সহীহ বুখারী শরীফ অধ্যায় "জিহাদ" হাদিস নং - ৩০০১ থেকে ৩০৫০

৩০০১

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ سُمَيٍّ مَوْلَى أَبِيْ بَكْرٍ عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ السَّفَرُ قِطْعَةٌ مِنْ الْعَذَابِ يَمْنَعُ أَحَدَكُمْ نَوْمَهُ وَطَعَامَهُ وَشَرَابَهُ فَإِذَا قَضَى أَحَدُكُمْ نَهْمَتَهُ فَلْيُعَجِّلْ إِلَى أَهْلِهِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সফর আযাবের একটি অংশ। যা তোমাদেরকে নিদ্রা, আহার ও পান থেকে বিরত রাখে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন নিজের কাজ সেরে তাঁর পরিজনের নিকট দ্রুত চলে আসে।

৫৬/১৩৭. অধ্যায়ঃ

আরোহণের জন্য ঘোড়া দান করতঃ তা বিক্রয় হতে দেখলে

৩০০২

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ حَمَلَ عَلَى فَرَسٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَوَجَدَهُ يُبَاعُ فَأَرَادَ أَنْ يَبْتَاعَهُ فَسَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَا تَبْتَعْهُ وَلَا تَعُدْ فِيْ صَدَقَتِكَ
‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহ্‌র রাহে আরোহণের জন্য একটি ঘোড়া দান করেন। অতঃপর তিনি সে ঘোড়াটিকে বিক্রি হতে দেখতে পান। তিনি তা কিনে নিতে ইচ্ছা করলেন এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি ওটা কিনিও না এবং তোমার দেয়া সদকা ফেরত নিও না।

৩০০৩

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ حَدَّثَنِيْ مَالِكٌ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ يَقُوْلُ حَمَلْتُ عَلَى فَرَسٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَابْتَاعَهُ أَوْ فَأَضَاعَهُ الَّذِيْ كَانَ عِنْدَهُ فَأَرَدْتُ أَنْ أَشْتَرِيَهُ وَظَنَنْتُ أَنَّهُ بَائِعُهُ بِرُخْصٍ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَا تَشْتَرِهِ وَإِنْ بِدِرْهَمٍ فَإِنَّ الْعَائِدَ فِيْ هِبَتِهِ كَالْكَلْبِ يَعُوْدُ فِيْ قَيْئِهِ
‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রাহে একটি ঘোড়া দান করি। সে ওটা বিক্রি করতে চেয়েছিল কিংবা যার নিকট সেটা ছিল সে তাকে বিনষ্ট করার উপক্রম করেছিল। আমি ঘোড়াটি কেনার ইচ্ছা করলাম। আর আমি ধারণা করেছিলাম যে, সে তাকে সস্তায় বিক্রি করে দিবে। আমি এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, তুমি ওটা ক্রয় কর না, যদিও তা একটি মাত্র দিরহামের বিনিময়ে হয়। কেননা সদকা করার পর ফেরত গ্রহণকারী এমন কুকুরের মত, যে বমি করে আবার তা ভক্ষণ করে।

৫৬/১৩৮. অধ্যায়ঃ

পিতামাতার অনুমতি ক্রমে জিহাদে গমন।

৩০০৪

حَدَّثَنَا آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا حَبِيْبُ بْنُ أَبِيْ ثَابِتٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا الْعَبَّاسِ الشَّاعِرَ وَكَانَ لَا يُتَّهَمُ فِيْ حَدِيْثِهِ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَاسْتَأْذَنَهُ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ أَحَيٌّ وَالِدَاكَ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَفِيْهِمَا فَجَاهِدْ
‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তবে তাঁদের খিদমাতের চেষ্টা কর।’

৫৬/১৩৯. অধ্যায়ঃ

উটের গলায় ঘণ্টা বা তদ্রূপ কিছু বাঁধার ব্যাপারে যা বলা হয়েছে।

৩০০৫

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ بَكْرٍ عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيْمٍ أَنَّ أَبَا بَشِيْرٍ الأَنْصَارِيَّ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ كَانَ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ بَعْضِ أَسْفَارِهِ قَالَ عَبْدُ اللهِ حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ وَالنَّاسُ فِيْ مَبِيْتِهِمْ فَأَرْسَلَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَسُوْلاً أَنْ لَا يَبْقَيَنَّ فِيْ رَقَبَةِ بَعِيْرٍ قِلَادَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلَادَةٌ إِلَّا قُطِعَتْ
আবূ বাশীর আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সফরে তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন। রাবী ‘আবদুল্লাহ্‌ বলেন, আমার মনে হয়, তিনি (আবূ বাশীর আনসারী) বলেছেন যে, মানুষ শয্যায় ছিল। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সংবাদ বহনকারী পাঠালেন যে, কোন উটের গলায় যেন ধনুকের রশির মালা কিংবা মালা না ঝুলে, আর ঝুললে তা যেন কেটে ফেলা হয়। [১]
[১] জাহেলী যুগে কুসংস্কারের কারণে উটের গলায় মালা লটকানো হতো যাতে উট বদ নজর থেকে রক্ষা পায়। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ভ্রান্ত ধারণা ও রসম উৎখাতের ব্যবস্থা করেন।

৫৬/১৪০. অধ্যায়ঃ

সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্ত হলো, অতঃপর তার স্ত্রী হাজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলো, অথবা তার কোন ওযর আছে সে ব্যাক্তির জন্য জিহাদ করার অনুমতি আছে কি?

৩০০৬

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ أَبِيْ مَعْبَدٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اكْتُتِبْتُ فِيْ غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتْ امْرَأَتِيْ حَاجَّةً قَالَ اذْهَبْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِكَ
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন পুরুষ যেন অপর মহিলার সঙ্গে নিভৃতে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ছাড়া সফর না করে। এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম লেখা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জযাত্রী। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তবে যাও তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।’

৫৬/১৪১. অধ্যায়ঃ

গোয়েন্দাগিরি প্রসঙ্গে
আর আল্লাহ্‌ তা‘আলার বাণীঃ তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (মুমতাহিনাহ ১) ------ অর্থ হচ্ছে খোঁজ-খবর নেয়া।

৩০০৭

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ دِيْنَارٍ سَمِعْتُهُ مِنْهُ مَرَّتَيْنِ قَالَ أَخْبَرَنِيْ حَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ أَبِيْ رَافِعٍ قَالَ سَمِعْتُ عَلِيًّا يَقُوْلُ بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنَا وَالزُّبَيْرَ وَالْمِقْدَادَ بْنَ الأَسْوَدَ قَالَ انْطَلِقُوْا حَتَّى تَأْتُوْا رَوْضَةَ خَاخٍ فَإِنَّ بِهَا ظَعِيْنَةً وَمَعَهَا كِتَابٌ فَخُذُوْهُ مِنْهَا فَانْطَلَقْنَا تَعَادَى بِنَا خَيْلُنَا حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى الرَّوْضَةِ فَإِذَا نَحْنُ بِالظَّعِيْنَةِ فَقُلْنَا أَخْرِجِي الْكِتَابَ فَقَالَتْ مَا مَعِيْ مِنْ كِتَابٍ فَقُلْنَا لَتُخْرِجِنَّ الْكِتَابَ أَوْ لَنُلْقِيَنَّ الثِّيَابَ فَأَخْرَجَتْهُ مِنْ عِقَاصِهَا فَأَتَيْنَا بِهِ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا فِيْهِ مِنْ حَاطِبِ بْنِ أَبِيْ بَلْتَعَةَ إِلَى أُنَاسٍ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ يُخْبِرُهُمْ بِبَعْضِ أَمْرِ رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا حَاطِبُ مَا هَذَا قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَا تَعْجَلْ عَلَيَّ إِنِّيْ كُنْتُ امْرَأً مُلْصَقًا فِيْ قُرَيْشٍ وَلَمْ أَكُنْ مِنْ أَنْفُسِهَا وَكَانَ مَنْ مَعَكَ مِنْ الْمُهَاجِرِيْنَ لَهُمْ قَرَابَاتٌ بِمَكَّةَ يَحْمُوْنَ بِهَا أَهْلِيْهِمْ وَأَمْوَالَهُمْ فَأَحْبَبْتُ إِذْ فَاتَنِيْ ذَلِكَ مِنْ النَّسَبِ فِيْهِمْ أَنْ أَتَّخِذَ عِنْدَهُمْ يَدًا يَحْمُوْنَ بِهَا قَرَابَتِيْ وَمَا فَعَلْتُ كُفْرًا وَلَا ارْتِدَادًا وَلَا رِضًا بِالْكُفْرِ بَعْدَ الْإِسْلَامِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَقَدْ صَدَقَكُمْ قَالَ عُمَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ دَعْنِيْ أَضْرِبْ عُنُقَ هَذَا الْمُنَافِقِ قَالَ إِنَّهُ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ اللهَ أَنْ يَكُوْنَ قَدْ اطَّلَعَ عَلَى أَهْلِ بَدْرٍ فَقَالَ اعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ قَالَ سُفْيَانُ وَأَيُّ إِسْنَادٍ هَذَا
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এবং যুবায়র ও মিকদাদ ইব্‌নু আসওয়াদ (রাঃ)-কে পাঠিয়ে বললেন, ‘তোমরা খাখ্ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখতে পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা নিয়ে আসবে।’ তখন আমরা রওনা দিলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুত বেগে চলছিল। অবশেষে আমরা উক্ত খাখ্ নামক বাগানে পৌঁছে গেলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা বললাম, ‘পত্র বাহির কর।’ সে বলল, ‘আমার নিকট তো কোন পত্র নেই।’ আমরা বললাম, ‘তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হবে।’ তখন সে তার চুলের খোঁপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাজির হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইব্‌নু বালতাআ (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে মক্কার কয়েকজন মুশরিকের প্রতি লেখা হয়েছে। যাতে তাদেরকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে হাতিব! একি ব্যাপার?’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার ব্যাপারে কোন তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আসলে আমি কুরাইশ বংশোদ্ভুত নই। তবে তাদের সঙ্গে মিশে ছিলাম। আর যারা আপনার সঙ্গে মুজাহিরগণ রয়েছেন, তাদের সকলেরই মক্কাবাসীদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাঁদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাদের প্রতি এমন কিছু অনুগ্রহ দেখাই, যদ্দারা অন্তত তারা আমার আপন জনদের রক্ষা করবে। আর আমি তা কুফরী কিংবা মুরতাদ হবার উদ্দেশ্যে করিনি এবং কুফরীর প্রতি আকৃষ্ট হবার কারণেও নয়।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলছে।’ তখন ‘উমর (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ সুফিয়ান (রহঃ) বলেন এ সনদটি খুবই উত্তম।

