মুয়াত্তা ইমাম মালিক অধ্যায় "স্বপ্ন সম্পর্কিত"

স্বপ্ন সম্পর্কিত অধ্যায়

পরিচ্ছেদ :

স্বপ্ন প্রসঙ্গ

১৭২৩

حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ إِسْحَقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ الْأَنْصَارِيِّ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنْ الرَّجُلِ الصَّالِحِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنْ النُّبُوَّةِ

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِثْلِ ذَلِكَ

আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নেককার মানুষের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ সমতুল্য। [১] (সহীহ, বুখারী ৬৯৮৩)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ (হাদীস) করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

[১] যেকোন ব্যক্তির স্বপ্ন যে ঠিক হবে, এমন কথা বলা যায় না। তবে নেককার মানুষের ভাল স্বপ্ন সাধারণত ঠিক হয় অর্থাৎ যা দেখে তাই হয়। অত্র হাদীসে অনুরূপ স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে যে, যদি স্বপ্ন ভাল হয় এবং নেককার মানুষের হয় আর উহার তা‘বীর মুতাবিক ফলাফলও সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে সেই স্বপ্নের মর্যাদা এত অধিক যে, উহা নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ সমতুল্য। কিন্তু নবুয়তকে ভাগ করা যায় না। তাই এখানে নবুয়তের সময়কে ভাগ করতে হবে। অতএব নবুয়তের মোট সময় ছিল তেইশ বৎসর। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বের ছয় মাস পর্যন্ত সত্য স্বপ্ন দেখেছিলেন। সুতরাং এই ছয় মাসকে এক ভাগ ধরলে মোট তেইশ বৎসরের ছেচল্লিশ ভাগ হয়। তাই অত্র হাদীসে বলা হয়েছে যে, নেককার মানুষের স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগের সমান।

১৭২৪

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ إِسْحَقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ عَنْ زُفَرَ بْنِ صَعْصَعَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاةِ الْغَدَاةِ يَقُولُ هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمْ اللَّيْلَةَ رُؤْيَا وَيَقُولُ لَيْسَ يَبْقَى بَعْدِي مِنْ النُّبُوَّةِ إِلَّا الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের নামায শেষে (উপস্থিত সাহাবীগণকে) জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কেউ রাত্রে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? অতঃপর বলতেন যে, আমার পরে ভাল (সত্য) স্বপ্ন ব্যতীত নবুয়তের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না (অর্থাৎ ভাল স্বপ্নও নবুয়তের একটি অংশ)। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৫০১৭, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবূ দাঊদ])

১৭২৫

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَنْ يَبْقَى بَعْدِي مِنْ النُّبُوَّةِ إِلَّا الْمُبَشِّرَاتُ فَقَالُوا وَمَا الْمُبَشِّرَاتُ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ يَرَاهَا الرَّجُلُ الصَّالِحُ أَوْ تُرَى لَهُ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنْ النُّبُوَّةِ

আতা ইব্নু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার পরে মুবাশ্শাত (সুসংবাদসমূহ) ব্যতীত নবুয়তের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! মুবাশ্শাত কি? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এমন ভাল ও শুভ স্বপ্ন যা কোন নেককার মানুষে দেখে কিংবা অপর কেউ তাঁর (উক্ত নেককার) সম্বন্ধে দেখে। ইহা নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। (সহীহ, বুখারী ৬৯৯০, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল)

১৭২৬

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا قَتَادَةَ بْنَ رِبْعِيٍّ يَقُولُ

سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ مِنْ اللهِ وَالْحُلْمُ مِنْ الشَّيْطَانِ فَإِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ الشَّيْءَ يَكْرَهُهُ فَلْيَنْفُثْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ إِذَا اسْتَيْقَظَ وَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ مِنْ شَرِّهَا فَإِنَّهَا لَنْ تَضُرَّهُ إِنْ شَاءَ اللهُ

قَالَ أَبُو سَلَمَةَ إِنْ كُنْتُ لَأَرَى الرُّؤْيَا هِيَ أَثْقَلُ عَلَيَّ مِنْ الْجَبَلِ فَلَمَّا سَمِعْتُ هَذَا الْحَدِيثَ فَمَا كُنْتُ أُبَالِيهَا

আবূ কাতাদা ইব্নু রিবযী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শ্রবণ করেছি, তিনি বলেছেন, ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে হয় এবং দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ হতে হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখে তা হলে সে যেন জাগ্রত হতে বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে এবং উহার অমঙ্গল হতে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে আল্লাহ্ চাহেন তো উহা আর তার কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। আবূ সালমা বলেন, আগে আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম, যা আমার উপর পাহাড়ের চাইতেও অধিক বোঝা হত। কিন্তু যখন হতে এই হাদীস শ্রবণ করেছি, আমি আর সেই দিকে ভ্রুক্ষেপও করিনি। (বুখারী ৫৭৪৭, মুসলিম ২২৬১)

