সহীহ বুখারী শরীফ অধ্যায় "তাফসীর" হাদিস নং - ৪৮১৬ থেকে ৪৮৯০

৬৫/৪১/.অধ্যায়ঃ
আল্লাহর বাণীঃ
(41) سُوْرَةُ حم السَّجْدَةِ
সূরাহ (৪১) : হা-মীম আস্সাজদাহ (ফুসসিলাত)
وَقَالَ طَاوُسٌ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ {اِئْتِيَا طَوْعًا} أَوْ كَرْهًا أَعْطِيَا {قَالَتَا أَتَيْنَا طَآئِعِيْنَ} أَعْطَيْنَا وَقَالَ الْمِنْهَالُ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِابْنِ عَبَّاسٍ إِنِّيْ أَجِدُ فِي الْقُرْآنِ أَشْيَاءَ تَخْتَلِفُ عَلَيَّ قَالَ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ {يَوْمَئِذٍ وَّلَا يَتَسَآءَلُوْنَ} و {وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ حَدِيْثًا وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ} فَقَدْ كَتَمُوْا فِيْ هَذِهِ الْآيَةِ وَقَالَ {أَمِ السَّمَآءُ بَنَاهَا} إِلَى قَوْلِهِ {دَحَاهَا} فَذَكَرَ خَلْقَ السَّمَاءِ قَبْلَ خَلْقِ الْأَرْضِ ثُمَّ قَالَ {أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُوْنَ بِالَّذِيْ خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ} إِلَى قَوْلِهِ {طَآئِعِيْنَ} فَذَكَرَ فِيْ هَذِهِ خَلْقَ الْأَرْضِ قَبْلَ خَلْقِ السَّمَاءِ وَقـَالَ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا}{عَزِيْزًا حَكِيْمًا}{سَمِيْعًامبَصِيْرًا} فَكَأَنَّهُ كَانَ ثُمَّ مَضَى فَقَالَ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ فِي النَّفْخَةِ الْأُوْلَى ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللهُ فَلَا أَنْسَابَ بَيْنَهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ وَلَا يَتَسَاءَلُوْنَ ثُمَّ فِي النَّفْخَةِ الآخِرَةِ {أَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ}وَأَمَّا قَوْلُهُ {مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللهَ} حَدِيْثًا فَإِنَّ اللهَ يَغْفِرُ لِأَهْلِ الإِخْلَاصِ ذُنُوْبَهُمْ وَقَالَ الْمُشْرِكُوْنَ تَعَالَوْا نَقُوْلُ لَمْ نَكُنْ مُشْرِكِيْنَ فَخُتِمَ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ فَتَنْطِقُ أَيْدِيْهِمْ فَعِنْدَ ذَلِكَ عُرِفَ أَنَّ اللهَ لَا يُكْتَمُ حَدِيْثًا وَعِنْدَهُ {يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا} الْآيَةَ وَ{خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ ثُمَّ خَلَقَ السَّمَآءَ ثُمَّ اسْتَوٰى إِلَى السَّمَآءِ فَسَوَّاهُنَّ فِيْ يَوْمَيْنِ اٰخَرَيْنِ ثُمَّ دَحَا الْأَرْضَ} وَدَحْوُهَا أَنْ أَخْرَجَ مِنْهَا الْمَاءَ وَالْمَرْعَى وَخَلَقَ الْجِبَالَ وَالْجِمَالَ وَالآكَامَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ يَوْمَيْنِ آخَرَيْنِ فَذَلِكَ قَوْلُهُ {دَحَاهَا} وَقَوْلُهُ {خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ} فَجُعِلَتْ الْأَرْضُ وَمَا فِيْهَا مِنْ شَيْءٍ فِيْ أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ وَخُلِقَتْ السَّمَوَاتُ فِيْ يَوْمَيْنِ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا} سَمَّى نَفْسَهُ ذَلِكَ وَذَلِكَ قَوْلُهُ أَيْ لَمْ يَزَلْ كَذَلِكَ فَإِنَّ اللهَ لَمْ يُرِدْ شَيْئًا إِلَّا أَصَابَ بِهِ الَّذِيْ أَرَادَ فَلَا يَخْتَلِفْ عَلَيْكَ الْقُرْآنُ فَإِنَّ كُلاًّ مِنْ عِنْدِ اللهِ قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ حَدَّثَنِيْ يُوْسُفُ بْنُ عَدِيٍّ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَمْرٍو عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِيْ أُنَيْسَةَ عَنِ الْمِنْهَالِ بِهَذَا.
وَقَالَ مُجَاهِدٌ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنٍ مَحْسُوْبٍ أَقْوَاتَهَا أَرْزَاقَهَا فِيْ كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا مِمَّا أَمَرَ بِهِ نَحِسَاتٍ مَشَائِيْمَ وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَاءَ قَرَنَّاهُمْ بِهِمْ تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ الْمَوْتِ اهْتَزَّتْ بِالنَّبَاتِ وَرَبَتْ ارْتَفَعَتْ مِنْ أَكْمَامِهَا حِيْنَ تَطْلُعُ لَيَقُوْلَنَّ هَذَا لِيْ أَيْ بِعَمَلِيْ أَنَا مَحْقُوْقٌ بِهَذَا وَقَالَ غَيْرُهُ سَوَاءً لِلسَّائِلِيْنَ قَدَّرَهَا سَوَاءً فَهَدَيْنَاهُمْ دَلَلْنَاهُمْ عَلَى الْخَيْرِ وَالشَّرِّ كَقَوْلِهِ وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ وَكَقَوْلِهِ هَدَيْنَاهُ السَّبِيْلَ وَالْهُدَى الَّذِيْ هُوَ الإِرْشَادُ بِمَنْزِلَةِ أَصْعَدْنَاهُ وَمِنْ ذَلِكَ قَوْلُهُ أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ هَدَى اللهُ فَبِهُدَاهُمْ اقْتَدِهْ يُوْزَعُوْنَ يُكَفُّوْنَ مِنْ أَكْمَامِهَا قِشْرُ الْكُفُرَّى هِيَ الْكُمُّ وَقَالَ غَيْرُهُ وَيُقَالُ لِلْعِنَبِ إِذَا خَرَجَ أَيْضًا كَافُوْرٌ وَكُفُرَّى وَلِيٌّ حَمِيْمٌ الْقَرِيْبُ مِنْ مَحِيْصٍ حَاصَ عَنْهُ أَيْ حَادَ مِرْيَةٍ وَمُرْيَةٌ وَاحِدٌ أَيْ امْتِرَاءٌ وَقَالَ مُجَاهِدٌ اعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ هِيَ وَعِيْدٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ ادْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ الصَّبْرُ عِنْدَ الْغَضَبِ وَالْعَفْوُ عِنْدَ الإِسَاءَةِ فَإِذَا فَعَلُوْهُ عَصَمَهُمْ اللهُ وَخَضَعَ لَهُمْ عَدُوُّهُمْ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ.
তাউস (রহ.)....ইবনু ‘আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, ائْتِيَا طَوْعًاأعطيا অর্থাৎ তোমরা উভয় আস; তারা উভয়ে বলল, أَتَيْنَا طَآئِعِيْنَ অর্থাৎ আমরা এলাম। মিনহাল (রহ.) সা‘ঈদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, জনৈক ব্যক্তি ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল, আমি কুরআনে এমন বিষয় পাচ্ছি, যা আমার কাছে পরস্পর বিরোধী মনে হচ্ছে। আল্লাহ্ বলেছেন, যে দিন (যে দিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে) সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ খবর নেবে না।’’ আবার বলেছেন, ‘‘তারা একে অপরের সামনা-সামনি হয়ে খোঁজ খবর নেবে।’’ ‘‘তারা আল্লাহ্ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারবে না।’’ (তারা বলবে) ‘‘আল্লাহ আমাদের রব! আমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’’ এতে বোঝা যাচ্ছে যে, তারা আল্লাহ্ থেকে নিজেদের মুশরিক হবার ব্যাপারটিকে লুকিয়ে রাখবে। (তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিন), না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই তা নির্মাণ করেছেন....এরপর পৃথিবীকে করেছেন সুবিস্তৃত’’ পর্যন্ত। এখানে আকাশকে যমীনের পূর্বে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন; কিন্তু অন্য এক স্থানে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তোমরা কি তাঁকে স্বীকার করবেই যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে, আমরা এলাম অনুগত হয়ে।’’ এখানে যমীনকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টির কথা উল্লেখ রয়েছে।
আল্লাহ্ বলেছেনঃ {وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا}{عَزِيْزًا حَكِيْمًا}{سَمِيْعًامبَصِيْرًا} উপরোক্ত আয়াতসমূহের প্রেক্ষাপটে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত গুণাবলী প্রথমে আল্লাহর মধ্যে ছিল; কিন্তু এখন নেই। (জনৈক ব্যক্তির এসব প্রশ্ন শুনার পর) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বললেন, ‘‘যে দিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না।’’
এ আয়াতের সম্পর্ক হল প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সঙ্গে। কেননা, ইরশাদ হয়েছে যে, এরপর শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। ফলে যাদেরকে আল্লাহ্ ইচ্ছে করেন, তারা বাদে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মূর্ছিত হয়ে পড়বে। এ সময় পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অন্যের খোঁজ খবর নেবে না। তারপর শেষবারের মত শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার পর তারা একে অপরের সামনাসামনি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে এক আয়াতে আছে, ‘‘তারা আল্লাহ্ থেকে কোন কথাই গোপন করতে পারে না।’’ অন্য আয়াতে আছে ‘‘মুশরিকগণ বলবে যে, আমরা তো মুশরিক ছিলাম না।’’ এর সমাধান হচ্ছে এই যে, ক্বিয়ামাতের দিন প্রথমে আল্লাহ্ রাববুল আলামীন মুখ্লিস লোকদের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন। এ দেখে মুশরিকরা বলবে, আস! আমরাও বলব, (হে আল্লাহ্! আমরাও তো মুশ্রিক ছিলাম না। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন। তখন তাদের হাত কথা বলবে। এ সময় প্রকাশ পাবে যে, ‘‘তাদের কোন কথাই আল্লাহ্ থেকে গোপন রাখা যাবে না।’’ এবং এ সময়ই কাফিরগণ আকাঙ্ক্ষা করবে (.....হায়! যদি তারা মাটির সঙ্গে মিশে যেত)। তৃতীয় প্রশ্ন সম্বন্ধে সমাধান হচ্ছে এই যে, প্রথমে আল্লাহ্ তা‘আলা দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন। এরপর আসমান সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি আকাশের প্রতি মনোযোগ দেন এবং তাকে বিন্যস্ত করেন দু’দিনে। তারপর তিনি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন। যমীনকে বিছিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, এর মাঝে পানি ও চারণভূমির বন্দোবস্ত করা, পর্বত-টিলা, উট এবং আসমান ও মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা। এ সবকিছুও তিনি আরো দু’দিনে সৃষ্টি করেন। আল্লাহর বাণীঃ
دَحَاهَا -এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে : خَلَقَ الْأَرْضَ فِيْ يَوْمَيْنِ ‘এবং তিনি দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন’’ এ কথাও ঠিক; তবে যমীন এবং যত কিছু যমীনের মধ্যে বিদ্যমান আছে এসব তিনি চার দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করা হয়েছে দু’দিনে।
وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا সম্বন্ধে উত্তর এই যে, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন নিজেই এ সমস্ত বিশেষণযুক্ত নামের দ্বারা নিজের নামকরণ করেছেন। উল্লিখিত গুণবাচক নামের অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্ রাববুল ‘আলামীন সর্বদাই এই গুণে গুণান্বিত থাকবেন। কারণ, আল্লাহ্ রাববুল আলামীন যখন কারো প্রতি কিছু করার ইচ্ছে করেন, তখন তিনি তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী করেই থাকেন, সুতরাং কুরআনের আলোচ্য বিষয়ের একটিকে অপরটির বিপরীত সাব্যস্ত করবে না। কেননা, এগুলো সব আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন ممنون অর্থ গণনাকৃত। أَقْوَاتَهَا তাদের জীবিকা। فِيْ كُلِّ سَمَآءٍ أَمْرَهَا যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। نَحِسَاتٍ শুভ। وَقَيَّضْنَا لَهُمْ قُرَنَآءَআমি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম তাদের সহচর। تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَآئِكَةُতাদের নিকটবর্তী হয় মালায়িকাহ। আর এ সময়টি হচ্ছে عِنْدَ الْمَوْتِমৃত্যুর সময়। اهْتَزَّتْফলে ফুলে আন্দোলিত হয়ে উঠে। وَرَبَتْ বেড়ে যায় এবং স্ফীত হয়ে উঠে। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যেরা বলেছেন, مِنْ أَكْمَامِهَاযখন তা আবরণ হতে বিকশিত হয়। لَيَقُوْلَنَّهَذَالِيْ আমলের ভিত্তিতে এ সমস্ত অনুগ্রহের হকদার আমিই। سَوَآءً لِلسَّآئِلِيْنَআমি সমভাবে নির্ধারণ করেছি। فَهَدَيْنَاهُمْ অর্থাৎ আমি তাদেরকে ভাল-মন্দ সম্বন্ধে পথ বলে দিয়েছি। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘এবং আমি তাকে দু’টি পথই দেখিয়েছি।’’ অন্যত্র বর্ণিত আছে যে, ‘‘আমি তাকে ভাল পথের নির্দেশ দিয়েছি।’’ الْهُدٰىপথ দেখানো এবং গন্তব্য স্থান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া। এ অর্থেই কুরআনে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন। يُوْزَعُوْنَ তাদের আটক রাখা হবে। مِنْ أَكْمَامِهَا অর্থ বাকলের উপরের আবরণ। এটাকে كم ও বলা হয়। وَلِيٌّحَمِيْمٌ নিকটতম বন্ধু। مِنْ مَحِيْصٍ শব্দটি حَاصَعَنْهُ থেকে নির্গত হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে, সে তার থেকে পলায়ন করেছে। مِرْيَةٌ এবং مُرْيَةٌ একার্থবোধক শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সন্দেহ। মুজাহিদ বলেছেন, اعْمَلُوْامَاشِئْتُمْ (তোমাদের যা ইচ্ছে কর) বাক্যটি মূলত সতর্কবাণী হিসেবে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, بِالَّتِيْ هِيَأَحْسَنُ -এর মর্মার্থ হচ্ছে, রাগের মুহূর্তে ধৈর্যধারণ করা এবং অন্যায় ব্যবহারকে ক্ষমা করে দেয়া। যখন কোন মানুষ ক্ষমা ও ধৈর্যধারণ করে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে হেফাজত করেন এবং তার শত্রুকে তার সামনে নত করে দেন। ফলে সে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়।
{
وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَآ أَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ وَلٰكِنْ ظَنَنْتُمْ أَنَّ اللهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيْرًا مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ}
তোমাদের কান, তোমাদের চোখ ও তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না- এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমরা তাদের কাছে কিছু গোপন করতে না। উপরন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না। (সূরাহ হা-মীম আস্-সাজদাহ ৪১/২২)

৪৮১৬

الصَّلْتُ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ زُرَيْعٍ عَنْ رَوْحِ بْنِ الْقَاسِمِ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ {وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ} وَلَا أَبْصَارُكُمْ الْآيَةَ قَالَ كَانَ رَجُلَانِ مِنْ قُرَيْشٍ وَخَتَنٌ لَهُمَا مِنْ ثَقِيْفَ أَوْ رَجُلَانِ مِنْ ثَقِيْفَ وَخَتَنٌ لَهُمَا مِنْ قُرَيْشٍ فِيْ بَيْتٍ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ أَتُرَوْنَ أَنَّ اللهَ يَسْمَعُ حَدِيْثَنَا قَالَ بَعْضُهُمْ يَسْمَعُ بَعْضَهُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَئِنْ كَانَ يَسْمَعُ بَعْضَهُ لَقَدْ يَسْمَعُ كُلَّهُ فَأُنْزِلَتْ {وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَآ أَبْصَارُكُمْ}.
ইব্‌নু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র বাণী ঃ “তোমাদের কর্ণ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে- এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না।” আয়াত সম্পর্কে বলেন, কুরাইশ গোত্রের দু’ ব্যক্তি ছিল, যাদের জামাতা ছিল বানী সাকীফ গোত্রের অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) দু’ ব্যক্তি ছিল বানী সাকীফ গোত্রের আর তাদের জামাতা ছিল কুরাইশ গোত্রের। তারা সকলেই একটি ঘরে ছিল। তারা পরস্পর বলল, তোমার কী ধারণা, আল্লাহ্ কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন? একজন বলল, তিনি আমাদের কিছু কথা শুনছেন। এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, তিনি যদি আমাদের কিছু কথা শুনতে পান, তাহলে সব কথাও শুনতে পাবেন। তখন নাযিল হল ঃ “তোমাদের কান ও তোমাদের চোখ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না।.....আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [৪৮১৭, ৭৫২১; মুসলিম ৫০/২৭৭৫, আহমাদ ৩৮৭৫] (আ.প্র. ৪৪৫২, ই.ফা. ৪৪৫৩)

৬৫/৪১/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আর তোমাদের এ ধারণাই যা তোমরা স্বীয় রব সম্বন্ধে করতে, তোমাদের সর্বনাশ করেছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের শামিল হয়ে গেছ। (সূরাহ হা-মীম আস্-সাজদাহ ৪২/২৩)

৪৮১৭

الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا مَنْصُوْرٌ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ اجْتَمَعَ عِنْدَ الْبَيْتِ قُرَشِيَّانِ وَثَقَفِيٌّ أَوْ ثَقَفِيَّانِ وَقُرَشِيٌّ كَثِيْرَةٌ شَحْمُ بُطُوْنِهِمْ قَلِيْلَةٌ فِقْهُ قُلُوْبِهِمْ فَقَالَ أَحَدُهُمْ أَتُرَوْنَ أَنَّ اللهَ يَسْمَعُ مَا نَقُوْلُ قَالَ الآخَرُ يَسْمَعُ إِنْ جَهَرْنَا وَلَا يَسْمَعُ إِنْ أَخْفَيْنَا وَقَالَ الْآخَرُ إِنْ كَانَ يَسْمَعُ إِذَا جَهَرْنَا فَإِنَّهُ يَسْمَعُ إِذَا أَخْفَيْنَا فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ {وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَّشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَآ أَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُوْدُكُمْ}.
وَكَانَ سُفْيَانُ يُحَدِّثُنَا بِهَذَا فَيَقُوْلُ حَدَّثَنَا مَنْصُوْرٌ أَوْ ابْنُ أَبِيْ نَجِيْحٍ أَوْ حُمَيْدٌ أَحَدُهُمْ أَوْ اثْنَانِ مِنْهُمْ ثُمَّ ثَبَتَ عَلَى مَنْصُوْرٍ وَتَرَكَ ذَلِكَ مِرَارًا غَيْرَ مَرَّةٍ وَاحِدَةٍ.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘বার কাছে দু’জন কুরাইশী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরাইশী একত্রিত হয়। তাদের পেটের মেদ ছিল অধিক; কিন্তু অন্তরে বুদ্ধি ছিল কম। তাদের একজন বলল, তোমাদের কী ধারণা, আমরা যা বলছি তা কি আল্লাহ্ শুনছেন? উত্তরে অপর এক ব্যক্তি বলল, আমরা যদি জোরে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান। আর যদি চুপে চুপে বলি, তাহলে তিনি শুনতে পান না। তৃতীয় ব্যক্তি বলল, আমরা জোরে বললে যদি তিনি শুনতে পান, তাহলে চুপে চুপে বললেও তিনি শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহ্ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমাদের চোখ, কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না..... (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।
হুমাইদী বলেন, সুফ্ইয়ান এ হাদীস বর্ণনার সময় বলতেন, মানসুর বলেছেন, অথবা ইব্‌নু আবূ নাজীহ্ অথবা হুমায়দ তাঁদের একজন বা দু’জন। এরপর তিনি মানসূরের উপরই নির্ভর করেছেন এবং একাধিকবার তিনি সন্দেহ বর্জন করে বর্ণনা করেছেন। [৪৮১৬] (আ.প্র. ৪৪৫৩, ই.ফা. ৪৪৫৪)

৬৫/৪২/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আত্মীয়ের সৌহার্দ ব্যতীত। (সূরাহ শূরা ৪২/২৩)
65/41/3. باب قوله :{فَإِنْ يَّصْبِرُوْا فَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ} ... الآية
৬৫/৪১/৩. অধ্যায়: আল্লাহর বাণীঃ এখন তারা সবর করলেও জাহান্নামই তাদের আবাসস্থল হবে; আর যদি তারা ওযরখাহী করে তবুও তাদের ওযর ক্ববুল করা হবে না। (সূরাহ হা-মীম সাজদাহ্হ ৪১/২৪)
حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ عَلِيٍّ حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ قَالَ حَدَّثَنِيْ مَنْصُوْرٌ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بِنَحْوِهِ.
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ , ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৫৫)
(42)
سُوْرَةُ حم عسق
সূরাহ (৪২) : শূরা (হা-মীম, ‘আইন সাদ ক্বাফ)
وَيُذْكَرُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ {عَقِيْمًا} الَّتِيْ لَا تَلِدُ {رُوْحًا مِّنْ أَمْرِنَا} الْقُرْآنُ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ} نَسْلٌ بَعْدَ نَسْلٍ {لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا} وَبَيْنَكُمْ لَا خُصُوْمَةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ {مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ} ذَلِيْلٍ وَقَالَ غَيْرُهُ {فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلٰى ظَهْرِهٰ} يَتَحَرَّكْنَ وَلَا يَجْرِيْنَ فِي الْبَحْرِ {شَرَعُوْا} ابْتَدَعُوْا.
ইবনু ‘আববাস হতে বর্ণিত।
عَقِيْمًا অর্থ বন্ধ্যা। رُوْحًا مِّنْ أَمْرِنَا অর্থাৎ আল কুরআন। মুজাহিদ বলেছেন- يَذْرَؤُكُمْ فِيْهِ, আল্লাহ্ তোমাদেরকে গর্ভাশয়ের মধ্যে ধারাবাহিক বংশ পরম্পরার সঙ্গে সৃষ্টি করতে থাকবেন। لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই। مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ অবনমিত। মুজাহিদ ছাড়া অন্যরা বলেন। فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلٰى ظَهْرِهٰনৌযানগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে আন্দোলিত হতে থাকে; কিন্তু চলতে পারবে না। شَرَعُوْا তারা আবিষ্কার করেছে।

৪৮১৮

مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ مَيْسَرَةَ قَالَ سَمِعْتُ طَاوُسًا عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ قَوْلِهِ {إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبٰى} فَقَالَ سَعِيْدُ بْنُ جُبَيْرٍ قُرْبَى آلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ عَجِلْتَ إِنَّ النَّبِيَّ لَمْ يَكُنْ بَطْنٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِلَّا كَانَ لَهُ فِيْهِمْ قَرَابَةٌ فَقَالَ إِلَّا أَنْ تَصِلُوْا مَا بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْ مِنَ الْقَرَابَةِ.
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা তাকে إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর (কাছে উপস্থিত) সা‘ঈদ ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) বললেন, এর অর্থ নাবী পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন। (এ কথা শুনে) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি তাড়াহুড়া করে ফেললে। কেননা কুরাইশের এমন কোন শাখা ছিল না যেখানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আত্মীয়তা ছিল না। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের বলেছেন, আমার এবং তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে তার ভিত্তিতে তোমরা আমার সঙ্গে আত্মীয়সুলভ আচরণ কর। এই আমি তোমাদের থেকে কামনা করি। [৩৪৯৭] (আ.প্র. ৪৪৫৪, ই.ফা. ৪৪৫৬)

৬৫/৪৩/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তারা চীৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন। (সূরাহ যুখরুফ ৪৩/৭৭)
(43) سُوْرَةُ حم الزُّخْرُفِ
সূরাহ (৪৩) : হা-মীম যুখরুফ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {عَلٰى أُمَّةٍ} عَلَى إِمَامٍ {وَقِيْلَهيَا رَبِّ} تَفْسِيْرُهُ أَيَحْسِبُوْنَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ وَلَا نَسْمَعُ قِيْلَهُمْ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {وَلَوْلَآ أَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ أُمَّةً وَّاحِدَةً} لَوْلَا أَنْ جَعَلَ النَّاسَ كُلَّهُمْ كُفَّارًا لَجَعَلْتُ لِبُيُوْتِ الْكُفَّارِ سَقْفًا مِنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ مِنْ فِضَّةٍ وَهِيَ دَرَجٌ وَسُرُرَ فِضَّةٍ {مُقْرِنِيْنَ} مُطِيْقِيْنَ {اٰسَفُوْنَا} أَسْخَطُوْنَا {يَعْشُ} يَعْمَى وَقَالَ مُجَاهِدٌ {أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمْ الذِّكْرَ} أَيْ تُكَذِّبُوْنَ بِالْقُرْآنِ ثُمَّ لَا تُعَاقَبُوْنَ عَلَيْهِ {وَمَضٰى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَ} سُنَّةُ الْأَوَّلِيْنَ {وَمَا كُنَّا لَهمُقْرِنِيْنَ} يَعْنِي الإِبِلَ وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيْرَ {يَنْشَأُ فِي الْحِلْيَةِ} الْجَوَارِيْ جَعَلْتُمُوْهُنَّ لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا {فَكَيْفَ تَحْكُمُوْنَ لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ} يَعْنُوْنَ الْأَوْثَانَ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى {مَا لَهُمْ بِذٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ} أَيْ الْأَوْثَانُ إِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ {فِيْ عَقِبِهِ} وَلَدِهِ {مُقْتَرِنِيْنَ} يَمْشُوْنَ مَعًا {سَلَفًا} قَوْمُ فِرْعَوْنَ سَلَفًا لِكُفَّارِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ e وَمَثَلًا عِبْرَةً {يَصِدُّوْنَ} يَضِجُّوْنَ {مُبْرِمُوْنَ} مُجْمِعُوْنَ {أَوَّلُ الْعَابِدِيْنَ} أَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَقَالَ غَيْرُهُ {إِنَّنِيْ بَرَآءٌ مِمَّاتَعْبُدُوْنَ} الْعَرَبُ تَقُوْلُ نَحْنُ مِنْكَ الْبَرَاءُ وَالْخَلَاءُ وَالْوَاحِدُ وَالِاثْنَانِ وَالْجَمِيْعُ مِنَ الْمُذَكَّرِ وَالْمُؤَنَّثِ يُقَالُ فِيْهِ بَرَاءٌ لِأَنَّهُ مَصْدَرٌ وَلَوْ قَالَ بَرِيْءٌ لَقِيْلَ فِي الِاثْنَيْنِ بَرِيئَانِ وَفِي الْجَمِيْعِ بَرِيئُوْنَ وَقَرَأَ عَبْدُ اللهِ إِنَّنِيْ بَرِيْءٌ بِالْيَاءِ وَالزُّخْرُفُ الذَّهَبُ {مَلَآئِكَةً} يَخْلُفُوْنَ يَخْلُفُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا.

মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন,
عَلٰى أُمَّةٍ এক নেতার অনুসারী। وَقِيْلَه يَا رَبِّ এর ব্যাখ্যা এই যে, কাফিররা কি মনে করে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার খবর রাখি না এবং আমি তাদের কথাবার্তা শুনি না? ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, وَلَوْلَا أَنْ يَّكُوْنَ النَّاسُ أُمَّةً وَّاحِدَةً যদি সমস্ত মানুষ কাফের হয়ে যাবার আশংকা না থাকত, তাহলে আমি কাফেরদের গৃহের জন্য দিতাম রৌপ্য নির্মিত ছাদ এবং রৌপ্য নির্মিত মা‘রিজ অর্থাৎ সিঁড়ি আর রৌপ্য নির্মিত পালঙ্ক। مُقْرِنِيْنَ সামর্থ্যবান লোক। اٰسَفُوْنَا তারা আমাকে রাগান্বিত করল। يَعْشُ অন্ধ হয়ে যায়। মুজাহিদ বলেছেন, أَفَنَضْرِبُ عَنْكُمْ الذِّكْرَ তোমরা কুরআন মাজীদকে মিথ্যা মনে করবে, তারপর এজন্য কি তোমাদের শাস্তি দেয়া হবে না? وَمَضٰى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَ পূর্ববর্তী লোকদের উদাহরণ। وَمَا كُنَّا لَهمُقْرِنِيْنَ উট, ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে বোঝানো হয়েছে। يَنْشَأُ فِي الْحِلْيَةِ কন্যা সন্তান; এদের তোমরা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করছ- এ তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ ......... لَوْ شَآءَ الرَّحْمٰنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ আয়াতাংশে বর্ণিত هم সর্বনাম-এর দ্বারা মূর্তিকে বোঝানো হয়েছে। কেননা, আল্লাহ্ বলেছেন, مَا لَهُمْ بِذَلِكَ مِنْ عِلْمٍ এ সম্বন্ধে প্রতিমাদের কোন জ্ঞান নেই। فِيْ عَقِبِهٰ তার সন্তানদের মধ্যে مُقْتَرِنِيْنَ এক সঙ্গে তারা চলে আসছিল। سَلَفًا দ্বারা উদ্দেশ্য ফির‘আউন সম্প্রদায়। কেননা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতের কাফেরদের জন্য তারা হচ্ছে অগ্রগামী দল এবং তারা হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের এক নমুনা। يَصِدُّوْنَ তারা চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। مُبْرِمُوْنَ আমিই তো সিদ্ধান্ত দানকারী। أَوَّلُالْعَابِدِيْنَ মু’মিনদের অগ্রণী। إِنَّنِيْ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُوْنَ আরবরা বলে, نَحْنُ مِنْكَ الْبَرَآءُ وَالْخَلَآءُ আমরা তোমার থেকে পৃথক, পুরুষলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, বহুবচন, দ্বিবচন ও একবচন সকল ক্ষেত্রে الْبَرَآءُ শব্দটি একইভাবে ব্যবহৃত হয়। কেননা, এ শব্দটি হচ্ছে মাসদার (মূল শব্দ) । যদি بَرِيْءٌ বল, তাহলে দ্বিবচনে بَرِيئَآنِ বলা হবে এবং বহুবচনে বলা হবে بَرِيــٓئُوْنَ। ‘আবদুল্লাহ্ إِنَّنِيْبَرِيْٓءٌ (ياদ্বারা) পাঠ করতেন। الزُّخْرُفُ স্বর্ণ। مَلَآئِكَةً তারা পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত হতো।

৪৮১৯

حَجَّاجُ بْنُ مِنْهَالٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ عَمْرٍو عَنْ عَطَاءٍ عَنْ صَفْوَانَ بْنِ يَعْلَى عَنْ أَبِيْهِ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ عَلَى الْمِنْبَرِ {وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ} وَقَالَ قَتَادَةُ {مَثَلًا لِّلْاٰخِرِيْنَ} عِظَةً لِمَنْ بَعْدَهُمْ وَقَالَ غَيْرُهُ {مُقْرِنِيْنَ} ضَابِطِيْنَ يُقَالُ فُلَانٌ مُقْرِنٌ لِفُلَانٍ ضَابِطٌ لَهُ. وَالأَكْوَابُ الْأَبَارِيْقُ الَّتِيْ لَا خَرَاطِيْمَ لَهَا. وَقَالَ قَتَادَةُ {فِيْ أُمِّ الْكِتَابِ} جُمْلَةِ الْكِتَابِ أَصْلِ الْكِتَابِ. {أَوَّلُالْعَابِدِيْنَ} أَيْ مَا كَانَ فَأَنَا أَوَّلُ الآنِفِيْنَ وَهُمَا لُغَتَانِ رَجُلٌ عَابِدٌ وَعَبِدٌ وَقَرَأَ عَبْدُ اللهِ وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ وَيُقَالُ أَوَّلُ الْعَابِدِيْنَ الْجَاحِدِيْنَ مِنْ عَبِدَ يَعْبَد
ইয়া‘লা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মিম্বরে পড়তে শুনেছি وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ (তারা চীৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন।) ক্বাতাদাহ বলেন, مَثَلاً لِلْآخِرِينَ এর অর্থ পরবর্তী লোকদের জন্য নাসীহাত।
ক্বাতাদাহ (রহ.) ব্যতীত অন্যান্য মুফাস্সির বলেছেন,
مُقْرِنِينَ নিয়ন্ত্রণকারী। বলা হয় فُلاَنٌ مُقْرِنٌ لِفُلاَنٍ অর্থাৎ তার নিয়ন্তা। َالأَكْوَابُ অর্থ হাতল বিহীন পানপাত্র। ক্বাতাদাহ (রহ.) أُمِّ الْكِتَابِ সম্পর্কে বলেন, তা হচ্ছে মূল কিতাব ও সারাংশ। أَوَّلُ الْعَابِدِينَ অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্‌র কোন সন্তান নেই- এ কথা প্রত্যাখ্যানকারী সর্বপ্রথম আমি নিজেই। رَجُلٌ عَابِدٌ وَعَبِدٌ দু’ ধরনের ব্যবহার রয়েছে। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ পাঠ করতেন। কোন কোন মুফাস্সির বলেন, أَوَّلُ الْعَابِدِينَ -এ বর্ণিত الْعَابِدِينَ শব্দটি عَبِدَ يَعْبَد এর ওজনে এসেছে; যার অর্থ অস্বীকারকারী। [৩২৩০] (আ.প্র. ৪৪৫৫, ই.ফা. ৪৪৫৭)

৬৫/৪৩/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আমি কি তোমাদের থেকে নাসীহাতপূর্ণ কুরআন এজন্য প্রত্যাহার করে নেব যে, তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী লোক? (সূরাহ যুখরুফ ৪৩/৫)
مُشْرِكِيْنَ وَاللهِ لَوْ أَنَّ هَذَا الْقُرْآنَ رُفِعَ حَيْثُ رَدَّهُ أَوَائِلُ هَذِهِ الْأُمَّةِ لَهَلَكُوْا {فَأَهْلَكْنَآ أَشَدَّ مِنْهُمْ بَطْشًا وَّمَضَى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَ} عُقُوْبَةُ الْأَوَّلِيْنَ {جُزْءًا} عِدْلًا.
উপরোক্ত আয়াতে উল্লিখিত
مُسْرِفِيْنَ এর অর্থ مُشْرِكِيْنَ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের হতে এই নাসীহাত বাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেব এই কারণে যে, তোমরা মুশরিক? আল্লাহর কসম! এ উম্মাতের প্রথম অবস্থায় যখন (কুরাইশগণ) আল-কুরআনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল; তখন যদি তাকে প্রত্যাহার করা হত, তাহলে তাঁরা সকলেই ধ্বংস হয়ে যেত। فَأَهْلَكْنَآ أَشَدَّ مِنْهُمْ بَطْشًا وَّمَضٰى مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَএর মাঝে বর্ণিত مَثَلُ الْأَوَّلِيْنَএর অর্থ তাদের মধ্যে যারা তাদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল, তাদের আমি ধ্বংস করেছিলাম। আর এভাবেই চলে এসেছে পূর্ববর্তী লোকদের শাস্তির দৃষ্টান্ত। جُزْءًا সমকক্ষ। (আ.প্র. ৪৪৫৫, ই.ফা. ৪৪৫৭)

(44)
سُوْرَةُ حم الدُّخَانِ
সূরাহ (৪৪) : হামীম আদ্-দুখান
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {رَهْوًا} طَرِيْقًا يَابِسًا وَيُقَالُ رَهْوًا سَاكِنًا عَلَى عِلْمٍ{عَلَى الْعَالَمِيْنَ} عَلَى مَنْ بَيْنَ ظَهْرَيْهِ. {فَاعْتُلُوْهُ} ادْفَعُوْهُ {وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ} أَنْكَحْنَاهُمْ حُوْرًا عِيْنًا يَحَارُ فِيْهَا الطَّرْفُ {تَرْجُمُوْنِ} الْقَتْلُ وَ {رَهْوَا} : سَاكِنًا. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {كَالْمُهْلِ} أَسْوَدُ كَمُهْلِ الزَّيْتِ وَقَالَ غَيْرُهُ {تُبَّعُ} مُلُوْكُ الْيَمَنِ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ يُسَمَّى تُبَّعًا لِأَنَّهُ يَتْبَعُ صَاحِبَهُ وَالظِّلُّ يُسَمَّى تُبَّعًا لِأَنَّهُ يَتْبَعُ الشَّمْسَ.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
رَهْوًا শুষ্ক পথ। عَلَى الْعَالَمِيْنَ সমকালীন লোকদের উপর। فَاعْتُلُوْهُ নিক্ষেপ কর তাকে।وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ আমি তাদের ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুরদের সঙ্গে বিয়ে দেব, যাদেরকে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। تَرْجُمُوْنِ হত্যা করা। رَهْوَا স্থির। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, كَالْمُهْلِ যায়তুনের গাদের মত কাল। অন্যরা বলেছেন, تُبَّعُ ইয়ামানের বাদশাদের উপাধি। তাদের একজনের পর যেহেতু অপরজনের আগমন ঘটত, এজন্য তাদের প্রত্যেক বাদশাহ্কেই تُبَّعُ বলা হত। ছায়াকেও تُبَّعُ বলা হয়। কেননা, ছায়া সূর্যের অনুসরণ করে।
قَالَ قَتَادَةُ فَارْتَقِبْ فَانْتَظِرْ.
ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন,
فَارْتَقِبْঅপেক্ষা কর।

৬৫/৪৪/.অধ্যায়ঃ

‘‘অতএব, তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ।’’ (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১০)

৪৮২০

عَبْدَانُ عَنْ أَبِيْ حَمْزَةَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ مَضَى خَمْسٌ الدُّخَانُ وَالرُّوْمُ وَالْقَمَرُ وَالْبَطْشَةُ وَاللِّزَامُ.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, পাঁচটি নিদর্শনই বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। ধোঁয়া (দুর্ভিক্ষ), রোম (পরাজয়), চন্দ্র (দ্বিখণ্ডিত হওয়া), পাকড়াও (বদর যুদ্ধে) এবং ধ্বংস। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৫৬, ই.ফা. ৪৪৫৮)

৬৫/৪৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে, এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১১)

৪৮২১

يَحْيَى حَدَّثَنَا أَبُوْ مُعَاوِيَةَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ قَالَ عَبْدُ اللهِ إِنَّمَا كَانَ هَذَا لِأَنَّ قُرَيْشًا لَمَّا اسْتَعْصَوْا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم دَعَا عَلَيْهِمْ بِسِنِيْنَ كَسِنِيْ يُوْسُفَ فَأَصَابَهُمْ قَحْطٌ وَجَهْدٌ حَتَّى أَكَلُوا الْعِظَامَ فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَنْظُرُ إِلَى السَّمَاءِ فَيَرَى مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا كَهَيْئَةِ الدُّخَانِ مِنَ الْجَهْدِ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى {فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ لا - يَّغْشَى النَّاسَ ط هٰذَا عَذَابٌ أَلِيْمٌ} قَالَ فَأُتِيَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقِيْلَ لَهُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اسْتَسْقِ اللهَ لِمُضَرَ فَإِنَّهَا قَدْ هَلَكَتْ قَالَ لِمُضَرَ إِنَّكَ لَجَرِيْءٌ فَاسْتَسْقَى لَهُمْ فَسُقُوْا فَنَزَلَتْ {إِنَّكُمْ عَآئِدُوْنَ} فَلَمَّا أَصَابَتْهُمْ الرَّفَاهِيَةُ عَادُوْا إِلَى حَالِهِمْ حِيْنَ أَصَابَتْهُمْ الرَّفَاهِيَةُ فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ {يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرٰى إِنَّا مُنْتَقِمُوْنَ} قَالَ يَعْنِيْ يَوْمَ بَدْرٍ.
মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেছেন, এ অবস্থা এ জন্য যে, কুরাইশরা যখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নাফরমানী করল, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্ভিক্ষের দু‘আ করলেন, যেমন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়ে। তারপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধার কষ্ট এমনভাবে আপতিত হ’ল যে, তারা হাড্ডি খেতে আরম্ভ করল। তখন মানুষ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তাড়নায় তারা আকাশ ও তাদের মাঝে শুধু ধোঁয়ার মত দেখতে পেত। এ সম্পর্কেই আল্লাহ্ অবতীর্ণ করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা ছেয়ে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি।” বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট (কাফিরদের পক্ষ থেকে) এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! মুদার গোত্রের জন্য বৃষ্টির দু‘আ করুন। তারা তো ধ্বংস হয়ে গেল। তিনি [রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] বললেন, মুদার গোত্রের জন্য দু‘আ করতে বলছ। তুমি তো খুব সাহসী। তারপর তিনি বৃষ্টির জন্য দু‘আ করলেন এবং বৃষ্টি হল। তখন অবতীর্ণ হল, তোমরা তো তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। যখন তাদের সচ্ছলতা ফিরে এলো, তখন আবার নিজেদের আগের অবস্থায় ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ্ নাযিল করলেন, “যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদের প্রতিশোধ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন। [১০০৭; মুসলিম ৫০/৭, হাঃ ২৭৯৮, আহমাদ ৪২০৬] (আ.প্র. ৪৪৫৭, ই.ফা. ৪৪৫৯)

৬৫/৪৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ শাস্তি থেকে মুক্তি দান কর, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১২)

৪৮২২

يَحْيَى حَدَّثَنَا وَكِيْعٌ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَبْدِ اللهِ فَقَالَ إِنَّ مِنَ الْعِلْمِ أَنْ تَقُوْلَ لِمَا لَا تَعْلَمُ اللهُ أَعْلَمُ إِنَّ اللهَ قَالَ لِنَبِيِّهِ صلى الله عليه وسلم {قُلْ مَآ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَّمَآ أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِيْنَ} إِنَّ قُرَيْشًا لَمَّا غَلَبُوا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَاسْتَعْصَوْا عَلَيْهِ قَالَ اللهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَيْهِمْ بِسَبْعٍ كَسَبْعِ يُوْسُفَ فَأَخَذَتْهُمْ سَنَةٌ أَكَلُوْا فِيْهَا الْعِظَامَ وَالْمَيْتَةَ مِنَ الْجَهْدِ حَتَّى جَعَلَ أَحَدُهُمْ يَرَى مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ كَهَيْئَةِ الدُّخَانِ مِنَ الْجُوْعِ قَالُوْا {رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُوْنَ} فَقِيْلَ لَهُ إِنْ كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَادُوْا فَدَعَا رَبَّهُ فَكَشَفَ عَنْهُمْ فَعَادُوْا فَانْتَقَمَ اللهُ مِنْهُمْ يَوْمَ بَدْرٍ فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى فَارْتَقِبْ {يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ} إِلَى قَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ {إِنَّا مُنْتَقِمُوْنَ}.
মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে সম্পর্কে ‘আল্লাহ্ই ভাল জানেন’ একথা বলাও জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্ তার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলেছেন, “বল, আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি বানোয়াটকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” কুরাইশরা যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করল এবং বিরোধিতা করল, তখন তিনি দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। তারপর দুর্ভিক্ষ তাদেরকে পাকড়াও করল। ক্ষুধার জ্বালায় তারা হাড্ডি এবং মরা খেতে আরম্ভ করল। এমনকি তাদের কোন ব্যক্তি আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় তার ও আকাশের মাঝে শুধু ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। তখন তারা বলল, “হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ শাস্তি সরিয়ে নাও, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব।” তাঁকে বলা হল, যদি তাদের থেকে শাস্তি সরিয়ে দেই, তাহলে তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। তারপর তিনি তাঁর রবের নিকট দু‘আ করলেন। আল্লাহ্ তাদের থেকে শাস্তি সরিয়ে দিলেন; কিন্তু তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে এল। তাই আল্লাহ্ বদর যুদ্ধের দিন তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলেন। নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াত إِنَّا مُنْتَقِمُونَ পর্যন্ত। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৫৮, ই.ফা. ৪৪৬০)

৬৫/৪৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তারা কী করে নাসীহাত গ্রহণ করবে? তাদের নিকট তো এসেছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দানকারী এক রসূল। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১৩)
الذِّكْرُ وَالذِّكْرَى وَاحِدٌ.
الذِّكْرُ এবং الذِّكْرَى একই অর্থে ব্যবহৃত শব্দ।

৪৮২৩

سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرُ بْنُ حَازِمٍ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَبْدِ اللهِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا دَعَا قُرَيْشًا كَذَّبُوْهُ وَاسْتَعْصَوْا عَلَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَيْهِمْ بِسَبْعٍ كَسَبْعِ يُوْسُفَ فَأَصَابَتْهُمْ سَنَةٌ حَصَّتْ يَعْنِيْ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى كَانُوْا يَأْكُلُوْنَ الْمَيْتَةَ فَكَانَ يَقُوْمُ أَحَدُهُمْ فَكَانَ يَرَى بَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ مِثْلَ الدُّخَانِ مِنَ الْجَهْدِ وَالْجُوْعِ ثُمَّ قَرَأَ {فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ لا - يَّغْشَى النَّاسَ ط هٰذَا عَذَابٌ أَلِيْمٌ} أَلِيْمٌ حَتَّى بَلَغَ إِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيْلًا إِنَّكُمْ عَائِدُوْنَ قَالَ عَبْدُ اللهِ أَفَيُكْشَفُ عَنْهُمْ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ وَالْبَطْشَةُ الْكُبْرَى يَوْمَ بَدْرٍ.
মাসরূক থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহর কাছে গেলাম। তারপর তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কুরাইশদের ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং তারা তাঁকে মিথ্যাচারী বলল ও তার নাফরমানী করল, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের এমনভাবে গ্রাস করল যে, নির্মূল হয়ে গেল সমস্ত কিছু; অবশেষে তারা মৃতদেহ খেতে আরম্ভ করল। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় সে তার ও আকাশের মাঝে ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যেদিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা ছেয়ে ফেলবে মানব জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য সরিয়ে দিচ্ছি, তোমরা তো তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।” পর্যন্ত ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, ক্বিয়ামাতের দিনও কি তাদের থেকে শাস্তি সরিয়ে ফেলা হবে? তিনি বলেন, وَالْبَطْشَةُ الْكُبْرَى দ্বারা বাদরের দিনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৫৯, ই.ফা. ৪৪৬১)

৬৫/৪৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ এরপর তারা তাকে অমান্য করে বলে সে তো শিখানো বুলি বলছে, সে এক পাগল। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১৪)

৪৮২৪

بِشْرُ بْنُ خَالِدٍ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ سُلَيْمَانَ وَمَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ قَالَ عَبْدُ اللهِ إِنَّ اللهَ بَعَثَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم وَقَالَ {قُلْ مَآ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَّمَآ أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِيْنَ} فَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا رَأَى قُرَيْشًا اسْتَعْصَوْا عَلَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَيْهِمْ بِسَبْعٍ كَسَبْعِ يُوْسُفَ فَأَخَذَتْهُمْ السَّنَةُ حَتَّى حَصَّتْ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى أَكَلُوا الْعِظَامَ وَالْجُلُوْدَ فَقَالَ أَحَدُهُمْ حَتَّى أَكَلُوا الْجُلُوْدَ وَالْمَيْتَةَ وَجَعَلَ يَخْرُجُ مِنَ الْأَرْضِ كَهَيْئَةِ الدُّخَانِ فَأَتَاهُ أَبُوْ سُفْيَانَ فَقَالَ أَيْ مُحَمَّدُ إِنَّ قَوْمَكَ قَدْ هَلَكُوْا فَادْعُ اللهَ أَنْ يَكْشِفَ عَنْهُمْ فَدَعَا ثُمَّ قَالَ تَعُوْدُوْنَ بَعْدَ هَذَا فِيْ حَدِيْثِ مَنْصُوْرٍ ثُمَّ قَرَأَ {فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ} إِلَى {عَآئِدُوْنَ} أَنَكْشِفُ عَنْهُمْ عَذَابَ الآخِرَةِ فَقَدْ مَضَى الدُّخَانُ وَالْبَطْشَةُ وَاللِّزَامُ وَقَالَ أَحَدُهُمْ الْقَمَرُ وَقَالَ الْآخَرُ وَالرُّوْمُ.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে পাঠিয়ে বলেছেন, “বল, আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবী করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।” রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন দেখলেন যে, কুরাইশরা তাঁর নাফরমানী করছে, তখন তিনি ললেন, ইউসুফ (‘আ.)-এর সময়কার সাত বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ তাদের পেয়ে বসল। নিঃশেষ করে দিল তাদের সমস্ত কিছু, এমনকি তারা হাড় এবং চামড়া খেতে আরম্ভ করল। আর একজন রাবী বলেছেন, তারা চামড়া ও মরা খেতে লাগল। তখন যামীন থেকে ধোঁয়ার মত বের হতে লাগল। এ সময় আবূ সুফ্ইয়ান নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! তোমার কওম তো ধ্বংস হয়ে গেল। আল্লাহ্‌র কাছে দু‘আ কর, যেন তিনি তাদের থেকে এ অবস্থা দূর করে দেন। তখন তিনি দু‘আ করলেন, এবং বললেন, এরপর তারা আবার নিজেদের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। মানসুর হতে বর্ণিত হাদীসে আছে, তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, “অতএব, তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যে দিন স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ, তোমরা তো আগের অবস্থায় ফিরে যাবেই.....পর্যন্ত। (তিনি বলেন) আখিরাতের শাস্তিও কি দূর হয়ে যাবে? ধোঁয়া, প্রবল পাকড়াও এবং ধ্বংস তো অতিক্রান্ত হয়েছে। এক রাবী চন্দ্র এবং অন্য রাবী রোমের পরাজয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৬০, ই.ফা. ৪৪৬২)

