ব্যাংকের সুদ কি হালাল - অনুচ্ছেদ ৫১ থেকে ৫৭ পর্যন্ত, শাইখ মোস্তাক আহমাদ কারীমী
১- সূদ নেওয়া ও দেওয়ার মাঝে পার্থক্য
সূদ নেওয়া এবং দেওয়ার মাঝে পার্থক্য আছে। উভয় কর্ম একই পর্যায়ভুক্ত নয়। কেননা নিরুপায় অবস্থায় সূদভিত্তিক ঋণ নিতে বহু মানুষই বাধ্য হতে পারে।
সুতরাং যদি এমন কোন বিপদ ও প্রয়োজন দেখা দেয় যার কারণে সূদের উপর ঋণ নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না অথবা জান বা ইজ্জতের পক্ষে এমন ক্ষতিকর অসুবিধা এসে দেখা দেয়, যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঋণের প্রয়োজন হয় এবং সূদ ছাড়া ঋণই না পাওয়া যায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে একজন গত্যন্তরহীন মুসলিমের জন্য সূদভিত্তিক ঋণ নেওয়া বৈধ। পক্ষান্তরে সূদ খাওয়ার জন্য বাস্তবপক্ষে কোনই নিরুপায় অবস্থা নেই। সূদ তো কেবল ধনী লোকই গ্রহণ করে থাকে। আর ধনী লোকেরা এমন কোন্ গত্যন্তরহীন অবস্থায় পড়তে পারে যে, যার ফলে তার জন্য সূদ হালাল হয়ে যাবে? ২- প্রয়োজনের সীমা নির্ধারণ
সূদী ঋণ নেওয়ার জন্য প্রত্যেক ‘প্রয়োজন নিরুপায়’ অবস্থার সংজ্ঞায় পড়ে না। সুতরাং বিবাহ-শাদীতে ধুমধাম করার লক্ষ্যে অপব্যয় করা, আরাম-আয়েশ ও বিলাস-সামগ্রী ক্রয় করা অথবা কোন ব্যবসা বা কারবারকে অপেক্ষাকৃত উন্নততর করার মানসে অর্থ সংগ্রহ করা এবং এই ধরনের আরো অন্যান্য (অজরুরী) বিষয় যাকে ‘প্রয়োজনীয় ও নিরুপায় অবস্থা’ বলে আখ্যা দেওয়া হয় এবং যার জন্য হাজার হাজার টাকা মহাজন (বা ব্যাংকের) নিকট ঋণ নেওয়া হয়, তা প্রকৃতপক্ষে কোন প্রয়োজনীয় ও গত্যন্তরহীন কর্ম ও বিষয় নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে ঐ শ্রেণীর ওজরের কোন গুরুত্বই নেই। তাই এ সকল কাজের জন্য যারা ঋণ নিয়ে সূদ দিয়ে থাকেন, তারা বিরাট গোনাহগার হবেন। শরীয়ত যদি কোন উপায়হীন অবস্থায় সূদ ভিত্তিক ঋণ নেওয়াতে অনুমতি দেয়, তাহলে তা কেবল সেই নিরুপায় অবস্থায়, যখন হারাম ভক্ষণ করা হালাল হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন:
﴿ِلاَّ مَا
اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ﴾
অর্থাৎ, যে ব্যাপারে তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও তার কথা স্বতন্ত্র। (তখন হারাম হারাম নয়।)[1]
এখানে সেই সকল সামর্থ্যবান মুসলমানরাও গোনাহগার হবেন, যাঁরা বিপদকালে নিজেদের একজন ভাইকে (বিনা সূদে ঋণ দিয়ে) সাহায্য না করে তাকে (সূদী ঋণ নিয়ে) হারাম কাজ করতে বাধ্য করে থাকেন। বরং আমার মতে এই গোনাহর বোঝা সমগ্র মুসলিম জাতির ঘাড়েই চেপে বসবে; কারণ তারা যাকাত, সদকাহ, ওয়াক্ফ প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক ফান্ডের ব্যাপারে বড় উদাসীন। যার তিক্ত ফলস্বরূপ সেই জাতিরই সদস্যরা অসহায় অবলম্বনহীন হয়ে নিজেদের অভাবের তাড়নায় সর্বগ্রাসী মহাজনদের সম্মুখে হাত পাতা ছাড়া আর কোন পথ দেখতে পায় না।
