রিয়াদুস সালেহীন অধ্যায় "নিষিদ্ধ বিষয়াবলী" হাদীস নং ১৫১৯-১৮১৬
নিষিদ্ধ বিষয়াবলী
পরিচ্ছেদ - ২৫৪
গীবত
(পরনিন্দা) নিষিদ্ধ এবং বাক্ সংযমের নির্দেশ ও গুরুত্ব
১৫১৯
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ
لِيَصْمُتْ». متفق عَلَيْهِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ
থাকে।”
(সহীহুল বুখারী ৬০১৮,
৩৩৩১, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮, আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২,
৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫, দারেমী ২২২২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫২০
وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم أَيُّ المُسْلمِينَ أَفْضَلُ ؟ قَالَ: «مَنْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ
مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’
তিনি বললেন, “যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।”
(সহীহুল বুখারী ১১,
মুসলিম ৪২, তিরমিযী ২৫০৪, ২৬২৮, নাসায়ী ৪৯৯৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫২১
وَعَنْ سَهْلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم : «مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ
وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ». متفق عَلَيْهِ
সাহ্ল
ইবনে সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের
মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তাঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের
নিশ্চয়তা দেব।”
(সহীহুল বুখারী ৬৪৭৪,
৬৮০৭, তিরমিযী ২৪০৮, আহমাদ ২২৩১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫২২
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم يَقُوْلُ: «إنَّ العَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ
فِيهَا يَزِلُّ بِهَا إِلَى النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ المَشْرِقِ
وَالمَغْرِبِ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে
বলতে শুনেছেন যে, “মানুষ চিন্তা-ভাবনা না ক‘রে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা
তার পদস্খলন ঘটে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে
পতিত হয়।”
(সহীহুল বুখারী ৬৪৭৭,
৬৪৭৮, মুসলিম ২৯৮৮, তিরমিযী ২৩১৪, আহমাদ ৭১৭৪, ৭৮৯৮, ৮২০৬, ৮৪৪৪, ৮৭০৩, ৮৯৬৭, ১০৫১৪,
মুওয়াত্তা মালিক ১৮৯৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫২৩
وَعَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ العَبْدَ
لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ الله تَعَالَى مَا يُلْقِي لَهَا
بَالاً يَرْفَعُهُ اللهُ بِهَا دَرَجَاتٍ، وَإِنَّ العَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ
بِالكَلَمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ تَعَالَى لاَ يُلْقِي لَهَا بَالاً يَهْوِيْ بِهَا
فِي جَهَنَّمَ». رواه البخاري
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“বান্দা আল্লাহ তা‘আলার সন্তোষজনক এমন কথা অন্যমনস্ক হয়ে বলে ফেলে, যার ফলে আল্লাহ
তার মর্যাদা উন্নীত ক‘রে দেন। আবার কখনো বান্দা অন্যমনস্ক হয়ে আল্লাহর অসন্তোষজনক
এমন কথা বলে ফেলে, যার ফলে সে জাহান্নামে গিয়ে পতিত হয়।”
(সহীহুল বুখারী ৬৪৭৭,
৬৪৭৮, মুসলিম ২৯৮৮, তিরমিযী ২৩১৪, আহমাদ ৭১৭৪, ৭৮৯৮, ৮২০৬, ৮৪৪৪, ৮৭০৩, ৮৯৬৭, ১০৫১৪,
মুওয়াত্তা মালিক ১৮৯৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫২৪
وَعَنْ أَبي عَبدِ الرَّحْمَانِ بِلاَلِ بنِ الحَارِثِ المُزَنِيِّ رضي
الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ:
«إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ تَعَالَى مَا
كَانَ يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ يَكْتُبُ اللهُ لَهُ بِهَا رِضْوَانَهُ
إِلَى يَومِ يَلْقَاهُ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ
اللهِ مَا كَانَ يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ يَكْتُبُ الله لَهُ بِهَا
سَخَطَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ». رواه مالك في المُوَطَّأ، والترمذي، وقال:
«حديث حسن صحيح
আবূ
আব্দুর রহমান বিলাল ইবনে হারেস মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও
করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তাঁর সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার
জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহ তা‘আলার অসন্তোষমূলক এমন কথা
বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তাঁর
সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন।”
(মুঅত্তা মালেক, তিরমিযী,
হাসান সহীহ) (তিরমিযী ২৩১৯, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৫৪২৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৪৮ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫২৫
وَعَنْ سُفيَانَ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَدِّثنِي بِأَمْرٍ أَعْتَصِمُ بِهِ قَالَ: قلْ:
رَبِّيَ اللهُ ثُمَّ اسْتَقِمْ» قُلْتُ: يَا رَسُول اللهِ، مَا أَخْوَفُ مَا
تَخَافُ عَلَيَّ ؟ فَأَخَذَ بِلِسَانِ نَفْسِهِ، ثُمَّ قَالَ: «هَذَا» . رواه
الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
সুফ্য়ান
ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল!
আমাকে এমন কথা বাত্লে দিন, যা মজবুত-ভাবে ধরে রাখব।’ তিনি বললেন, “তুমি বল, আমার
রব আল্লাহ, অতঃপর তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাক।” আমি পুনরায় নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর
রসূল! আমার জন্য আপনি কোন্ জিনিসকে সব চাইতে বেশি ভয় করেন?’ তিনি স্বীয় জিহ্বাকে
(স্বহস্তে) ধারণ-পূর্বক বললেন, “এটাকে।”
(মুসলিম ৩৮, তিরমিযী
২৪১০, ইবনু মাজাহ ৩৯৭২, আহমাদ ১৪৯৯০, ১৮৯৩৮, দারেমী ২৭১০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫২৬
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لَا تُكْثِرُوْا الْكَلَامَ بِغَيْرِ ذِكْرِ
اللهِ، فَإِنَّ كَثْرَةَ الْكَلَامِ بِغَيْرِ ذِكْرِ اللَّه تَعَالىٰ قَسْوَةٌ
لِلْقَلْبِ، وَإِنَّ أبْعَدَ النَّاسِ مِنَ اللهِ القَلْبُ القَاسِي» . رواه
الترمذي .
আবদুল্লাহ
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহর যিকর ভিন্ন অধিক কথা বলো না। কেননা আল্লাহ তা‘আলার
যিকর শূন্য অধিক কথা বার্তা অন্তরকে শক্ত করে ফেলে আর শক্ত অন্তরের লোক আল্লাহ
থেকে সবচাইতে দূরে।
(তিরমিযি) (আমি (আলবানী)
বলছিঃ তিনি এরূপই বলেছেন। অথচ এর সনদে ইবরাহীম ইবনু আব্দিল্লাহ্ ইবনে হাতেব রয়েছেন
তিনি মাজহূল হাল। তাকে ইবনু হিববান তার নীতি অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন আর
শাইখ আহমাদ শাকের এর দ্বারা অভ্যাসগতভাবে বিভ্রান্ত হয়ে হাদীসটিকে সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন।
আর হাদীসটিকে ইমাম মালেক ঈসা (আ) হতে পৌঁছেছে এ কথা বলে বর্ণনা করেছেন। সে ব্যাপারে
আমি “য‘ঈফা” গ্রন্থে (নং ৯২০) বিস্তারিত আলোচনা করেছি।)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
১৫২৭
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم : «مَنْ وَقَاهُ اللهُ شَرَّ مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ،
وَشَرَّ مَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ دَخَلَ الجَنَّةَ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ
(জিহ্বা) ও দু’পায়ের মাঝখানের অঙ্গ (লজ্জাস্থান) এর ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন, সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(তিরমিযী হাসান) (তিরমিযী
২৪০৯)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৫২৮
وَعَنْ عُقبَةَ بنِ عَامرٍ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا النَّجَاةُ ؟ قَالَ: «أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ،
وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ، وابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
উক্ববাহ
ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর
রসূল! কিসে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব?’ তিনি বললেন, “তুমি নিজ রসনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখ।
তোমার ঘর তোমার জন্য প্রশস্ত হোক। (অর্থাৎ, অবসর সময়ে নিজ গৃহে অবস্থান কর।) আর
নিজ পাপের জন্য ক্রন্দন কর।”
(তিরমিযী হাসান) (তিরমিযী
২৪০৬)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৫২৯
وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم قَالَ: «إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ، فَإِنَّ الأَعْضَاءَ كُلَّهَا
تَكْفُرُ اللِّسانَ، تَقُولُ: اتَّقِ اللهَ فِينَا، فَإِنَّما نَحنُ بِكَ ؛ فَإِنِ
اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا، وَإِنِ اعْوَجَجْتَ اعْوَجَجْنَا» . رواه الترمذي
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আদম সন্তান যখন সকালে উপনীত হয়, তখন তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিভকে অত্যন্ত
বিনীতভাবে নিবেদন করে যে, ‘তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ, আমাদের
ব্যাপারসমূহ তোমার সাথেই সম্পৃক্ত। যদি তুমি সোজা সরল থাক, তাহলে আমরাও সোজা-সরল
থাকব। আর যদি তুমি বক্রতা অবলম্বন কর, তাহলে আমরাও বেঁকে বসব।”
(তিরমিযী ২৪০৭, আহমাদ
১১৪৯৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৩০
وَعَنْ مُعَاذٍ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، أَخْبِرْني بِعَمَلٍ يُدْخِلُني الجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي مِنَ
النَّارِ ؟ قَالَ: «لَقَدْ سَأَلتَ عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ
يَسَّرَهُ اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ: تَعْبُدُ اللهَ لاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً،
وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ
البَيْتَ» ثُمَّ قَالَ: «أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الخَيْرِ ؟ الصَّوْمُ
جُنَّةٌ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ النَّارَ،
وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ» ثُمَّ تَلاَ: ﴿ تَتَجَافَىٰ
جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ ﴾ حَتَّى بَلَغَ ﴿ يَعۡمَلُونَ ﴾ [السجدة: ١٦، ١٧]
ثُمَّ قَالَ: «أَلاَ أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الأَمْرِ، وَعَمُودِهِ، وَذِرْوَةِ سِنَامِهِ»
قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «رَأسُ الأمْرِ
الإسْلامُ، وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ، وَذِرْوَةِ سِنَامِهِ الجِهادُ» ثُمَّ قَالَ:
«أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمِلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ !» قُلْتُ: بلَى يَا رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ وَقَالَ: «كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا»
قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُوْنَ بِمَا
نَتَكَلَّمُ بِهِ ؟ فَقَالَ: «ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ! وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي
النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ ؟». رواه الترمذي،
وقال: حديث حسن صحيح
মুআয
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে
আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন আমল বাত্লে দেন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং
জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।’ তিনি বললেন, “তুমি বিরাট (কঠিন) কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন
করলে। তবে এটা তার পক্ষে সহজ হবে, যার পক্ষে মহান আল্লাহ সহজ ক‘রে দেবেন। (আর তা
হচ্ছে এই যে,) তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার কোন অংশী স্থাপন করবে না। নামায
প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দেবে, মাহে রমযানের রোযা পালন করবে এবং কাবা গৃহের হজ্জ
পালন করবে।” পুনরায় তিনি বললেন, “তোমাকে কল্যাণের দ্বারসমূহ বাতলে দেব না কি? রোযা
ঢাল স্বরূপ, সদকাহ গুনাহ নিশ্চিহ্ন করে; যেমন পানি আগুনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আর
মধ্য রাত্রিতে মানুষের নামায।” অতঃপর তিনি এই আয়াত দু’টি পড়লেন- যার অর্থ, “তারা
শয্যা ত্যাগ করে, আশায় বুক বেধেঁ এবং আশংকায় ভীতি-বিহ্বল হয়ে তাদের প্রতিপালককে
আহ্বান করে এবং আমি তাদেরকে যে সব জীবিকা দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় ক‘রে থাকে।
তাদের সৎকর্মের পুরস্কার স্বরূপ তাদের জন্য নয়ন-প্রীতিকর যা কিছু লুক্কায়িত রাখা
হয়েছে, কেউ তা অবগত নয়।” (সূরা সেজদা ১৬-১৭ আয়াত) তারপর বললেন, “আমি তোমাকে সব
বিষয়ের (দ্বীনের) মস্তক, তার খুঁটি, তার উচ্চতম চূড়া বাতলে দেব না কি?” আমি বললাম,
‘অবশ্যই বাতলে দিন, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “বিষয়ের মস্তক হচ্ছে ইসলাম, তার
স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং তার উচ্চতম চূড়া হচ্ছে জিহাদ।” পুনরায় তিনি প্রশ্ন করলেন,
“আমি তোমাকে সে সবের মূল সম্বন্ধে বলে দেব না কি?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন, হে
আল্লাহর রসূল!’ তখন তিনি নিজ জিভটিকে ধরে বললেন, “তোমার মধ্যে এটিকে সংযত রাখ।”
মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা যে কথা বলি তাতেও কি আমাদেরকে হিসাব দিতে
হবে?’ তিনি বললেন, “তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক হে মুআয! মানুষকে তাদের নিজেদের
জিভ-ঘটিত পাপ ছাড়া অন্য কিছু কি তাদের মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে?”
(তিরমিযী, হাসান সহীহ)
(তিরমিযী ২৬১৬, মা ৩৯৭৩, আহমাদ ২১৫১১, ২১৫৪২, ২১৫৬৩, ২১৬১৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৩১
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ ؟» قَالُوا: اَللهُ وَرَسُولُهُ
أَعْلَمُ، قَالَ: «ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ: أَفَرَأَيْتَ إِنْ
كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ
اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدْ بَهَتَّهُ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল
অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।”
বলা হল, ‘আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও
কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, “তুমি যা (সমালোচনা ক‘রে) বললে, তা যদি তার মধ্যে
থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা ক‘রে) বললে, তা যদি তার মধ্যে
না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।”
(মুসলিম ২৫৮৯, তিরমিযী
১৯৩৪, আবূ দাউদ ৪৮৭৪, আহমাদ ৭১০৬, ৮৭৫৯, ২৭৪৭৩, ৯৫৮৬, দারেমী ২৭১৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৩২
وَعَنْ أَبي بَكْرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ فِي خُطْبَتِهِ يَوْمَ النَّحْرِ بِمِنًى فِي
حَجَّةِ الوَدَاعِ: «إِنَّ دِمَاءَكُمْ، وَأَمْوَالَكُمْ، وَأَعْرَاضَكُمْ،
حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، فِي
بَلَدِكُمْ هَذَا، أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বিদায়ী হজ্জে মিনায় ভাষণ দানকালে বলেছেন, “নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল এবং
তোমাদের সম্ভ্রম
তোমাদের (আপসের মধ্যে) এ রকমই হারাম, যেমন তোমাদের এ দিনের সম্মান তোমাদের এ মাসে
এবং তোমাদের এ শহরে রয়েছে। শোন! আমি কি পৌঁছে দিলাম?”
(সহীহুল বুখারী ৬৭,
১০৫, ১৪৪১, ৩১৯৭, ৪৪০৬, ৪৬৬২, ৫৫৫০, ৭০৭৮, ৭৪৪৭, মুসলিম ১৬৭৯, ইবনু মাজাহ ২৩৩, আহমাদ
১৯৮৭৩, ১৯৮৯৪, ১৯৯৩৬, ১৯৯৮৫, দারেমী ১৯১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৩৩
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم: حَسْبُكَ مِنْ صَفِيَّةَ كَذَا وَكَذَا . قَالَ بَعْضُ
الرُّوَاةِ: تَعْنِي قَصِيرَةً، فقالَ: «لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ
بِمَاءِ البَحْرِ لَمَزَجَتْهُ!» قَالَتْ: وَحَكَيْتُ لَهُ إِنْسَاناً فَقَالَ:
«مَا أُحِبُّ أنِّي حَكَيْتُ إِنْسَاناً وَإِنَّ لِي كَذَا وَكَذَا». رواه أَبُو
داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح .
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন
বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা
সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!”
আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি
বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ
ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ) (আবূ
দাউদ ৪৮৭৫, তিরমিযী ২৫০২, আহমাদ ২৫০৩২)
مَزَجَته এর
ভাবার্থ হল, তার সাংঘাতিক দুর্গন্ধ ও নিকৃষ্টতার কারণে সমুদ্রের পানিতে মিশে তার
স্বাদ অথবা গন্ধ পরিবর্তন ক‘রে দেয়। এই উপমাটি গীবত নিষিদ্ধ হওয়া ও তা থেকে
সতর্কীকরণের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও পরিণত বাক্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ, (আমার নবী) মনগড়া কথা বলে না, (সে যা কিছু বলে) তা প্রত্যাদেশকৃত অহী ব্যতীত
আর কিছুই নয়। (সূরা নাজ্ম ৩-৪ আয়াত)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৩৪
وَعَنْ أَنسٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم: «لَمَّا عُرِجَ بي مَرَرْتُ بِقَومٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ
مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلاَءِ يَا
جِبرِيلُ؟ قَالَ: هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأكُلُوْنَ لُحُومَ النَّاسِ، وَيَقَعُونَ
فِي أَعْرَاضِهِمْ !» . رواه أَبُو داود
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু
মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের
মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিব্রীল! তিনি
বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের মাংস ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।”
(সহীহুল বুখারী ৬৫৮১,
৭৫১৭, আবূ দাউদ ৪৭৪৮, ৪৮৭৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৩৫
. وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كُلُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ حَرَامٌ:
دَمُهُ وَعِرْضُهُ وَمَالُهُ» . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ অন্য মুসলিমের উপর হারাম।”
(সহীহুল বুখারী ৫১৪৪,
৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৩, ২৫৬৪, তিরমিযী ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ী ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, ৪৫০৮,
আবূ দাউদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৪৯১৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪, আহমাদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯,
২৭৩৩৪, ১০৫৬৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৩৯১, ১৬৮৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৫৫
গীবতে
(পরচর্চায়) অংশগ্রহণ করা হারাম। যার নিকট গীবত করা হয় তার উচিত গীবতকারীর তীব্র
প্রতিবাদ করা এবং তার সমর্থন না করা। আর তাতে সক্ষম না হলে সম্ভব
হলে উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়া
১৫৩৬
وَعَنْ أَبِي الدَّردَاءِ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ، رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ
يَومَ القيَامَةِ» . رواه الترمذي، وقال :[ حديث حسن ]
আবূ
দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তা'আলা
জাহান্নামের আগুন থেকে তার চেহারাকে রক্ষা করবেন।’’
(তিরমিযী- হাসান) (তিরমিযী
১৯৩১, আহমাদ ২৬৯৮৮, ২৬৯৯৫)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৫৩৭
وَعَنْ عِتبَانَ بنِ مَالكٍ رضي الله عنه فِي حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ
المَشْهُورِ الَّذِيْ تَقَدَّمَ فِي بَابِ الرَّجَاءِ قَالَ: قَامَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم يُصَلِّي فَقَالَ: «أَيْنَ مَالِكُ بنُ الدُّخْشُمِ ؟» فَقَالَ
رَجُلٌ : ذَلِكَ مُنَافِقٌ لاَ يُحِبُّ اللهَ وَلاَ رَسُولَهُ، فَقَالَ النَّبِيّ
صلى الله عليه وسلم : «لاَ تَقُلْ ذَلِكَ أَلاَ تَراهُ قَدْ قَالَ: لاَ إِلٰهَ
إِلاَّ اللهُ يُريدُ بِذَلكَ وَجْهَ اللهِ ! وإنَّ الله قَدْ حَرَّمَ عَلَى
النَّارِ مَنْ قَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ يَبْتَغي بِذَلِكَ وَجْهَ اللهِ» .
متفق عَلَيْهِ
ইত্বান
ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যা বিগত ‘আল্লাহর প্রতি আশা’ পরিচ্ছেদে বর্ণিত
একটি সুদীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম নামায পড়ানোর উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘মালেক ইবনে দুখ্শুম
কোথায়!’’ একটি লোক বলে উঠল, ‘সে তো একজন মুনাফিক; আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসে
না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘ও কথা বলো না। তুমি কি মনে কর
না যে, সে (কালিমাহ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়েছে এবং সে তার দ্বারা আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়? যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে
(কালিমাহ) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম ক‘রে
দেন।’’
(সহীহুল বুখারী ৭৭,
১৮৯, ৪২৪, ৪২৫, ৬৬৭, ৬৮৬, ৮৩৮, ৮৪০, ১১৮৬, ৪০১০, ৫৪০১, ৬৩৫৪, ৬৪২২, ৬৯৩৮, মুসলিম ৩৩,
আবূ দাউদ ১৪১১, ইবনু মাজাহ ৬৬০, ৭৫৪, আহমাদ ২৩১০৯, ২৩১২৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৩৮
وَعَنْ كَعْبِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه فِي حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ فِي
قِصَّةِ تَوْبَتِهِ وَقَدْ سَبَقَ فِي بَابِ التَّوبَةِ. قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم وَهُوَ جَالِسٌ فِي القَومِ بِتَبُوكَ : «مَا فَعَلَ كَعْبُ
بنُ مَالِكٍ ؟» فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم! حَبَسَهُ بُرْدَاهُ وَالنَّظَرُ فِي عِطْفَيْهِ . فَقَالَ لَهُ مُعاذُ
بنُ جَبَلٍ: بِئْسَ مَا قُلْتَ، وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا
عَلِمنَا عَلَيْهِ إِلاَّ خَيْراً، فَسَكَتَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم .
متفقٌ عَلَيْهِ
কা’ব
ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যা তাওবাহ পরিচ্ছেদে ২২ নম্বরে সুদীর্ঘ হাদীস
তাঁর তাওবার কাহিনী অতিবাহিত হয়েছে, তিনি বলেন, তাবূক পৌঁছে যখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের মাঝে বসে ছিলেন, তখন আমার ব্যাপারে বললেন, ‘‘কা’ব বিন
মালেকের কি হয়েছে?’’ বানু সালেমাহ (গোত্রের) একটি লোক বলে উঠল যে, ‘হে আল্লাহর
রসূল! তার দুই চাদর এবং দুই পার্শ্ব (বাহু) দর্শন (অর্থাৎ ধন ও তার অহংকার) তাকে
আটকে দিয়েছে।’ (এ কথা শুনে) মু‘আয ইবন জাবাল (রাঃ) বললেন, ‘‘তুমি নিকৃষ্ট কথা
বললে। আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রসূল! আমরা তাকে ভালই জানি।’’ সুতরাং আল্লাহর রসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন।
(সহীহুল বুখারী ২৭৫৮,
২৯৮৭- ২৯৫০, ৩০৮৮, ৩৫৫৬, ৩৮৮৯, ৩৯৫১, ৪৪১৮, ৪৬৭৭, ৪৬৭৩, ৪৬৭৬, ৪৬৭৭, ৪৬৭৮, ৬২৫৫, ৬৬৯০,
৭২২৫, মুসলিম ২৭৬৯, তিরমিযী ৩১০২, নাসায়ী ৩৮২৪- ৩৮২৬, আবূ দাউদ ২২০২, ৩৩১৭, ৩৩১৯, ৩৩২১,
৪৬০০, আহমাদ ১৫৩৪৩, ১৫৩৪৫, ১৫৩৫৪, ২৬৬২৯, ২৬৬৩৪, ২৬৬৩৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৫৬
যে
সব কারণে গীবত বৈধ
জেনে
রাখুন যে, সঠিক শরয়ী উদ্দেশ্যে গীবত বৈধ; যখন গীবত ছাড়া সে উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া
সম্ভবপর হয় না। এমন কারণ ৬টিঃ-
১। অত্যাচার ও নির্যাতন: নির্যাতিত ও অত্যাচারিত ব্যক্তির পক্ষে বৈধ যে, সে শাসক,
বিচারক প্রমুখ (প্রভাবশালী) ব্যক্তি যাঁরা অত্যাচারীকে উচিত সাজা দিয়ে ন্যায় বিচার
করার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রাখেন তাঁদের নিকট নালিশ করবে যে, ‘অমুক ব্যক্তি আমার উপর
এই অত্যাচার করেছে।’
২। মন্দ কাজের অপসারণ ও পাপীকে সঠিক পথ ধরানোর কাজে সাহায্য কামনা। বস্ত্ততঃ শরীয়ত
বহিঃর্ভূত কর্মকাণ্ড বন্ধ করার ব্যাপারে শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিকে গিয়ে বলবে যে,
‘অমুক ব্যক্তি মন্দ কাজে লিপ্ত। সুতরাং আপনি তাকে তা থেকে বাধা দিন’ ইত্যাদি। তবে
এর পিছনে কেবল অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে বাধা দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে;
অন্যথা তা হারাম হবে।
৩। ফতোয়া জানা। মুফতি (বা আলেমের) নিকট গিয়ে বলবে, ‘আমার পিতা আমার ভাই বা আমার
স্বামী অথবা অমুক ব্যক্তি এই অন্যায় অত্যাচার আমার প্রতি করেছে। তার কি কোন অধিকার
আছে? (এমন করার অধিকার যদি না থাকে) তবে তা থেকে মুক্তি পাবার এবং অন্যায়ের
প্রতিকার করার ও নিজ অধিকার অর্জন করার উপায় কী?’ অনুরূপ আবেদন পেশ করা। এরূপ বলা
প্রয়োজনে বৈধ। তবে সতর্কতামূলক ও উত্তম পন্থা হল, নাম না নিয়ে যদি বলে, ‘এক
ব্যক্তি, বা লোক বা স্বামী এই করেছে, সে সম্পর্কে আপনি কী বলেন?’ নির্দিষ্ট কোন
ব্যক্তির নাম না নিয়ে এরূপ বললে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে। এ সত্ত্বেও নির্দিষ্ট
ক‘রে নাম নিয়ে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা বৈধ। যেমন এ মর্মে পরবর্তীতে হিন্দের হাদীস
উল্লেখ করব---ইনশা আল্লাহ তা'আলা।
৪। মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক করা ও তাদের মঙ্গল কামনা করা। এটা অনেক ধরণের হতে
পারে। তার মধ্যে যেমন:-
(ক) হাদীসের দোষযুক্ত রাবী ও (বিচারকার্যে) সাক্ষীর দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করা।
সর্বসম্মতিক্রমে এরূপ করা বৈধ; বরং প্রয়োজনবশতঃ ঐরূপ করা অত্যাবশ্যক।
(খ) কোন ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক জোড়ার জন্য, কোন ব্যবসায়ে অংশীদারি গ্রহণের
উদ্দেশ্যে, কারো কাছে আমানত রাখার জন্য, কারো সাথে আদান-প্রদান করার মানসে অথবা
কারো প্রতিবেশী হবার জন্য ইত্যাদি উদ্দেশ্যে পরামর্শ চাওয়া। আর সে ক্ষেত্রে যার
নিকট পরামর্শ চাওয়া হয়, তার উচিত প্রকৃত অবস্থা খুলে বলা। বরং হিতাকাঙ্ক্ষী মনোভাব
নিয়ে যত দোষ-ত্রুটি থাকবে সব ব্যক্ত ক‘রে দেবে। অনুরূপভাবে যখন কোন দ্বীনী জ্ঞান
পিপাসুকে দেখবে যে, সে কোন বিদআতী ও মহাপাপী লোকের নিকট জ্ঞানার্জন করতে যাচ্ছে
এবং আশংকা বোধ করবে যে, ঐ বিদআতী ও ফাসেক (মহাপাপী) দ্বারা সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে,
তাহলে সে আবশ্যিকভাবে তাকে তার অবস্থা ব্যক্ত ক‘রে তার মঙ্গল সাধন করবে। কিন্তু এ
ক্ষেত্রে শর্ত হল যে, এর পিছনে তার উদ্দেশ্য যেন হিতাকাঙ্ক্ষাই হয়। এ ব্যাপারটি
এমন যে, সাধারণত: এতে ভুল হয়ে থাকে। কখনো বা বক্তা হিংসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐ কথা বলে।
কিন্তু শয়তান তার ব্যাপারটা গোলমাল ক‘রে দেয় এবং তার মাথায় গজিয়ে দেয় যে, সে হিত
উদ্দেশ্যেই ঐ কাজ করছে (অথচ বাস্তব তার বিপরীত)। এ জন্য মানুষের সাবধান থাকা উচিত।
(গ) যখন কোন উচ্চপদস্থ সরকারী অফিসার, গভর্নর বা শাসক, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না
করে---হয় তার অযোগ্যতার কারণে কিংবা পাপাচারী বা উদাসীন থাকার কারণে
ইত্যাদি---তাহলে উক্ত ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রনেতার নিকট তার স্বরূপ তুলে ধরা
একান্ত কর্তব্য। যাতে সে তার স্থানে অন্য উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ করতে পারে কিংবা
কমপক্ষে তার সম্পর্কে তার জানা থাকবে এবং সেই অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করবে এবং তার
প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকবে, আর সে তাকে সংশোধন হবার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা
করবে, তারপর তাকে পরিবর্তন করে দেবে।
৫। প্রকাশ্যভাবে কেউ পাপাচরণ বা বিদআতে লিপ্ত হলে তার কথা বলা। যেমন প্রকাশ্যভাবে
মদ্য পান করলে, লোকের ধন অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করলে, বলপূর্বক ট্যাক্স বা চাঁদা আদায়
করলে, অন্যায়ভাবে যাকাত ইত্যাদি অসূল করলে, অন্যায় কাজের কর্তৃত্ব করলে, তার কেবল
সেই প্রকাশ্য অন্যায়ের কথা উল্লেখ করা বৈধ। (যাতে তার অপনোদন সম্ভব হয়) পক্ষান্তরে
তার অন্যান্য গোপন দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করা বৈধ নয়। তবে যদি উল্লিখিত কারণসমূহের
মধ্যে অন্য কোন কারণ থাকে, যেমন আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, তাহলে তাও ব্যক্ত করা
বৈধ হবে।
৬। প্রসিদ্ধ নাম ধরে পরিচয় দেওয়া। সুতরাং যখন কোন মানুষ কোন মন্দ খেতাব দ্বারা
সুপরিচিত হয়ে যাবে; যেমন চোখ-ওঠা, খোঁড়া, কালা, অন্ধ, টেরা ইত্যাদি তখন সেই
পরিচায়ক খেতাবগুলি উল্লেখ করা সিদ্ধ। তবে অবমাননা বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে
সে সব উল্লেখ করা নিষিদ্ধ। পক্ষান্তরে উক্ত পদবী ছাড়া অন্য শব্দ বা নাম দ্বারা যদি
পরিচয় দান সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই সব চাইতে উত্তম।
এই হল ছয়টি কারণ, যার ভিত্তিতে গীবত করা বৈধ। আর এর অধিকাংশ সর্ববাদিসম্মত। সহীহ
হাদীস থেকে এর বিভিন্ন দলীলও প্রসিদ্ধ। যার কিছু নিম্নরূপ:-
১৫৩৯
عَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ رَجُلاً اسْتَأذَنَ عَلَى
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «ائْذَنُوا لَهُ، بِئْسَ أَخُو
العَشِيرَةِ ؟» . متفق عَلَيْهِ . احتَجَّ بِهِ البُخَارِيُّ فِي جَوَازِ غِيبَة
أَهلِ الفَسَادِ وَأَهلِ الرِّيبِ .
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও। ও নিজ বংশের
অত্যন্ত মন্দ ব্যক্তি।’’
(সহীহুল বুখারী ৬০৩২,
৬০৫৪, ৬১৩১, মুসলিম ২৫৯১, তিরমিযী ১৯৯৬, আবূ দাউদ ৪৭৯১, ৪৭৯২, আহমাদ ২৩৫৮৬, ২৩৯৮৪,
২৪২৭৭, ২৪৭২৬, ২৪৮৭৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৪০
وَعَنْهُا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم: «مَا أَظُنُّ فُلاَناً وَفُلاَناً يَعْرِفَانِ مِنْ دِينِنَا شَيْئاً»
. رواه البخاري . قَالَ: قَالَ اللَّيْثُ بنُ سَعدٍ أَحَدُ رُوَاةِ هَذَا
الحَدِيثِ : هَذَانِ الرَّجُلاَنِ كَانَا مِنَ المُنَافِقِينَ .
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘আমার মনে হয় না যে, অমুক ও অমুক লোক আমাদের দ্বীন
সম্পর্কে কিছু জ্ঞান রাখে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬০৬৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৪১
وَعَنْ فَاطِمَةَ بِنتِ قَيسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : أَتَيتُ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقُلْتُ : إِنَّ أَبَا الجَهْمِ وَمُعَاوِيَةَ
خَطَبَانِي ؟ فَقَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَمَّا مُعَاوِيَةُ،
فَصُعْلُوكٌ لاَ مَالَ لَهُ، وَأَمَّا أَبُو الجَهْمِ، فَلاَ يَضَعُ العَصَا عَنْ
عَاتِقِهِ». متفق عَلَيْهِ
ফাত্বেমাহ
বিন্তে ক্বাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, ‘আবুল জাহ্ম ও মুয়াবিয়াহ আমাকে
বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন। (এ ক্ষেত্রে আমি কী করব?)’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘মুআবিয়াহ তো গরীব মানুষ, তার নিকট মালধনই নেই। আর আবুল
জাহ্ম, সে তো নিজ কাঁধ হতে লাঠিই নামায় না।’’
(মুসলিম ১৪৮০, তিরমিযী
১১৩৫, ১১৮০, নাসায়ী ৩২২২, ৩২৩৭, ৩২৪৪, ৩২৪৫, ৩৪০৩, ৩৪০৪, ৩৪০৫, ৩৪১৮, ৩৫৪৫ ৩৫৪৯, ৩৫৫১,
৩৫৫২, আবূ দাউদ ২২৮৪, ২২৮৮, আহমাদ ২৬৫৬০, ২৬৭৭৫, ২৬৭৮৭, ২৬৭৯১, ২৬৭৯৩, ২৬৭৯৭, মুওয়াত্তা
মালিক ১২৩৪, দারেমী ২১৭৭, ২২৭৪, ২২৭৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৪২
وَعَنْ زَيدِ بنِ أَرْقَمَ رضي الله عنه قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ
اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ أَصَابَ النَّاسَ فِيهِ شِدَّةٌ، فَقَالَ
عَبدُ اللهِ بنُ أُبَيّ : ﴿ لا تنفقوا على من عند رسول الله حتى ينفضوا ﴾
[المنافقون: ٧]، وَقَالَ: ﴿ لئن رجعنا إلى المدينة ليخرجن الأعز منها الأذل﴾
[المنافقون: ٨]، فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَأخْبَرْتُهُ
بِذَلِكَ، فَأَرْسَلَ إِلَى عَبدِ اللهِ بنِ أُبَيِّ، فَاجْتَهَدَ يَمِينَهُ : مَا
فَعلَ، فَقَالُوا : كَذَبَ زَيدٌ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَوَقَعَ في
نَفْسِي مِمَّا قَالُوهُ شِدَّةٌ حَتَّى أَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى تَصْدِيقِي : ﴿
إذا جاءك المنافقون﴾ [المنافقون: ١] ثُمَّ دَعَاهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم لِيَسْتَغْفِرَ لَهُمْ فَلَوَّوْا رُؤُوسَهُمْ . متفق عَلَيْهِ
যায়েদ
ইবনে আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে এক সফরে বের হলাম, যাতে লোকেরা সাংঘাতিক কষ্ট
পেয়েছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই (মুনাফিকদের সর্দার, স্ব-মতাবলম্বী লোকদেরকে
সম্বোধন ক‘রে) বলল, ‘তোমরা আল্লাহর রসূলের সঙ্গীদের জন্য ব্যয় করো না, যতক্ষণ না
তারা সরে দাঁড়ায়।’ এবং সে আরও বলল, ‘আমরা মদিনায় ফিরে গেলে সেখান হতে সম্মানী
অবশ্যই হীনকে বহিষ্কার করবে।’ (যায়েদ বলেন,) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে তা জানিয়ে দিলাম। সুতরাং রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে ডেকে পাঠালেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই (কিন্তু) বারবার শপথ করে বলল যে, সে তা বলেনি। লোকেরা বলল,
‘যায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মিথ্যা কথা বলেছে।’
(যায়েদ বলেন,) লোকদের কথা শুনে আমার মনে অত্যন্ত দুঃখ হল। অবশেষে আল্লাহ আমার কথার
সত্যতায় সূরা ‘ইযা জা-আকাল মুনাফিক্বূন’ অবতীর্ণ করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর নিকট) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে তাদেরকে
ডাকলেন। কিন্তু তারা নিজেদের মাথা ফিরিয়ে নিল।
(সহীহুল বুখারী ৪৯০০,
মুসলিম ২৭৭২, তিরমিযী ৩৩১২-৩৩১৪, আহমাদ ১৮৭৯৯, ১৮৮০৯, ১৮৮৪৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৪৩
وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : قَالَتْ هِنْدُ
امْرَأةُ أَبي سُفْيَانَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ
رَجُلٌ شَحِيحٌ وَلَيْسَ يُعْطِينِي مَا يَكْفِينِي وَوَلَدِي إِلاَّ مَا أَخَذْتُ
مِنْهُ، وَهُوَ لاَ يَعْلَمُ ؟ قَالَ: «خُذِيْ مَا يَكْفِيكِ وَوَلَدَكِ
بِالمَعْرُوفِ» . متفق عَلَيْهِ
আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ সুফয়ানের স্ত্রী হিন্দ্ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন যে, ‘আবূ সুফয়ান একজন কৃপণ লোক। আমি তার
সম্পদ থেকে (তার অজান্তে) যা কিছু নিই তা ছাড়া সে আমার ও আমার সন্তানকে পর্যাপ্ত
পরিমাণে খরচ দেয় না।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
‘‘তোমার ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন মোতাবেক খরচ (তার অজান্তে) নিতে পার।’’
(সহীহুল বুখারী ২২১১,
২৪৬০, ৫৩৫৯, ৫৩৬৪, ৫৩৭০, ৬৬৪১, ৭১৬১, ৭১৮০, মুসলিম ১৭১৪, নাসায়ী ৫৪২০, আবূ দাউদ ৩৫৩২,
৩৫৩৩, ইবনু মাজাহ ২২৯৩, আহমাদ ২৩৫৯৭, ২৩৭১১, ২৫১৮৫, ২৫৩৬০, দারেমী ২২৫৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৫৭
চুগলী
করা হারাম
১৫৪৪
وعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مرَّ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ: «إِنَّهُمَا
يُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبيرٍ ! بَلَى إِنَّهُ كَبِيرٌ : أَمَّا
أَحَدُهُمَا، فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ لاَ
يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ» . متفق عَلَيْهِ . وهذا لفظ إحدى روايات البخاري
হুযাইফা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘চুগলখোর জান্নাতে যাবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ৬০৫৬,
মুসলিম ১০৫, তিরমিযী ২০২৬, আবূ দাউদ ৪৮৭১, আহমাদ ২২৭৩৬, ২২৭৯৪, ২২৮১৪, ২২৮৫০, ২২৮৫৯,
২২৮৭৮, ২২৯১১, ২২৯২৪, ২২৯৪০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৪৫
وعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مرَّ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ: «إِنَّهُمَا
يُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبيرٍ ! بَلَى إِنَّهُ كَبِيرٌ : أَمَّا
أَحَدُهُمَا، فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ، وَأَمَّا الآخَرُ فَكَانَ لاَ
يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ» . متفق عَلَيْهِ . وهذا لفظ إحدى روايات البخاري
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) দুটো কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, ‘‘ঐ দুই কবর-বাসীর আযাব
হচ্ছে। অবশ্য ওদেরকে কোন বড় ধরনের অপরাধ (বা কোন কঠিন কাজের) জন্য আযাব দেওয়া
হচ্ছে না।’’ (তারপর বললেন,) ‘‘হ্যাঁ, অপরাধ তো বড়ই ছিল। ওদের একজন (লোকের) চুগলী
করে বেড়াত। আর অপরজন পেশাবের ছিটা থেকে বাঁচত না।’’
(সহীহুল বুখারী ২১৬,
২১৮, ১৩৬১, ১৩৭৮, ৬০৫২, ৬০৫৫, মুসলিম ২৯২, তিরমিযী ৭০, নাসায়ী ৩১, ২০৬৮, আবূ দাউদ ২০,
ইবনু মাজাহ ৩৪৭, আহমাদ ১৯৮১, দারেমী ৭৩৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৪৬
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا العَضْهُ ؟ هِيَ النَّمِيمَةُ ؛ القَالَةُ بَيْنَ
النَّاسِ» . رواه مسلم
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘মিথ্যা ও অপবাদ’ জিনিস আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব না? তা হচ্ছে চুগলী করা,
লোকালয়ে কারো সমালোচনা করা।’’
(সহীহুল বুখারী ৬১৩৪,
মুসলিম ২৬০৬, তিরমিযী ১৯৭১, আবূ দাউদ ৪৯৮৯, আহমাদ ৩৬৩১, ৩৭১৯, ৩৮৮৬, ৪০৮৪, ৪০৯৭, ৪১৭৬,
২৭৮৩৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৫৮
জনগণের
কথাবার্তা নিষ্প্রয়োজনে শাসক ও সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছানো নিষেধ। তবে যদি
কোন ক্ষতি বা বিশৃঙ্খলার আশংকা হয় তাহলে তা করা সিদ্ধ
১৫৪৭
وَعَنِ ابْنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لَا يُبَلِّغْنِيْ أَحَدٌ مِّنْ
أَصْحَابِيْ عَنْ أَحَدٍ شَيْئاً، فَإنِّيْ أُحِبُّ أنْ أَخْرُجَ إِليْكُمْ
وَأَنَا سَلِيْمُ الصَّدْرِ» رواه أبو داود والترمذي
আবদুল্লাহ
ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন: আমার সম্মুখে আমার সাহাবীদের কেউ যেন অন্য কারো
দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করে। কেননা তোমাদের সঙ্গে আমি প্রশান্ত মন নিয়ে সাক্ষাৎ করতে
চাই।
(আবূ দাউদ ও তিরমিযী)
(আমি (আলবানী) বলছিঃ ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে গারীব মনে করে তার দুর্বল হওয়ার দিকে ইঙ্গিত
করেছেন। আর এর সনদে মাজহূল বর্ণনাকারী রয়েছেন যেমনটি আমি ‘‘মিশকাত’’ গ্রন্থে (নং ৪৮৫২)
বর্ণনা করেছি। (আর মাজহূল বর্ণনাকারী হচ্ছেন ওয়ালীদ ইবনু আবী হিশাম)। শু‘য়াইব আলআরনাঊতও
হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। দেখুন আবূ আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ্ নায়াঅনী কর্তৃক
লিখিত গ্রন্থঃ ‘‘মাজমূ‘আতুল আহাদীসুয য‘ঈফাহ্ ফী কিতাবি রিয়াযিস সালেহীন’’ (২৯)।)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৫৯
দু’মুখো-পনার
নিন্দাবাদ
১৫৪৮
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «تَجِدُونَ النَّاسَ مَعَادِنَ : خِيَارُهُم
فِي الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الإسْلاَمِ إِذَا فَقُهُوا، وَتَجِدُونَ
خِيَارَ النَّاسِ فِي هَذَا الشَّأنِ أَشَدَّهُمْ كَرَاهِيَةً لَهُ، وَتَجِدُونَ
شَرَّ النَّاسِ ذَا الوَجْهَينِ، الَّذِي يَأتِي هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ، وَهَؤُلاَءِ
بِوَجْهٍ» . متفق عَلَيْهِ
আবু
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা মানবমন্ডলীকে বিভিন্ন (পদার্থের) খনির ন্যায় পাবে।
জাহেলী (অন্ধযুগে) যারা উত্তম ছিল, তারা ইসলামে (দীক্ষিত হবার পরও) উত্তম থাকবে;
যখন তারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করবে। তোমরা শাসন-ক্ষমতা ও কর্তৃত্বভার গ্রহণের
ব্যাপারে সে সমস্ত লোককে সর্বাধিক উত্তম পাবে, যারা ঐ সব পদগুলিকে সবচেয়ে বেশী
ঘৃণা বোধ করবে। আর সর্বাধিক নিকৃষ্ট পাবে দু’মুখো লোককে, যে এদের নিকট এক মুখ নিয়ে
আসে আর ওদের কাছে আর এক মুখ নিয়ে আসে।’’
(সহীহুল বুখারী ২৯২৮,
২৯২৯, ৩৪৯৩, ৩৪৯৪, ৩৪৯৬, ৩৫৮৯, ৩৫৯০, ৩৫৯১, ৬০৫৮, ৭১৭৯, মুসলিম ১৮১৮, ২৫২৬, ২৯১২, তিরমিযী
২০২৫, ২২১৫, আদ ৪৩০৩, ৪৩০৪, ৪৮৭২, ইবনু মাজাহ ৪০৯৬, ৪০৯৭, আহমাদ ৭২২২, ৭২৯৬, ৭৪৪৪,
৭৪৯০, ৭৬৯০, ৭৬১৯, ৭৮৩০, ৮০০৮, ৮২৩৩, ৮৯২০, ৯২৮৪, ৯৯২২, ১০০৫৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৬৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৪৯
وَعَنْ مُحَمَّدِ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ : أَنَّ نَاساً قَالُوا
لِجَدِّهِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : إنَّا نَدْخُلُ عَلَى
سَلاَطِيننَا فَنَقُولُ لَهُمْ بِخِلاَفِ مَا نَتَكَلَّمُ إِذَا خَرَجْنَا مِنْ
عِنْدِهِمْ . قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ هَذَا نِفَاقاً عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم . رواه البخاري
মুহাম্মাদ
ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কতিপয় লোক তাঁর দাদা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার
(রাঃ)-এর নিকট নিবেদন করল যে, ‘আমরা আমাদের শাসকদের নিকট যাই এবং তাদেরকে ঐ সব কথা
বলি, যার বিপরীত বলি তাদের নিকট থেকে বাইরে আসার পর। (সে সম্বন্ধে আপনার অভিমত
কী?)’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
যামানায় এরূপ আচরণকে আমরা ‘মুনাফিক্বী’ আচরণ বলে গণ্য করতাম।’’
(সহীহুল বুখারী ৭১৭৮,
ইবনু মাজাহ ৩৯৭৫, আহমাদ ৫৭৯৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৬০
মিথ্যা
বলা হারাম
১৫৫০
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى البِرِّ، وَإِنَّ
البِرَّ يَهْدِي إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ
عِنْدَ اللهِ صِدِّيقاً . وَإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الفُجُورِ، وَإِنَّ
الفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ
عِنْدَ اللهِ كَذَّاباً». متفقٌ عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের দিকে
পথ নির্দেশনা করে। আর মানুষ সত্য কথা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তাকে
‘মহাসত্যবাদী’ রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদিতা নির্লজ্জতা ও
পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা
বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তাকে ‘মহামিথ্যাবাদী’ রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়।
(সহীহুল বুখারী ৬০৯৪,
মুসলিম ২৬০৬, ২৬০৭, তিরমিযী ১৯৭১, আবূ দাউদ ৪৯৮৯, ইবনু মাজাহ ৪৬, আহমাদ ৩৫৩১, ৩৭১৯,
৩৮৩৫, ৩৮৮৬, ৪০১২, ৪০৮৪, ৪০৯৭, ৪১৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৫৯, দারেমী ২৭১৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৫১
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا:
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ، كَانَ
مُنَافِقاً خَالِصاً، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ، كَانَتْ فِيهِ
خَصْلَةٌ مِنْ نِفاقٍ حَتَّى يَدَعَهَا : إِذَا اؤْتُمِنَ خانَ، وَإِذَا حَدَّثَ
كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ» . متفق عَلَيْهِ
আব্দুল্লাহ
ইবনে আম্র ইবন ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তির
মাঝে তার মধ্য হতে একটি স্বভাব থাকবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে
মুনাফিকদের একটি স্বভাব থেকে যাবে। (সে স্বভাবগুলি হল,) ১। তার কাছে আমানত রাখা
হলে খিয়ানত করে। ২। সে কথা বললে মিথ্যা বলে। ৩। ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ৪।
ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল ভাষা বলে।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৪২,
৪৫৯, ৩১৭৮, মুসলিম ৫৮, তিরমিযী ২৬৩২, নাসায়ী ৫০২০, আবূ দাউদ ৪৬৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫,
৬৮৪০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৫২
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، عَنِ النِّبي صلى الله
عليه وسلم قَالَ: «مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ، كُلِّفَ أَنْ يَعْقِدَ
بَيْنَ شَعِيرَتَيْن وَلَنْ يَفْعَلَ، وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ
وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ، صُبَّ فِي أُذُنَيْهِ الآنُكُ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَمَنْ
صَوَّرَ صُورَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ وَلَيْسَ
بنافِخٍ». رواه البخاري
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন ব্যক্ত করল, যা সে দেখেনি। (কিয়ামতের দিনে) তাকে দু’টি যব
দানার মাঝে সংযোগ সাধন করতে আদেশ করা হবে; কিন্তু সে তা কস্মিনকালেও পারবে না। যে
ব্যক্তি কোন জনগোষ্ঠীর কথা শুনবার জন্য কান পাতে, যা তারা আদৌ পছন্দ করে না,
কিয়ামতের দিনে তার কানে গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোন (প্রাণীর)
ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাকে শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার
জন্য আদেশ করা হবে, অথচ সে তা করতে পারবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ২২২৫,
৫৯৬৩, ৭০৪২, মুসলিম ২১১০, তিরমিযী ১৭৫১, ২২৮৩, নাসায়ী ৫৩৫৮, ৫৩৫৯, আবূ দাউদ ৫০২৪, ইবনু
মাজাহ ৩৯১৬, আহমাদ ১৮৬৯, ২১৬৩, ২২১৪, ২৮০৬, ৩২৬২, ৩৩৭৩, ৩৩৮৪, ২১৬৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৫৩
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم: «أَفْرَى الفِرَى أَنْ يُرِيَ الرَّجُلُ عَيْنَيْهِ مَا لَمْ
تَرَيَا» . رواه البخاري
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, ‘‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা হল, মানুষ আপন চক্ষুকে এমন কিছু দেখায়,
যা সে দেখেনি।’’ (অর্থাৎ, সে যা দেখেনি সে সম্পর্কে মিথ্যা ক‘রে বলে, ‘আমি
দেখেছি।’)
(সহীহুল বুখারী ৭০৪৩,
আহমাদ ৫৬৭৮, ৫৯৬২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৫৪
وَعَنْ سَمُرَةَ بنِ جُنْدُبٍ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُول اللهِ
صلى الله عليه وسلم مِمَّا يُكْثِرُ أَنْ يَقُوْلَ لأَصْحَابِهِ : «هَلْ رَأَى
أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ رُؤْيَا ؟» فَيَقُصُّ عَلَيْهِ مَنْ شَاءَ اللهُ أَنْ
يَقُصَّ، وَإِنَّهُ قَالَ لَنَا ذَاتَ غَدَاةٍ : «إِنَّهُ أَتَانِيَ اللَّيْلَةَ
آتِيَانِ، وَإِنَّهُمَا قَالاَ لِي : انْطَلِقْ، وَإِنِّي انْطَلَقتُ مَعَهُمَا،
وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ، وَإِذَا آخَرُ قائِمٌ عَلَيْهِ
بِصَخْرَةٍ، وَإِذَا هُوَ يَهْوِي بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ، فَيَثْلَغُ رَأسَهُ،
فَيَتَدَهْدَهُ الحَجَرُ هَاهُنَا، فَيَتْبَعُ الحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ فَلاَ
يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأسُهُ كَمَا كَانَ، ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ،
فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ المَرَّةَ الأوْلَى!» قَالَ: «قُلْتُ لَهُمَا :
سُبْحانَ اللهِ ! مَا هَذَانِ ؟ قَالاَ لِي : انْطَلِقِ انْطَلِقْ،
فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ، وَإِذَا آخَرُ
قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَديدٍ، وَإِذَا هُوَ يَأتِي أَحَدَ شِقَّيْ
وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ، وَمِنْخَرَهُ إِلَى قَفَاهُ،
وَعَيْنَهُ إِلَى قَفَاهُ، ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الجَانِبِ الآخَرِ، فَيَفْعَلُ
بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالجَانِبِ الأَوَّلِ، فَمَا يَفْرَغُ مِنْ ذَلِكَ
الجَانِبِ حَتَّى يَصِحَّ ذَلِكَ الجانبُ كَمَا كَانَ، ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ
مِثْلَ مَا فَعَلَ فِي المرَّةِ الأُوْلَى» قَالَ: «قُلْتُ : سُبْحَانَ اللهِ! مَا
هَذَانِ ؟ قَالاَ لِي : انْطَلِقِ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا عَلَى
مِثْلِ التَّنُّورِ» فَأَحْسِبُ أنَّهُ قَالَ: «فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ،
وَأَصْوَاتٌ، فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِساءٌ عُرَاةٌ،
وَإِذَا هُمْ يَأتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ، فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ
اللَّهَبُ ضَوْضَوْا . قُلْتُ : مَا هَؤُلاَءِ ؟ قَالاَ لِي : انْطَلِقِ
انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا عَلَى نَهْرٍ» حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ
يَقُوْلُ : «أَحْمَرُ مِثْلُ الدَّمِ، وَإِذَا فِي النَّهْرِ رَجُلٌ سَابِحٌ
يَسْبَحُ، وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهْرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً
كَثِيرَةً، وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ، مَا يَسْبَحُ، ثُمَّ يَأتِي
ذَلِكَ الَّذِي قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ الحِجَارَةَ، فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ،
فَيُلْقِمُهُ حَجَراً، فَينْطَلِقُ فَيَسْبَحُ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِ، كُلَّمَا
رَجَعَ إِلَيْهِ، فَغَرَ لَهُ فَاهُ، فَأَلْقَمَهُ حَجَراً، قُلْتُ لَهُمَا : مَا
هَذَانِ ؟ قَالاَ لِي: انْطَلِقِ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأَتَيْنَا عَلَى
رَجُلٍ كَرِيهِ المَرْآةِ، أَوْ كَأَكْرَهِ مَا أَنْتَ رَاءٍ رَجُلاً مَرْأىً،
فَإِذَا هُوَ عِنْدَهُ نَارٌ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا . قُلْتُ لَهُمَا :
مَا هَذَا ؟ قَالاَ لي : انْطَلِقِ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا، فَأتَيْنَا عَلَى
رَوْضَةٍ مُعْتَمَّةٍ فِيهَا مِنْ كُلِّ نَوْرِ الرَّبيعِ، وَإِذَا بَيْنَ ظَهْرَي
الرَّوْضَةِ رَجُلٌ طَويلٌ لاَ أَكَادُ أَرَى رَأسَهُ طُولاً فِي السَّماءِ،
وَإِذَا حَوْلَ الرَّجُلِ مِنْ أَكْثَرِ وِلدَانٍ رَأيْتُهُمْ قَطُّ، قُلْتُ : مَا
هَذَا ؟ وَمَا هَؤُلاَءِ ؟ قَالاَ لِي : انْطَلقِ انْطَلقْ، فَانْطَلَقْنَا،
فَأَتَيْنَا إِلَى دَوْحَةٍ عَظيمةٍ لَمْ أَرَ دَوْحَةً قَطُّ أَعْظَمَ مِنْهَا،
وَلاَ أَحْسَنَ ! قَالاَ لِي : اِرْقَ فِيهَا، فَارْتَقَيْنَا فِيهَا إِلَى
مَدِينَةٍ مَبْنِيَّةٍ بِلَبنٍ ذَهَبٍ وَلَبنٍ فِضَّةٍ، فَأَتَيْنَا بَابَ
المَدِينَةِ فَاسْتَفْتَحْنَا، فَفُتِحَ لَنَا فَدَخَلْنَاهَا، فَتَلَقَّانَا
رِجَالٌ شَطْرٌ مِنْ خَلْقِهِمْ كَأَحْسَنِ مَا أَنتَ رَاءٍ ! وَشَطْرٌ مِنْهُمْ
كَأقْبَحِ مَا أَنتَ رَاءٍ ! قَالاَ لَهُمْ : اِذْهَبُوا فَقَعُوا فِي ذَلِكَ
النَّهْرِ، وَإِذَا هُوَ نَهْرٌ مُعْتَرِضٌ يَجْرِي كَأَنَّ مَاءَهُ المَحْضُ فِي
البَيَاضِ، فَذَهَبُوا فَوَقَعُوا فِيهِ . ثُمَّ رَجَعُوا إِلَيْنَا قَدْ ذَهَبَ
ذَلِكَ السُّوءُ عَنْهُمْ، فَصَارُوا فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ» قَالَ: «قَالاَ لِي :
هَذِهِ جَنَّةُ عَدْنٍ، وَهَذَاكَ مَنْزِلُكَ، فَسَمَا بَصَرِي صُعُداً، فَإِذَا
قَصْرٌ مِثْلُ الرَّبَابَةِ البَيضَاءِ، قَالاَ لِي : هَذَاكَ مَنْزِلُكَ ؟ قُلْتُ
لَهُمَا: بَارَكَ اللهُ فِيكُمَا، فَذَرَانِي فَأَدخُلَهُ . قَالاَ لِي : أَمَّا
الآنَ فَلاَ، وَأَنتَ دَاخِلُهُ، قُلْتُ لَهُمَا : فَإِنِّي رَأَيتُ مُنْذُ
اللَّيْلَةِ عَجَباً ؟ فَمَا هَذَا الَّذِي رَأَيْتُ ؟ قَالاَ لِي : أَمَا إِنَّا
سَنُخْبِرُكَ : أَمَّا الرَّجُلُ الأوَّلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُثْلَغُ
رَأسُهُ بِالحَجَرِ، فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَأخُذُ القُرآنَ فَيَرفُضُهُ، وَيَنَامُ
عَنِ الصَّلاةِ المَكتُوبَةِ . وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ
يُشَرْشَرُ شِدْقُهُ إِلَى قَفَاهُ، ومِنْخَرُهُ إِلَى قَفَاهُ، وَعَيْنُهُ إِلَى
قَفَاهُ، فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَغْدُو مِنْ بَيْتِهِ فَيَكْذِبُ الكِذْبَةَ تَبْلُغُ
الآفَاقَ . وَأَمَّا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ العُرَاةُ الَّذِينَ هُمْ فِي مِثْلِ
بِنَاءِ التَّنُّورِ، فَإِنَّهُمُ الزُّنَاةُ وَالزَّوَانِي، وَأَمَّا الرَّجُلُ
الَّذِي أَتَيتَ عَلَيهِ يَسْبَحُ فِي النَّهْرِ، وَيُلقَمُ الحِجَارَةَ،
فَإِنَّهُ آكِلُ الرِّبَا، وأمَّا الرَّجُلُ الكَريهُ الْمَرْآةِ الَّذِي عِنْدَ
النَّارِ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا، فَإِنَّهُ مَالِكٌ خازِنُ جَهَنَّمَ،
وَأَمَّا الرَّجُلُ الطَّوِيلُ الَّذِي فِي الرَّوْضَةِ، فَإِنَّهُ إِبرَاهِيم
عليه السلام، وَأمَّا الولدَانِ الَّذِينَ حَوْلَهُ، فَكُلُّ مَوْلُودٍ مَاتَ
عَلَى الفِطْرَةِ» وَفِي رِوَايَةِ البَرْقَانِيِّ : «وُلِدَ عَلَى الفِطْرَةِ»
فَقَالَ بعض المُسلمينَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَأَولاَدُ
المُشرِكِينَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «وَأَولاَدُ
المُشرِكِينَ، وَأَمَّا القَوْمُ الَّذِينَ كَانُوا شَطْرٌ مِنْهُمْ حَسَنٌ،
وَشَطْرٌ مِنْهُمْ قَبِيحٌ، فَإِنَّهُمْ قَومٌ خَلَطُوا عَمَلاً صَالِحاً وَآخَرَ
سَيِّئاً، تَجَاوَزَ اللهُ عَنهُمْ» . رواه البخاري
সামুরাহ
ইবনে জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম প্রায়ই তাঁর সাহাবীদেরকে বলতেন, ‘‘তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছে কি?’’
