দিলেন না। তিনি একই প্রশ্ন করলেন। প্রতিবারেই (রাঃ) কোন জবাব দিলেন না। অতঃপর তৃতীয়বারের পর (অনুরোধ) করলে তিনি বলেন, হে সিলাহ্! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : ইবনু মাজাহ হা/৪০৪৯, হাকিম হা/৮৬৩৬, ৮৪৬০- হাদীসের শব্দাবলী উভয়ের, শায়খ আলবানী বলেন : হাদীস সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৪

মিক্বদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : যমীনের উপর এমন কোন মাটির ঘর বা তাঁবু অবশিষ্ট থাকবে না যেখানে মহান আল্লাহ্ ইসলামের কালেমা (হুকুমাত) প্রবেশ না করাবেন। যারা মানবে তাদেরকে কালেমার অধিকারী (অনুসারী) হিসেবে সম্মানিত করবেন এবং যারা মানবে না তাদেরকে অপদস্থ করবেন। অতঃপর তারা (জিযিয়া দিয়ে) মুসলিমদের অধীনস্থ হয়ে থাকবে। [১]

[১] সানাদ সহীহ : আহমাদ হা/২৩৮১৪

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৫

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : ইসলামের স্তুম্ভ পাঁচটি। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, সলাত ক্বায়িম করা, যাকাত দেয়া, হাজ্জ্ব করা এবং রমাযানের সওম পালন করা। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১২২

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৬

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা জিবরীল (আ) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলাম কী ? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “ইসলাম হল, তুমি এক আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর সলাত ক্বায়িম করবে ও ফরয যাকাত প্রদান করবে এবং রামাযানের সিয়াম পালন করবে।” (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, আহমাদ)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মৃত্যুর সময় কালেমা পাঠের ফাযীলাত

৫৭

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তালকীন করাও। কেননা যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]

[১] হাদীস হাসান : ইবনু হিব্বান হা/৩০০৪- শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : হাদীস সহীহ। ইরওয়াউল গালীল হা/৬৮৭- হাদীসের শব্দাবলী তার থেকে গৃহীত। শায়খ আলবানী বলেন : সানাদের ব্যক্তিবর্গ প্রত্যেকেই নির্ভরযোগ্য। অবশ্য মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ব্যতীত। তাকে ইবনু হিব্বান ‘সিকাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর হাদীসের বাক্য : “যারা শেষ কথা হবে...” এটি বাযযার ভিন্ন সানাদে বর্ণনা করেছেন।

হাদিসের মানঃহাসান হাদিস

৫৮

‘উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি অন্তরে এ বিশ্বাস রেখে মৃত্যু বরণ করলো যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৪৫- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ আহমান হা/৪৬৪, ৪৯৮- তাহক্বীক্ব ও শু’আইব আরনাউত্ব : সানাদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। আহমাদ শাকির বলেন (হা/৪৯৮) : সানাদ সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৫৯

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “যে ব্যক্তির শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আবূ দাঊদ, হাকিম, ইবনু মানদাহ্ ‘আত-তাওহীদ’ এবং আহমাদ। ইমাম হাকিম বলেন : সানাদ সহীহ। ইমাম যাহাবীর মতও তাই। শায়খ আলবানী একে হাসান বলেছেন। ইরওয়াউল গালীল হা/৬৮৭)

হাদিসের মানঃহাসান হাদিস

৬০

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “আমি এমন একটি কালেমা জানি, যে কোন বান্দা এ কালেমা অন্তরের সাথে সত্য জেনে পাঠ করবে এবং ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে সে জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যাবে। সেই কালেমা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।” (হাকিম। ইমাম হাকিম বলেন : হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন সহীহ আত-তারগীব গ্রন্থে)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬১

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাঃ)-এর কাছে এসে দেখি তিনি সাদা কাপড় জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন। এরপর আবার এসেও তাকে ঘুমন্ত দেখতে পাই। অতঃপর আবার এসে দেখি তিনি জাগ্রত হয়েছেন। ফলে আমি তাঁর পাশে বসে পড়ি। তখন তিনি (সাঃ) বললেন : যে কোন বান্দা এ কথা বলে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং এর উপরই মৃত্যু বরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথা শুনে আবূ যার (রাঃ) বলেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও? নাবী (সাঃ) বললেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও। আবূ যার (রাঃ) আবার বলেন : যদি সে যেনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও? নাবী (সাঃ) বললেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবূ যার নাবী (সাঃ)- কে প্রশ্নটি তিনবার করেন আর প্রতিবারই নাবী (সাঃ) একই জবাব দেন। অতঃপর চতুর্থবারে বললেন, আবূ যারের নাক ধুলো মলিন হোক। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/২৮৩- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ সহীহুল বুখারী হা/৫৩৭৯।

দৃষ্টি আকর্ষণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা ফাযীলাত সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে মূলত ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠের শর্তগুলো চমৎকারভাবে পেশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফাযীলাত লাভের দিকগুলো ফুটে উঠেছে। সুতরাং অধিক উপকার প্রদানের আশায় এর শর্তগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”- এর শর্তসমূহ


