ব্যাংকের সুদ কি হালাল - অনুচ্ছেদ ২১ থেকে ৩০ পর্যন্ত, শাইখ মোস্তাক আহমাদ কারীমী
কোম্পানীর গঠন-পদ্ধতি
সর্ব প্রথমে অভিজ্ঞ ও সুকৌশলী ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ অনুযায়ী একটি রিপোর্ট প্রস্ত্তত করা হয়। যে কারবার শুরু করা হবে তার কার্যক্ষমতা ও পরিধি কতদূর? এর জন্য বিভিন্ন উপকরণ ও পুঁজি কত পরিমাণ প্রয়োজন হতে পারে? এবং বাণিজ্যিক্ দিক থেকে কারবার কতটুকু উপকারী হবে--- এসব কিছু উক্ত রিপোর্টে স্থির করা হয়। একে সম্পাদন-যোগ্যতার প্রতিবেদন (FEASIBILITY REPORT) বলে।
অতঃপর কোম্পানীর একটা সংক্ষিপ্ত কাঠামো তৈরী করা হয়। যাতে কোম্পানীর নাম, কারবারের রকমত্ব, প্রয়োজনীয় পুঁজি, পরিচালকবৃন্দের নাম, আগামীতে তাদের পদচ্যুত ও পদস্থ করার নিয়ম-নীতি প্রভৃতি লিপিবদ্ধ হয়। একে বলা হয় স্মারকলিপি (MEMORANDUM)। অতঃপর কোম্পানী পরিচালনার নিয়মাবলী লিখা হয়; যাকে (ARTICLE OF ASSOCIATION) বলে। কোম্পানী অনুমোদনের জন্য মেমোরান্ডাম এবং আর্টিক্যাল অফ্ অ্যাসোশিয়েশন সহ সরকারের নিকট দরখাস্ত পেশ করা হয়। অতঃপর অর্থমম¿ণালয়ের পরিচালনাধীন বিভাগ (CORPORATE LOW AUTHORITY) এর তরফ থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে ‘কোম্পানী’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এবারে আইন তাকে ‘বিকল্প ব্যক্তি’ রূপে স্বীকৃতি দেয়; যে ক্রয়-বিক্রয় করবে, মামলা-মোকাদ্দামায় বাদী-প্রতিবাদী হবে এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে ঋণদাতা ও ঋণগ্রস্তও হতে পারবে। যাকে আইনসম্মত ব্যাক্তি (LEGAL PERSON) অথবা (JURIDICAL PERSON) বলা হয়।
কোম্পানী প্রতিষ্ঠা লাভ করলে লোকদেরকে তাতে অংশ গ্রহণ করতে আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্যে এবারে তার সম্পূর্ণ নিয়ম-নীতি ও সাংগঠনিক কাঠামোর প্রচার করা আইনগতভাবে জরুরী হয়; যাতে জনসাধারণের নিকট এ কোম্পানী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান রূপে পরিচিতি লাভ করে।
কোম্পানীর মৌলিক নিয়ম-নীতি এবং তার আনুসঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী সম্পর্কে জনসাধারণের অবগতির জন্য যে লিখিত বিবরণী প্রচার করা হয়, তাকে (PROSPECTUS) বলা হয়।
সরকার যখন কোম্পানীকে অনুমোদন প্রদান করে, তখন তার পুঁজি ও মূলধনের ব্যাপারটাও নির্দিষ্ট করে দেয়। এত টাকার পুঁজির অংশীদারী কার্যকর করা যেতে পারে বা এত টাকার পুঁজিতে শরীক হতে জন সাধারণকে আহ্বান করা যেতে পারে বলে টাকার অংশ সীমিত করে দেয়। একে বলা হয় ‘অনুমোদিত মূলধন’ AUTHORISED CAPITAL)। উদাহরণ স্বরূপ, ১০০ মিলিয়ন টাকা নিয়ে কারবার করতে কোম্পানী অনুমতি পেল। সুতরাং এ ১০০ মিলিয়ন টাকাই হল ‘অনুমোদিত মূলধন’। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন টাকা কোম্পানী প্রতিষ্ঠাতাদের দায়িত্বে থাকে; যাকে (SPONSORS CAPITAL) বলে। আর ৮০ মিলিয়ন টাকা জনসাধারণের নিকট থেকে সংগ্রহ করা হয়। যার মধ্য হতে ৬০ মিলিয়ন টাকার অংশীদারী আপাতত জারী করা হয় এবং বাকী টাকা আগামীতে কোন প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত রাখা হয়। উক্ত ৬০ মিলিয়ন টাকাকে প্রচলিত মূলধন (ISSUED CAPITAL) বলা হয়। আবার ৬০ মিলিয়ন টাকার মধ্য হতে লোকেরা যে ৫০ মিলিয়ন টাকার জন্য ফর্ম জমা করে, তাকে (SUBSCRIBED CAPITAL) বলে। যখন লোকেরা নিজেদের পুঁজি জমা করে কোম্পানীর এক-একটা অংশ গ্রহণ করে, তখন কোম্পানী প্রত্যেক অংশীদারকে একটি করে সার্টিফিকেট প্রদান করে। আর এই সার্টিফিকেট এ কথার দলীল যে, কোম্পানীতে তার এত অংশ আছে। একে বলা হয় শেয়ার (SHARE)। কারবার যত টাকার মূলধন দ্বারা আরম্ভ করা হয়, তাকে ঐকিক নিয়মে ভাগ করে একভাগকে শেয়ারের মূল্য স্থির করা হয়। যেমন, আজকাল সাধারণতঃ দশ দশ টাকার শেয়ার জারী করা হয়ে থাকে। এই মূল্য শেয়ারের উপর লিখিত হয়। আর এই মূল্যকে FACE VALUE বলা হয়। উক্ত শেয়ার কিনতে ও বেচতে পারা যায়। এর জন্য সংভার বিনিময়কেন্দ্র (STOCK EXCHANGE) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
লভ্যাংশ বিভাজন ও বন্টন
সারা বছর ধরে কারবার চালাবার পর কোম্পানী বার্ষিক লাভের হিসাব খতিয়ে দেখে। সর্বমোট লাভ কত দাঁড়ালো তা নিরূপণ করে নেয়। অতঃপর মোট লাভ থেকে কিছু অংশ সাবধানতা-পূর্বক সংরক্ষিত রাখা হয়; যাতে আগামীতে কোম্পানী কোন ক্ষতি বা নোকসানের শিকার হলে তা থেকে তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয়। একে বলা হয় (RESERVE) সংরক্ষণ।
সাবধানতাপূর্বক
এ অর্থ বের করে নেওয়ার পর অবশিষ্ট টাকা শেয়ার হোল্ডার্সদের মাঝে ভাগ-বন্টন করা হয়।