রাবী বলেন, যার ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা সে তাঁর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করত। তিনি
একদিন সকালে বললেন, ‘‘গতরাত্রে আমার কাছে দুজন আগন্তুক এলো। তারা আমাকে উঠাল, আর
বলল, ‘চলুন।’ আমি তাদের সাথে চলতে লাগলাম। অতঃপর আমরা কাত হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির
নিকট পৌঁছলাম। দেখলাম, অপর এক ব্যক্তি তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার
মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফাটিয়ে ফেলছে। আর পাথর গড়িয়ে সরে পড়ছে।
তারপর আবার সে পাথরটির অনুসরণ ক‘রে তা পুনরায় নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই
লোকটির মাথা আগের মত পুনরায় ভাল হয়ে যাচ্ছে। ফিরে এসে আবার একই আচরণ করছে; যা
প্রথমবার করেছিল। (তিনি বলেন,) আমি সাথীদ্বয়কে বললাম, ‘সুবহানাল্লাহ! এটা কি?’
তারা আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম, তারপর চিৎ হয়ে শোয়া এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম। এখানেও
দেখলাম, তার নিকট এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে তার চেহারার
একদিকে এসে এর দ্বারা তার কশ থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং একইভাবে নাকের
ছিদ্র থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার পিছন দিক
পর্যন্ত চিরে ফেলছে। তারপর ঐ লোকটি শোয়া ব্যক্তির অপরদিকে যাচ্ছে এবং প্রথম দিকের
সাথে যেরূপ আচরণ করেছে অনুরূপ আচরণই অপর দিকের সাথেও করছে। ঐ দিক হতে অবসর হতে না
হতেই প্রথম দিকটি আগের মত ভাল হয়ে যাচ্ছে। তারপর আবার প্রথম বারের মত আচরণ করছে।
(তিনি বলেন,) আমি বললাম, ‘সুবহানাল্লাহ! এরা কারা?’ তারা আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং (তন্দুর) চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম।
(বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, যেন তিনি বললেন,) আর সেখানে শোরগোল ও নানা শব্দ
ছিল। আমরা তাতে উঁকি মেরে দেখলাম, তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ রয়েছে। আর নীচ
থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে
স্পর্শ করছে, তখনই তারা উচ্চরবে চিৎকার ক‘রে উঠছে। আমি বললাম, ‘এরা কারা?’ তারা
আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং একটি নদীর কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। (বর্ণনাকারী বলেন, আমার
যতদূর মনে পড়ে, তিনি বললেন,) নদীটি ছিল রক্তের মত লাল। আর দেখলাম, সেই নদীতে এক
ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অপর এক ব্যক্তি রয়েছে এবং সে তার কাছে
অনেকগুলো পাথর একত্রিত করে রেখেছে। আর ঐ সাঁতার-রত ব্যক্তি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার
কাটার পর সেই ব্যক্তির কাছে ফিরে আসছে, যে তার নিকট পাথর একত্রিত করে রেখেছে।
সেখানে এসে সে তার সামনে মুখ খুলে দিচ্ছে এবং ঐ ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে
দিচ্ছে। তারপর সে চলে গিয়ে আবার সাঁতার কাটছে এবং আবার তার কাছে ফিরে আসছে। আর
যখনই ফিরে আসছে তখনই ঐ ব্যক্তি তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস
করলাম, ‘এরা কারা?’ তারা বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং এমন একজন কুৎসিত ব্যক্তির কাছে এসে পৌঁছলাম, যা তোমার
দৃষ্টিতে সর্বাধিক কুৎসিত বলে মনে হয়। আর দেখলাম, তার নিকট রয়েছে আগুন, যা সে
জ্বালাচ্ছে ও তার চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঐ লোকটি
কে?’ তারা বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং একটা সবুজ-শ্যামল বাগানে এসে উপস্থিত হলাম। সেখানে
বসন্তের সব রকমের ফুল রয়েছে আর বাগানের মাঝে এত বেশী দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে,
আকাশে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছিলাম না। আবার দেখলাম, তার চারদিকে এত বেশী
পরিমাণ বালক-বালিকা রয়েছে, যত বেশী পরিমাণ আর কখনোও আমি দেখিনি। আমি তাদেরকে
বললাম, ‘উনি কে? এরা কারা?’ তারা আমাকে বলল, ‘চলুন, চলুন।’
সুতরাং আমরা চলতে লাগলাম এবং একটা বিশাল (বাগান বা) গাছের নিকট গিয়ে উপস্থিত হলাম।
এমন বড় এবং সুন্দর (বাগান বা) গাছ আমি আর কখনো দেখিনি। তারা আমাকে বলল, ‘এর উপরে
চড়ুন।’ আমরা উপরে ছড়লাম। শেষ পর্যন্ত সোনা-রূপার ইটের তৈরি একটি শহরে গিয়ে আমরা
উপস্থিত হলাম। আমরা শহরের দরজায় পৌঁছলাম এবং দরজা খুলতে বললাম। আমাদের জন্য দরজা
খুলে দেওয়া হল। আমরা তাতে প্রবেশ করলাম। তখন সেখানে কতক লোক আমাদের সাথে সাক্ষাৎ
করল, যাদের অর্ধেক শরীর এত সুন্দর ছিল, যত সুন্দর তুমি দেখেছ, তার থেকেও অধিক। আর
অর্ধেক শরীর এত কুৎসিত ছিল যত কুৎসিত তুমি দেখেছ, তার থেকেও অধিক। সাথীদ্বয় ওদেরকে
বলল, ‘যাও ঐ নদীতে গিয়ে নেমে পড়।’ আর সেটা ছিল সুপ্রশস্ত প্রবহমান নদী। তার পানি
যেন ধপধপে সাদা। ওরা তাতে গিয়ে নেমে পড়ল। অতঃপর ওরা আমাদের কাছে ফিরে এলো। দেখা
গেল, তাদের ঐ কুশ্রী রূপ দূর হয়ে গেছে এবং তারা খুবই সুন্দর আকৃতির হয়ে গেছে।
(তিনি বলেন,) তারা আমাকে বলল, ‘এটা জান্নাতে আদ্ন এবং ওটা আপনার বাসস্থান।’ (তিনি
বলেন,) উপরের দিকে আমার দৃষ্টি গেলে, দেখলাম ধপধপে সাদা মেঘের মত একটি প্রাসাদ
রয়েছে। তারা আমাকে বলল, ‘ঐটা আপনার বাসগৃহ।’ (তিনি বললেন,) আমি তাদেরকে বললাম,
‘আল্লাহ তোমাদের মাঝে বরকত দিন, আমাকে ছেড়ে দাও; আমি এতে প্রবেশ করি।’ তারা বলল,
‘আপনি অবশ্যই এতে প্রবেশ করবেন। তবে এখন নয়।’
আমি বললাম, ‘আমি রাতে অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতে পেলাম, এগুলোর তাৎপর্য কী?’
তারা আমাকে বলল, ‘আচ্ছা আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। ঐ যে প্রথম ব্যক্তিকে যার কাছে আপনি
পৌঁছলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন
গ্রহণ ক‘রে---তা বর্জন করে। আর ফরয নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে।
আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তার কশ থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং
একইভাবে নাকের ছিদ্র থেকে মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে চোখ থেকে মাথার
পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল। সে হল ঐ ব্যক্তি যে সকালে আপন ঘর থেকে বের হয়ে
এমন মিথ্যা বলে, যা চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ে।
আর যে সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা (তন্দুর) চুলা সদৃশ গর্তের অভ্যন্তরে রয়েছে, তারা
হল ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণীর দল।
আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে পৌঁছে দেখলেন যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর
ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে হল সুদখোর।
আর ঐ কুৎসিত ব্যক্তি যে আগুনের কাছে ছিল এবং আগুন জ্বালাচ্ছিল আর তার চারপাশে ছুটে
বেড়াচ্ছিল। সে হল মালেক (ফেরেশতা); জাহান্নামের দারোগা।
আর ঐ দীর্ঘকায় ব্যক্তি যিনি বাগানে ছিলেন। তিনি হলেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। আর
তাঁর চারপাশে যে বালক-বালিকারা ছিল, ওরা হল তারা, যারা (ইসলামী) প্রকৃতি নিয়ে
মৃত্যুবরণ করেছে।’’
বারক্বানীর বর্ণনায় আছে, ‘‘ওরা তারা, যারা (ইসলামী) প্রকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ ক‘রে
(মৃত্যুবরণ করেছে) ।’’ তখন কিছু সংখ্যক মুসলিম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল!
মুশরিকদের শিশু-সন্তানরাও কি (সেখানে আছে)?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বললেন, ‘‘মুশরিকদের শিশু-সন্তানরাও (সেখানে আছে) ।
আর ঐ সব লোক যাদের অর্ধেকাংশ অতি সুন্দর ও অর্ধেকাংশ অতি কুৎসিত ছিল, তারা হল ঐ
সম্প্রদায় যারা সৎ-অসৎ উভয় প্রকারের কাজ মিশ্রিত-ভাবে করেছে। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা
ক‘রে দিয়েছেন।’’ (বুখারী)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আজ রাতে আমি দেখলাম, দু’টি লোক এসে আমাকে পবিত্র ভূমির
দিকে বের করে নিয়ে গেল।’’ অতঃপর ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘সুতরাং আমরা
চলতে লাগলাম এবং (তন্দুর) চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম; যার উপর দিকটা
সংকীর্ণ ছিল এবং নিচের দিকটা প্রশস্ত। তার নিচে আগুন জ্বলছিল। তার মধ্যে উলঙ্গ বহু
নারী-পুরুষ ছিল। আগুন যখন উপর দিকে উঠছিল, তখন তারাও (আগুনের সাথে) উপরে উঠছিল।
এমনকি প্রায় তারা (চুলা) থেকে বের হওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। আর যখন আগুন স্তিমিত হয়ে
নেমে যাচ্ছিল, তখন (তার সাথে) তারাও নিচে ফিরে যাচ্ছিল।’’
এই বর্ণনায় আছে, ‘‘একটি রক্তের নদীর কাছে এলাম।’’ বর্ণনাকারী এতে সন্দেহ করেননি।
‘‘সেই নদীর মাঝখানে একটি লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর নদীর তীরে একটি লোক রয়েছে, যার
সামনে পাথর রয়েছে। অতঃপর নদীর মাঝের লোকটি যখন উঠে আসতে চাচ্ছে, তখন তীরের লোকটি
তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে সেই দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে যেখানে সে ছিল। এইভাবে যখনই সে নদী
থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে, তখনই ঐ লোকটি তার মুখে পাথর ছুঁড়ে মারছে। ফলে সে যেখানে
ছিল সেখানে ফিরে যাচ্ছে।’’
এই বর্ণনায় আরও আছে, ‘‘তারা উভয়ে আমাকে নিয়ে ঐ (বাগান বা) গাছে উঠে গেল। অতঃপর
সেখানে এমন একটি গৃহে আমাকে প্রবেশ করাল, যার চেয়ে অধিক সুন্দর গৃহ আমি কখনো
দেখিনি। সেখানে বহু বৃদ্ধ ও যুবক লোক ছিল।’’
এই বর্ণনায় আরও আছে, ‘‘আর যাকে আপনি তার নিজ কশ চিরতে দেখলেন, সে হল বড় মিথ্যুক;
যে মিথ্যা কথা বলত, অতঃপর তা তার নিকট থেকে বর্ণনা করা হত। ফলে তা দিকচক্রবালে
পৌঁছে যেত। অতএব এই আচরণ তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে।’’
এই বর্ণনায় আরও আছে, ‘‘যার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে দেখলেন, সে ছিল এমন ব্যক্তি,
যাকে আল্লাহ কুরআন শিখিয়েছিলেন। কিন্তু সে (তা ভুলে) রাতে ঘুমিয়ে থাকত এবং দিনে
তার উপর আমল করত না। অতএব এই আচরণ তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত করা হবে। আর প্রথম যে
গৃহটি আপনি দেখলেন, তা হল সাধারণ মু‘মিনদের। পক্ষান্তরে এই গৃহটি হল শহীদদের। আমি
জিবরীল, আর ইনি মীকাঈল। অতএব আপনি মাথা তুলুন। সুতরাং আমি মাথা তুললাম। তখন
দেখলাম, আমার উপর দিকে মেঘের মত কিছু রয়েছে। তাঁরা বললেন, ‘ওটি হল আপনার গৃহ।’ আমি
বললাম, ‘আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আমার গৃহে প্রবেশ করি।’ তাঁরা বললেন,
‘(দুনিয়াতে) আপনার আয়ু অবশিষ্ট আছে; যা আপনি পূর্ণ করেননি। যখন আপনি তা পূর্ণ
করবেন, তখন আপনি আপনার গৃহে চলে আসবেন।’’
(মুসলিম ১৩৮৬, ৮৪৫,
১১৪৩, ২০৮৫, ২৭৯১, ৩২৩৬, ৩৩৫৪, ৪৬৭৪, ৬০৯৬, ৭০৪৭, মুসলিম ২২৭৫, তিরমিযী ২২৯৪, আহমাদ
১৯৫৯০, ১৯৫৯৫, ১৯৬৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৬১
বৈধ
মিথ্যা
জেনে
রাখুন যে, নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলা মূলত: যদিও হারাম তবুও কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ
শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ। যার ব্যাপারে আমি আমার ‘কিতাবুল আযকার’ নামক পুস্তকে
বিস্তৃতভাবে আলোকপাত করেছি। যার সার-সংক্ষেপ এই যে, কথাবার্তা উদ্দেশ্য সফল হওয়ার
অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং কোন সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যার আশ্রয় ব্যতিরেকে সাধন সম্ভবপর
হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে সে সৎ উদ্দেশ্য যদি
মিথ্যা বলা ছাড়া সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা বৈধ। পরন্তু যদি
বাঞ্ছিত লক্ষ্য বৈধ পর্যায়ের হয়, তাহলে মিথ্যা বলা বৈধ হবে। আর যদি অভীষ্ট লক্ষ্য
ওয়াজেবের পর্যায়ভুক্ত হয়, তাহলে তা অর্জনের জন্য মিথ্যা বলাও ওয়াজেব হবে। যেমন কোন
মুসলিম এমন অত্যাচারী থেকে আত্মগোপন করেছে, যে তাকে হত্যা করতে চায় অথবা তার
মাল-ধন ছিনিয়ে নিতে চায় এবং সে তা লুকিয়ে রেখেছে। এখন যদি কেউ তার সম্পর্কে
জিজ্ঞাসিত হয় (যে তার ঠিকানা জানে), তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে গোপন (ও নিরাপদ) রাখার
জন্য তার পক্ষে মিথ্যা বলা ওয়াজেব। অনুরূপভাবে যদি কারো নিকট অপরের আমানত থাকে, আর
কোন যালেম যদি তা বলপূর্বক ছিনিয়ে নিতে চায়, তাহলে তা গোপন করার জন্য মিথ্যা বলা
ওয়াজেব। অবশ্য এ সমস্ত বিষয়ে স্পষ্টাক্ষরে
মিথ্যা না বলে ‘তাওরিয়াহ’ করার পদ্ধতি অবলম্বন করাই উত্তম।
‘তাওরিয়াহ’ হল এমন বাক্য ব্যবহার করা, যার অর্থ ও উদ্দেশ্য শুদ্ধ তথা তাতে সে
মিথ্যাবাদী নয়; যদিও বাহ্যিক শব্দার্থে এবং সম্বোধিত ব্যক্তির বুঝ মতে সে
মিথ্যাবাদী হয়। পক্ষান্তরে যদি উক্ত পরিস্থিতিতে ‘তাওরিয়াহ’ পরিহার করে
প্রকাশ্যভাবে মিথ্যা বলা হয়, তবুও তা হারাম নয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলার
বৈধতার প্রমাণে উলামায়ে কিরাম উম্মে কুলসুম কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি পেশ করেন। উম্মে
কুলসুম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে
শুনেছেন যে, ‘‘লোকের মধ্যে সন্ধি স্থাপনকারী মিথ্যাবাদী নয়। সে হয় ভাল কথা পৌঁছায়,
না হয় ভাল কথা বলে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমে আছে উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তাঁকে মানুষের কথাবার্তায়
মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনিনি, তিন ক্ষেত্র ছাড়া: (১) যুদ্ধকালে (২) লোকদের ঝগড়া
মিটাবার ক্ষেত্রে ও (৩) স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের (প্রেম বর্ধক) কথোপকথনে।
পরিচ্ছেদ - ২৬২
যাচাই-তদন্ত
করে সাবধানে কথাবার্তা বলা ও কোন কিছু নকল করে লেখার প্রতি উৎসাহ দান
মহান
আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না।
(সূরা ইসরা ৩৬ আয়াত)
তিনি বলেছেন,
অর্থাৎ, মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করুক না কেন, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী
তার নিকটেই রয়েছে। (ক্বাফ ১৮ আয়াত)
(এ মর্মে মহান আল্লাহর এ বাণীও অনেকে উল্লেখ করে থাকেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! যদি কোন
পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তাহলে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখ; যাতে
অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সম্প্রদায়কে আঘাত না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য
অনুতপ্ত না হও।’’ - সূরা হুজুরাত ৬ আয়াত)
১৫৫৫
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم قَالَ: «كَفَى بِالمَرْءِ كَذِباً أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ».
رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে (বিনা
বিচারে) তা-ই বর্ণনা করে।’’
(মুসলিম ৫, আবূ দাউদ
৪৯৯২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৫৬
وَعَنْ سَمُرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ حَدَّثَ عَنِّي بِحَدِيثٍ يَرَى أَنَّهُ كَذِبٌ
فَهُوَ أَحَدُ الكَاذِبَينَ» . رواه مسلم
সামুরাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার তরফ থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করে অথচ সে জানে
যে, তা মিথ্যা, তবে সে দুই মিথ্যুকের একজন।’’
(সহীহুল বুখারী ১২৯১,
তিরমিযী ২৬৬২, ইবনু মাজাহ ৩৯, ৪১, আহমাদ ১৭৭৩৭, ১৭৭৭৬, ১৯৬৫০, ১৯৭১২, মুসলিম (ভূমিকা))
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৫৭
وَعَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ امْرأةً قَالَتْ : يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، إِنَّ لِي ضَرَّةً فَهَلْ عَلَيَّ جُنَاحٌ إِنْ
تَشَبَّعْتُ مِنْ زَوْجِي غَيْرَ الَّذِي يُعْطِينِي ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم المُتَشَبِّعُ بِما لَمْ يُعْطَ كَلاَبِسِ ثَوْبَيْ زُورٍ». متفق
عَلَيْهِ
আসমা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
একটি মহিলা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এক
সতীন আছে, সুতরাং স্বামী আমাকে যা দেয় না, তা নিয়ে যদি পরিতৃপ্তি প্রকাশ করি, তাতে
আমার কোন ক্ষতি হবে কি?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘যা দেওয়া
হয়নি, তা নিয়ে পরিতৃপ্তি প্রকাশকারী মিথ্যা দুই বস্ত্র পরিধানকারীর ন্যায়।’’
(সহীহুল বুখারী ৫২১৯,
মুসলিম ২১৩০, আবূ দাউদ ৪৯৯৭, আহমাদ ২৬৩৮১, ২৬৩৮৯, ২৬৪৩৭)
‘পরিতৃপ্তি প্রকাশকারী’ যে প্রকাশ করে যে, সে পরিতৃপ্ত, অথচ আসলে সে তা নয়। এখানে উদ্দেশ্য
হল, যে প্রকাশ করে যে, সে মর্যাদা লাভ করেছে, অথচ সে তা লাভ করেনি। আর ‘মিথ্যা দুই
বস্ত্র পরিধানকারী’ হল সেই, যে লোকচক্ষুতে মেকী সাজে। লোককে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সংসার-বিরাগী,
আলেম অথবা ধনবান ব্যক্তির পোশাক পরিধান করে, অথচ সে তা নয়। এ ছাড়া অন্য কিছুও বলা হয়েছে।
আর আল্লাহই অধিক জানেন।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৬৩
মিথ্যা
সাক্ষ্য দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
১৫৫৮
وَعَنْ أَبي بَكْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الكَبَائِرِ
؟» قُلْنَا : بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَ: «الإِشْرَاكُ
بِاللهِ، وعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ» وَكَانَ مُتَّكِئاً فَجَلَسَ، فَقَالَ: «أَلاَ
وَقَولُ الزُّورِ» فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلنَا : لَيْتَهُ سَكَتَ.
متفق عَلَيْهِ
আবূ
বাক্রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তোমাদেরকে কি অতি মহাপাপের কথা বলে দেব না?’’ আমরা
বললাম, ‘অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে
শরীক করা এবং মাতা-পিতার অবাধ্যাচরণ করা।’’ তারপর তিনি হেলান ছেড়ে উঠে বসলেন এবং
বললেন, ‘‘শোন! আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’’ শেষোক্ত কথাটি তিনি বারবার বলতে থাকলেন।
এমনকি অনুরূপ বলাতে আমরা (মনে মনে) বললাম, ‘যদি তিনি চুপ হতেন।’
(সহীহুল বুখারী ২৬৪৫,
৫৯৭৬, ৬২৭৩, ৬৯১৯, মুসলিম ৮৭, তিরমিযী ১৯০১, ২৩০১, ৩০১৯, আহমাদ ১৯৮৭২, ১৯৮৮১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৬৪
নির্দিষ্ট
ব্যক্তি বা প্রাণীকে অভিসম্পাত করা ঘোর নিষিদ্ধ
১৫৫৯
عَنْ أَبِي زَيدٍ ثَابِتِ بنِ الضَّحَّاك الأَنصَارِيِّ رضي الله عنه
وَهُوَ مِنْ أهلِ بَيْعَةِ الرِّضْوَانِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ بِمِلَّةٍ غَيْرِ
الإِسْلاَمِ كَاذِباً مُتَعَمِّداً، فَهُوَ كَمَا قَالَ، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ
بِشَيءٍ، عُذِّبَ بِهِ يَومَ القِيَامَةِ، وَلَيْسَ عَلَى رَجُلٍ نَذْرٌ فِيمَا
لاَ يَمْلِكُهُ، وَلَعْنُ المُؤْمِنِ كَقَتْلِهِ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
যায়েদ সাবেত ইবনে যাহ্হাক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ‘বায়আতে রিয্ওয়ান’ (হুদাইবিয়াহ সন্ধির
সময়ে কুরাইশের বিরুদ্ধে কৃত প্রতিজ্ঞার) অন্যতম সদস্য ছিলেন; তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে
ইসলাম ব্যতীত ভিন্ন ধর্মের মিথ্যা কসম খেল, তাহলে সে তেমনি হয়ে গেল, যেমন সে বলল।
যে ব্যক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করল, কিয়ামতের দিন তাকে সেই বস্তু দ্বারাই
শাস্তি দেওয়া হবে। মানুষ যে জিনিসের মালিক নয়, তার মানত পূরণ করা তার পক্ষে জরুরী
নয়। আর কোন মুমিন ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যা করার সমান।’’
(সহীহুল বুখারী ১৩৬৪,
৪১৭১, ৪৮৪৩, ৬১০৫, ৬৬৫৩, মুসলিম ১১০, তিরমিযী ১৫৪৩, নাসায়ী ৩৭৭০, ৩৭৭১, ৩৮১৩, আবূ দাউদ
৩২৫৭, ইবনু মাজাহ ২০৯৮, আহমাদ ১৫৯৫০, ১৫৯৫৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৬০
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لاَ يَنْبَغِي لِصِدِّيقٍ أَنْ يَكُونَ
لَعَّاناً» . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘কোন মহাসত্যবাদীর জন্য অভিসম্পাতকারী হওয়া সঙ্গত নয়।’’
(মুসলিম ২৫৯৭, আহমাদ
৮২৪২, ৮৫৬৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৬১
وَعَنْ أَبي الدَّردَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَكُونُ اللَّعَّانُونَ شُفَعَاءَ،
وَلاَ شُهَدَاءَ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه مسلم
আবূ
দার্দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘অভিসম্পাতকারীরা কিয়ামতের দিনে না সুপারিশকারী হবে, আর না
সাক্ষ্যদাতা।’’
(মুসলিম ২৫৯৮, আবূ দাউদ
৪৯০৭, আহমাদ ২৬৯৮১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৬২
وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَلاَعَنُوا بِلَعْنَةِ اللهِ، وَلاَ
بِغَضَبِهِ، وَلاَ بِالنَّارِ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال :[ حديث حسن صحيح
]
সামুরাহ
ইবনে জুন্দুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা একে অন্যের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তাঁর গযব এবং
জাহান্নামের আগুন দ্বারা অভিসম্পাত করো না।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
(আবূ দাউদ ৪৯০৬, তিরমিযী
১৯৭৬, ১৯৬৬২)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৫৬৩
وعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لَيْسَ المُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ، وَلاَ
اللَّعَّانِ، وَلاَ الفَاحِشِ، وَلاَ البَذِيِّ». رواه الترمذي، وقال :[ حديث حسن
]
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘মুমীন খোঁটা দানকারী, অভিশাপকারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীলভাষী হয়
না।’’
(তিরমিযী ১৯৭৭, আহমাদ
৩৮২৯, ৩৯৩৮)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৫৬৪
وَعَنْ أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ العَبْدَ إِذَا لَعَنَ شَيْئاً،
صَعَدَتِ اللَّعْنَةُ إِلَى السَّمَاءِ، فَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ
دُونَهَا، ثُمَّ تَهْبِطُ إِلَى الأَرْضِ، فَتُغْلَقُ أَبْوابُهَا دُونَهَا، ثُمَّ
تَأخُذُ يَمِيناً وَشِمَالاً، فَإِذَا لَمْ تَجِدْ مَسَاغاً رَجَعَتْ إِلَى
الَّذِي لُعِنَ، فَإِنْ كَانَ أَهْلاً لِذلِكَ، وَإِلاَّ رَجَعَتْ إِلَى
قَائِلِهَا» . رواه أَبُو داود
আবূ
দার্দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যখন কোন বান্দা কোন জিনিসকে অভিসম্পাত করে, তখন সেই অভিশাপ
আকাশের দিকে উঠে যায়। কিন্তু তার সামনে আকাশের দ্বার বন্ধ ক‘রে দেওয়া হয়, ফলে
পৃথিবীর দিকে নেমে আসে। তখনও তার সামনে (পৃথিবীর) দরজা বন্ধ ক‘রে দেওয়া হয়। কাজেই
ডানে-বামে (এদিক ওদিক) ফিরতে থাকে। পরিশেষে যখন তা কোন যথার্থ স্থান পায় না, তখন
অভিশপ্ত বস্তু বা ব্যক্তির প্রতি ফিরে যায়; যদি সে এর (অভিশাপের) উপযুক্ত হয়,
তাহলে (তাকে অভিশাপ লেগে যায়)। নচেৎ তা অভিশাপ-কারীর প্রতি ফিরে আসে।’’
(আবূ দাউদ ৪৯০৫ )
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৫৬৫
وَعَنْ عِمرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ:
بَيْنَمَا رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ، وَامْرأةٌ
مِنَ الأنْصَارِ عَلَى نَاقَةٍ، فَضَجِرَتْ فَلَعَنَتْهَا، فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُول
اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: «خُذُوا مَا عَلَيْهَا وَدَعُوْهَا ؛
فَإِنَّهَا مَلْعُونَةٌ». قَالَ عِمْرانُ : فَكَأنِّي أَرَاهَا الآنَ تَمْشِي فِي
النَّاسِ مَا يَعْرِضُ لَهَا أَحَدٌ . رواه مسلم
ইমরান
ইবনে হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন সফরে ছিলেন। আনসারী এক মহিলা এক উটনীর উপর সওয়ার ছিল। সে
বিরক্ত হয়ে উটনীটিকে অভিসম্পাত করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) তা শুনে (সঙ্গীদেরকে) বললেন, ‘‘এ উটনীর উপরে যা কিছু আছে সব নামিয়ে নাও
এবং ওকে ছেড়ে দাও। কেননা, ওটি (এখন) অভিশপ্ত।’’ ইমরান বলেন, ‘যেন আমি এখনো
উঁটনীটিকে দেখছি, উটনীটি লোকদের মধ্যে চলাফেরা করছে, আর কেউ তাকে বাধা দিচ্ছে না।’
(মুসলিম ২৫৯৫, আবূ দাউদ
২৫৫১, আহমাদ ১৯৩৫৮, ১৯৩৬৯, দারেমী ২৬৭৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৬৬
وَعَنْ أَبي بَرْزَةَ نَضْلَةَ بْنِ عُبَيْدٍ الأَسْلَمِيِّ قَالَ:
بَيْنَمَا جَارِيَةٌ عَلَى نَاقَةٍ عَلَيْهَا بَعْضُ مَتَاعِ القَوْمِ . إِذْ
بَصُرَتْ بِالنَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، وَتَضَايَقَ بِهِمُ الجَبَلُ فَقَالَتْ:
حَلْ، اَللهم الْعَنْهَا. فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «لاَ
تُصَاحِبْنَا نَاقَةٌ عَلَيْهَا لَعْنَةٌ» . رواه مسلم
আবূ
বার্যাহ নাযলাহ ইবনে উবাইদ আসলামী থেকে বর্ণিতঃ
একবার এক যুবতী মহিলা একটি উটনীর উপর সওয়ার
ছিল। আর তার উপর লোকদের (সহযাত্রীদের) কিছু আসবাব-পত্র ছিল। ইত্যবসরে মহিলাটি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রত্যক্ষ করল। আর লোকদের জন্য পার্বত্য পথটি
সংকীর্ণ বোধ হল। মহিলাটি উটনীকে (দ্রুত গতিতে চালাবার উদ্দেশ্যে) বলল, ‘হাঃ! হে
আল্লাহ! এর উপর অভিশাপ কর।’ তা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
‘‘ঐ উটনী যেন আমাদের সাথে না থাকে, যাকে অভিশাপ করা হয়েছে।’’
(মুসলিম ২৫৯৬, আহমাদ
১৯২৯১)
জেনে রাখুন যে, দৃশ্যতঃ এই হাদীসের অর্থের ব্যাপারে জটিলতা দেখা দিতে পারে। অথচ এতে
কোন জটিলতা নেই। কারণ, এর মর্মার্থ হল যে, উটনীটিকে অভিশাপ করা হয়েছে, অতএব তা যেন
তাঁদের সাথে না থাকে। এর মানে এই নয় যে, উটনীটিকে যবেহ করা, বিক্রি করা, তার উপর আরোহন
করা ইত্যাদি নিষেধ। বরং এ সকল তথা অন্য সমস্ত প্রকার উপকার তার দ্বারা গ্রহণ করা বৈধ।
যা নিষিদ্ধ হল, তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাফেলায় থাকা। সুতরাং তা
ব্যতীত অবশিষ্ট দিকগুলি পূর্ববৎ বৈধ থাকবে।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৬৫
অনির্দিষ্টরূপে
পাপিষ্ঠদেরকে অভিসম্পাত করা বৈধ
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ﴿ أَلَا لَعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّٰلِمِينَ ١٨ ﴾ (هود: ١٨)
অর্থাৎ, সাবধান! অত্যাচারীদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। (সূরা হূদ ১৮ আয়াত)
অন্যত্র তিনি বলেন, ﴿ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنُۢ بَيۡنَهُمۡ أَن لَّعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّٰلِمِينَ ٤٤ ﴾ (الاعراف: ٤٤)
অর্থাৎ, অতঃপর জনৈক ঘোষণাকারী তাদের নিকট ঘোষণা করবে, অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর
অভিসম্পাত। (সূরা আ’রাফ ৪৪ আয়াত)
সহীহ হাদিসসমূহে প্রমাণিত যে,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘সেই নারীর উপর আল্লাহর
অভিশাপ, যে অপরের মাথায় নকল চুল জুড়ে দেয়। আর সেই নারীর উপরেও, যে অন্য নারীর
দ্বারা (নিজ মাথায়) নকল চুল সংযুক্ত করায়।”
তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ সুদখোরকে অভিশাপ করুন (অথবা করেছেন) ।’’
وأنَّهُ لَعَنَ المُصَوِّرِينَ.
তিনি ছবি নির্মাতাকে অভিশাপ করেছেন।
তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জমি জায়গার সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে, আল্লাহ তাকে অভিশাপ
করুন (অথবা করেছেন) ।
তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ চোরকে অভিশাপ করুন (অথবা করেছেন), যে চোর ডিম চুরি করে।’’
তিনি বলেন, ‘‘যে নিজ মাতা-পিতাকে অভিশাপ ও ভৎর্সনা করে তাকেও আল্লাহ অভিসম্পাত
করুন (অথবা করেছেন) ।’’
وَلَعَنَ اللهُ من ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ.