(১) এ বিষয়ে ইলম থাকা। অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া সকল গাইরুল্লাহকে অস্বীকার করে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ্ বলে স্বীকার করা এবং এ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
===
“আর জেনে রেখো, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই।” (সূরাহ মুহাম্মাদ : ১৯)
==
“তবে যারা সজ্ঞানে সত্যের সাক্ষ্য দেয়।” (সূরাহ যুখরুফ : ৮৬)
অর্থাৎ কালেমার সাক্ষ্য, তারা মুখে যা বলে সেটি অন্তর দিয়ে জানে।
নাবী (সাঃ) বলেছেন : “যে লোক এমন অবস্থায় মারা গেলো যে, জীবিত অবস্থায় সে জানত, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম)
(২) দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা : কোনরূপ সন্দেহ ছাড়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর বিশ্বাস অন্তরে পূর্ণভাবে থাকতে হবে। কালেমাকে এমন পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে যাতে সংশয়-সন্দেহ না থাকে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
===
“সত্যিকারের মু’মিন হল তারাই, যারা আল্লাহ্ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে এবং ঈমান আনার পর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না।” (সূরাহ্ আল-হুজুরাত : ১৫)।
নাবী (সাঃ) বলেছেন : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আমি তাঁর রাসূল। যে লোক এতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ না করে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম)
(৩) কবুল করা : অর্থাৎ অন্তর ও জিহবার দ্বারা স্বীকার করা। মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
===
“তাদেরকে যখন বলা হত, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তখন তারা অহংকার করত এবং বলত : একজন পাগল কবির কথায় আমরা কি আমাদের ইলাহগুলোকে পরিত্যাগ করব?।” (সূরাহ সাফফাত : ৩৫-৩৬)
এ আয়াতের তাফসীরে হাফিয ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : মু’মিনগণ যেমনিভাবে এ কালেমা মুখে উচ্চারণ করতেন ঠিক তার বিপরীত কাফিররা তা বলতে অস্বীকার করত অহঙ্কারের কারণে। কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে নাবী কারীম (সাঃ) বলেন : “আমাকে আদেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। যখন কেউ তা মেনে নিবে ও মুখে উচ্চারণ করবে তখন সাথে সাথে তার জীবন ও সম্পদ আমার কাছ থেকে নিরাপদ। তবে ইসলামের যে হাক্বাসমূহ আছে তা আদায় করতে হবে এবং তার হিসাব নিবেন স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা।” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
(৪) আত্মসমপর্ণ ও যথাযথ অনুসরণ করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
===
“আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ কর।” (সূরাহ্ যুমার : ৫৪)।
(৫) সত্যবাদিতা, যা মিথ্যার বিপরীত : তা হল অন্তরে সর্বান্তকরণে কালেমাকে উচ্চারণ করা। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সাবধান করে বলেন :
===
“আলিফ লাম-মীম : লোকেরা কি ভেবে নিয়েছে যে, “আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; অতএব আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।” (সূরাহ্ আনকাবূত : ১-৩)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যদি কেউ খাটি অন্তরে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তবে আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিবেন।” (সহীহুল বুখারী, সহীহ্ মুসলিম)
(৬) ইখলাস : তা হচ্ছে নিয়্যাতকে শুদ্ধ করে যাবতীয় শির্‌ক থেকে নিজেকে দূরে রেখে নেক ‘আমল করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
==
“তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে ইখলাসের সাথে আল্লাহর আনুগত্যসহ ‘ইবাদাত করতে।” (সূরাহ বাইয়্যিনাহ্ : ৫)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “ক্বিয়ামাতের দিন আমার শাফা’য়াত পাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ স্বীকার করে।” (সহীহুল বুখারী)
==
তিনি (সাঃ) আরো বলেছেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিয়েছেন যে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে।” (সহীহুল বুখারী)
(৭) কালেমা তায়্যিবার প্রতি ভালবাসা পোষণ করা : কালেমার দাবী হলো, যে সকল মু’মিন উপরোক্ত শর্তসমূহ মানবে মানুষ কেবল তাদেরকেই ভালবাসবে এবং যারা তা মানবে না তাদেরকে ঘৃণা করবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
===
“মানুষের মাঝে এমন লোকও রয়েছে যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে তাঁর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে যেমন ভালবাসতে হয় তেমন তাদেরকে ভালবাসে। কিন্তু যারা প্রকৃত ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা আরো মজবুত।” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ্ : ১৬৫)
রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন : “তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই পাবে : এক, তার অন্তরে আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে বেশি হবে। দুই, যে কোন ব্যক্তির সাথে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে। তিন, ঈমানের পর কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া তার কাছে এরূপ অপছন্দনীয় যেরূপ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়।” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
(৮) তাগুতের প্রতি কুফরী করা : তাগুত হল ঐ সকল বাতিল ইলাহ্ আল্লাহকে ছাড়া যাদের ‘ইবাদাত করা হয়। সুতরাং কালেমা পাঠকারী তাদেরকে বর্জন করবে, যদিও সে একমাত্র আল্লাহকে রব্ব এবং সত্যিকারের ইলাহ্ বলে স্বীকার করে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
===
“আর যে লোক তাগুতদের অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে নিশ্চয়ই সে এমন এক শক্ত বন্ধনকে আঁকড়ে ধরল যা ছুটবার নয়।” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ্ : ২৫৬)
রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি অন্তর থেকে বলে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং আল্লাহ্ ব্যতীত যে সকল ইলাহর ‘ইবাদাত করা হয় তা অস্বীকার করে তার জীবন ও সম্পদ (নষ্ট করা) অন্যের জন্য হারাম।” (সহীহ মুসলিম)

-----------

৬২

ইয়াহইয়া ইবনু ত্বালহা থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ইস্তিকালের পর একদা ‘উমার (রাঃ) ত্বালহার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) ত্বালহাকে বিষন্ন দেখে বললেন : কি ব্যাপার, তোমাকে বিষন্ন দেখছি? তোমার চাচাতো ভাইয়ের খিলাফাত কি তোমার অপছন্দ হচ্ছে? ত্বালহা বললেন, না। তবে আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : এমন একটি কালেমা আমি জানি, তা যে কেউ মৃত্যুর সময় পাঠ করলে তার ‘আমলনামার জন্য সেটা নূর হবে এবং এবং নিঃসন্দেহে তার দেহ ও আত্মা মৃত্যুর সময় সেটার দ্বারা স্বস্তি লাভ করবে। কিন্তু উক্ত কালেমা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। এ সময়ের মধ্যে তিনিও ইন্তিকাল করেছেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমার সেই কালেমা জানা আছে। এটা সেই কালেমা যা তিনি তাঁর চাচার কাছে আশা করেছিলেন (অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’)। [১]

[১] হাদীস সহীহ : ইবনু মাজাহ হা/৩০৭৭

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৩

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : ত্বালহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : “আমি এমন একটি কালেমা জানি, যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় তা পাঠ করবে তার মৃত্যুকষ্ট দূর হয়ে যাবে, তার রং মৃত্যুর সময় উজ্জ্বল হতে থাকবে এবং সে আনন্দদায়ক দৃশ্য দেখতে পাবে।” কিন্তু আমি উক্ত কালেমা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। সেজন্য আমি মনক্ষূন্ন আছি। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমার সেই কালেমা জানা আছে। ত্বালহা (রাঃ) আনন্দিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কি? ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি অবগত আছি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কালেমা আর নেই যা তিনি স্বীয় চাচা আবু ত্বালিবকে মৃত্যুর সময় পেশ করেছিলেন, অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। ত্বালহা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম এটাই, আল্লাহর কসম এটাই সেই কালেমা।”

বায়হাক্বীর আসমা ওয়াস সিফাত হা/১৭২- উপরোক্ত শব্দে, দূররে মানসুর, হাকিম হা/১২৪৪, আহমাদ হা/১৩৮৪, আবূ ইয়াসা। ইমাম হাকিম বলেন : বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী একে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শায়খ শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : এর সানাদ সহীহ

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

শির্‌ক না করার ফাযীলাত

৬৪

মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) পিছনে ঊফাইর নামক গাধার পিঠে সওয়ার ছিলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাকে বললেন : হে মু’আয! তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহর কি হক রয়েছে এবং আল্লাহর উপর বান্দার কি হক রয়েছে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি (সাঃ) বললেন : বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে- তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার অধিকার হচ্ছে, যে বান্দা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না তিনি তাকে আযাব দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এ সুসংবাদ জানিয়ে দিবো না? তিনি (সাঃ) বললেন : তাদেরকে এ সুসংবাদ দিও না। কেননা তারা এর উপর নির্ভর করে ‘আমল ছেড়ে দিবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/২৬৪৪

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৫

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রাসূল (সাঃ) বললেন দুটি জিনিস ওয়াজিব হয়ে গেছে। এক ব্যক্তি এসে বললো, যে আল্লাহর রাসূল! কোন দুটি জিনিস ওয়াজিব হয়ে গেছে? তিনি (সাঃ) বললেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুতে শরীক না করে মারা গেছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে মারা গেছে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/২৭৯

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৬

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মি’রাজ করানো হয় তখন তিনি সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছেন যা সপ্তম আকাশে রয়েছে। যে জিনিস উপরে উঠে তা এখান পর্যন্ত পৌঁছে, তারপর এখান থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর যে জিনিস অবতরণ করে তা এখান পর্যন্ত অবতারিত, তারপর এখান থেকে গ্রহণ করা হয়। ঐ গাছের উপর সোনার ফড়িং ছেয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এবং সূরাহ্ বাক্বারাহর শেষের দুই আয়াত দেয়া হয়। এবং এটাও দেয়া হয় যে, তার উম্মাতের মদ্যে যারা শির্‌ক করবে না তাদের কবীরাহ গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৪৪৯

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৭

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। যে সব অপরাধী আল্লাহর সাথে শির্‌ক করেনি তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি সম্পর্কে (আল্লাহ্ বলেন) : এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৬৭০৯