৫৬/১৪২. অধ্যায়ঃ

বন্দীদেরকে পরিচ্ছদ দান প্রসঙ্গে।

৩০০৮

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ عَمْرٍو سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمَ بَدْرٍ أُتِيَ بِأُسَارَى وَأُتِيَ بِالْعَبَّاسِ وَلَمْ يَكُنْ عَلَيْهِ ثَوْبٌ فَنَظَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَهُ قَمِيْصًا فَوَجَدُوْا قَمِيْصَ عَبْدِ اللهِ بْنِ أُبَيَّ يَقْدُرُ عَلَيْهِ فَكَسَاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِيَّاهُ فَلِذَلِكَ نَزَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَمِيْصَهُ الَّذِيْ أَلْبَسَهُ قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ كَانَتْ لَهُ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَدٌ فَأَحَبَّ أَنْ يُكَافِئَهُ
জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন বদর যুদ্ধের দিন কাফির বন্দীদেরকে হাযির করা হল এবং ‘আব্বাস (রাঃ)-কেও আনা হল তখন তাঁর শরীরে পোশাক ছিল না। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর শরীরের জন্য উপযোগী জামা খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলেন, ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উবাই এর জামা তাঁর গায়ের উপযুক্ত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে জামাটি তাঁকেই পরিয়ে দিলেন। এ কারণেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের জামা খুলে ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উবাইকে (মৃত্যুর পর) পরিয়ে দিয়েছিলেন। ইব্‌নু ‘উয়াইনাহ্ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উবাই-এর এটি সৌজন্য ছিল, তাই তিনি তার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলেন।

৫৬/১৪৩. অধ্যায়ঃ

সেই ব্যক্তির ফযীলত যার মাধ্যমে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে।

৩০০৯

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا يَعْقُوْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيُّ عَنْ أَبِيْ حَازِمٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ سَهْلٌ يَعْنِيْ ابْنَ سَعْدٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ خَيْبَرَ لَاعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلاً يُفْتَحُ عَلَى يَدَيْهِ يُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ فَبَاتَ النَّاسُ لَيْلَتَهُمْ أَيُّهُمْ يُعْطَى فَغَدَوْا كُلُّهُمْ يَرْجُوْهُ فَقَالَ أَيْنَ عَلِيٌّ فَقِيْلَ يَشْتَكِيْ عَيْنَيْهِ فَبَصَقَ فِيْ عَيْنَيْهِ وَدَعَا لَهُ فَبَرَأَ كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ فَأَعْطَاهُ فَقَالَ أُقَاتِلُهُمْ حَتَّى يَكُوْنُوْا مِثْلَنَا فَقَالَ انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ فَوَاللهِ لَانْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُوْنَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ
সাহ্‌ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধের দিন বলেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পাতাকা দিব, যার হাতে আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দিবেন। সে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসে, আর আল্লাহ্‌ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাকে ভালবাসেন। লোকেরা সারা রাত কাটিয়ে দেয় যে, কাকে এ পতাকা দেয়া হয়? আর পরদিন সকালে প্রত্যেকেই সেটা পাবার আকাঙ্খা পোষণ করে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আলী কোথায়? বলা হল, তাঁর চোখে অসুখ। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চোখে আপন মুখের লালা লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু‘আ করলেন। তাতে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন। যেন তাঁর চোখে কোন অসুবিধাই ছিল না। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। ‘আলী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আমি তাদের সঙ্গে ততক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেন, ‘তুমি স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে গিয়ে তাদের আঙিনায় অবতরণ কর। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান কর এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর তাদের জন্য যা আবশ্যকীয় তা তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য রক্তিম বর্ণের উট পাওয়ার চেয়ে উত্তম।

৫৬/১৪৪. অধ্যায়ঃ

শৃঙ্খলিত কয়েদী।

৩০১০

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ عَجِبَ اللهُ مِنْ قَوْمٍ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ فِي السَّلَاسِلِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা সে সকল লোকের উপর সন্তুষ্ট হন, যারা শৃঙ্খলিত অবস্থায় জান্নাতে দাখিল হবে।

৫৬/১৪৫. অধ্যায়ঃ

আহলে কিতাবদ্বয়ের মধ্য হতে যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার ফযীলত।

৩০১১

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ حَيٍّ أَبُوْ حَسَنٍ قَالَ سَمِعْتُ الشَّعْبِيَّ يَقُوْلُ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ بُرْدَةَ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَاهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ثَلَاثَةٌ يُؤْتَوْنَ أَجْرَهُمْ مَرَّتَيْنِ الرَّجُلُ تَكُوْنُ لَهُ الأَمَةُ فَيُعَلِّمُهَا فَيُحْسِنُ تَعْلِيْمَهَا وَيُؤَدِّبُهَا فَيُحْسِنُ أَدَبَهَا ثُمَّ يُعْتِقُهَا فَيَتَزَوَّجُهَا فَلَهُ أَجْرَانِ وَمُؤْمِنُ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِيْ كَانَ مُؤْمِنًا ثُمَّ آمَنَ بِالنَّبِيِّ فَلَهُ أَجْرَانِ وَالْعَبْدُ الَّذِيْ يُؤَدِّيْ حَقَّ اللهِ وَيَنْصَحُ لِسَيِّدِهِ ثُمَّ قَالَ الشَّعْبِيُّ وَأَعْطَيْتُكَهَا بِغَيْرِ شَيْءٍ وَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يَرْحَلُ فِيْ أَهْوَنَ مِنْهَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ
আবূ বুরদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন প্রকার লোককে দ্বিগুণ নেকী দান করা হবে। যে ব্যক্তির একটি বাঁদী আছে, সে তাকে শিক্ষা দান করে, উত্তমরূপে শিক্ষা দান করে, আদব শিক্ষা দেয় এবং তাকে উত্তমরূপে শিষ্টাচার শিক্ষাদান করে। অতঃপর তাকে আযাদ করে দিয়ে তাকে বিবাহ করে। সে ব্যক্তির জন্য দ্বিগুন নেকী রয়েছে। আর আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে মু’মিন ব্যক্তি যে তার নবীর প্রতি ঈমান এনেছিল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান এনেছে। তার জন্য দ্বিগুণ নেকী রয়েছে। আর যে গোলাম আল্লাহ্‌র হক যথাযথভাবে আদায় করে এবং নিজ মনিবের দেয়া দায়িত্বও সঠিকরূপে পালন করে, (তার জন্যও দ্বিগুণ নেকী রয়েছে) শা’বী (রহঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে সালেহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি তোমাকে এ হাদীসটি কোন বিনিময় ব্যতীতই শুনিয়েছি। অথচ এর চেয়ে সহজ হাদীস শোনার জন্য লোকেরা মদীনা পর্যন্ত সফর করতেন।

৫৬/১৪৬. অধ্যায়ঃ

নৈশকালীন আক্রমণে মুশরিকদের মহিলা ও শিশু নিহত হলে।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ----- এবং ----- শব্দগুলোর দ্বারা রাতের সময় বুঝানো হয়েছে।

৩০১২

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ الصَّعْبِ بْنِ جَثَّامَةَ قَالَ مَرَّ بِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالأَبْوَاءِ أَوْ بِوَدَّانَ وَسُئِلَ عَنْ أَهْلِ الدَّارِ يُبَيَّتُوْنَ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ فَيُصَابُ مِنْ نِسَائِهِمْ وَذَرَارِيِّهِمْ قَالَ هُمْ مِنْهُمْ وَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ لَا حِمَى إِلَّا لِلهِ وَلِرَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم وَعَنْ الزُّهْرِيِّ أَنَّهُ سَمِعَ عُبَيْدَ اللهِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ
সা‘ব ইব্‌নু জাস্‌সামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, যে সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে, যদি রাত্রিকালীন আক্রমনে তাদের মহিলা ও শিশুরা নিহত হয়, তবে কী হবে? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারাও তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। আর আমি তাকে আরো বলতে শুনেছি যে, সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাড়া অন্য কারো জন্য হতে পারে না।

৩০১৩

حَدَّثَنَا الصَّعْبُ فِي الذَّرَارِيِّ كَانَ عَمْرٌو يُحَدِّثُنَا عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَسَمِعْنَاهُ مِنَ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عُبَيْدُ اللهِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ الصَّعْبِ قَالَ هُمْ مِنْهُمْ وَلَمْ يَقُلْ كَمَا قَالَ عَمْرٌو هُمْ مِنْ آبَائِهِمْ
স‘আব হতে মুশরিকদের সন্তান সম্পর্কে বর্ণিত ‘আমর ইব্‌নু শিহাবের সূত্রে নবী থেকে বর্ণিতঃ
.. .. .. .. .. স‘আব বলেন, তারা তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। ‘আমর একথা বলেননি যে, তারা তাদের পিতামাতাদের অন্তর্ভূক্ত।

৫৬/১৪৭. অধ্যায়ঃ

যুদ্ধে শিশুদেরকে হত্যা করা।

৩০১৪

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ أَخْبَرَهُ أَنَّ امْرَأَةً وُجِدَتْ فِيْ بَعْضِ مَغَازِي النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَقْتُوْلَةً فَأَنْكَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَتْلَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক যুদ্ধে এক নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও শিশুদের হত্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

৫৬/১৪৮. অধ্যায়ঃ

যুদ্ধে নারীদেরকে হত্যা করা।

৩০১৫

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ قَالَ قُلْتُ لِأَبِيْ أُسَامَةَ حَدَّثَكُمْ عُبَيْدُ اللهِ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ وُجِدَتْ امْرَأَةٌ مَقْتُوْلَةً فِيْ بَعْضِ مَغَازِيْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَنَهَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ قَتْلِ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেন।

৫৬/১৪৯. অধ্যায়ঃ

আল্লাহ্ তা‘আলার শাস্তি দিয়ে কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না।

৩০১৬

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ بُكَيْرٍ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّهُ قَالَ بَعَثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ بَعْثٍ فَقَالَ إِنْ وَجَدْتُمْ فُلَانًا وَفُلَانًا فَأَحْرِقُوْهُمَا بِالنَّارِ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ أَرَدْنَا الْخُرُوْجَ إِنِّيْ أَمَرْتُكُمْ أَنْ تُحْرِقُوْا فُلَانًا وَفُلَانًا وَإِنَّ النَّارَ لَا يُعَذِّبُ بِهَا إِلَّا اللهُ فَإِنْ وَجَدْتُمُوْهُمَا فَاقْتُلُوْهُمَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং বলেন, ‘তোমরা যদি অমুক ও অমুক ব্যক্তিকে পাও, তবে তাদের উভয়কে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে।’ অতঃপর আমরা যখন বের হতে চাইলাম, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারবে না। কাজেই তোমরা যদি তাদের উভয়কে পাও, তবে তাদেরকে হত্যা কর।’