‘‘এবং সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহ অভিশাপ করুন (অথবা করেছেন), যে গায়রুল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু যবেহ করে।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মদিনায় কোন প্রকার বিদআত (আবিষ্কার) করে অথবা কোন
বিদআতী লোককে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতামন্ডলী এবং সমস্ত মানুষের
অভিশাপ।’’
তিনি এভাবে (বদ্দু‘আ) ক‘রে বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! রি’ল, যাকওয়ান ও উসাইয়াহ
গোত্রসমূহের উপর অভিশাপ কর। কেননা, তারা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের অবাধ্যতা করেছে।’’
আর এ তিনটিই ছিল আরবের এক একটি গোত্রের নাম।
তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ ইয়াহূদীদেরকে অভিসম্পাত করুন (অথবা করেছেন), তারা তাদের
পয়গম্বরদের সমাধিসমূহকে উপাসনালয়ে পরিণত করেছে।’’
তিনি সেই সকল পুরুষকেও অভিশাপ করেছেন, যারা নারীদের সাদৃশ্য ও আকৃতি গ্রহণ করে।
তেমনি সেই সব নারীদেরকেও অভিশাপ করেছেন, যারা পুরুষদের সাদৃশ্য ও আকৃতি অবলম্বন
করে থাকে।
উক্ত বাণীসমূহ বিশুদ্ধ হাদীসে সন্নিবিষ্ট হয়েছে। তার মধ্যে কিছু হাদিস সহীহ বুখারী
ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে। আর কিছু হাদিস তার মধ্যে কোন একটিতে উদ্ধৃত
হয়েছে। আমি এখানে তার প্রতি সংক্ষিপ্তভাবে আভাস দিয়েছি মাত্র। উক্ত হাদিসগুলির
অধিকাংশই এই গ্রন্থের বিভিন্ন পরিচ্ছেদে উল্লেখ করব ইনশা আল্লাহ।
পরিচ্ছেদ - ২৬৬
কোন
মুসলিমকে অন্যায়ভাবে গালি-গালাজ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
১৫৬৭
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم : «سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتالُهُ كُفْرٌ». متفق عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ) এবং তার সাথে লড়াই
ঝগড়া করা কুফরি।’’
(সহীহুল বুখারী ৪৮,
৬০৪৫, ৭০৭৬, মুসলিম ৬৪, তিরমিযী ১৯৮৩, ২৬৩৪, ২৬৩৫, নাসায়ী ৪১০৫, ৪১০৬, ৪১০৮-৪১১৩, ইবনু
মাজাহ ৬৯, ৩৮৯৩, ৩৯৪৭, ৪১১৫, ৪১৬৭, ৪২৫০, ৪৩৩২, ৪৩৮০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৬৮
وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : «لاَ يَرْمِي رَجُلٌ رَجُلاً بِالفِسْقِ
أَوِ الكُفْرِ، إِلاَّ ارْتَدَّتْ عَلَيْهِ، إِنْ لَمْ يَكُنْ صَاحِبُهُ كذَلِكَ»
. رواه البخاري
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-কে তিনি এ কথা বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যখন কোন মানুষ অন্য মানুষের প্রতি
‘ফাসেক’ অথবা ‘কাফের’ বলে অপবাদ দেয়, তখনই তা তার উপরেই বর্তায়; যদি তার প্রতিপক্ষ
তা না হয়।’’
(সহীহুল বুখারী ৬০৪৫,
মুসলিম ৬১, আহমাদ ২০৯৫৪, ২১০৬১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৬৯
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «المُتَسَابَّانِ مَا قَالاَ فَعَلَى البَادِي
مِنهُمَا حَتَّى يَعْتَدِي المَظْلُومُ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আপোসে গালাগালিতে রত দু’জন ব্যক্তি যে সব কুবাক্য উচ্চারণ
করে, সে সব তাদের মধ্যে সূচনাকারীর উপরে বর্তায়; যতক্ষণ না অত্যাচারিত ব্যক্তি
(প্রতিশোধ গ্রহণে) সীমা অতিক্রম করে।’’
(মুসলিম ২৫৮৭, আহমাদ
৭১৬৪, ৯৯৫৬, ১০৩২৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৭০
وَعَنْهُ، قَالَ: أُتِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِرَجُلٍ قَدْ
شرِبَ قَالَ: «اِضرِبُوهُ». قَالَ أَبُو هُرَيرَةَ رضي الله عنه : فَمِنَّا
الضَّارِبُ بيَدِهِ، وَالضَّارِبُ بِنَعْلِهِ، وَالضَّارِبُ بِثَوْبِهِ . فَلَمَّا
انْصَرَفَ، قَالَ بَعْضُ القَوْمِ : أَخْزَاكَ اللهُ ! قَالَ: «لا تَقُولُوا
هَذَا، لاَ تُعِينُوا عَلَيْهِ الشَّيْطَان» . رواه البخاري
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মদ পান করেছে এমন এক ব্যক্তিকে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হাজির করা হল। তিনি আদেশ দিলেন, ‘ওকে
তোমরা মার।’ আবূ হুরাইরা বলেন, (তাঁর আদেশ অনুযায়ী আমরা তাকে মারতে আরম্ভ করলাম।)
আমাদের কেউ তাকে হাত দ্বারা মারতে লাগল, কেউ আপন জুতা দ্বারা, কেউ নিজ কাপড়
দ্বারা। অতঃপর যখন সে ফিরে যেতে লাগল, তখন কিছু লোক বলে উঠল, ‘আল্লাহ তোমাকে
লাঞ্ছিত করুক।’ তা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘এরূপ বলো না
এবং ওর বিরুদ্ধে শয়তানকে সহযোগিতা করো না।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৭৭৭,
৬৭৮১, আবূ দাউদ ৪৪৭৭, আহমাদ ৭৯২৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৭১
وَعَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم يَقُوْلُ : «مَنْ قَذَفَ مَمْلُوكَهُ بِالزِّنَى يُقَامُ عَلَيْهِ
الحَدُّ يَومَ القِيَامَةِ، إِلاَّ أَنْ يَكُونَ كَمَا قَالَ». متفق عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজ মালিকানাধীন দাসের উপর ব্যভিচারের অপবাদ
দেবে, কিয়ামতের দিন তার উপর হদ্ (দণ্ডবিধি) প্রয়োগ করা হবে। তবে সে যা বলেছে, দাস
যদি তাই হয় (তাহলে ভিন্ন কথা।)’’
(সহীহুল বুখারী ৬৮৫৮,
মুসলিম ১৬৬০, তিরমিযী ১৯৪৭, আবূ দাউদ ৫১৬৫, আহমাদ ৯২৮৩, ১০১১০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৬৭
মৃতদেরকে
অন্যায়ভাবে শরয়ী স্বার্থ ছাড়াই গালি দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা
১৫৭২
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَسُبُّوا الأَمْوَاتَ، فَإِنَّهُمْ
قَدْ أَفْضَوْا إِلَى مَا قَدَّمُوا» . رواه البخاري
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। যেহেতু তারা নিজেদের কৃতকর্মের
পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।’’ (অর্থাৎ, তার ফল ভোগ করছে।)
(সহীহুল বুখারী ১৩৯৩,
৬৫১৬, নাসায়ী ১৯৩৬, আবূ দাউদ ৪৮৯৯, আহমাদ ২৪৯৪২, দারেমী ২৫১১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৬৮
(অন্যায়
ভাবে) কাউকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ
১৫৭৩
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «المُسْلِمُ
مَنْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ
مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ» . متفق عَلَيْهِ
আব্দুল্লাহ
ইবনে আম্র ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘প্রকৃত মুসলিম সেই, যার মুখ ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদে
থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির (দ্বীন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে স্বদেশ ত্যাগকারী) সেই
ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্মসমূহ ত্যাগ করে।’’
(সহীহুল বুখারী ১০,
৬৪৮৪, মুসলিম ৪০, নাসায়ী ৪৯৯৬, আবূ দাউদ ২৪৮১, আহমাদ ৬৪৫১, ৬৪৭৮, ৬৭১৪, ৬৭৫৩, ৬৭৬৭,
৬৭৭৪, ৬৭৯৬, ৬৮৭৩, দারেমী ২৭১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৭৪
وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم: «مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ، وَيُدْخَلَ الجَنَّةَ،
فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، وَلْيَأْتِ
إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ» رواه مسلم
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে পছন্দ করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হোক এবং
জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মরণ যেন এমন অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের প্রতি ঈমান রাখে এবং অন্যের প্রতি এমন ব্যবহার দেখায়, যা সে নিজের জন্য
পছন্দ করে।’’ (মুসলিম, এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশবিশেষ, যা ৬৭৩ নম্বরে গত হয়েছে।)
(মুসলিম ১৮৪৪, নাসায়ী
৪১৯১, আবূ দাউদ ৪২৪৮, ইবনু মাজাহ ৩৯৫৬, আহমাদ ৬৪৬৫, ৬৭৫৪, ৬৭৭৬ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৬৯
পরস্পর
বিদ্বেষ পোষণ, সম্পর্ক ছেদন এবং শক্রতা পোষণ করার নিষেধাজ্ঞা
১৫৭৫
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «لاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ
تَقَاطَعُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَاناً، وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ
يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثٍ». متفق عَلَيْهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ো না,
পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের সাথে সম্পর্ক ছেদন করো না। তোমরা
আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। আর কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার
(মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে তিনদিনের বেশি কথাবার্তা বলা ত্যাগ করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬০৫৬,
৬০৭৬, মুসলিম ২৫৫৯, তিরমিযী ১৯৩৫, আবূ দাউদ ৪৯১০, আহমাদ ১১৬৬৩, ১২২৮০, ১২৬৪০, ১২৭৬৭,
১২৯৪১, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৭৬
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «تُفْتَحُ أَبْوَابُ الجَنَّةِ يَوْمَ
الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الخَمْيِسِ، فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لاَ يُشْرِكُ
بِاللهِ شَيْئاً، إِلاَّ رَجُلاً كَانَتْ بَينَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ
فَيُقَالُ : أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا ! أَنْظِرُوا هَذَينِ حَتَّى
يَصْطَلِحَا !» . رواه مسلم
وفي روايةٍ لَهُ : «تُعْرَضُ الأَعْمَالُ فِي كُلِّ يَوْمِ خَمِيسٍ وَاثْنَيْن»
وذَكَرَ نَحْوَهُ.
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, ‘‘সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। (ঐ দিনে) প্রত্যেক
সেই বান্দাকে ক্ষমা ক‘রে দেওয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন
করেনি। কিন্তু সেই ব্যক্তিকে নয়, যার সাথে তার মুসলিম ভাইয়ের শত্রুতা থাকে। (তাদের
সম্পর্কে) বলা হয়, এদের দু’জনকে সন্ধি হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, এদের দু’জনকে সন্ধি
হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও।’’
(মুসলিম ২৫৬৫, তিরমিযী
৭৪৭, ২০২৩, আবূ দাউদ ৪৯১৬, ইবনু মাজাহ ১৭৪০, আহমাদ ৭৫৮৩, ৮১৬১, ৮৯৪৬, ৯৯০২, মুওয়াত্তা
মালিক ১৬৮৬, ১৬৮৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭০
কাউকে
হিংসা করা হারাম
১৫৭৭
وَعَنْ أبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه أنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «إيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ، فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا
تَأْكُلُ النًارُ الْحَطَبَ، أَوْ قَالَ العُشْبَ» رواه أبو داود .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: তোমরা হিংসা থেকে দূরে থাক। কেননা হিংসা মানুষের উত্তম
কাজগুলো এভাবে ধ্বংস করে দেয়, যেভাবে আগুন শুকনো কাঠ বা ঘাস ছাই করে ফেলে।
(আবূ দাঊদ) (আমি (আলবানী)
বলছিঃ এর সনদে নাম না নেয়া বর্ণনাকারী রয়েছেন। দেখুন ‘‘য‘ঈফা’’ (১৯০২) । তিনি হচ্ছেন
বর্ণনাকারী ইবরাহীম ইবনু আবী উসায়েদের দাদা। এ দাদা মাজহূল (অপরিচিত) বর্ণনাকারী। আর
ইমাম বুখারী বলেন: হাদীসটি সহীহ্ নয়।)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭১
অপরের
গোপনীয় দোষ সন্ধান করা, অপরের অপছন্দ সত্ত্বেও তার কথা কান পেতে শোনা নিষেধ
১৫৭৮
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ
أَكْذَبُ الحَدِيثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوا وَلاَ تَجَسَّسُوا وَلاَ تَنَافَسُوا،
وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَكُونُوا عِبَادَ
اللهِ إِخْوَاناً كَمَا أَمَرَكُمْ . المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ، لاَ
يَظْلِمُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ يَحْقِرُهُ، التَّقْوَى هاهُنَا التَّقْوَى
هاهُنَا» وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ «بِحَسْبِ امْرِىءٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ
أَخَاهُ المُسْلِمَ، كُلُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ حَرَامٌ : دَمُهُ،
وَعِرْضُهُ، وَمَالُهُ . إِنَّ اللهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى أَجْسَادِكُمْ، وَلاَ
إِلَى صُوَرِكُمْ، وَلكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ» .
وَفِي رواية : «لاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ
تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَنَاجَشُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْواناً».
وفي رواية : «لاَ تَقَاطَعُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ
تَحَاسَدُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْواناً».
وَفِي رِواية : «وَلاَ تَهَاجَرُوا وَلاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ»
. رواه مسلم بكلّ هذِهِ الروايات، وروى البخاريُّ أَكْثَرَهَا .
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা কু-ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাক। কারণ কু-ধারণা সব
চাইতে বড় মিথ্যা কথা। অপরের গোপনীয় দোষ খুঁজে বেড়ায়ো না, অপরের জাসূসী করো না, একে
অপরের সাথে (অসৎ কাজে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ
করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হইয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই
হয়ে যাও; যেমন তিনি তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার
প্রতি যুলূম করবে না, তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না এবং তাকে তুচ্ছ ভাববে না।
আল্লাহ-ভীতি এখানে রয়েছে। আল্লাহ-ভীতি এখানে রয়েছে। (এই সাথে তিনি নিজ বুকের দিকে
ইঙ্গিত করলেন।) কোন মুসলমান ভাইকে তুচ্ছ ভাবা একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য
যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, সম্ভ্রম ও সম্পদ অপর মুসলমানের উপর হারাম।
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের দেহ ও আকার-আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল
দেখেন।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
পোষণ করো না, অপরের জাসূসী করো না, অপরের গোপনীয় দোষ খুঁজে বেড়ায়ো না, পরস্পরের
পণ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।’’
আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা পরস্পর সম্পর্ক-ছেদ করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন
হয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না। তোমরা
আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।’’
অন্য আরও এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা একে অন্যের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না এবং অপরের
ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করো না।’’ (এ সবগুলি মুসলিম বর্ণনা করেছেন এবং এর
অধিকাংশ বর্ণনা করেছেন বুখারী)
(সহীহুল বুখারী ৫১৪৪,
৬০৬৪, ৬০৬৬, ৬৭২৪, মুসলিম ১৪১৩, ২৫৬৩, তিরমিযী ১৯৮৮, ইবনু মাজাহ ৩২৩৯-৩২৪২, আবূ দাউদ
৩২৮০, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭৪, আহমাদ ৭২৯২, ৭৬৪৩, ৭৬৭০, ৭৭৯৮, ৭৮১৫, ৮২৯৯, ৮৫০৫, ৮৮৬৫,
৮৮৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ১১১১, ১৬৮৪, দারেমী ২১৭৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৭৯
وَعَنْ مُعَاوِيَةَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : «إِنَّكَ إِنِ اتَّبَعْتَ عَوْرَاتِ
المُسْلِمينَ أَفْسَدْتَهُمْ، أَوْ كِدْتَ أَنْ تُفْسِدَهُمْ» . حديث صحيح، رواه
أَبُو داود بإسناد صحيح
মুআবিয়াহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘যদি তুমি মুসলমানদের গুপ্ত
দোষগুলি খুঁজে বেড়াও, তাহলে তুমি তাদের মাঝে ফ্যাসাদ সৃষ্টি ক‘রে দেবে অথবা তাদের
মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার উপক্রম হবে।’’
(আবূ দাউদ ৪৮৮৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৮০
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه: أَنَّهُ أُتِيَ بِرَجُلٍ فَقِيلَ لَهُ
: هَذَا فُلاَنٌ تَقْطُرُ لِحْيَتُهُ خَمْراً، فَقَالَ: إنَّا قَدْ نُهِيْنَا عَنِ
التَّجَسُّسِ، وَلَكِنْ إِنْ يَظْهَرْ لَنَا شَيْءٌ، نَأخُذْ بِهِ . حديث حسن
صحيح، رواه أَبُو داود بإسنادٍ عَلَى شَرْطِ البخاري ومسلم
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁর নিকট একটি লোককে নিয়ে আসা হল এবং তার
সম্পর্কে বলা হল যে, ‘এ লোকটি অমুক, এর দাড়ি থেকে মদ ঝরছে।’ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)
বললেন, ‘আমাদেরকে জাসূসী করতে (গুপ্ত দোষ খুঁজে বেড়াতে) নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি
কোন (প্রমাণ) আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আমরা তা দিয়ে তাকে পাকড়াও করব।’
(আবূ দাউদ ৪৮৯০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭২
অপ্রয়োজনে
মুসলমানদের প্রতি কু-ধারণা করা নিষেধ
১৫৮১
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ
أَكْذَبُ الحَدِيثِ» . متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা কু-ধারণা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখ। কারণ কু-ধারণা
সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’’
(সহীহুল বুখারী ৫১৪৪,
৬০৬৪, ৬০৬৬, ৬৭২৪, মুসলিম ১৪১৩, ২৫৬৩, তিরমিযী ১৯৮৮, ইবনু মাজাহ ৩২৩৯-৩২৪২, আবূ দাউদ
৩২৮০, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭৪, আহমাদ ৭২৯২, ৭৬৪৩, ৭৬৭০, ৭৭৯৮, ৭৮১৫, ৮২৯৯, ৮৫০৫, ৮৮৬৫,
৮৮৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ১১১১, ১৬৮৪, দারেমী ২১৭৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭৩
মুসলমানদেরকে
তুচ্ছ জ্ঞান করা হারাম
১৫৮২
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ
أَخَاهُ المُسْلِمَ» . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম
ভাইকে তুচ্ছভাবে।’’ (মুসলিম, হাদীসটি ইতোপূর্বে দীর্ঘ আকারে অতিবাহিত হয়েছে।)
(মুসলিম ৯১, তিরমিযী
১৯৯৮, ১৯৯৯, আবূ দাউদ ৪০৯১, ইবনু মাজাহ ৫৯, ৪১৭৩, আহমাদ ৩৭৭৯, ৩৯০৩, ৩৯৩৭, ৪২৯৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৮৩
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ
كِبْرٍ» فَقَالَ رَجُلٌ : إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَناً،
وَنَعْلُهُ حَسَنةً، فَقَالَ: «إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الجَمَالَ، الكِبْرُ :
بَطَرُ الحَقِّ، وَغَمْطُ النَّاسِ» . رواه مسلم
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’’ (এ কথা
শুনে) এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ‘মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর
হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, (তাহলে সেটাও কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?)’ তিনি
বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে
প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’’
(মুসলিম, হাদিসটি ‘অহংকার’
পরিচ্ছেদে ৬১৭ নম্বরে উল্লিখিত হয়েছে।) (মুসলিম ৯১, তিরমিযী ১৯৯৮, ১৯৯৯, আবূ দাউদ ৪০৯১,
ইবনু মাজাহ ৫৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৮৪
وَعَنْ جُندُبِ بنِ عَبدِ الله رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «قَالَ رَجُلٌ : وَاللهِ لاَ
يَغْفِرُ اللهُ لِفُلاَنٍ، فَقَالَ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ - : مَنْ ذَا الَّذِي
يَتَأَلَّى عَلَيَّ أَنْ لاَ أَغْفِرَ لِفُلاَنٍ ! فَإِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُ،
وَأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ» . رواه مسلم
জুন্দুব
ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘একজন বলল, ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ অমুককে ক্ষমা করবেন না।’
আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বললেন, ‘কে সে আমার উপর কসম খায় এ মর্মে যে, আমি অমুককে
ক্ষমা করব না। আমি তাকেই ক্ষমা করলাম এবং তোর (শপথকারীর) কৃতকর্ম নষ্ট করে
দিলাম!’’
(মুসলিম ২৬২১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭৪
কোন
মুসলিমের দুঃখ-কষ্ট দেখে আনন্দ প্রকাশ করা নিষেধ
১৫৮৫
وَعَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الأسْقَعِ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم : «لَا تُظْهِرِ الشَّمَاتَةَ
لِأَخِيْكَ فَيَرْحَمْهُ اللهُ وَيَبْتَلِيْكَ» رواه الترمذي وقال : حديث حسنٌ .
ওয়াসিলাহ্
ইবনুল আসক্বা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: তোমার ভাইয়ের বিপদে আনন্দিত হয়ো না। কেননা এতে আল্লাহ তার
প্রতি করুণা করবেন এবং ঐ তোমাকে বিপদে নিমজ্জিত করবেন। (তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান
বলেছেন) (আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটিকে হাসান আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য
রয়েছে। কারণ এটি মাকহূলের আন্ আন্ করে বর্ণনাকৃত।)
ইমাম বুখারী বলেনঃ মাকহূল
সহাবী ওয়াসিলাহ (রাঃ) হতে শ্রবণ করেননি।আবূ হাতিম রাযীও ইমাম বুখারীর সিধান্তের সাথে
একমত পোষণ করেছেন।বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন “য’ইফাহ”(৫৪২৬)।
এ বিষয়ে পূর্বোক্ত ‘অপরের গোপনীয় দোষ সন্ধান’ নামক পরিচ্ছেদে আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত
(১৫৭৮নং) হাদীস বিদ্যমান। যাতে আছে, ‘‘প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও সম্পদ অপর
মুসলিমের উপর হারাম।’’ ---আল হাদিস।
হাদিসের মানঃঅন্যান্য
পরিচ্ছেদ - ২৭৫
শরয়ীভাবে
প্রতিষ্ঠিত কারো বংশে খোঁটা দেওয়া হারাম
১৫৮৬
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «اثْنَتَان فِي النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ :
الطَّعْنُ فِي النَّسَبِ، وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘লোকের মধ্যে দু’টি এমন দোষ রয়েছে, যা আসলে কাফেরদের (আচরণ):
বংশে খোঁটা দেওয়া এবং মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করা।’’
(মুসলিম ৬৭, তিরমিযী
১০০১, আহমাদ ৭৮৯৪৮, ৮৬৮৮, ৯১০১, ৯২৯১, ৯৩৯৭, ৯৫৬২, ১০০৫৭, ১০৪২৮, ১০৪৯০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭৬
জালিয়াতি
ও ধোঁকাবাজি হারাম
১৫৮৭
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ
مِنَّا، وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا» . رواه مسلم
وفي رواية لَهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم،
مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ
بَلَلاً، فَقَالَ: «مَا هذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ ؟» قَالَ: أَصَابَتهُ
السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَ: «أَفَلاَ جَعَلْتَهُ
فَوقَ الطَّعَامِ حَتَّى يرَاهُ النَّاسُ ! مَنْ غشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا» .
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমাদের উপর অস্ত্র তোলে।
আর যে আমাদেরকে ধোঁকা দেয়, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।’’
(মুসলিম ১০১, ইবনু মাজাহ
২৫৭৫, আহমাদ ৮১৫৯, ২৭৫০০ (দ্বিতীয়াংশ) মুসলিম ১০২, তিরমিযী ১৩১৫, ইবনু মাজাহ ২২৪, আহমাদ
৭২৫০, ২৭৫০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৮৮
وَعَنْهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «لاَ تَنَاجَشُوا». متفق عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘(ক্রয় করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বিক্রেতার জিনিসের মূল্য
বৃদ্ধি করার জন্য ক্রেতা আকৃষ্ট করে) দালালি করো না।’’
(সহীহুল বুখারী ২১৪০,
২১৪৮, ২১৫০, ২১৫১, ২১৬০, ২১৬২, ২৭২৩, ২৭২৭, ৫১৫২, ৬৬০১, মুসলিম ১০৭৬, ১৪১৩, ১৫১৫, তিরমিযী
১১৩৪, ১১৯০, ১২২১, ১২২২, ১২৫১, ১২৫২, ১৩০৪, নাসায়ী ৩২৩৯, ৩২৪০, ৩২৪১, ৩২৪২, ৪৪৮৭, ৪৪৯০,
৪৪৮৯, ৪৪৯১, ৪৪৯৬, ৪৫০২, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ২০৮০, ৩৪৩৭, ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৩৪৪৪, ৩৪৪৫,
ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪, ২১৭৫, ২১৭৮, ২২৩৯, আহমাদ ৭২০৭, ৭২৬৩, ৭২৭০, ৭৩৩৩, ৭৪০৬,
৭৪৭১, ৭৬৪১, ৮০৩৯, ৮৫০৫, ৮৭১৩, ৮৭৮০, ৮৮৭৬, ৯০১৩, ৯০৫৫, ৯৬১১, ৯৯০৬, মুওয়াত্তা মালিক
১১১১ দারেমী ২১৭৫, ২৫৫৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৮৯
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم، نَهىَ عَنِ النَّجْشِ . متفق عَلَيْهِ
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(তিনি বলেন,) ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম (ক্রেতাকে ধোঁকা দিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করার) দালালি করতে নিষেধ করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ২১৪২,
৬৯৬৩, মুসলিম ১৫১৬, নাসায়ী ৪৪৯৭, ৪৫০৫, ইবনু মাজাহ ২১৭৩, আহমাদ ৫৮২৮, ৬৪১৫, মুওয়াত্তা
মালিক ১৩৯২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৯০
وَعَنْهُ، قَالَ: ذَكَرَ رَجُلٌ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم :
أنَّهُ يُخْدَعُ في البُيُوعِ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى
الله عليه وسلم: «مَنْ بَايَعْتَ، فَقُلْ : لاَ خِلاَبَةَ» . متفق عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একটি লোক এসে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নিবেদন করল যে, সে ব্যবসা বাণিজ্য বা ক্রয়-বিক্রয়ের
ক্ষেত্রে ধোঁকা খায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘যার
সাথে তুমি কেনা-বেচা করবে, তাকে বলে দেবে যে, ধোঁকা যেন না হয়।’’ (অর্থাৎ, আমার
পণ্য বস্তু ফিরিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার থাকবে।)
(সহীহুল বুখারী ২১১৭,
২৪০৭, ২৪১৪, ৬৯৬৪, মুসলিম ১৫৩৩, নাসায়ী ৪৮৮৪, আবূ দাউদ ৩৫০০, আহমাদ ৫০১৫, ৫২৪৯, ৫৩৮২,
৫৪৯১, ৫৮২০, ৬০৯৯, মুওয়াত্তা মালিক ১৩৯৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৯১
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ خَبَّبَ زَوْجَةَ امْرِئٍ، أَوْ
مَمْلُوكَهُ، فَلَيْسَ مِنَّا» . رواهُ أَبُو داود
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে কারো স্ত্রী অথবা
কারো ভৃত্যকে প্ররোচনা বা প্রলোভন দ্বারা নষ্ট করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’
(আবূ দাউদ ৫১৭০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭৭
চুক্তি
ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার নিষেধাজ্ঞা
১৫৯২
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا :
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أَرْبَعٌ
مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقاً خَالِصاً، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ
مِنْهُنَّ كَانَ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَها : إِذَا
اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا
خَاصَمَ فَجَرَ» . متفق عَلَيْهِ .
আব্দুল্লাহ
ইবনে আম্র ইবন আ‘স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে খাঁটি মুনাফিক গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তির মাঝে
তার মধ্য হতে একটি স্বভাব থাকবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকদের
একটি স্বভাব থেকে যাবে। (সে স্বভাবগুলি হল,) ১। তার কাছে আমানত রাখা হলে খিয়ানত
করে। ২। কথা বললে মিথ্যা বলে। ৩। ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ৪। ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত
হলে অশ্লীল ভাষা বলে।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৪,
২৪৫৯, ৩১৭৮, মুসলিম ৫৮, তিরমিযী ২৬৩২, নাসায়ী ৫০২০ আবূ দাউদ ৪৫৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫,
৬৮৪০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৯৩
وعَنِ ابنِ مَسعودٍ، وَابنِ عُمَرَ، وَأَنَسٍ - رَضِيَ الله عَنهُم -
قَالُوا : قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «لِكُلِّ غادِرٍ لِواءٌ يَوْمَ
القِيَامَةِ، يُقَالُ : هَذِهِ غَدْرَةُ فُلاَنٍ» . متفق عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ, ইবনে উমার ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিনে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে (বিশেষ)
পতাকা নির্দিষ্ট হবে। বলা হবে যে, এটা অমুক ব্যক্তির (বিশ্বাসঘাতকতার) প্রতীক।’’
(সহীহুল বুখারী ৩১৮৬,
৩১৮৭, ৩১৮৮, ৬১৭৭, ৬১৭৮, ৬৯৬৬, ৭১১১, মুসলিম ১৭৩৬, ১৭৩৭, ইবনু মাজাহ ২৮৭২, আহমাদ ৩৮৯০,
২৯৪৯, ৪১৮৯, ১২০৩৫, ১২১০৯, ১৩২০০, ১৩৪৪৬, দারেমী ২৫৪২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৯৪
وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيّ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ عِنْدَ اسْتِهِ يومَ القِيَامَةِ
يُرْفَعُ لَهُ بِقَدَرِ غَدْرِهِ، أَلاَ وَلاَ غَادِرَ أَعْظَمُ غَدْراً مِنْ
أَمِيرِ عَامَّةٍ» . رواه مسلم
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘কিয়ামতের দিনে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের পাছায় একটা পতাকা থাকবে, যাকে তার
বিশ্বাসঘাতকতা অনুপাতে উঁচু করা হবে। জেনে রেখো! রাষ্ট্রনায়কের (বিশ্বাসঘাতক হলে
তার) চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক আর অন্য কেউ হতে পারে না।’’
(মুসলিম ১৭৩৮, তিরমিযী
২১৯১, ইবনু মাজাহ ২৮৭৩, আহমাদ ১০৬৫১, ১০৭৫৯, ১০৯১০, ১০৯৫৮, ১১০৩৫, ১১১৯৩, ১১২২২, ১১২৬৯,
১১৩৮৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৯৫
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «قَالَ الله تَعَالَى : ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ :
رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرَّاً فَأَكَلَ ثَمَنَهُ،
وَرَجُلٌ اسْتَأجَرَ أَجِيراً، فَاسْتَوْفَى مِنْهُ، وَلَمْ يُعْطِهِ أَجْرَهُ» .
رواه البخاري
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তিন প্রকার লোক এমন আছে, কিয়ামতের দিন যাদের প্রতিবাদী
স্বয়ং আমি; (১) সে ব্যক্তি, যে আমার নামে অঙ্গীকারাবদ্ধ হল, পরে তা ভঙ্গ করল। (২)
সে ব্যক্তি, যে স্বাধীন মানুষকে (প্রতারণা দিয়ে) বিক্রি ক‘রে তার মূল্য ভক্ষণ করল।
(৩) সে ব্যক্তি, যে কোন মজুরকে খাটিয়ে তার নিকট থেকে পুরাপুরি কাজ নিল, কিন্তু তার
মজুরী দিল না।’’
(সহীহুল বুখারী ২২২৭,
২২৭০, ইবনু মাজাহ ২৫৪২, আহমাদ ৮৪৭৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭৮
কাউকে
কিছু দান বা অনুগ্রহ করে তা লোকের কাছে প্রকাশ ও প্রচার করা নিষেধ
১৫৯৬
وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَلاَ يَنْظُرُ
إلَيْهِمْ، وَلاَ يُزَكِّيِهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَليمٌ» قَالَ: فَقَرَأَهَا
رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَ مِرَارٍ : قَالَ أَبُو ذَرٍّ : خَابُوا
وَخَسِرُوا مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ: «المُسْبِلُ،
وَالمَنَّانُ، وَالمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالحَلِفِ الكَاذِبِ» . رواه مسلم
وفي روايةٍ لَهُ : «المُسْبِلُ إِزَارَهُ» يَعْنِي : المُسْبِلَ إِزَارَهُ
وَثَوْبَهُ أَسْفَلَ مِنَ الكَعْبَيْنِ لِلخُيَلاَءِ .
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, ‘‘কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে
তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য হবে মর্মন্তুদ শাস্তি।’’
বর্ণনাকারী বলেন, এরূপ তিনি তিনবার বললেন। তখন আবূ যার্র বললেন, ‘ব্যর্থ ও
ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তারা কারা হে আল্লাহর রসূল?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘যে (পায়ের) গাঁটের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে প্রচার
করে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে নিজের পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে।’’
(মুসলিম ১০৬, তিরমিযী
১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪, ৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, আবূ দাউদ ৪০৮৭, ইবনু মাজাহ ২২০৮, আহমাদ
২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৭৯
গর্ব
ও বিদ্রোহাচরণ করা নিষেধ
১৫৯৭
وَعَنْ عِيَاضِ بنِ حِمَارٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ اللهَ تَعَالَى أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ
تَوَاضَعُوا حَتَّى لاَ يَبْغِيَ أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ، وَلاَ يَفْخَرَ أَحَدٌ
عَلَى أَحَدٍ» . رواه مسلم
ইয়ায
ইবনে হিমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘মহান আল্লাহ আমাকে প্রত্যাদেশ করেছেন যে, তোমরা পরস্পরের
প্রতি নম্রতা ও বিনয় ভাব প্রদর্শন কর। যাতে কেউ যেন অন্যের প্রতি অত্যাচার না করতে
পারে এবং কেউ কারো সামনে গর্ব প্রকাশ না করে।’’
(মুসলিম ২৮৬৫, আবূ দাউদ
৪৮৯৫, ইবনু মাজাহ ৪১৭৯, আহমাদ ১৭০৩০, ১৭৮৭৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৫৯৮
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا قَالَ الرَّجُلُ : هَلَكَ النَّاسُ،
فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি (গর্বভরে) বলে, লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে গেল, সে
তাদের মধ্যে সর্বাধিক বেশি ধ্বংসোন্মুখ।’’
(মুসলিম ২৬২৩, আবূ দাউদ
৪৯৮৩, আহমাদ ৮৩০৯, ৯৬৭৮, ১০৩১৯, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৪৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮০
তিনদিনের
অধিক এক মুসলিমের অন্য মুসলিমের সাথে কথা-বার্তা বন্ধ রাখা হারাম। তবে যদি বিদআতী,
প্রকাশ্য মহাপাপী ইত্যাদি হয়, তাহলে তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করার কথা ভিন্ন
১৫৯৯
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَقَاطَعُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ
تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَاناً، وَلاَ
يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَث» . متفق عَلَيْهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা পরস্পর সম্পর্ক-ছেদ করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে
শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো
না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে
তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬০৫৬,
৬০৭৬, মুসলিম ২৫৫৯, তিরমিযী ১৯৩৫, আবূ দাউদ ৪৯১০, আহমাদ ১১৬৬৩, ১২২৮০, ১২৬৪০, ১২৭৬৭,
১২৯৪১, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬০০
وَعَنْ أَبي أَيُّوبَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ
فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ: يَلْتَقِيَانِ، فَيُعْرِضُ هَذَا، وَيُعْرِضُ هَذَا،
وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ» . متفق عَلَيْهِ
আবূ
আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন
দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখে। যখন তারা পরস্পর সাক্ষাৎ করে, তখন এ এ দিকে
মুখ ফিরায় এবং ও ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তাদের দু’জনের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সেই
হবে, যে সাক্ষাৎকালে প্রথমে সালাম পেশ করবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬০৭৭,
৬২৩৭, মুসলিম ২৫৬০, তিরমিযী ১৯৩২, আবূ দাউদ ৪৯১১, আহমাদ ২৩০১৭, ২৩০৬৪, ২৩০৭৩, মুওয়াত্তা
মালিক ১৬৮২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬০১
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «تُعْرَضُ الأَعْمَالُ فِي كُلِّ
اثْنَيْنِ وَخَمْيسٍ، فَيَغْفِرُ اللهُ لِكُلِّ امْرِئٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ
شَيْئاً، إِلاَّ امْرَءاً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ، فَيَقُولُ
: اتْرُكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا» . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার আমলসমূহ পেশ করা হয়। সুতরাং
প্রত্যেক সেই বান্দাকে ক্ষমা ক‘রে দেওয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার
স্থাপন করেনি। তবে সেই ব্যক্তিকে নয়, যার সাথে তার অন্য মুসলিম ভাইয়ের শত্রুতা
থাকে। (তাদের সম্পর্কে) বলা হয়, এদের দু’জনকে সন্ধি করা পর্যন্ত অবকাশ দাও।’’
(মুসলিম ২৫৬৫, তিরমিযী
৭৪৭, ২০২৩, আবূ দাউদ ৪৯১৬, ইবনু মাজাহ ১৭৪০, আহমাদ ৭৫৮৩, ৮১৬১, ৮৯৪৬, ৯৯০২, মুওয়াত্তা
মালিক ১৬৮৬, ১৬৮৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬০২
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : «إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ يَئِسَ
أَنْ يَعْبُدَهُ المُصَلُّونَ فِي جَزِيرَةِ العَرَبِ، وَلَكِنْ فِي التَّحْرِيشِ
بَيْنَهُمْ» . رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় শয়তান এ ব্যাপারে নিরাশ হয়ে
পড়েছে যে, আরব দ্বীপে নামাযী (মুসলিম)-রা তার পূজা করবে। তবে (এ বিষয়ে সুনিশ্চিত)
যে, সে তাদের মধ্যে উস্কানি দিয়ে (উত্তেজনা সৃষ্টি ক‘রে তাদের নিজেদের মধ্যে
দ্বন্দ্ব-কলহে লিপ্ত করতে সফল হবে।)’’
(মুসলিম ২৮১২, তিরমিযী
১৯৩৭, আহমাদ ১৩৯৭৫, ১৪৪০২, ১৪৫২৩, ১৪৬১৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬০৩
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ
أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثٍ، فَمَنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلاَثٍ فَمَاتَ، دَخَلَ النَّارَ»
. رواه أَبُو داود بإسناد عَلَى شرط البخاري ومسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘কোন মুসলিমের জন্য এ কাজ বৈধ নয় যে, তার কোন মুসলিম ভাইয়ের
সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তিন দিনের
ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ
করবে।’’
(আবূ দাউদ ৪৯১২, ৪৯১৪,
মুসলিম ২৫৬২, আহমাদ ৮৮৪৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬০৪
وَعَنْ أَبي خِراشٍ حَدْرَدِ بنِ أَبي حَدْرَدٍ الأسلَمِيِّ . وَيُقَالُ
: السُّلَمِيّ الصَّحَابِي رضي الله عنه : أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم، يَقُوْلُ : «مَنْ هَجَرَ أَخَاهُ سَنَةً فَهُوَ كَسَفْكِ دَمِهِ» .
رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
আবূ
খিরাশ হাদরাদ ইবনে আবূ হাদরাদ আসলামী, মতান্তরে সুলামী সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে
বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যে ব্যক্তি তার কোন (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে বছরব্যাপী বাক্যালাপ
বন্ধ করবে, তা হবে তার রক্তপাত ঘটানোর মত।’’
(আবূ দাউদ ৪৯১৫, আহমাদ
১৭৪৭৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬০৫
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أنًّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم : «لَا يَحِلُّ لِمُؤْمِنٍ أنْ يَّهْجُرَ
مُؤْمِناً فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَإَنْ مَرَّتْ بِهِ ثَلَاثٌ، فَلْيَلْقَهُ،
وَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَإِنْ رَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ، فَقَدِ اشْتَرَكَا
فِيْ الْأَجْرِ، وَإٍنْ لَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ، فَقَدْ بَاءَ بِالْإِثْمِ،
وَخَرَجَ الْمُسَلِّمُ مِنَ الْهَجْرَةِ». رواهُ أبو داود بإسنادٍ حسن . قال أبو
داود : إذا كَانَتِ الهجْرَةُ للهِ تَعالى فَلَيْس مِنْ هذَا في شيءٍ .
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: কোন মু‘মিন লোকের পক্ষে অন্য কোন মু‘মিন লোককে তিনদিনের বেশি
ত্যাগ করে থাকা বৈধ নয়। তিন দিন অতিক্রম হওয়ার পর যদি সাক্ষাৎ করে ও তাকে সালাম
দেয় এবং অপরজনও সালামের জবাব দেয়, তবে দু’জনই সাওয়াব পাবে। যদি সে সালামের উত্তর
না দেয়, তাহলে গুনাহগার হবে এবং সালামকারী ত্যাগ করার গুনাহ থেকে পরিত্রাণ যাবে।
(আবূ দাঊদ হাদীসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)
(আমি (আলবানী) বলছিঃ
হাদীসটিকে হাসান আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। কারণ এর সনদে হিলাল মাদানী
রয়েছেন। হাফিয যাহাবী বলেনঃ তাকে চেনা যায় না। দেখুন ‘‘ইরওয়াউল গালীল’’
হাদিসের মানঃঅন্যান্য
পরিচ্ছেদ - ২৮১
তিনজনের
একজনকে ছেড়ে দু’জনের কানাকানি
১৬০৬
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا كانُوا ثَلاثَةً، فَلاَ
يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُونَ الثَّالِثِ» . متفق عَلَيْهِ .
وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَزَادَ : قَالَ أَبُو صَالِح : قُلْتُ لابنِ عُمرَ :
فَأَرْبَعَةً ؟ قَالَ: لاَ يَضُرُّكَ.
وَرَوَاهُ مَالِكٌ فِي "الموَطأ": عَن عَبدِ اللهِ بنِ دِينَارٍ، قَالَ:
كُنْتُ أَنَا وابْنُ عُمَرَ عِنْدَ دَارِ خَالِدِ بنُ عُقْبَةَ الَّتي فِي
السُّوقِ، فَجَاءَ رَجُلٌ يُريدُ أَنْ يُنَاجِيَهُ، وَلَيْسَ مَعَ ابْنِ عُمَرَ
أَحَدٌ غَيْرِي، فَدَعَا ابْنُ عُمَرَ رَجُلاً آخَرَ حَتَّى كُنَّا أَرْبَعَةً،
فَقَالَ لِي وَلِلرَّجُلِ الثَّالِثِ الَّذِي دَعَا : اسْتَأْخِرَا شَيْئاً،
فَإنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يقُولُ :
«لاَ يَتَنَاجَى اثْنَانِ دُونَ وَاحِدٍ» .
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যখন (কোন স্থানে) একত্রে তিনজন থাকবে, তৃতীয়জনকে ছেড়ে যেন
দু’জনে কানাকানি না করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬২৮৮,
মুসলিম ২১৮৩, আবূ দাউদ ৪৮৫১, ইবনু মাজাহ ৩৭৭৬, আহমাদ ৪৫৫০, ৪৬৭১, ৪৮৫৬, ৫০০৩, ৫০২৬,
৫২৩৬, ৫৪০২, ৬০২১, ৬১৯০, ৬৩০২, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৫৬, ১৮৫৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬০৭
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا كُنْتُمْ ثَلاَثَةً، فَلاَ يَتَنَاجَى
اثْنَانِ دُونَ الآخَرِ حَتَّى تَخْتَلِطُوا بِالنَّاسِ، مِنْ أَجْلِ أَنَّ ذَلِكَ
يُحْزِنُهُ» . متفق عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যখন (একত্রে) তিনজন থাকবে, তখন লোকদের সঙ্গে মিলিত না হওয়া
অবধি একজনকে ছেড়ে দু’জনে যেন কানাকানি না করে। কারণ, এতে (ত্যক্ত ব্যক্তিকে)
মনঃকষ্টে ফেলা হবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬২৯০,
মুসলিম ২১৮৪, তিরমিযী ২৮২৫, আবূ দাউদ ৪৮৫১, ইবনু মাজাহ ৩৭৭৫, আহমাদ ৩৫৫০, ৪০২৯, ৪০৮২,
৪০৯৫, ৪১৬৪, ৪৪১০, ৪৪২২, দারেমী ২৬৫৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮২
দাস-দাসী,
পশু, নিজ স্ত্রী অথবা ছেলেমেয়েকে শরয়ী কারণ ছাড়া আদব দেওয়ার জন্য যতটুকু জরুরী তার
থেকে বেশি শাস্তি দেওয়া নিষেধ
১৬০৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ
سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ، فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ، لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا
وَسَقَتْهَا، إِذْ حَبَسَتْهَا، وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأكُلُ مِنْ خَشَاشِ
الأَرْضِ» . متفق عَلَيْهِ
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘এক মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে তাকে
বেঁধে রেখেছিল এবং অবশেষে সে মারা গিয়েছিল, পরিণতিতে মহিলা তারই কারণে জাহান্নামে
প্রবেশ করল। সে যখন তাকে বেঁধে রেখেছিল, তখন তাকে আহার ও পানি দিত না এবং তাকে
ছেড়েও দিত না যে, সে কীট-পতঙ্গ ধরে খাবে।’’
(সহীহুল বুখারী ২৩৬৫,
৩৩১৮, ৩৪৮২, মুসলিম ২২৪২, দারেমী ২৮১৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬০৯
وَعَنْهُ : أَنَّهُ مَرَّ بِفِتْيَانٍ مِنْ قُرَيْشٍ قَدْ نَصَبُوا
طَيراً وَهُمْ يَرْمُونَهُ، وَقَدْ جَعَلُوا لِصَاحِبِ الطَّيْرِ كُلَّ خَاطِئَةٍ
مِنْ نَبْلِهمْ، فَلَمَّا رَأَوْا ابْنَ عُمَرَ تَفَرَّقُوا، فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ
: مَنْ فَعَلَ هَذَا ؟ لَعَنَ اللهُ مَنْ فَعَلَ هَذَا، إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَعَنَ مَنِ اتَّخَذَ شَيْئاً فِيهِ الرُّوحُ
غَرَضاً . متفق عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি একবার কুরাইশ বংশের কতিপয় নবযুবকের নিকট
দিয়ে অতিক্রম করার সময় লক্ষ্য করলেন যে, তারা একটি পাখীকে বেঁধে (হাতের নিশানা ঠিক
করার মানসে তার উপর নির্দয়-ভাবে) তীর মারছে। তারা পাখীর মালিকের সাথে এই চুক্তি
করেছিল যে, প্রতিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট তীর তার হয়ে যাবে। সুতরাং যখন তারা ইবনে উমার
(রাঃ) -কে দেখতে পেল, তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে গেল। ইবনে উমার (রাঃ) বললেন, ‘এ কাজ
কে করেছে? যে এ কাজ করেছে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ। নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই ব্যক্তির উপর অভিশাপ করেছেন, যে কোন এমন
জিনিসকে (তার তীর-খেলার) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, যার মধ্যে প্রাণ আছে।’
(সহীহুল বুখারী ৫৫১৪,
৫৫১৫, মুসলিম ১৯০৮, নাসায়ী ৪৪৪১, ৪৪৪২, আহমাদ ৪৬০৮, ৪৯৯৮, ৫২২৫, ৫৫৬২, ৫৬৪৯, ৫৭৬৭,
৬২২৩, দারেমী ১৯৭৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১০
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى رَسُول اللهِ صلى الله
عليه وسلم أَنْ تُصْبَرَ البَهَائِمُ . متفق عَلَيْهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীব-জন্তুদের বেঁধে রেখে (তীর বা বন্দুকের নিশানা ঠিক করার
ইচ্ছায়) হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ৫৫১৩,
মুসলিম ১৯৫৬, নাসায়ী ৪৪৩৯, আবূ দাউদ ২৮১৬, ইবনু মাজাহ ৩১৮৬, আহমাদ ১১৭৫১, ১২৩৩৫, ১২৪৫১,
১২৫৭০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১১
وَعَنْ أَبي عَليٍّ سُوَيدِ بن مُقَرِّنٍ رضي الله عنه قَالَ: لَقَدْ
رَأَيْتُنِي سَابِعَ سَبْعَةٍ مِنْ بَنِي مُقَرِّنٍ مَا لَنَا خَادِمٌ إِلاَّ
وَاحِدَةٌ لَطَمَهَا أَصْغَرُنَا فَأَمَرَنَا رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم
أَنْ نُعْتِقَهَا. رواه مسلم. وفي روايةٍ: سَابعَ إخْوَةٍ لِي
আবূ
আলী সুয়াইদ ইবনে মুক্বার্রিন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করেছি যে,
মুক্বার্রিনের সাত ছেলের মধ্যে আমি সপ্তম ছিলাম। আমাদের একটি মাত্র দাসী ছিল। তাকে
আমাদের ছোট ভাই চড় মেরেছিল। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে
তাকে মুক্ত ক‘রে দিতে আদেশ করলেন।’
(মুসলিম ১৬৫৮, তিরমিযী
১৫৪২, আবূ দাউদ ৫১৬৬, ৫১৬৬, ৫১৬৭, আহমাদ ১৫২৭৬, ২৩২২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১২
وَعَنْ أَبي مَسعُودٍ البَدْرِيِّ رضي الله عنه قَالَ: كُنْتُ أَضْرِبُ
غُلامَاً لِي بِالسَّوْطِ، فَسَمِعْتُ صَوْتاً مِنْ خَلْفِي : «اِعْلَمْ أَبَا
مَسْعُودٍ» فَلَمْ أَفْهَمِ الصَّوْتَ مِنَ الغَضَبِ، فَلَمَّا دَنَا مِنِّي إِذَا
هُوَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَإِذَا هُوَ يَقُولُ : «اِعْلَمْ أَبَا
مَسْعُودٍ أَنَّ اللهَ أَقْدَرُ عَلَيْكَ مِنْكَ عَلَى هَذَا الغُلامِ» . فَقُلتُ
: لاَ أَضْرِبُ مَمْلُوكاً بَعْدَهُ أَبَداً . وَفِي رِوَايَةٍ : فَسَقَطَ
السَّوْطُ مِنْ يَدِي مِنْ هَيْبَتِهِ . وَفِي رِوَايَةٍ : فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، هُوَ حُرٌّ لِوَجْهِ اللهِ تَعَالَى، فَقَالَ: «أَمَا
لَوْ لَمْ تَفْعَلْ، لَلَفَحَتْكَ النَّارُ، أَوْ لَمَسَّتْكَ النَّارُ» . رواه
مسلم بهذه الروايات .
আবূ
মাসঊদ বাদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একদা আমার একটি গোলামকে চাবুক
মারছিলাম। ইত্যবসরে পিছন থেকে এই শব্দ শুনতে পেলাম ‘জেনে রেখো, হে আবূ মাসঊদ!’
কিন্তু ক্রোধান্বিত অবস্থায় শব্দটা বুঝতে পারলাম না। যখন সেই (শব্দকারী) আমার
নিকটবর্তী হল, তখন সহসা দেখলাম যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) । তিনি বলছিলেন, ‘জেনে রেখো আবূ মাসঊদ! ওর উপর তোমার যতটা ক্ষমতা আছে,
তোমার উপর আল্লাহ তা‘আলা আরও বেশি ক্ষমতাবান।’ তখন আমি বললাম, ‘এরপর থেকে আমি আর
কখনো কোন গোলামকে মারধর করব না।’
এক বর্ণনায় আছে, তাঁর ভয়ে আমার হাত থেকে চাবুকটি পড়ে গেল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর
রসূল! আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ওকে স্বাধীন ক‘রে দিলাম।’ রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘শোন! তুমি যদি তা না করতে, তাহলে
জাহান্নামের আগুন তোমাকে অবশ্যই দগ্ধ অথবা স্পর্শ করত।’’
(মুসলিম ১৬৫৯, তিরমিযী
১৯৪৮, আবূ দাউদ ৫১৫৯, আহমাদ ১৬৬৩৮, ২১৮৪৫, ২১৮৪৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১৩
وعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ ضَرَبَ غُلاَمَاً لَهُ حَدّاً لَمْ يَأتِهِ، أَوْ
لَطَمَهُ، فَإِنَّ كَفَّارَتَهُ أَنْ يُعْتِقَهُ» . رواه مسلم
ইবনে
উমার (রা) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি নিজ গোলামকে এমন অপরাধের সাজা দেয়, যা সে করেনি অথবা তাকে চড় মারে,
তাহলে তার প্রায়শ্চিত্ত হল, সে তাকে মুক্ত ক‘রে দেবে।’’
(মুসলিম ১৬৫৭, আবূ দাউদ
৬১৬৮, আহমাদ ৪৭৬৯, ৫০৩১, ৫২৪৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১৪
وَعَنْ هِشَامِ بنِ حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّه
مَرَّ بِالشَّامِ عَلَى أُنَاسٍ مِنَ الأَنْبَاطِ، وَقَدْ أُقيِمُوا فِي
الشَّمْسِ، وَصُبَّ عَلَى رُؤُوسِهِمُ الزَّيْتُ ! فَقَالَ: مَا هَذَا ؟ قِيلَ :
يُعَذَّبُونَ فِي الخَرَاجِ - وَفِي رِوَايَةٍ : حُبِسُوا فِي الجِزْيَةِ -
فَقَالَ هِشَامٌ : أَشهَدُ لَسَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم، يَقُولُ : «إِنَّ اللهَ يُعَذِّبُ الَّذِينَ يُعَذِّبُونَ النَّاس فِي
الدُّنْيَا». فَدَخَلَ عَلَى الأَمِيرِ، فَحَدَّثَهُ، فَأَمَرَ بِهِمْ فَخُلُّوا.