৬৫/৪৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ যে দিন আমি তোমাদেরকে প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিন আমি তোমাদেরকে শাস্তি দেবই। (সূরাহ আদ্ দুখান ৪৪/১৬)

৪৮২৫

يَحْيَى حَدَّثَنَا وَكِيْعٌ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ خَمْسٌ قَدْ مَضَيْنَ اللِّزَامُ وَالرُّوْمُ وَالْبَطْشَةُ وَالْقَمَرُ وَالدُّخَانُ.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, পাঁচটি বিষয় ঘটে গেছে ঃ ধ্বংস, রূম, পাকড়াও, চন্দ্র ও ধোঁয়া। [১০০৭] (আ.প্র. ৪৪৬১, ই.ফা. ৪৪৬৩)

৬৫/৪৫/.অধ্যায়ঃ

‘‘আমরা মরি ও বাঁচি আর কাল-ই আমাদেরকে ধ্বংস করে।’’ (সূরাহ জাসিয়া ৪৫/২৪)
(45) سُوْرَةُ حَم الجَاثِيَةَ
সূরাহ (৪৫) : হা-মীম আল-জাসিয়াহ
{
الْجَاثِيَةِ} مُسْتَوْفِزِيْنَ عَلَى الرُّكَبِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {نَسْتَنْسِخُ} نَكْتُبُ {نَنْسَاكُمْ} نَتْرُكُكُمْ.
الْجَاثِيَةِ ভয়ে নতজানু। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, نَسْتَنْسِخُ অর্থ- আমি লিখছিলাম। نَنْسَاكُمْ অর্থ-আমি তোমাদেরকে ত্যাগ করব।

৪৮২৬

الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِيْنِي ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ بِيَدِي الْأَمْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ বলেন, আদাম সন্তানরা আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যামানাকে গালি দেয়; অথচ আমিই যামানা। আমার হাতেই সকল ক্ষমতা; রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করি। [৬১৮১,৭৪৯১; মুসলিম ৪০/১, হাঃ ২২৪৬] (আ.প্র. ৪৪৬২, ই.ফা. ৪৪৬৪)

৬৫/৪৬/.অধ্যায়ঃ

পরিচ্ছেদ নাই।
(46) سُوْرَةُ حم الْأَحْقَافِ
সূরাহ (৪৬) : হা-মীম আল-আহক্বাফ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {تُفِيْضُوْنَ} تَقُوْلُوْنَ وَقَالَ بَعْضُهُمْ {أَثَرَةٍ} وَأُثْرَةٍ وَأَثَارَةٍ بَقِيَّةٌ مِنْ عِلْمٍ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {بِدْعًامِّنْالرُّسُلِ} لَسْتُ بِأَوَّلِ الرُّسُلِ وَقَالَ غَيْرُهُ {أَرَأَيْتُمْ} هَذِهِ الْأَلِفُ إِنَّمَا هِيَ تَوَعُّدٌ إِنْ صَحَّ مَا تَدَّعُوْنَ لَا يَسْتَحِقُّ أَنْ يُعْبَدَ وَلَيْسَ قَوْلُهُ أَرَأَيْتُمْ بِرُؤْيَةِ الْعَيْنِ إِنَّمَا هُوَ أَتَعْلَمُوْنَ أَبَلَغَكُمْ أَنَّ مَا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ خَلَقُوْا شَيْئًا.

মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
تُفِيْضُوْنَতোমরা বলছ বা বলবে। কোন কোন মুফাস্সির বলেছেন, أَثَرَةٍ এবং أُثْرَةٍوَأَثَارَةٍএর অর্থ ‘ইলমের অবশিষ্টাংশ। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন, بِدْعًا مِنْ الرُّسُلِ আমি তো প্রথম রাসূল নই। অন্য তাফসীরকারগণ বলেছেন, أَرَأَيْتُمْ এর الف অক্ষরটি استفهام تهديد এর জন্য এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের দাবী যদি সঠিক হয়, তাহলেও তাদের ‘ইবাদাত করার উপযুক্ত তারা নয়। أَرَأَيْتُمْ -এর অর্থ, চাক্ষুস দেখা নয়; বরং এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা কি জানতে যে, আল্লাহ্ ছাড়া তোমরা যাদের ‘ইবাদাত করছ, তারা কি কোন কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম?
{
وَالَّذِيْ قَالَ لِوَالِدَيْهِ أُفٍّ لَّكُمَآ أَتَعِدَانِنِيْٓ أَنْ أُخْرَجَ وَقَدْ خَلَتِ الْقُرُوْنُ مِنْ قَبْلِيْ ج وَهُمَا يَسْتَغِيْثَانِ اللهَ وَيْلَكَ اٰمِنْ - إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ ج فَيَقُوْلُ مَا هٰذَآ إِلَّآ أَسَاطِيْرُ الْأَوَّلِيْنَ}
‘‘আর যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতাকে বলেঃ ধিক্ তোমাদেরকে! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাও যে, আমি কবর থেকে পুনর্জীবিত হয়ে বহির্গত হব, অথচ আমার পূর্বে বহু জনগোষ্ঠী অতীত হয়েছে? তখন তার মাতা-পিতা আল্লাহর নিকটে ফরিয়াদ করে বলেঃ তোর সর্বনাশ হোক! ঈমান আন। আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলেঃ এটা তো অতীত কালের ভিত্তিহীন উপকথা ব্যতীত আর কিছু নয়।’’ (সূরাহ আল-আহক্বাফ ৪৬/১৭)

৪৮২৭

مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ عَنْ أَبِيْ بِشْرٍ عَنْ يُوْسُفَ بْنِ مَاهَكَ قَالَ كَانَ مَرْوَانُ عَلَى الْحِجَازِ اسْتَعْمَلَهُ مُعَاوِيَةُ فَخَطَبَ فَجَعَلَ يَذْكُرُ يَزِيْدَ بْنَ مُعَاوِيَةَ لِكَيْ يُبَايَعَ لَهُ بَعْدَ أَبِيْهِ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِيْ بَكْرٍ شَيْئًا فَقَالَ خُذُوْهُ فَدَخَلَ بَيْتَ عَائِشَةَ فَلَمْ يَقْدِرُوْا فَقَالَ مَرْوَانُ إِنَّ هَذَا الَّذِيْ أَنْزَلَ اللهُ فِيْهِ {وَالَّذِيْ قَالَ لِوَالِدَيْهِ أُفٍّ لَّكُمَآ أَتَعِدَانِنِيْ} فَقَالَتْ عَائِشَةُ مِنْ وَرَاءِ الْحِجَابِ مَا أَنْزَلَ اللهُ فِيْنَا شَيْئًا مِنَ الْقُرْآنِ إِلَّا أَنَّ اللهَ أَنْزَلَ عُذْرِي.
ইউসুফ ইব্‌নু মাহাক থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মারওয়ান ছিলেন হিজাযের গভর্নর। তাকে নিয়োগ করেছিলেন মু‘আবিয়াহ (রাঃ)। তিনি একদা খুতবা দিলেন এবং তাতে ইয়াযীদ ইব্‌নু মু‘আবিয়ার কথা বারবার বলতে লাগলেন, যেন তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তার বায়‘আত গ্রহণ করা হয়। এ সময় তাকে ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আবূ বাক্র কিছু কথা বললেন। মারওয়ান বললেন, তাঁকে পাকড়াও কর। তৎক্ষণাৎ তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে চলে গেলেন। তারা তাঁকে ধরতে পারল না। তারপর মারওয়ান বললেন, এ তো সেই লোক যার সম্বন্ধে আল্লাহ্ অবতীর্ণ করেছেন, “আর এমন লোক আছে যে, মাতাপিতাকে বলে, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে, তখন তার মাতাপিতা আল্লাহ্‌র নিকট ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমার জন্য। বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে এ তো অতীতকালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়।” (আ.প্র. ৪৪৬৩, ই.ফা. ৪৪৬৫)

৬৫/৪৬/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ
{فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًا مُّسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ لا قَالُوْا هٰذَا عَارِضٌ مُّمْطِرُنَا ط بَلْ هُوَ مَا اسْتَعْجَلْتُمْ بِهٰط رِيْحٌ فِيْهَا عَذَابٌ أَلِيْمٌ لا}
অতঃপর যখন তারা সে আযাবকে মেঘরাশিরূপে তাদের উপত্যকার দিকে অগ্রসর হতে দেখল তখন তারা বললঃ এ তো মেঘ, আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে। হূদ বললেনঃ না, বরং এটা তো তা, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলে। এ এক প্রচন্ড ঝড়, এতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরাহ আল-আহ্ক্বাফ ৪৬/২৪)
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {عَارِضٌ} السَّحَابُ.
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেছেন,
عَارِضٌ মেঘ।

৪৮২৮

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এভাবে কখনো হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর কন্ঠনালীর আলাজিভ দেখা যায়। তিনি মুচকি হাসতেন। [৬০৯২] (আ.প্র. ৪৪৬৪ প্রথমাংশ, ই.ফা. ৪৪৬৬ প্রথমাংশ)

৪৮২৯

قَالَتْ وَكَانَ إِذَا رَأَى غَيْمًا أَوْ رِيْحًا عُرِفَ فِيْ وَجْهِهِ قَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْغَيْمَ فَرِحُوْا رَجَاءَ أَنْ يَكُوْنَ فِيْهِ الْمَطَرُ وَأَرَاكَ إِذَا رَأَيْتَهُ عُرِفَ فِيْ وَجْهِكَ الْكَرَاهِيَةُ فَقَالَ يَا عَائِشَةُ مَا يُؤْمِنِّيْ أَنْ يَكُوْنَ فِيْهِ عَذَابٌ عُذِّبَ قَوْمٌ بِالرِّيْحِ وَقَدْ رَأَى قَوْمٌ الْعَذَابَ {فَقَالُوْا هَذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا}.
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখনই তিনি মেঘ অথবা ঝড়ো হাওয়া দেখতেন, তখনই তাঁর চেহারায় তা পরিলক্ষিত হত। তিনি বললেন, মানুষ যখন মেঘ দেখে তখন বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়। কিন্তু আপনি যখন মেঘ দেখেন, তখন আমি আপনার চেহারায় আতংকের ছাপ পাই। তিনি বললেন, হে ‘আয়িশাহ! এতে ‘আযাব না থাকার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। বাতাস দিয়েই তো এক কওমকে ‘আযাব দেয়া হয়েছে। সে কওম ‘আযাব দেখে বলেছিল, এ তো মেঘ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিবে। [৩২০৬] (আ.প্র. ৪৪৬৪, ই.ফা. ৪৪৬৬)

৬৫/৪৭/.অধ্যায়ঃ

‘‘এবং আত্মীয়ের বন্ধন ছিন্ন করবে।’’ (সূরাহ মুহাম্মাদ ৪৭/২২)
(47) سُوْرَةُ مُحَمَّدٍ
সূরাহ (৪৭) : মুহাম্মাদ
{
أَوْزَارَهَا} آثَامَهَا حَتَّى لَا يَبْقَى إِلَّا مُسْلِمٌ {عَرَّفَهَا} بَيَّنَهَا وَقَالَ مُجَاهِدٌ {مَوْلٰى} الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَلِيُّهُمْ فَإِذَا {عَزَمَ الْأَمْرُ} أَيْ جَدَّ الْأَمْرُ {فَلَا تَهِنُوْا} لَا تَضْعُفُوْا وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {أَضْغَانَهُمْ} حَسَدَهُمْ {اٰسِنٍ} مُتَغَيِّرٍ.
أَوْزَارَهَاতার অস্ত্র, যাতে মুসলিম ব্যতীত আর কেউ বাকী না থাকে। عَرَّفَهَاঅর্থ, বর্ণনা করে দিয়েছেন তার সম্বন্ধে। মুজাহিদ বলেন, مَوْلَى الَّذِيْنَاٰمَنُوْاঅর্থাৎ তাদের অভিভাবক। عَزَمَ الْأَمْرُঅর্থ, কোন বিষয়ের তথা জিহাদের সিদ্ধান্ত হলে। لَا تَهِنُوْاঅর্থাৎ তোমরা দুর্বল হয়ো না। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, أَضْغَانَهُمْতাদের হিংসা। اٰسِنٍঅর্থ, দূষিত হয়ে স্বাদ বদলে গেছে।

৪৮৩০

خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ قَالَ حَدَّثَنِيْ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِيْ مُزَرِّدٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ خَلَقَ اللهُ الْخَلْقَ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَامَتْ الرَّحِمُ فَأَخَذَتْ بِحَقْوِ الرَّحْمَنِ فَقَالَ لَهُ مَهْ قَالَتْ هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنَ الْقَطِيْعَةِ قَالَ أَلَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ قَالَتْ بَلَى يَا رَبِّ قَالَ فَذَاكِ قَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ اقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ {فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوْا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوْآ أَرْحَامَكُمْ}.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি নিস্ক্রান্ত হলে ‘রাহিম’ (রক্ত সম্পর্কে) দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন, থামো। সে বলল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী লোক থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ্ বললেন, যে তোমাকে সম্পর্কযুক্ত রাখে, আমিও তাকে সম্পর্কযুক্ত রাখব; আর যে তোমার হতে থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব এতে কি তুমি খুশী নও? সে বলল, নিশ্চয়ই, হে আমার প্রভু। তিনি বললেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হল। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, ইচ্ছে হলে তোমরা পড়, “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বাঁধন ছিন্ন করবে।” [৪৮৩১, ৪৮৩২, ৫৯৮৭, ৭৫০২; মুসলিম ৪৫/৬, হাঃ ২৫৫৪] (আ.প্র. ৪৪৬৫, ই.ফা. ৪৪৬৭)

৪৮৩১

إِبْرَاهِيْمُ بْنُ حَمْزَةَ حَدَّثَنَا حَاتِمٌ عَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ عَمِّيْ أَبُو الْحُبَابِ سَعِيْدُ بْنُ يَسَارٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ بِهَذَا ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ {فَهَلْ عَسَيْتُمْ}.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(এরপর তিনি বলেন) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ইচ্ছে হলে তোমরা পড় (ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বাঁধন ছিন্ন করবে।) [৪৮৩০] (আ.প্র. ৪৪৬৬, ই.ফা. ৪৪৬৮)

৪৮৩২

بِشْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي الْمُزَرَّدِ بِهَذَا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَاقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ {فَهَلْ عَسَيْتُمْ}. آسِنٍ مُتَغَيِّرٍ.
মু‘আবিয়াহ ইব্‌নু মুর্যারাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(আবূ হুরাইরাহ বলেন) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ইচ্ছে হলে তোমরা পড়, (ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে)। অর্থাৎ آسِنٍঅর্থ পরিবর্তনশীল বা ময়লাযুক্ত। [৪৮৩০] (আ.প্র. ৪৪৬৭, ই.ফা. ৪৪৬৯)

৬৫/৪৮/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয় আমি আপনাকে এক প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি (সূরাহ আল-ফাত্হ ৪৮/১)
(48) سُوْرَةُ الْفَتْحِ
সূরাহ (৪৮) : আল-ফাত্হ
قَالَ مُجَاهِدٌ {بُوْرًا} هَالِكِيْنَ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ} السَّحْنَةُ وَقَالَ مَنْصُوْرٌ عَنْ مُجَاهِدٍ التَّوَاضُعُ {شَطْأَهُ} فِرَاخَهُ فَاسْتَغْلَظَ غَلُظَ {سُوْقِهِ} السَّاقُ حَامِلَةُ الشَّجَرَةِ وَيُقَالُ دَائِرَةُ السَّوْءِ كَقَوْلِكَ رَجُلُ السَّوْءِ وَدَائِرَةُ السُّوْءِ الْعَذَابُ تُعَزِّرُوْهُ تَنْصُرُوْهُ شَطْأَهُ شَطْءُ السُّنْبُلِ تُنْبِتُ الْحَبَّةُ عَشْرًا أَوْ ثَمَانِيًا وَسَبْعًا فَيَقْوَى بَعْضُهُ بِبَعْضٍ فَذَاكَ قَوْلُهُ تَعَالَى فَآزَرَهُ قَوَّاهُ وَلَوْ كَانَتْ وَاحِدَةً لَمْ تَقُمْ عَلَى سَاقٍ وَهُوَ مَثَلٌ ضَرَبَهُ اللهُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ خَرَجَ وَحْدَهُ ثُمَّ قَوَّاهُ بِأَصْحَابِهِ كَمَا قَوَّى الْحَبَّةَ بِمَا يُنْبِتُ مِنْهَا.
মুজাহিদ বলেন,
سِيْمَاهُمْ فِيْ وُجُوْهِهِمْ তাদের মুখমন্ডলের নিদর্শন। মানসূর মুজাহিদের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এর অর্থ হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা। شَطْأَهُ অর্থ, কচি পাতা। فَاسْتَغْلَظَ পুষ্ট হয়। سُوْقِهِ ঐ কান্ড যা গাছকে দাঁড় করিয়ে রাখে। دَآئِرَةُالسَّوْءِ শব্দটি এখানে رَجُلُالسَّوْءِ-এর মত ব্যবহৃত হয়েছে। دَآئِرَةُالسُّوْءِ শাস্তি। تُعَزِّرُوْهُ তাঁরা তাঁকে সাহায্য করে। شَطْأَهُ কচি পাতা, একটি বীজ থেকে দশ, আট এবং সাতটি করে বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। আল্লাহর বাণীঃ فَاٰزَرَهُ (এরপর এটা শক্তিশালী হয়) এর মধ্যে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে। অঙ্কুর যদি একটি হয় তাহলে তা কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আল্লাহ্ তা‘আলা এ উপমাটি নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে ব্যবহার করেছেন, কেননা, প্রথমত তিনি একাই দাওয়াত নিয়ে উত্থিত হয়েছেন, তারপর সহাবীদের দ্বারা (আল্লাহ্) তাকে শক্তিশালী করেছেন যেমন বীজ থেকে উদগত অঙ্কুর দ্বারা বীজ শক্তিশালী হয়।

৪৮৩৩

عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ عَنْ مَالِكٍ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَسِيْرُ فِيْ بَعْضِ أَسْفَارِهِ وَعُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ يَسِيْرُ مَعَهُ لَيْلًا فَسَأَلَهُ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَنْ شَيْءٍ فَلَمْ يُجِبْهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ سَأَلَهُ فَلَمْ يُجِبْهُ ثُمَّ سَأَلَهُ فَلَمْ يُجِبْهُ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ ثَكِلَتْ أُمُّ عُمَرَ نَزَرْتَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثَلَاثَ مَرَّاتٍ كُلَّ ذَلِكَ لَا يُجِيْبُكَ قَالَ عُمَرُ فَحَرَّكْتُ بَعِيْرِيْ ثُمَّ تَقَدَّمْتُ أَمَامَ النَّاسِ وَخَشِيْتُ أَنْ يُنْزَلَ فِيَّ قُرْآنٌ فَمَا نَشِبْتُ أَنْ سَمِعْتُ صَارِخًا يَصْرُخُ بِيْ فَقُلْتُ لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ يَكُوْنَ نَزَلَ فِيَّ قُرْآنٌ فَجِئْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ لَقَدْ أُنْزِلَتْ عَلَيَّ اللَّيْلَةَ سُوْرَةٌ لَهِيَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ ثُمَّ قَرَأَ {إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنًا}.
আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাতের বেলা কোন এক সফরে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ)-ও চলছিলেন। ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলেন, কিন্তু রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে কোন উত্তর দিলেন না। তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তারপর তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তখন ‘উমার (রাঃ) (নিজেকে) বললেন, উমরের মা হারিয়ে যাক। তুমি তিনবার রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলে, কিন্তু একবারও তিনি তোমার জবাব দিলেন না। ‘উমার (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আমার উটটি দ্রুতবেগে চালিয়ে লোকদের আগে চলে গেলাম এবং আমার ব্যাপারে কুরআন নাযিলের আশংকা করলাম। অধিকক্ষণ হয়নি, তখন শুনলাম এক আহ্বানকারী আমাকে ডাকছে। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি তো আশংকা করছিলাম যে, আমার ব্যাপারে কোন আয়াত অবতীর্ণ হতে পারে। তারপর আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সূরাহ নাযিল হয়েছে, যা আমার কাছে, এই পৃথিবী, যার ওপর সূর্য উদিত হয়,তা থেকেও অধিক প্রিয়। তারপর তিনি পাঠ করলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়। [৪১৭৭] (আ.প্র. ৪৪৬৮, ই.ফা. ৪৪৭০)

৪৮৩৪

مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ سَمِعْتُ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ {إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِيْنًا} قَالَ الْحُدَيْبِيَةُ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا “এর দ্বারা হুদাইবিয়াহর সন্ধি বোঝানো হয়েছে। [৪১৭২] (আ.প্র. , ই.ফা. ৪৪৭১)

৪৮৩৫

مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ قُرَّةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ قَرَأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ سُوْرَةَ الْفَتْحِ فَرَجَّعَ فِيْهَا قَالَ مُعَاوِيَةُ لَوْ شِئْتُ أَنْ أَحْكِيَ لَكُمْ قِرَاءَةَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَفَعَلْتُ.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মুগাফ্ফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন সূরাহ ফাতহ্ সমধুর কণ্ঠে পাঠ করেন। মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) বলেন, আমি ইচ্ছে করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কিরাআত তোমাদের নকল করে শোনাতে পারি। [৪২৮১] (আ.প্র. ৪৪৬৯, ই.ফা. ৪৪৭২)

৬৫/৪৮/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ
{لِّيَغْفِرَ لَكَ اللهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْـ.ـبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهعَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيْمًا لا}.
যেন আল্লাহ ক্ষমা করে দেন আপনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ এবং পূর্ণ করেন আপনার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ, আর আপনাকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন। (সূরাহ আল-ফাত্হ ৪৮/২)

৪৮৩৬

صَدَقَةُ بْنُ الْفَضْلِ أَخْبَرَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ حَدَّثَنَا زِيَادٌ هُوَ ابْنُ عِلَاقَةَ أَنَّهُ سَمِعَ الْمُغِيْرَةَ يَقُوْلُ قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى تَوَرَّمَتْ قَدَمَاهُ فَقِيْلَ لَهُ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَفَلَا أَكُوْنُ عَبْدًا شَكُوْرًا.
মুগীরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এত অধিক সলাত আদায় করতেন যে, তাঁর পদযুগল ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হলো, আল্লাহ্ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? [১১৩০] (আ.প্র. ৪৪৭০, ই.ফা. ৪৪৭৩)