[1] (সূরা আল-আনআম ১১৯ আয়াত)
৩- প্রয়োজনের তীব্রতা অনুপাতে প্রয়োজনের সীমা নির্ধারণ
অতিশয় নিরুপায় অবস্থাতেও কেবল প্রয়োজনের পরিমাণ অনুপাতে সূদী ঋণ করা যেতে পারে। (অর্থাৎ প্রয়োজনের অধিক টাকা ঋণ করা যাবে না।) পরন্তু সামর্থ্য আসার সাথে সাথেই সর্বাগ্রে ঋণ পরিশোধ করে সূদ থেকে নিস্কৃতি লাভ করা জরুরী। কারণ প্রয়োজন পূরণ হওয়ার পর সূদ হিসাবে একটি পয়সাও দেওয়া নিশ্চিত হারাম।
বাকী থাকল এই প্রশ্ন যে, ‘প্রয়োজন অতীব কিনা? অতীব হলে তার পরিমাণ কতটা? কোন্ সময় সে প্রয়োজন দূরীভূত হবে?---’ সুতরাং এসবের উত্তর অভাবী ব্যক্তির বিবেক এবং দ্বীনদারী অনুভূতির উপর নির্ভরশীল। মানুষ যত বেশী দ্বীনদার এবং তার ঈমান যত বেশী মজবুত হবে, তত বেশী সে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান হবে।
৪- শুধুমাত্র নিজের ধনকে ধন মনে করুন
যারা বাণিজ্যিক অসুবিধার কারণে অথবা নিজের ধন মালের হেফাযত ও সংরক্ষণার্থে ব্যাংকে টাকা রাখতে বাধ্য হন তাঁদের জন্য আবশ্যক হল, কেবল মাত্র জমা করা মূলধনকে নিজের ধন মনে করা এবং এ মূলধন থেকে বার্ষিক আড়াই শতাংশ হিসাবে যাকাত আদায় করা। কারণ এ ছাড়া অবশিষ্ট বেজন্মা অর্থরাশি তাঁদের জন্য নাপাক।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَإِن
تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوسُ أَمْوَالِكُمْ﴾
অর্থাৎ, যদি তোমরা (সূদ খাওয়া হতে) তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদের। [1]
[1] (সূরা বাক্বারাহ ২৭৯ আয়াত)
বীমা বা ইনশ্যূরেন্স
বীমার অর্থ এই যে, ভবিষ্যতের যে সকল সম্ভাব্য বিপদ আপদ ও দুর্ঘটনার মানুষ সম্মুখীন হয় তার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট ধরনের দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি পূরণ দেবে বলে কোন ব্যক্তি অথবা কোম্পানী যমানত নেয়।
চতুর্দশ খ্রীষ্টীয় শতাব্দীতে এর সূত্রপাত ঘটে।
যেসকল দুর্ঘটনার উপর বীমা করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে বীমার তিনটি বড় বড় প্রকার রয়েছেঃ
১- মাল বীমা (GOODS INSURANCE) ঃ এর নিয়ম হল এই যে, যে ব্যক্তি কোন মালের উপর বীমা করতে চায় সে নির্দিষ্টহারে বীমা কোম্পানীকে কিস্তী (চাঁদা) আদায় করে যায়; যাকে প্রিমিয়াম (PREMIUM) বলা হয়। অতঃপর সেই মাল দুর্ঘনাগ্রস্ত হলে কোম্পানী তার আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থাকে। যদি মাল কোন প্রকারের দুর্ঘটনাগ্রস্ত না হয়, তাহলে বীমাকারী যে প্রিমিয়াম (কিস্তী) আদায় করেছে তা ফেরৎ দেওয়া হয় না। অবশ্য দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বীমার টাকা বীমাকারী লাভ করে থাকে এবং তদ্দবারা সে নিজের ক্ষতিপূরণ করে থাকে। জাহাজ, গাড়ি, বাড়ি প্রভৃতির বীমা এরই পর্যায়ভুক্ত।