رواه مسلم
হিশাম
ইবনে হাকীম ইবনে হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
সিরিয়ায় এমন কিছু চাষী লোকের নিকট দিয়ে তাঁর
যাত্রা হচ্ছিল, যাদেরকে রোদে দাঁড় করিয়ে তাদের মাথার উপর তেল ঢেলে দেওয়া হচ্ছিল।
তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘ব্যাপার কী?’ বলা হল, ‘ওদেরকে জমির কর (আদায় না দেওয়ার) জন্য
সাজা দেওয়া হচ্ছে।’ অন্য বর্ণনায় আছে যে, ‘রাজস্ব (আদায় না করার) কারণে ওদেরকে
বন্দী করা হয়েছে।’ হিশাম বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সেসব
লোকদেরকে কষ্ট দেবেন, যারা লোকদেরকে কষ্ট দেয়।’’ অতঃপর হিশাম আমীরের নিকট গিয়ে এ
হাদীসটি শোনালেন। তিনি তাদের সম্পর্কে নির্দেশ জারি করলেন এবং তাদেরকে মুক্ত ক‘রে
দিলেন।
(মুসলিম ২৬১৩, আবূ দাউদ
৩০৪৫, আহমাদ ১৪৯০৬, ১৪৯১০, ১৫৪১৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১৫
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: رَأَى رَسُول اللهِ
صلى الله عليه وسلم حِمَاراً مَوْسُومَ الوَجْهِ، فَأَنْكَرَ ذَلِكَ فَقَالَ:
«واللهِ لاَ أَسِمُهُ إِلاَّ أَقْصَى شَيْءٍ مِنَ الوَجْهِ». وَأمَرَ بِحِمَارِهِ
فَكُوِيَ فِي جَاعِرَتَيْهِ، فَهُوَ أَوَّلُ مَنْ كَوَى الجَاعِرَتَيْنِ . رواه
مسلم
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) এমন একটি গাধা দেখতে পেলেন, যার চেহারা দাগা হয়েছিল। তা দেখে তিনি
অত্যধিক অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘আল্লাহর কসম! আমি ওর চেহারা থেকে
সবচেয়ে দূরবর্তী অঙ্গে দাগব। (আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে চিহ্ন দেব।)’’ অতঃপর তিনি নিজ
গাধা সম্পর্কে নির্দেশ করলেন এবং তার পাছায় দাগা হল। সুতরাং তিনিই প্রথম ব্যক্তি
যিনি (গাধার) পাছা দেগেছিলেন।
(মুসলিম ২১১৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১৬
وَعَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَيْهِ حِمَارٌ
قَدْ وُسِمَ فِي وَجْهِهِ، فَقَالَ: «لَعَنَ اللهُ الَّذِي وَسَمَهُ». رواه مسلم.
وفي رواية لمسلم أَيضاً: نهى رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الضَّرْبِ فِي
الوَجْهِ، وَعَنِ الوَسْمِ فِي الوَجْهِ.
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট
দিয়ে একটি গাধা অতিক্রম করল, যার চেহারা দাগা হয়েছিল। তখন তিনি বললেন, ‘‘যে এর
চেহারা দেগেছে, তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত হোক।’’
(মুসলিম ২১১৭, তিরমিযী
১৭১০, আবূ দাউদ ২৫৬৪, আহমাদ ১৪০১৫, ১৪০৫০, ১৪৬২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮৩
যে
কোন প্রাণী এমনকি পিঁপড়েকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শাস্তি দেওয়া নিষেধ
১৬১৭
عَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: بَعَثَنَا رَسُول
اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَعْثٍ، فَقَالَ: «إِنْ وَجَدْتُمْ فُلاَناً
وَفُلاناً» لِرَجُلَيْنِ مِنْ قُرَيْشٍ سَمَّاهُمَا «فَأَحْرِقُوهُمَا بِالنَّارِ»
ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم حِيْنَ
أَرَدْنَا الخرُوجَ: «إنِّي كُنْتُ أَمَرْتُكُمْ أَنْ تُحْرِقُوا فُلاناً
وَفُلاناً، وَإِنَّ النَّارَ لاَ يُعَذِّبُ بِهَا إِلاَّ الله، فَإِنْ
وَجَدْتُمُوهُمَا فَاقْتُلُوهُمَا». رواه البخاري
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম একবার আমাদেরকে একটি অভিযানে পাঠালেন এবং কুরাইশ বংশীয় দুই ব্যক্তির
নাম নিয়ে আদেশ দিলেন যে, ‘তোমরা যদি অমুক ও অমুককে পাও, তাহলে তাদেরকে আগুন দিয়ে
জ্বালিয়ে দিও।’ অতঃপর যখন যাত্রা শুরু করলাম, তখন তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে
অমুক অমুক লোককে আগুন দিয়ে জ্বালাতে বলেছিলাম। কিন্তু আগুন দিয়ে জ্বালানোর শাস্তি
কেবল আল্লাহই দেন। বিধায় তোমরা যদি তাদেরকে পাও, তাহলে তাদেরকে হত্যা ক‘রে দিও।’’
(সহীহুল বুখারী ৩০১৬,
তিরমিযী ১৫৭১, আবূ দাউদ ২৬৭৩, আহমাদ ৮০০৭, ৮২৫৬, ৯৫৩৪, দারেমী ২৪৬১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬১৮
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ
اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ، فَانْطَلَقَ لِحَاجَتِهِ، فَرَأيْنَا
حُمَّرَةً مَعَهَا فَرْخَانِ، فَأَخَذْنَا فَرْخَيْهَا، فَجَاءَتِ الحُمَّرَةُ
فَجَعَلَتْ تَعْرِشُ، فَجَاءَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: «مَنْ فَجَعَ
هَذِهِ بِوَلَدِهَا ؟، رُدُّوا وَلَدَهَا إِلَيْها» . وَرَأَى قَرْيَةَ نَمْلٍ
قَدْ حَرَّقْنَاهَا، فَقَالَ: «مَنْ حَرَّقَ هَذِهِ؟» قُلْنَا : نَحْنُ، قَالَ:
«إِنَّهُ لاَ يَنْبَغِي أَنْ يُعَذِّبَ بِالنَّارِ إِلاَّ رَبُّ النَّارِ» . رواه
أَبُو داود بإسناد صحيح
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি পেশাব-পায়খানা করতে চলে
গেলেন। অতঃপর আমরা একটি লাল রঙের (হুম্মারাহ) পাখী দেখলাম। পাখীটির সাথে তার দুটো
বাচ্চা আছে। আমরা তার বাচ্চাগুলোকে ধরে নিলাম। পাখীটি এসে (আমাদের) আশে-পাশে ঘুরতে
লাগল। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এলেন এবং বললেন, ‘‘এই
পাখীটিকে ওর বাচ্চাদের জন্য কে কষ্টে ফেলেছে? ওকে ওর বাচ্চা ফিরিয়ে দাও।’’ তারপর
তিনি পিঁপড়ের একটি গর্ত দেখতে পেলেন, যেটাকে আমরা জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। তা দেখে
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘এ গর্তটি কে জ্বালাল?’’ আমরা জবাব দিলাম যে, ‘আমরা
(জ্বালিয়েছি)।’ তিনি বললেন, ‘‘আগুনের মালিক (আল্লাহ) ছাড়া আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া
আর কারো জন্য সঙ্গত নয়।’’
(আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
(আবূ দাউদ ২৬৭৫, আহমাদ ৩৮২৫ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮৪
পাওনাদারের
পাওনা আদায়ে ধনী ব্যক্তির টাল-বাহানা বৈধ নয়
১৬১৯
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَطْلُ الغَنِيِّ ظُلْمٌ، وَإِذَا أُتْبِعَ
أَحَدُكُمْ عَلَى مَلِيءٍ فَلْيَتْبَع» . متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ের ব্যাপারে) টাল-বাহানা করা অন্যায়।
আর তোমাদের কাউকে যখন কোন ধনী ব্যক্তির হাওয়ালা ক‘রে দেওয়া হবে, তখন তার উচিত, তার
অনুসরণ করা।’’ (অর্থাৎ তার কাছে ঋণ তলব করা।)
(সহীহুল বুখারী ২২৮৭,
২২৮৮, ২৪০০, মুসলিম ১৫৬৪, তিরমিযী ১৩০৮, নাসায়ী ৪৬৮৮, ৪৬৯১, আবূ দাউদ ৩৩৪৫, ইবনু মাজাহ
২৪০৩, আহমাদ ৭২৯১, ৭৪৮৮, ৮৬৭৯, ৮৭১৫, ৯৬৭৬, ২৭৭৭৮, ২৭৩৯২, ২৭২৩৯, মুওয়াত্তা মালিক ১৩৯৭,
দারেমী ২৫৮৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮৫
উপহার
বা দানের বস্তু ফেরৎ নেওয়া অপছন্দনীয় কাজ
১৬২০
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الَّذِي يَعُودُ فِي هِبَتِهِ
كَالكَلْبِ يَرْجِعُ فِي قَيْئِهِ» . متفق عَلَيْهِ . وفي رواية : «مَثَلُ الَّذِي
يَرْجِعُ فِي صَدَقَتِهِ، كَمَثَلِ الكَلْبِ يَقِيءُ، ثُمَّ يَعُودُ فِي قَيْئِهِ
فَيَأكُلُهُ» . وفي روايةٍ : «العَائِدُ فِي هِبَتِهِ كَالعَائِدِ فِي قَيْئِهِ» .
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজের দান ফিরিয়ে নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে, তারপর
তা আবার খেয়ে ফেলে।’’
(সহীহুল বুখারী ২৫৮৯,
২৬২১, ২৬২২, ৬৯৭৫, মুসলিম ১৬২২, তিরমিযী ১২৯৮, নাসায়ী ৩৬৯৩-৩৭০৫, ৩৭১০, আবূ দাউদ ৩৫৩৮,
ইবনু মাজাহ ২৩৮৫, আহমাদ ১৮৭৫, ২১২০, ২২৫০, ২৫২৫, ২৬১৭, ৩০০৬, ৩২১১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬২১
وَعَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه قَالَ: حَمَلْتُ عَلَى فَرَسٍ
فِي سَبِيلِ اللهِ فَأَضَاعَهُ الَّذِي كَانَ عِندَهُ، فَأَرَدْتُ أَنْ
أَشْتَرِيَهُ، وَظَنَنْتُ أَنَّهُ يَبِيعُهُ بِرُخْصٍ، فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى
الله عليه وسلم، فَقَالَ: لاَ تَشْتَرِهِ وَلاَ تَعُدْ فِي صَدَقَتِكَ وَإِنْ
أَعْطَاكَهُ بِدِرْهَمٍ ؛ فَإِنَّ العَائِدَ فِي صَدَقَتِهِ كَالعَائِدِ فِي
قَيْئِهِ
উমার
ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আমার একটি ঘোড়া ছিল, যা আমি
আল্লাহর রাস্তায় (ব্যবহারের জন্য এক মুজাহিদকে) দান করলাম। যার কাছে এটা ছিল, সে
এটাকে নষ্ট করে দিল। [অর্থাৎ যথোচিত যত্ন করতে না পারলে ঘোড়াটি রুগ্ন বা দুর্বল
হয়ে পড়ল]। ফলে আমি তা কিনে নিতে চাইলাম এবং আমার ধারণা ছিল যে, সে সেটি সস্তা দামে
বিক্রি করবে। (এ সম্পর্কে) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলে
তিনি বললেন, ‘‘তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার [দেওয়া] সাদকাহ ফিরিয়ে নিয়ো না; যদিও
সে তোমাকে তা এক দিরহামের বিনিময়ে দিতে চায়। কেননা, দান করে ফেরৎ গ্রহণকারী
ব্যক্তি, বমি করে পুনর্ভক্ষণকারীর মত।’’
(সহীহুল বুখারী ২৬২৩,
১৪৯০, ২৬৩৬, ২৯৭০, ৩০০৩, মুসলিম ১৬২০, তিরমিযী ৬৬৮, নাসায়ী ২৬১৫, ২৬১৬, আবূ দাউদ ১৫৯৩,
ইবনু মাজাহ ২৩৯০, ২৩৯২, আহমাদ ১৬৭, ২৬০, ২৮৩, ৩৮৬, মুওয়াত্তা মালিক ৬২৪, ৬২৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮৬
এতীমের
মাল ভক্ষণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
১৬২২
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ المُوبِقَاتِ !» قَالُوا : يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَمَا هُنَّ ؟ قَالَ: «الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ،
وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا،
وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ
المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلاَتِ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা সাত প্রকার ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে দূরে থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘সেগুলো কী কী?
হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, (১) ‘‘আল্লাহর সাথে শিরক করা। (২) যাদু করা। (৩)
অন্যায়ভাবে এমন জীবন হত্যা করা, যাকে আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। (৪) সূদ খাওয়া।
(৫) এতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা। (৬) ধর্মযুদ্ধ কালীন সময়ে (রণক্ষেত্র) থেকে পৃষ্ঠ
প্রদর্শন ক’রে পলায়ন করা। (৭) সতী-সাধ্বী উদাসীনা মু’মিন নারীদের চরিত্রে মিথ্যা
কলঙ্ক আরোপ করা।’’
(সহীহুল বুখারী ২৭৬৭,
২৭৬৬, ৫৭৬৪, ৬৮৫৭, মুসলিম ৮৯, নাসায়ী ৩৬৭১, আবূ দাউদ ২৮৭৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮৭
সুদ
খাওয়া সাংঘাতিক হারাম কাজ
১৬২৩
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: لَعَنَ رَسُول اللهِ صلى
الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ . رَوَاهُ مُسلِمٌ
زَادَ التِّرمِذِي وَغَيرُهُ : وَشَاهِدَيْهِ وَكَاتِبَهُ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সুদখোর ও সূদদাতাকে অভিশাপ করেছেন।’
(মুসলিম ১৫৯৭, তিরমিযী
১২০৬, নাসায়ী ৩৪১৬, আবূ দাউদ ৩৩৩৩, ইবনু মাজাহ ২২৭৭, আহমাদ ৩৭১৭, ৩৭২৯, ৩৭৯৯, ৩৮৭১,
৪০৭৯, ৪২৭১, ৪৩১৫, ৪৪১৪, দারেমী ২৫৩৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮৮
‘রিয়া’
(লোক-প্রদর্শনমূলক কার্যকলাপ) হারাম
১৬২৪
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «قَالَ الله تَعَالَى :
أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ
مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ» . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি সমস্ত অংশীদারদের
চাইতে অংশীদারি (শির্ক) থেকে অধিক অমুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার
সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তার অংশীদারি (শির্ক) সহ
বর্জন করি।’’ (অর্থাৎ তার আমলই নষ্ট করে দিই।)
(সহীহুল বুখারী ২৯৮৫,
ইবনু মাজাহ ৪২০২, আহমাদ ৭৯৩৯, ৯৩৩৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬২৫
وَعَنْه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله
عليه وسلم يَقُولُ : «إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَومَ القِيَامَةِ عَلَيْهِ
رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ، فَأُتِيَ بِهِ، فَعَرَّفَهُ نِعْمَتَهُ، فَعَرَفَهَا، قَالَ:
فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ: قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ . قَالَ:
كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لأَنْ يُقَالَ: جَرِيءٌ ! فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ
أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ. وَرَجُلٌ
تَعَلَّمَ العِلْمَ وَعَلَّمَهُ، وَقَرَأَ القُرآنَ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ
نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا . قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا ؟ قَالَ: تَعَلَّمْتُ
العِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ، وَقَرَأتُ فِيكَ القُرآنَ، قَالَ: كَذَبْتَ، وَلكِنَّكَ
تَعَلَّمْتَ لِيُقَالَ: عَالِمٌ ! وَقَرَأتَ القُرْآنَ لِيُقَالَ: هُوَ قَارِئٌ ؛
فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي
النَّارِ . وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ، وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ المَالِ،
فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ، فَعَرَفَهَا . قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا
؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلاَّ
أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ:
جَوَادٌ ! فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى
أُلْقِيَ في النَّارِ» . رواه مسلم
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ‘‘কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকদের পূর্বে
যে ব্যক্তির প্রথম বিচার হবে সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা
হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর দেওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সুতরাং সে তা স্মরণ
করবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‘ঐ নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে
‘আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য জিহাদ করেছি এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেছি।’ আল্লাহ
বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে
বলে, অমুক একজন বীর পুরুষ। সুতরাং তা-ই বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) আদেশ করা
হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় হচ্ছে এমন ব্যক্তি, যে ইলম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন
পাঠ করেছে। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে (পৃথিবীতে প্রদত্ত)
তাঁর সকল নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ
বলবেন, ‘এই সকল নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে, ‘আমি ইলম
শিখেছি, অপরকে শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টি-লাভের জন্য কুরআন পাঠ করেছি।’ আল্লাহ
বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে ইলম শিখেছ, যাতে লোকেরা তোমাকে
আলেম বলে এবং এই উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছ, যাতে লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে। আর
(দুনিয়াতে) তা বলা হয়েছে।’ অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) নির্দেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উবুড়
ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তৃতীয় হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার রুযীকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছিলেন এবং সকল প্রকার
ধন-দৌলত যাকে প্রদান করেছিলেন। তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে
তাঁর দেওয়া সমস্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সেও সব কিছু স্মরণ করবে। অতঃপর
আল্লাহ প্রশ্ন করবেন, ‘তুমি ঐ সকল নেয়ামতের বিনিময়ে কি আমল ক’রে এসেছ?’ সে বলবে,
‘যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও সে সকল রাস্তার মধ্যে কোনটিতেও তোমার
সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খরচ করতে ছাড়িনি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘মিথ্যা বলছ তুমি।
বরং তুমি এ জন্যই দান করেছিলে; যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। আর তা বলা হয়েছে।’
অতঃপর (ফেরেশতাবর্গকে) হুকুম করা হবে এবং তাকে উবুড় ক’রে টেনে নিয়ে গিয়ে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
[মুসলিম ১৯০৫ নং] (মুসলিম
১৯০৫, তিরমিযী ২৩৮২, নাসায়ী ৩১৩৭, আহমাদ ৮০৮৭ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬২৬
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ نَاساً قَالُوا لَهُ :
إِنَّا نَدْخُلُ عَلَى سَلاَطِيننَا فَنَقُولُ لَهُمْ بِخِلاَفِ مَا نَتَكَلَّمُ
إِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِندِْهِمْ ؟ قَالَ ابنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا :
كُنَّا نَعُدُّ هَذَا نِفاقاً عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم .
رواه البخاري
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কিছু লোক তাঁর নিকট নিবেদন করল যে, ‘আমরা
আমাদের শাসকদের নিকট যাই এবং তাদেরকে ঐ সব কথা বলি, যার বিপরীত বলি তাদের নিকট
থেকে বাইরে আসার পর। (সে সম্বন্ধে আপনার অভিমত কী?)’ ইবনে উমার (রাঃ) উত্তর দিলেন,
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় এরূপ আচরণকে আমরা
‘মুনাফিক্বী’ আচরণ বলে গণ্য করতাম।’
(সহীহুল বুখারী ৭১৭৮,
ইবনু মাজাহ ৩৯৭৫, আহমাদ ৫৭৯৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬২৭
وَعَنْ جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ سُفيَان رضي الله عنه قَالَ: قَالَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ، وَمَنْ
يُرَائِي يُرَائِي اللهُ بِهِ» . متفق عَلَيْهِ . ورواه مسلم أَيضاً من رواية ابن
عباس رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا .
জুন্দুব
ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সুফয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি শোনাবে, আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি
দেখাবে, আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন।’’
[বুখারী ও মুসলিম, মুসলিম
ইবনে আব্বাস থেকেও বর্ণনা করেছেন।] (সহীহুল বুখারী ৭১৫২, ৬৪৯৯, মুসলিম ২৯৮৭, ইবনু মাজাহ
৪২০৭, আহমাদ ১৮৩৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬২৮
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَعَلَّمَ عِلْماً مِمَّا يُبْتَغَى
بِهِ وَجْهُ اللهِ - عَزَّ وَجَلَّ - لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ
عَرَضاً مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ»
يَعْنِي : رِيحَهَا. رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيحٍ والأحاديث في الباب كثيرةٌ
مشهورةٌ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি
একমাত্র সামান্য পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিক্ষা করে, তাহলে সে
কিয়ামতের দিনে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।’’
(ইবনু মাজাহ ২৫২, আবূ
দাউদ ২৬৬৪, আহমাদ ৮২৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৮৯
যাকে
লোক ‘রিয়া’ বা প্রদর্শন ভাবে অথচ তা প্রদর্শন নয়
১৬২৯
وَعَنْ أَبي ذرٍ رضي الله عنه قَالَ: قِيلَ لِرَسُول اللهِ صلى الله عليه
وسلم : أرَأيْتَ الرَّجُلَ الَّذِي يَعْمَلُ العَمَلَ مِنَ الخَيْرِ، وَيَحْمَدُهُ
النَّاسُ عَلَيْهِ ؟ قَالَ: «تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى المُؤْمِنِ». رواه مسلم
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল; বলুন, ‘যে মানুষ সৎকাজ করে, আর লোকে তার
প্রশংসা করে থাকে (তাহলে এরূপ কাজ কি রিয়া বলে গণ্য হবে?)’ তিনি বললেন, ‘‘এটা
মু’মিনের সত্বর সুসংবাদ।’’
(মুসলিম ২৬৪২, ইবনু
মাজাহ ৪২২৫, আহমাদ ২০৮৭২, ২০৯৬৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯০
বেগানা
নারী এবং কোন সুদর্শন বালকের দিকে শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া তাকানো হারাম
১৬৩০
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «كُتِبَ عَلَى ابْن آدَمَ نَصِيبُهُ مِنَ الزِّنَا مُدْرِكُ ذَلِكَ
لاَ مَحَالَةَ : العَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالأُذُنَانِ زِنَاهُمَا
الاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الكَلاَمُ، وَاليَدُ زِنَاهَا البَطْشُ،
وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الخُطَا، وَالقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ
ذَلِكَ الفَرْجُ أَوْ يُكَذِّبُهُ» . متفق عَلَيْهِ . هَذَا لفظ مسلمٍ، ورواية
البخاري مختصرَةٌ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানের জন্য ব্যভিচারের অংশ লিখে দিয়েছেন; যা সে
অবশ্যই পাবে। সুতরাং চক্ষুদ্বয়ের ব্যভিচার (সকাম অবৈধ) দর্শন। কর্ণদ্বয়ের ব্যভিচার
(অবৈধ যৌনকথা) শ্রবণ, জিভের ব্যভিচার (সকাম অবৈধ) কথন, হাতের ব্যভিচার (সকাম অবৈধ)
ধারণ এবং পায়ের ব্যভিচার (সকাম অবৈধ পথে) গমন। আর হৃদয় কামনা ও বাসনা করে এবং
জননেন্দ্রিয় তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬২৪৩,
৬৬১২, মুসলিম ২৬৫৭, আবূ দাউদ ২১৫২, আহমাদ ৭৬৬২, ৮১৫৬, ৮৩২১, ৮৩৩৪, ৮৩৯২, ৮৬২৬, ৯০৭৬,
৯২৭৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৩১
وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالجُلُوسَ فِي الطُّرُقَاتِ !» قَالُوا : يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُدٌّ،
نَتَحَدَّثُ فِيهَا . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه
وسلم: «فَإذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ المَجْلِسَ، فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ»
قَالُوا : وَمَا حَقُّ الطَّريقِ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ:
«غَضُّ البَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَالأَمرُ بِالمَعْرُوفِ،
وَالنَّهيُ عَنِ المُنْكَرِ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওখানে আমাদের
বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আমরা (ওখানে) বসে বাক্যালাপ করি।’ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তোমরা রাস্তায় বসা ছাড়া থাকতে না
পার, তাহলে রাস্তার হক আদায় কর।’’ তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক
কী?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি অবনত রাখা, (অপরকে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের
জবাব দেওয়া এবং ভাল কাজের আদেশ দেওয়া ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা।’’
(সহীহুল বুখারী ২৪৬৫,
৬২২৯, মুসলিম ১২১১, ২১১৬, আবূ দাউদ ৪৮১৫, আহমাদ ১০৯১৬, ১১০৪৪, ১১১৯২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৩২
وَعَنْ أَبي طَلحَة زَيدِ بنِ سَهلٍ رضي الله عنه قَالَ: كُنَّا قُعُوداً
بِالأَفْنِيَةِ نَتَحَدَّثُ فِيهَا فَجَاءَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم
فَقَامَ عَلَيْنَا، فَقَالَ: «مَا لَكُمْ وَلِمَجَالسِ الصُّعُدَاتِ ؟
اِجْتَنِبُوا مَجَالِسَ الصُّعُدَاتِ» فَقُلْنَا : إِنَّمَا قَعَدْنَا لِغَيْرِ
مَا بَأسٍ، قَعَدْنَا نَتَذَاكَرُ، وَنَتَحَدَّثُ . قَالَ: «إِمَّا لاَ فَأَدُّوا
حَقَّهَا : غَضُّ البَصَرِ، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَحُسْنُ الكَلَامِ» . رواه مسلم
আবূ
ত্বালহা যায়েদ ইবনে সাহ্ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা ঘরের বাইরে অবস্থিত
প্রাঙ্গণে বসে কথাবার্তায় রত ছিলাম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (সেখানে) এসে আমাদের নিকট দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বৈঠক করছ?
তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক।’’ আমরা নিবেদন করলাম, ‘আমরা তো এখানে এমন
উদ্দেশ্যে বসেছি, যাতে (শরীয়তের দৃষ্টিতে) কোন আপত্তি নেই। আমরা এখানে নিজেদের
মধ্যে আলাপ-আলোচনা করা ও কথাবার্তা বলার জন্য বসেছি।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি রাস্তায়
বসা ত্যাগ না কর, তাহলে তার হক আদায় কর। আর তা হল, দৃষ্টি সংযত রাখা, সালামের
উত্তর দেওয়া এবং সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলা।’’
(মুসলিম ২১৬১, আহমাদ
১৫৯৩২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৩৩
وَعَنْ جَرِيرٍ رضي الله عنه قَالَ: سَأَلتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم عَن نَظَرِ الفَجْأَةِ فَقَالَ: «اِصْرِفْ بَصَرَكَ». رواه مسلموَعَنْ
جَرِيرٍ رضي الله عنه قَالَ: سَأَلتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَن نَظَرِ
الفَجْأَةِ فَقَالَ: «اِصْرِفْ بَصَرَكَ». رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বললেন, আচমকা দৃষ্টি সম্পর্কে আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন,
‘‘তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।’’
(মুসলিম ২১৫৯, তিরমিযী
২৭৭৬, আবূ দাউদ ২১৪৮, আহমাদ ১৮৬৭৯, ১৮৭১৫, দারেমী ২৬৪৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৩৪
وَعَنْ أمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : كُنْتُ عِنْدَ
رَسُوْلِ اللَّه وَعِنْدَهُ مَيْمُوْنَهُ، فَأَقْبَلَ ابْنُ أُمُّ مَكْتُوْمٍ،
وَذَلِكَ بَعْدَ أنْ أُمِرْنَا بِالْحِجَابِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم: «اِحْتَجِبَا مِنْهُ» فَقُلْنَا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ألَيْسَ هُوَ أعْمىٰ :
لَا يُبْصِرُنَا، وَلَا يَعْرِفُنَا ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم :
«أفَعَمْيَاوَانِ أَنْتُمَا أَلَسْتُمَا تُبْصِرَانِهِ ؟» رواه أبو داود والترمذي
وقَالَ: حَدِيثٌ حسنٌ صَحِيحٌ
উম্মু
সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। তখন তাঁর নিকট মাইমুনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা-ও
ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতুম এসে হাজির হন। এটা আমাদেরকে পর্দার
হুকুম দেয়ার পরবর্তী ঘটনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
‘‘তার সম্মুখে পর্দা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদেরকে দেখতে পায় না, চিনতেও পারে না। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা দু’জনও কি অন্ধ? তাকে কি তোমরা দেখতে
পাও না?’’
[আবূ দাঊদ, তিরমিযী
হাদিসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন] (আমি [আলবানী] বলছিঃ তিনি এরূপই বলেছেন। আর এর সনদের
মধ্যে উম্মু সালামার দাস নাবহান রয়েছেন। তার ব্যাপারে অজ্ঞতা রয়েছে। অর্থাৎ তিনি মাজহূল।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন শাইখ আলবানী রচিত গ্রন্থ ‘‘আররাদ্দুল মুকহিম’’ [১/৬২
হা নং ৫)
হাদিসের মানঃঅন্যান্য
১৬৩৫
وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ رَضِيَ اللهُ عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَنْظُرُ الرَّجُلُ إِلَى عَوْرَةِ
الرَّجُلِ، وَلاَ المَرْأَةُ إِلَى عَوْرَةِ المَرْأَةِ، وَلاَ يُفْضِي الرَّجُلُ
إِلَى الرَّجُلِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَلاَ تُفْضِي المَرْأةُ إِلَى المَرْأَةِ
فِي الثَّوْبِ الواحِدِ» . رواه مسلم
আবূ
সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কোন পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোন নারী অন্য
নারীর গুপ্তস্থানের দিকে যেন না তাকায়। কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে একই কাপড়ে
যেন (উলঙ্গ) শয়ন না করে। (অনুরূপভাবে) কোন নারী, অন্য নারীর সাথে একই কাপড়ে যেন
(উলঙ্গ) শয়ন না করে।
(মুসলিম ৩৩৮, আহমাদ
১১২০৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯১
বেগানা
নারীর সঙ্গে নির্জনে একত্রবাস করার নিষেধাজ্ঞা
১৬৩৬
وَعَنْ عُقبَةَ بنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى
النِّسَاءِ !» فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ : أَفَرَأيْتَ الحَمْوَ ؟ قَالَ:
«الحَمْوُ المَوْتُ !» . متفق عَلَيْهِ
উক্বা
ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা (বেগানা) নারীদের নিকট (একাকী) যাওয়া থেকে বিরত থাক।’’
(এ কথা শুনে) জনৈক আনসারী নিবেদন করল, ‘স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?’
তিনি বললেন, ‘‘স্বামীর আত্মীয় তো মুত্যুসম (বিপজ্জনক)।’’
(সহীহুল বুখারী ৫২৩২,
মুসলিম ২১৭২, তিরমিযী ১১৭১, আহমাদ ১৬৮৯৬, ১৬৯৪৫, দারেমী ২৬৪২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৩৭
وعَنِ ابنِ عباس رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أنَّ رَسُول اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لاَ يَخْلُونَّ أَحَدكُمْ بامْرَأَةٍ إِلاَّ
مَعَ ذِي مَحْرَمٍ» . متفق عَليْهِ
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘মাহরামের উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে নির্জন-বাস না করে।’’
(সহীহুল বুখারী ১৮৬২,
৩০০৬, ৩০৬১, ৫২৩৩, মুসলিম ১৩৪১, ইবনু মাজাহ ২৯০০, আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৩৮
وَعَنْ بُرَيدَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: «حُرْمَةُ نِسَاءِ المُجَاهِدِينَ عَلَى القَاعِدِينَ كَحُرْمَةِ
أُمَّهَاتِهِمْ، مَا مِنْ رَجُلٍ مِنَ القَاعِدِيْنَ يَخْلُفُ رَجُلاً مِنَ
المُجَاهِدِينَ فِي أَهْلِهِ، فَيَخُونُهُ فِيهِمْ إِلاَّ وُقِفَ لَهُ يَوْمَ
القِيَامَةِ، فَيَأْخُذُ مِنْ حَسَنَاتِهِ مَا شَاءَ حَتَّى يَرْضى» ثُمَّ
التَفَتَ إِلَيْنَا رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: «مَا ظَنُّكُمْ ؟».
رواه مسلم
বুরাইদা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘স্বগৃহে অবস্থানকারী লোকদের পক্ষে মুজাহিদদের স্ত্রীদের
মর্যাদা তাদের নিজেদের মায়ের মর্যাদার মত। স্বগৃহে অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে যে
ব্যক্তি কোন মুজাহিদ ব্যক্তির পরিবারের প্রতিনিধিত্ব (দেখা-শুনা) করে, অতঃপর তাদের
ব্যাপারে সে তার খেয়ানত ক’রে বসে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে মুজাহিদের সম্মুখে দাঁড়
করানো হবে এবং সে তার নেকীসমূহ থেকে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ইচ্ছামত নেকী নিয়ে
নেবে।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি মুখ
ফিরিয়ে বললেন, ‘‘তোমাদের ধারণা কী? (সে কি তখন তার কাছ থেকে নেকী নিতে ছাড়বে?]’’
(মুসলিম ১৮৯৭, নাসায়ী
৩১৮৯, ৩১৯০, ৩১৯১, আবূ দাউদ ২৪৯৬, আহমাদ ২২৪৬৮, ২২৪৯৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯২
বেশ-ভূষায়,
চাল-চলন ইত্যাদিতে নারী-পুরুষের পরস্পরের অনুকরণ হারাম
১৬৩৯
عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم المُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ، وَالمُتَرَجِّلَاتِ مِنَ
النِّسَاءِ . وَفِي رِوَايَةٍ : لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ
النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ . رواه البخاري
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে
অভিশাপ করেছেন।’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের সাদৃশ্য
অবলম্বনকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ
করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ৫৮৮৫,
৫৮৮৬, ৬৮৩৬, তিরমিযী ২৭৮৪, আবূ দাউদ ৪০৯৭৮, ৪৯৩০, ইবনু মাজাহ ১৯০৪, আহমাদ ১৯৮৩, ২০০৭,
২১২৪, ২২৬৩, ২২৯১, ৩১৪১, ৩৪৪৮, দারেমী ২৬৪৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৪০
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ المَرْأَةِ، وَالمَرْأَةَ
تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ. رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সেই পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন, যে মহিলার পোশাক পরে এবং সেই মহিলাকে
অভিসম্পাত করেছেন যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে।’
(আবূ দাউদ ৪০৯৮, আহমাদ
৮১১০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৪১
وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«صِنْفَانِ
مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا : قَومٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ
البَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ
مَائِلاَتٌ، رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ
الجَنَّةَ، وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ
كَذَا وَكذَا». رواه مسلم
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ
করিনি (অর্থাৎ পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে) : (১) এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর
লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক শ্রেণীর
মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে)
নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা
হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার
সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে।’’
(মুসলিম ২১২৮, আহমাদ
৮৪৫১, ৯৩৩৮৮)
উক্ত হাদীসে كَاسِيَات عَارِيَات এর ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন, তারা আল্লাহর নেয়ামতের
লেবাস পরে থাকবে, কিন্তু তাঁর শুকর আদায় থেকে নগ্ন বা শূন্য হবে। অথবা তারা এমন পোশাক
পরবে, যাতে তারা তাদের দেহের কিছু অংশ ঢাকবে এবং সৌন্দর্য ইত্যাদি প্রকাশের জন্য কিছু
অংশ বের ক’রে রাখবে। অথবা তারা এমন পাতলা পোশাক পরিধান করবে, যাতে তাদের ভিতরের চামড়ার
রঙ বুঝা যাবে।
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯৩
শয়তান
ও কাফেরদের অনুকরণ করা নিষেধ
১৬৪২
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم: «لاَ تَأكُلُوْا بِالشِّمَالِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأكُلُ وَيَشرَبُ
بِالشِّمَالِ» . رواه مسلم .
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা বাম হাতে আহার করো না। কারণ, শয়তান বাম হাত দিয়ে
পানাহার করে।’’
(মুসলিম ২০১৯, ইবনু
মাজাহ ৩২২৮, আহমাদ ১৩৭০৪, ১৩৭৬৬, ১৪০৪৩, ১৪০৯৫, ১৪১৭৭, ১৪২৯৫, ১৪২৯৫, ১৪৪৪২, ১৪৭৩৩,
মুওয়াত্তা মালিক ১৭১১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৪৩
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَأكُلَنَّ أَحَدُكُمْ
بِشِمَالِهِ، وَلاَ يَشْرَبَنَّ بِهَا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ
وَيَشْرَبُ بِهَا» . رواه مسلم
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন বাম হাত দিয়ে অবশ্যই আহার না করে এবং তা দিয়ে অবশ্যই
পানও না করে। কেননা, শয়তান বাম হাত দিয়ে পানাহার ক’রে থাকে।’’
(মুসলিম ২০২০, তিরমিযী
১৭৯৯, ১৮০০, আবূ দাউদ ৩৭৭৬, আহমাদ ৪৫২৩, ৪৮৭১, ৫৪৯০, ৫৮১৩, ৬০৮২, ৬০৮২, ৬১৪৯, ৬২৯৬,
মুওয়াত্তা মালিক ১৭১২, দারেমী ২০৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৪৪
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «إنَّ اليَهُودَ وَالنَّصَارى لاَ يَصْبِغُونَ، فَخَالِفُوهُمْ»
. متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘ইহুদী-খৃষ্টানরা (দাড়ি-মাথার চুলে) কলপ লাগায় না। সুতরাং তোমরা তাদের
বিরোধিতা করো।’’ (অর্থাৎ তোমরা তা লাগাও।)
(সহীহুল বুখারী ৩৪৬২,
৫৮৯৯, মুসলিম ২১০৩, নাসায়ী ৫০৬৯, ৫০৭১, ৫০৭২, ৪২০৩, ইবনু মাজাহ ৩৬২১, আহমাদ ৭২৩২, ৭৪৮৯,
৮০২২, ৮৯৫৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯৪
কালো
কলপ ব্যবহার নর-নারী সকলের জন্য নিষিদ্ধ
১৬৪৫
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ: أُتِيَ بِأَبِي قُحَافَةَ
وَالِدِ أَبي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، يَومَ فَتْحِ مَكَّةَ
وَرَأسُهُ وَلِحْيَتُهُ كَالثَّغَامَةِ بَيَاضاً. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم : «غَيِّرُوا هَذَا وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ» . رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর পিতা আবূ
কুহাফাকে, মক্কা বিজয়ের দিনে এমন অবস্থায় আনা হল যে, তার মাথা ও দাড়ি ‘সাগামাহ’
ঘাসের (সাদা ফুলের) মত সাদা ছিল। (এ দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এ (সাদা রঙ) পরিবর্তন কর। আর কালো রং থেকে দূরে থাকো।’’
(মুসলিম ২১০২, নাসায়ী
৫০৭৬, ৫২৪২, আবূ দাউদ ৪২০৪, ইবনু মাজাহ ৩৬২৪, আহমাদ ১৩৯৯৩, ১৪০৪৬, ১৪২৩১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯৫
মাথার
কিছু অংশ মুণ্ডন করা ও কিছু অংশ ছেড়ে রাখা অবৈধ। পুরুষ সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডন করতে
পারে; কিন্তু নারীর জন্য তা বৈধ নয়।
১৬৪৬
عَنِ ابنِ عمر رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: نهَى رَسُول اللهِ صلى الله
عليه وسلم عن القَزَعِ . متفق عَلَيْهِ
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মাথার কিছু অংশ নেড়া করতে ও কিছু অংশে চুল রেখে দিতে নিষেধ করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ৫৯২০,
৫৯২১, মুসলিম ২১২০, নাসায়ী ৫০৫০, ৫০৫১, ৫২২৮-৫২৩১, অদা ৪১৯৩, ৪১৯৪, ইবনু মাজাহ ৩৬৩৭,
৩৬৩৮, আহমাদ ৪৪৫৯, ৪৯৫৩, ৫১৫৩, ৫৩৩৩, ৫৫২৩, ৫৫২৫, ৫৫৮৩, ৫৮১২, ৬৪২৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৪৭
وَعَنْه، قَالَ: رَأَى رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم صَبِيّاً قَدْ
حُلِقَ بَعْضُ شَعْرِ رَأسِهِ وَتُرِكَ بَعْضُهُ، فَنَهَاهُمْ عَنْ ذَلِكَ،
وَقَالَ: «احْلِقُوهُ كُلَّهُ، أَوِ اتْرُكُوهُ كُلَّهُ». رواه أَبُو داود بإسناد
صحيح عَلَى شرط البخاري ومسلم
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একটি শিশুকে দেখলেন যে, তার মাথার কিছু চুল কামানো হয়েছে এবং কিছু চুল
ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। (এরূপ দেখে) তিনি তাদের (লোকদের)কে এ কাজ থেকে নিষেধ করলেন এবং
বললেন, ‘‘(হয়) সম্পূর্ণ মাথার চুল চেঁছে দাও; না হয় সম্পূর্ণ মাথার চুল রেখে
দাও।’’
[আবূ দাঊদ, বুখারী-মুসলিমের
শর্তাধীন সূত্রে] (সহীহুল বুখারী ৫৯২০, ৫৯২১, মুসলিম ২১২০, নাসায়ী ৫০৫০, ৫০৫১, ৫২২৮-৫২৩১,
আবূ দাউদ ৪১৯৩, ৪১৯৪, ৪১৯৫, ইবনু মাজাহ ৩৬৩৭, ৩৬৩৮, আহমাদ ৪৪৫৯, ৪৯৫৩, ৫১৫৩, ৫৩৩৩,
৫৫২৩, ৫৫২৫, ৫৫৮৩, ৫৮১২, ৬৪২৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৪৮
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ جَعفَرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، أمْهَلَ آلَ جَعْفَر ثَلاَثاً ثُمَّ أَتَاهُمْ
فَقَالَ: «لاَ تَبْكُوا عَلَى أَخِي بَعْدَ اليَوْمِ» ثُمَّ قَالَ: «ادْعُوا لِي
بَنِي أَخِي» فَجِيءَ بِنَا كَأنَّنَا أَفْرُخٌ، فَقَالَ: «ادْعُوا لِي
الحَلاَّقَ» فَأَمَرَهُ، فَحَلَقَ رُؤُوسَنَا . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح عَلَى
شرط البخاري ومسلم
আব্দুল্লাহ
ইবনে জা’ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা’ফরের
পরিবারকে (তার শাহাদত বরণের সময় শোক পালনের উদ্দেশ্যে) তিনদিন পর্যন্ত অবকাশ
দিয়েছিলেন। তারপর তিনি তাদের কাছে এসে বললেন, ‘‘তোমরা আজ থেকে আমার ভাইয়ের জন্য
কান্না করবে না।’’ তারপর বললেন, ‘‘আমার জন্য আমার ভাইপোদেরকে ডেকে দাও।’’ সুতরাং
আমাদেরকে (রসুলুল্লাহ-এর সামনে) এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হল, যেন আমরা পাখীর ছানা।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘নাপিত ডেকে নিয়ে এসো।’’ (সে উপস্থিত হলে) তাকে (আমাদের চুল
কামানোর জন্য) আদেশ করলেন। সে আমাদের মাথা নেড়া ক’রে দিল।
[আবু দাঊদ, বুখারী-মুসলিমের
শর্তানুযায়ী বিশুদ্ধ সনদ-সূত্রে] (আবূ দাউদ ৪১৯২, নাসায়ী ৫২২৭, আহমাদ ১৭৫৩ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৪৯
وعَن عَلِىٍّ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ: نَهَى رسُول اللهِ
صلى الله عليه وسلم أنْ تحْلِقَ المَرأةُ رَأسَهَا . رواهُ النِّسائى
আলী
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে তাদের মাথার চুল মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন।
(নাসায়ী, আমি [আলবানী]
বলছিঃ তিরমিযীও বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এর সনদে ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে বলে সমস্যা বর্ণনা
করেছেন। আমি ‘‘য‘ঈফাহ্’’ গ্রন্থে [নং ৬৭৮] বিস্তারিত আলোচনা করেছি।)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯৬
(মহিলাদের
কৃত্রিম রূপচর্চা)
১৬৫০
وَعَنْ أَسمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتِ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ ابْنَتِي
أَصَابَتْهَا الحَصْبَةُ، فَتَمَرَّقَ شَعْرُهَا، وَإِنِّي زَوَّجْتُهَا،
أَفَأَصِلُ فِيهِ ؟ فَقَالَ: لَعَنَ اللهُ الوَاصِلَةَ وَالمَوْصُولَةَ . متفق
عليه وفي روايةٍ : الوَاصِلَةَ، والمُسْتوْصِلَةَ
আসমা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার মেয়ে এক প্রকার
চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আর আমি তার বিয়েও দিয়েছি।
এখন কি আমি তার মাথায় পরচুলা লাগিয়ে দেব?’ তিনি বললেন, ‘‘যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং
যার লাগানো হয় উভয় মহিলাকে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন বা করেছেন।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৯৩৫,
৫৯৩৬, ৫৯৪১, মুসলিম ২১২২, নাসায়ী ৫০৯৪, ৫২৫০, ইবনু মাজাহ ১৯৮৮, আহমাদ ২৪২৮২, ২৬৩৭৮,
৩৬৩৯১, ২৬৪২০, ২৬৪৩৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৫১
وعَنْ عائشة رضي اللَّه عنْهَا نَحْوُهُ، متفقٌ عليه
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
উক্ত-রূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
(সহীহুল বুখারী ৫২০৫,
মুসলিম ২১২৩, নাসায়ী ৫০৯৭, আহমাদ ২৪২৮২, ২৪৩২৯, ২৫৩৮১, ২৫৪৩৮, ২৫৫৯৭, ২৫৬৭৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৫২
وَعَنْ حُميدِ بنِ عَبدِ الرَّحْمَانِ : أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ رضي
الله عنه عامَ حَجَّ عَلَى المِنْبَرِ وَتَنَاوَلَ قُصَّةً مِنْ شَعْرٍ كَانَتْ
فِي يَدِ حَرَسِيٍّ فَقَالَ: يَا أَهْلَ المَدِينَةِ أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ ؟!
سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، يَنْهَى عَنْ مِثْلِ هَذِهِ، وَيَقُولُ :
«إِنَّمَا هَلَكَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ حِينَ اتَّخَذَهَا نِسَاؤُهُمْ» . متفق
عليه
হুমাইদ
ইবনে আব্দুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি হজ্জ করার বছরে মুআবিয়া (রাঃ)-কে মিম্বরে
দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন---ঐ সময়ে তিনি জনৈক দেহরক্ষীর হাত থেকে এক গোছা চুল নিজ হাতে
নিয়ে বললেন, ‘হে মদীনাবাসীগণ! তোমাদের আলেমগণ কোথায়? আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ জিনিস (ব্যবহার) নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলতেন, ‘‘বানী
ইস্রাঈল তখনই ধ্বংস হয়েছিল, যখন তাদের মহিলারা এই জিনিস ব্যবহার করতে আরম্ভ
করেছিল।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৪৬৮,
৩৪৮৮, ৫৯৩৩, ৫৯৩৮, মুসলিম ২১২৭, তিরমিযী ২৭৮১, নাসায়ী ৫২৪৫, ৫২৪৬, আবূ দাউদ ৪১৬৭, আহমাদ
১৬৩৮৮, ১৬৪০১, ১৬৪২৩, ১৬৪৮২, ২৭৫৭৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৬৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৫৩
وعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم لَعَنَ الوَاصِلَةَ وَالمُسْتَوْصِلَةَ، وَالوَاشِمَةَ
وَالمُسْتَوشِمَةَ . متفق عليه
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পরচুলা যে মহিলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উলকি উৎকীর্ণ করে ও যে উলকি উৎকীর্ণ করতে বলে তাদেরকে অভিশাপ
করেছেন।
(সহীহুল বুখারী ৫৯৩৭,
৫৯৪০, ৫৯৪২, ৫৯৪৭, মুসলিম ২১২৪, তিরমিযী ১৭৫৯, ২৭৮৩, নাসায়ী ৩৪১৬, ১৫৯৫, ৫২৫১, আবূ
দাউদ ৪১৬৮, ইবনু মাজাহ ১৯৮৭, আহমাদ ৪৭১০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৫৪
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: لَعَنَ اللهُ
الوَاشِمَاتِ وَالمُسْتَوشِمَاتِ وَالمُتَنَمِّصَاتِ، وَالمُتَفَلِّجَاتِ
لِلْحُسْنِ، المُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ، فَقَالَتْ لَهُ امْرَأَةٌ فِي ذَلِكَ
فَقَالَ: وَمَا لِي لاَ أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَهُ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم،
وَهُوَ فِي كِتَابِ اللهِ ؟ قالَ اللهُ تَعَالَى : ﴿وما آتاكم الرسول فخذوه وما
نهاكم عنه فانتهوا﴾ [الحشر: ٧] . متفق عليه
আব্দুললাহ
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব
নারীদের উপর, যারা দেহাঙ্গে উলকি উৎকীর্ণ করে এবং যারা উৎকীর্ণ করায় এবং সে সব
নারীদের উপর, যারা ভ্রূ চেঁছে সরু (প্লার্ক) করে, যারা সৌন্দর্যের মানসে দাঁতের
মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’ জনৈক মহিলা এ
ব্যাপারে তাঁর (ইবনে মাসঊদের) প্রতিবাদ করলে তিনি বললেন, ‘আমি কি তাকে অভিসম্পাত
করব না, যাকে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং
তা আল্লাহর কিতাবে আছে? আল্লাহ বলেছেন, ‘‘রসূল যে বিধান তোমাদেরকে দিয়েছেন তা
গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।’’
[সূরা হাশর ৭ আয়াত,
বুখারী ও মুসলিম] ( সহীহুল বুখারী ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮, মুসলিম ২১২৫,
তিরমিযী ২৭৮২, নাসায়ী ৫০৯৯, ৫১০৭-৫১০৯, ৫২৫২-৫২৫৪, আবূ দাউদ ৪১৬৯, ইবনু মাজাহ ১৯৮৯,
আহমাদ ৩৮৭১, ৩৯৩৫, ৩৯৪৫, ৩৯৪৬, ৪০৭৯, ৪১১৮, ৪২১৮, ৪২৭১, ৪৩৩১, ৪৩৮৯, ৪৪১৪, ৪৪২০, দারেমী
২৬৪৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯৭
মাথা
ও দাড়ি ইত্যাদি থেকে সাদা চুল উপড়ে ফেলা এবং সাবালক ছেলের সদ্য গজিয়ে উঠা দাড়ি
উপড়ে ফেলা নিষিদ্ধ
১৬৫৫
عَنْ عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ رضي الله عنه عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ تَنْتِفُوا الشَّيْبَ ؛ فَإِنَّهُ
نُورُ المُسْلِمِ يَوْمَ القِيَامَةِ» حديث حسن، رواه أبو داود، والترمذي،
والنسائي بأسانيد حسنة، قال الترمذي :[ هو حديث حسن ]
আমর
ইবনে শুআইব (রাঃ) তাঁর পিতা হতে থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর (আমরের) দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সাদা পাকা চুল উপড়ে ফেলো না।
কেননা, কিয়ামতের দিন তা মুসলিমের জন্য জ্যোতি হবে।’’
[হাসান হাদিস, আবূ দাঊদ,
তিরমিযী, নাসাঈ, হাসান সূত্রে, ইমাম তিরমিযী বলেন, এটি হাসান হাদিস] (আবূ দাউদ ৪২০২,
তিরমিযী ২৮২১, নাসায়ী ৫০৬৮, ইবনু মাজাহ ৩৭২১)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৬৫৬
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ علَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
. رواه مسلم
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কর্ম করল, যার সম্পর্কে আমাদের কোন প্রকার
নির্দেশ নেই---তা প্রত্যাখ্যাত।’’
(সহীহুল বুখারী ২৬৯৭,
মুসলিম ১৭১৮, আবূ দাউদ ৪৬০৬, ইবনু মাজাহ ১৪, আহমাদ ২৩৯২৯, ২৪৬০৪, ২৪৯৪৪, ২৫৫০২, ২৫৬৫৯,
২৫৭৯৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯৮
ডান
হাত দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা এবং বিনা কারণে ডান হাত দিয়ে গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করা মাকরূহ
১৬৫৭
وَعَنْ أبي قَتَادَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ، فَلاَ يَأْخُذَنَّ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ، وَلاَ
يَسْتَنْجِ بِيَمِينِهِ، وَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإنَاءِ» . متفق عليه
আবু
কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ পেশাব করবে তখন সে যেন তার পুরুষাঙ্গ ডান হাত দিয়ে না
ধরে, ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করে। আর (পান করার সময়) পানির পাত্রের মধ্যে যেন
নিঃশ্বাস না ফেলে।’’
(সহীহুল বুখারী ১৫৩,
১৫৪, ৫৬৫৩০, মুসলিম ২৬৭, তিরমিযী ১৫, ১৮৮৯, নাসায়ী ২৪, ২৫, ৪৭, আবূ দাউদ ৩১, ইবনু মাজাহ
৩১০, আহমাদ ১৮৯২৭, ২২০১৬, ২২০৫৯, ২২১২৮, ২২১৪১, দারেমী ৬৭৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ২৯৯
বিনা
ওজরে এক পায়ে জুতা বা মোজা পরে হাঁটা ও দাঁড়িয়ে জুতা বা মোজা পরা অপছন্দনীয়
১৬৫৮
عَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «لاَ يَمشِ أَحَدُكُمْ فِي نَعْلٍ وَاحِدَةٍ، لِيَنْعَلْهُمَا
جَمِيعاً، أَو لِيَخْلَعْهُمَا جَمِيعاً» . وفي رواية : «أَو لِيُحْفِهِمَا
جَمِيعاً» . متفق عليه
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটে। হয় উভয় জুতা পরবে, নচেৎ উভয়
জুতা খুলে রাখবে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নচেৎ উভয় পা খালি রাখবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৮৫৫,
মুসলিম ২০৯৭, তিরমিযী ১৭৭৪, আবূ দাউদ ৪১৩৬, ইবনু মাজাহ ৩৬১৭, আহমাদ ৭৩০২, ৯২৭৩, ৯৪২২,
৯৮৩২, ৯৮৬৪, ১০৪৫৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৭০১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৫৯
وَعَنْهُ، قَالَ: سَمِعُتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ :
«إِذَا انْقَطَعَ شِسْعُ نَعْلِ أَحَدِكمْ، فَلاَ يَمْشِ فِي الأُخْرَى حَتَّى
يُصْلِحَهَا» . رواهُ مسلم
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যখন তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে যাবে,
তখন সে যেন তা না সারা পর্যন্ত অন্য জুতাটি পরে না হাঁটে।’’
(মুসলিম ২০৯৮, নাসায়ী
৫৩৬৯, ৫৩৭০, আবূ দাউদ ৪১৩৬, আহমাদ ৭৩০০, ৭৩৯৮, ৯১৯৯, ৯৪২২, ৯৮৩২, ৯৮৬৪, ১০৪৫৭, ২৭৩৬৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৬০
وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
نَهَى أَنْ يَنْتَعِلَ الرَّجُلُ قَائِماً . رواه أبو داود بإسناد حسن
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মানুষকে দাঁড়িয়ে জুতা পরতে নিষেধ করেছেন।
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০০
(অনুপস্থিত)
ইত্যাদি অবস্থায় ঘরের মধ্যে জ্বলন্ত আগুন বা প্রদীপ না নিভিয়ে ছেড়ে রাখা নিষেধ
১৬৬১
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «لاَ تَتْرُكُوا النَّارَ فِي بُيُوتِكُمْ حِينَ تَنَامُونَ». متفق
عليه
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যখন তোমরা ঘুমবে, তখন তোমাদের ঘরগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে রেখো না।’’
(সহীহুল বুখারী ৬২৯৩,
মুসলিম ২০১৫, তিরমিযী ১৮১৩, আবূ দাউদ ৫২৪৬, ইবনু মাজাহ ৩৭৬৯, আহমাদ ৪৫০১, ৪৫৩২, ৫০০৮,
৫৩৭৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৬২
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه قَالَ: احْتَرَقَ بَيْتٌ
بِالمَدِينَةِ عَلَى أَهْلِهِ مِنَ اللَّيْلِ، فَلَمَّا حُدِّثَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم بِشَأنِهِم، قالَ : «إِنَّ هَذِهِ النَّارَ عَدُوٌّ لَكُمْ،
فَإِذَا نِمْتُمْ، فَأَطْفِئُوهَا». متفق عليه
আবূ
মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার রাতের বেলায় মদিনার এক ঘরে
আগুন লেগে ঘরের লোকজনসহ পুড়ে গেল। এদের অবস্থা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জানানো হলে তিনি বললেন, ‘‘এ আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য চরম
শত্রু। সুতরাং যখন তোমরা ঘুমাতে যাবে, তখন (তোমাদের নিরাপত্তার খাতিরে) তা নিভিয়ে
দাও।’’
(সহীহুল বুখারী ৬২৯৪,
মুসলিম ২০১৬, ইবনু মাজাহ ৩৭৭০, আহমাদ ১৯০৭৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৬৩
وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه عَن رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «غَطُّوا الإنَاءَ، وَأَوْكِئُوا السِّقَاءَ، وَأَغْلِقُوا الأَبْوَابَ.
وَأطْفِئُوا السِّرَاجَ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَحُلُّ سِقَاءً، وَلاَ
يَفْتَحُ بَاباً، وَلاَ يَكْشِفُ إنَاءً . فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلاَّ
أَنْ يَعْرُضَ عَلَى إنَائِهِ عُوداً، وَيَذْكُرَ اسْمَ اللهِ، فَلْيَفْعَل،
فَإِنَّ الفُوَيْسِقَةَ تُضْرِمُ عَلَى أَهْلِ البَيْتِ بَيْتَهُمْ». رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘(রাত্রে ঘুমাবার আগে) তোমরা পাত্র ঢেকে দাও, পানির মশকের মুখ বেঁধে দাও,
দরজাসমূহ বন্ধ ক’রে দাও, প্রদীপ নিভিয়ে দাও। কেননা, শয়তান মুখ বাঁধা মশক খুলে না,
বন্ধ দরজাও খুলে না এবং পাত্রের ঢাকনাও উন্মুক্ত করে না। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি
পাত্রের মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আড় ক’রে রাখার জন্য কেবল একটি কাষ্ঠখণ্ড ছাড়া অন্য
কিছু না পায়, তাহলে সে যেন তাই করে। কারণ ইঁদুর ঘরের লোকজনসহ ঘর পুড়িয়ে ছারখার
ক’রে দেয়।’’
(সহীহুল বুখারী ৩২৮০,
মুসলিম ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, তিরমিযী ১৮১২, ২৮৫৭, আবূ দাউদ ৩৭৩১, ৩৭৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৪১০,
আহমাদ ১৩৮১৬, ১৩৮৭১, ১৪০২৫, ১৪৫৯৭, ১৪৭১৭, ১৪৭৪৭, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০১
স্বতঃপ্রণোদিত
হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম করা নিষেধ
১৬৬৪
وَعَنْ عُمَرَ رضي الله عنه قَالَ: نُهِينَا عَنِ التَّكَلُّفِ . رواه
البخاري
উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম
করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।’
(সহীহুল বুখারী ৭২৯৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৬৫
وَعَنْ مَسرُوقٍ، قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى عَبدِ اللهِ بْنِ مَسعُود رضي
الله عنه فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، مَنْ عَلِمَ شَيْئاً فَلْيَقُلْ بِهِ،
وَمَنْ لَمْ يَعْلَمْ، فَلْيَقُلْ : اللهُ أَعْلَمُ، فَإِنَّ مِنَ العِلْمِ أَنْ
يَقُولَ لِمَا لاَ يَعْلَمُ : اللهُ أَعْلَمُ . قالَ اللهُ تَعَالَى لِنَبِيِّهِ
صلى الله عليه وسلم : ﴿ قل ما أسألكم عليه من أجر وما أنا من المتكلفين﴾ [ص : ٨٦]
. رواه البخاري
মাসরূক্ব
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
(রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন ‘হে লোক সকল! যে ব্যক্তির কিছু জানা থাকে,
সে যেন তা বলে। আর যার জানা নেই, সে যেন বলে, ‘আল্লাহই ভালো জানেন।’ কারণ তোমার
অজানা বিষয়ে ‘আল্লাহই ভালো জানেন’ বলাও এক প্রকার ইলম (জ্ঞান)। মহান আল্লাহ তাঁর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্বোধন ক’রে বলেছেন, ‘‘বল, আমি উপদেশের
জন্য তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাধ্যাতীত কর্ম
করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।’’
[সূরা স্বাদ ৮৬ আয়াত,
বুখারী] (সহীহুল বুখারী ১০০৭, ১০২০, ৪৬৯৩, ৪৭৬৮, ৪৭৭৪, ৪৮০৯, ৪৮২০, ৪৮২১-৪৮২৫, মুসলিম
২৭৯৮, তিরমিযী ৩২৫৪, আহমাদ ৩৬০২, ৪৯৩, ৪১৯৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০২
মৃত্যের
জন্য মাতম করে কাঁদা, গাল চাপড়ানো, বুকের কাপড় ছিঁড়া, চুল ছেঁড়া, মাথা নেড়া করা ও
সর্বনাশ ও ধ্বংস ডাকা নিষিদ্ধ
১৬৬৬
عَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم: المَيِّتُ يُعَذَّبُ فِي قَبْرِهِ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ . وَفِي
روايةٍ : «مَا نِيحَ عَلَيْهِ» . متفق عليه
উমার
ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মৃত ব্যক্তিকে তার কবরের মধ্যে তার জন্য মাতম ক’রে কান্না
করার দরুন শাস্তি দেওয়া হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় আছে, যতক্ষণ তার
জন্য মাতম ক’রে কান্না করা হয়, (ততক্ষণ মৃত-ব্যক্তির আযাব হয়।)
(সহীহুল বুখারী ১২৮৮,
১২৯০, ১২৯২, মুসলিম ৯২৭, তিরমিযী ১০০২, নাসায়ী ১৮৫৩, ১৮৫৮, ইবনু মাজাহ ১৫৯৩, আহমাদ
২৯০৩৮৮, ৪৮৫০, ৪৯৩৯, ৫২৪০, ৬১৪৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৬৭
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الخُدُودَ، وَشَقَّ الجُيُوبَ،
وَدَعَا بِدَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ» . متفق عليه
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে (শোকের সময়) গালে আঘাত করে, বুকের
কাপড় ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের ডাকের ন্যায় ডাক ছাড়ে।’’
(সহীহুল বুখারী ১২৯৪,
১২৯৭, ১২৯৮, ৩৫১৯, মুসলিম ১০৩, তিরমিযী ৯৯৯, নাসায়ী ১৮৬২, ১৮৬৪, ১৫৮৪, আহমাদ ৩৬৫০,
৪১০০, ৪১০৩, ৪৩৪৮, ৪৪১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৬৮
وَعَنْ أَبِي بُرْدَةَ رضي الله عنه، قَالَ: وَجَعَ أَبُو مُوسَى رضي
الله عنه، فَغُشِيَ عَلَيْهِ، وَرَأسُهُ فِي حِجْرِ امْرَأَةٍ مِنْ أَهْلِهِ،
فَأَقْبَلَتْ تَصِيحُ بِرَنَّةٍ فَلَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يَرُدَّ عَلَيْهَا
شَيْئاً، فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ: أَنَا بَرِيءٌ مِمَّنْ بَرِىءَ مِنْهُ رَسُول
اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَرِيءٌ مِنَ
الصَّالِقَةِ، وَالحَالِقَةِ، وَالشَّاقَّةِ . متفق عليه
আবূ
বুরদাহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (তাঁর পিতা) আবূ মুসা আশআরী (রাঃ)
যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আর (ঐ সময়) তাঁর মাথা তাঁর এক স্ত্রীর কোলে
রাখা ছিল এবং সে চিৎকার ক’রে কান্না করতে লাগল। তিনি (অজ্ঞান থাকার কারণে) তাকে
বাধা দিতে পারলেন না। সুতরাং যখন তিনি চেতনা ফিরে পেলেন, তখন বলে উঠলেন, ‘আমি সেই
মহিলা থেকে সম্পর্কমুক্ত, যে মহিলা থেকে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সেই মহিলা থেকে সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন, যে শোকে উচ্চ স্বরে মাতম ক’রে
কান্না করে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।’
(মুসলিম ১০৪, নাসায়ী
১৮৬১, ১৮৬৩, ১৮৬৫-১৮৬৭, আবূ দাউদ ৩১৩০, ইবনু মাজাহ ১৫৮৬, আহমাদ ১৯০৪১, ১৯০৫৩, ১৯১১৯,
১৯১২৯, ১৯১৯১, ১৯২৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৬৯
وَعَنِ المُغِيرَةِ بنِ شُعبَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «مَنْ نِيحَ عَلَيْهِ، فَإِنَّهُ
يُعَذَّبُ بِمَا نِيحَ عَلَيهِ يَومَ القِيَامَةِ» متفق عليه
মুগীরাহ
ইবনে শু‘বাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, ‘‘যার জন্য মাতম ক’রে কান্না করা হয়, তাকে
কিয়ামতের দিনে তার জন্য মাতম করার দরুন শাস্তি দেওয়া হবে।’’
(সহীহুল বুখারী ১২৯১,
মুসলিম ৪, ৯৩৩, তিরমিযী ১০০০, আহমাদ ১৭৬৭৪, ১৭৭১৯, ১৭৭৩৭, ১৭৭৭৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭০
وَعَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ نُسَيْبَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ :
أَخَذَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عِندَ البَيْعَةِ أَنْ لاَ
نَنُوحَ . متفق عليه
উম্মে
আত্বিআহ নুসাইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘বায়আতের সময় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, আমরা মৃত ব্যক্তির
জন্য মাতম করব না।’
(সহীহুল বুখারী ১৩০৬,
৪৮৯২, ৭২১৫, মুসলিম ৯৩৬, নাসায়ী ৪১৭৯, ৪১৮০, আবূ দাউদ ৩১২৭, আহমাদ ২০২৬৭, ২৬৭৫৩, ২৬৭৬০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭১
وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: أُغْمِيَ
عَلَى عَبدِ اللهِ بْنِ رَوَاحَةَ رضي الله عنه فَجَعَلَتْ أُخْتُهُ تَبْكِي،
وَتَقُولُ : وَاجَبَلاهُ، وَاكَذَا، وَاكَذَا : تُعَدِّدُ عَلَيْهِ . فقالَ حِينَ
أَفَاقَ : مَا قُلْتِ شَيْئاً إِلاَّ قِيلَ لِي أَنْتَ كَذَلِكَ ؟! . رواه البخاري
নু’মান
ইবন বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাহ (রাঃ)
(একবার) অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাঁর বোন কান্না করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘ও (আমার)
পাহাড় গো! ও আমার এই গো! ও আমার ওই গো!’ এভাবে তাঁর একাধিক গুণ বর্ণনা করতে
লাগলেন। সুতরাং যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন, তখন বললেন, ‘তুমি যা কিছু বলেছ, সে
সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল যে, তুমি ঐরূপ ছিলে নাকি?’
(সহীহুল বুখারী ৪২৬৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭২
وعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: اشْتَكَى سَعْدُ بنُ
عُبَادَةَ شَكْوَى رَضِيَ اللهُ عَنهُ، فَأَتَاهُ رَسُول اللهِ صلى الله عليه
وسلم، يَعُودُهُ مَعَ عَبدِ الرَّحمانِ بْنِ عَوفٍ، وَسَعْدِ بنِ أَبِي وَقَّاصٍ،
وَعَبدِ اللهِ بنِ مَسعُود رضي الله عنه . فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ، وَجَدَهُ فِي
غَشْيَةٍ فَقَالَ: «أَقَضَى ؟» قَالُوا : لاَ يَا رَسُولَ اللهِ ، فَبكَى رَسُول
اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَلَمَّا رَأَى القَوْمُ بُكَاءَ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم بَكَوْا، قَالَ: «أَلاَ تَسْمَعُونَ ؟ إِنَّ اللهَ لاَ يُعَذِّبُ
بِدَمْعِ العَيْنِ، وَلاَ بِحُزْنِ القَلْبِ، وَلَكِنْ يُعَذِّبُ بِهَذَا -
وَأَشَارَ إلَى لِسَانِهِ - أَو يَرْحَمُ» . متفق عليه
আব্দুল্লাহ
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সা’দ ইবনে উবাদাহ (রাঃ) একবার
পীড়িত হলে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, সা’দ ইবনে আবী অক্কাস এবং আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসঊদদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট কুশল
জিজ্ঞাসার জন্য গেলেন। যখন তিনি তাঁর নিকট উপস্থিত হলেন, তখন তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায়
পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘ও কি মারা গেছে?’’ লোকেরা জবাব দিল, ‘হে আল্লাহর
রসূল! না (মারা যায়নি)।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁদে
ফেললেন। সুতরাং লোকেরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কান্না
করতে দেখল, তখন তারাও কাঁদতে লাগল। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না?
নিঃসন্দেহে আল্লাহ চোখের অশ্রু ঝরাবার জন্য শাস্তি দেন না এবং আন্তরিক দুঃখ
প্রকাশের জন্য ও শাস্তি দেন না। কিন্তু তিনি তো এটার কারণে শাস্তি দেন অথবা দয়া
করেন।’’ এই বলে তিনি নিজ জিভের প্রতি ইঙ্গিত করলেন।
(সহীহুল বুখারী ১৩০৪,
মুসলিম ৯২৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭৩
وَعَن أَبِي مَالِكِ الأَشْعَرِي رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبلَ
مَوْتِهَا تُقَامُ يَومَ القِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِربَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ،
وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ» . رواه مسلم
আবূ
মালেক আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মাতম-কারিণী মহিলা যদি মরণের পূর্বে তাওবাহ না করে, তাহলে
আল-কাতরার পায়জামা এবং পাঁচড়ার জামা পরিহিতা অবস্থায় তাকে কিয়ামতের দিনে দাঁড়
করানো হবে।’’
(মুসলিম ৯৩৪, ইবনু মাজাহ
১৫৮১, আহমাদ ২২৩৮৬, ২২৩৯৭, ২২৪০৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭৪
وَعَنْ أُسَيدِ بنِ أَبِي أُسَيدٍ التَّابِعِيِّ، عَنِ امْرَأةٍ مِنَ
المُبَايِعَاتِ، قَالَتْ :كَانَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا رَسُول اللهِ صلى الله
عليه وسلم فِي المَعْرُوفِ الَّذِي أَخَذَ عَلَيْنَا أَنْ لاَ نَعْصِيَهُ فِيهِ :
أَنْ لاَ نَخْمِشَ وَجْهَاً، وَلاَ نَدْعُوَ وَيْلاً، وَلاَ نَشُقَّ جَيْباً،
وَأَنْ لاَ نَنْشُرَ شَعْراً . رواه أبو داود بإسناد حسن
উসাইদ
ইবনে আবূ উসাইদ তাবেয়ী থেকে বর্ণিতঃ
এমন এক মহিলা থেকে বর্ণনা করেন, যিনি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়আত-কারিণী মহিলাদের একজন ছিলেন। তিনি বলেন,
‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব সৎকর্ম করতে ও তাতে তাঁর
অবাধ্যতা না করতে আমাদের কাছে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, সে সবের মধ্যে এটিও ছিল যে,
(শোকাহত হয়ে) আমরা চেহারা খামচাব না, ধ্বংস ও সর্বনাশ কামনা করব না, বুকের কাপড়
ছিঁড়ব না এবং মাথার চুল আলুথালু করব না।’
[আবূ দাঊদ হাসান সূত্রে]
(আবূ দাউদ ৩১৩১ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭৫
وَعَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللهُ عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «مَا مِنْ مَيِّتٍ يَمُوْتُ فَيَقُوْمُ بَاكِيهِمْ فَيَقُولُ :
وَاجَبَلاَهُ، وَاسَيِّدَاهُ، أَو نَحْوَ ذَلِكَ إِلاَّ وُكِّلَ بِهِ مَلَكَانِ
يَلْهَزَانِهِ : أَهَكَذَا كُنْتَ؟» . رواه الترمذي، وقال :[ حديث حسن ]
আবূ
মুসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যখনই কোনো মৃত্যুগামী ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করে। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে
রোদন-কারিণী রোদন করে এবং বলে, ‘ও আমার পাহাড় গো! ও আমার সর্দার গো!’ অথবা অনুরূপ
আরও কিছু বলে, তখনই সেই মৃতের জন্য দু’জন ফিরিশতা নিযুক্ত করা হয়, যারা তার বুকে
ঘুষি মেরে বলতে থাকেন, ‘তুই কি ঐ রকম ছিলি নাকি?’
(তিরমিযী ১০০৩, ইবনু
মাজাহ ১৫৯৪).
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৬৭৬
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: «اثْنَتَانِ فِي النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ : الطَّعْنُ فِي
النَّسَبِ، وَالنِّيَاحَةُ عَلَى المَيِّتِ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষের মধ্যে দুটো আচরণ এমন পাওয়া যায়, যা তাদের ক্ষেত্রে
কুফরীমূলক কর্ম; বংশে খোঁটা দেওয়া ও মৃতের জন্য মাতম ক’রে কান্না করা।’’
(মুসলিম ৬৭, তিরমিযী
১০০১, আহমাদ ৭৮৪৮, ৮৬৮৮, ৯১০১, ৯২৯১, ৯৩৯৭, ৯৫৬২, ১০০৫৭, ১০৪২৮, ১০৪৯০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০৩
গণক,
জ্যোতিষী ইত্যাদি ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন নিষেধ
১৬৭৭
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم أُنَاسٌ عَنِ الكُهَّانِ، فَقَالَ: «لَيْسُوا بِشَيءٍ» فَقَالُوا :
يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّهُمْ يُحَدِّثُونَا أَحْيَاناً
بِشَيءٍ، فَيَكُونُ حَقّاً ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «تِلْكَ
الكَلِمَةُ مِنَ الحَقِّ يَخْطَفُهَا الجِنِّيُّ فَيَقُرُّهَا فِي أُذُنِ
وَلِيِّهِ، فَيَخْلِطُونَ مَعَهَا مئَةَ كَذْبَةٍ». متفق عليه
وَفِي رِوَايَةٍ لِلبُخَارِيِّ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أَنَّها
سَمِعَتْ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : إِنَّ المَلائِكَةَ تَنْزِلُ
فِي العَنَانِ - وَهُوَ السَّحَابُ - فَتَذْكُرُ الأَمْرَ قُضِيَ فِي السَّماءِ،
فَيَسْتَرِقُ الشَّيْطَانُ السَّمْعَ، فَيَسْمَعُهُ، فَيُوحِيهِ إلَى الكُهَّانِ،
فَيَكْذِبُونَ مَعَهَا مِئَةَ كَذْبَةٍ مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِهِمْ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘‘ওরা অপদার্থ।’’
(অর্থাৎ ওদের কথার কোন মূল্য নেই)। তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওরা তো
কখনো কখনো আমাদেরকে কোন জিনিস সম্পর্কে বলে, আর তা সত্য ঘটে যায়।’ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এই সত্য কথাটি জ্বিন (ফেরেশতার নিকট
থেকে) ছোঁ মেরে নিয়ে তার ভক্তের কানে পৌঁছে দেয়। তারপর সে ঐ (একটি সত্য) কথার সাথে
একশ’টি মিথ্যা মিশিয়ে দেয়।’’
(সহীহুল বুখারী ৩২১০,
৫৭৬২, ৬২১৩, ৭৫৬১, মুসলিম ২২২৮, আহমাদ ২৪০৪৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭৮
وَعَنْ صَفِيَّةَ بِنتِ أَبِي عُبَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ، عَن بَعضِ
أَزوَاجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «مَنْ أَتَى عَرَّافاً فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ، لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ
أَرْبَعِينَ يَوماً» . رواه مسلم
স্বাফিয়্যাহ
বিন্তে আবূ উবাইদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন স্ত্রী (হাফসাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি গণকের নিকট এসে কোন (গায়বী) বিষয়ে প্রশ্ন করে, তার চল্লিশ দিনের নামায
কবুল করা হয় না।’
(মুসলিম ২২৩০, আহমাদ
১৬২০২, ২২৭১১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৭৯
وعنْ قَبِيصَةَ بن المُخَارِقًرضي الله عنه قَالَ: سمِعْتُ رسُول الله
صلى الله عليه وسلم يقُولُ: الْعِيَافَةُ، والطَّيرَةُ، والطَّرْقُ، مِنَ الجِبْتِ
কাবীসাহ্
ইবনুল মুখারিক্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছিঃ ‘ইয়াফাহ’ অর্থাৎ রেখা টেনে, ‘তিয়ারাহ’ অর্থাৎ কোন
কিছু দর্শন করে এবং ‘তারক’ অর্থাৎ পাখি দিয়ে মঙ্গল-অমঙ্গল নির্ণয় আল্লাহর সাথে
বিদ্রোহিতামূলক কাজ।
(আমি [আলবানী] বলছিঃ
তিনি এরূপই বলেছেন অথচ এর সনদে হাইয়্যান ইবনু আলা রয়েছেন তিনি মাজহূল। দেখুন ‘‘গায়াতুল
মারাম’’ ২৯৯।)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
১৬৮০
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «مَنِ اقْتَبَسَ عِلْماً مِنَ النُّجُومِ، اقْتَبَسَ شُعْبَةً
مِنَ السِّحْرِ زَادَ مَا زَادَ» رواه أبو داود بإسناد صحيح
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি জ্যোতিষ বিদ্যার কিছু অংশ শিক্ষা করল, সে আসলে
যাদু বিদ্যার একটি অংশ শিক্ষা করল। বিধায় জ্যোতিষ বিদ্যা যত বেশী পরিমাণে শিক্ষা
করবে, অত বেশী পরিমাণে তার যাদু বিদ্যা বেড়ে যাবে।’’
[আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে]
(আবূ দাউদ ৩৯০৫, ইবনু মাজাহ ৩৭২৬, আহমাদ ২০০১, ২৮৩৬)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৬৮১
وَعَنْ مُعاوِيَةَ بنِ الحَكَمِ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ : يَا
رَسُولَ اللهِ إِنِّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِالجَاهِليَّةِ، وَقَدْ جَاءَ اللهُ
تَعَالَى بِالإِسْلاَمِ، وَإِنَّ مِنَّا رِجَالاً يَأتُونَ الكُهَّانَ ؟ قَالَ:
«فَلاَ تَأتِهِمْ» قُلْتُ : وَمِنَّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ ؟ قَالَ: «ذَلِكَ
شَيْءٌ يَجِدُونَهُ فِي صُدُورِهِمْ، فَلاَ يَصُدُّهُمْ» قُلْتُ : وَمِنَّا
رِجَالٌ يَخُطُّونَ ؟ قَالَ: «كَانَ نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ يَخُطُّ، فَمَنْ
وَافَقَ خَطَّهُ، فَذَاكَ» . رواه مسلم
মুআবিয়াহ
ইবনে হাকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর
রসূল! আমি জাহেলী যুগের অত্যন্ত নিকটবর্তী (অর্থাৎ আমি অল্পদিন হল অন্ধ-যুগ থেকে
নিষ্কৃতি পেয়েছি) এবং বর্তমানে আল্লাহ আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করেছেন। আমাদের কিছু
লোক গণকদের নিকট (ভাগ্য-ভবিষ্যৎ জানতে) যায়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাদের কাছে যেও
না।’’ আমি বললাম, ‘আমাদের কিছু লোক অশুভ লক্ষণ মেনে চলে।’ তিনি বললেন, ‘‘এ এমন
জিনিস, যা তারা নিজেদের অন্তরে অনুভব করে। সুতরাং এ (সব ধারণা) যেন তাদেরকে
(বাঞ্চিত কর্মে) বাধা না দেয়।’’ আমি নিবেদন করলাম, ‘আমাদের মধ্যে কিছু লোক দাগ
টেনে শুভাশুভ নিরূপণ করে।’ তিনি বললেন, ‘‘(প্রাচীনযুগে) এক পয়গম্বর দাগ টানতেন।
সুতরাং যার দাগ টানার পদ্ধতি উক্ত পয়গম্বরের পদ্ধতি অনুসারে হবে, তা সঠিক বলে
বিবেচিত হবে (নচেৎ না)।’’
(মুসলিম ৫৩৭, নাসায়ী
১২১৮, আবূ দাউদ ৯৩০, ৯৩১, ৩২৮২, ৩৯০৯, আহমাদ ২৩২৫০, ২৩২৫৬, দারেমী ১৫০২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৮২
وَعَنْ أَبِي مَسعُودٍ البَدْرِيِّ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ ثَمَنِ الكَلْبِ، وَمَهْرِ البَغِيِّ، وَحُلْوَانِ
الكَاهِنِ. متفق عَلَيْهِ
আবূ
মাসঊদ বাদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
(সহীহুল বুখারী ২২৩৭,
২২৮২, ৫৩৪৬, ৫৭৬১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০৪
অশুভ
লক্ষণ মানা নিষেধ
১৬৮৩
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم: «لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ، وَيُعْجِبُنِي الفَأْلُ» قَالُوا : وَمَا
الفَألُ ؟ قَالَ: «كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ» متفق عَلَيْهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘রোগের সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই। শুভ লক্ষণ মানা
আমার নিকট পছন্দনীয়। আর তা হল, উত্তম বাক্য।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৭৫৬,
৫৭৭৬, মুসলিম ২২২৪, তিরমিযী ১৬১৫, আবূ দাউদ ৩৯১৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৩৭, আহমাদ ১১৭৬৯, ১১৯১৪,
১২১৫৪, ১২৩৬৭, ১২৪১১, ১৩২২১, ১৩৫০৮, ১৩৫৩৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৮৪
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ . وَإِنْ كَانَ الشُّؤمُ فِي
شَيْءٍ فَفِي الدَّارِ، وَالمَرْأَةِ، وَالفَرَسِ» . متفق عَلَيْهِ
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘ছোঁয়াচে ও অশুভ বলে কিছু নেই। অশুভ বলতে যদি কিছু থাকে, তাহলে তা ঘর,
স্ত্রী ও ঘোড়ার মধ্যে আছে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৭৫৩,
২০৯৯, ২৮৫৮, ৫০৯৩, ৫০৯৪, ৫৭৭২, মুসলিম ২২৫, তিরমিযী ২৮২৪, নাসায়ী ৩৫৬৮, ৩৫৬৯, আবূ দাউদ
৩৯২২, ইবনু মাজাহ ১৯৯৫, ৩৫৪০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮১৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৮৫
وَعَنْ بُريْدَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم كَانَ لاَ يَتَطَيَّرُ . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
বুরাইদাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কোন
কিছুকে) অশুভ লক্ষণ মানতেন না।
(আবূ দাউদ ৩৯২০, আহমাদ
২২৪৩৭ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৮৬
وَعنْ عُرْوَةَ بْنِ عامِرِ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ: ذُكِرتِ
الطَّيَرَةُ عِنْد رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم فقَالَ: «أحْسَنُهَا الْفَألُ،
وَلا تَرُدُّ مُسْلِماً، فَإذا رأى أحَدُكُمْ ما يَكْرَه، فَلْيقُلْ : اَللهم لا
يَأتى بالحَسَناتِ إلاَّ أنتَ، وَلا يَدْفَعُ السَّيِّئاتِ إلاَّ أنْتَ، وَلا
حوْلَ وَلا قُوَّةَ إلاَّ بِكَ» حديثٌ صَحيحٌ رَوَاهُ أبو داودُ بإسنادٍ صَحيحٍ .
উরওয়াহ
ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে অশুভ বা কুলক্ষণ সম্পর্কে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন: এর মধ্যে
ভাল হল ফাল। কিন্তু কোন মুসলিমকে অশুভ লক্ষণ তার কর্ম থেকে বিরত রাখতে পারে না।
তোমাদের মধ্যে কেউ অপছন্দীয় কোন বিষয় দেখলে সে যেন বলে, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত
কেউ কল্যাণ দিতে পারে না এবং তুমি ব্যতীত কেউ অকল্যাণ দূর করতে পারে না। অবস্থার
পরিবর্তন করা বা মঙ্গল ও অমঙ্গল বিধান করার ক্ষমতা শুধুমাত্র তোমারই’’।
[আবূ দাঊদ] (আমি [আলবানী]
বলছিঃ এ সহীহ্ আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। কারণ উরওয়া ইবনু
আমেরের রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ ঘটার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
এ ছাড়াও এর সনদে আনআনাহ মুদাল্লিস বর্ণনাকারী। দেখুন ‘‘আলকালিমুত তাইয়্যিব টীকা নং
১৯৩)।
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০৫
পাথর,
দেওয়াল, ছাদ, মুদ্রা ইত্যাদিতে প্রাণীর মূর্তি খোদাই করা হারাম। অনুরূপভাবে
দেওয়াল, ছাদ, বিছানা, বালিশ, পর্দা, পাগড়ী, কাপড় ইত্যাদিতে প্রাণীর চিত্র অঙ্কন
করা হারাম এবং মূর্তি ছবি নষ্ট করার নির্দেশ
১৬৮৭
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ الَّذِينَ يَصْنَعُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُونَ
يَوْمَ القِيَامَةِ، يُقَالُ لَهُمْ : أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ» . متفق عليه
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যারা এ জাতীয় (প্রাণীর) মূর্তি বা ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে
শাস্তি দেওয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা বানিয়েছিলে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা
কর।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৯৫১,
৭৫৫৮, মুসলিম ২১০৮, নাসায়ী ৫৩৬১, আহমাদ ৪৪৬১, ৪৬৯৩, ৪৭৭৭, ৫১৪৬, ৫৭৩৩, ৬০৪৮, ৬২০৫,
৬২২৬, ৬২৯০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৮৮
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : قَدِمَ رَسُول اللهِ
صلى الله عليه وسلم مِنْ سَفَرٍ، وَقَدْ سَتَرْتُ سَهْوَةً لِي بِقِرامٍ فِيهِ
تَمَاثيلُ، فَلَمَّا رَآهُ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم تَلَوَّنَ وَجْهُهُ،
وَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ، أَشَدُّ النَّاسِ عَذَاباً عِندَ اللهِ يَوْمَ
القِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ اللهِ» قَالَتْ : فَقَطَعْنَاهُ فَجَعَلْنَا
مِنهُ وِسَادَةً أَوْ وِسَادَتَيْنِ . متفق عليه
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (তাবূক যুদ্ধের) সফর থেকে ফিরে এলেন। আমি আমার কক্ষের তাক বা জানালায়
পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়ে ছিলাম; তাতে ছিল (প্রাণীর) অনেকগুলি চিত্র।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ওটা দেখলেন, তখন তাঁর চেহারা
পরিবর্তন হয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘‘হে আয়েশা! কিয়ামতের দিন সেসব মানুষের সবচেয়ে বেশি
শাস্তি হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির অনুরূপ তৈরি করবে।’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা
বলেন, ‘সুতরাং আমরা তা ছিঁড়ে ফেললাম এবং তা দিয়ে একটি বা দু’টি হেলান-বালিশ তৈরি
করলাম।’
(সহীহুল বুখারী ৫৯৫৪,
মুসলিম ২১০৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৮৯
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ يُجْعَلُ لَهُ
بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسٌ فَيُعَذِِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ» . قَالَ ابنُ
عَبَّاسٍ : فَإِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً، فَاصْنعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ رُوحَ
فِيهِ. متفق عليه
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘প্রত্যেক ছবি (বা মূর্তি) নির্মাতা
জাহান্নামে যাবে, তার নির্মিত প্রতিটি ছবি বা মূর্তির পরিবর্তে একটি ক’রে প্রাণ
সৃষ্টি করা হবে, যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।’’ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,
‘যদি তুমি করতেই চাও, তাহলে গাছপালা ও নিষ্প্রাণ বস্তুর ছবি বা মূর্তি তৈরি করতে
পার।’
(সহীহুল বুখারী ২২২৫,
৫৯৬৩, ৭০৪২, মুসলিম ২১১০, তিরমিযী ১৭৫১, ২২৮৩, নাসায়ী ৫৩৫৮, ৫৩৫৯, আবূ দাউদ ৫০২৪, ইবনু
মাজাহ ৩৯১৬, আহমাদ ১৮৬৯, ২১৬৩, ২২১৪, ২৮০৬, ৩২৬২, ৩৩৭৩, ৩৩৮৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯০
وَعَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ :
«مَنْ صَوَّرَ صُورَةً فِي الدُّنْيَا، كُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوْحَ
يَومَ القِيَامَةِ وَلَيْسَ بِنَافِخٍ» . متفق عليه
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন (প্রাণীর) চিত্র
বানিয়েছে তাকে কিয়ামতের দিনে তাতে রূহ ফুঁকার জন্য বাধ্য করা হবে, অথচ সে রূহ
ফুঁকতে পারবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ২২২৫,
৫৯৬৩, ৭০৪২, মুসলিম ২১১০, তিরমিযী ১৭৫১, ২২৮৩, নাসায়ী ৫৩৫৮, ৫৩৫৯, আবূ দাউদ ৫০২৪, ইবনু
মাজাহ ৩৯১৬, আহমাদ ১৮৬৯, ২১৬৩, ২২১৪, ২৮০৬, ৩২৬২, ৩৩৭৩, ৩৩৮৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯১
وَعَنِ ابنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : «إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَاباً يَومَ
القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ». متفق عليه
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘কিয়ামতের দিনে ছবি বা মূর্তি নির্মাতাদের
সর্বাধিক কঠিন শাস্তি হবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৯৫০,
মুসলিম ২১০৯, নাসায়ী ৫৩৬৪, আহমাদ ৩৫৪৮, ৪০৪০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯২
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : «قَالَ اللهُ تَعَالَى : وَمَنْ أَظْلَمُ
مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِي ؟ فَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوا
حَبَّةً، أَوْ لِيَخْلُقُوا شَعِيرَةً». متفق عليه
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তার চাইতে বড় জালেম
কে আছে, যে আমার সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি তৈরি করতে চায়? সুতরাং তারা একটি ধূলিকণা
বা পিঁপড়ে সৃষ্টি করুক অথবা একটি শস্যদানা সৃষ্টি করুক অথবা একটি যবদানা সৃষ্টি
করুক।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৯৫৩,
৭৫৫৯, মুসলিম ২১১১, আহমাদ ৭১২৬, ৭৪৬৯, ৮৮৩৪, ১০৪৩৮, ২৭৭৯৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯৩
وَعَنْ أَبِي طَلْحَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «لاَ تَدْخُلُ المَلاَئِكَةُ بَيْتاً فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ
صُورَةٌ». متفق عليه
আবূ
ত্বালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশতা প্রবেশ করেন না যে ঘরে কুকুর থাকে এবং সে ঘরেও
নয় যে ঘরে ছবি বা মূর্তি থাকে।’’
(সহীহুল বুখারী ৩২২৫,
৩২২৬, ৩৩২২, ৪৩০২, ৪০০২, ৫৯৪৯, ৫৯৫৮, মুসলিম ২১০৬, তিরমিযী ২৮০৪, নাসায়ী ৪২৮২, ৫৩৪৭-৫৩৫০,
আবূ দাউদ ৪১৫৩, ৪১৫৫, ইবনু মাজাহ ৩৬৪৯, আহমাদ ১৫৯১০, ১৫৯১৮, ১৫৯৩৪, মুওয়াত্তা মালিক
১৮০২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯৪
وعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: وَعَدَ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم جِبْرِيلُ أَنْ يَأتِيَهُ، فَرَاثَ عَلَيْهِ حَتَّى اشْتَدَّ
عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَخَرَجَ فَلَقِيَهُ جِبرِيلُ فَشَكَا
إِلَيهِ، فَقَالَ: إِنَّا لاَ نَدْخُلُ بَيْتاً فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ صُورَةٌ .
رواهُ البُخاري
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (একবার) জিব্রীল রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার ওয়াদা দিলেন। কিন্তু তিনি আসতে
বিলম্ব করলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত (এ বিলম্ব) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে অত্যন্ত ভারী বোধ হতে লাগল। অবশেষে তিনি বাইরে বের হয়ে গেলেন।
তখন জিব্রীল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি বিলম্ব হওয়ার অভিযোগ করলে জিব্রীল
বললেন, ‘আমরা সেই ঘরে প্রবেশ করি না যে ঘরে কুকুর কিম্বা ছবি থাকে।’
(সহীহুল বুখারী ৫৯৬৬০,
৩২২৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯৫
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : وَاعَدَ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم جِبرِيلُ عليه السلام، في سَاعَةٍ أَنْ يَأتِيَهُ، فَجَاءتْ
تِلْكَ السَّاعَةُ وَلَمْ يَأتِهِ ! قَالَتْ : وَكَانَ بِيَدِهِ عَصاً،
فَطَرَحَهَا مِنْ يَدِهِ وَهُوَ يَقُولُ : «مَا يُخْلِفُ اللهُ وَعْدَهُ وَلاَ
رُسُلُهُ». ثُمَّ التَفَتَ، فَإِذَا جَرْوُ كَلْبٍ تَحْتَ سَرِيرِهِ . فَقَالَ:
«مَتَى دَخَلَ هَذَا الكَلْبُ ؟» فَقُلْتُ : وَاللهِ مَا دَرَيْتُ بِهِ، فَأَمَرَ
بِهِ فَأُخْرِجَ، فَجَاءَهُ جِبْرِيلُ عليه السلام، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: «وَعَدْتَنِي، فَجَلَسْتُ لَكَ وَلَمْ تَأَتِنِي» فَقَالَ:
مَنَعَنِي الكَلْبُ الَّذِي كَانَ فِي بَيْتِكَ، إِنَّا لاَ نَدْخُلُ بَيْتاً
فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ صُورَةٌ . رواه مسلم
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা জিব্রীল আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কোন এক সময়ে সাক্ষাৎ করার জন্য ওয়াদা
করেন। সুতরাং সে নির্ধারিত সময়টি এসে পৌঁছল; কিন্তু জিব্রীল আসলেন না। আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে একটি লাঠি
ছিল। তিনি তা ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘‘আল্লাহ নিজ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না এবং
তাঁর দূতগণও না।’’ তারপর তিনি ফিরে দৃষ্টি নিক্ষেপ ক’রে দেখতে পেলেন যে, তাঁর
খাটের নীচে একটি কুকুর ছানা বসে আছে। তখন তিনি বললেন, ‘‘এ কুকুরটি কখন এখানে ঢুকে
পড়েছে?’’ (আয়েশা বলেন) আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম! আমি ওর ব্যাপারে জানতেই পারিনি।’
সুতরাং তিনি আদেশ দিলে ওটাকে বাইরে বের করা হল। তারপর জিব্রীল -এর আগমন ঘটল। তখন
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অভিযোগ ক’রে) বললেন, ‘‘আপনি আমার
সঙ্গে ওয়াদা করেছিলেন, আর আমি আপনার প্রতীক্ষায় বসেছিলাম, অথচ আপনি আসলেন না?’’
