মুয়াত্তা ইমাম মালিক অধ্যায় "চুল বিষয়ক"
পরিচ্ছেদ
১
চুলের সুন্নত প্রসঙ্গে
১৭০৬
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ نَافِعٍ عَنْ أَبِيهِ نَافِعٍ عَنْ
عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
أَمَرَ بِإِحْفَاءِ الشَّوَارِبِ وَإِعْفَاءِ اللِّحَى
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোঁফ কামাতে এবং দাড়ি না কাঁটতে নির্দেশ
দিয়েছেন। [১] (সহীহ, মুসলিম ২৫৯)
[১] গোঁফ কামান এবং ছাঁটের ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরোধ
আছে। কারো মতে ছেঁটে ফেলা ভাল আর কারো মতে মুড়িয়ে ফেলা উত্তম। স্বয়ং সাহাবীগণের মধ্যেও
এই মতবিরোধ ছিল। তাঁদের মধ্যেও কেউ মুড়াতেন আর কেউ ছাঁটতেন। তিরমিযীর রেওয়ায়ত মুতাবিক
রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাঁটতেন।
দাঁড়ি ছাঁটার সম্পর্কে যত হাদীস আছে সবই যঈফ, বিশুদ্ধ মত হচ্ছে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দাড়ি ছাঁটেননি বরং তিনি সর্বদা দাড়ি ছেড়ে দিতেন এটা সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত।
১৭০৭
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ
بْنِ عَوْفٍ أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ عَامَ حَجَّ وَهُوَ
عَلَى الْمِنْبَرِ وَتَنَاوَلَ قُصَّةً مِنْ شَعَرٍ كَانَتْ فِي يَدِ حَرَسِيٍّ
يَقُولُ يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَى عَنْ مِثْلِ هَذِهِ وَيَقُولُ إِنَّمَا
هَلَكَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ حِينَ اتَّخَذَ هَذِهِ نِسَاؤُهُمْ
হুমাইদ ইবনু আবদুর
রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
মু‘আবিয়া ইব্নু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-এর নিকট সেই বৎসর শুনেছেন, যেই বৎসর তিনি
(মু‘আবিয়া) হজ্জব্রত পালন করতে গিয়েছিলেন। তিনি মিম্বরের উপর উপবিষ্ট হয়ে খাদেমের
হাত হতে চুলের একটি গুচ্ছ নিয়ে বললেন, হে মদীনাবাসিগণ! তোমাদের উলামায়ে কিরাম
কোথায়? আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ইহা হতে নিষেধ
করতে শুনেছি। তিনি (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ) এটাও বলেছেন যে, বানী ইসরাঈলের মহিলাগণ এই
কাজ করেছিল বিধায় তারা ধ্বংস হয়েছে। (বুখারী ৩৪৬৮, মুসলিম ২১২৭)
১৭০৮
و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ زِيَادِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ
ابْنِ شِهَابٍ أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ سَدَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاصِيَتَهُ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ فَرَقَ بَعْدَ ذَلِكَ
قَالَ مَالِك لَيْسَ عَلَى الرَّجُلِ يَنْظُرُ إِلَى شَعَرِ امْرَأَةِ ابْنِهِ
أَوْ شَعَرِ أُمِّ امْرَأَتِهِ بَأْسٌ
ইবনু শিহাব (রহঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে বেশ কিছু কাল পর্যন্ত স্বীয় চুল কপালের দিকে ঝুলিয়ে
রাখতেন। পরে তাতে সিথি বানিয়ে দিতেন (অর্থাৎ চিরুণি দ্বারা চুলকে মাথার মধ্যভাগে
দুই ভাগ করে দিতেন)। (বুখারী ৩৫৫৮, মুসলিম ২৩৩৬)
মালিক (রহঃ) বলেন, কোন পুরুষের জন্য স্বীয় পুত্রবধুর অথবা শাশুড়ীর চুল দেখাতে কোন
ক্ষতি নেই।
১৭০৯
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ
يَكْرَهُ الْإِخْصَاءَ وَيَقُولُ فِيهِ تَمَامُ الْخَلْقِ
বর্ণণাকারী থেকে
বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্
ইবনু উমার (রাঃ) জীবজন্তু খাসি করানোকে খারাপ মনে করতেন এবং বলতেন যে, অণ্ডকোষ
রাখার অর্থ বংশ জারি রাখা। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
১৭১০