৩০১৭

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ عِكْرِمَةَ أَنَّ عَلِيًّا حَرَّقَ قَوْمًا فَبَلَغَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ لَوْ كُنْتُ أَنَا لَمْ أُحَرِّقْهُمْ لِأَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَا تُعَذِّبُوْا بِعَذَابِ اللهِ وَلَقَتَلْتُهُمْ كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَنْ بَدَّلَ دِيْنَهُ فَاقْتُلُوْهُ
ইকরামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আলী (রাঃ) এক সম্প্রদায়কে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এ সংবাদ ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, ‘যদি আমি হতাম, তবে আমি তাদেরকে জ্বালিয়ে ফেলতাম না। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর আযাব দ্বারা কাউকে আযাব দিবে না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে লোক তার দ্বীন বদলে ফেলে, তাকে হত্যা করে ফেল।’

৫৬/১৫০. অধ্যায়ঃ

(বন্দী সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেন) তারপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দাও-যে পর্যন্ত না যুদ্ধবাজ শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। (মুহাম্মাদ ৪)
এ প্রসঙ্গে সুমামাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি রয়েছে আর আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ কোন নবীর পক্ষে সমীচীন নয় বন্দীদেরকে নিজের কাছে রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশে পুরোপুরিভাবে শত্রুকে পরাভূত করা হয়। তোমরা তো পার্থিব ধন-সম্পদ কামনা কর। (আল-আনফালঃ ৬৭)

৫৬/১৫১. অধ্যায়ঃ

কোন মুসলিম বন্দী বন্দীদশা হতে মুক্তির জন্য বন্দীকারীকে হত্যা বা কোন কৌশল অবলম্বন করবে কি?
এ প্রসঙ্গে মিসওয়ার (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে।

৫৬/১৫২. অধ্যায়ঃ

কোন মুসলিম মুশরিক কর্তৃক আগুনে প্রজ্জ্বলিত হলে তাকেও প্রজ্জ্বলিত করা হবে কি?

৩০১৮

حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ أَبِيْ قِلَابَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَهْطًا مِنْ عُكْلٍ ثَمَانِيَةً قَدِمُوْا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَاجْتَوَوْا الْمَدِيْنَةَ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ ابْغِنَا رِسْلاً قَالَ مَا أَجِدُ لَكُمْ إِلَّا أَنْ تَلْحَقُوْا بِالذَّوْدِ فَانْطَلَقُوْا فَشَرِبُوْا مِنْ أَبْوَالِهَا وَأَلْبَانِهَا حَتَّى صَحُّوْا وَسَمِنُوْا وَقَتَلُوْا الرَّاعِيَ وَاسْتَاقُوْا الذَّوْدَ وَكَفَرُوْا بَعْدَ إِسْلَامِهِمْ فَأَتَى الصَّرِيْخُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَبَعَثَ الطَّلَبَ فَمَا تَرَجَّلَ النَّهَارُ حَتَّى أُتِيَ بِهِمْ فَقَطَّعَ أَيْدِيَهُمْ وَأَرْجُلَهُمْ ثُمَّ أَمَرَ بِمَسَامِيْرَ فَأُحْمِيَتْ فَكَحَلَهُمْ بِهَا وَطَرَحَهُمْ بِالْحَرَّةِ يَسْتَسْقُوْنَ فَمَا يُسْقَوْنَ حَتَّى مَاتُوْا قَالَ أَبُوْ قِلَابَةَ قَتَلُوْا وَسَرَقُوْا وَحَارَبُوْا اللهَ وَرَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم وَسَعَوْا فِي الأَرْضِ فَسَادًا
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘উক্‌ল নামক গোত্রের আট ব্যক্তির একটি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এল। মদীনার আবহাওয়া তারা উপযোগী মনে করেনি। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের জন্য দুগ্ধবতী উটনীর ব্যবস্থা করুন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা বরং সদকার উটের পালের নিকট যাও। তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুধ পান করে সুস্থ এবং মোটাতাজা হয়ে গেল। অতঃপর তারা উটের রাখালকে হত্যা করে উটের পাল হাঁকিয়ে নিয়ে গেল এবং মুসলিম হবার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেল। তখন এক সংবাদ দাতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়-সওয়ারদেরকে তাদের সন্ধানে পাঠালেন। তখন পর্যন্ত দিনের আলো প্রকাশ পায়নি ‘সে সময় তাদেরকে নিয়ে আসা হল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের হাত পা কেটে ফেললেন। অতঃপর তাঁর নির্দেশে লৌহ শলাকা গরম করে তাদের চোখে ঢুকানো হয় এবং তাদের উত্তপ্ত ভূমিতে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাদেরকে পানি দেয়া হয়নি। অবশেষে তাদের মৃত্যু ঘটে। আবূ কিলাবা (রাঃ) বলেন, তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে।
৫৬/১৫৩. অধ্যায়ঃ

৩০১৯

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ يُونُسَ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ وَأَبِيْ سَلَمَةَ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ قَرَصَتْ نَمْلَةٌ نَبِيًّا مِنْ الأَنْبِيَاءِ فَأَمَرَ بِقَرْيَةِ النَّمْلِ فَأُحْرِقَتْ فَأَوْحَى اللهُ إِلَيْهِ أَنْ قَرَصَتْكَ نَمْلَةٌ أَحْرَقْتَ أُمَّةً مِنْ الْأُمَمِ تُسَبِّحُ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন একজন নবীকে একটি পিপীলিকা কামড় দেয়। তিনি পিপীলিকার সমগ্র আবাসটি জ্বালিয়ে দেয়ার আদেশ করেন এবং তা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করেন, তোমাকে একটি পিপীলিকা কামড় দিয়েছে আর তুমি আল্লাহ্‌র তসবীহকারী একটি জাতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছ।

৫৬/১৫৪. অধ্যায়ঃ

ঘরদোর ও খেজুর বাগ পুড়িয়ে দেয়া।

৩০২০

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ إِسْمَاعِيْلَ قَالَ حَدَّثَنِيْ قَيْسُ بْنُ أَبِيْ حَازِمٍ قَالَ قَالَ لِيْ جَرِيْرٌ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَلَا تُرِيْحُنِيْ مِنْ ذِي الْخَلَصَةِ وَكَانَ بَيْتًا فِيْ خَثْعَمَ يُسَمَّى كَعْبَةَ الْيَمَانِيَةِ قَالَ فَانْطَلَقْتُ فِيْ خَمْسِيْنَ وَمِائَةِ فَارِسٍ مِنْ أَحْمَسَ وَكَانُوْا أَصْحَابَ خَيْلٍ قَالَ وَكُنْتُ لَا أَثْبُتُ عَلَى الْخَيْلِ فَضَرَبَ فِيْ صَدْرِيْ حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ أَصَابِعِهِ فِيْ صَدْرِيْ وَقَالَ اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ وَاجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا فَانْطَلَقَ إِلَيْهَا فَكَسَرَهَا وَحَرَّقَهَا ثُمَّ بَعَثَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُخْبِرُهُ فَقَالَ رَسُوْلُ جَرِيْرٍ وَالَّذِيْ بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا جِئْتُكَ حَتَّى تَرَكْتُهَا كَأَنَّهَا جَمَلٌ أَجْوَفُ أَوْ أَجْرَبُ قَالَ فَبَارَكَ فِيْ خَيْلِ أَحْمَسَ وَرِجَالِهَا خَمْسَ مَرَّاتٍ
জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাকে যুলখালাসার ব্যাপারে শান্তি দিবে না? খাশ’আম গোত্রের একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কা’বা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাঃ) বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ’ অশ্বারোহীকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা করলাম। তারা সূদক্ষ অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাঃ) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলির চিহ্ন দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হিদায়াত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন।’ অতঃপর জারীর (রাঃ) সেখানে যান এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলেন ও জ্বালিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ খবর দেয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাঃ) এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখন যুলখালাসাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। যুলখালাসার মন্দিরটি যে পাঁচড়া যুক্ত উটের মত। জারীর (রাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু‘আ করেন।

৩০২১

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيْرٍ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ حَرَّقَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نَخْلَ بَنِي النَّضِيْرِ
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী নাযীরের খেজুর বাগ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