২- ঝুঁকির বীমা ঃ এর অর্থ হল এই যে, ভবিষ্যতে কারো উপর কোন ঝুঁকি এলে সে ঝঞ্ঝাট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বীমা করা। যেমন, মোটর গাড়ি চালাবার সময় কোন দুর্ঘটনার ফলে কোন অপর ব্যক্তির ক্ষতি হলে গাড়িচালকই সে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবে। কিমএ ক্ষেত্রে ঐ বীমা করা থাকলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত তৃতীয় পক্ষকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে বীমাপ্রতিষ্ঠান। যাকে সাধারণতঃ (THIRD PARTY INSURANCE) বলা হয়।
৩- জীবন-বীমা (LIFE INSURANCE) এর অর্থ হল এই যে, কোম্পানী বীমাকারীর সহিত এই চুক্তি করে যে, একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার (বীমাকারীর) অপমৃত্যু হলে বীমা-প্রতিষ্ঠান চুক্তিকৃত প্রতিশ্রুত টাকা তার ওয়ারেসীন (উত্তরাধিকারী)দেরকে আদায় করে দেবে।
এর আবার কতকগুলো ধরন আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়াদ নির্দিষ্ট করা থাকে। সেই মেয়াদের ভিতরে মারা গেলে চুক্তির টাকা মৃত বীমাকারীর ওয়ারেসীনরা পেয়ে যায়। যদি সে মেয়াদে তার মৃত্যু না হয়, তাহলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বীমাও শেষ হয়ে যায় এবং জমাকৃত টাকা সূদে-আসলে ফেরৎ পেয়ে যায়। পক্ষান্তরে কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে না।
এরূপ হলে যখনই বীমাকারীর মৃত্যু হয়, তখনই তার টাকা তার ওয়ারেসীনরা পেয়ে যায়।
কর্মপদ্ধতি এবং কাঠামোগত ও গঠনপ্রকৃতির দিক থেকে বীমা তিন প্রকারেরঃ-
১- গ্রুপ ইনস্যুরেন্স (GROUP INSURANCE) সরকার এমন এক পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করে যাতে জনসাধারণের কোন একটি দল নিজেদের কোন ক্ষতিপূরণ অথবা কোন মুনাফালাভের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগ করতে পারে।
যেমন, সরকারী চাকরিজীবিদের বেতনের সামান্য একটা অংশ প্রত্যেক মাসে কেটে রেখে কোন বিশেষ এক ফান্ডে জমা করা হয়। অতঃপর কোন চাকরিজীবীর মুত্যু হলে অথবা সে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে মোটা টাকা আকারে সাহায্য তার ওয়ারেসীনকে অথবা খোদ তাকে সমর্পণ করা হয়। এটি একটি সামাজিক (সমাজকল্যাণমূলক) কর্ম। যা সরকার তার দেশবাসীর সম্ভাব্য দুর্ঘটনার সময় অনুদান স্বরূপ দুর্গতদেরকে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং এটি সরকারের তরফ থেকে একপ্রকার অনুদান। কোন বিনিময়চুক্তির ফলে বিনিমেয় অর্থ নয়। এ কারণে এই প্রকার অনুদান গ্রহণে কোন প্রকার দ্বিমত নেই।[1]
২- সমবায় বীমা (MUTUAL INSURANCE) এর নিয়ম এই যে, যাদের সম্ভাব্য দুর্ঘটনা একই ধরনের হয়ে থাকে এমন কতকগুলি লোক আপোসে মিলে-মিশে একটি ফান্ড্ তৈরী করে নেয়। অতঃপর তারা এই চুক্তিবদ্ধ হয় যে, আমাদের মধ্যে কেউ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে এ ফান্ড্ থেকে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এ ফান্ডে কেবল তার সদস্যদের টাকা জমা থাকে এবং ক্ষতিপূরণ কেবল এ সকল সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বৎসরান্তে হিসাব নেওয়া হয়।
