হাদীসের নামে জালিয়াতি - নবম অধ্যায় - জাল হাদীস চিহ্নিতকরণে বাঙালী আলিমগণ
৯. ১. মাওলানা রুহুল আমিন বশিরহাটী
অন্যান্য সকল মুসলিম সমাজের ন্যায় বাঙালী মুসলিম সমাজেও জাল হাদীস ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পবিত্র আঙিনাকে মিথ্যার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখতে বাঙালী আলিমগণ বিভিন্নভাবে সচেষ্ট থেকেছেন। জাল হাদীসের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও জাল হাদীসের ভয়াবহতা ও এ বিষয়ক মূলনীতি সংকলন করা ছাড়াও কোনো কোনো প্রসিদ্ধ বাঙালী আলিম জাল হাদীস সংকলনের মাধ্যমে জাল হাদীস প্রতিরোধে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। এখানে কয়েকজনের অবদান সংক্ষেপে পর্যালোচনা করছি।
৯. ১. মাওলানা রুহুল আমিন বশিরহাটী
বিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যতম প্রসিদ্ধ বাঙালী আলিম আল্লামা রুহুল আমিন (১৩০২/১৮৮২-১৩৬৪হি/১৯৪৫খৃ)। ফুরফরার পীর আবু বকর সিদ্দিকী (১২৬৩/১৮৪৬-১৩৫৮হি/১৯৩৯খৃ)-এর নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে তিনি জাল হাদীস বিষয়ক অনেক মূল্যবান তথ্য আলোচনা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি নমুনা উল্লেখ করছি।
৯. ১. ১. আপনি না হলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতাম না
শাইখ রুহুল আমিন লিখেন: ‘‘বর্ত্তমানে বেদাতি দলের যেরূপ বাড়াবাড়ি হইয়াছে, তাহাতে হজরতের ভবিষ্যদ্বাণী স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হইতেছে। হজরত নবি (ﷺ) শেষ যুগে একদল প্রবঞ্চক মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব হওয়ার কথা বলিয়াছেন, অবিকল তাহাই ঘটিয়াছে। এক্ষণে ‘তরিকতে রসুল রাহে হক’ নামক একখানি পুস্তক দেখিয়া অবাক হইলাম, বাগমারী নিবাসী আলিমদ্দিন শাহ নামক একজন অপরিচিত লোক কোরাণ ও হাদিছ ধবংস করার বাসনায় উক্ত বাতীল পুস্তক রচনা করিয়াছে।... লেখকের বিদ্যার দৌড় এত যে, কতকগুলি জাল বা অমূলক হাদিস লিখিয়া পুস্তকের কলেবর বৃদ্ধি করিয়াছে। ... লেখক এই পুস্তকের প্রথম পৃষ্ঠায় (لولاك لما خلقت الأفلاك) (তুমি না হলে নভোমন্ডলী সৃষ্টি করতাম না)- এই কথাটি হাদিস বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু মোল্লা আলি কারী ‘‘মওজুয়াতে কবির’’ গ্রন্থের ৫৯ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: সাগানী বলিয়াছেন যে, উক্ত হাদিসটি জাল। ফাতাওয়ায় আজিজি ১/১২২পৃ. ‘‘..উক্ত হাদিস: ‘লাওলাকা লামা খালাকতোল আফলাক’ কোন কেতাবে দেখি নাই। ফাতাওয়ায় এমদাদিয়া, ৪/১৯ পৃ. ‘‘এই উল্লিখিত হাদিসটি কোন কেতাবে দেখি নাই, ইহা স্পষ্ট জাল বলিয়া অনুমিত হয়।’’[1]
অন্যত্র মাওলানা রুহুল আমিন বলেন: ‘‘মিলাদ শরিফে মওজু (জাল) হাদিছ বা রেওয়াএত উল্লেখ করা নাজায়েজ, ইহা আমি কল্য সভায় প্রকাশ করিয়াছি। ‘লাওলাকা লামা খালাকতোল আফলাক’ কথাটী হাদিস নয়। মাওলানা শাহ আব্দুল আজিজ দেহলবী ও মাওলানা আশরাফ আলি ছাহেব নিজ নিজ ফতোয়ার কেতাবে লিখিয়াছেন যে, এই কথাটি কোন হাদিছের কেতাবে দৃষ্টিগোচর হয় নাই। ‘আকাশার (উকাশার প্রতিশোধ নেওয়ার) কথা জাল’ (একথা) সত্য, ইহা ওছুলে জোরজানিয়া টিকায় আছে।.. উর্দ্দু মিলাদ শরিফের কেতাবে কতকগুলি জাল কথা আছে, উহা পাঠ করা জায়েজ নহে, কিন্তু তাই বলিয়া মূল মিলাদ শরিফকে নাজায়েজ বলা যাইতে পারে না।.. ওয়াজ বর্ণনাকারি মৌলবি আলেমগণ ‘দোরাতোনাছেহিন কেতাবের’ রেওয়াএতগুলি উল্লেখ করিয়া ওয়াজ করিয়া থাকেন উক্ত কেতাবের অনেক রেওয়াএত জাল বা অমূলক।...’’[2]
[1] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বাগমারির ফকিরের ধোকাভঞ্জন, পৃ. ১-২।
[2] মোহাম্মাদ রুহুল আমিন, সিরাজগঞ্জের বাহাস, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮।
৯. ১. ২. যে নিজেকে চিনল সে তার রববকে চিনল
রুহুল আমিন লিখেছেন: ‘‘তিনি (তরিকতে রসুল (ﷺ)-বইয়ের লেখক) ৫ পৃষ্ঠায় এই কথাটি হাদিস বলিয়া লিখিয়াছেন: (من عرف نفسه فقد عرف ربه): (যে নিজেকে চিনল সে তার রববকে চিনল)। কিন্তু এমাম ছাখাবি মাকাছেদে হাসানার ১৯৮ পৃষ্ঠায় ও মোল্লা আলি কারী মওজুয়াতে কবির গ্রন্থের ৫৯ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: ‘‘.... ‘‘এবনে তায়মিয়া বলিয়াছেন, উহা জাল হাদিস। ছাময়ানি বলিয়াছেন, উহা হজরত নবি (ﷺ)-এর কথিত হাদিস বলিয়া প্রমাণিত হয় নাই। নাবাবি বলেন, উহা হজরত নবি (ﷺ) হইতে প্রমাণিত হয় নাই।’’[1]
[1] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বাগমারির ফকিরের ধোকাভঞ্জন, পৃ. ২।
৯. ১. ৩. যার পীর নেই তার পীর শয়তান
রুহুল আমিন লিখেন: ‘‘তিনি (তরিকতে রসুল-এর লেখক) উক্ত পুস্তকের ৬ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত কথাটি হাদিস বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন: (من لا شيخ له فشيخه الشيطان)- ‘‘যাহার পীর নাই তাহার পীর শয়তান’’। কিন্তু লেখক ইহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসে দেখিয়াছেন? ইহার সনদ কি? যতক্ষণ তিনি এই হাদিসের সনদ পেশ করিতে না পারেন ততক্ষণ উহা জাল হাদিস বলিয়া গণ্য হইবে।’’[1]
তিনি আরো বলেন: ‘‘কোরাণ, হাদিস, এলমে তাছাওয়ফে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ লেখক (وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ) (তাঁর দিকে অসীলা সন্ধান কর) আয়তটির অর্থে লিখিয়াছেন যে, পীর ধরা ফরজে আয়েন, যে ব্যক্তি পীরের নিকট মুরিদ না হইয়া মরিয়া যায় সে নিশ্চয় কাফের হইয়া মরে। পাঠক, পীর-শ্রেঠ মাওলানা শাহ অলিউল্লাহ দেহলবী (রহ) কওলোল জমিলের ১৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন (فاعلم أن البيعة سنة
...), অর্থ্যাৎ মুরিদ হওয়া সুন্নত । আরও লিখিয়াছেন (كان كالإجماع على أنها ليست بواجبة), অর্থ্যাৎ ‘‘মুরিদ হওয়া ওয়াজেব নহে, সুন্নত বলিয়া সমস্ত পীরও এমামগণের এজমা হইয়াছে।’’ আরও আছে যে (ولم ينكر أحد من الأئمة على تركها...), অর্থৎ দীন এসলামের এমামগণ মুরিদ না হওয়া ব্যক্তির উপর এনকার (আপত্তি) করেন নাই।... যে আয়াতে অছিলা চেষ্টা করার হুকুম করা হইয়াছে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তফসিরে বয়জবি ২/১৪৮ পৃষ্ঠায়, কবিরের ৩/৩৩৯ পৃষ্ঠায়, এবনে জরির ৬/১৩১/১৩২ পৃষ্ঠায়, মায়ালেম ও খাজেনের ২৩৯ পৃষ্ঠায় ও তফসিরে মাদারেকের ১/২১ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে, ‘অছিলা’ শব্দের অর্থ ‘এবাদত, কোরবত ও নেকির কার্য্যকলাপ’। আয়তের মর্ম্ম এই যে, তোমরা এবাদতের কার্য্যগুলি কর। ইহাতে ‘পীর অনুসন্ধান’ কিরূপে সাব্যস্ত হইবে? ... দ্বিতীয়, যাহার পীর নাই, তাহার পীর শয়তান হইবে, লেখক ইহাকে হাদিস বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু ইহা হাদিস নহে। তবে লেখকের পীর গ্রহণ ফরজ হওয়ার দাবী ইহাতে কিরুপে সাব্যস্ত হইবে? ...’’[2]
[1] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, প্রাগুক্ত, পৃ. ২-৩।
[2] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বাগমারির ফকিরের ধোকাভঞ্জন, পৃ. ৫১-৫৩।
৯. ১. ৪. ওলীগণ মরেন না
রুহুল আমিন লিখেন: ‘‘লেখকের (তরিকতে রসুল (ﷺ)-বইয়ের লেখক) বিদ্যার পরিমাণ এত যে, তিনি আরবি ভাষা ঠিক করিয়া লিখিতে পারেন না, তিনি উক্ত পুস্তকের ২ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: (الأولياء لا يموت): ‘অলিগণ মরেন না’। যে ব্যক্তি আরবী নহোমির পাঠ করিয়াছে, সেও বলিতে পারে যে, উক্ত এবারতের শব্দ ভ্রমাত্নক, প্রকৃত পক্ষে এইরূপ এবারত ঠিক হইবে (الأولياء لا يموتون)। ইহা শব্দের হিসাবে বলা হইল, কিন্তু এই শব্দগুলি কোরাণও নহে এবং হাদিস নহে। কোরাণ শরিফে আছে. ‘‘নিশ্চয় তুমি (হে মোহাম্মদ) মৃত এবং নিশ্চয় তাঁহারাও (প্রাচীন নবিগণও) মৃত। (সূরা যুমার: ৩০ আয়াত)’’ লেখকের দাবিকৃত কথাটি এই আয়াতের খেলাফ হইল কিনা?[1]