৫৬/১৫৫. অধ্যায়ঃ

নিদ্রিত মুশরিককে হত্যা করা।

৩০২২

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّاءَ بْنِ أَبِيْ زَائِدَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَبِيْ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَهْطًا مِنْ الأَنْصَارِ إِلَى أَبِيْ رَافِعٍ لِيَقْتُلُوْهُ فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنْهُمْ فَدَخَلَ حِصْنَهُمْ قَالَ فَدَخَلْتُ فِيْ مَرْبِطِ دَوَابَّ لَهُمْ قَالَ وَأَغْلَقُوْا بَابَ الْحِصْنِ ثُمَّ إِنَّهُمْ فَقَدُوْا حِمَارًا لَهُمْ فَخَرَجُوْا يَطْلُبُوْنَهُ فَخَرَجْتُ فِيْمَنْ خَرَجَ أُرِيْهِمْ أَنَّنِيْ أَطْلُبُهُ مَعَهُمْ فَوَجَدُوْا الْحِمَارَ فَدَخَلُوْا وَدَخَلْتُ وَأَغْلَقُوْا بَابَ الْحِصْنِ لَيْلاً فَوَضَعُوْا الْمَفَاتِيْحَ فِيْ كَوَّةٍ حَيْثُ أَرَاهَا فَلَمَّا نَامُوْا أَخَذْتُ الْمَفَاتِيْحَ فَفَتَحْتُ بَابَ الْحِصْنِ ثُمَّ دَخَلْتُ عَلَيْهِ فَقُلْتُ يَا أَبَا رَافِعٍ فَأَجَابَنِيْ فَتَعَمَّدْتُ الصَّوْتَ فَضَرَبْتُهُ فَصَاحَ فَخَرَجْتُ ثُمَّ جِئْتُ ثُمَّ رَجَعْتُ كَأَنِّيْ مُغِيْثٌ فَقُلْتُ يَا أَبَا رَافِعٍ وَغَيَّرْتُ صَوْتِيْ فَقَالَ مَا لَكَ لِأُمِّكَ الْوَيْلُ قُلْتُ مَا شَأْنُكَ قَالَ لَا أَدْرِيْ مَنْ دَخَلَ عَلَيَّ فَضَرَبَنِيْ قَالَ فَوَضَعْتُ سَيْفِيْ فِيْ بَطْنِهِ ثُمَّ تَحَامَلْتُ عَلَيْهِ حَتَّى قَرَعَ الْعَظْمَ ثُمَّ خَرَجْتُ وَأَنَا دَهِشٌ فَأَتَيْتُ سُلَّمًا لَهُمْ لِأَنْزِلَ مِنْهُ فَوَقَعْتُ فَوُثِئَتْ رِجْلِيْ فَخَرَجْتُ إِلَى أَصْحَابِيْ فَقُلْتُ مَا أَنَا بِبَارِحٍ حَتَّى أَسْمَعَ النَّاعِيَةَ فَمَا بَرِحْتُ حَتَّى سَمِعْتُ نَعَايَا أَبِيْ رَافِعٍ تَاجِرِ أَهْلِ الْحِجَازِ قَالَ فَقُمْتُ وَمَا بِيْ قَلَبَةٌ حَتَّى أَتَيْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْنَاهُ
বারআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের একটি দল আবূ রাফি’ ইয়াহুদীকে হত্যা করার জন্য প্রেরণ করেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহুদীদের দূর্গে প্রবেশ করল। তিনি বলেন, অতঃপর আমি তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে গেলাম। তাদেরকে আমি জানাতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধার খোঁজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দূর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ করলাম। রাতে তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলো একটি কুলুঙ্গীর মধ্যে রাখল। আমি তা দেখতে পেলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলো নিয়ে নিলাম এবং দূর্গের দরজা খুললাম। অতঃপর আমি আবূ রাফি’র নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবূ রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত হানলাম, অমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি বেরিয়ে এলাম। আমি আবার প্রবেশ করলাম, যেন আমি তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবূ রাফি’! সে বলল, তোমার কী হল, তোমার মা ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কী অবস্থা? সে বলল, আমি জানি না, কে বা কারা আমার এখানে এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, অতঃপর আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তার হাড় পর্যন্ত ঠেকার আওয়াজ হল। অতঃপর আমি ভীত-শংকিত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিঁড়ির নিকট এলাম। যখন আমি পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল। আমি আমার সাথীদের সঙ্গে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হতে ততক্ষণ পর্যন্ত যাব না, যতক্ষণ না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারিণীর আওয়াজ শুনতে পাই। হিজাযবাসী বণিক আবূ রাফি’র মৃত্যুর ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বললেন, তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম এবং আমার তখন কোন ব্যাথাই ছিল না। অবশেষে আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছে তাঁকে খবর জানালাম।

৩০২৩

حَدَّثَنِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِيْ زَائِدَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَهْطًا مِنْ الأَنْصَارِ إِلَى أَبِيْ رَافِعٍ فَدَخَلَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَتِيْكٍ بَيْتَهُ لَيْلاً فَقَتَلَهُ وَهُوَ نَائِمٌ
বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারীদের একদলকে আবূ রাফি’ ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ করেন। তখন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আতীক (রাঃ) রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করে যখন সে ঘুমিয়ে ছিল।

৫৬/১৫৬. অধ্যায়ঃ

শত্রুর মুখোমখী হওয়ার আকাঙ্খা করো না।

৩০২৪

حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ يُوسُفَ الْيَرْبُوعِيُّ حَدَّثَنَا أَبُوْ إِسْحَاقَ الْفَزَارِيُّ عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ سَالِمٌ أَبُو النَّضْرِ مَوْلَى عُمَرَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ كُنْتُ كَاتِبًا لَهُ قَالَ كَتَبَ إِلَيْهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِيْ أَوْفَى حِيْنَ خَرَجَ إِلَى الْحَرُوْرِيَّةِ فَقَرَأْتُهُ فَإِذَا فِيْهِ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ بَعْضِ أَيَّامِهِ الَّتِيْ لَقِيَ فِيْهَا الْعَدُوَّ انْتَظَرَ حَتَّى مَالَتْ الشَّمْسُ ثُمَّ قَامَ فِي النَّاسِ فَقَالَ أَيُّهَا النَّاسُ لَا تَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ وَسَلُوْا اللهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاصْبِرُوْا وَاعْلَمُوْا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ وَمُجْرِيَ السَّحَابِ وَهَازِمَ الأَحْزَابِ اهْزِمْهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ
‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র আযাদকৃত গোলাম আবুন নাযার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র লেখক ছিলাম। তিনি বলেন, তাঁর নিকট ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ ‘আওফাহ (রাঃ) একখানি পত্র লিখেন, যখন তিনি হারুরিয়ার দিকে অভিযানে বের হন। আমি পত্রটি পাঠ করলাম- তাতে লেখা ছিল যে, শত্রুর সঙ্গে কোন এক মুখোমুখী যুদ্ধে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করার কামনা করবে না এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট নিরাপত্তার দু‘আ করবে। অতঃপর যখন তোমরা শত্রুর সামনা-সামনি হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারির ছায়ায় অবস্থিত।’ অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! কুরআন অবতীর্ণকারী, মেঘমালা চালনাকারী, সৈন্য দলকে পরাভূতকারী, আপনি কাফিরদেরকে পরাস্ত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।’

৩০২৫

وَقَالَ مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ حَدَّثَنِيْ سَالِمٌ أَبُو النَّضْرِ كُنْتُ كَاتِبًا لِّعُمَرَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ فَأَتَاهُ كِتَابُ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ أَوْفَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَا تَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ
‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র আযাদকৃত গোলাম আবুন নাযার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মূসা ইব্‌নু ‘উকবা (রহঃ) বলেন, সালিম আবুন নযর আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি ‘উমর ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ্‌র লেখক ছিলাম। তখন তার নিকট ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আবূ ‘আওফা (রাঃ)-এর একখানা পত্র পৌঁছল এ মর্মে যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হওয়ার কামনা করবে না।

৩০২৬

وَقَالَ أَبُوْ عَامِرٍ حَدَّثَنَا مُغِيْرَةُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَا تَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ فَإِذَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاصْبِرُوْا
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হবার ব্যাপারে ইচ্ছা পোষণ করবে না। আর যখন তোমরা তাদের মুখোমুখী হবে তখন ধৈর্য অবলম্বন করবে।

৫৬/১৫৭. অধ্যায়ঃ

যুদ্ধ হল কৌশল।

৩০২৭

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ هَمَّامٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ هَلَكَ كِسْرَى ثُمَّ لَا يَكُوْنُ كِسْرَى بَعْدَهُ وَقَيْصَرٌ لَيَهْلِكَنَّ ثُمَّ لَا يَكُوْنُ قَيْصَرٌ بَعْدَهُ وَلَتُقْسَمَنَّ كُنُوزُهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কিস্‌রা ধ্বংস হবে, অতঃপর আর কিস্‌রা হবে না। আর কায়সার অবশ্যই ধ্বংস হবে, অতঃপর আর কায়সার হবে না এবং এটা নিশ্চিত যে, তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহ্‌র পথে বন্টিত হবে।

৩০২৮

وَسَمَّى الْحَرْبَ خَدْعَةً
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
আর তিনি যুদ্ধকে কৌশল নামে অভিহিত করেন।

৩০২৯

حَدَّثَنَا أَبُوْ بَكْرٍ بُوْرُ بْنُ أَصْرَمَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ سَمَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْحَرْبَ خَدْعَةً
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধকে কৌশল নামে অভিহিত করেছেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আবূ বক্‌র হচ্ছেন বূর ইব্‌নু আসরাম।

৩০৩০

حَدَّثَنَا صَدَقَةُ بْنُ الْفَضْلِ أَخْبَرَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ عَمْرٍو سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْحَرْبُ خَدْعَةٌ
জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে কৌশল।’

৫৬/১৫৮. অধ্যায়ঃ

যুদ্ধে মিথ্যা বলা।

৩০৩১

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرِو بْنِ دِيْنَارٍ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ مَنْ لِكَعْبِ بْنِ الأَشْرَفِ فَإِنَّهُ قَدْ آذَى اللهَ وَرَسُوْلَهُ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ أَتُحِبُّ أَنْ أَقْتُلَهُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَأَتَاهُ فَقَالَ إِنَّ هَذَا يَعْنِي النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَدْ عَنَّانَا وَسَأَلَنَا الصَّدَقَةَ قَالَ وَأَيْضًا وَاللهِ لَتَمَلُّنَّهُ قَالَ فَإِنَّا قَدْ اتَّبَعْنَاهُ فَنَكْرَهُ أَنْ نَدَعَهُ حَتَّى نَنْظُرَ إِلَى مَا يَصِيْرُ أَمْرُهُ قَالَ فَلَمْ يَزَلْ يُكَلِّمُهُ حَتَّى اسْتَمْكَنَ مِنْهُ فَقَتَلَهُ
জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বললেন, ‘কে আছ যে কা’ব ইব্‌নু আশরাফ-এর (হত্যার) দায়িত্ব নিবে? কেননা সে আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কষ্ট দিয়েছে।’ মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ।’ বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) কা’ব ইব্‌নু আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, ‘এ ব্যক্তি অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কষ্টে ফেলেছে এবং আমাদের নিকট হতে সদকা চাচ্ছে।’ রাবী বলেন, তখন কা’ব বলল, ‘এখনই আর কী হয়েছে?’ তোমরা তো তার থেকে আরো পেরেশান হয়ে পড়বে।’ মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আমরা তাঁর অনুগত হয়েছি, এখন তাঁর শেষ ফল না দেখা পর্যন্ত তাঁকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা পছন্দ করি না।’ রাবী বলেন, মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) এভাবে তার সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত কথা বলতে থাকেন, অতঃপর তাকে হত্যা করে ফেলেন।

৫৬/১৫৯. অধ্যায়ঃ

হারবীকে গোপনে হত্যা করা।

৩০৩২

حَدَّثَنِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ جَابِرٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ لِكَعْبِ بْنِ الأَشْرَفِ فَقَالَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ أَتُحِبُّ أَنْ أَقْتُلَهُ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَأْذَنْ لِيْ فَأَقُوْلَ قَالَ قَدْ فَعَلْتُ
জাবির (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘কা’ব ইব্‌নু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে?’ তখন মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মাদ ইব্‌নু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি।’ তিনি বললেন, ‘আমি অনুমতি দিলাম।’