৪৮৩৭

الْحَسَنُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيْزِ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يَحْيَى أَخْبَرَنَا حَيْوَةُ عَنْ أَبِي الْأَسْوَدِ سَمِعَ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ نَبِيَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُوْمُ مِنْ اللَّيْلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ فَقَالَتْ عَائِشَةُ لِمَ تَصْنَعُ هَذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَفَلَا أُحِبُّ أَنْ أَكُوْنَ عَبْدًا شَكُوْرًا فَلَمَّا كَثُرَ لَحْمُهُ صَلَّى جَالِسًا فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ قَامَ فَقَرَأَ ثُمَّ رَكَعَ.
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাতে এত অধিক সলাত আদায় করতেন যে, তাঁর পদযুগল ফেটে যেতো। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? তবু আপনি কেন তা করছেন? তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহ্‌র কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া পছন্দ করব না? তাঁর মেদ বর্ধিত হলে তিনি বসে সলাত আদায় করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছে করতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে কিরাআত পড়তেন, তারপর রুকূ‘ করতেন। [১১১৮] (আ.প্র. ৪৪৭১, ই.ফা. ৪৪৭৪)

৬৫/৪৮/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আমি তো আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্য প্রদানকারী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। (সূরাহ আল-ফাত্হ ৪৮/৮)

৪৮৩৮

عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ أَبِيْ سَلَمَةَ عَنْ هِلَالِ بْنِ أَبِيْ هِلَالٍ عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ الَّتِيْ فِي الْقُرْآنِ {يٰٓأَيُّهَا النَّبِيُّإِنَّآ أَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا لا} قَالَ فِي التَّوْرَاةِ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَحِرْزًا لِلْأُمِّيِّيْنَ أَنْتَ عَبْدِيْ وَرَسُوْلِيْ سَمَّيْتُكَ الْمُتَوَكِّلَ لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيْظٍ وَلَا سَخَّابٍ بِالأَسْوَاقِ وَلَا يَدْفَعُ السَّيِّئَةَ بِالسَّيِّئَةِ وَلَكِنْ يَعْفُوْ وَيَصْفَحُ وَلَنْ يَقْبِضَهُ اللهُ حَتَّى يُقِيْمَ بِهِ الْمِلَّةَ الْعَوْجَاءَ بِأَنْ يَقُوْلُوْا لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ فَيَفْتَحَ بِهَا أَعْيُنًا عُمْيًا وَآذَانًا صُمًّا وَقُلُوْبًا غُلْفًا
‘আম্‌র ইব্‌নু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কুরআনের এ আয়াত, “আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে” তাওরাতে আল্লাহ্ এভাবে বলেছেন, হে নাবী, আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও উম্মী লোকদের মুক্তি দাতারূপে। তুমি আমার বান্দা ও রসূল। আমি তোমার নাম রেখেছি নির্ভরকারী যে রূঢ় ও কঠোরচিত্ত নয়, বাজারে শোরগোলকারী নয় এবং মন্দ মন্দ দ্বারা প্রতিহতকারীও নয়; বরং তিনি ক্ষমা করবেন এবং উপেক্ষা করবেন। বক্র জাতিকে সোজা না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তাঁর জান কবয করবেন না। তা এভাবে যে, তারা বলবে, আল্লাহ্ ব্যতীত ইলাহ নেই। ফলে খুলে যাবে অন্ধ চোখ, বধির কান এবং পর্দায় ঢাকা অন্তরসমূহ। [২১২৫] (আ.প্র. ৪৪৭২, ই.ফা. ৪৪৭৫)

৬৫/৪৮/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তিনি মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন। (সূরাহ আল-ফাত্হ ৪৮/৪)

৪৮৩৯

عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوْسَى عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ وَفَرَسٌ لَهُ مَرْبُوْطٌ فِي الدَّارِ فَجَعَلَ يَنْفِرُ فَخَرَجَ الرَّجُلُ فَنَظَرَ فَلَمْ يَرَ شَيْئًا وَجَعَلَ يَنْفِرُ فَلَمَّا أَصْبَحَ ذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ السَّكِيْنَةُ تَنَزَّلَتْ بِالْقُرْآنِ.
বারাআ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জনৈক সহাবী কিরাআত করছিলেন। তাঁর একটি ঘোড়া ঘরে বাঁধা ছিল। হঠাৎ তা পালাতে লাগলো। সে ব্যক্তি বেরিয়ে এসে দৃষ্টিপাত করলেন; কিন্তু কিছুই দেখতে পেলেন না। ঘোড়াটি পালিয়েই যাচ্ছিল। যখন ভোর হলো তখন তিনি ঘটনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ব্যক্ত করলে তিনি বললেন, এ হলো সেই প্রশান্তি, যা কুরআন তিলাওয়াত করার সময় অবতীর্ণ হয়ে থাকে। [৩৬১৪] (আ.প্র. ৪৪৭৩, ই.ফা. ৪৪৭৬)
[১] কুরআন তিলাওয়াতের কারণে মালায়িকাহ নাযিল হয়েছিল যাঁদের দেখে ঘোড়া পালাচ্ছিল।

৬৫/৪৮/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ যখন তারা বৃক্ষের নিচে আপনার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করল। (সূরাহ আল-ফাত্হ ৪৮/১৮)

৪৮৪০

قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ جَابِرٍ قَالَ كُنَّا يَوْمَ الْحُدَيْبِيَةِ أَلْفًا وَأَرْبَعَ مِائَةٍ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুদাইবিয়াহর (সন্ধির) দিন আমরা এক হাজার চারশ’ লোক ছিলাম। [৩৫৭৬] (আ.প্র. ৪৪৭৪, ই.ফা. ৪৪৭৭)

৪৮৪১

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا شَبَابَةُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ سَمِعْتُ عُقْبَةَ بْنَ صُهْبَانَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ الْمُزَنِيِّ إِنِّيْ مِمَّنْ شَهِدَ الشَّجَرَةَ نَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْخَذْفِ
‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাগাফ্ফাল মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(যিনি সন্ধির সময় উপস্থিত ছিলেন) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই আঙ্গুলের মাঝে কাঁকর নিয়ে নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। [৫৪৭৯, ৬২২০] (আ.প্র. ৪৪৭৫, ই.ফা. ৪৪৭৮)

৪৮৪২

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ صُهْبَانَ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ مُغَفَّلٍ الْمُزَنِيَّ فِي الْبَوْلِ فِي الْمُغْتَسَلِ
‘উক্বাহ ইব্‌নু সুহ্বান (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
আমি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মুগাফ্ফাল মুযানী (রাঃ)-কে গোসলখানায় প্রস্রাব করা সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুনেছি। (আ.প্র. ৪৪৭৫, ই.ফা. ৪৪৭৮)

৪৮৪৩

مُحَمَّدُ بْنُ الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ خَالِدٍ عَنْ أَبِيْ قِلَابَةَ عَنْ ثَابِتِ بْنِ الضَّحَّاكِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ الشَّجَرَةِ.
সাবিত ইব্‌নু দাহ্হাক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনিও বৃক্ষতলে বায়আতকারী সহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। [১৩৬৩] (আ.প্র. ৪৪৭৬, ই.ফা. ৪৪৭৯)

৪৮৪৪

أَحْمَدُ بْنُ إِسْحَاقَ السُّلَمِيُّ حَدَّثَنَا يَعْلَى حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ سِيَاهٍ عَنْ حَبِيْبِ بْنِ أَبِيْ ثَابِتٍ قَالَ أَتَيْتُ أَبَا وَائِلٍ أَسْأَلُهُ فَقَالَ كُنَّا بِصِفِّيْنَ فَقَالَ رَجُلٌ أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يُدْعَوْنَ إِلَى كِتَابِ اللهِ فَقَالَ عَلِيٌّ نَعَمْ فَقَالَ سَهْلُ بْنُ حُنَيْفٍ اتَّهِمُوْا أَنْفُسَكُمْ فَلَقَدْ رَأَيْتُنَا يَوْمَ الْحُدَيْبِيَةِ يَعْنِي الصُّلْحَ الَّذِيْ كَانَ بَيْنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَالْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ نَرَى قِتَالًا لَقَاتَلْنَا فَجَاءَ عُمَرُ فَقَالَ أَلَسْنَا عَلَى الْحَقِّ وَهُمْ عَلَى الْبَاطِلِ أَلَيْسَ قَتْلَانَا فِي الْجَنَّةِ وَقَتْلَاهُمْ فِي النَّارِ قَالَ بَلَى قَالَ فَفِيْمَ نُعْطِي الدَّنِيَّةَ فِيْ دِيْنِنَا وَنَرْجِعُ وَلَمَّا يَحْكُمِ اللهُ بَيْنَنَا فَقَالَ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ إِنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ وَلَنْ يُضَيِّعَنِي اللهُ أَبَدًا فَرَجَعَ مُتَغَيِّظًا فَلَمْ يَصْبِرْ حَتَّى جَاءَ أَبَا بَكْرٍ فَقَالَ يَا أَبَا بَكْرٍ أَلَسْنَا عَلَى الْحَقِّ وَهُمْ عَلَى الْبَاطِلِ قَالَ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ إِنَّهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَلَنْ يُضَيِّعَهُ اللهُ أَبَدًا فَنَزَلَتْ سُوْرَةُ الْفَتْحِ.
হাবীব ইব্‌নু আবূ সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়ায়িল (রাঃ)-এর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য এলে, তিনি বললেন, আমরা সিফ্ফীনের ময়দানে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বললেন, তোমরা কি সে লোকদেরকে দেখতে পাচ্ছ না, যাদের আল্লাহ্‌র কিতাবের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে? ‘আলী (রাঃ) বললেন, হাঁ। তখন সাহ্ল ইব্‌নু হুনায়ফ (রাঃ) বললেন, প্রথমে তোমরা নিজেদের খবর নাও। হুদায়বিয়াহ্র দিন অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং মাক্কাহ্র মুশরিকদের মধ্যে যে সন্ধি হয়েছিল, আমরা সেটা দেখেছি। যদি আমরা একে যুদ্ধ মনে করতাম, তাহলে অবশ্যই আমরা যুদ্ধ করতাম। সেদিন ‘উমার (রাঃ) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে) এসে বলেছিলেন, আমরা কি হাকের উপর নই, আর তারা কি বাতিলের উপর নয়? আমাদের নিহত ব্যক্তিরা জান্নাতে, আর তাদের নিহত ব্যক্তিরা কি জাহান্নামে যাবে না? তিনি বললেন, হাঁ। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, তাহলে কেন আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অপমানজনক শর্তারোপ করা হবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে এ সন্ধির ব্যাপারে হুকুম করেননি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! আমি আল্লাহ্‌র রসূল। আল্লাহ্ কখনো আমাকে ধ্বংস করবেন না। ‘উমার রাগে মনে দুঃখ নিয়ে ফিরে গেলেন। তিনি ধৈর্য ধরতে পারলেন না। তারপর তিনি আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, হে আবূ বাক্র! আমরা কি হাকের উপর নই এবং তারা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহ্‌র রসূল। আল্লাহ্ কক্ষণো তাঁকে ধ্বংস করবেন না। এ সময় সূরাহ ফাতহ্ অবতীর্ণ হয়। [৩১৮১] (আ.প্র. ৪৪৭৭, ই.ফা. ৪৪৮০)

৬৫/৪৯/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা উঁচু করো না তোমাদের কণ্ঠস্বর নাবীর কণ্ঠস্বরের উপর। (সূরাহ হুজুরাত ৪৯/২)
(49) سُوْرَةُ الْحُجُرَاتِ
সূরাহ (৪৯) : হুজুরাত
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {لَا تُقَدِّمُوْا} لَا تَفْتَاتُوْا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ عَلَى لِسَانِهِ {امْتَحَنَ} أَخْلَصَ وَلَا {تَنَابَزُوْا} يُدْعَى بِالْكُفْرِ بَعْدَ الإِسْلَامِ {يَلِتْكُمْ} يَنْقُصْكُمْ أَلَتْنَا نَقَصْنَا.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
لَاتُقَدِّمُوْا অর্থ, রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন বিষয় তোমরা জিজ্ঞেস করবে না যতক্ষণ না, আল্লাহ্ তাঁর যবানে এর ফয়সালা জানিয়ে দেন। امْتَحَنَ মানে পরিশুদ্ধ করেছেন। لَا تَنَابَزُوْا ইসলাম গ্রহণের পর অপরকে যেন কুফ্রীর প্রতি না ডাকা হয়। يَلِتْكُمْ মানে হ্রাস করা হবে তোমাদের أَلَتْنَا মানে হ্রাস করেছি আমি।
{
تَشْعُرُوْنَ} تَعْلَمُوْنَ وَمِنْهُ الشَّاعِرُ.
تَشْعُرُوْنَ মানে তোমরা জ্ঞাত আছ। الشَّاعِرُ শব্দটি এ ধাতু থেকেই নির্গত হয়েছে।

৪৮৪৫

يَسَرَةُ بْنُ صَفْوَانَ بْنِ جَمِيْلٍ اللَّخْمِيُّ حَدَّثَنَا نَافِعُ بْنُ عُمَرَ عَنْ ابْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ قَالَ كَادَ الْخَيِّرَانِ أَنْ يَهْلِكَا أَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا رَفَعَا أَصْوَاتَهُمَا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ قَدِمَ عَلَيْهِ رَكْبُ بَنِيْ تَمِيْمٍ فَأَشَارَ أَحَدُهُمَا بِالأَقْرَعِ بْنِ حَابِسٍ أَخِيْ بَنِيْ مُجَاشِعٍ وَأَشَارَ الْآخَرُ بِرَجُلٍ آخَرَ قَالَ نَافِعٌ لَا أَحْفَظُ اسْمَهُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ لِعُمَرَ مَا أَرَدْتَ إِلَّا خِلَافِيْ قَالَ مَا أَرَدْتُ خِلَافَكَ فَارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُهُمَا فِيْ ذَلِكَ فَأَنْزَلَ اللهُ {يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَرْفَعُوْآ أَصْوَاتَكُمْ} الْآيَةَ قَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ فَمَا كَانَ عُمَرُ يُسْمِعُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعْدَ هَذِهِ الْآيَةِ حَتَّى يَسْتَفْهِمَهُ وَلَمْ يَذْكُرْ ذَلِكَ عَنْ أَبِيْهِ يَعْنِيْ أَبَا بَكْرٍ.
ইব্‌নু আবূ মুলায়কাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উত্তম দু’ ব্যক্তি- আবূ বাক্র ও ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে কণ্ঠস্বর উঁচু করে ধ্বংস হওয়ার দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়েছিলেন। যখন বানী তামীম গোত্রের একদল লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসেছিল। তাদের একজন বানী মাজাশে গোত্রের আকরা ইব্‌নু হাবিসকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করল এবং অপরজন অন্য জনের নাম প্রস্তাব করল। নাফি বলেন, এ লোকটির নাম আমার মনে নেই। তখন আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) ‘উমার (রাঃ)-কে বললেন, আপনার ইচ্ছে হলো কেবল আমার বিরোধিতা করা। তিনি বললেন, না, আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছে আমার নেই। এ ব্যাপারটি নিয়ে তাঁদের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা নাবীর গলার আওয়াজের উপর নিজেদের গলার আওয়াজ উঁচু করবে না”.....শেষ পর্যন্ত।
ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) বলেন, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর ‘উমার (রাঃ) এ তো আস্তে কথা বলতেন যে, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা শুনতে পেতেন না। তিনি আবূ বাক্র (রাঃ) সম্পর্কে এমন কথা বর্ণনা করেননি। [৪৩৬৭] (আ.প্র. ৪৪৭৮, ই.ফা. ৪৪৮১)

৪৮৪৬

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا أَزْهَرُ بْنُ سَعْدٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ عَوْنٍ قَالَ أَنْبَأَنِيْ مُوْسَى بْنُ أَنَسٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم افْتَقَدَ ثَابِتَ بْنَ قَيْسٍ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَنَا أَعْلَمُ لَكَ عِلْمَهُ فَأَتَاهُ فَوَجَدَهُ جَالِسًا فِيْ بَيْتِهِ مُنَكِّسًا رَأْسَهُ فَقَالَ لَهُ مَا شَأْنُكَ فَقَالَ شَرٌّ كَانَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَأَتَى الرَّجُلُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ قَالَ كَذَا وَكَذَا فَقَالَ مُوْسَى فَرَجَعَ إِلَيْهِ الْمَرَّةَ الْآخِرَةَ بِبِشَارَةٍ عَظِيْمَةٍ فَقَالَ اذْهَبْ إِلَيْهِ فَقُلْ لَهُ إِنَّكَ لَسْتَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَلَكِنَّكَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ.
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাবিত ইব্‌নু কায়স (রাঃ)-কে খুঁজে পেলেন না। একজন সহাবী বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি আপনার কাছে তাঁর সংবাদ নিয়ে আসছি। তারপর লোকটি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন যে, তিনি তাঁর ঘরে মাথা নীচু করে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কী অবস্থা? তিনি বললেন, খারাপ। কারণ এই (অধম) তার আওয়াজ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আওয়াজের চেয়ে উঁচু করে কথা বলত। ফলে, তার ‘আমাল বরবাদ হয়ে গেছে এবং সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তারপর লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে এসে খবর দিলেন যে, তিনি এমন এমন কথা বলছেন। মূসা বলেন, এরপর লোকটি এক মহাসুসংবাদ নিয়ে তাঁর কাছে ফিরে গেলেন (এবং বললেন) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বলেছেন, তুমি যাও এবং তাকে বল, তুমি জাহান্নামী নও, বরং তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত। [৩৬১৩] (আ.প্র. ৪৪৭৮, ই.ফা. ৪৪৮২)

৬৫/৪৯/.অধ্যায়ঃ

‘‘যারা ঘরের পেছন থেকে আপনাকে চিৎকার করে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ।’’ (সূরাহ আল-হুজুরাত ৪৯/৪)

৪৮৪৭

الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ أَخْبَرَنِي ابْنُ أَبِيْ مُلَيْكَةَ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ أَخْبَرَهُمْ أَنَّهُ قَدِمَ رَكْبٌ مِنْ بَنِيْ تَمِيْمٍ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ أَمِّرْ الْقَعْقَاعَ بْنَ مَعْبَدٍ وَقَالَ عُمَرُ بَلْ أَمِّرْ الْأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ مَا أَرَدْتَ إِلَى أَوْ إِلَّا خِلَافِيْ فَقَالَ عُمَرُ مَا أَرَدْتُ خِلَافَكَ فَتَمَارَيَا حَتَّى ارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُهُمَا فَنَزَلَ فِيْ ذَلِكَ {يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيْ اللهِ وَرَسُوْلِهٰ}حَتَّى انْقَضَتْ الآيَةُ.
ইব্‌নু আবূ মুলাইকাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, “আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) তাদেরকে জানিয়েছেন যে, একবার বানী তামীম গোত্রের একদল লোক সাওয়ার হয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসলেন। আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, কা’কা ইব্‌নু মাবাদ (রাঃ)-কে ‘আমীর বানানো হোক এবং ‘উমার (রাঃ) বললেন, আকরা ইব্‌নু হাবিস (রাঃ)-কে আমীর নিয়োগ করা হোক। তখন আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, আপনার ইচ্ছে হলো কেবল আমার বিরোধিতা করা। উত্তরে ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছে করিনি। এ নিয়ে তাঁরা পরস্পর তর্ক-বিতর্ক করতে লাগলেন, এক পর্যায়ে তাদের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। এ উপলক্ষে আল্লাহ্ অবতীর্ণ করলেন, “হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সমক্ষে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না.....আয়াত শেষ। [৪৩৬৭] (আ.প্র. ৪৪৮০, ই.ফা. ৪৪৮৩)

৬৫/৪৯/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ যদি তারা ধৈর্যধারণ করত তাদের কাছে আপনার বের হয়ে আসা পর্যন্ত, তবে তা হত তাদের জন্যে উত্তম। আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরাহ আল-হুজুরাত ৪৯/৫)

৬৫/৫০/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ সে বলবে, আরও কিছু আছে কি? (সূরাহ ক্বাফ ৫০/৩০)
(50) سُوْرَةُ ق
সূরাহ (৫০) : ক্বাফ
{
رَجْعٌمبَعِيْدٌ} رَدٌّ {فُرُوْجٍ} فُتُوْقٍ وَاحِدُهَا فَرْجٌ {مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ} وَرِيْدَاهُ فِيْ حَلْقِهِ وَالْحَبْلُ حَبْلُ الْعَاتِقِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {مَا تَنْقُصُ الْأَرْضُ مِنْهُمْ} مِنْ عِظَامِهِمْ {تَبْصِرَةً} بَصِيْرَةً {حَبَّ الْحَصِيْدِ} الْحِنْطَةُ {بَاسِقَاتٍ} الطِّوَالُ {أَفَعَيِيْنَا} أَفَأَعْيَا عَلَيْنَا حِيْنَ أَنْشَأَكُمْ وَأَنْشَأَ خَلْقَكُمْ {وَقَالَ قَرِيْنُه”} الشَّيْطَانُ الَّذِيْ قُيِّضَ لَهُ {فَنَقَّبُوْا} ضَرَبُوْا {أَوِ الْقَى السَّمْعَ} لَا يُحَدِّثُ نَفْسَهُ بِغَيْرِهِ {حِيْنَ أنْشَأَكُمْ} وَأَنْشَأَ خَلْقَكُمْ {رَقِيْبٌ عَتِيْدٌ} رَصَدٌ {سَآئِقٌ وَشَهِيْدٌ} الْمَلَكَانِ كَاتِبٌ وَشَهِيْدٌ {شَهِيْدٌ} شَاهِدٌ بِالْغَيْبِ مِنْ {لُغُوْبٍ} النَّصَبُ وَقَالَ غَيْرُهُ نَضِيْدٌ الْكُفُرَّى مَا دَامَ فِيْ أَكْمَامِهِ وَمَعْنَاهُ مَنْضُوْدٌ بَعْضُهُ عَلَى بَعْضٍ فَإِذَا خَرَجَ مِنْ أَكْمَامِهِ فَلَيْسَ بِنَضِيْدٍ وَإِدْبَارِ النُّجُوْمِ وَأَدْبَارِ السُّجُوْدِ كَانَ عَاصِمٌ يَفْتَحُ الَّتِيْ فِيْ ق وَيَكْسِرُ الَّتِيْ فِي الطُّوْرِ وَيُكْسَرَانِ جَمِيْعًا وَيُنْصَبَانِ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {يَوْمَالْخُرُوْجِ} يَوْمَ يَخْرُجُوْنَ إِلَى الْبَعْثِ مِنَ الْقُبُوْرِ.
رَجْعٌমানে প্রত্যাবর্তন। فُرُوْجٍমানে ফাটল। এর একবচন হলো وَرِيْدٌ فِيْ حَلْقِهٰঘাড়ের রগ। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, مَا تَنْقُصُ الْأَرْضُদ্বারা তাদের ঐ সমস্ত হাড্ডিকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলোকে মৃত্তিকা ক্ষয় করে। تَبْصِرَةًজ্ঞানস্বরূপ। حَبَّ الْحَصِيْدِগম। بَاسِقَاتٍসমুন্নত ও লম্বা। أَفَعَيِيْنَاআমাদের জন্য কি ক্লান্তিকর ছিল? وَقَالَ قَرِيْنُهচঐ শয়তান যা তার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে। فَنَقَّبُوْاতারা ভ্রমণ করেছে। أَوِ الْقَى السَّمْعَঅর্থ, যে কুরআন শ্রবণ করে নিবিষ্ট চিত্তে, এ ব্যতীত অন্য কোন দিকে তার মনোযোগ নেই। رَقِيْبٌ عَتِيْدٌমানে প্রহরী। سَآئِقٌ وَشَهِيْدٌদু’জন মালাক- একজন লেখক এবং অন্যজন সাক্ষী। شَهِيْدٌ অন্তরের অন্তস্থল থেকে সাক্ষ্যদাতা ব্যক্তিকে شَهِيْدٌবলা হয়। لُغُوْبٍ ক্লান্তি। মুজাহিদ (রহ.) ব্যতীত অন্য মুফাসসিরগণ বলেছেন, نَضِيْدٌ ফুলের কলি যা এখনো ফুটেনি। এখানে শব্দটি ভাজ করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রস্ফুটিত ফুলের কলিকে نَضِيْدٌ বলা হয় না। কারী আসিম (রহ.) সূরাহ ‘কাফ’-এ বর্ণিত إدْبَارِ السُّجُوْدِ-এর হামযার মধ্যে যবর দেন এবং সূরাহ তূর-এ উল্লিখিত إِدْبَارِالنُّجُوْمِ এর হামযার মধ্যে যের দেন। তবে উভয় স্থানে হামযাতে যেরও দেয়া যায় অথবা যবরও দেয়া যায়। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, يَوْمَ الْخُرُوْجِ কবর থেকে বের হওয়ার দিন।