এই বিভাজনের হয় দুটি পদ্ধতি; কখনো কখনো নগদ লাভ শেয়ারওয়ালাদেরকে প্রদান করা হয়। আবার কখনো বা এ লভ্যাংশ দ্বারা পুনঃ শেয়ার জারী করা হয়; যাকে BONUS SHARE বলা হয়।
প্রিয় পাঠক! এ হল কোম্পানীর সংক্ষিপ্ত চিত্র। যেহেতু ব্যাংক মৌলিকভাবে জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানীরই দ্বিতীয় নাম সেহেতু কোম্পানীর উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা আমাদের জন্য আবশ্যক ছিল। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে ব্যাংক কেবলমাত্র টাকা লেন-দেনের কারবার করে থাকে। শিল্প কারিগরী, কৃষি উৎপাদন, নির্মাণ-প্রকল্প এবং অন্যান্য উপকারী মুনাফাজনক কাজ ও কারবারে ওর কোন আগ্রহ নেই। ও তো কেবল শিল্পী, কারিগর, কৃষক এবং কোম্পানীকে সূদের ভিত্তিতে পুঁজি সরবরাহ করে থাকে। পক্ষান্তরে কোম্পানী বিভিন্ন ধরনের শিল্প, কৃষি, নির্মাণ-প্রকল্প এবং আরো অন্যান্য লাভজনক কার্য সরাসরি বাস্তবায়ন করে থাকে।
আসুন, এবার আমরা ব্যাংক সম্বন্ধে কিছু জ্ঞানলাভ করি। কারণ এ বিষয়েও আপনার অবগতি একান্ত জরুরী।
ব্যাংকের পরিচিতি
BANK শব্দটি ইটালী ভাষার BANCO শব্দ থেকে উদ্ভুত। যার অর্থ হল DESK (ডেস্ক্) অথবা TABLE (টেবিল)। যেহেতু সে যুগের লোকেরা টাকাপয়সার অনুরূপ কারবারকারীরা ডেস্ক্ অথবা টেবিল নিয়ে বসত, তাই তার নাম BANK বলে প্রসিদ্ধ হয়ে যায়।
ব্যাংক এমন এক বাণিজিক-প্রতিষ্ঠানের নাম; যে জনসাধারণের অর্থ নিজের কাছে জমা ও সঞ্চয় করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং অন্যান্য অভাবী ব্যক্তিদেরকে প্রয়োজনে ঋণ সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে গতানুগতিক ব্যাংকগুলো ঐ ঋণের উপর সূদ আদায় করে এবং টাকা জমাকর্তা জনসাধারণকে তুলনামূলক কম হারে সূদ প্রদান করে থাকে। মাঝখানে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তা হল ব্যাংকের লাভ।
ব্যাংকের ঐতিহাসিক পটভূমিকা
পাশ্চাত্য দেশে ব্যাংকের সূচনা এইভাবে হল যে, লোকেরা নিজ নিজ সোনা স্বর্ণকারদের নিকট জমা করে রাখত। ( কারণ সে যুগে নোটের প্রচলন ছিল না।) স্বর্ণকাররা এ স্বর্ণের সমপরিমাণ অর্থের রসিদ লিখে দিত। রসিদে একথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকত যে, রসিদবাহকের এত পরিমাণ সোনা অমুক স্বর্ণকারের নিকট গচ্ছিত রয়েছে। অতঃপর ধীরে ধীরে রসিদসমূহ ক্রয়-বিক্রয়, ঋণ পরিশোধ ও আপোসে দেনা-পাওনার কাজে একজন হতে অন্য জনের নিকট স্থানান্তরিত হতে লাগল, কারণ রসিদ দেখিয়ে স্বর্ণকারের নিকট থেকে সোনা উঠিয়ে তার মাধ্যমে লেন-দেন করার চাইতে এ রসিদই এ দ্বিতীয় ব্যক্তিকে (পণ্যের বিনিময়ে) প্রদান করাটা অধিকতর সহজ ছিল। আর একজনকে এ রসিদ সোপর্দ করার অর্থ এক রকম সোনা সোপর্দ করাই ছিল।
এইভাবে লোকে আসল সোনা ফেরত নিতে কমই আসত। এবারে অভিজ্ঞতা দ্বারা স্বর্ণকাররা জানতে পারল যে, লোকেদের যে সোনা তাদের নিকট গচ্ছিত আছে তার বড়জোর দশ ভাগের এক ভাগ মালিকেরা বের করে নিয়ে যায় এবং বাকী নয় ভাগ তাদের অর্থ-ভান্ডারে অযথা পড়েই থাকে। সুতরাং তারা এ সোনা ঋণপ্রার্থী লোকদেরকে ঋণ স্বরূপ দিয়ে তার উপর সূদ আদায় করা শুরু করল। পরন্তু যখন তারা দেখল যে, লোকেরা অধিকাংশ কাগজের রসিদ বিনিময়ের মাধ্যমেই তাদের ব্যবসায় লেন-দেন করছে এবং নিজেদের সোনা ফেরৎ নিতে আসে না, তখন এ আসল সোনা ঋণস্বরূপ দেওয়ার পরিবর্তে তারই সমমূল্যরূপে কাগজী রসিদ বাজারে চালাতে লাগল। আর যেহেতু অভিজ্ঞতায় তারা জানতে পেরেছিল যে, গচ্ছিত স্বর্ণসম্ভার হতে কেবল এক দশমাংশই মালিকেরা তাদের স্বর্ণ ফেরৎ চায়; সেহেতু তারা বাকী নয় ভাগের সমমূল্যের---নয় ভাগের নয় বরং---নববই ভাগের জাল রসিদ তৈরী করে পত্রমুদ্রা (নোট) হিসাবে বাজারে চালাতে এবং ঋণ দিতে আরম্ভ করল।
এ ব্যাপারটি দৃষ্টান্ত স্বরূপ এভাবে বুঝুন; মনে করুন, এক ব্যক্তি স্বর্ণকারের নিকট ১০০ টাকা মূল্যের সোনা জমা রেখেছিল। স্বর্ণকার এক-একশ’ টাকার দশটি রসিদ তৈরী করল এবং তার প্রত্যেকটিতে এই কথা লিখে দিল যে, ‘এই রসিদের স্থলে ১০০ টাকার সোনা আমার নিকট গচ্ছিত আছে।’ উক্ত দশটি রসিদের মধ্যে একটি মাত্র সোনার মালিককে সোপর্দ করল এবং নয় শত টাকার নয়টি রসিদ অন্য লোকেদেরকে ঋণ দিয়ে তার উপর সূদ আদায় করতে শুরু করে দিল।