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৮

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আল্লাহ্ তা’আলা বলেন : কেউ একটি নেক ‘আমল করলে এর বিনিময়ে তাকে এর দশগুণ বা আরো অধিক দিবো। কেউ যদি একটি গুনাহ করে তাহলে এর বিনিময়ে কেবল একটি গুনাহ (লিখা) হবে অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। আর কেউ যদি আমার কাছে পৃথিবীর সমান গুনাহসহ উপস্থিত হয় এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাকে তাহলে আমিও ঠিক পৃথিবীর সমান ক্ষমা নিয়ে তার কাছে এগিয়ে যাবো। [১]

[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/২১৩৬০

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৬৯

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এরূপ অবস্থায় সাক্ষ্যাৎ করলো যে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেনি, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তার অন্যান্য পাপ তার কোন ক্ষতি করবে না। যেমন কোন ব্যক্তি শির্‌ক করে তাঁর সাথে সাক্ষ্যাৎ করলে সে জাহান্নামে যাবে এবং তার অন্যান্য সাওয়াব তার কোন উপকারে আসবে না। [১]

[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/৬৫৮৬

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭০

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : প্রত্যেক নাবীর বিশেষ একটি দু’আ আছে যা কবুল করা হবে। প্রত্যেক নাবীই তাঁর যে দু’আ আগে ভাগে (দুনিয়াতেই) করে ফেলেছেন। আর আমি আমার সে দু’আ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য (দুনিয়াতে) মুলতবী রেখেছি। আমার উম্মাতের যে ব্যক্তি শির্‌ক না করে মৃত্যুবরণ করবে, ইনশাআল্লাহ্ সে তা লাভ করবে। [১]

[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫১২

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭১

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা এক বেদুইন নাবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো : আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো। তিনি (সাঃ) বললেন : আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না। ফরয সলাত ক্বায়িম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে এবং রমাযানের সাওম পালন করবে। একথা শুনে লোকটি বললো, সেই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! আমি এর চেয়ে বেশিও করবো না এবং কমও করবো না। অতঃপর লোকটি যখন চলে যেতে লাগলে নাবী (সাঃ) বললেন, কেউ কোন জান্নাতী লোক দেখে আনন্দিত হতে চাইলে সে যেন এই লোকটিকে দেখে। [১]

[১] হাদীস সহীহ :সহীহুল বুখারী হা/১৩১০

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭২

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

উম্মাতকে শির্‌ক বিবর্জিত ‘ইবাদাত শিক্ষার দায়িত্ব দিয়েই মহান আল্লাহ্ নাবী (সাঃ)- কে নাবী করে পাঠিয়েছেন। যেমন, ‘আমর ইবনু ‘আবাসাহ আস-সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আমি আমার সম্প্রদায়ের ইলাহগুলো থেকে বিমুখ ছিলাম। একদা আমি নাবী (সাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। আমি গোপনে খোঁজ নিয়ে তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন : নাবী। আমি বললাম, নাবী কি? তিনি বললেন : আল্লাহর রাসূল। আমি বললাম, আপনাকে কে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন : মহান আল্লাহ। আমি বললাম, আপনাকে কি দিয়ে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন : “এ আদেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা হবে, রক্ত সংরক্ষণ করতে হবে, রাস্তা নিরাপদ করতে হবে, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং এক আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।” আমি বললাম, আপনাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতো অত্যন্ত ভাল। আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি আপনার উপর ঈমান এনেছি এবং আপনাকে সত্য বলে ঘোষণা করছি। আপনি বলুন, আমি কি আপনার সাথে অবস্থান করবো? তিনি বললেন : তুমি দেখছো যে, আমি যা নিয়ে আগমন করেছি তা লোকেরা অপছন্দ করেছে। কাজেই তুমি তোমার পরিবারের কাছেই থাকো। অতঃপর যখন তুমি আমার সম্পর্কে জানবে যে, আমি আমার অবস্থান থেকে বেরিয়েছি তখন আমার কাছে এসো।”

আহমদ হা/১৭০১৬- ইমাম যাহাবী বলেন : সহীহ

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

ফাযায়িলে সলাত

৭৩ - ১৫১

পরিচ্ছেদঃ

সলাত পরিচিতি


সলাত শব্দটি স্থানভেদে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন : (১) আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হবে : অনুগ্রহ, দয়া (২) বান্দার সাথে সম্পর্কিত হলে এ অর্থ হবে : প্রার্থনা, দু’আ (৩) ফিরিশতার সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হবে : ক্ষমা প্রার্থনা (৪) নাবীর সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হবে : দরূদ পড়া (৫) পশু পাখির সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হবে : তাসবীহ পাঠ করা (৬) সলাত আদায় করা- যা একটি বিশেষ ‘ইবাদাত’ আলোচ্য অনুচ্ছেদে এটাই উদ্দেশ্যে।
পরিভাষায় সলাত হলো : কতিপয় নির্দ্দিষ্ট আরকান ও আহকামের সমষ্টি একটি নির্দ্দিষ্ট ‘ইবাদাত। ইসলামী শরীয়তে এর নিদ্দিষ্ট সময়সীমা বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় ফরয। সলাত ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ‘ইবাদাত এবং ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “তোমরা সলাত আদায় করো ঠিক ঐভাবে যেভাববে আমাকে আদায় করতে দেখো।” (সহীহুল বুখারী)

পরিচ্ছেদঃ

ফাযায়িলে ত্বাহারাত - উযূ করার ফাযীলাত

৭৩

আবু মালিক আল-আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, আহমান শাকির বলেন (হা/২২৮০০, ২২৮০৬) : সানাদ সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৪

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : পবিত্রতা ছাড়া সলাত কবুল হয় না।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৫৭

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৫

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : পবিত্রতা (উযূ) হলো সলাতের চাবি।

হাসান সহীহ : তিরমিযী হা/৩, শায়খ আলবানী বলেন : হাসান সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৬

‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি এভাবে (উত্তমরূপে) উযূ করে, তার পূর্বেকার সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ফলে তার সলাত ও মাসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত ‘আমল বলে গণ্য হয়।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৬৬

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৭

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহবান করা হবে যে, পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করার কারণে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা অধিক উজ্জ্বলতাসহ উঠতে চেষ্টা করো।

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/১৩৩

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৭৮

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আমার উম্মাত (ক্বিয়ামাতের দিন) আমার নিকট উপস্থিত হবে। আর আমি লোকদেরকে তা (হাওয) থেকে এমনভাবে বিতাড়িত করবো, যেভাবে কোন ব্যক্তি তার উটের পাল থেকে অন্যের উটকে বিতাড়িত করে থাকে। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? জবাবে তিনি (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তোমাদের এক নিদর্শন হবে যা অন্য কারো হবে না। উযুর প্রভাবে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত-পায়ের উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়বে। উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত অবস্থায় তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হবে। আর তোমাদের একদল লোককে জোড় করে আমার থেকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা আমার কাছে পৌঁছতে পারবে না। তখন আমি বলবো, হে আমার রব! এরা তো আমার লোক। জবাবে ফিরিশতারা আমাকে বলবে, আপনি জানেন না আপনার অবর্তমানে তারা কি কি নতুন কাজ (বিদ’আত) করেছে।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৬০৫

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

উযূর পানির সাথে গুনাহ্সমূহ ঝরে যায়

৭৯

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কোন মুসলিম বান্দা উযূর সময় যখন মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা দু’খানা ধৌত করে তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়, এভাবে সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৬০০

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮০

‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : উযূ করার সময় কেউ যদি উত্তমরূপে উযূ করে তাহলে তার শরীরের সমস্ত গুনাহ ঝরে যায়। এমনকি তার নখের নীচের গুনাহও বের হয়ে যায়।৪৮

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৬০১

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮১

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাবো না, যা করলে আল্লাহ্ (বান্দার) গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল আপনি বলুন। তিনি (সাঃ) বললেন : কষ্টকর অবস্থায় থেকেও পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করা, সলাতের জন্য বারবার মাসজিদে যাওয়া এবং এক সলাতের পর আরেক সলাতের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হলো প্রস্তুতি (রিবাত)।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৬১০