৪৮৪৮

عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي الْأَسْوَدِ حَدَّثَنَا حَرَمِيُّ بْنُ عُمَارَةَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ يُلْقَى فِي النَّارِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ حَتَّى يَضَعَ قَدَمَهُ فَتَقُوْلُ قَطْ قَطْ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হলে জাহান্নাম বলবে, আরো আছে কি? শেষে আল্লাহ্ তাঁর পা সেখানে রাখবেন, তখন সে বলবে, আর না, আর না। [৬৬৬১, ৭৩৮৪] (আ.প্র. ৪৪৮১, ই.ফা. ৪৪৮৪)

৪৮৪৯

مُحَمَّدُ بْنُ مُوْسَى الْقَطَّانُ حَدَّثَنَا أَبُوْ سُفْيَانَ الْحِمْيَرِيُّ سَعِيْدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ مَهْدِيٍّ حَدَّثَنَا عَوْفٌ عَنْ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَفَعَهُ وَأَكْثَرُ مَا كَانَ يُوْقِفُهُ أَبُوْ سُفْيَانَ يُقَالُ لِجَهَنَّمَ هَلْ امْتَلَأْتِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ فَيَضَعُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَدَمَهُ عَلَيْهَا فَتَقُوْلُ قَطْ قَطْ.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তবে আবূ সুফ্ইয়ান এ হাদীসটিকে অধিকাংশ সময় মওকূফ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জাহান্নামকে বলা হবে, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? জাহান্নাম বলবে, আরো আছে কি? তখন আল্লাহ্ রব্বুল ‘আলামীন নিজ পা তাতে রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, আর নয়, আর নয়। [১৪৪৯, ৪৮৫০] (আ.প্র. ৪৪৮২, ই.ফা. ৪৪৮৫)

৪৮৫০

عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ هَمَّامٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم تَحَاجَّتْ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتْ النَّارُ أُوْثِرْتُ بِالْمُتَكَبِّرِيْنَ وَالْمُتَجَبِّرِيْنَ وَقَالَتْ الْجَنَّةُ مَا لِيْ لَا يَدْخُلُنِيْ إِلَّا ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لِلْجَنَّةِ أَنْتِ رَحْمَتِيْ أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِيْ وَقَالَ لِلنَّارِ إِنَّمَا أَنْتِ عَذَابِيْ أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِيْ وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا مِلْؤُهَا فَأَمَّا النَّارُ فَلَا تَمْتَلِئُ حَتَّى يَضَعَ رِجْلَهُ فَتَقُوْلُ قَطْ قَطْ قَطْ فَهُنَالِكَ تَمْتَلِئُ وَيُزْوَى بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ وَلَا يَظْلِمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ خَلْقِهِ أَحَدًا وَأَمَّا الْجَنَّةُ فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُنْشِئُ لَهَا خَلْقًا.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্ক করে। জাহান্নাম বলে দাম্ভিক ও পরাক্রমশালীদের দ্বারা আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলে, আমার কী হলো? আমাতে কেবল মাত্র দুর্বল এবং নিরীহ ব্যক্তিরাই প্রবেশ করছে। তখন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা জান্নাতকে বলবেন, তুমি আমার রহমাত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে আমি অনুগ্রহ করব। আর তিনি জাহান্নামকে বলবেন, তুমি হলে আযাব। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেব। জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পূর্ণতা। তবে জাহান্নাম পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না তিনি তাঁর পা তাতে রাখবেন। তখন সে বলবে, বাস, বাস, বাস। তখন জাহান্নাম পূর্ণ হয়ে যাবে এবং এর এক অংশ অপর অংশের সঙ্গে মুড়িয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির কারো প্রতি যুল্ম করবেন না। অবশ্য আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাতের জন্য অন্য মাখলূক সৃষ্টি করবেন। [৪৮৪৯; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৪৬, আহমাদ ৮১৭০] (আ.প্র. ৪৪৮৩, ই.ফা. ৪৪৮৬)

৬৫/৫০/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আপনার রবের প্রশংসা পবিত্রতা-মহিমা বর্ণনা করতে থাকুন সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে।(সূরাহ ক্বাফ ৫০/৩৯)

৪৮৫১

إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ جَرِيْرٍ عَنْ إِسْمَاعِيْلَ عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِيْ حَازِمٍ عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كُنَّا جُلُوْسًا لَيْلَةً مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ أَرْبَعَ عَشْرَةَ فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا لَا تُضَامُوْنَ فِيْ رُؤْيَتِهِ فَإِنْ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تُغْلَبُوْا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا فَافْعَلُوْا ثُمَّ قَرَأَ {وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوْبِ}.
জারীর ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একরাতে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি চৌদ্দ তারিখের রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা যেমন এ চাঁদটি দেখতে পাচ্ছ, তেমনিভাবে তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে এবং তাঁকে দেখার ব্যাপারে বাধা বিঘ্ন হবে না। তাই তোমাদের সামর্থ্য থাকলে সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগের সলাতের ব্যাপারে প্রভাবিত হবে না। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “আপনার রবের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে” (সূরাহ ক্বাফ ৫০/৩৯)। [৫৫৪] (আ.প্র. ৪৪৮৪, ই.ফা. ৪৪৮৭)

৪৮৫২

آدَمُ حَدَّثَنَا وَرْقَاءُ عَنْ ابْنِ أَبِيْ نَجِيْحٍ عَنْ مُجَاهِدٍ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ أَمَرَهُ أَنْ يُسَبِّحَ فِيْ أَدْبَارِ الصَّلَوَاتِ كُلِّهَا يَعْنِيْ قَوْلَهُ {وَإِدْبَارَ السُّجُوْدِ}.
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে প্রত্যেক সলাতের পর তাঁর পবিত্রতা ঘোষণার আদেশ করেছেন। আল্লাহ্‌র বাণী ঃ وَإِدْبَارَ السُّجُودِ “এর দ্বারা তিনি এ অর্থ করেছেন।” (আ.প্র. ৪৪৮৫, ই.ফা. ৪৪৮৮)

৬৫/৫২/.অধ্যায়ঃ

পরিচ্ছেদ নাই।
(51) سُوْرَةُ وَالذَّارِيَاتِ
সূরাহ (৫১) : আয্ যারিয়াত
قَالَ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلَام {الذَّارِيٰتُ} الرِّيَاحُ وَقَالَ غَيْرُهُ {تَذْرُوْهُ} تُفَرِّقُهُ {وَفِيْٓ أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُوْنَ} تَأْكُلُ وَتَشْرَبُ فِيْ مَدْخَلٍ وَاحِدٍ وَيَخْرُجُ مِنْ مَوْضِعَيْنِ {فَرَاغَ} فَرَجَعَ {فَصَكَّتْ} فَجَمَعَتْ أَصَابِعَهَا فَضَرَبَتْ بِهِ جَبْهَتَهَا {وَالرَّمِيْمُ} نَبَاتُ الْأَرْضِ إِذَا يَبِسَ وَدِيْسَ {لَمُوْسِعُوْنَ} أَيْ لَذُوْ سَعَةٍ وَكَذَلِكَ عَلَى الْمُوْسِعِ قَدَرَهُ يَعْنِي الْقَوِيَّ خَلَقْنَا {زَوْجَيْنِ} الذَّكَرَ وَالأُنْثَى وَاخْتِلَافُ الْأَلْوَانِ حُلْوٌ وَحَامِضٌ فَهُمَا زَوْجَانِ {فَفِرُّوْآ إِلَى اللهِ} مِنْ اللهِ إِلَيْهِ {إِلَّالِيَعْبُدُوْنِ} مَا خَلَقْتُ أَهْلَ السَّعَادَةِ مِنْ أَهْلِ الْفَرِيْقَيْنِ إِلَّا لِيُوَحِّدُوْنِ وَقَالَ بَعْضُهُمْ خَلَقَهُمْ لِيَفْعَلُوْا فَفَعَلَ بَعْضٌ وَتَرَكَ بَعْضٌ وَلَيْسَ فِيْهِ حُجَّةٌ لِأَهْلِ الْقَدَرِ {وَالذَّنُوْبُ} الدَّلْوُ الْعَظِيْمُ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {ذَنُوْبًا} سَبِيْلًا {صَرَّةٍ} صَيْحَةٍ {الْعَقِيْمُ} الَّتِيْ لَا تَلِدُ وَلَا تُلْقِحُ شَيْئًا وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {وَالْحُبُكُ} اسْتِوَاؤُهَا وَحُسْنُهَا {فِيْغَمْرَةٍ} فِيْ ضَلَالَتِهِمْ يَتَمَادَوْنَ وَقَالَ غَيْرُهُ {تَوَاصَوْا} تَوَاطَئُوْا وَقَالَ {مُسَوَّمَةً} مُعَلَّمَةً مِنْ السِّيْمَا {قُتِلَالْإِنْسَانُ} لُعِنَ.
‘আলী (রাঃ) বলেছেন,
الرِّيَاحُ বায়ুরাশি। অন্যদের হতে বর্ণিত। تَذْرُوْهُ মানে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। وَفِيْٓ أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُوْنَ তোমাদের মধ্যেও নিদর্শন রয়েছে, (‘‘তোমরা কি অনুধাবন করবে না?) অর্থাৎ তোমরা খানাপিনা কর এক পথে এবং তা বের হয় দু’পথ দিয়ে। فَرَاغَ মানে সে ফিরে এল। فَصَكَّتْ সে মুষ্টি বন্ধ করে নিজ কপালে মারল। الرَّمِيْمُ যমীনের উদ্ভিদ যখন শুকায় এবং তা মাড়াই করা হয়। لَمُوْسِعُوْنَ অবশ্য সম্প্রসারণকারী। এমনিভাবে عَلَى الْمُوْسِعِ قَدَرَهُ অর্থাৎ সামর্থ্যবান। زَوْجَيْنِ নারী-পুরুষ, আলাদা আলাদা বর্ণের এবং মিষ্টি ও টক উভয়কেই زَوْجَانِ বলা হয়। فَفِرُّوْآ إِلَى اللهِআল্লাহর নাফরমানী ত্যাগ করে তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের পানে এসো। إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ মানুষ ও জিন উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা ভাগ্যবান, তাদেরই আমার তাওহীদের উপর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য সৃষ্টি করেছি। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে, তাদের সকলকেই আল্লাহর বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু কেউ তা করেছে আর কেউ তা ত্যাগ করেছে। এ আয়াতে মুতাযিলাদের জন্য তাদের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। الذَّنُوْبُ বড় বালতি। মুজাহিদ বলেন, صَرَّةٍ চীৎকার। ذُنُوْبًا রাস্তা। الْعَقِيْمُ যে নারী সন্তান জন্ম দেয় না। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْحُبُكُ আকাশের সুবিন্যস্ততা ও তার সৌন্দর্য। فِيْغَمْرَةٍ নিজেদের ভুলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অন্য হতে বর্ণিত যে, تَوَاصَوْا একে অপরের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে আরও বলেছেন, مُسَوَّمَةً চিহ্নিত। مُسَوَّمَةً শব্দটি السِيِّمًا থেকে উদ্ভূত। قُتِلَ الْإِنْسَانُ অভিশপ্ত।

(52)
سُوْرَةُ وَالطُّوْرِ
সূরাহ (৫২) : আত্-তূর
وَقَالَ قَتَادَةُ {مَسْطُوْرٍ} مَكْتُوْبٍ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {الطُّوْرُ} الْجَبَلُ بِالسُّرْيَانِيَّةِ {رَقٍّ مَّنْشُوْرٍ} صَحِيْفَةٍ {وَالسَّقْفِ} الْمَرْفُوْعِ سَمَاءٌ {الْمَسْجُوْرِ} الْمُوْقَدِ وَقَالَ الْحَسَنُ {تُسْجَرُ} حَتَّى يَذْهَبَ مَاؤُهَا فَلَا يَبْقَى فِيْهَا قَطْرَةٌ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {أَلَتْنَاهُمْ} نَقَصْنَا وَقَالَ غَيْرُهُ {تَمُوْرُ} تَدُوْرُ {أَحْلَامُهُمْ} الْعُقُوْلُ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {الْبَرُّ} اللَّطِيْفُ{كِسْفًا} قِطْعًا {الْمَنُوْنُ} الْمَوْتُ وَقَالَ غَيْرُهُ يَتَنَازَعُوْنَ {يَتَعَاطَوْنَ}.
ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন,
مَسْطُوْرٍ লিখিত। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, সুরয়ানী ভাষায় পর্বতকে طُّوْرُ বলা হয়। رَقٍّمَّنْشُوْرٍ (উন্মুক্ত) সহীফা।السَّقْفِ الْمَرْفُوْعِ (সমুন্নত) আকাশ। الْمَسْجُوْرِ জ্বলন্ত। হাসান (রহ.) বলেন, (সমুদ্র) জ্বলে উঠবে। ফলে সমস্ত পানি ফুরিয়ে যাবে এবং এক ফোঁটা পানি থাকবে না। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, أَلَتْنَاهُمْ আমি হরাস করেছি। অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, تَمُوْرُ আন্দোলিত হবে। أَحْلَامُهُمْ বুদ্ধি। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, الْبَرُّদয়ালু। كِسْفًا খন্ড, الْمَنُوْنُ মৃত্যু। অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, يَتَنَازَعُوْنَ তারা আদান-প্রদান করবে।

৪৮৫৩

عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ نَوْفَلٍ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ أَبِيْ سَلَمَةَ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ شَكَوْتُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنِّيْ أَشْتَكِيْ فَقَالَ طُوْفِيْ مِنْ وَرَاءِ النَّاسِ وَأَنْتِ رَاكِبَةٌ فَطُفْتُ وَرَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّيْ إِلَى جَنْبِ الْبَيْتِ يَقْرَأُ بِالطُّوْرِ وَكِتَابٍ مَسْطُوْرٍ.
উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে নিবেদন করলাম যে, আমি অসুস্থ। তিনি বললেন, তুমি সওয়ার হয়ে লোকদের পেছনে তাওয়াফ করে নাও। তখন আমি তাওয়াফ করলাম। এ সময় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা‘বার এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিলেন এবং وَاطُّورِ وَكِتَابٍ مَسْطُورٍ তিলাওয়াত করছিলেন। [৪৬৪] (আ.প্র. ৪৪৮৬, ই.ফা. ৪৪৮৯)

৬৫/৫২/.অধ্যায়ঃ

পরিচ্ছেদ নাই।

৪৮৫৪

الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَدَّثُوْنِيْ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ عَنْ أَبِيْهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِالطُّوْرِ فَلَمَّا بَلَغَ هَذِهِ الْآيَةَ {أَمْ خُلِقُوْا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخٰلِقُوْنَ ط (35) أَمْ خَلَقُوا السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ ج بَلْ لَّا يُوْقِنُوْنَ ط (36) أَمْ عِنْدَهُمْ خَزَآئِنُ رَبِّكَ أَمْ هُمُ الْمُصَيْطِرُوْنَ ط (37)} قَالَ كَادَ قَلْبِيْ أَنْ يَطِيْرَ قَالَ سُفْيَانُ فَأَمَّا أَنَا فَإِنَّمَا سَمِعْتُ الزُّهْرِيَّ يُحَدِّثُ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ عَنْ أَبِيْهِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِالطُّوْرِ وَلَمْ أَسْمَعْهُ زَادَ الَّذِيْ قَالُوْا
যুবায়র ইব্‌নু মুত‘ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মাগরিবে সূরাহ তূর পাঠ করতে শুনেছি। যখন তিনি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছেন তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? আসমান-যমীন কি তারাই সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা অবিশ্বাসী। আমার প্রতিপালকের ধনভাণ্ডার কি তাদের কাছে রয়েছে, না তারাই এ সমূদয়ের নিয়ন্তা তখন আমার অন্তর প্রায় উড়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল। সুফ্ইয়ান (রহ.) বলেন, আমি যুহরীকে মুহাম্মদ ইব্‌নু জুবায়ির ইব্‌নু মুত‘ইমকে তার পিতার বর্ণনা করতে শুনেছি তার পিতা যুবায়র বলেছেন যে, যা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মাগরিবে সূরাহ তূর পাঠ করতে শুনেছি। কিন্তু এর অতিরিক্ত আমি শুনিনি যা তাঁরা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। [৭৬৫] (আ.প্র. ৪৪৮৭, ই.ফা. ৪৪৯০)

৬৫/৫৩/.অধ্যায়ঃ

পরিচ্ছেদ নাই।
(53) سُوْرَةُ وَالنَّجْمِ
সূরাহ (৫৩) : আন্-নাজম
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {ذُوْ مِرَّةٍ}ذُوْ قُوَّةٍ {قَابَ قَوْسَيْنِ} حَيْثُ الْوَتَرُ مِنَ الْقَوْسِ {ضِيْزَىْ} عَوْجَاءُ {وَأَكْدٰى} قَطَعَ عَطَاءَهُ {رَبُّالشِّعْرٰى} هُوَ مِرْزَمُ الْجَوْزَاءِ {الَّذِيْ وَفّٰى} وَفَّى مَا فُرِضَ عَلَيْهِ {أَزِفَتِ الْاٰزِفَةُ} اقْتَرَبَتْ السَّاعَةُ {سَامِدُوْنَ} الْبَرْطَمَةُ وَقَالَ عِكْرِمَةُ يَتَغَنَّوْنَ بِالْحِمْيَرِيَّةِ وَقَالَ إِبْرَاهِيْمُ {أَفَتُمَارُوْنَه”} أَفَتُجَادِلُوْنَهُ وَمَنْ قَرَأَ أَفَتَمْرُوْنَهُ يَعْنِيْ أَفَتَجْحَدُوْنَهُ وَقَالَ {مَا زَاغَ الْبَصَرُ} بَصَرُ مُحَمَّدٍ e{وَمَا طَغٰى} وَمَا جَاوَزَ مَا رَأَى {فَتَمَارَوْا} كَذَّبُوْا وَقَالَ الْحَسَنُ {إِذَا هَوٰى} غَابَ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {أَغْنٰى وَأَقْنٰى} أَعْطَى فَأَرْضَى.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
ذُوْ مِرَّةٍশক্তিশালী। قَابَ قَوْسَيْنِদুই ধনুকের ছিলার পরিমাণ। ضِيْزَىْবক্রতা وَأَكْدٰىসে তাঁর দান বন্ধ করে দেয়। رَبُّ الشِّعْرٰىজওযারামীর মিরজাম নক্ষত্র। الَّذِيْوَفّٰىসে তাঁর প্রতি ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছে। أَزِفَتْ الْاٰزِفَةُক্বিয়ামাত সন্নিকট। سَامِدُوْنَদ্বারা بَرْطَمَةُনামক খেলাধুলা বোঝানো হয়েছে। ইকরামাহ (রাঃ) বলেন, হামারিয়্যাহ ভাষায় গান গাওয়াকে سَامِدُوْنَবলা হয়। ইব্রাহীম (রহ.) বলেন, أَفَتَجْحَدُوْنَهচতোমরা কি তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করবে? যারা এ শব্দটিকে أَفَتَجْحَدُوْنَهচপড়ে, তাদের কিরাআত অনুসারে এর অর্থ হবে أَفَتَجْحَدُوْنَهচতোমরা কি তার কথাকে অস্বীকার করবে? مَا زَاغَ الْبَصَرُ(মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি وَمَاطَغٰىএবং তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যভ্রষ্টও হয়নি। فَتَمَارَوْا তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। হাসান (রহ.) বলেন, إِذَاهَوٰى যখন সে অদৃশ্য হয়ে গেল। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, أَغْنٰىوَأَقْنٰى তিনি দান করলেন এবং খুশী করে দিলেন।

৪৮৫৫

يَحْيَى حَدَّثَنَا وَكِيْعٌ عَنْ إِسْمَاعِيْلَ بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ عَنْ عَامِرٍ عَنْ مَسْرُوْقٍ قَالَ قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا يَا أُمَّتَاهْ هَلْ رَأَى مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم رَبَّهُ فَقَالَتْ لَقَدْ قَفَّ شَعَرِيْ مِمَّا قُلْتَ أَيْنَ أَنْتَ مِنْ ثَلَاثٍ مَنْ حَدَّثَكَهُنَّ فَقَدْ كَذَبَ مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ كَذَبَ ثُمَّ قَرَأَتْ {لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ زوَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ جوَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُوَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُّكَلِّمَهُ اللهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَّرَآءِ حِجَابٍ} وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ مَا فِيْ غَدٍ فَقَدْ كَذَبَ ثُمَّ قَرَأَتْ {وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا} وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ كَتَمَ فَقَدْ كَذَبَ ثُمَّ قَرَأَتْ {يَٰٓأَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَآ أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ} الْآيَةَ وَلَكِنَّهُ رَأَى جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَام فِيْ صُوْرَتِهِ مَرَّتَيْنِ.
মাসরূক (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মা! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি তাঁর রবকে দেখেছিলেন তিনি বললেন, তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাঁটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা সম্পর্কে তুমি কি জান না যে তোমাকে এ তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। যদি কেউ তোমাকে বলে যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন, তাহলে সে মিথ্যাচারী। তারপর তিনি পাঠ করলেন, তিনি দৃষ্টিশক্তির অধিগম্য নহেন কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত; এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত” “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ্ তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন, ওয়াহীর মাধ্যম ব্যতীত অথবা পর্দার আড়াল ছাড়া”। আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে যে, আগামীকাল কী হবে সে তা জানে, তাহলে সে মিথ্যাচারী। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, “কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে।” এবং তোমাকে যে বলবে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন কথা গোপন রেখেছেন, তাহলেও সে মিথ্যাচারী। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার কর। হ্যাঁ, তবে রসূল জিব্রীল (‘আ.)-কে তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন। [৩২৩৪] (আ.প্র. ৪৪৮৮, ই.ফা. ৪৪৯১)

৬৫/৫৩/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ অবশেষে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের দূরত্ব রইল অথবা আরও কম। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/৯)

৪৮৫৬

أَبُو النُّعْمَانِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ حَدَّثَنَا الشَّيْبَانِيُّ قَالَ سَمِعْتُ زِرًّا عَنْ عَبْدِ اللهِ {فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنٰى (9) فَأَوْحٰىٓ إِلٰى عَبْدِهٰ مَآ أَوْحٰى ط} قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ مَسْعُوْدٍ أَنَّهُ رَأَى جِبْرِيْلَ لَهُ سِتُّ مِائَةِ جَنَاحٍ.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى আয়াত দু’টোর ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিব্রীল (‘আ.)-কে দেখেছেন। তাঁর ছয়’শ ডানা ছিল। [৩২৩২] (আ.প্র. ৪৪৮৯, ই.ফা. ৪৪৯২)

৬৫/৫৩/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তখন আল্লাহ স্বীয় বান্দার প্রতি যা ওয়াহী করার ছিল, তা ওয়াহী করলেন। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/১০)

৪৮৫৭

طَلْقُ بْنُ غَنَّامٍ حَدَّثَنَا زَائِدَةُ عَنْ الشَّيْبَانِيِّ قَالَ سَأَلْتُ زِرًّا عَنْ قَوْلِهِ تَعَالَى {فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنٰى ج (9) فَأَوْحٰىٓ إِلٰى عَبْدِهٰ مَآ أَوْحٰى ط} قَالَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم رَأَى جِبْرِيْلَ لَهُ سِتُّ مِائَةِ جَنَاحٍ.
শাইবানী (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি র্যির (রহ.)-কে আল্লাহ্‌র বাণী ঃ فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى فَأَوْحَى এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমাকে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিব্রীল (‘আ.)-কে দেখেছেন। এ সময় তাঁর ডানা ছিল ছ’শ। [৩২৩২] (আ.প্র. ৪৪৯০, ই.ফা. ৪৪৯৩)

৬৫/৫৩/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তিনি তো স্বীয় রবের মহান নিদর্শনসমূহ দর্শন করেছেন। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/১৮)

৪৮৫৮

قَبِيْصَةُ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ {لَقَدْ رَاٰى مِنْ اٰيٰتِ رَبِّهِ الْكُبْرٰى} قَالَ رَأَى رَفْرَفًا أَخْضَرَ قَدْ سَدَّ الْأُفُقَ.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সবুজ একটি ‘রফরফ’ দেখেছিলেন যা পুরো আকাশ জুড়ে রেখেছিল। [৩২৩৩] (আ.প্র. ৪৪৯১, ই.ফা. ৪৪৯৪)