১৭২৭

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي هَذِهِ الْآيَةِ { لَهُمْ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ } قَالَ هِيَ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ يَرَاهَا الرَّجُلُ الصَّالِحُ أَوْ تُرَى لَهُ

বর্ণণাকারী থেকে বর্ণিতঃ

উরওয়া ইব্নু যুবাইর (রহঃ) এই আয়াত সম্বন্ধে لَهُمْ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ (তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সুসংবাদ রয়েছে) বলেন যে, এর অর্থ হল ঐ সমস্ত ভাল স্বপ্ন, যা নেককার মানুষে দেখে কিংবা অপর কেউ তার সম্বন্ধে দেখে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

পরিচ্ছেদ :

শতরঞ্জ (দাবা) খেলা প্রসঙ্গে

১৭২৮

حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ مُوسَى بْنِ مَيْسَرَةَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ أَبِي عَلْقَمَةَ عَنْ أُمِّهِ عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ بَلَغَهَا أَنَّ أَهْلَ بَيْتٍ فِي دَارِهَا كَانُوا سُكَّانًا فِيهَا وَعِنْدَهُمْ نَرْدٌ فَأَرْسَلَتْ إِلَيْهِمْ لَئِنْ لَمْ تُخْرِجُوهَا لَأُخْرِجَنَّكُمْ مِنْ دَارِي وَأَنْكَرَتْ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দাবা খেলা খেললো, সে আল্লাহ্ ও আল্লাহ্‌র রাসূলের নাফরমানী করল (অবাধ্য হল)। [১] (হাসান, আবূ দাঊদ ৪৯৩৮, ইবনু মাজাহ ৩৭৬২, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন [সহীহ আল জামে ৬৫২৯])
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত; তাঁর বাড়ির একটি ঘরে কিছুসংখ্যক লোক বাস করত। তিনি শুনেছেন যে, উহাদের নিকট শতরঞ্জ রয়েছে। অতঃপর তিনি তাদের নিকট বলে পাঠালেন, তোমরা উহা (শতরঞ্জ) দূর কর। অন্যথায় আমি তোমাদেরকে আমার ঘর হতে বাহির করে দিব। তিনি উহাকে অত্যন্ত খারাপ মনে করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

[১] শতরঞ্জ বলতে শুধু ছক্কা খেলাকেই বোঝায় না, বরং আমাদের দেশে প্রচলিত দাবা খেলা, তাস খেলা, বাঘ-গুটি খেলা ইত্যাদি সমস্তই এর অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত খেলার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে শত্র“তাও পয়দা হয়। এতে মত্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যায়, নামায কাযা হয়ে যায় এবং আরও নানা রকমের পাপাচারে লিপ্ত হয়। এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি শতরঞ্জ খেলেছে সে নিজের হস্তকে শূকরের গোশত ও রক্তে রঞ্জিত করেছে। এই জন্য আলেমগণ একে হারাম বলেছেন। ইমাম আবূ হানীফা (র), ইমাম মালিক (র) ও আহমাদ ইবনু হাম্বল (র) এই জাতীয় খেলাকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বলেছেন। ইমাম শাফিয়ী (র) বলেন যে, যদি এই খেলার কারণে আল্লাহর কোন ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় কিংবা ইহা অভ্যাসে পরিণত হয়, তা হলে ইহা হারাম, অন্যথায় মাকরূহ তান্যীহ।

১৭২৯

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ إِذَا وَجَدَ أَحَدًا مِنْ أَهْلِهِ يَلْعَبُ بِالنَّرْدِ ضَرَبَهُ وَكَسَرَهَا

قَالَ يَحْيَى و سَمِعْت مَا لِكًا يَقُولُ لَا خَيْرَ فِي الشَّطْرَنْجِ وَكَرِهَهَا وَسَمِعْتُهُ يَكْرَهُ اللَّعِبَ بِهَا وَبِغَيْرِهَا مِنْ الْبَاطِلِ وَيَتْلُو هَذِهِ الْآيَةَ

{ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ }

বর্ণণাকারী থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) তাঁর পরিবারের কাউকেও শতরঞ্জ খেলতে দেখলে তাকে মারতেন এবং শতরঞ্জ ভেঙ্গে ফেলতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, আমি মালিক (রহঃ) হতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, শতরঞ্জ খেলা ভাল নয়। তিনি উহাকে মাকরূহ মনে করতেন। আমি (ইমাম) মালিক (রহঃ)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলতেন যে, শতরঞ্জ খেলা, অপরাপর সকল অনর্থ এবং উদ্দেশ্যহীন খেলা মকরূহ। অতঃপর এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ (হক-এর পর পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছু নেই)।

No comments

Powered by Blogger.