[1] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩।
৯. ১. ৫. হাদীস গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান জাল হাদীস
মাওলানা রুহুল আমিন (রাহ) জাল হাদীস বিষয়ক অনেক মূলনীতি তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। জাল হাদীসের পরিচয়, হাদীস, তফসীর, ফিকহ, তাসাউফ বিভিন্ন বিষয়ের প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান জাল হাদীস, হাদীস যাচাইয়ের মূলনীতি, ইত্যাদি বিষয়ে তিনি অনেক মৌলিক বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। কোনো হাদীস যাচাই ছাড়া গ্রহণ যেমন তিনি আপত্তি করেছেন, তেমনি কোনো গ্রন্থে জাল হাদীস বিদ্যমান থাকার কারণে গ্রন্থটির বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান বা বইটি পাঠ নিষিদ্ধ করার মত হঠকারিতার প্রতিবাদ করেছেন।
সহীহ বুখারী, তিরমিযী, ইবন মাজাহ ও অন্যান্য প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থের মধ্যে বিদ্যমান জাল হাদীস প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ‘‘জাল হাদিছ কাহাকে বলে? যে হাদিছটা মিথ্যাবাদী লোক কর্ত্তৃক কথিত হইয়াছে। উহাকে জাল হাদিছ বলা হয়। এমাম এবনো-হাজার আস্কালানি ফতহোল বারির মোকদ্দমার লিখিয়াছেন যে, ছহিহ বোখারির কতকগুলি এরূপ রাবি আছে যাহাদিগকে বিদ্ধানগণ মিথ্যাবাদী স্থির করিয়াছেন। এমাম বোখারি, নাইম বেনে হাম্মাদ (نُعَيْم بن حَمَّاد) হইতে ছহিহ বোখারিতে এই হাদিছটা উ&&ল্লখ করিয়াছেন: আমর বেনে ময়মুন বলিয়াছেন, আমি জাহেলিয়তের সময় একটি বানরকে দেখিয়াছিলাম যে, সেই বানরটা ব্যভিচার (জেনা) করিয়াছিল এবং সমস্ত বানর সমবেতভাবে উক্ত বানরকে প্রস্তরাঘাত করিয়াছিল। ইহাতে আমিও তাহাদের সহিত উহাকে প্রস্তরাঘাত করিয়াছিলাম। আহমদী প্রেসে মুদ্রিত ছহিহ বোখারি, ১-৫৪৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। এমাম বোখারি এই হাদিছটি উল্লেখ করতঃ বন্য পশুর জেনা ও উহাদের উপর হদ জারি করার মত সমর্থন করিয়াছেন। কিন্তু ইহা নইম বেনে হাম্মাদের জাল কথা। মিজানোল-এতেদাল, ৩-২৪১ পৃষ্ঠা: (এমাম) আজদি বলিয়াছেন যে, নইম বেনে হাম্মাদ হাদিছ প্রস্ত্তত করিত এবং (এমাম আবু হানিফা) নোমানের অপবাদের উদ্দেশ্যে মিথ্যা গল্প প্রস্ত্তত করিত। এই নইম বর্ণনা করিয়াছে যে, খোদাতায়ালা একটি যুবকের ন্যায় আকৃতি-ধারী, তাঁহার পদদ্বয় সবুজ রঙ্গের ফলকে আছে এবং উহাতে সুবর্ণের দুখানা পাদু্কা (জুতা) আছে। ... (আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী রচিত) আজবোয়া ফাজেলা ৪৫-৪৬ পৃষ্ঠা: এবনো মাজার মধ্যে কতকগুলি জাল হাদিছ আছে। এইরূপ ছেহাহ-ছেত্ত্বার অন্যান্য কেতাবগুলির অবস্থা অনুমান করুন। ছোনানে দারুকুৎনি ও ছোনানে বয়হকি ইত্যাদিতে অনেক জাল হাদিছ আছে।’’
হাদীসের সনদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের মতামত গ্রহণের মূলনীতি, সুনান তিরমিযীর মধ্যে বিদ্যমান দুর্বল ও জাল হাদীস এবং এ বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের মতামত ব্যাখ্যা করে তিনি লিখেন: ‘‘বর্ত্তমানে কদমবুছির ফতোয়া নামে একখানা পুস্তক বঙ্গ-ভাষায় মুদ্রিত হইয়াছে, ... উক্ত ফৎওয়াতে কতকগুলি জাল হাদিছ হজরতের ছহিহ হাদিছ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে ... লেখক সাহেব উক্ত পুস্তকের ৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন .... ‘যথা তেরমেজি শরিফের (হাদিছে) আসিয়াছে: ..... অতঃপর তাহারা (য়িহুদিরা) রছুলুল্লাহ (ﷺ)
এর পদদ্বয় চুম্বন করিয়াছিল।’ আমাদের উত্তর:- হাঁ, তেরমেজি শরীফের ২য় খন্ডে (৯৮ পৃষ্ঠায়) উক্ত হাদিছটি উল্লিখিত হইয়াছে।[1] এমাম তেরমেজি উক্ত হাদিছ সহিহ বলিলেও তদপেক্ষা যোগ্যতম মোহাদ্দেছ এমাম নাছায়ি এবং এমাম মোঞ্জারি কি বলিয়াছেন, তাহা মুফতি সাহেব দেখিয়াছেন কি? হেদায়ার টীকা, আয়নি, ৪র্থ খন্ড, ২৫৪ পৃষ্ঠা: ‘‘(এমাম) নাছায়ী বলিয়াছেন, উক্ত হাদিছটী মোনকার (জইফ)। (এমাম) মোঞ্জরি বলিয়াছেন, (উক্ত হাদিসের রাবি) আবদুল্লাহ বেনে ছালেমার জন্য হাদিসটী মোনকার (জইফ) হইয়াছে, কেননা, সে ব্যক্তি দোষান্বিত। নাছবোর রাইয়াহ ১/৩২/৩৩ পৃষ্ঠা। (এমাম) তেরমেজি কছির বেনে আবদুল্লাহ হইতে ঈদের বার তকবীর সংক্রান্ত একটী হাদিস রেওয়াএত করিয়া উহা ‘‘আছ’হ’ (সমধিক সহিহ) বা হাছান বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন; কিন্তু এমাম আহমদ, এবনোমইন, নাছায়ী, দারকুৎনি, আবু জোরয়া শাফেয়ি উক্ত কছির বেনে আবদুল্লাহকে পরিত্যক্ত, জাল হাদিছ প্রস্ত্ততকারী ইত্যাদি বলিয়া হাদিসটি রদ করিয়াছেন। আরও উক্ত পৃষ্ঠা- সারমর্ম: ‘‘(এমাম) এবনো দাহইয়া বলিয়াছেন, তেরমেজির নিজ কেতাবে অনেক হাদিস হাছান (মধ্যম শ্রেণীর বা উৎকৃষ্ট) বলিয়া কথিত হইয়াছে, অথচ তৎসমস্ত জাল হাদিছ এবং তৎসমস্তের ছনদ বাতীল।’’[2]
ইমাম হাকিম নিসাপূরী সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক’ গ্রন্থে বিদ্যমান জাল হাদীস বিষয়ে তিনি বলেন: ‘‘উক্ত পুস্তক (কদমবুছির ফতোয়া) ৭/৮ পৃষ্ঠা: আল্লামা শামি কদমবুছি জায়েজ হওয়া সমর্থন করিতে গিয়া নিমোক্ত হাদিসটি হাকেমের ছনদে বর্ণনা করিয়াছেন। একদা এক ব্যক্তি নবি করিম (ﷺ)-এর নিকট আসিয়া বলিয়াছিল, হে রছুলুল্লাহ, আমাকে এমন কিছু দেখান যাহাতে আমার দুঢ় বিশ্বাস হয় ... (হজরত তাহাই করিলেন)। অবশেষে সে ব্যক্তি নবি করিম (ﷺ)-এর অনুমতি লইয়া তাঁহার মস্তকে এবং পায়ে চুম্বন করিল। আমাদের উত্তর: হেদায়ার টীকা আয়নি ৪/২৫৫ পৃষ্ঠা: এমাম জাহাবী বলিয়াছেন, এই হাদিসের একজন রাবি আছেম বেনে হাববান পরিত্যক্ত (জাল হাদিস প্রস্ত্ততকারী)। ইহাতে বুঝা গেল যে, হাকেমের হাদিসটি বাতীল। মুফতি সাহেবের এইরূপ বাতীল হাদিস দ্বারা প্রমাণ পেশ করা ঠিক হয় নাই এবং উহা কদমবুছি জায়েজ হওয়ার প্রমাণ হইতে পারে না।’’[3]
[1] তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৭২-৭৩, নং ২৭৩৩Anchor।
[2] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক বা কদমবুছির ফতোয়ার সমালোচনা, পৃ ৪-৫। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গ্রন্থকার রচিত ‘সালাতুল ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর’ বইটি পড়ুন।
[3] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক, পৃ ১০-১১।
৯. ১. ৬. তাফসীর-গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান জাল হাদীস
তাফসীর গ্রন্থসমূহের জাল হাদীস প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ‘‘এক্ষণে আসুন তফছিরগুলির মধ্যে জাল হাদিছ আছে কি তাহার সমালোচনা করা হউক। তফছিরে এবনো জরির ও তফছিরে এবনো কছির অতি উৎকৃষ্ঠ তফছির, এই দুই তফছিরের হাদিগুলি গ্রহণের উপযুক্ত। তদ্ব্যতীতে অন্যান্য তফছিরে অনেক জাল হাদিছ আছে, (ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর রচিত) তফছিরে কবিরের ১/৩৪ পৃষ্ঠায় (أنا أفصح من نطق بالضاد)- (দোয়াদ উচ্চারণকারীদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি বাক-সৌন্দর্যের অধিকারী)-এই কথাটি হাদিছ বলিয়া লিখিত আছে, কিন্তু ইহার কোন ছনদ বা মূল হাদিছের কেতাবে নাই। তমইজোল কালাম মেনাল খবিছ ৪০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। তফছিরে আহমদির ২৭ পৃষ্ঠায় ছুরা জেনের তফছিরে এই মর্ম্মের একটি হাদিছ আছে: ‘মছজিদে দুনইয়ার কথা বলিলে চল্লিশ বৎসরের আমল (এবাদত) নষ্ট হইয়া যায়।’’ ইহাকে হাদিছ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে, কিন্তু মওজুয়াতে কবিরের ৬৯ পৃষ্ঠায় উহাকে জাল হাদিস বলা হইয়াছে। এইরূপ তফছির বয়জবি ও কাশ্যাফে প্রত্যেক ছুরার শেষাংশে যে ছুরার ফজিলত লেখা আছে, তাহার অধিকাংশ জাল হাদিছ। এক্ষেত্রে জাল হাদিছগুলি জাল বুঝিতে বা জাল বলিয়া প্রকাশ করিতে হইবে, তাই বলিয়া কি তফছির পাঠ নাজায়েজ বলিয়া প্রকাশ করিতে হইবে?’’[1]