৬৫/৫৩/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উয্যা সম্বন্ধে। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/১৯)

৪৮৫৯

مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا أَبُو الْأَشْهَبِ حَدَّثَنَا أَبُو الْجَوْزَاءِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فِيْ قَوْلِهِ {اللَّاتَ وَالْعُزّٰى} كَانَ اللَّاتُ رَجُلًا يَلُتُّ سَوِيْقَ الْحَاجِّ.
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহ্‌র বাণী اللاَّتَ وَالْعُزَّى এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে ‘লাত’ বলে এ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যে হাজীদের জন্য ছাতু গুলত। (আ.প্র. ৪৪৯২, ই.ফা. ৪৪৯৫)

৪৮৬০

عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ حَلَفَ فَقَالَ فِيْ حَلِفِهِ وَاللَّاتِ وَالْعُزَّى فَلْيَقُلْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَمَنْ قَالَ لِصَاحِبِهِ تَعَالَ أُقَامِرْكَ فَلْيَتَصَدَّقْ.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কসম করে বলে যে, লাত ও উয্যার কসম, সে যেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। আর যে ব্যক্তি তার সাথীকে বলে, এসো আমি তোমার সঙ্গে জুয়া খেলব, তার সদাকাহ দেয়া কর্তব্য। [৬১০৭, ৬৩০১, ৬৬৫০; মুসলিম ২৭/২, হাঃ ১৬৪৭, আহমাদ ৮০৯৩] (আ.প্র. ৪৪৯৩, ই.ফা. ৪৪৯৬)

৬৫/৫৩/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্বন্ধে? (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/২০)

৪৮৬১

الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ سَمِعْتُ عُرْوَةَ قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا فَقَالَتْ إِنَّمَا كَانَ مَنْ أَهَلَّ بِمَنَاةَ الطَّاغِيَةِ الَّتِيْ بِالْمُشَلَّلِ لَا يَطُوْفُوْنَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى {إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِ اللهِ} فَطَافَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالْمُسْلِمُوْنَ قَالَ سُفْيَانُ مَنَاةُ بِالْمُشَلَّلِ مِنْ قُدَيْدٍ وَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ عُرْوَةُ قَالَتْ عَائِشَةُ نَزَلَتْ فِي الْأَنْصَارِ كَانُوْا هُمْ وَغَسَّانُ قَبْلَ أَنْ يُسْلِمُوْا يُهِلُّوْنَ لِمَنَاةَ مِثْلَهُ وَقَالَ مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ كَانَ رِجَالٌ مِنَ الْأَنْصَارِ مِمَّنْ كَانَ يُهِلُّ لِمَنَاةَ وَمَنَاةُ صَنَمٌ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِيْنَةِ قَالُوْا يَا نَبِيَّ اللهِ كُنَّا لَا نَطُوْفُ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ تَعْظِيْمًا لِمَنَاةَ نَحْوَهُ.
‘উরওয়াহ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, মুশাল্লাল নামক স্থানে অবস্থিত মানাত দেবীর নামে যারা ইহরাম বাঁধতো, তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করতো না। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন, “সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহের অন্যতম।” এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুসলিমগণ তাওয়াফ করলেন। সুফ্য়ান (রহ.) বলেন, ‘মানাত’ কুদায়দ-এর মুশাল্লাল-এ অবস্থিত ছিল। অপর এক বর্ণনায় আবদুর রহমান ইব্‌নু খালিদ (রহ.).....‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ আয়াতটি আনসারদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। ইসলাম গ্রহণের আগে আনসার ও গাস্সান গোত্রের লোকেরা মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো। হাদীসের বাকী অংশ সুফ্য়ানের বর্ণনার মতই। অপর এক সূত্রে মা‘মার (রহ.).....‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারদের কতক লোক মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো, মানাত মাক্কাহ ও মাদীনাহ্র মাঝে রাখা একটি দেবমূর্তি। তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র নাবী! মানাতের সম্মানার্থে আমরা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করতাম না। এ হাদীসটি আগের হাদীসেরই মত। [১৬৪৩] (আ.প্র. ৪৪৯৪, ই.ফা. ৪৪৯৭)

৬৫/৫৩/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ অতএব আল্লাহ্কে সাজদাহ্ কর এবং তাঁরই ‘ইবাদাত কর। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/৬২)

৪৮৬২

أَبُوْ مَعْمَرٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ حَدَّثَنَا أَيُّوْبُ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَجَدَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالنَّجْمِ وَسَجَدَ مَعَهُ الْمُسْلِمُوْنَ وَالْمُشْرِكُوْنَ وَالْجِنُّ وَالإِنْسُ تَابَعَهُ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ طَهْمَانَ عَنْ أَيُّوْبَ وَلَمْ يَذْكُرِ ابْنُ عُلَيَّةَ ابْنَ عَبَّاسٍ.
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূরাহ নাজমের মধ্যে সাজদাহ্ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সবাই সাজদাহ্ করল। আইয়ুব (রহ.)-এর সূত্রে ইব্রাহীম ইব্‌নু তাহ্মান (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করেছেন; তবে ইব্‌নু উলাইয়াহ (রহ.) আইয়ূব (রহ.)-এর সূত্রে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি। [১০৭১] (আ.প্র. ৪৪৯৫, ই.ফা. ৪৪৯৮)

৪৮৬৩

نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ أَخْبَرَنِيْ أَبُوْ أَحْمَدَ حَدَّثَنَا إِسْرَائِيْلُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْأَسْوَدِ بْنِ يَزِيْدَ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَوَّلُ سُوْرَةٍ أُنْزِلَتْ فِيْهَا سَجْدَةٌ وَالنَّجْمِ قَالَ فَسَجَدَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَسَجَدَ مَنْ خَلْفَهُ إِلَّا رَجُلًا رَأَيْتُهُ أَخَذَ كَفًّا مِنْ تُرَابٍ فَسَجَدَ عَلَيْهِ فَرَأَيْتُهُ بَعْدَ ذَلِكَ قُتِلَ كَافِرًا وَهُوَ أُمَيَّةُ بْنُ خَلَفٍ.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাজদাহর আয়াত সম্বলিত অবতীর্ণ হওয়া সর্বপ্রথম সূরাহ হলো আন-নাজম। এ সূরার মধ্যে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাজদাহ্ করলেন এবং সাজদাহ্ করল তাঁর পেছনের সকল লোক। তবে এক ব্যক্তিকে আমি দেখলাম, এক মুঠ মাটি হাতে তুলে তাতে সাজদাহ্ করছে। এরপর আমি তাকে কাফের অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। সে হল ‘উমাইয়াহ ইব্‌নু খাল্ফ। [১০৬৭] (আ.প্র. ৪৪৯৬, ই.ফা. ৪৪৯৯)

৬৫/৫৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে গেছে। তারা যদি কোন মু‘জিযা দেখে, তবে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরাহ আল-কামার ৫৪/১-২)
(54) سُوْرَةُ اقْتَرَبَتْ السَّاعَةُ
সূরাহ (৫৪) : ইক্বতারাবাতিস্ সা-আহ্ (আল-কামার)
قَالَ مُجَاهِدٌ {مُسْتَمِرٌّ} ذَاهِبٌ {مُزْدَجَرٌ} مُتَنَاهٍ {وَازْدُجِرَ} فَاسْتُطِيْرَ جُنُوْنًا {دُسُرٍ} أَضْلَاعُ السَّفِيْنَةِ {لِمَنْ كَانَ كُفِرَ} يَقُوْلُ كُفِرَ لَهُ جَزَاءً مِنْ اللهِ {مُحْتَضَرٌ} يَحْضُرُوْنَ الْمَاءَ وَقَالَ ابْنُ جُبَيْرٍ {مُهْطِعِيْنَ} النَّسَلَانُ الْخَبَبُ السِّرَاعُ وَقَالَ غَيْرُهُ {فَتَعَاطٰى} فَعَاطَهَا بِيَدِهِ فَعَقَرَهَا {الْمُحْتَظِرِ} كَحِظَارٍ مِنْ الشَّجَرِ مُحْتَرِقٍ {ازْدُجِرَ} افْتُعِلَ مِنْ زَجَرْتُ {كُفِرَ} فَعَلْنَا بِهِ وَبِهِمْ مَا فَعَلْنَا جَزَاءً لِمَا صُنِعَ بِنُوْحٍ وَأَصْحَابِهِ {مُسْتَقِرٌّ} عَذَابٌ حَقٌّ يُقَالُ {الأَشَرُ} الْمَرَحُ وَالتَّجَبُّرُ.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
مُسْتَمِرٌّ বিলুূপ্ত। مُزْدَجَرٌ বাধা দানকারী। وَازْدُجِرَ তাকে পাগল করে দেয়ার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। دُسُرٍ নৌকার কীলক। لِمَنْ كَانَ كُفِرَ এর কারণে যে নূহ্ (আঃ)-কে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।جَزَآءً প্রতিদান আল্লাহর তরফ থেকে। مُحْتَضَرٌ তারা পানির জন্য উপস্থিত হবে। ইবনু জুবায়র (রহ.) বলেন, مُهْطِعِيْنَ তারা দ্রুত চলবে। ইবনু জুবায়র (রহ.) ব্যতীত অন্যরা বলেছেন, فَتَعَاطٰى তারপর সে উষ্ট্রীটিকে ধরল এবং তাকে হত্যা করল। الْمُحْتَظِرِ শুকনো গাছের বেড়া যা জ্বলে গেছে। ازْدُجِرَ - زَجَرْتُ ধাতু হতে بابافْتُعِلَ এর زَجَرْتُ، صيحه থেকে এর নিষ্পন্ন। كُفِرَ আমি নূহ্ এবং তাঁর কওমের সঙ্গে যা করেছি তা প্রতিদান ছিল ঐ ‘আমালের, যা তাঁর কওমের লোকেরা তাঁর ও তাঁর সাথীদের সঙ্গে করেছিল। مُسْتَقِرٌّআল্লাহর তরফ থেকে শাস্তি। الْأَشَرُ দাম্ভিকতা ও অহংকার।

৪৮৬৪

مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ شُعْبَةَ وَسُفْيَانَ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ انْشَقَّ الْقَمَرُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِرْقَتَيْنِ فِرْقَةً فَوْقَ الْجَبَلِ وَفِرْقَةً دُوْنَهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اشْهَدُوْا.
‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময় চাঁদ খণ্ডিত হয়েছে। এর এক খণ্ড পর্বতের উপর এবং অপর খণ্ড পর্বতের নিচে পড়েছিল। তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সাক্ষী থাক। [৩৬৩৬] (আ.প্র. ৪৪৯৭, ই.ফা. ৪৫০০)

৪৮৬৫

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ أَخْبَرَنَا ابْنُ أَبِيْ نَجِيْحٍ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ انْشَقَّ الْقَمَرُ وَنَحْنُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَصَارَ فِرْقَتَيْنِ فَقَالَ لَنَا اشْهَدُوا اشْهَدُوْا.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, চন্দ্র বিদীর্ণ হল। এ সময় আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তা দু’টুকরো হয়ে গেল। তখন তিনি আমাদের বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক, তোমরা সাক্ষী থাক। [৩৬৩৬] (আ.প্র. ৪৪৯৮, ই.ফা. ৪৫০১)

৪৮৬৬

يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ بَكْرٌ عَنْ جَعْفَرٍ عَنْ عِرَاكِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ بْنِ مَسْعُوْدٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ انْشَقَّ الْقَمَرُ فِيْ زَمَانِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কালে চাঁদ খণ্ডিত হয়েছিল। [৩৬৩৮] (আ.প্র. ৪৪৯৯, ই.ফা. ৪৫০২)

৪৮৬৭

عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا يُوْنُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَأَلَ أَهْلُ مَكَّةَ أَنْ يُرِيَهُمْ آيَةً فَأَرَاهُمْ انْشِقَاقَ الْقَمَرِ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মক্কাহ্বাসীরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে একটি নিদর্শন দেখাতে বলল। তখন তিনি তাদেরকে চাঁদ খণ্ডিত করে দেখালেন। [৩৬৩৭] (আ.প্র. ৪৫০০, ই.ফা. ৪৫০৩)

৪৮৬৮

مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ قَالَ انْشَقَّ الْقَمَرُ فِرْقَتَيْنِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, চন্দ্র দু’ খণ্ডে খণ্ডিত হয়েছিল। [৩৬৩৭] (আ.প্র. ৪৫০১, ই.ফা. ৪৫০৪)

৬৫/৫৪/. .অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ যা চলত আমার চোখের সামনে। এটা ছিল তার জন্য পুরস্কার, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। আর আমি একে এক নিদর্শনরূপে রেখে দিয়েছি, অতএব কোন নাসীহাত গ্রহণকারী আছে কি? (সূরাহ আল-কামার ৫৪/১৪-১৫)
قَالَ قَتَادَةُ أَبْقَى اللهُ سَفِيْنَةَ نُوْحٍ حَتَّى أَدْرَكَهَا أَوَائِلُ هَذِهِ الْأُمَّةِ.

ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা নূহ্ (আঃ)-এর নৌকাটি রক্ষা করেছিলেন। ফলে এ উম্মাতের প্রাথমিক যুগের লোকেরাও তা পেয়েছে।

৪৮৬৯

حَفْصُ بْنُ عُمَرَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْأَسْوَدِ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ {فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ}.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন। [৩৩৪১; মুসলিম ৫০/হাঃ ৮২৩, আহমাদ ৩৮৫৩] (আ.প্র. ৪৫০২, ই.ফা. ৪৫০৫)

৬৫/৫৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি নাসীহাত গ্রহণের জন্য; অতএব কোন নাসীহাত গ্রহণকারী আছে কি? (সূরাহ আল-কামার ৫৪/১৭)
قَالَ مُجَاهِدٌ يَسَّرْنَا هَوَّنَّا قِرَاءَتَهُ.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
يَسَّرْنَا আমি এর পঠন পদ্ধতি সহজ করে দিয়েছি।

৪৮৭০

مُسَدَّدٌ عَنْ يَحْيَى عَنْ شُعْبَةَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْأَسْوَدِ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّه كَانَ يَقْرَأُ {فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ}.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তেন। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৩, ই.ফা. ৪৫০৬)

৬৫/৫৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ উৎপাটিত খেজুর বৃক্ষের কান্ড। অতএব কেমন কঠোর ছিল আমার আযাব ও আমার ভীতিপ্রদর্শন! (সূরাহ আল-কামার ৫৪/২০-২১)

৪৮৭১

أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ أَنَّهُ سَمِعَ رَجُلًا سَأَلَ الْأَسْوَدَ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ أَوْ مُذَّكِرٍ فَقَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ يَقْرَؤُهَا {فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ} قَالَ وَسَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَؤُهَا {فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ} دَالًا.
আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি এক ব্যক্তিকে আসওয়াদ (রহ.)-এর নিকট জিজ্ঞেস করতে শুনেছেন যে, আয়াতের মধ্যে فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ না مُدَّكِرٍ । তিনি বললেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্কে আয়াতখানা فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়তে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আয়াতখানা ‘দাল’ দিয়ে পড়তে শুনেছি। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৪, ই.ফা. ৪৫০৭)

৬৫/৫৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ ফলে তারা হয়ে গেল খোঁয়াড় নির্মাণকারীর দলিত শুষ্ক তৃণ ও বৃক্ষের প্রশাখার ন্যায়। আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি নাসীহাত গ্রহণের জন্য, অতএব কোন নাসীহাত গ্রহণকারী আছে কি? (সূরাহ আল-কামার ৫৪/৩১-৩২)

৪৮৭২

عَبْدَانُ أَخْبَرَنَا أَبِيْ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْأَسْوَدِ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ {فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ} الآيَةَ.
‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়েছেন। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৫, ই.ফা. ৪৫০৮)

৬৫/৫৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আর অতি প্রত্যুষে তাদের উপর আঘাত হানল বিরামহীন শাস্তি। বলা হলঃ আস্বাদন কর আমার আযাব এবং আমার সতর্কবাণীর মজা। (সূরাহ আল-কামার ৫৪/৩৮-৩৯)

৪৮৭৩

مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْأَسْوَدِ عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَرَأَ {فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ}.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়েছেন। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৬, ই.ফা. ৪৫০৯)

৬৫/৫৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আমি তো ধ্বংস করেছি তোমাদের সমপন্থী দলগুলোকে, অতএব এ থেকে নাসীহাত গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সূরাহ আল-কামার ৫৪/৫১)

৪৮৭৪

يَحْيَى حَدَّثَنَا وَكِيْعٌ عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنِ الْأَسْوَدِ بْنِ يَزِيْدَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَرَأْتُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَهَلْ مِنْ مُذَّكِرٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم{فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ}.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সামনে فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ পড়ার পর তিনি বললেন ঃ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ। [৩৩৪১] (আ.প্র. ৪৫০৭, ই.ফা. ৪৫১০)

৬৫/৫৪/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ অচিরেই এ দল পরাভূত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাবে। (সূরাহ আল-কামার ৫৪/৪৫)

৪৮৭৫

مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ حَوْشَبٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ حَدَّثَنَا خَالِدٌ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ ح و مُحَمَّدٌ حَدَّثَنَا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ عَنْ وُهَيْبٍ حَدَّثَنَا خَالِدٌ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَهُوَ فِيْ قُبَّةٍ يَوْمَ بَدْرٍ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَنْشُدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ اللهُمَّ إِنْ تَشَأْ لَا تُعْبَدْ بَعْدَ الْيَوْمِ فَأَخَذَ أَبُوْ بَكْرٍ بِيَدِهِ فَقَالَ حَسْبُكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ وَهُوَ يَثِبُ فِي الدِّرْعِ فَخَرَجَ وَهُوَ يَقُوْلُ {سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّوْنَ الدُّبُرَ}.
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বদর যুদ্ধের দিন একটি ছোট্ট তাঁবুতে অবস্থান করে এ দু‘আ করেছিলেন- হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়ন কামনা করছি! হে আল্লাহ্! তুমি যদি চাও, আজকের দিনের পর তোমার ‘ইবাদাত না কর হোক....ঠিক এ সময়ই আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) তাঁর হস্ত ধারণ পূর্বক বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট অনুনয়-বিনয়ের সঙ্গে বহু দু‘আ করেছেন। এ সময় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বর্ম পরিহিত অবস্থায় উঠে দাঁড়ালেন। তাই তিনি আয়াত দু’টো পড়তে পড়তে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেন, “এ দল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ পৃদর্শন করবে” (সূরাহ আল-কামার ৫৪/৫১)। [২৯১৫] (আ.প্র. ৪৫০৮, ই.ফা. ৪৫১১)

৬৫/৫৪/.অধ্যায়ঃ

‘‘অধিকন্তু ক্বিয়ামাতে তাদের শাস্তির প্রতিশ্রুতিকাল এবং ক্বিয়ামাত বড়ই কঠোর ও তিক্ততর।’’ (সূরাহ আল-কামার ৫৪/৪৬)

৪৮৭৬

إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ يُوْسُفَ أَنَّ ابْنَ جُرَيْجٍ أَخْبَرَهُمْ قَالَ أَخْبَرَنِيْ يُوْسُفُ بْنُ مَاهَكٍ قَالَ إِنِّيْ عِنْدَ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ قَالَتْ لَقَدْ أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم بِمَكَّةَ وَإِنِّيْ لَجَارِيَةٌ أَلْعَبُ {بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وَأَمَرُّ}.
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, بَلْ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ আয়াতটি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তখন কিশোরী ছিলাম, খেলাধূলা করতাম। [৪৯৯৩] (আ.প্র. ৪৫০৯, ই.ফা. ৪৫১২)

৪৮৭৭

إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا خَالِدٌ عَنْ خَالِدٍ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَهُوَ فِيْ قُبَّةٍ لَهُ يَوْمَ بَدْرٍ أَنْشُدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ لَمْ تُعْبَدْ بَعْدَ الْيَوْمِ أَبَدًا فَأَخَذَ أَبُوْ بَكْرٍ بِيَدِهِ وَقَالَ حَسْبُكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَدْ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ وَهُوَ فِي الدِّرْعِ فَخَرَجَ وَهُوَ يَقُوْلُ {) سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّوْنَ الدُّبُرَ - بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وَأَمَرُّ}.
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছোট্ট একটি তাঁবুতে অবস্থান করে এ দু‘আ করছিলেন, আয় আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার পূরণ কামনা করছি। হে আল্লাহ্! যদি তুমি চাও, আজকের পর আর কখনো তোমার ‘ইবাদাত না করা হোক.....। ঠিক এ সময় আবূ বাক্র (রাঃ) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাত ধরে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার প্রতিপালকের কাছে অনুনয়-বিনয়ের সঙ্গে বহু দু‘আ করেছেন। এ সময় তিনি লৌহবর্ম পরে ছিলেন। এরপর তিনি এ আয়াত পড়তে পড়তে তাঁবু থেকে বের হয়ে এলেন ঃ একদল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। অধিকন্তু ক্বিয়ামাত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং ক্বিয়ামাত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর”। (সূরাহ আল-কামার ৫৪/৪৫-৪৬) [২৯১৫] (আ.প্র. ৪৫১০, ই.ফা. ৪৫১৩)