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ صَفْوَانَ بْنِ سُلَيْمٍ أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ
النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ
لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ فِي الْجَنَّةِ كَهَاتَيْنِ إِذَا اتَّقَى وَأَشَارَ
بِإِصْبُعَيْهِ الْوُسْطَى وَالَّتِي تَلِي الْإِبْهَامَ
সাফওয়ান ইবনু
সুলাইম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি ও ইয়াতীমের অভিভাবক -- এই অভিভাবক
সংশ্লিষ্ট ইয়াতীমের আত্মীয় হোক কিংবা অনাত্মীয়, যদি তারা আল্লাহ্কে ভয় করে, তবে
বেহেশতে আমরা একে অপরের এমন নিকট হব যেমন এই দুইটি আঙ্গুল। এই বলে তিনি (অর্থাৎ
রাসূলুল্লাহ্ সা.) শাহাদতের অঙ্গুলি ও মধ্যমার দিকে ইঙ্গিত করলেন। [১] (বুখারী
৬০০৫, মুসলিম ২৯৮৩)
[১] অর্থাৎ ইয়াতীমের অভিভাবক যদি আল্লাহভীরু হয় এবং ইয়াতীমের
মালের রক্ষণাবেক্ষণে ঈমানদারী ও আল্লাহ্ভীরুতার পরিচয় দেয়, তা হলে সে বেহেশতে রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পার্শ্বেই অবস্থান করবে।
পরিচ্ছেদ
২:
চুলে চিরুনি করা প্রসঙ্গ
১৭১১
حَدَّثَنِي
عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيَّ
قَالَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ لِي جُمَّةً
أَفَأُرَجِّلُهَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَمْ
وَأَكْرِمْهَا فَكَانَ أَبُو قَتَادَةَ رُبَّمَا دَهَنَهَا فِي الْيَوْمِ
مَرَّتَيْنِ لِمَا قَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
نَعَمْ وَأَكْرِمْهَا
ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট
বললেন, আমার চুল কাঁধ পর্যন্ত (অর্থাৎ বাবরী চুল) আছে। তবে কি আমি উহাতে চিরুনি
করব? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, চিরুনি কর
এবং চুলের সম্মান কর। অতঃপর আবূ কাতাদা কোন কোন সময় দিনে দুইবার চুলে তৈল লাগাতেন।
কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, চুলের সম্মান কর।
(বাইহাকী, শাবগ্রন্থ ২/২৬৫/২, ইবনু আসাকির তারিখে দামেস্ক ৮/৫০৯/১, আলবানী বলেন এই
হাদীসের সমর্থনে অনেক শাওয়াহেদ রয়েছে যে গুলো সহীহ হওয়ার উপর প্রমাণ করে।)
১৭১২
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَسَارٍ
أَخْبَرَهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي
الْمَسْجِدِ فَدَخَلَ رَجُلٌ ثَائِرَ الرَّأْسِ وَاللِّحْيَةِ فَأَشَارَ إِلَيْهِ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ أَنْ اخْرُجْ كَأَنَّهُ
يَعْنِي إِصْلَاحَ شَعَرِ رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ فَفَعَلَ الرَّجُلُ ثُمَّ رَجَعَ
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَيْسَ هَذَا خَيْرًا
مِنْ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدُكُمْ ثَائِرَ الرَّأْسِ كَأَنَّهُ شَيْطَانٌ
আতা ইবনু ইয়াসার
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে বসেছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এল যার
চুল ও দাড়ি এলোমেলো ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তাকে হাতে ইশারা করে বললেন, মসজিদের বাইরে গিয়ে চুল-দাড়ি ঠিক করে আস। লোকটি তাই
করল এবং (চুল-দাড়ি ঠিক করে) পুনরায় এল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কেউ স্বীয় চুল-দাড়ি এলোমেলো অবস্থায় শয়তানের মতো থাকার
তুলনায় ইহা (চুল-দাড়ি) ঠিক করে রাখা উত্তম নয় কি? [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে
বর্ণনা করেছেন)
[১]
চুল ও দাঁড়িকে এলোমেলোভাবে রাখা এবং উহার যতœ না করা বা উহার সম্মান না করাকে
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানের মতো হওয়া বলে ফরমায়েছেন। আমাদের