এরপর তারা আরো এক পা অগ্রসর হল। আর তা এই যে, যে যুগে এই আধুনিক মহাজনরা উক্ত জাল পুঁজির সাহায্যে প্রচুর অর্থশক্তি সঞ্চয় করে মাথা তুলে উঠছিল সেই যুগেই পশ্চিম ইউরোপে একদিকে শিল্প ও বাণিজ্য বন্যার বেগে বেড়ে চলেছিল এবং অপর দিকে সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি নতুন ইমারত গড়ে উঠছিল---যা ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে মিউনিসিপ্যালিটি পর্যন্ত জন-জীবনের সর্বক্ষেত্রে নতুন গঠন চাচ্ছিল। এসব কাজের জন্য দরকার ছিল পুঁজির। অপর দিকে সোনার মালিকরাও নিজের মূলধন নিয়ে বিভিন্ন কারবার শুরু করতে লাগল। এবারে স্বর্ণকার মহাজনরা যখন দেখল যে, লোকেরা তাদের নিজেদের পুঁজি ব্যবসায় খাটাতে শুরু করেছে, তখন তারা প্রমাদ গণল। তারা এ স্বর্ণমালিকদেরকে বুঝিয়ে বলতে লাগল, ‘আপনারা এত সব ঝামেলা কেন পোহান? এভাবে নিজে নিজে ব্যবসা করলে তো নিজেকেই হিসাব-নিকাশ রাখতে হবে। এছাড়া নোকসানের পাল্লায়ও তো পড়তে পারেন। তাছাড়া মুনাফার বৃদ্ধি-হরাস আপনার আয় আমদানীর উপর প্রভাব ফেলবে। অতএব এসব করার পরিবর্তে আপনি আপনার অর্থ আমাদের নিকট জমা করুন। আমরা আপনার সে অর্থের রক্ষণাবেক্ষণও করব, তার হিসাব-নিকাশও বিনা পয়সায় রাখব, আর আপনার নিকট কিছু নেওয়ার পরিবর্তে উল্টে আপনাকেই তার সূদ আদায় করতে থাকব।’ এই নতুন কৌশলের ফলেই সঞ্চিত অর্থের শতকরা ৯০ ভাগ বরং এর চাইতেও বেশী অর্থ সরাসরি রুজি-রোজগার ও সংস্কৃতির কাজে ব্যবহূত হওয়ার পরিবর্তে সূদখোর মহাজনদের ভোগে চলে গেল এবং এইভাবে প্রায় সকল প্রকার ব্যবসায় বিনিয়োগযোগ্য পুuঁজ তাদের হস্তগত হল। অবশেষে পরিস্থিতি এই দাঁড়াল যে, মহাজনরা তো পূর্ব থেকেই তাদের ভুয়ো পুঁজি সূদী কারবারে খাটিয়ে আসছিল, এখন অন্যদের পুঁজিও তারা সস্তা হার সূদে নিয়ে চড়া হার সূদে ঋণ দিতে লাগল।
অতঃপর এ দলটি তৃতীয় পদক্ষেপ উঠালো। তারা চিন্তা করল ব্যবসায়ের বিভিন্ন শাখায় যেমন যৌথ পুঁজির কোম্পানী গঠিত হচ্ছে ঠিক অনুরূপভাবে অর্থ-ব্যবসার ক্ষেত্রেও কোম্পানী গঠন করতে হবে এবং এর জন্য উচ্চমানের সংগঠন কায়েম করতে হবে। সুতরাং তাই করা হল এবং এইভাবেই আধুনিক ব্যাংক-ব্যবস্থার উৎপত্তি হল। যে ব্যাংক আজ সারা দুনিয়ার অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছে।
এইভাবে দুনিয়ার প্রথম ব্যাংক ১১৫৭ খ্রীষ্টাব্দে ইটালীর এক শহর ভেনিস (VENICE)এ প্রতিষ্ঠালাভ করে; যার নাম ছিল BANACODELLA PIZZADI RIAALRO। অতঃপর এরপরে ১৪০১ খ্রীষ্টাব্দে বারশিলোনা শহরে আমানত রাখা যায় এমন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। আর এর পর থেকেই ব্যাংকের পরম্পরা সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে।[1]
[1]
(মাওয়াক্বিফুশ
শারীআতি মিনাল মাসারিফিল মুআসিরাহ ২২-২৩পৃঃ)
অর্থসংস্থানের বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাংকের প্রকারভেদ
বর্তমান বিশ্বে কয়েক প্রকারেরই ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ব্যাংক বিশেষ বিশেষ বিভাগে অর্থসংস্থানের কাজ করে থাকে। আর অপর কিছু ব্যাংক সাধারণভাবে অর্থসংস্থানের কাজ করে। এভাবে ব্যাংকসমূহ নিম্নোক্ত প্রকারে বিভক্তঃ-
১- কৃষি উন্নয়নমূলক ব্যাংক (AGRICULTURAL BANK)। এ ব্যাংক কৃষিকার্যের সকল ক্ষেত্রে ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
২- শিল্পোন্নয়নমূলক ব্যাংক (INDUSTRIAL BANK)। এর কাজ হল বিভিন্ন শিল্পকর্মের উন্নতিকল্পে ঋণ সরবরাহ করা।
৩- প্রগতিমূলক ব্যাংক (DEVELOMENT BANK)। এ ব্যাংক যে কোনও প্রগতি ও উন্নয়মূলক কাজে ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
৪- সমবায় ব্যাংক (CO-OPERATIVE BANK)। এই ব্যাংক পরস্পর সহযোগিতার ভিত্তিতে কায়েম করা হয়। এর কর্মপরিধি কেবল সদস্যদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। যারা এর সদস্য হয় কেবল তাদেরই অর্থ ডিপোজিট থাকে এবং তাদেরকেই ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
৫- বিনিয়োগমূলক ব্যাংক (INVESTMENT BANK)। এ ব্যাংকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ডিপোজিট রাখা হয়। সাধারণ কারেন্ট একাউন্ট বা সেভিং একাউন্ট এতে থাকে না; কেবলমাত্র ফিক্সড্ ডিপোজিট থাকে। আর ঋণও নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য প্রদান করা হয়। এর চাইতে কম মেয়াদের জন্য ঋণ দেওয়া হয় না।
উপরোল্লেখিত সকল প্রকার ব্যাংকের কর্ম-পরিধি সীমাবদ্ধ হয়।
৬- বাণিজ্যিক ব্যাংক (COMMERCIAL BANK) । এ ব্যাংক সাধারণ অর্থসংস্থানের কাজ করে থাকে এবং কোন বিশেষ ক্ষেত্র ও বিভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয় না।
৭- রিজার্ভ ব্যাংক (RESERVE BANK)। এটি দেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান; সকল প্রকার বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এরই তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত। দেশের অর্থ-ব্যবস্থায় এর বড় ভূমিকা থাকে। এই ব্যাংকের বিভিন্ন ফাংশন নিম্নরূপঃ-