[1] মোহাম্মাদ রুহুল আমিন, সিরাজগঞ্জের বাহাস, পৃষ্ঠা ৪০-৪১।
৯. ১. ৭. ফিকহ গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান জাল হাদীস
ফিকহী গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান হাদীসগুলি যাচাই ছাড়া গ্রহণ করা সমাজে জাল হাদীস প্রসারের অন্যতম কারণ। আল্লামা রুহুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন: ‘‘এইরূপ ফেকহের কেতাবে দুই চারটি জাল হাদিছ আছে, হেদায়া কেতাবে দুই একটি জাল হাদিছ আছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকেরা হেদায়া শিক্ষা দেওয়া কালে জাল হাদিছ গুলির অবস্থা শিষ্যদিগকে জ্ঞাত করাইয়া দিবেন, ইহাই তাহাদের কর্ত্তব্য। ফেকহের কেতাবে দুই চারিটি জাল হাদিছ আছে বলিয়া কি ফেকহ শিক্ষা করা নিষেধ হইয়া যাইবে?’’[1]
অন্যত্র তিনি বলেন: উক্ত পুস্তক (কদমবুছির ফতোয়া) ৬ পৃষ্ঠা: ‘‘হজরত রছুলে করিম (ﷺ) আরও ফরমাইয়াছেন ‘‘যে ব্যক্তি আপন মায়ের পায়ে চুমা দিল, সে যেন বেহেস্তের চৌকাঠে চুমা দিল।’’ দোর্রোল মোখতার, পঞ্চম খন্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা। আমাদের উত্তর: মিছরি ছাপা দোর্রোল মোখতারের পঞ্চম খন্ড নাই। অবশ্য মিছরি ছাপা শামি কেতাবের পাঁচ খন্ড আছে। উক্ত শামি কেতাবের হাসিয়াতে দোর্রোল মোখতার মুদ্রিত হইয়াছে। এস্তাম্বুলের মুদ্রিত শামি কেতাবের হাশিয়ায় দোর্রোল মোখতারের ৫ম খন্ডে ৩৬১ পৃষ্ঠার এবং মিসরি ছাপার ৫/২৫৯ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি বিনা ছনদে উল্লিখিত হইয়াছে। দোর্রোল মোখতার ইত্যাদি ফেকহের কেতাবে কোন কথা হাদিস বলিয়া লিখিত থাকিলেও উহা যে প্রকৃতপক্ষে হজরতের হাদিস হইবে ইহা বলা যায় না। দোর্রোল মোখতারেরর ১/৩৫ পৃষ্ঠায় এই কথাটি: ‘বেহেস্তবাসিদিগের ভাষা আরবি এবং দরি ফার্সি হইবে’- হাদিছ বলিয়া লিখিত হইয়াছে। কিন্তু মোহাদ্দেছ প্রবর আল্লামা মোল্লা আলিকারী মওজুয়াত কবির কেতাবের ৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন যে, উহা হাদিস নহে, বরং জাল কথা। এজন্য কেবল ফেকহের কেতাবে কোন কথা হাদিস বলিয়া লেখা থাকিলে, দেখিতে হইবে যে, উহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে কিনা? উহার সহিহ ছনদ আছে কি না? যতক্ষণ ইহা না জানা যায়, ততক্ষণ উহা হাদিস বলিয়া দাবি করা যায় না। এক্ষণে মুফতি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি যে, উল্লিখিত হাদিসটি কোন হাদিসের কেতাবে আছে? উহার ছনদ কি? তিনি যতক্ষণ উহা প্রকাশ করিতে না পারেন ততক্ষণ উহা হাদিস বলিয়া গণ্য হইবে না।’’[2]
তিনি আরো বলেন: ‘‘উক্ত পুস্তক (কদমবুছির ফতোয়া) ৮ পৃষ্ঠা: ... আল্লামা জয়লয়ি তাবইনো হাকায়েক কেতাবের ৬ষ্ঠ খন্ডের ২৫ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন, কাফি কেতাবে আছে যে, প্রান্তরবাসীগণ নবি (ﷺ)
এর হস্তপদ চুম্বন করিতেন। .... কাফি ফেকহের কেতাব, উহা কোন হাদিসের কেতাব নহে, উহাতে কোন কথা হাদিস বলিয়া লিখিত থাকিলেই যে হাদিস হইবে, ইহা স্বীকার করা যাইতে পারে না। মওজুয়াতে কবিরের ৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে, কাফি প্রণেতা বলিয়াছেন যে, হাদিসে আছে, বেহেশতবাসীদিগের ভাষা আরবি ও ফার্সি হইবে কিন্তু ইহা হাদিস নহে, বরং জাল কথা। এক্ষণে আমাদের বক্তব্য এই যে, কাফি কেতাবের লিখিত কথাটি কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে? উহার সনদ কি? মুফতি সাহেব অগ্রে উহার ছনদ বর্ণনা করুন, পরে উহা প্রমাণস্থলে ব্যবহার করিবেন।’’[3]
তিনি আরো বলেন: ‘‘উক্ত কেতাব ৯ পৃষ্ঠা: ফতোয়া হাবি কেতাবে আসিয়াছে একব্যক্তি নবী করিম ﷺ এর নিকট আসিয়া বলিয়াছিল, হে রছুলুল্লাহ ﷺ, আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, বেহেশতের চৌকাঠে এবং হুরগণকে চুম্বন করিব, তখন হজরত তাহাকে তাহার মায়ের পায়ে এবং বাপের কপালে চুম্বন করিতে আদেশ করিলেন। আমাদের উত্তর: ইহা ফেকহের কেতাবের হাদিস, ইহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে এবং ইহার সনদ কি, মুফতি সাহেব যতক্ষণ প্রকাশ করিতে না পারেন, ততক্ষণ ইহা হাদিস বলিয়া প্রকাশ করা জায়েজ হইতে পারে না। মোল্লা আলি কারী মওজুয়াতে কবির কেতাবের ৭৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষে জুমায় একটি ফরজ নামাজ কাজা পড়িবে তাহার জীবনের ৭০ বৎসরের প্রত্যেক নামাজের কাজা আদায় হইয়া যাইবে’, এই হাদিসটি নিশ্চয় বাতীল কেননা কোন এবাদত বহু বৎসরের কাজার বিনিময় হইতে পারে না, ইহার উপর এজমা হইয়াছে। নেহায়া কিম্বা হেদায়ার অবশিষ্ট টীকাগুলিতে কাজায় ওমরির কথা উল্লিখিত থাকিলেও উহা অগ্রাহ্য, যেহেতু তাহারা মোহাদ্দেস ছিলেন না এবং তাহারা কোন মোহাদ্দেস পর্যন্ত হাদিসের সনদ উল্লেখ করেন নাই। জনাব মুফতি সাহেব, যখন নেহায়া, কেফায়া, এনায়া কেতাবের বিনা ছনদের হাদিস বাতীল হইল, তখন হাবি কেতাবের বিনা ছনদের হাদিস কেন অগ্রাহ্য হইবে না? এমাম জালালদ্দিন সিউতি লয়ালিয়ে মছনুয়া কেতাবের ৯০ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: ‘এবনো আদি ও বয়হকি এই হাদিসটি উল্লেখ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি মাতার ললাট চুম্বন করে উহা তাহার পক্ষে দোজখের অন্তরাল স্বরূপ হইবে। ইহা জইফ হাদিস।’ ইহাতে বুঝা যায় যে, হাবি কেতাবের হাদিসটি বাতীল।’’[4]
[1] মোহাম্মাদ রুহুল আমিন, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪১।
[2] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক, পৃ ৬-৭।
[3] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, প্রাগুক্ত, পৃ ১২-১৩।
[4] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক, পৃ ১৪-১৬।
৯. ১. ৮. তাসাউফ গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান জাল হাদীস
আল্লামা রুহুল আমিন বলেন: ‘‘এইরূপ তাছাওয়াফের কেতাবে অনেক জাল হাদিছ আছে, পীরান পীর ছাহেব গুনইয়াতোত্তালেবিন কেতাবের ১৪৫-১৪৬ পৃষ্ঠায় নইম বেনে হাম্মদের ছনদে নিম্নোক্ত জাল হাদিছটি উল্লেখ করিয়াছেন: ‘হজরত বলিয়াছেন আমার উম্মাত ৭৩ ফেরকা হইবে, তম্মধ্যে আমার উম্মতের মধ্যে প্রধান বিভ্রাটকারী উহারা হইবে- যাহারা আপন আপন রায়ে কার্য্যসমুহে কেয়াছ করিবে এবং হালালকে হারাম করিবে ও হারামকে হালাল করিবে। মিজানোল-এতেদাল ৩।২৩৮পৃষ্ঠা: ... মোহাম্মদ বেনে আলি বলেন, আমি উক্ত হাদিছ সম্বন্ধে (এমাম) এহইয়া বেনে মইনের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম ইহাতে তিনি বলিয়াছিলেন, উক্ত হাদিছের কোন মূল নাই (অর্থাৎ উহা বাতীল হাদিছ)। এইরূপ পীরান পীরের ‘ছের্রোল আছরার’ কেতাবের ২/৯ পৃষ্ঠায় আছে: ‘‘আমি খেদাকে দাড়িহীন যুবকের আকৃতিতে দেখিয়াছি।’’ ইহাকে হাদিছ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। কিন্তু মিজানোল এতেদাল কেতাবে ইহাকে জাল কথা বলিয়া প্রমাণ করা হইয়াছে। এইরূপ তাছাওয়াফের অনেক কেতাবে দুই চারটি জাল হাদিছ দেখিতে পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে তাছাওয়াফের কেতাব পড়া নাজায়েজ হইবে কি?...’’[1]
[1] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, সিরাজগঞ্জের বাহাস, পৃ.৪১-৪২।