দেশে যেই সকল যুবক লম্বা চুল, গোঁফ ও নখ রাখে তাদের অত্র হাদীসের মর্ম উপলব্ধি করতে
অনুরোধ করি।
পরিচ্ছেদ
৩:
চুলে রং লাগানো প্রসঙ্গ
১৭১৩
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ قَالَ
أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ
عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الْأَسْوَدِ بْنِ عَبْدِ
يَغُوثَ قَالَ وَكَانَ جَلِيسًا لَهُمْ وَكَانَ أَبْيَضَ اللِّحْيَةِ وَالرَّأْسِ قَالَ
فَغَدَا عَلَيْهِمْ ذَاتَ يَوْمٍ وَقَدْ حَمَّرَهُمَا قَالَ فَقَالَ لَهُ
الْقَوْمُ هَذَا أَحْسَنُ فَقَالَ إِنَّ أُمِّي عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْسَلَتْ إِلَيَّ الْبَارِحَةَ جَارِيَتَهَا
نُخَيْلَةَ فَأَقْسَمَتْ عَلَيَّ لَأَصْبُغَنَّ وَأَخْبَرَتْنِي أَنَّ أَبَا
بَكْرٍ الصِّدِّيقَ كَانَ يَصْبُغُ
قَالَ يَحْيَى سَمِعْت مَا لِكًا يَقُولُ فِي صَبْغِ الشَّعَرِ بِالسَّوَادِ لَمْ
أَسْمَعْ فِي ذَلِكَ شَيْئًا مَعْلُومًا وَغَيْرُ ذَلِكَ مِنْ الصِّبْغِ أَحَبُّ
إِلَيَّ قَالَ وَتَرْكُ الصَّبْغِ كُلِّهِ وَاسِعٌ إِنْ شَاءَ اللهُ لَيْسَ عَلَى
النَّاسِ فِيهِ ضِيقٌ قَالَ و سَمِعْت مَا لِكًا يَقُولُ فِي هَذَا الْحَدِيثِ
بَيَانُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَصْبُغْ
وَلَوْ صَبَغَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَأَرْسَلَتْ
بِذَلِكَ عَائِشَةُ إِلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْأَسْوَدِ
আবূ সালমা ইবনু
আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবদুর রহমান ইব্নু আসওয়াদ আমার
সঙ্গী ছিলেন। তার চুল ও দাড়ি সাদা ছিল। একদা তিনি চুলে লাল রং (লাল খেজাব বা
মেহেদী) লাগিয়ে সকালে আগমন করলেন। তখন সকলে বলল, ইহা বেশ ভাল। তিনি বললেন, আমার
আম্মা নবী-পত্নী আয়িশা (রাঃ) স্বীয় বাঁদী নুখাইলাকে কসম করে বলে সকালে (আমার কাছে)
পাঠিয়েছেন, খেজাব কর। আর ইহাও বলেছেন যে, আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-ও খেজাব লাগাতেন।
(হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
মালিক (রহঃ) বলেন, কালো খেজাব সম্বন্ধে কোন হাদীস শুনিনি। কাল রঙের খেজাব ব্যতীত
অন্য রঙ হলে ভাল। আল্লাহ্ চাহেন তো কোন রকম খেজাব না লাগানোই সবচেয়ে উত্তম। এতে
জনগণের কোন অসুবিধা নাই। [১]
মালিক (রহঃ) বলেন, এই হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজাব লাগাননি। আর যদি তিনি খেজাব লাগাতেন, তবে আয়িশা (রাঃ)
আবদুর রহমান ইব্নু আসওয়াদের নিকট নিশ্চয়ই উহা বলে পাঠাতেন।
[১] মুসলিম শরীফে আবূ বাকর (রা)-এর পিতা আবূ কুহাফা (রা)-এর
আলোচনায় আছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চুলের এই সাদা রং
বদলে ফেলুন; তবে কালো রঙ লাগাবেন না। আবূ দাঊদ এবং নাসায়ী শরীফে আছে যে, শেষ যুগে এক
জাতি কালো খেজাব লাগাবে। তারা বেহেশতের গন্ধও পাবে না। এই প্রসঙ্গে প্রকৃত কথা এই যে,
কালো খেজাব লাগানো জায়েয নয়। তবে যেই কালো রং-এ লাল মিশ্রিত আছে, উহা অবশ্য জায়েয আছে।
পরিচ্ছেদ
৪:
শোয়ার প্রাক্কালে শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা প্রসঙ্গে
১৭১৪
حَدَّثَنِي
عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ قَالَ بَلَغَنِي أَنَّ خَالِدَ بْنَ
الْوَلِيدِ قَالَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي
أُرَوَّعُ فِي مَنَامِي فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قُلْ أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ
وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার কাছে রেওয়ায়ত
পৌঁছেছে যে, খালিদ ইবনু ওলীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) কে বললেন, আমি নিদ্রাবস্থায় (স্বপ্নে) ভয় পাই। রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি (শোয়ার সময়) এই দু‘আ পাঠ করঃ