ক্ষতিপূরণ প্রদত্ত টাকার অংক যদি ফান্ডের টাকার চাইতে বেশী হয়ে যায়, তাহলে সে হিসাবে সদস্যদের নিকট থেকে আরো বেশী টাকা আদায় করা হয়। আর ফান্ডের টাকা উদ্বৃত্ত হলে সদস্যদেরকে ফেরৎ দেওয়া হয় অথবা তাদের তরফ থেকে আগামী বছরের জন্য ফান্ডের দেয় অংশ স্বরূপ রেখে নেওয়া হয়।
প্রারম্ভিকভাবে বীমার এই ধরনই প্রচলিত ছিল। যার বৈধ-অবৈধতার ব্যাপারে কোন দ্বৈধ নেই। যে সমস্ত উলামাগণ বীমা নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা সকলেই এর বৈধতার ব্যাপারে একমত।
৩- বাণিজ্যিক বীমা (COMMERCIAL
INSURANCE)t- এই বীমার নিয়ম-পদ্ধতি এই যে, বীমা কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোম্পানীর উদ্দেশ্য থাকে, বীমাকে বাণিজ্যরূপে পরিচালিত করা; যার মূল উদ্দেশ্য থাকে বীমার অসীলায় মুনাফা উপার্জন। এই কোম্পানী বিভিন্ন ধরনের বীমার স্কীম জারী করে। যে ব্যক্তি বীমা করতে চায় তার সহিত বীমা কোম্পানীর এই চুক্তি থাকে যে, এত টাকা এত কিস্তিতে আপনি আদায় করবেন। নোকসানের ক্ষেত্রে কোম্পানী আপনার ক্ষতিপূরণ দেবে। কোম্পানী কিস্থির পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য হিসাব করে নেয় যে, যে সম্ভাব্য দুর্ঘটনার উপর বীমা করা হয়েছে তা কতবার হতে পারে? যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরও কোম্পানীর মুনাফা অবশিষ্ট থাকে। আর এই পরিসংখ্যান করার জন্য বিশেষ কৌশল আছে; যার সুদক্ষ কৌশলীকে (ACTUARY) বা বীমাগাণনিক বলা হয়।
বর্তমানে এই ধরনের বীমার প্রচলন অধিক। আর এরই বৈধতা ও অবৈধতার ব্যাপারটি সাম্প্রতিককালীন উলামাগণের অধিকতর বিতর্কের বিষয় হয়ে পড়েছে। বর্তমানের মুসলিম-বিশ্বের প্রায় সকল প্রসিদ্ধ ও খ্যাতিসম্পন্ন উলামাগণের মতে তা অবৈধ। অধিকাংশ উলামাগণের ঐ জামাআত বলেন যে, এই বীমাতে জুয়ার গন্ধ আছে এবং সূদও। জুয়া এই জন্য বলা হচ্ছে যে, টাকা আদায়ের ব্যাপারটা এক পক্ষের (বীমাকারীর) তরফ থেকে নির্দিষ্ট ও নিশ্চিত। কিন্তু অপর পক্ষের (কোম্পানীর) তরফ থেকে তা সন্দিগ্ধ। বীমাকারী কিস্তীতে যে টাকা আদায় করে, তার সবটাই ডুবে যেতে পারে। আবার তার চাইতে বেশীও পেতে পারে। আর একেই জুয়া বলা হয়।
সূদ আছে এই জন্য বলা হচ্ছে যে, এখানে টাকা দিয়ে বিনিময়ে টাকাই দেওয়া-নেওয়া হয়; যাতে কম বেশীও হয়ে থাকে। বীমাকারী কম টাকা জমা করলেও পাওয়ার সময় তার চেয়ে অনেক বেশীও পেয়ে থাকে।
[1] (দিরাসাতুন শারইয়্যাহ ৪৭৭-৪৭৮ পৃঃ)
সমবায় বীমা বৈধ
মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ-এর শাখা সংস্থা ইসলামিক ফিক্হ একাডেমী সউদী আরবের উচ্চপদস্থ উলামা বোর্ডের বীমা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।