৬৫/৫৫/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ সেখানে এ দু’টি ব্যতীত আরও দু’টি বাগান রয়েছে। (সূরাহ আর্ রহমান ৫৫/৬২)
(55) سُوْرَةُ الرَّحْمٰنِ
সূরাহ (৫৫) : আর্-রহমান
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {بِحُسْبَانٍ} كَحُسْبَانِ الرَّحَى وَقَالَ غَيْرُهُ {وَأَقِيْمُوا الْوَزْنَ} يُرِيْدُ لِسَانَ الْمِيْزَانِ وَالْعَصْفُ بَقْلُ الزَّرْعِ إِذَا قُطِعَ مِنْهُ شَيْءٌ قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَ فَذَلِكَ الْعَصْفُ {وَالرَّيْحَانُ} رِزْقُهُ {وَالْحَبُّ} الَّذِيْ يُؤْكَلُ مِنْهُ وَالرَّيْحَانُ فِيْ كَلَامِ الْعَرَبِ الرِّزْقُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ وَالْعَصْفُ يُرِيْدُ الْمَأْكُوْلَ مِنَ الْحَبِّ وَالرَّيْحَانُ النَّضِيْجُ الَّذِيْ لَمْ يُؤْكَلْ وَقَالَ غَيْرُهُ الْعَصْفُ وَرَقُ الْحِنْطَةِ وَقَالَ الضَّحَّاكُ الْعَصْفُ التِّبْنُ وَقَالَ أَبُوْ مَالِكٍ الْعَصْفُ أَوَّلُ مَا يَنْبُتُ تُسَمِّيْهِ النَّبَطُ هَبُوْرًا وَقَالَ مُجَاهِدٌ الْعَصْفُ وَرَقُ الْحِنْطَةِ وَالرَّيْحَانُ الرِّزْقُ {وَالْمَارِجُ} اللهَبُ الْأَصْفَرُ وَالأَخْضَرُ الَّذِيْ يَعْلُو النَّارَ إِذَا أُوْقِدَتْ وَقَالَ بَعْضُهُمْ عَنْ مُجَاهِدٍ {رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ} لِلشَّمْسِ فِي الشِّتَاءِ مَشْرِقٌ وَمَشْرِقٌ فِي الصَّيْفِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ مَغْرِبُهَا فِي الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ {لَا يَبْغِيَانِ} لَا يَخْتَلِطَانِ {الْمُنْشَاٰتُ} مَا رُفِعَ قِلْعُهُ مِنْ السُّفُنِ فَأَمَّا مَا لَمْ يُرْفَعْ قَلْعُهُ فَلَيْسَ بِمُنْشَأَةٍ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {كَالْفَخَّارِ} كَمَا يُصْنَعُ الْفَخَّارُ {الشُّوَاظُ} لَهَبٌ مِنْ نَارٍ وَقَالَ مُجَاهِدٌ {نُحَاسٌ}النُّحَاسُ الصُّفْرُ يُصَبُّ عَلَى رُءُوْسِهِمْ فَيُعَذَّبُوْنَ بِهِ {خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ} يَهُمُّ بِالْمَعْصِيَةِ فَيَذْكُرُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَيَتْرُكُهَا {مُدْهَآمَّتَانِ} سَوْدَاوَانِ مِنْ الرِّيِّ صَلْصَالٍ طِيْنٌ خُلِطَ بِرَمْلٍ فَصَلْصَلَ كَمَا يُصَلْصِلُ الْفَخَّارُ وَيُقَالُ مُنْتِنٌ يُرِيْدُوْنَ بِهِ صَلَّ يُقَالُ صَلْصَالٌ كَمَا يُقَالُ صَرَّ الْبَابُ عِنْدَ الإِغْلَاقِ وَصَرْصَرَ مِثْلُ كَبْكَبْتُهُ يَعْنِيْ كَبَبْتُهُ {فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ}وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَيْسَ الرُّمَّانُ وَالنَّخْلُ بِالْفَاكِهَةِ وَأَمَّا الْعَرَبُ فَإِنَّهَا تَعُدُّهَا فَاكِهَةً كَقَوْلِهِ عَزَّ وَجَلَّ {حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطٰى} فَأَمَرَهُمْ بِالْمُحَافَظَةِ عَلَى كُلِّ الصَّلَوَاتِ ثُمَّ أَعَادَ الْعَصْرَ تَشْدِيْدًا لَهَا كَمَا أُعِيْدَ النَّخْلُ وَالرُّمَّانُ وَمِثْلُهَا{أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَهمَنْ فِي السَّمَوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ} ثُمَّ قَالَ وَكَثِيْرٌ مِنْ النَّاسِ {وَكَثِيْرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ} وَقَدْ ذَكَرَهُمْ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيْ أَوَّلِ قَوْلِهِ {مَنْ فِي السَّمَوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ} وَقَالَ غَيْرُهُ {أَفْنَانٍ} أَغْصَانٍ {وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ} مَا يُجْتَنَى قَرِيْبٌ وَقَالَ الْحَسَنُ {فَبِأَيِّ اٰلَآءِ} نِعَمِهِ وَقَالَ قَتَادَةُ {رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ} يَعْنِي الْجِنَّ وَالإِنْسَ وَقَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ {كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَأْنٍ} يَغْفِرُ ذَنْبًا وَيَكْشِفُ كَرْبًا وَيَرْفَعُ قَوْمًا وَيَضَعُ آخَرِيْنَ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ {بَرْزَخٌ}حَاجِزٌ {الْأَنَامُ} الْخَلْقُ [أشار به إلى قوله تعالى : {وَالْأرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ} وعن ابن عباس والشعبي : الْأنام. كل ذي روح، وقيل : الإنس ةالجن]. {نَضَّاخَتَانِ} فَيَّاضَتَانِ {ذُو الْجَلَالِ} ذُو الْعَظَمَةِ وَقَالَ غَيْرُهُ {مَارِجٌ} خَالِصٌ مِنْ النَّارِ يُقَالُ مَرَجَ الْأَمِيْرُ رَعِيَّتَهُ إِذَا خَلَّاهُمْ يَعْدُوْ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَيُقَالُ مَرَجَ أَمْرُ النَّاسِ {مَرِيْجٍ} مُلْتَبِسٌ {مَرَجَ} الْبَحْرَيْنِ اخْتَلَطَ الْبَحْرَانِ مِنْ مَرَجْتَ دَابَّتَكَ تَرَكْتَهَا {سَنَفْرُغُ لَكُمْ} سَنُحَاسِبُكُمْ لَا يَشْغَلُهُ شَيْءٌ عَنْ شَيْءٍ وَهُوَ مَعْرُوْفٌ فِيْ كَلَامِ الْعَرَبِ يُقَالُ لَأَتَفَرَّغَنَّ لَكَ وَمَا بِهِ شُغْلٌ يَقُوْلُ لَآخُذَنَّكَ عَلَى غِرَّتِكَ.
وَأَقِيْمُوا الْوَزْنَএর মাঝে বর্ণিত الْوَزْنَহচ্ছে পাল্লার ডান্ডি। وَالْعَصْفُঘাস, ফসল পাকার পূর্বে যে চারাগুলোকে কেটে ফেলা হয় তাদেরকেই اَلْعَصْفُবলা হয়। الرَّيْحَانُশস্যের পাতা এবং যমীন থেকে উৎপাদিত দানা যা ভক্ষণ করা হয় আরবী ভাষায় রিযকের অর্থে ব্যবহৃত হয়। কারো মতে, الْعَصْفُখাওয়ার উপযোগী দানা এবং الرَّيْحَانُখাওয়ার অনুপযোগী পাকা দানা। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাস্সির বলেছেন, اَلْعَصْفُগমের পাতা। দাহ্হাক (রহ.) বলেন, اَلْعَصْفُমানে ভূষি। আবূ মালিক (রহ.) বলেন, সর্বপ্রথম যা উৎপন্ন হয় তাকে اَلْعَصْفُবলা হয়। হাবশী ভাষায় তাকে هَبُوْرًاহাবুর বলা হয়। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, اَلْعَصْفُগমের পাতা। الرَّيْحَانُখাদ্য। الْمَارِجُহলুদ এবং সবুজ বর্ণের অগ্নিশিখা যা আগুনের উপরে দেখা যায় যখন তা জ্বালানো হয়। মুজাহিদ (রহ.) থেকে কোন কোন মুফাস্সির বলেন, رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِসূর্যের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন উদয়স্থান। তেমনি رَبُّ الْمَغْرِبَيْنِশীত ও গ্রীস্মকালে সূর্যের দুই অস্তস্থল। لَا يَبْغِيَانِ তারা মিলিত হয় না। الْمُنْشَاٰتُনদীতে পাল তোলা নৌকা। আর যে নৌকার পাল তোলা হয়নি তাকে الْمُنْشَاٰتُ বলা হয় না। মুজাহিদ বলেন, نُحَاسٌপিতল, যা তাদের মাথার উপর ঢালা হবে এবং এর দ্বারা তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। خَافَ مَقَامَ رَبِّهٰ সে গুনাহ্ করার ইচ্ছে করে; কিন্তু তার আল্লাহর কথা মনে পড়ে যায়। অবশেষে সে গুনাহ্ করার ইচ্ছা ত্যাগ করে। الشُّوَاظُঅগ্নি শিখা। مُدْهَآمَّتَانِ দেখতে কালো হবে সজীবতার কারণে। صَلْصَالٍমাটি বালির সঙ্গে মিশে পোড়া মাটির মত ঝনঝন করে। বলা হয় صَلْصَالٍ দুর্গন্ধময়। শব্দটির মূল ছিল صَلَّ صَلْصَالٍবলা হয় যেমন صَرَّالْبَابُ বলা হয় এবং صَرَّصَرَّ الْبَابُও বলা হয়। (অর্থাৎ مضاعف رباعىথেকে مضاعفثلاثىএর উৎপত্তি)। যেমন كَبْكَبْتُه ব্যবহার করা হয়। যার মূল فَاكِهَةٌ وَّنَخْلٌ وَّرُمَّانٌ ফলমূল, খেজুর ও আনার। কারো মতে খেজুর ও আনার ফল নয়; কিন্তু আরবীয় লোকেরা এগুলোকেও ফল বলে গণ্য করে। খেজুর ও আনার ফলমূলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও উপরোক্ত আয়াতে ফলমূলের কথা উল্লেখ করে এরপর খেজুর ও আনারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوٰتِএর মাঝে সকল সালাতের প্রতি যত্নবান হবার নির্দেশ প্রদান করতঃ পরে আবার বিশেষভাবে আসরের সালাতের প্রতি বিশেষ যত্নবান হবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেমনভাবে أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ يَسْجُدُ لَهمَنْ فِي السَّمَوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ‘‘তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ্কে সাজদাহ করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে....। (সূরাহ হাজ্জ ২২/২৮)-এর মধ্যে সকল মানুষ অন্তর্ভুক্ত থাকা সত্ত্বেও وَكَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ وَكَثِيْرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُআয়াতাংশটি পরে উল্লেখ করা হয়েছে (সুতরাং খেজুর ও আনারকে ফলমূল বহির্ভূত বলা ঠিক নয়)। মুজাহিদ (রহ.) ছাড়া অন্যান্য মুফাস্সির বলেন, أَفْنَانٍ ডালাসমূহ। وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ দুই উদ্যানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী- (সূরাহ আর্ রহমান ৫৫/৫৪)। উভয় উদ্যানের ফল যা পাড়া হবে তা খুবই নিকটবর্তী হবে। হাসান (রহ.) বলেন, فَبِأَيِّاٰلَآءِ আল্লাহর কোন অনুগ্রহকে? ক্বাতাদাহ (রহ.) বলেন, মানব এবং দানব জাতিকে বোঝাবার জন্য رَبِّكُمَا দ্বি-বচনের صيغه ব্যবহার করা হয়েছে। আবুদ্ দারদা (রাঃ) বলেন, كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَأْنٍ (তিনি প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কার্যে রত)-এর ভাবার্থ হচ্ছে, প্রত্যহ তিনি মানুষের গুনাহ ক্ষমা করেন, বিপদ বিদূরিত করেন, এক সম্প্রদায়কে সুউচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন এবং অপর সম্প্রদায়ের অবনতি ঘটান। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, بَرْزَخٌ অন্তরাল। الْأَنَامُ সৃষ্ট জীব। نَضَّاخَتَانِ খায়ের ও বারাকাতে উচ্ছলিত। ذُو الْجَلَالِ মহিমাময়। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) ব্যতীত অন্যান্য মুফাসসির বলেছেন, مَارِجُ নির্ধূম অগ্নিশিখা। রাজা প্রজাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দেয়ার পর তারা যখন পরস্পর পরস্পরের প্রতি অবাধে অত্যাচার করতে আরম্ভ করে তখন বলা হয়, اَلَامِيْرُمَرَجَالَامِيْرُرِعَيَّتَهمَرَجَاَمْرُالنَّاسِ মানুষের বিষয়টি গোলমেলে হয়ে পড়েছে। مَرِيْجٍ দোদুল্যমান। مَرَجَ الْبَحْرَيْنٍ দুই সমুদ্র পরস্পর মিলিত হয়ে গিয়েছে। مَرَجْتَ دَابَّتَكَ এর উৎপত্তি অর্থাৎ তুমি ছেড়ে দিয়েছ। سَنَفْرُغُ لَكُمْ অচিরেই আমি তোমাদের হিসাব গ্রহণ করব কারণ কোন অবস্থা আল্লাহ্ তা‘আলাকে অন্য অবস্থা হতে গাফিল করতে পারে না। এ ধরনের ব্যবহার-বিধি আরবী ভাষায় সুপ্রসিদ্ধ। যেমন বলা হয়, لَا تَفَرَّ غَنَّ لَكَ অথচ তার কোন ব্যস্ততা নেই (বরং এ ধরনের কথা ধমক-স্বরূপ বলা হয়ে থাকে)। এ বাক্যের মাধ্যমে বক্তা শ্রোতাকে এ কথাই বোঝাতে চায় যে, অবশ্যই আমি তোমাকে তোমার এ গাফলতের মজা আস্বাদন করাব।

৪৮৭৮

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي الأَسْوَدِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ الصَّمَدِ الْعَمِّيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عِمْرَانَ الْجَوْنِيُّ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ جَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ، آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا، وَمَا بَيْنَ الْقَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلاَّ رِدَاءُ الْكِبْرِ عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ ‏"‏‏.‏
‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, (জান্নাতের মধ্যে) দু’টি বাগান থাকবে। এ দু’টির সকল পাত্র এবং এর ভিতরে সকল বস্তু রৌপ্য নির্মিত হবে এবং (জান্নাতে) আরো দু’টি উদ্যান থাকবে। এ দু’টির সকল পাত্র এবং ভিতরের সকল বস্তু সোনার তৈরী হবে। জান্নাতে আদনের মধ্যে জান্নাতী লোকেরা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ করবে। এ জান্নাতবাসী এবং তাদের প্রতিপালকের এ দর্শনের মাঝে আল্লাহ্‌র সত্তার ওপর জড়ানো তাঁর বিরাটত্বের চাদর ছাড়া আর কোন জিনিস থাকবে না। [৪৮৮০, ৭৪৪৪; মুসলিম ১/৮০, হাঃ ১৮০, আহমাদ ৮৪২৭] (আ.প্র. ৪৫১১, ই.ফা. ৪৫১৪)

৬৫/৫৫/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তারা তাঁবুতে সুরক্ষিত গৌর বর্ণের হুর। (সূরাহ আর্ রহমান ৫৫/৭২)
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ الْحُوْرُ السُّوْدُ الْحَدَقِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ مَقْصُوْرَاتٌ مَحْبُوْسَاتٌ قُصِرَ طَرْفُهُنَّ وَأَنْفُسُهُنَّ عَلَى أَزْوَاجِهِنَّ قَاصِرَاتٌ لَا يَبْغِيْنَ غَيْرَ أَزْوَاجِهِنَّ.
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন,
حُوْرٌ কালো মনি যুক্ত চক্ষু। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, مَقْصُوْرٰتٌ তাদের দৃষ্টি এবং তাদের সত্তা তাদের স্বামীদের জন্য সুরক্ষিত থাকবে। قَاصِرَاتٌ তারা তাদের জন্যই নির্দিষ্ট থাকবে। তারা তাদের ছাড়া অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার আকাঙ্ক্ষাও পোষণ করবে না।

৪৮৭৯

مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى قَالَ حَدَّثَنِيْ عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ عَبْدِ الصَّمَدِ حَدَّثَنَا أَبُوْ عِمْرَانَ الْجَوْنِيُّ عَنْ أَبِيْ بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ خَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ مُجَوَّفَةٍ عَرْضُهَا سِتُّوْنَ مِيْلًا فِيْ كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا أَهْلٌ مَا يَرَوْنَ الآخَرِيْنَ يَطُوْفُ عَلَيْهِمْ الْمُؤْمِنُوْنَ.
‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে ফাঁপা মোতির একটি তাঁবু থাকবে। এর প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। এর প্রতি কোণে থাকবে হুর-বালা। এদের এক কোণের জন অপর কোণের জনকে দেখতে পাবে না। ঈমানদার লোকেরা তাদের কাছে যাবে। এতে থাকবে দু’টি বাগান, যার সকল পাত্র এবং ভেতরের সকল বস্তু হবে রূপার তৈরী। [৩২৪৩] (আ.প্র. ৪৫১২, ই.ফা. ৪৫১৫)

৬৫/৫৬/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ সুবিস্তৃত ছায়া। (সূরাহ ওয়াকি‘আহ ৫৬/৩০)
(56) سُوْرَةُ الْوَاقِعَةِ
সূরাহ (৫৬) : ওয়াকি‘আহ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {رُجَّتْ} زُلْزِلَتْ {بُسَّتْ} فُتَّتْ لُتَّتْ كَمَا يُلَتُّ السَّوِيْقُ {الْمَخْضُوْدُ} الْمُوْقَرُ حَمْلًا وَيُقَالُ أَيْضًا لَا شَوْكَ لَهُ {مَنْضُوْدٍ} الْمَوْزُ {وَالْعُرُبُ} الْمُحَبَّبَاتُ إِلَى أَزْوَاجِهِنَّ {ثُلَّةٌ} أُمَّةٌ {يَحْمُوْمٍ} دُخَانٌ أَسْوَدُ {يُصِرُّوْنَ} يُدِيْمُوْنَ {الْهِيْمُ} الإِبِلُ الظِّمَاءُ {لَمُغْرَمُوْنَ} لَمَلُوْمُوْنَ {مَدِيْنِيْنَ} مُحَاسَبِيْنَ رَوْحٌ جَنَّةٌ وَرَخَاءٌ {وَرَيْحَانٌ} الرِّزْقُ {وَنُنْشِئَكُمْفِي} أَيِّ خَلْقٍ نَشَاءُ وَقَالَ غَيْرُهُ {تَفَكَّهُوْنَ} تَعْجَبُوْنَ عُرُبًا مُثَقَّلَةً وَاحِدُهَا عَرُوْبٌ مِثْلُ صَبُوْرٍ وَصُبُرٍ يُسَمِّيْهَا أَهْلُ مَكَّةَ الْعَرِبَةَ وَأَهْلُ الْمَدِيْنَةِ الْغَنِجَةَ وَأَهْلُ الْعِرَاقِ الشَّكِلَةَ.
وَقَالَ فِيْ {خَافِضَةٌ} لِقَوْمٍ إِلَى النَّارِ {وَرَافِعَةٌ} إِلَى الْجَنَّةِ {مَوْضُوْنَةٍ} مَنْسُوْجَةٍ وَمِنْهُ وَضِيْنُ النَّاقَةِ وَالْكُوْبُ لَا آذَانَ لَهُ وَلَا عُرْوَةَ {وَالْأَبَارِيْقُ} ذَوَاتُ الْآذَانِ وَالْعُرَى {مَسْكُوْبٍ} جَارٍ {وَفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ} بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ {مُتْرَفِيْنَ} مُمَتَّعِيْنَ {مَا تُمْنُوْنَ} مِنْ النُّطَفِ يَعْنِيْ هِيَ النُّطْفَةُ فِيْ أَرْحَامِ النِّسَاءِ {لِلْمُقْوِيْنَ} لِلْمُسَافِرِيْنَ وَالْقِيُّ الْقَفْرُ{بِمَوَاقِعِ النُّجُوْمِ} بِمُحْكَمِ الْقُرْآنِ وَيُقَالُ بِمَسْقِطِ النُّجُوْمِ إِذَا سَقَطْنَ وَمَوَاقِعُ وَمَوْقِعٌ وَاحِدٌ {مُدْهِنُوْنَ} مُكَذِّبُوْنَ مِثْلُ {لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ فَسَلَامٌ لَّكَ} أَيْ مُسَلَّمٌ لَكَ إِنَّكَ {مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِيْنِ} وَأُلْغِيَتْ إِنَّ وَهُوَ مَعْنَاهَا كَمَا تَقُوْلُ أَنْتَ مُصَدَّقٌ مُسَافِرٌ عَنْ قَلِيْلٍ إِذَا كَانَ قَدْ قَالَ إِنِّيْ مُسَافِرٌ عَنْ قَلِيْلٍ وَقَدْ يَكُوْنُ كَالدُّعَاءِ لَهُ كَقَوْلِكَ فَسَقْيًا مِنْ الرِّجَالِ إِنْ رَفَعْتَ السَّلَامَ فَهُوَ مِنْ الدُّعَاءِ {تُوْرُوْنَ} تَسْتَخْرِجُوْنَ أَوْرَيْتُ أَوْقَدْتُ {لَغْوًا} بَاطِلًا {تَأْثِيْمًا} كَذِبًا.

মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
رُجَّتْ প্রকম্পিত হবে। بُسَّتْ চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়া, ছাতু যেমন চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয় তেমিনভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে। الْمَخْضُوْدُ বোঝার কারণে চরম ভারাক্রান্ত। কণ্টকহীন বৃক্ষকেও مَخْضُوْدُ বলা হয়। مَنْضُوْدٍ কলা। الْعُرُبُ স্বামীর কাছে প্রিয়তমা স্ত্রীগণ। ثُلَّةٌ উম্মত। يَحْمُوْمٍ কালো ধোঁয়া। يُصِرُّوْنَ তারা অবিরাম করতে থাকবে। الْهِيْمُ পিপাসিত উট। لَمُغْرَمُوْنَ যাদের উপর ঋণ পরিশোধ করা অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে। رَوْحُ উদ্যান ও কোমলতা। اَلرَيْحَانُ জীবনোপকরণ। نَنْشَأَكُمْ যে কোন আকৃতিতে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করব। মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য মুফাস্সির বলেন, تَفَكَّهُوْنَ তোমরা বিস্মিত হয়ে যাবে। عُرُبًا বহুবচন। একবচনে عَرُوْبٌ যেমন, صُبُرٌ বহুবচন। একবচনে صَبُوْرٍ মক্কাবাসী লোকেরা তাকে الْعَرِبَةَ মদিনা্বাসী লোকেরা الْغَنِجَةَ এবং ইরাকী লোকেরা তাকে الشَّكِلَةَ বলে। خَافِضَةٌ তা একদল লোককে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। رَافِعَةٌ তা একদল লোককে জান্নাতে নিয়ে যাবে। مَوْضُوْنَةٍ مَّنْسُوْجَةٍ গ্রথিত। এর থেকেই وَضَيْنُ النَّاقِةٍ শব্দটির উৎপত্তি (অর্থ উটের পালানের রশি) الكُوْبُ নল ও হাতলবিহীন পানপাত্র। الْأَبَارِيْقُ নল ও হাতল সম্পন্ন লোটা। مَسْكُوْبٍ প্রবহমান। وَفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ একটির উপর আরেকটি বিছানো শয্যাসমূহ। مُتْرَفِيْنَ ভোগ বিলাসী লোকজন। مَا تُمْنُوْنَ মহিলাদের গর্ভাশয়ে নিক্ষিপ্ত বীর্য। لِلْمُقْوِيْنَ মুসাফিরদের জন্য। الْقِيُّ ঘাস, পানি এবং জন-মানবহীন ভূমি। بِمَوَاقِعِ النُّجُوْمِ কুরআনের মুহ্কাম আয়াতসমূহ। بِمَسْقِطِ النُّجُوْمِ নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের স্থান। مَوَاقِعٌএবং مَوْقِعٌ শব্দ দু’টো একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। مُدْهِنُوْنَ তুচ্ছকারী লোকজন। যেমন অন্যত্র আছে, لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُوْنَ যদি তুমি তুচ্ছ কর, তবে তারাও তুচ্ছ করবে। فَسَلَامٌ لَكَ তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। কেননা, তুমি দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত। এখানে إِنَّশব্দটি উহ্য আছে। যেমন, اِنِّىْ مُسَافِرٌ عَنْ قَلِيْلٍ এর উত্তরে কথিত أَنْتَ مُصَدَّقٌ مُّسَافِرٌ عَنْ قَلِيْلٍ বাক্যের মাঝে إِنَّ শব্দটি উহ্য আছে। মূলে ছিল إِنَّكَ مُسَافِرٌ শ্রোতার প্রতি দু‘আ হিসেবেও سَلَامَ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন فَسَقْيًا مِّنْ الرِّجَالِ (পরিতৃপ্ত লোকজন) বাক্যটিও দু‘আ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। سَلَامٌ শব্দটিকে مَرْفُوْعٌ পড়া হলে তা দু‘আ হিসেবেই গণ্য হবে। تُوْرُوْنَ তোমরা বের কর, প্রজ্জ্বলিত কর। পক্ষান্তরে أَوْرَيْتُ بِمَعْزٍ اَوْ فَدْتُ থেকে تُوْرُوْنَ শব্দটির উৎপত্তি। لَغْوًا অসার। تَأْثِيْمًا মিথ্যা বাক্য।

৪৮৮১

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنِ الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ شَجَرَةً يَسِيْرُ الرَّاكِبُ فِيْ ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَا يَقْطَعُهَا وَاقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ {وَظِلٍّ مَّمْدُوْدٍ}.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় একজন সওয়ারী একশত বছর চলতে থাকবে, তবুও সে এ ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না। তোমার ইচ্ছে হলে তুমি (সম্প্রসারিত ছায়া) পাঠ কর। [৩২৫২] (আ.প্র. ৪৫১৩, ই.ফা. ৪৫১৬)