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ
وَأَنْ يَحْضُرُونِ
আমি আল্লাহ্র ক্রোধ ও আযাব হতে, তার বান্দাগণের উপদ্রব হতে, শয়তানের প্ররোচনা হতে
এবং আমার নিকট শয়তানের আগমন হতে আল্লাহ্র পূর্ণ কলেমাসমূহের আশ্রয় প্রার্থনা
করছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
১৭১৫
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّهُ قَالَ أُسْرِيَ
بِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَى عِفْرِيتًا مِنْ
الْجِنِّ يَطْلُبُهُ بِشُعْلَةٍ مِنْ نَارٍ كُلَّمَا الْتَفَتَ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَآهُ فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ أَفَلَا
أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ تَقُولُهُنَّ إِذَا قُلْتَهُنَّ طَفِئَتْ شُعْلَتُهُ
وَخَرَّ لِفِيهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَلَى
فَقَالَ جِبْرِيلُ فَقُلْ أَعُوذُ بِوَجْهِ اللهِ الْكَرِيمِ وَبِكَلِمَاتِ اللهِ
التَّامَّاتِ اللَّاتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ مِنْ شَرِّ مَا
يَنْزِلُ مِنْ السَّمَاءِ وَشَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا وَشَرِّ مَا ذَرَأَ فِي
الْأَرْضِ وَشَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمِنْ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
وَمِنْ طَوَارِقِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا
رَحْمَنُ
ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মি‘রাজ রজনীতে
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি জ্বীন দেখতে পেলেন। তার
হাতে আগুনের লেলিহান শিখা ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তার দিকে দেখলে মনে হত যেন সে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর
দিকে ছুটে আসছে। অতঃপর জিবরাঈল (আ) প্রিয় নবীকে বললেন, আমি আপনাকে এমন কতকগুলো
শব্দ শিক্ষা দিব কি যা পাঠ করলে এই জ্বীনের আগুন নিভে যাবে এবং সে উপুর হয়ে পড়ে
যাবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই শিক্ষা
দিবেন। অতঃপর জিবরাঈল (আ) বললেন, পড়ুনঃ
أَعُوذُ بِوَجْهِ اللهِ الْكَرِيمِ وَبِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ اللَّاتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ مِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنْ السَّمَاءِ وَشَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا وَشَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ وَشَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمِنْ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمِنْ طَوَارِقِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُ
আমি আসমান হতে আগত ও
আসমানের দিকে ধাবিত বস্তুর অমঙ্গল হতে, মাটিতে সৃষ্ট ও মাটি হতে বহির্গত বস্তুর
অমঙ্গল হতে, রাত্র-দিনের বালা-মুসিবত হতে ও রাত্র-দিনের ঘটনাপ্রবাহ হতে- তবে উত্তম
ঘটনা হতে নয়- হে দয়াময়! (আমি) আল্লাহ্র সম্মানিত সত্তার ও তার সেই পূর্ণ
কলেমাসমূহের আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যা পুণ্যবান ও পাপী কেহই অতিক্রম করতে পারে না।
[১] (সহীহ, আহমাদ ১৫৪৯৮, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সিলসিলা সহীহা ২৯৯৫] তবে
ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল)
[১] নাসায়ী শরীফে আছে যে, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এই দু‘আ পাঠ করলেন এবং সেই দৈত্য উপুড় হয়ে ভূলুণ্ঠিত হল এবং তার আগুন নিভে গেল।
১৭১৬