৯. ২. আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী ফুরফুরাবী
ফুরফুরার পীর আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী (১৩১২/১৯০৬-১৪২৩/২০০২) বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী আলিম ও পীর। তিনি তাঁর পিতা ফুরফুরার পীর আবূ বকর সিদ্দিকীর নির্দেশে ‘‘আল-মাউযূআত’ নামে জাল হাদীস সংকলনে উর্দুভাষায় একটি পুস্তক রচনা করেন। ১৯২৯ খৃস্টাব্দে তিনি গ্রন্থটি সংকলন সমাপ্ত করেন ১৯৩৩ খৃস্টাব্দের পরে তিনি গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। ১৯৪৩ খৃস্টাব্দে মাসিক নেদায়ে ইসলামের মাধ্যমে তিনি বইটির বঙ্গানুবাদ শুরু করেন। আবু জাফর সিদ্দিকীর পূর্বে কোনো ভারতীয় আলিম কোনো ভারতীয় ভাষায় এ বিষয়ে গ্রন্থ লিখেছেন বলে জানা যায় না। বিশেষত কোনো বাঙালী আলিম রচিত জাল হাদীস বিষয়ক সর্বপ্রথম গ্রন্থ এটি।
গ্রন্থটির ভূমিকায় তিনি সমাজে জাল হাদীসের প্রসার, এর ভয়াবহতা, এবং জাল হাদীস বিষয়ক কিছু মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ইলমুর রিজাল ও জাল হাদীস বিষয়ক যে সকল গ্রন্থের উপর তিনি নির্ভর করেছেন সেগুলির তালিকা প্রদান করেছেন। মূল পুস্তকে তিনি আরবী বর্ণমালার ক্রমানুসারে (Alphabeticlly) সমাজে প্রচলিত প্রায় সাড়ে চার শত জাল হাদীস সংকলন করেছেন। প্রতিটি হাদীসের মূল আরবী এবং উর্দু অনুবাদ, তথ্য সূত্র উল্লেখ করেছেন। মাঝে মাঝে অনেক মূল্যবান তথ্য উল্লেখ করেছেন। পরিশিষ্টে বাংলার মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ভিত্তিহীন অনেক গল্প, কাহিনী, কুসংস্কার ও ভুল মাসআলা আলোচনা করেছেন। সর্বোপরি জাল হাদীস নির্ভর বা ইসলামী আকীদা বিরোধী বইপুস্তকের একটি তালিকা বইটির শেষে উল্লেখ করেছেন।
গ্রন্থের একেবারে শেষে গ্রন্থকার আল্লামা আবু জাফর সিদ্দিকী ‘‘নিবেদন’’ নামে নিম্নের নিবেদনটি লিখেছেন: ‘‘পাঠকদের সমীপে এ গোনাহগারের নিবেদন এই যে, ভাল দুআর সাথে স্মরণ করবেন, যেন আল্লাহ এ ব্যক্তির গোনাহগুলি ক্ষমা করে দেন। আর মানবীয় দুর্বলতার কারণে যদি কোনো ভুল পাওয়া যায়, অথবা কোনো হাদীস মাউযূ (জাল) নয় বলে সন্দেহ হয়, তবে সনদ-সহ হাদীসটি অনুলিপি করে আমার নিকট পাঠিয়ে দিবেন; যেন রাবীগণের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ক ‘আসমাউর রিজাল’ গ্রন্থাদির আলোকে সে বিষয়ে তাহকীক বা গবেষণা করা যায়। যদি প্রকৃতই সে হাদীসটি কোনো প্রকারের হাদীস বলে প্রমাণিত হয় তবে দ্বিতীয় মুদ্রণে সে হাদীসটি বাদ দেওয়া হবে। শুধু কিতাবের বরাত দেওয়া যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ এ কথা বলা যথেষ্ট নয় যে, অমুক গ্রন্থে এ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যদি কোনো গ্রন্থ ইলম হাদীসের ভাল গ্রন্থ হয়, সে গ্রন্থে জাল হাদীসের আধিক্য না থাকে এবং সে গ্রন্থের লেখকও ভাল হন তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।’’ শেষ। ফুরফুরা শরীফ, রবীউস সানী মাস, ১৩৪৮ হি (সেপ্টেম্বর ১৯২৯খৃ)
৯. ২. ১. যে সকল হাদীস জাল বলে চিহ্নিত করেছেন
আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী তাঁর গ্রন্থে যে সকল জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
1. আবূ হানীফা আমার উম্মাতের প্রদীপ।
2. তোমরা আলিমদের অনুসরণ করবে; কারণ তারা দুনিয়ার প্রদীপ ও আখিরাতের বাতি।
3. রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোনো হাজত-প্রয়োজনের ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর আঙটিতে একটি সুতা বেঁধে নিতেন।
4. নিয়্যাত বিশুদ্ধ কর এবং বিজন মরুভূমিতে বাস কর।
5. আত্মতুষ্টি সকল রোগের মূল।
6. তোমরা সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, কারণ তাতে দশটি বরকত রয়েছে..
7. (আল্লাহ বলেন) আমি আমার নিজের উপর শপথ করেছি যে, আহমদ ও মুহাম্মাদ নামের কাউকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো না।
8. আলিম বা তালিব ইলম যখন কোনো গ্রাম-মহল্লা দিয়ে গমন করেন তখন আল্লাহ সে গ্রাম বা মহল্লার গোরস্থানের আযাব ৪০ দিনের জন্য তুলে নেন।
9. মৃতব্যক্তি ৭ দিন পর্যন্ত তার বাড়ির মানুষদেরকে দেখতে পায়।
10.
আল্লাহ আশূরার দিনে আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন।
11.
জান্নাতের বাসিন্দাগণ দাড়ি বিহীন হবেন, শুধু মূসা ইবনু ইমরান (আ) বাদে, তার দাড়ি হবে নাভী পর্যন্ত দীর্ঘ।
12.
কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর শত্রু যদিও সে দরবেশ হয়।
13.
যাবারজাদ পাথরের আঙটি ব্যবহার কর; কারণ এতে কাঠিন্য বিহীন সহজতা রয়েছে।
14.
যামরাদ পাথরের আঙটি ব্যবহার...কারণ তা দারিদ্র্য দূরীভূত করে।
15.
দেশপ্রেম ঈমানের অংশ।
16.
মসজিদের মধ্যে কথাবার্তা নেকী বা সাওয়াব খেয়ে ফেলে....।
17.
নেককারদের নেককর্ম নৈকট্যপ্রাপ্তদের পাপ।
18.
বিবাহিতের দু রাকআত অবিবাহিতের ৭০ রাকআত থেকে উত্তম।
19.
মুমিনের লালা সুস্থতা বা রোগমুক্তি।
20.
ছয়টি কর্ম বিস্মৃতি বা স্মৃতিহীনতা জন্ম দেয়: ইঁদুরের ঝুটা ভক্ষণ, জীবন্ত উকুন আগুনে ফেলে দেওয়া, বদ্ধ পানিতে পেশাব করা, আঠা জাতীয় দ্রব্য (গাম) চেবানো, টক আপেল খাওয়া।
21.
বিলালের সীন আল্লাহর কাছে শীন।
22.
মুমিনের ওযুর অবশিষ্ট পান করার মধ্যে ৭০টি রোগের প্রতিকার...।
23.
দিবসের সালাত বোবা (কারণ এতে কুরআন পাঠ শোনা যায় না)।
24.
সাপ্তাহের প্রতি দিন ও রাতের সালাত বিষয়ক হাদীস... জুমুআর রাতে ১২ রাকআত সালাত ১০ বার করে সূরা ইখলাস ....।
25.
আরাফার দিনের সিয়াম ষাট বছরের সিয়ামের মত।
26.
কৃপণের খাদ্য ব্যাধি এবং দানশীলের খাদ্য ঔষধ।
27.
এক মুহূর্ত ইলম সন্ধান করা সারারাত সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম...
28.
ইলম সন্ধান করা আল্লাহর নিকট সালাত, সিয়াম, হজ্জ ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ থেকে উত্তম।
29.
তোমরা লবণ ব্যবহার করবে; কারণ তা ৭০টি রোগের প্রতিকার।
30.
ইলমু বাতিন আমার ও আমার প্রিয়পাত্র ও অলীগণের মধ্যকার গোপন বিষয়। আমি তা তাদের অন্তরের মধ্যে প্রদান করি। কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা বা কোনো নবী-রাসূলও তা জানতে পারেন না।
31.
আমার উম্মাতের আলিমগণ বনী ইসরাঈলের নবীগণের মত।
32.
সকল মাসের মধ্যে রজব মাসের মর্যাদা সকল কথার উপরে কুরআনের মর্যাদার মত।
33.
দারিদ্র আমার গৌরব এবং আমি তারই অহংকার করি।
34.
একজন আলিমের মাজলিসে উপস্থিত হওয়া এক হাজার জানাযায় শরীক হওয়া থেকে, এক হাজার রাকআত সালাত থেকে, এক হাজার হজ্জ এবং এক হাজার জিহাদ-যুদ্ধাভিযান থেকে উত্তম।
35.
‘‘কুল’’ সূরাগুলি পাঠ করা দারিদ্র্য থেকে নিরাপত্তা।
36.
মুমিনের অন্তর (কালব) আল্লাহর গৃহ।
37.
সুলাইমান (আ)-এর আংটির নক্সা বা খোদিত কথা ছিল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
38.
দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয়, যদিও সে পাপাচারী হয়। আর কৃপণ আল্লাহর শত্রু, যদিও সে দরবেশ হয়।
39.
আমি গুপ্ত ভান্ডার ছিলাম...।
40.
আমাকে যখন মি’রাজে নেওয়া হলো তখন প্রথম আসমানে আমি সবুজ ঝুটি ও সাদা পালক ওয়ালা একটি মোরগ দেখলাম। মোরগটির পদদ্বয় দিগন্তে ও মাথা আরশের নিকট ..... ।
41.
যে ব্যক্তি অমুক সূরা পাঠ করবে, সে অমুক সাওয়াব লাভ করবে...
42.
তুমি না হলে আমি মহাকাশসমূহ (বিশ্ব) সৃষ্টি করতাম না।
43.
আমার আকাশ ও আমার যমীন আমাকে ধারণ করার প্রশস্ততা পায় নি; কিন্তু আমার মুমিন বান্দার অন্তর আমাকে ধারণের প্রশস্ততা পেয়েছে
44.
জ্ঞানীদের কালি শহীদদের রক্ত থেকে অধিক মর্যাদাময়।
45.