জিব্রীল বললেন, ‘আমাকে ঐ কুকুর ছানাটি (ঘরে ঢুকতে) বাধা দিয়েছিল; যেটা আপনার ঘরের
মধ্যে ছিল। নিশ্চয় আমরা সে ঘরে প্রবেশ করি না, যে ঘরে কুকুর কিম্বা কোন ছবি বা
মূর্তি থাকে।’
(মুসলিম ২১০৪, আহমাদ
২৪৫৭৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯৬
وَعَنْ أبي الهَيَّاجِ حَيَّانَ بِن حُصَيْنٍ، قَالَ: قَالَ لِيْ عَليُّ
بنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عنه: أَلاَ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي
عَلَيْهِ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ أَنْ لاَ تَدَعَ صُورَةً إِلاَّ
طَمَسْتَهَا، وَلاَ قَبْراً مُشْرَفاً إِلاَّ سَوَّيْتَهُ. رواه مسلم
আবুল
হাইয়াজ হাইয়ান ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ)
আমাকে বললেন, ‘তোমাকে সে কাজের জন্য পাঠাব না কি, যে কাজের জন্য আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? (তা হচ্ছে এই যে,) কোন
(প্রাণীর) ছবি বা মূর্তি দেখলেই তা নিশ্চিহ্ন ক’রে দেবে এবং কোন উঁচু কবর দেখলে তা
সমান করে দেবে।’
(মুসলিম ৯৬৯, তিরমিযী
১০৪৯, নাসায়ী ২০৩১, আবূ দাউদ ৩১১৮, আহমাদ ৬৮৫, ৭৪৩, ৮৯১, ১০৬৭, ১১৭৪, ১১৭৯, ১২৪৩, ১২৮৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০৬
শিকার
করা, পশু রক্ষা বা ক্ষেত খামার, ঘরবাড়ি পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া কুকর পোষা
হারাম
১৬৯৭
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «مَنِ اقْتَنَى كَلْباً إِلاَّ كَلْبَ صَيْدٍ أَوْ
مَاشِيَةٍ فَإِنَّهُ يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِهِ كُلَّ يَومٍ قِيرَاطَانِ». متفق عليه.
وفي رواية : «قِيرَاطٌ»
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যে ব্যক্তি শিকারি অথবা পশু-রক্ষক কুকুর ছাড়া
অন্য কুকুর পোষে, তার নেকী থেকে প্রত্যেক দিন দুই কীরাত পরিমাণ সওয়াব কমে যায়।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৪৮০,
৫৪৮১, ৫৪৮২, মুসলিম ১৫৭৪, তিরমিযী ১৪৮৭, নাসায়ী ৪২৮৪, ৪২৮৬, ৪২৮৭, ৪২৯১, আহমাদ ৪৪৬৫,
৪৫৩৫, ৪৭৯৮, ৪৯২৫, ৫০৫৩, ৫১৪৯, ৫২৩১, ৫৩৭০, ৫৪৮১, ৫৭৪১, ৫৮৮৯, ৬৩০৬, ৬৪০৭, মুওয়াত্তা
মালিক ১৮০৮) অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘এক কীরাত সওয়াব কমে যায়।’’
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৬৯৮
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: مَنْ أَمْسَكَ كَلْباً، فَإِنَّهُ ينْقُصُ مِنْ عَمَلِهِ كُلَّ
يَومٍ قِيرَاطٌ إِلاَّ كَلْبَ حَرْثٍ أَوْ مَاشِيَةٍ . متفق عليه
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسلِمٍ : مَنِ اقْتَنَى كَلْباً لَيْسَ بِكَلْبِ صَيْدٍ، وَلاَ
مَاشِيَةٍ وَلاَ أَرْضٍ، فَإِنَّهُ يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِهِ قِيرَاطَانِ كُلَّ
يَوْمٍ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কুকুর বাঁধে (পালে), তার আমল (নেকী) থেকে প্রত্যহ
এক কীরাত পরিমাণ কমে যায়।’’
(সহীহুল বুখারী ২৩২২,
৩৩২৪, মুসলিম ১৫৭৫, তিরমিযী ১৪৯০, নাসায়ী ৪২৮১, ৪২৯০, আবূ দাউদ ২৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৩২০৪,
আহমাদ ৭৫৬৬, ৮৩৪২, ৯২০৯, ৯৭৬৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০৭
উট
বা অন্যান্য পশুর গলায় ঘণ্টা বাঁধা বা সফরে কুকুর এবং ঘুঙুর সঙ্গে রাখা মকরুহ
১৬৯৯
عَن أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَصْحَبُ المَلاَئِكَةُ رُفْقَةً فِيهَا كَلْبٌ أَوْ
جَرَسٌ». رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই কাফেলার সঙ্গে (রহমতের) ফিরিশতা থাকেন না, যাতে কুকুর
কিম্বা ঘুঙুর থাকে।’’
(মুসলিম ২১১৩, তিরমিযী
১৭০৩, আবূ দাউদ ২৫৫৫, আহমাদ ৭৫১২, ৮০৩৬, ৮২৩৭, ৮৩২৩, ৮৭৭২, ৮৮৪৫, ৯০৯৮, ৯৪৪৫, ৯৮০৫,
১০৫৫৮, দারেমী ২৫৭৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭০০
وَعَنْه : أنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الجَرَسُ
مَزَامِيرُ الشَّيْطَانِ» . رواه مسلم
উক্ত
রাবী থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘ঘণ্টা বা ঘুঙুর শয়তানের বাঁশি।’’
(মুসলিম ২১১৪, আবূ দাউদ
২৫৫৬, আহমাদ ৮৫৬৫, ৮৬৩৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০৮
নোংরাভোজী
পশুকে সওয়ারী বানানো মকরুহ
১৭০১
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: نهَى رَسُول اللهِ صلى
الله عليه وسلم عَنِ الجَلاَّلَةِ فِي الإبِلِ أَنْ يُرْكَبَ عَلَيْهَا. رواه أبو
داود بإسناد صحيح
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নোংরা-ভোজী উঁটনীর উপর চড়তে বারণ করেছেন।’
[আবূ দাঊদ-বিশুদ্ধ সূত্রে]
(আবূ দাউদ ২৫৫৭, ২৫৫৮, ১৭০২, সহীহুল বুখারী ৪১৫, মুসলিম ৫৫২, তিরমিযী ৫৭২, নাসায়ী ৭২৩,
আবূ দাউদ ২৭৪, ৪৭৪, ৪৭৫, আহমাদ ১১৬৫১, ১২৩৬৪, ১২৪৭৯, ১২৭৭০, ১২৮০৪, ১৩০২১, ১৩০৩৮, ১৩০৮৮,
১৩২৩৫, ১৩৪৯৪, ১৩৫৩৬, ১৩৬৬১, দারেমী ১৩৯৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩০৯
মসজিদে
থুথু ফেলা নিষেধ। যদি থুথু ফেলা হয়ে থাকে তাহলে তা পরিষ্কার করা এবং যাবতীয়
আবর্জনাদি থেকে মসজিদকে পবিত্র রাখার নির্দেশ
১৭০২
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «البُصَاقُ فِي المَسْجِدِ خَطِيئَةٌ، وَكَفَّارَتُهَا دَفْنُهَا».
متفق عليه
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
সূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘মসজিদের ভিতর থুথু ফেলা পাপ। আর তার কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হল তা
মাটিতে পুঁতে দেওয়া।’’
(সহীহুল বুখারী ৪১৫,
মুসলিম ৫৫২, তিরমিযী ৫৭২, নাসায়ী ৭২৩, আবূ দাউদ ২৭৪, ৪৭৪, ৪৭৫, আহমাদ ১১৬৫১, ১২৩৬৪,
১২৪৭৯, ১২৭৭০, ১২৮০৪, ১৩০২১, ১৩০৩৮, ১৩০৮৮, ১৩২৩৫, ১৩৪৯৪, ১৩৫৩৫, ১৩৪৯৪, ১৩৫৩৬, ১৩৬৬১,
দারেমী ১৩৯৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭০৩
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم رَأَى فِي جِدَارِ القِبْلَةِ مُخَاطاً، أَوْ بُزَاقاً، أَوْ نُخَامَةً،
فَحَكَّهُ . متفق عَلَيْهِ
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকের দেওয়ালে পোঁটা, থুথু কিম্বা শ্লেষ্মা দেখতে পেলেন। সুতরাং
তিনি রগড়ে পরিষ্কার করে দিলেন।
(সহীহুল বুখারী ৪০৭,
মুসলিম ৫৪৯, ইবনু মাজাহ ৭৬৪, আহমাদ ২৪৬৩০, ২৫৪০৬, মুওয়াত্তা মালিক ৪৫৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭০৪
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «إِنَّ هَذِهِ المَسَاجِدَ لاَ تَصْلُحُ لِشَيءٍ مِنْ هَذَا البَوْلِ
وَلاَ القَذَرِ، إنَّمَا هي لِذِكْرِ اللهِ تَعَالَى، وَقِراءةِ القُرْآنِ» أَوْ
كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم . رواه مسلم
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় এ মসজিদসমূহ পেশাব ও নোংরা-আবর্জনার উপযুক্ত স্থান নয়। এসব তো
মহান আল্লাহর জিকির এবং কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য।’’ অথবা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ কিছু বলেছেন।
(সহীহুল বুখারী ২১৯,
২২১, ৬০২৫, মুসলিম ২৮৪, ২৮৫, তিরমিযী ১৪৭, নাসায়ী ৫৩, ৫৫, ৩২৯, ইবনু মাজাহ ৫২৮, আহমাদ
১১৬৭২, ১১৭২২, ১২২৯৮, ১২৫৭২, ১২৯৫৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৪, দারেমী ৭৪০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১০
মসজিদের
মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও হৈ-হল্লা করা, হারানো বস্তুর খোঁজ বা ঘোষণা করা, কেনা-বেচা
করা, ভাড়া বা মজুরী বা ইজারা চুক্তি ইত্যাদি অনুরূপ কর্ম নিষেধ
১৭০৫
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، يَقُولُ : «مَنْ سَمِعَ رَجُلاً يَنْشُدُ ضَالَّةً فِي المَسْجِدِ
فَلْيَقُلْ : لاَ رَدَّها اللهُ عَلَيْكَ، فَإِنَّ المَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ
لِهَذَا» . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কাউকে হারানো জিনিস সন্ধান (ঘোষণা) করতে
শোনে, সে যেন বলে, ‘আল্লাহ যেন তোমাকে তা ফিরিয়ে না দেন।’ কারণ, মসজিদ এর জন্য
বানানো হয়নি।’’
(মুসলিম ৫৬৮, তিরমিযী
১৩২১, আবূ দাউদ ৪৭৩, ইবনু মাজাহ ৭৬৭, আহমাদ ৮৩৮২, ৯১৬১, দারেমী ১৪০১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭০৬
وَعَنْهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا
رَأيْتُمْ مَنْ يَبِيعُ أَوْ يَبْتَاعُ فِي المَسْجِدِ، فَقُولُوا : لاَ أَرْبَحَ
اللهُ تِجَارَتَكَ، وَإِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَنْشُدُ ضَالَّةً فَقُولُوا : لاَ
رَدَّهَا الله عَلَيْكَ» . رواه الترمذي، وقال :[ حديث حسن ]
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যখন তোমরা কাউকে মসজিদের মধ্যে কেনা-বেচা করতে দেখবে, তখন বলবে, ‘আল্লাহ
তোমার ব্যবসায়ে যেন লাভ না দেন।’ আর যখন কাউকে হারানো জিনিস খুঁজতে দেখবে, তখন
বলবে, ‘আল্লাহ যেন তোমাকে তা ফিরিয়ে না দেন।’’
(মুসলিম ৫৬৮, তিরমিযী
১৩২১, আবূ দাউদ ৪৭৩, ইবনু মাজাহ ৭৬৭, আহমাদ ৮৩৮২, ৯১৬১, দারেমী ১৪০১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭০৭
وَعَنْ بُرَيْدَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ : أَنَّ رَجُلاً نَشَدَ فِي
المَسْجِدِ فَقَالَ: مَنْ دَعَا إِلَى الجَمَلِ الأَحْمَرِ ؟ فَقَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ وَجَدْتَ ؛ إِنَّمَا بُنِيَتِ المَسَاجِدُ لِمَا
بُنِيَتْ لَهُ» . رواه مسلم
বুরাইদাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একটি লোক মসজিদের মধ্যে (হারানো বস্তু
সম্পর্কে) ঘোষণা পূর্বক বলল, ‘আমাকে আমার লাল উটের সন্ধান কে দিতে পারবে?’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি যেন তা না পাও। মসজিদ
সেই কাজের জন্য নির্মিত হয়েছে, যে কাজের জন্য নির্মিত হয়েছে।’’
(মুসলিম ৫৬৯, ইবনু মাজাহ
৭৬৫, আহমাদ ২২৫৩৫) [অর্থাৎ ইবাদতের জন্য, হারানো জিনিস খোঁজার জন্য নয়।]
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭০৮
وَعَنْ عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ رَضِيَ اللهُ
عَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَن الشِّرَاءِ وَالبَيْعِ
فِي المَسْجِدِ، وَأَنْ تُنْشَدَ فِيهِ ضَالَّةٌ؛ أَوْ يُنْشَدَ فِيهِ شِعْرٌ.
رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:[حديث حسن]
আমর
ইবনে শুআইব (রাঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর (আম্রের) দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন মসজিদের মধ্যে কেনা-বেচা
করতে, হারানো বস্তু সন্ধান করতে অথবা তাতে (অবৈধ) কবিতা আবৃত্তি করতে।
[আবূ দাঊদ, তিরমিযী
হাসান] (তিরমিযী ৩২২, আবূ দাউদ ১০৭৯, নাসায়ী ৭১৪, ৭১৫, ইবনু মাজাহ ৭৪৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭০৯
وَعَنْ السَّائِبِ بنِ يَزِيدَ الصَّحَابِي رضي الله عنه قَالَ: كُنْتُ
فِي المَسْجِدِ فَحَصَبَنِي رَجُلٌ، فَنَظَرْتُ فَإِذَا عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ
رضي الله عنه فَقَالَ: اِذْهَبْ فَأْتِنِي بِهَذَينِ، فَجِئْتُهُ بِهِمَا،
فَقَالَ: مِنْ أَيْنَ أَنْتُمَا ؟ فَقَالاَ: مِنْ أَهْلِ الطَّائِفِ، فَقَالَ:
لَوْ كُنْتُمَا مِنْ أَهْلِ البَلَدِ، لأَوْجَعْتُكُمَا، تَرْفَعَانِ
أَصْوَاتَكُمَا فِي مَسْجِدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ! رواه البخاري
সাহাবী
সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি মসজিদে নববীতে ছিলাম। এমন সময়
একটি লোক আমাকে কাঁকর ছুঁড়ে মারল। আমি তার দিকে তাকাতেই দেখি, তিনি উমার ইবনুল
খাত্তাব (রাঃ)। তিনি বললেন, ‘যাও, ঐ দু’জনকে আমার নিকট নিয়ে এস।’ আমি তাদেরকে নিয়ে
তাঁর কাছে এলাম। তিনি বললেন, ‘তোমরা কোথাকার?’ তারা বলল, ‘আমরা তায়েফের অধিবাসী।’
তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি এই শহর (মদীনার) লোক হতে, তাহলে আমি তোমাদেরকে অবশ্যই কঠোর
শাস্তি দিতাম। তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে
উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছ!’
(সহীহুল বুখারী ৪৭০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১১
(কাঁচা)
রসূন, পিঁয়াজ, লীক পাতা তথা তীব্র দুর্গন্ধ জাতীয় কোন জিনিস খেয়ে, দুর্গন্ধ দূর না
করে মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ। তবে নিতান্ত প্রয়োজনবশতঃ জায়েয।
১৭১০
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ - يَعنِي : الثُّومَ -
فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا» . متفق عَلَيْهِ . وفي روايةٍ لمسلم :
«مَسَاجِدَنَا» .
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি এই গাছ---অর্থাৎ রসুন ---থেকে কিছু খায়, সে যেন অবশ্যই আমাদের
মসজিদের নিকটবর্তী না হয়।’’
(সহীহুল বুখারী ৮৫৩,
৪২১৫, ৪২১৭, ৪২১৮, ৫৫২২, মুসলিম ৫৬১, আবূ দাউদ ৩৮২৫, ইবনু মাজাহ ১০১৬, আহমাদ ৪৭০১,
৪৭০৬, ৫৭৫২, ৬২৫৫, ৬২৭৪, ২৭৮৩৬, দারেমী ২০৫৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭১১
وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم:
«مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ فَلاَ يَقْرَبَنَّا، وَلاَ يُصَلِّيَنَّ
مَعَنَا» . متفق عَلَيْهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এই (রসুন) গাছ থেকে কিছু ভক্ষণ করল, সে যেন
অবশ্যই আমাদের নিকটবর্তী না হয়, আর না আমাদের সাথে নামায পড়ে।’’
(সহীহুল বুখারী ৮৫৬,
৫৪৫১, মুসলিম ৫৬২, আহমাদ ২৭৮৩৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭১২
وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم: «مَنْ أَكَلَ ثُوماً أَوْ بَصَلاً فَلْيَعْتَزِلنَا، أَو فَلْيَعْتَزِلْ
مَسْجِدَنَا». متفق عَلَيْهِ، وَفِي رِوَايةٍ لِمُسْلِمٍ : «مَنْ أَكَلَ البَصَلَ،
وَالثُّومَ، وَالكُرَّاثَ، فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ المَلاَئِكَةَ
تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ» .
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি (কাঁচা) রসূন অথবা পিঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের
নিকট হতে দূরে অবস্থান করে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে।’’
(সহীহুল বুখারী ৮৫৪,
৮৫৫, ৫৪৫২, ৭৩৫৯, মুসলিম ৫৬৪, তিরমিযী ১৮০৬, নাসায়ী ৭০৭, আবূ দাউদ ৩৮২২, আহমাদ ১৪৫৯৬,
১৪৬৫১, ১৪৭৩৯, ১৪৮৫০, ১৪৮৭৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭১৩
وَعَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنهُ : أَنَّهُ خَطَبَ يَومَ
الجُمُعَةِ فَقَالَ فِي خُطْبَتِهِ : ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا النَّاسُ
تَأكُلُونَ شَجَرتَيْنِ مَا أَرَاهُمَا إِلاَّ خَبِيثَتَيْن: البَصَلَ وَالثُّومَ.
لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إِذَا وَجدَ ريحَهُمَا مِنَ
الرَّجُلِ فِي المَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ، فَأُخْرِجَ إِلَى البَقِيعِ، فَمَنْ
أَكَلَهُمَا، فَلْيُمِتْهُمَا طَبْخاً. رواه مسلم
উমার
ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি এক জুমআর দিন খুতবা দিলেন, সে খুতবায়
তিনি বললেন, ‘‘....অতঃপর তোমরা হে লোক সকল! দুই শ্রেণীর এমন গাছ (সবজি) খেয়ে থাক;
যা (কাঁচা অবস্থায়) খাওয়ার অনুপযুক্ত মনে করি; পিঁয়াজ আর রসুন। আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, যখন তিনি মসজিদের মধ্যে কোন ব্যক্তির
কাছ থেকে ঐ দুই (সবজি)র দুর্গন্ধ পেতেন, তখন তাকে (মসজিদ থেকে বহিষ্কার করতে) আদেশ
দিতেন। ফলে তাকে বাকী’ (নামক জায়গা) পর্যন্ত বের করে দেওয়া হত। সুতরাং যে ঐ দুই
সবজি খেতে চায়, সে যেন ঐগুলি রান্না করে তার গন্ধ মেরে খায়।’’
(মুসলিম ৫৬৭, ইবনু মাজাহ
৩৩৬৩, ১০১৪, নাসায়ী ৭০৩, আহমাদ ৯০, ৩৪৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১২
জুমআর
দিন খুৎবা চলাকালীন সময়ে দুই হাঁটুকে পেটে লাগিয়ে বসা অপছন্দনীয়
১৭১৪
عَنْ مُعاذِ بنِ أَنَسٍ الجُهَنِيِّ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبِيَّ صلى
الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الحِبْوَةِ يَومَ الجُمُعَةِ وَالإمَامُ يَخْطُبُ .
رواه أَبُو داود والترمذي، وقالا :[ حديث حسن»
মুআয
ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার
দিনে ইমামের খুৎবা চলা অবস্থায় দুই হাঁটুকে পেটে লাগিয়ে বসতে নিষেধ করেছেন।
[আবূ দাঊদ, তিরমিযী
হাসান] (আবূ দাউদ ১১১০, তিরমিযী ৫১৪, আহমাদ ১৫২০৩ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১৩
যুলহিজ্জার
চাঁদ উঠার পর কুরবানী হওয়া পর্যন্ত কুরবানী করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নিজ নখ, চুল-গোঁফ
ইত্যাদি কাটা নিষিদ্ধ
১৭১৫
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ، فَإِذَا أَهَلَّ هِلاَلُ
ذِي الحِجَّةِ، فَلاَ يَأخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلاَ مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئاً
حَتَّى يُضَحِّيَ» . رواه مسلم
উম্মে
সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার কাছে এমন কুরবানীর পশু আছে যাকে যবেহ করার ইচ্ছা রাখে,
সে যেন যুলহিজ্জার চন্দ্রোদয়ের পর থেকে কুরবানী যবেহ না করা পর্যন্ত নিজ চুল, নখ
কিছু অবশ্যই না কাটে।’’
(মুসলিম ১৯৭৭, তিরমিযী
১৫২৩, আবূ দাউদ ২৭৯১, নাসায়ী ৪৩৬১, ৪৩৬২, ৪৩৬৪, ইবনু মাজাহ ৩১৪৯, ৩১৫০, আহমাদ ২৫৯৩৫,
দারেমী ১৯৪৭, ১৯৪৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১৪
গায়রুল্লাহর
নামে শপথ করা নিষেধ
১৭১৬
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: إِنَّ الله تَعَالَى يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ،
فَمَنْ كَانَ حَالِفاً، فَلْيَحْلِفْ بِاللهِ، أَوْ لِيَصْمُتْ . متفق عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ فِي الصَّحِيحِ : فَمَنْ كَانَ حَالِفاً فَلاَ يَحْلِفْ إِلاَّ
بِاللهِ، أَوْ لِيَسْكُتْ
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন।
সুতরাং যে শপথ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে; নচেৎ চুপ থাকে।’’
(সহীহুল বুখারী ২৬৭৯,
৩৮৩৬, ৬১০৮, ৬৬৪৬, ৬৬৪৭, ৬৬৪৮, ৭৪০১, মুসলিম ১৬৪৬, তিরমিযী ১৫৩৩, ১৫৩৪, ১৫৩৫, নাসায়ী
৩৭৬৬-৩৭৬৮, আবূ দাউদ ৩২৪৯, ইবনু মাজাহ ২০৯৪, আহমাদ ৪৫০৯, ৪৫৩৪, ৪৫৭৯, ৪৬৫৩, ৪৬৮৯, ১৮৮৬,
৫৩৫২, ৫৪৩৯, ৫৫৬৮, ৫৭০২, ৬০৩৬, ৬২৫২, মুওয়াত্তা মালিক ১০৩৭, দারেমী ২৩৪১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭১৭
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحمنِ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَحْلِفُوا بِالطَّوَاغِي، وَلاَ
بِآبَائِكُمْ» . رواه مسلم
আব্দুর
রহমান ইবনে সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা তাগূত (শয়তান ও মূর্তি)র নামে শপথ করো না এবং তোমাদের
বাপ-দাদার নামেও না।’’
(মুসলিম ১৬৪৮, নাসায়ী
৩৭৭৪, ইবনু মাজাহ ২০৯৫, আহমাদ ২০১০১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭১৮
وَعَنْ بُريدَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: مَنْ حَلَفَ بِالأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا. حديث صحيح، رواه أَبُو
داود بإسناد صحيح
বুরাইদাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমানতের কসম খাবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’
(আবূ দাউদ ৩২৫৩, আহমাদ
২২৪৭১ )
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭১৯
وَعَنْه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ حَلَفَ
فَقَالَ: إِنِّي بَرِيءٌ مِنَ الإِسْلاَمِ، فَإِنْ كَانَ كَاذِباً، فَهُوَ كَمَا
قَالَ، وَإِنْ كَانَ صَادِقاً، فَلَنْ يَرْجِعَ إِلَى الإِسْلاَمِ سَالِماً». رواه
أَبُو داود
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কসম খেয়ে বলল যে, ‘আমি ইসলাম হতে (দায়) মুক্ত।’
অতঃপর যদি (তাতে) সে মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে তেমনি হবে, যেমন সে বলেছে। আর যদি সে
(তাতে) সত্যবাদী হয়, তাহলে নিখুঁতভাবে ইসলামে কখনোই ফিরতে পারবে না।’’
(আবূ দাউদ ৩২৫৮, নাসায়ী
৩৭৭২, ইবনু মাজাহ ২১০০, আহমাদ ২২৪৯৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭২০
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّهُ سَمِعَ رَجُلاً
يَقُولُ: لاَ وَالكَعْبَةِ، فَقَالَ ابنُ عُمَرَ : لاَ تَحْلِفْ بَغَيْرِ اللهِ،
فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ : «مَنْ حَلَفَ
بِغَيرِ اللهِ، فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ». رواه الترمذي، وقال :[ حديث حسن ]
وَفَسَّرَ بَعْض الْعُلَمَاء قوله : «كَفَرَ أو أَشْرَكَ» عَلَى التَّغْلِيْظ
كَمَا رُوِيَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ: "
اَلرِّيَاءُ شِرْكٌ "
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি একটি লোককে বলতে শুনলেন ‘না, কা’বার
কসম!’ ইবনে উমার বললেন, ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কসম খেয়ো না। কেননা, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যে ব্যক্তি
গায়রুল্লাহর নামে কসম করে, সে কুফরী অথবা শির্ক করে।’’
(হাদীসটি সহীহ্। আমি
[আলবানী] বলছিঃ মুসান্নিফ [রাহি] ‘‘রুবিয়া’’ শব্দ দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন যে, হাদীসটির
সনদ দুর্বল। আসলে তিনি যেরূপ বলেছেন সেরূপই। আমি ‘‘য‘ঈফা’’ গ্রন্থে [১৮৫০] এটির তাখরীজ
করেছি এবং এর সমস্যা বর্ণনা করেছি [এ সব কথাগুলো পূর্বের]। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে হাদীসটিকে
সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন। দেখুন ‘‘সহীহ্ তারগীব অততারহীব’’ [২৯৫২], ‘‘সিলসিলাহ্ সহীহাহ্’’
[২০৪২], ‘‘সহীহ্ জামে‘উস সাগীর’’ [১৫৩৫], ‘‘ইরওয়াউল গালীল’’ [২৫৬১]। সহীহুল বুখারী
২৬৭৯, ৩৮৩৬, ৬১০৮, ৬৬৪৬, ৬৬৪৭, ৬৬৪৮, ৭৪০১, মুসলিম ১৬৪৬, তিরমিযী ১৫৩৩, ১৫৩৪, ১৫৩৫,
নাসায়ী ৩৭৬৬-৩৭৬৮, আবূ দাউদ ৩২৪৯, ইবনু মাজাহ ২০৯৪, আহমাদ ৪৫০৯, ৪৫৩৪, ৪৫৭৯, ৪৬৫৩,
৪৬৮৯, ১৮৮৬, ৫৩৫২, ৫৪৩৯, ৫৫৬৮, ৫৭০২, ৬০৩৬, ৬২৫২, মুওয়াত্তা মালিক ১০৩৭, দারেমী ২৩৪১)
কোন কোন আলেমের ব্যাখ্যানুসারে শেষোক্ত বাক্যটি কঠোরতা ও কঠিন তাকীদ প্রদর্শনার্থে
ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন বর্ণনা করা হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘রিয়া শির্ক।’’ (যার অর্থ ছোট শির্ক।)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১৫
ইচ্ছাকৃত
মিথ্যা কসম খাওয়া কঠোর নিষিদ্ধ
১৭২১
عَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «مَنْ حَلَفَ عَلَى مَالِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِغَيرِ حَقِّهِ، لَقِيَ اللهَ
وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ». قَالَ: ثُمَّ قَرَأَ عَلَيْنَا رَسُول اللهِ صلى الله
عليه وسلم، مِصْدَاقَهُ مِنْ كِتَابِ الله - عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ إن الذين يشترون
بعهد الله وأيمانهم ثمنًا قليلا﴾ [ال عمران: ٧٧] إِلَى آخِرِ الآيَةِ . متفق
عَلَيْهِ
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ব্যক্তির মাল নাহক আত্মসাৎ করার জন্য মিথ্যা কসম খাবে, সে
আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে, যখন তিনি তার উপর ক্রোধান্বিত থাকবেন।
অতঃপর এর সমর্থনে আল্লাহ আযযা অজাল্লার কিতাব থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পড়ে শোনালেন, যার অর্থ, ‘যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও
নিজেদের শপথ স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন
আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) চেয়ে দেখবেন না,
তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’’
(সহীহুল বুখারী ২৩৫৭,
২৪১৭, ২৫১৬, ২৬৬৭, ২৬৭০, ২৬৭৩, ২৬৭৭, ৪৫৫০, ৬৬৫৯, ৬৬৭৬, ৭১৮৩, ৭৪৪৫, মুসলিম ১৩৮, তিরমিযী
১২৫৯, ২৯৯৬, আবূ দাউদ ৩২৪৩, ইবনু মাজাহ ২৩২৩, আহমাদ ৩৫৬৬, ৩৫৮৬, ৩৯৩৬, ৪০৩৯, ৪২০০,
৪৩৮১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭২২
وَعَنْ أَبي أُمَامَة إِيَاسِ بنِ ثَعلَبَةَ الحَارِثِي رَضِيَ اللهُ
عَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ
امْرِىءٍ مُسْلِمٍ بِيَمِينِهِ، فَقَدْ أَوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ . وَحَرَّمَ
عَلَيْهِ الجَنَّةَ» فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ : وَإِنْ كَانَ شَيْئاً يَسِيراً يَا
رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ: «وَإِنْ كَانَ قَضِيباً مِنْ أَرَاكٍ».
رواه مسلم
আবূ
উমামাহ ইয়াস ইবন সা’লাবাহ হারেসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ব্যক্তির অধিকার নিজ কসম দ্বারা আত্মসাৎ করবে,
আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন ওয়াজেব ক’রে দেবেন এবং তার উপর জান্নাত হারাম
ক’রে দেবেন।’’ এ কথা শুনে তাঁকে এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি তা সামান্য
জিনিস হয় তবুও?’ তিনি বললেন, ‘‘যদিও পিল্লু গাছের একটি ডালও হয়।’’
(মুসলিম ১৩৭, নাসায়ী
৫৪১৯, ইবনু মাজাহ ২৩২৪, আহমাদ ২১৩৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৩৫, দারেমী ২৬০৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭২৩
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الكَبَائِرُ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ،
وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَاليَمِينُ الغَمُوسُ» . رواه
البخاري
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ : أَنَّ أَعْرَابِيّاً جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا الكَبَائِرُ ؟ قَالَ:
«الإِشْرَاكُ بِاللهِ» قَالَ: ثُمَّ مَاذَا ؟ قَالَ: «اليَمِينُ الغَمُوسُ» قُلْتُ
: وَمَا اليَمِينُ الغَمُوسُ ؟ قَالَ: «الَّذِي يَقْتَطِعُ مَالَ امْرِئٍ مُسْلِمٍ
!» يَعنِي: بِيَمِينٍ هُوَ فِيهَا كَاذِبٌ
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘কাবীরাহ গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা। মাতা-পিতার অবাধ্যাচরণ করা,
(অন্যায় ভাবে) কোন প্রাণ হত্যা করা, মিথ্যা কসম খাওয়া।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৬৭৫,
৬৮৭০, ৬৯২০, তিরমিযী ৩০২১, নাসায়ী ৪০১১, আহমাদ ৬৮৪৫, ৬৯৬৫, দারেমী ২৩৬০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১৬
নির্দিষ্ট
বিষয়ে কসম খাওয়ার পর যদি তার বিপরীতে ভালাই প্রকাশ পায়, তাহলে কসমের কাফফারা দিয়ে
ভালো কাজটাই করা উত্তম
১৭২৪
عَنْ عَبدِ الرَّحْمَانِ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ: قَالَ
لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ،
فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْراً مِنْهَا، فَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيرٌ وَكَفِّرْ عَنْ
يَمِينِكَ» . متفق عَلَيْهِ
আব্দুর
রহমান ইবনে সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘যখন তুমি কোন কিছুর ব্যাপারে কসম খাবে এবং তা ব্যতীত
অন্য কিছুর মধ্যে কল্যাণ দেখতে পাবে, তবে নিজ কসমের কাফফারা দিয়ে (যাতে কল্যাণ
নিহিত আছে) সেই উত্তমটি গ্রহণ করো।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৬২২,
৬৭২২, ৭১৪৬, ৭১৪৭, মুসলিম ১৬৫২, তিরমিযী ১৫২৯, নাসায়ী ৩৭৮২, ৩৭৮৩, ৩৭৮৪, ৫৩৮৪, আবূ
দাউদ ২৯২৯, ৩২৭৭, আহমাদ ২০০৯৩, ২০০৯৫, ২০১০৫, দারেমী ২৩৪৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭২৫
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ، فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْراً مِنْهَا،
فَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ، وَلْيَفْعَلِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ» . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন কিছুর ব্যাপারে কসম খায় এবং তা ব্যতীত অন্য কিছুর মধ্যে
কল্যাণ দেখতে পায়, তাহলে সে যেন তার কসমের কাফফারা দিয়ে যেটি উত্তম সেটি গ্রহণ
করে।’’
(মুসলিম ১৬৫০, তিরমিযী
১৫৩০, মুওয়াত্তা মালিক ১০৩৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭২৬
وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «إِنِّي وَاللهِ إِنْ شاءَ اللهُ لاَ أَحْلِفُ عَلَى يَمِينٍ، ثُمَّ
أَرَى خَيراً مِنْهَا إِلاَّ كَفَّرْتُ عَنْ يَمِينِي، وَأَتَيْتُ الَّذِي هُوَ
خَيْرٌ» . متفق عَلَيْهِ
আবূ
মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘আল্লাহর শপথ! ইন শাআল্লাহ, আমি যখনই কিছুর ব্যাপারে হলফ করব, তারপর তার
চেয়ে উত্তম কিছু দেখতে পাব, তখন আমার কসম ভঙ্গের কাফফারা দিয়ে যেটি উত্তম সেটিই
করব।’’
(সহীহুল বুখারী ৩১৩৩,
৪৩৮৫, ৪৪১৫, ৫৫১৭, ৫৫১৮, ৬৬২৩, ৬৬৪৯, ৬৬৭৮, ৬৬৮০, ৬৭১৮, ৬৭২১, ৭৫৫৫, মুসলিম ১৬৪৯, তিরমিযী
১৮২৬, ১৮২৭, নাসায়ী ৪৩৪৬, ৪৩৪৭, ইবনু মাজাহ ২১০৭, আহমাদ ১৯০২৫, ১৯০৬০, ১৯০৯৪, ১৯১২৫,
১৯১৪৩, ১৯২৫০, দারেমী ২০৫৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭২৭
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «لأَنْ يَلَجَّ أَحَدُكُمْ فِي يَمِينِهِ فِي أَهْلِهِ آثَمُ
لَهُ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى مِنْ أَنْ يُعْطِي كَفَّارَتَهُ الَّتي فَرَضَ اللهُ
عَلَيْهِ» . متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আপন পরিবার পরিজনের ব্যাপারে কসম খায় ও (তার চেয়ে
উত্তম অন্য কিছুতে জেনেও) তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকট
এই কর্মটি বেশি গোনাহর কারণ হবে এই কর্ম থেকে যে, সে (কসম ভেঙ্গে) সেই কাফফারা
আদায় করবে, যা আল্লাহ তার উপর ফরয করেছেন।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৬২৫,
৬৬২৬, মুসলিম ১৬৫৫, ইবনু মাজাহ ২১৪৪, আহমাদ ৭৬৮৫, ২৭৪২৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১৭
নিরর্থক
কসম
১৭২৮
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : أُنْزِلَتْ هَذِهِ
الآيَة : {لاَ يُؤاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ} فِي قَوْلِ
الرَّجُلِ : لاَ وَاللهِ، وَبَلَى وَاللهِ . رواه البخاري
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘এই আয়াত (যার অর্থ) ‘‘আল্লাহ
তোমাদের অর্থহীন কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।’’ (সূরা মায়েদা ৮৯ আয়াত)
এমন লোকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যে (অজ্ঞাতসারে অভ্যাসগতভাবে কথায় কথায় কসম
ক’রে) বলে, আল্লাহর কসম! এটা নয়। আল্লাহর কসম! এটা বটে।’
(সহীহুল বুখারী ৪৬১৩,
৬৬৬৩, আবূ দাউদ ৩২৫৪, মুওয়াত্তা মালিক ১০৩২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১৮
ক্রয়-বিক্রয়ের
সময় কসম খাওয়া মকরুহ ; যদিও তা সত্য হয়
১৭২৯
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم يَقُولُ : الحَلِفُ مَنْفَقَةٌ لِلسِّلْعَةِ، مَمْحَقَةٌ
لِلْكَسْبِ . متفق عليه
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘কসম পণ্যদ্রব্য বিক্রয় বৃদ্ধি করে বটে;
(কিন্তু) তা লাভ (বরকত) বিনষ্ট করে।’’
(সহীহুল বুখারী ২০৮৭,
মুসলিম ১৬০৬, নাসায়ী ৪৪৬১, আবূ দাউদ ৩৩৩৫, আহমাদ ৭১৬৬, ৭২৫১, ৯০৮৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৩০
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ رضي الله عنه : أَنَّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، يَقُولُ : «إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الحَلِفِ فِي البَيْعِ،
فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ» . رواه مسلم
আবূ
ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘তোমরা কেনা-বেচার সময় অধিকাধিক কসম খাওয়া থেকে
দূরে থাক। কেননা, তা বিক্রয় বৃদ্ধি করে; (কিন্তু) বরকত মুছে দেয়।’’
(মুসলিম ১৬০৭, নাসায়ী
৪৪৬০, ইবনু মাজাহ ২২০৯, আহমাদ ২২০৩৮, ২২০৬৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩১৯
আল্লাহর
সত্তার দোহাই দিয়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু প্রার্থনা করা মকরুহ। অনুরূপ আল্লাহর
নামে কেউ কিছু চাইলে না দেওয়া বা সুপারিশ করলে তা অগ্রাহ্য করা মকরূহ।
১৭৩১
عَنْ جابرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَال : قالَ رسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم : «لا يُسْأَلُ بوَجْهِ اللهِ إِلاَّ الْجَنَّةُ» رواه أبو داود
জাবির
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, আল্লাহর সত্ত্বার দ্বারা জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছু চাওয়া ঠিক নয়।
[আবু দাউদ] (আমি [আলবানী]
বলছিঃ এর সনদটি দুর্বল। যেমনটি মুনযেরী প্রমুখ বলেছেন। দেখুন ‘‘মাজমূ‘ ফাতাওয়াল আলবানী’’
[১/২৩৪]। উল্লেখ্য আল্লাহর সত্বার দ্বারা কিছু চাইলে তাকে প্রদান করার জন্য রসূল [স]
নির্দেশ দিয়েছেন মর্মে সহীহ্ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। অথচ এ দুর্বল হাদীসে আল্লাহর সত্বার
দ্বারা শুধুমাত্র জান্নাত চাওয়াকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। দেখুন ‘‘সহীহ্ আবী দাঊদ’’
[৫১০৮] ও ‘‘সিলসিলাহ্ সহীহাহ্’’ [২৫৩]।)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
১৭৩২
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: مَنِ اسْتَعَاذَ بِاللهِ، فَأَعِيذُوهُ، وَمَنْ سَأَلَ
بِاللهِ، فأَعْطُوهُ، وَمَنْ دَعَاكُمْ، فَأَجِيبُوهُ، وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ
مَعْرُوفاً فَكَافِئُوهُ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِئُونَهُ بِهِ فَادْعُوا
لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَد كَافَأْتُمُوهُ . حديث صحيح رواه أبو داود
والنسائي بأسانيد الصحيحين
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেউ আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তাকে আশ্রয় দাও। আর যে
আল্লাহর নামে যাচ্ঞা করবে, তাকে দান কর। যে তোমাদেরকে নিমন্ত্রণ দেবে, তোমরা তার
নিমন্ত্রণ গ্রহণ কর। যে তোমাদের উপকার করবে, তোমরা তার (যথোচিত) প্রতিদান দাও। আর
যদি তোমরা তার (যথার্থ) প্রতিদানযোগ্য কিছু না পাও, তাহলে তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত
দুআ করতে থাক, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের এ ধারণা বদ্ধমূল হবে যে, তোমরা তার (সঠিক)
প্রতিদান আদায় করে দিয়েছ।
[সহীহ হাদিস, আবূ দাঊদ,
নাসায়ী বুখারী-মুসলিমের সানাদযোগে] (নাসায়ী ২৫৬৭, আবূ দাউদ ১৬৭২, আহমাদ ৫৭০৯, ৬০৭১
)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২০
রাজা
বা অন্য কোন নেতৃস্থানীয় মানুষকে ‘রাজাধিরাজ’ বলা হারাম। কেননা, মহান আল্লাহ
ব্যতীত ঐ গুণে কেউ গুণান্বিত হতে পারে না
১৭৩৩
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «إِنَّ أَخْنَعَ اسْمٍ عِنْدَ اللهِ ـ عَزَّ وَجَلَّ ـ رَجُلٌ تَسَمَّى
مَلِكَ الأَمْلاَكِ» . متفق عليه . قال سُفيانُ بن عُيَيْنَةَ : «مَلِكُ
الأَمْلاَكِ» مِثْلُ : شَاهِنْ شَاهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘আল্লাহ আয্যা অজাল্লার নিকট নিকৃষ্টতম নাম সেই ব্যক্তির, যে নিজের নাম রাখে
রাজাধিরাজ।’’
(সহীহুল বুখারী ৬২০৫,
৬২০৬, মুসলিম ২১৪৩, তিরমিযী ২৮৩৭, আবূ দাউদ ৪৯৬১, আহমাদ ৭২৮৫, ২৭৩৯৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২১
কোন
মুনাফিক, পাপী ও বিদআতী প্রভৃতিকে ‘সর্দার’ প্রভৃতি দ্বারা সম্বোধন করা নিষেধ
১৭৩৪
عَن بُريَدَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم: «لاَ تَقُولُوا لِلْمُنَافِقِ سَيِّدٌ، فَإِنَّهُ إِنْ يَكُ سَيِّداً
فَقَدْ أَسْخَطْتُمْ رَبَّكُمْ ـ عَزَّ وَجَلَّ ـ» . رواه أبو داود بإسنادٍ صحيح
বুরাইদা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুনাফিককে ‘সর্দার’ বলো না। কেননা, সে যদি তোমাদের ‘সর্দার’
হয়, তাহলে তোমরা (অজ্ঞাতসারে) তোমাদের মহামহিমান্বিত প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট ক’রে
ফেলবে।’’
[আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে]
(আবূ দাউদ ৪৯৭৭, আহমাদ ২২৪৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২২
জ্বরকে
গালি দেওয়া মকরুহ
১৭৩৫
عَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
دَخَلَ عَلَى أُمِّ السَّائِبِ، أَو أُمِّ المُسَيّبِ فَقَالَ: «مَا لَكِ يَا
أُمَّ السَّائِبِ ـ أَو يَا أُمَّ المُسَيَّبِ ـ تُزَفْزِفِينَ ؟» قَالَتْ :
الحُمَّى لاَ بَارَكَ اللهُ فِيهَا ! فَقَالَ: «لاَ تَسُبِّي الحُمَّى فَإِنَّهَا
تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ كَمَا يُذْهِبُ الكِيْرُ خَبَثَ الحَدِيدِ» . رواه
مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(একবার) উম্মে সায়েব কিম্বা উম্মে মুসাইয়িবের নিকট প্রবেশ ক’রে বললেন,‘‘হে উম্মে
সায়েব কিম্বা উম্মে মুসাইয়িব! তোমার কী হয়েছে যে, থরথর করে কাঁপছ?’’ সে বলল, ‘জ্বর
হয়েছে; আল্লাহ তাতে বরকত না দেন।’ (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, ‘‘জ্বরকে গালি দিও না।
জ্বর তো আদম সন্তানের পাপ মোচন করে; যেমন হাপর (ও ভাটি) লোহার ময়লা দূর ক’রে
ফেলে।’’
(মুসলিম ২৫৭৫, তিরমিযী
২২৫০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২৩
ঝড়কে
গালি দেওয়া নিষেধ ও ঝড়ের সময় দুআ
১৭৩৬
عَن أَبِي المُنذِرِ أُبَيِّ بنِ كَعْبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «لاَ تَسُبُّوا الرِّيحَ، فَإِذَا
رَأَيْتُمْ مَا تَكْرَهُونَ، فَقُولُوا : اَللهم إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ
هَذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ . وَنَعُوذُ بِكَ
مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ». رواه
الترمذي، وقال:[حديث حسن صحيح]
আবুল
মুনযির উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা ঝড়কে গালি দিও না। যখন তোমরা অপছন্দনীয় কিছু লক্ষ্য
করবে, তখন এই দুআ পড়বে। ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাযিহির রীহি
অখাইরি মা ফীহা অখাইরি মা উমিরাত বিহ। অনাঊযু বিকা মিন শার্রি হাযিহির রীহি অশার্রি
মা ফীহা অশার্রি মা উমিরাত বিহ।’’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এই ঝড়ের কল্যাণ, ওর মধ্যে নিহিত
কল্যাণ এবং যার আদিষ্ট হয়েছে তার কল্যাণ। এবং তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এই
বায়ুর অনিষ্ট হতে ওর মধ্যে নিহিত অনিষ্ট এবং যার আদিষ্ট হয়েছে তার অনিষ্ট হতে।
(তিরমিযী ২২৫২, আহমাদ
২০৬৩৫)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৭৩৭
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «الرِّيحُ مِنْ رَوحِ اللهِ، تَأْتِي
بِالرَّحْمَةِ، وَتَأتِي بِالعَذَابِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوهَا فَلاَ تَسُبُّوهَا،
وَسَلُوا اللهَ خَيْرَهَا، وَاسْتَعِيذُوا بِاللهِ مِنْ شَرِّهَا» . رواه أبو داود
بإسناد حسن
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘বায়ু আল্লাহর আশিস, যা রহমত আনে এবং আযাবও
আনে। কাজেই তোমরা যখন তা বইতে দেখবে, তখন তাকে গালি দিও না। বরং আল্লাহর নিকট তার
ইষ্ট প্রার্থনা কর এবং তার অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা কর।’’
(আবূ দাউদ ৫০৯৭, ইবনু
মাজাহ ৩৭২৭)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৭৩৮
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم إِذَا عَصَفَتِ الرِّيحُ قَالَ: «اَللهم إِنِّي أَسْألُكَ
خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ
شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ» . رواه مسلم
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ঝড়-তুফান চলা কালে আল্লাহর রসূল এই
দুআ করতেন,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা অখাইরা মা ফীহা অখাইরা মা উরসিলাত বিহ, অআঊযু
বিকা মিন শার্রিহা অশার্রি মা ফীহা অশার্রি মা উরসিলাত বিহ।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি এর কল্যাণ, এর মধ্যে যা আছে তার কল্যাণ এবং যার সাথে
এ প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। আর এর অনিষ্ট, এর মধ্যে যা
আছে তার অনিষ্ট এবং যার সাথে এ প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।
(সহীহুল বুখারী ৪৮২৯,
মুসলিম ৮৯৯, তিরমিযী ৩২৫৭, আবূ দাউদ ৫০৯৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৯১, আহমাদ ২৩৮৪৮, ২৫৫০৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২৪
মোরগকে
গালি দেওয়া নিষেধ
১৭৩৯
عَنْ زَيدِ بنِ خَالِدِ الجُهَنِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَسُبُّوا الدِّيكَ فَإِنَّهُ يُوِقِظُ
لِلصَّلاَةِ». رواه أبو داود بإسناد صحيح
যায়েদ
ইবনে খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা মোরগকে গালি দিও না। কারণ, সে নামাযের জন্য জাগিয়ে
থাকে।’’
(আবূ দাউদ ৫১০১, আহমাদ
২১১৭১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২৫
অমুক
নক্ষত্রের ফলে বৃষ্টি হল বলা নিষেধ
১৭৪০
عَنْ زَيدِ بنِ خَالِدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهَ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُول
اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَةَ الصُّبْحِ بِالحُدَيْبِيَّةِ فِي إِثْرِ سَمَاءٍ
كَانَتْ مِنَ اللَّيْلِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، فَقَالَ:
«هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ ؟» قَالُوا : اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ
. قَالَ: «قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي، وَكَافِرٌ، فَأَمَّا مَنْ
قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ وَرَحْمَتِهِ، فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي كَافِرٌ
بِالكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِنَوءِ كَذَا وَكَذَا، فَذَلِكَ
كَافِرٌ بِي مُؤْمِنٌ بِالكَوْكَبِ» . متفق عليه
যায়েদ
ইবনে খালেদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা হুদাইবিয়াতে রাতে বৃষ্টি হলে
আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলের দিকে
মুখ ক’রে বসে বললেন, ‘‘তোমরা জান কি, তোমাদের প্রতিপালক কি বলেন?’’ সকলে বলল,
‘আল্লাহ ও তদীয় রসূল ভাল জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে
কিছু বান্দা মুমিন হয়ে ও কিছু কাফের হয়ে প্রভাত করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি বলেছে
যে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায় আমাদের উপর বৃষ্টি হল’, সে তো আল্লাহর প্রতি
বিশ্বাসী (মু’মিন)ও নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী [কাফের]। আর যে ব্যক্তি বলেছে যে,
‘অমুক অমুক নক্ষত্রের ফলে আমাদের উপর বৃষ্টি হল’, সে তো আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী
[কাফের] এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী (মু’মিন)।’’
(সহীহুল বুখারী ৮৪৬,
১০৩৮, ৪১৪৭,৭৫০৩, মুসলিম ৭১, নাসায়ী ১৫২৫, আবূ দাউদ ৩৯০৬, আহমাদ ১৬৬১৩, মুওয়াত্তা মালিক
৪৫১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২৬
কোন
মুসলিমকে ‘কাফের’ বলে ডাকা হারাম
১৭৪১
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: «إِذَا قَالَ الرَّجُلُ لأَخِيهِ : يَا كَافِرُ، فَقَدْ بَاءَ
بِهَا أَحَدُهُمَا، فَإِنْ كَانَ كَمَا قَالَ وَإلاَّ رَجَعَتْ عَلَيْهِ». متفق
عليه
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কেউ তার মুসলিম ভাইকে ‘কাফের’ বলে, তখন তাদের উভয়ের
মধ্যে একজনের উপর তা বর্তায়, যা বলেছে তা যদি সঠিক হয়, তাহলে তো ভাল। নচেৎ (যে
বলেছে) তার উপর ঐ কথা ফিরে যায় (অর্থাৎ সে ‘কাফের’ হয়)।’’
(সহীহুল বুখারী ৬১০৪,
মুসলিম ৬০, তিরমিযী ২৬৩৭, আবূ দাউদ ৪৬৮৭, আহমাদ ৪৬৭৩, ৪৭৩১, ৫০১৫, ৫০৫৭, ৫২৩৭, ৫৭৯০,
৫৮৭৮, ৫৮৯৭, ৬২৪৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৪৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৪২
وَعَنْ أَبي ذَرٍّرَضِيَ اللهُ عَنهَ : أَنَّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، يَقُوْلُ : «مَنْ دَعَا رَجُلاً بِالْكُفْرِ، أَو قَالَ: عَدُوَّ
اللهِ، وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلاَّ حَارَ عَلَيْهِ» . متفق عليه
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যে কাউকে ‘ওরে কাফের’ বলে ডাকে অথবা ‘ওরে
আল্লাহর দুশমন’ বলে অথচ বাস্তবিক ক্ষেত্রে যদি সে তা না হয়, তাহলে তার (বক্তার)
উপর তা বর্তায়।’’
(সহীহুল বুখারী ৬০৫৫,
মুসলিম ৬১, আহমাদ ২০৯৫৪, ২১০৬১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২৭
অশ্লীল
ও অসভ্য ভাষা প্রয়োগ করা নিষেধ
১৭৪৩
عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم: «لَيْسَ المُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ، وَلاَ اللَّعَّانِ، وَلاَ
الفَاحِشِ، وَلاَ البَذِيِّ» رواه الترمذي، وقال :[ حديث حسن ]
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিন খোঁটা দানকারী, অভিশাপকারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীল-ভাষী
হয় না।’’
(তিরমিযী ১৯৭৭, আহমাদ
৩৮২৯, ৩৯৩৮)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৭৪৪
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَا كَانَ الفُحْشُ فِي شَيْءٍ إِلاَّ شَانَهُ،
وَمَا كَانَ الحَيَاءُ فِي شَيْءٍ إِلاَّ زَانَهُ» . رواه الترمذي، وقال :[ حديث
حسن ]
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে বস্তুর মধ্যে অশ্লীলতা থাকবে, তা তাকে দূষিত ক’রে ফেলবে,
আর যে জিনিসের মধ্যে লজ্জা-শরম থাকবে, তা তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত ক’রে তুলবে।’’
(তিরমিযী ১৯৭৪, ইবনু
মাজাহ ৪১৮৫)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২৮
কষ্ট
কল্পনার সাথে গালভরে কথা বলা, মিথ্যা বাকপটুতা প্রকাশ করা এবং সাধারণ মানুষকে
সম্বোধন-কালে উদ্ভট ও বিরল বাক্য সম্বলিত ভাষা প্রয়োগ অবাঞ্ছনীয়
১৭৪৫
عَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «هَلَكَ المُتَنَطِّعُونَ» قَالَهَا ثَلاَثاً . رواه مسلم
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘বাগাড়ম্বর-কারীরা ধ্বংস হয়ে গেল (বা ধ্বংস হোক)।’’ এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন।
(মুসলিম ২৬৭০, আবূ দাউদ
৩৬০৮, আহমাদ ৩৬৪৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৪৬
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا :
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ اللهَ يُبْغِضُ البَلِيغَ
مِنَ الرِّجَالِ الَّذي يَتَخَلَّلُ بِلِسَانِهِ كَمَا تَتَخَلَّلُ البَقَرَةُ».