উক্ত বোর্ড ৪/৪/১৩৯৭ হিঃ তে প্রস্তাবনামা (৫১নং) পাস করে। যাতে বাণিজ্যিক বীমাকে অবৈধ বলা হয়েছে। আর সমবায় বীমাকে নিম্নোক্ত দলীলাদির ভিত্তিতে বৈধ বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে।
১- সমবায় বীমা অনুদানমূলক চুক্তির পর্যায়ভুক্ত; যার লক্ষ্য হল বিপদের সময় কেবল পরস্পরকে সাহায্য করা এবং দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বশীলতার বোঝা বহনে অপরের সাথে অংশ গ্রহণ করা। আর তা এইরূপে যে, কতিপয় লোক মিলে কিছু কিছু নগদ টাকা চাঁদাস্বরূপ দিয়ে অংশ নেবে। যাতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সময়ে এ অর্থ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হবে। সুতরাং সমবায় বীমা প্রতিষ্ঠানের সদস্যদলের উদ্দেশ্য বাণিজ্য অথবা অপরের অর্থের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন হয় না। এ দলের উদ্দেশ্য থাকে, কেবলমাত্র দুর্ঘটনা ও বিপদের ভারকে আপোসের মধ্যে ভাগাভাগি করে বহন করা এবং অপরের ক্ষতিপূরণে সাহায্য করা।
২- সমবায় বীমা (নিছক বেশী নেওয়ার সূদ ও সময় দেওয়ার বিনিময়ে ঋণের সূদ) উভয় প্রকার সূদ থেকেই পবিত্র। অতএব এতে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের বীমা-চুক্তি কোন সূদী চুক্তি নয়। আর তারা তাদের কিস্তীতে জমা করা টাকাকে সূদী কারবারেও খাটায় না।
৩- সমবায় বীমাতে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের উপার্জিতব্য মুনাফা অনির্দিষ্ট ও অজানা থাকার কারণে এ চুক্তির কোন ক্ষতি হয় না। কারণ, এরা সকলে সহায়তা ও অনুদানে অংশগ্রহণকারী। সুতরাং এর মাঝে না কোন ক্ষতির ঝুঁকি আছে, আর না কোন ধোঁকাবাজী ও জুয়াবাজী। পক্ষান্তরে বাণিজ্যিক বীমাতে এ সবকিছুই বিদ্যমান। কারণ এ বীমাতে যে চুক্তি হয় তা হল নিছক টাকার বিনিময়ে টাকা দেওয়া-নেওয়ার বাণিজ্যিক চুক্তি।
৪- সমবায় বীমার সদস্যদের কিস্তীতে জমা করা টাকা নিয়ে তাদের একটি গ্রুপ বা তাদের কোন প্রতিনিধি স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে অথবা কিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ব্যবসা করে পুঁজি বৃদ্ধি করা হয়। আর তাতেও সেই উদ্দেশ্যই থাকে, যে উদ্দেশ্যে সমবায় বীমা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উক্ত সিদ্ধান্তনামায় স্বাক্ষরকারী হলেন নিম্নলিখিত উচ্চ পদস্থ উলামায়ে কেরাম ঃ
১- মুহাম্মদ আলী হারাকান, জেনারেল সেক্রেটারী, ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ।
২- আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ, উচ্চ বিচারবিভাগীয় পরিষদ্পাল, সউদী আরব।
৩- আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, প্রধান, ইলমী গবেষণা, ফতোয়া, দাওয়াত এবং পথনির্দেশনা বিভাগ, সউদী আরব।
৪- মুহাম্মদ মাহমূদ সাওয়াফ, মেম্বর, ফিক্হ একাডেমী।
৫- সালেহ বিন উসাইমীন, মেম্বর, ফিক্হ একাডেমী।