তিন বার করে কুলি করা ও নাকের মধ্যে পানি দেওয়া নাপাক ব্যক্তির জন্য (ফরয গোসলের ক্ষেত্রে) ফরয।
46.
যে ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলবে আল্লাহ তার ৪০ বৎসরের আমল বিনষ্ট করে দিবেন।
47.
যে কোনো আলিমের কাছে বসল সে যেন একজন নবীর কাছে বসল।
48.
যে আলিমগণের সাথে সাক্ষাত করল সে যেন আমার সাথেই সাক্ষাত করল। যে ব্যক্তি আলিমগণের সাথে হাত মেলাল সে যেন আমার সাথেই হাত মেলাল। যে ব্যক্তি আলিমগণের কাছে বসল সে যেন আমার কাছেই বসল। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমার কাছে বসল সে কিয়ামতের দিনও আমার কাছেই বসবে।
49.
যে নিজেকে চিনল সে তার প্রতিপালককে চিনল।
50.
যে ব্যক্তি তার ভাইকে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত শিক্ষা দিল সে তার মালিক হয়ে গেল।
51.
যে ব্যক্তি তার ভাইকে ওযূ করতে এক পাত্র পানি এগিয়ে দিল সে যেন তাকে একটি দ্রুতগামী ঘোড়া উপহার দিল।
52.
যার সন্তান হলো এবং সে নামের বরকত লাভের উদ্দেশ্যে সন্তানের নাম মুহাম্মাদ রাখল সে ব্যক্তি ও তার সন্তান জান্নাতী হবে।
53.
যে ব্যক্তি এক রাত্রিতে সূরা সাজদা, সূরা ইয়াসীন, সূরা কামার ও সূরা মুলক পাঠ করে সূরাগুলি তার জন্য নূর ও শয়তান থেকে প্রতিরক্ষা হবে।
54.
যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করব।
55.
তোমরা মৃত্যু বরণ কর তোমাদের মৃত্যুর আগেই।
56.
যে ব্যক্তি আযানের সময় কথা বলে তার ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
57.
আলিমের দোয়াতের এক ফোঁটা কালি আল্লাহর নিকট একশত শহীদের ঘামের থেকে বেশি প্রিয়।
58.
আলিমের নিদ্রা ইবাদত।
59.
আহারকারীর উপরে কোনো সালাম নেই।
60.
জাবিরের (রা) দাওয়াতের দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ দু পুত্রকে জীবিত করেন।
61.
রাসূলুল্লাহ ﷺ পাদুকা খুলে আরশে যাওয়া, আরশে পবিত্র কদম রাখা, আরশে দাঁড়ানো বা বসা.....।
62.
মিরাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন জুতা পরিহিত অবস্থায় আরশে পৌঁছালেন, তখন আরশ শান্ত হয়, এর আগে আরশ অস্থির ছিল .....।
63.
আলী ও ফাতিমা (রাঃ) হাসান-হুসাইনকে এক ফকীরকে দান করেছিলেন।
64.
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর মসজিদে গমন, ও উকাশার প্রতিশোধ গ্রহণ...।
65.
বিলাল (রা)-এর একটি কাহিনী ... রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ইন্তেকালের পর তিনি মদীনা থেকে চলে যান। পুনরায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে স্বপ্নে দেখে মদীনায় আগমন করেন। ... আযান দেন...ইত্যাদি।
66.
সালাতুর রাগাইব বিষয়ক হাদীস, রজব মাসের বিভিন্ন রাতের সালাত বিষয়ক হাদীস, ২৭ রজব রাত্রির সালাত, মধ্য শাবানের রাত বা শবে বরাতের রাতে ১০০ রাক‘আত সালাত, প্রত্যেক রাকআতে ১০ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ- এগুলি সবই জাল।
67.
মুজিযায়ে কদম শরীফ- পাথর মোম হয়ে পায়ের চিহ্ন ধারণ করা...।
68.
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মি’রাজ শরীফে তাশরীফ আনেন, তখন বড় পীর সাহেব কাঁধ বাড়িয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, হে মুহিউদ্দিন, যাও, তোমার পা সকল ওলীদের কাঁধের উপর। এটি সম্পূর্ণ অসত্য। যে এ গল্প বানিয়েছে সে মালঊন-অভিশপ্ত।
69.
আবূ দুজানার তদবীর...।
70.
বিধবা দ্বিতীয় বিবাহ করলে সে আখিরাতে লাইলি মজনুর বিবাহ দেখতে পারবে না। ... আখিরাতে লাইলি-মজনুর বিবাহ হবে...।
71.
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পবিত্র দাঁত উহদের যুদ্ধে শহীদ হয়, তখন তিনি হালুয়া খেয়েছিলেন। এজন্য ‘শবে বরাতে’ হালুয়া পাকানো উচিত।...
72.
রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘‘গযল’’ বা সামা-সঙ্গীত শ্রবণ করেন এবং এ সময়ে ‘‘হাল’’ বা ‘‘ইশকের উন্মত্ততা’’-র অবস্থায় তিনি তাঁর পবিত্র চাদর ছিড়ে বণ্টন করে দেন.... ইত্যাদি কাহিনী সবই জাল ও বানোয়াট।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, আল-মাউযূআত: উর্দু, (কলকাতা, পীরযাদা কুতুবুদ্দীন সিদ্দিকী প্রকাশিত) পৃষ্ঠা ১২-৯৯; আল-মাউযূআত: বাংলা (খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, ফুরফুরার পীর আবূ জাফর সিদ্দিকীর (রাহ) আল-মাউযূআত: একটি বিশ্লেষণাত্মক পর্যালোচনা), পৃ. ১৯৯-৩০৬।
৯. ২. ২. যে সকল মত, বিশ্বাস বা কর্মকে ভিত্তিহীন বলেছেন
সমাজে অনেক বিশ্বাস, কর্ম বা ধারণা বিদ্যমান যার কোনো ভিত্তি কুরআন, হাদীস বা ফিকহে পাওয়া যায় না। আল্লামা আবু জাফর সিদ্দিকী তাঁর গ্রন্থের শেষে ‘‘কিছু ভিত্তিহীন কথা’’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে এ জাতীয় অনেক কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
1. পাখা টানতে টানতে যদি শরীরে লাগে তবে সে জমীনে টোকা দেওয়া।
2. হাসিঠাট্টা বা মশকরাচ্ছলে যদি কেউ ছুরি বা কাটারি দিয়ে কাউকে খোঁচা দেয় তাহলে সেটিকে মাটিতে ঠেকানো বা ঠোকা জরুরী। এটিও ভিত্তিহীন কথা। এরূপ করা না-জায়েয।
3. যদি কোন লোক কাজে আসার সময় হাঁচি দেয় তাহলে সাধারণ মানুষ একে অযাত্রা বা অশুভ বলে ধারণা করে। এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা।
4. যদি কারো কথা বলার সময়, অথবা কোনো কাজ করার সময় টিকটিকি শব্দ করে তাহলে সাধারণ মানুষেরা বলে, টিকটিকি এ কাজ বা কথাটি ঠিক বলে জানাচ্ছে। তারা বুঝাতে চান যে, এ কাজটি বা কথাটি সম্পূর্ণ সত্য ও সঠিক, তাই টিকটিকি এর সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। এ বিশ্বাস পোষণকারী কঠিন গোনাহগার হবেন।
5. মহিলারা ধারণা করে যে, সৃষ্টিগতভাবে জোড়া ফল ভক্ষণ করলে জোড়া বা যমজ সন্তান হয়। এটা বিলকুল ভ্রান্ত কথা ।
6. খাদ্য বা পানীয়্রশ্বাসনালীতে, তালুতে বা নাকের মধ্যে চলে গেলে সাধারণ মানুষেরা বলে যে, কেউ তাকে স্মরণ করছে। এটা একেবারে ভুল কথা ।
7. কারো নাম নেওয়ার সময় সে যদি উপস্থিত হয়ে যায় তবে সাধারণ লোক বলে তোমার হায়াত বৃদ্ধি পাবে। এটা বিলকুল মিথ্যা ও বাতিল কথা।
8. প্রচলিত: রবিবার বাঁশ কাটা যাবে না। এদিন বাঁশ কাটলে ঠাকুরের অভিশাপ বা বদ-দোয়ায় আক্রান্ত হতে হবে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা । এরূপ কথায় বা বিশ্বাসে ঈমান চলে যাওয়ার ভয় আছে।
9. প্রচলিত: যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় তবে চল্লিশ দিন পর কোন আলিম ডেকে তার রুহ বাহির করতে হয়, অন্যথায় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে । এটা সম্পূর্ণ না-জায়েয ও বিদআত কথা।
10.
ক্ষেতক্ষামার ও ফসলের হেফাযতের জন্য সাধারণ লোক ক্ষেতের মাঝখানে হাড়িতে চুন ইত্যাদি দিয়ে মানুষের আকৃতি তৈরি করে। এটি ভিত্তিহীন মিথ্যা কথা। এতে ছবি বানানোর জন্য গুনাহগার হবে।
11.
প্রচলিত: রাস্তায় চলার সময় খালি কলস দেখা অথবা সাপ বা শৃগাল ডান দিক থেকে বাম দিকে যেতে দেখাকে অযাত্রা বা অশুভ বলে মনে করা। এটা ভিত্তিহীন কথা। এরূপ বিশ্বাস পোষণকারী গুনাহগার হবে।
12.
প্রসিদ্ধ হয়েছে যে, যদি মুক্তাদী পাগড়ি মাথায় সালাত আদায় করে এবং ইমাম শুধু টুপি পরিধান করে সালাত আদায় করে তবে মুক্তাদীর সালাত মাকরুহ হয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। ....
13.
সাধারণের মাঝে প্রচলিত আছে যে, স্বামী তার স্ত্রীর জানাযার খাঁটিয়া ধরতে পারবে না। এটি একেবারে ভিত্তিহীন কথা। খাটিয়া ধরার ক্ষেত্রে অন্য সকলের চেয়ে স্বামীর দায়িত্ব ও অধিকার সবচেয়ে বেশি।
14.
সাধারণের মাঝে প্রচলিত আছে যে, সতর খোলা অবস্থায় দেখলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। এটিও ভুল কথা।
15.
প্রচলিত আছে যে, মৃতদেহ যতক্ষণ বাড়িতে থাকবে ততক্ষণ আত্মীয়-স্বজন বা অন্যদের জন্য খানাপিনা নিষিদ্ধ। এটি ভিত্তিহীন কথা।
16.
মহিলাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, সালাত আদায়ের পর জায়নামাযের প্রান্ত অবশ্যই উল্টিয়ে দিতে হবে। অন্যথ্যায় শয়তান সেখানে সালাত আদায় করবে (!) শরীয়তে এ কথার কোনো ভিত্তি নেই ।
17.