ক- এটি হল সরকারী ব্যংক। সরকারের অর্থ এতে জমা রাখা হয়। তবে এ অর্থের উপর সরকারকে সূদ দেওয়া হয় না। প্রয়োজনের সময় সরকারকে ঋণও দিতে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাংক মামূলী হারে সূদ গ্রহণ করে থাকে।
খ- রিজার্ভ ব্যাংক সরকারের অর্থনৈতিক পলিসীতে উপদেষ্টার কাজও করে।
গ- রিজার্ভ ব্যাংক জাতীয় মুদ্রা গচ্ছিত রাখে, পুঞ্জীভূত করে এবং প্রয়োজন মত তা জারীও করে।
ঘ- রিজার্ভ ব্যাংকের প্রধান ভূমিকা হল দুটি; প্রথমতঃ সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের এ তত্ত্বাবধান করে এবং উক্ত ব্যাংকগুলোর নিয়ম-শৃঙ্খলা বহাল রাখে; যাতে করে সেগুলো থেকে আর্থিক মুনাফা অর্জন হয় আর লোকসানের সকল দরজা বন্ধ থাকে।
দ্বিতীয়তঃ এই যে, এই ব্যাংক দেশের মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করে, যাতে সেই স্ফীতি হরাস পেতে শুরু করে দেয়। আবার মুদ্রার মান অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতেও এমন উপায় অবলম্বন করে যাতে তা কমতে বাধ্য হয়।
এই মুদ্রার মান হরাস বৃদ্ধির কয়েকটি পদ্ধতি হতে পারে ঃ-
ক- রিজার্ভ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে যে হারে সূদের উপর ঋণ প্রদান করে, সে হারকে ‘ব্যাংক রেট’ বলে। ব্যাংক রেটও মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে প্রভাবশীল হয়। আর তা এইভাবে হয় যে, যখন রিজার্ভ ব্যাংক সূদের হার বেশী করবে, তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও অতিরিক্ত সূদের ভিত্তিতে ঋণ নেবে। সে জন্য এ ব্যাংকগুলোও ঋণগ্রহীতা জনসাধারণকে অতিরিক্ত সূদের উপরই ঋণ দেবে। যার পরিণাম এই দাঁড়াবে যে, জনসাধারণ ঋণ কম নিতে শুরু করবে। আর যখন লোকেরা ঋণ কম নেবে তখন ব্যাংকের অর্থবৃদ্ধিও কম হবে এবং মুদ্রার আবর্তনও কম হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে রিজার্ভ ব্যাংক সূদের হার কম করলে বাণিজ্যিক ব্যাংকও তার সুদের হার কমিয়ে দেবে। যার ফলে লোকেরা ঋণও বেশী নেবে এবং অর্থ বৃদ্ধিও বেশী হয়ে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
খ- সরকারের যখন অর্থের প্রয়োজন হয়, তখন তা অর্জন করার নিমিত্তে বিভিন্ন ঋণের দস্তাবিজ জারী করে; যাকে সরকারী তমসুক বলা হয়।
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে রিজার্ভ ব্যাংক একটি বিল জারী করে; যাকে ইংরাজীতে TREASURY BILL বলে। একটি বিলের লিখিত মূল্য (FACE VALUE) এক শত টাকা হয়। এই বিল সাধারণতঃ ছয় মাসের জন্য জারী করা হয়; তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়, আর কেবল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই তার প্রাথমিক ক্রেতা হয়ে থাকে।
নিলাম এই পদ্ধতিতে করা হয় যে, রিজার্ভ ব্যাংক ঘোষণা করে দেয় যে, ‘এত টাকা বা দৃষ্টান্তস্বরূপ একশ’ কোটি টাকার ট্রেজারী বিল জারী করা হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যাংক তখন বলে, ‘আমি এত মূল্যে একটি বিল ক্রয় করতে চাই।’ আজকাল এর রেট সাধারণতঃ ১৩ অথবা ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার বিল সাধারণতঃ ৮৬ বা ৮৭ টাকায় বিক্রয় হয়। এবারে যে ব্যাংক এই বিল ৮৬ টাকায় ক্রয় করবে সে ছয় মাস পরে তার পুরাপুরি ১০০ টাকা ওসুল করে নেবে। আর ১৪ টাকা তার সূদ অথবা লাভ হবে।
যখন মুদ্রার মান বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়, তখন রিজার্ভ ব্যাংক ট্রেজারী বিল স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করার প্রবণতা প্রকাশ করে। যার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজের পুঁজির বিনিময়ে বিল খরীদ করতে শুরু করে। এভাবে সকল ব্যাংকেরই অর্থ রিজার্ভ ব্যাংকে ফেরৎ আসতে আরম্ভ করে। আর ব্যাংকগুলোতে পুঁজি কম হয়ে যায়। ফলে ঋণ সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে অর্থ-বৃদ্ধির কাজও কমে যায়। ঠিক এর বিপরীত, যদি মুদ্রাস্ফীতি আনার প্রয়োজন হয়, তাহলে রিজার্ভ ব্যাংক ট্রেজারী বিল অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করার জন্য খোলা বাজারে এসে যায়। লোকেরা তখন নিজেদের বিল বিক্রয় করে রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে নেয়। আর এভাবে মুদ্রার পরিমাণ বেড়ে মান কমে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।
গ- নোট ছেপেও রিজার্ভ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতির উপর প্রভাবশীল হয়।[1]
৮- আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (INTERNATIONAL MONETARY