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

উযূ করে সলাত আদায়ের ফাযীলাত

৮২

‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করার পর বললেন। যে ব্যক্তি আমার ও উযূর ন্যায় উযূ করার পর একাগ্রচিত্তে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করবে এবং এ সময় অন্য কোন ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না। তাহলে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/১৫৫

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৩

‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : কোন মুসলিম উত্তমরূপে উযূ করে সলাত আদায় করলে পরবর্তী ওয়াক্তের সলাত পর্যন্ত তার সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। [৫১]

[৫১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৬২ শির্‌ক

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৪

‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যখন কোন মুসলিমের ফরয সলাতের সময় উপস্থিত হয়, তখন যদি কোন মুসলিম উত্তমরূপে উযূ করে এবং একান্ত বিনীতভাবে সলাতের রুকূ’ সাজদাহ্ ইত্যাদি আদায় করে তাহলে সে পুনরায় কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ্-ক্ষমা হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই হতে থাকে।

৫২ হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৬৫, হাদীসের শব্দাবলী তার।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৫

‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : মহান আল্লাহ্ যেভাবে আদেশ করেছেন যদি কোন ব্যক্তি সেইভাবে উযূ করে এবং ফরয সলাতসমূহ আদায় করে তাহলে তার ফরয সলাতসমূহের মধ্যবর্তী সকল গুনাহ্ ক্ষমা হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৬৯- হাদীসের শব্দাবলী তার, আহমাদ হা/৪০৬- শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : এর সানাদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৬

‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি উযূ করে সলাতের জন্য মাসজিদের দিকে যায় এবং তার মাসজিদে যাওয়া যদি সলাত ছাড়া অন্য কোন কারণে না হয় তবে তার অতীত জীবনের সব গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হবে।

৫৪ হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৭০

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৮৭

‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কোন মুসলিম যখন উত্তমরূপে উযূ করে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে দাঁড়িয়ে দুই রাক’আত সলাত আদায় করে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।

৫৫ হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৭৬

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

উযূর শেষে যে দু’আ পড়া ফাযীলাতপূর্ণ

৮৮

‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তোমাদের মধ্যকার কেউ যদি উত্তমরূপে উযূ করার পর বলে : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।” তাহলে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয় সে ইচ্ছে করলে এর যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।৫৬

৫৬ হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৫৭৬

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

উযূ করে মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত

৮৯

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি উযূ করার পর বলবে : “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামাদিক আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক্”- তার জন্য এটি একটি সাদা পাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। অতঃপর তা সীল করে দেয়া হয় যা কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত নষ্ট করা হয় না।”

ত্বাবারানী আওসাত ২/১২৩, নাসায়ীর সুনানুল কুবরা ৬/২৫, হাকিম, সহীহ আত্-তারগীব হা/১৪৭। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ লিগাইরিহি বলেছেন

হাদিসের মানঃসহিহ লিগাইরিহি

৯০

সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জনৈক আনসারী সাহাবীর মৃত্যু আসন্ন হলে তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিকট কেবল সাওয়াব লাভের আশায় একটি হাদীস বর্ণনা করবো। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি। তোমাদের কেউ যখন উত্তমরূপে উযূ করে সলাতের উদ্দেশ্যে বের হয়, তখন সে তার ডান পা উঠাতেই মহান আল্লাহ্ তার জন্য একটি সাওয়াব লিখে দেন। এরপর বাম পা ফেলার সাথে সাথেই মহা সম্মানিত আল্লাহ্ তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এখন তোমাদের ইচ্ছা হলে মাসজিদের নিকটে থাকবে অথবা দূরে।
অতঃফর সে যখন মাসজিদে গিয়ে জামা’আতে সলাত আদায় করে তখন তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। যদি জামা’আত শুরু হয়ে যাওয়ার পর মাসজিদে উপস্থিত হয় এবং অবশিষ্ট সলাতে শামিল হয়ে সলাতের ছুটে যাওয়া অংশ পূর্ণ করে, তাহলেও তাকে অনুরূপ (জামা’আতে পূর্ণ সলাত আদায়কারীর সমান সাওয়াব) দেয়া হয়। আর যদি সে (মাসজিদে এসে) জামা’আত সমাপ্ত দেখে একাকী সলাত আদায় করে নেয়, তবুও তাকে ঐরূপ (ক্ষমা করে) দেয়া হয়।

হাদীস সহীহ : আবূ দাঊদ হা/৫৬৩- তাহক্বীক্ব আলবানী : হাদীস সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯১

আবূ সুমামাহ্ আল-হান্নাত থেকে বর্ণিতঃ

একদা মাসজিদে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কা’ব ইবনু ‘উজরাহর (রাঃ) সাথে তার সাক্ষাত হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে আমার দু’ হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে মটকাতে দেখতে পেয়ে আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন। তিনি আরো বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তোমাদের কেউ উত্তমরূপে উযূ করে মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলে সে যেন তার দু’ হাতের আঙ্গুল না মটকায়। কেননা সে তখন সলাতের মধ্যেই থাকে (অর্থাৎ উযূ করা অবস্থায় তাকে সলাত আদায়কারী হিসেবেই গণ্য করা হয়)।৫৮

৫৮ হাদীস সহীহ : আবূ দাঊদ হা/৫৬২- হাদীসের শব্দাবলী তার, তিরমিযী হা/৩৮৬- তাহক্বীক্ব আলবানী : হাদীস সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

উযূসহ রাতে ঘুমানোর ফাযীলাত

৯২

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : কেউ উযূ করে রাত্রি যাপন করলে তার কাছাকাছি একজন ফিরিশতা রাত্রি যাপন করেন। সে জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত (বা জাগ্রত হলে) ঐ ফিরিশতা তার জন্য এই বলে দু’আ করেন : হে আল্লাহ! আপনার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দিন, কেননা সে পবিত্রতা অর্জন করে রাত্রি যাপন করেছে।৫৯

৫৯ হাসান সহীহ : ইবনু হিব্বান হা/১০৫৭- শায়খ আলবানী বলেন : হাদীসটি হাসান সহীহ।

হাদিসের মানঃহাসান সহিহ

৯৩

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : কোন মুসলিম যদি পবিত্র অবস্থায় রাত্রি যাপন করে, অতঃপর রাতে উঠে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ্ তাই দান করেন।৬০

৬০ হাসীদ সহীহ : আবূ দাঊদ হা/৫০৪২- আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৪

বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন : যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সলাতের উযূর মতো উযূ করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে বলবে : “হে আল্লাহ্! আমার জীবন আপনার কাছে সমর্পণ করলাম। আমার সকল কাজ আপনার কাছে সমর্পণ করলাম এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম আপনার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন আশ্রয়স্থান ও পরিত্রাণের স্থান নেই। হে আল্লাহ্! আমি ঈমান আনলাম আপনার অবতীর্ণ কিতাবের উপর এবং আপনার প্রেরিত নাবীর উপর।”-অতঃপর যদি সেই রাতেই তোমার মৃত্যু হয় তবে ইসলামের উপর মৃত্যু হবে। কাজেই এ কথাগুলো তোমার সর্বশেষ পরিণত করো।

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/২৩৯

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মিশওয়াক করার ফাযীলাত

৯৫

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন : মিসওয়াক হচ্ছে মুখের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম এবং প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উপায়।৬২

হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/২৪২০৩, ইমাম ইবনু হিব্বান, শু’আইব আরনাউত্ব ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৬