প্রচলিত আছে, স্বামী-স্ত্রী এক পাত্রে দুধ পান করা নিষিদ্ধ; এতে তারা পরষ্পরে দুধভাই-বোন হয়ে যায়। এটি ভিত্তিহীন ভ্রান্ত কথা।
18.
ওযু করে শুকর দেখলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এটি ভুল কথা।
19.
অন্ধকারে সালাত আদায় জায়েয নয়। এটা ভুল। তবে এতটুকু খেয়াল করা আবশ্যক যে, কিবলাহ থেকে অন্য দিকে মুখ না হয়ে যায়।
20.
পেঁচা বা অমুক প্রাণী ডাক দিলে বালা-মুসিবত নাযিল হয়। ভ্রান্ত কথা।
21.
প্রসিদ্ধ আছে যে, মহিলাদের জন্য নিজের পীর থেকে পর্দা করা জরুরী নয়। এটিও ভ্রান্ত কথা।
22.
দেখা যায় যে, অনেক মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে এসে প্রথমে বসে পড়ে, এরপর সালাত আদায় শুরু করে। এমনকি নিকটবর্তী কোনো স্থান থেকে আসলেও বা ক্লান্ত না হলেও এভাবে মসজিদে ঢুকে প্রথমে বসে পড়ে এরপর সালাতে দাঁড়ায়। শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। (মসজিদে প্রবেশ করে কিছু সালাত আদায় না করে বসে পড়া সুন্নাতের খেলাফ। হাদীস শরীফে মসজিদে ঢুকে কোনো সালাত আদায় না করে বসে পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।)
23.
প্রচলিত: যদি গোশতের সাথে হাড় না থাকে তাহলে তা খাওয়া জায়েয নয়। এটা ভুল কথা।
24.
প্রচলিত: নুন পড়ে গেল পাঁপড়ি দিয়ে উঠাতে হয়। এটিও ভুল কথা।
25.
প্রচলিত: কুকুর কাঁদলে বালা-মুসিবত ছড়ায়। এটা ভুল কথা।
26.
নির্দিষ্ট কোনো কোনো দিন বা তারিখে সফর করাকে সাধারণ মানুষ ভাল বা মন্দ বলে ধারণা করে। এটিও বাতিল ধারণা।
27.
যে ব্যক্তি জবাই করে তার গোনাহ ক্ষমা হয় না। ভিত্তিহীন ভ্রান্ত কথা।
28.
কিছু মানুষ সালাম দেওয়ার সময় কপালে হাত রাখে অথবা সামান্য ঝুকে যায় এবং মুসাফাহা করার সময় বুকে হাত রাখে (মুসাফাহা করার পরে হাতটি বুকে রাখে)। এগুলি সব শরীয়ত বিরোধী কাজ।
29.
প্রচলিত আছে যে, রাতে ঝাড়ু দেওয়া, ফুঁক না দিয়ে বাতি নিভানো এবং চুল আঁচড়ানো নিষিদ্ধ। এ সব ভ্রান্ত কথা।
30.
বলা হয় যে, কুরআন শরীফ কিছু কিছু স্থান (মাঝে না থেমে) মিলিয়ে পড়লে কাফির হয়ে যায় এবং সুরা ফাতিহার কিছু অক্ষর (আগের শব্দে সাথে) মিলালে শয়তানের নাম হয়ে যায়। এও ভিত্তিহীন কথা। অবশ্য তাজবীদের খেলাফ হলে গুনাহগার হবে, কিন্তু কাফির হয়ে যাওয়া এবং শয়তানের নাম বানানো বাড়াবাড়ি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, আল-মাউযূআত: উর্দু, পৃ ১০০-১২২; বাংলা, পৃ ৩০৭-৩৩৫।
৯. ২. ৩. যে সকল বই পড়তে নিষেধ করেছেন
আল্লামা আবু জাফর সিদ্দিকী জাল হাদীস নির্ভর ও ইসলামি আকীদা বিরোধী গ্রন্থাদির একটি তালিকা দিয়ে সেগুলি পাঠ না করতে বা সতর্কতার সাথে পড়তে পরামর্শ দিয়েছেন। এ সকল গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
তাফরীজুল খাতির ফী মানাকিবিশ শাইখ আব্দুল কাদির, ফাতাওয়া সূফীয়্যাহ, আল-মুবতাদা ওয়া কাসাসুল আম্বিয়া, কিতাবুল আউলিয়া, ইমাম যামাখশারী রচিত তাফসীর আল-কাশ্শাফ, ইমাম দাইলামী সংকলিত হাদীস গ্রন্থ আল-ফিরদাউস, ইমাম হাকিম নিসাপূরী সংকলিত হাদীস গ্রন্থ আল-মুসতাদরাক, মুহাম্মাদ ইবনু সালামাহ আল-কুদায়ী সংকলিত হাদীস-গ্রন্থ ‘‘আশ শিহাব’’ বা ‘‘মাউদূআত আল-কুদায়ী’’, ইবনু ওয়াদআন সংকলিত হাদীস গ্রন্থ ‘‘আল-আরবাঊন আল-ওয়াদআনিয়্যাহ, আলী (রা)-এর বাণীমালা বলে কথিত ‘‘নাহজুল বালাগা’’ গ্রন্থ, কালবীর তাফসীর গ্রন্থ, মুকাতিল ইবনু সুলাইমানের তাফসীর, ইবনু ইসহাকের মাগাযী গ্রন্থ, ওয়াকিদীর মাগাযী গ্রন্থ, বদরে মুনিরের কাহিনী, আন্দরসভা, শাহ ইয়ামানের গল্প, দাস্তানে আমীর-ওমরা, গুলে বকাওলী, আলিফ লাইলা, নকশে সুলাইমানী, ফালনামা, কেস্সায়ে মাহে রামযান, মুজিযায়ে আলে নবী, চেহেল রেসালা, ওফাত নামা, জঙ্গনামা হযরত আলী, জঙ্গনামা মুহাম্মাদ হানুফা, হাজার মাসআলা, গুলদশতায়ে মেরাজ, নাত হি নাত, দিওয়ানে লুতফ, দুআ গঞ্জল আরশ, আহাদ নামা, মৌলুদে দেলপযীর, মৌলূদে দেলপসন্দ, মৌলুদে সাদী, মৌলুদে শহীদী ইত্যাদি মীলাদ বিষয়ক অধিকাংশ গ্রন্থ, নাফেউল খালাইক, মীর মশারফ হোসেন প্রণীত বিষাদসিন্ধু, আমীর হামযা, জীগোন, সোনাভান, সমর্থভান, জঙ্গনামা, মালিকা আকার, কালুগাযী, আব্দুল আলী, লাইলী-মজনু ইত্যাদি বাংলা ভাষায় লিখিত পুথি, কাদিয়ানী, শীয়া, আর্য সমাজ ও ফকীর সম্প্রদায়ের লিখিত গ্রন্থাদি...।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, আল-মাউযূআত (উর্দু) পৃ. ১০৭-১১৬, বাংলা, পৃ. ৩১৫-৩৩১।
৯. ২. ৪. যে সকল বইয়ের হাদীস জাল বলেছেন
আমরা দেখেছি, আল্লামা রুহুল আমিন বারংবার উল্লেখ করেছেন, হাদীস যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি, বুজুর্গ বা গ্রন্থের বিচার না করে হাদীসের সনদ ও মুহাদ্দিসগণের যাচইয়ের উপর নির্ভর করতে হবে। কোনো বুজুর্গের উদ্ধৃতি বা মতের কারণে যেমন জাল হাদীসকে গ্রহণ করা যায় না; তেমনি কোনো গ্রন্থে কিছু জাল হাদীস বিদ্যমান থাকার কারণে গ্রন্থটির নিন্দা করা যায় না। বরং জাল হাদীসকে জাল বলার পাশাপাশি আলিম ও বুজুর্গগণের সম্মান করতে হবে এবং তাদের গ্রন্থাদি পাঠ করতে হবে। বস্ত্তত এটিই তাবিয়ীগণের যুগ থেকে উম্মাতের সকল ইমাম ও আলিমের মূলনীতি। আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকীও এ মূলনীতি অনুসরণ করেছেন। তিনি জাল হাদীস চিহ্নিতকরণে গ্রন্থকারের মর্যাদা বা বুজুর্গি বিবেচনা করেন নি। হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, তাসাউফ ইত্যাদি বিষয়ে প্রসিদ্ধ যে সকল গ্রন্থের মধ্যে বিদ্যমান জাল হাদীস তিনি চিহ্নিত করেছেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
৯. ২. ৪. ১. সুনান ইবন মাজাহ
সুনান ইবন মাজাহর একটি হাদীস তিনি জাল বলে উল্লেখ করেছেন: ‘‘যার রাতের সালাত অধিক হবে দিবসে তার চেহারা সৌন্দর্যময় হবে’’।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, আল-মাউযূআত: উর্দু, পৃ. ৭৯, বাংলা, পৃ. ২৮৩, ৪০৪-৪০৯।
৯. ২. ৪. ২. আল-ফিরদাউস ও মুসনাদুল ফিরদাউস
ইমাম আবূ শুজা শীরওয়াইহি দাইলামী (৪৪৫-৫০৯হি) রচিত ‘আল-ফিরদাউস’ ও তাঁর পুত্র আবূ মানসূর শাহরদাদ দাইলামীর (৪৮৩-৫৫৮ হি) ‘‘মুসনাদুল ফিরদাউস’’ নামক গ্রন্থের অনেক হাদীস তিনি জাল বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন: ‘আরাফার দিনের সিয়াম ষাট বছরের সিয়ামের মত’, ‘যখন মুআবিয়াকে মিম্বারের উপরে দেখবে তখন তাকে হত্যা করবে’, ‘গাধা ও যে সকল পশুর গোশত খাওয়া বৈধ তাদের পেশাবে কোনো অসুবিধা নেই’, ‘হে জিবরীল, ইলমে বাতিন হলো, আমার ও আমার প্রিয়পাত্র ও অলীগণের মধ্যকার গোপন বিষয়। আমি তা তাদের অন্তরের মধ্যে প্রদান করি। কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা বা কোনো নবী-রাসূলও তা জানতে পারেন না’... ইত্যাদি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪০৯-৪১৪।
৯. ২. ৪. ৩. ‘আল-জামি আস-সাগীর ও কানযুল উম্মাল
ইমাম সুয়ূতীর (৯১১ হি) ‘জামি সাগীর’ ও ‘জামি কাবীর’ হাদীসের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ। এর উপর ভিত্তি করে প্রসিদ্ধ ভারতীয় আলিম আল্লামা আলাউদ্দীন আলী মুত্তাকী (৯৭৫ হি) ‘কানযুল উম্মাল’ গ্রন্থটি রচনা করেন। এ গ্রন্থগুলোর মধ্যে সহীহ ও যয়ীফ হাদীসের পাশাপাশি জাল হাদীস বিদ্যমান। আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী এ গ্রন্থগুলির অনেক হাদীস জাল বলে চিহ্নিত করেছেন। যেমন: ‘আমি এবং এ ব্যক্তি (আলী রা) কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের উপর প্রমাণ’, ‘সুলাইমান (আ)-এর আংটির নকশা বা খোদিত কথা ছিল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’, ‘তোমরা আলিমদের অনুসরণ করবে; কারণ তারা দুনিয়ার প্রদীপ ও আখিরাতের বাতি’, ‘এক মুসলিমের বিরুদ্ধে আরেক মুসলিমের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে; তবে এক আলিমের বিরুদ্ধে আরেক আলিমের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না; কারণ তারা হিংসুক’, ‘এক মুহূর্ত ইলম সন্ধান সারারাত সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম এবং একদিন ইলম সন্ধান তিন মাস সিয়াম পালন থেকে উত্তম’, ‘ইলম সন্ধান করা আল্লাহর নিকট সালাত, সিয়াম, হজ্জ ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ থেকে উত্তম’ ... ইত্যাদি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪১৪-৪২৫