৫৬/১৬০. অধ্যায়ঃ

যার নিকট হতে ক্ষতির আশংকা থাকে তার সঙ্গে কৌশল ও সাবধানতা অবলম্বন করা বৈধ।

৩০৩৩

وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ عُقَيْلٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ قَالَ انْطَلَقَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَعَهُ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ قِبَلَ ابْنِ صَيَّادٍ فَحُدِّثَ بِهِ فِيْ نَخْلٍ فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم النَّخْلَ طَفِقَ يَتَّقِيْ بِجُذُوعِ النَّخْلِ وَابْنُ صَيَّادٍ فِيْ قَطِيْفَةٍ لَهُ فِيْهَا رَمْرَمَةٌ فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا صَافِ هَذَا مُحَمَّدٌ فَوَثَبَ ابْنُ صَيَّادٍ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ
‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উবাই ইব্‌নু কা’ব (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে ইব্‌নু সাইয়াদের নিকট গমন করেন। তখন লোকেরা বলল, সে খেজুর বাগানে আছে। যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট খেজুর বাগানে পৌঁছলেন, তখন তিনি নিজেকে খেজুর গাছের শাখার আড়াল করতে লাগলেন। ইব্‌নু সাইয়াদ তখন তার চাদর জড়িয়ে গুণগুণ করছিল। তখন ইব্‌নু সাইয়াদের মা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে বলে উঠল, হে সাফ! (ইব্‌নু সাইয়াদের ডাক নাম) এই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন ইব্‌নু সাইয়াদ লাফিয়ে উঠল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি এ নারী তাকে তার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে আসল ব্যাপার প্রকাশিত হয়ে পড়ত।

৫৬/১৬১. অধ্যায়ঃ

যুদ্ধে কবিতা আবৃত্তি করা ও পরিখা খননকালে আওয়াজ উচ্চ করা।
এ প্রসঙ্গে সাহ্‌ল ও আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে, আর ইয়াযিদ (রহঃ) সালামা (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে।

৩০৩৪

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ حَدَّثَنَا أَبُوْ إِسْحَاقَ عَنْ الْبَرَاءِ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الْخَنْدَقِ وَهُوَ يَنْقُلُ التُّرَابَ حَتَّى وَارَى التُّرَابُ شَعَرَ صَدْرِهِ وَكَانَ رَجُلًا كَثِيْرَ الشَّعَرِ وَهُوَ يَرْتَجِزُ بِرَجَزِ عَبْدِ اللهِ
اللَّهُمَّ لَوْلَا أَنْتَ مَا اهْتَدَيْـنَـا * وَلَا تَصَدَّقْنَا وَلَا صَلَّيْنَـا
فَأَنْزِلَنْ سَكِيْنَـةً عَـلَـيْـنَا * وَثَبِّتْ الأَقْدَامَ إِنْ لَاقَـيْنَا
إِنَّ الأَعْدَاءَ قَدْ بَغَوْا عَلَيْـنـَا * إِذَا أَرَادُوْا فِتْـنَـةً أَبَـيْنَا
يَرْفَعُ بِهَا صَوْتَهُ
বারা ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খন্দক যুদ্ধের দিন দেখেছি, তিনি নিজে মাটি বহন করেছেন। এমনকি তাঁর সম্পূর্ণ বক্ষের কেশরাজিকে মাটি ঢেকে ফেলেছে আর তাঁর শরীরে অনেক পশম ছিল। তখন তিনি ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু রাওয়াহা (রাঃ) রচিত কবিতা আবৃত্তি করেছিলেনঃ
ওগো আল্লাহ্ তুমি না চাইলে আমরা হিদায়াত পেতাম না।
আর আমরা সদকা করতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না।।
তুমি আমাদের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ কর।
এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদেরকে সুদৃঢ় রাখ।।
শত্রুরা আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে।
তারা ফিত্‌নাহ সৃষ্টির ইচ্ছে করলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি।”
আর তিনি এ কবিতাগুলো আবৃত্তি কালে স্বর উচ্চ করেছিলেন।

৫৬/১৬২. অধ্যায়ঃ

যে ব্যক্তি অশ্বোপরি দৃঢ় হয়ে থাকতে পারে না।

৩০৩৫

حَدَّثَنِيْ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ نُمَيْرٍ حَدَّثَنَا ابْنُ إِدْرِيْسَ عَنْ إِسْمَاعِيْلَ عَنْ قَيْسٍ عَنْ جَرِيْرٍ قَالَ مَا حَجَبَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُنْذُ أَسْلَمْتُ وَلَا رَآنِيْ إِلَّا تَبَسَّمَ فِيْ وَجْهِي
জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর নিকট প্রবেশ করতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন।

৩০৩৬

. وَلَقَدْ شَكَوْتُ إِلَيْهِ إِنِّيْ لَا أَثْبُتُ عَلَى الْخَيْلِ فَضَرَبَ بِيَدِهِ فِيْ صَدْرِيْ وَقَالَ اَللّٰهُمَّ ثَبِّتْهُ وَاجْعَلْهُ هَادِيًا مَهْدِيًّا
জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমার অসুবিধার কথা জানালাম যে, আমি অশ্ব পৃষ্ঠে স্থির থাকতে পারি না। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বক্ষে হাত দিয়ে আঘাত করলেন এবং এ দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ্‌! তাকে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত করুন।

৫৬/১৬৩. অধ্যায়ঃ

চাটাই পুড়িয়ে ক্ষতের চিকিৎসা করা, নারী কর্তৃক পিতার মুখমন্ডল থেকে রক্ত ধেৌত করা এবং ঢাল ভর্তি করে পানি বহন করা।
এবং মহিলা কত্রিক নিজ পিতার মুখমণ্ডলের রক্ত ধৌত করা, ঢাল ভর্তি করে পানি বহন করে আনা

৩০৩৭

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا أَبُوْ حَازِمٍ قَالَ سَأَلُوْا سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ السَّاعِدِيَّ بِأَيِّ شَيْءٍ دُووِيَ جُرْحُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا بَقِيَ مِنْ النَّاسِ أَحَدٌ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ كَانَ عَلِيٌّ يَجِيءُ بِالْمَاءِ فِيْ تُرْسِهِ وَكَانَتْ يَعْنِيْ فَاطِمَةَ تَغْسِلُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ وَأُخِذَ حَصِيْرٌ فَأُحْرِقَ ثُمَّ حُشِيَ بِهِ جُرْحُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ সা‘ঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁকে লোকেরা জিজ্ঞেস করেছিল যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যখম কিভাবে চিকিৎসা করা হয়েছিল? তখন সাহ্‌ল (রাঃ) বলেন, এখন আর এ ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক জানা কেউ অবশিষ্ট নেই। ‘আলী (রাঃ) তাঁর ঢালে করে পানি বহন করে নিয়ে আনছিলেন, আর ফাতিমা (রাঃ) তাঁর মুখমন্ডল হতে রক্ত ধুয়ে দিচ্ছিলেন এবং একটি চাটাই নিয়ে পোড়ানো হয় আর তা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যখমের মধ্যে পুরে দেয়া হয়।

৫৬/১৬৪. অধ্যায়ঃ

যুদ্ধক্ষেত্রে ঝগড়া ও মতবিরোধ করা অপছন্দনীয়। কেউ যদি ইমামের অবাধ্যতা করে তার শাস্তি।
আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন: “নিজেরা পরস্পর বিবাদ করবে না; যদি কর তবে তোমরা সাহস হারা হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে”- (আনফাল ৪৬)। ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন,------- হলো যুদ্ধ।

৩০৩৮

حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا وَكِيْعٌ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ أَبِيْ بُرْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ مُعَاذًا وَأَبَا مُوسَى إِلَى الْيَمَنِ قَالَ يَسِّرَا وَلَا تُعَسِّرَا وَبَشِّرَا وَلَا تُنَفِّرَا وَتَطَاوَعَا وَلَا تَخْتَلِفَا
আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু‘আয ও আবূ মূসা (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করেন ও আদেশ দেন যে, ‘লোকদের প্রতি কোমলতা করবে, কঠোরতা করবে না, তাদের সুখবর দিবে, ঘৃণা সৃষ্টি করবে না। পরস্পর একমত হবে, মতভেদ করবে না।’