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি মিসওয়াক করার আদেশ দিয়ে বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন : বান্দা যখন মিসওয়াক করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করে, তখন তার পিছনে একজন ফিরিশতা দাঁড়ায় এবং মনোযোগ দিয়ে তার ক্বিরাআত শুনে। অতঃপর ফিরিশতা তার অতি নিকটবর্তী হয় এমনকি ফিরিশতার নিজের মুখ তার মুখের উপর রাখেন। তখন তার মুখ থেকে কুরআনের যা কিছুই তিলাওয়াত বের হয় তা ফিরিশতার উদরে প্রবেশ করে। কাজেই তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র রাখো কুরআনের জন্য।৬৩

৬৩ হাদীস সহীহ : বাযযার হা/৬০৩- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৭

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবার সম্ভাবনা না থাকলে আমি প্রত্যেক সলাতের জন্য মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম।”

৬৪ হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৮৩৮

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

ফাযায়িলে আযান - আযান ও ইক্বামাতের ফাযীলাত

৯৮

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : শয়তান সলাতের আযানের শব্দ শুনে পলায়ন করতে করতে রাওহা পর্যন্ত ভেগে যায়। আ’মাশ বলেন, আমি আবূ সুফিয়ানকে রাওহা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এ স্থানটি মাদীনাহ্ হতে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত।

৬৫ হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৮৭৮

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

৯৯

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : শয়তান সলাতের আযানের শব্দ শুনে পলায়ন করতে করতে রাওহা পর্যন্ত ভেগে যায়। আ’মাশ বলেন, আমি আবূ সুফিয়ানকে রাওহা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এ স্থানটি মাদীনাহ্ হতে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত।৬৬

৬৬ হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৮৮০শির্‌ক

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০০

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : যেকোন মানুষ, জ্বিন অথবা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আওয়ায শুনবে, সে ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দিবে।৬৭

৬৭ হাদীস সহীহ ; সহীহুল বুখারী হা/৩০৫৩

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০১

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যখন সলাতের আযান দেয়া হল, তখন শয়তান পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে বাতকর্ম করতে করতে (দ্রুত) পলায়ন করে, যেন সে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামাত দেয়া হয় তখন সে পলায়ন করে। ইক্বামাত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে আসে এবং মুসল্লীর মনে সংশয় সৃষ্টি করতে থাকে। সে তাকে বলে, এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো। অথচ এ কথাগুলো সলাতের পূর্বে তার স্মরণও ছিলো না। শেষ পর্যন্ত মুসল্লী এমন এক বিভ্রাটে পড়ে যে, সে বলতেও পারে না, সে কত রাক’আত সলাত আদায় করেছে।৬৮

৬৮ হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৫৭৩

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০২

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

“মুয়াজ্জিনের আযানের আওয়ায যেকোন জ্বিন, ইনসান, গাছ এমনকি পাথরও শুনবে সে ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দিবে।”

ইবনু মাজাহ্, সহীহ আত-তারগীব হা/২২৫। শায়খ আলবানী বলেন : হাদীসটি সহীহ

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৩

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি বার বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাতে নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার জন্য তার প্রত্যেক আযানের বিনিময়ে লিখা হয় ষাট নেকী এবং প্রত্যেক ইক্বামাতের বিনিময়ে লিখা হয় ত্রিশ নেকী।

হাদীস সহীহ : ইবনু মাজাহ্ হা/৭২৮- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৪

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন ; মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর যতদূর পর্যন্ত যায় তাকে ততদূর ক্ষমা করে দেয়া হয় তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি জিনিসই (ক্বিয়ামাতের দিন) তার জন্য সাক্ষী হয়ে যাবে। আর কেউ জামাআতে হাজির হলে তার জন্য পঁচিশ ওয়াক্ত সলাতের সাওয়াব লিখা হয় এবং এক সলাত থেকে আরেক সলাতের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

হাদীস সহীহ ; আবূ দাউদ হা/৫১৫, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৫

বারাআ ইবনু ‘আযিব্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : মুয়াজ্জিন ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব পায় যে তার সাথে সলাত আদায় করে।

হাদীস সহীহ : নাসায়ী হা/৬৪৬, তাহক্বীক্ব আলবানী : সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৬

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : ইমাম হচ্ছে যিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন (ওয়াক্তের) আমানতদার। ‘হে আল্লাহ্! ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন।

হাদীস সহীহ : আবূ দাঊদ হা/৫১৭, তিরমিযী হা/২০৭, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৭

ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি জিনিসই মুয়াজ্জিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।” (আহমাদ হা/৬২০২, ইবনু মাজাহ্ হা/৭২৪, সহীহ আত-তারগীব হা/২৩৪। তাহক্বীক্ব আলবানী : হাসান সহীহ

হাদিসের মানঃহাসান সহিহ

পরিচ্ছেদঃ

মুয়াজ্জিনের আযানের জবাবে যা বলা ফাযীলাতপূর্ণ

১০৮

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃ)- কে বলতে শুনেছেন। তোমরা আযান শুনতে পেলে মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বলবে। তারপর আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কেননা কেউ আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ্ তার প্রতি দশবার রহমাত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ প্রার্থনা করবে। ওয়াসিলাহ্ হচ্ছে জান্নাতের একটি বিশেস মর্যাদার আসন, যার অধিকারী হবেন আল্লাহর একজন বিশিষ্ট বান্দা। আমি আশা করছি, আমিই হবো সেই বান্দা। কেউ আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ্ প্রার্থনা করলে সে আমার শাফা’আত পাবে।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৮৭৫

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১০৯

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করে : (অর্থ) : “ হে আল্লাহ্ যে পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সলাতের রব! মুহাম্মাদ (সাঃ)- কে ওয়াসিলাহ্ ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সেই মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দিন যার অঙ্গীকার আপনি করেছেন”- ক্বিয়ামাতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৫৭৯

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১০

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্ রাসূল! মুয়াজ্জিনরা তো আমাদের উপর মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : মুয়াজ্জিনরা যেরূপ বলে থাকে তোমরাও সেরূপ বলবে। অতঃপর আযান শেষ হলে (আল্লাহর নিকট) দু’আ করবে। তখন তোমাকে তাই দেয়া হবে (তোমার দু’আ ক্বুবুল হবে)।

হাসান সহীহ : আবূ দাঊদ হা/৫২৪- হাদীসের শব্দাবলী তার- তাহক্বীক্ব আলবানী : হাসান সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১১

সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি আযান শুনে বলে : “এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তাঁর কোন শরীক নেই, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, মুহাম্মাদ (সাঃ)- কে রাসূল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট”- তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৮৭৭- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১২

‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তোমাদের কেউ যদি মুয়াজ্জিনের আল্লাহ্ আকবার আল্লাহু আকবার-এর জওয়াবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে এবং আশহাদু আল্-লা ইলাহা- ইল্লাল্লাহ-এর জওওয়াবে আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলে এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ এর জওয়াবে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বলে, অতঃপর হাইয়্যা ‘আলাস্-সলাহ্ এর জওয়াবে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ বলেত, তারপর হাইয়্যা ‘আলাল-ফালাহ্-এর জওয়াবে যদি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ বলে, তাপর যদি আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এর জওয়াতে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/৮৭৬

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দু’আর ফাযীলাত

১১৩

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ কখনো প্রত্যাখ্যাত হয় না।৭৮

৭৮ হাদীস সহীহ : আবূ দাঊদ হা/৫২১- হাদীসের শব্দাবলী তার, আহমাদ হা/১২২০০, তিরমিযী হা/২১২, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৪

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্যবর্ণায় রয়েছে: “যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে মুয়াজ্জিন যা বলে তাই বলবে সে জান্নাতের প্রবেশ করবে।”