৯. ২. ৪. ৪. এহইয়াউ উলূমিদ্দীন
ইমাম গাযালীর (৫০৫ হি) এহইয়াউ উলূমিদ্দীন গ্রন্থের অনেক হাদীস আবূ জাফর সিদ্দিকী জাল বলেছেন। যেমন ‘একজন আলিমের মাজলিসে উপস্থিত হওয়া এক হাজার জানাযায় শরীক হওয়া থেকে, এক হাজার রাকআত সালাত থেকে, এক হাজার হজ্জ এবং এক হাজার জিহাদ-যুদ্ধাভিযান থেকে উত্তম’, ‘সমূদ্রের মধ্যে পৃথিবী ভূপৃষ্ঠের মধ্যে একটি আস্তাবলের মত’, ‘পিতামাতার খেদমত সালাত, সিয়াম, হজ্জ, উমরা ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ অপেক্ষা উত্তম’, ‘মসজিদের মধ্যে কথাবার্তা নেকী বা সাওয়াব খেয়ে ফেলে যেমন, জীবজানোয়ার ঘাস খেয়ে ফেলে’, ‘আলিমের নিদ্রা ইবাদত’, ‘আমার আকাশ ও আমার যমীন আমাকে ধারণ করার প্রশস্ততা পায় নি; কিন্তু আমার মুমিন বান্দার অন্তর আমাকে ধারণের প্রশস্ততা পেয়েছে’... ইত্যাদি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪২৬-৪৩৮।
৯. ২. ৪. ৫. তাফসীর কাশ্ফাফ
আল্লামা যামাখশারী (৫৩৮ হি) রচিত তাফসীরুল কাশ্ফাফ গ্রন্থে উদ্ধৃত কয়েকটি হাদীস আবু জাফর সিদ্দিকী জাল বলে চিহ্নিত করেছেন। যেমন ‘যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বংশধর-পরিজনের প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে মৃত্যুবরণ করল সে কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল।’[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪৩৮-৪৪৩।
৯. ২. ৪. ৬. গুনইয়াতুতালিবীন
শাইখ আব্দুল কাদির জীলানী (৫৬১ হি) রচিত ‘গুনইয়াতুত তালিবীন’ গ্রন্থের বিভিন্ন হাদীসকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী। যেমন ‘সাপ্তাহের প্রতি দিন ও রাতের সালাত বিষয়ক হাদীস... জুমুআর রাতে ১২ রাকআত সালাত ১০ বার করে সূরা ইখলাস ....। এ প্রকারের হাদীস বাতিল।...’, ‘দশবার- অন্য বর্ণনায় ৫০ বার- করে সূরা যিলযাল দিয়ে দু রাকআত ...এ হাদীস মুনকার ও বাতিল.’, ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার জন্য এক হাজার বৎসরের সিয়াম লিপিবদ্ধ করবেন’, ‘আল্লাহ আশূরার দিন আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন’, ‘আল্লাহ আরশ সৃষ্টি করেন আশুরার দিনে, কুরসী সৃষ্টি করেন আশুরার দিনে, কলম সৃষ্টি করেন আশুরার দিনে, জান্নাত সৃষ্টি করেন আশুরার দিনে, আদমকে জান্নাতে অবস্থান করান আশুরার দিনে... লম্বা ফিরিস্তির শেষে বলেন ... রাসূলুল্লাহ ﷺ জন্মলাভ করেন আশুরার দিনে, আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত হন আশুরার দিনে এবং কিয়ামত দিবস হবে আশুরার দিনে’ .... ইত্যাদি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪৪৩-৪৬০।
৯. ২. ৪. ৬. হেদায়া
প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ আল্লামা বুরহানুদ্দীন মারগীনানী (৫৯৩ হি.) রচিত ‘হেদায়া’ গ্রন্থের কয়েকটি হাদীস আবূ জাফর সিদ্দিকী জাল বলে চিহ্নিত করেছেন। সেগুলির মধ্যে রয়েছে: ‘ক্রীতদাসের নিরাপত্তা নিরাপত্তা’, দিবসের সালাত বোবা’, ‘তিন বার করে কুলি করা ও নাকের মধ্যে পানি দেওয়া নাপাক ব্যক্তির জন্য (ফরয গোসলের ক্ষেত্রে) ফরয’, ‘একজন মুসলিমের উপর খারাজ ও উশর একত্রিত হয় না’, ইত্যাদি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪৬০-৪৭৩।
৯. ২. ৪. ৭. তাফসীর কাবীর
ইমাম ফাখরুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবন উমার রাযী (৬০৬ হি) রচিত ‘তাফসীর কাবীর’ গ্রন্থের মধ্যে বিদ্যমান কিছু হাদীস আবূ জাফর সিদ্দিকী জাল বলেছেন, যেমন: ‘আমি গুপ্ত ভান্ডার ছিলাম...’, ‘যে নিজেকে চিনল সে তার রববকে চিনল’, ‘আল্লাহ আমার অন্তরে যা নিক্ষেপ করেন তাই আমি আবূ বাকরের অন্তরে নিক্ষেপ করি’.. ইত্যাদি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪৭৩-৪৮১।
৯. ২. ৪. ৮. তাফসীর বাইযাবী
আল্লামা কাযী নাসিরুদ্দীন আব্দুল্লাহ ইবনু উমার বাইযাবী (৬৮৫ হি) রচিত তাফসীর বাইযাবী বা আনওয়ারুত তানযীল গ্রন্থের বিভিন্ন হাদীস জাল বলে উল্লেখ করেছেন আবূ জাফর সিদ্দিকী। বিশেষত কুরআনের প্রতিটি সূরার ফযীলতে বর্ণিত হাদীস। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ‘‘কুরআনের সূরাগুলির ফযীলতে বর্ণিত হাদীস এবং যে ব্যক্তি অমুক সূরা পাঠ করবে তার জন্য অমুক-তমুক সাওয়াব রয়েছে... এভাবে কুরআনের প্রথম সূরা থেকে শেষ সূরা পর্যন্ত সূরাগুলির ফযীলতে বর্ণিত হাদীস জাল। এ জাল হাদীস সা’লাবী ও ওয়াহিদী প্রত্যেক সূরার শুরুতে উল্লেখ করেছেন। আর যামাখশারী প্রত্যেক সূরার শেষে উল্লেখ করেছেন। বাইযাবী এবং আবুস সাঊদ মুফতী এভাবেই যামাখশারীর অনুসরণ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক বলেছেন: আমার ধারণা যিন্দীকগণ এ হাদীসগুলিকে জাল করেছে। এ হাদীসের জালিয়াত নিজেই তার জালিয়াতির কথা স্বীকার করেছে এবং বলেছে: আমি মানুষদেরকে ... কুরআনের মধ্যে ব্যস্ত রাখার জন্য এগুলি জাল করেছি।’’[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪৮১-৪৮৪।
৯. ২. ৪. ৯. শারহুল আকায়িদ আন-নাসাফিয়্যাহ
আল্লামা মাসঊদ ইবন উমার সাদুদ্দীন তাফতাযানী (৭৯৩ হি) রচিত ‘শারহুল আকাইদ আন-নাসাফিয়্যাহ’ গ্রন্থের নিম্নের হাদীসটি জাল বলে চিহ্নিত করেছেন আবূ জাফর সিদ্দিকী: ‘আলিম বা তালিব ইলম যখন কোনো গ্রাম-মহল্লা দিয়ে গমন করেন তখন আল্লাহ সে গ্রাম বা মহল্লার গোরস্থানের আযাব ৪০ দিনের জন্য তুলে নেন।’’[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪৮৪-৪৮৬।
৯. ২. ৪. ১০. আস-সীরাহ আল-হালাবিয়্যাহ
আল্লামা নূরুদ্দীন আলী হালাবী (১০৪৪ হি) রচিত ‘ইনসানুল উয়ূন ফী সীরাতিল আমীন আল-মামূন’ বা সীরাহ হালাবিয়্যাহ গ্রন্থের বিভিন্ন হাদীস জাল বলে চিহ্নিত করেছেন আবু জাফর সিদ্দিকী। যেমন: ‘বেলাল আযানের মধ্যে শীন অক্ষরকে সীনরূপে উচ্চারণ করতেন’, ‘বিলালের সীন আল্লাহর কাছে শীন’, ‘পাকস্থলী রোগব্যধির আবাসস্থল .....’... ইত্যাদি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪৮৬-৪৮৯।
৯. ২. ৪. ১১. তাফসীর রুহুল বায়ান
আল্লামা আবুল ফিদা ইসমাঈল হাক্কী (১১২৭ হি) রচিত ‘তাফসীর রুহুল বায়ান’ গ্রন্থের বহুসংখ্যক হাদীসকে আল্লামা আবূ জাফর জাল বলে চিহ্নিত করেছেন। বস্ত্তত ইসমাঈল হাক্কী ও আবূ জাফর সিদ্দিকী দুজনই প্রসিদ্ধ সূফী। তবে তাসাউফের দুপ্রান্তে তাদের অবস্থান। আল্লামা হাক্কী কাশফ বা বুজুর্গদের অজুহাতে অগণিত জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী হাদীসের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে কাশফ বা বুজুর্গের মতের গুরুত্ব প্রদানের কঠোর বিরোধিতা করেছেন। রুহুল বায়ান গ্রন্থের যে সকল হাদীস জাল বলে তিনি চিহ্নিত করেছেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে: ‘আমার উম্মাতের আলিমগণ বনী ইসরাঈলের নবীগণের মত’, ‘আমি আল্লাহ থেকে এবং মুমিনগণ আমা থেকে’, ‘আমি ও আবূ বকর প্রতিযোগিতার দুটি ঘোড়ার মত’, ‘দারিদ্র আমার গৌরব এবং আমি তারই অহংকার করি’, ‘মুমিনের অন্তর (কালব) আল্লাহর গৃহ’, ‘আমাকে যখন মি’রাজে নেওয়া হলো তখন প্রথম আসমানে আমি সবুজ ঝুটি ও সাদা পালক ওয়ালা একটি মোরগ দেখলাম ...’, ‘যে ব্যক্তি আলিমগণের সাথে সাক্ষাত করল সে যেন আমার সাথেই সাক্ষাত করল...’, ‘যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করব’, ‘তোমরা মৃত্যু বরণ কর তোমাদের মৃত্যুর আগেই’, ‘তুমি না হলে আমি মহাকাশসমূহ (বিশ্ব) সৃষ্টি করতাম না’... ইত্যাদি।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৪৯০-৫১৫।