৩০৩৯

حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ خَالِدٍ حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا أَبُوْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يُحَدِّثُ قَالَ جَعَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى الرَّجَّالَةِ يَوْمَ أُحُدٍ وَكَانُوْا خَمْسِيْنَ رَجُلًا عَبْدَ اللهِ بْنَ جُبَيْرٍ فَقَالَ إِنْ رَأَيْتُمُوْنَا تَخْطَفُنَا الطَّيْرُ فَلَا تَبْرَحُوْا مَكَانَكُمْ هَذَا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ وَإِنْ رَأَيْتُمُوْنَا هَزَمْنَا الْقَوْمَ وَأَوْطَأْنَاهُمْ فَلَا تَبْرَحُوْا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ فَهَزَمُوْهُمْ قَالَ فَأَنَا وَاللهِ رَأَيْتُ النِّسَاءَ يَشْتَدِدْنَ قَدْ بَدَتْ خَلَاخِلُهُنَّ وَأَسْوُقُهُنَّ رَافِعَاتٍ ثِيَابَهُنَّ فَقَالَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللهِ بْنِ جُبَيْرٍ الْغَنِيْمَةَ أَيْ قَوْمِ الْغَنِيْمَةَ ظَهَرَ أَصْحَابُكُمْ فَمَا تَنْتَظِرُوْنَ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ جُبَيْرٍ أَنَسِيْتُمْ مَا قَالَ لَكُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالُوْا وَاللهِ لَنَأْتِيَنَّ النَّاسَ فَلَنُصِيْبَنَّ مِنْ الْغَنِيْمَةِ فَلَمَّا أَتَوْهُمْ صُرِفَتْ وُجُوْهُهُمْ فَأَقْبَلُوْا مُنْهَزِمِيْنَ فَذَاكَ إِذْ يَدْعُوْهُمْ الرَّسُوْلُ فِيْ أُخْرَاهُمْ فَلَمْ يَبْقَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم غَيْرُ اثْنَيْ عَشَرَ رَجُلًا فَأَصَابُوْا مِنَّا سَبْعِيْنَ وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ أَصَابُوْا مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ يَوْمَ بَدْرٍ أَرْبَعِيْنَ وَمِائَةً سَبْعِيْنَ أَسِيْرًا وَسَبْعِيْنَ قَتِيْلًا فَقَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ أَفِي الْقَوْمِ مُحَمَّدٌ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَنَهَاهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُجِيْبُوْهُ ثُمَّ قَالَ أَفِي الْقَوْمِ ابْنُ أَبِيْ قُحَافَةَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قَالَ أَفِي الْقَوْمِ ابْنُ الْخَطَّابِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ فَقَالَ أَمَّا هَؤُلَاءِ فَقَدْ قُتِلُوْا فَمَا مَلَكَ عُمَرُ نَفْسَهُ فَقَالَ كَذَبْتَ وَاللهِ يَا عَدُوَّ اللهِ إِنَّ الَّذِيْنَ عَدَدْتَ لَاحْيَاءٌ كُلُّهُمْ وَقَدْ بَقِيَ لَكَ مَا يَسُوءُكَ قَالَ يَوْمٌ بِيَوْمِ بَدْرٍ وَالْحَرْبُ سِجَالٌ إِنَّكُمْ سَتَجِدُوْنَ فِي الْقَوْمِ مُثْلَةً لَمْ آمُرْ بِهَا وَلَمْ تَسُؤْنِيْ ثُمَّ أَخَذَ يَرْتَجِزُ أُعْـلُ هُـبَـلْ أُعْـلُ هُـبَـلْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَلَا تُجِيْبُوْا لَهُ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا نَقُوْلُ قَالَ قُوْلُوْا اللهُ أَعْلَى وَأَجَلُّ قَالَ إِنَّ لَنَا الْعُزَّى وَلَا عُزَّى لَكُمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَلَا تُجِيْبُوْا لَهُ قَالَ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا نَقُوْلُ قَالَ قُوْلُوْا اللهُ مَوْلَانَا وَلَا مَوْلَى لَكُمْ
বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের দিন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু যুবাইর (রাঃ)-কে পঞ্চাশ জন পদাতিক যোদ্ধার উপর আমীর নিয়োগ করেন এবং বলেন, তোমরা যদি দেখ যে, আমাদেরকে পাখীরা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তথাপি তোমরা আমার পক্ষ হতে সংবাদ পাওয়া ছাড়া স্বস্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রু দলকে পরাস্ত করেছি এবং আমরা তাদেরকে পদদলিত করেছি, তখনও আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্ব-স্থান ত্যাগ করবে না। অতঃপর মুসলিমগণ কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে দিল। বারাআ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মুশরিকদের নারীদেরকে দেখতে পেলাম তারা নিজ বস্ত্র উপরে উঠিয়ে পলায়ন করছে। যাতে পায়ের অলঙ্কার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তখন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু যুবাইর (রাঃ)-এর সহযোগীরা বলতে লাগলেন, ‘লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর। তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছে। আর অপেক্ষা কেন?’ তখন ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু যুবাইর (রাঃ) বললেন, ‘রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে যা বলেছিলেন, তা তোমরা ভুলে গিয়েছো?’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমরা লোকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গনীমতের মাল সংগ্রহে যোগ দিব।’ অতঃপর যখন তাঁরা স্বস্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন তাঁদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তাঁরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে থাকেন। এটা সে সময় যখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে পেছন থেকে ডাকছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বার জন লোক ব্যতীত অপর কেউই বাকী ছিল না। কাফিররা এ সুযোগে মুসলিমদের সত্তর ব্যক্তিকে শহীদ করে ফেলে। এর পূর্বে বদর যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তাঁর সাথীগণ মুশরিকদের সত্তরজনকে বন্দী ও সত্তরজনকে নিহত করেন। এ সময় আবূ সুফিয়ান তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি মুহাম্মাদ জীবিত আছে?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উত্তর দিতে নিষেধ করেন। পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল- ‘লোকদের মধ্যে কি আবূ কুহাফার পুত্র জীবিত আছে?’ পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি খাত্তাবের পুত্র জীবিত আছে?’ অতঃপর সে নিজ লোকদের নিকট গিয়ে বলল, ‘এরা সবাই নিহত হয়েছে।’ এ সময় ‘উমর (রাঃ) ধৈয্যধারণ করতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওরে আল্লাহ্‌র শত্রু! আল্লাহ্‌র শপথ, তুই মিথ্যা বলছিস। যাঁদের তুমি নাম উচ্চারণ করছিস তাঁরা সবাই জীবিত আছেন। তোদের জন্য ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করছে।’ আবূ সুফিয়ান বলল, ‘আজ বদরের দিনের প্রতিশোধ। যুদ্ধ তো বালতির মত। তোমরা তোমাদের লোকদের মধ্যে নাক-কান কাটা দেখবে, আমি এর আদেশ দেইনি কিন্তু তা আমি পছন্দও করিনি।’ অতঃপর বলতে লাগল, ‘হে হুবাল! তোমার মাথা উঁচু হোক। হে হুবাল! তোমার মাথা উঁচু হোক।’ তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা এর উত্তর দিবে না?’ তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কী বলব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে মর্যাদাবান, তিনিই মহা মহিমান্বিত।’ আবূ সুফিয়ান বলল, ‘আমাদের জন্য উয্‌যা রয়েছে, তোমাদের উয্‌যা নেই।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা কি তার উত্তর দিবে না?’ বারাআ (রাঃ) বলেন, ‘সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কী বলব?’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ আমাদের সহায়তাকারী বন্ধু, তোমাদের কোন সহায়তাকারী বন্ধু নেই।’

৫৬/১৬৫. অধ্যায়ঃ

রাত্রিকালে শত্রু ভয়ে ভীত হলে।

৩০৪০

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ أَحْسَنَ النَّاسِ وَأَجْوَدَ النَّاسِ وَأَشْجَعَ النَّاسِ قَالَ وَقَدْ فَزِعَ أَهْلُ الْمَدِيْنَةِ لَيْلَةً سَمِعُوْا صَوْتًا قَالَ فَتَلَقَّاهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى فَرَسٍ لِأَبِيْ طَلْحَةَ عُرْيٍ وَهُوَ مُتَقَلِّدٌ سَيْفَهُ فَقَالَ لَمْ تُرَاعُوْا لَمْ تُرَاعُوْا ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَجَدْتُهُ بَحْرًا يَعْنِي الْفَرَسَ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে দানশীল ও সবচেয়ে শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, একবার এমন হয়েছিল যে, মদীনাবাসী রাতের বেলায় একটি আওয়াজ শুনে ভীত-শংকিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহা (রাঃ)-এর গদীবিহীন ঘোড়ায় আরোহণ করে তরবারী ঝুলিয়ে তাদের সামনে এলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা ভয় করো না, তোমরা ভয় করো না।’ অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত দ্রুতগামী পেয়েছি।

৫৬/১৬৬. অধ্যায়ঃ

যে ব্যক্তি শত্রু দর্শনে চিৎকার দিয়ে বলে, “বিপদ আসন্ন!” যাতে লোকেরা তা শুনতে পায়।

৩০৪১

حَدَّثَنَا الْمَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ أَخْبَرَنَا يَزِيْدُ بْنُ أَبِيْ عُبَيْدٍ عَنْ سَلَمَةَ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ قَالَ خَرَجْتُ مِنْ الْمَدِيْنَةِ ذَاهِبًا نَحْوَ الْغَابَةِ حَتَّى إِذَا كُنْتُ بِثَنِيَّةِ الْغَابَةِ لَقِيَنِيْ غُلَامٌ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قُلْتُ وَيْحَكَ مَا بِكَ قَالَ أُخِذَتْ لِقَاحُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ مَنْ أَخَذَهَا قَالَ غَطَفَانُ وَفَزَارَةُ فَصَرَخْتُ ثَلَاثَ صَرَخَاتٍ أَسْمَعْتُ مَا بَيْنَ لَابَتَيْهَا يَا صَبَاحَاهْ يَا صَبَاحَاهْ ثُمَّ انْدَفَعْتُ حَتَّى أَلْقَاهُمْ وَقَدْ أَخَذُوْهَا فَجَعَلْتُ أَرْمِيْهِمْ وَأَقُوْلُ :
أَنَـا ابـْنُ الأَكْـوَعِ وَالْـيَـوْمُ يَـوْمُ الـرُّضَّـعْ
فَاسْتَنْقَذْتُهَا مِنْهُمْ قَبْلَ أَنْ يَشْرَبُوْا فَأَقْبَلْتُ بِهَا أَسُوقُهَا فَلَقِيَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ الْقَوْمَ عِطَاشٌ وَإِنِّيْ أَعْجَلْتُهُمْ أَنْ يَشْرَبُوْا سِقْيَهُمْ فَابْعَثْ فِيْ إِثْرِهِمْ فَقَالَ يَا ابْنَ الأَكْوَعِ مَلَكْتَ فَأَسْجِحْ إِنَّ الْقَوْمَ يُقْرَوْنَ فِيْ قَوْمِهِمْ
সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি গাবাহ্ নামক স্থানে যাবার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে বের হলাম। যখন আমি গাবাহর উঁচুস্থানে পৌছলাম, সেখানে আমার সঙ্গে ‘আবদুর রাহমান ইব্‌নু আউফ (রাঃ)-এর গোলামের সাক্ষাৎ ঘটল। আমি বললাম, আশ্চর্য! তোমার কী হয়েছে। সে বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুগ্ধবতী উটনীগুলো ছিনতাই হয়েছে। আমি বললাম, কারা ছিনতাই করেছে? সে বলল, গাতফান ও ফাযারাহ্ গোত্রের লোকেরা। তখন আমি বিপদ, বিপদ বলে তিন বার চিৎকার দিলাম। আর মদীনার দুই কঙ্করময় ভূমির মাঝে যত লোক ছিল সবাইকে আওয়াজ শুনিয়ে দিলাম। অতঃপর আমি দ্রুত ছুটে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পেয়ে গেলাম। তারা উটনীগুলোকে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। আর বলতে লাগলাম,
আমি আকওয়া‘র পুত্র, আর আজ কমিনাদের ধ্বংসের দিন।
আমি তাদের থেকে উটগুলো উদ্ধার করলাম, তখনও তারা পানি পান করতে পারেনি। আর আমি তাদের সেগুলোকে হাঁকিয়ে নিয়ে আসছিলাম। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! লোকগুলো তৃষ্ণার্ত। আমি এত তাড়াতাড়ি কাজ সেরেছি যে, তারা পানি পান করার সুযোগ পায়নি। শীঘ্র তাদের পেছনে সৈন্য পাঠিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, ‘হে ইব্‌নু আক্ওয়া! তুমি তাদের উপর বিজয়ী হয়েছ, এখন তাদের কথা বাদ রাখ। তারা তাদের গোত্রের নিকট পৌছে গেছে।