নাসায়ী, ইবনু হিব্বান, হাকিম। শায়খ আলবানী বলেন : হাদীসটি হাসান। তা’লীক্বাতুল হাস্সান ‘আলা সহীহ ইবনে হিব্বান হা/১৬৬৫।

হাদিসের মানঃহাসান হাদিস

১১৫

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যখন সলাতের ইক্বামাত দেয়া হয় তখন আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দু’আ কবুল করা হয়।

হাদীস হাসান : আহমাদ হা/১৪৬৮৯- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ আত-তারগীব হা/২৬০, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ লিগাইরিহি বলেছেন।

হাদিসের মানঃহাসান হাদিস

১১৬

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “আযান ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ কবুল হয় । সুতরাং তোমরা দু’আ করো।” -(ইবনু খুযাইমাহ হা/৪২৫, তা’লীক্বাতুল হাস্সান ‘আলা ইবনে হিব্বান হা/১৬৯৪, তাহক্বীক্ব আলবানী : সহীহ)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৭

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

“দুই সময়ে দু’আকারী দু’আ করলে তা প্রত্যাখ্যাত হয় না। যখন সলাতের ইক্বামাত দেয়া হয় এবং আল্লাহর পথে (জিহাদের) কাতারে।” (ইবনু হিব্বান, হাকিম। ইমাম হাকিম ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সহী আত-তারগীব হা/২৫৪, ২৬০। মালিক হাদীসটি মাওকুফভাবে বর্ণনা করেছেন)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

ফাযায়িলে মাসাজিদ - মাসজিদ নির্মাণের ফাযীলাত

১১৮

‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য একটি মাসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১২১৭শির্‌ক

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১১৯

‘আয়িশাহ (রা) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি মাসজিদ নির্মাণ করলো এবং মাসজিদ নির্মাণে তার লোক দেখানো বা সুনাম অর্জনের কোন ইচ্ছা না থাকলে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। [১]
“আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর নির্মাণ করেন।” (সহীহুল বুখারী সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য)
“আল্লাহ্ জান্নাতে তার জন্য ঐ মাসজিদ ঘরের চাইতেও অধিক প্রশন্ত ঘর নির্মাণ করেন।” (আহমাদ হা/২৭৬১২, সহীহ আত-তারগীব হা/২৬৮। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন : শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : সহীহ লিগাইরিহি)
“আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে এর চাইতে অতি উত্তম ঘর তৈরি করেন।” (আহমাদ হা/১৬০০৫, ত্বাবারানী, সহীহ আত-তারগীব হা/২৬৯। শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : সানাদে দুর্বলতা আছে তবে হাদীস সহীহ। শায়খ আলবানী একে হাসান বলেছেন)

[১] হাসান লিগাইরিহি : ত্বাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ হা/১৯৪২, সহীহ আত-তারগীব হা/২৭৪। শায়খ আলবানী বলেন : হাদীসটি হাসান লিগাইরিহি।

হাদিসের মানঃহাসান লিগাইরিহি

পরিচ্ছেদঃ

সকাল সন্ধ্যায় মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত

১২০

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি সকালে এবং সন্ধ্যায় সালাত আদায় করতে মাসজিদে যায় এবং যতবার যায় আল্লাহ্ তা’আলা ততবারই তার জন্য জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর উপকরণ প্রস্তুত করেন।

হাদীস সহীহ ; সহীহুল বুখারী হা/৬২২

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মাসজিদে লেগে থাকার ফাযীলাত

১২১

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : আল্লাহ্ সাত শ্রেণীর লোককে ক্বিয়ামাতের দিন তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) যে যুবক আল্লাহর ‘ইবাদাতে রত থাকে, (৩) যার অন্তর মাসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, (৪) এমন দু’ব্যক্তি যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরকে ভালবাসে এবং আল্লাহর জন্য কেবল পরস্পরে ভালবাসায় মিলিত অথবা পৃথক হয়, (৫) ঐ ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী উচ্চ বংশীয় ভদ্র মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নিজের দিকে আকৃষ্ট করে আর সে বলে, আমি আল্লাহর ‘আযাবকে ভয় করি, (৬) যে ব্যক্তি গোপনে সদাক্বাহ করে। এমন কি তার বাম হাত জানে না ডান হাত কি খরচ করছে, (৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর স্মরণকালে তার দু'চোখ অশ্রুসিক্ত হয়।

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৬২০

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২২

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : যতক্ষণ কোন মুসলিম ব্যক্তি মাসজিদে সলাত ও যিকিরে মশগুল থাকে,আল্লাহ্ তার প্রতি এরূপ সন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন, যেরূপ প্রবাসী তার প্রবাস থেকে ফিরে এলে তার ঘরের লোকেরা তাকে পেয়ে খুশি হয়ে থাকে।৮৪

৮৪ হাদীস সহীহ : ইবনু মাজাহ হা/৮০০- শায়খ আলবানী বলেন হাদীসটি সহীহ এবং তা বুখারী ও মুসলিমের শর্তে, যেমনটি হাকিম বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মাসজিদ ঝাড়– দেয়ার ফযীলাত

১২৩

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা কালো বর্ণের মহিলা মাসজিদ ঝাড়ু দিতো। অতঃপর সে মারা গেলো। কিন্তু নবী (সাঃ) তা জানতেন না। একদা নাবী (সাঃ) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বললেন, তার খবর কি? সাহাবীগণ বলেন, সে মারা গেছে, হে আল্লাহর রাসূল! নবী (সাঃ) বললেন : তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? তারা লোকটির কাহিনী বলে বললো, সে তো এরূপ এরূপ ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, তারা তাকে যেন খাটো করলো। আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি (সাঃ) তার কবরের নিকট গেলেন এবং তার জানাযার সলাত আদায় করলেন।

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/১২৫১- হাদীসের শব্দাবলী তার, ইবনু মাজাহ হা/১৫৩০।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৪

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আদেশ করেছেন মহল্লায় মাসজিদ নির্মাণ ও মাসজিদকে পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় করে রাখতে।

হাদীস সহীহ : আবূ দাঊদ হা/৪৫৫, তিরমিযী হা/৫৯৪- হাদীসের শব্দাবলী উভয়ের, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মাসজিদে বসে থাকার ফযীলাত

১২৫

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত সলাত আদায়রত ব্যক্তি হিসেবেই গণ্য হবে, যতক্ষণ সালাত (অর্থাৎ সলাতের অপেক্ষা) তাকে আটকে রাখবে। তাকে তো তার পরিবার পরিজনদের নিকট ফিরে যেতে কেবল সালাতই বারণ করছে।

হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৬১৯, সহীহ মুসলিম হা/১৫৪২- হাদীসের শব্দাবলী উভয়ের, আবূ দাউদ হা/৪৭০, আহমাদ হা/৮২৪৬, ১০৩০৮।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৬

আবূ হুরাইরাহ্ (রা) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কোন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত সালাত আদায়ের স্থানে (জায়নামাযে) সলাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরো সময় সে সলাতেই থাকে। তার প্রত্যাবর্তন না করা অথবা উযূ টুটে না যাওয়া পর্যন্ত মালায়িকাহ্ (ফিরিশতারা) তার জন্য এই বলে দু’আ করতে থাকে : হে আল্লাহ্! তাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ্! তার প্রতি রহম করুন।’ আমি বললাম, উযূ টুটে যাওয়ার অর্থ কী? তিনি বললেন। (পায়খানার রাস্তা দিয়ে) নিঃশব্দে অথবা সশব্দে বায়ু নির্গত হওয়া।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৫৪১

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৭

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) বলেন : “ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদেরকে আদেশ করেছেন মহল্লায় মাসজিদ নির্মাণ করতে এবং আমাদেরকে আদেশ করেছেন মাসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখতে।” (আহমাদ ও তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী বলেন : হাদীসটি সহীহ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১২৮