و حَدَّثَنِي مَالِك عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ
عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَسْلَمَ قَالَ مَا نِمْتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ فَقَالَ لَهُ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَيِّ شَيْءٍ فَقَالَ
لَدَغَتْنِي عَقْرَبٌ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
أَمَا إِنَّكَ لَوْ قُلْتَ حِينَ أَمْسَيْتَ أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ
التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لَمْ تَضُرَّكَ
আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি বলল,
আমি রাত্রে ঘুমাইনি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস
করলেন, কেন ঘুমাওনি? সে উত্তর দিল, আমাকে বিচ্ছু দংশন করেছে। রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, তুমি যদি পড়তে।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(আমি সৃষ্টের অপকারিতা হতে আল্লাহ্র পূর্ণ কালিমাসমূহের আশ্রয় প্রার্থনা করছি) তা
হলে তোমার কোন ক্ষতি হত না। (সহীহ, মুসলিম ২৭০৯)
১৭১৭
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ سُمَيٍّ مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ عَنْ الْقَعْقَاعِ بْنِ
حَكِيمٍ أَنَّ كَعْبَ الْأَحْبَارِ قَالَ لَوْلَا كَلِمَاتٌ أَقُولُهُنَّ
لَجَعَلَتْنِي يَهُودُ حِمَارًا فَقِيلَ لَهُ وَمَا هُنَّ فَقَالَ أَعُوذُ
بِوَجْهِ اللهِ الْعَظِيمِ الَّذِي لَيْسَ شَيْءٌ أَعْظَمَ مِنْهُ وَبِكَلِمَاتِ
اللهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ وَبِأَسْمَاءِ
اللهِ الْحُسْنَى كُلِّهَا مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ مِنْ شَرِّ
مَا خَلَقَ وَبَرَأَ وَذَرَأَ
কা‘কা’ ইবনু হাকীম
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কা‘বে আহবার (রহঃ) [তিনি ইহুদীদের
বড় আলিম ছিলেন। পরে ইসলাম গ্রহণ করেনা] বলেছেন যে, যদি আমি কয়েকটি শব্দ (কালিমা)
পাঠ না করতাম, তা হলে ইহুদীগণ (যাদু করে) আমাকে গাধা বানিয়ে দিত। তাকে জিজ্ঞেস করা
হল যে, সেই শব্দগুলো কি? তিনি বললেনঃ
أَعُوذُ بِوَجْهِ اللهِ الْعَظِيمِ الَّذِي لَيْسَ شَيْءٌ أَعْظَمَ مِنْهُ وَبِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ
الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ
بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ وَبِأَسْمَاءِ اللهِ الْحُسْنَى كُلِّهَا مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَبَرَأَ وَذَرَأَ
আমি সেই আল্লাহ্র মহান সত্তার আশ্রয় প্রার্থনা করছি যাঁর চাইতে কোন বস্তুই বড় নয়।
আর তার পূর্ণ কলেমাসমূহের আশ্রয় প্রার্থনা করছি যার আগে কোন ভাল কিংবা মন্দ যেতে
পারে না, আর তার সমুদয় সুন্দর নামের আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা আমার জানা আছে এবং যা
আমার জানা নেই; সেই সৃষ্টির অপকারিতা হতে, যা সৃষ্টি করেছেন এবং বিস্তৃত করেছেন।
(হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
পরিচ্ছেদ
৫:
আল্লাহর জন্য ভালবাসা
১৭১৮
و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ بْنِ مَعْمَرٍ عَنْ أَبِي الْحُبَابِ سَعِيدِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ أَنَّهُ قَالَ
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ تَبَارَكَ
وَتَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ لِجَلَالِي
الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي
আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামত দিবসে বলবেন,
সেই সমস্ত মানুষ কোথায়, যারা আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসত?