FUND)t- এ ফান্ড স্থাপিত হয় ১৯৪৮ সালে। যেভাবে একই দেশের কয়েকটি ব্যাংকের একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক (রিজার্ভ ব্যাংক) থাকে, ঠিক সেভাবেই কয়েকটি দেশের রিজার্ভ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হল এই সংস্থা (I.M.F)। এটা যেন দুনিয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক; যে সত্বর আদায়যোগ্য স্বল্পমেয়াদী ঋণ সকল দেশকে সরবরাহ করে থাকে। কখনো কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত হলেও সাময়িকভাবে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য নগদ অর্থ তার নিকট নাও থাকতে পারে। এই মুহূর্তে উক্ত সংস্থা এ দেশকে ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
উক্ত সংস্থায় প্রত্যেক দেশের জন্য একটা নির্দিষ্ট কোটা (QUOTA) থাকে। ঐ দেশের বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে তুলনা করে দেখার পর এই কোটা নির্ধারিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের এবং কোন এক দেশের বাণিজ্য হল পাঁচ কোটি ডলারের। তাহলে এই দেশ পাঁচ শতাংশ কোটা অর্জন করতে পারবে।
প্রত্যেক দেশই তার কোটার ২৫ শতাংশ অর্থ আকারে এবং ৭৫ শতাংশ দেশীয় মুদ্রা আকারে ঐ সংস্থায় জমা করে। এইরূপে I.M.F এর নিকট সকল দেশের মুদ্রা জমা হয়ে যায়। I.M.F এ ফান্ড জমা করার পর প্রত্যেক দেশই সেখান থেকে ঋণ নেওয়ার অধিকার লাভ করে। যাকে ইংরাজীতে DRAWING RIGHTS বলে। আবার এই DRAWING RIGHTS এর ভিত্তিতে যে ঋণ পাওয়া যায় তা কয়েক অংশে ভাগ করে নেওয়া হয়। এক একটা ভাগকে বলা হয় TRANCHE । প্রথম ট্রান্চ এ ঋণের ২৫ শতাংশ হয়ে থাকে যা বিনা শর্তে পাওয়া যায় এবং তাতে সূদও কম লাগে। কিন্তু এর পরের ট্রান্চগুলোতে শর্তাবলী এবং বাধ্য-বাধকতাও বেশী, আর এই তুলনায় সূদের অংকও বেড়ে যেতে থাকে।
৯- আন্তর্জাতিক ব্যাংক (INTERNATIONAL BANK FOR
RECONSTRUCTION AND DEVELOPMENT)t-
এই ব্যাংকের সংক্ষিপ্ত নাম হল বিশ্বব্যাংক (WORLD BANK) এবং বর্তমানে উক্ত নামেই পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। এই ব্যাংক এবং ‘আই এম এফ’ এর মাঝে পার্থক্য এই যে, ‘আই এম এফ’ স্বল্প-মেয়াদী ঋণ প্রদান করে; যার মেয়াদ বড়জোর তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক দীর্ঘমেয়াদী ঋণদান করে থাকে; যার মেয়াদ পনের থেকে ত্রিশ বছর হয়। প্রতিষ্ঠা লাভের পর শুরুর দিকে এই ব্যাংক বিভিন্ন কর্ম-প্রকল্প (PROJECTS) বাস্তবায়নার্থে ঋণ দিয়েছিল। যেমন, সেতুনির্মাণ, রাজপথ নির্মাণ প্রভৃতি। অতঃপর ১৯৬০ সালের পর থেকে সাধারণ ঋণ দিতেও আরম্ভ করল। বর্তমানে এই ব্যাংক পলিসি-নির্মাতা ঋণও দান করে থাকে; অর্থাৎ এই বলে যে, যদি তুমি তোমার দেশের পলিসি (শাসন-প্রণালী বা কূটনীতি) এরূপ বানাও, তাহলে তোমাকে এত ঋণ দেওয়া হবে।
[1]
(ইসলাম আওর জাদীদ মাঈশাত ও তিজারাত দ্রষ্টব্য।)
ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
মূলগত দিক থেকে ব্যাংক হল ‘জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানী’র নাম। ব্যাংক জনসাধারণকে তাদের অর্থ জমা ও গচ্ছিত রাখতে আহ বান জানায়; যাকে ইংরাজীতে ডিপোজিট্স (DEPOSITS) বলা হয়। এই ডিপোজিট কয়েক প্রকারের হয়ঃ-
১- কারেন্ট একাউন্ট (CURRENT ACCOUNT বা চলতি আমানত)। এই একাউন্টে জমা রাখা টাকার উপর সূদ পাওয়া যায় না। এতে গচ্ছিত টাকা যে সময়ে ও যে পরিমাণে ইচ্ছা বিনা বাধায় তুলতে পারা যায়।
২- সেভিং একাউন্ট (SAVING ACCOUNT বা সঞ্চয়ী খাতা)। এই একাউন্ট থেকে টাকা তোলার জন্য সাধারণতঃ বিভিন্ন নিয়ম ও শর্তাবলী থাকে। এই খাতায় ব্যাংক সূদ প্রদান করে।
৩- ফিক্স্ড ডিপোজিট (FIXED DEPOSIT বা স্থায়ী আমানত)। এতে নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে টাকা তোলা যায় না। এই টাকার উপরও ব্যাংক সূদ দিয়ে থাকে। মেয়াদ অনুসারে হার নির্ণয় হয়। দীর্ঘ-মেয়াদের ক্ষেত্রে বেশী হারে এবং স্বল্প-মেয়াদের ক্ষেত্রে অল্প হারে সূদ পাওয়া যায়।
উপর্যুক্ত তিন প্রকার ডিপোজিটের মাধ্যমে যখন ব্যাংকের নিকট পুঁজি জমা হয় এবং প্রাথমিকভাবে তার নিকট যে পুঁজি থাকে, তা একত্রীভূত হয় তখন ঐ সমস্ত পুঁজিকে ব্যবহার করার পদ্ধতি এই হয় যে, উক্ত পুঁজির একটি নির্দিষ্ট অংশ চলতি রূপে রিজার্ভ ব্যাংকে জমা করা জরুরী হয়। রিজার্ভ ব্যাংকে এ পুঁজি সাধারণতঃ এমন সরকারী তমসুক (GOVERNMENT SECURITIES) রূপে জমা থাকে, যা সহজেই নগদ টাকায় পরিণত করা সম্ভব হয় এবং তাতে কিছু সূদও পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্যাংক নিজের কাছেও কিছু চলতি অর্থ (LIQUID MONEY) রেখে নেয়; যাতে আমানতকারী (ডিপোজিটার)দের চাহিদাও পূরণ করতে পারে।
ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যাবলী