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কেউ কোন উদ্দেশ্যে মাসজিদে এলে, সে ঐ উদ্দেশ্য অনুপাতেই (প্রতিদান) পাবে।

হাদীস সহীহ : আবূ দাঊদ হা/৪৭২, হাদীসের শব্দাবলী তার, বায়হাক্বী। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

সলাত আদায়ের জন্য পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাওয়ার ফাযীলাত

১২৯

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : মাসজিদ থেকে যার (বাসস্থান) যত বেশী দূরে, সে তত বেশি সাওয়াবের অধিকারী।

হাদীস সহীহ : ইবনু মাজাহ্ হা/৭৮২, অনুরূপ ইমাম যাহাবী এবং শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩০

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “যার হাটার পথ মাসজিদ থেকে বেশি দূরে সে সলাতের অধিক সাওয়াব লাভের হকদার।” (সহীহ মুসলিম)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩১

উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার জানা মতে মাদীনাহর সালাত আদায়কারীদের মধ্যে এক ব্যক্তির বাসস্থান মাসজিদ থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে অবস্থিত ছিল। এ সত্ত্বেও তিনি সর্বদা পায়ে হেঁটে জামা’আতে উপস্থিত হতেন। আমি তাকে বললাম, আপনি একটি গাধা খরিদ করে নিলে গরম ও অন্ধকারে তাতে সাওয়ার হয়ে আসতে পারতেন। তিনি বললেন, আমার ঘর মাসজিদের নিকটবর্তী হোক, তা আমি অপছন্দ করি। একথা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি মাসজিদে আসা ও মাসজিদ থেকে ঘরে ফেরার বিনিময়ে সাওয়াব লাভের প্রত্যাশা করি (তাই এরূপ বলেছি)। তিনি (সা:) বললেন : তুমি যা পাওয়ার আশা করেছ, আল্লাহ্ তোমাকে তাই দিয়েছেন : তুমি যা সাওয়াবের প্রত্যাশা করেছ আল্লাহ তা পূর্ণরূপেই তোমার জন্য মঞ্জুর করেছেন।

হাদীস সহীহ : আবূ দাউদ হা/৫৫৭- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ মুসলিম হা/১৫৪৬, ইবনু মাজাহ্ হা/৭৮৩, দারিমা। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩২

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি মাসজিদ থেকে দূরে অবস্থিত ছিল। আমরা মাসজিদের আশেপাশে বাড়ি নির্মাণের জন্য ঐ বাড়ি-ঘর বিক্রি করার মনস্থ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তা করতে নিষেধ করলেন। তিনি (আমাদেরকে) বললেন : (সলাতের উদ্দেশ্যে মাসজিদে আসার) প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে মর্যাদা ও সাওয়াব বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৫৫০শির্‌ক

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৩

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা বনু সালিম গোত্রের লোকেরা মাসজিদের সামনে বসতি স্থাপন করতে মনস্থ করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাদেরকে বললেন : হে বনু সালিম গোত্রের লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঐ বাড়িতেই থাকো। কারণ তোমাদের সালাতের জন্য মাসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে) এ কথা শুনে তারা বললো : আমরা এতে এতো খুশি হলাম যে, আমাদের বাড়ি-ঘর স্থানান্তরিত করে মাসজিদের কাছে আসলে এতোটা খুশি হতাম না।
উল্লেখ্য, যে যতদূর থেকে মাসজিদে সলাতের জন্য আসবে তার সাওয়াব ততো বেশি হবে- এ মর্মে বহু সহীহ হাদীসাবলী বর্ণিত আছে সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৫৫১, ১৫৫২শির্‌ক

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৪

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে পাক পবিত্র হয় (উযূ করে) তারপর কোন ফরয সলাত আদায়ের জন্য আল্লাহর কোন ঘরে (মাসজিদে) যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপের একটিতে গুনাহ্ ঝরে পড়ে এবং অপরটিতে মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৫৫৩শির্‌ক

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৫

‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যখন কোন ব্যক্তি পবিত্রতা হাসিল করে সালাতের জন্য মাসজিদে আসে, তখন তার জন্য দু’জন কিংবা একজন লিখক (ফিরিশতা) মাসজিদের উদ্দেশ্যে প্রতিটি কদমের বিনিময়ে দশটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করেন।

হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/১৭৪৪০- শায়খ আলবানী ও শু’আইব আরনাউত্ব হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৬

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “তার প্রতি কদমের একটিতে নেকী লিখা হয় এবং অপরটিতে গুনাহ মুছে ফেলা হয়।” (নাসায়ী হাকিম, ইবনু হিব্বান, মালিক, সহীহ আত-তারগীব হা/২৯৩। ইমাম হাকিম বলেন : মুসলিমের শর্তে সহীহ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৭

আবূ উমামাহ্ আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : তিন প্রকার লোকের প্রত্যেকেই মহান আল্লাহর দায়িত্বে থাকে। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয়, তার মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ্ তার দায়িত্বশীল। অতঃপর আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গনীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন । দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি আগ্রহ সহকারে মাসজিদে যায়, আল্লাহ্ তার দায়িত্বশীল। এমনকি তার মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গনীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। তৃতীয়ত, যে ব্যক্তি নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে মিলিত হয়ে সালাম বিনিময় করে, আল্লাহ্ তার জিম্মাদার।

হাদীস সহীহ : আবূ দাঊদ হা/২৪৯৪- হাদীসের শব্দাবলী তার, মিশকাত, হা/৭২৭। শায়খ আলাবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৮

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

“যে ব্যক্তি জামা’আতের সাথে ফরয সলাত আদায়ের জন্য সন্ধ্যা বেলায় পায়ে হেঁটে মাসজিদে যায় তার একটি পদক্ষেপে একটি গুনাহ্ মোচন হয় এবং আরেক পদক্ষেপে একটি নেকী লিপিবদ্ধ হয়, তার আসা ও যাওয়া উভয়টিতেই এরূপ হয়ে থাকে।” (আহমাদ- হাসান সানাদে এবং ত্বাবারানী ও ইবনু হিব্বান। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আত-তারগীব হা/২৯৫)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৩৯

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

“যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে কোন ফরয সলাত আদায়ের জন্য মাসজিদে যায়, অতঃপর ইমামের সাথে সালাত আদায় করে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়।” (ইবনু খুযাইমাহ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন সহীহ আত-তারগীব হা/২৯৬)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪০

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে সুন্দরভাবে উযূ করে মাসজিদে আসে সে আল্লাহর যিয়ারাতকারী। আর যাকে যিয়ারাত করা হয় তার উপর হক যে, তিনি যিয়ারাতকারীকে সম্মানিত করবেন।

হাদীস সহীহ : ত্বাবারানী কাবীর হা/৬১৩৯- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ আত-তারগীব হা/৩১৭। শায়খ আলবানী বলেন : হাদীসটি হাসান।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪১

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেরই জিম্মাদারী আল্লাহর উপর। তারা বেঁচে থাকা অবস্থায় আল্লাহ্ তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করবেন এবং তাদের জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। আর যদি তারা মারা যায় তাহলে আল্লাহ্ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তারা হলোঃ যে ব্যক্তি নিজ বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে সে আল্লাহর জিম্মায়, যে ব্যক্তি মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয় সে আল্লাহর জিম্মায় এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদে) বের হয় সে আল্লাহর জিম্মায়।”

ইবনু হিব্বান হা/৪৯৯-তাহক্বীক্ব আলবানী, সহীহ আত-তারগীব হা/৩১৬। শু’আইব আরনাউত্ব ও শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মহিলাদের বাড়িতে সলাত আদায়ের ফাযীলাত