৯. ২. ৪. ১২. কাসিদা- ই- নু’মান
‘কাসিদা- ই- নু’মান’ একটি আরবী কাব্য, যা ইমাম আবূ হানীফা (১৫০ হি) রচিত বলে প্রচারিত। যতটুক বুঝা যায় ১২০০ হিজরীর (১৭৮০/৮৫ খৃস্টব্দের) দিকে তুরস্কে এ পুস্তকাটির কথা প্রথম শোনা যায়। এরপর তুরস্কে ও ভারতে কেউ কেউ এটি মুদ্রণ করেন এবং কেউ কেউ তুর্কি, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় এর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করেন। এর আগে প্রায় হাজার বছর ধরে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ)-এর জীবনীকারগণ কেউ তাঁর এ গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেন নি। তাবিয়ী-যুগের কাব্য, শব্দব্যবহার ও ভাষাশৈলীর সাথে যাদের সামান্যতম পরিচয় আছে তারা অতি সহজেই বুঝেন যে, এ কাসীদা কখনোই ইমাম রচিত নয়। এ কবিতার মধ্যে অনেক জাল হাদীস বিদ্যমান। যেমন ‘আপনি না হলে বিশ্ব সৃষ্টি করতাম না’, ‘জাবিরের মৃত সন্তানদের জীবিত করা’ ইত্যাদি। আবূ জাফর সিদ্দিকী এগুলোকে জাল বলে নিশ্চিত করেছেন।[1]
[1] আবূ জাফর সিদ্দিকী, প্রাগুক্ত: উর্দু, পৃ. ১২-৯৯, বাংলা, পৃ. ৫১৫-৫১৮।
৯. ৩. মাওলানা আবদুল মালেক ও মুতিউর রহমান
শাইখ মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক বর্তমান বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ হাদীস বিশেষজ্ঞ। তাঁর তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় মাওলানা মুতীউর রহমান-এর রচিত ‘‘প্রচলিত জাল হাদীস’’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৪২৪ হিজরী (২০০৩ খৃ) সালে। দেশের কয়েকজন সুপ্রসিদ্ধ আলিম গ্রন্থটির সমর্থন ও প্রশংসায় বাণী প্রদান করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মারকাযুদ্দাওয়াতিল ইসলামিয়ার তত্ত্বাবধায়ক শাইখুল হাদীস মাওলানা আব্দুল হাই পাহাড়পুরী, বাইতুল মুকার্রামের খতীব আল্লামা উবাইদুল হক্ক, হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী, পটিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা হারূন ইসলামাবাদী।
গ্রন্থটির ভূমিকায় জাল হাদীস বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিগুলো আলোচনা করা হয়েছে। জাল হাদীসের পরিচয়, হাদীসের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের নীতিমালা, এ বিষয়ে কাশফ, ইলহাম, স্বপ্ন, বুজুর্গগণের বক্তব্য ইত্যাদির উপর নির্ভরতার ভয়াবহ পরিণতি, মুহাদ্দিসগণের মূলনীতি বর্জন করে শুধু আকল-বিবেক বা যুক্তি দিয়ে হাদীস যাচাইয়ের ধ্বংসাত্মক প্রবণতা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। এরপর প্রচলিত প্রায় ৭০টি জাল হাদীস আলোচনা করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে:
1. আমি মীম বিহীন আহমাদ, আইন বিহীন আরব
2. ভক্তি থাকলে পাথরেও মুক্তি মেলে ...
3. মিরাজের নববই হাজার কালাম লাভ...
4. আপদ বিপদে কবরবাসীর নিকট সাহায্য চাও..
5. দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ইলম অন্বেষণ কর
6. ইলম অন্বেষণে সত্তর নবীর সওয়াব...
7. আলিমের চেহারার দিকে তাকানোর/ সাক্ষাত/ মুসাফাহার সাওয়াব
8. আলিমের মজলিস হাজার রাকাআত নফল নামায থেকেও উত্তম
9. একজন আলিমকে সম্মান করা সত্তর জন নবীকে সম্মান করা ...
10.
আলিমের পিছনে নামায যেন নবীর পিছনে নামায...
11.
আলিমের পিছনে নামায পড়ায় ৪৪৪৪ গুণ সওয়াব ...
12.
এ উম্মতের আলিম বনী ইসরাঈলের সমতুল্য
13.
আলিম ও তালেবে ইলমের বরকতে কবরের আযাব মাফ...
14.
শবে বরাতের গোসলের সাওয়াব ...শবে কদরের গোসল ...
15.
আযানের সময় কথা বললে ৪০ বছরের নেকী নষ্ট হয়ে যায় ...
16.
আংটি পরে নামায পড়ার ফযীলত...
17.
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাঁচ প্রকার সওয়াব
18.
পাগড়ীসহ দু’রাকাআতে ৭০ রাকাআত
19.
বিবাহিত ব্যক্তির দু’রাকাআতে ৭০ রাকাআত
20.
প্রতি বছর ৬ লাখ হাজীর হজ্ব পালন
21.
সপ্তাহের দিবারাত্রের নফল নামায
22.
মুমিনের ঝুটা ওষুধ... মুমিনের থুথু ওষুধ
23.
লবণের মাঝে ৭০ রোগের ওষুধ
24.
নখ কাটার নিয়ম
25.
যার কোন পীর নেই তার পীর শয়তান
26.
যে নিজকে চিনল সে রবকে চিনল
27.
প্রতি ৪০ জনে একজন ওলী
28.
মরার আগে মর
29.
মায়্যিতের জন্য খতমে তাহলীল..
30.
মেরাজে জিবরাঈল (আ) এর সঙ্গ ত্যাগ...
31.
জুতা নিয়ে আরশ গমন...
32.
আপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না
33.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছায়া না থাকা প্রসঙ্গ
34.
নূরে মুহাম্মাদী সম্পর্কিত জাল হাদীসগুলি ....।
৯. ৪. আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও যাকারিয়া হাসানাবাদী
বাংলাদেশের প্রসিদ্ধতম ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা মুহম্মাদ জুনাইদ বাবুনগরীর তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় চট্টগ্রামের অন্য প্রসিদ্ধ মাদ্রাসা জামেয়া বাবুনগরের উসতাদ মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া হাসানাবাদীর সংকলন ও সম্পাদনায় ‘‘প্রচলিত জাল হাদীস: একটি তাত্ত্বিক আলোচনা’’ নামে একটি গ্রন্থ ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে। দেশের কয়েকজন সুপ্রসিদ্ধ আলিম গ্রন্থটির সমর্থন ও প্রশংসায় বাণী প্রদান করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পটিয়া মাদরাসার উসতাদ আল্লামা মুহাম্মদ ইছহাক আল-গাজী, বাবুনগর মাদরাসার উসতাদ আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুস, জামেয়া দারুল মাআরিফের পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদবী, বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ মুহিববুল্লাহ, বাবুনগর মাদরাসার মুফতী আল্লামা মাহমুদ হাসান প্রমুখ।
গ্রন্থটির শুরুতে জাল হাদীস বিষয়ক কিছু মূলনীতি আলোচনা করার পর সংকলক প্রায় ২০০ টি জাল হাদীস আলোচনা করেছেন। যেমন:
1. চল্লিশ বৎসরের আগে কোনো নবীই নুবুওয়াত পান নি।
2. নবীগণ পথপ্রদর্শক, ফকীহগণ নেতা এবং তাঁদের মাজলিস বৃদ্ধিকর।
3. দুনিয়ার মহববত সকল পাপের মূল।
4. মানুষ তাদের রাষ্ট্রপ্রধানদের ধর্মের উপর চলে।
5. তোমরা মৃত্যুর আগেই মৃত্যুবরণ কর।
6. আরবগণ অনারবগণের নেতা।
7. নেককারগণের আলোচনা হলে রহমত নাযিল হয়।
8. নারীগণ গৃহের প্রদীপ কিন্তু তোমরা তাদেরকে জান না।
9. দরিদ্র মুসলিমগণ ধনীদের ৪০ বৎসর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
10.
গরিবগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী।
11.
শুক্রবারে নখ কাটলে পরের শুক্রবার পর্যন্ত অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাবে।
12.
প্রতি শুক্রবার পিতামাতার কবর যিয়রাত করে ইয়াসীন পাঠ ....।
13.
পাত্র ধৌত করা এবং আঙ্গিনা পরিষ্কার করা ধন-দৌলত বৃদ্ধি করে।
14.
আস-সালাতু ইমাদুদ্দীন: নামায দীনের খুঁটি....।
15.
ইমামতিতে ধাক্কা-ধাক্কি কিয়ামতের আলামত।
16.
যার চেহারা সবচেয়ে সুন্দর সে ইমামতি করবে।
17.
যোহরের আগে চার রাকাআত নিয়মিত না পড়লে শাফাআত মিলবে না।
18.
জুমুআর সালাত দরিদ্রদের হজ্জ।
19.
স্ত্রী তার স্বামীর কাপড় ধুলে আল্লাহ তার জন্য দু হাজার নেকি লিখেন...।
20.
খাওয়ার সময় জুতা খোলা সুন্দর সুন্নাত...।
21.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্মের পূর্বে আসিয়া, মরিয়ম প্রমুখের আগমন...।
No comments