পুঁজি জমা রাখার পর ব্যাংক কয়েক প্রকার ভূমিকা পালন করে; যেমন অর্থসংস্থান ও বিনিয়োগ করা, অর্থ-বৃদ্ধি করা, আমদানী ও রপ্তানীতে মধ্যস্থতা করা প্রভৃতি। এখন আমরা উক্ত ভূমিকাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবঃ-
১- অর্থ সংস্থান (FINANCING) t- ব্যাংকের সব চাইতে বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল জনসাধারণের প্রয়োজনে---বিশেষ করে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে--- ঋণ সরবরাহ করা। ব্যাংক কখনো দীর্ঘ-মেয়াদী ঋণ জারী করে; যাকে ইংরাজীতে LONG TERM CREDIT বলে। আবার কখনো স্বল্প-মেয়াদী ঋণ জারী করে থাকে; সাধারণতঃ তিন অথবা ছয় মাস পর্যন্ত সময়ের জন্য দেওয়া হয়, যাকে ইংরাজীতে SHORT TERM CREDIT বলে।
ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি
ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহের এমন সীমাহীন এখতিয়ার থাকে না যে, সে যেখানে ইচ্ছা সেখানে এবং যত ইচ্ছা তত পরিমাণে ঋণ সরবরাহ করতে পারে। বরং রিজার্ভ ব্যাংকের তরফ থেকে একটা সীমা নির্দিষ্ট করা হয়। সেই সীমার অনুবর্তী হয়ে ব্যাংক ঋণ প্রদান করতে পারে। উক্ত ‘সীমা’কে ইংরাজীতে CREDIT CEILING বলা হয়। যেমন বর্তমানে রিজার্ভ ব্যাংকের তরফ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয় তা এই যে, ব্যাংক তার সমস্ত গচ্ছিত অর্থের ৪০ শতাংশ রিজার্ভ ব্যাংকে জমা রাখবে; যাকে ইংরাজীতে LIQUIDITY RESERVE বলে। এরপর ৫ শতাংশ নগদ CASH রূপে নিজের কাছে জমা রাখবে। ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ দ্বারা ব্যক্তিগত কাউকে বা কোন সংস্থা বা কোম্পানীকে ঋণ সরবরাহ করবে। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ অর্থ থেকে সরকারী তমসুক (GOVT. SECURITIES) ক্রয় করবে, নতুবা সরকারী সংস্থাগুলোকে ঋণ সরবরাহ করবে ।
CREDIT CEILING এ সীমাবদ্ধ থেকে ব্যাংকসমূহের ঋণ প্রদানের পদ্ধতি এই হয় যে, সর্ব প্রথম ব্যাংক একটি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখে যে, যে ব্যক্তি ঋণ নিতে চায়, সে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে তা আদায় করতে পারবে কি না? সে ব্যক্তির জমি-জমা কত এবং তার মালিকানাধীন বিষয়-বস্ত্ত কি? এই পরিসংখ্যান নেওয়ার পর ব্যাংক একটা সময়-সীমা নির্দিষ্ট করে দেয় যে, এত সময়ের মধ্যে সে এত পরিমাণ অর্থ দিতে প্রস্ত্তত আছে; যা প্রয়োজন অনুপাতে সময় সময় নিতে পারা যাবে। ঋণের অর্থ-পরিমাণ সীমিত করাকে ইংরাজীতে SANCTION OF THE LIMIT বলে। পরিমাণ নির্ধারণের পর এ ঋণপ্রার্থী ব্যক্তির জন্য ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে এ একাউন্ট থেকে তার যখন ও যত ইচ্ছা ঋণ নিতে পারে। এই একাউন্ট খোলার দরুন ব্যাংক খুবই স্বল্প (প্রায় ৫ শতাংশ) হারে সূদও গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু যখন সে ঋণ তুলে নেয়, তখন নিয়মিত হারে সূদ নিতে আরম্ভ করে।
আমদানী-রপ্তানীর ব্যাপারে ব্যাংকের ভূমিকা
ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যাবলীর মধ্যে একটি কাজ এটাও যে, ব্যাংক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য মাধ্যম। ব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব ও মারফৎ ব্যতীত আমদানী (IMPORT) রপ্তানী (EXPORT) সম্ভব নয়।
এর বিস্তারিত বিবরণে এই বলা যায় যে, যখন কোন ব্যক্তি বহির্দেশ থেকে কোন জিনিস আমদানী (IMPORT) করতে চায়, তখন সেই দেশের বণিক এ কথার নিশ্চয়তা চায় যে, যখন সে ঈপ্সিত বস্ত্ত ক্রেতার নিকট পাঠাবে, তখন ক্রেতা সত্যসত্যই তার মূল্য আদায় করে দেবে। এ জন্যই আমদানী ও রপ্তানীকারীকে নিশ্চয়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে একটি জমানতনামা (যামিনপত্র) গ্রহণ করা হয়। এতে ব্যাংক বিক্রেতাকে একথার গ্যারান্টি দেয় যে, অমুক জিনিস অমুক ব্যক্তিকে বিক্রয় করা হলে মূল্য আদায়ের দায়িত্ব থাকবে ব্যাংকের উপর। একে ইংরাজীতে LETTER OF CREDIT বলা হয়। আবার সংক্ষেপে L/C বলে। ব্যাংক L/C প্রস্ত্তত করে রপ্তানীকারীর ব্যাংকে প্রেরণ করে। রপ্তানীকারীর ব্যাংককে (NEGOTIATING BANK) বলে। এবারে L/C পৌঁছনর পর ওখান (বিদেশ) থেকে মাল জাহাজে বুক করে দেওয়া হয়।
জাহাজ কোম্পানী মাল বুক হওয়ার একটি রসিদ জারী করে; যাকে BILL OF LADING (চালানি রসিদ) বলা হয়। অতঃপর রপ্তানীকারীর ব্যাংক উক্ত বিল অফ লেডিং সহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র L/C জারীকর্তা ব্যাংকে প্রেরণ করে। এবারে আমদানীকারী নিজের ব্যাংক থেকে এ সকল কাগজাদি নিয়ে ‘এল সি’র সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। যদি কাগজাদির বিবরণ এল সির অনুরূপ হয়, তাহলে এ কাগজাদি দেখিয়ে বন্দর থেকে মাল তুলে আনে। অবশ্য ব্যাংক সাধারণতঃ উক্ত কাগজাদি আমদানীকারীকে তখনই সোপর্দ করে, যখন সে মালের যথার্থ মূল্য আদায় করে দেয়।