৫৬/১৬৭. অধ্যায়ঃ

তীর নিক্ষেপের সময় যে বলেছে, এটা লও; আমি অমুকের পুত্র।
আর সালামা বলেছেন, এটাও লও; আমি আকওয়া‘র পুত্র।

৩০৪২

حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قَالَ سَأَلَ رَجُلٌ الْبَرَاءَ فَقَالَ يَا أَبَا عُمَارَةَ أَوَلَّيْتُمْ يَوْمَ حُنَيْنٍ قَالَ الْبَرَاءُ وَأَنَا أَسْمَعُ أَمَّا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمْ يُوَلِّ يَوْمَئِذٍ كَانَ أَبُوْ سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ آخِذًا بِعِنَانِ بَغْلَتِهِ فَلَمَّا غَشِيَهُ الْمُشْرِكُوْنَ نَزَلَ فَجَعَلَ يَقُوْلُ :
أَنَـا النَّـبِـيُّ لَا كَـذِبْ أَنَـا ابْنُ عَـبْـدِ الْمُطَّـلـِبْ
قَالَ فَمَا رُئِيَ مِنْ النَّاسِ يَوْمَئِذٍ أَشَدُّ مِنْهُ
আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল এবং বলল, হে আবূ উমারাহ! আপনারা কি হুনাইনের যুদ্ধে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিলেন? বারাআ (রাঃ) বললেন, [আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন], আর আমি তা শুনছিলাম, সেদিন তো আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালিয়ে যাননি। আবূ সুফিয়ান ইব্‌নু হারিস (রাঃ) তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরেছিলন। যখন মুশরিকগণ তাঁকে ঘিরে ফেলল, তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং বলতে লাগলেন,
আমি আল্লাহ্‌র নবী, এটা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।
তিনি (বারা) (রাঃ) বলেন, সেদিন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষা দৃঢ়চেতা আর কাউকে দেখা যায়নি।

৫৬/১৬৮. অধ্যায়ঃ

মীমাংসা মান্য করতঃ শত্রুগণ দূর্গ ত্যাগ করলে।

৩০৪৩

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ هُوَ ابْنُ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ بَنُوْ قُرَيْظَةَ عَلَى حُكْمِ سَعْدٍ هُوَ ابْنُ مُعَاذٍ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ قَرِيْبًا مِنْهُ فَجَاءَ عَلَى حِمَارٍ فَلَمَّا دَنَا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قُومُوْا إِلَى سَيِّدِكُمْ فَجَاءَ فَجَلَسَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَهُ إِنَّ هَؤُلَاءِ نَزَلُوْا عَلَى حُكْمِكَ قَالَ فَإِنِّيْ أَحْكُمُ أَنْ تُقْتَلَ الْمُقَاتِلَةُ وَأَنْ تُسْبَى الذُّرِّيَّةُ قَالَ لَقَدْ حَكَمْتَ فِيْهِمْ بِحُكْمِ الْمَلِكِ
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন বনী কুরায়যার ইয়াহূদীরা সা’দ ইব্‌নু মা‘আয (রাঃ)-এর ফায়সালা মুতাবিক দূর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ডেকে পাঠান। আর তিনি তখন ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। তখন সা’দ (রাঃ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি কাছে আসলেন, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা ‘তোমাদের নেতার দিকে দণ্ডায়মান হও।’ তিনি এসে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘এগিয়ে যাও এরা তোমার ফায়সালায় রাজী হয়েছে। সা’দ (রাঃ) বলেন, ‘আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, তাদের মধ্য হতে যারা যুদ্ধ করতে পারে তাদেরকে হত্যা করা হবে এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করা হবে।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তুমি তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলার ফয়সালার মত ফয়সালাই করেছ।

৫৬/১৬৯. অধ্যায়ঃ

বন্দী হত্যা ও হাত-পা বেঁধে হত্যা।

৩০৪৪

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ قَالَ حَدَّثَنِيْ مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَامَ الْفَتْحِ وَعَلَى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ فَلَمَّا نَزَعَهُ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ فَقَالَ اقْتُلُوْهُ
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মক্কা জয়ের বছর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথায় শিরস্ত্রাণ পরা অবস্থায় প্রবেশ করেন। যখন তিনি তা খুলে ফেললেন, এক ব্যক্তি এসে বললো, ইব্‌নু খাতাল্ কা’বার পর্দা ধরে আছে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘তাকে কতল কর।’

৫৬/১৭০. অধ্যায:

স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব গ্রহণ করবে কি? এবং যে বন্দীত্ব গ্রহণ করেনি আর যে ব্যক্তি নিহত হবার সময় দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করল

৩০৪৫

حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عَمْرُوْ بْنُ أَبِيْ سُفْيَانَ بْنِ أَسِيْدِ بْنِ جَارِيَةَ الثَّقَفِيُّ وَهُوَ حَلِيْفٌ لِبَنِيْ زُهْرَةَ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَشَرَةَ رَهْطٍ سَرِيَّةً عَيْنًا وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ عَاصِمَ بْنَ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيَّ جَدَّ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَانْطَلَقُوْا حَتَّى إِذَا كَانُوْا بِالْهَدَأَةِ وَهُوَ بَيْنَ عُسْفَانَ وَمَكَّةَ ذُكِرُوْا لِحَيٍّ مِنْ هُذَيْلٍ يُقَالُ لَهُمْ بَنُوْ لَحْيَانَ فَنَفَرُوْا لَهُمْ قَرِيْبًا مِنْ مِائَتَيْ رَجُلٍ كُلُّهُمْ رَامٍ فَاقْتَصُّوْا آثَارَهُمْ حَتَّى وَجَدُوْا مَأْكَلَهُمْ تَمْرًا تَزَوَّدُوْهُ مِنْ الْمَدِيْنَةِ فَقَالُوْا هَذَا تَمْرُ يَثْرِبَ فَاقْتَصُّوْا آثَارَهُمْ فَلَمَّا رَآهُمْ عَاصِمٌ وَأَصْحَابُهُ لَجَئُوْا إِلَى فَدْفَدٍ وَأَحَاطَ بِهِمْ الْقَوْمُ فَقَالُوْا لَهُمْ انْزِلُوْا وَأَعْطُوْنَا بِأَيْدِيكُمْ وَلَكُمْ الْعَهْدُ وَالْمِيْثَاقُ وَلَا نَقْتُلُ مِنْكُمْ أَحَدًا قَالَ عَاصِمُ بْنُ ثَابِتٍ أَمِيْرُ السَّرِيَّةِ أَمَّا أَنَا فَوَاللهِ لَا أَنْزِلُ الْيَوْمَ فِيْ ذِمَّةِ كَافِرٍ اللَّهُمَّ أَخْبِرْ عَنَّا نَبِيَّكَ فَرَمَوْهُمْ بِالنَّبْلِ فَقَتَلُوْا عَاصِمًا فِيْ سَبْعَةٍ فَنَزَلَ إِلَيْهِمْ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ بِالْعَهْدِ وَالْمِيْثَاقِ مِنْهُمْ خُبَيْبٌ الأَنْصَارِيُّ وَابْنُ دَثِنَةَ وَرَجُلٌ آخَرُ فَلَمَّا اسْتَمْكَنُوْا مِنْهُمْ أَطْلَقُوْا أَوْتَارَ قِسِيِّهِمْ فَأَوْثَقُوْهُمْ فَقَالَ الرَّجُلُ الثَّالِثُ هَذَا أَوَّلُ الْغَدْرِ وَاللهِ لَا أَصْحَبُكُمْ إِنَّ لِيْ فِيْ هَؤُلَاءِ لَاسْوَةً يُرِيْدُ الْقَتْلَى فَجَرَّرُوْهُ وَعَالَجُوْهُ عَلَى أَنْ يَصْحَبَهُمْ فَأَبَى فَقَتَلُوْهُ فَانْطَلَقُوْا بِخُبَيْبٍ وَابْنِ دَثِنَةَ حَتَّى بَاعُوْهُمَا بِمَكَّةَ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ فَابْتَاعَ خُبَيْبًا بَنُو الْحَارِثِ بْنِ عَامِرِ بْنِ نَوْفَلِ بْنِ عَبْدِ مَنَافٍ وَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ قَتَلَ الْحَارِثَ بْنَ عَامِرٍ يَوْمَ بَدْرٍ فَلَبِثَ خُبَيْبٌ عِنْدَهُمْ أَسِيْرًا فَأَخْبَرَنِيْ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عِيَاضٍ أَنَّ بِنْتَ الْحَارِثِ أَخْبَرَتْهُ أَنَّهُمْ حِيْنَ اجْتَمَعُوْا اسْتَعَارَ مِنْهَا مُوسَى يَسْتَحِدُّ بِهَا فَأَعَارَتْهُ فَأَخَذَ ابْنًا لِّيْ وَأَنَا غَافِلَةٌ حِيْنَ أَتَاهُ قَالَتْ فَوَجَدْتُهُ مُجْلِسَهُ عَلَى فَخِذِهِ وَالْمُوسَى بِيَدِهِ فَفَزِعْتُ فَزْعَةً عَرَفَهَا خُبَيْبٌ فِيْ وَجْهِيْ فَقَالَ تَخْشَيْنَ أَنْ أَقْتُلَهُ مَا كُنْتُ لِأَفْعَلَ ذَلِكَ وَاللهِ مَا رَأَيْتُ أَسِيْرًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ خُبَيْبٍ وَاللهِ لَقَدْ وَجَدْتُهُ يَوْمًا يَأْكُلُ مِنْ قِطْفِ عِنَبٍ فِيْ يَدِهِ وَإِنَّهُ لَمُوْثَقٌ فِي الْحَدِيْدِ وَمَا بِمَكَّةَ مِنْ ثَمَرٍ وَكَانَتْ تَقُوْلُ إِنَّهُ لَرِزْقٌ مِنْ اللهِ رَزَقَهُ خُبَيْبًا فَلَمَّا خَرَجُوْا مِنْ الْحَرَمِ لِيَقْتُلُوْهُ فِي الْحِلِّ قَالَ لَهُمْ خُبَيْبٌ ذَرُونِيْ أَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ فَتَرَكُوْهُ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ قَالَ لَوْلَا أَنْ تَظُنُّوْا أَنَّ مَا بِيْ جَزَعٌ لَطَوَّلْتُهَا اللَّهُمَّ أَحْصِهِمْ عَدَدًا
ولستُ أُبَالِيْ حِيْنَ أُقْتَلُ مُسْلِمًـا عَلَى أَيِّ شِقٍّ كَانَ لِلهِ مَصْرَعِي
وَذَلِكَ فِيْ ذَاتِ الْإِلَهِ وَإِنْ يَشَـأْ يُبَارِكْ عَلَى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِ
فَقَتَلَهُ ابْنُ الْحَارِثِ فَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ سَنَّ الرَّكْعَتَيْنِ لِكُلِّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ قُتِلَ صَبْرًا فَاسْتَجَابَ اللهُ لِعَاصِمِ بْنِ ثَابِتٍ يَوْمَ أُصِيْبَ فَأَخْبَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَصْحَابَهُ خَبَرَهُمْ وَمَا أُصِيْبُوْا وَبَعَثَ نَاسٌ مِنْ كُفَّارِ قُرَيْشٍ إِلَى عَاصِمٍ حِيْنَ حُدِّثُوْا أَنَّهُ قُتِلَ لِيُؤْتَوْا بِشَيْءٍ مِنْهُ يُعْرَفُ وَكَانَ قَدْ قَتَلَ رَجُلًا مِنْ عُظَمَائِهِمْ يَوْمَ بَدْرٍ فَبُعِثَ عَلَى عَاصِمٍ مِثْلُ الظُّلَّةِ مِنْ الدَّبْرِ فَحَمَتْهُ مِنْ رَسُوْلِهِمْ فَلَمْ يَقْدِرُوْا عَلَى أَنْ يَقْطَعَ مِنْ لَحْمِهِ شَيْئًا
‘আম্‌র ইব্‌নু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য পাঠালেন এবং আসিম ইব্‌নু সাবিত আনসারীকে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করেন। যিনি আসিম ইব্‌নু ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাবের নানা ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা করলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মাঝে হাদআত নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি প্রশাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের নিকট তাঁদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। তারা প্রায় দু’শত তীরন্দাজকে তাঁদের পিছু ধাওয়ার জন্য পাঠান। এরা তাঁদের চিহ্ন দেখে চলতে থাকে। সাহাবীগণ মদীনা হতে সঙ্গে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানের সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলল, ইয়াসরিবের খেজুর। অতঃপর এরা তাঁদের পদচিহ্ন দেখে চলতে লাগল। যখন আসিম ও তাঁর সাথীগণ এদের দেখলেন, তখন তাঁরা একটি উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর কাফিররা তাঁদের ঘিরে ফেলল এবং তাঁদেরকে বলতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ কর। আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তোমাদের মধ্য হতে কাউকে আমরা হত্যা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেতা আসিম ইব্‌নু সাবিত (রাঃ) বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষ থেকে আপনার নবীকে সংবাদ পৌছিয়ে দিন।’ অবশেষে কাফিররা তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করল। আর তারা আসিম (রাঃ) সহ সাত জনকে শহীদ করলো। অতঃপর অবশিষ্ট তিনজন খুবাইব আনসারী, যায়দ ইব্‌নু দাসিনা (রাঃ) ও অপর একজন তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ করলেন। যখণ কাফিররা তাদেরকে আয়ত্বে নিয়ে নিল, তখন তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে তাঁদের বেঁধে ফেললো। তখন তৃতীয় জন বলে উঠলেন, ‘গোড়াতেই বিশ্বাসঘাতকতা! আল্লাহ্‌র কসম! আমি তোমাদের সঙ্গে যাবো না, যাঁরা শহীদ হয়েছেন আমি তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব।’ কাফিররা তাঁকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাইব ও ইব্‌নু দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তাঁদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে ফেলে। এটা বদর যুদ্ধের পরের কথা। তখন খুবাইবকে হারিস ইব্‌নু ‘আমিরের পুত্রগণ ক্রয় করে নেয়। আর বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব (রাঃ) হারিস ইব্‌নু ‘আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব (রাঃ) কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী থাকেন। ইব্‌নু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমাকে ‘উবায়দুল্লাহ ইব্‌নু আয়ায্ অবহিত করেছেন, তাঁকে হারিসের কন্যা জানিয়েছে যে, যখন হারিসের পুত্রগণ খুবাইব (রাঃ)-কে শহীদ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি তার কাছ থেকে ক্ষৌর কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন হারিসের কন্যা তাকে একখানা ক্ষুর ধার দিল। সে সময় ঘটনাক্রমে আমার এক ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে রয়েছে এবং খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। খুবাইব আমার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, তুমি কি এ ভয় করো যে, আমি এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনো আমি তা করব না। আল্লাহ্‌র কসম! আমি খুবাইবের মত উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহ্‌র শপথ! আমি একদা দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় ছড়া হতে আঙ্গুর খাচ্ছেন, যা তাঁর হাতেই ছিল। অথচ এ সময় মক্কায় কোন ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিসের কন্যা বলতো, এ তো ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত জীবিকা, যা তিনি খুবইবকে দান করেছেন। অতঃপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশে হারাম এর নিকট হতে হিল্লের দিকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব (রাঃ) তাদের বললেন, আমাকে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতে দাও। তারা তাঁকে সে অনুমতি দিল। তিনি দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি ধারণা না করতে যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি তবে আমি সালাতকে দীর্ঘ করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধ্বংস করুন।’ (অতঃপর তিনি এ কবিতা দু’টি আবৃত্তি করলেন)