১৪২

উম্মু হুমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে সালাত আদায় করতে ভালবাসি। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আমি জানি যে, তুমি আমার সাথে সালাত আদায় করতে ভালোবাসো। কিন্তু (জেনে রেখো), তোমার ঘরে সালাত আদায় তোমার কক্ষে সালাত আদায়ের চাইতে উত্তম, তোমার কক্ষে সলাত আদায় তোমার বাড়িতে সলাত আদায় হতে উত্তম এবং তোমার বাড়িতে সালাত আদায় আমার এ মাসজিদে সালাত আদায় হতে উত্তম। অতঃপর ঐ মহিলার নির্দেশে তার বাড়ি থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী ও অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাতে একটি মাসজিদ নির্মাণ করা হলো। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ঐ মাসজিদে সালাত আদায় করতেন।

হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/২৭০৯০

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৩

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃ) বলেছেন: কোন নারী তার বাড়ির সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে বসে যে সালাত আদায় করে, সেই সালাত আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।

হাসান লিগাইরিহি : ইবনু খুযাইমাহ হা/১৬৯১, ১৬৯২- হাদীসের শব্দাবলী তার, ত্বাবারানী, সহীহ আত-তারগীব হা/৩৪৩। তাহক্বীক্ব আলবানী : হাসান লিগাইরিহি।

হাদিসের মানঃহাসান লিগাইরিহি

১৪৪

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তোমরা তোমাদের নারীদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করবে না। অবশ্য তাদের ঘর তাদের জন্য উত্তম।

হাদীস সহীহ : আবূ দাউদ হা/৫৬৭- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ আত-তারগীব হা/৩৩৮। শায়খ আলবানী বলেন : হাদীস সহীহ। উল্লেখ্য, মহিলারা মাসজিদে গিয়ে সলাত আদায় করতে পারবে। যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। নাবী (সাঃ)-এর যুগে মহিলা সাহাবীরা মাসজিদে গিয়ে সলাত আদায় করতেন এমনকি অন্ধকার রাতে ফজরের সলাতও তারা মাসজিদে গিয়ে আদায় করেছেন। তবে মহিলাদের জন্য সলাত আদায়ে মাসজিদে যাওয়া আবশ্যক করা হয়নি। আবশ্যক করলে হয়তো তা পালন করা তাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে যেতো।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৫

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “মহিলারা পর্দার আড়ালে থাকার যোগ্য। সে যখন বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তার উপর প্রবল হয়ে যায়।” (ত্বাবারানী আওসাত। এর রিজাল সহীহ রিজাল। শায়খ আলবানী বলেন : হাদীসটি সহীহ। সহীহ আত-তারগীব হা/৩৩৯, ৩৪১। হাদীসটি প্রমাণ করে, মহিলাদের বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়া অপছন্দনীয়। তাদের জন্য বাড়িতে বসেই অনেক ‘ইবাদাত বন্দেগী করার সুযোগ রয়েছে)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মাসজিদুল হারামে সলাত আদায়ের ফাযীলাত

১৪৬

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : মাসজিদুল হারামে সালাত আদায়ে অন্য যে কোন মাসজিদে সালাতের চেয়ে একলক্ষ গুণ বেশি ফাযীলাত রয়েছে।

হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/১৫২৭১, ইবনু মাজাহ্ হা/১৪০৬- শব্দাবলী উভয়ের, ইরওয়াউল গালীল হা/১১২৯। আল্লামা মুনযিরী, আল্লামা বুসয়রী , ইবনু ‘আবদুল হাদী, শু’আইব আরনাউত্ব, শায়খ আলবানী এবং একদল মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মাসজিদে নাববীতে সলাত আদায়ের ফাযীলাত

১৪৭

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আমার এই মাসজিদ (মাসজিদে নাববীতে) এক রাক’আত সালাত আদায় অন্য মাসজিদে এক হাজার রাক’আত সালাত আদায়ের চাইতেও উত্তম। কিন্তু মাসজিদুল হারাম ব্যতীত।

১০২ হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/১১১৬- শু’আইব আরনাউত্ব, শায়খ আলবানী ও একদল মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

বাইতুল মুকাদ্দাসে সলাত আদায়ের ফাযীলাত

১৪৮

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃ) বলেছেন: সুলাইমান ইবনু দাঊদ বাইতুল মাকদিস মাসজিদের কাজ সম্পন্ন করে আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেন: আল্লাহর বিধানের অনুরূপ সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না, এবং যে ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাসে শুধুমাত্র সলাত আদায়ের জন্য আসবে, সে তার গুনাহ্ হতে সদ্য প্রসূত সন্তানের মত নিস্পাপ অবস্থায় বের হবে। অতঃপর নাবী (সাঃ) বলেন: প্রথম দু’টি তাঁকে দেয়া হয়েছে। আর আমি আশা করি তৃতীয়টি আমাকে দান করা হবে।

হাদীস সহীহ : ইবনু মাজাহ্ হা/১৪০৮- হাদীসের শব্দাবলী তার, নাসায়ী, আহমাদ হা/৬৬৪৪, ইবনু খুযাইমাহ হা/১৩৩৪, ইবনু হিব্বান হা/৪৪২০, মুস্তাদরাক হাকিম হা/৩৬২৪, তা’লীকুম রাগীব ২/১৩। আল্লামা বুসয়রী ‘মিসবাহুয যুজাজাহ’ গ্রন্থে হা/৫০২, এবং ডক্টর মুস্তফা আ’যমী ইবনু খুযাইমাহর তাহক্বীক্বে বলেন : সানাদ যঈফ।
শায়খ আলবানী বলেন : মুসনাদ আহমাদ ও অন্যত্র এর ভিন্ন একটি সহীহ সানাদ রয়েছে। ইমাম হাকিম বলেন : বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ, এর কোন ক্রটি আছে বলে জানা নেই। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। শু’আইব আরনাউত্ব ইবনু হিব্বান ও আহমাদের তাহক্বীক্ব গ্রন্থে বলেন : সানাদ সহীহ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “বাইতুল মাকদিসে সলাত আদায়ের মর্যাদা মাসজিদে নাববীর সলাতের এক চতুর্থাংশ।” (বায়হাক্বী- সহীহ সানাদে। দেখুন, শায়খ আলবানী প্রণীত ‘তাহজীরুল সাজিদ’- হাদীসের শব্দ তার থেকে গৃহীত)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৪৯

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃ) বলেছেন : তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও (সাওয়াবের উদ্দেশে) সফর করা যাবে না। এ মাসজিদগুলো হলো : মাসজিদুল হারাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মাসজিদ এবং মাসজিদুল আকসা।

হাদীস সহীহ ; সহীহুল বুখারী হা/১১৫

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদঃ

মাসজিদে কুবায় সলাত আদায়ের ফাযীলাত

১৫০

সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা অর্জন করার পর মাসজিদে কুবায় এসে সলাত আদায় করে, তার জন্য একটি ‘উমরাহর সাওয়াব রয়েছে।

হাসীস সহীহ : ইবনু মাজাহ্ হা/১৪১২- হাদীসের শব্দাবলী তার, তা’লীকুর রাগীব। শায়খ আলবানী বলেন : হাদীস সহীহ।

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

১৫১

বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “কুবার মাসজিদে সলাত আদায় করা ‘উমরাহ্ করার সমতুল্য।” (ইবনু মাজাহ্ হা/১৪১১, আহমাদ হা/১৫৯৮১, ত্বাবারানী, হাকিম, তা’লীকুর রাগীব ২/১৩৮, ১৩৯। ইমাম হাকিম, ইমাম যাহাবী ও হাফিয ইরাক্বী বলেন। সানাদ সহীহ। শু’আইব আরনাউত্ব ও আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস

No comments

Powered by Blogger.