অর্থ উৎপাদনের কাজ
ব্যাংকের আর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল পূর্বে জমাকৃত অর্থে বৃদ্ধিসাধন করে অর্থের সম্প্রসারণ বাড়ানো এবং অর্থভান্ডারে উন্নতি সাধন করা। একেই বলা হয় অর্থ উৎপাদন করা। নিম্নে এর বিস্তারিত বিবরণ প্রদত্ত হলঃ-
লোকেরা যখন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে, তখন নগদ (নোট) আকারে নেওয়া নিষ্প্রয়োজন মনে করে। বরং ঋণদানের সাধারণ নিয়ম এই হয় যে, ব্যাংক ঋণগ্রহীতার নামে এক একাউন্ট খুলে তাকে চেক্ বই সোপর্দ করে। যাতে প্রয়োজনমত চেক্ লিখে এ চেক্ মারফৎ টাকা প্রদান করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকার লোন নিল। ব্যাংক তাকে ১ লাখ টাকা (নগদ নোট) দেওয়ার পরিবর্তে তার নামে ১ লাখ টাকার একাউন্ট খুলে চেক্বই প্রদান করে। এবারে যখনই যত টাকা আদায় করার প্রয়োজন দেখা দেবে, তখনই সে চেক্ লিখে তা সহজে আদায় করতে পারবে। উপরোক্ত দুটি কথাকে সামনে রেখে গভীরভাবে চিন্তা করা হলে অনুমান হবে যে, ব্যাংকের নিকট যত পরিমাণ নোট মজুদ থাকে, তার চাইতে কয়েকগুণ অধিক মুনাফা লাভ করা হয়।
আর তা এইভাবে যে, যখন কোন ব্যাংকের নিকট কিছু নোট আসে, তখন সে রিজার্ভ ব্যাংকের রিজার্ভ বের করে অবশিষ্ট টাকা ঋণপ্রার্থী লোকদেরকে ঋণ দিয়ে দেয়। যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করে, সে সাধারণতঃ নগদ টাকা (নোট) হিসাবে নেয়ই না, বরং একাউন্ট খুলে চেকবই নেই। পক্ষান্তরে নগদ হিসাবে নিলেও পুনরায় সে টাকা এ ব্যাংকে জমা করে দেয়। এভাবে যত টাকার অতিরিক্ত একাউন্ট খোলা হয় অর্থে ঠিক তত পরিমাণ টাকা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাস্তবপক্ষে নোট ততগুলোই থাকে, যতগুলো পূর্ব হতেই রাখা ছিল। পুনরায় ঋণগ্রহীতার একাউন্ট খোলার প্রেক্ষিতে যে নতুন ডিপোজিট ব্যাংকে স্থান পেল, তার মধ্য থেকেও রিজার্ভ বের করে বাকী টাকা ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি পুনঃ এ টাকা এ ব্যাংকেই গচ্ছিত রাখে। এর ফলে অর্থে অতিরিক্ত সংযোজন ঘটে। এইভাবে অর্থে কয়েকগুণ বৃদ্ধি সাধন হয়। আর একেই বলা হয় অর্থ উৎপাদন। উদাহরণ স্বরূপ কোন ব্যাংকে কোন এক ব্যক্তি ১০০ টাকা রাখল। ব্যাংক তা হতে ২০% অর্থাৎ ২০ টাকা রিজার্ভ ব্যাংককে দিয়ে অবশিষ্ট ৮০ টাকা কাউকে ঋণ দিয়ে দিল। ঋণগ্রহীতাও ঋণ নেওয়ার পর এ ব্যাংকেই তা জমা রাখল। এর ফলে ব্যাংকের মোট ১৮০ টাকার ডিপোজিট হয়ে গেল। এর ২০% অর্থাৎ ৩৬ টাকা (যার মধ্যে পূর্বেই ২০ টাকা দেওয়া হয়েছে, তাই বাকী আরো ১৬ টাকা) রিজার্ভ ব্যাংককে দিয়ে বাকী ৬৪ টাকা পুনরায় অন্য কাউকে ঋণ দেয়। আর সে ঋণগ্রহীতাও এ টাকা এ ব্যাংকে রাখলে তার ডিপোজিট আরো ৬৪ টাকা বৃদ্ধি পাবে। এভাবে ব্যাংকে ডিপোজিটের মোট অর্থ-পরিমাণ হবে ২৪৪ টাকা। পুনরায় এই অর্থের ২০% অর্থাৎ ৪৮.৮০ টাকা (যার মধ্যে ৩৬ টাকা পূর্বেই দেওয়া আছে আর বাকী ১২.৮০ টাকা) রিজার্ভ ব্যাংকে জমা করে বাকী ৫১.২০ টাকা পুনঃ অপর কাউকে ঋণ দেবে। আবার সে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি এ টাকা এ ব্যাংকেই রাখলে ব্যাংকের ডিপোজিট পরিমাণ দাঁড়াবে মোট ২৯৫.২০ টাকা।
এভাবে ব্যাংক আবারো ঋণদান করে। শেষ পর্যন্ত তার অর্থভান্ডার শূন্য থেকে যায়।
উপরোক্ত উদাহরণে ব্যাংকের মূলধন ছিল ১০০ টাকা। কিন্তু এ টাকা থেকে ২৯৫ টাকার মুনাফা অর্জন করা হল। প্রত্যেক ডিপোজিটহোল্ডার নিজ নিজ ডিপোজিটের ভিত্তিতে চেক জারী করতে পারে। অর্থাৎ ২৯৫ টাকার চেক জারী হতে পারে। অথচ মূলধন ছিল মাত্র ১০০ টাকা। সুতরাং অতিরিক্ত ১৯৫ টাকা ব্যাংকের উৎপাদিত অর্থ। আর ব্যাংকের এই কাজের নাম হল ‘অর্থ উৎপাদন’।
উক্ত উদাহরণে যে কোন একটি ব্যাংককে ধরে নিয়ে বলা হয়েছে যে, ঋণগ্রহীতা ঋণ গ্রহণ করে পুনরায় এ ব্যাংকেই তা জমা রাখবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এরূপও হয়ে থাকে যে, সে এ ব্যাংক ছাড়া আরো অন্য কোন ব্যাংকে জমা রাখতে পারে। যার ফলে দ্বিতীয় ব্যাংকে ডিপোজিটে বৃদ্ধি সাধন হবে। সে যাই হোক; জমা যে ব্যাংকেই করুক না কেন, ব্যাংক থেকে গৃহীত প্রত্যেক ঋণের পরিণামই হল কোন না কোন ব্যাংকের ডিপোজিটে বৃদ্ধি সাধন। অতএব এ ক্ষেত্রেও সকল ব্যাংকের সমষ্টি অর্থ উৎপাদনের কর্তব্য পালন করবে।