৬- মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ সুবাইয়িল, মেম্বর, ফিক্হ একাডেমী।
৭- মুহাম্মদ রশীদ রাববানী মেম্বর, ফিক্হ একাডেমী।
৮- মুসতাফা যারকা, মেম্বর, ফিক্হ একাডেমী।
৯- মুহাম্মদ রশীদী, মেম্বর, ফিক্হ একাডেমী।
১০- আবুবকর জূমী, মেম্বর, ফিক্হ একাডেমী।
১১- আব্দুল কুদ্দূস হাশেমী নদবী, মেম্বর, ফিক্হ একাডেমী।[1]
[1] (দিরাসাতুন শারইয়্যাহ ৪৭৭-৬০৬ পৃষ্ঠা, মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/৩৪১-৩৪৩)
বীমার প্রকরণ
বীমার আরো অন্যান্য শ্রেণীভাগও রয়েছে। পাঠকের উপকারার্থে আমরা সকল বীমার সংক্ষিপ্ত চিত্র পরিবেশন করছিঃ
পূর্বের আলোচনায় একথা প্রতিপাদিত হয়েছে যে, কোন প্রকারেরই বাণিজ্যিক বীমা বৈধ নয়। কিন্তু প্রশ্ন জাগে এর বিকল্প ব্যবস্থা কিছু আছে কি? এ ব্যাপারে বলা যায় যে, এর একটি প্রতিকল্প হল সমবায় বীমা; যাকে ইংরাজীতে MUTUAL INSURANCE বলে। যার কর্ম-পদ্ধতি পূর্বে আলোচিত হয়েছে।
এ ছাড়া বর্তমানে মুসলিম-বিশ্বের কয়েকটি দেশেই JOINT LIABILITY
COMPANY নামে কিছু কোম্পানী প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এগুলোকে বাণিজ্যিক বীমার বিকল্পরূপে কায়েম করা হয়েছে। এর মৌলিক গঠন এরূপ যে, এ সকল কোম্পানীর শেয়ার্স হোল্ডার থাকে। কোম্পানী নিজে মূলধন কোন কল্যাণমূলক কর্মে বিনিয়োগ করে তার লভ্যাংশ শেয়ার্স হোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করে। উক্ত কোম্পানীরই একটি রিজার্ভ ফান্ড্ থাকে। সেখান থেকে বীমাকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
পরিশেষে আল্লাহর নিকট আমাদের সকাতর প্রার্থনা যে, তিনি আমাদেরকে তথা সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে হারাম জিনিস থেকে বেঁচে ও দূরে থাকার তওফীক ও প্রেরণা দান করুন। আমাদের হৃদয় মাঝে হারাম থেকে বাঁচার আগ্রহ সৃষ্টি করুন। আমীন।
اللهم اشهد فقد بلغنا
হে আল্লাহ! আমরা পৌঁছে দিলাম, তুমি সাক্ষী থাক।
প্রমাণ-পঞ্জী:
১-ফাতহুল বারী, শারহু সহীহিল বুখারী,
আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আল আসকালানী,
দারুর্রাইয়ান লিত্তুরাস,
কায়রো ছাপা
২- তুহফাতুল আহওয়াযী শারহু সুনানিত্ তিরমিযী,
আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারাকপুরী,
দারুল ফিক্র ছাপা ৩-
আওনুল মা’বূদ শারহু সুনানি আবী দাঊদ, আল্লামা শামসুল হক আযীমাবাদী, দারুল ফিক্র ছাপা,
লেবানন, তৃতীয় সংস্করণ ১৯৭৯
৪- নাইলুল আওতার মিন আহাদীসি সাইয়্যিদিল আখইয়ার, আল্লামা মুহাম্মদ বিন আলী আশ্শাওকানী,
দারুত্তুরাস, কায়রো ছাপা
৫- সুবুলুস সালাম শারহু বুলূগিল মারাম,
আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আসসান্আনী, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ,
বাইরুত ছাপা
৬- মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতুল মাসাবীহ
,আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী,
