রাহে বেলায়াত চতুর্থ অধ্যায় - অনুচ্ছেদ-১ এবং ২, কিছু নফল সালাত - (ক). সালাতুত তাসবীহ
চতুর্থ অধ্যায় - অনুচ্ছেদ-১,
কিছু নফল সালাত - (ক). সালাতুত তাসবীহ
পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলি আমরা দেখেছি যে, তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদি অধিকাংশ যিকর উন্মুক্তভাবে সদা সর্বদা পালন করা যায়। এছাড়া বিশেষ কিছু সময় নিরপেক্ষ যিকর, সালাত বা দু‘আ হাদীস শরীফে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যা যে-কোন সময়ে পালন করা যায়। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে বিভিন্ন কর্ম ও ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্য বিভিন্ন রকম বিশেষ যিকর শিক্ষা দিয়েছেন। এ অধ্যায়ে এরূপ কিছু যিকর, দু‘আ ও সালাতের আলোচনা করতে চাই। আল্লাহই তাওফীক-দাতা।
প্রথমত, অতিরিক্ত কিছু নফল সালাত :
(ক). সালাতুত তাসবীহ :
আমরা ইতঃপূর্বে দেখেছি যে, যিকরের মূল চারটি বাক্য হলে তাসবীহ ‘সুবহানাল্লাহ’ , তাহমীদ ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ , তাহলীল ‘লা- ইলাহা ইল্লল্লাহ’ এবং তাকবীর ‘আল্লাহু আকবার’। যাকির এই বাক্যগুলি জপ করে বা যিকর করে মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা, প্রশংসা, একত্ব ও মহত্ব প্রকাশ করে। সালাতের মধ্যে এই যিকরগুলি বিশেষ পদ্ধতিতে পালন করা হয় “সালাতুত তাসবীহ” নামাক সালাতে। চার রাক’আত সালাতে প্রতি রাক’আতে ৭৫ বার করে চার রাক’আতে মোট ৩০০ বার উক্ত যিকরগুলি আদায় করতে হবে। এ বিষয়ে সহীহ ও যয়ীফ অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
সহীহ হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচা আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিবকে (রাঃ) বলেনঃ ”চাচাজি, আমি আপনাকে একটি বিশেষ উপহার ও বিশেষ অনুদান প্রদান করব, যা পালন করলে আল্লাহ আপনার ছোট, বড়, ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, প্রকাশ্য, গোপন সকল গোনাহ ক্ষমা করবেন। - তা এই যে, আপনি চার রাক’আত সালাত আদায় করবেন। প্রত্যেক রাক’আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন। প্রথম রাক’আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যে কোনো সূরা পাঠের পর দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন:
سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا
الله والله أكبر
উচ্চারণঃ ‘সুব‘হা-নাল্লাহ, ওয়াল‘হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লা-হু আকবার।’ (পূর্বে উল্লেখিত ৪, ৯, ১ ও ১০ নং যিকর একত্রে)।
এরপর রুকুতে যেয়ে রুকু অবস্থায় উপরের যিকরগুলি ১০ বার, রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো অবস্থায় ১০ বার, সাজদা রত অবস্থায় ১০ বার, প্রথম সাজদা থেকে উঠে বসা অবস্থায় ১০ বার, দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার এবং দ্বিতীয় সাজদা থেকে উঠে (বসা অবস্থায়) ১০ বার। এই মোট এক রাক’আতে ৭৫ বার (চার রাক’আতে মোট ৩০০ বার)। সম্ভব হলে আপনি প্রতিদিন একবার এই সালাত আদায় করবেন, না হলে প্রতি সপ্তাহে একবার, না হলে প্রতি মাসে একবার, না হলে প্রতি বৎসর একবার, না হলে অন্তত সারা জীবনে একবার এই সালাত আপনি আদায় করবেন।”
“সালাতুস তাসবীহ” সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদীসই অত্যন্ত যয়ীফ সনদে বর্ণিত। একমাত্র এই হাদীসটিকে মুহাদ্দিসগণ সহীহ হিসাবে গ্রহণ
করেছেন।[1]
ইমাম তিরমিযী প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (১৮১ হি) থেকে “সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের আরেকটি নিয়ম উল্লেখ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারকের মতে এই অতিরিক্ত যিকর আদায়ের নিয়ম: নাময শুরু করে শুরুর দু‘আ বা সানা পাঠের পরে ১৫ বার, সূরা ফাতেহা ও অন্য কোনো সূরা শেষ করার পরে ১০ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠে ১০ বার, প্রথম সাজদায় ১০ বার, দুই সাজাদার মাঝে ১০ বার ও দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার মোট ৭৫ বার প্রতি রাক’আতে।
অর্থাৎ, এই নিয়মে কিরাআতের পূর্বে ও পরে দাঁড়ানো অবস্থায় ২৫ বার তাসবীহ পাঠ করা হয় আর দ্বিতীয় সাজাদার পরে বসা অবস্থায় কোনো তাসবীহ পড়া হয় না। পূর্বের হাদীসে বর্ণিত নিয়মে কিরাআতের পূর্বে কোনো তাসবীহ নেই। দাঁড়ানো অবস্থায় শুধু কিরাআতের পরে ১৫ বার তাসবীহ পড়তে হবে। প্রত্যেক রাক’আতে দ্বিতীয় সাজদার পরে বসে ১০ বার তাসবীহ পড়তে হবে।
আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক বলেন, যদি এই সালাত রাত্রে আদায় করে তাহলে দুই রাক’আত করে পৃথকভাবে তা আদায় করবে। অর্থাৎ, দুই রাক’আত শেষে সালাম ফিরিয়ে আবার দুই রাক’আত পৃথকভাবে আদায় করবে। আর দিনের বেলায় এই সালাত পালন করতে ইচ্ছা করলে একত্রে চার রাক’আত আদায় করতে পারে, অথবা ইচ্ছা করলে পৃথকভাবে দুই রাক’আত করেও আদায় করতে পারে।
“সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের সময় রুকু ও সাজদায় প্রথমে রুকু ও সাজদার মাসনূন তাসবীহ ‘সুবহানার রাব্বিয়্যাল আযীম’ ও ‘সুবহানা রাব্বিয়্যাল আ’লা’ নূন্যতম তিন বার করে পাঠ করার পরে অতিরিক্ত তাসবীহগুলি পাঠ করতে হবে।[2]
[1] তিরমিযী, আস-সুনান ২/৩৪৭-৩৫০, নং ৪৮১, সুনানু আবূ দাউদ ২/২৯, নং ১২৯৭, সুনানু ইবনি মাজাহ ১/৪৪২, নং ১৩৮৬, ১৩৮৭, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৬৩-৪৬৪, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/২৩-২৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৮১-২৮৩, সহীহুত তারগীব ১/৩৫৩-৩৫৫।
[2] তিরমিযী, আস-সুনান ২/৩৪৭।
অনুচ্ছেদ-২,
কিছু নফল সালাত - (খ) সালাতুত তাওবা
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে কোনো বান্দা যদি কোনো গোনাহের কর্ম করে সাথে সাথে সুন্দর করে ওযু করে দুই রাক’আত সালাত আদায় করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ তাঁকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন।”[1]
[1] তিরমিযী, আস-সুনান ২/২৫৭, নং ৪০৬, ৫/২২৮, নং ৩০০৬, সুনানু আবী দাউদ ২/৮৬, নং ১৫২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ২/৩৯০, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/২১৬, সহীহু সুনানি আবী দাউদ ১/২৮৩।
No comments