ব্যাংকের অর্থকে বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আর একটি জিনিসের খুব বেশী প্রভাব আছে। যাকে ব্যাংকিং পরিভাষায় FLOT (ফ্লোট) বলা হয়। ব্যাংকের নিকট যে টাকা ডিপোজিট স্বরূপ থাকে তার উপর ব্যাংককে সূদ দিতে হয়। এ সূদ হল ডিপোজিটের মাসুল (COST)। অর্থাৎ এত সূদ দিয়ে ব্যাংক এত ডিপোজিট অর্জন করে। কিন্তু কখনো কখনো টাকা কিছু সময়ের জন্য ব্যাংকে থাকলেও তা ডিপোজিটের পর্যায়ভুক্ত হয় না। আর তাতে ব্যাংককে সূদও দিতে হয় না। এ ধরনের টাকা ব্যাংকের এমন এক প্রকার অর্থ যার উপর কোন মাসুল বা খরচ আদায় করতে হয় না। এরূপ অবস্থা কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে; যেমন, এক ব্যাংক অপর ব্যাংকের নামে চেক জারী করে। এবারে প্রথম ব্যাংক থেকে দ্বিতীয় ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর হতে কিছু সময় অবশ্যই লেগে যায়। অতএব এ সময়ের মধ্যে চেকে লিখিত এ টাকা ব্যাংকের FLOAT হয়ে যায়। এর আরো একটি উদাহরণ এরূপ; যেমন, ব্যাংক কাউকে কিছু টাকার ড্রাফ্ট দিলে যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ড্রাফ্ট ক্যাশ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এ টাকা ব্যাংকের নিকট ‘ফ্লোট’ হিসাবে থাকে।
এর আরো একটি উদাহরণ যেমন, ব্যাংক কারো নামে L/C জারী করলে এল সি জারীকর্তা তখনই টাকা আদায় করে দেয়। কিন্তু ব্যাংক অপর ব্যক্তি (রফতানীকারক)-কে সেই টাকা তখনই আদায় করে, যখন সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এসে পৌঁছে যায়। সুতরাং এতটা সময় ধরে বিনা কোন খরচ আদায়ে সেই টাকা ব্যাংকের নিকট (ফ্লোট হিসাবে) থাকে।
অনুরূপ রেলওয়ের বিলটি (ছোট বিল) এর ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। প্রথমতঃ সংশ্লিষ্ট কাগজ-পত্র ব্যাংকে আসে। ব্যাংকে টাকা পয়সা আদায় করে কাগজাদি নেওয়া হয়। কাগজাদি নিয়ে বিলটি ছাড়ানো হয়। এবারে কাগজাদি ব্যাংক থেকে নেওয়ার সময়েই টাকা ব্যাংকে আদায় তো করে দেওয়া হয়; কিন্তু বিলটি প্রেরকের নিকট এ টাকা পৌঁছতে বিলম্ব হয়। এ বিলম্বিত সময়ের মধ্যে এ টাকাও ব্যাংকের ফ্লোট।
হজ্জের জন্য আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়। এ ছাড়া আরো অন্যান্যভাবেও ফ্লোট হয়ে থাকে। এই ফ্লোটের মাধ্যমে ব্যাংক যথেষ্ট পরিমাণের পুঁজি অর্জনে সক্ষম হয়।
এই বিস্তারিত বিবরণে আরো একটি কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, বাহ্যতঃ যা বুঝা যায় তাতে মনে হয়, ব্যাংক টাকা জমাকর্তাদেরকে যত পরিমাণে সূদ দেয়, তত পরিমাণে তার খরচও হয়। যেমন ৮% সূদ দিলে তার খরচও ৮% ই হয়। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা নয়। ব্যাংকের বাস্তব খরচ তার চাইতে কমই হয়; যা সে সূদের খাতে ব্যয় করে থাকে। কারণ ব্যাংকের নিকট বহু অর্থ এমনও থাকে যার উপর কোন প্রকার সূদ আদায় করতে হয় না। উপরন্তু তার থেকে মুনাফা লাভ করা হয়। এ ধরনের অর্থ প্রথমতঃ ফ্লোটের, আর দ্বিতীয়তঃ কারেন্ট একাউন্টের। এ থেকে বুঝা গেল যে, ব্যাংক যে পরিমাণে লাভ অর্জন করে তার ৮ শতাংশ অপেক্ষা কম অংশ সাধারণ আমানতকারীদের ভাগে আসে। অতএব বলা যায় যে, ব্যাংকের লাভের উচ্ছ্বসিত গতিমুখ জনসাধারণের দিকে কম থাকে, আর ধনাঢ্য পুঁজিপতিদের দিকে থাকে বেশী। আর এইভাবে ব্যাংক সমগ্র জাতি এবং সারা দেশ বরং সারা দুনিয়ার অর্থ সংগ্রহ ও সঞ্চয় করে। আর আপাতদৃষ্টিতে টাকা জমাকর্তাদেরকে স্বল্প সূদ দিয়ে খোশ করে দেয়; কিন্তু তলায় তলায় সমগ্র জাতির ধন-দৌলত হস্তগত করে ডাকাতের ভূমিকা পালন করে।
প্রিয় পাঠক! ব্যাংকের যাবতীয় কর্মপ্রণালী এবং কারবারের প্রকৃতি ও ধরন বিস্তারিতভাবে আপনার সামনে পেশ করা হল। আপনি আরো একবার মন দিয়ে গভীরভাবে পড়ুন। তাতে দেখবেন ও ভালোরূপে বুঝতে পারবেন যে, ব্যাংকের বুনিয়াদ ও ভিত্তিই হল সূদ। বরং সে সম্পূর্ণ সূদের উপরেই নির্ভরশীল এবং সূদী ইমারতের উপরেই তার গঠনমূলক কাঠামো কায়েম থাকে। আসুন এবারে ব্যাংক কিভাবে ও কেমন করে জাতি, দেশ এবং সারা দুনিয়ার উপর ধ্বংসের জাল বিছিয়ে রেখেছে এবং সারা দুনিয়া তার সেই জালে ফেঁসে আছে তা আমরা সমীক্ষা করে দেখি।
ব্যাংকের সুদ কি হালাল - অনুচ্ছেদ ০১ থেকে ১০ পর্যন্ত, শাইখ মুশ্তাক আহমাদ কারীমী
ব্যাংকের সুদ কি হালাল - অনুচ্ছেদ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, শাইখ মোস্তাক আহমাদ কারীমী
ব্যাংকের সুদ কি হালাল - অনুচ্ছেদ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, শাইখ মোস্তাক আহমাদ কারীমী
ব্যাংকের সুদ কি হালাল - অনুচ্ছেদ ৩১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, শাইখ মোস্তাক আহমাদ কারীমী
ব্যাংকের সুদ কি হালাল - অনুচ্ছেদ ৪১ থেকে ৫০ পর্যন্ত, শাইখ মোস্তাক আহমাদ কারীমী
No comments