দারু ইহয়াইত্ তুরাসিল আরাবী,
বাইরুত ছাপা
৭- ইহয়াউল উলূম, ইমাম গায্যালী
৮- ফাওয়াইদুল বুনূক হিয়ার রিয়াল হারাম,
ডক্টর ইউসূফ কারযাবী, আল মাকতাবুল ইসলামীর ছাপা, ১৯৯৫
৯- আল মুআমালাতুল মাসরাফিয়্যাহ অররিবাবিয়্যাহ অইলা-জুহা ফিল ইসলাম, ডক্টর নূরুদ্দীন ইত্র,
রিসালাহ বাইরুতের ছাপা, ১৯৭৮
১০- বুনূকুন তিজারিয়্যাহ বিদূনির রিবা, ডক্টর মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইব»vহীম শাববানী, দারুল আলামিল কুতুব লিন্নাশ্র, রিয়াযের ছাপা, ১৯৮৭
১১- দিরাসাতুন শারইয়্যাহ লিআহাম্মিল উক্বূদিল মা-লিয়্যাতিল মুস্তাহদাসাহ,
ডক্টর মুহাম্মদ আলআমীন মুস্তাফা শানক্বীত্বী, মাকতাবাতুল উলূম অলহিকাম,
মদীনা নববিয়্যাহর ছাপা, ১৯৯২
১২- আল বুনূকুল ইসলামিয়্যাহ বাইনান নাযারিয়্যাতি অত্তাত্ববীক্ব, ডক্টর আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আহমদ ত্বাইয়ার,
দারুল অত্বান,
রিয়াযের ছাপা,
১৯৯৪
১৩- আবহাসুল মু’তামারিস সানী লিলমাসরাফিল ইসলামী, কুয়েত,
ডক্টর সুলাইমান আশক্বার, দারুন নাফায়িস, কুয়েতের ছাপা, ১৯৯০
১৪- মাসআলা-এ সূদ,
মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শাফী,
ইদারাতুল মাআরিফ,
করাচীর ছাপা,
১৯৭৯
১৫- সূদ,
সাইয়েদ আবুল আলা মাওদূদী,
মারকাযী মাকতাবাহ ইসলামী, দিল্লীর ছাপা, ১৯৯৩
১৬- ‘সূদ’
এর অনুবাদ;
সূদ ও আধুনিক ব্যাংকিং,
আব্দুল মান্নান তালিব ও আববাস আলী খান, আধুনিক প্রকাশনী, ঢাকার ছাপা ১৯৮৭
১৭- ইসলাম আওর জাদীদ মাঈশাত অ তিজারাত, জাষ্টিস মুফতী মুহাম্মদ তাক্বী উসমানী,
ইদারাতুল মাআরিফ,
করাচীর ছাপা,
১৯৯৫
১৮- আল মুআমালাতুল মাসরাফিয়্যাহ অমাউক্বিফুশ্ শারীআতিল ইসলামিয়্যাতি মিনহা,
ডক্টর সঊদ বিন সা’দ বিন দুরাইব, প্রথম সংস্করণ ১৯৬৮,
ফটো কপি,
লাইব্রেরী, মদীনা ইউনিভার্সিটি
১৯- মাউক্বিফুশ্ শারীআতি মিনাল মাসারিফিল ইসলামিয়্যাতিল মুআসিরাহ, ডক্টর আব্দুল্লাহ আববাদী,
ডক্টরেট থেসিস,
দারুস সালাম ছাপা, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৯৪
২০- আত্তাদাবীরুল ওয়াক্বিইয়্যাহ মিনার্রিবা ফিল ইসলাম,
ডক্টর ফয্ল ইলাহী, ওস্তায ইমাম মুহাম্মদ বিন সঊদ ইসলামী ইউনিভার্সিটি,
রিয়ায, ইদারাতু তারজুমানিল ইসলাম,
গুজরানওয়ালা, পাকিস্তান,
প্রথম সংস্করণ ১৯৮৬
২১- আলমুআমালাতুল মালিয়্যাতুল মুআসিরাহ ফিল ফিক্বহিল ইসলামি ডক্টর উসমান শাববীর,
দারুন্নাফাইস, জর্ডান ছাপা, ১৯৯৬
২২- তাতবীরুল আ’মালিল মাসরাফিয়্যাহ, ডক্টর সামী হাসান,
দারুল ইত্তিহাদুল আরাবী, প্রথম সংস্করণ ১৯৭৬
২৩- আল জামিউ ফী অসূলির্রিবা, ডক্টর ইউনুস মিসরী,
দারুল কলম ছাপা দেমাস্ক্ প্রথম সংস্করণ ১৯৯১
২৪- আলবুনূকুল ইসলামিয়্যাহ, অসূলুহাল ইদারিয়্যাতু অলমুহাসিবিয়্যাহ,
ডক্টর নিযাল সাব্রী, প্রথম সংস্করণ ১৯৮৬
২৫- আলকাউলুল ফাস্ল ফির্রদ্দি আলা মুবীহী রিবান নাসিআতি অলফায্ল্, শাইখ আবু বকর জাবের আল-জাযায়েরী
No comments