رواه أبو داود والترمذي، وقال:[حديث حسن]
আব্দুল্লাহ
ইবনে ‘আমর ইবনে আ’স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ এমন বাকপটু মানুষকে ঘৃণা করেন, যে জিহ্বা দ্বারা ভক্ষণ
করে (এমন ঢঙে জিভ ঘুরিয়ে কথা বলে,) যেমন গাভী নিজ জিহ্বা দ্বারা সাপটে তৃণ ভক্ষণ
করে।’’
[আবূ দাঊদ, তিরিমিযী
হাসান] (তিরমিযী ২৮৫৩, আবূ দাউদ ৫০০৫, আহমাদ ৬৫০৭, ৬৭১৯)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
১৭৪৭
وَعَنْ جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ،
وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِساً يَومَ القِيَامَةِ، أَحَاسِنكُمْ أَخْلاَقَاً،
وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَيَّ، وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّي يَومَ القِيَامَةِ،
الثَّرْثَارُونَ وَالمُتَشَدِّقُونَ وَالمُتَفَيْهِقُونَ» . رواه الترمذي، وقال :[
حديث حسن ]
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং অবস্থানে আমার নিকটতম
ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের
মধ্যে আমার নিকট ঘৃণ্যতম এবং অবস্থানে আমার থেকে দূরতম হবে তারা; যারা অনর্থক
অত্যধিক আবোল-তাবোল বলে ও বাজে বকে এমন বাচাল ও বখাটে লোক; যারা আলস্যভরে বা কায়দা
করে টেনে-টেনে কথা বলে। আর অনুরূপ অহংকারীরাও।’’
(তিরমিযী ২০১৮)
হাদিসের মানঃহাসান হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩২৯
আমার
আত্মা খবীস হয়ে গেছে বলা নিষেধ
১৭৪৮
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «لاَ يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ : خَبُثَتْ نَفْسي، وَلكِنْ لِيَقُلْ :
لَقِسَتْ نَفْسي» متفق عليه
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমাদের মধ্যে অবশ্যই কেউ যেন ‘আমার আত্মা খবীস হয়ে গেছে’ না বলে। তবে বলতে পারে
যে, ‘আমার অন্তর কলুষিত হয়ে গেছে।’’
(সহীহুল বুখারী ৬১৭৯,
মুসলিম ২২৫০, আবূ দাউদ ৪৯৭৯, আহমাদ ২৩৭২৩, ২৩৮৫৪, ২৫২২০, ২৫৪০৮, ২৭৬৬০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩০
আরবীতে
আঙ্গুরের নাম ‘কর ম’ রাখা মকরূহ
১৭৪৯
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم: «لاَ تُسَمُّوا العِنَبَ الكَرْمَ، فَإنَّ الكَرْمَ المُسْلِمُ» متفق
عليه، وهذا لفظ مسلم
وفي رواية : فَإنَّمَا الكَرْمُ قَلْبُ المُؤمِنِ . وفي رواية للبخاري ومسلم :
يَقُولُونَ الكَرْمُ، إنَّمَا الكَرْمُ قَلْبُ المُؤْمِنِ
আবু
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা আঙ্গুরের নাম ‘করম’ (বদান্য) রেখো না। কেননা, ‘করম’
(বদান্য) তো মুসলিম হয়।’’
(সহীহুল বুখারী ৪৮২৬,
৬১৮১, ৬১৮৩, ৭৪৯১, মুসলিম ২২৪৬, আবূ দাউদ ৪৯৭৪, ৫২৭৪, আহমাদ ৭২০৪, ৭২১৬, ৭৪৬৬, ৭৬২৫,
৭৬৫৯, ৮৮৭২, ৮৮৯২, ৯৮০৭, ৯৯৯৪, ১০০৬১, ১০১০১, ১০২০০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৪৬, দারেমী
২৭০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৫০
وَعَنْ وَائِلِ بنِ حُجْرٍ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «لاَ تَقُولُوا : الكَرْمُ، وَلَكِنْ قُولُوا : العِنَبُ،
وَالحَبَلَةُ». رواه مسلم
ওয়ায়েল
ইবনে হুজ্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘আঙ্গুরকে ‘করম’ বলো না। বরং ‘ইনাব’ ও ‘হাবালাহ’ বল।’’
(মুসলিম ২২৪৮, দারেমী
২১১৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩১
শরয়ী
কারণ যেমন বিবাহ প্রভৃতি উদ্দেশ্য ছাড়া কোন পুরুষের সামনে কোন নারীর সৌন্দর্য
বর্ণনা করা নিষেধ
১৭৫১
عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم: «لاَ تُبَاشِرِ المَرْأَةُ المَرْأَةَ، فَتَصِفَهَا لِزَوْجِهَا
كَأَنَّهُ يَنْظُرُ إلَيْهَا» . متفق عليه
ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কোন মহিলা যেন অন্য কোন মহিলাকে (নগ্ন) কোলাকুলি না করে। (কারণ) সে পরে
তার স্বামীর কাছে তা এমনভাবে বর্ণনা করবে যে, যেন সে (তা শুনে) ঐ মহিলাকে
প্রত্যক্ষভাবে দর্শন করছে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫২৪০,
৫২৪১, তিরমিযী ২৭৯২, আবূ দাউদ ২১৫০, আহমাদ ৩৫৮৬, ৩৬৫৯, ৪১৬৪, ৪১৭৯, ৪১০০, ৪৩৮১, ৪৩৯৩,
৪৪১০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩২
‘হে
আল্লাহ! তুমি যদি চাও, তাহলে আমাকে ক্ষমা কর’ কারো এরূপ দুআ করা মাকরূহ; বরং
দৃঢ়চিত্তে প্রার্থনা করা উচিত
১৭৫২
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «لاَ يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ : اَللهم اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ:
اَللهم ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ، لِيَعْزِم المَسْأَلَةَ، فَإِنَّهُ لاَ مُكْرِهَ
لَهُ» . متفق عليه
وفي رواية لمسلم : وَلكِنْ لِيَعْزِمْ وَلْيُعَظمِ الرَّغْبَةَ فَإِنَّ اللهَ
تَعَالَى لاَ يَتَعَاظَمُهُ شَيْءٌ أَعْطَاهُ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন ‘হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও, তাহলে আমাকে ক্ষমা কর’, হে
আল্লাহ! তুমি যদি চাও, তাহলে আমার প্রতি দয়া কর’ অবশ্যই না বলে। বরং যেন দৃঢ়চিত্তে
প্রার্থনা করে। কারণ, তাঁকে কেউ বাধ্য করতে পারে না।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৩৩৯,
৭৪৭৭, মুসলিম ২৬৭৯, তিরমিযী ৩৪৯৭, আবূ দাউদ ১৪৮৩, আহমাদ ৭২৭২, ৯৬৫২, ৯৯৩৭, ১০১১৬, ১০৪৮৬,
২৭২৩৬, ২৭৪৫৬, মুওয়াত্তা মালিক ৪৯৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৫৩
وَعَنْ أنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُقَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم: «إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلْيَعْزِمِ المَسْأَلَةَ، وَلاَ يَقُولَنَّ
: اَللهم إِنْ شِئْتَ، فَأَعْطِنِي، فَإِنَّهُ لاَ مُسْتَكْرِهَ لَهُ» . متفق عليه
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন দুআ করবে, সে যেন দৃঢ়-সংকল্প হয়ে চায়। আর
যেন না বলে যে, ‘আল্লাহ গো! তুমি যদি চাও, তাহলে আমাকে দাও।’ কেননা, তাঁকে বাধ্য
করার মত কেউ নেই।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৩৩৮,
৭৪৬৪, মুসলিম ২৬৭৮, আহমাদ ১১৫৬৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩৩
‘আল্লাহ
এবং অমুক যা চায় (তাই হবে)’ বলা মকরূহ
১৭৫৪
عَنْ حُذَيْفَةَ بنِ اليَمَانِ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «لاَ تَقُولُوا : مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ فُلاَنٌ ؛ وَلَكِنْ
قُولُوا : مَا شَاءَ اللهُ، ثُمَّ شَاءَ فُلاَنٌ» . رواه أبو داود بإسناد صحيح
হুযাইফাহ
ইবনে ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা ‘আল্লাহ ও অমুক যা চায় (তাই হবে)’ বলো না, বরং বলো, ‘আল্লাহ যা চান, তারপর
অমুক যা চায় (তাই হবে) ।’’
(আবূ দাউদ ৪৯৮০, আহমাদ
২২৭৫৪, ২২৮২৮, ২২৮৭২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩৪
এশার
নামাযের পর কথাবার্তা বলা মকরূহ
১৭৫৫
عَنْ أَبِي بَرْزَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم كَانَ يَكرَهُ النَّومَ قَبْلَ العِشَاءِ وَالحَدِيثَ بَعْدَهَا . متفقٌ
عليه
আবূ
বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এশার নামাযের আগে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন।
(সহীহুল বুখারী ৫৪১,
৫৪৭, ৫৬৮, ৫৯৯, ৭৭১, মুসলিম ৬৪৭, নাসায়ী ৪৯৫, ৫৩০, ৯৪৪, আবূ দাউদ ৩৯৮, ইবনু মাজাহ ৬৭৪,
দারেমী ১৩০০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৫৬
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم صَلَّى العِشَاء فِي آخِرِ حَيَاتِهِ، فَلَمَّا سَلَّمَ قال :
«أَرَأَيْتَكُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ ؟ فَإِنَّ عَلَى رَأسِ مِئَةِ سَنَةٍ لاَ
يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ علَى ظَهْرِ الأَرْضِ اليَومَ أَحَدٌ». متفق عليه
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নিজ জীবনের অন্তিম দিনগুলির কোন একদিন (লোকদেরকে নিয়ে) এশার নামায পড়লেন এবং যখন
সালাম ফিরলেন, তখন বললেন, ‘‘আচ্ছা বলত। এটা তোমাদের কোন রজনী? (এ কথা) সুনিশ্চিত
যে, যে ব্যক্তি আজ ধরাপৃষ্ঠে জীবিত আছে, একশত বছরের মাথায় সে ব্যক্তি অবশিষ্ট
থাকবে না (অর্থাৎ মারা যাবে)।’’
(সহীহুল বুখারী ১১৬,
৫৬৪, ৬০১, মুসলিম ২৫৩৭, তিরমিযী ২২৫১, আবূ দাউদ ৪৩৪৮, আহমাদ ৫৫৮৫, ৫৯৯২, ৬১১৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৫৭
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عنه: أَنَّهُم انتَظَرُوا النَّبِيَّ صلى
الله عليه وسلم، فَجَاءَهُمْ قَرِيباً مِنْ شَطْرِ اللَّيْلِ فَصَلَّى بِهِمْ -
يَعْنِي : العِشَاءَ - ثمَّ خَطَبنا فَقَالَ: «أَلاَ إِنَّ النَّاسَ قَدْ صَلَّوا،
ثُمَّ رَقَدُوا، وَإِنَّكُمْ لَنْ تَزَالُوا فِي صَلاَةٍ مَا انْتَظَرْتُمُ
الصَّلاَةَ» . رواه البخاري
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদিন (মসজিদে) সাহাবায়ে কেরাম নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের প্রতীক্ষায় ছিলেন। অতঃপর তিনি প্রায়
অর্ধ রাত্রিতে তাঁদের নিকট আগমন করলেন এবং তাঁদেরকে নিয়ে নামায অর্থাৎ এশার নামায
পড়লেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি আমাদের মাঝে বক্তব্য রাখলেন। তাতে তিনি বললেন,
‘‘শোন! লোকে নামায সমাধা ক’রে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত নামাযের
অপেক্ষা করছিলে, ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত-ভাবে নামাযের মধ্যেই ছিলে।’’
(১৭৫৭. সহীহুল বুখারী
৫৭২, ৬০০, ৬৬১, ৮৪৮, ৫৮৬৯, মুসলিম ৬৪০, নাসায়ী ৫৩৯, ৫২০২, ৫২৮৫, ইবনু মাজাহ ৬৯২, আহমাদ
১২৪৬৯, ১২৫৫০, ১২৬৫৬, ১৩৪০৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩৫
যদি
কোন স্ত্রীকে তার স্বামী বিছানায় ডাকে, তাহলে কোন শরয়ী ওজর ছাড়া তার তা উপেক্ষা
করা হারাম
১৭৫৮
عَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم: إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ، فَبَاتَ
غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ». متفق عَلَيْهِ
. وفي رواية : حَتَّى تَرْجِعَ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, ‘‘যখন কেউ তার স্ত্রীকে স্বীয় বিছানার দিকে (দেহ মিলনের জন্য) ডাকে, আর সে
তা প্রত্যাখ্যান করে এবং তার প্রতি (তার স্বামী) রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তখন
ফজর পর্যন্ত ফিরিশতারা তাকে অভিশাপ করতে থাকেন।’’
(সহীহুল বুখারী ৩২৩৭,
৫১৯৩, ৫১৯৪, মুসলিম ১৪৩৬, আবূ দাউদ ২১৪১, আহমাদ ৭৪২২, আহমাদ ৮৩৭৩, ৮৭৮৬, ৯৩৭৯, ৯৭০২,
৯৮৬৫, ১০৩৫৩, দারেমী ২২২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩৬
স্বামীর
উপস্থিতিতে কোন স্ত্রী তার অনুমতি ছাড়া কোন নফল রোযা রাখতে পারে না
১৭৫৯
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «لاَ يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُومَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلاَّ
بِإِذْنِهِ، وَلاَ تَأذَنَ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কোন নারীর জন্য বৈধ নয় যে, তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া
(নফল) রোযা রাখবে। আর না তার বিনা অনুমতিতে (কোন আত্মীয় পুরুষ বা মহিলাকে) তার ঘরে
ঢুকতে অনুমতি দেবে।’’
(সহীহুল বুখারী ২০৬৬,
৫১৯২, ৫১৯৫, মুসলিম ১০২৬, তিরমিযী ৭৮২, আবূ দাউদ ১৬৮৭, ২৪৫৮, ইবনু মাজাহ ১৭৬১, আহমাদ
৯৪৪১, ৯৮১২, ১০১১৭, ২৭৪০৫, দারেমী ১৭২০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩৭
রুকু
সাজদাহ থেকে ইমামের আগে মাথা তোলা হারাম
১৭৬০
عَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «أَمَا يَخْشَى أَحَدُكُمْ إِذَا رَفَعَ رَأسَهُ قَبْلَ الإمَامِ أَنْ
يَجْعَلَ اللهُ رَأسَهُ رَأسَ حِمَارٍ ! أَوْ يَجْعَلَ اللهُ صُورَتَهُ صُورَةَ
حِمَارٍ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন ইমামের আগে মাথা তোলে, তখন তার মনে কি ভয় হয় না যে,
মহান আল্লাহ তার মাথা, গাধার মাথায় পরিণত ক’রে দেবেন অথবা তার আকৃতি গাধার আকৃতি
ক’রে দেবেন।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৯১,
মুসলিম ৪২৭, তিরমিযী ৫৮২, নাসায়ী ৮২৮, আবূ দাউদ ৬২৩, ইবনু মাজাহ ৯৬১, আহমাদ ৭৪৮১, ৭৬১২,
৯২১১, ৯৫৭৪, ৯৭৫৪, ১০১৬৮, ২৭২৭০, দারেমী ১৩১৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩৮
নামাযের
মধ্যে কোমরে হাত রাখা মকরূহ
১৭৬১
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم نَهَى عَنِ الخَصْرِ فِي الصَّلاَةِ . متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘নামাযরত অবস্থায় কোমরে হাত রাখতে
আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ১২১৯,
১২২০, মুসলিম ৫৪৫, তিরমিযী ৩৮৩, নাসায়ী ৮৯০, আবূ দাউদ ৯৪৭, আহমাদ ৭১৩৫, ৭৮৩৭, ৭৮৭১,
৮১৭৪, ৮৯৩০, দারেমী ১৪২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৩৯
খাবারের
চাহিদা থাকা কালে খাবার উপস্থিত রেখে এবং পেশাব-পায়খানার খুব চাপ থাকলে উভয়
অবস্থায় নামায পড়া মকরূহ
১৭৬২
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «لاَ صَلاَةَ بِحَضْرَةِ طَعَامٍ، وَلاَ وَهُوَ
يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ» . رواه مسلم
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘খাবার হাযির থাকা কালীন অবস্থায় নামায
নেই, আর পেশাব পায়খানার চাপ সামাল দেওয়া অবস্থায়ও নামায নেই।’’
(মুসলিম ৫৬০, আবূ দাউদ
৮৯, আহমাদ ২৩৬৪৬, ২৩৭৪৯, ২৩৯২৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪০
নামাযে
আসমান বা উপরের দিকে তাকানো নিষেধ
১৭৬৩
عَنْ أَنَسِ بنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «مَا بَالُ أَقْوامٍ يَرْفَعُونَ أبْصَارَهُمْ إِلَى
السَّمَاءِ فِي صَلاَتِهِمْ !» فَاشْتَدَّ قَولُهُ فِي ذَلِكَ حَتَّى قَالَ:
«لَيَنْتَهُنَّ عَنْ ذَلِكَ، أَوْ لَتُخطَفَنَّ أَبْصَارُهُمْ!». رواه البخاري
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লোকদের কী হয়েছে যে, তারা নামাযের মধ্যে আকাশের দিকে দৃষ্টি
তুলছে?’’ এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেন, ‘‘তারা যেন
অবশ্যই এ কাজ হতে বিরত থাকে; নচেৎ অবশ্যই তাদের দৃষ্টি-শক্তি কেড়ে নেওয়া হবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৭৫০,
নাসায়ী ১১৯৩, আবূ দাউদ ৯১৩, ইবনু মাজাহ ১০৪৪, আহমাদ ১১৬৫৪, ১১৬৯৪, ১১৭৩৬, ১২০১৮, ১৩২৯৯,
দারেমী ১৩০২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪১
বিনা
ওযরে নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো মকরূহ
১৭৬৪
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : سَأَلتُ رَسُولَ اللهِ
صلى الله عليه وسلم عَنِ الاِلتفَاتِ فِي الصَّلاَةِ، فَقَالَ: «هُوَ اخْتِلاَسٌ
يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلاَةِ العَبْدِ» . رواه البخاري
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নামাযের মধ্যে এদিক-ওদিক তাকানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম।
তিনি বললেন, ‘‘এটা এক ধরণের অপহরণ, যার মাধ্যমে শয়তান নামাযের অংশ বিশেষ অপহরণ
করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৭৫১,
৩১৯১, তিরমিযী ৫৯০, নাসায়ী ১১৯৬, ১১৯৯, আবূ দাউদ ৯১০, আহমাদ ২৩৮৯১, ২৪২২৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৬৫
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَ قَالَ: قَالَ لي رسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: إِيَّاكَ وَالالْتِفَاتَ في الصَّلاَةِ، فَإِنَّ الالْتِفَاتَ في
الصَّلاةِ هَلَكَةٌ، فإِنْ كَان لابُدَّ، فَفي التَّطَوُّعِ لا في الْفَرِيضَةِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সালাতরত অবস্থায় এদিক-সেদিক তাকিও না। কেননা নামাযের
ভিতর এদিক-সেদিক দৃষ্টিপাত একটি বিপর্যয়। যদি ডানে-বামে তাকানো ছাড়া কোন উপায় না
থাকে তবে তা নফল সালাতে কর, কিন্তু ফরয সালাতে তা করা যাবে না।
(আমি [আলবানী] বলছিঃ
আসলে এরূপই আর সম্ভবত তিরমিযীর কোন কোন ছাপাতে এরূপই এসেছে। কিন্তু বূলাক ছাপায় [১/১১৬]
হাদীসুন হাসানুন বলা হয়েছে আর তার টীকাতে [বাদাল ছাপায়] হাসান গারীব উল্লেখ করা হয়েছে।
আপনি বলুনঃ অর্থাৎ দুর্বল আর হাদীসটির সনদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটিই বেশী উপযোগী।
কারণ এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে এবং সনদে বিচ্ছিন্নিতাও রয়েছে। আমি ‘‘মিশকাত’’ গ্রন্থের
টীকা [১৭২, ৪৬৫, ৯৯৭] এবং ‘‘আত্তাররগীব’’ গ্রন্থে [১/১৯১] তা বর্ণনা করেছি।)
হাদিসের মানঃদুর্বল হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪২
কবরের
দিকে মুখ করে নামায পড়া নিষেধ
১৭৬৬
عَن أَبي مَرْثَدٍ كَنَّازِ بْنِ الْحُصَيْنِ رضي الله عنه قَالَ:
سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «لاَ تُصَلُّوا إِلَى
القُبُورِ، وَلاَ تَجْلِسُوا عَلَيْهَا» . رواه مسلم
আবূ
মারসাদ কান্নায ইবনে হুস্বাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘তোমরা কবরের দিকে মুখ ক’রে নামায পড়ো না
এবং তার উপর বসো না।’’
(মুসলিম ৯৭২, তিরমিযী
১০৫০, নাসায়ী ৭৬০, আবূ দাউদ ৩২২৯, আহমাদ ১৬৭৬৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪৩
নামাযীর
সামনে দিয়ে পার হওয়া হারাম
১৭৬৭
عَنْ أَبي الجُهَيْمِ عَبدِ اللهِ بنِ الحَارِثِ بنِ الصِّمَّةِ
الأَنْصَارِيِّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم:
«لَوْ يَعْلَمُ المَارُّ بَيْنَ يَدَيِ المُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ
يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْراً لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ» قَالَ الراوي
: لاَ أدْرِي قَالَ: أَرْبَعينَ يَوماً، أَوْ أَرْبَعِينَ شَهْراً، أَوْ
أَرْبَعِينَ سَنَةً .متفق عَلَيْهِ
আবুল
জুহাইম আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস ইবনে স্বিম্মাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানত যে, তা তার জন্য কত
ভয়াবহ (অপরাধ), তাহলে সে নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ
(দিন/মাস/বছর) দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করত।’’ রাবী বলেন, আমি জানি না যে, তিনি
চল্লিশ দিন, নাকি চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ বছর বললেন।
(সহীহুল বুখারী ৫১০,
মুসলিম ৫৯৭, তিরমিযী ৩৩৬, নাসায়ী ৭৫৬, আবূ দাউদ ৭০১, ইবনু মাজাহ ৯৪৫, আহমাদ ১৭০৮৯,
মুওয়াত্তা মালিক ৩৬৫, দারেমী ১৪১৬, ১৪১৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪৪
নামাযের
ইকামত শুরু হবার পর নফল বা সুন্নত নামায পড়া মকরূহ
১৭৬৮
عَنْ أَبي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلاَّ المَكْتُوبَةَ».
رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘যখন নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হবে, তখন ফরয নামায ছাড়া অন্য কোন নামায নেই।’’
(মুসলিম ৭১০, তিরমিযী
৪২১, নাসায়ী ৮৬৫, ৮৬৬, আবূ দাউদ ১২৬৬, ইবনু মাজাহ ১১৫১, আহমাদ ৮৪০৯, ৯৫৬৩, ১০৩২০, ১০৪৯৩,
দারেমী ১৪৪৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪৫
রোযার
জন্য জুমআর দিন এবং নামাযের জন্য জুমআর রাত নির্দিষ্ট করা মকরূহ
১৭৬৯
عَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «لاَ تَخُصُّوا لَيْلَةَ الجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي،
وَلاَ تَخُصُّوا يَومَ الجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الأَيَّامِ، إِلاَّ أَنْ
يَكُونَ فِي صَومٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ» . رواه مسلم
আবু
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘রাত্রিসমূহের মধ্যে জুমআর রাতকে কিয়াম (নফল নামায) পড়ার জন্য নির্দিষ্ট করো না
এবং দিনসমূহের মধ্যে জুমআর দিনকে (নফল) রোযা রাখার জন্য নির্ধারিত করো না। তবে যদি
তা তোমাদের কারো রোযা রাখার তারিখ পড়ে (তাহলে সে কথা ভিন্ন) ।’’
(সহীহুল বুখারী ১৯৮৫,
মুসলিম ১১৪৪, তিরমিযী ৭৪৩, আবূ দাউদ ২৪২০, ইবনু মাজাহ ১৭২৩, আহমাদ ৭৩৪১, ৭৭৮০, ৭৯৬৫,
৮৫৫৪, ৮৮৫৩, ৮৮৮২, ৯০৩১, ৯১৭১, ১০০৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৭০
وَعَنْه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ :
«لاَ يَصُومَنَّ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الجُمُعَةِ إِلاَّ يَوماً قَبْلَهُ أَوْ
بَعْدَهُ» . متفق عَلَيْهِ
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘অবশ্যই কেউ যেন স্রেফ জুমআর দিনে রোযা না
রাখে; তবে যদি তার একদিন আগে কিম্বা পরে রাখে (তাহলে তাতে ক্ষতি নেই।)’’
(সহীহুল বুখারী ১৯৮৫,
মুসলিম ১১৪৪, তিরমিযী ৭৪৩, আবূ দাউদ ২৪২০, ইবনু মাজাহ ১৭২৩, আহমাদ ৭৩৪১, ৭৭৮০, ৭৯৬৫,
৮৫৫৪, ৮৮৫৩, ৮৮৮২, ৯০৩১, ৯১৭১, ১০০৫২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৭১
وَعَنْ مُحَمَّدِ بنِ عَبَّادٍ، قَالَ: سَأَلْتُ جَابِراً رضي الله عنه :
أَنَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ صَومِ الجُمُعَةِ ؟ قَالَ: نَعَمْ .
متفق عَلَيْهِ
মুহাম্মাদ
ইবনে আববাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবের (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা
করলাম, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুমআর দিন রোযা রাখতে নিষেধ
করেছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’
(সহীহুল বুখারী ১৯৮৪,
মুসলিম ১১৪৩, ইবনু মাজাহ ১৭২৪, আহমাদ ১৩৭৫০, ১৩৯৪৩, দারেমী ১৭৪৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৭২
وَعَنْ أُمِّ المُؤْمِنِينَ جُوَيرِيَّةَ بِنْتِ الحَارِثِ رَضِيَ اللهُ
عَنهَا : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا يَوْمَ الجُمُعَةِ
وهِيَ صَائِمَةٌ، فَقَالَ: «أَصُمْتِ أمْسِ ؟ قَالَتْ : لاَ، قَالَ: تُرِيدِينَ
أَنْ تَصُومِي غَداً ؟ قَالَتْ : لاَ . قَالَ: «فَأَفْطِرِي» . رواه البخاري
মু’মিন
জননী জুয়াইরিয়্যাহ বিন্তে হারেষ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর
দিনে তাঁর নিকট প্রবেশ করলেন, তখন তিনি (জুয়াইরিয়্যাহ) রোযা অবস্থায় ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘তুমি কি গতকাল
রোযা রেখেছিলে?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
‘‘আগামীকাল রোযা রাখার ইচ্ছা আছে তো?’’ তিনি জবাব দিলেন, ‘না।’ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে রোযা ভেঙ্গে ফেল।’’
(সহীহুল বুখারী ১৯৮৬,
আবূ দাউদ ২৪২২, আহমাদ ৬৭৩২, ২৬২১৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪৬
সওমে
বিসাল, অর্থাৎ একাদিক্রমে দুই বা ততোধিক দিন ধরে বিনা পানাহারে রোযা রাখা হারাম
১৭৭৩
عَنْ أَبي هُرَيرَةَ وَعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الوِصَالِ .متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওমে
বিসাল করতে নিষেধ করেছেন।
(সহীহুল বুখারী ১৯৬৪,
১৯৬৫, মুসলিম ১১০৫, আহমাদ ২৪০৬৫, ২৪১০৩, ২৪৪২৪, ২৫৫২৩, ২৫৬৭৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৭৪
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: نَهَى رَسُول اللهِ
صلى الله عليه وسلم عَنِ الوِصَالِ . قَالُوا : إِنَّكَ تُوَاصِلُ ؟ قَالَ:
«إِنِّي لَسْتُ مِثْلَكُمْ، إِنِّي أُطْعَمُ وَأُسْقَى» . متفق عَلَيْهِ . وهذا
لفظ البخاري
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সওমে বিসাল রাখতে নিষেধ করলেন। লোকেরা নিবেদন করল, ‘আপনি তো সওমে বিসাল রাখেন?
তিনি বললেন, ‘‘(এ বিষয়ে) আমি তোমাদের মত নই। আমাকে (আল্লাহর তরফ থেকে) পানাহার
করানো হয়।’’
(সহীহুল বুখারী ১৯২২,
১৯৬২, মুসলিম ১১০২, আবূ দাউদ ২৩৬০, আহমাদ ৪৭০৭, ৪৭৩৮, ৫৭৬১, ৫৮৮১, ৬০৯০, ৬২৬৩, ৬৩৭৭,
মুওয়াত্তা মালিক ৬৭৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪৭
কবরের
উপর বসা হারাম
১৭৭৫
عَنْ أَبي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم: «لأَنْ يَجْلِسَ أَحَدُكُمْ عَلَى جَمْرَةٍ، فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ
فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَجْلِسَ عَلَى قَبْرٍ». رواه
مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কারো অঙ্গারের উপর বসা---যা তার কাপড় জ্বালিয়ে তার চামড়া
পর্যন্ত পৌঁছে যায়---কবরের উপর বসা অপেক্ষা তার জন্য উত্তম।’’
(মুসলিম ৯৭১, নাসায়ী
২০৪০, আবূ দাউদ ৩২২৮, ইবনু মাজাহ ১৫৬৬, আহমাদ ৮৮১১, ৯৪৩৯, ১০৪৫১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪৮
কবর
পাকা করা ও তার উপর ইমারত নির্মাণ করা নিষেধ
১৭৭৬
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى رَسُول اللهِ صلى الله
عليه وسلم أَن يُجَصَّصَ القَبْرُ، وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ، وَأَنْ يُبْنَى
عَلَيْهِ . رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে, তার উপর বসতে এবং তার উপর ইমারত নির্মাণ করতে বারণ
করেছেন।’
(মুসলিম ৯৭০, তিরমিযী
১০৫২, নাসায়ী ২০২৭-২০২৯, আবূ দাউদ ৩২২৫, ইবনু মাজাহ ১৫৬২, ১৫৬৩, আহমাদ ১৩৭৩৫, ১৪১৫৫,
১৪২৩৭, ১৪৮৬২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৪৯
মনিবের
ঘর ছেড়ে ক্রীতদাসের পলায়ন নিষিদ্ধ
১৭৭৭
عَنْ جَرِيرٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم: «أَيُّمَا عَبْدٍ أَبَقَ، فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ». رواه مسلم
জারীর
ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে গোলামই মনিবের ঘর ছেড়ে পলায়ন করে, তার ব্যাপারে সব রকম
ইসলামী দায়-দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।’’
(মুসলিম ৬৮-৭০, ৪০৪৯-৪০৫৬,
আবূ দাউদ ৪৩৬০, আহমাদ ১৮৬৭৪, ১৮৭২৭, ১৮৭৪০, ১৮৭৫৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৭৮
وَعَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : إِذَا أَبَقَ العَبْدُ،
لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ». رواه مسلم، وفي روايةٍ: فَقَدْ كَفَرَ
উক্ত
রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যখন কোন গোলাম পলায়ন করবে, তখন তার নামায কবুল হবে না।’’
(মুসলিম ৬৮-৭০, ৪০৪৯-৪০৫৬,
আবূ দাউদ ৪৩৬০, আহমাদ ১৮৬৭৪, ১৮৭২৭, ১৮৭৪০, ১৮৭৫৪) অন্য বর্ণনা মতে, ‘‘সে কুফরী করবে।’’
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫০
ইসলামী
দণ্ড বিধান প্রয়োগ না করার জন্য সুপারিশ করা হারাম
১৭৭৯
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ قُرَيْشاً أَهَمَّهُمْ
شَأْنُ المَرْأَةِ المَخْزُومِيَّةِ الَّتِي سَرَقَتْ، فَقَالُوا : مَنْ يُكَلِّمُ
فِيهَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ فَقَالُوا: وَمَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ
إِلاَّ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، حِبُّ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم .
فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَتَشْفَعُ
فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللهِ تَعَالَى؟!» ثُمَّ قَامَ فاخْتَطَبَ، ثُمَّ قَالَ:
«إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيِهمُ
الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ، أَقَامُوا عَلَيْهِ
الحَدَّ، وَأَيْمُ اللهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ
لَقَطَعْتُ يَدَهَا». متفق عَلَيْهِ.
وفي روايةٍ : فَتَلوَّنَ وَجْهُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ:
«أَتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللهِ!؟» فَقَالَ أُسَامَةُ: اسْتَغْفِرْ لِي
يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم. قَالَ: ثُمَّ أَمَرَ
بِتِلْكَ المَرْأَةِ فَقُطِعَتْ يَدُهَا
আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
চুরির অপরাধে অপরাধিনী মাখযূম গোত্রের একজন
মহিলার ব্যাপার কুরাইশ বংশের লোকদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। সাহাবীগণ
বললেন, ‘ওর ব্যাপারে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কে কথা
বলতে পারবে?’ তাঁরা বললেন, ‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় পাত্র
উসামা ইবনে যায়েদ ছাড়া কেউ এ সাহস পাবে না।’ সুতরাং উসামা রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বলে উঠলেন, ‘‘তুমি আল্লাহর এক
দণ্ডবিধান (প্রয়োগ না করার) ব্যাপারে সুপারিশ করছ?’’ পরক্ষণেই তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবাহ
দিলেন এবং বললেন, ‘‘(হে লোক সকল!) নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের লোকেরা এ
জন্য ধ্বংস হয়েছিল যে, যখন তাদের কোন সম্মানিত ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে
ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তখন তার উপর শরীয়তের শাস্তি
প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত, তাহলে অবশ্যই
আমি তার হাতও কেটে দিতাম।’’
(সহীহুল বুখারী ২৬৪৮,
৩৪৭৫, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০, মুসলিম ১৬৮৮, তিরমিযী ১৪৩০, নাসায়ী ৪৮৯৫, ৪৮৯৭-৪৯০৩,
আবূ দাউদ ৪৩৭৩, ইবনু মাজাহ ২৫৪৭, আহমাদ ২২৯৬৮, ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫১
লোকদের
রাস্তা-ঘাটে এবং ছায়াতলে পেশাব-পায়খানা করা নিষেধ
১৭৮০
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «اِتَّقُوا اللاَّعِنَيْنِ» قَالُوا : وَمَا اللاَّعِنَانِ ؟ قَالَ:
«الَّذِي يَتَخَلَّى فِي طَرِيقِ النَّاسِ أَوْ فِي ظِلِّهِمْ» . رواه مسلم
আবু
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘দু’টি অভিসম্পাত আনয়নকারী কর্ম থেকে দূরে থাক।’’ সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা
করলেন, ‘‘দু’টি অভিসম্পাত আনয়নকারী কর্ম কী কী?’’ তিনি (উত্তরে) বললেন, ‘‘যে
ব্যক্তি মানুষের রাস্তায় এবং তাদের ছায়ার স্থলে পায়খানা করে (তার এ দু’টি কাজ
অভিসম্পাতের কারণ) ।’’
(মুসলিম ২৬৯, আবূ দাউদ
২৫, আহমাদ ৮৬৩৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫২
অপ্রবহমান
বন্ধ পানিতে পেশাব ইত্যাদি করা নিষেধ
১৭৮১
عَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
نَهَى أَنْ يُبَالَ فِي المَاءِ الرَّاكِدِ . رواه مسلم
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ্ধ
পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন।
(মুসলিম ২৮১, নাসায়ী
৩৫ ইবনু মাজাহ ৩৪৩, আহমাদ ১৪২৫৮, ১৪৩৬৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫৩
উপহার
ও দান দেওয়ার ক্ষেত্রে পিতার এক সন্তানকে অন্য সন্তানের উপর প্রাধান্য দেওয়া মকরূহ
১৭৮২
عَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ أبَاهُ أتَى
بِهِ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا
غُلاَماً كَانَ لِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَكُلَّ وَلَدِكَ
نَحَلْتَهُ مِثْلَ هَذَا ؟» فَقَالَ: لاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم: فَأَرْجِعهُ
وَفي رِوَايةٍ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَفَعَلْتَ هذَا
بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: اِتَّقُوا الله وَاعْدِلُوا فِي
أَوْلاَدِكُمْ فَرَجَعَ أَبِي، فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ .
وفي روايةٍ : فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَا بَشيرُ أَلَكَ
وَلَدٌ سِوَى هَذَا ؟» فَقَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «أكُلَّهُمْ وَهَبْتَ لَهُ مِثْلَ
هذَا ؟» قَالَ: لاَ، قَالَ: فَلاَ تُشْهِدْنِي إِذاً فَإِنِّي لاَ أَشْهَدُ عَلَى
جَوْرٍ
وفي روايةٍ : «لاَ تُشْهِدْنِي عَلَى جَوْرٍ» .
وفي رواية : «أَشْهِدْ عَلَى هذَا غَيْرِي !» ثُمَّ قَالَ: «أَيَسُرُّكَ أَنْ
يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي البِرِّ سَواءً؟» قَالَ: بَلَى، قَالَ: «فَلا إِذاً» .
متفق عليه
নু’মান
ইবনে বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হয়ে বললেন, ‘আমি আমার এই ছেলেকে
একটি গোলাম দান করেছি। (কিন্তু এর মা আপনাকে সাক্ষী রাখতে বলে।)’ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমার সব ছেলেকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ?’’
তিনি বললেন, ‘না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তা
ফেরৎ নাও।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমার সব ছেলের সঙ্গেই এরূপ ব্যবহার দেখিয়েছ?’’ তিনি
বললেন, ‘না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহকে
ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। সুতরাং আমার পিতা ফিরে এলেন
এবং ঐ সাদকাহ (দান) ফিরিয়ে নিলেন।’’
আর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে
বাশীর! তোমার কি এ ছাড়া অন্য সন্তান আছে?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ (রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তাদের সকলকে কি এর মত দান দিয়েছ?’’ তিনি
বললেন, ‘জী না।’ (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তাহলে এ ব্যাপারে
আমাকে সাক্ষী মেনো না। কারণ আমি অন্যায় কাজে সাক্ষ্য দেব না।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমাকে অন্যায় কাজে সাক্ষী মেনো না।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সাক্ষী মানো।’’
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এ কথায় খুশী হবে যে, তারা তোমার সেবায় সমান হোক?’’
বাশীর বললেন, ‘জী অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এরূপ করো না।’’
(সহীহুল বুখারী ২৫৮৬,
২৫৮৭, ২৬৫০, মুসলিম ১৬২৩, তিরমিযী ১৩৬৭, নাসায়ী ৩৬৭২-৩৬৮৫, আবূ দাউদ ৩৫৪২, ইবনু মাজাহ
২৩৭৫, ২৩৭৬, আহমাদ ১৭৮৯০, ১৭৯০২, ১৭৯১১, ১৭৯৪৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৭৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫৪
মৃতের
জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা হারাম। তবে স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যুতে চারমাস
দশদিন শোক পালন করবে
১৭৮৩
عَنْ زَينَبَ بِنتِ أَبِي سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَتْ :
دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ حَبِيبَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، زَوجِ النَّبِيِّ صلى الله
عليه وسلم، حِينَ تُوُفِّيَ أَبُوهَا أبُو سُفْيَانَ بنُ حَربٍ رضي الله عنه
فَدَعَتْ بِطِيبٍ فِيهِ صُفْرَةُ خَلُوقٍ أَوْ غَيرِهِ، فَدَهَنَتْ مِنهُ
جَارِيَةً، ثُمَّ مَسَّتْ بِعَارِضَيْهَا، ثُمَّ قَالَتْ : واللهِ مَا لِي
بِالطِّيبِ مِنْ حَاجَةٍ، غَيْرَ أنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
يقُولُ عَلَى المِنْبَرِ : «لاَ يَحِلُّ ِلامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ
الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ، إِلاَّ علَى زَوْجٍ
أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْراً». قالَتْ زَيْنَبُ : ثُمَّ دَخَلْتُ عَلَى زَيْنَبَ
بنْتِ جَحْشٍ رَضِيَ اللهُ عَنهَا حِينَ تُوُفِّيَ أَخُوهَا، فَدَعَتْ بِطِيبٍ
فَمَسَّتْ مِنْهُ ثُمَّ قَالَتْ : أَمَا وَاللهِ مَا لِي بِالطِّيبِ مِنْ حَاجَةٍ،
غَيرَ أنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يقُولُ عَلَى المِنْبَرِ :
«لاَ يَحِلُّ لامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى
مَيِّتٍ فَوقَ ثَلاَثٍ، إِلاَّ علَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْراً». متفق
عليه
যয়নাব
বিন্তে আবূ সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন শাম (সিরিয়া) থেকে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহার পিতা
আবূ সুফয়ান (রাঃ)-এর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছল, তখন আমি তাঁর বাসায় প্রবেশ করলাম।
(মৃত্যুর তিনদিন পর) তিনি হলুদ বর্ণ দ্রব্য বা অন্য দ্রব্য মিশ্রিত সুগন্ধি
আনালেন। তা থেকে কিছু নিয়ে স্বীয় দাসীকে এবং নিজের দুই গালে মাখলেন। অতঃপর তিনি
বললেন, আল্লাহর কসম! আমার সুগন্ধির কোন প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু আমি আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরের উপর (খুতবা দান কালে) এ কথা বলতে
শুনেছি যে, ‘‘যে স্ত্রীলোক আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে স্বামী
ছাড়া অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নয়। অবশ্য তার
স্বামীর জন্য সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।’’ যয়নাব বলেন, তারপর যখন যয়নাব
বিন্তে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহার ভাই মারা গেলেন, তখন আমি তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম।
তিনি সুগন্ধি আনালেন এবং তা থেকে কিছু নিয়ে মাখার পর বললেন; আল্লাহর কসম! আমার
সুগন্ধির কোন প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরের উপর (খুতবা দান কালে) এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘‘যে
স্ত্রীলোক আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে স্বামী ছাড়া অন্য কোন মৃত
ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নয়। অবশ্য তার স্বামীর জন্য সে
চার মাস দশদিন শোক পালন করবে।’’
(সহীহুল বুখারী ১২৮০,
১২৮১, ১২৮২, ৫৩৩৫, ৫৩৪৫, মুসলিম ১৪৮৬, তিরমিযী ১১৯৫, নাসায়ী ৩৫০২, ৩৫২৭, ৩৫৩৩, ৩৫৪১,
আবূ দাউদ ২২৯৯, ইবনু মাজাহ ২০৮৪, আহমাদ ২৬২২৫, ২৬২২৬, মুওয়াত্তা মালিক ১২৬৯, দারেমী
২২৮৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫৫
ক্রয়-বিক্রয়
সম্পর্কিত কিছু বিধি-নিষেধ
১৭৮৪
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: نَهَى رَسُول اللهِ صلى الله
عليه وسلم أَنْ يَبيعَ حَاضِرٌ لِبَادٍ وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لأَبِيهِ وَأُمِّهِ.