আজ আমি তাদেরকে (আমার আরশের) ছায়াতলে ছায়া দান করব। আজকের দিনটা এমন যে, আমার ছায়া
ব্যতীত অন্য কোথাও কোন ছায়া নেই। (সহীহ, মুসলিম ২৫৬৬)
১৭১৯
و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ
الرَّحْمَنِ الْأَنْصَارِيِّ عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ
أَوْ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ قَالَ
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ
فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي
عِبَادَةِ اللهِ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالْمَسْجِدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ
حَتَّى يَعُودَ إِلَيْهِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَى ذَلِكَ
وَتَفَرَّقَا وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرَجُلٌ
دَعَتْهُ ذَاتُ حَسَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ
بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ
আবূ সাঈদ খুদরী
(রাঃ) অথবা আবূ হুরায়রা [১] (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যেই দিন আল্লাহ্র (আরশের) ছায়া
ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সেই দিন আল্লাহ্ তা‘আলা সাত প্রকারের মানুষকে তার
ছায়াতলে ছায়া দান করবেন- (১) ন্যায় বিচারক ইমাম (শাসনকর্তা), (২) ঐ যুবক, যে
আল্লাহ্র ইবাদতের ভিতর দিয়ে লালিত-পালিত হয়েছে, (৩) ঐ ব্যক্তি, যে নামায পড়ে
মসজিদ হতে বের হলে পর আবার মসজিদে কখন যাবে, এই চিন্তায় তার মন মসজিদের প্রতি
আকৃষ্ট থাকে অর্থাৎ আবার কখন মসজিদে যাবে এই কথা বার বার তার মনে জাগে, (৪) সেই
দুই ব্যক্তি, যার পরস্পরকে আল্লাহ্র জন্য ভালবাসে; তারা একত্র হয় আল্লাহ্র জন্য
এবং আল্লাহ্র জন্যই পৃথক হয়, (৫) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং
আল্লাহ্র ভয়ে তার দুই চক্ষু অশ্র“সিক্ত হয়, (৬) সেই ব্যক্তি, যাকে কোন সম্ভ্রান্ত
পরিবারের রূপসী রমণী (স্বীয় কামভাব চরিতার্থ করার নিমিত্ত) আহ্বান করে, তবে সে এই
বলে (উক্ত আহ্বান) প্রত্যাখ্যান করে যে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে
(আন্তরিকতা সহকারে) কিছু সাদাকাহ্ এমনভাবে গোপনে করেছে যে, তার ডান হস্ত কি
সাদাকাহ্ করেছে উহা তার বাম হাত পর্যন্ত জানতে পারেনি। [২] (বুখারী ৬৮০৬, মুসলিম
১০৩১)
[১] এখানে আবূ সাঈদ খুদরী অথবা আবূ হুরায়রার রেওয়ায়ত বলে এই
দুইজনের মধ্যে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে যে, এতদুভয়ের যেকোন একজন কর্তৃক অত্র হাদীস বর্ণিত
হয়েছে। কিন্তু বুখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আবূ হুরায়রা (রা)-এর উল্লেখ রয়েছে।
[২] ডান হাত কি সদকা করেছে উহা তার বাম হাত জানতে পারেনি- এর অর্থ অতি গোপনে সদকা করা
হয়েছে, যেন রিয়া বা লোক দেখানোর আশংকা না থাকে।
১৭২০
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا
أَحَبَّ اللهُ الْعَبْدَ قَالَ لِجِبْرِيلَ قَدْ أَحْبَبْتُ فُلَانًا فَأَحِبَّهُ
فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللهَ قَدْ
أَحَبَّ فُلَانًا فَأَحِبُّوهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ
الْقَبُولُ فِي الْأَرْضِ وَإِذَا أَبْغَضَ اللهُ الْعَبْدَ قَالَ مَالِك لَا
أَحْسِبُهُ إِلَّا أَنَّهُ قَالَ فِي الْبُغْضِ مِثْلَ ذَلِكَ
আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ যখন তার কোন বান্দাকে
ভালবাসেন, তখন জিবরাঈলকে বলেন, হে জিবরাঈল। আমি আমার অমুক বান্দাকে ভালবাসি। অতএব
তুমিও তাকে ভালবাস। তখন জিবরাঈলও তাকে ভালবাসেন এবং আসমানের অধিবাসীদের
(ফিরিশতাগণের) মধ্যে ঘোষণা করেন যে, অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা‘আলা ভালবাসেন, অতএব
তোমরাও তাকে ভালবাস। সুতরাং আসমানের অধিবাসিগণও তাকে ভালবাসেন এবং তার জন্য যমিনে
জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করা হয় (ফলে ব্যক্তি জনপ্রিয় হয়) আর যখন আল্লাহ্ তা‘আলা কারো
প্রতি রাগান্বিত হন; মালিক (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় সেই অবস্থাতেও এই প্রকার কিছু সংঘটিত
হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। [১] (বুখারী ৭৪৮৫, মুসলিম ২৬৩৭)
[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ যখন কারো প্রতি রাগ করেন তখন জিবরাঈল (আ),
ফেরেশতা, মানুষ ও পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিও তাকে অপছন্দ করে এবং তার সাথে শত্রুতা করতে
থাকে।
১৭২১
و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ أَبِي حَازِمِ بْنِ
دِينَارٍ عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الْخَوْلَانِيِّ أَنَّهُ قَالَ دَخَلْتُ مَسْجِدَ
دِمَشْقَ فَإِذَا فَتًى شَابٌّ بَرَّاقُ الثَّنَايَا
وَإِذَا النَّاسُ مَعَهُ إِذَا اخْتَلَفُوا فِي شَيْءٍ أَسْنَدُوا إِلَيْهِ
وَصَدَرُوا عَنْ قَوْلِهِ فَسَأَلْتُ عَنْهُ فَقِيلَ هَذَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ
فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ هَجَّرْتُ فَوَجَدْتُهُ قَدْ سَبَقَنِي بِالتَّهْجِيرِ
وَوَجَدْتُهُ يُصَلِّي قَالَ فَانْتَظَرْتُهُ حَتَّى قَضَى صَلَاتَهُ ثُمَّ
جِئْتُهُ مِنْ قِبَلِ وَجْهِهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ قُلْتُ وَاللهِ إِنِّي
لَأُحِبُّكَ لِلَّهِ فَقَالَ أَاللهِ فَقُلْتُ أَاللهِ فَقَالَ أَاللهِ فَقُلْتُ
أَاللهِ فَقَالَ أَاللهِ فَقُلْتُ أَاللهِ قَالَ فَأَخَذَ بِحُبْوَةِ رِدَائِي فَجَبَذَنِي
إِلَيْهِ وَقَالَ أَبْشِرْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ يَقُولُ قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى وَجَبَتْ مَحَبَّتِي
لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ وَالْمُتَجَالِسِينَ فِيَّ وَالْمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ
وَالْمُتَبَاذِلِينَ فِيَّ
আবূ ইদরীস খাওলানী
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
দামিশকের মসজিদে প্রবেশ করলাম। সেখানে জনৈক যুবককে দেখলাম, তার দাঁতগুলো অতি
উজ্জ্বল সাদা (মুক্তার মতো)। তার সঙ্গে অনেক মানুষ ছিল। যখনই কোন ব্যাপারে মতবিরোধ
হত, উক্ত যুবকের কথাকেই সনদ (নির্ভরযোগ্য) বলে গণ্য করা হত এবং তার কথার উপরেই
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হত। আমি (আবূ ইদরীস) লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, এই যুবকটি কে?
তারা বলল, ইনি হলেন মুআয ইব্নু জাবাল (রাঃ)। পরদিন প্রাতঃকালে আমি (মসজিদে) যেয়ে
দেখি যে, তিনি (মু‘আয ইব্নু জাবাল) আমার আগেই সেখানে পৌঁছেছেন এবং নামায পড়ছেন।
আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। তিনি নামায আদায় শেষ করলে আমি তার সম্মুখে গিয়ে
পৌঁছালাম। অতঃপর তাকে সালাম করে বললাম, আল্লাহ্র কসম! আমি আপনাকে আল্লাহর
ওয়াস্তে ভালবাসি। তিনি বললেন, আল্লাহরই জন্য? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহরই জন্যই।
তিনি (পুনরায়) বললেন, আল্লাহরই জন্য? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহরই জন্য। অতঃপর তিনি
আমার চাদরের এক কোণা ধরে (আমাকে) নিজের দিকে টানলেন এবং বললেন, আনন্দিত হও! আমি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলছিলেন,
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, আমার ভালবাসা সেই সমস্ত লোকের জন্য ওয়াজিব হয়েছে যারা আমার
(সন্তুষ্টির) জন্য পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসে, আমারই জন্য একত্রে বসে, আমারই জন্য
একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং আমারই জন্য একে অন্যের জন্য খরচ করে। (হাদীসটি
ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
১৭২২
و
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ بَلَغَهُ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ
كَانَ يَقُولُ الْقَصْدُ وَالتُّؤَدَةُ وَحُسْنُ السَّمْتِ جُزْءٌ مِنْ خَمْسَةٍ
وَعِشْرِينَ جُزْءًا مِنْ النُّبُوَّةِ
আবদুল্লাহ্ ইব্নু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মধ্যম পন্থাবলম্বন, একে অন্যকে ভালবাসা এবং সুন্দরভাবে মৌনতা অবলম্বন নবুয়তের পঁচিশ ভাগের এক ভাগের সমান। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
No comments