৬৫/৫৯/.অধ্যায়ঃ

পরিচ্ছেদ নাই।
(57) سُوْرَةُ الْحَدِيْدِ
সূরাহ (৫৭) : আল-হাদীদ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ} مُعَمَّرِيْنَ فِيْهِ {مِنَ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّوْرِ} مِنْ الضَّلَالَةِ إِلَى الْهُدَى {فِيْهِ بَأْسٌ شَدِيْدٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ} جُنَّةٌ وَسِلَاحٌ {مَوْلَاكُمْ} أَوْلَى بِكُمْ {لِئَلَّا يَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ} لِيَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ يُقَالُ {الظَّاهِرُ} عَلَى كُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا {وَالْبَاطِنُ} عَلَى كُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا {أَنْظِرُوْنَا} انْتَظِرُوْنَا.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
جَعَلَكُمْ مُّسْتَخْلَفِيْنَ আমি তোমাদেরকে তাতে আবাদকারী বানিয়েছি। مِنْ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّوْرِ ভ্রান্তি থেকে হিদায়াতের দিকে। وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ ঢাল ও অস্ত্রশস্ত্র। مَوْلَاكُمْ তিনিই তোমাদের জন্য যোগ্য। لِئَلَّا يَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ যাতে কিতাবী লোকেরা জানতে পারে। বলা হয়, বস্তুর বাহ্যিক বিষয়ের উপরও عِلْمٍ ব্যবহৃত হয়। এমনিভাবে বস্তুর অভ্যন্তরীণ বিষয়ের উপরও عِلْم ব্যবহৃত হয়। أَنْظِرُوْنَا তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর।
(58)
سُوْرَةُ الْمُجَادَلَةِ
সূরাহ (৫৮) : মুজাদালাহ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {يُحَادُّوْنَ} يُشَاقُّوْنَ اللهَ {كُبِتُوْا} أُخْزُوْا مِنَ الْخِزْيِ {اسْتَحْوَذَ} غَلَبَ. سُوْرَةُ الْحَشْرِ.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
يُحَادُّوْنَ তারা (আল্লাহর) বিরোধিতা করছে। كُبِتُوْا তাদেরকে অপদস্থ করা হবে। الْخِزْيِ ধাতু হতে উক্ত শব্দটির উৎপত্তি। اسْتَحْوَذَ সে প্রাধান্য বিস্তার করেছে।
(59)
سُوْرَةُ الْحَشْرِ
সূরাহ (৫৯) : আল-হাশর
{
الْجَلَآءَ} الإِخْرَاجُ مِنْ أَرْضٍ إِلَى أَرْضٍ.
الْجَلَاءَ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নির্বাসিত করা।

৪৮৮২

مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحِيْمِ حَدَّثَنَا سَعِيْدُ بْنُ سُلَيْمَانَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ أَخْبَرَنَا أَبُوْ بِشْرٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ سُوْرَةُ التَّوْبَةِ قَالَ التَّوْبَةُ هِيَ الْفَاضِحَةُ مَا زَالَتْ تَنْزِلُ وَمِنْهُمْ وَمِنْهُمْ حَتَّى ظَنُّوْا أَنَّهَا لَنْ تُبْقِيَ أَحَدًا مِنْهُمْ إِلَّا ذُكِرَ فِيْهَا قَالَ قُلْتُ سُوْرَةُ الْأَنْفَالِ قَالَ نَزَلَتْ فِيْ بَدْرٍ قَالَ قُلْتُ سُوْرَةُ الْحَشْرِ قَالَ نَزَلَتْ فِيْ بَنِي النَّضِيْرِ.
সা‘ঈদ ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে সূরাহ তাওবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এ তো লাঞ্ছনাকারী সূরা। وَمِنْهُمْ وَمِنْهُمْ অর্থাৎ তাদের একদল এই করেছে, আরেক দল ওই করেছে, এ বলে একাধারে এ সূরাহ অবতীর্ণ হতে থাকলে লোকেরা ধারণা করতে লাগলো যে, এ সূরায় উল্লেখ করা হবে না, এমন কেউ আর তাদের মধ্যে বাকী থাকবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে সূরাহ আনফাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এ সূরাটি বদর যুদ্ধের সময় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তাকে সূরাহ হাশর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটি বানু নযীর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। [৪০২৯; মুসলিম ৫৪/৬, হাঃ ৩০৩১] (আ.প্র. ৪৫১৪, ই.ফা. ৪৫১৭)

৪৮৮৩

الْحَسَنُ بْنُ مُدْرِكٍ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمَّادٍ أَخْبَرَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ عَنْ أَبِيْ بِشْرٍ عَنْ سَعِيْدٍ قَالَ قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا سُوْرَةُ الْحَشْرِ قَالَ قُلْ سُوْرَةُ النَّضِيْرِ.
সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে ‘সূরাহ হাশর’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এ সুরাকে ‘সূরাহ বানী নাযীর’ বল। [৪০২৯] (আ.প্র. ৪৫১৫, ই.ফা. ৪৫১৮)

৬৫/৫৯/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যে খর্জুর বৃক্ষগুলো কর্তন করেছ বা যেগুলো কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে; এতো এ জন্য যে, আল্লাহ্ পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন- (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/৫)।

৪৮৮৪

قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا لَيْثٌ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَرَّقَ نَخْلَ بَنِي النَّضِيْرِ وَقَطَعَ وَهِيَ الْبُوَيْرَةُ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى {مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِيْنَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوْهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُوْلِهَا فَبِإِذْنِ اللهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِيْنَ}.
ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বানী নযীর গোত্রের খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কেটে ফেলেছিলেন। এ গাছগুলো ছিল ‘বুয়াইরা’ নামক জায়গায়। এরপর অবতীর্ণ করেছেন আল্লাহ্ তা‘আলাঃ তোমরা যে খর্জুর বৃক্ষগুলো কর্তন করেছ বা যেগুলোকে কাণ্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ তা তো আল্লাহ্‌রই অনুমতিক্রমে; এ এজন্য যে, আল্লাহ্ পাপাচারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। [২৩২৬] (আ.প্র. ৪৫১৬, ই.ফা. ৪৫১৯)

৬৫/৫৯/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ্ এই জনপদবাসীদের নিকট হতে তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যা কিছু দিয়েছেন। (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/৭)

৪৮৮৫

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ غَيْرَ مَرَّةٍ عَنْ عَمْرٍو عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ مَالِكِ بْنِ أَوْسِ بْنِ الْحَدَثَانِ عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَتْ أَمْوَالُ بَنِي النَّضِيْرِ مِمَّا أَفَاءَ اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا لَمْ يُوْجِفْ الْمُسْلِمُوْنَ عَلَيْهِ بِخَيْلٍ وَلَا رِكَابٍ فَكَانَتْ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَاصَّةً يُنْفِقُ عَلَى أَهْلِهِ مِنْهَا نَفَقَةَ سَنَتِهِ ثُمَّ يَجْعَلُ مَا بَقِيَ فِي السِّلَاحِ وَالْكُرَاعِ عُدَّةً فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বনু নযীরের বিষয়-সম্পত্তি ঐ সমস্ত বস্তুর অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা আল্লাহ্ তাঁর রসূলকে ‘ফাই’ হিসেবে দিয়েছেন এ জন্য যে মুসলিমরা অশ্বে কিংবা উষ্ট্রে অরোহণ করে যুদ্ধ করেনি। সুতরাং এটা খাস ছিল রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্য। এর থেকে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খরচ দান করতেন। এরপর বাকিটা তিনি অস্ত্রশস্ত্র এবং ঘোড়া সংগ্রহের পিছনে ব্যয় করতেন আল্লাহ্‌র পথে জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে। [২৯০৪] (আ.প্র. ৪৫১৭, ই.ফা. ৪৫২০)

৬৫/৫৯/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর (এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক)। (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/৭)

৪৮৮৬

مُحَمَّدُ بْنُ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُوْتَشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ فَبَلَغَ ذَلِكَ امْرَأَةً مِنْ بَنِيْ أَسَدٍ يُقَالُ لَهَا أُمُّ يَعْقُوْبَ فَجَاءَتْ فَقَالَتْ إِنَّهُ بَلَغَنِيْ عَنْكَ أَنَّكَ لَعَنْتَ كَيْتَ وَكَيْتَ فَقَالَ وَمَا لِيْ أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ هُوَ فِيْ كِتَابِ اللهِ فَقَالَتْ لَقَدْ قَرَأْتُ مَا بَيْنَ اللَّوْحَيْنِ فَمَا وَجَدْتُ فِيْهِ مَا تَقُوْلُ قَالَ لَئِنْ كُنْتِ قَرَأْتِيْهِ لَقَدْ وَجَدْتِيْهِ أَمَا قَرَأْتِ {وَمَآ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ ج وَمَا نَهٰكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ج} قَالَتْ بَلَى قَالَ فَإِنَّهُ قَدْ نَهَى عَنْهُ قَالَتْ فَإِنِّيْ أَرَى أَهْلَكَ يَفْعَلُوْنَهُ قَالَ فَاذْهَبِيْ فَانْظُرِيْ فَذَهَبَتْ فَنَظَرَتْ فَلَمْ تَرَ مِنْ حَاجَتِهَا شَيْئًا فَقَالَ لَوْ كَانَتْ كَذَلِكَ مَا جَامَعْتُهَا.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্ লা’নাত করেছেন ঐ সমস্ত নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকণ করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকণ করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভূরু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সে সব নারী আল্লাহ্‌র সৃষ্টিতে বিকৃতি আনয়ন করে। এরপর বানী আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নামের এক মহিলার কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে সে এসে বলল, আমি জানতে পারলাম, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লা‘নত করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যার প্রতি লা‘নাত করেছেন, আল্লাহর কিতাবে যার প্রতি লা‘নাত করা হয়েছে, আমি তার প্রতি লা‘নাত করব না কেন? তখন মহিলা বলল, আমি দুই ফলকের মাঝে যা আছে তা (পূর্ণ কুরআন) পড়েছি। কিন্তু আপনি যা বলেছেন, তা তো এতে পাইনি। ‘আবদুল্লাহ্ বললেন, যদি তুমি কুরআন পড়তে তাহলে অবশ্যই তা পেতে, তুমি কি পড়নি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক। মহিলাটি বলল, হাঁ নিশ্চয়ই পড়েছি। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তখন মহিলা বলল, আমার মনে হয় আপনার পরিবারও এ কাজ করে তিনি বললেন, তুমি যাও এবং ভালমত দেখে এসো। এরপর মহিলা গেল এবং ভালভাবে দেখে এলো। কিন্তু তার দেখার কিছুই দেখতে পেলো না। তখন ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন, যদি আমার স্ত্রী এমন করত, তবে সে আমার সঙ্গে একত্র থাকতে পারত না। [৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮; মুসলিম ৩৭/৩৩, হাঃ ২১২৫, আহমাদ ৪৩৪৩] (আ.প্র. ৪৫১৮, ই.ফা. ৪৫২১)

৪৮৮৭

عَلِيٌّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ عَنْ سُفْيَانَ قَالَ ذَكَرْتُ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَابِسٍ حَدِيْثَ مَنْصُوْرٍ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ فَقَالَ سَمِعْتُهُ مِنْ امْرَأَةٍ يُقَالُ لَهَا أُمُّ يَعْقُوْبَ عَنْ عَبْدِ اللهِ مِثْلَ حَدِيْثِ مَنْصُوْرٍ.
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে নারী নকল চুল লাগায়, তার প্রতি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লা‘নাত করেছেন। রাবী (রহ.) বলেন, আমি উম্মু ইয়াকূব নামক মহিলার নিকট হতে হাদীসটি শুনেছি, তিনি ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, মানসূরের হাদীসের মতই। [৪৮৮৬] (আ.প্র. ৪৫১৯, ই.ফা. ৪৫২২)

৬৫/৫৯/.অধ্যায়ঃ

‘‘আনসারদের যারা এ নগরীতে বসবাস করে আসছে ও ঈমান এনেছে, (তাঁরা মুহাজিরদেরকে ভালবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তাঁরা অন্তরে আকাঙক্ষা পোষণ করে না)।’’ (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/৯)

৪৮৮৮

أَحْمَدُ بْنُ يُوْنُسَ حَدَّثَنَا أَبُوْ بَكْرٍ يَعْنِي ابْنَ عَيَّاشٍ عَنْ حُصَيْنٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُوْنٍ قَالَ قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أُوْصِي الْخَلِيْفَةَ بِالْمُهَاجِرِيْنَ الْأَوَّلِيْنَ أَنْ يَعْرِفَ لَهُمْ حَقَّهُمْ وَأُوْصِي الْخَلِيْفَةَ بِالأَنْصَارِ {وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيْمَانَ} مِنْ قَبْلِ أَنْ يُهَاجِرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَقْبَلَ مِنْ مُحْسِنِهِمْ وَيَعْفُوَ عَنْ مُسِيئِهِمْ.
‘আম্‌র ইব্‌নু মায়মূন (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার পরবর্তী খালীফাকে ওসীয়াত করেছি, প্রথম যুগের মুহাজিরদের হাক আদায় করার জন্য এবং আমি পরবর্তী খালীফাকে আনসারদের ব্যাপারে ওসীয়াত করছি, যারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর হিজরাতের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করতেন এবং ঈমান এনেছিলেন যেন তিনি তাদের পুণ্যবানদের সৎকর্মকে গ্রহণ করেন এবং দোষ-ত্র“টিকে ক্ষমা করে দেন। [১৩৯২] (আ.প্র. ৪৫২০, ই.ফা. ৪৫২৩)

৬৫/৫৯/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ এবং তাঁরা তাঁদের নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় (নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও) শেষ পর্যন্ত। (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/৯)
الْخَصَاصَةُ الْفَاقَةُ الْمُفْلِحُوْنَ الْفَائِزُوْنَ بِالْخُلُوْدِ وَالْفَلَاحُ الْبَقَاءُ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ عَجِّلْ وَقَالَ الْحَسَنُ حَاجَةً حَسَدًا.
الْخَصَاصَةُ ক্ষুধা। الْمُفْلِحُوْنَ যারা (জান্নাতে) চিরকাল থাকার সফলতা অর্জন করেছেন। الْفَلَاحِ স্থায়িত্ব। حَيَّعَلَىالْفَلَاحِ সফলতা ও চিরস্থায়ী জীবনের দিকে তাড়াতাড়ি আস। হাসান (রহ.) বলেন, حَاجَةٌ হিংসা।

৪৮৮৯

يَعْقُوْبُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ بْنِ كَثِيْرٍ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ حَدَّثَنَا فُضَيْلُ بْنُ غَزْوَانَ حَدَّثَنَا أَبُوْ حَازِمٍ الْأَشْجَعِيُّ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَتَى رَجُلٌ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَصَابَنِي الْجَهْدُ فَأَرْسَلَ إِلَى نِسَائِهِ فَلَمْ يَجِدْ عِنْدَهُنَّ شَيْئًا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَلَا رَجُلٌ يُضَيِّفُهُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ يَرْحَمُهُ اللهُ فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ أَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ فَذَهَبَ إِلَى أَهْلِهِ فَقَالَ لِامْرَأَتِهِ ضَيْفُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا تَدَّخِرِيْهِ شَيْئًا قَالَتْ وَاللهِ مَا عِنْدِيْ إِلَّا قُوْتُ الصِّبْيَةِ قَالَ فَإِذَا أَرَادَ الصِّبْيَةُ الْعَشَاءَ فَنَوِّمِيْهِمْ وَتَعَالَيْ فَأَطْفِئِي السِّرَاجَ وَنَطْوِيْ بُطُوْنَنَا اللَّيْلَةَ فَفَعَلَتْ ثُمَّ غَدَا الرَّجُلُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَقَدْ عَجِبَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَوْ ضَحِكَ مِنْ فُلَانٍ وَفُلَانَةَ فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ {وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰٓى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ}.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমি খুব ক্ষুধার্ত। তখন তিনি তাঁর সহধর্মিণীদের নিকট পাঠালেন; কিন্তু তিনি তাদের কাছে কিছুই পেলেন না। এরপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এমন কেউ আছে কি, যে আজ রাতে এ লোকটিকে মেহমানদারী করতে পারে? আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহমাত করবেন। তখন আনসারদের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, আমি আছি, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এরপর তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং নিজ স্ত্রীকে বললেন, ইনি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মেহমান। কোন জিনিস জমা করে রাখবে না। মহিলা বলল, আল্লাহ্‌র কসম! আমার কাছে ছেলে-মেয়েদের খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বললেন, ছেলেমেয়েরা রাতের খাবার চাইলে তুমি তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দিও, (খাবার নিয়ে) আমার কাছে আসিও, অতঃপর বাতিটি নিভিয়ে দিও। আজ রাতে আমরা ভুখা থাকব। সুতরাং মহিলা তা-ই করল। পরদিন সকালে আনসারী সহাবী রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমাতে আসলেন। তিনি বললেন, অমুক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হয়েছেন অথবা অমুক অমুকের কাজে আল্লাহ্ হেসেছেন। এরপর আল্লাহ্ অবতীর্ণ করলেন ঃ “এবং তাঁরা তাদের নিজেদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও।” [৩৭৯৮] (আ.প্র. ৪৫২১, ই.ফা. ৪৫২৪)

৬৫/৬০/.অধ্যায়ঃ

আল্লাহর বাণীঃ (হে মু’মিনগণ!) আমার শত্রু তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০/১)
(60) سُوْرَةُ الْمُمْتَحِنَةِ
সূরাহ (৬০) : আল-মুমতাহিনাহ
وَقَالَ مُجَاهِدٌ {لَا تَجْعَلْنَا} فِتْنَةً لَا تُعَذِّبْنَا بِأَيْدِيْهِمْ فَيَقُوْلُوْنَ لَوْ كَانَ هَؤُلَاءِ عَلَى الْحَقِّ مَا أَصَابَهُمْ هَذَا {بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ} أُمِرَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِفِرَاقِ نِسَائِهِمْ كُنَّ كَوَافِرَ بِمَكَّةَ.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন,
لَا تَجْعَلْنَا আমাদেরকে কাফিরদের হাতে শাস্তি দিও না। তাহলে তারা বলবে, যদি মুসলিমরা হাকের ওপর থাকত, তাহলে তাদের ওপর এ মুসীবত আসত না। بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহাবীদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাঁরা যেন তাদের ঐ স্ত্রীদের বর্জন করে, যারা মক্কাতে কাফির অবস্থায় বিদ্যমান আছে।

৪৮৯০

الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ دِيْنَارٍ قَالَ حَدَّثَنِي الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ أَنَّهُ سَمِعَ عُبَيْدَ اللهِ بْنَ أَبِيْ رَافِعٍ كَاتِبَ عَلِيٍّ يَقُوْلُ سَمِعْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنَا وَالزُّبَيْرَ وَالْمِقْدَادَ فَقَالَ انْطَلِقُوْا حَتَّى تَأْتُوْا رَوْضَةَ خَاخٍ فَإِنَّ بِهَا ظَعِيْنَةً مَعَهَا كِتَابٌ فَخُذُوْهُ مِنْهَا فَذَهَبْنَا تَعَادَى بِنَا خَيْلُنَا حَتَّى أَتَيْنَا الرَّوْضَةَ فَإِذَا نَحْنُ بِالظَّعِيْنَةِ فَقُلْنَا أَخْرِجِي الْكِتَابَ فَقَالَتْ مَا مَعِيْ مِنْ كِتَابٍ فَقُلْنَا لَتُخْرِجِنَّ الْكِتَابَ أَوْ لَنُلْقِيَنَّ الثِّيَابَ فَأَخْرَجَتْهُ مِنْ عِقَاصِهَا فَأَتَيْنَا بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا فِيْهِ مِنْ حَاطِبِ بْنِ أَبِيْ بَلْتَعَةَ إِلَى أُنَاسٍ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ مِمَّنْ بِمَكَّةَ يُخْبِرُهُمْ بِبَعْضِ أَمْرِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَا هَذَا يَا حَاطِبُ قَالَ لَا تَعْجَلْ عَلَيَّ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ كُنْتُ امْرًَا مِنْ قُرَيْشٍ وَلَمْ أَكُنْ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَكَانَ مَنْ مَعَكَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ لَهُمْ قَرَابَاتٌ يَحْمُوْنَ بِهَا أَهْلِيْهِمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِمَكَّةَ فَأَحْبَبْتُ إِذْ فَاتَنِيْ مِنْ النَّسَبِ فِيْهِمْ أَنْ أَصْطَنِعَ إِلَيْهِمْ يَدًا يَحْمُوْنَ قَرَابَتِيْ وَمَا فَعَلْتُ ذَلِكَ كُفْرًا وَلَا ارْتِدَادًا عَنْ دِيْنِيْ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكُمْ فَقَالَ عُمَرُ دَعْنِيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَأَضْرِبَ عُنُقَهُ فَقَالَ إِنَّهُ شَهِدَ بَدْرًا وَمَا يُدْرِيْكَ لَعَلَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ اطَّلَعَ عَلَى أَهْلِ بَدْرٍ فَقَالَ اعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ قَالَ عَمْرٌو وَنَزَلَتْ فِيْهِ {يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ} أَوْلِيَاءَ قَالَ لَا أَدْرِي الآيَةَ فِي الْحَدِيْثِ أَوْ قَوْلُ عَمْرٍو حَدَّثَنَا عَلِيٌّ قَالَ قِيْلَ لِسُفْيَانَ فِيْ هَذَا فَنَزَلَتْ {لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّي} وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ الآيَةَ قَالَ سُفْيَانُ هَذَا فِيْ حَدِيْثِ النَّاسِ حَفِظْتُهُ مِنْ عَمْرٍو مَا تَرَكْتُ مِنْهُ حَرْفًا وَمَا أُرَى أَحَدًا حَفِظَهُ غَيْرِي.
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুবায়র (রাঃ), মিকদাদ (রাঃ) ও আমাকে পাঠালেন এবং বললেন, তোমরা ‘রওযা খাখ’ নামক স্থানে যাও। সেখানে এক উষ্ট্রারোহিণী মহিলা পাবে। তার সঙ্গে একখানা পত্র আছে, তোমরা তার থেকে সে পত্রখানা নিয়ে নিবে। এরপর আমরা রওয়ানা হলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদেরকে নিয়ে ছুটে চলল। যেতে যেতে আমরা রওযায় গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছেই আমরা উষ্ট্রারোহিণীকে পেয়ে গেলাম। আমরা বললাম, পত্রখানা বের কর সে বলল, আমার সঙ্গে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, অবশ্যই তুমি পত্রখানা বের করবে, অন্যথায় তোমাকে বিবস্ত্র করে ফেলা হবে। এরপর সে তার চুলের বেনী থেকে পত্রখানা বের করল। আমরা পত্রখানা নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এলাম। দেখা গেল, পত্রখানা হাতিব ইব্‌নু আবূ বাল্তাআহ্ (রাঃ)-এর পক্ষ হতে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে লেখা যাতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিষয় তাদের কাছে ব্যক্ত করে দিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, হাতিব কী ব্যাপার? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার ব্যাপারে ত্বড়িৎ কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি কুরাইশ বংশীয় লোকদের সঙ্গে বসবাসকারী এক ব্যক্তি; কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার কোন বংশগত সম্পর্ক নেই। আপনার সঙ্গে যত মুহাজির আছেন, তাদের সবারই সেখানে আত্মীয়-স্বজন আছে। এসব আত্মীয়-স্বজনের কারণে মক্কাহয় তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম, যেহেতু তাদের সঙ্গে আমার বংশীয় কোন সম্পর্ক নেই,তাই এবার যদি আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি, তাহলে হয়তো তারাও আমার আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াবে। কুফর ও স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করার মনোভাব নিয়ে আমি এ কাজ করিনি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাকে অনুমতি দিন এক্ষুণি আমি তাঁর গর্দান উড়িয়ে দেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তুমি কি জান না, আল্লাহ্ অবশ্যই বদরের অংশগ্রহণকারীদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেনঃ “তোমরা যা চাও কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” আমর বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে ঃ “হে ঈমানদারগণ! আমার শত্র“ ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।” সুফ্ইয়ান (রহ.) বলেন, আয়াতটি হাদীসের অংশ না আমর (রাঃ)-এর কথা, তা আমি জানি না। [৩০০৭] (আ.প্র. ৪৫২২, ই.ফা. ৪৫২৫)
‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সুফ্ইয়ান ইব্‌নু ‘উয়াইনাহ (রহ.)-কে “হে মু’মিনগণ! আমার শত্র“কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না” আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সুফ্ইয়ান বলেন, মানুষের বর্ণনার মাঝে তো এ রকমই পাওয়া যায়। আমি এ হাদীসটি আমর ইব্‌নু দীনার (রহ.) থেকে মুখস্থ করেছি। এর থেকে একটি অক্ষরও আমি বাদ দেইনি। আমার ধারণা, আমর ইব্‌নু দীনার (রহ.) থেকে আমি ছাড়া আর কেউ এ হাদীস মুখস্থ করেনি। (ই.ফা. ৪৫২৬)

অধ্যায় "তাফসীর" হাদিস নং - ৪৮৯১ থেকে ৪৯৭৭

No comments

Powered by Blogger.