متفق عليه
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, যেন কোন শহুরে লোক কোন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় না
করে; যদিও সে তার সহোদর ভাই হয়।’
(সহীহুল বুখারী ২১৬১,
মুসলিম ১৫২৩, নাসায়ী ৪৪৯২-৪৪৯৪, আবূ দাউদ ৩৪৪০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৮৫
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَتَلَقَّوُا السِّلَعَ حَتَّى يُهْبَطَ بِهَا إلَى
الأَسْوَاقِ». متفق عليه
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বাজারে নামার পূর্বে কোন পণ্য (বাজারের বাইরে) আগে বেড়ে ক্রয়
করবে না।’’
(সহীহুল বুখারী ২১৪৯,
২১৫০, ২১৬৪, মুসলিম ১৫১৮, তিরমিযী ১২২০, ইবনু মাজাহ ২১৮০, ২২৪১, আহমাদ ৪০৮৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৮৬
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَتَلَقَّوُا الرُّكْبَانَ، وَلاَ يَبِعْ حَاضِرٌ
لِبَادٍ» فَقَالَ لَهُ طَاوُوسٌ: مَا لاَ يَبِيعُ حَاضِرٌ لِبَادٍ ؟ قَالَ: لاَ
يَكُونُ لَهُ سِمْسَاراً . متفق عليه
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(বাজারের) বাইরে গিয়ে পণ্য নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে
সাক্ষাৎ করবে না। আর কোন শহুরে লোক যেন কোন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় না করে।’’
ত্বাউস তাঁকে বললেন, ‘কোন শহুরে লোক যেন কোন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রয় না করে’ এর
অর্থ কী? তিনি বললেন, ‘সে যেন তার দালালি না করে।’
(সহীহুল বুখারী ২১৫৮,
২১৬৩, ২২৭৪, মুসলিম ১৫২১, নাসায়ী ৪৫০০, আবূ দাউদ ৩৪৩৯, ইবনু মাজাহ ২১৭৭, আহমাদ ৩৪৭২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৮৭
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى رَسُول اللهِ
صلى الله عليه وسلم أَنْ يَبِيعَ حَاضِرٌ لِبَادٍ، وَلاَ تَنَاجَشُوا وَلاَ يَبِيع
الرَّجُلُ عَلَى بَيْعِ أَخْيِهِ، وَلاَ يَخْطُبُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ، وَلاَ
تَسْأَلُ المَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَكْفَأَ مَا فِي إِنائِهَا.
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: نَهَى رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ التَّلَقِّي،
وَأَنْ يَبْتَاعَ المُهَاجِرُ لِلأَعْرَابِيِّ، وَأَنْ تَشْتَرِطَ المَرْأةُ
طَلاَقَ أُخْتِهَا، وَأَنْ يَسْتَامَ الرَّجُلُ عَلَى سَوْمِ أَخِيهِ، وَنَهَى
عَنِ النَّجْشِ وَالتَّصْرِيَةِ. متفق عليه
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম গ্রাম্য লোকের পণ্যদ্রব্য বেচতে শহুরে লোককে নিষেধ করেছেন। (তিনি
বলেছেন,) ‘‘ক্রেতাকে প্রতারিত ক’রে মূল্য বৃদ্ধির জন্য দালালি করো না। কোন ব্যক্তি
তার (মুসলিম) ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করবে না। আর কোন ব্যক্তি তার
(মুসলিম) ভাইয়ের বিবাহ-প্রস্তাবের উপর নিজের প্রস্তাব দেবে না। কোন মহিলা তার
বোনের [সতীনের] তালাক চাইবে না; যাতে সে তার পাত্রে যা আছে তা ঢেলে ফেলে দেয়। (এবং
একাই স্বামী-প্রেমের অধিকারিণী হয়।)’’
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পণ্য ক্রয় করার
জন্য (বাজারের) বাইরে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে, মুহাজির হয়ে মরুবাসীর
পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করতে, (বিয়ের সময়) মহিলার তার বোনের (সতীনকে) তালাক দিতে হবে
এরূপ শর্তারোপ করতে এবং (মুসলিম) ভাইয়ের দর-দাম করার উপর দর-দাম করতে বারণ করেছেন।
আর তিনি (প্রতারণার দালালি ক’রে) পণ্যের দাম বাড়াতে এবং কয়েকদিন ধরে পশুর স্তনে
দুধ জমা রেখে তা ফুলিয়ে রাখতে নিষেধ করেছেন।
(সহীহুল বুখারী ২১৪০,
২১৪৮, ২১৫০, ২১৫১, ২১৬০, ২১৬০, ২১৬২, ২৭২৩, ২৭২৭, ৫১৫২, ৬৬০১, মুসলিম ১০৭৬, ১৪১৩, ১৫১৫,
তিরমিযী ১১২৪, ১১৯০, ১২২১, ১২২২, ১২৫১, ১২৫২, ১৩০৪, নাসায়ী ৩২৩৯-৩২৪২, ৪৪৮৭-৪৪৮৯, ৪৪৯১,
৪৪৯৬, ৪৫০২, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ২০৮০, ৩৪৩৭, ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৩৪৪৪, ৩৪৪৫, ইবনু মাজাহ
১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪, ২১৭৫, ২১৭৮, ২২৩৯, আহমাদ ৭২০৭, ৭২৬৩, ৭২৭০, ৭৩৩৩, ৭৪০৬, ৭৪৭১, ৭৬৪১,
৮০৩৯, ৯০১৩, ৯০৫৫, মুওয়াত্তা মালিক ১১১১, দারেমী ২১৭৫, ২৫৫৩, ২৫৬৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৮৮
وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم قَالَ: «لاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَلاَ
يَخْطُبْ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ إِلاَّ أَنْ يَأذَنَ لَهُ» . متفق عليه، وهذا لفظ
مسلم
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন অপরের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং তার
মুসলিম ভাইয়ের বিবাহ প্রস্তাবের উপর নিজের বিবাহ-প্রস্তাব না দেয়। কিন্তু যদি সে
তাকে সম্মতি জানায় (তবে তা বৈধ)।’’
(সহীহুল বুখারী ২১৩৯,
২১৬৫, ১৫৪২, মুসলিম ১৪১২, তিরমিযী ১২৯২, নাসায়ী ৩২৪৩, ৪৫০৪, আবূ দাউদ ২০৮১, ৩৪৩৬, ইবনু
মাজাহ ২১৭১, আহমাদ ৪৭০৮, মুওয়াত্তা মালিক ১১১২, ১৩৯০, দারেমী ২১৭৬, ২৫৬৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৮৯
وَعَنْ عُقبَةَ بنِ عَامِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم قَالَ: «المُؤْمِنُ أَخُو المُؤْمِنِ، فَلاَ يَحِلُّ لِمُؤْمِنٍ أَنْ
يَبْتَاعَ عَلَى بَيْعِ أَخِيهِ وَلاَ يَخْطُبَ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ حَتَّى
يذَرَ» . رواه مسلم
উক্ববাহ
ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভাই। কোন মু’মিনের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার
ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর নিজের ক্রয়-বিক্রয়ের কথা বলবে। আর এটাও বৈধ নয় যে, সে
ভাইয়ের বিবাহ-প্রস্তাবের উপর নিজের বিবাহ-প্রস্তাব দেবে; যতক্ষণ না সে বর্জন
করে।’’
(মুসলিম ১৪১৪, ইবনু
মাজাহ ২২৪৬, আহমাদ ১৬৮৭৬, দারেমী ২৫৫০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫৬
শরীয়ত-সম্মত
খাত ছাড়া, অন্য খাতে ধন-সম্পদ নষ্ট করা নিষিদ্ধ
১৭৯০
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثاً، وَيَكْرَهُ
لَكُمْ ثَلاَثاً : فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ، وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ
شَيئاً، وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعاً وَلاَ تَفَرَّقُوا،
وَيَكْرَهُ لَكُمْ : قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ المَالِ»
. رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি জিনিস পছন্দ করেন এবং তিনটি
জিনিস অপছন্দ করেন। তিনি তোমাদের জন্য পছন্দ করেন যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর, তার
সঙ্গে কোন কিছুকে অংশী স্থাপন করো না এবং আল্লাহর রজ্জুকে জামাআতবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধর
এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ো না। আর তিনি তোমাদের জন্য যা অপছন্দ করেন তা হল, অহেতুক
আলোচনা-সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া, অধিকাধিক প্রশ্ন করা এবং ধন-সম্পদ বিনষ্ট করা।’’
(মুসলিম ১৭১৫, আহমাদ
৮১৩৪, ৮৫০১, ৮৫৮১, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৬৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৯১
وَعَنْ وَرَّادٍ كَاتِبِ الْمُغِيرَةِ، قَالَ: أَمْلَى عَلَيَّ
المُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ فِي كِتابٍ إلَى مُعَاوِيَةَ رضي الله عنه : أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ
مَكْتُوبَةٍ : «لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لهُ، لَهُ المُلْكُ
وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اَللهم لاَ مَانِعَ لِمَا
أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الجَدِّ مِنْكَ
الجَدُّ» وَكَتَبَ إِلَيْهِ أَنَّهُ كَانَ يَنْهَى عَنْ قِيلَ وَقَالَ،
وَإِضَاعَةِ المَالِ، وَكَثْرَةِ السُّؤَالِ، وَكَانَ يَنْهَى عَنْ عُقُوقِ
الأُمَّهَاتِ، وَوَأْدِ البَنَاتِ، وَمَنْعٍ وَهَاتِ . متفق عليه
মুগীরাহ
ইবনে শু‘বাহর লেখক অর্রাদ থেকে বর্ণিতঃ
মুআবিয়া (রাঃ)-এর নামে একটি পত্রে মুগীরা আমার
দ্বারা এ কথা লেখালেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয
নামাযের পর এই দো‘আ পড়তেন, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল
মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া
লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’ত্বিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল
জাদ্দ্।’’
অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই, তাঁরই
জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। হে আল্লাহ!
তুমি যা দান কর তা রোধ করার এবং যা রোধ কর তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের
ধন তোমার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না।
(তাছাড়া তাতে এ কথাও লিখালেন যে,) ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অহেতুক কথাবার্তা বলতে, ধন-সম্পদ বিনষ্ট করতে এবং অধিকাধিক প্রশ্ন করতে নিষেধ
করতেন। আর তিনি মাতা-পিতার সাথে অবাধ্যাচরণ করতে, মেয়েদেরকে জীবন্ত প্রোথিত করতে
এবং প্রাপকের ন্যায্য অধিকার রোধ করতে ও অনধিকার বস্তু তলব করতেও নিষেধ করতেন।’
(সহীহুল বুখারী ৮৪৪,
১৪৭৭, ২৪০৮, ৫৯০৫, ৬৩৩০, ৬৪৭৩, ৬৬১৫, ৭২৯২, মুসলিম ৫৯৩, নাসায়ী ১৩৪১-১৩৪৩, আবূ দাউদ
১৫০৫, আহমাদ ১৭৬৭৩, ১৭৬৮১, ১৭৬৯৬, ১৭৭১৪, ১৭৭১৮, ১৭৭৩৪, ১৭৭৬৬, দারেমী ১৩৪৯, ২৭৫১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫৭
কোন
মুসলমানের দিকে অস্ত্র দ্বারা ইশারা করা হারাম, তা সত্যি সত্যি হোক অথবা ঠাট্টা
ছলেই হোক। অনুরূপভাবে নগ্ন তরবারি দেওয়া-নেওয়া করা নিষিদ্ধ
১৭৯২
عَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «لاَ يُشِرْ أَحَدُكُمْ إِلَى أَخِيهِ بِالسِّلاَحِ، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي
لَعَلَّ الشَّيْطَانَ يَنْزعُ فِي يَدِهِ، فَيَقَعُ فِي حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ» .
متفق عليه
وَفِي رِوَايَةٍ لِّمُسلِمٍ قَالَ: قَالَ أبُو القَاسِم صلى الله عليه وسلم :
«مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيهِ بِحَدِيدَةٍ، فَإِنَّ المَلاَئِكَةَ تَلْعَنُهُ
حَتَّى يَنْزعَ، وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لأَبِيهِ وَأُمِّهِ».
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমাদের কেউ যেন তার কোন ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উত্তোলন ক’রে ইশারা না করে। কেননা,
সে জানে না হয়তো শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে দেবে, ফলে (মুসলিম হত্যার অপরাধে) সে
জাহান্নামের গর্তে নিপতিত হবে।’’
(সহীহুল বুখারী ৭০৭২,
মুসলিম ২৬১৭, তিরমিযী ২১৬৩, আহমাদ ২৭৪৩২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৯৩
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى رَسُول اللهِ صلى الله
عليه وسلم أَنْ يُتَعَاطَى السَّيْفُ مَسْلُولاً . رواه أبو داود والترمذي، وقال
:[ حديث حسن ]
জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নগ্ন তরবারি পরস্পর দেওয়া-নেওয়া করতে নিষেধ করেছেন। (কারণ, তাতে হাত-পা
কেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে)।
[আবূ দাউদ, তিরমিযী
হাসান] (তিরমিযী ২১৬৩, আবূ দাউদ ২৫৮৮, আহমাদ ১৩৭৮৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫৮
আযানের
পর বিনা ওযরে ফরয নামায না পড়ে মসজিদ থেকে চলে যাওয়া মকরূহ
১৭৯৪
عَنْ أَبِي الشَّعْثَاءِ، قَالَ: كُنَّا قُعُوداً مَع أَبِي هُرَيرَةَ
رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي المَسْجِدِ، فَأَذَّن المُؤَذِّنُ، فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ
المَسْجِدِ يَمْشِي، فَأَتْبَعَهُ أبُو هُرَيرَةَ رضي الله عنه بَصَرَهُ حَتَّى
خَرَجَ مِنَ المَسْجِدِ، فَقَالَ أَبُو هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَمَّا هَذَا
فَقَدْ عَصَى أَبَا القَاسِمِ صلى الله عليه وسلم . رواه مسلم
আবূ
শা’সা’ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা (একবার) আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর
সঙ্গে মসজিদে বসে ছিলাম। (এমন সময়) মুআয্-যিন আযান দিল। তখন একটি লোক মসজিদ থেকে
চলে যেতে লাগল। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, শেষ পর্যন্ত
সে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল। অতঃপর আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললেন, ‘এই লোকটি আবুল কাসেম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্যাচরণ করল।’
(মুসলিম ৬৫৫, তিরমিযী
২০৪, নাসায়ী ৬৮৩, ৬৮৪, আবূ দাউদ ৫৩৬, ইবনু মাজাহ ৭৩৩, আহমাদ ৯১১৮, ১০৫৫০, দারেমী ১২০৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৫৯
বিনা
কারণে সুগন্ধি উপহার প্রত্যাখ্যান করা মকরূহ
১৭৯৫
عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم: «مَنْ عُرِضَ عَلَيْهِ رَيْحَانٌ، فَلاَ يَرُدَّهُ، فَإِنَّهُ
خَفِيفُ المَحْمِلِ، طَيِّبُ الرِّيحِ» . رواه مسلم
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার কাছে সুগন্ধি পেশ করা হবে, সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়।
কারণ তা হাল্কা বহনযোগ্য সুবাস।’’
(মুসলিম ২২৫৩, নাসায়ী
৫২৬০, আবূ দাউদ ৪১৭২, আহমাদ ৮০৬৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৯৬
وَعَنْ أَنَسِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم كَانَ لاَ يَرُدُّ الطِّيبَ . رواه البخاري
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো
সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না।
(সহীহুল বুখারী ২৫৮২,
৫৯২৯, তিরমিযী ২৭৮৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬০
কারো
মুখোমুখি প্রশংসা করা মকরূহ
১৭৯৭
وَعَنْ أَبي مُوسَى الأَشْعَرِي رضي الله عنه قَالَ: سَمِعَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم رَجُلاً يُثْنِي عَلَى رَجُلٍ وَيُطْرِيهِ فِي المِدْحَة،
فَقَالَ: «أَهْلَكْتُمْ أَوْ قَطَعْتُمْ ظَهْرَ الرَّجُلِ» . متفق عليه
আবূ
মুসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির (সামনা-সামনি) অতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনে
বললেন, ‘‘তুমি লোকটার পৃষ্ঠ কর্তন করলে অথবা তাকে ধ্বংস ক’রে দিলে।’’
(সহীহুল বুখারী ২৬৬৩,
৬০৬০, মুসলিম ৩০০১, আহমাদ ১৯১৯৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৯৮
وَعَنْ أَبِي بَكرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَجُلاً ذُكِرَ عِندَ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَأَثْنَى عَلَيْهِ رَجُلٌ خَيْراً، فَقَالَ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «وَيْحَكَ ! قَطَعْتَ عُنُقَ صَاحِبِكَ» يَقُولُهُ
مِرَاراً : «إِنْ كَانَ أَحَدُكُمْ مَادِحاً لاَ مَحَالَةَ فَلْيَقُلْ : أَحْسِبُ
كَذَا وَكَذَا إِنْ كَانَ يَرَى أنَّهُ كَذَلِكَ وَحَسِيبُهُ اللهُ، وَلاَ يُزَكّى
عَلَى اللهِ أَحَدٌ». متفق عليه
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
এক ব্যক্তি অন্য একজনের (তার সামনে) ভাল প্রশংসা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হায় হায়! তুমি তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে!’ এরূপ বার-বার
বলার পর তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যদি কাউকে একান্তই তার সাথীর প্রশংসা করতে
হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি ওকে এরূপ মনে করি’ - যদি জানে যে, সে প্রকৃতই এরূপ -
‘এবং আল্লাহ ওর হিসাব গ্রহণকারী। আর আল্লাহর (জ্ঞানের) সামনে কাউকে নিষ্কলুষ ও
পবিত্র ঘোষণা করা যায় না।’’
(সহীহুল বুখারী ২৬৬২,
৬০৬১, ৬১৬২, মুসলিম ৩০০০, আবূ দাউদ ৪৮০৫, আহমাদ ১৯৯০৯, ১৯৯৪৯, ১৯৯৫৫, ১৯৯৭১, ২৭৫৩৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৭৯৯
وَعَنْ هَمَّامِ بنِ الحَارِثِ، عَنِ المِقْدَادِ صلى الله عليه وسلم :
أَنَّ رَجُلاً جَعَلَ يَمْدَحُ عُثْمانَ رضي الله عنه فَعَمِدَ المِقْدَادُ،
فَجَثَا عَلَى رُكْبَتَيْهِ، فَجَعَلَ يَحْثُو فِي وَجْهِهِ الحَصْبَاءَ. فَقَالَ
لَهُ عُثْمَانُ : مَا شَأنُكَ ؟ فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا رَأَيْتُمُ المَدَّاحِينَ، فَاحْثُوا فِي
وُجُوهِهِمُ التُّرَابَ» . رواه مسلم
হাম্মাম
ইবনে হারেস থেকে বর্ণিতঃ
তিনি মিক্বদাদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন; এক
ব্যক্তি উসমান (রাঃ)-এর সামনেই তাঁর প্রশংসা শুরু করলে মিক্বদাদ হাঁটুর উপর ভর
দিয়ে দাঁড়িয়ে তার মুখে কাঁকর ছিটাতে শুরু করলেন। তখন উসমান তাঁকে বললেন, ‘কী
ব্যাপার তোমার?’ তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা (মুখোমুখি) প্রশংসাকারীদের দেখলে তাদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দিয়ো।’’
(মুসলিম ৩০০২, তিরমিযী
২৩৯৩, আবূ দাউদ ৪৮৯৪, ইবনু মাজাহ ৩৭৪২, আহমাদ ২৩৩১১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬১
মহামারী-পীড়িত
গ্রাম-শহরে প্রবেশ ও সেখান থেকে অন্যত্র পলায়ন করা নিষেধ
১৮০০
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ عُمَرَ بنَ
الخَطَّابِ رضي الله عنه خَرَجَ إلَى الشَّامِ حَتَّى إِذَا كَانَ بِسَرْغَ
لَقِيَهُ أُمَرَاءُ الأَجْنَادِ ـ أَبُو عُبَيْدَةَ بنُ الجَرَّاحِ وَأَصْحَابُهُ
ـ فَأَخْبَرُوهُ أَنَّ الوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّامِ . قَالَ ابنُ عَبَّاسٍ :
فَقَالَ لِي عُمَرُ : ادْعُ لِي المُهَاجِرِينَ الأَوَّلِينَ، فَدَعَوْتُهُمْ
فَاسْتَشَارَهُمْ وَأَخْبَرَهُمْ أَنَّ الوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّامِ،
فَاخْتَلَفُوا، فَقَالَ بَعْضُهُمْ : خَرَجْتَ لأَمْرٍ، وَلاَ نَرَى أَنْ تَرْجِعَ
عَنْهُ . وَقَالَ بَعضُهُم : مَعَكَ بَقِيَّةُ النَّاسِ وَأَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ
صلى الله عليه وسلم، وَلاَ نَرَى أَنْ تُقْدِمَهُمْ عَلَى هَذَا الوَبَاءِ .
فَقَالَ: ارْتَفِعُوا عَنِّي . ثُمَّ قَالَ: ادْعُ لِي الأَنْصَارَ،
فَدَعَوْتُهُمْ، فَاسْتَشَارَهُمْ، فَسَلَكُوا سَبيلَ المُهَاجِرينَ،
وَاخْتَلَفُوا كَاخْتِلاَفِهِمْ، فَقَالَ: ارْتَفِعُوا عَنِّي . ثُمَّ قَالَ:
ادْعُ لِي مَنْ كَانَ هَاهُنَا مِنْ مَشْيَخَةِ قُريشٍ مِنْ مُهَاجِرَةِ الفَتْحِ،
فَدَعَوْتُهُمْ، فَلَمْ يَخْتَلِفْ عَلَيْهِ مِنْهُمْ رَجُلاَنِ، فَقَالُوا :
نَرَى أَنْ تَرْجِعَ بِالنَّاسِ، وَلاَ تُقْدِمَهُمْ عَلَى هَذَا الوَبَاءِ،
فَنَادَى عُمَرُ رضي الله عنه فِي النَّاسِ : إِنِّي مُصْبِحٌ عَلَى ظَهْرٍ،
فَأَصْبِحُوا عَليْهِ، فَقَالَ أَبُو عُبَيدَةَ بنِ الجَرَّاحِ رضي الله عنه :
أَفِرَاراً مِنْ قَدَرِ اللهِ ؟ فَقَالَ عُمَرُ رضي الله عنه : لَوْ غَيْرُكَ
قَالَهَا يَا أَبَا عُبَيدَةَ ! - وَكَانَ عُمَرُ يَكْرَهُ خِلاَفَهُ - نَعَمْ،
نَفِرُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ إِلَى قَدَرِ اللهِ، أَرَأيْتَ لَو كَانَ لَكَ إِبِلٌ،
فَهَبَطَتْ وَادِياً لَهُ عُدْوَتَانِ، إِحْدَاهُمَا خَصْبَةٌ، وَالأُخْرَى
جَدْبَةٌ، أَلَيسَ إِنْ رَعَيْتَ الخَصْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللهِ، وَإِنْ
رَعَيْتَ الجَدْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللهِ ؟ قَالَ: فَجَاءَ عَبدُ
الرَّحمانِ بنُ عَوفٍ رضي الله عنه وَكَانَ مُتَغَيِّباً فِي بَعْضِ حَاجَتِهِ، فَقَالَ:
إِنَّ عِنْدِي مِنْ هَذَا عِلْماً، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم
يَقُوْلُ : «إِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدِمُوا عَلَيْهِ، وَإِذَا
وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَاراً مِنْهُ» فَحَمِدَ
اللهَ تَعَالَى عُمَرُ رضي الله عنه وَانصَرَفَ . متفق عَلَيْهِ
ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সিরিয়ার দিকে
যাত্রা করলেন। অতঃপর যখন তিনি ‘সার্গ্’ (সউদিয়া ও সিরিয়ার সীমান্ত) এলাকায় গেলেন,
তখন তাঁর সাথে সৈন্যবাহিনীর প্রধানগণ - আবূ উবাইদাহ ইবনুল জার্রাহ ও তাঁর সাথীগণ -
সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা তাঁকে জানান যে, সিরিয়া এলাকায় (প্লেগ) মহামারীর প্রাদুর্ভাব
ঘটেছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন উমার আমাকে বললেন, ‘আমার কাছে প্রাথমিক
পর্যায়ে যারা হিজরত করেছিলেন সেই মুহাজিরদেরকে ডেকে আনো।’ আমি তাঁদেরকে ডেকে
আনলাম। উমার (রাঃ) তাঁদেরকে শাম দেশে প্রাদুর্ভূত মহামারীর কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে
সুপরামর্শ চাইলেন। তখন তাঁদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল। কেউ বললেন, ‘আপনি একটি
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বের হয়েছেন। তাই তা থেকে ফিরে যাওয়াকে আমরা পছন্দ করি না।’
আবার কেউ কেউ বললেন, ‘আপনার সাথে রয়েছেন অবশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ। কাজেই আমাদের কাছে ভাল মনে হয় না যে, আপনি
তাঁদেরকে এই মহামারীর মধ্যে ঠেলে দেবেন।’ উমার (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে
উঠে যাও।’ তারপর তিনি বললেন, ‘আমার নিকট আনসারদেরকে ডেকে আনো।’ সুতরাং আমি
তাঁদেরকে ডেকে আনলাম এবং তিনি তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। কিন্তু তাঁরাও
মুহাজিরদের পথ অবলম্বন করলেন এবং তাঁদের মতই তাঁরাও মতভেদ করলেন। সুতরাং উমার
(রাঃ) বললেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে যাও।’ তারপর আমাকে বললেন, ‘এখানে যে সকল
বয়োজ্যেষ্ঠ কুরাইশী আছেন, যারা মক্কা বিজয়ের বছর হিজরত করেছিলেন তাঁদেরকে ডেকে
আনো।’ আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তখন তাঁরা পরস্পরে কোন মতবিরোধ করলেন না। তাঁরা
বললেন, ‘আমাদের রায় হল, আপনি লোকজনকে নিয়ে ফিরে যান এবং তাদেরকে এই মহামারীর কবলে
ঠেলে দেবেন না।’ তখন উমার (রাঃ) লোকজনের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, ‘আমি ভোরে সওয়ারীর
পিঠে (ফিরে যাওয়ার জন্য) আরোহণ করব। অতএব তোমরাও তাই কর।’ আবু উবাইদাহ ইবনুল
জার্রাহ (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তকদীর থেকে পলায়ন করার জন্য ফিরে
যাচ্ছেন?’ উমার (রাঃ) বললেন, ‘হে আবূ উবাইদাহ! যদি তুমি ছাড়া অন্য কেউ কথাটি বলত।’
আসলে উমার তাঁর বিরোধিতা করতে অপছন্দ করতেন। বললেন, ‘হ্যাঁ। আমরা আল্লাহর তকদীর
থেকে আল্লাহর তকদীরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। তুমি বল তো, তুমি কিছু উঁটকে যদি এমন কোন
উপত্যকায় দিয়ে এস, যেখানে আছে দু’টি প্রান্ত। তার মধ্যে একটি হল সবুজ-শ্যামল, আর
অন্যটি হল বৃক্ষহীন। এবার ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ প্রান্তে চরাও, তাহলে
তা আল্লাহর তকদীর অনুযায়ীই চরাবে। আর যদি তুমি বৃক্ষহীন প্রান্তে চরাও তাহলেও তা
আল্লাহর তকদীর অনুযায়ীই চরাবে?’ বর্ণনাকারী (ইবনে আব্বাস (রাঃ)) বলেন, এমন সময়
আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এলেন। তিনি এতক্ষণ যাবৎ তাঁর কোন প্রয়োজনে অনুপস্থিত
ছিলেন। তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে, আমি আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘তোমরা যখন কোন এলাকায়
(প্লেগের) প্রাদুর্ভাবের কথা শুনবে, তখন সেখানে যেয়ো না। আর যদি এলাকায় প্লেগের
প্রাদুর্ভাব নেমে আসে আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে পলায়ন ক’রে সেখান থেকে বেরিয়ে
যেয়ো না।’’ সুতরাং (এ হাদীস শুনে) উমার (রাঃ) আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং (মদিনা)
ফিরে গেলেন।
(সহীহুল বুখারী ৫৭২৯,
৫৭৩০, ৬৯৭৩, মুসলিম ২২১৯, আবূ দাউদ ৩১০৩, আহমাদ ১৬৬৯, ১৬১৮, ১৬৮৫, মুওয়াত্তা মালিক
১৬৫৫, ১৬৫৭)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮০১
وَعَنْ أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم، قَالَ: «إِذَا سَمِعْتُمُ الطَّاعُونَ بِأَرْضٍ، فَلاَ تَدْخُلُوهَا،
وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ، وَأنْتُمْ فِيهَا، فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا» . متفق
عَلَيْهِ
উসামা
ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যখন তোমরা কোন ভূখণ্ডে প্লেগ মহামারী ছড়িয়ে পড়তে শুনবে, তখন সেখানে প্রবেশ করো
না। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে এমন ভূখণ্ডে তোমরা যদি থাক, তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৪৭৩,
৫৭২৮, ৬৯০৪, মুসলিম ২২১৮, তিরমিযী ১০৬৫, আহমাদ ২১২৪৪, ২১২৫৬, ২১২৯১, ২১২৯৯, ২১৩০৪,
২১৩১১, ২১৩২০, ২১৩৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৫৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬২
যাদু-বিদ্যা
কঠোরভাবে হারাম
১৮০২
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ» . قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، وَمَا هُنَّ ؟ قَالَ: «الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ
النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ
مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ
المُؤْمِنَاتِ الغَافِلاَتِ». متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা সাত প্রকার সর্বনাশী কর্ম থেকে দূরে থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘সেগুলো কী কী হে
আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, (১) ‘‘আল্লাহর সাথে শির্ক করা। (২) যাদু করা। (৩)
অন্যায়ভাবে এমন জীবন হত্যা করা, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন। (৪) সুদ খাওয়া। (৫)
এতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা। (৬) ধর্মযুদ্ধ কালীন সময়ে (রণক্ষেত্র) থেকে পৃষ্ঠ
প্রদর্শন ক’রে পলায়ন করা। (৭) সতী-সাধ্বী উদাসীনা মু’মিনা নারীদের চরিত্রে মিথ্যা
কলঙ্ক আরোপ করা।’’
(সহীহুল বুখারী ২৭৬৬,
২৭৬৭, ৫৭৬৪, ৬৮৫৭, মুসলিম ৮৯, নাসায়ী ৩৬৭১, আবূ দাউদ ২৮৭৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬৩
অমুসলিম
দেশে বা অঞ্চলে কুরআন মাজীদ সঙ্গে নিয়ে সফর করা নিষেধ; যদি সেখানে তার অবমাননা ও
মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে
১৮০৩
عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: نَهَى رَسُول اللهِ صلى
الله عليه وسلم أَنْ يُسَافَرَ بِالقُرْآنِ إِلَى أَرْضِ العَدُوِّ . متفق
عَلَيْهِ
ইবনে
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম শত্রুর দেশে কুরআন সঙ্গে নিয়ে সফর করতে নিষেধ করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ২৯৯০,
মুসলিম ১৮৬৯, আবূ দাউদ ২৬১০, ইবনু মাজাহ ২৮৭৯, ২৮৮০, আহমাদ ৪৪৯৩, ৪৫১১, ৪৫৬২, ৫১৪৮,
৫২৭১, ৫৪৪২, ৬০৮৯, মুওয়াত্তা মালিক ৯৭৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬৪
পানাহার,
পবিত্রতা অর্জন তথা অন্যান্য ক্ষেত্রে সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহার করা হারাম
১৮০৪
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم قَالَ: الَّذِيْ يَشْرَبُ فِي آنِيَةِ الفِضَّةِ، إِنَّمَا
يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ. متفق عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةِ لِمُسلِمٍ : إِنَّ الَّذِي يَأكُلُ أَوْ يَشْرَبُ فِي آنِيَةِ
الفِضَّةِ وَالذَّهَبِ
উম্মে
সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি রূপার পাত্রে পান করে, সে আসলে তার উদরে জাহান্নামের আগুন
ঢক্ঢক্ করে পান করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৬৩৪,
মুসলিম ২০৬৫, ইবনু মাজাহ ৩৪১৩, আহমাদ ২৬০, ২৮, ২৬০৪২, ২৬৫৫, ২৬০৭১, মুওয়াত্তা মালিক
১৭১৭, দারেমী ২১২৯)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮০৫
وَعَنْ حُذَيفَةَ رضي الله عنه قَالَ: إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم نَهَانَا عَنِ الحَريِرِ، وَالدِّيبَاجِ، وَالشُّرْبِ فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ
وَالفِضَّةِ، وَقَالَ: «هُنَّ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا، وَهِيَ لَكُمْ فِي
الآخِرَةِ» . متفق عَلَيْهِ .
وَفِي رِوَايَةٍ فِي الصَّحِيحَينِ عَنْ حُذيْفَةَ رضي الله عنه: سَمِعْتُ رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : «لاَ تَلْبَسُوا الحَرِيرَ وَلاَ الدِّيبَاجَ،
وَلاَ تَشْرَبُوا فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ وَلاَ تَأكُلُوا فِي
صِحَافِهَا
হুযাইফাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, মোটা ও পাতলা রেশমের বস্ত্র পরিধান করতে এবং
সোনা-রূপার পাত্রে পান করতে। আর তিনি বলেছেন, ‘‘উল্লিখিত সামগ্রীগুলো দুনিয়াতে
ওদের (কাফেরদের) জন্য এবং আখিরাতে তোমাদের (মুসলমানদের) জন্য।’’
(সহীহুল বুখারী ৫৮৩১,
৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩, ৫৮৩৭, মুসলিম ২০৬৭, তিরমিযী ১৮৭৮, নাসায়ী ৫৩০১, আবূ দাউদ ৩৭২৩, ইবনু
মাজাহ ৩৪১৪, ৩৫৯০, আহমাদ ২২৭৫৮, ২২৮০৩, ২২৮৪৮, ২২৮৫৫, ২২৮৬৫, ২২৮৯২, ২২৯২৭, দারেমী
২১৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮০৬
وَعَنْ أَنَسِ بنِ سِيِرين، قَالَ: كُنْتُ مَعَ أَنَسِ بنِ مَالِكٍ رضي
الله عنه عِنْدَ نَفَرٍ مِنَ المَجُوسِ ؛ فَجِيءَ بفَالُوذَجٍ عَلَى إِنَاءٍ مِنْ
فِضَّةٍ، فَلَمْ يَأكُلْهُ، فَقِيلَ لَهُ : حَوِّلْهُ، فَحَوَّلَهُ عَلَى إِنَاءٍ
مِنْ خَلَنْجٍ وَجِيءَ بِهِ فَأَكَلَهُ . رواه البيهقي بإسناد حسن
আনাস
ইবনে সীরীন থেকে বর্ণিতঃ
‘‘অগ্নিপূজক সম্প্রদায়ের কিছু লোকের কাছে আনাস
ইবনে মালেক (রাঃ)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় রূপার পাত্রে ‘ফালূযাজ’ (নামক এক
প্রকার মিষ্টান্ন) আনা হল। তিনি (আনাস ইবনে মালেক) তা খেলেন না। তাদেরকে বলা হল
যে, ওটার পাত্র পাল্টে দাও। সুতরাং তা পাল্টে কাঠের পাত্রে রাখা হল এবং তা তাঁর
নিকট হাজির করা হল। তখন তিনি তা খেলেন।’’
(বাইহাকী হাসানসূত্রে)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬৫
পুরুষের
জন্য জাফরানী রঙের পোশাক হারাম
১৮০৭
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم أَنْ يَتَزَعْفَرَ الرَّجُل . متفق عَلَيْهِ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পুরুষদের জন্য জাফরানী রঙ্গের কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।’
(সহীহুল বুখারী ৫৮৪৬,
মুসলিম ২১০১, তিরমিযী ২৮১৫, নাসায়ী ৫২৫৬, ৫২৫৭, আবূ দাউদ ৪১৭৯, আহমাদ ১১৫৬৭, ১২৫৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮০৮
وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا،
قَالَ: رَأَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيَّ ثَوْبَيْنِ مُعَصْفَرَيْنِ،
فَقَالَ: «أُمُّكَ أمَرَتْكَ بِهَذا ؟» قُلْتُ: أَغْسِلُهُمَا ؟ قَالَ: «بَلْ
أَحْرِقْهُمَا»
وَفِي رِوَايَةٍ، فَقَالَ: «إِنَّ هَذَا مِنْ ثِيَابِ الكُفَّارِ فَلاَ
تَلْبَسْهَا» . رواه مسلم
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর ইবনে ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমার পরনে দুটো হলুদ রঙের কাপড় দেখে বললেন, ‘‘তোমার মা কি তোমাকে এ
কাপড় পরিধান করতে আদেশ করেছে?’’ আমি বললাম, ‘আমি কি তা ধুয়ে ফেলব?’ তিনি বললেন,
‘‘বরং তা পুড়িয়ে ফেলো।’’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বললেন, ‘‘এ হল কাফেরদের পোশাক।
সুতরাং তুমি এ পরিধান করো না।’’
(মুসলিম ২০৭৭, নাসায়ী
৫৩১৬, ৫৩১৭, আহমাদ ৬৪৭৭, ৬৫০০, ৬৭৮২, ৬৮৯২, ৬৯৩৩)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬৬
রাত
পর্যন্ত সারাদিন কথা বন্ধ রাখা নিষেধ
১৮০৯
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: حَفِظْتُ عَنْ رَسُولِ الله صلى
الله عليه وسلم قَالَ «لاَ يُتْمَ بَعْدَ احْتِلاَمٍ، وَلاَ صُمَاتَ يَومٍ إِلَى
اللَّيْلِ» . رواه أَبُو داود بإسناد حسن
আলী
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
এই বাণী মনে রেখেছি যে, ‘‘সাবালক হবার পর ইয়াতীম বলা যাবে না এবং কোন দিন সকাল
থেকে রাত পর্যন্ত বাক্ বন্ধ রাখা যাবে না।’’
[আবূ দাউদ হাসান সূত্রে]
(আবূ দাউদ ২৮৭৩, ইবনু মাজাহ ২৭১৮)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮১০
وَعَنْ قَيسِ بنِ أَبي حَازِمٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: دَخَلَ أَبُو
بَكْرٍ الصِّدِّيق رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَلَى امْرأَةٍ مِنْ أَحْمَسَ يُقَالُ
لَهَا : زَيْنَبُ، فَرَآهَا لاَ تَتَكَلَّمُ . فَقَالَ: مَا لَهَا لاَ تَتَكَلَّمُ
؟ فَقَالُوا : حَجَّتْ مُصْمِتَةً، فَقَالَ لَهَا : تَكَلَّمِي، فَإِنَّ هَذَا لاَ
يَحِلُّ، هَذَا مِنْ عَمَلِ الجَاهِليَّةِ، فَتَكَلَّمَتْ . رواه البخاري
কায়েস
ইবনে আবূ হাযেম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আহ্মাস
গোত্রের যয়নাব নামক এক মহিলার নিকট এসে দেখলেন যে, সে কথা বলে না। তিনি বললেন, ‘ওর
কি হয়েছে যে, কথা বলে না?’ তারা বলল, ‘ও নীরব থেকে হজ্জ করার সংকল্প করেছে।’ তিনি
বললেন, ‘কথা বল। কারণ, এ (নীরবতা) বৈধ নয়। এ হল জাহেলী যুগের কাজ।’ সুতরাং সে কথা
বলতে লাগল।
(সহীহুল বুখারী ৩৮৩৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬৭
নিজ
পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করা বা নিজ মনিব ছাড়া অন্যকে মনিব বলে দাবী করা
হারাম
১৮১১
عَنْ سَعدِ بنِ أَبِي وَقَّاصٍرضي الله عنه : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله
عليه وسلم، قَالَ: «مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ
غَيْرُ أَبِيهِ، فَالجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ». متفق عَلَيْهِ
সা’দ
বিন আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করে, অথচ সে
জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।’’
(সহীহুল বুখারী ৪৩২৭,
৬৭৬৭, মুসলিম ৬৩, আবূ দাউদ ৫১১৩, ইবনু মাজাহ ১৬১০, আহমাদ ১৪৫৭, ১৫০০, ১৫৫৬, ১৯৮৮৩,
১৯৯৫৩, দারেমী ২৫৩০)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮১২
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم،
قَالَ: «لاَ تَرْغَبُوا عَنْ آبَائِكُمْ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ أَبِيهِ، فَهُوَ
كُفْرٌ» . متفق عَلَيْهِ
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
‘‘তোমরা তোমাদের পিতাকে অস্বীকার করো না। কারণ, নিজ পিতা অস্বীকার করা হল কুফরী।’’
(সহীহুল বুখারী ৬৭৬৮,
মুসলিম ৬২, আহমাদ ১০৪৩২)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮১৩
وَعَنْ يَزِيدَ بنِ شَرِيكِ بنِ طَارِقٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ:
رَأَيتُ عَلِيّاً رضي الله عنه عَلَى المِنْبَرِ يَخْطُبُ، فَسَمِعْتُهُ يقُوْلُ :
لاَ وَاللهِ مَا عِنْدَنَا مِنْ كِتَابٍ نَقْرؤُهُ إِلاَّ كِتَابَ اللهِ، وَمَا
فِي هَذِهِ الصَّحِيفَةِ، فَنَشَرَهَا فَإِذَا فِيهَا أَسْنَانُ الإِبِلِ،
وَأَشْيَاءُ مِنَ الجَرَاحَاتِ، وَفِيهَا : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم: «المَدينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إِلَى ثَوْرٍ، فَمَنْ أَحْدَثَ فِيهَا
حَدَثاً، أَوْ آوَى مُحْدِثاً، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالمَلاَئِكَةِ
وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لاَ يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَومَ القِيَامَةِ صَرْفاً
وَلاَ عَدْلاً . ذِمَّةُ المُسْلِمينَ وَاحِدَةٌ، يَسْعَى بِهَا أَدْنَاهُمْ،
فَمَنْ أَخْفَرَ مُسْلِماً، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالمَلائِكَةِ وَالنَّاسِ
أَجْمَعِينَ، لاَ يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَومَ القِيَامَةِ صَرْفاً وَلاَ عَدْلاً
. وَمَنِ ادَّعَى إِلَى غَيرِ أَبِيهِ، أَوِ انْتَمَى إِلَى غَيرِ مَوَاليهِ،
فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ ؛ لاَ يَقْبَلُ
اللهُ مِنْهُ يَومَ القِيَامَةِ صَرْفاً وَلاَ عَدْلاً» . متفق عَلَيْهِ
ইয়াযীদ
ইবনে শারীক ইবনে ত্বারেক থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর
খুতবা দিতে দেখেছি এবং তাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহর কিতাব
ব্যতীত আমাদের কাছে আর কোন কিতাব নেই যা আমরা পাঠ করতে পারি। তবে এ লিপিখানা আছে।’
এরপর তা তিনি খুলে দিলেন। দেখা গেল তাতে (রক্তপণে প্রদেয়) উটের বয়স ও বিভিন্ন
যখমের দণ্ডবিধি লিপিবদ্ধ আছে। তাতে আরও লিপিবদ্ধ আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আইর থেকে সওর পর্যন্ত মদীনার হারাম-সীমা। এখানে যে
ব্যক্তি (ধর্মীয় বিষয়ে) অভিনব কিছু (বিদআত) রচনা করবে বা বিদআতীকে আশ্রয় দেবে, তার
উপর আল্লাহ, ফিরিশ্-তা দল এবং সকল মানুষের অভিশাপ। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন
ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না। সমস্ত মুসলিমদের প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তা-দানের
মর্যাদা এক। তাদের কোন নিম্নশ্রেণীর মুসলিম (কাউকে আশ্রয় প্রদানের) কাজ করতে পারে।
সুতরাং যে ব্যক্তি মুসলিমের ঐ কাজকে বানচাল করে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশ্-তা ও সকল
মানুষের লানত। কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না। আর যে
ব্যক্তি প্রকৃত বাপ ছাড়া অন্যকে বাপ বলে দাবী করে বা প্রকৃত মনিব ছাড়া অন্য মনিবের
সাথে সম্বন্ধ জুড়ে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশ্-তা ও সমস্ত মানুষের অভিশাপ। কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত গ্রহণ করবেন না।’’
(সহীহুল বুখারী ১১১,
১৮৭০, ৩০৪৭, ৩১৭২, ৩১৮০, ৬৭৫৫, ৬৯০৩, ৬৯১৫, ৬৩০০, মুসলিম ১৩৭০, তিরমিযী ১৪১২, ২১২৭,
নাসায়ী ৪৭৩৪, ৪৭৩৫, ৪৭৪৪, ৪৭৪৫, ৪৭৪৬, আবূ দাউদ ২০৩৪, ৪৫৩০, ইবনু মাজাহ ২১৬৫৮, আহমাদ
৬০০, ৬১৬, ৭৮৪, ৮০০, ৮৬০, ৮৭৬, ৯৫৭, ৯৬২, ৯৯৪, দারেমী ২৩৫৬)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
১৮১৪
وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ : أنَّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم، يَقُولُ : «لَيْسَ مِنْ رَجُلٍ ادَّعَى لِغَيرِ أَبِيهِ وَهُوَ
يَعْلَمُهُ إِلاَّ كَفَرَ، وَمَنِ ادَّعَى مَا لَيْسَ لَهُ، فَلَيْسَ مِنَّا،
وَلَيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ، وَمَنْ دَعَا رَجُلاً بِالْكُفْرِ،
أَوْ قَالَ: عَدُوَّ اللهِ، وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلاَّ حَارَ عَلَيْهِ». متفق
عَلَيْهِ، وهذا لفظ رواية مسلم
আবূ
যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যে কোন ব্যক্তি জ্ঞাতসারে অন্যকে নিজের বাপ বলে
দাবী করে, সে কুফরী করে। যে ব্যক্তি এমন কিছু দাবী করে, যা তার নয়, সে আমাদের
দলভুক্ত নয়। আর সে যেন নিজস্ব বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি
কাউকে ‘কাফের’ বলে ডাকে বা ‘আল্লাহর দুশমন’ বলে, অথচ বাস্তবে যদি সে তা না হয়,
তাহলে তার (বক্তার) উপর তা বর্তায়।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৫০৮,
মুসলিম ৫১, ইবনু মাজাহ ২৩১৯, আহমাদ ২০৯৫৪)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ৩৬৮
আল্লাহ
আযযা অজাল্ল ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিষিদ্ধ কর্মে
লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্কীকরণ
১৮১৫
وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم قَالَ: «إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَغَارُ، وَغَيْرَة اللهِ، أَنْ يَأْتِيَ
المَرْءُ مَا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ» . متفق عليه
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহর ঈর্ষা আছে এবং আল্লাহর ঈর্ষা জাগে, যখন মানুষ আল্লাহ কর্তৃক
হারামকৃত কোন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।’’
(সহীহুল বুখারী ৫২২৩,
৫২২২, তিরমিযী ১১৬৮, আহমাদ ২৬৪০৩, ২৬৪২৯, ২৬৪৩১)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ - ৩৬৯
হারামকৃত
কাজে লিপ্ত হয়ে পড়লে কি বলা ও করা কর্তব্য
১৮১৬
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ: «مَنْ حَلَفَ فَقَالَ في حَلِفِهِ : بِاللاَّتِ وَالعُزَّى، فَلْيَقُلْ :
لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَمَنْ قَالَ لِصَاحِبهِ : تَعَالَ أُقَامِرْكَ
فَلْيَتَصَدَّقْ» .متفق عليه
আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি কসম ক’রে বলে, ‘লাত ও উয্-যার কসম’, সে যেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
বলে। আর যে ব্যক্তি তার সঙ্গীকে বলে, ‘এস তোমার সাথে জুয়া খেলি’, সে যেন সাদকাহ
করে।’’
(সহীহুল বুখারী ৪৮৬০,
৬১০৭, ৬৩০১, ৬৬৫০, মুসলিম ১৬৪৭, তিরমিযী ১৫৪৫, নাসায়ী ৩৭৭৫, আবূ দাউদ ৩২৪৭, ইবনু মাজাহ
২০৯৬, আহমাদ ৮০২৫)
হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস
No comments