“যখন আমি মুসলিম হিসেবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোন রূপ ভয় করি না।
আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন।
আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন,
তবে আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।”

অবশেষে হারিসের পুত্র তাঁকে শহীদ করে ফেলে। বস্তুত যে মুসলিম ব্যক্তিকে বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয় তার জন্য দু’রাক‘আত সালাত আদায়ের এ রীতি খুবাইব (রাঃ)-ই প্রবর্তন করে গেছেন। সে দিন আসিম (রাঃ) শাহাদত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দু‘আ কবুল করেছিলেন। সেদিনই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে তাঁদের সংবাদ ও তাঁদের উপর যা’ যা’ আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন। আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানো হয় যে, আসিম(রাঃ)-কে শহীদ করা হয়েছে তখন তারা তাঁর কাছে এক লোককে পাঠায়, যাতে সে ব্যক্তি তাঁর লাশ হতে কিছু অংশ কেটে নিয়ে আসে, যেন তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ, বদর যুদ্ধের দিন আসিম (রাঃ) কুরাইশদের এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আসিমের লাশের (রক্ষার জন্য) মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিত হল যারা তাঁর দেহ আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র হতে হিফাযত করল। ফলে তারা তাঁর শরীর হতে এক খণ্ড গোশ্‌তও কেটে নিতে পারেনি।

৫৬/১৭১. অধ্যায়ঃ

বন্দী মুক্তি প্রসঙ্গে।
এ বিষয়ে আবূ মূসা (রাঃ) কর্তৃক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট হতে হাদীস বর্ণিত রয়েছে।

৩০৪৬

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ أَبِيْ مُوسَى قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فُكُّوْا الْعَانِيَ يَعْنِي الأَسِيْرَ وَأَطْعِمُوْا الْجَائِعَ وَعُوْدُوْا الْمَرِيْضَ
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা বন্দী আযাদ কর, ক্ষুধার্তকে আহার্য দাও এবং রুগীর সেবা-শুশ্রূষা কর।

৩০৪৭

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا مُطَرِّفٌ أَنَّ عَامِرًا حَدَّثَهُمْ عَنْ أَبِيْ جُحَيْفَةَ قَالَ قُلْتُ لِعَلِيٍّ هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ مِنْ الْوَحْيِ إِلَّا مَا فِيْ كِتَابِ اللهِ قَالَ لَا وَالَّذِيْ فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ مَا أَعْلَمُهُ إِلَّا فَهْمًا يُعْطِيْهِ اللهُ رَجُلًا فِي الْقُرْآنِ وَمَا فِيْ هَذِهِ الصَّحِيْفَةِ قُلْتُ وَمَا فِي الصَّحِيْفَةِ قَالَ الْعَقْلُ وَفَكَاكُ الأَسِيْرِ وَأَنْ لَا يُقْتَلَ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ
আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্‌র কুরআনে যা কিছু আছে তা ব্যতীত আপনাদের নিকট ওয়াহীর কোন কিছু আছে কি? তিনি বললেন, না, সে আল্লাহ তা‘আলার কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ণ করেন এবং প্রাণী সৃষ্টি করেন। আল্লাহ্‌ কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করেছেন এবং সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ‘দীয়াতের বিধান, বন্দী আযাদ করা এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয়।’

৫৬/১৭২. অধ্যায়ঃ

মুশরিকদের মুক্তিপণ।

৩০৪৮

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ بْنُ أَبِيْ أُوَيْسٍ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ بْنِ عُقْبَةَ عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّ رِجَالًا مِنْ الأَنْصَارِ اسْتَأْذَنُوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ ائْذَنْ فَلْنَتْرُكْ لِابْنِ أُخْتِنَا عَبَّاسٍ فِدَاءَهُ فَقَالَ لَا تَدَعُوْنَ مِنْهَا دِرْهَمًا
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আনসারগণের কয়েকজন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চেয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যদি আমাদের অনুমতি দান করেন, তবে আমরা আমাদের ভাগ্নে ‘আব্বাসের মুক্তিপণ ছেড়ে দিতে পারি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না, একটি দিরহামও ছাড় দিবে না।

৩০৪৯

وَقَالَ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ طَهْمَانَ عَنْ عَبْدِ الْعَزِيْزِ بْنِ صُهَيْبٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ أُتِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِمَالٍ مِنْ الْبَحْرَيْنِ فَجَاءَهُ الْعَبَّاسُ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَعْطِنِيْ فَإِنِّيْ فَادَيْتُ نَفْسِيْ وَفَادَيْتُ عَقِيْلًا فَقَالَ خُذْ فَأَعْطَاهُ فِيْ ثَوْبِهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বাহরাইন হতে ধন-সম্পদ আনা হয়। তখন তাঁর নিকট ‘আব্বাস (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কিছু দিন। আমি আমার নিজের মুক্তিপণ আদায় করেছি এবং আকীলেরও মুক্তিপণ আদায় করেছি। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিন এবং তাঁর কাপড়ে দিয়ে দিলেন।

৩০৫০

حَدَّثَنِيْ مَحْمُوْدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ أَبِيْهِ وَكَانَ جَاءَ فِيْ أُسَارَى بَدْرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِالطُّوْرِ
জুবাইর (ইব্‌নু মুতয়িম) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আর তিনি বদর যুদ্ধে বন্দীদের মুক্ত করার জন্য এসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরিবের সালাতে সূরায়ে তূর পড়তে শুনেছি।

No comments

Powered by Blogger.